Thursday, February 27, 2014

আমের মুকুলের মৌ মৌ গন্ধে মুখরিত রাজশাহী, বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা

রাজশাহী: আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সুমিষ্ট আমের রাজধানী বলে খ্যাত রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম বাগানগুলোতে ব্যাপক পরিমাণে মুকুল এসেছে। এবার আমের বাম্পার ফলনের আশা করছেন আম বাগানের মালিকেরা। 

মুকুলের মৌ মৌ গন্ধে এখন মুখরিত জেলার আমবাগানগুলো। আমচাষীরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বাগান পরিচর্যার কাজে। সব কিছু অনুকূলে থাকলে এই দুই জেলায় এবার প্রায় তিন লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের আশা করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। 

রাস্তার দু’ধারে সারি সারি আমগাছ ও বাহারি নানা জাতের আমের কথা এলেই চলে আসে সীমান্তবর্তী জেলা দু’টির নাম। দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে আম চাষে জমির পরিমাণ। এক সময়ের রুক্ষ লাল মাটির বরেন্দ্র অঞ্চলেও আম চাষে ঘটেছে নীরব বিপ্লব। 

গত কয়েক বছরে বরেন্দ্র অঞ্চলের উঁচু-নিচু জমিতে গড়ে উঠেছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার আম বাগান। তাই চলতি মৌসুমে এই দুটি জেলায় আম বাগানের জমির পরিমাণ বৃদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ৮১৬ হেক্টরে। এ বছর আম গাছের সংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ। অথচ গত আম মৌসুমে আম বাগানের জমির পরিমাণ ছিল এর চেয়ে কিছুটা কম। 

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, প্রায় আড়াইশ’ জাতের আম চাষ হয় এই দুই জেলায়। এর মধ্যে সুস্বাদু ও দেখতে বাহারি  ও স্বাদে ভালো ক্ষিরসাপাত, ল্যাংড়া, বোম্বাই, গোপালভোগ, হিমসাগর, ফজলী, আম্রপালি, আশ্বিনা, ক্ষুদি খিরসা, বৃন্দাবনী, লক্ষণভোগ, কালীভোগ, মোহন ভোগ জাতের আমই চাষ হচ্ছে বেশি। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নুরুল আমিন জানান, সাধারণত এক বছর আম উৎপাদন ভাল হলে পরের বছর ভালো হয় না। তাই আম ভালো হওয়ার বছরকে অন ইয়ার ও পরের বছরকে আম উৎপাদনের অফ-ইয়ার হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে অভিহিত করে আসছিলো কৃষি বিভাগ। সেই হিসেবে এবার আম উৎপাদনের অন ইয়ার। 
তিনি বলেন, তাপমাত্রা স্বাভাবিক ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাগানগুলোতে ধারণার থেকেও অনেক বেশি মুকুল এসেছে। 

গত কয়েকদিনে, জেলার চারঘাট, বাঘা, পবা এবং দুর্গাপুর উপজেলার বেশ কিছু এলাকা এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার মহারাজপুর, কালীনগর, বালিয়াডাঙ্গা, মহিপুর, গোবরাতলা ও শিবগঞ্জ উপজেলার রানীহটি, কানসাট, কালুপুর এলাকা ঘুরে সিংহভাগ গাছে ব্যাপক মুকুল আসার দৃশ্য লক্ষ্য করা গেছে। 

কৃষকরা এখন ব্যস্ত বাগান পরিচর্যার কাজে। বিভিন্ন রোগ বালাই ও পোকার আক্রমণ থেকে বাগান রক্ষা করতে তারা গাছে গাছে  ¯েপ্র  করছেন ছত্রাকনাশক ও কীটনাশক। 

চারঘাট উপজেলার নন্দনগাছি গ্রামের আমচাষী রেজাউল করিম জানান, এবার প্রতিটি বাগানে অপ্রত্যাশিত পরিমাণে মুকুল এসেছে। যে পরিমাণে মুকুল এসেছে তা থেকে ভালো উৎপাদন পেতে চাষীরা এখন বাগান পরিচর্যার কাজ করছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার হুজরাপুর এলাকার আমচাষী সাইদুর রহমানও বললেন একই কথা। তিনি আশা করছেন এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের ভালো ফলন হবে। 

আম বাগানগুলোয় ব্যাপক মুকুল আসার বিষয়টি স্বীকার করে তা রোগ বালাই থেকে রক্ষা করতে কৃষকদের সঠিক সময়ে সহনীয় মাত্রায় ছত্রাকনাশক স্প্রে ও সেচ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, কৃষকরা একটু সচেতন হয়ে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সহনীয় মাত্রায় ছত্রাকনাশক ও কীটনাশক ব্যবহার করলে আম উৎপাদন অনেক বেড়ে যাবে। তবে তিনি বলেন, গাছে মুকুল আসার আগেই যেমন ¯েপ্র করার প্রয়োজন নেই তেমনি মুকুল ফোটা অবস্থায় কোনোভাবেই স্প্রে করা ঠিক নয়। কারণ এ সময় প্রচুর পরিমাণ উপকারী পোকা আমবাগানে আসে এবং পরাগায়নে সহযোগীতা করে। তাই সঠিকভাবে দুইবার ¯েপ্র দিতে পারলে প্রচুর পরিমাণ আম টিকে থাকবে।

তাছাড়াও গাছে সময়মত সার, পানি সেচ, পোকা-মাকড় ও রোগবালাই দমন এবং অন্য যত্ন পরিচর্যার মাধ্যমে আমের ফলন বাড়ানো সম্ভব, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তিনি ছত্রাকনাশক ও কীটনাশক ব্যবহারের ক্ষেত্রে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ নেয়ার জন্য আমচাষীদের অনুরোধ করেছেন।

অন্যদিকে স্থানীয় ফল গবেষণা কেন্দ্রের উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলিম উদ্দীন জানান, সঠিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আম চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি বিভাগ কাজ করছে। তিনি বলেন, আমচাষের বৈজ্ঞানিক কলাকৌশলগুলো চাষীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে দলীয় সভা, উঠোন বেঠক ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষকদের সহায়তা করা হচ্ছে। তিনি আরো জানান, চলতি আম মৌসুমের শুরু থেকে আবহাওয়া পুরোপুরি অনুকূলে থাকায় এবার এখন পর্যন্ত ৮৫ শতাংশ গাছ মুকুলিত হয়েছে।  আগামী ১০/১২ দিনের মধ্যে আরো ১৫ শতাংশ গাছ মুকুলিত হবে বলে তিনি আশা করছেন। সব কিছু ঠিক থাকলে এবার এই দুই জেলায় ৩ লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদিত হবে- এমন ধারণা করছেন তিনি।

Wednesday, February 26, 2014

লালমনিরহাটে প্রথমবারের মতো সূর্যমুখী ফুলের বাণিজ্যিক চাষ

লালমনিরহাট: লালমনিরহাট শহরের অদূরে ফুলগাছ গ্রামে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করে প্রায় শতাধিক কৃষক পরিবার সফল হয়েছে। এ গ্রামে সূর্যমুখীর চাষ প্রথমবারের মতো শুরু হয়েছে। এ গ্রামে ফুল চাষে সফলতা দেখে গোটা জেলায় সূর্যমুখী চাষের ব্যাপকভাবে সাড়া জাগিয়েছে। 

আর সেই গ্রামটির নাম ফুলগাছ। লালমনিরহাট জেলা সদরের অদূরে গ্রামটি। জেলা শহর থেকে ৪-৫ কিলোমিটার দূরে এবং মোগলহাট ইউনিয়নের ধরলা ও রত্নাই নদী পাড়ে ফুলগাছ গ্রাম। কিভাবে গ্রামটির নাম ফুলগাছ হয়েছে তা কেউ বলতে পারে না। তবে ব্রিটিশ আমলে শাল ও সেগুন গাছের বাগান ছিল মোগলহাটে। সেই শাল ও সেগুনের ফুলের নামে নাম হয়েছিল ফুলগাছ। মোগলহাট রেল স্টেশনে কিছুদিন আগেও কয়েকশ’ বছরের পুরনো বিশাল বিশাল সেগুন গাছ ছিল।

লালমনিরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, লালমনিরহাট জেলায় সরকারি বেসরকারি ও এনজিওদের মাধ্যমে প্রচলিত কৃষি শস্যের বাইরে নতুন নতুন লাভজনক ফসল চাষে কৃষককে প্রেরণা যোগাতে মাঠ পর্যায়ে কাজ চলছে। বিশেষ করে ধরলা, তিস্তা, স্বর্ণমতি, বুড়ি তিস্তা, দূধকমল ও রতœাই নদীর চরাঞ্চলের বালুতে কিভাবে কৃষি ফসল ফলানো যায় এবং কিভাবে চরের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় এ নিয়ে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। 
এছাড়া মাঠ পর্যায়ে দু’ফসলি জমিতে কিভাবে বছরে ৩টি অর্থকারী কৃষিশস্য চাষ করা যায় তা নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। সফলতাও এসেছে। চরের ধূ-ধূ বালু মাটিতে বিশেষ পদ্ধতিতে সবজি চাষ, মিষ্টি কুমড়া চাষ, আলু চাষ, স্ট্রবেরী ফল চাষ ও নীল চাষ ইত্যাদি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এখন আর চরের বালু জমিও ফেলে রাখা হয় না। প্রতিটি চর এখন একেকটি অর্থকারী ফসল চাষের জোনে পরিণত হয়েছে। 

প্রচলিত ফসলের বাইরে বছরে দু’ফসলই জমিতে ৩টি অর্থকারী ফসল আবাদের অংশ হিসেবে এই প্রথমবারের মত লালমনিরহাটে ফুলগাছ গ্রামে সূর্যমুখী ফুলের বাণিজ্যিকভাবে ফসল হিসেবে চাষ করা হয়েছে, যা ব্র্যাকের কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচির আলোকে সূর্যমুখী ফুল চাষের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।

কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচির ব্র্যাকের সদর উপজেলা ব্যবস্থাপক মো. নূর আলম জানান, সূর্যমূখী ১টি অর্থকারী কৃষি ফসল। মূলত প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে সূর্যমূখীর চাষ করা হচ্ছে। সূর্যমূখী ফুলের দানা থেকে ভোজ্যতৈল উৎপাদন করা হবে, যা কোলেস্টেরল মুক্ত। এছাড়াও শর্ষে বাটার মত করে সূর্যমুখী ফুলের দানা খাওয়া যায়। গ্রামের মানুষের খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনবে এই সূর্যমুখী ফল চাষ। 

সূর্যমুখী ফুল ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে দু’জন কৃষক পরিচর্যা করছেন। তারা হলেন, আজগর আলী (৫০) ও নুর বক্স (৪৮)। নুর বক্সের এই ব্লকে ৮১ শতাংশ জমি রয়েছে। এই দু’জন কৃষক জানান, সূর্যমূখী ফুল চাষের আনন্দেই আলাদা। মনের আনন্দে এই ফসল চাষ করা যায়। ফুল উঠার পরে হাইব্রিড সাথী ধান এই জমিতে চাষ করা হবে। এক বিঘা মাটিতে সূর্যমূখী চাষে খরচ পড়ে প্রায় ৩ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় ৮ মণ সূর্যমুখী ফুলের দানা উৎপাদন হবে। বাজারে এক মণ সূর্যমুখী ফুলের দানার দাম ১৫ শত টাকা। খরচ বাদে বিঘা প্রতি ৯ হাজার টাকা লাভ থাকে।

ব্র্যাকের লালমনিরহাট জোনাল অফিসের ব্যবস্থাপক ( কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচি) মিঃ বিপ্লব কুমার নাগ জানান, সূর্যমুখী ফুল সারা দেশে ব্র্যাকের অধীনে ১২ জেলায় ৫৩টি ব্লকের মাধ্যমে  চাষ হচ্ছে। লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলায় ৩২৪ একর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়েছে। ৬৬৩ জন উপকারভোগী কৃষক রয়েছে। ব্র্যাক এসব কৃষককে বীজ ও নগদ অর্থ অনুদান দিয়েছে। 

লালমনিরহাট জেলা সদরের ৩৩.৪৫ একর, আদিতমারী উপজেলায় ২৮ একর, কালীগঞ্জ উপজেলায় ৫২ একর ও হাতীবান্ধা উপজেলায় ৫২ একর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়েছে। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায় ৩০ একর, উলিপুর উপজেলায় ৩২ একর, চিলমারী উপজেলায় ৩০ একর  ও নাগেশ্বরী উপজেলায় ৬৬ একর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়েছে। সূর্যমুখী ফুল ৯০ দিনের ফসল। প্রথমবারের মত এই জেলায় চাষ শুরু হওয়ায় কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে ও হাতে-কলমে শিখাতে হয়েছে।

জেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল মজিদ জানান, ফুলগাছ গ্রামে সূর্যমুখী চাষ করে কৃষকরা গ্রামটির নামের স্বার্থকতা ফিরিয়ে এনেছে। সত্যিকার অর্থে, গ্রামটি এখন ফুলচাষের জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠেছে। প্রথমবারের মতই সূর্যমূখী ফুল চাষ করে কৃষক পরিবারগুলো ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছে। প্রতিদিন ফুলের ক্ষেতের সৌন্দর্য দেখতেও মানুষ শহর থেকে গ্রামটিতে ছুটে আসছে। সূর্যমুখী চাষ গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে।

Tuesday, February 25, 2014

শেরপুরে বিলুপ্তপ্রায় মাছ চাষে নতুন সম্ভাবনা

শেরপুর: জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া অনেক নদ-নদী নাব্যতা হারিয়ে ফেলছে। এসব কারণে দেশী জাতের মাছ বিলুপ্ত হতে চলেছে। তাই কীভাবে দেশী জাতের মাছের চাষ বাড়ানো যায় তা নিয়ে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানা গবেষণা এবং কার্যক্রম চলছে। এরই অংশ হিসেবে শেরপুর যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মৎস্য হ্যাচারিতে দেশী শিং মাছের সফল কৃত্রিম প্রজনন করা হয়েছে। এতে এ অঞ্চলে বিলুপ্তপ্রায় দেশী জাতের মাছ চাষে এক নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে।

শেরপুর যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে জেলার বেকার যুবদের তিন মাস মেয়াদী কৃষিবিষয়ক নানা প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এর মধ্যে মৎস্য  চাষ অন্যতম। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যুবরা জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করে স্বাবলম্বী হয়ে থাকে।

শেরপুর যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের হ্যাচারিটি একটি ক্ষুদ্রাকার ছোট মাছের হাচারী। নির্মাণ ও কারিগরি ত্র“টি এবং ব্র“ড ফিস তৈরীর জন্য বড় বড় পুকুর না থাকার পরও চলতি প্রজনন মৌসুমে এখানে দেশী শিং মাছের হ্যাচিং করতে সক্ষম হন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। ময়মনসিংহ থেকে ব্র“ড ফিস সংগ্রহ করে প্রশিক্ষণার্থীদের দেশী বিলুপ্তপ্রায় মাছের হ্যাচিং শেখানো হয়। গত দু’টি ব্যাচে এখানে দেশী শিং মাছের সফল কৃত্রিম প্রজনন সম্ভব হয়। হ্যাচারিতে কাজ করে প্রশিক্ষণার্থীরা প্রযুক্তিটি হাতে-কলমে শিখতে পেরেছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এসব হ্যাচারীতে স্থির পানির দেশী ছোট মাছ যেমনÑ মলা, গোলসা, পাবদা, কই, শিং, মাগুর ইত্যাদি মাছের প্রজনন করা সম্ভব। অল্প খরচেই ব্র“ড আকারের এমন হ্যাচারি স্থাপন ও পরিচালনা করা যায়। বেকার যুবক-যুবতী, ছেলে-মেয়ে এমনকি গ্রামীণ মহিলারাও পারিবারিক কাজের পাশাপাশি হ্যাচারিটি সহজেই চালাতে পারেন। মাত্র ৭০ হাজার টাকায় এ ধরনের একটি ব্র“ড হ্যাচারি স্থাপন করে প্রতি বছর ১৪/১৫ হাজার টাকা বিনিয়োগে বছরে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় করা সম্ভব।

যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রশিক্ষণার্থী ওসমান আলী, রহিমা খাতুন ও আব্দুর রহিম জানান, বাড়ীতেই এমন ক্ষুদ্র হ্যাচারি স্থাপন করে দেশীয় জাতের মাছ চাষ করা সম্ভব সে বিষয়টি আগে আমাদের জানা ছিলো না। এখানে হাতে-কলমে বিষয়টি শিখতে  পেরেছি। এতে আমরা দারুণ উৎসাহিত হয়েছি। সংসারের অন্যান্য কাজ করেও এটি পরিচালনা করা সম্ভব। বাড়ি ফিরে আমরা এ ধরনের ক্ষুদ্র আকারের হ্যাচারি স্থাপন করে নিজেদের ভাগ্য বদলের চেষ্টা করবো। 

শেরপুর যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ডেপুটি কো-অর্ডিনেটর সালাহ উদ্দিন আহম্মেদ জানান, সারাদেশে ৫৪টি জেলায় ৫৪টি যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু আছে। প্রতিটি কেন্দ্রে একটি করে মাছের হ্যাচারি  রয়েছে। কিন্তু নির্মাণ ও কারিগরি ত্র“টির কারণে এবং ব্র“ড ফিস তৈরীর জন্য বড় বড় পুকুর না থাকায় দক্ষ ও অভিজ্ঞ মৎস্য বিশেষজ্ঞ থাকার পরও বেশীর ভাগ হ্যাচারি চালু করা যাচ্ছে না। কিন্তু এত কিছুর পরও শেরপুরে ক্ষুদ্রাকার মাছের হ্যাচারিটি নিজেদের প্রচেষ্টা ও আন্তরিকতায় আমরা চালু করেছি। এতে প্রজনন মৌসুমে ময়মনসিংহের তারাকান্দা থেকে ব্র“ড ফিস সংগ্রহ করে শিং মাছের সফল কৃত্রিম প্রজনন সম্ভব হয়েছে। 

তিনি জানান, এ এলাকায় এ ধরনের ক্ষুদ্র হ্যাচারির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। গ্রামীণ মেয়েরাও পারিবারিক কাজের পাশাপাশি হ্যাচারিটি সহজেই পরিচালনা করতে পারবেন। এ জন্য আঞ্চলিক ব্র“ড ফিস ব্যাংক তৈরী করা হলে মাছ চাষে অনেক সাফল্য আসবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ভেবে দেখা উচিত বলেও তিনি মনে করেন।

বসত বাড়ির আঙিনায় ছোট মাছের হ্যাচারি স্থাপন করে রেণু পোনা উৎপাদন ও পালনের ব্যাপক সম্ভাবনার কথা বলেছেন মৎস্য কর্মকর্তারা। এ ব্যাপারে শেরপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফজলুর রহমান বলেন, এ প্রযুক্তি গ্রাম পর্যায়ে সম্প্রসারণ করা গেলে একদিকে যেমন আমিষের চাহিদা পূরণ সম্ভব হবে। অন্যদিকে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়াও সম্ভব হবে। 

Sunday, February 23, 2014

টাঙ্গাইলের মধুপুরে কিষানী মহিরন বেগমের কেঁচো বিপ্লব

টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার আউশনারা ইউনিয়নের দারিদ্র্যপীড়িত গ্রাম দক্ষিণ ইদিলপুর। এ গ্রামের বিত্তহীন কিষানী মহিরন বেগম (২৮) কেঁচো বিল্পব ঘটিয়ে দারিদ্র্য বিমোচনের পাশাপাশি সুনাম ও খ্যাতি কুড়িয়েছেন। অভাবী ঘরে জন্ম নেয়া মহিরন ছোটবেলায় পড়াশুনা করতে পারেননি। কিশোর বয়সে তার বিয়ে হয় গ্রামের দিন মজুর সুরুজ আলীর সাথে। কামলা খাটা সামান্য আয়ে খাওয়াপড়া জুটতো না। এর মধ্যে পর পর জন্ম নেয় ছয় সন্তান। অভাব-অনটন আর সন্তান-সন্ততীর ভারে ডুবে যেতে বসে ছোট্ট সংসার। 

এ অবস্থায় ২০০৯ সালে একটি বেসরকারি সংস্থার সাথে যুক্ত হয় মহিরন বেগম। সচেতনতা ও দক্ষতামূলক প্রশিক্ষণ গ্রহণ হাঁস-মুরগী ও গরু-ছাগল পালনের মাধ্যমে পথ চলা শুরু হয়। পরবর্তীতে সিবিএসডিপি এনজিওর কেঁচো সার উৎপাদন, ব্যবহার ও বাজারজাতকরণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেয় মহিরন। সংস্থাটি তাকে দু’টি চাড়ি ও ৫০টি কেঁচো দিয়ে ভার্মী কেঁচো চাষ শুরু করান। উৎপাদিত সার দিয়ে নিজের জমিতে সবজি চাষ করেন। 
রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ছাড়াই সবজি উৎপাদন দেখে সবাই হতবাক হয়ে যায়। মহিরন কেঁচো সার উৎপাদনের পরিধি বাড়ালে আয়ও দিন দিন বাড়তে থাকে। গতবার ৭০ মণ ভার্মি সার ২৮ হাজার টাকায় এবং প্রতিটি কেঁচো দুই টাকা দরে বিক্রি করে দুই হাজার টাকা রোজগার করেন। তার অভিজ্ঞতা ও সাফল্য দেখে সবাই অভিভূত হয়ে যায়। 

দেশের অন্যান্য জায়গায় কর্মরত বেসরকারি সংস্থা কেঁচো উৎপাদনে প্রশিক্ষক হিসাবে মহিরনকে নিয়ে যান। এ  থেকেও কিছু টাকা তিনি আয় করে থাকেন। মহিরন বেগমের বাড়ি এখন কেঁচো সারের কারখানা। সকাল-বিকাল নিজের সন্তানের মত কেঁচোকে যতœ করেন। বাড়ির আশপাশের খড়কুটো, সবুজ লতাপাতা, ঘরবাড়ি ঝাড়া ময়লা আবর্জনা, তরিতরকারি উচ্ছিষ্ট, গোবর, গবাদিপশু ও হাঁসমুরগীর বিষ্ঠা দিয়ে প্রিকম্পোষ্ট তৈরি করে কেঁচোকে খাওয়ায়। মহিরন বেগম এবার পঞ্চাশ-ষাট হাজার টাকা আয় করার আশা করছেন। কেঁচো চাষ করে অন্তত খাওয়াপড়ার দুশ্চিন্তাটুকু দূর করেছেন। এক ছেলেকে স্কুলে লেখাপড়াও করাচ্ছেন। 

মহিরনের দেখাদেখি গ্রামের আরো পঞ্চাশটি বিত্তহীন পরিবার কেঁচো সার তৈরির সাথে জড়িত হয়ে পড়েছে। ভার্মি কেঁচো সারের চাহিদা দিনদিন বেড়ে চলেছে। ধান ছাড়াও আদা, হলুদ, কচু, আনারস, কলা, শাক-সবাজ ও ফুলের বাগানসহ সব ধরনের গাছে এ সার প্রয়োগ করা যায়। অনেকে পুকুরে মাছের সুষম খাবার হিসাবেও এর ব্যবহার করছেন। এই সার কৃষি, পরিবেশ বান্ধব হওয়ায় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা রাখছে বলে কৃষিবিদদের অভিমত। 

১৯৪২ সালে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার ইদিলপুর গ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী গারোরা সর্ব প্রথম সুস্বাদু আনারস চাষ শুরু করে। পরবর্তীতে বাঙালী মহাজনরা আনারস চাষের সাথে জড়িত হওয়ায় এবং আনারসের আকার বড় করার জন্য মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার, ক্ষতিকর হরমোন ও কীটনাশক প্রয়োগ করায় কৃষি প্রাণবৈচিত্র্য ও ইকোসিস্টেম বিনষ্ট হচ্ছে। ফসলী জমি উর্বরতা হারাচ্ছে। উপকারি কীটপতঙ্গ ও প্রাণী বিলুপ্ত হচ্ছে। 

ক্ষতিকর হরমোন দিয়ে ফল পাকানোয় ভোক্তারা ফল খেয়ে জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। সিবিএসডিপি এ পরিস্থিতিতে পরিবেশ বান্ধব কৃষি বিষয়ে সচেতনতা কার্যক্রম হাতে নেয়। এটি সিবিএসডিপির সবচেয়ে সফল প্রকল্প। আর কিষানী মহিরন বেগম এখন মডেল। 

মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. হযরত আলী জানান, মহিরনের সাফল্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা দিয়েছে মধুপুর উপজেলায়। পরিবেশ বান্ধব কৃষির জন্য কেঁচো সার খুবই ফলপ্রদ।

Saturday, February 22, 2014

মাগুরায় উচ্চ ফলনশীল জাতের মসুর ডালের চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে কৃষকরা

মাগুরা: মাগুরায় উচ্চ ফলনশীল জাতের মসুর ডাল চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। চলতি রবি মৌসুমে মোট চাষকৃত জমির মধ্যে ৮৫ শতাংশ জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের মসুর ডালের চাষ হয়েছে। মাত্র ১৫ শতাংশ জমিতে চাষ হয়েছে স্থানীয় জাতের মসুর ডাল। এ বছর জেলার চার উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অধিক জমিতে মসুর ডালের চাষ হয়েছে। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর মসুর ডালের চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১২ হাজার ৯৩ হেক্টর জমিতে। চাষ হয়েছে ১৫ হাজার ২৯০ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৩ হাজার ১৩৭ হেক্টর বেশি। এর মধ্যে প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের মসুর ডাল চাষ হয়েছে। চাষকৃত জমিতে থেকে ১৫ হাজার ৪৮০  মেট্টিক টন মসুর ডাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্য মতে, উচ্চ ফলনশীল জাতের মধ্যে জেলার কৃষকরা বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বারি- ৪, ৫ ও ৬ এবং বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বিনা-৩, ৪ জাতের উচ্চ ফলনশীল মসুর ডালের চাষ করেছে। উচ্চ ফলনশীল এসব জাত থেকে স্থানীয় জাতের তুলনায় দেড় থেকে দুই গুণের 

বেশি মসুর ডাল উৎপাদন হয়ে থাকে। স্থানীয় জাতে যেখানে মুসর ডাল উৎপাদন হয় একর প্রতি ৫ থেকে ৬ মণ। সেখানে বারি ও বিনা উচ্চ ফলনশীল জাতে মসুর ডাল একর প্রতি উৎপাদন হয় ১২ থেকে ১৫ মণ। এ ছাড়া বারি ও বিনা মসুর পরিবর্তিত আবহাওয়ায় চাষ করা যায়। কুয়াশা ও রোদের তাপমাত্রা বেড়ে গেলেও এর ফুল নষ্ট না হয়ে ফলন ঠিক থাকে।  

কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্য মতে, দেশে প্রতিবছর ৩০ লাখ মেট্টিকটন মসুর ডালের চাহিদা রয়েছে। এর বিপরীতে উৎপাদন হয় ৫ থেকে ৬ মেট্রিক টন মসুর ডাল। মসুর ডালের এ ঘাটতি  মেটাতে প্রতি বছর বিদেশ থেকে ডাল আমদানী করতে হয়। ব্যাপকভাবে উচ্চ ফলনশীল জাতের এ ডালের চাষ ছড়িয়ে দিতে এবং আমদানী নির্ভরতা কমাতে উচ্চ ফলনশীল মসুর ডালের চাষে কৃষকদের ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের বিভিন্ন সহায়তা দেয়ার পাশাপাশি ডাল, তৈলসহ বিভিন্ন ধানের উন্নত মানের ফসলের বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্পের আওতায় মাঠ দিবস কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। জেলায় এ বছর মসুর ডালের বাম্পার ফলনের পাশাপাশি আগমীতে ডাল উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে সেই সাথে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা সম্ভব হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ। চলতি মৌসুমে কৃষি বিভাগের সহায়তায় অধিক জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের মসুর ডাল চাষ হওয়ার ডালের ভালো ফলন পাবেন বলে আশা করছেন কৃষকরাও।

সদর উপজেলার সাচানী গ্রামের কৃষক মতিয়ার রহমান  বলেন, ‘আমি অন্যান্য বছর স্থানীয় জাতের মসুর ডাল চাষ করে একরে ৪ থেকে ৫ মণ ফলন পেতাম। এ বছর স্থানীয় কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় ১ একর জমিতে বারি-৫ ও ৬ জাতের মসুর ডাল প্রর্দশনী ক্ষেত  করেছেন। যা থেকে আমি কমপক্ষে ১৫ মণ ডাল পাব বলে আশা করছি। যা সাধারণ জাতের তুলনায় প্রায় ৩ গুণ।’

পথরা গ্রামের কৃষক জিল্লুর রহমান বলেন- ‘ফলন কম হওয়ায় আগে আমরা শুধু পরিবারের প্রয়োজন মেটাতে ডাল চাষ করতাম। বর্তমানে উন্নত জাতের ডাল চাষ বেশ লাভজনক হওয়ায় আমরা অধিক জমিতে মসুর ডাল চাষ করছি। দেড় একর জমিতে যেভাবে ফলন এসেছে তাতে তিনি প্রায় ২৩ মন মসুর ডাল পাবেন বলে ধারণা করছেন।’ 

মাগুরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোখলেছুর রহমান জানান- সাধারণ জাতের মসুর ডাল যেখানে একরে উৎপাদন হয় ৫ থেকে ৬ মণ। সেখানে বারি ও বীনা- জাতের উচ্চ ফলনশীল ডালের উৎপাদন হয় ১২ থেকে ১৫ মণ। এর পাশাপাশি উন্নত প্রযুক্তিতে ধানের মত লাইন সুইং পদ্ধতিতে মসুর আবাদ করলে এ উৎপাদন বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় একরে ২০ মণের উপরে। 

দেশে ডালের চাহিদার কথা মাথায় রেখে কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে জেলার অধিকাংশ জমিতে উন্নত জাতের মসুর ডাল চাষ হয়েছে। এ জন্যে কৃষকদের মাঝে কৃষি বিভাগ কর্তৃক উন্নতজাতের বীজ সরবরাহের পাশাপশি প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়া হয়েছে। উন্নত জাতের এ মসুর ডাল চাষ বাড়াতে বর্তমানে কৃষক মাঠ দিবসের মাধ্যমে কৃষকদের বীজ সংরক্ষণের জন্য পাত্রসহ প্রযুক্তিগত জ্ঞান দেয়া হচ্ছে। এতে করে কৃষকরা উন্নত জাতের এ মসুর ডাল চাষে আরও উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।

Sunday, February 16, 2014

মানিকগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী হাজারী গুড়ের এখনো অনেক চাহিদা

মানিকগঞ্জ: যে গুড় দিয়ে একসময় অফিসের বস, রাজনৈতিক নেতৃবর্গ এবং নিকট আত্মীয়দের খুশি করা হতো সেই ঐতিহ্যবাহী ঝিটকার হাজারী গুড় দীর্ঘ সময়কাল পেরিয়ে আজো তার অবস্থান ধরে রেখেছে। 

যদিও ভোজন রসিকরা এর মান নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলছেন তবুও স্বাদে গন্ধে ঝিটকার হাজারী গুড় এখনও সারা বাংলায় তুলনাবিহীন এবং এর চাহিদা অনেক। 

প্রায় ১৫০ বছর আগের হাজারী গুড়ের সুনাম আজো টিকিয়ে রেখেছে এদেশের একমাত্র উৎপাদনকারী মানিকগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী হাজারী পরিবারসহ শতাধিক গাছী পরিবার। মানিকগঞ্জের দুটি দ্রব্যের সুনাম এক সময় এশিয়া থেকে ইউরোপ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। সে দুটি দ্রব্য হচ্ছে তিল্লির দই ও অপরটি ঝিটকার ঐতিহ্যবাহী হাজারী গুড়। এই গুড়ের সুনাম এক সময় এদেশ থেকে এশিয়া, ইউরোপ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। এমনকি ইংল্যান্ডের রানীকেও এই গুড় উপহার হিসেবে পাঠানো হয়েছিল। 

বৃহত্তর ঢাকার পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা গুলোতে শুধু খেজুরের চাষ হয়ে থাকে। এসব খেজুর গাছের দ্ইু-তৃতীয়াংশই রয়েছে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায়। সেখানে প্রতি একরে ১৫ টি খেজুর গাছ দেখা যায়। হরিরামপুরের ঝিটকায় খেজুর গুড় শিল্পের প্রধান কেন্দ্র। গুণে মানে, স্বাদে গন্ধে এই গুড়ের বিস্তর সুনাম রয়েছে। 

মানিকগঞ্জে শীত মৌসুমে খেজুর গাছের অনেকটা গুরুত্ব বেড়ে যায়। খেজুরের রস-গুড় উৎপাদনে পেশাদার গাছি, কুমার, কামার, জ্বালানী ব্যবসায়ী, পরিবহনের জন্য ট্র্াক মালিক, চালক, ভ্যান চালক, শ্রমিক আরতদারসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ সংয্ক্তু হয়। এই গুড় প্রথম আবিস্কার করেন মিনহাজউদ্দিন হাজারী। তার নামেই এই গুড়ের নামকরণ করা হয়েছে ‘হাজারী গুড়’। এ গুড়ের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, দু’হাতে গুড়ো করে ফুঁ দিলে তা ছাতুর মত উড়ে যায়। 

দাদার আমল থেকে গুড় উৎপাদন করে আসা গাছী আজমত আলি হাজারী (৬৫) জানান, বেশি শীত অর্থাৎ ১৫ থেকে ২০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এই গুড় উৎপাদনের নির্ভরযোগ্য সময়। আগের দিন বিকেলে গাছ কেটে হাড়ি বেঁধে দেয়া হয়। পরদিন ভোরে (সূর্য উঠার আগে) রস সংগ্রহ করে পরিষ্কার করে ছেঁকে মাটির তৈরী (জালা) পাত্রে চুলায় (বাইনে) জ্বালিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরী করা হয় হাজারী গুড়। এই পদ্ধতি এখন আর হাজারী পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। অনেক গাছির মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। এই গুড় দেখতে যেমনি সুন্দর খেতেও তেমনি সুস্বাদু। মিষ্টি ও টল টলে রস ছাড়া হাজারী গুড় হয় না। প্রতিকেজি গুড় ৬শ’ টাকা থেকে হাজার টাকা পর্যন্তও বিক্রি হয় বলে তিনি জানান।

তিনি আরো জানান, বাজারে এক ধরনের হাজারী সদৃশ্য গুড় পাওয়া গেলেও মৌলিক ভাবে তার ব্যবধান রয়েছে। এক শ্রেণীর অসাধু গুড় তৈরীকারক সাদা রং-এর গুড়ের উপর নাম খোদাই করে বাজারজাত করে সাধারণ ক্রেতাদের ধোঁকা দিয়ে থাকে। হাজারী পরিবার এ ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নকল গুড় প্রস্তুতকারদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। সেই সাথে ট্রেড মার্ক ভঙ্গকারীদের আইনের আওতায় নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।

মানিকগঞ্জের স্বনামধন্য ঐতিহ্যবাহী খেজুরের রস গুড় প্রায় বিলীন হতে চলেছে। প্রতি বছর হাজার হাজার গাছ কেটে ইট ভাটায় লাকরি হিসেবে পুড়িয়ে এই গুড় শিল্পকে ধ্বংস করা হচ্ছে। সরকারিভাবে উদ্যোগ নিয়ে এই শিল্পকে রক্ষা করা দরকার। 

Sunday, February 9, 2014

ঠাকুরগাঁওয়ে বায়োগ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে

ঠাকুরগাঁও: বিদ্যুতের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। তাই তার উৎপাদনের পদ্ধতিও হচ্ছে ভিন্ন। এমনকি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এর উৎপাদন হচ্ছে ভিন্ন প্রক্রিয়ায়। যেমন- ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার একটি মুরগির খামারে বায়োগ্যাস দিয়ে রান্নাবান্নার কাজ ছাড়াও জেনারেটর চালিয়ে উৎপাদন করা হচ্ছে বিদ্যুৎ। আর উৎপাদিত বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হচ্ছে খামারের বিভিন্ন কাজে। শুধু তাই নয়, খামারের দু’পাশের দুটি পাড়াতে বায়োগ্যাস সরবরাহ করারও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের দক্ষিণ বঠিনা গ্রামে ১০ একর জমির উপর স্থাপিত ‘নিশান্তপুর পোল্ট্রি এ্যান্ড ফিডস লিমিটেড’ নামে একটি আধুনিক মুরগির খামার রয়েছে। শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে এই খামারে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মুরগির বিষ্ঠা দিয়ে এখানে উৎপাদন হচ্ছে বায়োগ্যাস। ১০ হাজার ৭৫০ ঘনফুট আয়তন বিশিষ্ট রয়েছে দু’টি বায়োগ্যাস প্লান্ট।

মুরগির খামার ও বায়োগ্যাস প¬্যান্টের উদ্যোক্তা জনার্দন চক্রবর্তী ও শিবলী ইসলাম জানান, আপাতত ১০ কিলোওয়াট (১০,০০০ ওয়াট) বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। বায়োগ্যাস দিয়ে চালানো হচ্ছে মুরগির খামারের ৬টি ব্র“ডার, খামারের শ্রমিকদের ৪টি শেডে চলছে ৩ বেলা রান্নার কাজ। সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব এই মুরগির খামারে কাজ করছে অর্ধশত শ্রমিক।

উদ্যোক্তারা আরো জানান, প্রতিদিন এখানে ৩০ হাজার ডিম উৎপাদন হচ্ছে। ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলার পাইকাররা এসে ডিম নিয়ে যায়। এখানে পৃথকভাবে স্থাপিত ফিড মিলে উৎপাদন হচ্ছে প্রতিদিন আড়াই টন করে মুরগির খাবার। তাছাড়া ৮টি পুকুরে চাষ করা হচ্ছে নানা জাতের মাছ। প্রতি মাসে এক টন করে মাছ ছাড়াও উৎপাদন হচ্ছে ১৬০০ কেজি করে মাছের পোনা।

তারা আরো জানান, শিগগির দুটি গ্রামের শতাধিক পরিবারের মধ্যে বায়োগ্যাস সংযোগ দেবেন। এই গ্যাসের সাহায্যে গ্রামবাসী রান্নাবান্নার কাজ করতে পারবেন, জ্বালাতে পারবেন বাতি। সরকারের বিদ্যুতের উপর গ্রামবাসীর নির্ভরতা কমবে।

ইতোমধ্যে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ও সদর ইউএনও প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন। তারা এ প্রকল্পের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, এ ধরনের উদ্যোগ নিলে বর্তমান সরকার তাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করবে। কেননা, এ ধরনের উদ্যোগে দেশের ডিমের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি আবাসিক জ্বালানি ও বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।

Thursday, February 6, 2014

সৌরবিদ্যুতে চলছে সেচযন্ত্র

যশোর : যশোরের গ্রামে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করে জমিতে সেচ দেওয়া যাচ্ছে অনায়াসে। এ বিদ্যুতে চলছে দশ হর্সপাওয়ার শক্তিসম্পন্ন বড় আকারের পাম্পও। এই পাম্পে সারাবছর নিরবচ্ছিন্নভাবে সেচ সুবিধা দেওয়া যায় ৫০ থেকে ১০০ বিঘা জমিতে।

এতদিন ধারণা ছিল, সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাড়িতে একটি-দুটি বাতি জ্বালানো বা পাখা চালানো সম্ভব। কিন্তু পরিস্থিতি যে বদলে গেছে তার প্রমাণ যশোরের চৌগাছা উপজেলার সাঞ্চাডাঙ্গা গ্রাম। এ গ্রামে আর্স বাংলাদেশ নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নেওয়া প্রকল্পে সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে সেচযন্ত্র চালানো হচ্ছে।

জানা গেছে, যশোরে এ ধরনের উদ্যোগ এটিই প্রথম। এর আগে ২০০৯ সালে ঢাকার অদূরে একটি গ্রামে পরীক্ষামূলকভাবে (পাইলট) এই প্রকল্প চালু হয়। পাইলট প্রকল্প সফল হওয়ায় পর্যায়ক্রমে তা দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। চৌগাছার সাঞ্চাডাঙ্গায় সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প চালু হওয়ায় চলতি মৌসুমে ওই গ্রামের কয়েক হাজার চাষী তাদের ডিজেলচালিত শ্যালো মেশিন বন্ধ করে দিয়েছেন। নিজেদের ফসলের মাঠ এনেছেন সৌরবিদ্যুতের আওতায়।

আর্স বাংলাদেশ প্রাথমিকভাবে সাঞ্চাডাঙ্গা গ্রামে সাতটি সোলার প্যানেল স্থাপন করেছে। প্রতিটি প্যানেল স্থাপনে গড়ে খরচ হয়েছে প্রায় ২৯ লাখ টাকা। সরকারি সংস্থা ইনফ্রাস্ট্রাচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লি. (ইডকল) এই প্রকল্পে অর্থ সহায়তা দিচ্ছে। আর কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে ইলেকট্রো সোলার পাওয়ার লি. ও রহিম আফরোজ রিনিউএবল অ্যানার্জি লি.।

আর্স বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক মো. শামছুল আলম জানান, সৌরবিদ্যুতের সুবিধা পাওয়ায় গ্রামের কৃষকদের বিঘাপ্রতি সেচ খরচ বছরে দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকা কমবে। সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করা বিদ্যুৎ এবং বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে বিদেশ থেকে আমদানি করা ডিজেলের ওপর নির্ভরশীলতাও হ্রাস পাবে। পরিবেশবান্ধব ও আর্থিকভাবে সাশ্রয়ী হওয়ায় কৃষকরা সৌরবিদ্যুতের সুবিধা নিতে দ্রুত এগিয়ে এসেছে।

ইলেকট্রো সোলার পাওয়ার লিমিটেডের প্রকৌশলী মুশফিকুর রহমান জানান, এই প্রকল্পে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। মাটির গভীরে স্থাপন করা হয়েছে পাম্পগুলো। কিন্তু ভূস্তরের ওপর থেকে ম্যানুয়ালি অথবা স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। প্রতিটি পাম্পের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা দিনে ১৩ দশমিক ২৬ কিলোওয়াট। পানি উত্তোলন ক্ষমতা দিনে গড়ে সাড়ে সাত লাখ লিটার, যা দিয়ে ৫০ থেকে ১০০ বিঘা জমিতে সেচসুবিধা দেওয়া সম্ভব। আপৎকালীন সময়ে (মেঘলা আবহাওয়া বা অন্য কোনো কারণে) যাতে কৃষকের জমির ফসল পানির অভাবে শুকিয়ে না যায়, তার জন্য সোলার প্যানেলগুলোতে প্যারালালভাবে স্থাপন করা হয়েছে ডিজেলচালিত শ্যালোও। এক প্রশ্নের জবাবে প্রকৌশলী মুশফিকুর জানান, ভূগর্ভ ছাড়াও ইচ্ছা করলে এই পাম্পের মাধ্যমে ভূউপরিস্থ পানিও ফসলের ক্ষেতে সরবরাহ করা যাবে, যা হবে আরও পরিবেশ অনুকূল।উদ্যোক্তারা বলছেন, সাঞ্চাডাঙ্গার মাঠে বছরে দুটি করে ফসল উৎপন্ন হয়। এখন মাঠটি সৌরবিদ্যুতের আওতায় আসায় চাষীরা ইচ্ছা করলে বছরে তিনটি ফসলও উৎপন্ন করতে পারবেন। ফলে উৎপাদন বেড়ে যাবে অনেক।

কথা হয় সাঞ্চাডাঙ্গা গ্রামের ক্ষুদ্র কৃষক জোনাব আলীর সঙ্গে। তিনি জানান, ডিজেলচালিত শ্যালোমেশিন দিয়ে তিনি এ যাবৎ চাষাবাদ করে এসেছেন। শ্যালোমেশিন মালিকের কাছ থেকে সেচ সুবিধা নিতে তাকে বছরে সাড়ে পাঁচ হাজার থেকে সাড়ে ছয় হাজার টাকা করে দিতে হয়। এবার তার জমি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় আসায় খরচ কমবে বিঘাপ্রতি কমপক্ষে এক হাজার টাকা।

একই গ্রামের চাষী কওসার আলী বলেন, ‘শুনিছি সৌরবিদ্যুতে খরচ অনেক কম। কিন্তু আমাদের কাছ থেকে বিঘাপ্রতি চার হাজার টাকা করে নিয়া হবে। খরচ আরেকটু কমলি ভালো হতো।

এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আর্স বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক শামছুল আলম বলেন, বিঘাপ্রতি চার হাজার টাকা করে নেওয়ার বিষয়টি এখনও আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে। উদ্যোক্তা ও কৃষকদের সমঝোতার ভিত্তিতে টাকার অঙ্ক চূড়ান্ত হবে। সেক্ষেত্রে খরচ আরও কমতে পারে।

সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে সেচ কার্যক্রম পরিদর্শন করতে মঙ্গলবার যশোরের জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাফিজুর রহমান চৌগাছার সাঞ্চাডাঙ্গা গ্রামে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমে এই প্রকল্পটি স্থাপন করা হয়েছে। প্রকল্পটি চালু হওয়ায় সাঞ্চাডাঙ্গার চাষীদের ফসল উৎপাদন খরচ কমে আসবে। ফলে তারা লাভবান হবে। তিনি বলেন, যশোর, ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় আগামী তিন বছরের মধ্যে সৌরবিদ্যুৎ চালিত এ ধরনের ৫০টি পাম্প স্থাপন করা হবে। যত দ্রুত এ ধরনের প্রকল্প ছড়িয়ে দেওয়া যাবে, আর্থিক ও পরিবেশগতভাবে তত বেশি আমরা লাভবান হবো।

উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সঠিক সময়ে চাষীদের যাতে পানি পেতে সমস্যা না হয় এবং অন্যান্য জটিলতা দূর করতে প্রথম থেকেই তৎপর তারা। প্রতিটি পাম্পের আওতাধীন কৃষকদের নিয়ে পাঁচ সদস্যের পানি ব্যবস্থাপনা ও সেচমূল্য আদায় তদারকি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সঠিক নিয়মে সেচের পানি ব্যবহার করে অধিক ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যে নির্দিষ্ট সময় অন্তর সুবিধাভোগীদের সঙ্গে বৈঠক করা হবে।

সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে সেচ সুবিধা পাওয়ায় সাঞ্চাডাঙ্গার অধিকাংশ কৃষক খুশি হলেও কারো কারো কিছু সমালোচনাও আছে। সাঞ্চাডাঙ্গার মাঠে কৃষকদের মালিকানাধীন ডিজেলচালিত কয়েকশত শ্যালোমেশিন রয়েছে। এসব মেশিন এখন কৃষকরা কী করবেন তা নিয়ে অনেকেই চিন্তিত। এ ছাড়া পাশের মাঠে পল্লী বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে যে কৃষকরা সেচসুবিধা নিচ্ছেন, তাদের চেয়ে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতাধীন কৃষকদের বেশি টাকা গুনতে হবে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আর্স বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলেন, সেচ মৌসুমে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন কৃষকরা দিনের খুবই অল্পসময় বিদ্যুৎ সুবিধা পায়। ফলে অনেক কৃষকের ধানই পানির অভাবে নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু সৌরবিদ্যুৎচালিত এই প্লান্ট সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একটানা চালু থাকবে। ফলে পানির অভাবে কৃষকের ফসল নষ্ট হবে না কখনও।

পাশের কমলাপুর, খড়িঞ্চা প্রভৃতি গ্রামের কৃষকরা দলে দলে যাচ্ছেন সাঞ্চাডাঙ্গার সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প দেখতে। তাদের আশা, আশপাশের গ্রামগুলোও দ্রুত এ ধরনের প্রকল্পের আওতায় আনা হবে।

Tuesday, February 4, 2014

সরিষা ক্ষেত ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে মৌমাছি দিয়ে মধু আহরণ

শেরপুর: শেরপুরের গ্রামের পথে পা বাড়ালেই নজরে পড়ে বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে সরিষার ক্ষেত। ভরে উঠেছে ফুলে ফুলে। অনুকূল আবহাওয়া, দাম ভালো থাকায় জেলায় এবার সরিষার আবাদ বেড়েছে। 

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় এবার ৭ হাজার ২শ’ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। সরিষার এ আবাদের সঙ্গে যোগ হয়েছে ভিন্নতাও। মৌমাছি দিয়ে সরিষার ফুল থেকে আহরণ করা হচ্ছে মধু। কৃষকরা বলছেন, এ মধু আহরণের জন্য তাদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণসহ সহযোগিতা প্রদান করলে, তারাও সরিষার চাষের পাশাপাশি মধু আহরণ করে আরও লাভবান হতে পারবে। 

সূত্র মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে শেরপুরের সদর, নকলা, নালিতাবাড়ী উপজেলার কৃষকদের কৃষি ফসল উৎপাদনের ভিন্নতাও এসেছে। যেসব ফসলে সেচ কম লাগে এবং বাজারে দাম ভালো সেসব ফসল উৎপাদনে কৃষক ঝুঁকছেন। 

সরিষা ক্ষেতে সেচ কম লাগায় এবং সরিষার বাজার মূল্য ভালো থাকায় দিনে দিনে জেলায় সরিষার আবাদ বাড়ছে। গ্রামের পথে পা বাড়ালেই দেখা মিলছে হলদে-সরিষা ফুলের সমাহার। প্রকৃতি যেন নিজ হাতে ফুলের চাদরে ক্ষেতগুলোকে ঢেকে দিয়েছে। কাছে গেলে দেখা যায়, মৌমাছিরা ফুলে ফুলে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ মৌ-চাষীরা ক্ষেতের পাশে বাক্স বসিয়ে মৌমাছি দিয়ে আহরণ করছে মধু। 

কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানান, মধু সংগ্রহের সময় মৌমাছিদের গায়ে লাগা ফুলের পুংকেশর ফল উৎপাদনের পূর্বশর্ত পরাগায়নে সাহায্য করছে। এ যেন সরিষা ফুল ও মৌমাছির অপূর্ব সম্পর্ক। এর ফলে বেড়ে যায় সরিষার ফলনও। 

কৃষকরা জানান, এ অঞ্চলে আমন ধান উঠার পর বোরো লাগানোর আগ পর্যন্ত জমিগুলো ফাঁকা থাকে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অনেক আগে থেকেই জমিগুলো সরিষা চাষের উপযোগী হয়। 

একদিকে অনুকূল আবহাওয়া ও কম খরচ, অন্যদিকে বাজার মূল্য ভালো এবং বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবে কৃষক এবার বেশিরভাগ জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। নকলা উপজেলার কৃষব শাহজাদা স্বপন এক বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। তার মতো নকলার চন্দ্রকোণা গ্রামের আমজাদ হোসেন, নেপাল চৌহানসহ অনেক সরিষা চাষীরা বলেন, সরিষা আবাদ আমন ও বোরো ধান চাষের মাঝের সময় হয়। 

সেচ কম লাগে, দাম ভালো, সরিষার খৈল ও সরিষা ভূষি গরুর ভালো খাদ্য এবং জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সরিষা চাষের ব্যাপারে নকলা উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, এ বছর সরিষা চাষের উপযুক্ত আবহাওয়া থাকায় ব্যাপক জমিতে চাষ হয়েছে। সরিষা চাষে সেচ কম লাগে। বাজারে দাম ভালো, সরিষার খৈল ও সরিষা ভূষি পশুর ভালো খাদ্য এবং ভালো জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর সঙ্গে সরিষা ফুল থেকে পাওয়া যায় উৎকৃষ্ট মধু। 

এ বছর গাজীপুরের মীক মৌ খামার নামে একজন ভ্রাম্যমাণ মৌ চাষী চন্দ্রকোণা গ্রামে মধু আহরণ করছেন। এ ভ্রাম্যমাণ মৌ-চাষী নূরুল ইসলাম রিপন জানান, বিসিক থেকে মাত্র ৭ দিনে প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি এ মৌ-চাষ শুরু করেছিলেন। মাত্র ৪/৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেই ভাল আয় করা সম্ভব বলে তিনি উল্লেখ করেন। 

চন্দ্রকোনা এলাকায় ১২৪টি মৌবাক্স স্থাপন করে গড়ে প্রতিবাক্স থেকে সপ্তাহে দুইবার প্রায় ২/৩ কেজি করে মধু আহরণ করা হয়। প্রতিকেজি মধু বিক্রী হয় গড়ে ৫০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকায়। ভ্রাম্যমাণ মৌ-চাষ করে এলাকার কৃষকদের বাড়তি আয়ের পাশাপাশি বেকারদেরও কর্মসংস্থান করা সম্ভব বলে তিনি জানান। স্থানীয় কৃষকরাও তার মধু আহরণ দেখে, নিজেরাই মধু আহরণে উৎসাহী হয়েছেন। তারা চাইছেন প্রশিক্ষণ এবং সহযোগিতা। আর এটা হলে তারাও বাড়তি আয় করে লাভবান হতে পারবেন বলে তারা জানান।

Sunday, February 2, 2014

লবণাক্ত জমিতে পাটের বিকল্প কেনাফ চাষ

খুলনা: খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লি¬নের অধীনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে কেনাফ চাষের উপযোগিতা শীর্ষক একটি গবেষণা প্রকল্প শুরু হয়েছিল ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে। তিন বছরব্যাপী প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয় বিগত ২০১৩ সালে। গবেষণা প্রকল্পের স্থান নির্ধারিত হয় খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলার দেবীতলা, ফুলতলা ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। 

গবেষণায় দেখা যায়, কেনাফ, পাটের বিকল্প শস্য হিসেবে দক্ষিণাঞ্চলে চাষ উপযোগী। পাটের আঁশের চেয়ে কেনাফ আঁশের গুণগত মান কিছুটা কম হলেও ফলন বেশি, চাষাবাদের খরচ কম, অত্যন্ত লবণ ও খরা সহিষ্ণু। যেখানে লবণাক্ততার জন্য পাট চাষ সম্ভব নয়, সেখানে অনায়াসেই কেনাফ চাষ সম্ভব।

গবেষণায় আরো দেখা যায়, বীজের অঙ্কুরোদগম ও গাছবৃদ্ধির সময় কেনাফ ১৮ থেকে ২০ ফংস-১ লবণ সহ্য করতে পারে। তবে অনাকাঙ্খিত বৃষ্টি হলে ২/৩ সপ্তাহ পর্যন্ত পানি জমে থাকে এমন মাটিতে কেনাফ চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। গবেষণাগারে সফলভাবে কেনাফ খড়ি এবং আঁশ থেকে কাগজের মন্ড ও কাগজ তৈরি করা হয়। কাগজের গুণগতমান পরীক্ষা করা হয় ঢাকার সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে। 

পরীক্ষায় কেনাফ থেকে তৈরি কাগজ উঁচু মানের প্রতীয়মান হয়। কেনাফ বীজ থেকে তেল আহরিত হয়। বীজে তেলের পরিমাণ ৭ শতাংশ পাওয়া যায়, তবে উন্নতমানের তেল আহরণ যন্ত্র ব্যবহার করলে ১৩ শতাংশ পর্যন্ত তেল পাওয়া সম্ভব। কেনাফ তেলে ক্যান্সার প্রতিরোধক রাসায়নিক দ্রব্যাদি পাওয়া গেছে বলে বিভিন্ন গবেষক দাবি করা হয়েছে।

গবেষণা প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হলেও মূখ্য গবেষক অধ্যাপক ড. মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, এ গবেষণা এখনো চলছে এবং ভবিষ্যতে আরো নিবিড়ভাবে এর গবেষণা করা হবে। বর্তমানে বিনা চাষে কেনাফ চাষের উপযোগীতা দেখা হচ্ছে এবং কেনাফ তেলের ক্যান্সার প্রতিরোধের গুণাবলী দেখার প্রয়াস চলছে।

মনিরুল বলেন, খুলনা ও বরিশাল উপকূলীয় এলাকায় আমন ধানই প্রধান ফসল। মধ্যবর্তী সময়ে হাজার হাজার একর জমি ফসল চাষ ছাড়াই পতিত থাকে। খুলনায় কিছু কিছু এলাকায় তিল চাষ হলেও বৃষ্টি, জলাবদ্ধতা বা খরার ঝুঁকি রয়েছে। সেক্ষেত্রে পাটের প্রায় সমমান ও পাটের চেয়ে আরও বহুমুখী কাজে ব্যবহারযোগ্য কেনাফ চাষ এ অঞ্চলে বিপুল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। 

তিনি জানান, কেনাফ দিয়ে নিউজপ্রিন্ট তৈরির প্রধান কাঁচামালের চাহিদা পূরণ করে খুলনা নিউজ প্রিন্ট মিলটি চালু করা সম্ভব। সুন্দরবনের গেওয়া গাছের ওপর নির্ভর হতে হবে না। কৃষি মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, পাট গবেষণা ইন্সটিটিউট ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এ ব্যাপারে যৌথভাবে উদ্যোগ নিতে পারে। বিদেশে কেনাফের আঁশের বিপুল চাহিদা রয়েছে। 
প্রাইভেট কার তৈরিসহ বিভিন্ন কাজে ইনটেরিয়র ইনসুলেটর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। জুটেক্স তৈরিও সম্ভব। তেলে রয়েছে মেডিসিন্যাল ভ্যালু। ইতোমধ্যে বিদেশে ইঁদুরের উপর এই তেল নিয়ে গবেষণা করে দেখা গেছে এটি ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক। ভারত, চীন থাইল্যান্ড, নাইজেরিয়া এবং রাশিয়ায় এর বিস্তৃতি ঘটছে।

কেনাফ চাষের এই গবেষণা প্রকল্পের সহযোগী গবেষক হচ্ছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লি¬নের প্রফেসর ড. মো. সারোয়ার জাহান এবং উপদেষ্টা সিনিয়র প্রফেসর ড. সঞ্জয় কুমার অধিকারী। 

খুলনা-বরিশাল উপকূলীয় অঞ্চলের লবণাক্ত ও খরা প্রবণ এলাকায় বাড়তি ফসল হিসেবে কৃষকরা কেনাফ চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। কেননা এর মাধ্যমে নিউজ প্রিন্ট মিলের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল পাওয়া যাবে। 

পাশাপাশি হার্ডবোর্ড মিলের কাঁচামাল, পশুখাদ্যের কাঁচামাল, তেল উৎপাদনসহ বিভিন্ন ইন্টেরিয়র কাজের ইনস্যুলেটর হিসেবে কেনাফ ব্যবহার করা যাবে। আর অফ সিজনে পতিত জমিতে কেনাফ চাষ করতে পারলে কৃষকের আয় বৃদ্ধি, শ্রমশক্তি ব্যবহার এবং সর্বোপরি পরিবেশের জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে নিয়ে আসবে। 

Saturday, February 1, 2014

মেহেরপুরে ভেড়া পালন করে ভাগ্য বদল

মেহেরপুর: ব্লাক-বেঙ্গল গোটের পাশাপাশি মেহেরপুর জেলায় এখন বাণিজ্যিকভাবে ভেড়া পালন করা হচ্ছে। বেকারত্ব দূরীকরণের একটি অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে ভেড়া পালন। জেলার প্রত্যন্ত জনপদের বেকার যুবক থেকে শুরু করে অনেক নারী-পুরুষ এখন ভেড়া পালন করে পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছে। 
ছাগলের পাশাপাশি ভেড়া পালন মেহেরপুর জেলার জনগণের গরীবের গাভী পালন বলেও খ্যাতি আছে। বর্তমানে মেহেরপুর জেলায় অনেকে বাণিজ্যিকভাবে ভেড়া পালন করছে। স্বল্প পূঁজি, স্বল্প জায়গা ও কম খাদ্য হলেই ভেড়া পালন করা সম্ভব। কম খরচের কারণে দিন দিন ভেড়া পালন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সদর উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের ভেড়া পালনকারী ইসহাক আলী জানান, ভেড়া পালনে এলাকার লোকজনের অর্থনীতির চাকা যেমন ঘুরছে, তেমনি বেকারত্বের অভিশাপ থেকেও যুবকরা মুক্তি পাচ্ছে।

একই গ্রামের ভেড়া পালনকারী হান্নান আলী জানান, লেখাপড়া শিখেছি। এখন বাবা-মায়ের কাছ থেকে হাত পেতে টাকা নিতে খারাপ লাগে। তাই ৩টি ভেড়া থেকে দুই বছরে ৪১টি ভেড়ায় দাঁড়িয়েছে। ভেড়ার বাচ্চা বিক্রি করেই আমার হাত খরচ হয়ে যায়। আমার মতো অনেকেই বাড়িতে বসে দু’একটা ভেড়া পালন করছে। আবার অনেকেই খামার গড়ে তুলে নিজেদের ভাগ্যের চাকা ঘুরাচ্ছেন বলে তিনি জানান।

মুজিবনগর উপজেলার ভেড়া খামারী ভবের পাড়ার রাসেল আহমেদ বলেন, অল্প টাকা বিনিয়োগ করে ও স্বল্প স্থানে অনায়াসে এ প্রাণী পালন সম্ভব। আমার খামারে এখন ৩৫টি ভেড়া রয়েছে। যার দাম প্রায় ২ লাখ থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এর মাংস সুস্বাদু ও চামড়ার দাম ভালো হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা রয়েছে প্রচুর। এটি বাজারজাত করতেও কোনো সমস্যা হয় না। কারণ ফড়িয়ারা এসে গ্রাম থেকে ভেড়া কিনে নিয়ে যায়।

স্থানীয়রা জানান, ভেড়ার দাম প্রায় ছাগলের মতো। কেজি প্রতি মাংস বিক্রি হয় ৪০০ টাকা করে। বছরে দুইবার ৩/৪টি করে বাচ্চা দেয় ভেড়া।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শশাঙ্ক কুমার মন্ডল জানান, ভেড়া পালনে আগ্রহীদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ। অনেকে ভেড়া পালনে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। বর্তমানে মেহেরপুর জেলায় ৭৭টি ভেড়ার খামার আছে। এছাড়া খামার করে এবং পারিবারিকভাবে দু’ একটি করে পালন করা হচ্ছে, এতে জেলায় প্রায় ৪২ হাজার ভেড়ার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে।