Wednesday, July 17, 2019

ঘরে বসেই মিলবে আমদানি-রপ্তানির সনদ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার: আমদানি-রপ্তানির সনদ পেতে আর সরকারি অফিসের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হবে না; অনলাইনে প্রয়োজনীয় নথি জমা দিয়ে মাত্র পৌনে দুই ঘণ্টার মধ্যে সনদ পাওয়া যাবে। গতকাল রাজধানীর পুরানা পল্টনে জাতীয় ক্রিড়া পরিষদ ভবনে নতুন সেবাটির উদ্বোধনের সময় এতথ্য জানান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মনুশি। তিনি বলেন, সরকার ব্যবসার রাস্তা সহজ করার জন্য নানামুখী যে উদ্যোগ নিচ্ছে, নতুন এই অনলাইন লাইসেন্স মডিউল বা ওএলএম তার একটি। এই সেবা যেন ব্যবসায়ীদের উপকারে আসে এই দপ্তরের কর্মকর্তাদের সে বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে। আপনার কেউ যেন মানুষের কষ্টের কারণ হবেন না-এটাই আমার অনুরোধ। অনলাইন লাইসেন্স মডিউলের ওয়েবসাইটে (যঃঃঢ়://ড়ষস.পপরব.মড়া.নফ/ৎবমরংঃব) গিয়ে নিবন্ধন করে এই সেবা নেয়া যাবে। অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মফিজুল ইসলাম বলেন, কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত সংস্পর্শে না এলে দুর্নীতির সুযোগ কমে যায়। দুর্নীতি যাতে না হয়, ঘুষ যাতে দিতে না হয় সেজন্যই ঘরে বসে সরকারি সেবা পাওয়ার এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমদানি-রপ্তানির প্রধান নিয়ন্ত্রক প্রাণেশ রঞ্জন সূত্রধর জানান, বিশ্বব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান আইএফসির সহযোগিতায় এ সেবা চালু হয়েছে। উদ্যোগটি ২০১৫ সালে নেয়া হয়। তিনি বলেন, এক সপ্তাহ ধরে চলবে লাইসেন্স নবায়ন মেলা। লাইসেন্স নিতে ইচ্ছুক যে কেউ প্রয়োজনীয় তথ্য নিয়ে দপ্তরে এলে অল্প সময়ের দাপ্তরিক কাজ সারতে পারবেন। নিজস্ব ঠিকানা থেকে ডাউনলোড করতে পারবেন লাইসেন্স। 

Saturday, July 6, 2019

ধান বাদ দিয়ে সবজি চাষে কোটিপতি আমির হোসেন

চলতি বছর ধানের দাম না পাওয়ায় হতাশায় ধান ক্ষেতে আগুন লাগিয়ে দিয়ে দেশে আলোচনার ঝড় তুলেন কৃষকরা। আবার ধানের বস্তা নিয়ে জেলা প্রসাশক কার্যালয়ের সামনে মিছিল মিটিং মানববন্ধনসহ নানা কর্মসুচি পালন করছেন তারা। সেই ক্ষোভ থেকে ধান চাষ বাদ দিয়ে সবজি চাষে মনযোগী হন এক কৃষক। তাতে সফলতাও পান। হয়েছেন কোটিপতি। তিনি হলেন গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার মুক্তিনগর ইউনিয়নের পুটিমারী গ্রামের কৃষক আমীর হোসেন। ৬ শতাংশ জমি শুরু। এর পর সবজি চাষ করে কোটি টাকার উপরে সম্পদ বানিয়েছেন তিনি।

সবজি চাষী ও বিক্রেতা থেকে জীবন শুরু করে নিজ প্রচেষ্টায় ভাগ্যের পরিবর্তনে শুন্য থেকে কোটিপতি হওয়ার সফলতায় বিভিন্ন সময়ে পেয়েছেন পুরস্কার ও সম্মাননা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক পাওয়ায় আমির হোসেনের বেড়ে যায় কাজের অনুপ্রেররণা। এখন সে তার বসতবাড়ির চার পাশে নিজ ও বর্গা নেয়া জমিসহ ১৬ বিঘা জমিতে বিভিন্ন সবজি  চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে স্থানীয়দের। সবজিই নয় মালটা চাষেও ব্যপক সফলতার আলো ছড়াচ্ছেন তার বাগান থেকে। তিনি ফসল উৎপাদনে বাজারের কোন রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ব্যবহার করেন না। এর পরিবর্তে তিনি  ব্যবহার নিজের তৈরী কীটনাশক এবং কম্পোস্ট সার।

আমির হোসেন যখন ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র, তখনই তার দিনমজুর পিতা মোজাহার ব্যাপারীর মৃত্যু হয়। ফলে অসহায় দরিদ্র পরিবারের সন্তান আমির হোসেন বাধ্য হয়ে লেখাপড়া ছেড়ে প্রথমে একটি হোটেলের মেসিয়ারের কাজ নেন। কিন্তু তাতেও ভাগ্যের পরিবর্তন হয়না, পেটে জোটে না দু’বেলার দু’মুঠো আহার।

ধার-দেনা করে থেকে ৫ হাজার টাকা লোন নিয়ে ১৯৯৬ সালের শেষের দিকে পৈতৃক সুত্রে পাওয়া ৫ শতক জমিতে ১০০টি পেঁপের চারা লাগান আমির হোসেন। ওই জমিতেই সাথি ফসল হিসেবে চাষ করেন আদা। ছয় থেকে সাত মাসের চেষ্টায় পেঁপে ও আদা বিক্রি করে তার আয় হয় ১৫ হাজার টাকা।  এভাবে বছর খানেক পর সবজি বিক্রির টাকা জমিয়ে ১ বিঘা জমি কিনে নেয়। সেখানেও একই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করেন। অক্লান্ত পরিশ্রম ও মেধা খাটিয়ে চাষে সফল চাষি হিসেবে এভাবেই নিজকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। শুধু উৎপাদন নয় নিজে হাতেই আবার তার এই সবজি বিক্রয় করেন স্থানীয় ভরতখালী বাজারে।


প্রতি বছর খরচ বাদে তার আয় হয় ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা। আমির হোসেন জানান, বর্তমানে তিনি দুই বিঘা জমিতে পেঁপে ও সাথি ফসল হিসেবে হলুদ, কলা  আড়াই বিঘা, হলুদ ও লেবু ১০ শতক, কচু ১৬ শতক, মরিচ ১৬ শতক, ধান ২ বিঘা, গেন্ডারি আঁখ ১৬ শতক, আদা ২ বিঘা, নেপিয়ার ঘাস ১০ শতক, ৬৩ শতকে কুমড়া ও সাথি ফসল শসা, ১০ শতকে ধনচে, ১৬ শতকে পটল, ও সাথি ফসল হিসেবে আদা চাষ করছেন। এছাড়া বৃদ্ধ বয়সের কখনো যদি কৃষি কাজ করতে সমস্যা হয় সে জন্যই তিনি ১ একর জমিতে চাষ করেছেন উন্নত জাতের মালটা সাথী ফসল হিসাবে মালটার বাগানে আছে মুখ কচু। তার জমিতে প্রতিদিন ২ জন পুরুষ ও ২ জন মহিলা শ্রমিক মাসিক সাড়ে ৭ হাজার টাকা বেতনে কাজ করেন। এছাড়া তিনি ৫০ শতক জমিতে বসতবাড়ী করে ঘরের চারপাশে তিনি বিভিন্ন জাতের ফল ও ঔষধি গাছ লাগিয়েছেন।

আমির হোসেনের স্ত্রী করিমন বেগম একজন আদর্শ গৃহিনী। তার এক ছেলে ও দুই মেয়ে। সবার বড় ছেলে আয়নুর রহমান স্নাতক পাসের পর বর্তমানে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডে কর্মরত। বড় মেয়ে লিপি বেগম এইচএসসি পর্যন্ত পড়ার পর বিয়ে হয়েছে। ছোট মেয়ে আরাফা আক্তার এ বছর বগুড়ায় ¯œাতক সম্মানে অধ্যায়নরত। ছেলে মেয়েদের বড় করতে যে অর্থ প্রয়োজন হয়েছে তার সবজি বিক্রির টাকা থেকেই জোগার করতে হয়েছে। এছাড়া তিনি ইরি-বোরো ও আমন ধান চাষ করে অধিক ফসল উৎপাদনেও সাফল্য অর্জন করেছেন। ফসল উৎপাদনে আমির প্রচলিত কীঁটনাশক ব্যবহার করেন না। এ জন্য তিনি বিভিন্ন গাছের রস মিসিয়ে নিজেই উদ্ভাবন করেছেন কীটনাশক। ১৫ লিটার পানিতে ১৫ ফোঁটা কেরোসিন তেল ও বিষকাঁটালি নামের এক প্রকার গাছের রস মিশিয়ে ক্ষেতে ¯েপ্র করে পোকা দমন করেন। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তিনি সফলও হয়েছেন। এছাড়া রাসায়নিক সারের পরিবর্তে তিনি ব্যবহার করেন কেঁচো, গরুর গোবর, কচুরি পানা, পরিত্যাক্ত জমিতে ধনচে চাষ করে বিশেষ কায়দায় এই ধনচের চারা জমিতে মিসিয়ে তা থেকে তৈরি করা হয় কম্পোস্ট ও জৈব সার।

সফলতার নানা কথা বর্ননা করতে গিয়ে আমির হোসেন আরো জানান, অধিক লাভের আশার ধান চাষ করতে গিয়ে কৃষকরা দিন দিন পুজি হাড়াচ্ছে তাই প্রয়োজনের বেশী ধান চাষ নয় বরং সবজি চাষেই কৃষকরা দেখতে পারবে সফলতার মুখ।

সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও ধনারুহা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল করিম জানান, একটি জমিতে একসঙ্গে ৪টি ফসল চাষের সফলতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করায় কৃষক আমির হোসেনের ভাগ্যে মিলেছে বিভিন্ন পুরস্কার। কৃষিক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার। ২০১৭ সালের ১৬ জুলাই ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তার হাতে পুরস্কার তুলে দেন বাংলাদেশের সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া বাংলাদেশ একাডেমি অব অ্যাগ্রিকালচার থেকে সম্মাননা ক্রেষ্ট এবং জেলা ও উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে বহু সনদ পেয়েছেন এই আমির হোসেন। তার কৃষি উৎপাদন চিন্তা আমাদের মুগ্ধ করেছে।

মুক্তিনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আরশাদ আজিজ রোকন জানান, কৃষক আমির হোসেন আমার ইউনিয়নের গর্ভ। তার ইন্টারভিউ নিতে বিভিন্ন গণমাধ্যম এই ইউনিয়নে আসায় এই ইউনিয়নটি ক্রমেই দেশের বিদেশে পরিচিত হয়েছে।

সাঘাটা উপজেলা কৃষি অফিসার মাবিনুজ্জামান জানান, নিয়মিত কৃষি বিভাগ থেকে আমির হোসেনকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হয়। এছাড়া কৃষি বিভাগের বিভিন্ন সভা সমাবেশে দৃষ্টান্ত হিসেবে আমির হোসেনকে উপস্থিত করা হয় অন্যান্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য। যাতে তার এই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে কৃষকরা তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারে।