চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ১৫টি ব্যাংক মুনাফার বিবেচনায় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ভালো করেছে।
ঈদের ছুটির আগে শেষ কর্মদিবস বুধবার পর্যন্ত তালিকাভুক্ত ৩১টি ব্যাংকের মধ্যে ২১টি ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ সময়ের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
এই তিন মাসে ২১টি ব্যাংকের মধ্যে ৬টির মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে কমেছে। ১৪টির বেড়েছে এবং একটি ব্যাংকের লোকসান কমেছে।
এছাড়া বুধবার পর্যন্ত ২০২০ সমাপ্ত হিসাব বছরে ২৬টি ব্যাংক লভ্যাংশ দেওয়ার সুপারিশ করেছে।
এর মধ্যে ১১টির লভ্যাংশ আগের বছরের চেয়ে বেড়েছে, ৪টির কমেছে এবং ১১টি ব্যাংকের নগদ ও স্টক মিলিয়ে মোট লভ্যাংশ সমান রয়েছে।
মুনাফা বাড়ার বিষয়ে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সভাপতি ও ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের (ইবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখার বলেন, “ব্যাংকগুলো আগের বছরের তুলনায় খরচ অনেক কমিয়েছে। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল খরচ কমানো, সেটা আমরা পেরেছি।”
আমানতের উপর সুদের হারও আমরা কমিয়ে দিয়েছি। এটার একটা বড় প্রভাব পড়েছে অনিরীক্ষিত মুনাফার হিসাবে। এর বাইরে বেতন খরচ ছাড়া অন্যান্য অপারেটিং খরচ কমিয়ে এনেছি।”
শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমরান হাসান বলেন, “করোনাভাইরাস মহামারীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ছাড়ের কারণে ব্যাংকগুলোকে প্রভিশন রাখতে হয়নি। এটিও মুনাফা বাড়ার একটি কারণ।”
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে সবচেয়ে বেশি মুনাফা অর্থ্যাৎ শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে প্রাইম ব্যাংকের।
এই ব্যাংকের ইপিএস ৪৬ পয়সা থেকে ১৯১.৩০ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১ টাকা ৩৪ পয়সা।
এরপর সবচেয়ে বেশি বেড়েছে এবি ব্যাংকের। ব্যাংকটির ইপিএস ৮ পয়সা থেকে দ্বিগুণ হয়ে
১৬ পয়সা হয়েছে।
এ সময়ে সবচেয়ে বেশি কমেছে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের। এটির ইপিএস ৩৬ পয়সা থেকে ৫২.৭৮ শতাংশ কমে ১৭ পয়সা হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি কমার দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ইপিএস হয়েছে ৩২ পয়সা। আগে যা ছিল ৬৬ পয়সা, কমেছে ৫১.৫২ শতাংশ।
প্রথম প্রান্তিকে ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় দীর্ঘদিন থেকে খরায় থাকা ব্যাংকের শেয়ারে কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
এর সঙ্গে ভালো লভ্যাংশ ঘোষণা করায় এ খাতের শেয়ার কেনাবেচায় আগ্রহ একটু একটু করে আগ্রহ বাড়তে দেখা গেছে বিনিয়োগকারীদের।
মার্চেন্ট ব্যাংক লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের গবেষণায় দেখা গেছে, গত তিন সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের শেয়ারে লেনদেন ক্রমাগত বেড়েছে।
এই গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহ শেষে অর্থাৎ ২২ এপ্রিলে শেষ হওয়া সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে ২৬ কোটি টাকার ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
পরের সপ্তাহে যা ৫০ শতাংশ বেড়ে দৈনিক গড়ে ৩৯ কোটি টাকা হয়েছে।
এরপর ৬ মে শেষ হওয়া সপ্তাহে দৈনিক গড়ে ৬৩ কোটি টাকার ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
সর্বশেষ সপ্তাহে গড়ে দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১৫১ কোটি টাকা, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় ১৪১ শতাংশ বেশি।
গত ৩ সপ্তাহে ব্যাংকিং খাতের ট্রেইলিং পিইও বেড়েছে।
লংকাবাংলার হিসাবে ২২ এপ্রিল শেষে ব্যাংকিং খাতের পিই ছিল ৬ দশমিক ৮ পয়েন্ট ।
বুধবার পর্যন্ত ঢাকার পুঁজিবাজারে ট্রেইলিং পিই ১৮ দশমিক ৩৫ পয়েন্ট। সেখানে ব্যাংক খাতের পিই ৭ দশমিক ৮৯।
ট্রেইলিং পিই হিসাব করা হয় কোনো শেয়ারের বর্তমান দামকে সর্বশেষ ১২ মাসের ইপিএস দিয়ে ভাগ করে। আর পিই (প্রাইস আর্নিং) রেশিও হলো মূল্য ও আয় অনুপাত।
জানুয়ারি-মার্চ প্রথম প্রান্তিকের মুনাফা
ব্যাংক | ২০২১ | ২০২০ | শতাংশে পরিবর্তন |
এবি | ১৬ পয়সা | ৮ পয়সা | ১০০% বেড়েছে |
ব্যাংক এশিয়া | ১ টাকা ৫ পয়সা | ১ টাকা ১৬ পয়সা | ৯.৪৮% কমেছে |
ব্র্যাক | ৯৩ পয়সা | ৬৬ পযসা | ৪০.৯১% বেড়েছে |
দি সিটি | ৯৮ পয়সা | ৭৫ শতাংশ | ৩০.৬৭% বেড়েছে |
ইস্টার্ন | ১ টাকা ২৮ পয়সা | ১ টাকা ৩ পয়সা | ২৪.২৭% বেড়েছে |
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী | ৩২ পয়সা | ৬৬ পয়সা | ৫১.৫২% কমেছে |
আইসিবি ইসলামী | ১৫ পয়সা লোকসান | ৯ পয়সা লোকসান | ৬৬.৬৭% লোকসান কমেছে |
আইএফআইসি | ৪৬ পয়সা | ৪৪ পয়সা | ৪.৫৫% বেড়েছে |
ইসলামী বাংলাদেশ | ৪৫ পয়সা | ৪৪ পয়সা | ২.২৭% বেড়েছে |
যমুনা | ১ টাকা ৬০ পয়সা | ১ টাকা ৪২ পয়সা | ১২.৬৮% বেড়েছে |
মার্কেন্টাইল | ৬৪ পয়সা | ৫৫ পয়সা | ১৬.৩৬% বেড়েছে |
মিউচুয়াল ট্রাস্ট | ৮১ পয়সা | ৭২ পয়সা | ১২.৫০% বেড়েছে |
ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স | ৫৫ পয়সা | ৮২ পয়সা | ৩২.৯৩ শতাংশ কমেছে |
ওয়ান | ৮৪ পয়সা | ৭৯ পয়সা | ৬.৩৩% বেড়েছে |
প্রিমিয়ার | ৬০ পয়সা | ৭৯ পয়সা | ২৪.০৫% কমেছে |
প্রাইম | ১ টাকা ৩৪ পয়সা | ৪৬ পয়সা | ১৯১.৩০% বেড়েছে |
পূবালী | ৯৮ পয়সা | ৮৬ পয়সা | ১৩.৯৫% বেড়েছে |
শাহজালাল | ৬৫ পয়সা | ৬১ পয়সা | ৬.৫৬% বেড়েছে |
সাউথইস্ট | ১ টাকা ২২ পয়সা | ৯৬ পয়সা | ২৭.০৮% বেড়েছে |
স্ট্যান্ডার্ড | ১৭ পয়সা | ৩৬ পয়সা | ৫২.৭৮% কমেছে |
উত্তরা | ৮৪ পয়সা | ১ টাকা ৩৪ পয়সা | ৩৭.৩১% কমেছে |
লভ্যাংশ ঘোষণা
ব্যাংক | পিই (পয়েন্ট) | লভ্যাংশ শতাংশে (২০২০ হিসাব বছর) | লভ্যাংশ শতাংশে (২০১৯ হিসাব বছর) |
এবি | ১৮.২৮ | ৫% স্টক | ৫% স্টক |
আল আরাফাহ ইসলামী | ৯.৪২ | ১৫% নগদ | ১৩% নগদ |
ব্যাংক এশিয়া | ১০.২৫ | ১০% নগদ | ১০% নগদ |
ব্র্যাক | ১৪.৬৫ | ১০% নগদ এবং ৫% স্টক | ৭.৫% নগদ এবং ৭.৫% স্টক |
দি সিটি | ৫.৯৭ | ১৭.৫% নগদ এবং ৫% স্টক | ১৫% নগদ |
ঢাকা | ৫.৯৯ | ৬% নগদ এবং ৬% স্টক | ৫% নগদ এবং ৫% স্টক |
ডাচবাংলা | ৬.৮১ | ১৫% নগদ এবং ১৫% স্টক | ১৫% নগদ এবং ১৫% স্টক |
ইস্টার্ন | ৭.২১ | ১৭.৫% নগদ এবং ১৭.৫% স্টক | ১৫% নগদ |
এক্সিম | ৪.৯০ | ৭.৫% নগদ এবং ২.৫% স্টক | ১০% নগদ |
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী | ৪.০১ | ৫% নগদ এবং ৫% স্টক | ১০% স্টক |
আইসিবি ইসলামী | ০.০ | লভ্যাংশ দেবে না | লভ্যাংশ দেয়নি |
আইএফআইসি | ১৬.৫৮ | ৫% স্টক | ১০% স্টক |
ইসলামী বাংলাদেশ | ৯.৬৭ | ১০% নগদ | ১০% নগদ |
যমুনা | ৪.৮৭ | ১৭.৫০% নগদ | ১৫% নগদ |
মার্কেন্টাইল | ৫.২৫ | ১০% নগদ এবং ৫% স্টক | ১১% নগদ এবং ৫% স্টক |
মিউচুয়াল ট্রাস্ট | ১৪.১১ | ১০% স্টক | ৫% নগদ এবং ৫% স্টক |
ন্যাশনাল | ৬.৩৮ | এখনও দেয়নি | ৫% নগদ এবং ৫% স্টক |
ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স | ৭.২০ | ৭.৫% নগদ এবং ৭.৫% স্টক | ১৫% নগদ এবং ২% স্টক |
এনআরবিসি | ৮.২৭ | ৭.৫০% নগদ এবং ৫% স্টক | ৯% নগদ এবং ২% স্টক |
ওয়ান | ৬.৪৫ | ৬% নগদ এবং ৫.৫০% স্টক | ৫% নগদ এবং ৫% স্টক |
প্রিমিয়ার | ৩.৩৬ | ১২.৫০% নগদ এবং ৭.৫০% স্টক | ৫% নগদ এবং ৫% স্টক |
প্রাইম | ৭.৭৯ | ১৫% নগদ | ১৩.৫% নগদ |
পূবালী | ৬.৫৯ | ১২.৫০% নগদ | ১০% নগদ |
রূপালী | ১৯.৮০ | এখনও দেয়নি | লভ্যাংশ দেয়নি |
শাহ্জালাল ইসলামী | ১০.৮৫ | ৭% নগদ এবং ৫% স্টক | ৫% নগদ এবং ৫% স্টক |
সোসাল ইসলামী | ৭.৯০ | ৫% নগদ এবং ৫ % স্টক | ৫% নগদ এবং ৫% স্টক |
সাউথইস্ট | ৬.৩৮ | ১০% নগদ | ৭.৫০% নগদ এবং ২.৫০% স্টক |
স্ট্যান্ডার্ড | ৯.৩৪ | ২.৫০% নগদ এবং ২.৫০% স্টক | ৫% নগদ এবং ৫% স্টক |
ট্রাস্ট | ৬.৮৭ | এখনও দেয়নি | ৫% নগদ এবং ৫% স্টক |
ইউসিবি | ১২.২৫ | এখনও দেয়নি | ৫ % নগদ ও ৫% স্টক |
উত্তরা | ৫.৭১ | ১২.৫০% নগদ এবং ১২.৫০% স্টক | ৭% নগদ এবং ২৩% স্টক |