Sunday, July 6, 2014

বীরগঞ্জের বিদ্যুৎবিহীন মাটির হিমাগার মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে

দিনাজপুর: দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার বিদ্যুৎবিহীন মাটির হিমাগারটি মানুষের আশার সঞ্চার করেছে।  কেননা, এটি বদলে দিতে পারে গ্রামীণ জনপদে সাধারণ কৃষকদের ভাগ্যের চাকা। 

জানা গেছে, দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার ৪ নম্বর পাল্টাপুর ইউনিয়নের মৃত আলহাজ্ব ডা. সমসের আলীর পুত্র মীম সীড-এর স্বত্ত্বাধিকারী কৃষিবিদ মো. তোহিদুল ইসলাম বকুল বীরগঞ্জ পৌর শহরের দিনাজপুর-পঞ্চগড় মহাসড়কের মাকড়াই মৌজায় ১১০ টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বিদ্যুৎবিহীন মাটির হিমাগার নির্মাণ করেছেন। কাহারোল উপজেলা স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের প্রকৌশলী দিলীপ কুমার সরকারের তত্ত্বাবধানে ক্যাটালিস্ট ও জিমার্ক-এর আর্থিক সহযোগিতায় সুদূর ভারত থেকে প্রযুক্তি ভিডিও চিত্রধারণ করে হিমাগারটি নির্মাণ করা হয়। হিমাগারটি পরীক্ষামূলক চালুর পর কাঁচা সবজি ৬ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সফলতা লাভ করেছে। বিদ্যুৎ ছাড়াই প্রাকৃতিকভাবে আলুসহ সকল প্রকার কাঁচামাল হিমায়িত করে রাখার ক্ষেত্রে গ্রামীণ জনপদে সাধারণ কৃষকদের উন্নয়নে বেশ ভূমিকা রাখবে। হিমাগারটি নির্মাণে সর্বসাকুর্ল্যে ব্যয় হয়েছে মাত্র ৫ লাখ টাকা। 

কৃষিবিদ মো. তোহিদুল ইসলাম বকুল জানান, আলু, সবজি ও বিভিন্ন ফলসহ যে কোন কাঁচামাল প্রাকৃতিকভাবে হিমাগারে সংরক্ষণ করে রাখা যায়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরে ১১০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন প্রাকৃতিক হিমাগার র্নিমাণ করলেও তেমনভাবে সফলতা লাভ করেনি। তবে দিনাজপুরের বীরগঞ্জে এ ধরনের বিদ্যুৎবিহীন হিমাগার নির্মাণ করে সফলতা অর্জন করেছে। 

সরকারীভাবে আর্থিক সহযোগিতা পেলে ১১০ থেকে ২০০ টন পর্যন্ত ক্ষমতাসম্পন্ন প্রাকৃতিক হিমাগার র্নিমাণ করা সম্ভব। প্রতি মৌসুমের মার্চ মাস থেকে কৃষকেরা এখানে একাধারে ৬ মাস পর্যন্ত আলুসহ বিভিন্ন কাঁচামাল অক্ষত অবস্থায় সংরক্ষণ করতে পারবেন। হিমাগারে পরীক্ষামূলক ২৮ দিন পর্যন্ত ফুলকপি ও ৭৫ দিন পর্যন্ত পাতা কপি সংরক্ষণ করে সফল হয়েছে। হিমাগারটির ঠান্ডা রাখতে তলদেশে ৪ ফিট গভীরতার মধ্যে পানি সংরক্ষণ করে রাখা হয়। এ পানির মধ্যে মাছ চাষ করা সম্ভব। হিমাগারটির তলদেশের পানি ১৫ দিন পর পর পরিবর্তন করতে হয়। বিদ্যুৎচালিত হিমাগারের বিকল্প হিসেবে এই বিদ্যুৎবিহীন প্রাকৃতিক হিমাগারটি আমাদের  গ্রামীণ অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। 

স্থানীয় কৃষক এবং আলু চাষী মো. হবিবর রহমান, আব্বাস আলী, শফিকুল ইসলাম, পুরেন চন্দ্র রায়সহ কয়েকজন কৃষক জানান, ইতোপূর্বে হিমাগারের আলু সংরক্ষণের জন্য কেজি প্রতি ৫/৬ টাকা দিতে হতো। কোনো কারণে আলু পঁচে গেলে অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ পাওয়ায় যেতো না। অথচ প্রাকৃতিক হিমাগারে আলু সংরক্ষণের জন্য ব্যয় হয় কেজি প্রতি মাত্র ১ টাকা। এখানে আলুসহ সকল প্রকার সবজি পচে যাওয়ার আশংকা থাকে না। 

তাই বিদ্যুৎবিহীন মাটির হিমাগারটিকে কৃষক ও আলু ব্যবসায়ীদের জন্য সুবিধাজনক। কৃষিবিদ মো. তোহিদুল ইসলাম বকুলের এই উদ্যোগ গ্রামীণ অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে বলে অনেকে ধারণা করছেন।

দিনাজপুর জেলা কৃষি অধিদপ্তরের পরিচালক আনোয়ারুল আলম জানান, তিনি এই হিমাগারটি গত এপ্রিল মাসে পরিদর্শন করেছেন। নতুন উদ্ভাবনায় বিদ্যুৎবিহীন প্রাকৃতিক রূপরেখায় হিমাগারটি নির্মিত করা হয়েছে। এ ধরনের হিমাগার নির্মাণ করে দেশের তৃণমূল পর্যায়ে উৎপাদিত কৃষকের কাঁচা তৈরি তরকারি মাসব্যাপী সংরক্ষণ করা যাবে। তিনি এ ধরনের হিমাগার নির্মাণ করে উৎপাদিত ফসল সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করায় হিমাগার স্থাপনকারী তৈহিদুল ইসলামকে সাধুবাদ জানান।

বীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুজ্জাতুল ইসলাম বলেন, ১১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে এই উপজেলা গঠিত হয়েছে। উপজেলার ৮৫ ভাগ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। এখানে প্রতি বছরই সব ধরনের সবজি এবং আলুর উৎপাদন হয়। সবজি ও আলু সংরক্ষণে হিমাগার নির্মাণে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। 

কৃষিবিদ তোহিদুল ইসলামের হিমাগারটি নির্মাণের পর সফলতা আসায় এ ধরনের হিমাগার আরো ৪টি নির্মাণের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।