newsbdd.blogspot.com। দেশের উন্নয়ন মূলক কার্যক্রম। কোটিপতি হওয়ার গল্প, সাফল্য, নিউজ, খবর, সংবাদ, হিরো, শীর্ষ।
Friday, December 25, 2020
এ সপ্তাহে প্রথমবারের মতো ইসলামি বন্ডের নিলাম | Outlook Bangla
Thursday, December 24, 2020
Iconic TSC soon to be erased | Outlook Bangla
Friday, December 18, 2020
২১ ডিসেম্বর চালু হচ্ছে রাজকীয় ক্রুজশিপ ‘বে ওয়ান’ | Outlook Bangla
Monday, December 14, 2020
ফেলে দেয়া প্লাস্টিকেই ভাগ্যবদল জুয়েলের | Outlook Bangla
Friday, December 11, 2020
রিজার্ভ দাঁড়ালো ৪২.৮ বিলিয়ন ডলারে | Outlook Bangla
Friday, December 4, 2020
পদ্মা সেতুর ৬ কিলোমিটার দৃশ্যমান | Outlook Bangla
Sunday, November 15, 2020
রংপুরে কফি চাষ: সফল মোখলেসুর | Outlook Bangla
Wednesday, November 11, 2020
ধৈর্য ধারণ করলে সুদিন আসবেই | Outlook Bangla
Sunday, November 8, 2020
জিরো থেকে হিরো তিনি | Outlook Bangla
Saturday, November 7, 2020
দেশে ‘ইউটিউব গ্রাম’ | Outlook Bangla
Sunday, November 1, 2020
যেভাবে 'তৃষ্ণা' গড়ে তোলেন রাফায়াত | Outlook Bangla
Tuesday, October 20, 2020
মোটরসাইকেল নিবন্ধন ফি কমানোর প্রস্তাব | Outlook Bangla
Sunday, October 18, 2020
রবির আইপিও আবেদনের তারিখ নির্ধারণ | Outlook Bangla
Saturday, October 17, 2020
জনপ্রিয় হচ্ছে পানিফল, চাষেও লাভজনক | Outlook Bangla
জনপ্রিয় হচ্ছে পানিফল, চাষেও লাভজনক
: পানিফল একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। এর ইংরেজি নাম Water chestnut এবং উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Trapa bispinosa। পানি ফলের আদিনিবাস ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকা হলেও এর প্রথম দেখা পাওয়া যায় উত্তর আমেরিকায়। বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলায় পানি ফলের বাণিজ্যিক ভাবে চাষ অনেক আগেই শুরু হয়েছে। পানিফল একটি বর্ষজীবী জলজ উদ্ভিদ। জলাশয় ও বিল-ঝিলে এ ফলটি জন্মে। এর শেকড় থাকে পানির নিচে মাটিতে এবং পাতা পানির উপর ভাসতে থাকে। এক একটি গাছ প্রায় ৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। পানি ফলের আরেক নাম ‘সিংড়া’।
ফলচাষ শুরু হয় ভাদ্র-আশ্বিন মাসে এবং ফল সংগ্রহ করা হয় অগ্রহায়ন-পৌষ মাসে। পানিফল কচি অবস্থায় লাল, পরে সবুজ এবং পরিপক্ক হলে কালো রং ধারণ করে। ফলটির পুরু নরম খোসা ছাড়ালেই পাওয়া যায় হৃৎপিন্ডাকার বা ত্রিভুজাকৃতির নরম সাদা শাসঁ। কাঁচা ফলের নরম শাসঁ খেতে বেশ সুস্বাদু। প্রতি ১০০ গ্রাম পানিফলে ৮৪.৯ গ্রাম পানি, ০.৯ গ্রাম খনিজ পদার্থ, ২.৫ গ্রাম আমিষ, ০.৯ গ্রাম চর্বি, ১১.৭ গ্রাম শর্করা, ১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.৮ মিলিগ্রাম লৌহ, ০.১১ মিলি গ্রাম ভিটামিন বি-১, ০.০৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-২ ও ১৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে।
তাছাড়া এ ফলে ৬৫ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি থাকে। পানিফলে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম রয়েছে। দেহের প্রয়োজনীয় খনিজ লবণগুলোর মধ্যে ক্যালসিয়াম অন্যতম। ফসফরাসের সহযোগিতায় শরীরের হাড় ও দাঁতের গঠন এবং মজবুত করা ক্যালসিয়ামের প্রধান কাজ। লৌহ অত্যন্ত জরুরি একটি খনিজ লবণ। লৌহের অভাবে মানবদেহে অপুষ্টিজনিত রক্তশূণ্যতা দেখা দেয়। ছোট ছেলেমেয়েরা এবং গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েরা অতি সহজে রোগের শিকার হয়। পানি ফলে যথেষ্ট পরিমাণে লৌহ পাওয়া যায়। প্রতি ১০০ গ্রাম পানি ফলে ভিটামিন ‘সি’ এর পরিমাণ ১৫ মিলিগ্রাম আর শসাতে আছে ভিটামিন ‘সি’ মাত্র ৫ মিলিগ্রাম। ভিটামিন ‘সি’ শরীরে চামড়া, দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্য রক্ষায় অপরিহার্য।
তাছাড়া ভিটামিন ‘সি’ অস্ত্রে লৌহ শোষণে সাহায্য করে। বাংলাদেশের শতকরা ৯৩ ভাগ পরিবার ভিটামিন ‘সি’ এর অভাবে ভুগছে। খাদ্যে ভিটামিন ‘সি’ এর ঘাটতি বিবেচনা করে এ ফলের প্রতি আমাদের অধিকতর গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। পানি ফল কাঁচা খাওয়া হয়, তবে সিদ্ধ করেও খাওয়া যায়। কাঁচা পানিফল বলকারক দুর্বল ও অসুস্থ মানুষের জন্য সহজপাচ্য খাবার। ফলের শুকনো শাঁস রুটি করে খেলে এলার্জি ও হাত-পা ফোলা রোগ উপশম হয়। পিওপ্রদাহ, উদরাময় ও তলপেটের ব্যথ্যা উপশমে পানিফল খাওয়ায় প্রচলন রয়েছে। বিছাপোকা কামড়ের যন্ত্রনায় থেঁতলানো কাঁচা ফলের প্রলেপ দিলে উপকার পাওয়া যায়।
পানিফল খুব লাভজনক একটি ফসল। এর উৎপাদন খরচ খুব কম। সাতক্ষীরা জেলার সদর, কলারোয়া, দেবহাটা, কালিগঞ্জ, আশাশুনি, সদরের আংশিক ও শ্যামনগর উপজেলায় জলাবদ্ধ এলাকার চাষিরা পানিফল চাষ করে অধিক লাভবান হচ্ছেন। ফলে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এ ফলের চাষ। সেই সাথে বাড়ছে ফলটির জনপ্রিয়তা।
জেলার সিংহাভাগ পানিফল চাষ হয় সাতক্ষীরার দেবহাটায়। সুস্বাদু ও পুষ্টিকর এ ফল সারা দেশে ফল হিসেবে পরিচিতি না থাকলেও দিনে দিনে এর চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে। পানি ফলের বাম্পার ফলন ও লাভজনক হওয়ায় আগ্রহ বেড়েছে চাষীদের। পানি ফল বা পানি স্যাংড়া নামের ফল চাষে অত্যন্ত লাভজনক হওয়ায় দেবহাটাসহ সাতক্ষীরা জেলার চাষীরা আগ্রহী হয়ে উঠেছে। স্থানীয়ভাবে ফলটি উৎপাদন বেশি হওয়ায় জনপ্রিয় চাষ হয়ে উঠেছে। সুস্বাদু ও প্রিয় মৌসুমে ফল হিসেবে সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন উপজেলাতে ব্যাপক পরিমাণ চাষ হচ্ছে। অন্য বছরের তুলনায় দেবহাটাতে প্রায় ২২ হেক্টর জমিতে হেক্টর প্রতি ৩০ টন ফলন হয়েছে।
উপজেলার সখিপুর, গাজিরহাট, কামটা, কোঁড়া, দেবহাটা, পারুলিয়া, কুলিয়া, বহেরাসহ বিভিন্ন এলাকায় চাষ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ চাষ ফসল চাষের জমি হিসেবে ডোবা, খানা, মৎস্য ঘেরে সুবিধাজনক। সামান্য লবণাক্ত ও মিষ্টি পানিতে চাষ করা যায়। তাছাড়া পানি ফল গাছ কচুরিপানার মতো পানির উপরে ভেসে থাকে, পাতার গোড়া থেকে শিকড়ের মতো ডগা বের হয়ে বংশ বিস্তার করে এবং তা থেকে ফল ধারণ করে। পানিফল চাষে খুব বেশি প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয় না। সার ও কীটনাশকের পরিমাণ কম লাগে।
উপজেলার কয়েকজন পানিফল চাষি বলেন, অল্প দিনে মৌসুমী ফল হিসাবে পানি ফল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন তারা। প্রতি কেজি ১৫ টাকা দরে পাইকারি বিক্রয় করছেন। তাদের উৎপাদিত ফল পাইকাররা খেত থেকে ক্রয় করে নিয়ে যাওয়ায় বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হয় না তাদের।
সাতক্ষীরা কালিগঞ্জ মহাসড়কের সখিপুর ও ডেল্টা মোড় এলাকার খুচরা পানিফল ব্যবসায়ীরা বর্তমানে ২০/২৫ টাকা দরে পানিফল বিক্রয় করছেন। দিনে গড়ে ২০/৩০ কেজি ফল বিক্রয় করে ১০০/১৫০ টাকা লাভ করে। তাদের এটি মৌসুমী ব্যবসা।
পাইকারি পানিফল ব্যবসায়ী কামটা গ্রামের মৃত আব্দুল ছালেকের পুত্র খোকন বাবু সরদার বলেন, চাষের মৌসুম আসার আগে তিনি অর্ধ শতাধিক চাষীর মাঝে অর্থ বিনিয়োগ করেন। পরবর্তীতে ফলন আসার পরে বাজার দর অনুযায়ী উৎপাদিত ফসল ক্রয় করেন। এভাবে ২৫ বছরের বেশি সময় তিনি পানিফল ব্যবসায় নিয়োজিত আছেন। প্রতিদিন তিনি ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, বরগুনা, চিটাগাং, সিলেট, রাজশাহী, বেনাপোল, যশোর, নাটোর, বগুড়া, দর্শনা, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় এ ফল রপ্তানি করেন। বর্তমান জেলার বাইরের বাজার ভেদে পাইকারিভাবে বিক্রি করেন তিনি।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার শরিফ মোহাম্মাদ তিতুমির জানান, পানিফল চাষ কৃৃষি খাতে চাষ হিসেবে ধরা না হলেও এটি অতিদ্রুত চাষের খাতে আনা হতে পারে। তাছাড়া গত বছরের তুলনায় এর আবাদ বেড়ে চলেছে।
Tuesday, October 13, 2020
ই-টিআইএন কীভাবে নেবেন, কোনো টাকা লাগে না | Outlook Bangla
ই-টিআইএন কীভাবে নেবেন, কোনো টাকা লাগে না
কীভাবে টিআইএন নেবেন?
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনি ই-টিআইএন নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে www.nbr.gov.bd এই ঠিকানায় ই-টিআইএন অপশনে গিয়ে ক্লিক করলেই ই-টিআইএন নেয়ার পেজ পাওয়া যাবে। অবশ্য সরাসরি incometax.gov.bd ঠিকানায় গিয়েও ই-টিআইএন নেয়ার একই পেজ পাওয়া যাবে। সেখানে আপনাকে প্রথমেই নির্ধারিত স্থানগুলো পূরণ করে রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধন নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে ই-মেইল ও মুঠোফোন নম্বর জরুরি। তারপর রেজিস্ট্রার বাটনে ক্লিক করলেই ই-টিআইএনের ফরম পাওয়া যাবে।
ই-টিআইএন কীভাবে নেবেন
ওই ফরমের শূন্যস্থান পূরণের জন্য আপনার কাছে কিছু মৌলিক তথ্য চাওয়া হবে। যেমন নাম, ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, বয়স ইত্যাদি। মনে রাখবেন, ঘরে বসে ই-টিআইএন পেতে চাইলে জাতীয় পরিচয়পত্র লাগবেই। কারণ, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবেই যাচাই-বাছাই করা হয়। অনলাইনে ই-টিআইএনের ওই ফরমটি পূরণ করে সাবমিট করলে কয়েক মিনিটের মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার ই-মেইলে ১৩ সংখ্যার ই-টিআইএন পাঠিয়ে দেয়া হবে। এভাবে সহজে ঘরে বসেই পেয়ে যাবেন ই-টিআইএন।
এখন প্রশ্ন হলো, যার জাতীয় পরিচয়পত্র নেই কিংবা বিদেশি নাগরিকেরা কীভাবে ই-টিআইএন নেবেন? তারা নিজ নিজ পাসপোর্ট ও এর কপি নিয়ে নির্দিষ্ট কর কার্যালয়ে গিয়ে আবেদন করতে পারবেন। তারপর কর কর্মকর্তারা সনাতন পদ্ধতিতে যাচাই-বাছাই করে ই-টিআইএন ইস্যু করে থাকেন। এ ছাড়া অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ই-টিআইএন নিতে অভিভাবকের টিআইএন, করদাতার ছবি ইত্যাদি লাগে।
এখন আর আগের মতো সনাতন পদ্ধতিতে টিআইএন দেয়া হয় না। রিটার্ন দিতে হলে ১২ সংখ্যার ই-টিআইএন দিতে হয়। বর্তমানে প্রায় ৪২ লাখ ই-টিআইএনধারী আছেন। অবশ্য তাদের সবাই বার্ষিক আয়কর বিবরণী জমা দেন না। প্রতিবছর ২২-২৩ লাখ টিআইএনধারী রিটার্ন জমা দেন। তবে এ বছর থেকে কিছু শর্তে ছাড় দিয়ে প্রায় সব টিআইএনধারীর রিটার্ন জমা দেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
ই-টিআইএন হলো- আয়কর নিবন্ধনের আধুনিক সংস্করণ। একজন করদাতাকে আয়কর নিবন্ধন নম্বরের মাধ্যমে করদাতা হিসেবে শনাক্ত করা হয়। নিবন্ধিত করদাতা বছর শেষে রিটার্ন জমা দেয়ার মাধ্যমে বার্ষিক আয়-ব্যয় ও সঞ্চয় বর্ণনা করেন।
এ ছাড়া কিছু কাজ করতে গেলে টিআইএন লাগে। যেমন জমি কিনতে গেলে টিআইএন লাগে। আবার বিদ্যুৎ-সংযোগ নিতেও টিআইএন লাগবে। কিংবা আপনি গাড়ি কিনেছেন, টিআইএন ছাড়া গাড়ির নিবন্ধন নিতে পারবেন না। এমনকি আপনি ব্যাংকে এফডিআর করেছেন, টিআইএনের কপি ওই ব্যাংকে জমা দিলে এফডিআরের সুদের ওপর ৫ শতাংশ কম আয়কর কাটবে। সুদের ওপর ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ উৎসে কর করা হবে।
কীভাবে খুলবেন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট | Outlook Bangla
কীভাবে খুলবেন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট
স্টাফ রিপোর্টার, আউটলুকবাংলা ডট কম
নিজের একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা হিসাব থাকবে, এটা সবারই কাম্য। তিনি যেকোনো শ্রেণি, পেশা ও আয়ের মানুষ হোন না কেন। তবে বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্ক মাত্র ৫০ শতাংশ মানুষের ব্যাংক হিসাব আছে। আর বিকাশ, রকেট, নগদের মতো মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) হিসাব ধরলে ৭০ শতাংশ মানুষ আর্থিক সেবার আওতায় এসেছে।
যদিও ব্যাংক হিসাব ও এমএফএস হিসাব এক নয়। কারণ, এমএফএস মূলত টাকা স্থানান্তর প্ল্যাটফর্ম। এর মাধ্যমে কিছু কেনাকাটা ও বিল পরিশোধ করা যায়। এসব হিসাবে আলাদাভাবে কোনো সঞ্চয় স্কিম নেই। ফলে সঞ্চয়ের প্রবণতা গড়ে তুলতে ব্যাংক হিসাবের বিকল্প নেই। আবার আর্থিক জ্ঞান বাড়াতেও ব্যাংক হিসাব প্রয়োজন।
তাই আজ আমরা তুলে ধরব কীভাবে আপনি ব্যাংক হিসাব খুলবেন। একটি হিসাব খোলার মাধ্যমে আপনার সঙ্গে ব্যাংকের সম্পর্ক শুরু হবে। প্রথমে আপনি ছোট অঙ্কের টাকা জমা করবেন, একসময় প্রয়োজনে কিছু ঋণ নেবেন। এটাই ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম-আমানত নেয়া ও ঋণ দেয়া।
তাহলে জেনে নিই, ব্যাংক হিসাব খুলতে কী প্রয়োজন। আগের চেয়ে ব্যাংক হিসাব খোলা কিন্তু এখন বেশ সহজ হয়েছে। তবে যতই সহজ হোক না কেন, কিছু তথ্য, ছবি তো দিতেই হবে। এ জন্য প্রয়োজন আপনার নিজের ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), নমিনির ছবি ও এনআইডি এবং ওই ব্যাংকে হিসাব রয়েছে এমন একজন পরিচয়দানকারী। সঙ্গে সবার স্বাক্ষর তো লাগবেই। জরুরি প্রয়োজনে ব্যাংক যোগাযোগ করবে, এমন একজনের নাম-ঠিকানাও দিতে হবে।
প্রতিটি হিসাব খোলার সময় গ্রাহক পরিচিতি তথ্য (কেওয়াইসি) জমা দিতে হয়। এখানে নাম-পরিচয়ের পাশাপাশি পেশা, অর্থের উৎস, মাসিক আয় ও ব্যয়ের তথ্য দিতে হবে। প্রয়োজন হলে ইলেকট্রনিক কর শনাক্তকরণ নম্বর (ই-টিআইএন) নম্বরও জমা নেয় কিছু কিছু ব্যাংক।
হিসাব খোলার ফরমেই দিতে হবে আপনি কী কাজে হিসাবটি ব্যবহার করতে চান। ওই হিসাবে কী পরিমাণ লেনদেন হবে, প্রতি মাসে নগদ ও চেকে কত জমা-উত্তোলন হবে, তার তথ্যও দিতে হবে।
হিসাব খোলার জন্য এসব তথ্যই যথেষ্ট, তা নয়। প্রতিটি হিসাব খোলার সময় গ্রাহক পরিচিতি তথ্য (কেওয়াইসি) জমা দিতে হয়। এখানে নাম-পরিচয়ের পাশাপাশি পেশা, অর্থের উৎস, মাসিক আয় ও ব্যয়ের তথ্য দিতে হবে। প্রয়োজন হলে ইলেকট্রনিক কর শনাক্তকরণ নম্বর (ই-টিআইএন) নম্বরও জমা নেয় কিছু কিছু ব্যাংক। ই-টিআইএন জমা দিলে সুদের ওপর ৫ শতাংশ কর ছাড় পাওয়া যায়। তবে এখন কিছু কিছু ব্যাংক ইলেকট্রনিক কেওয়াইসিও চালু করেছে। বিশেষ করে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবায়। এর ফলে ৫ মিনিটেই ব্যাংক হিসাব খুলে যাচ্ছে।
হিসাব খোলার সময়ই আপনি কী কী সেবা নেবেন তার চাহিদা দিতে পারেন। যেমন এটিএম কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, এসএমএস অ্যালার্ট। আর একটি হিসাব খোলার জন্য আপনাকে কতবার স্বাক্ষর করতে হবে, তার হিসাব নেই। তবে এখন বেশির ভাগ ব্যাংক দুই পাতার হিসাব খোলার ফরম চালু করেছে। এর মাধ্যমে আপনি সহজেই একটি গর্বিত ব্যাংক হিসাবের মালিক হয়ে যেতে পারেন।
এদিকে করোনাভাইরাসের কারণে অনেক ব্যাংক ঘরে বসে ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ দিয়েছে। এতে অনলাইনেও এসব ছবি ও তথ্য জমা দিয়ে হিসাব খোলা যাচ্ছে। ব্যাংক কর্মকর্তারা সরেজমিনে যাচাই করে হিসাব খোলার চূড়ান্ত অনুমোদন দিচ্ছেন।
ব্যাংক হিসাবের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী বলেন, প্রতিটি মানুষের ব্যাংক হিসাব থাকা প্রয়োজন, যার মাধ্যমে একজন মানুষ নিজের আর্থিক লেনদেন ও চাহিদা মেটাতে পারেন। তবে আমাদের দেশে প্রাপ্তবয়স্ক ৫০ শতাংশ মানুষের হিসাব রয়েছে। এটা বাড়াতে হবে। এ জন্য ব্যাংক হিসাব খোলা আরো সহজ করা প্রয়োজন। ইতিমধ্যে অনেকটা সহজ হয়েছে।
সঞ্চয়পত্রের নমিনি থাকা না থাকার সমাধান যেভাবে করবেন | Outlook Bangla
Monday, October 12, 2020
বিশ্বের শীর্ষ তালিকায় বাংলাদেশের পুঁজিবাজার | Outlook Bangla
এবার ইউটিউব থেকে করা যাবে কেনাকাটা | Outlook Bangla
যেভাবে এতো বড় হলো আজকের প্রাণ-আরএফএল
যেভাবে এতো বড় হলো আজকের প্রাণ-আরএফএল
: রংপুরে টিউবওয়েল তৈরির মাধ্যমে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের যাত্রা শুরু হয়। এখন তাদের তৈরি পণ্য ১৪১টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪,৪৪১ কোটি টাকা। প্রাণ-আরএফএল জানিয়েছে, দেশের এমন কোনো গ্রাম নেই, যেখানে তাদের পণ্য যায় না। ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার সুপারশপে এখন প্রাণের পণ্য বিক্রি হয়। মধ্যপ্রাচ্য, ভারতের রাজ্যে রাজ্যে, নেপাল, ভুটান, আফ্রিকায় প্রাণের সরব উপস্থিতি।
করোনাকালের প্রথম দুই মাস (এপ্রিল-মে) সবাই যখন ঘরবন্দী ছিল, তখন প্রাণ-আরএফএলের চেয়ারম্যান ঘুরে বেড়িয়েছেন জেলায় জেলায়। কখনো কারখানায় গিয়ে কর্মীদের সঙ্গে কাজে হাত লাগিয়েছেন। কখনো বিক্রয় কর্মীর সঙ্গে ঘুরেছেন দোকানে দোকানে। অফিস করেছেন নিয়মিত।
কেন, তা নিজেই ব্যাখ্যা করলেন। বললেন, ‘করোনায় এক দিনের জন্য আমরা কারখানা বন্ধ করিনি (যেগুলোতে সরকারি নিষেধাজ্ঞা ছিল না)। অফিস খোলা ছিল, বিপণন কর্মীরা মাঠে ছিলেন। আমি নিজে ঘরে বসে থেকে তো কর্মীদের বাইরে বের হতে বলতে পারি না।’
করোনাকালে প্রাণ-আরএফএল সচল ছিল বলেই প্রায় এক লাখ চুক্তিভিত্তিক কৃষকের কাছ থেকে বাদাম, মরিচ, আম, দুধসহ কৃষিপণ্য কিনতে পেরেছে। নিজেদের এক লাখের বেশি কর্মীর পরিবারও জীবিকার সংকটে পড়েনি। বিপাকে পড়েনি প্রাণ-আরএফএলও। দুই মাস (এপ্রিল-মে) তাদের বিক্রি কিছুটা কম ছিল। জুন থেকে ব্যবসা আবার গতি পেয়েছে।
করোনা সংকটে মাঠে নেমে প্রাণের নেতৃত্ব দিয়েছেন আহসান খান চৌধুরী, যিনি প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের প্রাণপুরুষ প্রয়াত আমজাদ খান চৌধুরীর ছেলে। ১৯৮১ সালে আমজাদ খান চৌধুরীর হাতে প্রাণ-আরএফএলের যাত্রা শুরু হয়। কিন্তু আজকে দেশের কোনায় কোনায়, বিশ্বজুড়ে প্রাণ-আরএফএলের পণ্য ছড়িয়ে দেওয়ার মূল কারিগর আহসান খান চৌধুরী।
ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার সুপারশপে এখন প্রাণের পণ্য বিক্রি হয়। মধ্যপ্রাচ্য, ভারতের রাজ্যে রাজ্যে, নেপাল, ভুটানে প্রাণের সরব উপস্থিতি। এমনকি যে আফ্রিকায় বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের কেউ যেতে চান না, সেখানেও প্রাণ-আরএফএলের ভালো অবস্থান রয়েছে। প্রাণের সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা রপ্তানি আয়ের ৬ শতাংশ আসে আফ্রিকার দেশগুলো থেকে।
প্রাণ-আরএফএল জানিয়েছে, দেশের এমন কোনো গ্রাম নেই, যেখানে তাদের পণ্য যায় না। ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার সুপারশপে এখন প্রাণের পণ্য বিক্রি হয়। মধ্যপ্রাচ্য, ভারতের রাজ্যে রাজ্যে, নেপাল, ভুটানে প্রাণের সরব উপস্থিতি। এমনকি যে আফ্রিকায় বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের কেউ যেতে চান না, সেখানেও প্রাণ-আরএফএলের ভালো অবস্থান রয়েছে। প্রাণের সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা রপ্তানি আয়ের ৬ শতাংশ আসে আফ্রিকার দেশগুলো থেকে।
ঢাকার প্রগতি সরণিতে প্রাণ-আরএফএলের কার্যালয়ে গত বুধবার প্রাণের প্রতিষ্ঠা, বড় হওয়া, কোম্পানির মূলনীতি, ভবিষ্যৎ লক্ষ্য নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টা কথা বলেন আহসান খান চৌধুরী। এতে উঠে আসে কীভাবে পদে পদে তাঁদের লড়াই করতে হয়েছে, কীভাবে ঋণের জন্য দিনের পর দিন ব্যাংকে গিয়ে বসে থাকতে হয়েছে, কীভাবে অপরিচিত একটি দেশে গিয়ে পণ্য কিনতে ব্যবসায়ীদের রাজি করাতে হয়েছে।
আহসান খান চৌধুরী বলেন, ‘বাবাকে দেখেছি সামান্য কিছু টাকা ঋণের জন্য ব্যাংকের পরিচালকের বাসায় গিয়ে কতটা মিনতি করেছেন।’ বললেন নিজের অভিজ্ঞতাও। বলেন, ‘নতুন একটি কারখানার জন্য ঋণ পেতে আমি অন্তত ১২০ দিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ব্যাংকে বসে থেকেছি। কত কষ্ট তখন পেতে হয়েছে।’
অবশ্য এখন আর প্রাণ-আরএফএলকে ঋণের জন্য ব্যাংকে গিয়ে কাকুতি-মিনতি করতে হয় না। ব্যাংকই স্ব–উদ্যোগে তাদের ঋণ দেয়। প্রাণ ঋণ পায় বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেও। এক দিনের জন্যও খেলাপি না হওয়া প্রাণকে ঋণ দিতে পারলেই যে ব্যাংকের লাভ।
যেভাবে শুরু
সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল পদে থাকার সময় আমজাদ খান চৌধুরী অবসর নেন। ১৯৮১ সালে, ৪২ বছর বয়সে। ওই বছরই শুরু করেন ফাউন্ড্রি বা টিউবওয়েল তৈরি ও আবাসন ব্যবসা। সম্বল পেনশনের টাকা।
আহসান খান চৌধুরী বলেন, ‘বাবা আবাসন ব্যবসাটি বেশি দিন করেননি। কারণ এতে টাকা আটকে থাকে। কোম্পানিতে নগদ টাকার প্রবাহের পূর্বাভাস বোঝা যায় না।’
১৯৯৭ সালে ফ্রান্সে কৌটায় আনারস রপ্তানি করে প্রাণের রপ্তানি শুরু। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন ১৪১টি দেশে প্রাণ-আরএফএলের পণ্য রপ্তানি হয়।
ফাউন্ড্রির ব্যবসায় নজর বেশি দিলেন আমজাদ খান চৌধুরী। রংপুরে ফাউন্ড্রি প্রতিষ্ঠা করেন, নাম দেন রংপুর ফাউন্ড্রি লিমিটেড (আরএফএল)। যার আওতায় এখন বহু ধরনের পণ্য রয়েছে। অবশ্য আমজাদ খান চৌধুরীর লক্ষ্য ছিল কৃষির ব্যবসায় নামা। ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হলো অ্যাগ্রিকালচারাল মার্কেটিং কোম্পানি লিমিডেট, প্রাণ। প্রতিষ্ঠানটি নরসিংদীতে জমি ইজারা নিয়ে শুরুতে প্রাণ রজনীগন্ধা ফুল, পেঁপে, কলা ও আনারস উৎপাদন করত। ঢাকায় এনে কারওয়ান বাজারে বিক্রি করত। দেখা গেল, মৌসুমের সময় দাম পাওয়া যায় না। আমজাদ খান চৌধুরী আনারস প্রক্রিয়াকরণের কারখানা করার চিন্তা করলেন।
আহসান খান চৌধুরী বলেন, তখনকার বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংকের (বিএসবি) ঋণ নিয়ে প্রতিষ্ঠা করা একটি রুগ্ণ কারখানা ছিল। সেটি কিনে নিল প্রাণ। ১৯৯৭ সালে ফ্রান্সে কৌটায় আনারস রপ্তানি করে প্রাণের রপ্তানি শুরু। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন ১৪১টি দেশে প্রাণ-আরএফএলের পণ্য রপ্তানি হয়।
কতটা বড় ব্যবসা
বাংলাদেশে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ব্যবসার আকার জানাতে একটা অনীহা আছে। সাক্ষাৎকারের শেষ দিকে আমরা জানতে চাইলাম, প্রাণ-আরএফএলের ব্যবসার আকার কত। আহসান খান চৌধুরী প্রতিষ্ঠানের এক কর্মীকে হিসাব বিভাগ থেকে ব্যবসার সঠিক আকারটি জেনে আমাদের জানাতে বললেন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রাণ-আরএফএলের বিক্রির পরিমাণ ১৪ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা।
প্রাণ-আরএফএল কী কী পণ্য তৈরি করে—প্রশ্ন আসলে এটা নয়। বাজারে একটি প্রচলিত কথা আছে যে তারা কী তৈরি করে না। মোটাদাগে ১০টি শ্রেণিতে প্রাণ ৮০০টির বেশি পণ্য তৈরি করে। আর আরএফএল ১৫টি শ্রেণিতে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার পণ্য তৈরি করে। খাদ্য ও পানীয়, পোশাক, প্লাস্টিক, ইলেকট্রনিকস, আসবাব, সাইকেল, যন্ত্রাংশ ইত্যাদি বহু ধরনের খাতে তাদের ব্যবসা রয়েছে। দেশের ১৩টি স্থানে ২৩টি কারখানা রয়েছে প্রাণ-আরএফএলের। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক। প্রতিষ্ঠানটি প্রায় সাড়ে তিন হাজার নিজস্ব ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানে পণ্য পরিবহন করে। এর বাইরে প্রতি মাসে গড়ে ৬০০টি ট্রাক ভাড়া করে।
ব্যবসা এত বিস্তৃত করার কারণ কী, জানতে চাইলে আহসান খান চৌধুরী বলেন, একটা হলো উৎপাদন ও বিপণন ব্যয় কমিয়ে আনা। উৎপাদন বেশি হলে খরচ কম হয়। আরেকটি কারণ হলো, বড় না হলে বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে পেরে ওঠা কঠিন হয়।
এত বড় হওয়ার কৌশল কী? আহসান খান জবাব দিলেন, ‘আমরা দেশজুড়ে একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করেছি। বিপুল কর্মী নিয়োগ দিয়েছি। আমরা ভেবেছিলাম, রোবট দিয়ে কাজ করলে মানুষের উপকার কী? কর্মীরাই কোম্পানিকে এগিয়ে নিয়েছেন। বাড়তি বিক্রির ভাগও প্রণোদনা হিসেবে তাঁদের দেওয়া হয়।’
বাংলাদেশের প্রাণ ১৪১টি দেশে
প্রাণ-আরএফএল যে এতটা বড় হলো, তার পেছনে সরকারের সহায়তাও অনেক বলে উল্লেখ করেন আহসান। তিনি জানান, প্রাণের শুরুর দিকে দুটি কারখানা হয়েছে সরকারের সমমূলধন তহবিল (ইইএফ) থেকে অর্থ নিয়ে। যখন টাকা ফেরত দেওয়া হলো, সরকারও মালিকানার অংশ ফিরিয়ে দিয়েছে। বিদেশে রপ্তানি বাজার তৈরির জন্য সরকারের তহবিলের বিষয়টিও উল্লেখ করেন আহসান। বলেন, এখনকার চ্যালেঞ্জ ভিন্ন। বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা যাতে ভিয়েতনামের চেয়ে কম না হয়, সেদিকে নজর রাখতে হবে। বন্দর-অবকাঠামো আরও উন্নত করতে হবে। ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা আনতে হবে, মূলধন বাড়াতে হবে।
২২ বছর বয়সে প্রাণে যোগ
যুক্তরাষ্ট্র থেকে হিসাববিজ্ঞানে পড়াশোনা শেষ করে ১৯৯২ সালে প্রাণে যোগ দেন আহসান খান চৌধুরী। শুরুর দায়িত্ব ছিল বিক্রয় ও হিসাব বিভাগ দেখাশোনা করা। বয়স ছিল ২১ বছর ৯ মাস। আহসান খান বলেন, ‘আমি যোগ দেওয়ার পর পুরো বাংলাদেশ ঘুরেছি। মানুষের সঙ্গে মিশে নতুন নতুন ধারণা তৈরি করেছি। তার সঙ্গে বিদেশ থেকে আনা অভিজ্ঞতা যোগ করে প্রাণকে বিস্তৃত করার দিকে নজর দিলাম।’
‘বাবা বলতেন আমি ব্যবসা এতটা বিস্তৃত করে ফেলছি, যার ব্যবস্থাপনা কঠিন হয়ে যাবে। কিন্তু আমি সব সময় একটু সম্প্রসারণমুখী চিন্তা করি’—যোগ করেন আহসান।
বিদেশে বাজার সন্ধানে কী কী করেছেন, তারও গল্প বলেন আহসান খান। তিনি জানান, যুক্তরাজ্যে কোনোভাবেই ক্রেতা ধরতে পারছিলেন না। একসময় বন্ধুর কাছে এক কনটেইনার পণ্য পাঠালেন। তারপর সেখানে গিয়ে গাড়ি ভাড়া করে দোকানে দোকানে পণ্য বিক্রি শুরু করেন। আফ্রিকার দেশ জিবুতিতে যাওয়া আরও রোমাঞ্চকর। জিবুতিতে নেমে ভিসাহীন আহসান অপেক্ষা করছিলেন কখন উড়োজাহাজ ছেড়ে যায়। উড়াল দেওয়ার পর আহসান ইমিগ্রেশন কর্মীদের বললেন, ‘আমি ফ্লাইট মিস করেছি। এখন তোমাদের দেশে দু-এক দিন থাকার ব্যবস্থা করে দাও।’
অনুমতি পেয়ে আহসান খান গেলেন জিবুতির ব্যবসায়ীদের সংগঠনে। সবার নম্বর নিয়ে একের পর এক ফোন করা শুরু করলেন। কেউ কেউ পাত্তা দিল, কেউ দিল না। সুপারশপের মালিক আলগামিলকে রাজি করালেন পণ্য নিতে। সেই আলগামিল গ্রুপ এখনো প্রাণের পণ্য কেনে। এখন আফ্রিকার দেশগুলোতে বছরে ২০০ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করে প্রাণ।
অবশ্য প্রাণের বড় বাজার ভারত, ফিলিপাইন, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মালয়েশিয়া। ১৬ বার জাতীয় রপ্তানি ট্রফি পেয়েছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ।
সবার এক রংয়ের পোশাক কেন
সাক্ষাৎকারকালে আহসান খান চৌধুরীর পরনে ছিল আকাশি শার্ট। কার্যালয়ে সবার পরনেই একই পোশাক। কেন, প্রাণ জানায় তারা কোনো ভেদাভেদ না রাখতে সবাই একই পোশাক পরে। মূল কার্যালয়ের ক্যানটিনে সবাই একসঙ্গে বসে খেতে পারেন। কারও জন্য কোনো আলাদা টেবিল নেই।
আহসান খান চৌধুরীও ওই টেবিলে বসেই খাবার খান। ঢাকার রাস্তায় তিনি সাইকেল চালান। কর্মীর মোটরসাইকেল নিয়ে সচিবালয়ে রওনা দেন। যানজট দেখলে গাড়ি ছেড়ে দিয়ে হাঁটা দেন। কোম্পানির উচ্চপর্যায়ের কাউকে দেখলে কর্মীর উঠে দাঁড়ানোর বদলে বসে কাজ করাকেই বেশি পছন্দ করেন তিনি। আহসান বলেন, ‘বাবা কোম্পানিতে মালিক-কর্মীর কোনো ভেদাভেদ রাখেননি। তিনি চাইতেন কর্মীদের মধ্যেও কোম্পানিকে নিজের মনে করার মানসিকতা তৈরি হোক।’
তৃতীয় প্রজন্ম আসছে
আমজাদ খান চৌধুরীর মৃত্যুর পর ২০১৬ সালে প্রাণ-আরএফএলের চেয়ারম্যান হন আহসান খান চৌধুরী। আমজাদ খানের চার সন্তান। বড় ছেলে আজার খান চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা করেন। বড় মেয়ে সেরা হক চিকিৎসক, কানাডায় থাকেন। তবে কিছুদিন পরে প্রাণের সান হেলথ কেয়ারের হাল ধরবেন বলে কথা রয়েছে। ছোট মেয়ে উজমা চৌধুরী এখন প্রাণ-আরএফএলের পরিচালক। তিনি আর্থিক দিকটি সামলান।
আমজাদ খান চৌধুরী ও আহসান খান চৌধুরীর পর এখন ব্যবসায় তৃতীয় প্রজন্ম যোগ দিচ্ছে। আহসানের বয়স এখন ৫০ বছর। তাঁর দুই মেয়ে। সামিয়া চৌধুরী ও সামিন চৌধুরী।
সামিয়া চৌধুরী কিছুদিন আগে কানাডা থেকে পড়াশোনা শেষে ব্যবসায় যোগ দিয়েছেন। আলাপের একপর্যায়ে আহসান মেয়েকে ডাকলেন। সামিয়া বললেন, ‘যেদিন আমার পড়াশোনা শেষ হলো, পরের দিনই যোগ দিলাম। কাজ করছি ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে।’
দেশের কয়েকটি শিল্পগোষ্ঠী দ্বিতীয়-তৃতীয় প্রজন্মের হাতে ব্যবসা ছেড়ে দেওয়া নিয়ে সংকটে ভুগছে। কেউ কেউ নতুন ব্যবসা করতে গিয়ে পুরো কোম্পানি ডুবিয়ে দিচ্ছে। তাদের প্রতি পরামর্শ কী? আহসান খান চৌধুরী বলেন, ‘প্রথম ১০ বছর বাবার দেখানো পথেই চলতে হবে। এরপর নিজের মেধা খাটিয়ে ঝুঁকি নেওয়ার সময়।’