Wednesday, April 30, 2014

বরগুনায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে সৌরশক্তির ব্যবহার বেড়েছে

বরগুনা: লোডশেডিংয়ের ঝামেলা নেই। কর্মীদের খবর দিলেই বাড়িতে লাগিয়ে (স্থাপন) দিয়ে যায়। খরচও তুলনামূলক অনেক কম। বরগুনার বিভিন্ন গ্রাম ও সমুদ্র উপকূলীয় এলাকাগুলোর স্থানীয় লোকজন ব্যাপক হারে সৌরশক্তি ব্যবহার করে আলোর চাহিদা মেটাচ্ছেন। শুধু গ্রামই নয়, জেলার ৬টি উপজেলা শহরে বিদ্যুতের পাশাপাশি মানুষের বাসা-বাড়ি কিংবা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে সৌরশক্তির ব্যবহারও চোখে পড়ার মতো। কৃষি জমিতে সৌর সেচ পদ্ধতি চালু হয়েছে তিন বছর আগেই। এখন সড়কবাতি জ্বালানোর কাজেও সৌরশক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।

সৌরশক্তি ব্যবহারকারীরা জানান, রাতে বাতি জ্বালানোসহ বৈদ্যুতিক পাখা  (ছোট ডিসি ফ্যান) ও টেলিভিশন চালানোর মতো সুবিধা পাওয়ায় সৌরশক্তি এ অঞ্চলে খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তাছাড়া যেসব এলাকায় বিদ্যুত পৌঁছাতে এখনও সময়ের দরকার সেই এলাকাগুলোতে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত সবাই সৌর শক্তি ব্যবহার করা শুরু করেছেন। শহরাঞ্চলে বিদ্যুতের লোডশেডিং চলাকালীন আলোর চাহিদা মেটাতেও সৌরশক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে ব্যাপক হারে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচী দপ্তরগুলোর মতো জরুরী গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিদ্যুতের পাশাপাশি সৌরশক্তির ব্যবহার বেশ পুরাতন। এ অঞ্চলে বিদ্যুত সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান খোদ পল্লী বিদ্যুতের অফিসগুলোতেও সৌরশক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। জেলার ফেরীঘাটগুলোর মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সৌরশক্তির সড়কবাতি অন্ধকার দূর করছে। সৌরশক্তির ব্যবহারে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন পপকর্ন বিক্রেতারা। পপকর্ন বিক্রয় ভ্যানে সৌরপ্যানেল ও ব্যাটারির সাহায্যে মোটর চালনা করা হচ্ছে।  

সৌরশক্তিকে ব্যবহার করে বরগুনার কৃষকরা চাষ করছেন শত শত একর জমি। সূর্যালোকের সাহায্যে ফসলী জমিতে এই সেচ ব্যবস্থা কৃষকদের জ্বালানী তেল বা বিদ্যুতের উপর নির্ভরশীলতার হাত থেকে বাঁচিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তায় ২০১০ সাল থেকে বরগুনায় ৬ টি গ্রামে ৬টি সোলার ইরিগেশন পাম্পিং সিস্টেম ৪০ একর করে জমিতে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানি সরবরাহ করে যাচ্ছে। 

ছোট-বড় প্রায় ২৫টি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিকভাবে জেলার গ্রাহকদের সৌরশক্তি ব্যবস্থার চাহিদা পূরণ করছে। ঐ প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশ কয়েকজন বিপণন কর্মকর্তা আলাপকালে জানান, ১২ হাজার টাকা থেকে ৭০ হাজার টাকা ব্যয়ে চাহিদা ও বিদ্যুত ক্ষমতা অনুযায়ী সৌর শক্তি ব্যবস্থা স্থাপন (ইনস্টল) করেন তারা। মোট দামের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ টাকা এককালীন পরিশোধ করে বাকি টাকা ৩০ থেকে ৪০ কিস্তিতে পরিশোধ করার সুযোগ থাকায় সৌর শক্তি ব্যবস্থা গ্রাহকদের কাছে বেশ সুবিধাজনক ও ব্যবহারযোগ্য হয়েছে। তারা আরও জানান, ইতোমধ্যে বরগুনা জেলায় ১০ হাজারের বেশি মানুষ সৌরশক্তি ব্যবহার করছেন।

প্রত্যন্ত গ্রামগুলোর পাশাপাশি জেলার উপকূলীয় ২টি উপজেলা তালতলী ও পাথরঘাটার সাগরতীরবর্তী মানুষেরা সৌর শক্তিতে বেশী উপকৃত হচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন স্থানীয় বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা এনএসএস’র নির্বাহী পরিচালক অ্যাড. শাহাবুদ্দিন পান্না। তিনি বলেন, সৌরশক্তির বিদ্যুত ব্যবহার করে প্রান্তিক মানুষের মধ্যে শিক্ষা ও সচেতনতা অনেক বেড়েছে। তারা দেশ-বিদেশের সমসাময়িক বিষয়গুলো সম্পর্কে প্রতিনিয়ত ওয়াকিবহাল হচ্ছেন।

আমতলী ডিগ্রি কলেজের পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রধান, সহকারী অধ্যাপক উত্তম কুমার কর্মকার বলেন, সৌরশক্তির ব্যবহার বিদুতের বাড়তি চাহিদা থেকে আমাদের মুক্তি দিচ্ছে। উপযোগিতা থাকায় উপকূলীয় এলাকায় (উইন্ডমিল) বায়ূ শক্তি ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। সেটি সৌরশক্তির চেয়েও কম ব্যয়ের হবে। 

প্রযুক্তির ব্যবহার ও প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ দ্রুত উপকূলীয় এলাকার মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করছে। এখন সাগরপাড়ের মানুষও রাতে (সৌর) বিদ্যুতের আলোয় কাজ করছে। বিনোদন ও শিক্ষার জন্য টেলিভিশন দেখছে। দেশের প্রতিটি এলাকায় ডিজিটাল সুবিধা পৌঁছে যাচ্ছে। এভাবেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, জানালেন, বরগুনা-১ আসনের সাংসদ অ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। 

Tuesday, April 29, 2014

ছাগল পালনে অর্থনৈতিক দুর্দশা ঘুচিয়েছে নাজমুন্নাহার

জয়পুরহাট: জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল ঊপজেলার গুরুরা গ্রামের দারিদ্র্যপীড়িত নাজমুন্নাহার  ছাগল পালন করে স¦াবলম্বী হয়েছে। সংসারে খরচের জন্য তাকে আর পেছনে তাকাতে হয় না।

নাজমুন্নাহার জানান, স্বামী শহিদুল ইসলামের রাজমিস্ত্রির কাজের রোজগারে এক ছেলে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন চলতো। আর্থিক অনটন থাকলেও স্বাবলম্বী হওয়ার আকাক্সক্ষা ছিল তার। এই আকাক্সক্ষা পূরণের লক্ষ্যে নাজমুন্নাহার বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এ্যাহেড সোশ্যাল অর্গানাইজেশন (এসো)র সদস্য হয় এবং ২০০৮ সালে ছাগল পালনের ওপর প্রশিক্ষণ নেয়। এরপর সেখান থেকে ৫ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করে।  এ থেকে ২ হাজার টাকায় একটি ছাগী কিনে শুরু করে ছাগল পালন। বর্তমানে নাজমুন্নাহারের খামারে ১২টি উন্নত যমুনা পাড়ী জাতের ছাগল রয়েছেÑ যার একেকটির মূল্য ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা।
ছাগল পালন প্রকল্পের আওতায় ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে ছাগল পালনের পাশাপাশি বসতবাড়ীর পাশে শাক-সবজি চাষ ও  হাঁস-মুরগি পালন করে সে। ছাগল বিক্রির টাকায় ছেলের লেখাপড়া ও সংসারের খরচের পাশাপাশি কিস্তি দিতে সমস্যা হয় না নাজমুন্নাহারের।
পাঁচ বছর আগে ৫ হাজার টাকা নিয়ে শুরু হওয়া ঋণের পরিমাণ এখন ১৫ হাজার টাকা। নাজমুন্নাহার  এ পর্যন্ত ৫০ হাজার টাকার ছাগল বিক্রি করেছে এবং জমি কেনার পাশাপাশি প্রতি বছর ২ থেকে ৩ বিঘা জমি লিজ নিয়ে ধান, আলুসহ অন্যান্য ফসল চাষে স্বামীকে সহযোগিতা করছে। এ রকম আয়-বর্ধনমূলক  নানা কাজ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছে নাজমুন্নাহার। তাকে দেখে ওই এলাকার  অসহায়, দুস্থ ও বেকার মহিলারা তাকে অনুসরণ করে দারিদ্র্য বিমোচন করছে। যেমন, ওই এলাকার অসহায় দুস্থ মহিলা শাহিনা, বিলকিস, স্বপ্নাসহ আরো অনেকে  ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে  ছাগল পালন, বসত বাড়ীর আশেপাশে শাক-সবজি চাষÑ আবার কেউবা হাঁস-মুরগি পালন করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে।
ক্ষেতলাল উপজেলার গুরুরা গ্রামে গিয়ে দুস্থ মহিলাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ‘এসো’ থেকে ঋণ নিয়ে ছাগল ও হাঁস-মুরগি পালন করে বদলে ফেলেছে তাদের সংসারের ভাগ্যের চাকা। বর্তমানে তারা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছে। অথচ  কয়েক বছর আগেও তাদের চোখে-মুখে ছিল বিষাদের ছাপ। সংসারের অস্বচ্ছলতার কারণে অনেকেই ছেলে-মেয়েদের প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত লেখাপড়া করাতে পারেনি। নেমে পড়তে হয়েছে জীবিকার সন্ধানে। স্বল্প বয়সেই জীবন সংগ্রামের কঠিন তাগিদে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করতে হয়েছে।
সমাজে  সব মহিলারাই স্বপ্ন দেখে সৎ উপার্জনে তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে বড় হওয়ার। আর এই বড় হওয়ার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে খোঁজ মেলে ছাগল পালন ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচির। 
এসো’র নির্বাহী পরিচালক মতিনুর রহমান বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ছাগল পালন কর্মসূচির সদস্য হয়ে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে ছাগল ও হাঁস-মুরগি পালন করে পুরুষের পাশাপাশি  অসহায় নারীরাও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারছে।

Sunday, April 27, 2014

আমজাদ খানের ব্যতিক্রমী তরমুজ চাষ

হবিগঞ্জ: বাইরে সবুজ আর ভিতরে লাল টকটকে এবং  রসে টুই টুম্বুর যে ফলটি আমাদের কাছে পরিচিত তার নাম ‘তরমুজ’। গরমকালে সুমিষ্ট এই ফলের ব্যাপক চাহিদা। পুষ্টিগুণের পাশাপাশি এই ফলের রয়েছে ঔষধীগুণ। কিন্তু প্রচলিত এই তরমুজের বাইরে রং-বেরঙের আর সুস্বাদু তরমুজ চাষ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন হবিগঞ্জের রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃষক আমজাদ হোসেন খান। 

বাংলাদেশের সব স্থানে কমবেশি তরমুজ চাষ হয়। তবে এ বছর হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার হরিনখোলা গ্রামের রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃষক আমজাদ খান প্রচলিত তরমুজের বাইরে ‘মধুবালা তরমুজ’ নামে হলুদ রঙের এক ধরনের তরমুজ চাষ করে তাক লাগিয়েছেন সবাইকে। এই তরমুজের লাভ থেকে তার ভাগ্যেরও পরিবর্তন হয়েছে। তার দাবি এই ‘মধুবালা তরমুজ’ তিনিই প্রথম বাংলাদেশে চাষ করেছেন।

কৃষক আমজাদ হোসেন খান শুধু মধুবালাই নয়, তার খামার চাষ করা হয়েছে বিভিন্ন রঙের তরমুজ। এগুলো হল- জেসমিন, সুপার সাইন বয়, টারজন, ফেয়ারী, ১৭০৪ ও সুপার ড্রাগন প্রজাতির তরমুজ । সুপার ড্রাগনের বাইরে নীল এবং ভিতরে হলুদ। হলুদ রংঙের তরমুজ মধুবালা যেমন সুস্বাদু তেমনি আকর্ষণীয়। অল্প টাকা খরচ করে তিনগুণ লাভ হওয়ায় হলুদ তরমুজ চাষ করতে আগ্রহী হয়ে এলাকায় কৃষকরা তার কাছে ধর্ণা দিচ্ছেন। 
আর কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, হলুদ তরমুজ লাভজনকের পাশাপাশি বাজারে এর চাহিদা বেশি। আমজাদ হোসেন খান এ বছর তিনি ৩ একর জমিতে আবাদ করেন ব্যতিক্রমধর্মী তাইওয়ান থেকে আগত হলুদ তরমুজ মধুবালা। এতে তার ব্যাপক ফলন হয়। এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং বিক্রি হয়েছে ৮ লাখ টাকার বেশী। মধুবালা তরমুজ ক্ষেত থেকে তুলে আনার পর ওজন অনুযায়ী গ্রেডিং করা হয়। পরে সেগুলো নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় বাজারে এবং ঢাকার কাকরাইলে। এই তরমুজ ৪০ থেকে ১শ’ টাকায় বিক্রি হয়।

হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার সদরের বাসিন্দা আমজাদ হোসেন খান প্রায় তিন বছর পূর্বে শুরু করেন তরমুজ চাষ। প্রথমদিকে তরমুজের ব্যাপক লাভজনক হওয়ায় তিনি বৃহৎ পরিসরে চাষ করার চিন্তা করেন। এর ধারাবাহিকতায় এ বছর ব্যতিক্রমধর্মী তাইওয়ান থেকে আনা হলুদ মধুবালাসহ ব্যতিক্রমধর্মী প্রজাতির তরমুজ আবাদ শুরু করেন।

কৃষক আমজাদ হোসেন খান এখন প্রস্তুতি নিচ্ছেন, বর্ষা মৌসুমে বিশেষ পলিথিনের মাধ্যমে হলুদ তরমুজ চাষ করার জন্য। ইতোমধ্যে চারা প্রস্তুত হয়েছে। রমজান মাসে যাতে ফলন আসে সেই লক্ষে তিনি ১০ একর জমিতে ফলাবেন এই তরমুজ। আগামী মৌসুমে তরমজু চাষ করবেন ২০ একর ভুমিতে।

নিজের তেমন জমি না থাকায় তিনি হরিনখোলা গ্রামে ৩০ একর জমি লীজ নিয়ে তোলেন কৃষি খামার। তার তরমুজ বাগানে এলাকার  ৩০ থেকে ১শ’ জন শ্রমিক কাজ করছেন। শ্রমিকরা জানিয়েছেন তরমুজ বাগানে কাজ করে তাদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে ভালভাবে জীবন-যাপন করছেন। 

আমজাদে হোসেন খানের দেখাদেখি হরিনখোলাসহ চৌমুহনী ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকায় শুরু হয়েছে তরমুজ আবাদ। বর্তমানে ঐ এলাকার  দেড় হাজার কৃষক এই তরমুজ চাষে জড়িত। যেখানে হবিগঞ্জ জেলায় তরমুজ আবাদ হয় ৩শ’ হেক্টর জমিতে, সেখানে চৌমুহনী ইউনিয়নেই আবাদ হয় ১৮০ হেক্টর জমি। 

কৃষক আমজাদ হোসেন তরমুজের পাশাপাশি টমেটো আবাদেও সফলতা অর্জন করেছেন। এ বছর তিনি ১ লাখ কেজি টমেটো সিঙ্গাপুরে রফতানি করেছেন। গত বছর পেয়েছিলেন ৪০ হাজার কেজি। আগামীতে তরমুজ রফতানিরও ইচ্ছা রয়েছে তার। গত বছর টমেটো আবাদ করে পেয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি কর্তৃক রৌপ্য পদক। পরে তাকে অনেক প্রতিষ্ঠান দেয় সম্মাননা। এ বছর তার টার্গেট রাষ্ট্রপতির স্বর্ণপদক। সেটি তিনি অর্জন করতে চান তরমুজ চাষের সফলতা দিয়েই।

আমজাদ খান জানান, কৃষি খামারে তিনি ক্যামিক্যাল ব্যবহার না করে জৈব প্রযুক্তি ব্যবহার করেন। তিনি সেখানে ১ হাজার সেক্স ফেরোমেন ফাঁদ বসিয়েছেন। কোন ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান না থাকলেও সুযোগ পেলেই প্রশিক্ষণে অংশ নেন তিনি। কৃষি বিভাগ ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায়ই বিভিন্ন লোকজন পরিদর্শন করেন তার খামার।

আমজাদ হোসেন খান আরও জানান, তরমজু চাষের জন্য প্রচুর বৃষ্টি হলে ভাল হয়। বৃষ্টি কম হলেও সেচ দিয়ে তা পোষানো যায়। তরমুজ আবাদে পোকা ও ফ্রুট ফ্লাই-এর আক্রমণের পাশাপাশি পচন রোগের প্রাদুর্ভাব রয়েছে। নিবিড় পরিচচর্যার মাধ্যমে এই অসুবিধা দূর করা সম্ভব।

আমজাদ হোসেন খান ২ সন্তান নিয়ে এখন সুখেই জীবন-যাপন করছেন। অথচ এক সময় তাকেও অর্থ কষ্টের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়েছিল। 

হরিনখোলা গ্রামের উজ্জল মিয়া জানায়, আমজাদ খান সাহেবের তরমুজ খেতে সবাই পছন্দ করে। আমরাইও এই তরমুজ খেয়েছি। খুবই সুস্বাদু। বর্তমানে তার কৃষি খামারে আমি নিয়মিত কাজ করে পরিবারকেও সহায়তা করতে পারছি। মাধবপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ আতিকুল হক জানান, হলুদ রঙের মধুবালা তরমুজ একটি হাইব্রিড জাত। বাংলাদেশে এই তরমুজ তেমন একটা আবাদ হয়নি। অপ্রচলিত ও সুস্বাদু হওয়ায় এর চাহিদা বাজারে বেশি। আমজাদ হোসেন খানকে এই তরমুজ চাষে কৃষি বিভাগ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়েছে। 

মাধবপুর উপজেলার উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা ঋষিকেশ ভট্টাচার্য্য জানান, মধুবালা তরমুজ ১ থেকে সাড়ে ৩ কেজি পর্যন্ত ওজন হয়। ফুল আসা থেকে পরিপক্ক হতে এই ফলের সময় প্রয়োজন ১ মাস। অন্যান্য জাতের তুলনায় এই ফসলের উৎপাদন বেশী হয়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক গোপাল চন্দ্র দাস জানান, আমাদের কৃষিতে অনেক সম্ভবনা রয়েছে। কিন্তু সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর মত উদ্যোমী লোকের অভাব রয়েছে। আমজাদ হোসেন খানের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। তাকে অনুসরণ করে আরও কৃষক এগিয়ে আসবে বলে তিনি আশাবাদী।

হবিগঞ্জ সরকারী বৃন্দাবন কলেজের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের প্রভাষক সুভাষ চন্দ্র দেব জানান, তরমুজের বৈজ্ঞানিক নাম ‘সিটরোনাস ভালগারিস’। এই ফল প্রচুর ক্যালসিয়াম ও লৌহসমৃদ্ধ পুষ্টিকর খাবার। ঔষধি গুণ সম্পন্ন এই ফল ও বীজ মাথা ঠাণ্ডা রাখে এবং দেহকে শীতল রাখে। আমজাদ হোসেন খানের এই তরমুজ চাষে সফলতা অনেক মানুষকে অনুপ্রেরণা যোগাবে।

গ্যাস ফিল্ড ফ্রুটস ভ্যালী : একটি দৃষ্টিনন্দন ফল উপত্যকা

হবিগঞ্জ: শাহজীবাজারে অবস্থিত হবিগঞ্জ গ্যাস ফিল্ডের পাহাড়ের টিলায় প্রায় ৩ একর জায়গা জুড়ে তৈরি করা হয়েছে মনোরম ফলের বাগান, যার নাম দেয়া হয়েছে ‘ফ্রুটস ভ্যালী’ বা ফলের উপত্যকা। দেশী-বিদেশী বহু দূর্লভ এবং বিলুপ্তপ্রায় ২০০ জাতের বিভিন্ন ফলের সমারোহে ফ্রুটস ভ্যালীটি পরিপূর্ণ। 

এখানে বিভিন্ন জাতের গাছ থেকে ইতিমধ্যে ফল আসা শুরু হয়েছে যা বৃক্ষ প্রেমিকদের মাঝে আলোড়ন ও কৌতুহল সৃষ্টি করেছে। প্রতিনিয়ত বহু দর্শণার্থী দূর্লভ ফল বাগান দেখার জন্য ভিড় জমাচ্ছে। কিন্তু স্থানটি গ্যাস ফিল্ডের অভ্যন্তরে হওয়ায় পর্যটকরা দেখতে পারছে না। ১৩ জাতের পাখি এবং ৮ জাতের বিভিন্ন ধরণের কবুতর, খরগোশ ও বানর রয়েছে এ ফল উপত্যকায়। গড়ে তোলা হয়েছে ওষুধি গাছের মিউজিয়াম।

হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার শাহজিবাজারে হবিগঞ্জ গ্যাস ফিল্ড অবস্থিত। এই ফিল্ডটি বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানী লিমিটেড-এর অন্তর্গত পেট্রোবাংলার একটি প্রতিষ্ঠান। ২০০৩ সালে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে হবিগঞ্জ গ্যাস ফিল্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা ফিল্ডের এলাকাধীন অব্যবহৃত পাহাড়ের টিলায় তৈরি করেন এই ‘ফ্রুটস ভ্যালী’। ফ্রুটস ভ্যালীর মূল পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করেন গ্যাস ফিল্ডের উপ-ব্যবস্থাপক ইনচার্জ (ফিল্ড-প্রশাসন) এটিএম নাছিমুজ্জামান। পশু-পাখি এবং ফলের এই ভ্যালীটি প্রাকৃতিক অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। ফলে দেশী বহু পশু-পাখি এদের সান্নিধ্যে এসে ফ্রুটস ভ্যালীতে নির্বিঘেœ বিচরণ করে যা পরিবেশের জন্য সহায়ক ও মঙ্গলজনক।

ফ্রুটস ভ্যালীর প্রবেশ পথের ডান পাশে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন জাতের পেয়ারার বাগান। রাস্তার দুই পাশ দিয়ে লাগানো হয়েছে সুপারি গাছ যা প্রথম দর্শনেই দর্শণার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পেয়ারার বাগানের উত্তরের পাহাড়ের ঢালে রয়েছে বিভিন্ন জাতের আমের গাছ। এই গাছে ঝুলে থাকা আমগুলো খুবই দৃষ্টিনন্দিত। পাহাড়ের উত্তরে এক পাশে পেঁপে, অন্য পাশে লিচু বাগান। লিচু বাগানের বেদানা লিচু এক দুর্লভ সংগ্রহ যা প্রতিটি দর্শনার্থীকে মুগ্ধ করে। মহুয়া, পেস্তা বাদাম, আশফল, তৈকর, ফলসা বৈ-চি ফলের গাছগুলো রয়েছে ফ্রুটস ভ্যালীর মাঝখানে। বাগানের উত্তর পাশে টিলার ঢালে রয়েছে অমৃত সাগর ও হীমসাগর কলার বাগান। দুর্লভ এবং নতুন উদ্ভাবিত বেনিসন আম সত্যিই দর্শনীয় বৃক্ষ। এই আমের রং, স্বাদ এবং আকার যে কারো দৃষ্টি আকর্ষণ করবেই। টিলার মাখানে ট্যাং আর থোকা থোকা আঙ্গুর দেখে দর্শণার্থীরা অভিভূত হন এবং ক্ষণিকের জন্য হলেও থমকে দাঁড়ান। থমকে দাঁড়ান ২৪ ইঞ্চি সাইজের অতি ক্ষুদ্র গাছে থোকা থোকা আম ঝুলতে দেখে। 
এই বারমাসী আমের গাছে এক ডালে আম অন্য ডালে মুকুল যা সত্যিই দুর্লভ এবং অবিশ্বাস্য দৃশ্য। ফ্রুটস ভ্যালীর পশ্চিম পাশে বিভিন্ন জাতের খরগোশ এবং পূর্ব পাশে রয়েছে দূর্লভ প্রজাতির বিভিন্ন পাখি যা ফ্রুটস ভ্যালীর প্রাকৃতিক পরিবেশকে করেছে অধিকতর প্রাকৃতিক। প্রতিনিয়ত বাইরে থেকে পাখি এসে এদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেছে। ইতিমধ্যে ফ্রুটস ভ্যালীটি পশু-পাখিদের জন্য হয়ে উঠেছে অভয়ারণ্য চারণ ভূমি। সর্ব পশ্চিমে এক কোণায় রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ এবং তার পাশে রয়েছে ৮ জাতের কবুতর। অতি দৃষ্টিনন্দিত ২টি টার্কি পুরো ভ্যালী দর্শণার্থীদের সাথে ঘুরে বেড়ায়, ওদের পেখম মেলানো নাচ প্রতিটি দর্শনার্থীকে মুগ্ধ করে। ফ্রুটস ভ্যালিতে যে লিপস্টিক তেঁতুলের গাছটি রয়েছে তা বাংলাদেশে বিলুপ্ত প্রায়। রয়েছে দেশের সবচেয়ে উঁচু বৃক্ষ বাইলাম গাছ। এ সব গাছের সাথে রয়েছে অনেক দেশের বরেণ্য ব্যক্তির ছোঁয়া। কারণ এখানে আসা বরেণ্য ব্যক্তিরা দূর্লভ গাছের চারা রোপণ করেছেন।

হবিগঞ্জ গ্যাস ফিল্ডে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারিসহ তাদের পরিবারবর্গের প্রতিটি সদস্যদের দেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগান দিয়ে চলছে এই ফ্রুটস ভ্যালী। বছরের ১২ মাসই বিভিন্ন ধরণের ফল ও সবজি এই ফ্রুটস ভ্যালীতে পাওয়া যায়। ভবিষ্যতে কোম্পানী কর্তৃপক্ষ ফ্রুটস ভ্যালীকে অর্থনৈতিক দিক থেকে বিবেচনা করলে এটি একটি লাভজনক এবং দৃষ্টান্তমূলক কৃষি খামার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। ছোট পরিসরে পারিবারিক পরিমন্ডলে পুষ্টি যোগানদাতা হিসেবে এই ফ্রুটস ভ্যালী একটি মডেল হিসেবে সমাদৃত হবে। যে কেউ এ ধরণের বাগান করে অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হতে পারবে। 
ফ্রুটস ভ্যালী তৈরির মূল উদ্দেশ্য মানুষের মাঝে আত্ম চেতনাবোধ জাগ্রত করা এবং সবুজ-শ্যামল বাংলাদেশ গড়া। এই ফ্রুটস ভ্যালীতে রোপিত বিরল এবং বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতির ফল সংরক্ষণ করে সারা দেশে এর বংশ বিস্তারের প্রয়াস চালানো হবে। যাতে ক্ষুদ্র কৃষক সীমিত পরিসরে এ ধরণের বাগান বা খামার প্রতিটি বাড়িতে তৈরি করে আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারে এবং দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা এবং সহযোগিতা প্রদানের লক্ষ্যে তৈরি হয়েছে ফ্রুটস ভ্যালী।

ফ্রুটস ভ্যালীতে দেশী-বিদেশী বহু দূর্লভ এবং বিলুপ্তপ্রায় ২০০ জাতের ফলের গাছ রয়েছে। ফলের গাছগুলো হচ্ছে মহুয়া, আঁশ ফল, বিলাতী গাব, চেরী, আগর, লটকন, শরীফা, ডেওয়া, লবংগ, লুকলুকি, ম্যাট্রোস, জামান ফল, কাউ ফল, সফেদা (বিদেশী), সফেদা (দেশী), পান বাহার, কদবেল (হাইব্রীড), বেল (দশ সেরী), করমচা (লাল), করমচা (মিষ্টি), করমচা (সাদা), বিলম্ব, জাফরান, তৈকর, কাজু বাদাম, স্টার আপেল, কামরাংগা, অরবড়ই, মিষ্টি তেঁতুল, টক তেঁতুল, লিপিস্টিক তেঁতুল, গোলাপজাম, আতা (থাইল্যান্ড), হাজারিকা কাঁঠাল, বারমাসী কাঁঠাল, দেশী কাঁঠাল, পেঁপে (হাইব্রীড), চালতা, দারচিনি, বাইস্যুপ, লংগন, বেদানা, রামবুয়াম (থাইল্যান্ড),  জলপাই (হাইব্রীড), থাই মিষ্টি জলপাই, খেজুর, ইরাকি খেজুর, তাল, জাম, আঙ্গুর (সবুজ), আঙ্গুর (লাল), ট্যাং, তেজপাতা, লিচু (চাইনিজ), লিচু (বোম্বাই), বেদানা লিচু, ডালিম, কাজি পেয়ারা, মকুন্দপুর পেয়ারা, আঙ্গুর পেয়ারা, চাইনিজ পেয়ারা, স্টবেরী পেয়ারা, ওয়াশিংটন পেয়ারা, ইপসা পেয়ারা, পলি পেয়ারা, আপেল পেয়ারা, নারিকেল কুল, আপেল কুল, কুল (ঢাকা-৯০), কুল (রাজশাহী), বন বড়ই, তাইওয়ান কুল, কুল (থাইল্যান্ড) বারমাসী, বাউকুল, কমলা (ছাতক), কমলা (নাগপরি), কমলা (কাশ্মিরী), মালটা, গোসাম্বী, সুপারী, আমড়া (হাইব্রীড), হাজারী লেবু, শরবতি লেবু, কামরাংগা লেবু, কাগজী লেবু, নাসপাতি, কলা (অমৃত সাগর), কলা (হিমসাগর), জাম্বুুরা, আমরুল (সাদা), জামরুল (লাল), জামরুল (লাল-সবুজ), জামরুল (সবুজ), জামরুল (গোলাপি), আপেল জামরুল, বারমাসী আম (থাইল্যান্ড), সূর্যপুরী আম, খিসরাপাতি আম, নারকেল, আম্রপালী আম, দেশারী আম, মল্লিকা আম, গোপাল ভোগ আম, মহনভোগ আম, আলফাজ আম, ফজলি আম, বেনিসন আম, ফলসা, মিশ্রী ডোগ আম, পেস্তা বাদাম, পিচ ফল, জাবাটি কাবা (ব্রাজিল), এ্যাবোকেডো (রাশিয়া), চাপালিশ, সবুজ আপেল, আমলকি, ল্যাংসার্ট, সীডলেস আম, সীডলেস পেয়ারা, পার্সিমন (জাপান), নীল, কফি, বামন জলফাই, লাভ লাভ (সিংগাপুর), ডেফল, চিরতা, জ্যৈষ্ট মধু, খয়ের, মনকাটা, কাসাভা।

ফ্রুটস ভ্যালির স্বপ্ন দ্রষ্টা এটিএম নাছিমুজ্জামান এই ফলগুলোর বর্ণনা দিয়ে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন্ যার নাম ‘বাংলাদেশের যত ফল’। তিনি জানান, নিছক শখের কারণেই বাগানটি গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু গ্যাস ফিল্ডের অভ্যন্তরে হওয়ায় এবং এটি কেপিআই হওয়ায় পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। 

হবিগঞ্জ সরকারী বৃন্দাবন কলেজেন উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক সুভাষ দেব জানান, ফ্রুটস ভ্যালি শুধু পর্যটন কেন্দ্র নয়। চাইলে উদ্ভিদের গবেষণার জন্য এটি ব্যবহার করা সম্ভব। তিনি এটিকে পর্যকটকদের জন্য উন্মুক্ত করতে বিকল্প রাস্তা গড়ে তোলার আহবান জানান।

Thursday, April 24, 2014

তিনটি দেশে রফতানি হচ্ছে খুলনার মাটির টালী

খুলনা: বিলুপ্তপ্রায় মাটির টালী শিল্প আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। খুলনা বিভাগ থেকে তিনটি দেশে মাটির টালী রফতানি হচ্ছে। গেল বছর খুলনা বিভাগ থেকে অন্তত ৬ লাখ ৪৬ হাজার ৮৩৫ ইউরো, ১ লাখ ৫২ হাজার ৬৩৫ মার্কিন ডলার ও ৭ হাজার ২৮৩ পাউন্ড স্ট্যালিন মূল্যের মাটির টালী রফতানি করা হয়েছে। এতে একদিকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে, অন্যদিকে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুয়োগ সৃষ্টি হচ্ছে। 

খুলনা রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো সূত্রে জানা যায়, বিদায়ী বছরে খুলনা বিভাগের ১০ জেলা খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর, মাগুরা, বিনাইদহ, নড়াইল, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর থেকে তিনটি দেশ ইতালি, যুক্তরাজ্য ও নেদারল্যান্ড এ অন্তত ৬ লাখ ৪৬ হাজার ৮৩৫ ইউরো, ১ লাখ ৫২ হাজার ৬৩৫ মার্কিন ডলার এবং ৭ হাজার ২৮৩ পাউন্ড স্ট্যালিন মূল্যের মাটির টালী রফতানি করা হয়েছে। 

এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে মাটির টালী রফতানি হয়েছে ৬৪ হাজার ৬৭৩ ইউরো মূল্যের। ফেব্রুয়ারি মাসে মাটির টালী রপ্তানি হয়েছে ৩৪ হাজার ৪৫ মার্কিন ডলার। মার্চ মাসে মাটির টালী রফতানি হয়েছে ৪২ হাজার ২৬১ ইউরো ৬ হাজার ৭৩৭ মার্কিন ডলার মূল্যের। এপ্রিল মাসে মাটির টালী রফতানি হয়েছে ২ লাখ ৬ হাজার ৭৪ মার্কিন ডলার মূল্যের। মে মাসে মাটির টালী রফতানি হয়েছে ১৫ হাজার ৮২৮ মার্কিন ডলার এবং ১ হাজার ১২৩ পাউন্ড স্ট্যালিন মূল্যের। 

জুন মাসে মাটির টালী রফতানি হয়েছে ২২ হাজার ৫১৯ ইউরো ডলার মূল্যের। জুলাই মাসে মাটির টালী রফতানি হয়েছে ২৫ হাজার ১৮৫ মার্কিন ডলার এবং ৬ হাজার ৩৮ ইউরো ডলার মূল্যের। আগস্ট মাসে মাটির টালী রফতানি হয়েছে ৩৪ হাজার ৬২৫ ইউরো এবং ৬ হাজার ১৬০ স্ট্যালিন পাউন্ড মূল্যের। সেপ্টেম্বর মাসে মাটির টালী রফতানি হয়েছে ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৭৫৯ ইউরো মূল্যের। অক্টোবর মাসে মাটির টালী রফতানি হয়েছে ২০ হাজার ৫৫৮ মার্কিন ডলার মূল্যের। নভেস্বর মাসে মাটির টালী রফতানি হয়েছে ৩৩ হাজার ৬৬৯ ইউরো মূল্যের। 

ডিসেম্বর মাসে মাটির টালী রফতানি হয়েছে ১৮ হাজার ২৯০ ইউরো ডলার। মাটির টালী উৎপাদন করে একদিকে, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে অন্যদিকে, ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু মাটির টালী উৎপাদনে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কিনা গবেষণার বিষয় বলে জানিয়েছেন পরিবেশবাদীরা। 

টালী শ্রমিক শফিকুল ইসলাম জানান, আগে মাটির টালীর তেমন একটা চাহিদা ছিলো না। গত বছর ধরে এর চাহিদা বেড়েছে। ফলে আমরা যারা টালীর কাজ করি তাদের আয়-উপার্জন এখন আগের চেয়ে বেড়েছে। টালী ব্যবসায়ী কামাল আহমেদ জানান টালী বিদেশে রফতানি হচ্ছে। আশা করি আগামীতে এর পরিমাণ আরো বাড়বে।

খুলনা পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক তরুন কান্তি শিকদার জানান, টালী পোড়ালে পরিবেশের ক্ষতি হবে। কিন্তু ক্ষতির পরিমাণ কেমন তা গবেষণা করে দেখতে হবে। এর সাথে অনেক মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িত এবং রফতানি করে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে। অতএব, এদিকে লাভবান হতে গেলে অন্যদিকে একটু ক্ষতি হবে, এটিই স্বাভাবিক।

খুলনা রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো কতৃপক্ষ জানায়, মাটির টালী উৎপাদন বিলুপ্ত হতে বসেছিল। শিল্পটি আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে এখন বিদেশে রফতানি হচ্ছে। কলারোয়া এলাকায় এটি বেশি উৎপাদিত হচ্ছে। এর সাথে অনেক মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িত এবং রফতানি করে বেশ কিছু বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জিত হচ্ছে। 

Monday, April 21, 2014

স্ট্রবেরি চাষ করে মণিরামপুরের শিক্ষিত বেকার ফারুক হোসেন স্বাবলম্বী

যশোর: স্ট্রবেরী সারা বিশ্বের একটি জনপ্রিয় ফল। কিছুটা লিচুর ন্যায়, দৃষ্টি নন্দন ও সুস্বাদু। এ ফলটি জীবন রক্ষাকারী নানা পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। এটি বীরুৎ জাতীয় বহু বর্ষজীবী উদ্ভিদ। এটি শীত প্রধান দেশের ফসল হলেও এ দেশে শীতকালে স্ট্রবেরী চাষ সম্ভব। সারা পৃথিবীতে নানা জাতের স্ট্রবেরী চাষ হলেও- দীর্ঘ দিবাজাত, স্বল্প দিবা জাত ও দিন নিরপেক্ষ জাতের চাষ বেশী হয়। 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুর হোসেন সোমা ক্লোনাল ভেরিয়েশন প্রযুক্তির সাহায্যে এ দেশে চাষ উপযোগী করে- রাবি-১, রাবি-২, রাবি-৩ নামে তিনটি জাত উদ্ভাবন করেছেন। খোলামেলা জায়গা, পানি নিষ্কাশন, সেচ, তাপমাত্রা, উজ্জ্বল সূর্যলোক অর্থাৎ উপযুক্ত পরিবেশে বাংলাদেশের নানা জায়গায় গত কয়েক বছর যাবৎ এর চাষ শুরু হয়েছে এবং স্বাবলম্বী হচ্ছে শিক্ষিত বেকার যুবকরা। 

টেলিভিশনে স্ট্রবেরী চাষের ওপর একটি সচিত্র প্রতিবেদনসহ অনুষ্ঠান দেখে যশোরের মণিরামপুর উপজেলার মোহনপুর গ্রামের মোসলেম উদ্দিনের পুত্র এমএ পাস শিক্ষিত বেকার যুবক ফারুক হোসেন শিমুলের আগ্রহ জন্মে স্ট্রবেরী চাষের। টেলিভিশন থেকে নেয়া তথ্য নিয়ে শিমুল ছুটে যান মাগুরার স্ট্রবেরী চাষি তুহিনের কাছে। তুহিনের মাধ্যমে শিমুল চলে যান এ দেশের স্ট্রবেরী চাষের উদ্ভাবক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের অধাপক ড. মনজুর হোসেনের কাছে। আত্মবিশ্বাসের প্রতীক শিমুল ড. মনজুর হোসেনের মাধমে স্ট্রবেরী চাষের ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পরিদর্শন করেন দেশের বিভিন্ন স্থানের নানা ক্ষেত। স্ট্রবেরী চাষের ওপর সম্যক ধারণা নিয়ে বাড়ি ফেরেন শিমুল।

সংকটময় ও তীব্র প্রতিযোগিতার এ সময়ে চাকরির পেছনে না দৌঁড়িয়ে তিনি স্থির করেন নিজেকে আমি স্ট্রবেরী চাষ করবো এবং নিজেকে অন্যান্যের ন্যায় আত্মনির্ভরশীল করে তুলব। সে আত্মপ্রত্যয় নিয়ে স্থানীয় কামালপুর মাঠে ২০ কাঠা জমি লিজ নিয়ে উদ্ভাবক ও মাগুরার চাষী তুহিনের পরামর্শ মোতাবেক নিজস্ব প্রজ্ঞা খাটিয়ে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে ৫ হাজার চারা রোপণ করেন গত বছর অক্টোবর মাসের শেষের দিকে।

নভেম্বর-এপ্রিল পর্যন্ত ৫ মাস এ চাষের জন্য উপযোগী সময়। জমি লিজ, উপযুক্ত মাটি, সেচ, সার, উত্তম পরিচর্যাসহ ফল আসা পর্যন্ত গতবছর শিমুলের খরচ হয়েছে প্রায় ৯০ হাজার টাকা। ৪৫-৬০টি স্ট্রবেরীতে ১ কেজি হয়। প্রতি কেজি স্ট্রবেরী (ফল) পাইকারি স্থানীয় যশোরের হাটবাজারে ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে ৯শ’ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। খরচ বাদে প্রায় ৩ লাখ টাকা আয় হয়েছে তার। উপযুক্ত পরিবেশ পেলে প্রতিটি স্ট্রব্রেরী গাছ থেকে ৩শ’ গ্রাম ফলা পাওয়া যেতে পারে। তবে তার ক্ষেতের গাছ থেকে আরও বেশি ফল পাওয়া গেছে বলে শিমুল জানান। এ বছরও স্ট্রবেরী চাষের জন্যে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে শিমুল। 
মাত্র ৫/৬ মাসে ৩ লাখ টাকা আয় করা একজন শিক্ষিত বেকার যুবকের স্বপ্নের ব্যাপার হলেও মণিরামপুরের মোহনপুর গ্রামের শিক্ষিত বেকার যুবক শিমুল সে স্বপ্নকে সম্ভব এবং বাস্তবে পরিণত করে চলেছেন। সে এখন আধুনিক প্রযুক্তিতে গড়ে তুলেছেন অগ্রণী বিশেষায়িত কৃষি খামার। 

Saturday, April 19, 2014

ব্যাটের গ্রাম যশোরের নরেন্দ্রপুর : সম্ভাবনা ও সমৃদ্ধির নতুন দিগন্ত

যশোর: যশোর শহর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে অজপাড়া গাঁ নরেন্দ্রপুরের মিস্ত্রিপাড়া। এটা এখন ব্যাটের গ্রাম নামে পরিচিতি পেয়েছে। শতাধিক পরিবার জড়িয়ে পড়েছে এই পেশায়। নারী-পুরুষ, ছেলে-বুড়ো সবাই দিনের বেশিরভাগ সময় ব্যয় করেন ক্রিকেটের ব্যাট তৈরিতে। অনেকেই আগে পেশায় ছুতোর ছিলেন। আর্থিক দিক থেকে  তা লাভজনক না হওয়ায় সে পেশা ছেড়ে দিয়ে তারা ব্যাট তৈরি করতে শুরু করেন। এতে তাদের আর্থিক স্বচ্ছলতার এসেছে। তাদের দেখাদেখি অনেকে ভাগ্য ফিরাচ্ছেন এই পেশা বেছে নিয়ে। তাদের তৈরি ব্যাট পৌঁছে যাচ্ছে বগুড়া, দিনাজপুর, রংপুর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। 

প্রায় ২০ বছর আগে এ গ্রামের সঞ্জিত মজুমদার এই কাজটি শুরু করেছিলেন। খুলনার ক্রীড়াসামগ্রী ব্যবসায়ীরা তাকে এই ব্যাট তৈরিতে উদ্বুদ্ধ করেন। সঞ্চিত নমুনা এনে কয়েকটি ব্যাট তৈরি করে দেখালেও তখনো কিছু সমস্যা ছিল। এরপর ব্যবসায়ীরা তাকে উন্নতমানের ব্যাট তৈরির কলাকৌশল শিখিয়ে দেয়। কিন্তু সঞ্জিত সে শিক্ষা ধরে রাখতে পারেনি। তবে তার কাজ দেখে অনেকেই এগিয়ে এসেছে এবং তারা কাজ শুরু করে দেয়। তারা ফলও পেয়ে যায়। এখন এই পরিবারগুলোর দৈন্যতা নেই, তারা স্বচ্ছলতার মুখ দেখেছে। 

ব্যাট প্রস্তুতকারী মো. তরিকুল ইসলাম ব জানান, আমাদের বড় সমস্যা বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ থাকলে যন্ত্র বসিয়ে কাজ করতে পারতাম। তিনি জানান, হাতে কাজ করা বেশ কঠিন। 

ছোট ব্যাট, বড় ব্যাট, ভালমানের ব্যাট তৈরি হয় এখানে। প্রকৃত সিজনে (শীতকালে) মিস্ত্রিরা কাজ করেন দিন-রাত। এখন অফ সিজন স্বাভাবিক বাজার ধরে রাখতে কাজ করছেন আর আগামী দিনের জন্য জমা করছেন প্রয়োজনীয় কাঠ সাইজ করে। তবে তাদের বাজার ধরতে হয় বাইরের জেলায়। মোবাইলে অর্ডার পেয়ে রূপদিয়া বাজারে যেয়ে ট্রাকে উঠিয়ে দিতে হয়। দামও সংগ্রহ করতে হয় এইভাবে। পুরুষদের পাশাপশি মহিলারাও কাজ করেন। রং করা, স্টিকার লাগানো, আঠা লাগানো  প্রভৃতি।

ব্যাট তৈরির কারিগরদের নানাবিধ সমস্যা আছে। চলাচলের জন্য গ্রামে এখনো ভাল রাস্তা নেই। বিদ্যুতের অভাবে মেশিনের পরিবর্তে হাতেই কাজ করতে হয় অনেক পরিবারকে। পিলার আছে তার বা বিদ্যুৎ নেই বেশিরভাগ পরিবারে।

ব্যাট নির্মাতা শাহাবুদ্দিন জানান, একেক জন ব্যাট তৈরি করে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা রোজগার করি। প্রায় ১০০’ ঘর এ পেশার সাথে যুক্ত।

হিন্দু-মুসলিম শতাধিক পরিবার কাজ করে দেশের ক্রিকেট খেলার মাঠের তরুণ-যুবকদের হাতে তুলে দিচ্ছেন ব্যাট। তারা যে দাম পান দোকানদাররা পান তার চেয়ে বেশি। যশোরে নেই এই ব্যাটের পাইকারি বাজার। বাজারজাতের জন্যে তাকিয়ে থাকতে হয় অন্য জেলার ক্রেতার উপর। ছোট ব্যাট প্রতিশ’ খুব বেশি হলে ৩ হাজার টাকা, সাধারণ ব্যাট প্রতিশ’ ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা এবং ভাল মানের কাঠের তৈরি ব্যাট প্রতিশ’ ২০ হাজার টাকা পান তারা। তবে এর জন্য পর্যাপ্ত কাঠ কেনা, শ্রম দিয়ে তৈরি করা ছাড়াও নানাবিধ বিনিয়োগ করতে হয়। তারপরও লাভ যা থাকে তা দিযে খেয়ে পরে সঞ্চয় থাকে কিছু।

স্বপন বিশ্বাস জানান, ১০-১২ বছর যাবৎ এই কাজ করে জীবন নির্বাহ করে আসছি। পরিবার-পরিজন নিয়ে ভাল আছি।

সমস্যা থাকা সত্ত্বেও নরেন্দ্রপুরের মিস্ত্রিপাড়ার মানুষ আনন্দেই সময় কাটান ব্যাট তৈরি করে। বছরের পর বছর তারা আপন মনে নিপূণভাবে তৈরি করছেন খেলার এই সামগ্রীটি। অভ্যন্তরীণ বাজারে তাদের তৈরি ব্যাট পাওয়া যাচ্ছে বলেই বৈদেশিক মূদ্রা ব্যয়ে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে না। আর সরকারি সহযোগিতা, বিদ্যুৎ সমস্যা, রাস্তার সমস্যা, বাজারজাত সমস্যা না থাকলে এটি একটি বড় শিল্পে পরিণত হতে পারে। আসতে পারে সুনাম ও অর্থ দেশের জন্য। 

Monday, April 7, 2014

ভাসমান ধাপে চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছে কপোতাক্ষ পাড়ের মানুষ

যশোর: যশোরের কেশবপুর উপজেলা ও তার সংলগ্ন কপোতাক্ষ পাড়ের অসহায় মানুষ সবজি চাষ করে আর্থিকভাবে পরিবর্তন এনেছেন। তারা পানির উপর ভাসমান ধাপে উৎপাদিত বিভিন্ন ধরনের সবজি বিক্রি করেই অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা আনতে সক্ষম হয়েছেন। 

ধাপ চাষে সাফল্য দেখে আরো শত শত কৃষক এখন একাজে উৎসাহিত হচ্ছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্ব বৃহৎ এলাকা জুড়ে প্রবাহিত কপোতাক্ষ নদ পলিতে প্রায় ভরাট হয়ে গেছে। ফলে স্রোতহীন হয়ে পড়া ও পানির ধারণ ক্ষমতা না থাকায় প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে পানি উপচে কপোতাক্ষ অববাহিকা অঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়। ঘর-বাড়ি, ফসলের মাঠ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে ডুবে যায়। বন্যার সময় মানুষ ঘর বাড়ি ছেড়ে উঁচু স্থানে টং ঘর বেঁধে আশ্রয় নেয়। বছরের বেশ কয়েকটি মাস তারা এভাবে টং ঘরে মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হয়। 

১০/১১ বছর ধরে এ ভাবে বন্যা প্লাবিত হওয়ায় ফসল উৎপাদন করতে না পেরে কপোতাক্ষ অববাহিকা অঞ্চলের অনেক কৃষক অসহায় হয়ে পড়েছে। এ সমস্ত অসহায় ও দরিদ্র মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বি করতে এগিয়ে এসেছে এলাকার কয়েকটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা। যাদের পরামর্শে দরিদ্র মানুষেরা ৫ থেকে ১০ জনের এক একটি গ্রুপ করে কপোতাক্ষ নদে ভাসমান প্রাকৃতিক সম্পদ কচুরীপানা তুলে পচন দেন। এক সপ্তাহ পর তারা পচনকৃত কচুরীপানা দিয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট প্রস্থে ও ৩৫ থেকে ৪০ ফুট দৈর্ঘের ধাপ তৈরি করে। এভাবে ৫০ থেকে ৬০টি ধাপ পর পর সাজিয়ে কপোতাক্ষের পানিতে ভাসিয়ে রাখা হয়। তার পর ওই পচনকৃত কচুরীপানা দিয়ে গোলাকৃতির ট্যামা তৈরী করে ধাপের উপর বসিয়ে দেয়া হয়। 
এরপর ট্যামার মধ্যে লাল শাক, ঢেঁড়স, পালং শাক, মুলা, টমেটো, সীম, মিষ্টি কুমড়া, করলা, আলু, লাউয়ের বীজ বপন  এবং বেগুন, মরিচ, ওলকপি ও ফুলকপির চারা রোপন করা হয়। শাক সবজি বড় হলে কৃষকেরা তা তুলে বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেন। অনেক সময় তারা কপোতাক্ষ পাড় সংলগ্ন হাট বাজারের কাছে ধাপ ভাসিয়ে নিয়ে যেয়েও এসব শাক সবজি বিক্রি করে থাকেন। ক্রেতারাও কপোতাক্ষ পাড়ে যেয়ে ধাপ চাষীদের কাছে থেকে টাটকা শাক সবজি কিনে নেন। 

কৃষকরা জানান, প্রতি মৌসুমে সবজি বিক্রি করে খরচ বাদে এক একজন ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় করে থাকেন। ভাসমান ধাপে উৎপাদিত সবজি চাষের আয় থেকে এসব দরিদ্র মানুষ বন্যা ক্ষতি পুষিয়ে এখন অর্থনৈতিকভাবে অনেকটা স্বাবলম্বি হয়ে উঠছেন। একটি ভাসমান ধাপ তৈরী করতে খরচ হয় ২৫০ থেকে ২৭৫ টাকা। 

বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা সমাধান, সুশীলন ও আইডিও কেশবপুর, তালা ও কলারোয়া উপজেলার কপোতাক্ষ নদ সংলগ্ন গ্রামগুলির বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অসহায় ও দরিদ্র হয়ে পড়েছে এমন মানুষদের পরামর্শ ও ঋণ দিয়ে কপোতাক্ষ নদের পানিতে ভাসমান ধাপ চাষে আগ্রহী করে তোলে। কপোতাক্ষ পাড়ের মানুষ এ সব সংস্থার পরামর্শ ও ঋণ নিয়ে ব্যাপকভাবে ভাসমান ধাপ চাষ শুরু করেছেন। 

কেশবপুর, মনিরামপুর, তালা ও কলারোয়া উপজেলার অংশে কপোতাক্ষ নদের যেখানে পানি রয়েছে সেখানেই ধাপ চাষ হচ্ছে। বর্তমানে ৫ থেকে ৬ হাজার ধাপ কপোতাক্ষ নদের পানিতে ভাসমান অবস্থায় রয়েছে। আর এ ধাপ চাষের সাথে জড়িত রয়েছেন প্রায় দেড় হাজার মানুষ। 

ধাপ চাষের সাথে জড়িত কেশবপুর উপজেলার চাঁদড়া গ্রামের কৃষক মুনছুর আলি জানান, তারা প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে কপোতাক্ষের উপচে পড়া পানিতে বন্যা প্ল¬াবিত হয়ে ফসল হারিয়ে অর্থনৈতিকভাবে নিঃস্ব হয়ে পড়েন। স্থানীয় বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা সমাধানের পরামর্শ ও ঋণ নিয়ে কপোতাক্ষের বদ্ধ পানিতে ভাসমান ধাপ চাষ করে তিনি এখন অনেকটা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বি হয়েছেন। ‘সমাধান’ থেকে যে ঋণ নিয়েছিলেন তাও পরিশোধ করেছেন। তিনি এখন ধাপ চাষের পাশাপাশি ধাপ তৈরী করে অন্যের কাছেও বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন। 

আরেক বেসরকারী উন্নয়ণ সংস্থা সুশীলন থেকে ঋণ গ্রহণকারী মুস্তাইন বিল্ল¬াহ একজন সফল ধাপ চাষী। তিনি জানান, সুশীলন থেকে ঋণ নিয়ে ধাপ চাষ করে অনেক টাকা লাভ করেছেন। এ বছর তিনি নিজেই ৪০টি ধাপ তৈরী করে সবজি চাষের মাধ্যমে খরচ বাদে ৪৭ হাজার টাকা আয় করেছন। তার ধাপে যে সবজি রয়েছে তা থেকে তিনি আরো ২০ হাজার  টাকা আয় করতে পারবেন বলে জানান। 

উন্নয়ন সংস্থা সমাধানের পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় ৬৫০ জনকে পরামর্শ ও ঋণ দিয়ে ধাপ চাষে সহায়তা করা হয়। ধাপ চাষের আয় থেকে তারা সংস্থার সব ঋণও পরিশোধ করেছেন । 

কেশবপুর উপজেলা কৃষি কর্ম পাশাপাশি কপোতাক্ষ নদে ভাসমান ধাপ চাষ করে বাড়তি আয় করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। এ পদ্ধতিতে চাষাবাদে কর্তা সঞ্জয় কুমার দাস জানান, ধাপ চাষ লাভজনক। কপোতাক্ষ অঞ্চলের মানুষ কৃষি জমিতে চাষাবাদের খরচও কম লাগে। ধাপ চাষের শাক সবজি টাটকা ও সুস্বাদু। 

Sunday, April 6, 2014

নড়াইলে পল্লীর জেলেরা এখনো ভোঁদড় দিয়ে মাছ ধরে

নড়াইল: নড়াইল সদর উপজেলার কলোড়া ইউনিয়নের একটি গ্রামের নাম গোয়ালবাড়ি। এ গ্রামে জেলেরা খেয়ে না খেয়ে সংরক্ষণ করে চলেছে বিলুপ্তপ্রায় ভোঁদড়। স্থানীয় ভাষায় এদের ধেঁড়ে নামে ডাকা হয়। জেলেদের জীবিকার অন্যতম হাতিয়ার এই ভোঁদড় কেননা এই ভোঁদড় দিয়ে তারা মাছ ধরে। তাই ভোঁদড় তাদের সন্তানের মতো। নিজের সন্তানকে খেতে দিতে না পারলেও ভোঁদড়ের বাচ্চাকে গরুর দুধ খাইয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে এই গ্রামের লোকেরা। ওই ভোঁদড়রাই জেলেদের জালে তুলে দিচ্ছে ট্যাংরা, পুটিসহ নানা রকম মাছ। এ কারণে জেলেদের প্রিয় ভোঁদড়। 

তবে নদীর মাছ কমে যাওয়া, সুন্দরবনে বনদস্যুদের তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন গোয়ালবাড়ির জেলেরা ভোঁদড় নিয়ে শঙ্কিত। তারা কি বিলুপ্ত প্রায় প্রাণী ভোঁদড়কে শেষ পর্যন্তু বাঁচিয়ে রাখতে পারবে? এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বিভিন্ন পর্যায় থেকে।

জানা গেছে, নড়াইল শহর থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে নড়াইল-নওয়াপাড়া সড়কের পার্শ্বে কলোড়া ইউনিয়নের গোয়ালবাড়ি নামক একটি গ্রাম। এ গ্রামে জেলে পাড়ায় প্রায় শতাধিক পরিবার বসবাস করে। এদের অধিকাংশই খাল-বিল, নদী-নালা থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। পরিবারের মহিলারা বাড়িতে বসে জাল তৈরী, কোথাও জাল কেটে গেলে ঠিক করাসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে থাকে। কত বছর ধরে তারা ভোঁদড়ের সাহায্যে মাছ ধরছে তার সঠিক তথ্য কেউ জানাতে না পারলেও তাদের বাবা, ঠাকুর দাদারা এর সাহায্যে মাছ শিকার করত বলে জানান। কবে কখন কোথা থেকে ভোঁদড় আনা হয়েছিল তার হিসেব তাদের কাছে নেই। আগে এ গ্রামে কয়েকশ’ ভোঁদড় থাকলেও এখন এর সংখ্যা মাত্র ৩০টির মতো হবে। অভাব অনটনের কারণে অনেকে ভোঁদড় বিক্রি করে দিয়েছে। ভোঁদড় দেখতে অনেকটা বেজির মত। এ প্রাণী দুই থেকে তিন ফুট লম্বা হয়।

ভোঁদড় দিয়ে মাছ ধরা সম্পর্কে সচিন বিশ্বাস জানান, জাল দিয়ে তারা গোবরা, চিত্রা, ভৈরব নদীতে মাছ ধরে। দু’জন নৌকা চালায়। দু’জন জাল ধরে রাখে। আর ভোঁদড় জালের সঙ্গে পানিতে ছেড়ে দেওয়া হয়। এদের গলায় রশি দিয়ে বাধা থাকে। এরা মাছ তাড়িয়ে এনে জালে প্রবেশ করায়। কখনো কখনো ডুব দিয়ে বড় মাছ ধরে এনে তুলে দেয় জেলের হাতে।

গুরুপদ বিশ্বাস জানান, কয়েক বছর আগেও আমরা ভোঁদড় নিয়ে সুন্দরবনে মাছ ধরতে যেতাম। কিন্তু ডাকাতের অত্যাচারে এখন আর তারা সুন্দরবনে যান না। আশপাশের খালে-নদীতে ভোঁদড়ের সাহায্যে মাছ ধরি। 

হরেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের ৭টি, ভুবেন বিশ্বাসের ৪টি, রবিন বিশ্বাসের ৫টি, সচীন বিশ্বাসের ৭টিসহ এখানে প্রায় ৩০টির মত ভোঁদড় রয়েছে। জেলেরা ভোঁদড়গুলোকে সন্তানের মত লালন পালন করে। এদের প্রধান খাবার মাছ এবং ব্যাঙ।

অধির বিশ্বাস জানান, একটি মা ভোঁদড় প্রতিবছর ৪/৫ টি বাচ্চা দেয়। বাঁচ্চা ভোঁদড় মায়ের দুধ, গরুর দুধ পান করে। ৬ মাস পার হলে এরাই মাছ ধরার জন্য পানিতে নামে। তুষার বিশ্বাস বলেন, নদী-খালে মাছ নেই বলে অনেকে ভোঁদড় বিক্রি করে দিয়েছে। একটি ভোঁদড় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বিক্রি হয়। 

গৃহবধু মীরা জানান, তার স্বামী রবিন অভাবের জন্য ভোঁদড় বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে। 

ভোঁদড় কিনতে আসা মাগুরার বামনখালী গ্রামের অশোক বিশ্বাস জানান, আমি ভোঁদড় দিয়ে মাছ ধরি। আমার একটি আছে আর একটি কিনতে এসেছি। ১টি পছন্দ হয়েছে, দাম ১০ হাজার টাকা।

জেলে পল্লীর প্রবীণ ব্যক্তি রবিন বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা বাবা, ঠাকুরদার আমলের থেইকেই ভোঁদড় দিইয়ে মাছ ধরতেছি। ভোঁদড়গুলো আমাগের সন্তানের মত। কিন্তু অভাবের জন্যিই আমিও ভোঁদড় বেইচে দিতে বাধ্য হইছি। 

Saturday, April 5, 2014

বাঁশ ও বেত শিল্প পাল্টে দিয়েছে টাঙ্গাইলের বর্নী গ্রাম

টাঙ্গাইল: তাঁত আর মিষ্টি চমচমের জেলা হিসেবে সুপরিচিত টাঙ্গাইলে আরও একটি সম্ভাবনাময় শিল্প ধীরে ধীরে এগিয়ে চলছে, তাহলো বাঁশ ও বেতের মাধ্যমে তৈরি করা কুটির শিল্প। স্বল্প পুঁজি নিয়ে টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার বর্নী গ্রামে কুটির শিল্পের ব্যবসা করে অনেকের জীবনে এসেছে স্বচ্ছলতা। তাদের তৈরি বাঁশ ও বেতের এসব পণ্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে দেশ ও দেশের বাইরে। 

উল্লেখ করতে হয় যে, কারুশিল্পী শাহ আলম মিয়া পাল্টে দিয়েছেন পুরো বর্নী গ্রামের চিত্র। এ গ্রামের বাঁশ বেত শিল্পীরা এক সময় বাজার হারাতে হারাতে পেশা ছেড়ে দিতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু শাহ আলম তাদের দেখিয়েছেন নতুন ঠিকানা। এখন তার দেখানো পথে সবাই কর্মব্যস্ত। বাঁশ বেতের নিত্য নতুন পণ্যসামগ্রী তৈরি করে সবাই সচ্ছল। 

টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার ডুবাইল ইউনিয়নে বর্নী গ্রাম। এই গ্রামের দুই শতাধিক পরিবার বংশ পরম্পরায় বাঁশ বেতের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তারা সাধারণত কুলা, ধামা, পলো ইত্যাদি তৈরি করতেন। কিন্তু দিন দিন এসব পণ্যের চাহিদা কমে আসছিল। ফলে দুর্ভোগের মধ্যে পড়ে এ গ্রামের কারুশিল্পীরা। অনেককেই অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাতে হত। পেটের দায়ে অনেকে দিনমজুরিসহ অন্য পেশায় চলে যেতে শুরু করে। মাত্র কয়েক বছর আগেও দেলদুয়ার উপজেলার বর্নী, বারপাখিয়া, বাথুলী, কোপাখীসহ বেশ কয়েকটি  গ্রামের অধিকাংশ মানুষ ছিলেন বেকার। 

পরিবর্তনের হাওয়া লাগে এভাবে, গ্রামের মৃত সেফাত উল্লাহর ছেলে শাহ আলম মিয়া স্কুলে লেখাপড়ার পাশাপাশি শখের বসে গ্রামের অন্যদের দেখে নিজেও বাঁশ বেতের কাজ শিখে ফেলেন। ’৮৯ সালে এইচএসসি পাস করার পর এক সময় শখের বশে শেখা বাঁশ বেতের কাজকেই পেশা হিসেবে নেন শাহ আলম। গ্রামের অন্যদের মতো তিনিও কুলা, ডালা, পলো, মাথাল ইত্যাদি গৃহস্থালি সামগ্রী তৈরি করে স্থানীয় বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করতেন। কয়েক বছর এ কাজ করার পর শাহ আলম লক্ষ্য করলেন দিন দিন এসব পণ্যের চাহিদা কমে যাচ্ছে। কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখলেন আধুনিক প্লাস্টিক সামগ্রী ক্রমেই বাজার দখল করে নিচ্ছে। বাঁশ বেতের চেয়ে অধিক টেকসই হওয়ায় মানুষ এসবের দিকে ঝুকছে। 

শাহ আলম বলেন, ‘তখন থেকেই আমার মাথায় চিন্তা ঢুকে, নতুন নতুন সামগ্রী তৈরি করতে হবে। তবেই নিজে এই পেশায় টিকে থাকতে পারবো। গ্রামের অন্যরাও খেয়ে পরে বাঁচতে পারবে।’ ’৯৩ সালের দিকে একদিন শাহ আলম ঢাকার একটি অভিজাত কারুপণ্যের দোকানে গিয়ে কথা বলেন। 

তারা তাকে বাঁশের তৈরি ট্রে ও বেতের তৈরি টেবিল ম্যাটের ডিজাইন দিয়ে বলেন, এগুলো তৈরি করে দিতে পারবেন কিনা। বাড়ি ফিরে এসে কাজে লেগে যান শাহ আলম। পাঁচ দিনের মধ্যেই সেই ডিজাইনের ট্রে ও টেবিল ম্যাট তৈরি করে ঢাকায় নিয়ে যান। শাহ আলমের তৈরি আইটেমগুলো পছন্দ হয় তাদের। তারা শাহ আলমকে এসব পণ্য নিয়মিত সরবরাহ করতে বলেন। 

তারপর থেকেই শাহ আলম নতুন নতুন ডিজাইনের বাঁশ বেতের হস্তশিল্প তৈরি ও সরবরাহ শুরু করেন। শুরুতে নিজে একা তৈরি করে সরবরাহ করতেন। অন্যরা তেমন আগ্রহ দেখাতেন না। শাহ আলম প্রথমে আশপাশের দু’একজনকে বুঝিয়ে-সুজিয়ে নিত্যনতুন পণ্য তৈরি করতে শেখান হাতে-কলমে। তৈরিকৃত পণ্য ঢাকায় বিক্রিরও ব্যবস্থা করে দেন। নতুন পণ্য বিক্রি করে ভাল লাভ পেতে থাকেন তারা। ঢাকায় তাদের পণ্যের চাহিদা বাড়তে থাকে। আস্তে আস্তে সবাই শাহ আলমের কাছে কাজ শিখে এবং তার দেয়া ডিজাইন মতো নতুন নতুন পণ্য উৎপাদন শুরু করেন। 

বর্নী গ্রামের শাহজাহান মিয়া বলেন, প্রথম প্রথম আমাগো নতুন নতুন জিনিস তৈরির আগ্রহ আছিল না। শাহ আলম যখন বুঝাইলো এগুলো তৈরি করলে ভাল টাকা পাওয়া যাব, তহন আমরা তার কথামতো কাজ শুরু করলাম।’ এই গ্রামেরই বাসিন্দা শুকুরি বেগম বলেন, ‘এহন আমরা সবাই শাহ আলমের শেখানো কাজ করি। এতে ভাল পয়সা পাওয়া যায়। আমাগো আর অভাব নাই।’ 

বর্নী গ্রামে এখন প্রতিটি বাড়িতেই ছেলে, বুড়ো, নারী সবাই বাঁশ বেতের কাজ করছেন। অনেক বাড়িতে গৃহবধুরা গৃহস্থালি কাজের ফাঁকে ফাঁকে বাঁশ বেতের বিভিন্ন পণ্য তৈরি করছেন। জয়নাল আবেদিন (৬৫) বলেন, ‘এক সময় খুব দুরাবস্থার মধ্যে চলতে হতো। এখন খুব ভাল আছি। জিনিষ তৈরির সাথে সাথে বিক্রি হয়ে যায়।’ 

বর্নী গ্রামের সিুফিয়া ওমর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক কালিদাস চন্দ্র মন্ডল বলেন, আগে এ গ্রামের লোকেরা বাঁশ বেতের কাজ করে খুব কষ্টে দিনতিপাত করতেন। এখন তাদের পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। তাই তারা খুব ভালো আছেন। 

বর্তমানে বর্নী গ্রামে বাঁশ-বেতের কাজে উৎপাদন তালিকায় আরও নতুন নতুন পণ্যযোগ হচ্ছে। বাঁশের ট্রে, বেতের টেবিল ম্যাটের পর যোগ হয় পেপার ঝুড়ি, লন্ড্রি ঝুড়ি, টেবিল ল্যাম্প, ফ্লোর ল্যাম্প, জুয়েলারি বক্স, ফটোস্ট্যান্ডসহ নানা ধরনের শো-পিস। বর্তমানে শাহ আলম বাঁশ বেতের গহনা ও জুতো তৈরি করেছেন। এগুলো বাজারজাতকরণের অপেক্ষায় রয়েছে। ইতিমধ্যেই শাহ আলম বাংলাদেশ কারুশিল্প পরিষদের ‘শীলু-আবেদ কারুশিল্প পুরস্কার’ লাভ করেছেন।