Sunday, July 6, 2014

বীরগঞ্জের বিদ্যুৎবিহীন মাটির হিমাগার মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে

দিনাজপুর: দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার বিদ্যুৎবিহীন মাটির হিমাগারটি মানুষের আশার সঞ্চার করেছে।  কেননা, এটি বদলে দিতে পারে গ্রামীণ জনপদে সাধারণ কৃষকদের ভাগ্যের চাকা। 

জানা গেছে, দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার ৪ নম্বর পাল্টাপুর ইউনিয়নের মৃত আলহাজ্ব ডা. সমসের আলীর পুত্র মীম সীড-এর স্বত্ত্বাধিকারী কৃষিবিদ মো. তোহিদুল ইসলাম বকুল বীরগঞ্জ পৌর শহরের দিনাজপুর-পঞ্চগড় মহাসড়কের মাকড়াই মৌজায় ১১০ টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বিদ্যুৎবিহীন মাটির হিমাগার নির্মাণ করেছেন। কাহারোল উপজেলা স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের প্রকৌশলী দিলীপ কুমার সরকারের তত্ত্বাবধানে ক্যাটালিস্ট ও জিমার্ক-এর আর্থিক সহযোগিতায় সুদূর ভারত থেকে প্রযুক্তি ভিডিও চিত্রধারণ করে হিমাগারটি নির্মাণ করা হয়। হিমাগারটি পরীক্ষামূলক চালুর পর কাঁচা সবজি ৬ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সফলতা লাভ করেছে। বিদ্যুৎ ছাড়াই প্রাকৃতিকভাবে আলুসহ সকল প্রকার কাঁচামাল হিমায়িত করে রাখার ক্ষেত্রে গ্রামীণ জনপদে সাধারণ কৃষকদের উন্নয়নে বেশ ভূমিকা রাখবে। হিমাগারটি নির্মাণে সর্বসাকুর্ল্যে ব্যয় হয়েছে মাত্র ৫ লাখ টাকা। 

কৃষিবিদ মো. তোহিদুল ইসলাম বকুল জানান, আলু, সবজি ও বিভিন্ন ফলসহ যে কোন কাঁচামাল প্রাকৃতিকভাবে হিমাগারে সংরক্ষণ করে রাখা যায়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরে ১১০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন প্রাকৃতিক হিমাগার র্নিমাণ করলেও তেমনভাবে সফলতা লাভ করেনি। তবে দিনাজপুরের বীরগঞ্জে এ ধরনের বিদ্যুৎবিহীন হিমাগার নির্মাণ করে সফলতা অর্জন করেছে। 

সরকারীভাবে আর্থিক সহযোগিতা পেলে ১১০ থেকে ২০০ টন পর্যন্ত ক্ষমতাসম্পন্ন প্রাকৃতিক হিমাগার র্নিমাণ করা সম্ভব। প্রতি মৌসুমের মার্চ মাস থেকে কৃষকেরা এখানে একাধারে ৬ মাস পর্যন্ত আলুসহ বিভিন্ন কাঁচামাল অক্ষত অবস্থায় সংরক্ষণ করতে পারবেন। হিমাগারে পরীক্ষামূলক ২৮ দিন পর্যন্ত ফুলকপি ও ৭৫ দিন পর্যন্ত পাতা কপি সংরক্ষণ করে সফল হয়েছে। হিমাগারটির ঠান্ডা রাখতে তলদেশে ৪ ফিট গভীরতার মধ্যে পানি সংরক্ষণ করে রাখা হয়। এ পানির মধ্যে মাছ চাষ করা সম্ভব। হিমাগারটির তলদেশের পানি ১৫ দিন পর পর পরিবর্তন করতে হয়। বিদ্যুৎচালিত হিমাগারের বিকল্প হিসেবে এই বিদ্যুৎবিহীন প্রাকৃতিক হিমাগারটি আমাদের  গ্রামীণ অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। 

স্থানীয় কৃষক এবং আলু চাষী মো. হবিবর রহমান, আব্বাস আলী, শফিকুল ইসলাম, পুরেন চন্দ্র রায়সহ কয়েকজন কৃষক জানান, ইতোপূর্বে হিমাগারের আলু সংরক্ষণের জন্য কেজি প্রতি ৫/৬ টাকা দিতে হতো। কোনো কারণে আলু পঁচে গেলে অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ পাওয়ায় যেতো না। অথচ প্রাকৃতিক হিমাগারে আলু সংরক্ষণের জন্য ব্যয় হয় কেজি প্রতি মাত্র ১ টাকা। এখানে আলুসহ সকল প্রকার সবজি পচে যাওয়ার আশংকা থাকে না। 

তাই বিদ্যুৎবিহীন মাটির হিমাগারটিকে কৃষক ও আলু ব্যবসায়ীদের জন্য সুবিধাজনক। কৃষিবিদ মো. তোহিদুল ইসলাম বকুলের এই উদ্যোগ গ্রামীণ অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে বলে অনেকে ধারণা করছেন।

দিনাজপুর জেলা কৃষি অধিদপ্তরের পরিচালক আনোয়ারুল আলম জানান, তিনি এই হিমাগারটি গত এপ্রিল মাসে পরিদর্শন করেছেন। নতুন উদ্ভাবনায় বিদ্যুৎবিহীন প্রাকৃতিক রূপরেখায় হিমাগারটি নির্মিত করা হয়েছে। এ ধরনের হিমাগার নির্মাণ করে দেশের তৃণমূল পর্যায়ে উৎপাদিত কৃষকের কাঁচা তৈরি তরকারি মাসব্যাপী সংরক্ষণ করা যাবে। তিনি এ ধরনের হিমাগার নির্মাণ করে উৎপাদিত ফসল সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করায় হিমাগার স্থাপনকারী তৈহিদুল ইসলামকে সাধুবাদ জানান।

বীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুজ্জাতুল ইসলাম বলেন, ১১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে এই উপজেলা গঠিত হয়েছে। উপজেলার ৮৫ ভাগ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। এখানে প্রতি বছরই সব ধরনের সবজি এবং আলুর উৎপাদন হয়। সবজি ও আলু সংরক্ষণে হিমাগার নির্মাণে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। 

কৃষিবিদ তোহিদুল ইসলামের হিমাগারটি নির্মাণের পর সফলতা আসায় এ ধরনের হিমাগার আরো ৪টি নির্মাণের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

Thursday, June 26, 2014

তথ্য ও ই-সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হচ্ছে

মাগুরা: বর্তমান সরকারের সময়ে মাগুরা জেলায় ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা, জেলা ই-সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে নাগরিক সেবায় স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা নিশ্চিত হচ্ছে। এসব কেন্দ্র থেকে দরিদ্র গ্রামীণ জনগোষ্ঠীসহ সর্বস্তরের মানুষ স্বল্প সময়ে হয়রানি মুক্তভাবে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের সেবা পাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের লক্ষ্যে যশোর জেলার পর দ্বিতীয় জেলা হিসেবে মাগুরা জেলায় ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা, জেলা ই-সেবা কেন্দ্রে চালু হয়। এরপর দেশের অন্যান্য জেলাতে এ কার্যক্রম চালু হয়। এর সেবা পেয়ে মানুষ বিভিন্নভাবে উপকৃত হচ্ছে। দেখা যায়, সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সময় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। নাগারিক সেবা পেতে ২ তিন সপ্তাহের জায়গায় এখন মাত্র ২ থেকে ৩ দিন সময় লাগছে। 

উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অংশ হিসেবে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে দুর্নীতি ও হয়রানি মুক্ত সেবা দানের উদ্দেশ্যে ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্র চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়। এর অংশ হিসেবে ২০১০ সালের জানুয়ারী মাসে (এ্যকসেস টু ইনফরমেশন প্রকল্প) পরবর্তিতে সাপোর্ট টু ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রকল্পের আওতায় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব নজরুল ইসলাম খানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে তথ্য ও সেবা কেন্দ্র চালুর কাজ শুরু হয়। যা পর্যায়ক্রমে জেলার ৩৬ ইউনিয়েনে চালু হয়। এর পর থেকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তথ্য সেবা কেন্দ্রে উদ্যোক্তা পরিচালকদের নিয়োগ দেয়া হয়। এসব প্রশিক্ষিত উদ্যোক্তা পরিচালকদের বেকারত্ব দূর হবার পাশাপাশি গ্রামের মানুষকে সেবা দানের মাধ্যমে তারা ভালো আয় করছে। পরবর্তীতে দেশের ৪ হাজার ৫০১টি ইউনিয়নে তথ্য ও সেবা কেন্দ্র পর্যায়ক্রমে চালু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে একযোগে দেশব্যাপী ৪ হাজার ৫০১টি ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন। 

ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্রর উদ্যোক্তা পরিচালকরা ইন্টারনেট সার্ভিসের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের মানুষকে ই-মেল প্রদান, অনলাইনে ভিসা ফরম পূরণ, জন্ম নিবন্ধন, আউটসোর্সিং কাজ, ফটোকপি এবং লেমিনেটিং, কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আইন মানবাধিকারসহ বিভিন্ন ধরণের তথ্য প্রদানকরার পাশাপাশি বিভিন্ন নাগরিক সেবা ছাড়াও কম্পোজ, ছবি তোলা, প্রিন্ট ও স্ক্যানিং এবং প্রজেক্টরের মাধ্যমে শিক্ষা ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান দেখানো ও প্রজেক্টর ভাড়া, এছাড়া জীবন বীমা কর্পোরেশন ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্রের সাথে যুক্ত হয়ে উদ্যোক্তা পরিচালকদের এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ ও মাকেন্টাইল ব্যাংকের সাথে মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে দ্রুত গ্রামীণ মানুষের অর্থ আদান-প্রদানসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা দিচ্ছেন। এর ফলে গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রা যেমন সহজতর হয়েছে তেমনি হয়রানিমুক্ত ভাবে সেবা পাচ্ছেন তারা। 

ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্রের উদ্যোক্তা পরিচালকদের মধ্যে শালিখার বুনাগাতি ইউনিয়ন তথ্য সেবাকেন্দ্রের উদ্যোক্তা পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান ও শ্রীপুর উপজেলার গয়েশপুর ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্রের রুপালী খাতুন এ বছর শ্রেষ্ঠ উদ্যোক্তা পরিচালকের স্বীকৃতি পেয়েছেন। জেলা প্রশাসন তাদেরকে পুরস্কার হিসেবে স্কিনটাস ট্রাব দিয়েছেন। যা দিয়ে তারা ফোনে কথা বলাসহ ইন্টারনেট ব্যবহারে কাজে লাগাতে পারছেন। 

শালিখা উপজেলার বুনাগাতি ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্রে সেবা নিতে আশা রামপুর গ্রামের তাপস কুমার অনলাইনে ভারতীয় ভিসার জন্য ই-টোকেন সংগ্রহ করেন। কাঠালবাড়িয়া গ্রামের শান্ত বিশ্বাস অন লাইনে পাসপোর্টের আবেদন ও বিউটি রানী পোদ্দার অনলাইনে ছেলের জন্ম নিবন্ধন করান। তারা জানান, ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে সহজভাবে স্বল্প সময়ে কোন ঝামেলা ছাড়াই খুব দ্রুত তারা সেবা গ্রহণ করতে পেরেছেন। এটি চালু হওয়ায় তারা অনেক সহজে সেবা পেয়েছেন। তাদের মত গ্রামের অনেক মানুষ প্রতিদিন উপকৃত হচ্ছেন। 

অন্যদিকে মাগুরা জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা ই-সেবা কেন্দ্র চালু হওয়ার পর থেকে জনসাধারণ ই-সেবা কেন্দ্র থেকে সনাতন পদ্ধতির পরিবর্তে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সেবা গ্রহণ করতে পারছে। জমির পর্চার নকল তোলাসহ বিভিন্ন ধরনের আবেদন করতে পারছেন। এ ছাড়া আবেদনকারী দাখিলকৃত আবেদনের সর্বশেষ পরিস্থিতি সর্ম্পকে জানতে পারছেন। বিশেষ করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ই-সেবা কেন্দ্র চালু হওয়ার পর জমির পর্চার নকলের জন্য মানুষকে এখন আর রেকর্ড রুমে যেতে হয় না। ই-সেবা কেন্দ্র থেকে এখন জমির পরচার নকলের আবেদন দাখিল ও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তা গ্রহণ করতে পারছেন।

জেলা ই-সেবা কেন্দ্র থেকে জরুরিভিত্তিতে জমির এস, এ এবং আর, এস পর্চার নকলের জন্য মাত্র ২০ টাকার কোর্ট ফি এবং জমির সি, এস পর্চার জন্য মাত্র ২৪ টাকা কোর্ট ফি দিতে হচ্ছে। ২০১১ সালের ২৩ এপ্রিল জেলা ই-সেবা কেন্দ্র চালু হওয়ার পর থেকে ১৯ জুন-২০১৪ পর্যন্ত জমির পর্চার নকল নেয়ার জন্য ৯০ হাজার ৬’শ ৪৯টি আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে ৮৯ হাজার ২’শ ৪৭ টি আবদেন নিষ্পত্তি করা হয়েছে। 

মাগুরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ই-সেবা কেন্দ্রে আগত মাগুরা মহম্মদপুর উপজেলার ওমেদপুর গ্রামের আনিসুর রহমান বলেন- জেলা ই-সেবা কেন্দ্র থেকে অতি কম খরচে কম সময়ের মধ্যে জমির পর্চার নকল হাতে পেয়েছি। হয়রানি মুক্তভাবে নির্ধারিত সময় জমির পর্চার নকল পাওয়ায় তিনি বেশ খুশি। 

জেলা প্রশাসক মাসুদ আহমদ বলেন, জনগণের দোর গোড়াই সেবা পৌঁছে দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অংশ হিসাবে জেলার ৩৬টি ইউনিয়নে তথ্য ও সেবা কেন্দ্র ও জেলা প্রশসাকের কার্যালয়ে ই-সেবা কেন্দ্র চালু হয়েছে। এর প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষকে সেবা প্রদান করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। 

Wednesday, June 25, 2014

রাজধানীর যোগাযোগে পরিবর্তন এনেছে হাতিরঝিল

ঢাকা: প্রায় সাত বছর পর কানাডা প্রবাসী মহিবুল হাসান সপরিবারে দেশে ফিরেছেন। উঠেছেন রাজধানীর ধানমণ্ডিতে বড় বোনের বাসায়। সেদিন সন্ধ্যার পরেই কোথাও বেড়াতে যেতে চাইলেন মহিবুল। ভাগ্নে মবিন তাদেরকে নিয়ে এলো মামার অদেখা নতুন এক জায়গায়। মহিবুল তো অবাক- ‘ঢাকায় তাহলে এমন চমৎকার জায়গাও আছে!’

হাতিরঝিলে লেকের ওপর ব্রীজে দাঁড়িয়ে এমন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছিলেন মহিবুল হাসান। প্রবাসে থাকলেও দেশের সব খবরাখবরই রাখেন তিনি। হাতিরঝিলের কথাও শুনে আসছিলেন। কিন্তু এখানে এসে এমন চমৎকার পরিবেশ দেখতে পাবেন ততটা ভাবেননি তিনি।

‘কেমন লাগছে হাতিরঝিল?’- এমন প্রশ্নে মহিবুল বললেন, ‘এক কথায় চমৎকার! আমার দেশে এমন মনোমুগ্ধকর জায়গা তৈরি হয়েছে, তা ভাবতেও ভাল লাগছে।’ তাঁর সঙ্গে আসা ভাগ্নে মবিন বললো, ‘এখন যারা ঢাকায় বেড়াতে আসেন, তাদের প্রথম পছন্দই হচ্ছে এই হাতিরঝিল।’

রাজধানী ঢাকার অন্যতম আকর্ষণীয় ও বিনোদনের স্থান এখন হাতিরঝিল। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের পদচারণা আর আড্ডায় মুখরিত হয়ে উঠে বিশাল হাতিরঝিল এলাকা। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর আলোয় ঝলমল এই এলাকায় ভিড় জমে উঠে বেশি। এ সময় ব্রীজ, ভিউয়িং ডেক, ঘাট, সীট বেঞ্চ ইত্যাদি প্রায় সবই জমজমাট হয়ে উঠে। সুন্দর সুন্দর স্থাপনা ও লেকের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয় দর্শনার্থীরা।

কিন্তু হাতিরঝিলকে কেবল দৃষ্টিনন্দন বা বিনোদনের স্থান হিসেবে গড়ে তোলাই এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল না। ‘বেগুনবাড়ী খালসহ হাতিরঝিল এলাকার সমন্বিত উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. আরেফুর রহমান জানালেন, মোট চারটি উদ্দেশ্য নিয়ে হাতিরঝিল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। যার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল ঢাকা শহরের পূর্ব-পশ্চিম বরাবর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ঝিলের চারদিকে সড়ক নির্মাণ করা। তিনি জানান, প্রকল্পের উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, হাতিরঝিল দেখতে তো খুব ভালই লাগছে। তিনি তখন বিনোদন ও সৌন্দর্য উপভোগের জন্য মানুষের চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে হাতিরঝিলকে সাজাতে নির্দেশ দেন।

এখন বিনোদনের স্থান হিসেবে হাতিরঝিল যতটা পরিচিতি পেয়েছে, ততটা বাইরের অনেকেই জানে না যাতায়াতের ক্ষেত্রে সুবিধা প্রাপ্তির কথা। তবে এ পথে যারা নিয়মিত যাতায়াত করেন তারা তুলে ধরেন তাদের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত হওয়ার কথা।

ধানমণ্ডির বাসিন্দা আতিকুজ্জামান। তাকে নিয়মিত রামপুরায় যেতে হয়। তিনি প্রাইভেট কারে যাতায়াত করেন। তিনি বলেন, ‘আগে অনেক ঘুরে যেতে হতো। যানজটেও পড়তে হতো। এখন দুঃসহ যানজট থেকে মুক্তি পেয়েছি। এখন হাতিরঝিল দিয়ে যাতায়াত করি। এতে সময় সাশ্রয় হয়েছে কমপক্ষে আধাঘণ্টা। আর আমার মত অনেকেই যারা আগের রাস্তায় চলাফেরা করতেন তারাও এখন এ পথ ব্যবহার করেন। ফলে মূল রাস্তায় কিছুটা হলেও যানজট কমেছে।’

মহাখালী এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আজিজুর রহমানকে প্রায়ই মতিঝিল ও পুরনো ঢাকায় যেতে হয়। তিনি জানান, আগে গুলিস্তান পর্যন্ত যেতে অনেক সময় লাগতো। সিএনজি-অটোরিকশা চালকরা সহজে যেতেও চাইতো না। এখন সিএনজি অটোরিকশায় হাতিরঝিল দিয়ে রামপুরা হয়ে কম সময়েই যাতায়াত করা যায়।

বাড্ডা এলাকার গৃহিনী পারুল বেগম। তিনি জানান, মোহাম্মদপুর এলাকায় তার আত্মীয়-স্বজন আছে। আগে যাতায়াতের কথা চিন্তা করে ওই এলাকায় প্রায় বেড়ানোই বাদ দিয়েছিলেন। হাতিরঝিল হওয়ার পর ওই এলাকায় বেড়াতে বা কোন মার্কেটে গেলে এখন আর অতোটা চিন্তা করেন না। হাতিরঝিলের মধ্য দিয়ে সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে তারা সেখানে চলে যান।

রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত ও যানজট সমস্যা দীর্ঘদিনের। বিশেষ করে নগরীর পূর্ব-পশ্চিম বরাবর যোগাযোগ ব্যবস্থা দুর্বল। পূর্ব-পশ্চিমে সরাসরি কোন সড়কপথ নেই। তাই পূর্ব-পশ্চিম দিকের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়েই হাতিরঝিল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল। এতে নগরবাসীর যাতায়াতে বিশেষ করে- ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, তেজগাঁও, বনানী, গুলশান, বাড্ডা, রামপুরা, মগবাজার ইত্যাদি এলাকার মানুষের অনেকটাই সুবিধা হয়েছে। তবে প্রকল্পের সামান্য কাজ এখনো বাকি রয়েছে, যা বাস্তবায়ন হলে এ-পথে যাতায়াতে আরো সুফল পাওয়া যাবে।

জানা গেছে, ২০০৭ সালের জুলাইয়ে হাতিরঝিল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়, যার মেয়াদ ছিল ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত। এই প্রকল্পের কিছু কাজ বাকি থাকায় প্রকল্পের মেয়াদ আরো ১ বছর অর্থাৎ ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক মো. আরেফুর রহমান জানান, হাতিরঝিলে আর সামান্য কাজ বাকি রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- রামপুরা ও বাড্ডার দিকে দুটি ইউ লুপ নির্মাণ করা। তিনি জানান, এখন হাতিরঝিলে গাড়ি ঢুকতে একটু সমস্যা হচ্ছে। ইউ লুপ দুটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে রামপুরা ও বাড্ডা এলাকা থেকে সহজেই হাতিরঝিলে গাড়ি ঢুকতে ও বের হতে পারবে। ভূমি থেকে ৩০ ফুটের মতো উপর দিয়ে ইউ লুপের মাধ্যমে শুধুমাত্র গাড়ি চলাচল করবে। এতে হাতিরঝিলের মধ্য দিয়ে যাতায়াত সহজ ও নিরাপদ হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

২০১৩ সালের ২ জানুয়ারি জনসাধারণের জন্য হাতিরঝিল উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করেন। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) বাস্তবায়ন করছে এই প্রকল্প। সহযোগী সংস্থা হিসেবে রয়েছে- বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর ও ঢাকা ওয়াসা।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, হাতিরঝিলের প্রায় ৩০৩ একর এলাকায় ফুটপাত রয়েছে ৮.৮০ কিলোমিটার পথ। যান চলাচলের পথ আছে ৮ কিলোমিটার। এ রাস্তায় মানুষজন নির্বিঘেœ যাতায়াত ও চলাফেরা করতে পারছে। এখানে রিকশা, বাস ও ট্রাক চলাচল নিষিদ্ধ রয়েছে। ফলে এ রাস্তায় কোন যানজট নেই, নেই কোন দুর্ঘটনা। সেনাবাহিনীর সদস্যরা এখনো এখানে দায়িত্ব পালন করছেন। তারা সহায়তা করছেন ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে।

অনেকের ধারণা, হাতিরঝিল প্রকল্পের দুর্বল দিক হচ্ছে- রাস্তার চওড়া কম, ফুটপাতও বেশি বড় নয়। ফলে গাড়ির যাতায়াত ও দর্শনার্থীদের চলাফেরায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানান, জায়গার অভাবে রাস্তা ও ফুটপাত ততটা বড় করা যায়নি। তবে ইউ লুপ চালু হলে প্রকল্প এলাকায় গাড়ির প্রবেশ ও বের হওয়া সহজ হবে।

Tuesday, June 24, 2014

জয়পুরহাটে নার্সারী ব্যবসায় দৃষ্টান্ত রেখেছেন জহুরুল

জয়পুরহাট: বৃক্ষ মেলায় যাওয়ার বায়না ধরে পিতার কাছ থেকে জুটেছিল ২ টাকা। ১ টাকায় যাতায়াত ও ১ টাকায় বাদাম খাওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও পুরো টাকায় বাদাম খাওয়ার ইচ্ছায় পায়ে হেঁটে পাঁচ কিলোমিটার দূরত্বে জয়পুরহাটে বৃক্ষ মেলায় এসেছিলেন জহুরুল ইসলাম। মেলায় বিভিন্ন প্রকারের গাছের চারা দেখে স্কুল পড়–য়া কিশোরের জহুরুলের মনের মধ্যে আগ্রহ জন্মে। কিন্তু কি করা পকেটে টাকা নাই। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে, মেলার মধ্যে ঘুরে বেড়াতে দেখে এক স্টল মালিক ডেকে চারা নিতে বললে জহুরুল জানায়, তার কাছে টাকা নাই। প্রতি উত্তরে স্টল মালিক বলেন, ৪/৫ টাকাও নাই। জহুরুল ২ টাকা আছে জানালে এর বিনিময়ে স্টল মালিক তাকে একটি লিচুর চারা দেন। খুশিতে আত্মহারা জহুরুল বাড়িতে ফিরে এসে চারা রোপণ করেন। এটা ১৯৭৪ সালের কথা। 

ছোট বেলা থেকেই গাছের প্রতি ভালবাসা। স্কুলের টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে চারা কিনে বাড়ির পাশ দিয়ে তা রোপন করে। এভাবেই নার্সারীর প্রতি ঝোঁক তৈরি হয় জহুরুলের। স্কুল জীবনে ভাল কাবাডি খেলোয়াড় হওয়ার সুবাদে জয়পুরহাট চিনিকলে মৌসুমী যান চালকের চাকরি হয়। এরপর ২০০৬ সালে পিতার কাছ থেকে পাওয়া ১০ কাঠা জমিতে নার্সারীর কাজ শুরু করেন। নাম দেয়া হয় বন্ধন নার্সারী। জেলা শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরত্বে উত্তর-জয়পুর গ্রামে বন্ধন নার্সারীতে বর্তমানে ২শ’ প্রজাতির গাছের চারা রয়েছে। ১০ কাঠা থেকে শুরু বন্ধন নার্সারীর এখন জমির পরিমাণ ৩ বিঘা। এখানে  একেকটি চারার মূল্য ১০ টাকা থেকে ৮শ’ টাকা পর্যন্ত। 

এ পর্যন্ত ৩০ লাখ টাকার চারা বিক্রি করার কথা জানান জহুরুল। এখানে ফলের মধ্যে আমের চারা আছে ৩৪ প্রজাতির উল্লেখযোগ্য হচ্ছে নাগ ফজলী, হাঁড়ি ভাঙ্গা, মহারাজ, রাজভোগ, ছাতাপুরি ল্যাংরা, লকনা, অনান্য ফলের মধ্যে রয়েছে জামরুল, মিষ্টি তেঁতুল, গোলাপজাম, চালতা, কদবেল, সফেদা, জলপাই ইত্যাদি। লিচুর চারা রয়েছে ৮ প্রজাতির চায়না-৩, মাদ্রাজী, এলাচী, বোম্বাই, শিতলপাটি, কাঁঠালী ইত্যাদি। ২৮ প্রকারের ঔষধি চারার মধ্যে রয়েছে তেজপাতা, দারুচিনি, হরতকি, পান পোক্ত, অপরাজিতা, নীল কন্ঠ, চিরতা, মৃত কুমারি, আমলকি, ওলট কম্বল, পুদিনা, হস্তিকরণ ইত্যাদি। ফুলের চারা রয়েছে ২১ প্রজাতির, উল্লেখযোগ্য হচ্ছে হাসনাহেনা, বকুল, মাধবীলতা, এরিকা পাম্প, গোলাপ, নাইট কুইন জবা, গন্ধরাজ ইত্যাদি। এছাড়াও ১৫ জাতের কাঠের গাছের চারা রয়েছে। 

কৃষি বিভাগের লাইসেন্স প্রাপ্ত একজন নার্সারী মালিক হিসেবে সরকারি কোন সহযোগিতা না পেলেও প্রতি বছর বৃক্ষ মেলায় শ্রেষ্ঠ নার্সারীর মালিক হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন জহুরুল। প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন স্থান হতে অনেক লোকজন আসে গাছ কিনতে ও পরামর্শ নিতে। নিজের লেখা পড়া কম হলেও একমাত্র ছেলে আরাফাত হোসেনকে কৃষি ডিপ্লোমা পাশ করিয়েছেন। সেই বর্তমানে নার্সারীর দায়িত্বে রয়েছে। জহুরুল ইসলাম বলেন, নার্সারী থেকে প্রতিমাসে ২৫/৩০ হাজার টাকা আয় থাকে। লেখাপড়া শেষে বেকার যুবকদের ঘুষের টাকা দিয়ে চাকরির নামে সোনার হরিণের পেছনে না দৌঁড়ে আত্মনির্ভরশীল মূলক কাজে যোগ দেয়ার আহবান জানান জহুরুল ইসলাম।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আব্দুল হান্নান বলেন, জহুরুল ইসলাম নার্সারী ব্যবসায় অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত রেখেছেন। খুব ছোট পরিসর থেকে বড় আকারের নার্সারী বাগান করতে পেরেছেন। যা অন্য বেকার যুবকদের আশান্বিত করে তুলছে।

Monday, June 23, 2014

তেল তৈরি করতে না পেরে ঝালকাঠির পাম চাষীরা হতাশ

ঝালকাঠি: ঝালকাঠি জেলায় পাম চাষ সম্প্রসারণ দু’বছর ধরে থমকে গেছে। জেলায় ২০০৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ২০০ একর জমিতে পামের আবাদ হয়েছে। পামের ফল পেঁকে ঝড়ে যাচ্ছে। কিন্তু কৃষকরা এই ফল প্রক্রিয়াজাত করে এর তেল বের করতে পারছে না। তেল বের করতে না পারায় পাম ফল এখন ইঁদুরের খাদ্যে পরিণত হয়েছে।

এ নিয়ে অনেক পাম চাষীর মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। আবার কিছু কিছু চাষী উদ্যম না হারিয়ে পাম থেকে তেল বের করার জন্য নানামুখী চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। একটি বাড়ির বসত ভিটায় ৪টি পাম গাছ থাকলে ৬ সদস্যের একটি পরিবারের বছরের ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব বলে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

কৃষি বিভাগ বলেছে অচিরেই কৃষি গবেষণায় পাম ফলের প্রক্রিয়াজাত করণের মেশিন তৈরি করে কৃষক পর্যায় সরবরাহ করলে পাম চাষ যে গতিতে সম্প্রসারিত হচ্ছিল তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা সম্ভব হবে। পাম চাষ সম্প্রসারণ হলে দেশে কোলস্ট্রেরলমুক্ত ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণ হবে। সরকারের বৈদেশিক মূদ্রা সাশ্রয় হবে।

ঝালকাঠি জেলার সদর উপজেলার বাদলকাঠি, ধারাখানা, বেতলোচ, গাবখান, রামচন্দ্রপুরসহ রাজাপুর উপজেলার শুক্তাগড় ইউনিয়ন জুড়ে জেলার ৪টি উপজেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পামের চাষ হয়েছে। বিগত ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে সেনা বাহিনীর পরামর্শে পাম চাষ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয় কৃষি বিভাগ। ওই বছরই জেলার রাজাপুর উপজেলার শুক্তাগড় ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ তার এক একর জমিতে পাম চাষের মাধ্যমে রাজাপুর উপজেলায় পামের যাত্রা শুরু করে হয় । প্রক্রিয়াজাত করতে না পাড়ায় তিনি পামের আবাদ বাড়াননি।

সদর উপজেলার বাদলকাঠি গ্রামের ইউনুচ আলী খান এক বিঘা জমিতে পামের চাষ করেছেন, দু’বছর ধরে পাম ফল প্রক্রিয়া জাত করতে না পেরে তার মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি জানান, এই ফল দিয়ে কিভাবে তেল বের করা যায় তার সঠিক নির্দেশনা দিচ্ছে না কৃষি বিভাগ।

ঝালকাঠি সদর উপজেলার বেতলোচ গ্রামের মোস্তফা কামাল জানান, তিনি এক একর জমিতে পামের চাষ করেছেন। পাম গাছেও দু’বছর ধরে ফলন আসা শুরু করেছে। তিনি বিভিন্নভাবে ছোট আকারের প্রেসার মেশিন দিয়ে পামের পাকা ফল থেকে তেল বেড় করা শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে তার পরিবারের রান্নার কাজে এ তেল ব্যবহার করেছেন।

স্থানীয় কৃষি বিভাগের সাথে দক্ষিণ বাংলা কৃষি উন্নয়ন সংস্থা নামে একটি প্রতিষ্ঠান পাম চাষ সম্প্রসারণে কাজ করছে। এই সংস্থার নির্বাহী পরিচালক গোলাম কিবরিয়া পান্নু জানান, পামের তেল কোলস্টেরলমুক্ত এবং মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য উপযোগী।

ঝালকাঠি সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা চিন্ময় রায় জানান, কৃষি বিভাগের বিজ্ঞানীদের পাম চাষ প্রক্রিয়াজাতকরণের লক্ষ্যে কৃষক পর্যায় ব্যবহার করার মতো মেশিন তৈরি করে সরবরাহ করা হলে পাম চাষা সম্প্রসারিত হবে।

রাঙ্গামাটিতে রেশম চাষে মহিলাদের অভাবনীয় সাফল্য

রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটির পার্বত্য জেলার কাউখালী উপজেলায় রেশম চাষে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে উপজেলার মহিলা রেশম চাষীরা। উপজেলার প্রায় ঘরে ঘরে বিশেষ করে মহিলারা রেশম চাষের প্রতি আগ্রহী হয়েছেন। কাপ্তাইয়ের আঞ্চলিক রেশম গবেষণা কেন্দ্রে সার্বিক সহযোগিতা ও পরামর্শ নিয়ে স্থানীয় মহিলারা এই রেশম চাষে সফলতা পেয়েছেন। দৈনন্দিন পারিবারিক কাজ-কর্ম করার পাশাপাশি মহিলারা বাড়ির আঙ্গীনায় কেউ কেউ বাড়ির ঘরের মধ্যে রেশম চাষ করছেন । আর এতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছে আঞ্চলিক রেশম গবেষণা কেন্দ্র। 

স্থানীয় বেতছড়ির বাসিন্দা ফেরদৌসী বেগম জানান, তিনি গত প্রায় ২০ বছর আগে প্রথম রেশম চাষ শুরু করেন। এতে তিনি সাফল্য পান। পরে তিনি তার মেয়ে ফরিদা পারভিনকেও রেশম চাষে উদ্বুদ্ধ করেন। ফরিদা গত ৮ বছর ধরে এলাকায় রেশম চাষ করছেন। ফরিদা তার ছোট বোন শাহানা আক্তারসহ এলাকায় শতাধিক নারীকে রেশম চাষে উদ্বুদ্ধ করেন। বর্তমানে কাউখালীতে চার শতাধিক নারী রেশম চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন বলে রেশম চাষী শিরিনা বেগম, রোকসানা বেগম, বৈশাখী চাকমা, হাসিনা বেগম, লায়লা বেগম, গোলাপী বেগম, কুলসুমা বেগম, সুখী চাকমাসহ অনেক নারী জানান। এদের একজন জানান, তিনি তার এক ছেলে ও এক মেয়ের লেখাপড়ার খরচ যোগাচ্ছেন রেশম চাষ করে। শিরিনা বেগম জানান, তার কাছে বর্তমানে ৫০ হাজার টাকা জমা আছে। যা তিনি রেশম চাষ থেকে আয় করেছেন। এ রকম প্রায় প্রতিটি নারী তাদের সফলতার কথা জানান। 

ফরিদা পারভীন বলেন, ‘আঞ্চলিক রেশম গবেষণা কেন্দ্রের সিনিয়র রিসার্স অফিসার ও প্রকল্প পরিচালক কামনাশীষ দাশ আমাদের রেশম চাষে উদ্বুদ্ধ করেন। রেশম গবেষণা কেন্দ্র থেকে আমাদের বিনামূল্যে রেশম পোকা সরবরাহ করা হয়। রেশম চাষে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। নিয়মিত পরামর্শ ও দেখভাল করা হয়। যে কোন প্রয়োজনে খবর জানানোর সাথে সাথে আমাদের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসেন। আমরা কিভাবে অল্প চাষে এবং স্বল্প পরিসরে অধিক মুনাফা পেতে পারি সে ব্যাপারে পরামর্শ দেন’। উল্লেখ্য, চাষীদের প্রশিক্ষণও দেয়া হয়। বেড়ছড়িতে গত ২৪ মে থেকে ১২ জুন পর্যন্ত ‘বয়স্ক পুল পালন’ বিষয়ক রেশম চাষীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। অনেক নারী প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন রেশম চাষ করছেন। কাউখালীতে আদর্শ রেশম পল্লী গড়ে তোলা হয়েছে। 

রেশম চাষীরা বলেন, কাউখালী উপকেন্দ্রে যদি সরকারিভাবে ‘চাকী পলু পালন কেন্দ্র’ গড়ে তোলা যায় তা হলে এলাকায় আরো বেশি সংখ্যক নারী রেশম চাষে এগিয়ে আসবে। পাশাপাশি চাষীরা আরো বেশি লাভবান হবে। 

আঞ্চলিক রেশম গবেষণা কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক কামনাশীষ দাশ বলেন, কাউখালীতে অনেক মহিলা রেশম চাষে আগ্রহী হয়েছেন। তারা এলাকায় চাকী পলু পালন কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবী জানিয়েছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন মহলে অবহিত করা হয়েছে। 

বরিশালে লাভজনক পেশা হিসেবে গড়ে উঠছে নার্সারি ব্যবসা

বরিশাল: বরিশাল নগরীতে পথ চলতে গিয়ে অনেক পথচারীর চোখ আটকে যায় রাস্তার পাশে সাজানো সারি সারি ফুল আর ফলের চারার দিকে। 
একজন বৃক্ষ প্রেমিক মাহমুদ বললেন, এসব গাছের সৌন্দর্য্য মুগ্ধ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। এই মুগ্ধতা থেকেই আমি নিজের বাড়ির আঙ্গিনায় গাছ লাগিয়েছি। 
তিনি বলেন, এখন এই নগরীতে ঘরের বারান্দা, ছাদ এবং অফিসেও প্রচুর ফুলের টব শোভা পাচ্ছে। আর রাস্তার ডিভাইডারে বিভিন্ন ফুল ফলের গাছ নগরীর সৌন্দর্যকেও অনেক বাড়িয়েছে। বৃক্ষ প্রেমীদের চাহিদা মেটাতে বরিশাল শহরের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে রাস্তার পাশে গড়ে উঠেছে অনেক ছোট ছোট নার্সারি। অনেকে জীবিকার মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন নার্সারি ব্যবসা’কে। 
তাদের মধ্যে একজন রানা পাল। তিনি বরিশাল বিএম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মৃত্তিকা বিজ্ঞানে মাস্টার্স ডিগ্রি নিয়ে মাত্র পনের হাত জায়গায় নার্সারি গড়ে তুলেছেন। 
তিনি জানান, ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা থাকলে এ ব্যবসা শুরু করা যায়। নার্সারি ছোট হলেও লাভ ভালোই হয়। 
পর পর তিন বছর বরিশাল বিভাগীয় বৃক্ষ মেলায় ১ম স্থান অধিকারী রানা পাল জানান, তার স্বপ্নের কথাও। তিনি বলেন, আমি স্বপ্ন দেখি ভবিষ্যতে বনসাই অ্যাসোসিয়েশন, খামারবাড়ি বা জনসেবামূলক কাজ করার। 
এই নার্সারি ব্যবসায়ী আরো জানান, পরিবেশ ভালো রাখছি দেখে সবাই এ পেশাকে সুদৃষ্টিতে দেখেন। 
নগরীর বিভিন্ন নার্সারিতে ক্যাকটাস, বনসাইসহ শোভাবর্ধক ফুল, ফল ও ঔষুধির বিভিন্ন চারা পাওয়া যায়। চারা লাগানোর জন্য টব এবং পোকামাকড় দমনের জন্য সারও পাওয়া যায় কিছু নার্সারিতে। যাদের নার্সারি একটু বড় তারা সরকারি-বেসরকারি অফিস সাজানোর দায়িত্ব পান।
ক্যাকটাস ভ্যালি পরিচর্যাকারী সুমন ও রুহুল জানান, বিভিন্ন মেলা বা অনুষ্ঠানে তার কাছ থেকে গাছ ভাড়া করে নিয়ে যান আয়োজকরা। মূলত মৌসুম অনুযায়ী গাছ বিক্রি হয়। শীতকালে ফুল আর বর্ষায় ফল বা অন্যান্য গাছের চারা বিক্রি হয় বেশি। তবে গোলাপ, বনসাই এবং ক্যাকটাস সারা বছরই থাকে বিক্রির তালিকায়। নগরীর বিভিন্ন নার্সারিতে দেখা যায়, ১০ টাকা দামের চারা যেমন আছে, তেমনি দুর্লভ কিছু চারা গাছের মূল্য ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। নার্সারিতে চারার সরবরাহ আসে চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, সাভার, গাজীপুর, ঢাকা ও যশোর থেকে। 
চারা কিনতে আসা গৃহিনী সুমাইয়া আক্তার বলেন, ফুটপাতে ময়লা-আবর্জনার চেয়ে ফুল গাছ থাকা অনেক ভালো। আর এসব নার্সারি থেকে আমরা সহজে ও কম দামে চারা কিনতে পারছি।

Saturday, June 14, 2014

বিদেশ যাচ্ছে বাগমারার পান

রাজশাহী: রাজশাহীর বাগমারায় গড়ে উঠেছে অনেক পানের বরজ। এখানকার পান উত্তরাঞ্চলে বেশ জনপ্রিয়। শুধু তাই নয়, বাগমারার পান দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও যাচ্ছে। এখানে পান চাষে আজকের যে সাফল্য তার মূলে রয়েছেন মোহাম্মদ আলী নামের একজন পান চাষী। বর্তমানে তার গোটা পরিবারই পান চাষের সঙ্গে জড়িত। তাদের দেখাদেখি এলাকায় আরো পানের বরজ গড়ে উঠেছে। আর এর মাধ্যমে তারা স্বচ্ছল জীবনযাপন করছেন। 

বাগমারা উপজেলার গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের চন্দ্রপুর গ্রামে পান চাষী মোহাম্মদ আলীর বাড়ি। এলাকার মানুষজন জানান, মোহাম্মদ আলী একজন সফল পান চাষী। তিনিই এ এলাকায় প্রথম পানের বরজ করেন। বরজ তৈরিতে তিনি অনেক শ্রম দিয়েছেন, কষ্ট করেছেন। দিনের প্রায় সবটুকু সময়ই কাটিয়ে দিতেন পানের বরজে। পান চাষী হিসেবে এলাকায় মোহাম্মদ আলীর বেশ সুনাম রয়েছে। 

জানা গেছে, মোহাম্মদ আলী যখন বরজে কাজ করতেন, তখন তার তিন ছেলে আমিনুল ইসলাম আমিন, আবদুল হামিদ ও আলী হোসেন তাকে সহযোগিতা করতেন। পরে পিতার পেশাকে টিকিয়ে রাখতে তারাও নিবিড়ভাবে পান চাষে ঝুঁকে পড়েন। তাদের তিন ভাইয়ের মধ্যে দুই ভাই আমিন ও হামিদ পান চাষে বেশ সফল হয়েছেন। একটি মাত্র পানের বরজ থেকে তারা আজ ৪/৫টি করে পানের বরজ ও কয়েক বিঘা জমির মালিক হয়েছেন। আলী হোসেনও পান চাষে বেশ মনোযোগী। শুধু পান বিক্রি করেই তারা স্বচ্ছলভাবে জীবনযাপন করছেন। পানের টাকা থেকেই মোহাম্মদ আলী ওই এলাকায় প্রথম ইটের তৈরি বাড়ি করেন। 

আমিনুল ইসলাম জানান, পান বিক্রি করে সংসার চালানো, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ যোগানো ছাড়াও তারা প্রায় প্রতিবছরই কিছু জমি কিনেন। তিনি জানান, নিজেরা অল্প শিক্ষিত হলেও তাদের ছেলে-মেয়েদের শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে চান তারা। 

আবদুল হামিদ বলেন, তুলনামূলক কম খরচে গড়ে তোলা পান বরজে যথেষ্ট যতœ নিতে হয়। তিনি জানান, প্রথম দিকে শাড়ক, লগর, বাতা, খড়, পাটখড়িসহ অন্যান্য জিনিসপত্র দিয়ে আবৃত করে পানের বরজ তৈরির জন্য প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়। অন্যান্য মাসের তুলনায় আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে বেশি পরিমাণে পান পাওয়া যায়। 
বাগমারায় পান চাষে সফল এই দুই ভাই আমিন ও হামিদ তাদের সাফল্যের পেছনের কথা বলতে গিয়ে জানান, মূলত তার বাবার হাত ধরেই তাদের এবং এই এলাকার আরো অনেকের সাফল্য এসেছে। পান বরজের পরিচর্যায় সার্বক্ষণিক নিজেদের ব্যস্ত রাখাই হচ্ছে সাফল্যের মূল কারণ। এতে যত বেশি পরিশ্রম করা যাবে ততই ফল পাওয়া যাবে বলেও তারা মন্তব্য করেন। 

জানা গেছে, বাগমারার পান এখন বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। বিশেষ করে সৌদি আরবে এই এলাকার পান বেশ জনপ্রিয় বলে জানান আবদুল হামিদ। এছাড়া বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলে এখানকার পানের বেশ কদর রয়েছে। পূর্বে এলাকার পান চাষীরা আত্রাই, তাহেরপুর, মোহনগঞ্জ, মোল্লাপাড়া, আলোকনগর হাটে পান বিক্রি করলেও এখন তারা আলোকনগরেই পান বিক্রি করেন। স্থানীয় আলোকনগরে পানের বড় হাট বসায় এখানেই দূরদূরান্ত থেকে ব্যাপারীরা আসেন পান কিনতে। 

Wednesday, June 11, 2014

রাজশাহী অঞ্চলে বাঁশ শিল্প রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন

রাজশাহী: বাঁশের তৈরি বিভিন্ন সামগ্রীর চাহিদা কমে যাওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বাঁশ শিল্পে মন্দাভাব বিরাজ করছে। তাই বাঁশ শিল্প রক্ষা ও উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

পরিবেশবিদ ও গবেষকগণ জানান, স্থানীয় ও আঞ্চলিক বাজারে বাঁশজাত সামগ্রীর চাহিদা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন নির্ভর সামগ্রী উৎপাদন করা দরকার। আর এসব সামগ্রী তৈরিতে যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তাও দূর করতে হবে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. রেদওয়ানুর রহমান বলেন, দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে প্রায় ১ হাজার গ্রামের ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ বাঁশ শিল্পের সঙ্গে জড়িত। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী ও আদিবাসী এবং তাদের আয়ের প্রধান উৎসই বাঁশের কাজ। এছাড়া এ অঞ্চলের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ বাঁশের সামগ্রী তৈরি ও ব্যবসার ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল এবং এর মাধ্যমেই তাদের জীবন-জীবিকা নির্ভর করে।

তিনি জানান, স্থানীয় বাজার থেকে বাঁশ সংগ্রহ করে কারিগররা বাঁশের বিভিন্ন দ্রব্য-সামগ্রী তৈরি করেন এবং তা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের নিকট বিক্রি করেন। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা গ্রাম ঘুরে ঘুরে বাঁশের তৈরি সামগ্রী কিনে এলাকার বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেন। তবে বাঁশের কারিগররা বিভিন্ন কারণে প্রাপ্য লাভ থেকে বঞ্চিত হন। এরমধ্যে হয়েছে বাঁশের অধিক দাম, কাঁচামালের অনিয়মিত সরবরাহ ও বিভিন্ন বাজারে মালামাল নিয়ে যাওয়ার সমস্যা। অন্যদিকে প্লাষ্টিক সামগ্রীর সম্প্রসারণ সহজলভ্যতায় বাঁশের সামগ্রীর চাহিদা কমে যাওয়ার কারণেও বাঁশ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা ততটা লাভবান হতে পারছেন না।

ড. রেদওয়ানুর রহমান আরো জানান, পান বহনের জন্য ব্যাপকভাবে বাঁশের ঝুড়ি ব্যবহার করা হয়। আর বিভিন্ন ফলের মৌসুমে বাঁশের ঝুড়ির ব্যবহার বেড়ে যায়। আম, টমেটো, লিচু, পেয়ারা, পেঁপে ইত্যাদি ফল বাজারে সরবরাহের ক্ষেত্রে বাঁশের তৈরি ঝুড়িসহ অন্যান্য বাঁশজাত সামগ্রী ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। 

তিনি মনে করেন, বাঁশজাত সামগ্রী তৈরি ও বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যা চিহ্নিত করা প্রয়োজন। আর চিহ্নিত সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। যাতে বাঁশ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা তাদের আয় বৃদ্ধি করতে পারেন। আর এর মাধ্যমে দারিদ্র্য নিরসনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখা সম্ভব। বাঁশের তৈরি পরিবেশবান্ধব সামগ্রীর ব্যবহার বৃদ্ধির জন্যও সচেতনতা তৈরি করতে হবে। 

বাঁশ শিল্পের প্রসারের জন্য বিভিন্ন সেক্টর থেকে উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে নার্সারীর মালিকরা তাদের নার্সারীতে বাঁশের সামগ্রী ব্যবহার করতে পারেন। নার্সারী কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট ও সামাজিক বন বিভাগের সহযোগিতায় বাঁশের সামগ্রী তৈরিতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিতে পারেন। বাঁশের তৈরি সামগ্রীর ব্যবহার বৃদ্ধি ও বাজারজাতের জন্য জরিপের উদ্যোগও নেয়া যেতে পারে। আর ঢাকাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকায় বাঁশশিল্প প্রসারের জন্য প্রস্তুতকারক ও পাইকারী বিক্রেতাদের মধ্যে একটা যোগসূত্র স্থাপন করতে হবে।

এছাড়া বাঁশের তৈরি সামগ্রী বিদেশে রফতানির জন্যও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে সংশ্লিষ্টদের। 
বরেন্দ্র উন্নয়ন প্রচেষ্টার পরিচালক ফয়জুল্লাহ চৌধুরী মনে করেন বাঁশ শিল্পকে রক্ষা ও সম্প্রসারণের জন্য সরকারি পর্যায়ে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। বেসরকারি খাতে এই শিল্পের প্রসারের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কিছু সুযোগ-সুবিধা ও নিশ্চিত করতে হবে।

তার মতে বাঁশ ব্যবসায়ী, বাঁশের সামগ্রী প্রস্তুতকারী ও এ খাতের ব্যবসায়ীদেরকে ক্ষুদ্র ঋণের আওতায় আনা উচিত। এতে অবহেলিত বাঁশ শিল্পের প্রসার ঘটবে। 

এসব পদক্ষেপ গ্রহণ করলে বাঁশ উৎপাদনকারী, বাঁশজাত সামগ্রী প্রস্তুতকারক ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা সবাই সমভাবে উপকৃত হবেন। মোট কথা, এতে সরকারের দারিদ্র্য নিরসন কার্যক্রমও সফল হবে।

রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জে জমে উঠেছে আমের বাজার

রাজশাহী: আমের রাজধানী বলে খ্যাত রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবার বৈরী আবহাওয়ার পরও জমে উঠেছে আমের বাজার। তবে দামও রয়েছে বেশ চড়া। আগামী সপ্তাহে বিভিন্ন জাতের আমের সমারোহ ঘটলেও দর কমার সম্ভাবনা নেই বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, রাজশাহী জেলার বৃহত্তম আমবাজার বানেশ্বর, চারঘাট, গোদাগাড়ী এবং নওহাটা এবং চাপাইনবাবগঞ্জের কানসাট, শিবগঞ্জ বাজার, রহনপুর, মল্লিকপুর, ভোলাহাট আম ফাউন্ডেশন, সদরঘাট ও তহাবাজারে গোপালভোগ, খিরসাপাত, খুদি খিরসা, মধু চুষকি, সাটিয়ার কেড়া, বৃন্দাবনী, টিক্কাফারাস, কালিভোগ, রানিভোগসহ নাবী জাতের গুটি আম বাজারে উঠেছে। 

গুটি জাতের বৃন্দাবনী, রানিভোগ, কালিভোগ আম ১৫’শ থেকে ১৬’শ টাকা, গোপালভোগ ২ হাজার থেকে ২৬’শ টাকা, খিরসাপাত ২২’শ থেকে ২৫’শ টাকা দামে কেনাবেচা হচ্ছে। তবে দাম বেশী হওয়ায় এবার আম ব্যবসায়ীরাও খুশী। কানসাটের আম ব্যবসায়ী আনসারুল হক জানান, জুনের মধ্যভাগে বিভিন্ন জাতের আম বাজারে পরিপূর্ণ হয়ে উঠলে আমের দাম কমে যাবে।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম জানান, এবার আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে বাগানে পর্যাপ্ত মুকুল আসলেও গুটি আসে কম, তারপরও প্রচণ্ড খরা ও তাপদাহে আমের গুটি ঝরে পড়ায় আমের উৎপাদনে বিরাট প্রভাব ফেলেছে। তিনি জানান, জেলার মহানগরীসহ নয়টি উপজেলায় প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ১৮ লক্ষ আম গাছ আছে।

চাপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের শস্য বিশেষজ্ঞ মঞ্জুরুল হুদা জানান, জেলার ৫টি উপজেলার ২৪ হাজার ২’শ ৫০ হেক্টর জমিতে প্রায় ১৯ লক্ষ আমগাছ রয়েছে। এবার তেমন ঝড়-ঝাপ্টা না হলেও কয়েক দফা বৃষ্টিপাতের কারণে আমের আকার, রং ও স্বাদ বেশ ভাল হওয়ায় কৃষকরা অনেকাংশে লাভবান হবে। তবে চলতি মৌসুমে এবার জেলায় আমের প্রায় ১ লক্ষ ৬০ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।

তহাবাজারের আম ব্যবসায়ী শুকুর আলি জানান, ভোর হতে গভীর রাত থেকে পর্যন্ত আমচাষী ও ব্যাপারীদের ভিড়ে জমে উঠেছে আমের বাজারগুলো। বাগান থেকে আম পাড়া, টুকরী তৈরী, বাঁধাই ও ট্রাক বোঝাই থেকে শুরু করে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে মেতে উঠেছে বাজারের লক্ষাধিক আমচাষী ও ব্যবসায়ী। জেলার সুস্বাদু আম কেনার জন্য ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্রগ্রাম, নোয়াখালী, চৌমুহনী, ফেনী, সিলেট, খুলনাসহ বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীরা ইতিমধ্যে জেলায় আসা শুরু করেছে। 

কানসাটের আম ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম জানান, চলতি আম মৌসুমে রাজনীতি সংকট (হরতাল, অবরোধ) দেখা না দিলে বৈরী আবহাওয়ার পরও কিছুটা হলেও লাভের মুখ দেখবে আম ব্যবসায়ীরা।

কানসাট আম আড়তদার সমিতির সভাপতি হাবিবুল্লাহ জানান, জেলার উৎপাদিত আমের ৫০ শতাংশ আম শিবগঞ্জ উপজেলায় উৎপাদিত হয় এবং কানসাট বাজারটি উপজেলার মধ্যস্থানে অবস্থিত হওয়ায় প্রতিদিন প্রচুর আমের আমদানী ঘটে এবং বিক্রি হয়। জেলার ভোলাহাট, গোমসাপুর ও সদর উপজেলার উৎপাদিত আমের একটি বড় অংশ বিক্রি হয় কানসাট বাজারে। জানা গেছে কানসাটে প্রায় ৩৫০টি আমের আড়তে প্রতিদিন প্রায় ৫কোটি টাকার আম কেনাবেচা শুরু হয়েছে। এ জেলার সাথে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় ব্যবসায়ীদের দ্রুত আম পরিবহনে সহজলভ্য হচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে থেকে এখন প্রতিদিন প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ আম বোঝাই ট্রাক দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলে যাচ্ছে। এছাড়া এর বাইরেও জেলার বড় বড় আম বাগানগুলো থেকে সরাসরি আম ব্যবসায়ীরা ট্রাক বোঝাই করে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রেরণ করে থাকে।

শহরের আম ব্যবসায়ী হারুন জানান, জেলা শহরের প্রধান আম বাজারটি বসে তহাবাজারের মহানন্দা নদীর তীরে। প্রাচীন এই আমের বাজারে সদর, শিবগঞ্জ ও গোমসাপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন নৌকাযোগে বিপুল পরিমাণ আম আসে। এখানে প্রতিদিন আম বিক্রি হয় কোটি টাকার উপরে। 

রহনপুর রেলষ্টেশনের সামনে প্রায় ১’শ ৫০টি আড়তে এবং জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা ভোলাহাট আম ফাউন্ডেশন বাজারে ৫০টি আড়তে প্রতিদিন আমের বেচাকেনা হয় প্রায় ২ কোটি টাকা বলে জানান আম ফাউন্ডেশনের সম্পাদক মোজাম্মেল হক চুটু। পাশাপাশি পরিবহন, হোটেল ও শ্রমিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরো ব্যবসা হবে কয়েক কোটি টাকার। সাথে লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও কোটি কোটি টাকার লেনদেনে চাঙ্গা হয়ে উঠছে জেলার গ্রামীণ অর্থনীতি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক সরদার সরাফত আলী জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম বিষমুক্ত ও সুনাম অক্ষুণœ রাখার জন্য জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শতাধিক ভ্রাম্যমান আদালত ফরমালিন কিডস নিয়ে আমবাজার ও বাগানে বাগানে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি কার্বাইড ও কৃত্রিম উপায়ে আম পাঁকানোর কু-ফলের দিকগুলো তুলে ধরে সচেতনতামুলক সভা প্রতিদিন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

ফরিদপুরের চরাঞ্চলে বাদাম চাষ বেড়েছে

ফরিদপুর: ফরিদপুরের চরাঞ্চলে বাদামের ব্যাপক চাষ হয়েছে। জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে সাতটিতেই আবাদ হয়েছে বাদাম। বিশেষ করে পদ্মা নদীর বির্স্তীণ চরে বাদামের চাষাবাদ হয়েছে বেশি। মধুমতি ও কুমার নদীর চরেও এর চাষ হয়েছে। এই তিন নদীর ৫০টিরও বেশি চরে পাঁচ সহস্রাধিক হেক্টর জমিতে এবার বাদামের চাষ করেছেন কৃষকেরা।

জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ফরিদপুর সদর, চরভদ্রাসন, আলফাডাঙ্গী, মধুখালী, সদরপুর, ভাঙ্গী ও বোয়ালখালী উপজেলার চরাঞ্চলে বাদামের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সদরপুর উপজেলার পদ্মার চরে চাষ হয়েছে বেশি। কৃষকেরা এখন ভালো ফলন আর দামের আশায় বুক বেঁধে আছেন।

যেদিকেই চোখ যায়, সেদিকেই দেখা যায় বাদামের ক্ষেত। হলুদ ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে ওইসব ক্ষেত। আর কিছু দিনের মধ্যেই গাছের গোছা ধরে টান দিলেই উঠে আসবে থোকা থোকা চীনা বাদাম। এসব ক্ষেতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষাণ-কৃষাণীরা। 

একদা নদীভাঙ্গনে সর্বস্ব হারানো মানুষেরা চরাঞ্চলে বসবাস করে চরে বিভিন্ন ফসলের আবাদ করেন। কিছু কিছু চর বছরের অনেটা সময় পানিতে নিমজ্জিত থাকে। ওইসব চর যখন শুকিয়ে যায় তখন সেখানে একমাত্র বাদামই চাষ করা যায়। অন্য ফসল তেমন ভালো হয় না। সেখানে বাদামের ফলনই ভালো হয়। তাই দিনে দিনে চরাঞ্চলে বাদামের চাষাবাদ বাড়ছে। নিজের জমি না থাকলেও অনেকে অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষ করছেন। এভাবেই বাদাম চাষ বা শ্রমিকের কাজ করে অনেকের কর্মসংস্থান হচ্ছে।

সদরপুর উপজেলার দেয়ারা গ্রামের বাদাম চাষী আনোয়ার হোসেন জানান, তিনি প্রায় ৭ বছর যাবৎ চরে বাদাম চাষ করছেন। চরের বালু মাটিতে অন্য ফসল ভালো না হওয়ায় তিনি বাদামে আগ্রহী হন। পরে দেখতে পান বাদাম চাষে খরচ ও পরিশ্রম কম কিন্তু লাভ বেশি। তাই তিনি বাদাম চাষের প্রতি ঝুঁকে পড়েন।

ঢেউখালীর কৃষক সোহরাব মোল্লা এবার গতবারের তুলনায় বেশি জমিতে বাদাম চাষ করেছেন। গত কয়েক বছর ধরে বাদাম চাষ করে তিনি ভালো লাভবান হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বাদাম হইল মাটির নিচের গুপ্তধন। বাদাম চাষ কইরা আমাদের ভাগ্য বদলাইছে।’

চর নাছিরপুর গ্রামের বাচ্চু খালাসি জানান, এ বছর আবহাওয়া বাদাম চাষের উপযুক্ত থাকায় ফলন অনেক ভালো হবে। এবার ফলন বাম্পার হবে বলেও তিনি আশা করছেন।

এদিকে ফরিদপুরের কিছু কিছ অঞ্চলে ইতোমধ্যে জমি থেকে বাদাম উঠানো শুরু হয়েছে। পরিমাণে কম হলেও বাজারে কাঁচা বাদাম আসছে। বর্তমানে প্রতিমণ কাঁচা বাদাম আড়াই হাজার থেকে দুই হাজার সাতশ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে।

চরমানাইর এলাকার কৃষক ফারুক মিয়া জানান, এবার এখন পর্যন্ত যেসব জমি থেকে বাদাম উঠানো হয়েছে, তাতে একর প্রতি ৪০ থেকে ৫০ মণ বাদামের ফলন হয়েছে। তিনি জানান, এতে উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে প্রতি একরে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভের সম্ভাবনা রয়েছে।

ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শংকর চন্দ্র ভৌমিক জানান, চলতি মৌসুমে এ জেলায় ৫ হাজার ২০২ হেক্টর জমিতে চীনাবাদামের চাষ করা হয়েছে। এতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৮৩৭ টন। তিনি বলেন, চরে অন্য ফসলের তুলনায় বাদামের উৎপাদন ভালো হয়। তাই আমরা চরাঞ্চলে বাদাম চাষ করার জন্য কৃষকদের উৎসাহ ও পরামর্শ দিয়ে থাকি। ফলে দিন দিন এখানে বাদামের চাষ বাড়ছে। তিনি জানান, বর্তমানে ফরিদপুর জেলার অন্যতম অর্থকরী ফসল হয়ে উঠেছে বাদাম। বাদাম চাষে অনেকের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে বলেও তিনি মনে করেন।

ভোজ্য তেলের ঘাটতি পূরণে ভুমিকা রাখবে বিনা-২ জাতের তিল

মাগুরা: বিনা-২ জাতের উচ্চ ফলনশীল তিল দেশে তেলের ঘাটতি মেটাতে সহায়ক ভুমিকা রাখবে। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাতের বিনা-২ জাতের তিল দেশীয় সাধারণ জাতের তিলের তুলনায় এই তিল দ্বিগুণ ফলন উৎপাদনে সক্ষম। 

উচ্চ ফলনশীল জাতের তিল নিয়ে মাগুরায় দু’টি মাঠ দিবসে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের বিজ্ঞানী ও বিনা-২ তিলের উদ্ভাবক ড. এম এ মালেক জানান, মাথা পিছু দৈনিক ৩৫ গ্রাম হিসেবে দেশে ভোজ্য তেলের মোট চাহিদা ২০ লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু উৎপন্ন হয় মাত্র ২ লাখ মেট্রিক টন। বাকি যে ১৮ মেট্রিক টন ভোজ্য তেল বাইরে থেকে আমদানি করা হয় তার মধ্যে সাড়ে ১২ লাখ টনই পামওয়েল। যেটা ভেজাল হিসেবে সয়াবিনসহ বিভিন্ন তেলে মিশ্রত হয়ে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে দেশে তিল জাতীয় ফসলের আবাদ বাড়াতে হবে। এটি ভোগ্যপণ্য হিসেবে একদিকে আর্থিকভাবে যেমন সাশ্রয়ী। তেমনি ফ্যাটসহ অন্যান্য উপাদান যে গুলোর অতিমাত্রা শরীরের জন্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিকর তার পরিমাণ একবারই কম থাকায় এটি জনস্বাস্থ্যের জন উপাদেয়। এ ছাড়া এটি খেতে সুস্বাদু ও দেখতে সয়াবিনের মতোই স্বচ্ছ। এতে সাধারণ তিলের মতো তীব্র গন্ধ নেই। যে কারণে এটির বাণিজ্যিক গুরুত্ব ব্যাপক । 

বিনার মহাপরিচালক ড. এ এইচ এম আব্দুর রাজ্জাক জানান, সাময়িক জলাবদ্ধতা প্রতিরোধ সক্ষম ও খরাসহিষ্ণু বিনা-২ তিলের জাতটি ২০১১ সালে অবমুক্ত করা হয়। যা এখন কৃষক পর্যায়ে ব্যাপক চাষের জন্য কৃষি বিভাগ ও বিনা একসাথে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। সাধারণত ফেব্র“য়ারী থেকে মার্চ মাসের মধ্যে চাষাবাদ করা যায়। দো’আশ হতে এটেল দো’আশ মাটিতে এটি চাষের উপযোগী। এর জীবনকাল ৯০ থেকে ৯৮ দিন। হেক্টর প্রতি ফলন উৎপাদন হয় ১.৮ টন। সাধারণ জাতে উৎপাদন হয় ০.৫ থেকে ০.৬ টন। বিনা-২ তিল ব্যাপকভাবে আবাদ করা গেলে দেশে প্রতি বছর যে ১৮ লাখ মেট্রিক টন ভোজ্য তেলের ঘাটতি রয়েছে তা সহজেই পূরণ করা সম্ভব। 

বাংলাদেশসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশে বেকারী ও ফাস্টফুডসহ বিভিন্ন খাবারের সাথে সাদা তিল ব্যবহার হয়ে থাকে। রপ্তানী পণ্য হিসাবে বিশ্বের বিভিন্ন বাজারে বাংলাদেশের বিনা জাতের সাদা তিলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ফলে এ তিলের বাজার মূল্য বেশী হওয়ায় কৃষকরাও লাভবান হতে পারেন। 

সদর উপজেলার পশ্চিম রামনগর গ্রামের কৃষক ফিরোজ মোল্যা বিনা ও কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় প্রায় দেড় একর জমিতে বিনা-২ জাতের প্রর্দশনী ক্ষেত করেছেন। যা থেকে তিনি ২১ মণ তিল পাবেন বলে আশা করছেন। শালিখা আড়–য়াকান্দি গ্রামের কৃষক অলেক মোল্যা ১ একর জমিতে বিনা তিল চাষ করেছেন। যা থেকে ভালো ফলন পাওয়ার আশা করছেন তিনি। 

জেলা কৃষি কর্মকর্তা মোখলেসুর রহমান জানান, জেলায় এ বছর ৩ হাজার ৫০৫ হেক্টর জমিতে তিল চাষ হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে বিনাসহ বিভিন্ন ধরনের উচ্চ ফলনশীল জাতের তিল চাষ হয়েছে। যা থেকে ৪ হাজার ৭৫০ টন তিল উৎপাদিত হবে। 

Friday, June 6, 2014

জলবায়ু পরিবর্তনে উপকূলের মানুষের ঝুঁকি বাড়ছে

বরগুনা: বরগুনার দক্ষিণ প্রান্তের তালতলী, পাথরঘাটা উপজেলায় বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষা বনাঞ্চল থেকে গাছ পাচার হচ্ছে নিয়মিতভাবে। টেংরাগিরি, সোনাকাটা, ফাতরা, হরিণঘাটার এই বনগুলোর বৃক্ষরাজি প্রাচীরের মতো কাজ করেছিল ২০০৭ সালের সিডরে। অর্ধেকের বেশী বনাঞ্চল ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল ২২০ কিলোমিটার গতিগের বাতাস ও জলোচ্ছাসের তোড়ে। ধীরে ধীরে পুন:জীবন ফিরে পাওয়া বন এখন উজাড় করছে বন দস্যুরা, গাছ মরছে প্রাকৃতিক পরিবর্তনের (সাকসেশন) নিয়মেও।। শুধু বন-জঙ্গল নয়, লোকালয়ের গাছও কাটা পড়ছে নির্বিচারে। কেবলমাত্র ঝড়-ঝঞ্ঝা থেকে রক্ষা নয়, ভূখন্ডের তাপমাত্রার ভারসাম্যও টালমাটাল হয়ে পড়ছে গাছের আধিক্য কমে যাওয়ায়, মতামত বিশেষজ্ঞদের।  

বিশাল আকারের অনেকগুলো চর জেগে উঠেছে বঙ্গোপসাগরের ও পায়রা এবং বিষখালী নদীর মোহনায়। সাগরের লোনা পানি নদীগুলোতে ঢুকে লবণাক্ত করে তুলছে ফসলী জমি। পলি পড়ে নদীও হারাচ্ছে নাব্যতা। ধারণ করতে পাওে না বর্ষা কিংবা উজান থেকে নেমে আসা পানি। স্রোতে ভাঙ্গছে লোকালয় ও কৃষি জমি। মানুষ নিজেদের স্বার্থে ভরাট করছে খাল, বিল, জলাশয়। নির্ভরশীলতা বাড়ছে ভূগর্ভস্থ পানির উপর। মানুষ সৃষ্ট এবং প্রাকৃতিকভাবে জলবায়ুর চরম পরিবর্তনজনিত কারণে উপকূলীয় এলাকায় দুর্যোগের তীব্রতা ও ব্যাপকতার মাত্রা গত দুই দশকে প্রায় চারগুণ বেড়েছে। ঝুঁকিতে রয়েছে কয়েক লাখ মানুষ। রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির তথ্যমতে ২০১৫ সাল নাগাদ দুর্যোগের কারণে উপকূলের ৫৪% ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশংকা রয়েছে। 

উপকূলীয় অঞ্চলের সমুদ্রগামী জেলেরা জানিয়েছেন, ২০০৭ সালে বঙ্গোপসাগরের আবহাওয়া ছিল অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি খারাপ। বর্তমানে তা আরও খারাপ। ওই বছর বাংলাদেশ আবহাওয়া দপ্তর থেকে ৮৯টি সংকেত প্রদান করা হয়, যার মধ্যে জুলাই থেকে মধ্য নভেম্বরের মধ্যে ২২টি নিম্নচাপ এবং ঘনীভূত নিম্নচাপ ছিল ১২টি, যা তিন বা তার উর্ধ্বের সংকেতের আওতাভুক্ত ছিল। ঐ পরিস্থিতিতে জেলেদের জীবন জীবিকার ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। 
২০০৭ সালে পরপর দু’টি বন্যার পাশাপাশি বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের উপর দিয়ে বয়ে গেছে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’। পরের বছর ‘আইলা’। সে সময়ের ক্ষতি আজও মানুষ কাটিয়ে উঠতে পারেনি। বৈষ্ণিক উষ্ণতা বৃদ্ধি জনিত জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণেই এই দুর্যোগগুলোর সৃষ্টি হয়েছিল। এ ছাড়া লবণাক্ততা, পানির স্তর নেমে যাওয়াসহ অপরাপর নিয়ামকের পরিবর্তন বহু ক্ষেত্রেই আকস্মিক ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টি না করলেও দীর্ঘমেয়াদী ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণ হয়ে ওঠে। 

তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে ঝড়, টর্নেডো, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস সংগঠিত হওয়ার সংখ্যা ও এগুলোর তীব্র হিংস্রতা বৃদ্ধি, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততা বৃদ্ধি, স্বাভাবিক জোয়ারের উচ্চতা বৃদ্ধির কারনে এসব এলাকায় ব্যাপক ভাঙ্গন. বৃষ্টিপাত বৃদ্ধির কারণে বন্যা, আকষ্মিক বন্যা ও নদী ভাঙ্গন বৃদ্ধি পায়। মৌসুমী বৃষ্টিপাতের ধরন পরিবর্তনের ফলে খরা প্রবণতা বৃদ্ধি, সারাদেশে তাপ, চাপ, বৃষ্টিপাতে ব্যাপক অনিশ্চয়তা ইত্যাদি বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছে বলে স্থানীয় লোকজনের সাথে আলাপ করে জানা গেছে।

আইপিসিসি’র চতুর্থ মূল্যায়ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে কৃষির উৎপাদনশীলতা হ্রাস, জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি, শিল্পায়ন ব্যাহত এবং পরিণতিতে জনজীবনসহ জাতীয় অর্থনীতি বিপর্যস্ত হওয়ার আশংকা করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও অভিযোজন বিষয় নিয়ে উপকূলীয় এলাকায় কাজ করছে এমন সংগঠন এনএসএস থেকে প্রাপ্ত তথ্যে আন্তর্জাতিক হিসাব অনুয়ায়ী ১৯৮৫ থেকে ১৯৯৪ সালের মধ্যে দুর্যোগের কারণে বিশ্বে উপকূলীয় এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ লোকসংখ্যা ছিল প্রতিবছরে ১৭৪ মিলিয়ন, ১৯৯৫ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে তা বেড়ে দাড়িয়েছে ২৪০ মিলিয়ন। সাম্প্রতিক সময়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে বছরে ৩৭৫ মিলিয়ন এ।

এনএসএস’র দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস প্রকল্পের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থাপক সাবরিনা মমতাজ জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বিপদগ্রস্থ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। ফসলহীনতা, নদী ভাঙ্গন ও উপকূলীয় অঞ্চলে বারবার দুর্যোগ, কর্মসুযোগহীনতা বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত উদ্বাস্তুর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের ৩০টি  কৃষি প্রতিবেশ জেলার প্রতিটিতেই জলবায়ু পরিবর্তনের নানামুখী প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এতে দেশের কৃষিখাত, অর্থনীতি, মানব সম্পদ ব্যাপক হারে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। 

Monday, June 2, 2014

নওগাঁর ‘শাহ কৃষি তথ্য পাঠাগার’ কৃষি ও কৃষকদের উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে

নওগাঁ: নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলায় কালিগ্রাম ‘শাহ কৃষি তথ্য পাঠাগার’ কৃষকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কৃষি ও কৃষকদের উন্নয়নে পরামর্শ, তথ্য এবং হাতে কলমে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে কৃষি সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখে চলেছে এই পাঠাগার। 

২০০৮ সালে স্থানীয় উদ্যমী ব্যক্তিত্ব মো. জাহাঙ্গীর আলম শাহ এই পাঠাগারটি প্রতিষ্ঠা করেন। কৃষকের সন্তান হিসেবে বাল্যকাল থেকেই কৃষির প্রতি ছিল তার প্রচন্ড আগ্রহ। পড়াশোনা শেষে শিক্ষকতা করলেও এই আগ্রহ তিনি হারাননি। তিনি ভেবেচিন্তে দেখলেন কৃষকদের উন্নয়নে কৃষক পর্যায়ে কোন লাইব্রেরী নেই। 

তাই তিনি পরিবেশ রক্ষার মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন এবং এক্ষেত্রে কৃষকদের জ্ঞানার্জন করে আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে শাহ কৃষি তথ্য পাঠাগারটি গড়ে তুলেছেন। এই পাঠাগার প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিনি দেশী-বিদেশী কৃষি সম্পর্কিত বই পুস্তক, পত্র-পত্রিকা, জার্নাল ইত্যাদি সংগ্রহ করতে শুরু করেন। বর্তমানে তার এই লাইব্রেরীতে বইপুস্তক, পত্রপত্রিকা, জার্নাল ইত্যাদির সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার। 

কৃষকরা সরাসরি এই লাইব্রেরীতে এসে বিভিন্ন ফসল উৎপাদনের কলাকৌশল, উৎপাদনের সঠিক সময়, সার কীটনাশকের ব্যবহার, জমি তৈরীর প্রক্রিয়া ইত্যাদি সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্যাদি সংগ্রহ করে থাকেন। এছাড়াও কৃষকদের বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদানের আয়োজন করা হয়ে থাকে এখানে। কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের ওইসব প্রশিক্ষণে রিসোর্স পার্সন হিসেবে সম্পৃক্ত করা হয়। এ কারণে ইতিমধ্যে কৃষি বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে জাহাঙ্গীর আলম শাহ’র একটি সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে লাইব্রেরী, এলাকার কৃষকদের মান উন্নয়ন এবং আধুনিক কৃষি উৎপাদনে সর্বাত্মক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন। 

জানা গেছে, তিনি নিজ অর্থে ক্রয় করে বিভিন্ন গাছের চারা এবং উন্নতজাতের বীজ এলাকার কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করে থাকেন। এটিও ওই লাইব্রেরীর নিয়মিত কার্যক্রমের একটি ধারাবাহিক কর্মসূচি। কৃষক এবং কৃষকদের সন্তানদের জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত বিভিন্ন জনকল্যাণমুলক কার্যক্রম সম্পৃক্ত রয়েছে এই কর্মসূচীর আওতায়। এলাকার তুলনামূলকভাবে দরিদ্র কৃষকদের প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পড়–য়া সন্তানদের মধ্যে ৭৫ জন ছাত্র-ছাত্রীর পড়াশুনার জন্য তার ওই লাইব্রেরী চত্বর ব্যবহার করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও সেখানে স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রশিক্ষণ এবং বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ব্যবস্থাও রয়েছে। এ লক্ষে এলাকার ১৩৫ জন কৃষাণ কৃষাণীর মধ্যে স্বাস্থ্যকার্ড বিতরণ করা হয়েছে। তারা এই কার্ড দেখিয়ে সেবা গ্রহণ করে থাকেন।

এখানে কৃষকদের সরাসরি কৃষি সম্পর্কিত তথ্যাদি ও পরামর্শ প্রদানের জন্য সেমিনারের উপযোগী মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, ক্যামেরা, সাউন্ডসিষ্টেম ইত্যাদি সম্বলিত একটি সেমিনার কক্ষ রয়েছে। 

এই লাইব্রেরীর প্রতিষ্ঠাতা জাহাঙ্গীর আলম শাহ কৃষি ক্ষেত্রে অনবদ্য ভূমিকা রাখার জন্য বেশ কয়েকটি পুরস্কার লাভ করেছেন। ১৯৯২ সালে বৃক্ষরোপণে নওগাঁ জেলায় দ্বিতীয় পুরস্কার, ২০১১ সালে রোটারী ইন্টারন্যাশনাল থেকে কৃষিতে স্বর্ণপদক এবং ২০১৪ সালে চ্যানেল আই কৃষিবিষয়ক নিবন্ধ প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার লাভ করেন। তার সফল কার্যক্রমের জন্য লাইব্রেরীটি ইতিমধ্যে জাতীয়পর্যায়ে একটি পরিচিতি লাভ করেছে। কৃষি গবেষণা  কেন্দ্রের চেয়ারম্যান কৃষিবিদ ওয়াইজ কবির, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ এই লাইব্রেরীটি পরিদর্শন করেছেন এবং এ সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন। 

মান্দা উপজেলার কালিগ্রামের কৃষক মফিজউদ্দিন ও মাহবুবুর রহমান এবং ছোট মুল্লুক গ্রামের কৃষক ফহিমুদ্দিন সরাসরি এই লাইব্রেরীর সাথে যুক্ত থেকে কৃষিক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছেন বলে তারা জানিয়েছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এস এম নুরুজ্জামান মন্ডল পাঠাগারটি কয়েকবার পরিদর্শন করেছেন বলে তিনি জানান। তিনি মনে করেন এই পাঠাগারটি এলাকার কৃষি ও কৃষকদের মান উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। 

Sunday, June 1, 2014

হেলালকে তথ্য প্রযুক্তির জ্ঞান এনে দিয়েছে নতুন সম্ভাবনা

হবিগঞ্জ: যে বয়সে গ্রামের আর দশটি ছেলে মাঠে খেলা করে এবং ব্যস্ত থাকে আপন ভূবনে,তখন হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা কেউন্দা গ্রামের হেলালকে নেমে যেতে হয়েছে জীবন যুদ্ধে। নিজের এবং দুই বোনের লেখাপড়ার খরচ যোগানো ও তাদের ভরণ পোষণের দায়িত্ব পড়ে তার উপর। কিন্তু দারিদ্র্যের জন্য যুবক হেলাল এই দায়িত্বে চোখে সর্ষে ফুল দেখলেও দমে যায়নি। নেমে পড়ে জীবন যুদ্ধে। আলাদীনের চেরাগের ন্যায় তথ্য-প্রযুক্তির জ্ঞানের সন্ধান পেয়ে এখন স্বাবলম্বী যুবক হেলাল। সে অনেক তরুণের কাছে নতুন উদাহরণ সৃষ্টি করেছে।

বছর চারেক পুর্বে নিজের লেখাপড়া ও বোনদের লেখাপড়ার জন্য গ্রাম থেকে হবিগঞ্জ শহরে আসে হেলাল উদ্দিন। দরিদ্র বাবার একমাত্র ছেলে হেলাল। অভাবের কারণে ভালো একটি কলেজে লেখাপড়া করতে পারেনি সে। ইচ্ছে ছিলো একটি ভালো ইউনিভার্সিটিতে পড়বে। কিন্তু তা আর সাহস করতে পারেনি। কারণ যার বাবার প্রতিমাসে এক হাজার টাকা দেয়ার র সাধ্য ছিলো না সে কিভাবে একটি ভালো ইউনিভার্সিটিতে পড়বে। এজন্য তার সে স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। 

কম্পিউটার চালানোর দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে হেলাল হবিগঞ্জ শহরে একটি পত্রিকায় কাজ নেয় মাসে ২ হাজার টাকার বেতনে। এই টাকা দিয়ে কিভাবে নিজের ও বোনদের লেখাপড়াসহ তাদের ভরণপোষণ করবে হেলাল সেই চিন্তায় আরও কিছু করা যায় কিনা সেই চিন্তা করে। সেই চিন্তা থেকে  হঠাৎ ওয়েব সাইট ডিজাইন শিখার ইচ্ছে জাগে তার। কিন্তু পত্রিকা অফিসের কাজে সরকারি ছুটি ব্যতিত আর কোন ছুটি ছিল না। এছাড়া হবিগঞ্জ  শহরে এমন কোন ইনস্টিটিউট ছিল না যেখানে ওয়েব ডিজাইনের কাজ শিখানো হয়। কিন্তু হেলাল চায় যেভাবেই হোক এই কাজটা শিখতে হবে।  

রাত ২টা পর্যন্ত পত্রিকা অফিসে কাজ করে হেলাল বাকি রাতটুকু ইন্টারনেটে ঘাটাঘাটি করতে থাকে কিছু শেখার জন্য। এক পর্যায়ে ওয়েব ডিজাইনের কিছু কাজ শিখেও ফেলে হেলাল।  কিছু কাজ শিখার পরপরই সে ওয়েব ডিজাইনের কাজও পেয়ে যায়। সেই কাজ করে তার আত্মবিশ্বাস বাড়তে থাকে। 

প্রথম অবস্থায় কাজ পেতে কষ্ট হতো। কিছুদিন পর আস্তে আস্তে কাজ বাড়তে থাকে তার। সাড়ে ৩ বছর কাজ করে হেলাল ৫৫টি ওয়েব সাইট তৈরী করে সফলতার স্বাক্ষর রাখে। এখন মাসে সে ৪/৫টি এমনকি কোন মাসে তার বেশিও ওয়েব সাইট তৈরির কাজ পায় হেলাল। ওয়েব ডিজাইনের কাজ করে এখন হেলাল প্রতি মাসে আয়  করে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। ঘরে বসেই আয়ের জাদুমন্ত্র পেয়ে এখন তার পরিবারে এসেছে স্বচ্ছলতা। নিজের লেখাপড়া অব্যাহত রাখার পাশাপাশি ভালভাইে চলছে বোনদেরও লেখাপড়া। 

শুধু ওয়েব সাইট তৈরি নয় এখন হেলাল বাংলাদেশ ডাক ও টেলিযোগযোগ, তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্য প্রযুক্তি বিভাগের লার্নিং এন্ড আর্নিং ডেভলপমেন্ট প্রজেক্টে ওয়েব ডিজাইন ট্রেইনার হিসেবে কাজ করে। 

হেলাল উদ্দিন বলেন, আসলে মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। ইচ্ছে করলেই নিজেই তার জীবনকে উজ্জ্বল করতে পারে। দীর্ঘ সাড়ে ৩ বছর কাজ করে আজ আমি একজন পরিপূর্ণ ওয়েব ডেভলপার। আর আমার কাজে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন আমার মা-বাবা। হেলাল বর্তমানে বিএ ফাইনাল ইয়ারে পড়ছেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি হবিগঞ্জ শহরে একটি অফিস নিয়ে ওয়েব ডেভলপমেন্টের কাজ পরিচালনা করে আসছেন। তার কোম্পানির নাম দিয়েছেন ‘হেলাল হোস্ট বিডি’। 

হেলাল উদ্দিন ওয়েব ডিজাইনের ব্যাপারে খুবই আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘বাইরে চাকরির পাওয়ার জন্য হন্যে হয়ে ঘোরার দরকার নেই। যে কেউ  চাইলেই তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে ঘরে বসেই আয় করতে পারেন। আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে দেশে সে সুযোগ তৈরি হয়েছে এবং অনেকে কাজ করে সফলও হয়েছেন।

হবিগঞ্জ লিংক টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ প্রদীপ দাস সাগর বলেন, সাধনা করলে যে কেউ সফল হতে পারে। এর অন্যতম উদাহরণ হেলাল উদ্দিন। ঘরে থাকা কম্পিউটার আর ল্যাপটপ যে হতে পারে টাকার খনি সেটি সবাইকে বোঝাতে পেরেছেন হেলাল উদ্দিন। 

হেলাল উদ্দিনের সফলতার পিছনে ছিল শ্রম, নিষ্ঠা আর আকাঙ্খা। এই বিষয়গুলো থাকলে কাউকে বিদেশে যেতে হবে না। দেশেই নিজেদেরকে সফলভাবে প্রতিষ্ঠা করতে পারে। হেলাল উদ্দিন সেই উদাহরণটুকুই সৃষ্টি করেছেন।

Saturday, May 31, 2014

বুড়িগঙ্গা তীরে পোশাক শিল্পের নীরব বিপ্লব


ঢাকা: বুড়িগঙ্গার তীরে ঘটে চলেছে পোশাক শিল্পের নীরব বিপ্লব। এখানে তৈরি  পোশাক কমপক্ষে ৩৫টি দেশে রফতানি হচ্ছে। ছোট বড় প্রায় ১০ সহস্রাধিক গার্মেন্টসে তৈরি পোশাক বিক্রি হচ্ছে দেশের বাজারে। নগদ অর্থে যার পরিমাণ দৈনিক পঞ্চাশ কোটি টাকার বেশি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। 

বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে রাজধানীর সদরঘাট ও শ্যামপুর, অন্য তীরে কেরানীগঞ্জ উপজেলার আগানগর ও শুভাঢ্যা ইউনিয়ন। আগানগরের ঠিক পশ্চিমে বাংলার চীন নামে পরিচিতি পাওয়া জিনজিরা, মোগল আমলের স্মৃতি বিজড়িত জিঞ্জিরা প্রাসাদ। এসব স্থানের ঐতিহাসিক পরিচিতি কালের বিবর্তনে চাপা পড়ে গেলেও বিভিন্ন শিল্পের কারণে এখন আবার জেগে উঠছে কেরানীগঞ্জ।

আগানগর ও শুভাঢ্যায় গড়ে ওঠা ক্ষুদ্র গার্মেন্টস পল্লী খুলে দিয়েছে অপার সম্ভাবনার দুয়ার। স্বাধীনতার পর সীমিত পরিসরে শুরু হওয়া এই গার্মেন্টস পল্লী ধীরে ধীরে ব্যাপকতা লাভ করেছে। 

বর্তমানে এই পল্লী অভ্যন্তরীণ পোশাকের প্রায় ৬০ ভাগ চাহিদা মেটাচ্ছে। কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমিতি’র তথ্যমতে, এখানে দিনে বিক্রি হচ্ছে কমপক্ষে ৫০ কোটি টাকার অধিক মূল্যের পোশাক। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এখানকার গার্মেন্টস পল্লীতে কর্মরত রয়েছে প্রায় ১০ লাখ মানুষ।

মফস্বল শহরগুলোর বিপণি বিতান তো বটেই, রাজধানীর অভিজাত শপিংমলগুলোতে এখন বিদেশি কাপড়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ক্রেতাদের হাতে হাতে উঠছে এখানকার পোশাক। এমনকি রফতানি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, সৌদি আরব, দুবাই, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ৩৫টি দেশে।

দেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলে এ গার্মেন্টস পল্লীর বিকাশে উল্লেখযোগ্য কোন সহযোগিতা নেই সরকারি তরফে। এখানকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা নিজেদের একান্ত প্রচেষ্টায় বিভিন্ন প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে এগিয়ে নিচ্ছেন সম্ভাবনাময় ক্ষুদ্র এই শিল্পকে। 

পাঞ্জাবি, শার্ট, ফতুয়া, গেঞ্জি, স্যুট-ব্লে¬জার, বোরকা, সব রকমের শীতবস্ত্র, শিশুদের কাপড় থেকে শুরু করে নানা ধরনের পোশাক পাওয়া গেলে এই ক্ষুদ্র গার্মেন্টস পল্লী বিশেষভাবে বিখ্যাত জিন্স ও গেভার্ডিন প্যান্টের জন্য। আমেরিকা, ইংল্যান্ড, সিংগাপুর, চীন, জাপান, থাইল্যান্ড, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নামিদামি ব্রান্ডের জিন্স ও গেভার্ডিন প্যান্টের আদলে প্রস্তুতকৃত এখানকার প্যান্ট বিদেশি প্যান্ট হিসেবে দেশের বড় বড় শপিংমলে বিক্রি হচ্ছে দেদার। মফস্বলের বিপণী বিতানগুলোতেও এর অনেক কদর।

এক্সপোর্ট গার্মেন্টের ফেব্রিকস কিনে এখানের ক্ষুদ্র গার্মেন্টস পল্লীর কারিগরেরা নিজস্ব আদলে তৈরি করছেন এসব প্যান্ট। ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটি অংশ আবার বড় পোশাক কারখানার আংশিক ত্র“টিযুক্ত কাপড় বা ঝুট সংগ্রহ করে তৈরি করছেন চমৎকার সব পোশাক। 

উল্লেখ্য, দেশের বৃহৎ তৈরি পোশাক কারখানাগুলোর মতো এখানে শমিক অসন্তোষের ঘটনা খুব একটা ঘটে না। ক্ষুদ্র পুঁজির ব্যবসায়ীরা সারাক্ষণ কারখানা শ্রমিকদের সঙ্গেই লেগে থাকেন দ্রুত কাজ শেষ করার তাগিদে। 

চরকালিগঞ্জ নুর সুপার মার্কেটে অবস্থিত ইত্যাদি গার্মেন্টসের মালিক তরুণ ব্যবসায়ী মো. বিপ্লব হোসেন (৩০)। পড়াশুনা শেষ করে বাবার ব্যবসায় যোগ দেন। বিপ্লব হোসেন জানান, রাজধানীর মিরপুর, সাভার ইপিজেড, গাজীপুর, টংগী, নারায়ণগঞ্জ শিল্পাঞ্চল থেকে জিন্সের ঝুট ফেব্রিক্স স্থানীয় সরবরাহকারীদের কাছ থেকে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা মণে সংগ্রহ করে সেগুলোকে প্রথমে সাইজ, মান ও কালার অনুযায়ী ভাগ করি। এরপর সেগুলোকে কাটিং করি। তারপর বিদেশি প্যান্টের আদলে কম্পিউটারাইজড মেশিনে এমব্রয়ডারি করে দক্ষ দর্জি দিয়ে সেলাই করা হয়। সেলাই ও এমব্রয়ডারির পর সেগুলোকে ওয়াশিং মেশিনে কালার কিংবা বিশেষ অংশে ভিন্ন রূপদান করা হয়। তিনি বলেন, ছেলেদের প্যান্টের চেয়ে লেডিস প্যান্টের চাহিদা অনেক বেশি। ছোট বড় সবার জন্যই এই লেডিস প্যান্টের চাহিদা রয়েছে। উপমহাদেশে আগে ভারতে এই লেডিস প্যান্টের চাহিদা বেশি ছিল। ধীরে ধীরে বাংলাদেশে এর চাহিদা বেড়েছে। আমাদের তৈরি প্যান্ট ১৬০ টাকা থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। এখান থেকে কিনে নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন আধুনিক শপিংমলে ১২০০ টাকার জিন্সের প্যান্ট বিক্রি হচ্ছে ২২০০ থেকে ৩৫০০ টাকায়। 

মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানার বালিগাঁও গ্রামের বাসিন্দা জিন্স প্যান্ট তৈরির কারিগর রফিক হাওলাদার বলেন, এখানে যেমন রিজেক্ট কাপড় দিয়ে প্যান্ট বানানো হয়, তেমনি নতুন কাপড় দিয়েও প্যান্ট বানানো হয়। আমরা জাপান, চীন, থাইল্যান্ডের তৈরি প্যান্টের মত একই রকম প্যান্ট হুবহু তৈরি করতে পারি। অনেক সময় বিদেশি প্যান্টের চেয়েও আমাদের ফিনিশিং ভালো হয়। 

কেরানীগঞ্জ গামের্ন্টস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল আজিজ শেখ বলেন, আমাদের তৈরি কাপড়ের মান দিন দিন ভাল হচ্ছে। তাই বিগত সময়ের চেয়ে চাহিদা অনেক বেশি। গার্মেন্টস পল্লীতে ১০ লাখ শ্রমিক কাজ করে। এখানে মালিক-শ্রমিকের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক থাকায় কোন শ্রমিক অসন্তোষ নেই। 

সমিতির সদস্য আসাদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্তাধিকারী হাজী আসাদ খান বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ব্যবসায়ীরা তেমন লাভবান হতে পারেনি। ব্যাংক ঋণসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত তারা। তবে এবার সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যাবে বলে আমরা আশাবাদী।

ট্যাক্স ফ্রি সুবিধা, বিদ্যুত-গ্যাস সুবিধা পর্যাপ্তকরণ, সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের সহজশর্তে ঋণ সুবিধা প্রদান ও যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করা হলে এখানকার ক্ষুদ্র গার্মেন্টস পল্লী কেবল দেশেই নয়, গোটা এশিয়ার মধ্যে বিখ্যাত হয়ে উঠতে পারে, এমনটাই মনে করেন অনেকে।

নওগাঁয় পাম চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে

নওগাঁ: নওগাঁয় পাম চাষ ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। নওগাঁ সদরসহ মহাদেবপুর, মান্দা, ধামইরহাট, পতœীতলা এবং রানীনগর উপজেলায় ইতিমধ্যে কমপক্ষে ২০/২৫টি পাম বাগান গড়ে উঠেছে। মুলত দোঁয়াশ মাটিতে পাম চাষ হয়ে থাকে। পাম চাষের প্রয়োজনীয় রৌদ্রতাপ, আর্দ্রতা এবং গড় বৃষ্টিপাত সবকিছুই নওগাঁ’র জমিতে বিদ্যমান বলেই এখানে পাম চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে এখানকার উৎসাহী কিছু সচেতন মানুষ পাম চাষ শুরু করেছেন। আর এতে সহযোগিতা করছে গ্রীন গোল্ড এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান।

তারা পাম গাছের চারা সরবরাহ, প্রচার এবং প্রসারের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এ প্রতিষ্ঠানটি হবিগঞ্জ থেকে পাম গাছের চারা সংগ্রহ করে স্থানীয় পর্যায়ে উৎসাহী পামচাষীদের মধ্যে চার সরবরাহ করছে এবং এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করছে। 

জেলার অনেকের মত নওগাঁ হাসপাতালের দন্ত চিকিৎসক ডাঃ ওমর আলী তাঁর ২৫ শতক জমিতে এবং মান্দা উপজেলার গনেশপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার তার ১ বিঘা জমিতে পাম চাষ করেছেন। তাদের কাছ থেকে জানা গেছে, পাম চাষে খরচ তেমন নেই। প্রতিটি পাম চারার মুল্য সর্বোচ্চ ১শ টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে কমপক্ষে ৮০টি চারা লাগানো যায়। সে হিসেবে প্রথম বছরে চারার মুল্য বাবদ খরচ হয় ৮ হাজার টাকা। সার কীটনাশক এবং পরিচর্যা বাবদ খরচ হয় আরও ৮ হাজার টাকা। বাগান তৈরির দ্বিতীয় বছর পরিচর্যা বাবদ খরচ হয় ৫ হাজার টাকার মত। আর কোন খরচ নাই। একটি গাছে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০টি কাঁদি আসে। প্রতিটি কাঁদিতে ২ থেকে ৩ হাজার পর্যন্ত ফল ধরে থাকে। একটি গাছ থেকে গড়ে প্রতি বছর কমপক্ষে ৫০ কেজি পাম তেল পাওয়া যায়। 

গ্রীন গোল্ড এন্টারপ্রাইজের স্বত্তাধিকারী রেজাউর রহমান টুকু জানান, গাছ থেকে সরাসরি পাম ফল সংগ্রহ করে গরম পানিতে সিদ্ধ করে তাতে চাপ দিয়ে তেল সংগ্রহ করা যাবে। আবার ফলগুলোকে সরিষার তেল উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত কাঠের ঘানিতে নিষ্কাশন করেও তেল সংগ্রহ করা যাবে। বাড়িতে গরম পানিতে সিদ্ধ করে অথবা কাঠের ঘানিতে নিষ্কাশন করে সংগৃহীত পাম তেল সরাসরি বিভিন্ন তরকারি রান্নাতে ব্যবহার করা যাবে।

কৃষি সমপ্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক এস এম নুরুজ্জামান মন্ডল জানান, নওগাঁসহ বাংলাদেশে পাম চাষ লাভজনক। চাষের সম্ভাবনাও রয়েছে। কাজেই তারা বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে প্রতিটি বাড়িতে ৫/৬টি করে পাম গাছের চারা লাগানোর পরামর্শ দিচ্ছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন আগামী ২/৪ বছরের মধ্যে মানুষ প্রতিটি বাড়িতেই পাম গাছ লাগাবেন। তিনি বলেন, পাম ফল থেকে পরিশোধনের মাধ্যমে সঠিক প্রক্রিয়ায় তেল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা এখনও করা হয়নি। তেল নিষ্কাশনের পরিশোধনের ব্যবস্থা নেয়া হলে এ দেশের মানুষের মধ্যে পাম চাষের উৎসাহ আরও বেড়ে যাবে। তিনি আরও জানান, শুধু তেল নয় বাইপ্রডাক্ট হিসেবে পাম ফল থেকে প্রাপ্ত চর্বি দিয়ে সাবান, গ্লিসারিন, বিভিন্ন রকমের কসমেটিক্স এবং ডিটারজেন্ট পাউডার তৈরি করা যাবে। 

নওগাঁ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ শরীফুল ইসলাম খান বাংলাদেশে পাম চাষের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে বলেন, পাম ফল থেকে তেল নিষ্কাশনের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আনা হলে এবং তেল নিষ্কাশনে সহজ প্রক্রিয়ার ব্যবস্থা করা হলে চাষীরা পাম চাষে আরও বেশি উৎসাহিত হবেন। তিনি সয়াবিন তেলের চেয়ে পাম তেল অধিক স্বাস্থ্যসম্মত বলে মনে করেন। তিনি আরও বলেন, পাম চাষে উদ্বুদ্ধ করতে পারলে আমদানী নির্ভর ভোজ্য তেল সয়াবিনের উপর নির্ভরশীলতা হ্রাস পাবে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় ঘটবে।  

Wednesday, May 28, 2014

হবিগঞ্জে বাম্পার ফলন: বিদেশেও রফতানি হচ্ছে হবিগঞ্জের কাঁঠাল

হবিগঞ্জ: জ্যৈষ্ঠ মাসকে বলা হয় মধু মাস। কারণ প্রচণ্ড গরমে চারিদিকে পাকতে শুরু করেছে আম-কাঁঠাল। এই মধু ফলের স্বাদ উপভোগ করার সুযোগ দিতে বন্ধ হয়ে গেছে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। জনসংখ্যার বৃদ্ধি আর বন উজাড় হওয়ার জন্য এই মধু ফলও এখন দূর্লভ হতে চলেছে। আবার এই ফল উৎপাদন প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। তবে হবিগঞ্জে এবছরের চারিদিকে মৌ মৌ ঘ্রাণ ছড়াচ্ছে জাতীয় ফল কাঁঠাল। গাছগুলোর শাখা ভরে উঠেছে এই ফলে। 

পাহাড় আর বনাঞ্চল অধ্যুষিত হবিগঞ্জ জেলায় এ বছর কাঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাগান থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার কাঁঠাল আসছে পাইকারী বাজারে। এখন চলছে কাঁঠাল বিক্রির ধুম। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সুস্বাদু এই কাঁঠাল ক্রয়ের জন্য ক্রেতারা ভিড় জমাচ্ছেন ফলের আড়তে।

হবিগঞ্জের মাটি কাঁঠাল চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। তুলনামূলকভাবে মিষ্টি ও সুস্বাধু। তাই এখানকার কাঁঠালের চাহিদা বেশি। হবিগঞ্জের পাহাড়ি এলাকায় রয়েছে অনেকগুলো কাঁঠালের বাগান। বাড়ির আঙ্গিনা ও রাস্তার পাশেও দেখা যায় কাঁঠাল গাছের ছড়াছড়ি। হবিগঞ্জের চুনারুঘাট, মাধবপুর ও বাহুবল উপজেলার পাহাড়ি এলাকা থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার কাঁঠাল বাজারে আসে। হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিফতর সূত্রে জানা যায়, এবছর কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলার ১২ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে কাঁঠাল উৎপাদন করা হয়েছে। উৎপাদনের পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার মেট্রিক টন।

কাঁঠালকে বলা হয় বাংলাদেশের জাতীয় ফল। এই ফলের স্বাদে যেমন অনন্য তেমনি পুষ্টিতেও ভরপুর। তাই সকলস্তরের লোকজনের কাছেই কাঁঠাল অত্যন্ত জনপ্রিয়। বিশেষ গ্রামের দরিদ্র লোকজন এই সময়ে তাদের প্রধান খাদ্য তালিকায় চলে আসে এই কাঁঠাল। তারা বাজার থেকে কাঁঠাল এনে পরিবারের সকলে মিলে একবেলা আহারের পরিবর্তে পেট ভরে খেয়ে থাকেন। কাঁঠালের বীজ শুকিয়ে তারা রেখে দেন বাড়িতে। পরবর্তীতে এই বীজ সবজি হিসেবে ব্যবহার করেন। এমনকি কাঁঠালের যে উচ্ছিষ্ট অংশ তাও ব্যবহার করা হয় গো-খাদ্য হিসেবে। কাঁঠালের মুচি যেটি ঝড়ে যায় সেটিকেও ভর্তা হিসাবে খাওয়া হয়। অর্থাৎ একটি কাঁঠালের বহুমুখী উপযোগ ভোগ করেন তারা। 

হবিগঞ্জের সবচেয়ে বড় ফলের পাইকারী বাজার মুছাই। এখানে রয়েছে বেশ কয়েকটি আড়ৎ। এই আড়তে বিক্রির জন্য কৃষকরা তাদের কাঁঠাল নিয়ে আসেন। প্রতি ১শ’ হিসাবে নিলামের মাধ্যমে এই কাঁঠাল বিক্রি হয়। পাইকাররা নিজেদের মাঝে প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেন কাঁঠাল কিনতে। ছোট সাইজের কাঁঠাল প্রতিশ’ বিক্রি হচ্ছে ১৪শ’ থেকে ১৮শ’ টাকা করে। তবে বড় কাঁঠালের দাম বেশি। সামনে কাঁঠালের দাম আরও কমবে। মুছাই থেকে ট্রাক ভর্তি হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যায় এই কাঁঠাল। এখন বিদেশেও রফতানি হচ্ছে হবিগঞ্জের কাঁঠাল।

মুছাইর ফলের আড়তের মালিক সফিকুর রহমান জানান, এ বছর কাঁঠালের ভাল ফলন হয়েছে। এখন ভাল দাম থাকলেও সামনে যখন ব্যাপকভাবে ফসল আসতে থাকবে তখন দাম কমে যাবে। তিনি আরও জানান, তাদের কাছ থেকে ঢাকা ও সিলেটের পাইকাররা কাঁঠাল নিয়ে বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেন। বড় ও ভাল কাঁঠাল লন্ডন, সৌদি আরব, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হয়। বিশেষ করে প্রবাসী বাঙালিরা বাংলাদেশী কাঠাল খুব বেশি পছন্দ করে।

সিলেট থেকে মুছাই আড়তে আসা আব্দুল জলিল জানান, তিনি প্রায়ই এখান থেকে কাঁঠাল নিয়ে সিলেটের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেন। এখানকার কাঁঠাল তুলনামূলকভাবে ভাল এবং দামও কম।

মুছাই বাজারে কাঁঠাল কিনতে হবিগঞ্জ শহর থেকে নজরুল আলম চৌধুরী জানান, বাজারে ফরমালিন আর কারবাইড মেশানো থাকায় এখানে এসেছি কাঁঠাল কিনতে। এখানকার কাঠাল সম্পুর্ণ নির্ভেজাল।

বাগান মালিক ইব্রাহিম মিয়া জানান, আমাদের বাগানে সহযোগী ফসল হিসেবে কাঁঠাল উৎপাদন করা হয়। কাঁঠাল উৎপাদন করতে আলাদা কোন যতœ নিতে হয় না বলে উৎপাদন খরচও কম। তবে এ বছর বেশি ফলন হওয়ায় দাম কম হওয়ায় আশংকা করছেন তিনি।
আলিয়াছড়া খাসিয়াপুঞ্জির মন্ত্রী উটিয়াম টমপেয়ার জানান, তার বাগানের গাছগুলোতে কাঠালের ফলন অন্যান্য বছরের তুলনায় ভাল হয়েছে। বাজারে দামও ভাল। গরম বেশি থাকায় একটু আগে থেকেই কাঁঠাল পাকতে শুরু করেছে। তবে জুন-জুলাই মাস হবে এর ভরা মৌসুম। 

হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক গোপাল চন্দ্র দাস জানান, সরকারিভাবে অত্যন্ত পুষ্টিকর কাঁঠাল ফলের ফলন বাড়ানো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কৃষকদের আগ্রহ বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। কাঁঠাল উৎপাদন করলে একই সাথে ফসল এবং কাঠ পাওয়া যায়। কাঁঠাল গাছের পাতা থেকে শুরু করে প্রতিটি অংশ ব্যবহার করা যায় বলে অন্যান্য ফলের তুলনায় এটি লাভজনক। এছাড়ও কাঁঠাল উৎপাদনে তেমন যতেœরও প্রয়োজন হয় না। একটি গাছ বহু বছর পর্যন্ত ফলন দেয়। তবে বন্যামুক্ত এলাকায় কাঁঠালের বাগান করা উচিত। কারণ দীর্ঘদিন এই গাছ পানি সহ্য করতে পারে না।

Tuesday, May 27, 2014

নওগাঁয় আঙ্গুর চাষে অভাবনীয় সাফল্য শিক্ষিত বেকার যুবক উজ্জ্বলের

নওগাঁ: নওগাঁর উচ্চশিক্ষিত বেকার যুবক সালাহউদ্দিন উজ্জ্বল আঙ্গুর চাষ করে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছেন। একই সঙ্গে নওগাঁ’র মাটিতে আঙ্গুর চাষের যে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে তা তিনি প্রমাণ করেছেন।

সালাহউদ্দিন উজ্জ্বল নওগাঁ শহরের কোমাইগাড়ি মহল্লার সৈয়দ আলীর পুত্র। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করে সরকারি-বেসরকারি যে কোন একটি চাকরি খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে জীবিকার তাগিদে কৃষিভিত্তিক প্রকল্প হাতে নেন। পার্শ্ববর্তী জয়পুরহাট জেলা থেকে অস্ট্রেলিয়ান উন্নত জাতের আঙ্গুরের চারা এনে রোপণ করেন।

২০১২ সালে কোমাইগাড়ি নতুন জেলখানা’র পার্শ্বে ৩ বিঘা জমি লীজ নিয়ে গড়ে তোলেন আঙ্গুরের বাগান। ওই বছরের এপ্রিল মাসে অস্ট্রেলিয়ান উন্নত জাতের মধ্যে ক্রীমসন সীডলেস এবং মেনেনডি সীডলেস জাতের আঙ্গুরের প্রায় ৩শ’টি চারা রোপণ করেন। প্রতিবিঘা জমি প্রতিবছর বর্তমানে ১২ হাজার টাকা করে বছরে ৩৬ হাজার টাকা করে ৩ বছরের জন্য। মোট লীজ মূল্য প্রায় ১ লাখ টাকা তাকে পরিশোধ করতে হচ্ছে। চারা রোপণ, শ্রমিক খরচ, সার ফসফেট ইত্যাদি বাবদ প্রথম বছর খরচ হয়েছে প্রায় আড়াই লাখ টাকা।
চারা রোপণের ১১ মাস পর ২০১৩ সালের ১ ফেব্র“য়ারি মাসে প্রথম গাছ ছেঁটে দিলে প্রথমবারের মত মোট গাছের মধ্যে ১০টি গাছে আঙ্গুর ধরে। প্রতিটি গাছ থেকে এ বছর এক কেজি করে আঙ্গুর উৎপাদিত হয়। ২০১৪ সালে ফেব্র“য়ারি মাসে দ্বিতীয়বারের মত গাছ ছেঁটে দিলে পুনরায় আঙ্গুর ধরে। এ পর্যায়ে প্রায় একশ’টি গাছে আঙ্গুর ধরেছে। প্রতিটি গাছে এই পর্যায়ে কমপক্ষে ৩ কেজি করে মোট ৩শ’ কেজি আঙ্গুর উৎপাদনের প্রত্যাশা করছেন তিনি। বর্তমান বাজার মূল্য প্রতি কেজি ২৫০ টাকা হারে উৎপাদিত আঙ্গুরের বিক্রি মূল্য পাবেন ৭৫ হাজার টাকা।

উজ্জ্বল জানিয়েছেন, আগামী ২-১ বছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০১৫ সাল নাগাদ তার বাগানের আঙ্গুরের উৎপাদন আশাতীতভাবে বৃদ্ধি পাবে। বছরে দুই বার আঙ্গুর উৎপাদিত হবে। প্রতিবার প্রতিটি গাছ থেকে ২০ কেজি করে মোট ৪০ কেজি আঙ্গুর উৎপাদিত হবে। সে হিসেবে ৩শ’টি গাছে প্রতি পর্যায়ে ৬ হাজার কেজি করে বছরে দু’টি ধাপে ১২ হাজার কেজি আঙ্গুর উৎপাদিত হবে। আঙ্গুরের বর্তমান বাজার অব্যাহত থাকলেও তখন উৎপাদিত আঙ্গুরের মূল্য পাবেন ৩০ লাখ টাকা। আর আঙ্গুরের মূল্য বৃদ্ধি হলে বিক্রিত মূল্য আরও বেড়ে যাবে। এ থেকে পরিচর্যা, সার ফসফেট, লেবার খরচ ইত্যাদি বাবদ আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা বাদ দিলে বছরে নীট মুনাফা করবেন প্রায় ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা বলে উজ্জ্বল জানিয়েছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এস এম নুরুজ্জামান মন্ডল জানিয়েছেন, আঙ্গুর চাষ করে সালাহউদ্দিন উজ্জ্বল এক অসাধ্য সাধন করেছেন। উন্নতজাতের আঙ্গুর চাষে এই সফলতা বিরল। উজ্জ্বলের বাগানের আঙ্গুর আকারে যেমন বড় তেমনই খেতে সুস্বাদু ও মিষ্টি। উজ্জ্বলের মত এ ধরনের কৃষিভিত্তিক প্রকল্প গড়ে তুলে শিক্ষিত বেকার যুবকদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব। তাকে অনুসরণ করলে অনেকেই সফল হতে পারবেন বলে তিনি প্রত্যাশা করেন। 

Sunday, May 25, 2014

পঞ্চগড়ে সৌর বিদ্যুৎ চালিত সেচ পাম্প দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে

পঞ্চগড়: দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা না থাকা  এবং বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান সম্ভব নয়। তাই সেচ যন্ত্রে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় কৃষিখাত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা দেখা দেয়। এ জন্য এলাকা বিশেষে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সৌর শক্তির মাধ্যমে বিদ্যুত ব্যবহার শুরু হয়। এক্ষেত্রে পঞ্চগড়ের কৃষকরাও সৌর বিদ্যুতে সেচ পাম্প চালিয়ে তাদের কৃষি কাজ চালিয়ে নেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করে। এই উদ্যোগে তারা সফল হয়। এ জন্য এখানে সৌর বিদ্যুত চালিত সেচ পাম্প দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। 

বেংহারী গ্রামের কৃষক লুৎফর রহমান জানান,পঞ্চগড় জেলার সদর উপজেলার হাড়িভাসা,বোদা উপজেলার শিকারপুর, জগন্নাথপুর,বেংহারী ও তেপুকুরীয়া গ্রামের কৃষি নির্ভর এলাকায় সেচ সুবিধা খুব সহজলভ্য  ছিল না। ফলে পর্যাপ্ত সেচের অভাবে অনেক জমি অনাবাদী থাকতো। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় সৌর বিদ্যুৎ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেচ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে এখানকার কৃষকেরা। এ প্রযুক্তিতে বিদ্যুৎ শক্তির বিকল্প সৌর শক্তির মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী করতোয়া নদী থেকে পানি তুলে এবং গভীর নলকুপের মাধ্যমে ভু-গর্ভস্থ থেকে পানি উঠিয়ে জমিতে সেচ দিচ্ছে। এতে আলাদা কোন জ্বালানি প্রয়োজন না হওয়ায় উৎপাদন খরচ অনেকাংশে কমে গেছে। 

পঞ্চগড় সদর ও বোদা এই দুই উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ১০টি সমিতির মাধ্যমে ১৬টি সেচ এলাকায় ৫শ’ জন কৃষক ২ হাজার বিঘা জমিতে এবার বোরো চাষ করেছে সৌর বিদ্যুৎ চালিত পাম্পের মাধ্যমে। সৌর বিদ্যুৎ চালিত সেচ সুবিধা এবং ভু-গর্ভস্থ পানি সরবরাহ লাইন পেয়ে তারা অত্যন্ত খুশি। এবার কম খরচে তাদের ফলনও ভালো হয়েছে। 

মিউচুয়াল ট্রাষ্ট ব্যাংক সৌর চালিত সেচ পাম্প স্থাপনের পাশাপাশি প্রকল্প এলাকার কৃষকদের মাঝে মৎস্য চাষ,গবাদি পশু পালন ও কৃষি কাজের জন্য টাকা ঋণ দিচ্ছে। সৌর বিদ্যুৎ চালিত এই সেচ পাম্প সুবিধা বঞ্চিত এলাকার কৃষকদের অপেক্ষাকৃত কমমূল্যে সেচ প্রদান, বছরে কমপক্ষে ৩টি ফসল উৎপাদন সর্বোপরি বিদ্যুৎ সংকট সমাধানের মাধ্যমে কৃষি পণ্য উৎপাদনে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। কৃষকদের আরো সুবিধার জন্য এ বছর সমিতি ভুক্ত আরো ৬ টি  সৌর সেচ পাম্প স্থাপন করা হবে।  তবে সৌর বিদ্যুৎ সেচ প্ল¬¬¬ান্ট ব্যয় বহুল। একটি সৌর চালিত পাম্প স্থাপনে ৩২ লাখ টাকা ব্যয় হয় বলে কৃষকরা জানান। 

পঞ্চগড় কৃষি সম্প্রসার বিভাগের উপ-পরিচালক নজরুল ইসলাম বলেন, সমবায় ভিত্তিতে অধিকতর সহজ শর্তে দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করা গেলে, পঞ্চগড়ে আরো বৃদ্ধি পাবে সৌর বিদ্যুৎ চালিত সেচের। নিশ্চিত হবে খাদ্য নিরাপত্তা, লাভবান হবে কৃষকরা।

Saturday, May 24, 2014

দেশে পুষ্টি নিয়ে দৈন্যতা এখনো কাটেনি

ডেস্ক রিপোর্ট: দেশে সামগ্রিকভাবে শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস এবং জন্মনিয়ন্ত্রণ ও মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নতিতে ব্যাপক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে ভারত, পাকিস্তান, নেপালসহ দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। তবে পুষ্টি পরিস্থিতির তেমন একটা উন্নতি ঘটেনি। 

বিভিন্ন পর্যায়ের বিশেষজ্ঞদের গবেষণায় এ তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের মতে তীব্র অপুষ্টির কারণে দেশে প্রতি বছর ৬৫ হাজার শিশু মারা যায়। বর্তমানে ৫ বছরের কম বয়সী প্রায় ৫ লাখ শিশু অপুষ্টিজনিত নানা রোগ-ব্যধিতে আক্রান্ত। তারা মৃত্যুর ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব শিশুর চিকিৎসা সেবার তেমন কোন ব্যবস্থা নেই।

স্বীকৃত যে, বরিশালসহ উপকূলীয় এলাকায় অপুষ্টির প্রকোপ সর্বাধিক। তবে দেশের উত্তরাঞ্চলে বিশেষ করে পঞ্চগড় জেলায় অপুষ্টির শিকার শিশুর সংখ্যা কম নয়। এখানকার শিশুরা অপুষ্টিজনিত নানা রোগব্যধিতে আক্রান্ত। তাদের জন্য স্বাস্থ্যসেবার তেমন একটা ব্যবস্থা নেই। 

রাজধানী ঢাকায় হাতেগোনা কয়েকটি হাসপাতাল ছাড়া অন্য কোথাও এসব শিশুর চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। তাই দেশের অন্যত্র শিশুর অপুষ্টিজনিত রোগব্যধির চিকিৎসা সীমিত হওয়াই স্বাভাবিক।

তাছাড়া পুষ্টি নিয়ে তেমন কর্মসূচিও নেই। কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এ নিয়ে কোনো কাজ করছে না। তা প্রকাশ পেয়েছে পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন ডা. মোজাম্মেল হকের কথায়। তার মতে এখানে অপুষ্টিজনিত রোগব্যধি তেমন একটা নেই। তিনি মনে করেন পুষ্টিহীনতার অন্যতম প্রধান কারণ খাদ্য ঘাটতি। অজ্ঞতাও এর জন্য দায়ী। সজিনা ও কচু শাকে যে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি রয়েছে তা ক’জনে জানেন। এসব শাক-সবজি খেলে শুধু শিশু নয়, মায়েদেরও পুষ্টির ঘাটতি মেটে।

তেঁতুলিয়া উপজেলায় ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, শিশু ও মায়েদের ভিড়। তারা অনেকেই অপুষ্টির শিকার। উপজেলার কোম্পানিজোতে কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যকর্মী ফ্লোরেন্স হেলেন জানান, শিশুদের জিং জাতীয় ট্যাবলেট দেয়া হয়। এখানে পুষ্টি নিয়ে তেমন কোন কাজ হয় না। মায়েদের রক্তশূন্যতা দেখা দিলে আয়রন ট্যাবলেট দেয়া হয়। শিশুদের কৃমিনাশক ওষুধ দেয়া হয়। কৃমির কারণেও পুষ্টির অভাব দেখা দেয়।

পঞ্চগড়ে পুষ্টি নিয়ে হতাশা থাকলেও কোথাও কোথাও আলোর ঝলক দেখা যায়। সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে ছাপা হয়েছেÑ পুষ্টিহীনতার বিরুদ্ধে লড়াই পঞ্চগড়ের ১০টি গ্রামে। প্রকাশিত খবরে বলা হয়, পঞ্চগড়ে খলিদাপুর, কুমারপাড়া, নানিয়াপাড়া, সিপাইকামাত সরকারপাড়াসহ ১০টি গ্রামের অধিকাংশ মা-শিশু সারা বছরই অপুষ্টিজনিত রোগে ভুগছিলেন। 

জাপানের আজিনমতো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহায়তায় ‘আজিনমতো পুষ্টি প্রকল্প’ নামে প্রকল্পে কাজ করছে হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ড নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। তারা মা ও শিশুদের পুষ্টির অবস্থা বাড়ানো, পুষ্টি উন্নয়ন বিষয়ক সচেতনতা ও ধারণা বৃদ্ধি, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের মাধমে মারাত্মক অপুষ্টির শিকার মায়েদের পুষ্টি অবস্থার উন্নয়ন, দরিদ্র মায়েদের পুষ্টি অবস্থা স্থায়ীভাবে উন্নতি করা, আয়ের সুযোগ তৈরি করা, গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী মায়েদের বাড়িতে পুষ্টিকর রান্নার মাধ্যমে খাদ্যের পুষ্টিমান বজায় রাখার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এ ছাড়া তারা এ প্রকল্প সফল করতে মা ও শিশুকে সপ্তাহে ৬ দিন রান্না করা খাদ্য সরবরাহ করছে।

পঞ্চগড়ে স্বেচ্ছাসেবী এই প্রতিষ্ঠানটি পুষ্টি নিয়ে কাজ করাতে সারাদেশে আশাব্যঞ্জক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। কেননা, দেশের ১১ থেকে ১৬ বছর বয়েসী ৪৩ শতাংশ কিশোরী রক্ত স্বল্পতায় ভুগছে। এদের বেশির ভাগই আবার অল্প বয়সে বিয়ে করে গর্ভধারণ করে। এতে গর্ভের শিশুটিও অপুষ্টির শিকার হয়। এ চালচিত্র পঞ্চগড়সহ উত্তরাঞ্চলের প্রত্যেকটি জেলার।

অপুষ্টি থেকে শিশুদের মুক্ত করতে না পারলে তারা নানা রোগব্যধির শিকার হওয়াই স্বাভাবিক। স্মরণ রাখা দরকার আজকের শিশু ভবিষ্যতের নাগরিক, তারা পুষ্টির অভাবে নানা রোগ-ব্যধির শিকার হলে তা জাতির জন্য অমঙ্গল বয়ে নিয়ে আসবে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, অপুষ্টির কারণে প্রধান ৬টি রোগ হয়। রোগগুলো হলো হাড্ডিসার রোগ, গা ফোলা রোগ, রাতকানা রোগ, রক্তস্বল্পতা রোগ, জিহবা ও ঠোঁটের কোণে ঘা, আয়োডিনের অভাবজনিত সমস্যা।

পুষ্টিবিদ ডা. শাহাজাদা সেলিম জানান, আমাদের দেশের অধিকাংশ শিশু আয়রণজনিত খাবারের অভাবে এ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত হয়। এর প্রধান কারণ দারিদ্র্য এবং পরিবারে পুষ্টিজ্ঞানের অভাব। জন্মের ৪ থেকে ৬ মাস পর আয়রণ সমৃদ্ধ বাড়তি খাবার না খেয়ে শুধু বুকের দুধ খেলে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। এ সময় শুধু মায়ের দুধে আয়রণের অভাব পূরণ হয় না। কলিজা, মাংস, মাছ, মোটরশুঁটি, শিম, বরবটি, ডাল, বাদাম, সবুজ শাক-সবজিতে প্রচুর আয়রণ থাকে। এগুলো খেলে আয়রনের অভাব সহজে পূরণ করা যায়।

উল্লেখ্য, উন্নয়নশীল দেশে এক-তৃতীয়াংশের বেশি শিশু মারাত্মক অপুষ্টির শিকার। শুধু অপুষ্টির কারণে প্রতি মিনিটে ১০টি শিশু মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এই তথ্যটি তুলে ধরা হয়েছিলো ২০০৬ সালে প্রকাশিত জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে। জাতিসংঘের এমডিজি বা সহস্রাব্দের  উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় ২০১৫ সালের মধ্যে অপুষ্টির হাত থেকে শিশুদের রক্ষায় একটি বাৎসরিক লক্ষ্যও স্থির করে দেয়া হয়েছিলো। সেই লক্ষ্য অর্জনে উন্নয়নশীল দেশগুলো নিজেদের সংকল্পও ব্যক্ত করে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক নয়।

২০১২ সালের ৮ আগস্ট লন্ডনে বিশ্ব পুষ্টি সম্মেলনে বিশ্ব নেতারা বলেন, দারিদ্র্য, ক্ষুধা ও অপুষ্টি কোন একক দেশের সমস্যা নয়। এর প্রভাব বিশ্বের সর্বত্র। তাই এসব বিষয়ে বৈশ্বিক জাতীয় পরিকল্পনা ও কৌশল বাস্তবায়নে গোটা বিশ্বের সম্পদের ব্যবহার, অভিজ্ঞতা বিনিময়, গবেষণা ও প্রযুক্তি প্রয়োগের ব্যাপারে সবাইকে অঙ্গীকারাবদ্ধ ও কাজ করতে হবে। বাংলাদেশও এই অঙ্গীকারে শামিল। 

দেশের ২৫ শতাংশ শিশু অপুষ্টি ও রক্ত স্বল্পতায় ভুগছে। এদের ব্যাপারে যথাযথ  উদ্যোগ না নিলে কোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ডই পরিপূর্ণতা লাভ করবে না। এ কথা স্মরণ রেখেই সরকারকে পুষ্টি বিষয়ের ওপর জোর দিতে হবে। 

Thursday, May 22, 2014

বরিশালের ব্রান্ড-আইটেম হিসেবে পরিণত হয়েছে গুঠিয়ার সন্দেশ

বরিশাল: উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়নের ছানার তৈরী গুঠিয়ার সন্দেশ বর্তমানে দেশব্যাপী বরিশালের ব্রান্ড-আইটেম হিসেবে পরিণত হয়েছে। 
জানা গেছে, শুধু বরিশাল মহানগরী নয় গুঠিয়ার সন্দেশ’র খ্যাতি দেশের সীমারেখা ছাড়িয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। বরিশাল নগরী থেকে গুঠিয়া ইউনিয়নের দূরত্ব মাত্র ২২ কিলোমিটার। 

এই গুঠিয়া ইউনিয়নটি আজ সুখ্যাতি লাভ করেছে তার তেরী বিখ্যাত সন্দেশ’র জন্য। দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে আসা ভোজন বিলাসী মানুষ বরিশালে পা রাখলে গুঠিয়ার সন্দেশ-এর স্বাদ নিয়ে যাবেন এমটাই বলেন স্থানীয়রা।

গুঠিয়া সন্দেশের প্রধান বিক্রেতা বাংলাদেশ মিষ্টান্ন ভান্ডারের স্বত্তাধিকারী পরিমল ভদ্র জানান, গুঠিয়া সন্দেশের রেসিপি এসেছে পশ্চিম বঙ্গের নদীয়া অঞ্চল থেকে। আমার কাকা সতীশ ভদ্র আমাদের এ দোকানেই ছিলেন। এরপর বিএম কলেজের সামনে দোকান দেন। কাকার (সতীশ ভদ্র) মুখে শুনেছি, পাকিস্থান আমলে তিনি পশ্চিম বঙ্গের নদীয়া এলাকায় এক কারিগরের কাছে তিনি এর রেসিপি শিখে নেন। পরে ১৯৬২ সালে তিনি দেশে এসে নতুন ধরণের এই সন্দেশ তৈরি শুরু করেন। অচিরেই এই সন্দেশের খ্যাতি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে গুঠিয়া ছাড়াও বরিশাল নগরীর বেশ কয়েকটি শো’রুমে এই সন্দেশ পাওয়া যায়।

সন্দেশ তৈরীর প্রক্রিয়া সম্পর্কে পরিমল চন্দ্র ভদ্র জানান, গুঠিয়া সন্দেশের রেসিপি অত্যন্ত সাধারণ। পরিমাণ মত ‘আঁচ ও পাক’ই ভালো সন্দেশ তৈরীর প্রধান রেসিপি। ভাল সন্দেশ তৈরি করতে খাঁটি দুধের প্রয়োজন। সাধারণত ৬ থেকে ৭ কেজি খাঁটি দুধে ১ কেজি ছানা হয়। ছানার সাথে সমপরিমাণ চিনি মিশিয়ে অল্প জাল দিতে হয়। ২০ থেকে ৩০ মিনিট জ্বালে পাক দিয়ে অল্প আঁচে ৫ মিনিট রাখলেই গুঠিয়া সন্দেশের কাঁচামাল তৈরি হয়।

এরপর পরিমাণ মত কাঠের বাটার উপরে নিয়ে সন্দেশের আকার তৈরী করা হয়। সৌন্দর্যের  (ডেকরেশন) জন্য সন্দেশের উপর কিচমিচ দেয়া হয়।

তিনি জানান, গুঠিয়া সন্দেশ টাটকা থাকলে তা থেকে টাটকা গরুর দুধের সুঘ্রাণ আসবে। অত্যন্ত মুখরোচক এই সন্দেশে খাঁটি ছানা ও চিনি ছাড়া অন্য কোন প্রকার উপকরণ থাকে না। গরুর দুধ ছাড়া অন্য কোনো দুধ দিয়ে গুঠিয়ার সন্দেশ তৈরি করা হয় না।

বর্তমানে নগরীতে ও গুঠিয়া এলাকায় এ সন্দেশের বহু দোকান থাকলেও বাংলাদেশ মিষ্টান্ন ভান্ডারকে এর সুতিকাগার বলা যায়। ১৯৬২ সাল থেকে এই দোকানটি গুঠিয়া ব্রীজ সংলগ্ন স্থানে সন্দেশ বানিয়ে আসছে। বর্তমানে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত সন্দেশ বানিয়ে থাকেন তারা । প্রতিকেজি সন্দেশ বিক্রি হয় ৪’শ টাকা করে। ১ কেজিতে ২৫ পিস পর্যন্ত সন্দেশ ওঠে।

আদি গৌরনদী মিষ্টান্ন ভান্ডারের সত্বাধিকারী শ্রীধাম ঘোষ জানান, ভোজন বিলাসীদের কাছে গুঠিয়ার সন্দেশ লোভনীয় একটি নাম। এ খাবার দেখলে জিভে জল আসে না এমন ভোজন বিলাসীদের সংখ্যা অতি নগন্য। বরিশালে ভোজন বিলাসী কেউ আসলে গুঠিয়ার সন্দেশের স্বাদ নিতে ভোলে না। মানুষ বরিশালে কাজে বা বেড়াতে এলে ফেরার সময় গুঠিয়ার সন্দেশ নিয়ে যায়। আর ধীরে ধীরে এভাবেই গুঠিয়ার সন্দেশের এর সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র।