Friday, May 19, 2023

বাড়তি কর আদায়ে নতুন রূপরেখা আসছে বাজেটে

বাড়তি কর আদায়ে নতুন রূপরেখা আসছে বাজেটে 
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে ৬০ হাজার কোটি টাকা। এই বাড়তি কর আদায়ে নতুন রূপরেখা আসছে বাজেটে। বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে রাজস্ব বাড়াতে আয়করে জোর দেওয়া হচ্ছে। এই খাত থেকে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা বাড়তি আদায়ের একটা কৌশল নির্ধারণ করা হচ্ছে। এই অর্থ আদায়ে আসছে বাজেটে এজেন্ট নিয়োগ দিয়ে করজাল বিস্তৃত হচ্ছে ইউনিয়ন পর্যন্ত। এ ছাড়া প্রথমবারের মতো বসছে কার্বন ট্যাক্স। আর মোটা দাগে ভ্রমণ কর, সারচার্জ এবং বাধ্যতামূলক রিটার্নে নতুন খাত যুক্ত করে আয়কর খাতের এই অর্থ আদায়ের লক্ষ্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে আয়কর খাতের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ২২ হাজার ১০০ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে আরও ৩০ হাজার কোটি টাকা বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে এনবিআর। এই লক্ষ্য পূরণে বা আয়কর খাতের এই রাজস্ব আহরণ বাড়াতে নতুন নতুন কিছু খাত বাধ্যতামূলক রিটার্নের আওতায় আসছে। বর্তমানে টিআইএনধারীর সংখ্যা এতে রিটার্ন জমাও বাড়বে, আসবে বাড়তি রাজস্ব। বর্তমানে ৩৮ ধরনের সেবায় রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেওয়া বাধ্যতামূলক করায় আয়করদাতার সংখ্যা বেড়েছে। এর আগে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ৩৮ ধরনের সরকারি-বেসরকারি সেবার বিপরীতে টিআইএন (করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর) সনদের পরিবর্তে আয়কর রিটার্ন জমার স্লিপ বাধ্যতামূলক করা হয়। এনবিআরের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত ৩১ লাখ ৯৬ হাজার ৭১৬টি রিটার্ন জমা পড়েছে। এর আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে জমা পড়েছে ২৫ লাখ ৫৪ হাজার ২১৫ রিটার্ন। সে হিসেবে এক বছরেরও কম সময়ে ৭ লাখের বেশি রিটার্ন জমা পড়েছে।

রিটার্নের বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, চলতি অর্থবছরের বাজেটে ৩৮টি সেবায় রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতে রিটার্ন জমা বেড়েছে। সরকারের রাজস্বও বেড়েছে। আগামী অর্থবছরে এই সেবার পরিমাণ আরও বাড়ানোর প্রস্তাব করা হবে বলেও নিশ্চিত করেছেন এই কর্মকর্তা।

সূত্র আরও জানায়, গ্রামাঞ্চলের কর দেওয়ার সামর্থ্য আছে এসব মানুষকে আগামী বাজেটে করজালের আওতায় আনার কাজ চলছে। এজন্য এনবিআর আগামী অর্থবছরের বাজেটে কর এজেন্ট নিয়োগের প্রস্তাব করেছে। আর এসব কর এজেন্ট নতুন করদাতাদেরও সাহায্য করবেন। অথবা ই-টিআইএন থাকা সত্ত্বেও যারা এখনো কর রিটার্ন জমা দেননি, তাদের রিটার্ন প্রস্তুত করতেও সাহায্য করবে। আগামী বাজেটের অর্থ বিলে ‘ইনকাম ট্যাক্স প্রিপেয়ারার (আইটিপি)’ নামে একটি নিয়ম অন্তর্ভুক্ত করা হবে, এরই মধ্যে যার খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বেসরকারি কর সংগ্রহ এজেন্ট নিয়োগের ধারণাটি নেওয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্যের মতো উন্নত দেশগুলো থেকে। ট্যাক্স প্রিপেয়াররা সাধারণ কর ফর্ম, ফাইল প্রস্তুত করেন বা প্রস্তুতে সহায়তা করেন। এমনকি অডিটকালে ও কর আদালতে সমস্যায় পড়লেও তারা করদাতাদের সাহায্য করতে পারেন।

এনবিআর সূত্র জানায়, ৩ থেকে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত সম্পদ থাকলে, নিজ নামে একাধিক গাড়ি থাকলে বা সিটি করপোরেশন এলাকায় ৮ হাজার বর্গফুটের অধিক আয়তনের আবাসিক সম্পত্তি থাকলে ন্যূনতম ১০ শতাংশ সারচার্জ দিতে হয়। সারচার্জ সাধারণ নির্ধারিত সম্পদের বেশি পরিমাণে সম্পদ থাকলে সারচার্জ দিতে হয়। ধনী করদাতাদের আয়করের ওপর এখন ১০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত সারচার্জ বিদ্যমান রয়েছে। ব্যক্তি করদাতার সম্পদসীমা ১০ থেকে ২০ কোটি টাকার মধ্যে থাকলে তাকে ২০ শতাংশ সারচার্জ দিতে হয়। আর ২০ থেকে ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত সম্পদের ওপর ৩০ শতাংশ এবং ৫০ কোটি টাকার ওপরে সম্পদের জন্য সারচার্জ দিতে হয় ৩৫ শতাংশ। আগামী অর্থবছরের বাজেটে সারচার্জ ৫ থেকে ১০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হতে পারে। এ ছাড়া রাজস্ব আহরণ বাড়াতে ইনভায়রনমেন্টাল ট্যাক্স নামে একটি নতুন করারোপের চিন্তা করছে সরকার। যারা একাধিক গাড়ি ব্যবহার করেন তাদের আগামী বাজেটে এই কর দিতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে এই করকে কার্বন ট্যাক্স হিসেবেও উল্লেখ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে এনবিআরের সংশ্লিষ্ট এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, মূলত এটা হবে ইনভারনমেন্টাল ট্যাক্স। আগামী বাজেটে এই করারোপের প্রস্তাব করা হবে। যারা একাধিক গাড়ি ব্যবহার করেন তারা গাড়ির ফিটনেস সনদের সঙ্গে এই কর প্রদান করবেন। এই করের হারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই করহার নির্ধারণ করা হবে গাড়ির সিসির ওপর নির্ভর করে। অর্থাৎ সিসি ভেদে করহার নির্ধারিত হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা। [কালবেলা]

Sunday, May 14, 2023

১০ মাসে অপ্রচলিত বাজারে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৩১ শতাংশ

১০ মাসে অপ্রচলিত বাজারে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৩১ শতাংশ









চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) অপ্রচলিত বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে। এসব বাজারে প্রায় ৩০ দশমিক ৮০ শতাংশ রপ্তানি বেড়ে ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। অপ্রচলিত বাজারগুলোর মধ্যে রয়েছে- জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ভারত এবং দক্ষিণ কোরিয়া। তৈরি পোশাকশিল্প মালিক ও রপ্তানিকারক সমিতি বিজিএমইএ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, আলোচ্য সময়ে জাপানের প্রধান বাজারগুলোতে বাংলাদেশের পোশাক পণ্যের রপ্তানি ছিল এক দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার বাজারে ৯৬১ দশমিক ৩০ মিলিয়ন, ভারতীয় বাজারে ৮৮৯ দশমিক শূন্য ৬ মিলিয়ন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার বাজারে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪৭৭ দশমিক ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

আলোচ্য সময়ে মোট পোশাক রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ বেড়েছে। এ সময়ে বাংলাদেশ থেকে মোট পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৩৮ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের। এর মধ্যে ইউরোপের বাজারে গেছে ১৯ দশমিক ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পোশাক (মোট রপ্তানির ৪৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ)। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে ৬ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের পোশাক, যা মোট রপ্তানির ১৮ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। এ সময়ে কানাডায় রপ্তানি হয়েছে এক দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পোশাক, যা মোট রপ্তানির ৩ দশমিক ১৯ শতাংশ।

আলোচ্য সময়ে অপ্রচলিত বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের। এটি এ সময়ে মোট পোশাক রপ্তানির ১৮ দশমিক ১৬ শতাংশ।

এ বিষয়ে বিজিএমইএ’র পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারে ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এ বছর পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ। ইইউ অঞ্চলের প্রধান বাজারগুলোর মধ্যে জার্মানিতে আমাদের রপ্তানি কমেছে। এ সময়ে জার্মানিতে রপ্তানি কমে হয়েছে ৫ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় জার্মানিতে ৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ রপ্তানি কমেছে।

তিনি বলেন, আলোচ্য সময়ে ফ্রান্স এবং স্পেনে পোশাক রপ্তানি হয়েছে যথাক্রমে ২ দশমিক ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ও ২ দশমিক ৯৫ বিলিযন মার্কিন ডলার। এ সময়ে দেশ দুটিতে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয় যথাক্রমে ২২ দশমিক ২১ শতাংশ এবং ১৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ। ইতালিও ৪২ দশমিক ৪০ শতাংশ ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির প্রবণতা দেখিয়েছে। দেশটিতে এক দশমিক ৮৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। তবে, বুলগেরিয়া এবং পোল্যান্ডে রপ্তানি কমেছে। এ সময়ে দেশ দুটিতে যথাক্রমে ৪৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ এবং ১৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ পোশাক রপ্তানি কমেছে।

আলোচ্য সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে বা রপ্তানি কমেছে, যা হতাশাব্যাঞ্জক বলে মনে করেন বিজিএমইএ’র এ পরিচালক। তিনি বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৬ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের। একই সময়ে যুক্তরাজ্য এবং কানাডায় যথাক্রমে ১০ দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং ১৬ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে অপ্রচলিত বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ৩০ দশমিক ৮০ শতাংশ বেড়ে ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। এটা আমাদের জন্য অনেক ইতিবাচক দিক।