Thursday, January 30, 2014

মাগুরায় উচ্চ ফলনশীল রসুন চাষ বাড়ছে

মাগুরা: মাগুরায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে উচ্চ ফলনশীল জাতের বারি-২ রসুন চাষ। গত বছর প্রায় ১০০ একর জমিতে এ জাতের রসুন চাষ হয়। এ বছর কৃষি বিভাগের সহায়তায় চলতি মৌসুমে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ২৩টি প্রর্দশনী ক্ষেতসহ প্রায় ১৫০ একর জমিতে উচ্চ ফলনশীল এ জাতের রসুনের চাষ হয়েছে। 

মাগুরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ৮৯০ হেক্টর জমিতে রসুন চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১৫০ হেক্টর, শ্রীপুরে ৫০০ হেক্টর, শালিখায় ৬০ হেক্টর ও মহম্মদপুর উপজেলায় ১৮০ হেক্টর জমিতে রসুন চাষ হয়েছে। যা থেকে ৬ হাজার ২৫৯ টন রসুন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। 

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বারি-২ রসুন চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে প্রদর্শনী ক্ষেত করার পাশাপাশি গত বছরের উৎপাদিত বীজ দিয়ে চলতি মৌসুমে জেলায় কৃষক পর্যায়ে উচ্চ ফলনশীল এ জাতের রসুন চাষ শুরু হয়েছে। 

তাদের দেয়া তথ্য মতে, বারি-২ রসুন সাধারণ জাতের রসুনের তুনলনায় দেড় থেকে দুইগুণ বেশি উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন। যেখানে সাধারণ জাতের রসুন হেক্টর প্রতি উৎপাদন হয় ৫ থেকে ৬ টন। সেখানে বারি-২ জাতের রসুন হেক্টর প্রতি উৎপাদন হয় ১০ থেকে ১২ টন। রসুন মুলত শীতকালীন ফসল। শীত যত বেশি পড়ে এর ফলনও তত ভালো হয়। সাধারণত নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ রসুন লাগানোর উপযুক্ত সময়। উচ্চ ফলনশীল বারি-২ রসুন উঠতে সময় লাগে ১৪০ দিন। স্থানীয় যাতে সময় লাগে ১৫০ দিন। 
বর্তমানে আমাদের দেশে রসুনের চাহিদা রয়েছে ৯০ হাজার টন। সেখানে উপাদন হয় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টন। বাকি ৩০ থেকে ৪০ হাজার টন বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়। রসুনের এই ঘাটতি মোকাবেলা করতে স্থানীয় জাতের পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের বারি-২ জাতের রসুন চাষে উদ্বুদ্ধ করছে কৃষি বিভাগ। 

বারি-২ রসুন স্বাদে ভালো, দেখতে দেশী রসুনের চেয়ে আকর্ষণীয় এবং সংরক্ষণ ক্ষমতা বেশি। একারণে বারি-২ জাতের রসুন চাষে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের অধুনিক চাষ পদ্ধতিসহ বিভিন্ন দিক নিদের্শনা দিচ্ছেন তারা। 

মাগুরা সদর উপজেলার সাচনী গ্রামের কৃষক ফিরোজ হোসেন ও আঠারখাদা গ্রামের নাজমুল বিশ্বাস কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় ৪০ শতক জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের বারি-২ রসুনের প্রদর্শনী ক্ষেত করেছেন। যা থেকে উভয় কৃষক প্রায় ৩০ মণ ফলন পাবেন বলে আশা করছেন। 

মাগুরা আঞ্চলিক সমলা গবেষণা কেন্দ্রের উর্দ্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, দেশে রসুনের ঘাটতি মেটাতে উচ্চ ফলনশীল জাতের বারি-২ জাতের রসুন উদ্ভাবন করা হয়েছে। এটি একটি উচ্চ মূল্যের অর্থকারি ফসল। যার রয়েছে অনেক ভেজষ ঔষধিগুণ। বারি-২ রসুন চাষ করে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি দেশে রসুনের ঘাটতি মোকাবেলায় ব্যাপক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলে আমার বিশ্বাস। এ জন্য উচ্চ ফলনশীল জাতের বারি-২ রসুন চাষ করে কৃষকরা যাতে ন্যায্যমূল্য পায় সে দিকটাও খেয়াল রাখতে হবে।

মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোখলেছুর রহমান জানান, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ উচ্চ ফলনশীল বারি-২ রসুন চাষে কৃষকদের ব্যাপকভাবে উদ্বুদ্ধ করছে। ইতোমধ্যে এই জাতের রসুনের চাষ কৃষকরা শুরু করেছে। বর্তমানে আবহাওয়া অনুকুল থাকায় জেলায় রসুনের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন তিনি। 

Sunday, January 26, 2014

হস্তজাত শিল্পের মাধ্যমে বরিশালের অবহেলিত নারীদের ভাগ্যের পরিবর্তন

বরিশাল: বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলায় হস্তজাত শিল্পে দরিদ্রদের ভাগ্যের পরিবর্তন হচ্ছে। সমাজের ভূমিহীন অবহেলিত দুঃস্থ ও অসহায় নারীদের স্বাবলম্বী করছে বেসরকারী এনজিও এমসিসি। 

অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারী সমাজকে শক্ত হাতে হাল ধরাতে পেরেছে তারা। অপরের উপর নির্ভর না করে নিজের সামর্থ্যরে মাধ্যমে জীবন পরিচালনাসহ কঠোর পরিশ্রম ও আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে নারীকে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে উপজেলাটি এমসিসির ৫টি প্রকল্পের মাধ্যমে সহাস্র্র্রাধিক দুঃস্থ, অসহায়, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা নারীদের পরিবারকে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে কাজ করে আসছে।

প্রকল্পগুলো হলো, বিবর্তন, কেয়াপাম হ্যান্ডিক্রাফট্স, বাগধা এন্টারপ্রাইজ, চ্যারিটি ফাউন্ডেশন, জোবারপার এন্টারপ্রাইজ। মেনোনাইট সেন্ট্রাল কমিটি (এমসিসি) ১৯৮১ সালে উপজেলা সদরে এর কার্যক্রম শুরু করে। 

এ প্রকল্পের আর্থিক সহযোগিতায় ১৯৮৪ সালে ৩ লক্ষাধিক টাকার মূলধন নিয়ে ৫৫ শতাংশ জমির উপর গড়ে উঠে জোবারপাড় এন্টারপ্রাইজ। এ প্রকল্পে উপকরণ ডোবা, মজাপুকুর থেকে কচুরিপানা সংগ্রহ করে কাগজ তৈরি করে সেই কাগজ দিয়ে পুতুলবক্স খেলনা সামগ্রীসহ প্রয়োজনীয় সৌখিন সামগ্রী তৈরি করা হয়। এসব সামগ্রী বিদেশে রফতানি করা হয়। কেয়াপাম হ্যান্ডিক্রাফট ১৯৮৭ সালে এমসিসি থেকে ২ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে গড়ে তোলা হয় প্রকল্পটি। 

এ শিল্পের প্রধান কাঁচামাল হচ্ছে তালপাতা, মুলিবাঁশ, কেয়াপাতা ইত্যাদি। এ প্রতিষ্ঠানে ১৫০টির বেশি শিল্প সামগ্রী তৈরি হয়। ১৯৯৩ সালে যাত্রা শুরু হয় বিবর্তনের। শুরু থেকেই কচুরিপানা প্রধান কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ১৯৮৪ সালে বাগধা এন্টারপ্রাইজ ২৫ শতাংশ জমির উপর স্থায়ীভাবে প্রকল্পের কাজ চালু হয়। প্রতিষ্ঠানের তৈরি সামগ্রীর মধ্যে শন, সুতা, পাট দিয়ে সুতলির ব্যাগ, পার্টস, সাইড ব্যাগসহ ২৭১টি সৌখিন দ্রব্য সামগ্রী তৈরি হয়। 

২০০৪ সাল থেকে এমসিসি’র সাথে অংশীদারিত্বমূলক কর্মকাণ্ডের চুক্তি মোতাবেক স্থানীয় কাঁচামাল ঘাস, বাঁশ, বেত, নারিকেল পাতার শলা, শনপাট, কলাগাছের বাকল, ইত্যাদি দ্বারা বিভিন্ন হস্তজাত মালামাল তৈরি করে আসছে। উৎপাদিত মালামাল বাজারজাতকরণ দেশী-বৈদেশিক বাজার বৃদ্ধি, নতুন নতুন স্থানীয় কাঁচামাল ব্যবহার করে নতুন হস্তজাত পণ্য তৈরী সহ প্রকল্পের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে এমসিসি চ্যারিটি ফাউন্ডেশন (সিএফ)-র সাথে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। 

এসব প্রকল্পের বাইরে কোন উপকরণ বিক্রি করা হয় না। কোনো প্রকল্পের উপকরণ দরকার হলে ৫টি প্রকল্প থেকে সংগ্রহ করা হয়। প্রকল্পগুলো একটি অপরটির পরিপূরক। এসব হস্তজাত শিল্পের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে বিদেশে। রফতানিকারক দেশগুলোর মধ্যে আমেরিকা, জাপান, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডসহ ১০টি দেশে রফতানি হয়। 

এসব প্রকল্প থেকে বছরে প্রায় ১৫ কোটি টাকার পণ্য বিদেশে রফতানি হচ্ছে। এ প্রকল্পে ১ জন মহিলা ৮ ঘন্টা পরিশ্রম করে মাসে ২-৩ হাজার টাকা আয় করছেন। এছাড়াও প্রতি বছর তাদের প্রকল্পর অনুকূলে কাজের লভ্যাংশ প্রদান করা হয়। এতে একদিকে যেমন তারা স্বাবলম্বী হচ্ছেন তেমনি অন্যদিকে দেশের জন্য প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছেন। 

Saturday, January 25, 2014

গবাদি পশু পালন করে নজর কেরেছে জয়পুরহাটের লাভলি

জয়পুরহাট: জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার ফকিরপাড়া গ্রামের অসহায় লাভলি বেগম বিআরডিবি’র ঋণ সহায়তায় গবাদি পশু পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। সংসারে খরচের জন্য তাকে আর কারো কাছে হাত পাততে হয় না। 

লাভলি বেগম জানান, স্বামী পানু মিয়ার দর্জির কাজের সামান্য রোজগারে দু’ছেলেমেয়ে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন চলতো। টাকার অভাবে ছেলে লেমন হোসেনকে বেশি লেখাপড়া করাতে না পারলেও বর্তমানে ছোট মেয়ে রাজিয়া সুলতানা ৮ম শ্রেণীতে জিপিএ-৫ পেয়েছে। বিআরডিবি’র পল্লী প্রগতি প্রকল্পের আওতায় ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে গবাদি পশু পালনের পাশাপাশি বসত বাড়ির পাশে শাক-সবজি চাষ ও হাঁস-মুরগি পালন করেন তিনি। গরুর দুধ বিক্রির টাকায় মেয়ের পড়া ও সংসারের খরচের পাশাপাশি কিস্তি দিতে সমস্যা হয় না লাভলি বেগমের। এক বছর আগে ২০ হাজার টাকা নিয়ে শুরু হওয়া ঋণের পরিমাণ এখন ৪০ হাজার টাকা। 

এতে আয় বর্ধনমূলক নানা কাজ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন লাভলি বেগম। তাকে দেখে ওই এলাকার অসহায়, দুঃস্থ ও বেকার মহিলারা তাদের সংসার এখন আয় বর্ধনমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। লাভলি বর্তমানে অন্যান্য অসহায় নারীদের কাছে অনুকরণীয়। বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি)-এর আওতায় উপজেলার বিভিন্ন গ্রামগঞ্জের অসহায় দুঃস্থ মহিলারা পল্লী প্রগতি  প্রকল্পের সদস্য হয়ে সেখান থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে গবাদি পশু পালন, বসত বাড়ির আশপাশে শাক-সবজি চাষ আবার কেউবা হাঁস-মুরগি পালন করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। 

উপজেলার কৃষ্ণনগর বৈরাগীপাড়া ও ফকিরপাড়া গ্রামে গিয়ে দুঃস্থ মহিলাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিআরডিবি থেকে ঋণ নিয়ে গবাদি পশু ও হাঁস মুরগি পালন করে বদলে গেছে তাদের সংসারের ভাগ্যের চাকা। বর্তমানে তারা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। অথচ কয়েক বছর আগেও তাদের চোখে মুখে ছিল বিষাদের ছাপ। সংসারের অস্বচ্ছলতার কারণে অনেকেই ছেলেমেয়েদের প্রথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত লেখা পড়া করাতে পারেননি। নেমে পড়তে হয়েছে জীবিকার সন্ধানে। স্বল্প বয়সেই জীবন সংগ্রামের কঠিন তাগিদে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করতে হয়েছে। 

সমাজে সব মহিলারাই স্বপ্ন দেখে সৎ উপার্জনে তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে বড় হওয়ার। আর এই বড় হওয়ার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে খোঁজ মেলে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড-এর আওতায় পল্লী প্রগতি প্রকল্পের ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচির। এই কর্মসূচির মাধ্যমে ক্ষেতলাল উপজেলার ফকিরপাড়া কৃষ্ণনগর ও বৈরাগীপাড়া গ্রামের অসহায়-দুঃস্থ মহিলা ফাহিমা, শাহানাজ, রোফেজা, হাফিজা, মেহেরননেছা, কুলছুম, বেবী, আঞ্জুয়ারা সহ আরো অনেকেই এ কর্মসূচির সদস্য হয়ে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি পালন করে পুরুষের পাশাপাশি নিজেরাও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। 

বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড, ক্ষেতলাল উপজেলা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, পল্লী প্রগতি প্রকল্পের আওতায় ক্ষেতলাল উপজেলায় প্রায় ৪শ’ পরিবারের মাঝে ৭০ লাখ টাকা ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান করা হয়েছে। 

ক্ষেতলাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল মনজুর জানান, দারিদ্র বিমোচন লক্ষ্যে অসহায় ও দুঃস্থ পরিবারসমূহকে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য সরকার বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড-এর আওতায় পল্লী প্রগতি প্রকল্পের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচি চালু করে। এ প্রকল্প যথাযথভাবে বাস্তবায়নের ফলে ইতোমধ্যেই সমাজের দুঃস্থ মহিলারা ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে আয় বর্ধনমূলক কাজ করে স্বাবলম্বী হতে শুরু করেছে। 

Thursday, January 23, 2014

হবিগঞ্জের শুটকি রপ্তানি হচ্ছে বিশ্ব জুড়ে

হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জ তথা বৃহত্তর সিলেটবাসীর অত্যন্ত প্রিয় খাবার হল শুটকি মাছ। প্রতিদিনের খাবার তালিকায় একটি শুটকির আইটেম না থাকলে কেমন জানি খাবার অসম্পুর্ণ থেকে যায়। কয়েকদিন খাবার তালিকায় এই আইটেমটি না থাকলে তারা রীতিমত হাঁফিয়ে উঠেন। তখন রুচির পরিবর্তনের জন্য হলেও চাই শুটকির তরকারী। তবে তাদের কাছে বেশী পছন্দ হলো হাওড়ের দেশী বা মিঠা পানির মাছের শুটকি। সিলেটবাসী পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকেন না কেন তাদের এই শুটকি চাই-ই চাই।

দেশীয় মাছের এই শুটকির ব্যাপক চাহিদায় হবিগঞ্জের হাওড় অঞ্চলে গড়ে উঠেছে শুটকি শিল্প। শুটকি উৎপাদন করে হবিগঞ্জের বানিয়াচঙ্গ ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলার প্রায় দুই হাজার পরিবার স্বচ্ছলতা পেয়েছে। আর শুটকি বিপননের সাথে জড়িত থেকে আরও কয়েক হাজার মানুষ জীবিকা অর্জন করছেন। এই শুটকি মাছ দেশের সীমানা ছেড়ে ব্রিটেন, আমেরিকা, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে নিয়মিত। অনেকেই ডাক বিভাগের মাধ্যমে প্রতিদিনই শত শত কেজি শুটকি বিদেশে পাঠাচ্ছেন। দেশ থেকে প্রবাসে যাওয়ার সময় প্রায় সকলের লাগেজই থাকে এই শুটকি মাছ।

বর্ষা শেষে হেমন্তের শুরুতেই যখন কমতে থাকে তখন হাওড় ও বিলের আহরিত মাছ দিয়ে শুটকি তৈরি করা হয়। এখানকার শুটকিতে কোন কেমিক্যাল মেশানো হয় না। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে হাওড়ে মাচান তৈরি করে এই শুটকি উৎপাদন করা হয়। এই শিল্পের সাথে জড়িত অধিকাংশরাই হলেন মহিলা। পুরুষ লোকজন মাছ আহরনের কাজে জড়িত থাকলেও প্রক্রিয়া করণের সাথে জড়িত থাকেন মহিলারা। ফর্মালিনমুক্ত এখানকার শুটকি স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ ছাড়াও ইউরোপ,আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে সরবরাহ করা হচ্ছে। 

হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলার হাওর ও বিল বেষ্ঠিত এলাকা। এখানকার মৎস্যজীবী সম্প্রদায়সহ স্থানীয় বাসিন্দারা হাওর-বিল থেকে মাছ ক্রয় করে এনে শুটকি উৎপাদন করেন। এই দুই উপজেলায় প্রায় ২ হাজার পরিবার এ পেশার সাথে জড়িত। আশ্বিন মাস থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত শুটকি উৎপাদনের মৌসুম হিসেবে ধরে নেয়া হয়। আহরিত বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ প্রথমে পরিস্কার করে কাটা হয়। পরে লবণ মেখে তা ডাঙ্গায় মাচান তৈরি করে শুকানো হয়। এই কাজে শুটকি উৎপাদনকারী পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও গ্রামের কর্মহীন পুরুষ, কিশোরী ও মহিলা শ্রমিকরা কাজ করে। এ পেশায় জড়িত ও সংশি¬ষ্টরা স্বচ্ছলভাবে জীবন-যাপন করছেন। আর অনেকেই এ ব্যবসা করে নিজের ও পরিবারের ভাগ্যের পরিবর্তন এনেছেন। 

হবিগঞ্জের শুটকি দেশে-বিদেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও ইউরোপ, আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে এর কদর রয়েছে। বানিয়াচং উপজেলার বাঘহাতা, গাজীপুর, শান্তিপুর, ভাটিপাড়া, সুনারু, নাগুরা ও আজমিরিগঞ্জ উপজেলার নোয়াগাও, নোয়াগড়, বিরাট, কোদালিয়া, বদলপুর রয়েছে শুটকি প্রক্রিয়াজাত করণের রয়েছে অসংখ্য ডাঙ্গা। ডাঙ্গায় দেশীয় প্রজাতির পুঁটি, চিংড়ি, কাকিয়া, শইল, গজার, টাকি, বাইম, টেংরাসহ বিভিন্ন প্রজাতির শুটকি তৈরি করা হয়। 

আজমিরীগঞ্জ উপজেলার বিরাট গ্রামর শুটকি উৎপাদনকারী মোবারক মিয়া জানান, প্রতিকেজি ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা এবং বড় মাছের শুটকি ১ থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়। শুটকি ব্যবসায়ী আজমান আলী জানান, শুটকির মৌসুম ছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে শুটকি রাখার মত কোন গুদাম নেই। সরকারি ভাবে কোন গুদামের ব্যবস্থা থাকলে সারা বছরই শুটকি সংরক্ষণ করা সম্ভব হতো। তিনি আরও জানান, হবিগঞ্জে হাওড়ের মিঠা পানির মাছের শুটকি ছাড়াও চট্টগ্রাম থেকে আসা সামুদ্রিক মাছের শুটকিও বিক্রি হয়। তবে সামুদ্রিক মাছের চেয়ে মিঠা পানির শুটকির চাহিদাই বেশী। 

আজমিরীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নুরে আলম সিদ্দিকী জানান, হবিগঞ্জের শুটকির বহু সুনাম রয়েছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশ-এর কদর রয়েছে। তিনি জানান, কৃষি অফিস থেকে শুটকি উৎপাদনকারীদের বিভিন্ন সময়ে টেকনিক্যাল সার্পোট দিয়ে থাকি। তবে সরকারিভাবে যদি কোন ধরণের সুযোগ দেয়ার সুবিধা থাকে তাহলে অবশ্যই তাদেরকে সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে। 

বানিয়াচঙ্গ উপজেলার সবিদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জানান, হাওড়ে যখন মাছ আহরণের মৌসুম শুরু হয় তখন মাছের দাম অনেক কমে যায়। তখন সেই মাছ বিক্রি না করে শুটকি করা হয়। এর মাধ্যমে তার এলাকায় শত শত লোক জীবিকা নির্বাহ করছেন। বাইর থেকে পাইকাররা এসে এখান থেকে শুটকি নিয়ে যান।

বানিয়াচঙ্গ উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল খান জানান, হাওড়ের মাধ্যমে যারা জীবিকা নির্বাহ করেন তারাই এই শুটকি শিল্পের সাথে জড়িত। এটি একটি সম্ভাবনাময় শিল্প। তবে লোকজন যদি ব্যাপক হারে পোনা মাছ নিধন না করতো তাহলে আরও বেশী পরিমাণ শুটকি উৎপাদন করা যেত। 

এখন হবিগঞ্জে শুটকির ভরা মৌসুম। হবিগঞ্জ থেকে বানিয়াচঙ্গে যাওয়ার পথে রাস্তার পাশেই দেখা যাবে শুটকি তৈরির কাজ করছেন অনেক পুরুষ আর মহিলা। যদি সরকারি পৃষ্ঠ-পোষকতা পাওয়া যায় তাহলে শুটকির বাজার আরও সম্প্রসারিত হবে বলে শুটকি উৎপাদনকারীরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন। 

Wednesday, January 22, 2014

পাহাড়ি পতিত জমিতে পরীক্ষামূলক চ্যাম্পিয়ন জাতের তরমুজ চাষ

বান্দরবান: বান্দরবানের পহাড়ের ঢালুর জমিতে চলতি মৌসুমে চাইনিজ জাতের তরমুজ চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে। পার্বত্য জেলা পরিষদের লেক এলাকায় প্রায় এক একর ঢালু জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে চলতি মৌসুমে চাইনিজ চ্যাম্পিয়ন জাতের বীজ বপন করে তরমুজ উৎপাদন করেছেন সদর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার বড়ুয়া। 

চাইনিজ চ্যাম্পিয়ন জাতের তরমুজ বীজবপন করা হয় গত ৭ নভেম্বর। মাত্র ৩০ দিনের মাথায় ক্ষেতে ফলন আসে এবং গত ২০ জানুয়ারি তরমুজ ক্ষেতে বাম্পার ফলন লক্ষ্য করা গেছে। চ্যাম্পিয়ন জাতের এ তরমুজ চাষের ক্ষেতে আগাম ফলন ফলে। 

তবে মধ্য অক্টোবর মাসে জমিতে এ জাতের বীজ বপন করা হলে পানি-সেচ ছাড়াই ফলন পাওয়া যাবে পাহাড়ি জমিতেও। বান্দরাবান জেলায় এ প্রথমবারে এ জাতের তরমুজ চাষ করে ক্ষেতে বাম্পার ফলন পাওয়া গেছে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের লেকবেষ্টিত পাহাড়ি ঢালু জমিতে। 

সদর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার বড়–য়া জানান, বান্দরবান জেলার মাটি বিভিন্নজাতের ফলদ চাষের অনুকূলে হওয়ায় যে কোন জাতের ফলজ চাষ ও ফলজ উৎপাদন সম্ভব। তাই তিনি পরীক্ষামূলক ভাবে গত ৭ নভেম্বর পার্বত্য জেলা পরিষদের লেকের তীরে পতিত প্রায় এক একর পাহাড়ি জমিতে চ্যাম্পিয়নজাতের তরমুজের বীজ বপন করেন। এতে দেখা গেছে, বীজপনের মাত্র ৩০ দিনের মাথায় ফলন এসেছে এবং গত ১৫ জানুয়ারি থেকেই গাছ থেকে তরমজু সংগ্রহ শুরু করা সম্ভব হয়েছে। 

তিনি জানান, জেলার পাহাড়ি মাটির পরিবেশে তরমুজসহ নানাপ্রজাতির ফলজ চাষ উপযোগী। সরকারি বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় আগ্রহী ও প্রান্তিকচাষীদের চ্যাম্পিয়ন জাতের আগাম তরমুজ উৎপাদনে উদ্বুদ্ধকরণ করা যেতে পারে। 

পার্বত্য জেলা পরিষদের পাহাড়ের ঢালুতে চাষকৃত তরমুজ খেতে মিষ্টি ও সুস্বাদু। ক্ষেত থেকে তরমুজ সংগ্রহের পর দুই সপ্তাহ ধরে সংরক্ষণ করা সম্ভব বলেও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান। জেলা পরিষদের এক একর পাহাড়ি মাটিতে এবার উৎপাদিত হয়েছে কমপক্ষে ২ হাজার তরমুজ। এর মধ্যে বড় সাইজের অর্ধেক ও ছোট সাইজের অর্ধেক তরমুজ রয়েছে। 

জেলা পরিষদের ফলজ বাগান তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার বড়–য়া আরো জানান, তিনি সহায়তা পেলে আগামীতে এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে আঙ্গুরের চাষ করতে আগ্রহী। স্থানীয় জাতের আঙ্গুর চাষ ও উৎপাদনও ভাল পাওয়া যাবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।   

অক্টোবরে এ জাতের তরমুজ চাষ করা হলে ক্ষেতে পানি সেচের প্রয়োজন হবে না। তবে নভেম্বর মাসে এ জাতের চাষ করা হলে পানি সেচ বাধ্যতামূলক। 

পার্বত্য জেলা পরিষদের ফলজ বাগানে পরিচর্যার কাজে নিয়োজিত মাঠ কর্মী অংথূইচিং মারমা, বিক্রম ত্রিপুরা, উথোয়াইহ্লা রাখাইন এবং মিন্টু মল্লিক জানান, নতুনভাবে আবিস্কৃত পার্বত্য জেলা পরিষদ লেকের তীরে পাহাড়ের ঢালু জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে আবাদ করে উৎপাদিত চাইনিজ চ্যাম্পিয়ন জাতের সুস্বাদু তরমুজ চাষ বাণিজ্যিকভাবেও সম্প্রসারিত করা যেতে পারে। এতে পাহাড়ের চাষীরা আর্থিকভাবে খুবই লাভবান হতে পারেন বলেও তারা মত প্রকাশ করেন। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের শস্য উৎপাদন বিশেষজ্ঞ মো. আলতাফ হোসেন বলেন, জেলার পাহাড়ের ঢালুতে পতিত জমিতে চ্যাম্পিয়ন জাতের তরমুজ চাষাবাদের সম্ভাবনা রয়েছে। আগ্রহী চাষীরা উপজেলা ও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের সহায়তা নিয়ে এ জাতের তরমুজ আবাদ করতে পারেন। 

Saturday, January 18, 2014

পতিত জমিতে গাছ লাগিয়ে কোটিপতি হচ্ছেন মোস্তফা

পতিত জমিতে গাছ লাগিয়ে কোটিপতি হচ্ছেন মোস্তফা
নওগাঁ: নওগাঁয় ভুমিহীন মোস্তফা মন্ডল বুলা’র অন্যের জমি বর্গা নিয়ে গাছ রোপন করে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে। আগামী ২০১৬ সালের মধ্যে তিনি প্রায় ১৫ কোটি টাকার মালিক হতে চলেছেন। মোস্তফা মন্ডল নওগাঁ পত্নীতলা উপজেলার কাশিপুর হাট গ্রামের মৃত অফিজ উদ্দিনের পুত্র। বাড়ির আশপাশে পতিত জমিতে গাছ লাগিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় গাছ লাগানোর প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায় তার। কিন্তু তার নিজের কোন জমি নেই। তাই তিনি জমি বর্গা নেয়ার কথা ভাবতে থাকেন। আত্রাই নদী তীরবর্তী যেসব জমিতে ভাল ফসল উৎপাদনের সম্ভাবনা কম সেসব জমির মালিকদের উৎসাহিত করেন।

এভাবে তিনি পত্নীতলা পজেলার সামবাটি, কাশিপুর, গোপালপুর, পরানপুর, মহাদেবপুর উপজেলার মহিষবাথান এবং ধামইরহাট উপজেলার রসুলবিল মৌজায় প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন কৃষকদের কাছ থেকে ২২০ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে ২০০৬ সালে থেকে বনায়ন কর্মসূচি হাতে নেন। এসব জমিতে তিনি হাট এবং বিভিন্ন নার্সারী থেকে আকাশমনি, ইউক্যালিপটাস এবং আম গাছের চারা ক্রয় করে লাগান। গাছ বিক্রি করে যা দাম পাওয়া যাবে তা জমির মালিকদের সাথে আধাআধি ভাগ করে নেবেন এমন চুক্তি করেছেন তিনি।

এসব গাছের তিনি নিজেই যতœ করেন। এ ছাড়াও এলাকাভিত্তিক লোক নিয়োগ করেছেন গাছের দেখাশুনা করতে। ইতিমধ্যে গাছগুলো বড় হয়েছে। আগামী ১০/১২ বছর পর ২০১৬ সালে গাছগুলো বিক্রির উপযোগী হবে। তখন প্রতিটি গাছ গড়ে ৪ হাজার টাকা করে বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদী।

প্রতি বিঘায় ৪০০টি করে গাছ লাগিয়েছেন তিনি। সে হিসেবে ২২০ বিঘা জমিতে গাছের মোট সংখ্যা ৮৮ হাজার। প্রতিটি গাছ ৪ হাজার টাকায় বিক্রি করলে সেসব গাছের মোট মূল্য দাঁড়াবে ৩৫ কোটি টাকারও বেশি। গাছের চারা কেনা এবং পরিচর্যার জন্য নিয়োগকৃত লোকের মজুরি ইত্যাদি বাবদ খরচের পরিমাণ প্রায় ১ কোটি টাকা।

মোট খরচ বাদ দিয়ে গাছ বিক্রির মোট টাকার অর্ধেক জমির মালিকদের পরিশোধ করে তা নিজস্ব অর্থের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ১৭ কোটি টাকা। এই অবস্থায় আর্থিকভাবে এতটাই স্বাচ্ছন্দ আসবে যে তাকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হবে না।

যে মোস্তফা এক সময় অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাতেন। এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে সংসারের ঘানি টানতে হিমশিম খেতেন। সেই মোস্তফার সংসারে স্বচ্ছলতার পদধ্বনি। তার এক ছেলে এক মেয়ে এবং স্ত্রীকে নিয়ে তার ছোট্ট সংসার। সন্তানরা পড়াশুনা করছে। এই সাফল্যের কারণে ছেলে-মেয়েদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে আর কোন বাধা থাকবে না বলে তিনি প্রত্যাশা করছেন।।

এদিকে গাছ লাগিয়ে তার এই অভাবনীয় সাফল্য দেখে এলাকার আরও অনেকেই এগিয়ে এসেছেন। কাশিপুর হাটের হামিদুল ইসলাম, পাটিচরা গ্রামের রফিকুল ইসলাম, ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের চন্দন এবং গাহন গ্রামের শেফাতুল ইসলাম একই হিসেবে গাছ লাগানো শুরু করেছেন। মোস্তফা মন্ডলের অভাবনীয় এই সাফল্যের পথ ধরে তারাও কাঙ্খিত সফলতা অর্জনের পথে এগিয়ে যেতে শুরু করেছেন।

বনবিভাগ ধামইরহাট অঞ্চলের বনবিট কর্মকর্তা লক্ষন চন্দ্র ভৌমিক জানিয়েছেন, গাছ লাগানো খুবই লাভজনক। তিনি মোস্তফা মন্ডলের গাছ লাগানোর সাফল্যের কথা স্বীকার করে বলেছেন, এলাকার আরও অনেকেই মোস্তফা মন্ডলের মত গাছ লাগাতে শুরু করেছেন। 

Thursday, January 16, 2014

বান্দরবান ও রোয়াংছড়িতে মাশরুম চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে

বান্দরবান: মাশরুম চাষ সম্প্রসারণ কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বান্দরবান শহরের বালাঘাটার ছেনোয়ারা বেগম আর রোয়াংছড়ি উপজেলার আলেক্ষ্যং ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান চাইনিং মারমাসহ অনেকে। 

সরকারি বা বেসরকারি কোনো সংস্থার সহযোগিতা ছাড়াই বান্দরবান শহরের বালাঘাটায় ২০০৯ সাল থেকে লাভজনক মাশরুম চাষ করে আসছেন ছেনোয়ারা। ২ সন্তানের জননী ছেনোয়ারা বেগম স্বামী ছাড়াই কেবল তার ঘরের একটি অংশে আবাদ করা মাশরুম চাষ থেকে উৎপাদিত মাশরুম বিক্রি করে প্রতিমাসে গড়ে আয় করছেন ১৫ হাজার থেকে ২০ টাকা করে। 

তিনি মাশরুম চাষের জন্যে বালাঘাটা উদ্যান উন্নয়ন বাগান থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ২০০৯ সাল থেকে নিজস্ব উদ্যোগে শুরু করেন মাশরুম চাষ। প্রতিদিন গড়ে ৩ কেজি মাশরুম উৎপাদন করে বিক্রি করতে পারেন। প্রতি কেজি মাশরুম ২০০ টাকায় বিক্রি করা যায়। 
পরিচর্যা ও যথাযথ উপকরণ ব্যবহারের মাধ্যমে মাশরুমের প্রতিটি স্পন্স বা পোটলা থেকে তিন মাস পর্যন্ত মাশরুম উৎপাদন করা সম্ভব। শুকনা খড় ও ফুল গামারি গাছের ভূষি বা গুঁড়া দিয়েই তিনি নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় তৈরি করে থাকেন মাশরুমের স্পন্স।
তবে তিনি ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় উন্নত প্রশিক্ষণ পেলে নিজের উদ্যোগে মাশরুম চাষ সম্প্রসারণে আরো এগুতে পারবেন এবং সেই সাথে আগ্রহী চাষীদেরও তিনি প্রশিক্ষণ প্রদান করে বান্দরবান অঞ্চলে মাশরুম চাষ দ্রুত সম্প্রসারণে সক্ষম হবেন বলে জানিয়েছেন। 

জেলার রোয়াংছড়ি উপজেলার একমাত্র মাশরুম চাষী মারমা আদিবাসী নেতা চাইনিং মারমা। তিনি প্রতিদিন ১০ কেজি হারে মাশরুম উৎপাদন ও বাজারে বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছেন নতুনভাবে। অবশ্য বর্তমানে তার মাশরুমের চাষ ক্ষেত থেকে প্রতিদিন গড়ে আড়াই কেজি পরিমাণ মাশরুম উৎপাদন হচ্ছে এবং তা প্রতি কেজি ২০০ টাকা দরে স্থানীয়ভাবে বিক্রি করছেন । 
পাহাড়ের মানুষ পাহাড়ি জীবনে অভ্যস্ত,তারা জঙ্গলের নানা প্রজাতির কৃষিপণ্য সবজি হিসেবে ব্যবহারের পাশাপাশি কৃত্রিমভাবে উৎপাদিত মাশরুম খেতেও হাল অবস্থায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। বাঙ্গালিরাও মাশরুম খেতে খুবই আনন্দ পায়। মাশরুমের চাহিদাও বাড়ছে সর্বত্রই, জানিয়েছেন মাশরুম চাষী চাইনিং চেয়ারম্যান। 

বান্দরবান জেলা সদর থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে রোয়াংছড়ি উপজেলার দুর্গম আলেক্ষ্যং ইউনিয়নের কচ্ছপতলী গ্রামের বাসিন্দা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান চাইনিং মারমা। তার মেজো পুত্র ক্যম্যাথোয়াই মারমা বাবার এ মাশরুম চাষে সার্বক্ষণিক সময় দেন। জানা গেছে, পুরো রোয়াংছড়ি উপজেলায় একমাত্র চাইনিং চেয়ারম্যানই মাশরুম চাষে এগিয়ে এসেছেন। স্থানীয় পর্যায় ছাড়াও সাভার থেকে তিনি মাশরুম চাষের ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। তবে সরকারি বা বেসরকারি কোনো সংস্থার কোনো প্রকার উপকরণ ও অর্থসহায়তা ছাড়াই তিনি মাশরুম চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। 

সফল মাশরুম চাষী চাইনিং মারমা জানান, অর্থকরী ও পুষ্টিকর মাশরুমের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। সঠিক সময়ে পরিচর্যা ও যথাযথ উপকরণ ব্যবহারের মধ্যে মাশরুমের প্রতিটি স্পন্স বা পোটলা থেকে তিনমাস পর্যন্ত মাশরুম উৎপাদন করা সম্ভব। শুকনো খড় ও ফুল গামারি গাছের ভূষি বা গুঁড়া দিয়েই তিনি নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় তৈরি করে থাকেন মাশরুমের স্পন্স। বাড়ির নিচতলায় ও আঙ্গিনায় হালকা আলো ও হালকা বাতাস লাগে এমন জায়গায় মাশরুমের স্পন্সগুলো সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রেখেছেন তিনি। প্রতিদিন সকাল বিকেল হালকা পানি ছিটিয়ে দেয়া হয় মাশরুমের স্পন্সগুলোতে। সকল সম্প্রদায়ের জন্য হালাল ও অতি পুষ্টিকরসহ ২২টি রোগ বালাই প্রতিরোধে সহায়ক খাদ্যদ্রব্য হিসেবে ব্যাপকহারে ব্যবহার হচ্ছে এ মাশরুম। 
মাশরুম চাষী চাইনিং মারমা আরো জানান, কৃষি বিভাগ ও উদ্যান উন্নয়ন অফিস থেকে কেবল মাশরুম চাষের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েই আগ্রহীদের মাঠে ছেড়ে দেয়া হয়। প্রশিক্ষিত চাষীদের পরবর্তীতে সরকারি বা বিভাগীয় পর্যায়ে সহযোগিতা করা হলে বহু চাষীই এগিয়ে আসবেন লাভজনক এ মাশরুম চাষের দিকে। 
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের শস্য উৎপাদন বিশেষজ্ঞ মো. আলতাফ হোসেন বলেন, এখানকার পাহাড়ি মাটি মাশরুম চাষের জন্য খুবই উপযোগী, ব্যক্তিগত পর্যায়ে বহু কৃষকই অন্য ফসলের পাশাপাশি বাড়ির আঙ্গিনায় মাশরুম চাষে এগিয়ে যাচ্ছেন। কৃষি বিভাগও মাঠ পর্যায়ে মাশরুম চাষ সম্প্রসারণে বিশেষ পরামর্শ দিচ্ছেন চাষীদের। 

Monday, January 13, 2014

বরগুনায় সৌর সেচ ব্যবস্থায় কৃষি সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে

বরগুনা: বরগুনার বিভিন্ন এলাকার কৃষি জমিতে চলছে সৌর সেচ পদ্ধতি বা সোলার ইরিগেশন পাম্পিং সিস্টেম। সূর্যালোকের সাহায্যে ফসলী জমিতে এই সেচ ব্যবস্থা কৃষকদের যেমন জ্বালানী তেল বা বিদ্যুতের উপর নির্ভরশীলতার হাত থেকে বাঁচিয়েছে পাশাপাশি তেমনি বিদ্যুতের একটি বড় ঘাটতি পূরণেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সৌর শক্তিকে ব্যবহার করে বরগুনার কৃষকরা এখন চাষ করছেন শত শত একর জমি। 

বাংলাদেশে বিদ্যুতের একটি বড় অংশের প্রয়োজন পড়ে ধান ক্ষেতে সেচের জন্য। বিদ্যুত সংকটের কারণে তিনটি মৌসুমে জমিতে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ এখনও কষ্টসাধ্য। সেচ কাজে তাই সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারের কথা ভাবা হচ্ছে জোরেশোরে, হচ্ছে গবেষণাও। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটে সৌরবিদ্যুৎ দিয়ে সরাসরি সেচ পাম্প চালানোর গবেষণার কথা বিজ্ঞান প্রজন্মে তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি প্রচলিত সৌর বিদ্যুতের অধিক ব্যবহারের কথাও ভাবা হচ্ছে। এসবের সূত্র ধরেই প্রচলিত প্রযুক্তিতেই চলছে বরগুনার সৌর সেচ প্রকল্প। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তায় স্থানীয় একটি উন্নয়ন সংস্থা রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (আরডিএফ) দুই বছর আগে বরগুনায় বিভিন্ন এলাকায় ৬টি সোলার ইরিগেশন পাম্পিং সিস্টেম স্থাপন করে। বরগুনার আমতলী উপজেলার নীলগঞ্জ গ্রামের কয়েকটি এলাকায় এই কার্যক্রমে উপকৃত হচ্ছেন কয়েকশ কৃষক। প্রতিটি প্রকল্পের অনুকূলে ৪০ একর জমি চাষের আওতায় নেয়া আছে। ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রতিটি সোলার সিস্টেমে ৪৮টি সোলার প্যানেল রয়েছে। সৌর শক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রতিদিন প্রায় ৮ লাখ লিটার পানি উত্তোলন করা হচ্ছে এই পাম্প-এর মাধ্যমে। আপাত দৃষ্টিতে প্রকল্পটি ব্যয়বহুল মনে হলেও ইতোমধ্যেই কৃষকদের নিকট সহনশীল এবং জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অপরদিকে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে এর গুরুত্ব কৃষকদের আশা জুগিয়েছে। 
২০১০ সালে আরডিএফ বরগুনায় পরীক্ষামূলকভাবে এই সোলার ইরিগেশন সিস্টেম প্রথম স্থাপন করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর ড. আতিউর রহমান তখন এ প্রকল্পটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। কৃষকদের চাহিদা দেখে পরবর্তীতে বাকী সোলার সিস্টেমগুলো স্থাপন করে আরডিএফ। শুধু বরগুনাতেই নয়, উত্তরবঙ্গের পঞ্চগড় জেলায়ও ৫টি প্রকল্প চলছে, জানালেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী। 

দক্ষিণাঞ্চলের অধিকাংশ ফসলি জমিগুলো সেচের অভাবে বছরে একবার মাত্র চাষ করে থাকেন কৃষকরা। বাকি দুটি মৌসুমে জমিগুলো খালি পড়ে থাকে। কেউ কেউ ডিজেল চালিত মেশিন দিয়ে মাঠে পানি সেচ দিয়ে চাষ করেন। যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এক সময় নদীর ভরা জোয়ারের পানি অথবা বৃষ্টির অপেক্ষায় বসে থাকতে হতো কৃষকদের। কখন মাঠে পানি আসবে তখন শুরু হবে কৃষি কাজ। সৌর সেচ সুবিধা প্রাপ্ত অঞ্চলে এখন আর অপেক্ষা নয়। সারা বছরই পানি পাওয়া যাচ্ছে। সুবিধা অনুযায়ী চাষও চলছে, আলাপকালে জানালেন স্থানীয় কৃষকরা। 

সৌর সেচ সুবিধা পাওয়া আমতলী উপজেলার নীলগঞ্জ গ্রামের কৃষক রুহুল আমীন কাজী (৭২) বলেন, এক সময় কষ্ট করে জমিতে পানি সেচ দিয়ে কোন মতে এক মৌসুমে ফসল ফলাতে হতো। এখন এই সোলার সিস্টেম দিয়ে তারা কৃষি ক্ষেত্রে একটি বৃহৎ সুবিধার কথা ভাবছেন। 

ধানখালী গ্রামের আব্দুল লতিফ গাজী (৬২) বলেন, প্রথম দিকে এই সিস্টেম স্থাপনের সময় বুঝতে পারেননি এর গুরুত্ব। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক ভূমিকা পালন করছে এই সৌর সেচ প্রকল্প। এখন তারা স্বপ্ন দেখছেন নানাভাবে। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করে দেশের খাদ্য সংকট নিরসনে নিরলস কাজ করে যাবেন তারা। 

এই সোলার সিস্টেমের কারিগরী সহযোগিতা দিয়েছে শেরপা সোলার পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং নামের একটি প্রতিষ্ঠান। শেরপা’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম এ তাহের বলেন, সৌর সেচ পদ্ধতি চালুর মাধ্যমে পরিবেশ বান্ধব এবং আধুনিক কৃষি পদ্ধতি চালু করে দেশে একটি সবুজ কৃষি বিপ্লব ঘটানো সম্ভব। তিনি বলেন, সোলার সিস্টেম একবার স্থাপন করে কোন ধরনের খরচের ঝামেলা ছাড়াই ২০ বছর টানা সার্ভিস দিয়ে যাবে। ব্যাটারি ছাড়া সরাসরি সূর্যের আলোতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্ন পানি দিয়ে যাচ্ছে এই সোলার সিস্টেম। সৌর শক্তিকে কাজে লাগিয়ে একটি পরিবেশ বান্ধব কৃষি কাজের সূচনা করা হলো। 

আরডিএফ’র পরিচালক আলি আহমেদ বলেন, কৃষি ক্ষেত্রে একটি বড় ধরনের উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে বরগুনায় স্থাপন করা হয়েছে এই সৌর সেচ প্রকল্প। দেশের খাদ্যে ঘাটতি, বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণে এই প্রকল্পটি কৃষি ক্ষেত্রে যথেষ্ট কল্যাণ বয়ে আনতে পারে। 

আরডিএফ’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম গোলাম মোস্তফা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃ অর্থায়ন এবং মিউচুয়্যাল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের আর্থিক সহায়তায় আরডিএফ সোলার প্রকল্পগুলো স্থাপন করেছে। এছাড়াও বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রীয় প্রকল্প ইডকল-এর সঙ্গে আরডিএফ এই কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য সম্পৃক্ত হয়েছে। 
একটি স্থায়ীত্বশীল প্রাকৃতিক বিদ্যুৎ ব্যবস্থা হিসেবে সোলার ইরিগেশন সিস্টেমের মাধ্যম সেচ দিলে বিদ্যুৎ বা জ্বালানী সাশ্রয় হবে। ডিজেল এবং বিদ্যুতের ব্যবহার কমিয়ে সূর্যের আলোকে কাজে লাগিয়ে কৃষি উৎপাদনকে তরান্বিত করতে হবে।

Sunday, January 12, 2014

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সরিষার আবাদ: সম্ভাবনাময় মধু চাষ

যশোর: দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দিগন্তজোড়া সরিষা ক্ষেতের দৃশ্য মন কেড়েছে সবার। মাঠের পর মাঠ সরিষার হলদে আভায় মুগ্ধ সবাই। শুধু গন্ধ আর দৃষ্টি নন্দনতাই নয়, এর অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে। তাই এ অঞ্চলে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সরিষা চাষ। সরিষার উপর নির্ভর করে মধু খামারিরা ক্ষেতের পাশে মৌমাছি পালন করে মধু সংগ্রহ করছেন। মধু খামারিরা জানান, সরিষার মধুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। অন্য সময়ের থেকে এ সময় মধুর দাম বেশি পাওয়া যায়। প্রতি কেজি মধু বর্তমানে ২শ’ টাকা থেকে আড়াইশ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মওসুমে খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দশ জেলা-যশোর, নড়াইল, ঝিনাইদহ, মাগুরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাটে এ মওসুমে ৬৭ হাজার ৪৪০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮০ হাজার ৯২৮ মেট্রিক টন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তাররা। 

ভোজ্য হিসেবে সরিষা তেলের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকরা প্রতি বছর সরিষার চাষ বেশি বেশি জমিতে করছেন। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সরিষা চাষ লাভজনক হওয়ায় গত কয়েক বছর ধরে এ অঞ্চলের কৃষকরা সরিষা চাষে ঝুঁকছেন। 

কৃষকরা জানান, এক সময় সরিষার তেল ভোজ্য হিসেবে ব্যবহার হতো। পরে এর ব্যবহার হ্রাস পায়। বর্তমানে সরিষা তেলের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। সরিষার উৎপাদনও বেড়েছে। এতে একদিকে দেশের তেল ঘাটতি পূরণ হবে, অন্যদিকে দেশ তেল রফতানি ব্যয় কমে যাবে। খুলনা বিভাগের ১০ জেলার বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে সরিষার হলদে ফুল দৃষ্টি কাড়ছে সবার। মৌমাছি মধু সংগ্রহ করছে সরিষা ফুল থেকে। বাজারে সরিষা মধুর চাহিদা ও দাম বেশি। চলতি মাসের শেষের দিকে সরিষা কর্তন শুরু হবে বলে কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা জানালেন।

বাঘারপাড়া উপজেলার চাড়াভিটা এলাকার সরিষাচাষি আবুল হোসেন জানান, রবি মৌসুমে এ ফসল চাষ লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছর আমি সরিষার চাষ করি। বিনা-৭ ও ৮,বারি-৯ ও ১৪ এবং ১৫ জাতের সরিষার আবাদ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তিনি এবছর প্রায় ৫বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছেন। উৎপাদিত জমিতে সরিষার আবাদ ভালো হয়েছে বলে তিনি জানান।
নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ছবি হরিদাস জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সময়মতো উন্নতমানের বীজ, পর্যাপ্ত সার ও কীটনাশক চাষীদের মাঝে সরবরাহ করায় সরিষার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।

যশোর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দশ জেলায় ৬৭ হাজার ৪৪০ হেক্টর জমিতে ৮০ হাজার ৯২৮ মেট্রিক টন সরিষা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। 

জেলাওয়ারী সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে- যশোর জেলায় ১৬ হাজার ৫৫৬ হেক্টরে ১৯ হাজার ৮৬৭ মেট্রিক টন, নড়াইল জেলায় ৫ হাজার ৬৬৪ হেক্টরে ৬ হাজার ৭৯৭ মেট্রিক টন, মাগুরা জেলায় ১২ হাজার ৯২ হেক্টরে ১৪ হাজার ৫১০ মেট্রিক টন, ঝিনাইদহ জেলায়  হাজার ১০ হাজার ১৩ হেক্টরে ১২ হাজার ১৬ মেট্রিক টন, কুষ্টিয়া জেলায় ৫ হাজার ৪০৮ হেক্টরে ৬ হাজার ৪৯০ মেট্রিক টন, মেহেরপুর জেলায় ৬ হাজার ২১৭ হেক্টরে ৭ হাজার ৪৬০ মেট্রিক টন, চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৩ হাজার ১৮৪ হেক্টরে ৩ হাজার ৮২১ মেট্রিক টন, সাতক্ষীরা জেলায় ৭ হাজার ১৯৬ হেক্টরে ৮ হাজার ৬৩৫ মেট্রিক টন, খুলনা জেলায় ৪১২ হেক্টরে ৪৯৪ মেট্রিক এবং বাগেরহাট জেলায় সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৯৮ হক্টর জমিতে ৮৩৮ মেট্রিক টন। 

Saturday, January 11, 2014

পিরোজপুরে অচাষকৃত উপকারী লতাপাতা উদ্ভিদের ব্যতিক্রমী প্রদর্শনী

পিরোজপুর: গ্রামীণ এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নিয়ে বেড়ে উঠে নানা রকম লতাপাতা উদ্ভিদ। এসব লতাপাতা থাকে অনাদরে-অবহেলায়। বাড়ির বাগানে, ঝোপ-জঙ্গলে, বসতবাড়ীর আশেপাশে, মেঠো পথের পাশে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয় এসব লতাপাতা উদ্ভিদ। 
এমনকি পুকুর পাড়ে, খাল-বিলে ও নদীর কূলেও দেখা যায় বিভিন্ন লতাপাতা। এসব অচাষকৃত লতাপাতা উদ্ভিদের অনেক গুণাগুণ থাকলেও অধিকাংশ মানুষই তা জানে না। কেউ কেউ জানলেও আমলে নেয় না। 

তাই গুণাগুণসমৃদ্ধ এসব অচাষকৃত লতাপাতা কাজে লাগানোর জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে। 
ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগটি গ্রহণ করেছে মঠবাড়িয়া টিকিকাটা ইউনিয়নের ছোট শিঙ্গী গ্রামের গ্রাম সংগঠন ও বেসরকারি কৃষি গবেষণাধর্মী উন্নয়ন সংগঠন বারসিক (বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজ)। 

মানুষের জন্য উপকারী অথচ কেউ ব্যবহার করছে না এমনসব লতাপাতা উদ্ভিদের গুণাগুণ সম্পর্কে ধারণা দেয়া এবং তা ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার জন্য এই দুটি সংগঠন কয়েকটি গ্রামে আয়োজন করে ভিন্নধর্মী মেলার। সম্প্রতি মঠবাড়িয়ার ছ্টো শিঙ্গী গ্রামে আয়োজিত এমনই এক মেলা উপভোগ করেছেন অনেক দর্শনার্থী।

ওই মেলার আয়োজন করা হয়েছিলো ছোট শিঙ্গী গ্রামের কৃষক গৌরাঙ্গ অধিকারীর বাড়ীর উঠোনে। এই প্রদর্শনীতে অর্ধ শতাধিক কৃষাণ-কৃষাণী দেড়শ’ জাতের অচাষকৃত দরকারি লতাপাতা উদ্ভিদ নিয়ে ৫০টি স্টল দেন। এই ব্যতিক্রমী মেলা দেখার জন্য সেখানে যান স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। বিপুলসংখ্যক কৃষকও মেলায় গিয়েছিলেন। তারা সবাই ঘুরে ঘুরে স্টলগুলো দেখেন। এর মাধ্যমে তারা দরকারী লতাপাতা ও উদ্ভিদের সঙ্গে পরিচিতি লাভ করেন এবং গুণাগুণ জেনে নেন। 

টিকিকাটা কৃষি ব্লকের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা নূরুন্নাহার বেগম এই মেলার উদ্বোধন করেন। এরপর তিনি প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া অচাষকৃত অথচ ওষুধি গুণসম্পন্ন লতাপাতা উদ্ভিদের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সঙ্গে দরকারী ভেষজ যাতে বিলুপ্ত না হয় সে বিষয়ে সকলকে দৃষ্টি দেয়ার জন্য আহবান জানান।

থানকুনি পাতার গুণাগুণ সম্পর্কে তিনি বলেন, এ পাতা বেটে ভাতের সঙ্গে তিনদিন খেলে আমাশয় রোগ থেকে মুক্তি মেলে। তিনি আরো জানান, নিমপাতা কৃষি বিনাশের মহৌষধ। আর বাবু তুলসি পাতার রস কাশি থেকে মুক্তি দেয়। 

গ্রাম সংগঠন ও বারসিকের কর্মকর্তারা জানান, ছোট শিঙ্গী গ্রামের এই মেলা ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করায় পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন গ্রামে আরো এ জাতীয় মেলা প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। এতে অচাষকৃত অথচ দরকারী লতাপাতা উদ্ভিদ, যা সহজেই হাতের নাগালে পাওয়া যায়, সেসবের ব্যবহার বাড়বে এবং এতে গ্রামাঞ্চলের মানুষ উপকৃত হবে। 

আয়োজনকারীরা জানান, এই মেলার দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ও আগ্রহ দেখে তারা উজ্জীবিত। তারা ক্রমশ বিভিন্ন গ্রামে এ জাতীয় মেলার আয়োজন করবেন। এ ব্যাপারে তারা কৃষি বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতাও প্রত্যাশা করেন। 

উদ্ভিদ মেলায় ভোলকুমড়া, আগুন সার, পাথরকুঁচি, কানাই লতা, দধি লতা, কচু শাক, মানকচু, কালা কচু, দুধমান কচু, বিষ কচু, কলমী লতা, তেলা কচু, হেলেনচা, বাশক, হডি/সডি, সোনাপাতা, মাইড্ডা ওড়হা, পাকিস্তানি লতা/জার্মানি লতা, কালোমেঘ, বন তুলসী, বাবু তুলসী, কৃষ্ণ তুলসি, মেহেদী, হেউজ, পালডী মাদার, দুর্বা ঘাস, আকন্দ, বুখই, গজ বুখই, লাল সোনকাইজ, অন্তরমূল, বকুল, আডালি, পদ্মগুরুজ, লজ্জাবতী, বিষ করলা, হেচি শাক, তিত বেগুন, বন বড়ালী, আপাং পাতা, কালো মানিক, বাদলা পাতা, বুনজুন পাতা, বৌঠোরানী, ¯¦র্ণলোতা, ¯¦র্ণলোয়া, চাটা শাক, আইমুল, ঘন্টা জবা, ঢেঁকি শাক, ব্রনী শাক, দন্তরাজ, বাইত পাতা, সুলমদন, ঘোড়াচবর, এরোন পাতা, কেচকী মোতা, মেহ লতা, ভাটি শাক, হোনাইল, ছল্লা পাতা, কাটা ডাটা, কুচিকুচি পাতা, বুন্না মুলা, চিনিদানা, বন মরিচ, শাপলা, ধুতরা (কালো), সাদা ধুতরা, পোলাও পাতা, অশোক, গিমা শাক, ডুমুর, দন্তমুল, নোনা শাক, নোনা ঝাউ, কাটা বুহুই, চিনি বাদাম, হাত কাটা ফল, আগ্রা শাক, তেল করমচা, অদ্দুয়া, দুধরাজ, চৈ ঝাল, খিড়পুই, বিলাতি ধনেপাতা, আমরুলি, ঠেনঠেনিয়া শাক, গোলহাচি, মুরমুরা, উরনোই, নুচনুচে, কিল করণী, বন ধুনে, কেলি কদম, বামন হডি, বাদ ঢেকির শাক, ঘোসকা পাতা, নিরপুষি, চোচড়া পাতা, মেহরাজ, রক্ত চিতা, চাচ কাটা, বেত, উড়ি গাব, জবা, শতমূল, গাব, বট, বাবলা, আমলকি, হরিতকি, শেফালী, অর্জুন, নিম, শিমুল, কাঠবাদাম, থানকুনি পাতা, তেঁতুলসহ দেড় শতাধিক উদ্ভিদ প্রদর্শন করা হয়। 

Wednesday, January 8, 2014

মানবকল্যাণে নিবেদিত বীর মুক্তিযোদ্ধার ফল, ফুল ও ঔষধী বাগান

শরীয়তপুর: মানুষের জন্য বিষ মুক্ত ফল উৎপাদন ও ঔষধী বৃক্ষের চাহিদা মিটাতে এবং জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে পরিবেশকে রক্ষা করতে মুক্তিযোদ্ধা আলী আজ্জম ফরিদী নিজ বাড়ির চারপাশে গড়ে তুলেছেন ফল, ফুল ও ঔষধী বৃক্ষের বাগান। শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার সাজনপুর গ্রামের জন্ম নেয়া মানবদরদী এ মানুষটি ১৯৮৫ সাল বাসক পাতা সংগ্রহ করতে গিয়ে দীর্ঘ ভোগান্তির শিকার হন। এর প্রেক্ষিতে তিনি পরবর্তীতে নিজ উদ্যোগে গড়ে তোলেন ফল, ফুল ও ঔষধী বৃক্ষের এ বিশাল বাগান।

নিজ বাড়ির চারদিকে ১৪ একর জমির উপর গড়ে উঠা আলী আজ্জম ফরিদীর বাগানে রয়েছে বিদেশী ফল আপেল, আঙ্গুর, নাসপাতি, বেদেনা, মাল্টা, বেলামবো, স্ট্রবেরী, আরবের খেজুর, চকলেট, চেরীসহ ১৩ প্রকারের বিদেশী ফল, দেশী ফলের মধ্যে রয়েছে আম, আমরা, আতা, সরিফা, জাম, জামরুল, চালতা, জাম্বুরা, কাঁঠাল, কদবেল, কাঠবাদাম, কামরাঙ্গা, তাল, তেঁতুল, জলপাই, কমলা, করমজা, আরমুজ, লটকন, গাব, সফেদা, বেল, কদবেল, বরই, আনারসসহ ৪৫ প্রকারের ফল। আরো আছে আমলকি, হরতকি, বহেরা, পানবিলাস, রামধনি, নিম, নিশিন্দা, ধুতরা, গন্ধভাদালি, অরহর, বাসক, লোচি, লবঙ্গ, লজ্জাবতি, দুধকুমারি, ঘৃতকুমারি, খরাপাতা, তুরুপচন্দন, সাদাচন্দন, উলট কম্বল, শতমূলি, গুলমরিচ, ধানমরিচসহ ২৫ প্রকারের ঔষধী বৃক্ষ, এছাড়াও আছে মানবকল্যাণে ফুল জবা, টগর, গাদা, গোলাপ, হাসনাহেনা, জলপদ্ম, লালপদ্ম, কামিনী, গন্ধরাজ, বিলাসী, শেফালী, রক্তশাপলাসহ ২৩ প্রকারের ঔষধী ও লতা গুল্ম।
শরীয়তপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রতিদিন শত শত মানুষ বিষমুক্ত ফল আর রোগ নিরাময়ের দাওয়াই পেতে ছুটে যান আলী আজ্জমের বাড়িতে। প্রথম প্রথম আলী আজ্জম চাহিদার স্বল্পতার কারণে বিনামূল্যে ফল ও ঔষধী গাছ-গাছরা দিয়ে দিতেন। বর্তমানে ফলের ন্যায্যমূল্য ও অন্যান্য ঔষধী গাছের নামমাত্র মূল্য রাখেন।

Monday, January 6, 2014

নওগাঁয় পতিত জমিতে সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন অর্চনা রাণী

নওগাঁ: সামান্য পতিত জমিতে সবজি চাষ করে সফল হয়েছেন অর্চনা রানী। এই সফলতা অর্জনের সাথে সাথে নিজের সংসারে এসেছে আর্থিক স্বচ্ছলতা। পরিবারের স্বামীসহ অন্য সদস্যদের কাছে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তার মর্যাদা। সেই সুবাদে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে তার উপস্থিতিও বেড়েছে। 
অর্চনা রাণী (৩৫) একজন গৃহবধু। জেলার মহাদেবপুর উপজেলার উত্তরগ্রাম ইউনিয়নের শিবগঞ্জ গ্রামের গোপাল চন্দ্র সাহার স্ত্রী তিনি। স্বামীর বাড়ির কাছেই একটি চায়ের দোকান করেন। সেখান থেকে যে আয় হয় তা দিয়েই কোন রকমে খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করে থাকেন। অর্থের অভাবে তাদের কন্যার পড়াশুনা ৫ম শ্রেণী পেরোতে পারেনি। দ্বিতীয়টি পুত্র সন্তান, সে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছে। কিন্তু এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে সংসারের স্বচ্ছলতা কিভাবে আনা যায় সেই চেষ্টা ছিল অর্চনা রাণীর। 

অবলম্বন খুঁজতে খুঁজতে স্থানীয় একটি বেসরকারি সংগঠনের সাথে তিনি যুক্ত হন। সংগঠনের দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি হিসেবে প্রকল্পের অধীনে গঠিত ইউনিয়ন উন্নয়ন কমিটিতে (ইউডিসি) অর্চণা রাণী কার্যকরী সদস্যভুক্ত হন। সদস্য হওয়ার পর থেকেই ইউনিয়ন পরিষদে অনুষ্ঠিত ইউডিসি’র মাসিক সমন্বয় সভায় যোগদানের পাশাপাশি বিভিন্ন সভা-সেমিনারে যোগদান করেন। ইউনিয়ন পর্যায়ে আয়োজিত সেবা প্রদর্শনী ও আলোচনা সভায় প্রদত্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মামুনুর রশীদের বক্তব্য অর্চনা রাণীকে আকৃষ্ট করে। বাড়িতে ফিরে গিয়ে সে নিজ হাতে কোদাল দিয়ে কুপিয়ে বাড়ির পাশের জঙ্গল পরিস্কার করে চার শতক জমি তৈরি করেন অর্চনা রানী। সেখানে উক্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ অনুযায়ী লাউ, মিষ্টি কুমড়া, শসা, বেগুন, মরিচ, পেঁপে ও হলুদের চাষ শুরু করেন। 

ইতোমধ্যে প্রতি বছর মোটামুটি বিভিন্ন মওসুমে বিভিন্ন শাক-সবজি চাষ করেন। সেখান থেকে প্রতি বছর নিজের পরিবারে খাওয়ার পরও কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা লাভ করে থাকেন। উক্ত টাকা দিয়ে পারিবারিক খরচ মেটানো ছাড়াও স্বামীর চায়ের দোকানে বিনিয়োগ করেছেন। সেদিক দিয়ে তিনি স্বামীর ব্যবসা উত্তরণে সহায়তা করছেন। এক কথায় সবজি চাষ করে ঘুরিয়ে দিয়েছেন তার ভাগ্যের চাকা। সংসারে এনেছেন স্বচ্ছলতা। 

অর্চনা রাণী বলেন, ইউডিসি সদস্য হওয়ার পর শুরুতে তার স্বামী তাকে সভা-সমাবেশে যোগ দিতে রাজি ছিলেন না। এ নিয়ে বিভিন্ন কটু কথাও বলতেন। বর্তমানে তার সাফল্যে স্বামী গোপাল চন্দ্র দাস এখন তাকে সার্বিকভাবে সহায়তা করছেন। এর আগে তার স্বামী নেশা করতেন এবং তার কোন কথা শুনতে চাইতেন না। এখন তার কথার গুরুত্ব দেন।

বর্তমানে পরিবারিক যে কোন বিষয় নিয়ে তার (অর্চনা) সাথে আলোচনা করেন। অনেক মতামতের মুল্য দিতে শুরু করেছেন তার স্বামী। ছেলেটিকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করা এখন তার স্বপ্ন। 

উত্তরগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শেখ শাহ আলম ফায়সাল এ ব্যাপারে বলেছেন,  অর্চনা রাণী এ অল্প সময়ে সবজি চাষ করে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছেন। কারও সদিচ্ছা এবং আগ্রহ থাকলে যে কেউ অর্চনা রাণীর মতো স্বচ্ছলতা অর্জন করতে পারবেন। শিবগঞ্জ গ্রামের অর্চনা রাণী এখন এলাকার আদর্শ হয়ে ওঠেছেন। 

Sunday, January 5, 2014

কুষ্টিয়ায় বেতের তৈরি আসবাবপত্রের কদর বেড়েছে


কুষ্টিয়া, ২২ ডিসেম্বর: কুষ্টিয়ায় বেতের তৈরি আসবাবপত্রের কদর বেড়েছে। প্রয়োজনীয় অর্থ ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বেতের নানা পণ্যের উৎপাদনে বড় ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। কুষ্টিয়া শহরের কোর্টপাড়ার কেনি রোডস্থ সিডি ফার্নিচারে গিয়ে এমনটিই জানা গেছে। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, এখানে বেত দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে সোফাসেট, খাট, মোড়া, দোলনা, ড্রেসিং টেবিল, ইজি চেয়ার, রকিং চেয়ারসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র। এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান মুছা। তিনি তার দুই সহযোগী মিলন ও ইছাককে নিয়ে কাজ করেন। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে তিনি রাজশাহী থেকে বেতশিল্পের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন। কুষ্টিয়ায় এখন নিজেই গড়ে তুলেছেন বেতশিল্পের একটি প্রতিষ্ঠান। সম্পূর্ণ বেত দিয়ে তৈরি এ আসবাবপত্রের দিন দিন কদর বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও তিনি জানান।

মূলত বেতগুলো আসে মিয়ানমার থেকে। বেতশিল্পী মুছা ঢাকা থেকে এ বেত সংগ্রহ করে থাকেন। তিনি জানান, সম্পূর্ণ হাতের কারুকাজ দ্বারা বেত দিয়ে আসবাবপত্র তৈরি করে থাকেন। চিকন, মাঝারি ও মোটা বিভিন্ন সাইজের বেত দিয়ে এগুলো তৈরি করা হয়। তবে বারবার আগুনের তাপ দিয়ে বেতগুলো বাঁকা করতে হয়। বেত দিয়ে তৈরি করতে ব্যবহার করা হয় বেতেরই চটালি। রেডিমেড এবং অর্ডার নিয়ে এসব আসবাবপত্র তৈরি করা হয়।

তৈরিকৃত আসবাবপত্র বিভিন্ন দামে বিক্রি করে থাকেন। সোফাসেট আট হাজার ৫০০ থেকে ১৮ হাজার টাকা, খাট চার হাজার থেকে ছয় হাজার টাকা, মোড়া ১০০ থেকে ৪০০ টাকা, দোলনা ১৮০০ থেকে দুই হাজার টাকা, ড্রেসিং টেবিল ছয় হাজার থেকে সাত হাজার টাকা এবং চেয়ার দুই হাজার টাকা করে বিক্রি করে থাকেন বলে জানান।

কর্মদক্ষতা ও হাতের নিপুণ কারুকাজে বেতের তৈরি আসবাবপত্র যেকোনো মানুষের নজর কাড়ে। তবে এর স্থায়িত্বকাল নিয়ে সাধারণের নানা প্রশ্ন রয়েছে।

উৎপাদক মুছা জানান, একটি কাঠের তৈরি আসবাবপত্রের চেয়ে এর স্থায়িত্ব বেশি হবে। তিনি রফতানি মানের আসবাবপত্রও তৈরি করতে পারেন। একই বেতের তৈরি সামগ্রী হলেও এর মধ্যে অনেক কারুকাজ আছে, রয়েছে নানা ধরনের স্থায়িত্ব কৌশল।

মুছা বলেন, একই আসবাবপত্রের স্থায়িত্ববকাল ১০ বছর আবার ওই আসবাবপত্রের স্থায়িত্বকাল ২০ বছর করা যায়। তবে দামের পার্থক্য এবং আর্থিক অসংগতির কারণে ওই মানের সামগ্রী তৈরি করা সম্ভব হয় না। তবে সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা পেলে বড় ধরনের কারখানা গড়ে তোলা সম্ভব বলে আশা প্রকাশ করেন। যার ফলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি করা সম্ভব হবে বলে আশা করেন। 

বাঁশের ঝাকায় পাল্টে গেছে বড়িয়াল গ্রামের চিত্র

মানিকগঞ্জ : বাঁশের ঝাকা তৈরি করে ভাগ্য বদল করেছে মানিকগঞ্জের সদর উপজেলার বেতিলা-মিতরা ইউনিয়নের বড়বড়িয়াল গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের শতাধিক পরিবার।
পরিবারগুলো বাঁশের ঝাকা বানিয়ে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। 


দারিদ্রতা ছিল পরিবারগুলোর নিত্যসঙ্গী। অভাব-অনটন থাকায় পরিবারগুলো খুবই কষ্টে দিন কাটাতো। বাঁশের ঝাকা শিল্প এদের ভাগ্য বদলের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে দিয়েছে গ্রামের চিত্র। একসময় যাদের অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটতো এখন তারা ঝাকা বানিয়ে অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল। দিন বদলের সঙ্গে সঙ্গে সন্তানদেরও স্কুলে পাঠিয়ে শিক্ষার পাশাপাশি কর্মজীবী হিসেবে গড়ে তুলছে তারা। 



সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পরিবারগুলোর সবাই বাঁশের ঝাকা তৈরিতে ব্যস্ত। তবে এ কাজে পুরুষের সঙ্গে সমানতালে নারীরাও কাজ করে যাচ্ছে। বাড়ির বউ-ঝিরা বসে না থেকে ঘর গৃহস্থলীর কাজ শেষে  যোগ দেয় পুরুষদের সঙ্গে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্রামটিতে উৎসবের আমেজে চলে ওই কাজ। 



বড়িয়াল গ্রামের বয়োবৃদ্ধ মনীন্দ্র (৮৫) জানান, এই গ্রামে প্রায় শত বছর ধরে ঝাকা তৈরির কাজ হয়। ১২০টি পরিবার এই ঝাকা তৈরির কাজে সরাসরি জড়িত। পৈত্রিক পেশা হিসেবেই তারা ওই কাজ করে থাকে বলে তিনি জানান। 



সনু মালা রানী (৪০) জানান, বিয়ের পর থেকেই স্বামীর সঙ্গে তিনি ঝাকা তৈরি করছেন। প্রতিদিন ঘরের কাজের পাশাপাশি দুটি ঝাকা তৈরি করা যায়। বছরের কার্তিক মাস থেকে আষাঢ় মাস পর্যন্ত কাজের চাহিদা একটু বেশি থাকে।



সুর বালা (২৩) জানান, সংসারে অন্যান্য কাজ ও লেখাপড়ার পাশাপাশি বাবা-মাকে সাহায্য করি। তাতে বাবা মায়ের অনেকটা কষ্ট দূর হয় এবং সেই সঙ্গে কিছু বাড়তি আয়ও হয়।



ফালান চন্দ্র দাশ (৫৫) জানান, একেকটি ঝাকা তৈরি করতে ৩০/৩৫ টাকা খরচ হয়। সেগুলো ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি করা যায়। একটি বাঁশ দিয়ে ৪/৫ টি ঝাকা তৈরি করা যায়। পাইকাররা বাড়ি থেকে এগুলো কিনে নিয়ে যায়।  



বেতিলা-মিতরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাসির হোসেন জানান, সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা পেলে এই এলাকায় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পসহ ঝাকা শিল্পের আরো ব্যাপক প্রসার ঘটবে।