Monday, September 30, 2019

২০২৩ সালে মোটরসাইকেলের বিক্রি দাঁড়াবে ১০ লাখ: মতিউর রহমান

মোটরসাইকেল বিপণনকারী কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশের মোটরসাইকেল অ্যাসেম্বলার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার অ্যাসোসিয়েশনের (বিমামা) সভাপতি মতিউর রহমান। তিনি উত্তরা মোটরসের চেয়ারম্যান। বাংলাদেশের মোটরসাইকেল শিল্পের যাত্রা নিয়ে কথা বলেছেন এবং বাণিজ্যের সঙ্গে। 

বাংলাদেশে ভারতীয় ও জাপানি মোটরসাইকেল ব্র্যান্ডগুলো যৌথ উদ্যোগ অথবা কারিগরি সহায়তা দিয়ে কারখানা করছে। সার্বিকভাবে খাতের পরিস্থিতি কী?

মতিউর রহমান: মোটরসাইকেলের বাজার বড় হচ্ছে। এখন বছরে পাঁচ লাখের কাছাকাছি মোটরসাইকেল বিক্রি হয়। এটা ২০২৩ সাল নাগাদ ১০ লাখে উন্নীত হবে বলে আমরা আশা করি। এখন কোম্পানিগুলো নিজেদের বিক্রির পরিমাণ বাড়াতে মূল্যে অনেক ছাড় দিচ্ছে। ফলে মানুষ সাশ্রয়ী মূল্যে মোটরসাইকেল কিনতে পারছে। আমরা যেটুকু শুল্কছাড় পেয়েছি, দাম কিন্তু তার চেয়ে বেশি কমেছে। বাজারে এ প্রতিযোগিতার কারণ, পরিমাণে না বাড়লে কেউ বিনিয়োগের বিপরীতে মুনাফা অর্জন করতে পারবে না।

মোটরসাইকেল–শিল্পের উন্নয়নে এখন জরুরি কী?

মতিউর রহমান: এখন দরকার সহযোগী শিল্প বা ভেন্ডার উন্নয়ন। ভারতে বড় ব্র্যান্ডগুলো এখন মূলত মোটরসাইকেল সংযোজন করে। তাদের জন্য মোটরসাইকেলের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরি করে সহযোগী শিল্প। বাংলাদেশে আমরা ভেন্ডারদের আনার চেষ্টা করছি। তাদের বলছি, এখন সরকার মোটরসাইকেলশিল্পের উন্নয়নে নানা সহায়তা দিচ্ছে। পাঁচ বছর পরে কিন্তু এই মনোভাব না–ও থাকতে পারে। তাই এখন এলে যেসব সুবিধা পাওয়া যাবে, সেটা পরে মিলবে না। সমস্যা হলো বাংলাদেশের বাজার ছোট। বড় না হলে ভেন্ডারদের আকর্ষণ করা যাবে না। অবশ্য মোটরসাইকেল বাড়লে খুচরা যন্ত্রাংশেরও একটি বড় বাজার তৈরি হবে। সেদিকেও তারা নজর দিতে পারে।

মোটরসাইকেলের বাজার যে বাড়ছে, এটা কারণ কী কী?

মতিউর রহমান: প্রথমত, দাম কমেছে বলে মানুষের নাগালের মধ্যে এসেছে। আগে একটি পালসার মোটরসাইকেল ২ লাখ ১০ হাজার টাকা ছিল। এখন সেটা ৪০ হাজার টাকা কম। দ্বিতীয় কারণ, দেশে গ্রামগঞ্জে রাস্তাঘাটের উন্নতি হয়েছে। মানুষের আয় বেড়েছে। কিন্তু সে অনুযায়ী গণপরিবহনব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। মোটরসাইকেল একটি সাশ্রয়ী ও সহজে ব্যবহারযোগ্য বাহন। এ কারণে মানুষ কিনছে। এরপরও ভারত, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামের মতো দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে মোটরসাইকেলের ব্যবহার কম। দেশে এখন মোটরসাইকেলের বাজারে যে প্রবৃদ্ধি, সেটা আরও কয়েক বছর অব্যাহত থাকবে।

বাংলাদেশ থেকে কি মোটরসাইকেল রপ্তানি সম্ভব?

মতিউর রহমান: অবশ্যই। ভারত, থাইল্যান্ড পারলে আমরা কেন পারব না। তবে এ জন্য একটু সময় লাগবে। সহযোগী শিল্প গড়ে উঠলে মোটরসাইকেলের উৎপাদন খরচ কমবে। তখন রপ্তানিতে আমরা প্রতিযোগিতা–সক্ষম হতে পারব।

আপনারা এখন কী কী তৈরি করেন?

মতিউর রহমান: এখন মোটরসাইকেলের কাঠামো বা চেসিস এবং আরও কয়েকটি যন্ত্রাংশ তৈরি করলে উৎপাদন হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া যায়। এ নিয়মটি পরিবর্তন দরকার। কেউ যদি চেসিস তৈরি না করে অন্য কিছু তৈরি করতে চায়, সে ক্ষেত্রেও সুযোগ দেওয়া দরকার। হিসাবটি করা উচিত মূল্য সংযোজনের ভিত্তিতে।

মোটরসাইকেল বিক্রিতে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

মতিউর রহমান: আমরা চাই মোটরসাইকেল নিবন্ধনের পর বিক্রি হোক। কিন্তু নিবন্ধন সহজ করতে হবে। গ্রামগঞ্জে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কার্যালয় নেই। সেখানে একটি দোকানে দিনে ১০ জন ক্রেতা এলে আমরা কি ১০ বার বিআরটিএতে যাব? আসলে অনলাইনে নিবন্ধনের ব্যবস্থা থাকা উচিত। আমরা সেটা বলেছি।

অনেকে মোটরসাইকেলের বেপরোয়া চালানো নিয়ে বিরক্ত। এটা কি মোটরসাইকেলের দোষ?

মতিউর রহমান: কখনোই না। এটা আসলে ট্রাফিক আইনের প্রয়োগের সমস্যা। বাংলাদেশে শুধু মোটরসাইকেল নয়, অন্যান্য যানবাহন নিয়েও একই অভিযোগ আছে। এটা অন্যান্য দেশেও তো মোটরসাইকেল চলে। অবশ্য আমরা এ নিয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম হাতে নিচ্ছি। একটা কথা মনে রাখতে হবে, মোটরসাইকেল দেশজুড়ে অনেক তরুণের আয়ের উৎস। সুত্র: প্রথম আলো

মোটরসাইকেল উৎপাদনে জয় জয়কার

মোটরসাইকেল শিল্পের যাত্রা শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। চাহিদা বাড়ছে, দামও কমছে। কারণ, দেশেই এখন মোটরসাইকেল শিল্প গড়ে উঠেছে। সাত কোম্পানি এগিয়ে নিচ্ছে এই শিল্প। সামনের কোনো একদিন হয়তো পুরো মোটরসাইকেলই তৈরি হবে দেশের মধ্যে।

২০১৬ সালের জুনে দেশে একটি ব্র্যান্ডের একটি মডেলের মোটরসাইকেলের দাম ছিল ১ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। সেই মোটরসাইকেলটি এখন বিক্রি হচ্ছে ৯৭ হাজার টাকায়। এই সাশ্রয়ী দামের কারণে দেশজুড়ে মোটরসাইকেলের বাজার রমরমা।

সাশ্রয়ী দামটা আবার এসেছে দুই কারণে। প্রথমত, দেশে উৎপাদন, সেই কারণে সরকারের শুল্ক ছাড়। দ্বিতীয়ত, বাজার ধরতে আগ্রাসী বিপণন। আমাদের আজকের লেখা দেশে উৎপাদন নিয়ে।

দেশে এখন কমপক্ষে সাতটি সুপরিচিত ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলের কারখানা হয়েছে; ভারতের বাজাজ, টিভিএস ও হিরো, জাপানের হোন্ডা, সুজুকি ও ইয়ামাহা এবং একমাত্র দেশীয় ব্র্যান্ড রানার। বিদেশি ব্র্যান্ডগুলো দেশে কারখানা করেছে কোনো ক্ষেত্রে যৌথ উদ্যোগে। কোনো ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করেছে বাংলাদেশি কোম্পানি, কারিগরি সহায়তা দিয়েছে মূল প্রতিষ্ঠান।

অবশ্য কারখানাগুলো উৎপাদনের এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে। চেসিস বা কাঠামো, কয়েকটি যন্ত্রাংশ তৈরি করলেই উৎপাদক হিসেবে স্বীকৃতি মিলছে। কিন্তু উৎপাদকেরা দেশে সহযোগী শিল্প গড়ে তুলে আরও বেশি মূল্য সংযোজনে মরিয়া।

কয়েক দশক আগে ভারতেও এভাবেই মোটরসাইকেল শিল্পের যাত্রা শুরু হয়েছিল। ১৯৫৫ সালে ব্রিটিশ কোম্পানি রয়েল এনফিল্ড মাদ্রাজ মোটরসের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে চেন্নাইতে একটি সংযোজন কারখানা করে। সেই থেকে শুরু। ভারতীয় ব্র্যান্ড বাজাজ ১৯৪৪ সালে মোটরসাইকেল আমদানির ব্যবসা শুরু করে। পরবর্তীতে তারা দুই চাকা চাকার যানবাহন উৎপাদনকারী বড় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। তাদের হাত ধরেছিল জাপানের কাওয়াসাকি।

টিভিএসের যৌথ উদ্যোগের কারখানা ছিল জাপানের সুজুকি মোটর করপোরেশনের সঙ্গে। তাদের যৌথ উদ্যোগ শুরু হয় ১৯৮২ সালে। ভারতের হিরো মোটোকর্প আগে সাইকেল উৎপাদন করত। ১৯৮৪ সালে জাপানের হোন্ডা মোটর করপোরেশনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে তারা মোটরসাইকেল উৎপাদন শুরু করে।

এখন হিরো, বাজাজ ও টিভিএস ভারতীয় মোটরসাইকেলের সুপরিচিত নাম। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে তারা বহু দেশের রাস্তায় চলছে। বাংলাদেশে কি ভারতের মতো মোটরসাইকেল শিল্পের যাত্রাটি শুরু হলো?

শুরুর কথা

বাংলাদেশে শুরুর দিকে জাপানের হোন্ডা ব্র্যান্ডের সামান্য কিছু মোটরসাইকেল আমদানি হতো। এ দেশের মানুষ মোটরসাইকেলকে চিনত হোন্ডা নামেই। এরপর আশির দশকে ভারতীয় ও জাপানের যৌথ উদ্যোগের কারখানায় তৈরি ভারতীয় মোটরসাইকেল বাংলাদেশের বাজারে আসতে শুরু করে।

এরপর শুরু হয় মোটরসাইকেল খোলা অবস্থায় এনে সংযোজন করা, যা দেড় দশকের মতো হলো। এর মাধ্যমে সামান্য কিছু মূল্য সংযোজন হচ্ছিল। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সরকার মোটরসাইকেল আমদানিতে শুল্ক ছাড় পেতে উৎপাদনের শর্ত দেয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, উৎপাদনকারী হিসেবে স্বীকৃতি পেতে হলে মোটরসাইকেলের মূল কাঠামোসহ (চেসিস) পাঁচটি প্রধান যন্ত্রাংশের কমপক্ষে একটি দেশে উৎপাদন করতে হবে। এরপর শিল্প মন্ত্রণালয় মোটরসাইকেল শিল্পের উন্নয়নে একটি নীতিমালাও করেছে।

এখন দেশে মোটরসাইকেলে তিন ধরনের কর ব্যবস্থা আছে। যে সব প্রতিষ্ঠান কাঁচামাল থেকে নির্দিষ্ট কিছু যন্ত্রাংশ তৈরি করে তাদের ২৮-৩০ শতাংশ কর দিতে হয়। কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের চেয়ে কিছু কম মূল্য সংযোজন করে, সে ক্ষেত্রে মোট কর ভার ৫৯ শতাংশের মতো। আর যারা পুরো তৈরি মোটরসাইকেল আমদানি করে, তাদের সব মিলিয়ে ১৫১ শতাংশ কর দিতে হয়। অবশ্য সব কোম্পানিই দু-চারটি করে মডেল তৈরি করে। বাকিটা সংযোজন করে।

সম্ভাবনা বড়

জাপানের বহুজাতিক মোটরসাইকেল ব্র্যান্ড ইয়ামাহার এক বাজার জরিপ বলছে, দেশে প্রতি ১৬১ জনে একজন মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন। প্রতিবেশী দেশ ভারতে এ হার প্রতি ২০ জনে ১ জন এবং ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় প্রতি ৪ জনে ১ জন ব্যক্তি মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন। এ হিসেবে বাংলাদেশের বাজারে মোটরসাইকেল বিক্রি বাড়ানোর সম্ভাবনা অনেক বেশি বলে মনে করছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা।

কোম্পানিগুলোর হিসাবে, দেশে ২০১৫ সালে ১ লাখ ৮০ হাজার মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছিল। ২০১৭ সালে তা বেড়ে ৩ লাখ ৮৭ হাজারে উন্নীত হয়। ২০১৮ সালে বিক্রি দাঁড়ায় প্রায় পাঁচ লাখে। উদ্যোক্তারা আশা করছেন, ২০২৩ সালের মধ্যে এ দেশে বাজারের মোটরসাইকেলের বাজার বছরে ১০ লাখে উন্নীত হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে মোটরসাইকেল রপ্তানি হবে, যার শুরু করেছে রানার।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ হোন্ডা লিমিটেডের অর্থ ও বাণিজ্য বিভাগের প্রধান শাহ মো. আশিকুর রহমান বলেন, সরকার মোটরসাইকেল শিল্পনীতিতে বাজার ২০২৭ সালের মধ্যে ১০ লাখে উন্নীত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছে। বাস্তবে সেটা অনেক আগেই অর্জিত হবে। তিনি বলেন, এটা খুবই সম্ভাবনাময় শিল্প। সরকারের সহযোগিতা পেলে এ খাত আরও এগিয়ে যাবে।

চার চাহিদা

উদ্যোক্তাদের মত অনুযায়ী, মোটরসাইকেল শিল্পের এখন চারটি চাহিদা। এক. সহযোগী শিল্পের উন্নয়ন, যারা কারখানার জন্য বিভিন্ন খুচরা যন্ত্রাংশ তৈরি করবে। দুই. মোটরসাইকেলের নিবন্ধন ব্যয় কমানো ও সহজ করা। তিন. মোটরসাইকেল কিনতে ঋণ দেওয়া। চার. চালনার প্রশিক্ষণের জন্য সহায়তা।

বাংলাদেশে ইয়ামাহার কারখানা করা এসিআই মোটরসের নির্বাহী পরিচালক সুব্রত রঞ্জন দাস বলেন, ভিয়েতনামের ভিন ব্যাংক মোটরসাইকেল কিনতে বাজারে আড়াই শ কোটি ডলার ঋণ বিতরণ করেছে। বাংলাদেশেও ঋণ দেওয়া শুরু হয়েছে। তবে এমন সব শর্ত দেওয়া হয়, যা মেনে শিক্ষার্থী ও বেকারেরা মোটরসাইকেল কিনতে পারে না। তিনি বলেন, ইয়ামাহা অনেক দেশে প্রশিক্ষণ দিয়ে চালকদের লাইসেন্স দেয়। এ ক্ষমতা তাদের সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার দিয়েছে। বাংলাদেশে যদি সরকারি কোনো খালি জায়গায় প্রশিক্ষণের সুযোগ দেওয়া হতো, তাহলে ভালো হতো।

খরচ কম

ঢাকার রাস্তায় মোটরসাইকেল প্রতিনিয়ত বাড়ছে। মাঝারি ইঞ্জিন ক্ষমতার একটি মোটরসাইকেল এক লিটার জ্বালানি তেলে ৪০ কিলোমিটারের বেশি চালানো যায়। নগরে গণপরিবহনের দুর্দশায় অনেকেই মোটরসাইকেল বেছে নিচ্ছে। নারীরাও শুধু করেছে স্কুটি চালনা।

অনেকেই মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ার করে বেকারত্ব ঘুচিয়েছে। অনেকে মোটরসাইকেলে খাবার সরবরাহ করে। তাদেরই একজন সাব্বির হোসেন। তিনি বলেন, দিনে ৬-৭ ঘণ্টা ঠিকমতো চালালে ৮০০ টাকার মতো আয় করা যায়। সেটা দিয়েই তাঁর সংসার চলে। আগে পুরান ঢাকায় একটি দোকানে কাজ করতেন। সেখানে পেতেন ১০ হাজার টাকা।

অনেকেই ট্রাফিক আইন না মানার মোটরসাইকেল চালকদের অভিযুক্ত করেন। জবাব কি, জানতে চাইলে সাব্বির হোসেন বলেন, দেশে বাস, মিনিবাস, ট্রাক, অটোরিকশা—কেউ-ই ঠিকমতো আইন মানে না। এটা গাড়ির দোষ নয়, দোষ ট্রাফিক ব্যবস্থার। সুত্র: প্রথম আলো  

পেঁয়াজের দাম বাড়ছে ঘন্টায় ঘন্টায়...

Wednesday, September 25, 2019

ADB sticks to 8% GDP growth projection for Bangladesh

Press conference of ADB 
Senior Correspondent: The Asian Development Bank has reiterated its projection of an 8 percent GDP growth for Bangladesh in the current fiscal year.

The financial institution made the forecast in its latest publication titled ‘Asian Development Outlook 2019’,  after analysing the state of the Bangladeshi economy.

The figure is similar to the lender’s previous projections made in April this year and slightly lower than the government’s projection of 8.2 percent for the fiscal year 2019-20.
Bangladesh’s GDP growth was 7.86 percent in the past fiscal year while the per capita income was $1,751.

Bangladesh’s economic growth crossed 7 percent in fiscal 2015-2016 after almost a decade in the region of 6 percent.

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ৫ চ্যালেঞ্জ দেখছে এডিবি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার: চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়বে না বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এ প্রবৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখবে শিল্প খাত। জাতীয় বাজেটে সরকারের পক্ষ থেকে ৮.২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হলেও বেশকিছু চ্যালেঞ্জের কারণে এ লক্ষ্য পূরণ হবে না বলে ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক-২০১৯’-এর হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ছিল ৮.১৩ শতাংশ। এর পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ৫ চ্যালেঞ্জ দেখছে এডিবি। এগুলো হচ্ছে- রপ্তানি বহুমুখীকরণ, শহর ও গ্রামের মধ্যে বৈষম্য, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করা, মানব সম্পদ ও ভ্যাট আইনের কার্যকর প্রয়োগ। 

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এডিবির ঢাকা আবাসিক মিশন কার্যালয়ে হালনাগাদ এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংস্থাটি। এ সময় এডিবি ঢাকা মিশনের প্রধান মনমোহন প্রকাশ স্বাগত বক্তব্য দেন। আর মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংস্থার অর্থনীতিবিদ সন চ্যাং হং।

প্রতিবেদনে বলা হয়, চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শুল্ক ও বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়বে। এর পাশাপাশি উচ্চতর প্রবাসী আয়ের কারণে বাড়বে ভোগব্যয়। একইসঙ্গে সহজ মুদ্রানীতির কারণে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহও বাড়বে। ব্যবসায় পরিবেশ উন্নত করতে চলমান সংস্কার এবং অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের সুবাদেও বাড়বে প্রবৃদ্ধি। একই সময়ে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, টাকার অবমূল্যায়ন ও ভ্যাটের আওতা বাড়ার কারণে পণ্য ও সেবার দাম বাড়বে বলে মনে করে এডিবি। ফলে ২০১৯-২০ অর্থবছরের মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়ে ৫.৮ শতাংশ হতে পারে। 

এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি অগ্রগামী। রেমিট্যান্স প্রবাহ, সহজ মুদ্রানীতি, বেসরকারি বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করতে সংস্কার কার্যক্রম, অবকাঠামো খাতে সরকারি বিনিয়োগ বাড়ার কারণে প্রবৃদ্ধি বাড়বে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- রপ্তানি বহুমুখীকরণ, শহর ও গ্রামের মধ্যে বৈষম্য, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করা, মানব সম্পদ ও ভ্যাট আইনের কার্যকর প্রয়োগ ইত্যাদি।

দুর্নীতি বিরোধী চলমান অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর বলেন, সুশাসনের জন্য এটা খুবই ফলপ্রসূ হবে। এর ফলে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়বে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসবে। তবে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। থেমে গেলে হবে না। এতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পাবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২০২৪ সালের মধ্যে প্রবৃদ্ধি ডাবল ডিজিটে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। তবে এজন্য অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ ব্যাপকভাবে বাড়াতে হবে। সেক্ষেত্রে রাস্তা, বন্দর এবং পদ্মাসেতুসহ বড় প্রকল্পগুলো এবং ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সেগুলো যথাসময়ে শেষ করতে হবে। সেই সঙ্গে দক্ষ জনশক্তি তৈরি, আর্থিক খাতের উন্নয়ন ও ব্যবসার পরিবেশ সহজ করতে হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিবেশী ও অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। চলতি অর্থবছরে ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৭.২ শতাংশ, যা গত এপ্রিল মাসে প্রকাশিত মূল এশিয়ান ডেভলপমেন্ট আউট লুকে বলা হয়েছিল ৭.৩ শতাংশ। এছাড়া পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি হবে ২.৪ শতাংশ, যা মূল প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল ৩.৬ শতাংশ। আর বাংলাদেশের মূল প্রতিবেদনের পূর্বাভাসেও বলা হয়েছিল এবছর প্রবৃদ্ধি হবে ৮ শতাংশ, যা হালনাগাদ প্রতিবেদনে একই রয়েছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, চীনের প্রবৃদ্ধি হবে ৫.৪ শতাংশ, যা মূল প্রতিবেদনের পূর্বাভাসে ছিল ৫.৫ শতাংশ। কোরিয়ার প্রবৃদ্ধি হবে ২.৪ শতাংশ, যা আগে ছিল ২.৫ শতাংশ। সিঙ্গাপুরের প্রবৃদ্ধি হবে ১.৪ শতাংশ, যা মূল পূর্বাভাসে ছিল ২.৬ শতাংশ। তবে সব মিলিয়ে এশিয়ার প্রবৃদ্ধি হবে ৫.৫ শতাংশ, যা মূল প্রতিবেদনের পূর্বাভাসে ছিল ৫.৬ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে কৃষিখাতের অংশ থাকবে ৩.৮ শতাংশ। এছাড়া শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হবে ১২.৫ শতাংশ। সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি হবে ৬.৪ শতাংশ। এদিকে মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছর মূল্যস্ফীতি হবে ৫.৮ শতাংশ। এক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণভাবে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, পণ্য ও সেবার মূল্য বৃদ্ধি এবং ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের কারণে মূল্যস্ফীতি কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী থাকবে।

আউটলুক প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি অর্থবছরে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হবে ১০ শতাংশ। এক্ষেত্রে আমেরিকা ও চীনের মধ্যে যে বাণিজ্য যুদ্ধ চলছে সেখান থেকে সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। আমদানির ক্ষেত্রে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হবে ৯ শতাংশ। কারণ সরকারের মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে প্রচুর মূলধনী যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি করতে হচ্ছে। তবে এ বছর খাদ্য আমদানি কমতে পারে। শস্য উৎপাদন বৃদ্ধি এবং আমদানি শুল্ক বাড়ায় এটা হতে পারে। এছাড়া চলতি অর্থবছরে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমবে। সেক্ষেত্রে এ খাতে প্রবৃদ্ধি দাড়াবে ১১.৩ শতাংশ।

এডিবির আউটলুক প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে এডিবির জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ সুন চ্যান হং বলেন, বাংলাদেশের শিল্প, কৃষি ও প্রবাসী আয়ে চাঙা থাকলেও জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের বেশি হবে না। তারপরও এ প্রবৃদ্ধি অর্জনে কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে জনমিতির সুবিধা ভোগ করার জন্য মানব সম্পদের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটাতে হবে। দক্ষ মানব সম্পদ তৈরি করতে পারলে বিশেষ করে প্রবাসী আয় ব্যাপকভাবে বাড়ানো সম্ভব। যেমন এখন বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটি ১০ লাখের বেশি মানুষ বিদেশ থাকে। কিন্তু গত অর্থবছরে রেমিট্যান্সে এসেছে ১৬ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। কিন্তু দক্ষ মানব সম্পদ যেমন- ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা এরকম দক্ষ মানব সম্পদ বিদেশি পাঠাতে পারলে ১০০ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স আহরণ করা সম্ভব। 

রূপালীময় জীবন তার

অফিসে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি
তাঁর সময়ে, গত শতাব্দীর আশির দশকের শুরুর দিকে যখন ছাত্রীদের মধ্যে ব্যবসায় প্রশাসনে পড়ার ঝোঁক বলতে কিছু ছিল না, সেই সময়ে রূপালী চৌধুরী ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএতে (ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট)। পড়াশোনা শেষ করে সবাই যখন সরকারি চাকরিতে ঢোকার চেষ্টায় রত, সেই সময়েও রূপালী চৌধুরীর যাত্রা ছিল স্রোতের বিপরীতে। যোগ দেন ‘সিবা গেইগি’ নামের এক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে।

এরপর কেটেছে ৩৫ বছর। আজ রূপালী চৌধুরী একটি সুপরিচিত নাম। সাধারণ কর্মী থেকে নিজ দক্ষতায় প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনার শীর্ষ পদে ওঠার নজির গড়েছেন। তিনি কোনো বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বরত একমাত্র বাংলাদেশি নারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক। বিদেশি ব্যবসায়ীদের সংগঠন ফরেন চেম্বারের সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করা একমাত্র নারীও তিনি।

সব সময় শাড়ি পরেন। কপালে মাঝেমধ্যে টিপও দেখা যায়। ভাত-মাছ-ডাল বিশেষ পছন্দের খাবার। সব মিলিয়ে আবার তিনি নিরেট বাঙালি নারী।

দেশে কেন বিদেশি বিনিয়োগ তেমন একটা আসছে না, ব্যবসায় পরিবেশের সমস্যা কী কী, কীভাবে বিনিয়োগ বাড়ানো যাবে—এসব নিয়ে রূপালী চৌধুরীর সঙ্গে অনেকবার কথা হয়েছে। এবার গিয়েছিলাম তাঁর জীবনের কথা শুনতে। তাঁর শৈশব, কৈশোর, তারুণ্য, পেশাজীবন, পরিবারের কথা জানতে। রূপালী চৌধুরী সবকিছুই জানালেন। কখনো স্মৃতিকাতর হয়ে, কখনো লাজুক ভঙ্গিতে, কখনো স্নেহময়ী মায়ের মতো, কখনো সিরিয়াস আলোচকের মতো।

শুরুটা কৈশোরের গল্পে
রূপালী চৌধুরীর জন্ম চট্টগ্রামের পটিয়ায়। তাঁর বাবা প্রিয় দর্শন চৌধুরী ছিলেন একজন চিকিৎসক। কলকাতায় পড়াশোনা শেষ করে তিনি (বাবা) সেখানেই চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত হন। কিন্তু রূপালী চৌধুরীর ঠাকুরমা (দাদি) তাঁর ছেলেকে বললেন, ‘এখানে মানুষ রোগে মারা যায়, আর তুমি বিদেশে রোগ সারাও!’

রূপালী চৌধুরীর বাবাকে ফিরে আসতেই হলো। ১৯৫৭ সালে ফিরে এসে তিনি চট্টগ্রামের পটিয়ায় চিকিৎসা পেশা শুরু করেন। মা (রূপালী চৌধুরীর ঠাকুরমা) ওই সময় ছেলের ভিজিট (সম্মানী) রোগীপ্রতি দুই টাকায় সীমিত করে দেন, যাতে মানুষের কষ্ট না হয়।

এ গল্পটি বলার সময় রূপালী চৌধুরীকে খুব গর্বিত মনে হলো। তিনি বললেন, ‘বাবা আমার চোখে আনসাং হিরো (অবিসংবাদিত নায়ক)। ওই সময় কলকাতার পসার ছেড়ে পটিয়ায় ফেরা সহজ ছিল না।’

মা–বাবার পাঁচ সন্তানের মধ্যে রূপালী চৌধুরী চতুর্থ। বড় বোন শ্যামলী চৌধুরী গৃহিণী। এরপর ভাই শ্যামল বিকাশ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত। মেজ বোন অঞ্জলি চৌধুরী মারা গেছেন। ছোট ভাই কমল জ্যোতি চৌধুরী ব্যবসায়ী। রূপালী চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের পরিবার ছিল অসম্ভব সংস্কৃতিমনা। পটিয়ায় আমাদের শৈশব, কৈশোর খুব আনন্দে কেটেছে। সাম্প্রদায়িক অসম্প্রীতি কখনো টের পাইনি। আমাদের প্রচুর মুসলমান ও হিন্দু বন্ধু ছিল। বিদ্যালয়ে চারটি ধর্মের শিক্ষার্থীদের জন্যই আলাদা আলাদা প্রার্থনা হতো। এখন তো সেটা আর হয় না।’

স্থানীয় বিদ্যালয় ও কলেজে শিক্ষা শেষ করে রূপালী চৌধুরী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে স্নাতকে ভর্তি হন। স্নাতকোত্তর করেন আইবিএতে। পড়াশোনা শেষ করে সিবা গেইগিতে যোগ দেন ১৯৮৪ সালে। শুরুর কাজ ছিল ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিভাগীয় প্রধানকে ব্যবস্থাপনা ও বিক্রয়সংক্রান্ত হিসাব দিয়ে সহায়তা করা।

 ’৭৭-এ কথা শুরু

রূপালী চৌধুরী ভালো গান গাইতেন। আবদুল হক (ছদ্মনাম সিদ্ধার্থ হক) কবিতা লিখতেন, গল্প লিখতেন, ভালো ছাত্র ছিলেন। দুজনের পরিবার কাছাকাছি বসবাস করে। আগে থেকে চেনাজানা হলেও কথাবার্তা বলা শুরু হয় ১৯৭৭ সালে। আর বিয়ে হয় ১৯৮৯ সালে, ১২ বছরের মাথায়।

পরিবার কি মেনে নিয়েছিল? জানালেন, দুই পরিবারের মধ্যে জানাশোনা ছিল। দুই পক্ষই একে অপরকে ভালোভাবে জানত। কিন্তু বিয়েটা মানতে চাইছিল না। তাই বেশ অপেক্ষাও করতে হয়। বিয়ে যখন হয়ে গেল, তখন ধীরে ধীরে সবকিছুই স্বাভাবিক হলো।

জানতে চাইলাম, ভাইয়ের (আবদুল হক) প্রতি আকর্ষণের মূলে কি কবিতা ছিল? রূপালী চৌধুরী হেসে বললেন, ‘এত কিছু জানতে চেয়ো না।’

আবদুল হক ও রূপালী চৌধুরীর দুই সন্তান। ছেলে রাহুল হক কানাডায় পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরে এসে রেস্তোরাঁ ব্যবসা শুরু করেছে। রূপালী চৌধুরী বলেন, ছেলেটা বিদেশে থাকতে চায় না। বাবার মতো তারও কবিতা লেখার ঝোঁক। তার প্রথম বই ইংরেজিতে প্রকাশিত ফাইন্ডিং চি (নিজেকে খোঁজো)। মেয়ে পূর্ণা হক কানাডায় পরিবেশবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়ছে।

আবদুল হক সোশ্যাল মার্কেটিং কোম্পানির (এসএমসি এন্টারপ্রাইজ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক। প্রতিষ্ঠানটিকে আপনারা চেনেন ওরস্যালাইনের মাধ্যমে।

বার্জারে রঙের জীবন
বার্জারের প্রতিষ্ঠাতা জার্মানির নাগরিক লুইস বার্জার। তিনি ১৭৬০ সালে যুক্তরাজ্যে রাসায়নিক ব্যবসা শুরু করেন। বার্জার এ অঞ্চলে ব্যবসা করতে আসে ১৯৫০ সালে। বাংলাদেশে, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের চট্টগ্রামে তারা কারখানা করে ১৯৭০ সালে।

১৯৯০ সালের অক্টোবরে বার্জারে যোগ দিলেন রূপালী চৌধুরী। এ দেশে বার্জারের ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে প্রথম নারী কর্মী তিনি। সিবা গেইগি ছেড়ে বার্জারে কেন? উত্তরে রূপালী চৌধুরী বলেন, ‘আবদুল হক তখন চট্টগ্রামে। আমি চট্টগ্রামে থাকার জন্য একটি চাকরি খুঁজছিলাম। পত্রিকায় বার্জারের একটি পদে লোক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেখলাম। তাঁরা বেশ কয়েক দফা সাক্ষাৎকার নিলেন। পরিকল্পনা ব্যবস্থাপক পদে একটি মেয়ে কাজ করতে পারবে কি না, এটা নিয়ে তাঁরা দ্বিধায় ছিলেন।’

রূপালী চৌধুরী বলেন, ‘অনেক কষ্টে আমার চাকরিটা হয়। ওই পদে সিঅ্যান্ডএফ প্রতিনিধিদের সঙ্গে কাজ করতে হবে, কাস্টমসের সঙ্গে কাজ করতে হবে, বন্দরে যেতে হবে। ওই সময় একটি মেয়ে এসব কাজ করতে পারবে, সেটা তাঁরা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না।’

রূপালী চৌধুরী কাজটি ভালোভাবেই করেছিলেন। সে কারণেই বিভিন্ন বিভাগে কাজ করার পর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি নারী, এই ভেবে নিজে থেকে কখনো গুটিয়ে যাইনি।’

২০০৪ সালে রূপালী চৌধুরী বার্জারের পরিচালক হন। এরপর ২০০৮ সালে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যোগ দেন।

কী চেয়েছিলেন, কী হলেন
‘হতে পারতাম তো অনেক কিছুই। আমার বড় ভাই শান্তিনিকেতনে ভর্তির ফরম নিয়ে এসেছিলেন। বাবা বললেন, অনেক গান শেখা হয়েছে, এবার পড়ালেখা করো,’ বলেন রূপালী চৌধুরী। তিনি আরও যোগ করেন, ‘এখনকার তরুণদের লক্ষ্য খুব পরিষ্কার। কিন্তু আমাদের সময়ে আমরা জানতাম না কী হতে চাই। তবে আমি আর্থিকভাবে আত্মনির্ভরশীল হতে চেয়েছিলাম।’

বার্জারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদটি কি লক্ষ্যে ছিল? রূপালী চৌধুরীর জবাব, ‘আমি ভাবিনি। একটার পর একটা পদে গিয়ে মনে হয়েছে, কাজটা আমি করতে পারি, আরও ভালোভাবে। এভাবেই হয়েছে।’

শুধু বার্জার নয়, রূপালী চৌধুরী বাণিজ্য সংগঠনেও নেতৃত্ব দিয়েছেন। ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বারের দুবারের সভাপতি ও পেইন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পদে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি এখন বাটা বাংলাদেশ, লিনডে বাংলাদেশ ও সূর্যের হাসির পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন।

পছন্দ ইলিশ-পাবদা

রূপালী চৌধুরীকে প্রায়ই বিদেশে যেতে হয়। তখন দেশের কোন জিনিসটির অভাব বোধ করেন তিনি? উত্তর, ভাত, মাছ আর ডাল। প্রায় সব মাছই ভালো লাগে। তবে বিশেষ পছন্দ ইলিশ আর পাবদা।

খেতে কি খুব পছন্দ করেন? রূপালী চৌধুরী বলেন, ‘আমাকে দেখে বোঝো না?’ তবে ইদানীং স্বাস্থ্যসচেতন হয়েছেন। ভাত খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন। দিন শুরু হয় ব্যায়াম করে।

বার্জারের কার্যালয় উত্তরায়। নয়টার কাছাকাছি সময়ে রূপালী চৌধুরী অফিসে পৌঁছে যান। ফেরেন সন্ধ্যায়। প্রায়ই পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হয়। বাকিটা সময় কাটে বই পড়ে, গান শুনে। অনেক সময় টেলিভিশনও দেখা হয়।

বইয়ের মধ্যে ফিকশন বিশেষ পছন্দ। সফলদের জীবনী পড়তে ভালোবাসেন। সম্প্রতি পড়েছেন ইসরায়েলের ইতিহাসবিদ ইউভাল নোয়া হারারির স্যাপিয়েন্স: এ ব্রিফ হিস্ট্রি অব ম্যানকাইন্ড বইটি। গান শোনেন অনেক ভাষার।

শাড়ির মধ্যে সিল্ক ও সুতি পছন্দের তালিকায় আগে থাকে।

‘দুঃখ করে মরার মানে নেই’

রূপালী চৌধুরী মনে করেন, সব সময় নিচের দিকে তাকাতে হয়। অমুকে ওই হয়েছে, তমুকে সেই হয়েছে, এসব নিয়ে দুঃখ করে মরার কোনো মানে নেই। নিজের জীবন নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট তো অবশ্যই, তার চেয়েও বেশি কিছু।

বলেন, ‘আমি যা আশা করেছিলাম, তার অনেক বেশি পেয়েছি। আমি কখনো ভাবিনি, একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হব। কখনো ভাবিনি, বিভিন্ন ফোরামে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করব।’

২০১৮-১৯ হিসাব বছরে বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশের মোট পণ্য বিক্রির পরিমাণ ১ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকা। রূপালী চৌধুরী যখন বার্জারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেন, তখন প্রতিষ্ঠানটি ৩৫০ কোটি টাকার মতো পণ্য বিক্রি করত। ১১ বছরে বিক্রি পাঁচ গুণের বেশি হয়েছে।

বার্জারের মূল ব্যবসা রং। তারা সংশ্লিষ্ট নানা খাতে ব্যবসা বাড়াচ্ছে। তাতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন রূপালী চৌধুরী। তিনিই আসলে বার্জারের আসল রং। অবশ্য তিনি তা মানতে নারাজ। বলেন, এ সাফল্য এসেছে তাঁর সব সহকর্মীর ঐকান্তিক পরিশ্রমের মাধ্যমে।

চারটি প্রশ্ন- নেতা হিসেবে গুণ কী কী
মানুষের সঙ্গে সহজে মিশতে পারা। মানুষের প্রতি সহজাত ভালোবাসা রয়েছে। এ ছাড়া সততা ও শৃঙ্খলা আজ তাঁকে এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। সঙ্গে কাজটাও ভালো করে জানতে হয়েছে।

বার্জারে কী যোগ করেছেন
বার্জারে আগ্রাসী বিপণন কৌশল নিয়েছেন। ফলে ব্যবসা বেড়েছে। রং–সংশ্লিষ্ট আরও কয়েকটি খাতে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছেন। দুটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জয়েন্ট ভেঞ্চার প্রতিষ্ঠা করেছেন। প্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো ঠিক করেছেন। ১০ বছরে ব্যবসা বেড়েছে পাঁচ গুণের বেশি।

তরুণদের প্রতি পরামর্শ
তরুণেরা পরামর্শ শুনতে তেমন পছন্দ করে না। তবে কেউ জানতে চাইলে বলবেন, কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। ধৈর্য থাকতে হবে। চটজলদি সবকিছু পাওয়া সম্ভব নয়।

বিনিয়োগ বাড়বে কীভাবে
ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। অনেক কাজ হচ্ছে। তবে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করে দেখাতে হবে, বাংলাদেশে বিনিয়োগ সহজ। আর্থিক নীতিমালা ঘন ঘন পরিবর্তন করা উচিত নয়। বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় আরও প্রতিযোগিতামূলক আকর্ষণীয় প্রণোদনা দেওয়া উচিত। এখানে মনে রাখতে হবে, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিটি দেশই বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত।

একনজরে বার্জার প্রতিষ্ঠাতা

জার্মান নাগরিক লুইস বার্জার ১৭৬০ সালে যুক্তরাজ্যে গিয়ে রাসায়নিকের ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৫০ সালে বার্জার উপমহাদেশে আসে। বাংলাদেশে কারখানা করে ১৯৭০ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে। পৃথিবীর অনেক দেশে বার্জারের ব্যবসা রয়েছে।

পুঁজিবাজারে নিবন্ধন

বার্জার পেইন্টস লিমিডেট ২০০৫ সালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) নিবন্ধিত হয়। গত বৃহস্পতিবার ডিএসইতে বার্জারের ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ারের দাম ছিল ১ হাজার ৫৩০ টাকা।

পণ্য

বার্জারের মূল্য ব্যবসা রং। বাড়ি, কাঠ, শিল্পকারখানা, নৌযান ইত্যাদি ব্যবহৃত নানা ধরনের রং উৎপাদন করে তারা। এ ছাড়া রয়েছে আঠা, নির্মাণ খাতে ব্যবহৃত রাসায়নিক ইত্যাদির ব্যবসা।

বছরে বিক্রি

২০১৬-১৭ ১৪৬২ কোটি ২০১৭-১৮ ১৬৪৮ কোটি ২০১৮-১৯ ১৭৭৩ কোটি (এপ্রিল-মার্চ হিসাব)

বাজার হিস্যা

রঙের বাজারে একচ্ছত্র আধিপত্য বার্জারের। বাজার জরিপ অনুযায়ী বার্জারের হিস্যা ৫০ শতাংশের মতো। এ খাতে দ্বিতীয় শীর্ষ কোম্পানির হিস্যা ২০ শতাংশের কম। সূত্র: প্রথম আলো

Tuesday, September 24, 2019

রং-এর ডিব্বা তৈরি করে শতকোটি টাকার মালিক নাসির

পড়াশোনা শেষে সৈয়দ নাসির যখন চাকরি খুঁজছিলেন, তখন আসে ব্যবসার সুযোগ। বার্জার পেইন্টসের এক কর্মকর্তার পরামর্শে চালু করেন রঙের ডিব্বা বা ক্যান তৈরির কারখানা। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সৈয়দ নাসিরের প্রতিষ্ঠান এখন বছরে শতকোটি টাকার বেশি পণ্য বিক্রি করে। তার এই উঠে আসার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে কয়েকটি ব্যাংক। ব্যাংকের ভালো গ্রাহক হিসেবে পরিচিত তিনি। এর মাধ্যমে সৈয়দ নাসির নিজে যেমন বড় হচ্ছেন, ব্যাংকের ব্যবসাও ঠিক তেমন বেড়েছে। 

যাঁরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে নিয়মিত শোধ করছেন, নতুন কিছু উৎপাদন করছেন, এমন ভালো গ্রাহকদের কয়েক মাস ধরেই খুঁজছিলাম। সেই খোঁজার অংশ হিসেবে যোগাযোগ করেছিলাম শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম শহীদুল ইসলাম ১৮ মিনিটের মধ্যেই খোঁজ দিলেন সৈয়দ নাসিরের। আর বললেন, ‘এমন গ্রাহককে অর্থায়ন করে আমাদের ব্যাংক গর্বিত। তাঁর কারখানার কর্মীদের বেতন তোলার জন্য আমরা এটিএম বুথও বসিয়েছি।’ 

সৈয়দ নাসিরের গল্প শুনতে গত বুধবার গিয়েছিলাম টঙ্গীতে তাঁর কারখানায়। প্রতিষ্ঠানের নাম কিউ পেইল লিমিটেড, যেটি টঙ্গী বিসিক শিল্পনগরে অবস্থিত। চট্টগ্রামে এক্সক্লুসিভ ক্যান নামে আরেকটি কারখানা রয়েছে। কারখানার ফটকেই সৈয়দ নাসিরের সঙ্গে প্রথম পরিচয়। পুরো কারখানা ঘুরে ঘুরে দেখালেন। আমদানি করা পলিথিলিন থেকে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছোট-বড় ক্যান। ৫৪ হাজার বর্গফুট এলাকার পুরো কারখানায় হাতের কোনো ছোঁয়া নেই, উৎপাদনের পুরো প্রক্রিয়াই হচ্ছে রোবটে। উৎপাদিত ক্যান চলে যাচ্ছে পেইন্টিং বিভাগে। ১৫ হাজার বর্গফুট এলাকায় তৈরি ক্যানে বসছে চাহিদামতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের রং ও স্টিকার। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের রঙের ছোট-বড় ক্যান, আইসক্রিমের বক্স, মবিলের ক্যান, ওষুধের বোতল—সবই তৈরি হচ্ছে তার কারখানায়। আগে এসব পণ্য আসত বিদেশ থেকে। এখন দেশেই তৈরি হচ্ছে। সৈয়দ নাসির বললেন, ‘কারখানায় ৬০০ কর্মী কাজ করেন। সবাই আমার পরিবারের সদস্য। কর্মীদের বিপদে আমি নিজেই এগিয়ে যাই। তাঁরা ভালো থাকলেই আমি ভালো থাকি।’ 

চাকরি খুঁজতে খুঁজতে উদ্যোক্তা

চাকরি খোঁজার উদ্দেশে ১৯৯১ সালে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসছিলেন সৈয়দ নাসির। ট্রেনেই পরিচয় হয় বার্জারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রেজাউল করিমের সঙ্গে। তিনি চাকরির পরিবর্তে ব্যবসার পরামর্শ দিলেন সৈয়দ নাসিরকে। রঙের ক্যান তৈরি করতে বললেন। চট্টগ্রামে ফিরে বার্জার অফিসে দেখা করতে গেলে রেজাউল করিম তাঁকে নিয়ে গেলেন সরকারের মালিকানাধীন বাংলাদেশ ক্যান কোম্পানিতে। যাঁরা ওই সময়ে টিনের ক্যান তৈরি করে বার্জারকে সরবরাহ করত। কারখানাটি ছিল আধুনিক ও ব্যয়বহুল। এরপর গেলেন এলিট পেইন্টে। এলিট থেকে এক কর্মীকে নিয়ে এলেন। তারপর বাবার দেওয়া ১ লাখ ২৫ হাজার টাকায় ছোট আকারে কারখানা করলেন চট্টগ্রামের মুরাদপুরে। ১৯৯২ সালে টিনের ক্যান তৈরি করে বার্জারকে দেওয়া শুরু করেন। এ নিয়ে সৈয়দ নাসির বলেন, ‘বাবার অবসরের টাকাই ছিল আমার ব্যবসার প্রথম মূলধন।’ 

 ব্যবসায় মোড় ঘুরিয়ে দেয় ব্যাংক 

কারখানা দেওয়ার পর ঋণের জন্য সৈয়দ নাসির যোগাযোগ করেন সোনালী ব্যাংকের পাঁচলাইশ শাখায়। ব্যাংকটির তৎকালীন এমডি লুৎফর রহমান সরকার তখন সার্টিফিকেট বন্ধক রেখে ঋণ দেওয়ার পদ্ধতি চালু করেছিলেন। এ কারণে সহজেই সোনালী ব্যাংক থেকে ৫ লাখ টাকা পেয়ে যান। আরও ১৫ লাখ টাকা পান প্লেজ (গুদামজাত পণ্যের বিপরীতে দেওয়া ঋণ) ঋণ হিসেবে। সৈয়দ নাসির বলেন, ‘সার্টিফিকেট বন্ধক রেখে ঋণপ্রথা চালু ছিল যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। এমন শতাধিক শিল্পপতি পাওয়া যাবে, যাঁরা ওই ঋণসুবিধা নিয়ে বড় হয়েছেন।’ 

১৯৯৬ সালে ভারতে যান টিনের ক্যান তৈরির আধুনিক প্রযুক্তি দেখতে। ১৯৯৯ সালে ৫৫ লাখ টাকা ঋণ পান সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক থেকে। ওই টাকায় কারখানার পাশে ৪ তলা ভবন কিনে নেন। সৈয়দ নাসির বলেন, ‘এ ঋণই আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। কারখানা বড় হয়ে যায়।’ ক্যানের নির্দিষ্ট ক্রেতা বার্জার, ফলে কোনো চিন্তাই ছিল না।’ 

তবে ওই সময়ে বার্জার পেইন্ট নিজেরাই ক্যান বানানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এতে বড় হোঁচট খান সৈয়দ নাসির, কারণ বার্জারই ছিল তাঁর পণ্যের একমাত্র ক্রেতা। পরে অন্য রং কোম্পানিতে ক্যান দেওয়া শুরু করেন। তখন সব কোম্পানির প্রধান কার্যালয় ছিল চট্টগ্রামে। 

ঢাকায় কারখানা স্থাপন

২০০০ সালের দিকে রোমানা রং ঢাকা থেকে কার্যক্রম শুরু করে। রোমানার বাহার নামে বিজ্ঞাপন এনে তারা ঢাকার বাজারও পায়। তার আগে সব রং কারখানার প্রধান কার্যালয় ছিল চট্টগ্রামে। ঢাকার বাজার ধরতে বার্জারও সাভারে কারখানা করে। এবার বার্জারের পরামর্শে সৈয়দ নাসির ঢাকার সাভারে কারখানা করেন। 

সৈয়দ নাসির বলেন, ‘আড়াই বছর চুক্তি শেষে বার্জার আর টিনের ক্যান নিতে চাইল না। তারা প্লাস্টিকের ক্যান তৈরি করতে বলল। বড় বিনিয়োগ, আমি পারলাম না। কারখানা বন্ধ করে ফিরে গেলাম চট্টগ্রামে। কিছুদিনের মধ্যে বুঝলাম, আমি হেরে গেলাম।’ 

বছরখানেকের মধ্যে আবারও ঢাকায় ফিরলেন। পুরান ঢাকার আল রাজ্জাক হোটেলে উঠলেন। শিখলেন প্লাস্টিকের ক্যান বানানো। এবার চট্টগ্রামে ফিরে প্লাস্টিকের ক্যান বানানো শুরু করলেন, সরবরাহ করলেন মুনস্টার রং কোম্পানিতে। এবার বার্জারও তার থেকে প্লাস্টিকের ক্যান নিতে শুরু করল, তা শুধু চট্টগ্রামের জন্য। 

২০০৩ সালে ঢাকায় এশিয়ান পেইন্ট চালু হলো। ওই সময়ে অনেক কোম্পানি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় চলে আসে। ২০০৭ সালে দ্বিতীয়বারের মতো ঢাকায় আসেন। এশিয়ান পেইন্টকে ক্যান দিতে টঙ্গী ব্রিজের কাছে কারখানা চালু করেন। ২০১০ সালে কারখানা স্থানান্তর করেন টঙ্গীর বিসিকে। এরপর সব রং কোম্পানি তার গ্রাহক হয়ে যায়। ওই সময়ে বৈশ্বিক রং উৎপাদক প্রতিষ্ঠান জটুন, নিপ্পন ও একজোনোবেল দেশে আসে। সৈয়দ নাসিরের মতে, ‘এতে আমার পণ্যের বাজার আরও বড় হয়। ওই সময় ওষুধ কোম্পানিগুলো আমাদের পণ্য নেওয়া শুরু করে।’ 

এখন টঙ্গী বিসিকের পাশেই নতুন কারখানা করছে প্রতিষ্ঠানটি। পাঁচতলায় ১ লাখ ২৫ হাজার বর্গফুট জায়গা। নির্মাণ শেষ পর্যায়ে, অক্টোবরেই চালু হবে। এটি নির্মাণ হচ্ছে সবুজ কারখানার সব শর্ত মেনে। 

ব্যবসা ও গ্রাহক

সৈয়দ নাসিরের ব্যবসা অন্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। তার প্রতিষ্ঠানে তৈরি হয় প্লাস্টিক ও টিনের ক্যান। এসব ক্যানে পেইন্ট ও স্টিকারও বসানো হয়। ঢাকার টঙ্গী ও চট্টগ্রামের মুরাদপুরে তাঁর কারখানা। রং উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলোই তার বড় ত্রেতা। এর মধ্যে অন্যতম হলো বার্জার, এশিয়ান পেইন্ট, নিপ্পন পেইন্ট, আর এ কে পেইন্ট, উজালা পেইন্ট, রেইনবো, একজোনোবেল, জটুন, ফেবিকল, এলিট পেইন্ট, মুনস্টার পেইন্ট। খাদ্য প্রস্তুত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোয়ালিটি আইসক্রিম, মিল্ক ভিটা, ওয়েল ফুড, আড়ং দুধ, এসিআই, ব্লুপ ও পোলার আইসক্রিমকে কনটেইনার সরবরাহ করেন তিনি। এর বাইরে ওষুধ খাতের রেডিয়েন্ট ফার্মা ও পপুলার ফার্মাকেও কিছু ওষুধের কনটেইনার দেন সৈয়দ নাসির। 

শাহজালাল ইসলামী, ব্র্যাক ও ইউনাইটেড ফাইন্যান্সের ঋণে চলে তাঁর ব্যবসা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৯৫ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিক্রি বেড়ে হয় ১১৪ কোটি টাকা। 

ঢাকায় কারখানায় শ্রমিক রয়েছেন ৬০০, চট্টগ্রামে ২০০। টঙ্গীর কারখানায় কর্মীদের বেতন হয় ব্যাংকের মাধ্যমে। তাঁদের জন্য কারখানার ভেতরেই রয়েছে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের এটিএম বুথ। সৈয়দ নাসির বলেন, ‘বেসরকারি ব্যাংক ব্যবসায়ীদের আশীর্বাদ। এসব ব্যাংক না হলে এত ব্যবসায়ী কখনোই তৈরি হতো না। আমার ক্ষেত্রেও তা–ই।’ 

তবে শেষ করেন এই বলে, ‘প্লাস্টিকের পণ্য তৈরি করছি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কী রেখে যাচ্ছি, এটা সব সময় আমাকে ভাবায়। কারণ এসব প্লাস্টিক তো কখনোই পচবে না।’

কুচিয়া রপ্তানিতে বছরে আয় ২০০ কোটি টাকা

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার সব্দলপুর গ্রামটির নাম পাল্টে গেছে। উপজেলা সদর থেকে আট কিলোমিটার পূর্বের গ্রামটির নাম এখন ‘কুঁচিয়ার গ্রাম’ হয়ে গেছে। এমন নাম হওয়াটা অমূলক না মোটেও। গ্রামের ১২৫ পরিবারকুঁচিয়া মাছের চাষের সঙ্গে যুক্ত। পিচ্ছিল, তেলতেলে ও আঁশবিহীন এ মাছ চাষে পরিবারগুলোর হাল ফিরেছে। ‘কুৎসিত’দর্শন প্রায় অপ্রচলিত মাছের চাষে সবল হয়েছে স্থানীয় অর্থনীতি।

২০১৫ সালে এসব গ্রামে কুঁচিয়ার চাষ শুরু। স্থানীয় একটি বেসরকারি সংগঠন ‘উন্নয়ন ’ তাদের উপকারভোগীদের মাধ্যমে চাষ শুরু করে। পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) ‘উদ্ভাবনীমূলক কৃষিজ উদ্যোগ’ প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় মানুষকে ঋণ দেয় উন্নয়ন। সংগঠনটির কর্মকর্তা তারিকুর রহমান বলছিলেন, পরিবারপ্রতি ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছিল। কাউকে কাউকে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হয়। সমস্ত পরিবার প্রথম বছরেই তাদের ঋণের টাকা ফেরত দিয়েছে।

সব্দলপুর গ্রামের পাশেই উজিরপুর গ্রাম। আশাশুনি ও কালীগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী এ গ্রামে এখন এক বিরাট বাজার বসে। কুঁচিয়ারই বাজার। এ দুই উপজেলা ছাড়াও জেলার অন্য উপজেলার কুঁচিয়া এখানে জড়ো হয়।

তালা উপজেলার প্রভাস মণ্ডল। পাঁচ বছর ধরে মাছ সংগ্রহ করে উজিরপুর বাজারে বিক্রি করেন। তিনি বলছিলেন, এখন প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা আয় হয়।

কুঁচিয়া চাষের সাফল্য কিন্তু দক্ষিণের এই প্রত্যন্ত এলাকাতেই আটকে নেই; শুধু পিকেএসএফই এখন দেশের ২১ জেলার ৩৩টি উপজেলায় কুঁচিয়া চাষে ঋণ দেয়।

পিকেএসএফের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জসিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘দরিদ্র মানুষের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্যই কুচিয়া চাষে উৎসাহ দিচ্ছি আমরা। এর লক্ষ্য স্থানীয় অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার।’

এক দশক ধরে বাণিজ্যিকভাবে কুঁচিয়া চাষের শুরু। তবে গত পাঁচ বছরে এ চাষের পরিমাণ বাড়ছে। দেশের অন্তত ৩০টি জেলায় এখন বাণিজ্যিকভাবে কুঁচিয়ার চাষ হচ্ছে। দেশে উৎপাদিত কুঁচিয়ার বেশির ভাগটাই রপ্তানি হচ্ছে। যাচ্ছে ইউরোপ ও এশিয়ার ২৩টি দেশে। জ্যান্ত ও শুকনো—দুই ধরনের কুঁচিয়া যাচ্ছে দেশ থেকে।

মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মুক্ত জলাশয়ে কুঁচিয়া উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ৩৬ মেট্রিক টন। ২০১৬-১৭ সালে এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৯৩ মেট্রিক টনের বেশি। আর সব মিলিয়ে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশে ১২ হাজার ৩৫৩ মেট্রিক টনের বেশি কুঁচিয়া উৎপাদিত হয়। ওই বছর বৈদেশিক মুদ্রা আসে ১৮৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা। পরের অর্থবছরে আরও ২০০ মেট্রিক টন বেশি উৎপাদিত হয়। আয় হয় ২০৪ কোটি ১ লাখ টাকা।

ইউরোপ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নানা দেশে কুঁচিয়ার চাহিদা প্রচুর। এ মাছের ঔষধিগুণও প্রচুর। রক্তশূন্যতা, অ্যাজমা ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে এ মাছের উপযোগিতা আছে। মৎস্য অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কুঁচিয়ার রক্ত খেলে শারীরিক দুর্বলতা ও রক্তশূন্যতা কমে।

প্রাকৃতিক পুকুর বা জলাশয় এবং বাড়িতে কংক্রিটের স্থাপনা বা ডিচ তৈরির মাধ্যমে দুভাবে কুঁচিয়ার চাষ হয়।

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে বেসরকারি সংগঠন হিড-বাংলাদেশের তত্ত্বাবধানে কুঁচিয়া চাষ হচ্ছে। সংগঠনটির কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, মাত্র ছয় মাসে ২০ কেজি কুঁচিয়া থেকে ২০ হাজার পোনা এবং ৫০ কেজি কুঁচিয়া উৎপাদিত হয়। এক কেজি কুঁচিয়ার বাজারমূল্য ৩০০ টাকার বেশি। চাষিরা মৌসুমে ২০ থেকে ৩০ হাজার এবং বাচ্চা কুঁচিয়া ১৫ টাকা দরে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা বিক্রি করছেন।

মিঠা ও লোনাপানি—এই দুই পানির কুঁচিয়া উৎপাদিত হয় দেশে। এর মধ্যে মিষ্টি কুঁচিয়ার দাম বেশি। কমলগঞ্জের এই কুঁচিয়া মিঠাপানির। তাই এর দাম বেশি। তবে লোনাপানির কুঁচিয়ার দাম কেজিপ্রতি ১২০ থেকে ১৩০ টাকা বলে ব্যবসায়ীদের কাছে থেকে জানা গেছে।

রাজধানীর উত্তরায় ১২ নম্বর সেক্টরের কাছে নলভোগ এলাকায় কুঁচিয়া ও কাঁকড়ার বড় বাজার। প্রতিদিন সকাল সাতটায় এ বাজার বসে। বাজার থেকে এখন প্রতি সপ্তাহে ৩০০ টন কুঁচিয়া বিক্রি হয় বলে জানান বাংলাদেশ লাইভ অ্যান্ড চিলড ফুড এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএলসিএফইএ) সভাপতি গাজী আবুল কাশেম।

বাংলাদেশের কৃষি বৈচিত্র্যময় হচ্ছে দিন দিন। কুঁচিয়ার এই সম্প্রসারণ এরই একটি নমুনা—এমনটাই মনে করেন পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, স্থানীয় অর্থনীতির বিকাশে এসব অপ্রচলিত চাষ ভূমিকা রাখছে। জমি ও পানির সদ্ব্যবহারেও এর ভূমিকা আছে। তবে এসব চাষের বিকাশে নীতি–সহায়তা দরকার। সূত্র প্রথম আলো

Monday, September 23, 2019

বিটকয়েন কি বাংলাদেশে বৈধ

সম্প্রতি বিটকয়েন আলোচনায় আসার কারণ মূল্যস্ফীতি। বিটকয়েনে যাঁরা বিনিয়োগ করেছিলেন, হঠাৎ করে তাঁদের সম্পদ বেড়েছে কয়েক শ গুণ। নিজের পরিচয় প্রকাশ না করেই এতে লেনদেন করা যায়। লেনদেন ব্যয়ও খুব কম। তবে সবচেয়ে বড় কারণটা হলো, বিটকয়েনে বিনিয়োগ করলে কয়েক গুণ লাভ হবে, এমন একটা ধারণা অনেকের মধ্যে আছে। এখনো অনেক দেশে মুদ্রা হিসেবে স্বীকৃতি না পেলেও জনপ্রিয়তা পাচ্ছে বিটকয়েন। ফলে অনেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিটকয়েনের জন্য নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। 

২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে বিশ্ব মুদ্রাবাজারে বিটকয়েনের আবির্ভাব ঘটে ডিজিটাল মুদ্রা হিসেবে। লেনদেন পুরোটাই ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে বা অনলাইনে; যদিও এটা কোনো দেশের বৈধ বা আনুষ্ঠানিক মুদ্রা নয়। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দেখলে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে আবারও বাড়তে শুরু করেছে বিটকয়েনের মূল্য। 

ব্লকচেইন স্টার্টআপে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ‘কেনেটিক ক্যাপিটাল’–এর সহপ্রতিষ্ঠাতা জিহান চু বলেন, দুটি বড় কারণে মূল্য বেড়েছে। এক. বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এমন ধারণা তৈরি হয়েছে যে বিটকয়েন হলো ডিজিটাল যুগের মানসম্পন্ন বৈধ সঞ্চয় মাধ্যম। দুই. ফেসবুকের লিব্রা ক্রিপটোকারেন্সি আনার ঘোষণা দেওয়ায় অনেকেই এখন ক্রিপটোকারেন্সিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। অবশ্য, তার আগে থেকেই ক্রিপটোকারেন্সি বা ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা বিটকয়েনের দাম ওঠানামা করছিল। তবে সেপ্টেম্বরে এসে বিটকয়েনের মূল্যমানে কিছুটা স্থিতি দেখা যাচ্ছে। এখন এ মুদ্রা ১০ হাজার মার্কিন ডলার থেকে ১১ হাজার মার্কিন ডলারে ওঠা–নামা করছে। দামের ওঠা–নামা নিয়ে অস্থিরতা থাকলেও বিটকয়েনের ভিত্তি কিন্তু যথেষ্ট শক্তিশালী। তবে ভয়ের ব্যাপার হচ্ছে, এই ক্রিপটোকারেন্সি বা টোকেনে বিনিয়োগের বিষয়টি অতিমাত্রায় অনুমাননির্ভর এবং বাজার অনিয়ন্ত্রিত। 

ব্লকচেইন ডটকমের তথ্য অনুযায়ী, বিটকয়েনের আনুমানিক লেনদেনের পরিমাণ জুলাই মাসের পর থেকে সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছেছে। ফেসবুক, জে.পি. মর্গ্যান ও ওয়ালমার্টের মতো প্রতিষ্ঠান ব্লকচেইন প্রযুক্তি ও ডিজিটাল মুদ্রার পথে হাঁটা শুরু করেছে। 

এখন দেখা যাক বাংলাদেশ পরিস্থিতি। দেশে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ইন্টারক্লাউডের প্রধান কারিগরি কর্মকর্তা (সিটিও) তানভীর এহসানুর রহমান বলেন, ক্রিপটোকারেন্সি চালু করার আগে যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কথা ভাবছে বিভিন্ন দেশ। আমাদের দেশে এখনো এটি বৈধ নয়। তবে নির্দিষ্ট নিয়মনীতির ভেতরে এনে এটি চালু করা যেতে পারে। 

বিটকয়েনের মূল প্রযুক্তি ব্লকচেইন। দেশে ব্লকচেইন নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ই–জেনারেশনের চেয়ারম্যান শামীম আহসান বলেন, ‘আমাদের জন্য কিছুটা ভালো খবর হচ্ছে, সরকার আধুনিক প্রযুক্তির বিষয়গুলো অনুধাবন করতে পারছে। এ কারণে ব্লকচেইনের মতো বিষয়গুলো নিয়ে সীমিত আকারে কাজ শুরু হচ্ছে। আমাদের রিটেইল, ভূমি ব্যবস্থাপনা, গ্রাহক, জন্মনিবন্ধন থেকে নানা কাজে ব্লকচেইন প্রযুক্তি কাজে আসবে। ব্লকচেইন প্রযুক্তির হাত ধরেই আসবে ক্রিপটোকারেন্সির কথা। তবে আধুনিক প্রযুক্তির সবকিছু সচেতনভাবে গ্রহণ করতে হবে। দেশের জন্য এটা বড় সুযোগ হয়ে আসতে পারে। বিনিয়োগ আনার একটি সুযোগ হিসেবে দেখতে পারলে স্টার্টআপ ও উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সুফল বয়ে আনতে পারে। তবে এর বিপরীত চিত্র হচ্ছে, অনেকেই জুয়ার মতো এটাকে কাজে লাগাতে পারে। এ ছাড়া প্রতারণার বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হবে।’ 

বিটকয়েনের লেনদেন সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না বলে মাদক চোরাচালান ও অর্থপাচার কাজেও এর ব্যবহারে আশঙ্কা রয়েছে। ডিজিটাল মুদ্রা হিসেবে জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মুদ্রার বিপরীতে এর দরের মারাত্মক ওঠা–নামা, দুষ্প্রাপ্যতা এবং ব্যবসায়ে এর সীমিত ব্যবহারের কারণে অনেকেই এর সমালোচনা করেন। সূত্র: প্রথম আলো

মাছে বিশ্বে অষ্টম বাংলাদেশ

স্টাফ রিপোর্টার: মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) মৎস্য সম্পদের অবদান এখন ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। দেশের জিডিপিতে খাতটি অবদান তো রাখছেই, পাশাপাশি বিশ্বেও একটি ভালো অবস্থানে নিজেকে নিয়ে গেছে বাংলাদেশ। 

মৎস্য সম্পদ (মাছ, আবরণযুক্ত জলজ প্রাণী ও শামুক) উৎপাদনের দিক থেকে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের অষ্টম স্থানে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) সূত্রে এই তথ্য পাওয়া গেছে। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্ট ইউনিট (ইইইউ) ওয়ার্ল্ড ইন ফিগার নামের একটি নিয়মিত প্রকাশনায় এই তথ্য দেওয়া হয়েছে। সব তথ্য ২০১৭ সালের।

অনেক মানুষ, বড় দেশ। অর্থাৎ মৎস্য সম্পদ উৎপাদনে চীনের অবস্থান সবার ওপরে। চীনের উৎপাদন ৬২.২ মিলিয়ন বা ৬ কোটি ২২ লাখ টন। এরপরই রয়েছে ইন্দোনেশিয়া, তাদের উৎপাদন ১ কোটি ২৮ লাখ টন। এরপর আছে যথাক্রমে ভারত, ভিয়েতনাম, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও পেরু। আর অষ্টম স্থানে থাকা বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদ উৎপাদনের পরিমাণ ৪১ লাখ টন। ৯ম থেকে ২০তম স্থানে থাকা দেশগুলো হলো জাপান, নরওয়ে, মিয়ানমার, চিলি, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, মেক্সিকো, দক্ষিণ কোরিয়া, মিসর, মালয়েশিয়া, মরক্কো ও ব্রাজিল। 

4G users now 2.15cr

Staff Reporter: About 2.15 crore active users are now availing fourth generation (4G) mobile internet connections, according to a report of Bangladesh Telecommunication Regulatory Commission (BTRC). 

Following the launch of the country’s fastest mobile data service in February last year, this is a big achievement, said Md Jahurul Haque, the commission’s chairman.

“Number-wise that is very lucrative but the service is not much attractive,” he said.

As of August, the number of active 3G connections was 5.73 crore. The operator-wise breakdown is not available.

The BTRC yesterday published its monthly customer report where it mentioned that the number of active internet users increased by about 19.60 lakh in August, which is by far the highest for a single month in recent years. This growth surprised industry insiders as the country’s two top mobile operators, Grameenphone and Robi, have been facing massive restrictions from the regulator which is seeking to realise dues fixed by audit.

The telecom regulator has been coming down hard on the two since July, restricting network expansion, and banning new offers and new package approval.

It also cut bandwidth of Grameenphone by 30 percent and Robi by 15 percent in July.

These, however, did not impact the inclusion of new customers, the BTRC data shows.

Of the new addition, mobile operators’ contribution was 19.59 lakh and another 1,000 were in the fixed broadband segment.

With this, the total number of active internet connections now stands at 9.81 crore, an all-time high, according to the BTRC statistics.

Mobile phone-based connections contributed the highest with 9.24 crore users followed by WiMAX with 40,000 users.

The internet service provider and public switched telephone network connections accounted for 57.35 lakh users.

The BTRC data also shows that the total active mobile connections stand at 16.26 crore, of which Grameenphone is leading with 7.56 crore followed by Robi (4.78 crore), Banglalink (3.48 crore) and Teletalk (43.87 lakh).

গৃহস্থালি বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম রপ্তানিতেও ভর্তুকি

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক: গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি রপ্তানিতে ১০ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা (ভর্তুকি) দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এছাড়া তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ১ শতাংশ হারে ভর্তুকি দেওয়া হবে। গত অর্থবছরের ৩৫টি খাতের সঙ্গে এই নতুন দুটি খাত যোগ করে পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা দেবে সরকার। গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক রপ্তানির চারটি খাতে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ হারে ভর্তৃকি দেয়া হচ্ছে। এবার রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে অবশিষ্ট সব খাতে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ১ শতাংশ হারে রপ্তানি প্রণোদনা বা ভর্তুকি দেয়া হবে।

২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটেই এই ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। এজন্য বাজেটে অতিরিক্ত ২ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

সে বিবেচনায় বলা যায়, এবার নগদ সহায়তা পাওয়া নতুন খাতের মধ্যে আসলে গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি (কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স, ইলেকট্রিক্যাল হোম ও কিচেন অ্যাপ্লায়েন্স পণ্য) যোগ হয়েছে।
দু-একটি ছাড়া সহায়তার হারের ক্ষেত্রেও খুব একটা হেরফের হয়নি।

রোববার এক সার্কুলার জারি করে সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে সরকারের এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

রপ্তানি বাণিজ্যকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে চলতি অর্থবছরে এই ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত জাহাজীকৃত পণ্য রপ্তানির বিপরীতে এই ভর্তুকি দেওয়া হবে।

চলতিহাতে তৈরি পণ্য (হোগলা, খড়, আখের/নারিকেলের ছোবড়া, গাছের পাতা,/খোল, গার্মেন্টসের ঝুট কাপড় ইত্যাদি) রপ্তানিতে নগদ সহায়তা ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।
গতবার সিনথেটিক ও ফেব্রিকসের মিশ্রণে তৈরি পাদুকা রপ্তানিতে ১৫ শতাংশ ভর্তুকি দেওয়া হয়েছিল। এবার ভর্তুকির হার অপরিবর্তিত রেখে পণ্য তালিকায় ব্যাগ যোগ করা হয়েছে।

গতবার পেট বোতল-ফ্লেক্স রপ্তানির বিপরীতে ৫ শতাংশ ভর্তুকি দেয়া হয়েছিল। আবোর তা বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে।

গতবারের মতো এবারও ১০ শতাংশ হারে যে সব খাতে ভর্তুকি দেওয়া হবে, সেগুলো হচ্ছে, ফার্মাসিউটিক্যালস পণ্য, ফটোভোলটাইক মডিউল, মোটরসাইকেল, কেমিক্যাল পণ্য (ক্লোরিন, হাইড্রোক্লোরিক এসিড, কস্টিক সোডা ও হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড), রেজার ও রেজার ব্লেডস, সিরামিক দ্রব্য, টুপি, কাঁকড়া ও কুঁচে (হিমায়িত ও সফটসেল, পরিবেশ ও বন বিভাগের ছাড়পত্র গ্রহণ সাপেক্ষে) এবং গ্যালভানাইজড শিট/কোয়েলস।

অর্থাৎ কোনো রপ্তানিকারক এই নয়টির ১০০ টাকার পণ্য রপ্তানি করলে সরকারের কাছ থেকে ১০ টাকা নগদ সহায়তা পাবেন।

গতবারের মতো এবারও দেশীয় বস্ত্র খাতে শুল্ক বন্ড ও ডিউটি ড্র-ব্যাকের পরিবর্তে বিকল্প নগদ সহায়তা ৪ শতাংশ, বস্ত্র খাতের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের অতিরিক্ত সুবিধা ৪ শতাংশ, নতুন পণ্য বা বাজার সম্প্রসারণ সহায়তা (আমেরিকা, কানাডা ও ইইউ ছাড়া) ৪ শতাংশ, ইউরো অঞ্চলে বস্ত্র খাতে রপ্তানিকারকদের জন্য বিদ্যমান ৪ শতাংশের অতিরিক্ত বিশেষ সহায়তা ২ শতাংশ, কৃষিপণ্য ও প্রক্রিয়াজাত কৃষি পণ্যে ২০ শতাংশ, গরু-মহিষের নাড়ি-ভুঁড়ি, শিং ও রগ (হাড় ছাড়া) রপ্তানিতে ১০ শতাংশ, হালকা প্রকৌশল পণ্য রপ্তানিতে ১৫ শতাংশ, শতভাগ হালাল মাংস রপ্তানিতে ২০ শতাংশ, বরফ আচ্ছাদনের হারভেদে হিমায়িত চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ রপ্তানিতে ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা দেওয়া হবে।

চামড়াজাত পণ্য ও আসবাব রপ্তানিতে ১৫ শতাংশ, জাহাজ, প্লাস্টিক পণ্য ও পেট বোতল-ফ্লেক্স রপ্তানিতে ১০ শতাংশ, শস্য ও শাকসবজির বীজ এবং পাটকাঠি থেকে উৎপাদিত কার্বন রপ্তানিতে ২০ শতাংশ, পাটজাত দ্রব্যাদি রপ্তানিতে ২০ শতাংশ পর্যন্ত নগদ সহায়তা পাওয়া যাবে।
আলু রপ্তানিতে ২০ শতাংশ, সাভারে চামড়া শিল্প নগরীতে স্থানান্তরিত শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে ক্রাস্ট ও ফিনিশড লেদার রপ্তানিতে ১০ শতাংশ এবং পাটজাত চূড়ান্ত দ্রব্য রপ্তানিতে ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা দেওয়া হবে। একইসঙ্গে দেশে উৎপাদিত কাগজ ও কাগজ জাতীয় দ্রব্য রপ্তানিতে ১০ শতাংশ এবং আগর ও আতর রপ্তানিতে ২০ শতাংশ ভর্তুকির বিষয়টি অপরিবর্তিত আছে।

এছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি, সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার, অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যালসে ইনগ্রিডিয়েন্টস (এপিআই), অ্যাকুমুলেটের ব্যাটারি রপ্তানিতে ভর্তুকি পাবেন রপ্তানিকারকরা।।

লক্ষ্য ভেদ করেছে রোমানের নিশানা

তিরন্দাজ রোমান সানা। দেশের হয়ে আটটি আন্তর্জাতিক সোনা জয় করেছেন। সর্বশেষ ১৫ সেপ্টেম্বর, ফিলিপাইনে এশিয়ান র‌্যাঙ্কিং আর্চারিতে রিকার্ভ ইভেন্টের ফাইনালে সোনা জিতেছেন রোমান। যাঁর জয় নিয়ে ক্রীড়াঙ্গনে এত আলোচনা, সেই রোমান সানার মা–বাবা কী ভাবছেন। মা বিউটি পারভীন আর বাবা আবদুল গফুর সানা শোনালেন রোমানের বেড়ে ওঠার কথা, দুঃসময়ের দিনগুলোর কাহিনি। 

বাড়ির বসার ঘরটায় টেবিলের ওপর সারি সারি পত্রিকার কাটিং। আগের দুদিন এই পরিবারের ছোট ছেলেকে নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন বেরিয়েছে সব জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায়। প্রাণখুলে সেসব দেখে আনন্দে আত্মহারা আবদুল গফুর সানা ও বিউটি পারভীন। জীবনের দুর্গম পথ পেরিয়ে তাঁদের সব কষ্ট আজ অনেকটা সফল। মনের দুঃখ উড়ে গেছে বাষ্প হয়ে।

রোমান সানার মতো সন্তান থাকলে এমনই তো হওয়ার কথা। মা-বাবার জীবনে সুখের ফুল ফুটবেই। খুলনা শহরের তালতলায় ভাড়া করা ছোট্ট বাসায় গিয়ে ১৭ সেপ্টেম্বর সেই ফুলের সুবাসই যেন মিলল। মনে হলো, আজ আর তাঁরা জীবনের নানা জটিল অঙ্কের জালে বন্দী নন। জীবনকে দেখছেন নতুন আয়নায়। 

সুযোগটা করে দিয়েছেন তাঁদেরই কৃতী ছেলে রোমান সানা। যাঁকে তাঁরা ডাকেন সুজন নামে। দেশের সেরা আর্চারের এ পর্যন্ত আটটি আন্তর্জাতিক সোনাজয় পরিবারের দুঃখ ঘুচিয়েছে অনেকটা। শুরুটা গত ১৩ জুন হল্যান্ডে বিশ্ব আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে রিকার্ভ ইভেন্টে ব্যক্তিগত ব্রোঞ্জজয়ের মধ্য দিয়ে। গলফার সিদ্দিকুর রহমানের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে অলিম্পিক গেমসে খেলার যোগ্যতা মান অর্জন করেছেন। খেলবেন ২০২০ টোকিও অলিম্পিকে। সর্বশেষ ১৫ সেপ্টেম্বর ফিলিপাইনে এশিয়ান র​্যাঙ্কিং আর্চারিতে রিকার্ভ ইভেন্টের ফাইনালে চীনের লি শি ঝেনঝিকে ৭-৩ ব্যবধানে হারিয়ে তাঁর সোনাজয় দেশের ক্রীড়াঙ্গনে এখন তুমুল আলোচিত। দেশের রুগ্​ণ ক্রীড়াঙ্গনে এটিকে ব্যক্তিগত সেরা সাফল্য বলছেন অনেকে। 

খেলার জগতে নিজের শরীর আর মনকে সুশাসনে রেখে রোমান এগিয়েছেন নিজের যোগ্যতায়। পরিবার ছিল পাশে। তবে পরিবারের কর্তা গফুর সানার জীবনের গল্পটা সংগ্রামমুখর।

২০০৭ সালে খুলনা অঞ্চলে ছোবল হানা ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে অজানা ঠিকানার উদ্দেশে বাড়ি ছাড়ে সানা পরিবার। গফুর সানা বলতে থাকেন, ‘সেই ঝড়ে আমি সব হারায়ে ফেলি। আমার মাটির ঘরসহ সব ভেঙে গেলে বাড়ির সামনে চাচাদের ঘরে আশ্রয় নিলাম। সাত কি আট মাস পর তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে আমরা শূন্য হাতে শহরে চলে আসি। গ্রামে তখন রোজগার ছিল না। আমি বাস্তুহারা। ১৫০ টাকায় গোলপাতার ছোট্ট একটা বাসা নিই। ২৫ টাকা দিয়ে একটা চাটাই কিনি। ১৫০ টাকায় একটা চৌকি।’

স্বামীর পাশে বসে বিউটি পারভীন তখন ছেলের সব পদক নাড়াচাড়া করছিলেন সযত্নে। ছোট ভাইয়ের সাফল্যে উদ্বেলিত বড় ভাই বিপ্লব সানাও পাশে বসেন। বিপ্লবের ছোট্ট ছেলে জিয়া সানা ‘আমিও কাকুর মতো তির–ধনুক নিয়ে খেলব’ বলে ওঠে হঠাৎ। হেসে ওঠেন সবাই। বিপ্লব বলেন, ‘রোমানের চোখের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ। ছোটবেলায় ও প্রচুর মার্বেল খেলত।’ ওদিকে বাবার চোখের রাডারে ছোটবেলাতেই ধরা পড়ে গেলেন রোমান, ‘ছোটবেলায় চঞ্চল ছিল রোমান। গুলতি দিয়ে আম পাড়ত। তখনই কেন যেন মনে হতো, একদিন ও বড় কিছু করবে।’

২৪ বছর বয়সেই সেটি করেছেন রোমান। তাই আজ গফুর সানার আকাশে সুখপাখির আনাগোনা। কষ্ট আর অনটনের স্মৃতিটা তাঁকে এখন বরং আনন্দ দেয়। ‘অফিসে গেলে লোকজন বলে, মিষ্টি কই?’ গফুর সানার মুখে কথায় বেশ শোনায়। অনেক বছর ধরে মাছ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান খুলনা রাজু ফিশ ট্রেডার্সে চাকুরে গফুর সানা আজ তৃপ্ত। মাছ ভালো কি না, এসব তদারকির কাজটা তাঁকে করতে হয় বেলা তিনটা থেকে ভোর পর্যন্ত।

তিন হাজার টাকায় শুরু। এখন বেতন সাকল্যে ছয় হাজার। এক–দেড় হাজার টাকা যাতায়াত খরচ পান। ‘তবে দুই হাজার টাকা তো আমার পান খাতিই চলি যায়। আর কোনো কিছু খাই না।’ গফুর সানা হেসে বলেন। বড় ছেলের চাকরিও খুলনায় একটা মাছ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানে। ভাতাসহ তিনি প্রায় ৯ হাজার টাকা পান। বাংলাদেশ আনসারে চাকরির সুবাদে রোমান কিছু টাকা দেন সংসারে। তাতে ঘরভাড়া (ছয় হাজার), মায়ের চিকিৎসা খরচ চলে। বাবার টাকায় সংসারের বাজার হয়। কিন্তু এমন টানাটানি আর শিকলে বাঁধা ৫৪ বছরের এই জীবনে আজ অনেক আনন্দ।

দুই বছর আগে বাড়িতে একটা ঘর তৈরি করেছেন মাটির, কিন্তু টাকার অভাবে বেড়া দিতে পারেননি। ছাউনি দিয়েছেন গোলপাতা দিয়ে। বাড়িটা খুলনা জেলার কয়রা থানার বাদালী ইউনিয়নে বাদালী গ্রামে। ঘুঘরাকাতী বাজার থেকে পাঁচ–ছয় কিলোমিটার দূরে। যেখানে বর্ষায় রোমান যেতে পারেন না রাস্তা কাদায় থিকথিকে থাকায়। সাইক্লোন শেল্টারের পাশে বাদালী প্রাথমিক স্কুলে পড়ার সময় বড় মাঠটায় খেলাধুলা করত ছোট্ট রোমান সানা। সানা নামটা বংশপরম্পরায় পাওয়া। রোমানের দাদা মৃত সদর উদ্দিন সানা, দাদার বাবা মৃত আনসার উদ্দিন সানা। 

সেসব স্মৃতিচারণার ফাঁকে গর্বিত মা বলেন, ‘রোমান এশিয়ার শ্রেষ্ঠ হয়েছে। খবরটা শুনে আমি কাদতি কাদতি অসুস্থ হয়ে গেছি। আমি সব সময় অসুখে পড়ে থাকি। ১৩ বছর ধরে চিকিৎসা চলছে। ইনসুলিন নিতে হয়, েস খরচ লাগে। বিভিন্ন ওষুধ খেতে হয়। আমার সামর্থ্য নেই। কিন্তু তিন ছেলেমেয়েকে সুপথে রেখেছি। এটাই আজ আমার বড় সুখ।’ ১৭ সেপ্টম্বের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে রোমান সানাকে মিষ্টিমুখ করান। তখন রোমানের মায়ের চিকিৎসার দায়িত্ব নেন তিনি। 

দুরন্ত কোনো নদীর মতো বয়ে চলা এই জীবনে সানা পরিবার সুখী। কিন্তু পেছনে অনেক কষ্টের গল্প। নিঃশব্দে গফুর সানা বলেন, ‘খুলনা শহরে এসে তিনটা বাসা বদল করি আগে। রোমান চাকরি করার পর চার মাস আগে একটু ভালো বাসায় উঠেছি।’ বাসা নিয়ে একটা স্মৃতি ভোলেন না, ‘খুলনা শহরে প্রথমে দেড় শ টাকায় ছোট্ট একটা বাসায় উঠি। দেড় শ টাকা করে একটা চৌকি আর একটা হিটার কিনি। জ্বলন্ত হিটারে একবার হাত ঢুকিয়ে দেয় ছোট্ট রোমান। পাশে তালতলা হাসপাতালে নিতে হয় ওকে। ওর বুড়া আঙুলে এখনো পোড়া দাগটা আছে।’

৬০০/৭০০ বর্গফুটের এ বাসার দুটি ঘরের একটিতে মা–বাবা, অন্যটিতে ভাই-ভাবি থাকেন। রোমান এলে থাকার জায়গা নিয়ে ভাবতে হয়। আর রোমানের সব পুরস্কার, ৪০-৪৫টি পদক, সনদ—সব টিভি ট্রলির ভেতর। 

খেলাটা রোমানের খুব পছন্দ। কতটা? বিউটি পারভীন বললেন,  ‘এসএসসি পরীক্ষার প্রথম দিন আজানের সময় দেখি, ও বাসায় নেই। পরে শুনি সার্কিট হাউস মাঠে গেছে ক্রিকেট খেলতে।’ আজও মুগ্ধতা মায়ের কণ্ঠে। সেই ক্রিকেট ছেড়ে রোমান আর্চার হলেন বাংলাদেশ আর্চারি ফেডারেশনের উদ্যোগে স্থানীয় স্কুলে আর্চারির এক বাছাইয়ে টিকে। সবাই আজ তাঁকে নিয়ে গর্বিত। 

জমি বন্ধক

২০১২ সালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হন রোমান। খুলনা পঙ্গু হাসপাতালে ১ মাস ১৩ দিন কাটে। ভাইকে তখন বলেছিলেন, ‘আমার তো লাইফ শেষ।’ কিন্তু উঠে দাঁড়িয়ে ২০১৩ সালে বাংলাদেশ গেমসে পেলেন জীবনে প্রথম সোনার পদক। সেই সময় ছেলের চিকিৎসার টাকার চিন্তায় গফুর সানার জীবন হয়ে ওঠে তপ্ত মরুভূমির মতো। পৈতৃকসূত্রে একটা তালগাছ আর ১০ কাঠা জমি পান। গাছটা বিক্রি করেন। জমি বন্ধক দিয়ে নেওয়া ১২ হাজার টাকা এখনো শোধ দিতে পারেননি। গফুর সানা বলেন, ‘ছেলে বাড়ি এলে বলেছি, তোমার পা ভাঙার সময় জমি বন্ধক দিয়ে নেওয়া টাকাটা এখনো ফেরত দিতে পারিনি। ও বলেছে, আব্বা, চিন্তা করবেন না, আমি খেলে আসি।’ 

রোমান সানার আন্তর্জাতিক পদক

সোনা একক

২০১৯ এশিয়া কাপ বিশ্ব র​্যাঙ্কিং টুর্নামেন্ট, ফিলিপাইন

ব্রোঞ্জ একক

২০১৯ বিশ্ব আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপ, নেদারল্যান্ডস

রুপা একক

২০১৯ আইএসএসএফ আন্তর্জাতিক

সলিডারিটি বিশ্ব র​্যাঙ্কিং আর্চারি, ঢাকা

সোনা দলগত ও মিশ্র দলগত

২০১৮ আইএসএসএফ আন্তর্জাতিক

সলিডারিটি আর্চারি, ঢাকা

২টি সোনা দলগত ও রুপা একক

২০১৮ দক্ষিণ এশিয়ান আর্চারি, ঢাকা

সোনা একক

২০১৭ বিসকেক আন্তর্জাতিক আর্চারি, তুর্কিস্তান 

সোনা দলগত ও মিশ্র দলগত

২০১৭ প্রথম আইএসএসএফ আন্তর্জাতিক

সলিডারিটি আর্চারি, ঢাকা

সোনা একক

২০১৪ প্রথম এশিয়ান আর্চারি গ্রাঁ প্রি, থাইল্যান্ড

রুপা দলগত

২০১১ প্রথম এশিয়ান যুব আর্চারি, ঢাকা। সূত্র: প্রথম আলো

মুনলাই পাড়ায় একদিন

শুরুতে পুরোপুরি বিষয়টা বোঝা যায়নি। ভাতঘুম থেকে সন্ধ্যায় উঠে কাঠের বারান্দায় একটা চেয়ারে বসে পাখির কিচিরমিচির, তক্ষকের টক টক শুনে আনমনা লাগছে, তখন এলেন লাল নুন বম। ‘আপনারা ঢাকা থেকে এসেছেন? এটা আমার বাড়ি।’ তাঁর এ কথায় ‘কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজম’ বিষয়টা অনেকখানি খোলাসা হলো। 

পাহাড়ি সেই বাড়ি আমাদের তিনজনের সে রাতের ঠিকানা। রুমা বাজার থেকে তিন কিলোমিটার চড়াই-উতরাই পথ পেরিয়ে ২ সেপ্টেম্বর বিকেলে পৌঁছেছিলাম মুনলাই পাড়ায়। বগা লেক আর কেওক্রাডং যাওয়ার পথে এটি একটি বম পাড়া। বম সম্প্রদায়ের ৫৪টি পরিবারের বসবাস এখানে। 

বান্দরবানের পাহাড়ে পাহাড়ে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর যে বসতি বা পাড়া চোখে পড়ে, মুনলাই পাড়া সেগুলো থেকে ব্যতিক্রম। পাহাড়ি রাস্তার দুই ধারে নানা রকম রঙিন ফুলের গাছ, ঝকঝকে ছোট ছোট বাড়ি, যেগুলো স্বাভাবিকভাবেই মাচার ওপর। কয়েকটি ঘর রঙিন টিনে ছাওয়া। মেঝেগুলো কাঠের।

লাল নুন বমের কথায় আবার ফিরে যাই। সৌরবিদ্যুতের বাতি জ্বলছে কি না, ছোট ছোট টেবিল ফ্যান ঘুরছে কি না জিজ্ঞেস করলেন। ‘জানালাগুলো আটকে দেবেন, মশা আসতে পারবে না। কোনো সমস্যা হলে আমাকে বলবেন।’ লাল নুন বমের কথায় মনে হলো যেন কুটুমবাড়ি বেড়াতে এসেছি। আমাদের জন্য লম্বাটে যে ঘর, তার সামনের ছোট ঘরেই থাকেন লাল নুন আর তাঁর স্ত্রী। তাঁদের তিন ছেলে অন্যত্র থাকেন কাজ আর পড়াশোনার সূত্রে। 

কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজমের ধারণাটাই এমন। ঢাকাতে তা জানিয়েছিলেন গাজীপুরের রিসোর্ট বেসক্যাম্প বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তামজিদ সিদ্দিক। বেসক্যাম্পের একটি উদ্যোগ ‘মুনলাই কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজম’। বলেছিলেন, ‘বমদের এই পাড়াতে আপনি তাঁদের বাড়িতে থাকবেন। তাঁদের জীবনযাপন বুঝতে পারবেন। তবে থাকার ব্যাপারটা হবে আরামদায়ক।’ অভিজ্ঞতাও তা বলল। কাঠের মেঝের ওপর পাঁচটি বিছানা পাতা। পাশেই স্নানঘর, সেটায় আধুনিক ব্যবস্থা, কিন্তু আমেজটা পাহাড়ি। থাকার জন্য পর্যটক যে ভাড়াটা দেবেন দিনের হিসাবে, তার ভাগ পাবেন বাড়ির বাড়ির মালিক। অন্যান্য আয়ের অংশও পান স্থানীয়রা। এ উদ্যোগে প্রশাসনিক সহায়তা করছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। 

মুনলাই কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজম শুরু হয়েছে বছর দুয়েক আগে। এখন পর্যন্ত দুটি বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা। ২০-২৫ জন পর্যটক থাকতে পারেন এখন। আবার তাঁবু টানিয়ে ৪০ জনের থাকার ব্যবস্থাও রয়েছে। এর পাশাপাশি ট্রেকিং, ৫৫০ ফুট দীর্ঘ জিপলাইন,  নদী ও খালে কায়াকিং, এ গাছ থেকে ও গাছে চড়ার খেলাও (ট্রি টপ অ্যাকটিভিটি) খেলা যাবে। 

গাড়িতে করে বিকেল চারটার দিকে মুনলাই পাড়া পৌঁছেছিলাম আমরা। সেদিন ছিল টিপটিপে বৃষ্টি। রুমা বাজার থেকে আমাদের নিয়ে যান সৌভিক বড়ুয়া। লাল নুন বমের বাড়িতে বাক্সপেটরা রাখতেই খিদের কথা মনে পড়ল। রাস্তার ওপারে একটু হেঁটে কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজমের অফিস কাম খাবার ঘরে গেলাম। বারান্দায় কাঠের বেঞ্চ পাতা, তার সামনেই দিগন্তজোড়া পাহাড় আর মেঘ। নিচে যেন অতল সবুজ। 

খাবার পাতে সে বেলা পড়ল ভাত, মাছ, সবজি, সালাদ, বাঁশে রান্না মুরগির পদ। সঙ্গে আচার। রান্না দেশি, তবে পরিবেশনে আধুনিক কায়দা। এখানকার শেফ শাহীন হোসেনের রান্নার প্রশংসা করতেই হলো। শাহীন জানালেন, অতিথি চাইলে এখানকার স্থানীয়দের রান্না করা পাহাড়ি খাবারও পরিবেশন করা হয়। 

বান্দরবানের আকাশ সবচেয়ে স্বচ্ছ মনে হয় সব সময়। এবারও তা বুঝতে পারলাম। মেঘের আনাগোনার মধ্যেও মনে হলো অনেক স্বচ্ছ আকাশ। রাতে অসংখ্য তারা সেখানে! যান্ত্রিকতা নেই কোনো দিকে, দিনের সবুজ রাতে আরও গাঢ়, রাতজাগা পাখি, পোকামাকড়ের আওয়াজ, তক্ষকের ডাক আর মাথার ওপর তারাভরা আকাশ। এই জীবনে এর থেকে আর বেশি যেন পাওয়ার নেই। 

ওদিকে বারবিকিউ আর ক্যাম্পফায়ারের আয়োজন করেছেন শাহীন আর সৌভিক। আগুনের পাশে বম যুবক থমাস এডিসন বম গিটার ধরেছেন। একটা পরিচিত গানের পর তাঁকে বলা হলো বম ভাষার গান গাইতে। গাইলেন তিনি। ক্যাম্পফায়ারের আগুন নিভে আসছে, বারবিকিউ শেষ পর্যায়ে। তার একটু পরই রাতের খাবার।

আবারও পাহাড়ে মৃদুমন্দ বাতাসে হাঁটাহাঁটি, তারা চেনার চেষ্টা, সহজ জীবনের স্বাদ। একেবারে ভোের আমাদের বাকি দুজন, সজীব মিয়া ও মনন মাহমুদ গেলেন বগা লেক আর কেওক্রাডংয়ের সড়ক ধরে আরও উঁচুতে। সূর্যোদয় দেখতে। ফিরে এসে দিলেন সেই দৃশ্যের বর্ণনা। মেঘ ছিল যদিও, সোনালি সূর্যের আভায় মুগ্ধতা তাঁদের ফিরিয়ে দেয়নি। ফেরার পথে সেই দূর পাহাড় থেকে তাঁরা দেখলেন মুনলাই পাড়ার অন্যরূপ।

সাতসকালেই দেখলাম, হাফ প্যান্ট আর শার্ট পরে মাথার বেল্টে টুকরি ঝুলিয়ে লাল নুন বম রওনা হলেন তাঁর ফলবাগানে। পাহাড়ের গায়ে তাঁর ফলবাগান। আগের সন্ধ্যায় অসময়ের আপেল কুল খাইয়েছেন। বললেন, ‘এক দিন আগে মন্ত্রী সাহেব (পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈ সিং) এসেছিলেন রুমা বাজারে, তাঁকে আমার বাগানের অসময়ের তরমুজ খেতে দিয়েছিলাম, তিনি খুবই খুশি হয়েছিলেন।’ লাল নুন বেতের ঝুড়িও তৈরি করেন, গিলা নিয়ে যান ঢাকায় বিভিন্ন সময়। তাঁর স্ত্রীকে দেখলাম দিনের বেলায় কোমরতাঁতে কাপড় বুনতে। উলের শালও তৈরি করেন। এই পাড়ায় তৈরি এসব কাপড় বিক্রি করে মুনলাই কমিউনিটি ট্যুরিজম। সে অর্থ দিয়ে সেখানে শিশুদের একটা স্কুল চালায় তারা। 

সময় শেষ হয় দ্রুতই। আবার নেমে চলা নিচে—নগরে, কাজে। সহজ থেকে জটিল জীবনযাপনের দিকে। তবু মাঝেমধ্যে মনের লাগি মুনলাই পাড়ার মতো জায়গা এক, দুই বা তিন দিনের জন্য টানে বৈকি।

যেভাবে যাবেন

নিজের গাড়ি, ভাড়া গাড়ি বা বাসে ঢাকা থেকে বান্দরবান। বান্দরবান থেকে বাস যায় রুমা বাজার পর্যন্ত, ভাড়া ১১০ টাকা। এ ছাড়া চান্দের গাড়ি (ফোর–হুইল ড্রাইভ) ভাড়া (১২ জনের জন্য ৩,৫০০ টাকা) করেও যাওয়া যাবে। দূরত্ব ৫০ কিলোমিটার, সময় লাগবে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা। রুমা বাজারের আগে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গ্যারিসনে প্রথম দফা নাম লিখিয়ে নিতে হবে। রুমা বাজারের আর্মি ক্যাম্পে আরেক দফা নাম লিখিয়ে অনুমতি নিতে হবে (কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজমের মাধ্যমে গেলে আগে থেকেই তারা অনুমতির প্রক্রিয়া শুরু করে দেয়)। সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসাপোর্ট বা জন্মনিবন্ধন সনদ রাখতে হবে। রুমা বাজার থেকে বগা লেক ও কেওক্রাডং সড়কে তিন কিলোমিটার পর মুনলাই পাড়া। এটুকু পথে পাহাড়ে বেশ চড়াই–উতরাই রয়েছে। রুমা বাজার থেকে চান্দের গাড়ি ভাড়া করে ১৭ কিলোমিটার দূরের বগা লেক যেতে পারবেন, ভাড়া ২৭০০ টাকা। কেওক্রাডং গাড়ি যাবে না। তবে বাইক যায় রুমা বাজার থেকে, ভাড়া ২৫০০ টাকা। সূত্র: প্রথম আলো

Sunday, September 22, 2019

৯ বছরের ছেলের ৩০ গেম বানানোর গল্প

নাইজেরিয়ার ৯ বছর বয়সী বাসিল ওকপারা। তার বয়স যখন সাত, ঘটনাটি ঘটেছিল তখন। মোবাইলে গেম খেলে অনেক সময় নষ্ট করছে বলে তার বাবা বাসিল ওকপারা সিনিয়র বেশ কিছুদিন ধরে বকাঝকা করছিলেন। কিন্তু বাবার কথা কানে নেয়নি ছেলে বাসিল। একদিন তো রেগেমেগে বাবা বলেই বসলেন, ‘সারা দিন গেম খেলতে পারো, গেম বানাতে তো পারো না!’

কে জানত বাসিল সেদিন তার বাবার কথাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেবে। পরের দুই বছরে বানিয়ে ফেলবে ৩০টির বেশি মোবাইল গেম। আর তাতেই সরব হবে গণমাধ্যম, খুদে বাসিলের কীর্তি নিয়ে আলোচনা হবে বিশ্বজুড়ে।

বাসিলের গল্পটা রূপকথার মতো শোনালেও, এখন তা সত্য কাহিনি। চার বছর বয়স থেকেই মোবাইল গেমের প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহ বাসিলের। বিশেষ করে ক্যান্ডি ক্রাশ ও টেম্পল রান খেলার সময় চোখই সরাত না পর্দা থেকে। শুরুতে ছেলের কীর্তিকলাপে খুশি হয়ে বাবা কিনে দিয়েছিলেন একটি ট্যাবলেট কম্পিউটার।

সেই ট্যাবলেট কম্পিউটারেই গেমের বিশাল জগতের সঙ্গে পরিচয় ঘটে বাসিলের। বাবার বকা শুনে সে সিদ্ধান্ত নেয়, অনেক গেম তো খেলা হলো, এবার গেম বানানোর চেষ্টা করে দেখা যাক। এরপরের গল্পটা সংকল্প ও অধ্যবসায়ের।

মূলত ছেলের পীড়াপীড়িতেই বাবা নিয়ে যান ৫ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের একটি পাঁচ দিনের প্রোগ্রামিং বুটক্যাম্পে। সেখান থেকে প্রোগ্রামিং শিখে এসে ল্যাপটপ কিনে দিতে বাবাকে রীতিমতো বাধ্য করে বাসিল।

তবে ছেলের ভবিষ্যতের ওপর সেই বিনিয়োগ একদম বৃথা যায়নি বাসিলের বাবার। যার প্রমাণ মাত্র ৯ বছর বয়সেই দিয়েছে তার ছেলে। এখনো কিছুটা প্রাথমিক পর্যায়ে আছে বাসিলের তৈরি গেমগুলো, তবে আগস্ট থেকে তার তৈরি ফ্রগ অ্যাটাক পাওয়া যাচ্ছে গুগল প্লে স্টোরে। 
সূত্র: সিএনএন

Saturday, September 21, 2019

এক নজরে রুবানা হক

স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি রুবানা হক। তিনি মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। 

ব্যবসার জগতে আসার আগে রুবানা হক ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। চট্টগ্রামের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের ট্রাস্টি বোর্ডের একজন সদস্য তিনি। তাঁর লেখা কবিতার বই টাইম অব মাই লাইফ। কবিতার জন্য ২০০৬ সালে তিনি ‘সার্ক সাহিত্য পুরস্কার’ অর্জন করেছেন। এর বাইরেও সমাজের নারীদের জন্য ‘শি ফর শি’ নামে একটি উদ্যোগ নিয়েছেন, যার মাধ্যমে তিনি মেয়েদের নানান সমস্যার কথা মন দিয়ে শোনেন এবং সাহায্য করার চেষ্টা করেন। 

রুবানা হকের আরও একটি পরিচয় হলো, তিনি প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের স্ত্রী। আনিসুল হক ফাউন্ডেশন এবং শারাফ মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কাজও চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। 

অনুপ্রেরণাদায়ী একজন সফল মানুষের মুখোমুখি বসে তাঁর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ করে দিতে তরুণদের জন্য প্রথম আলো ও বিএসআরএম আয়োজন করেছে মিট দ্য এক্সপার্ট।
এত ব্যস্ততার মধ্যেও মিট দ্য এক্সপার্টে তিনি সময় দেবেন তরুণদের। নিজের কথা বলবেন, তরুণদের কথা শুনবেন, দেবেন পরামর্শ। যে তরুণেরা রুবানা হকের সঙ্গে নাশতার টেবিলে বসে আলাপ করার এই দারুণ সুযোগ কাজে লাগাতে চান, নিবন্ধন করে ফেলুন আজই। আজ ১৫ সেপ্টেম্বর, নিবন্ধনের শেষ দিন। 

বাস্তবেই শূন্য থেকে ‘স্বপ্নচূড়া’য় তিনি

দেড় দশক আগেও চাঁদমুহা হরিপুর ছিল দারিদ্র্যপীড়িত এক অজপাড়াগাঁ। ফেরি করে মুড়ি-মুড়কি বেচত লোকে। কেউ দিনমজুরি করত। সংসারে অভাব ছিল নিত্যসঙ্গী। অর্ধাহারে দিন কাটত তাদের। সময় এখন বদলেছে। পাল্টেছে গ্রামের চিত্র। কুঁড়েঘরের বদলে উঠেছে পাকা বাড়ি। মাটির চুলার বদলে রান্না হয় গ্যাসের চুলায়। ছোট গ্রামের বড় এই বদলের পেছনে আছে একটি কারখানা, যেখানে কাজ করে মানুষজন আজ সচ্ছল, স্বাবলম্বী। এই কারখানার পেছনে আছে উদ্যমী এক মানুষের গল্প, যিনি একক চেষ্টা ও পরিশ্রমে তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন কারখানাটি। ঘুরিয়ে দিয়েছেন হরিপুরের অর্থনীতির চাকা।

সংগ্রামী এ মানুষটির নাম রনজিৎ কুমার পালিত। রাহুল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান তিনি। শূন্য থেকে সফল উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা ৫৪ বছর বয়সী রনজিতের শৈশবের গল্পটা ছিল কষ্ট আর সংগ্রামের।

সততাই বল

অভাবের সংসারে প্রাথমিকের গণ্ডি পার হতে পারেননি রনজিৎ। কিশোর বয়সেই ফেরি করে বেড়াতেন। বাকিতে পণ্য কিনে গ্রামগঞ্জ, হাটবাজার ঘুরে মুড়ি, মুড়কি, মোয়া, নিমকি, জিলাপি, কদমা-বাতাসা, সন্দেশ বেচতেন। মেলায় দোকান দিতে গিয়ে বৃষ্টিতে মিঠাই ভিজে নষ্ট হয়েছিল একবার। পুঁজি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন। ঋণ শোধ করতে গ্রাম ছেড়ে শহরে আসেন। ৩০ টাকা বেতনে কাজ নেন বগুড়া শহরের একটি মুদিদোকানে। সেটা বছর চল্লিশেক আগের কথা।

দোকানে কাজ করার সুবাদেই শহরের এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয়। রনজিতের আচার-ব্যবহার ও সততায় মুগ্ধ হন সেই ব্যবসায়ী। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য রনজিৎকে দেড় লাখ টাকা ধার দেন। নিজের কাছে জমানো ছিল ৫৬ হাজার টাকা। সেই টাকা যোগ করে ১৯৯৬ সালে একটি মুদিদোকান দেন।

মনিহারি পণ্য বিক্রির পাশাপাশি সিরাজগঞ্জ থেকে উৎকৃষ্ট মানের সরিষার তেল এনে পলিব্যাগে ভরে বাজারজাত করা শুরু করেন রনজিৎ। সারা দিন দোকানে বেচা–বিক্রি শেষে বাসায় ফিরে রাতভর স্ত্রীকে নিয়ে সরিষার তেল প্যাকেটজাত করতেন। ঘণ্টাকয় ঘুমিয়ে সকালে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন। আর দোকানে দোকানে ঘুরে প্যাকেটজাত তেল বেচতেন। অল্প সময়ে জনপ্রিয় হয়ে যায় রনজিতের প্যাকেটজাত তেল। দিন দিন চাহিদা বাড়ে। স্বপ্ন বুনতে থাকেন রনজিৎ, একদিন বড় কারখানা হবে।

হয়েও যায় সেই কারখানা। ২০০৬ সালের কথা। অল্প টাকায় নিজ গ্রামে কিছু জমি কিনে সরিষা ভাঙার কল দেন। রনজিতের দিনবদলের গল্পটা এখান থেকেই শুরু। ছোট্ট একটি সরিষার কল এখন বড় কারখানা। নাম রাহুল ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেড।

দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে রাহুল কুমার পালিতের নামেই রেখেছেন কোম্পানির নাম। নিজে পড়াশোনা করতে পারেননি। কিন্তু ছেলে দুটিকে উচ্চশিক্ষিত করতে কোনো কার্পণ্য নেই তাঁর। দুজনই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। শহরের ঘিঞ্জি এলাকায় ১৫০ টাকার ভাড়া বাসায় একসময় থেকেছেন। এখন থাকেন শহরের অভিজাত এলাকায় নিজস্ব বহুতল ভবনে। আছে আবাসন ব্যবসা। রাহুল গ্রুপে সব মিলিয়ে বিনিয়োগ এখন অর্ধশত কোটি টাকা।

এত টাকাপয়সার পরও মোহে জড়াননি রনজিৎ। ভুলে যাননি তাঁর ফেলে আসা অতীত। অসহায়, গরিব–দুঃখীদের তিনি সাধ্যমতো সহায়তা করেন। নানা সামাজিক কাজের পাশাপাশি কারখানাটিকে তিনি শ্রমিকবান্ধব কারখানা হিসেবে গড়ে তুলেছেন।

রাহুল গ্রুপের চেয়ারম্যান রনজিৎ কুমার পালিত। গত মঙ্গলবার বগুড়া সদরের চাঁদমুহা হরিপুর গ্রামে।  ছবি: সোয়েল রানা
রাহুল গ্রুপের চেয়ারম্যান রনজিৎ কুমার পালিত। গত মঙ্গলবার বগুড়া সদরের চাঁদমুহা হরিপুর গ্রামে। ছবি: সোয়েল রানা
মালিক–শ্রমিক অনন্য সম্প্রীতি

বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরে বাংলার বিলুপ্ত রাজধানী পুণ্ড্রনগরের পাশেই হরিপুর গ্রাম। সম্প্রতি কথা হয় অর্ধশত শ্রমিকের সঙ্গে। তাঁরা জানান, এখানে মালিক-শ্রমিকের মধ্যে সম্পর্কটাই অন্য রকম। নারী শ্রমিকদের রয়েছে তিন মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি। রয়েছে অসুস্থাজনিত ছুটি। দুর্ঘটনার জন্য রয়েছে ঝুঁকিভাতা, চিকিৎসা ও ওষুধ খরচ সহায়তা। কারখানার দোতলায় মুসলিমদের জন্য রয়েছে নামাজঘর। অন্য পাশে হিন্দুদের জন্য আছে মন্দির।

কারখানার শ্রমিক রেশমা বেগম বলেন, ‘এখানে কাজ করার আগে বাড়িতে উপোস থাকতে হতো। এখন দিনে ২৫০ টাকা রোজগার করি। কারখানায় কাজ করার আয়ে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। ছেলেও কারখানায় কাজ করছে। এখানে কাজ করতে এসে কখনো কারখানা মনে হয় না। মনে হয় পরিবারের সঙ্গেই আছি।’ রেশমা জানান, উৎসব–পরবে বেতনের বাইরে বাড়তি সহায়তা দেওয়া হয়। কারখানাতেই বনভোজনের আয়োজন করা হয়। দুই মাস পরপর উন্নত খাবার দেওয়া হয়।

জোবেদা বেগম নামের আরেক শ্রমিক বললেন, এখানে কেউ অসুস্থ হলে মালিকপক্ষ সবেতনে ছুটি দেন। নারীরা মাতৃত্বকালীন ছুটি নিতে পারেন।

রাহুল ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেডে প্রায় ৫০০ শ্রমিক কাজ করেন। এর অর্ধেকই নারী। এ ছাড়া বিপণন বিভাগে কর্মী রয়েছেন প্রায় ২০০। কাঁচামাল সংগ্রহ, পরিবহন, মালামাল ওঠানো–নামানো থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধাপে কর্মসংস্থান হয়েছে আরও ৩০০ কর্মীর। সব মিলিয়ে এক হাজার কর্মী কাজ করছেন রাহুল গ্রুপে। বর্তমানে রাহুল ব্র্যান্ডের পাঁচ ধরনের বোতলজাত সরিষার তেল, প্যাকেট আটা, ময়দা, লাল আটা, সুজি, চিকন সেমাই, ইউ সেমাই, চুটকি সেমাই, চিনিগুঁড়া চাল, মসুর ডাল, মুড়ি, কয়েক ধরনের পাঁপড় তৈরি হচ্ছে। রাহুলের পণ্য উত্তরের ১৬ জেলা, দক্ষিণাঞ্চলসহ জামালপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, সাভার, উত্তরা, আশুলিয়া, ঢাকা ও কক্সবাজারে যাচ্ছে। সরিষার তেল, মুড়ি ও সুজি মধ্যপ্রাচ্যেও রপ্তানি হচ্ছে।

সামাজিক কর্মকাণ্ড

ব্যবসার পাশাপাশি নানা সামাজিক কাজ করে প্রশংসা কুড়াচ্ছেন রনজিত। হরিপুরের অর্ধশত পরিবারকে কার্ড করে দিয়েছেন। কার্ডধারী পরিবারগুলো প্রতি মাসে চাল, আটা, তেল, চিকিৎসা ভাতা পায়। নিজে পড়াশোনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলেও এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়াতে হতদরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের প্রতিবছর শিক্ষাবৃত্তি দেন। নিজ এলাকায় অত্যাধুনিক একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ারও উদ্যোগ নিয়েছে রাহুল গ্রুপ।

স্বপ্নচূড়া রিয়াল এস্টেট

ভোগ্যপণ্য উৎপাদন ও বিপণন ব্যবসার পাশাপাশি আবাসন ব্যবসায়ও বিনিয়োগ করেছেন রনজিৎ। নাম দিয়েছেন স্বপ্নচূড়া রিয়েল এস্টেট কোম্পানি। তিনি এর চেয়ারম্যান। কথায় কথায় রনজিৎ বললেন, ‘২০০১ সাল থেকে কয়েকজন বন্ধু মিলে ৬০০ টাকা করে সঞ্চয় জমা করতাম। কিছুদিন পর মাসে দুই হাজার টাকা করে রাখতাম। ১২ বছর ধরে জমানো টাকার সঙ্গে আরও লগ্নি দিয়ে রিয়েল এস্টেট ব্যবসা শুরু করেছি।’

বিশিষ্টজনেরা যা বলেন

হরিপুর গ্রামের বদলে যাওয়ার বর্ণনা দিতে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও গোকুল ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আলী রেজা বলেন, কারখানা বদলে দিয়েছে এলাকার আর্থসামাজিক চিত্র। অভাবের কারণে গ্রামের অধিকাংশ মানুষের আগে তিন বেলা ভাত জুটত না। কারখানায় কাজ করে এখন সচ্ছল ও স্বাবলম্বী।

বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী শ্যামলী হোটেল অ্যান্ড কনফেকশনারির মালিক হাবিবুল হক বলেন, রনজিৎ অত্যন্ত সৎ, পরিশ্রমী, বিনয়ী ও ভদ্র স্বভাবের মানুষ। সততা ও পরিশ্রম দিয়ে ব্যবসা করে আশাতীত সাফল্য অর্জন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। শূন্য থেকে কোটিপতি হলেও এখনো অতীত ভুলে যাননি। 

রাহুল গ্রুপের প্রশংসা করে বগুড়া শিল্প ও বণিক সমিতির সহসভাপতি মাহফুজুল ইসলাম বললেন, সততা ও কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে ব্যবসা করেও সাফল্যের শিখরে ওঠা যায়, শূন্য থেকে সফল উদ্যোক্তা হওয়া যায়, সেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন রনজিৎ কুমার পালিত। সূত্র: প্রথম আলো 

Friday, September 20, 2019

৩ লাখ টন তেল ধারণকারী জাহাজ ১৬১ কোটি টাকায় বিক্রি

পুরো জাহাজ ঘুরে দেখতে হলে তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লেগে যেতে পারে। জাহাজটি লম্বায় ৩৪০ মিটার। আয়তনে তা ১৯ হাজার বর্গমিটার। ২৩ বছর জ্বালানি তেল পরিবহনের পর জাহাজটির শেষ গন্তব্য এখন সীতাকুণ্ডের উপকূল। এমন লম্বা জাহাজ গত এক দশকে ভেড়েনি এই উপকূলে। জ্বালানি তেল পরিবহনের এ জাহাজটির নাম ‘এমটি অ্যাটবান’।

২৩ বছরের পুরোনো হলেও জাহাজটির কদর একটুও কমেনি। ১ কোটি ৯১ লাখ ডলার বা প্রায় ১৬১ কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছে জাহাজটি। এ জাহাজটি থেকে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ১৯ কোটি টাকা। এ হিসাবে জাহাজটির দাম পড়েছে ১৮০ কোটি টাকা। এ ধরনের নতুন জাহাজ কিনতে গুনতে হবে ১ হাজার কোটি টাকা।

চট্টগ্রামের উঁচু ভবন আজিজ কোর্টের (৩২ তলা) তিন গুণ সমান লম্বা জাহাজটি। বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু ভবন সিটি সেন্টারের দ্বিগুণ। আয়তন হিসাব করলে জাহাজটিতে তিনটি ফুটবল মাঠের সমান। জাহাজটি লম্বায় ফ্রান্সের আইফেল টাওয়ারের চেয়ে বড়। জাপানের মিতসুবিশি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে তৈরি হয় জাহাজটি।

কাস্টমস–এর আনুষ্ঠাকিতা শেষে চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমা থেকে চালিয়ে শেষ ঠিকানায় নিয়েছেন ক্যাপ্টেন মোবারক হোসেন। তিনি জানান, জাহাজটি ভাঙার সুবিধার জন্য জোয়ারের সময় সর্বোচ্চ গতিতে উপকূলে উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

জাহাজটি ছিল সৌদি আরবের জ্বালানি তেল পরিবহন কোম্পানি ‘বাহরি’র হাতে। ‘ভেরি লার্জ ক্রুড ক্যারিয়ার’ বা অতিকায় বড় জ্বালানি তেল পরিবহনকারী বাহন হিসেবে সাগর–মহাসাগরে চলত এটি। ৩ লাখ টন জ্বালানি তেল ভরার পর পানির নিচের অংশে থাকত জাহাজটির সাড়ে ২২ মিটার। গত জুনে দুবাইভিত্তিক পুরোনো জাহাজের ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ফাইভ স্টার শিপিং–এর কাছে বিক্রি করে তারা। সেখান থেকে কিনে নেয় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার শীতলপুরে অবস্থিত জাহাজভাঙা প্রতিষ্ঠান গোল্ডেন আয়রন ওয়ার্কস লিমিটেড।

চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র মনজুর আলমের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান গোল্ডেন আয়রন ওয়ার্কস লিমিটেড। শিপইয়ার্ডটিতে নিয়োজিত ৪০০ শ্রমিক জাহাজটি কেটে টুকরো করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। একযোগে ৪০০ জন শ্রমিক কাজ করলেও এটি কাটতে লাগবে এক বছর। অবশ্য শিপইয়ার্ডটির লক্ষ্য, দশ মাসের মধ্যেই কাটাকুটি শেষ করা।

জাহাজটি থেকে পাওয়া যাবে ৪৮ হাজার ১০০ টন লোহা ও লোহার প্লেট। সবচেয়ে দামি হলো পিতলের তৈরি প্রপেলর। এ জাহাজে থাকা প্রপেলর বা পাখার ওজন ৭০ টন। এটি বিক্রি করে পাওয়া যাবে অন্তত ৩ কোটি টাকা। এর বাইরে অন্তত শতাধিক ধরনের পণ্য আছে জাহাজটিতে। আসবাব থেকে শুরু করে তৈজসপত্র, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, মরিচারোধী ইস্পাতের পাইপ, প্লাস্টিকের পাইপ, জেনারেটর, তার, টেলিভিশন, ফ্রিজ কত কিছুই না আছে এটিতে। এই জাহাজ থেকে লোহার প্লেট পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করে ব্যবহার হবে দেশীয় জাহাজ নির্মাণ কারখানায়।

গোল্ডেন আয়রন ওয়ার্কস লিমিটেডের পরিচালক সারোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, ৩৭ বছর ধরে তাদের জাহাজভাঙা কারখানায় সাড়ে ৩০০ জাহাজ ভাঙা হয়েছে। লম্বায় এটিই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড়। জাহাজটি থেকে যেসব পুরোনো লোহা পাওয়া যাবে তা তাঁদের গোল্ডেন ইস্পাত কারখানার কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হবে।

বিশ্বে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে লম্বা জাহাজ হলো ‘নক নেভিস’। ২০১০ সালে ভারতের জাহাজভাঙা ইয়ার্ডে ভাঙা হয় এটি। ৪৫৮ মিটার লম্বা জাহাজটি ভাঙতে সময় লেগেছিল এক বছর। সুত্র: প্রথম আলো 

Tuesday, September 17, 2019

জানেন কি সবচেয়ে বেশি মুনাফা কোন সঞ্চয়পত্রে?

পেনশনার সঞ্চয়পত্রটি শুধু অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের জন্যই। দেশে যত সঞ্চয়পত্র চালু আছে, তার মধ্যে এর গ্রাহকদেরই সবচেয়ে বেশি মুনাফা বা সুদ দেয় সরকার। মুনাফার হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এ সঞ্চয়পত্রের মুনাফায় কোনো উৎসে কর নেবে না সরকার। তবে পাঁচ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের মুনাফায় উৎসে কর ১০ শতাংশ।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর ২০০৪ সালে চালু এ সঞ্চয়পত্র চালু করে। প্রাপ্ত আনুতোষিক ও ভবিষ্য তহবিলের অর্থ মিলিয়ে একক নামে ৫০ (পঞ্চাশ) লাখ টাকা পর্যন্ত এ সঞ্চয়পত্র কেনা যায়। 

এ সঞ্চয়পত্র শুধু একটি অফিস থেকেই কেনা যায়। একাধিক অফিস থেকে কেনা হলে অথবা ক্রয়সীমা অতিরিক্ত সঞ্চয়পত্র কেনা হলে গ্রাহক কোনো মুনাফা পাবেন না। 

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের ২০১৯ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে যত সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়, তার ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ হচ্ছে পেনশনার সঞ্চয়পত্র। 

কারা কিনতে পারবেন
অবসরভোগী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারী, সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য এবং মৃত চাকরিজীবীর পারিবারিক পেনশন সুবিধাভোগী স্বামী, স্ত্রী ও সন্তানেরা এ সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন। 

কেনার সময় দুই কপি ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন সনদ অথবা পাসপোর্টের ফটোকপি থাকতে হয়। আর দুই কপি করে পাসপোর্ট আকারের ছবি দিতে হয় নমিনি বা নমিনিদের। 

কোথা থেকে কেনা যাবে
৫০ হাজার টাকা, ১ লাখ টাকা, ২ লাখ টাকা, ৫ লাখ টাকা এবং ১০ লাখ টাকা মূল্যমানের পেনশনার সঞ্চয়পত্র রয়েছে। এগুলো কেনা যাবে জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরো, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সব তফসিলি ব্যাংক ও ডাকঘর থেকে। একই জায়গা থেকে ভাঙানোও যাবে এগুলো। তবে যেসব জায়গায় পুরোপুরি অনলাইন পদ্ধতি চালু হয়নি, সেসব জায়গা থেকে সঞ্চয়পত্র আর কেনা যাচ্ছে না। 

মুনাফার হার 
পেনশনার সঞ্চয়পত্র পাঁচ বছর মেয়াদি। মেয়াদান্তে মুনাফা ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। তবে বছরভিত্তিক মুনাফার হার ভিন্ন। মুনাফার হার ১ম বছর শেষে ৯ দশমিক ৭০ শতাংশ, ২য় বছর শেষে ১০ দশমিক ১৫ শতাংশ, ৩য় বছর শেষে ১০ দশমিক ৬৫ শতাংশ, ৪র্থ বছর শেষে ১১ দশমিক ২০ শতাংশ এবং ৫ম বছর শেষে ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। 

পূর্ণ মেয়াদের জন্য এক লাখ টাকায় প্রতি তিন মাস অন্তর মুনাফার কিস্তি সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ হারে দুই হাজার ৯৪০ টাকা। 

ত্রৈমাসিক ভিত্তি
ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে ৫০ হাজার টাকা মূল্যমানের মুনাফা ১ হাজার ৪৭০ টাকা। একইভাবে ১ লাখ টাকায় ২ হাজার ৯৪০ টাকা, ২ লাখ টাকায় ৫ হাজার ৮৮০ টাকা, ৫ লাখ টাকায় ১৪ হাজার ৭০০ টাকা এবং ১০ লাখ টাকায় ২৯ হাজার ৪০০ টাকা। 

ত্রৈমাসিক মুনাফা উত্তোলনের পর ৫ বছর মেয়াদ শেষে মূল বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত পাওয়া যাবে। মেয়াদপূর্তির আগে সঞ্চয়পত্র নগদায়ন করলে ত্রৈমাসিক মুনাফা কর্তনের পর বাকি অর্থ ফেরত দেওয়া হবে। 

বৈশিষ্ট্য 
ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে মুনাফা দেওয়া হয়। নমিনি নিয়োগ করা যায়। হারিয়ে গেলে, পুড়ে গেলে বা নষ্ট হলে অবিকল (ডুপ্লিকেট) সঞ্চয়পত্র ইস্যু করা হয়। এ সঞ্চয়পত্র এক স্থান হতে অন্য স্থানে স্থানান্তর করা যায়। যেখান থেকে সঞ্চয়পত্র কেনা হবে, সেখানে ভবিষ্য তহবিলের মঞ্জুরিপত্র এবং প্রাপ্ত আনুতোষিকের মঞ্জুরিপত্র অথবা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের একটি সনদ দাখিল করতে হবে। 

পেনশনার সঞ্চয়পত্র ব্যাংকঋণের জন্য জামানত বা আমানত হিসেবে ব্যবহার করা যায় না। ব্যবসা-বাণিজ্যেও এ সঞ্চয়পত্র জামানত হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। সূত্র: প্রথম আলো