Monday, January 31, 2022

নতুন মোটরসাইকেল কেনার পর ব্রেক-ইন-পিরিয়ড মেনে চলার নিয়ম!!

নতুন মোটরসাইকেল কেনার পর ব্রেক-ইন-পিরিয়ড মেনে চলার নিয়ম!!

মোটরসাইকেল-What-to-do-to-keep-the-bike-off-for-a-long-time

আমাদের দেশের বেশিরভাগ তরুণের কাছে বাইক বা মোটরসাইকেল একটা স্বপ্নের নাম। একটা বয়সের তরুণেরা যেমন স্বপ্ন দেখে একজন সুন্দরী সঙ্গীর, তেমনি স্বপ্ন দেখে বাইকের। স্বপ্নের বাইক হাতে আসলে তখন নতুন বাইকের রুলস মেনে চলার ব্যাপারটা বাইক পাওয়ার আনন্দে মাথা থেকে বের হয়ে যায়। যেমন ব্রেক-ইন-পিরিয়ড না মেনে ইচ্ছে মতো চালাতে থাকলে প্রিয়জনের মুখে হাসি ফুটবে ঠিকই, কিন্তু এই প্রিয় বাইকটা আর বাইক থাকবে না, বারোটা বেজে যাবে ইঞ্জিনের। আচ্ছা নিয়ম জানার আগে তবে জেনে নেয়া যাক ব্রেক-ইন-পিরিয়ডটা আসলে কি?

ব্রেক-ইন-পিরিয়ড কি?

এটা হচ্ছে সেই সময় যখন ইঞ্জিন একেবারে নতুন থাকে, বিশেষত প্রথম কয়েকশো বা হাজার (০-১০০০) কিমি। এ সময়টাতে ইঞ্জিনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ যেমন পিস্টন রিং, ভাল্ব ও সিলিন্ডার বোর খসখসে থাকে, যেটা যথাযথ প্রক্রিয়ায় দূর করতে হয়। সেজন্য বাইকারকে এ সময়ে বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়, যাতে ইঞ্জিনের ওই যন্ত্রাংশগুলো মসৃণ হয় এবং বাইক যথাযথ মাইলেজ ও সার্ভিস দিতে পারে।

ধৈর্যশীল হতে হবে

সাধারণত নতুন বাইক কিনেই আমরা খুব উত্তেজিত হয়ে পড়ি। কিন্তু যেহেতু প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় আমাদের দেশে বাইকের দাম বেশি এবং বাইকটি থেকে আমরা ভালো মাইলেজ ও দীর্ঘ স্থায়িত্ব প্রত্যাশা করি, সেজন্য ব্রেক-ইন-পিরিয়ড পার না হওয়া পর্যন্ত ধৈর্যশীল হতে হবে। আবেগের বশে বাইক চালালে হবে না। বরং নিয়ম মেনে চালতে হবে। তা না হলে অতি ভালোবাসার বাইকটির ইঞ্জিন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

আসুন এবার জেনে নেয়া যাক কিভাবে ব্রেক-ইন-পিরিয়ড মানবেন!!

১. কেউ চাইলে দুই ভাগে ব্রেক-ইন-পিরিয়ড পার করতে পারেন। প্রথমে ০ থেকে ৫০০ কিমি ও পরে ৫০১ থেকে ১০০০ কিমি।

২. ব্রেক-ইন-পিরিয়ডের সময় উচ্চ আরপিএম-এ ইঞ্জিন চালু করবেন না।

৩. ইঞ্জিন চালু করে কমপক্ষে ১ মিনিট অপেক্ষা করুন।

৪. যত দ্রুত সম্ভব (৩০০-৪০০ কিমি) প্রথমবার ইঞ্জিন ওয়েল (মবিল) পরিবর্তন করুন। ওয়েল ফিল্টারও পাল্টিয়ে ফেলুন। এটা পাল্টানো তেমন কঠিন কিছু না। দ্বিতীয়বার ১০০০ কিমি চালিয়ে ইঞ্জিন ওয়েল ও ওয়েল ফিল্টার পাল্টিয়ে ফেলুন। তবে সার্ভিস সেন্টারের ইঞ্জিনিয়ার প্রথমবার এত দ্রুত ইঞ্জিন ওয়েল ও ফিল্টার পাল্টানোর ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করতে পারে। একটা সার্ভিস সেন্টারে এটা দেখা গেছে। কিন্তু বিশ্বাস করুন, ভারতের সার্ভিস সেন্টারগুলোতে এটাই করা হয়।

৫. ব্রেক-ইন-পিরিয়ডের প্রথম ৫০০ কিমি চালানোর সময় কোনো গিয়ারেই ৪৫০০ আরপিএম অতিক্রম করা ঠিক হবে না। তাছাড়া উচ্চ গিয়ারে কম আরপিএম-এও চালাবেন না। যেমন; ৫ম গিয়ারে ২০০০ আরপিএম। এতে ইঞ্জিনের উপর বেশি চাপ পড়ে।

৬. ব্রেক-ইন-পিরিয়ডের সময় হাইওয়েতে দূর পাল্লার ভ্রমণে বের হবেন না।

৭. অধিক ওজন (পিলিয়ন) নিয়ে বাইক চালাবেন না, চেষ্টা করুন একাই চড়ার।

৮. ব্রেক-ইন-পিরিয়ডের দ্বিতীয়ার্ধে অর্থাৎ ৫০০-১০০০ কিমি-এ অনেক বাইক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান (ইয়ামাহা) বলতে পারে ৬০০০ আরপিএমে চালালেও সমস্যা নেই। কিন্তু তার পরও ৪৫০০ আরপিএম অতিক্রম না করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। তাছাড়া বেশিক্ষণ একই আরপিএমেও বাইক চালানো ঠিক হবে না।

৯. একটানা ৩০ মিনিট বা ৩০ কিমি চালানোর পর কিছুক্ষণ থামা উচিৎ। এতে বাইকের ইঞ্জিন ঠাণ্ডা হওয়ার সময় পাবে।

১০. ব্রেক-ইন-পিরিয়ডে খুব বেশি অ্যাক্সিলারেশন তোলা ঠিক নয়।

১১. ব্রেক-ইন-পিরিয়ডে ইঞ্জিন ওয়েল পরিবর্তন করতে শুধু খনিজ ইঞ্জিন ওয়েল ব্যবহার করুন। সিনথেটিক ইঞ্জিন ওয়েল এ সময়ে পরিহার করে চলুন।

১২. ব্রেক-ইন-পিরিয়ড শেষে বাইকের সর্বোচ্চ আরপিএম তোলা উচিৎ।

ব্রেক-ইন-পিরিয়ড না মানলে কি হবে?

১. পারফরম্যান্স কমে যাবে।

২. ইঞ্জিনের দীর্ঘস্থায়ীত্ব কমে যাবে।

৩. মাইলেজ কমে যাবে।

৪. টপ ইস্পিড ভালো পাবেন না।

পরিশেষে বলা যায়; একটি মোটরবাইক কিনে নেওয়াই সব না। কিনে সঠিকভাবে পরিচালনা করাটাই আসল। না হলে মোটরবাইক থেকে ভালো সার্ভিস আশা করাটা বোকামী। আজকাল আমাদের সমাজে দেখা যায় ব্রেক-ইন-পিরিয়ড মেনে চলানোটা অসম্ভব। অসম্ভব এ জন্যই হয়েছে কারণ অনেকে আলসামো করে এসব মানতে চায় না। আবার অনেকে স্বপ্নের বাইক নিয়েই গতির খেলা শুরু করে দেয়। স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হলেই সব শেষ না। স্বপ্নটা বাস্তবে পরিণত হওয়ার পরেও লালন পালনের ব্যবস্থা করতে হয়। মোটরবাইকের ব্রেক-ইন-পিরিয়ড প্রক্রিয়াটাও ঠিক তেমন। সহযাত্রী নিয়ে শুরুর দিক থেকেই চলা আর গতির মেলায় মেতে উঠলে বাইকের দীর্ঘস্থায়ীত্ব কমে যাবে এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।

তাই আমরা চেষ্টা করবো যথাযথ ব্রেক-ইন-পিরিয়ড মেনে বাইক চালাতে। ধন্যবাদ।

খরচ ছাড়াই বিও হিসাবের ই-তথ্য পাবেন বিনিয়োগকারীরা

খরচ ছাড়াই বিও হিসাবের ই-তথ্য পাবেন বিনিয়োগকারীরা

BO-Account-আইপিও ঘিরে বিও অ্যাকাউন্ট খোলার হিড়িক

শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা এখন থেকে ই-মেইলে বিও হিসাবের (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) তথ্য বিনা খরচে পাবেন। সে জন্য বিও হিসাব খোলার সময় বিনিয়োগকারীদের দেওয়া ই-মেইলটি সঠিক ও কার্যকর হতে হবে।

নতুন এ সেবা চালু করেছে শেয়ারবাজারে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে বিও হিসাব ও শেয়ার সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল)।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) আগারগাঁও কার্যালয়ে এ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ ও আবদুল হালিম। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক আনোয়ারুল ইসলাম ও সিডিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শুভ্র কান্তি চৌধুরী। আর নতুন এ সেবার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন সিডিবিএলের ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস বিভাগের মহাব্যবস্থাপক রাকিবুল ইসলাম চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এখন থেকে প্রতি মাসের ৫ তারিখের মধ্যে বিনিয়োগকারীর ই-মেইলে তাঁর বিও হিসাবের আগের মাসের লেনদেন তথ্যসহ পূর্ণাঙ্গ বিবরণী বা স্টেটমেন্ট স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে চলে যাবে। তবে এ জন্য বিও হিসাবের সঙ্গে দেওয়া ই-মেইল ও মোবাইল নম্বর সঠিক হতে হবে।

বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি নানা কারসাজির মাধ্যমে কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউসের পক্ষ থেকে বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। নতুন এ সেবা এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে সহায়তা করবে। বিনিয়োগকারীরা ঘরে বসে সিডিবিএল থেকে পাওয়া প্রকৃত তথ্যের সঙ্গে ব্রোকারেজ হাউস থেকে পাওয়া তাদের বিও হিসাবের তথ্য মিলিয়ে নিতে পারবেন।

এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে সিডিবিএল তাদের ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিসের অংশ হিসেবে অনলাইনে ঘরে বসে বিও হিসাব খোলার সুবিধা চালু করে। যদিও অনলাইনে বিও হিসাব খোলার ওই সেবায় এখনো বিনিয়োগকারীদের আশানুরূপ সাড়া মিলছে না। এক বছরে মাত্র ৬ হাজারের মতো বিও হিসাব খোলা হয়েছে অনলাইনের মাধ্যমে।

সিডিবিএলের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে শেয়ারবাজার সক্রিয় বিও হিসাবের সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। এর মধ্যে শেয়ার রয়েছে প্রায় ১৫ লাখ বিও হিসাবে। শেয়ার শূন্য বিও হিসাব রয়েছে প্রায় সোয়া ৪ লাখ। আর এক লাখের বেশি বিও হিসাব অব্যবহৃত অবস্থায় রয়েছে।

প্রাইজবন্ডের ড্র; প্রথম পুরস্কার ০১২১৮৪১

প্রাইজবন্ডের ড্র; প্রথম পুরস্কার ০১২১৮৪১

১০০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজ বন্ডের ১০৬তম ‘ড্র’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছয় লাখ টাকার প্রথম পুরস্কার বিজয়ীর নম্বর ০১২১৮৪১। তিন লাখ ২৫ হাজার টাকার দ্বিতীয় পুরস্কারের নম্বর ০৬৫০৭৭৫। এক লাখ টাকা করে দু’টি তৃতীয় পুরস্কারের নম্বর ০৩৩০৪৯২ ও ০৭২৮৪০৮। প্রতিটি ৫০ হাজার টাকা করে দু’টি চতুর্থ পুরস্কারের নম্বর ০৬১৯৫২৯ ও ০৮৯৪৪২০।

সোমবার (৩১ জানুয়ারি) ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে এ ‘ড্র’ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিভাগীয় কমিশনার মো. খলিলুর রহমান।

ছয় লাখ টাকার প্রথম পুরস্কার বিজয়ীর নম্বর ০১২১৮৪১। তিন লাখ ২৫ হাজার টাকার দ্বিতীয় পুরস্কারের নম্বর ০৬৫০৭৭৫। এক লাখ টাকা করে দু’টি তৃতীয় পুরস্কারের নম্বর ০৩৩০৪৯২ ও ০৭২৮৪০৮। প্রতিটি ৫০ হাজার টাকা করে দু’টি চতুর্থ পুরস্কারের নম্বর ০৬১৯৫২৯ ও ০৮৯৪৪২০। পঞ্চম পুরস্কার ১০ হাজার টাকা বিজয়ী ৪০ জন।

একক সাধারণ পদ্ধতিতে ড্র পরিচালনা করা হয়েছে অর্থাৎ প্রতি সিরিজের একই নম্বরধারীরা পুরস্কার পাবেন। বর্তমানে প্রচলনযোগ্য ১০০ টাকা মূল্যমানের ৬৭টি সিরিজ যথা- কক, কখ, কগ, কঘ, কঙ, কচ, কছ, কজ, কঝ, কঞ, কট, কঠ, কড, কঢ, কথ, কদ, কন, কপ, কফ, কব, কম, কল, কশ, কষ, কস, কহ, খক, খখ, খগ, খঘ, খঙ, খচ, খছ, খজ, খঝ, খঞ, খট, খঠ, খড, খঢ, খথ, খদ, খন, খপ, খফ, খব, খম, খল, খশ, খষ, খস, খহ, গক, গখ, গগ, গঘ, গঙ, গচ, গছ, গজ, গঝ, গঞ, গট, গঠ, গড, গঢ এবং গথ এই ‘ড্র’-এর আওতাভুক্ত।

তিন মাস অন্তর মাসের শেষ দিন প্রাইজবন্ডের ড্র অনুষ্ঠিত হয়। আয়কর অধ্যাদেশ-১৯৮৪-এর ৫৫ ধারার নির্দেশনা অনুযায়ী ১ জুলাই, ১৯৯৯ থেকে প্রাইজবন্ড পুরস্কারের অর্থ থেকে ২০ শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তন করা হয়ে থাকে।

Saturday, January 29, 2022

অবশেষে ৯ বছরে শেষ হচ্ছে ঢাকা-টাঙ্গাইল ৪ লেন মহাসড়ক

অবশেষে ৯ বছরে শেষ হচ্ছে ঢাকা-টাঙ্গাইল ৪ লেন মহাসড়ক

মহাসড়ক যানজট রাস্তা বাস গাড়ি সড়ক road bus gridlock Study in India comp tazmohal-ভারতে-উচ্চশিক্ষা নিয়ে ঢাকায় মেলা শুক্রবার আজ বাংলাদেশ ভারত মৈত্রী সেতু উদ্বোধন রাস্তা Road

২০১৩ সালের এপ্রিলে শুরু হয়ে শেষ হবে ২০১৮ সালের মার্চে—এমন মেয়াদ ধরে অনুমোদন হয় জয়দেবপুর-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়ক চার লেনে উন্নয়ন প্রকল্প। যদিও অনুমোদনের পর সময় যত গড়িয়েছে, নানা জটিলতায় ততই বেড়েছে প্রকল্পের মেয়াদ। সঙ্গে বেড়েছে নির্মাণ ব্যয়। বর্তমানে প্রকল্পটির ভৌত কাজের অগ্রগতি ৯৯ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে চলে এলেও আরো ছয় মাস মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। ফলে পাঁচ বছরের প্রকল্প শেষ করতে সময় লাগতে যাচ্ছে নয় বছর।

প্রকৌশলীদের মতে, জাতীয় মহাসড়ক এন-৪-এর এ ৭০ কিলোমিটার অংশ চার লেনে গড়ে তুলতে ডিপিপিতে নির্ধারিত মেয়াদের চেয়ে বেশি সময় লাগার কথাও নয়। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করার লক্ষ্যে সড়কটির ৭০ কিলোমিটার অংশকে ভাগ করা হয় চার ভাগে। প্রত্যেক ভাগের জন্য নিযুক্ত করা হয় আলাদা ঠিকাদার। আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি শেষ করে মাঠ পর্যায়ে সড়কটির কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে।

মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে ‘সাসেক সংযোগ সড়ক প্রকল্প: জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা সড়ক (এন-৪) চার লেন মহাসড়কে উন্নীতকরণ’ প্রকল্পের মাধ্যমে। চার লেন মহাসড়ক ছাড়াও ধীরগতির যানবাহন চলাচলের জন্য সড়কটিই দুই পাশে নির্মাণ হচ্ছে আরো দুটি লেন। প্রকল্পটির মাধ্যমে ৭০ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নয়ন, ৫৩টি সেতু ও ৭৬টি বক্স কালভার্ট নির্মাণ, নয়টি ফ্লাইওভার, দুটি রেলওয়ে ওভারপাস এবং ছয়টি ফুটওভারব্রিজ তৈরি করা হচ্ছে।

চারটি ভাগের মধ্যে গাজীপুরের ভোগরা বাজার ইন্টারচেঞ্জ থেকে কালিয়াকৈর বাইপাস পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার বাস্তবায়ন করছে দক্ষিণ কোরিয়ার কায়রইঙ ও বাংলাদেশের স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের জয়েন্ট ভেঞ্চার। টাঙ্গাইল থেকে কালিয়াকৈর বাইপাস পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার বাস্তবায়ন করছে মালয়েশিয়ার এইচসিএম ইঞ্জিনিয়ারিং ও বাংলাদেশের আব্দুল মোমেন লিমিটেডের জয়েন্ট ভেঞ্চার। দুল্লামারি রোড থেকে টাঙ্গাইল পর্যন্ত ২২ দশমিক ৪০ কিলোমিটার বাস্তবায়ন করছে দক্ষিণ কোরিয়ার সামহোয়ান ও বাংলাদেশের মীর আখতার লিমিটেডের জয়েন্ট ভেঞ্চার। আর টাঙ্গাইল-এলেঙ্গার ১০ কিলোমিটার বাস্তবায়ন করছে দক্ষিণ কোরিয়ার জিডিসিএল ও বাংলাদেশের ডিয়েনকো লিমিটেডের জয়েন্ট ভেঞ্চার।

প্রকল্প কার্যালয়ের তথ্য বলছে, ডিসেম্বর ২০২১ সাল পর্যন্ত ৬৮ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নয়ন, ২৬টি সেতু ও ৭২টি বক্স কালভার্ট, চারটি ফ্লাইওভার, দুটি রেলওয়ে ওভারপাস এবং ১১টি আন্ডারপাসের কাজ শেষ হয়েছে। সব মিলিয়ে ভৌত অগ্রগতি ৯৯ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ বলে জানিয়েছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। সবশেষ সংশোধনী অনুযায়ী, চার লেন মহাসড়কটির কাজ শেষ হওয়ার কথা চলতি বছরের জুনে। তবে এ সময়ের মধ্যে বাকি কাজগুলো শেষ করা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। একাধিক ফ্লাইওভার, সেতু, কালভার্টসহ বিভিন্ন অনুষঙ্গের কাজ সম্পন্ন করতে সম্প্রতি মেয়াদ আরো ছয় মাস বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের এপ্রিলে একনেকে অনুমোদিত হয় জয়দেবপুর-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প। তখন নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৭৮৮ কোটি। বাস্তবায়ন কাল ছিল ২০১৩ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত। তবে নির্ধারিত মেয়াদে কাজ শেষ করতে না পারা, অদূরদর্শী কর্মপরিকল্পনা এবং নতুন কিছু অনুষঙ্গ যুক্ত হওয়ায় প্রকল্পটির ডিপিপি এখন পর্যন্ত চারবার সংশোধন করা হয়েছে। ধাপে ধাপে বাস্তবায়নের মেয়াদ বেড়েছে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। নির্মাণ ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২১৪ কোটি টাকা। তবে এ মেয়াদেও প্রকল্পটির কাজ শেষ না হওয়ায় আরেক দফা প্রকল্পটি সংশোধনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। প্রস্তাবটি অনুমোদিত হলে পঞ্চমবারের মতো সংশোধন হবে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক চার লেনে উন্নয়ন প্রকল্প।

প্রস্তাবিত সংশোধনীতে প্রকল্পের মেয়াদ ছয় মাস বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে মেয়াদ বাড়লেও নির্মাণ ব্যয় কিছুটা কমছে। বর্তমানে এ প্রকল্পটির নির্মাণ ব্যয় ৬ হাজার ২১৪ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা। এ হিসেবে নির্মাণ ব্যয় কমছে প্রায় ৪৬ কোটি টাকা।

মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব সম্পর্কে জানতে জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা সড়ক (এন-৪) চার লেন মহাসড়কে উন্নীতকরণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. ইসহাকের সঙ্গে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। পরে যোগাযোগ করা হলে সওজ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী আবদুস সবুর বলেন, প্রকল্পের বেশির ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। আমি যতদূর জানি একটি ফ্লাইওভারের কাজ কিছুটা বাকি আছে, যা কয়েকদিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। আমরা চলতি বছরের মধ্যে মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীতের কাজ সম্পন্ন করতে পারব। পাশাপাশি এ বছরের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে পুরো সড়কটি উদ্বোধন করা হবে বলেও জানান তিনি।

Friday, January 28, 2022

বিদেশে বিনিয়োগের পথ খুললো

বিদেশে বিনিয়োগের পথ খুললো
bb-Bangladesh Bank-Bangladesh Bank-বাংলাদেশ ব্যাংক-বিবি

দেশি উদ্যোক্তাদের বিদেশে বিনিয়োগের পথ উন্মুক্ত হলো অবশেষে। নতুন করে স্বপ্ন দেখার দিন শুরু দেশের ব্যবসায়ীদের। এ নিয়ে ইতোমধ্যে বিধিমালাও দিয়েছে সরকার। সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা। সবাই বলছেন, এতে এক নতুন দিগন্তের পথে যাত্রা শুরু করলো বাংলাদেশের অর্থনীতি।

গত ১৬ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। এই বিধিমালাকে মূলধনী হিসাব লেনদেন (বিদেশে ইকুইটি বিনিয়োগ) বিধিমালা, ২০২২ বলা হচ্ছে।

সম্পদের ২৫ শতাংশ বিনিয়োগ করা যাবে

বিধিমালার ক্ষমতা বলে স্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ হিসেবে সহযোগী প্রতিষ্ঠান তৈরি কিংবা কোনও বিদেশি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কিনতে পারবে।

রফতানিকারকরা বিদেশে সহযোগী প্রতিষ্ঠান তৈরির জন্য গত ৫ বছরের বার্ষিক গড় রফতানি আয়ের ২০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় করতে পারবেন। নীতিমালা অনুযায়ী, রফতানিকারকদের হাতে আরেকটি বিকল্প আছে। তারা চাইলে সর্বশেষ নিরীক্ষিত বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে দেখানো নিট সম্পদের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবেন। তবে ইকুইটি বিনিয়োগ সংক্রান্ত বাছাই কমিটি প্রয়োজনে তার নিরিখে বিনিয়োগের সীমা কমাতে বা বাড়াতে পারবে।

নতুন এই বিধিমালায় বলা হয়েছে, উদ্যোক্তারা রফতানি থেকে অর্জিত আয়ের একটি অংশ এক্সপোর্ট রিটেনশন কোটা (ইআরকিউ) অ্যাকাউন্টে রেখে থাকেন। বিদেশে বিনিয়োগের যোগ্যতা অর্জনের জন্য রফতানিকারকদের তাদের ইআরকিউ অ্যাকাউন্টে যথেষ্ট পরিমাণ স্থিতি রাখতে হবে।

ইতিবাচক প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে

ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা বলছেন, বহির্বিশ্বে বিনিয়োগ যেমন বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার প্রকাশ ঘটাবে, তেমনি এতে নতুন নতুন বাজার দখলের পাশাপাশি মধ্যবর্তী প্রক্রিয়াকৃত পণ্য কম মূল্যে আমদানি ও বিদেশি প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকারের সুযোগও তৈরি হবে।

বিনিয়োগকৃত দেশের সম্পদ, কাঁচামাল ও প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার তৈরি হওয়ায় কোনও একটি প্রতিষ্ঠানের নানামুখী সামর্থ্য ও দক্ষতা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে নিজের দেশও নানাভাবে উপকৃত হবে। এ ছাড়া দেশের সামগ্রিক ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিতেও ভূমিকা রাখবে এ সিদ্ধান্ত। সবচেয়ে বড় কথা, বিনিয়োগকৃত দেশগুলো থেকে ব্যবসার মুনাফা ফিরে আসার ফলেও দেশের অর্থনীতিতে নতুন গতি আসবে।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের অনুমতি না দেওয়া হলেও টাকা এমনিতেই চলে যাবে। এর চেয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন দেওয়ায় ভালো হয়েছে। ইতোমধ্যে কেনিয়া, কম্বোডিয়া, জর্ডানসহ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিদের বেশ কিছু কারখানা হয়েছে। কাজেই নীতিমালা হওয়ায় এখন জবাবদিহিও থাকবে।

বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা সরকারের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে মেট্রোপলিটন চেম্বারের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আনিস এ খান বলেন, সরকারের এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। দীর্ঘমেয়াদে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে আমাদের অর্থনীতিতে। তিনি উল্লেখ করেন, দেশে ব্যবসার ‘ডুইং বিজনেস’-এর জন্য এই বিধিমালা সহায়ক হবে। তিনি বলেন, চেম্বারের নেতারা এখন এই বিধিমালা পর্যালোচনা করছেন।

তৈরি পোশাক রফতানিকারকদের সংগঠন বিকেএমই-এর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, দেশি উদ্যোক্তাদের বিদেশে বিনিয়োগের পথ উন্মুক্ত করে দেওয়ায় অবশ্যই সরকার সাধুবাদ পেতে পারে। পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগও যাতে দেশে আসে সে ব্যাপারে উদ্যোগী হতেও সরকারের প্রতি পরামর্শ দেন তিনি।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংক এ পর্যন্ত ১৫টি প্রতিষ্ঠানকে দেশের বাইরে সহযোগী প্রতিষ্ঠান বা অফিস খোলার অনুমতি দিয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ৫টি প্রতিষ্ঠান ভারত, আয়ারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর ও সৌদি আরবে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, ফার্মাসিউটিক্যাল ও খেজুরের ব্যবসায় বিনিয়োগ করার অনুমতি পেয়েছে। এর আগে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১০টি প্রতিষ্ঠানকে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইথিওপিয়া ও কেনিয়ায় সহযোগী প্রতিষ্ঠান খোলার অনুমতি দেয়।

আবেদনের পূর্বশর্ত ও যোগ্যতা

নীতিমালা অনুযায়ী, যেসব রফতানিকারীর ইআরকিউ অ্যাকাউন্টে যথেষ্ট পরিমাণ স্থিতি আছে, তারা অন্যান্য দেশে বিনিয়োগের আবেদন জানাতে পারবেন। আবেদনকারীকে আর্থিকভাবে সচ্ছল ও পাঁচ বছর কার্যকর থাকতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক প্রণীত ‘গাইডলাইন অন রিস্ক বেইজড ক্যাপিটাল অ্যাডিকোয়েসি’-এ নির্ধারিত ম্যাপিং অনুযায়ী আবেদনকারীর ক্রেডিট রেটিং গ্রেড অন্তত ২ হতে হবে।

দেশের বাইরে বিনিয়োগ প্রস্তাবনার ব্যবসায়িক কার্যক্রম সাধারণভাবে আবেদনকারীর বাংলাদেশস্থ ব্যবসায়িক কার্যক্রমের অনুরূপ বা সহায়ক বা সম্পূরক হতে হবে।

বিনিয়োগ প্রস্তাবটি নির্ভরযোগ্য সম্ভাব্যতা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অর্থনৈতিকভাবে টেকসই হতে হবে।

বিনিয়োগ প্রস্তাবটিতে ভবিষ্যতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনাময় উৎস পাওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে রফতানি বৃদ্ধিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকতে হবে। এ ছাড়া বিদেশে বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব থাকতে হবে।

আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানে আন্তর্জাতিক ব্যবসায় পরিচালনা, অর্থায়ন ও বিনিয়োগে দক্ষ ও অভিজ্ঞ মানবসম্পদ থাকতে হবে।

অনুমোদনের পর যেসব কাগজ জমা দিতে হবে

সংস্থাগুলোকে কোনও খেলাপি ঋণ বা অসমন্বিত পুনর্গঠিত বৃহৎ ঋণ নেই এবং শুল্ক, ভ্যাট ও আয়কর অপরিশোধিত নেই, এই মর্মে আলাদা দুটি সনদ দিতে হবে। নীতিমালা অনুযায়ী, আবেদনকারী প্রতিষ্ঠান বিস্তারিত বিবরণ, বিদেশি সাবসিডিয়ারি কোম্পানিতে বিনিয়োগের বিস্তারিত বিবরণ, বিদেশে বিনিয়োগ প্রস্তাবকারী কোম্পানির পরিচালকদের অঙ্গীকারনামা, অনুমোদনের সময় প্রস্তাবিত বিনিয়োগ গন্তব্যের ব্যবসায়িক পরিবেশ সংক্রান্ত প্রতিবেদন, বিধিবদ্ধভাবে নির্ধারিত সময়ে অথবা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক বর্ধিত সময়ের মধ্যে রফতানি মূল্য ফেরত এসেছে মর্মে তফসিলি ব্যাংকের সনদ এবং সকল প্রকার আমদানির দায় নিষ্পত্তির সপক্ষে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সনদ জমা দিতে হবে।

আবেদনের প্রক্রিয়া

আবেদনকারীকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদিত যেকোনও ডিলার শাখার মাধ্যমে কাগজপত্র ও ফরম যথাযথভাবে পূরণ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বরাবর আবেদন করতে হবে।

প্রস্তাবটি বাণিজ্যিক সম্ভাবনা মূল্যায়নসহ আবেদনকারীর বিদেশে বিনিয়োগের প্রয়োজনীয় অর্থ, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আবেদনকারীর অপরাপর যোগ্যতা, বৈদেশিক খাতের ব্যালেন্স অব পেমেন্টের বর্তমান অবস্থা, অত্যাসন্ন পরিবর্তন, বিনিয়োগ প্রস্তাবিত দেশের ঝুঁকি, উক্ত দেশের আইন, বিধিবিধান, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়জনিত জটিলতা ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয় বিবেচনাপূর্বক বাছাই কমিটিতে উপস্থাপনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগ বিভাগ একটি প্রতিবেদন তৈরি করবে।

বাছাই কমিটি ও অনুমোদন প্রক্রিয়া

বাছাই কমিটির সভাপতি থাকবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। এ ছাড়া থাকবেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার একজন সদস্য, বাংলাদেশে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের একজন নির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের একজন কমিশনার, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান, বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের একজন সদস্য, যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদফতরের নিবন্ধক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মহাপরিচালক পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা, শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা, প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা।

এই কমিটির সদস্য-সচিব থাকবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক।

সভাপতি কমিটির সব সভায় সভাপতিত্ব করবেন। সভাপতি ন্যূনতম ৭ জন সদস্যের উপস্থিতিতে সভার কোরাম হবেন। সভাপতি এবং উপস্থিত সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে সভার সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে এবং ভোটের সমতার ক্ষেত্রে সভাপতির তৃতীয় বা নির্ণায়ক ভোট প্রদানের ক্ষমতা থাকবে।

বিনিয়োগ করা যাবে যেসব দেশে

যেসব দেশ থেকে মুনাফা বাংলাদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে কোনও বিধিনিষেধ নেই, শুধু সেসব দেশেই বিনিয়োগ করার অনুমতি দেওয়া হবে।

যেসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বৈত কর পরিহার চুক্তি রয়েছে, সেসব দেশে বিনিয়োগকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। এ ছাড়াও, যেসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় পুঁজি-বিনিয়োগ, উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও সংরক্ষণ চুক্তি আছে, সেগুলোও প্রাধান্য পাবে।

যেসব দেশের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং বৈদেশিক সম্পদ নিয়ন্ত্রকের থেকে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, সেসব দেশে বিনিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন করা হবে না।

প্যারিসভিত্তিক ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্স যেসব দেশকে অবৈধ আর্থিক লেনদেনের গন্তব্য হিসেবে চিহ্নিত করেছে, সেসব দেশেও বিনিয়োগের অনুমতি মিলবে না।

একইভাবে, যেসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনও ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই, সেখানেও বিনিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হবে না।

আরও যত নিয়ম

নীতিমালা অনুযায়ী, বিদেশে বিনিয়োগের অর্থ সরাসরি সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠাতে হবে। তবে শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে বিনিয়োগের অর্থ সরাসরি শেয়ার হস্তান্তরকারীর অনুকূলে পাঠাতে হবে। যদি কোনও কারণে প্রস্তাবিত বিনিয়োগ সম্ভব না হয়, তাহলে দেরি না করে অর্থ দেশে ফেরত পাঠাতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্ব অনুমতি ছাড়া আয়, লভ্যাংশ, মুনাফা অথবা শেয়ার বিক্রি থেকে পাওয়া অর্থ পুনর্বিনিয়োগ করা যাবে না।

অর্থপাচার, সন্ত্রাসী অর্থায়ন এবং ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কর্তৃক স্থানীয় সংস্কৃতি ও ধর্মের প্রতি অবমাননাকর আচরণ ও মন্তব্য এবং বর্ণবাদী আচরণ ও কার্যকলাপের বিষয়ে সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে শূন্য সহনশীলতার নীতি অনুসরণ করতে হবে।

বাংলাদেশি আবেদনকারী প্রতিষ্ঠান ইক্যুইটি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দেশের বাইরের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সম্পূর্ণ মালিকানা বা পরিচালনা নিয়ন্ত্রণে সক্ষম এরকম সংখ্যক শেয়ারের মালিক হতে হবে। কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে তাদের সর্বোচ্চ সংখ্যক বাংলাদেশি নাগরিকদের নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

নীতিমালা অনুযায়ী সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড যেকোনও সময় বিদেশে স্থাপিত সহযোগী প্রতিষ্ঠান সরেজমিন পরিদর্শন করতে পারবে। পরিদর্শনে বাংলাদেশ সরকারের হাইকমিশন বা ক্ষেত্রমতো দূতাবাস সংশ্লিষ্ট থাকবে।

বিনিয়োগকারীদের বিদেশে স্থাপিত সহযোগী প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণ, বার্ষিক শেয়ার মূলধনের সংক্ষিপ্তসার এবং প্রযোজ্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত অংশীদারদের (শেয়ারহোল্ডার) তালিকা জমা দিতে হবে।

বিনিয়োগকৃত দেশের যথাযথ সরকারি কর্তৃপক্ষ অনুমোদিত সহযোগী প্রতিষ্ঠানের পরিচালক, ব্যবস্থাপক ও ব্যবস্থাপনা প্রতিনিধির বিবরণী এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনও ধরনের পরিবর্তনের তথ্য প্রতিবছর বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জমা দিতে হবে।

বিনিয়োগকারীদের মূল প্রতিষ্ঠান এবং সমন্বিত প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে জমা দিতে হবে।

এ ছাড়াও, বিনিয়োগকারীদের তাদের ব্যবসার প্রকৃতি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের বিবরণ জমা দিতে হবে, যেখানে বর্তমান এবং নতুন পণ্য, ব্যবসায়িক টার্নওভার, মুনাফার মার্জিন, উৎপাদন খরচ এবং বাজারের অংশীদারিত্ব ইত্যাদি বিষয় উল্লেখ করতে হবে।

নীতিমালায় বাংলাদেশি বিনিয়োগকারীদের অন্যান্য বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া শেয়ার বিক্রি করার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগের অপব্যবহার এবং সংশ্লিষ্ট বিধিমালা লঙ্ঘন করা হলে এটি অর্থপাচার ও মানি লন্ডারিং অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। এই অপরাধে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী, পরিচালক, প্রধান নির্বাহী এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তারা দায়ী হবেন এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এবং বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৪৭-এর সংশ্লিষ্ট বিধান অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য হবেন।

এই বিধিমালায় বাংলাদেশ ব্যাংককে সার্কুলার জারির ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক জনস্বার্থে এবং বিধিমালার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সময় সময় প্রয়োজনীয় সার্কুলার বা গাইডলাইন জারি করতে পারবে।