Tuesday, March 29, 2016

লবণ বিক্রেতা থেকে মেঘনা গ্রুপের মালিক

প্রত্যেক সফল মানুষেরই জীবনে একটি গল্প থাকে। তাকে ঐ সফলতার জন্য অনেক কষ্ট ও চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হয়েছে। পাড়ি দিতে হয়েছে অনেক কন্টকাকির্ন পথ। যাদের পরিশ্রমের ফল আমরা দেখতে পাই। কিন্তু হয়তো আমরা অনেকেই তাদেরকে জানিনা। আজ তেমনি একজন সফল মানুষ সম্পর্কে জানবো। তিনি হলেন ‘দ্য বিজনেস আইকন অব বাংলাদেশ’র একজন।
আমরা ফ্রেশ ব্রান্ডের অনেক পন্যই বাজার থেকে ক্রয় করে থাকি। কিন্তু এটা যে কার পরিশ্রমের ফসল তা আমরা অনেকেই জানিনা। আর তিনি হলেন মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল। অস্বচ্ছল পরিবারে জন্ম নেওয়া মোস্তফা কামাল এমনিতেই নিজেকে একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি হিসেবে গড়ে তুলেননি। অতিক্রম করেছেন অনেক কষ্টকর পথ। সেই কষ্টকর পথ অতিক্রম আজ তিনি একজন বাংলাদেশের সফলতম প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি।
দেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি কিভাবে নিজেকে একজন সফল ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তা বলেছেন।
মোস্তফা কামালের জন্ম কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রামে। তিনি ছিলেন কৃষি নির্ভর অস্বচ্ছল পরিবারের সন্তান। নিজ গ্রামের স্কুলে পাঠ চুকিয়ে গ্রাম থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরের একটি স্কুলে ভর্তি হন।
সেখানে তার যেতে হতো হেঁটে। তাই তিনি বাবার কাছে বায়না ধরেন তাকে সাইকেল কিনে দিতে হবে। বাবা অপারগতা প্রকাশ করলে রাগ করে তিনি ঢাকায় চলে আসেন। সেই থেকেই তার জীবনের মোড় ঘুরে যায়
তিনি ঢাকায় এসে যাত্রাবাড়িতে থাকতেন। সেখানে থেকে ৭৫ টাকায় একটি চাকরি নেন। এ আয় থেকে কিছু টাকা জমাতে থাকেন। যাত্রাবাড়িতে এক কাকার সুপারির দোকানে বসতেন তিনি। আর এখান থেকে তিনি ব্যবসার অনুপ্রেরণা পান। সেই জমানো টাকা দিয়েই তিনি ব্যবসা শুরু করেন।
শুরুতেই ঢাকার আশপাশের জেলাগুলো থেকে সুপারী, আদা, রসুন, লবনসহ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে এসে ব্যবসা শুরু করেন। প্রথম দিকে ভালো ব্যবসা করেন তিনি। এরপর কয়েকজন বন্ধু নিয়ে ব্যবসার পরিসর বড় করেন।
এক পর্যায়ে ব্যবসা বড় হলে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করা শুরু করেন। কিন্তু প্রথম ধাক্কা খান চট্টগ্রাম পোর্টে।তার কিছু পণ্য আটকে যাওয়ার প্রায় দেড় বছর পর সেগুলো ফেরত পান।
এতে তার ব্যবসায় ধস নামে। কিন্তু তাতেও তিনি থেমে যাননি। অল্প টাকায় তিনি মেঘনা নদীর পাড়ে জমি কিনে তাতে তেলের কারখানা দেন। যাতে তিনি নিজেই তেল পেকেট জাত করে পুণরায় উঠে আসার চেষ্টা করেন।
আর তিনি তাতে বেশ কিছু সাফল্য অর্জন করেন। পর্যায়ক্রমে তিনি প্রায় ১৫টি কোম্পানির মালিক হন।
মোস্তফা কামাল তরুনদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘তোমরা যারা ব্যবসা শুরু করতে চাও। তবে শুরুতেই প্রচুর পড়াশোনা কর। আর নতুন কিছু করার চেষ্টা কর।’

Friday, March 25, 2016

পণ্যের মান আর বৈচিত্র্য থাকলে মুনাফা নিয়ে ভাবতে হবে না

আশির দশকে প্রতিষ্ঠিত উত্তরাঞ্চলের শিল্পপ্রতিষ্ঠান রংপুর ফাউন্ড্রি লিমিটেডের (আরএফএল) শুরু খাওয়ার পানির নলকূপ দিয়ে। এ নলকূপই এ প্রতিষ্ঠানের দেশব্যাপী পরিচিতি আনে। পরে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক, পিভিসি পণ্যের উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণে আসে প্রতিষ্ঠানটি। সেই কম্পানি যুক্ত হয় আমজাদ খান চৌধুরীর প্রাণ গ্রুপের সঙ্গে। নাম হয় প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ, যার পণ্য এখন ৯৪টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) আহসান খান চৌধুরীর মতে, চরম ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতার মধ্যেও গুণগতমানের বৈচিত্র্যপূর্ণ পণ্য উৎপাদন করতে পারলে মুনাফা নিয়ে ভাবতে হবে না। তরুণ প্রজন্মের এই ব্যবসায়ী নিজের ব্যবসা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন কালের কণ্ঠের প্রতিবেদক ফারজানা লাবনীর সঙ্গে

১৯৯২ সালে ২২ বছরের আমেরিকায় ব্যবসায় প্রশাসনে পড়ালেখা শেষ করে সে দেশেই একাধিক প্রতিষ্ঠানে উচ্চ বেতনে চাকরির ডাক পান তরুণ আহসান খান চৌধুরী। কিন্তু তাতে সাড়া না দিয়ে শিকড়ের টানে দেশে ফিরে আসেন। মনের মাঝে অদম্য ইচ্ছা, এ দেশের মানুষকে নিয়েই কিছু করা, যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের পরিচিতি বাড়বে। এমন হিসাব মেলাতেই বাবা আমজাদ খান চৌধুরীর প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ডিএমডি বলেন, 'গুণগত মানের পণ্য পৌঁছে দেওয়াই সবচেয়ে বড় নীতি হওয়া উচিত। শুধু নিজে ভালো থাকব তা নয় চেষ্টা ছিল সবাইকে নিয়ে বাঁচব।'

আহসান খান চৌধুরী বলেন, 'প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ ছিল আমার জন্য সবচেয়ে ভালো প্ল্যাটফর্ম। বাবাকেও সে সময় সাহায্য করার প্রয়োজন ছিল। শুরু হয় নতুন পথচলা। বাংলার ঘরে ঘরে প্রাণের পণ্য পৌঁছে দেওয়াই ছিল আমার লক্ষ্য। পণ্য বৈচিত্র্যকরণ ছিল আমার ব্যবসার অন্যতম কৌশল। ব্যবসার শুরু থেকেই নানা সমস্যা সামনে এসেছে। এখনো আছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই সমস্যাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। আমি বিশ্বাস করি যে চ্যালেঞ্জকে দক্ষতা ও মেধার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারবে সে-ই এগিয়ে যাবে।'

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বাবা আমজাদ খান চৌধুরীর উপদেশ স্মরণ করে এই তরুণ উদ্যোক্তা বলেন, 'জীবনে সফলতার জন্য সংক্ষিপ্ত কোনো পথ নেই। এই কথাগুলো অনুসরণের চেষ্টা করি। আমি বিশ্বাস করি, যেকোনো অর্জনের পেছনে থাকতে হবে কঠিন পরিশ্রম, সততা ও অধ্যবসায়। জীবন চলার পথে পাহাড়-সমান সমস্যা আসবে। এতে বিচলিত না হয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। যে কাজ করি তা সততার সঙ্গে মনে-প্রাণে করি।'

ব্যবসার জন্য বাংলাদেশকে অপার সম্ভাবনাময় বলে মনে করেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, 'এ দেশে কোনো প্রতিবন্ধকতা আছে তা আমি মনে করি না। বরং অসম্ভব সম্ভাবনাময় একটি দেশ বাংলাদেশ। আমাদের দিগন্ত বিস্তৃত আবাদি ও উর্বর জমি, অবারিত নদী আর আছে কর্মঠ এক বিশাল জনগোষ্ঠী। এত সুবিধা খুব কম দেশেই রয়েছে।' তিনি বলেন, পৃথিবীর এমন অনেক দেশ আছে যেখানে মাইলের পর মাইল জমি রয়েছে; কিন্তু তাতে আবাদ হয় না। আর এ দেশে ঘরের ভেতরে টবের মধ্যে দুটি বীজ লাগালেও চারা গজিয়ে যায়। একটু পরিচর্যা করলে সেখান থেকে ফলও পাওয়া যায়। বাংলাদেশের এই উর্বর জমি কাজে লাগাতে না পারা হবে আমাদের ব্যর্থতা।'

দোষারোপের সংস্কৃতি পাল্টাতে হবে উল্লেখ করে আহসান খান চৌধুরী বলেন, 'নিজের ব্যর্থতার জন্য অন্যকে দায়ী করার মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। তাহলেই আমাদের দেশের উন্নয়ন আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবে। রাজনীতিতেও স্থিতিশীলিতা আসবে।'

'এদেশে মানুষের অভাব নেই; কিন্তু দক্ষ জনশক্তির অভাব রয়েছে। দক্ষতা বাড়ানোর জন্য সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে পদক্ষেপ নিতে হবে। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও এ দেশের মানুষকে এবং প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এ দায়িত্ব সবার, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের ওপর এর দায়টা বেশি'- বললেন আহসান খান চৈধুরী।

নতুন প্রজন্মের ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে তিনি বলেন, 'গত ১০ বছরে ব্যবসায়ের ধরন পাল্টেছে। লেখাপড়া জানা উদ্যোক্তারা এখন ব্যবসায় আসছেন। এতে ব্যবসার গুণগতমানের উন্নয়ন হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে বিশ্ব এখন এক মঞ্চে। এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের ব্যবসায়ীদের যোগাযোগ এখন মুহূর্তের ব্যাপার। ভোক্তারাও জানতে পারছেন কোন দেশে কী পাওয়া যাচ্ছে। তাই প্রতিযোগিতাও আগের চেয়ে বেশি। যে ব্যবসায়ী গুণগতমানের বৈচিত্র্যপূর্ণ পণ্য উৎপাদন করবেন তাঁকে মুনাফা নিয়ে ভাবতে হবে না। তাই ভোক্তার কাছে পণ্যের গুণগতমানের পণ্য পৌঁছে দেওয়াই সবচেয়ে বড় নীতি হওয়া উচিত একজন ব্যবসায়ীর।' তিনি বলেন, দেশের ভাবমূর্তি ভালো হলে পণ্য রপ্তানিতেও সুফল পাওয়া যায়। বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্য, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে ব্যবসায়ীরা যাতে সহজে ভিসা সুবিধা পান সে বিষয়ে সরকারের নজর দেওয়া উচিত।

বর্তমানে খাদ্য ও প্লাস্টিক এ দুটি খাতে সর্বাধিক বহুমুখী পণ্যের সমাহার রয়েছে প্রাণের। আহসান খান চৌধুরী জানান, 'বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির প্রডাক্ট লাইনে রয়েছে ৫০০টিরও বেশি পণ্য। হালকা প্রকৌশল শিল্পে এবং প্লাস্টিক খাতেও রয়েছে শ্রেষ্ঠত্ব। এ খাতে দুই হাজারটিরও বেশি উৎপাদিত দ্রব্য রয়েছে প্রাণ গ্রুপে। আমাদের উৎপাদিত পণ্যের কাঁচামাল দেশের প্রান্তিকপর্যায়ের কৃষকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে থাকি। এ জন্য প্রায় ৭৮ হাজার চুক্তিবদ্ধ কৃষক সরাসরি আমাদের সঙ্গে কাজ করছেন। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ১৩টি অত্যাধুনিক কারখানায় ব্যবহৃত করা হয় বিশ্বসেরা প্রযুক্তি। এসব কারখানায় সরাসরি কর্মসংস্থান হয়েছে ৪০ হাজারেরও বেশি নারী-পুরুষের। পরোক্ষভাবেও এ প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কাজে জড়িত রয়েছে বড় অঙ্কের জনগোষ্ঠী। সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে সাত লাখের বেশি মানুষের জীবিকা প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ওপর নির্ভরশীল।'

প্রাণের পণ্য বর্তমানে ৯৪টি দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। এ সংখ্যা আরো বাড়বে উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠানের ডিএমডি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকতে গুণগতমানের পণ্য উৎপাদনের বিকল্প নেই। বাজার চাহিদা বিবেচনায় পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে। এ জন্য আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং গবেষণার প্রয়োজন। প্রাণ গ্রুপের কর্মীদের দক্ষতা বাড়াতে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে আহসান খান চৌধুরী বলেন, 'আমাদের গ্রুপের লক্ষ্য হলো লাভজনক ব্যবসায়িক কার্যক্রমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে মানুষের মর্যাদা ও আত্মসম্মান বৃদ্ধি করা। সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়টি মাথায় রেখেই আমাদের ব্যবসায় অগ্রসর হওয়া। এ ক্ষেত্রে আমরা গ্রামীণ জনগোষ্ঠী বিশেষ করে গ্রামীণ নারীদের কর্মসংস্থানের বিষয়ে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছি। আমাদের বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে কর্মীদের মধ্যে মহিলাকর্মীর সংখ্যা ৮০ শতাংশেরও বেশি।'

কৃষি ক্ষেত্রে উন্নয়নে সার-বীজ সরবরাহ, উন্নত চাষের জন্য প্রশিক্ষণ এবং উৎপন্ন ফসল বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা করে প্রাণ। আহসান খান চৌধুরী বলেন, 'প্রক্রিয়াজাত খাদ্য এবং প্লাস্টিক পণ্যের পরিধি আরো বাড়াতে আমরা কাজ করছি। স্থানীয় বাজারে বিক্রি বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে রপ্তানি সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছি। আমার ইচ্ছা প্রাণের ব্র্যান্ডে বাংলাদেশের সুনাম বাড়বে। পৃথিবী জানুক এ দেশের কৃষকের কথা।'

বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন জানিয়ে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ডিএমডি বলেন, অস্থিতিশীল পরিস্থিতির নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে

উৎপাদক, প্রক্রিয়াজাতকারী, সরবরাহকারী, ভোক্তাসহ সবার ওপর। তিনি আশা করেন, এ সমস্যার অবশ্যই সমাধান রয়েছে এবং তা হবেই। তখন বর্তমান সংকট কেটে যাবে।'
সূত্র : ১ ডিসেম্বর, ২০১৩ ০০:০০ কালের কণ্ঠ

বিপণন বিশেষজ্ঞ এসিআই সৈয়দ আলমগীর

স্বাধীনতার পর থেকে ৯০ দশক পর্যন্ত বাংলাদেশে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর একচেটিয়া ব্যবসার ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিলো এদেশেরই এক কৃতি পুরুষ-সৈয়দ আলমগীর। বাজার বিশেষজ্ঞ বলে যার সুখ্যাতি ইতোমধ্যেই দেশ থেকে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। ভোক্তাদের চাহিদা নিরূপণসহ সঠিক মান নিয়ন্ত্রণ করে কিভাবে স্বল্পমূল্যে তা সকলের কাছে পৌঁছে দেয়া যায় তার সফল এক কিং-মেকার সৈয়দ আলমগীর। খাবার ছাড়াও যে ব্যবহৃত দ্রব্যসামগ্রীতে হালাল বিশেষণ দিয়ে বাজার দখল করা যায় তাও তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন এ্যারোমেটিক সাবানে ১০০% হালাল সাবান শ্লোগান দিয়ে। তাইতো তাঁকে বলা হয় বাংলাদেশের ‘ফিলিপ কটলার।’
মার্কেটিং-এর যুগান্তকারী বইসমূহের লেখক ফিলিপ কটলারের নাম কে না শুনেছে? তার ‘প্রিন্সিপালস অব মার্কেটিং’ বইটি ‘বাইবেল অব মার্কেটিং’ হিসেবে স্বীকৃত। সারাবিশ্বের প্রত্যেক মার্কেটিং গ্রাজুয়েট ফিলিপ কটলারের নাম জানে। কারণ সারাবিশ্বের প্রায় সব মার্কেটিং শিক্ষার্থীকেই ‘প্রিন্সিপালস অব মার্কেটিং’ বইটি পাঠ্যপুস্তক হিসেবে পড়তে হয়।

কোনাবাড়ি থেকে ইউরোপ-আমেরিকায় কেয়া কসমেটিকস

।।এম এম মাসুদ।।
ভিশন এবং মিশন থাকলে যে কেউ সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছাতে পারে। যার বাস্তব উদাহরণ আবদুল খালেক পাঠান। বাল্যকাল থেকেই উদ্যোক্তা হওয়ার ভিশন ছিল তার। এখন তিনি কেয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান। দেশের জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’ দিয়েই যে প্রতিষ্ঠানটি বেশি পরিচিত। ঢাকার গাজীপুরের কোনবাড়িতে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। এই কোনাবাড়ি থেকেই উদ্যম, নিষ্ঠা, মেধা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে ব্যবসাকে নিয়ে গেছেন ইউরোপ-আমেরিকার মতো দেশে। এখন দেশের অন্যতম শীর্ষ করপোরেট প্রতিষ্ঠান কেয়া গ্রুপ। কেয়া গ্রুপ গত কয়েক বছরে এর প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ডজনের বেশি। একই সঙ্গে বেড়েছে বার্ষিক টার্নওভার ও প্রতিষ্ঠানে জনবলের সংখ্যা। কেয়া গ্রুপের দাবি, দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে গ্রুপটি। এ গ্রুপে কয়েক হাজার শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তা কাজ করছেন। এ গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয় কোষাগারে রাজস্ব জমা দিচ্ছে শত কোটি টাকা। প্রসাধনী, পোশাক, এগ্রো ও পরিবহন খাতের নেতৃত্বে রয়েছে গ্রুপটি। এসবের পাশাপাশি গ্রুপের কেয়া কসমেটিকস এখন দেশের অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান।

তরুণদের হাতে দেশের শীর্ষ ব্র্যান্ড

আকিজ, আবুল খায়ের, স্কয়ার গ্রুপ, প্রাণ-আরফএফএল, এপেক্স ও নাভানা গ্রুপ 

: বলা হয়ে থাকে ‘পরিকল্পনা’ কাজের অর্ধেক। আর একথাটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রযজ্য। ব্যবসার ক্ষেত্রে এ শব্দটি আরও বেশি প্রয়োজন। শুরুতেই যাদের পরিকল্পনা ছিল ব্যবসাকে অনেক দূর নিয়ে যাবেন। তাদের সেই চিন্তা-চেতনা ঠিক রেখে যোগ্য উত্তরাধিকারীর হাত ধরে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম টিকে থাকে পারিবারিক ব্যবসা। দূরদর্শী নতুন প্রজন্মের হাতে সেটা আরও বিকশিত হয়। দেশের শীর্ষ কয়েকটি করপোরেট প্রতিষ্ঠান তার উজ্জল দৃষ্টান্ত। এসব কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতারা না ফেরার দেশে চলে গেলেও থেমে নেই ব্যবসায়িক অগ্রগতি। দ্বিতীয় প্রজন্মের হাত ধরে আরও সম্প্রসারণ হচ্ছে এসব শিল্প গ্রুপ। 

আকিজ গ্রুপ: 
দেশের অন্যতম শীর্ষ করপোরেট প্রতিষ্ঠান আকিজ গ্রুপ। ২০০৬ সালে মারা যান এর প্রতিষ্ঠাতা শেখ আকিজ উদ্দিন। গ্রুপের দুই ডজন প্রতিষ্ঠান ভাগ করে দিয়ে যান ১০ ছেলের মধ্যে। আকিজ গ্রুপ এখন দুই ভাগে ভাগ হলেও গত ১০ বছরে এর প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিন ডজনের বেশি। একই সঙ্গে বেড়েছে বার্ষিক টার্নওভার ও প্রতিষ্ঠানে জনবলের সংখ্যা। ২০০৬ সালে আকিজ গ্রুপে ৪০ হাজার জনবল থাকলেও এখন তা বেড়ে হয়েছে ৬০ হাজারের বেশি।

আকিজ গ্রুপের দাবি, ৪০ বছর ধরে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে গ্রুপটি। এ গ্রুপে প্রায় ৬০ হাজার শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তা কাজ করছেন। গ্রুপটির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করছে প্রায় অর্ধকোটি মানুষ। এ গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয় কোষাগারে রাজস্ব জমা দিচ্ছে বছরে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। পাট, বেভারেজ ও টোব্যাকো খাতের নেতৃত্বে রয়েছে আকিজ গ্রুপ। দেশের সবচেয়ে বড় জুট মিলটিও এখন তাদের। বেভারেজের পাশাপাশি গ্রুপের ঢাকা টোব্যাকোও এখন দেশের অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান। আকিজ ফ্লাওয়ার মিলস, আকিজ শিপিং লাইন, পারফেক্ট টোব্যাকো কোম্পানি লিমিটেড এর অন্যতম। এ সাফল্যের পেছনে বাবার রেখে যাওয়া নীতিকেই বড় করে দেখছেন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ বশির উদ্দিন। তিনি বলেন, বাবার রেখে যাওয়া ব্যবসা তারা ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন। বাবার শেখানো নিয়ম-নীতি মেনে তারা ব্যবসা করছেন। চেষ্টা করে যাচ্ছেন একে আরও বিকশিত করার। তিনি বলেন, আকিজ গ্রুপের পরিবেশক, কর্মী বাহিনী, ব্যবস্থাপনাসহ সামগ্রিক ব্যবসায়িক নীতিতে গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতার একটা বড় প্রভাব রয়েছে। তার বাবার অনুপস্থিতিতেও সবকিছু তার মতো করেই চলছে।

আবুল খায়ের গ্রুপ: ১৯৫৩ সালে বিড়ি ব্যবসায়ী আবুল খায়েরের হাত ধরে আবুল খায়ের গ্রুপের যাত্রা। চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এলাকায় আবুল বিড়ি কোম্পানি থেকেই এই গ্রুপের ব্যবসা শুরু। ১৯৭৮ সালে এর প্রতিষ্ঠাতা আবুল খায়ের মারা যান। এর পর একে একে গ্রুপে যোগ হয়েছে এক ডজনের বেশি মাঝারি ও ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান। আবুল খায়েরের উত্তরসূরিরা গড়ে তুলেছেন স্টিল মিল, সিমেন্ট কারখানা, চা বাগান, ডেইরি প্রডাক্টসহ অনেক প্রতিষ্ঠান। ১৯৯৩ সালে আবুল খায়ের গ্রুপ স্টারশিপ কনডেন্সড মিল্ক দিয়ে দুগ্ধ খাতে নাম লেখায়। এর পর ১৯৯৬ সালে যোগ হয় স্টারশিপ ফুল ক্রিম মিল্ক পাউডার। ১৯৯৭ সালে আসে মার্কস ফুল ক্রিম মিল্ক পাউডার। আর সিলন চা নিয়ে বাজারে আসে ২০০৪ সালে। দেশের সিমেন্ট খাতের বেশির ভাগ চাহিদা পূরণে সক্ষম আবুল খায়েরের প্রতিষ্ঠান শাহ সিমেন্ট। ১৯৯৩ সালে আবুল খায়ের গরু মার্কা ঢেউটিন দিয়ে ইস্পাত শিল্পে নাম লেখায়। অতিসম্প্রতি তারা বড় ধরনের বিনিয়োগ করেছে একেএস টিএমটি ৫০০ডব্লি¬উ ইস্পাতের রড উৎপাদনে।

স্কয়ার গ্রুপ: স্কয়ারের শুরুটা ১৯৫৮ সালে। তিন বন্ধু মিলে কারখানা স্থাপন করেন স্যামসন এইচ চৌধুরী। ২০১২ সালে স্যামসন এইচ চৌধুরী প্রয়াত হলেও প্রতিষ্ঠান চলছে আপন গতিতে। গত চার বছরেও সঙ্কটে পড়েনি গ্রুপটি। গ্রুপের সব পণ্যের সুনাম অক্ষুণœ রয়েছে। গ্রুপের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন স্যামসন এইচ চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ পুত্র স্যামুয়েল এস চৌধুরী। 
বাবার অবর্তমানেও সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন সন্তানরা। স্যামসন এইচ চৌধুরীর জীবদ্দশায় ২০০৬ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত গ্রুপের মূল প্রতিষ্ঠান স্কয়ার ফার্মার বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ১৭.৫১ শতাংশ। পরবর্তী তিন বছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭.৮৮ শতাংশে। চলতি হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে কোম্পানিটির মুনাফার প্রবৃদ্ধি আরও বেড়েছে। ২০১৪ সালে পুরো ফার্মাসিউটিক্যালস খাত যেখানে ১১.৩৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে, সেখানে স্কয়ার ফার্মার প্রবৃদ্ধি ছিল ২৫.৩৬ শতাংশ। স্কয়ার ফার্মার সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান স্কয়ার ফর্মুলেশন ছাড়াও স্কয়ার টেক্সটাইলস, স্কয়ার ফ্যাশনস ও স্কয়ার হসপিটাল লিমিটেড নামে তিনটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান রয়েছে গ্রুপটির। এর বাইরে স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, স্কয়ার টয়লেট্রিজ, মাছরাঙা টেলিভিশনসহ ২৪টি সিস্টার কনসার্নও রয়েছে। অংশীদারিত্ব রয়েছে ব্যাংক ও বীমা ব্যবসায়। স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের অধীন মসলা ও ভোজ্যতেলসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য বাজারজাত করা হয় রাঁধুনী, রুচি ও চাষী ব্র্যান্ডের মাধ্যমে। বর্তমানে সংশ্লি¬ষ্ট খাতে এটি মার্কেট লিডার হিসেবে প্রভাব বিস্তার করে রয়েছে। এ ছাড়া স্কয়ার টয়লেট্রিজের অধীন বিভিন্ন প্রসাধনসামগ্রী উৎপাদন ও বাজারজাত করা হয়। এরই মধ্যে স্কয়ার হাসপাতাল দেশের শীর্ষস্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। ইউনাইটেড হাসপাতালেও বিনিয়োগ রয়েছে স্কয়ার ফার্মার।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ: প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা আমজাদ খান চৌধুরী। ১৯৩৯ সালের ১০ নভেম্বর নাটোরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ছিলেন সেনাবাহিনীর বড় কর্মকর্তা। সেখান থেকে অবসর নিয়ে শুরু করলেন দেশ নিয়ে কাজ। দেশে বেকারত্ব কমাতে হবে, দেশের পণ্য মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে এই ছিল ভাবনা। রংপুরে ১৯৮১ সালে রংপুর ফাউন্ড্রি লিমিটেডের (আরএফএল) পথচলা শুরু। দেশে তখন বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট। টিউবওয়েল বসানো হচ্ছে পানির জন্য। সেসময় আমজাদ খান রংপুরে টিউবওয়েল তৈরির কারখানা হিসেবে আরএফএল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৫ সালে গড়ে তোলেন এগ্রিকালচারাল মার্কেটিং কোম্পানি। যা বর্তমানে প্রাণ গ্রুপ হিসেবে পরিচিত। এ গ্রুপের উৎপাদন তালিকায় রয়েছে সাড়ে ৩ হাজারের বেশি পণ্য। বদনা থেকে শুরু করে নলকূপ সামগ্রী, প্লাস্টিকের চেয়ার টেবিল থেকে শুরু করে ফ্যান, চিপস-কোমল পানীয় থেকে শুরু করে হলুদ-মরিচের গুঁড়া। ১৯৯৬ সালে ফ্রান্সে ‘প্রাণ’ পণ্য প্রেরণের মাধ্যমে বহির্বিশ্বে রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে আফ্রিকা মহাদেশ ছাড়া এশিয়া, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের ১২৩টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে প্রাণ গ্রুপের পণ্য। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির কর্মীসংখ্যা প্রায় ৬০ হাজারের বেশি। গ্রুপের রয়েছে ২৫টিরও বেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠান। আমজাদ খান চৌধুরীর চার সন্তান। তারা হলেন- আজার খান চৌধুরী, ডা. সেরা হক, আহসান খান চৌধুরী ও উজমা চৌধুরী। তাদের মধ্যে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন আহসান খান চৌধুরী এবং উজমা চৌধুরী গ্রুপের পরিচালক (করপোরেট ফিন্যান্স) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার সহধর্মিণী সাবিহা আমজাদ পরিবারের দায়িত্ব গ্রহণের পাশাপাশি প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করে এসেছেন। আহসান খান চৌধুরী জানান, আমাদের লক্ষ্য হলো বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্বল্পমূল্যে মানসম্পন্ন প্রক্রিয়াজাত ও প্যাকেটজাত খাদ্য সরবরাহ করা। এ লক্ষ্যে আমরা বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তিনি বলেন, বাবার দুটি স্বপ্ন ছিল। এর একটি নাটোরে একটি হাসপাতাল করা। আরেকটি দেশের ডেইরি শিল্পের উন্নয়ন। এ স্বপ্ন সফল হয়েছে। 

নাভানা গ্রুপ: বাংলাদেশের একসময়কার সবচেয়ে বৃহত শিল্প গ্রুপ ছিল ইসলাম গ্রুপ। ১৯৬৪ সাল থেকে জহুরুল ইসলামের দক্ষ হাতে এটি গড়ে ওঠে। তার ইন্তেকালের পর ইসলাম গ্রুপের নতুন চেয়ারম্যান হন শফিউল ইসলাম কামাল। দায়িত্বে এসেই প্রতিষ্ঠানটির নতুন নাম দেন ‘নাভানা গ্রুপ’। তাদের একাধিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- নাভানা লিমিটেড, নাভানা ব্যাটারিস লিমিটেড, নাভানা রিয়েল এস্টেট লিমিটেড, নাভানা কন্সট্রাকশন লিমিটেড, নাভানা টেক্সটাইল লিমিটেড, নাভানা ইন্টারলিঙ্ক লিমিটেড, বিপণন লিমিটেড, নাভানা ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড, নাভানা কম্পিউটার অ্যান্ড টেকনোলজি লিমিটেড, নাভানা সফটওয়্যার লিমিটেড, নাভানা ইলেক্ট্রনিক্স লিমিটেড, নাভানা ট্যাক্সিক্যাব কোম্পানি লিমিটেড, নাভানা সিএনজি লিমিটেড, নাভানা রিনিউএবল এনার্জি লিমিটেড, নাভানা লজিস্টিক্স লিমিটেড, নাভানা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড, নাভানা ফার্নিচার লিমিটেড ইত্যাদি। শফিউল ইসলাম কামাল ১৯৬৮ সালে ইসলাম গ্রুপে যোগ দেন। বর্তমানে নাভানা গ্রুপ শুধু ইসলাম গ্রুপের খ্যাতি ধরেই রাখেনি বরং আধুনিক উদ্ভাবনা, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ও সু-দক্ষ পরিচালনার মাধ্যমে হয়ে উঠেছে আরো উন্নত, বিখ্যাত ও প্রভাবশালী। 

এপেক্স গ্রুপ: ১৯৭৫ সালে অ্যাপেক্স ট্যানারির প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ব্যবসা জীবন শুরু করেন সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী। ইতালিতে চামড়া রপ্তানির মধ্য দিয়ে অ্যাপেক্স ট্যানারির যাত্রা। বিশ্বের ২৫টিরও বেশি দেশে অ্যাপেক্সের জুতা বিক্রি হয়। গড়ে তুলেছেন এক ডজনের বেশি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে অ্যাপেক্স ট্যানারি, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার, এপেক্স ফার্মা, ব্লু ওশান ফুটওয়্যার, অ্যাপেক্স এন্টারপ্রাইজ, অ্যাপেক্স ইনভেস্টমেন্ট, অ্যাপেক্স অ্যাডভারটাইজিংসহ আরো প্রতিষ্ঠান। দেশের শীর্ষস্থানীয় জুতা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের একটি। বর্তমনে অ্যাপেক্স’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে হাল ধরেছেন ছেলে সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর। অন্যদিকে ‘ঢাকা মেট্রপলিটন’ চেম্বারের এ যাবতকালের সবচেয়ে তরুণ প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের এখন লক্ষ্য অ্যাপেক্স চামড়া দিয়ে কম দামে সব ধরনের জুতা প্রস্তুত করা।  এমনকি চপ্পল থেকে শুরু করে সব বয়সীর ক্রেতাদের জন্য নতুন নতুন প্রোডাক্ট বাজারে অনা। 

এসব কোম্পানি ছাড়াও দেশের বেশ কয়েকটি শীর্ষ ব্র্যান্ড যাদের প্রতিষ্ঠাতারা এখন মারা যাননি। কিন্তু তাদের ছেলে-মেয়েরা কোম্পানির সঙ্গে দ্বিতীয় প্রজন্মের হয়ে যুক্ত হয়েছেন এখনই। অর্থাৎ আগামীতে তারাই কোম্পানির মূলে থেকে হাল ধরবেন বলে জানা গেছে। এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে- বেক্সিমকো, বসুন্ধরা, নিটল-নিলয়, ওয়ালটন, রানার, যমুনা ও মেঘনা, পারটেক্স, এসিআই, নাসা, হোসাপ, এস আলম, ওরিয়ন, ইউনিক ও এনভয় গ্রুপ।