মাগুরা: মাগুরায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে উচ্চ ফলনশীল জাতের বারি-২ রসুন চাষ। গত বছর প্রায় ১০০ একর জমিতে এ জাতের রসুন চাষ হয়। এ বছর কৃষি বিভাগের সহায়তায় চলতি মৌসুমে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ২৩টি প্রর্দশনী ক্ষেতসহ প্রায় ১৫০ একর জমিতে উচ্চ ফলনশীল এ জাতের রসুনের চাষ হয়েছে।
মাগুরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ৮৯০ হেক্টর জমিতে রসুন চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১৫০ হেক্টর, শ্রীপুরে ৫০০ হেক্টর, শালিখায় ৬০ হেক্টর ও মহম্মদপুর উপজেলায় ১৮০ হেক্টর জমিতে রসুন চাষ হয়েছে। যা থেকে ৬ হাজার ২৫৯ টন রসুন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বারি-২ রসুন চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে প্রদর্শনী ক্ষেত করার পাশাপাশি গত বছরের উৎপাদিত বীজ দিয়ে চলতি মৌসুমে জেলায় কৃষক পর্যায়ে উচ্চ ফলনশীল এ জাতের রসুন চাষ শুরু হয়েছে।
তাদের দেয়া তথ্য মতে, বারি-২ রসুন সাধারণ জাতের রসুনের তুনলনায় দেড় থেকে দুইগুণ বেশি উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন। যেখানে সাধারণ জাতের রসুন হেক্টর প্রতি উৎপাদন হয় ৫ থেকে ৬ টন। সেখানে বারি-২ জাতের রসুন হেক্টর প্রতি উৎপাদন হয় ১০ থেকে ১২ টন। রসুন মুলত শীতকালীন ফসল। শীত যত বেশি পড়ে এর ফলনও তত ভালো হয়। সাধারণত নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ রসুন লাগানোর উপযুক্ত সময়। উচ্চ ফলনশীল বারি-২ রসুন উঠতে সময় লাগে ১৪০ দিন। স্থানীয় যাতে সময় লাগে ১৫০ দিন।
বর্তমানে আমাদের দেশে রসুনের চাহিদা রয়েছে ৯০ হাজার টন। সেখানে উপাদন হয় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টন। বাকি ৩০ থেকে ৪০ হাজার টন বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়। রসুনের এই ঘাটতি মোকাবেলা করতে স্থানীয় জাতের পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের বারি-২ জাতের রসুন চাষে উদ্বুদ্ধ করছে কৃষি বিভাগ।
বারি-২ রসুন স্বাদে ভালো, দেখতে দেশী রসুনের চেয়ে আকর্ষণীয় এবং সংরক্ষণ ক্ষমতা বেশি। একারণে বারি-২ জাতের রসুন চাষে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের অধুনিক চাষ পদ্ধতিসহ বিভিন্ন দিক নিদের্শনা দিচ্ছেন তারা।
মাগুরা সদর উপজেলার সাচনী গ্রামের কৃষক ফিরোজ হোসেন ও আঠারখাদা গ্রামের নাজমুল বিশ্বাস কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় ৪০ শতক জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের বারি-২ রসুনের প্রদর্শনী ক্ষেত করেছেন। যা থেকে উভয় কৃষক প্রায় ৩০ মণ ফলন পাবেন বলে আশা করছেন।
মাগুরা আঞ্চলিক সমলা গবেষণা কেন্দ্রের উর্দ্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, দেশে রসুনের ঘাটতি মেটাতে উচ্চ ফলনশীল জাতের বারি-২ জাতের রসুন উদ্ভাবন করা হয়েছে। এটি একটি উচ্চ মূল্যের অর্থকারি ফসল। যার রয়েছে অনেক ভেজষ ঔষধিগুণ। বারি-২ রসুন চাষ করে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি দেশে রসুনের ঘাটতি মোকাবেলায় ব্যাপক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলে আমার বিশ্বাস। এ জন্য উচ্চ ফলনশীল জাতের বারি-২ রসুন চাষ করে কৃষকরা যাতে ন্যায্যমূল্য পায় সে দিকটাও খেয়াল রাখতে হবে।
মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোখলেছুর রহমান জানান, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ উচ্চ ফলনশীল বারি-২ রসুন চাষে কৃষকদের ব্যাপকভাবে উদ্বুদ্ধ করছে। ইতোমধ্যে এই জাতের রসুনের চাষ কৃষকরা শুরু করেছে। বর্তমানে আবহাওয়া অনুকুল থাকায় জেলায় রসুনের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন তিনি।