Monday, September 23, 2019

4G users now 2.15cr

Staff Reporter: About 2.15 crore active users are now availing fourth generation (4G) mobile internet connections, according to a report of Bangladesh Telecommunication Regulatory Commission (BTRC). 

Following the launch of the country’s fastest mobile data service in February last year, this is a big achievement, said Md Jahurul Haque, the commission’s chairman.

“Number-wise that is very lucrative but the service is not much attractive,” he said.

As of August, the number of active 3G connections was 5.73 crore. The operator-wise breakdown is not available.

The BTRC yesterday published its monthly customer report where it mentioned that the number of active internet users increased by about 19.60 lakh in August, which is by far the highest for a single month in recent years. This growth surprised industry insiders as the country’s two top mobile operators, Grameenphone and Robi, have been facing massive restrictions from the regulator which is seeking to realise dues fixed by audit.

The telecom regulator has been coming down hard on the two since July, restricting network expansion, and banning new offers and new package approval.

It also cut bandwidth of Grameenphone by 30 percent and Robi by 15 percent in July.

These, however, did not impact the inclusion of new customers, the BTRC data shows.

Of the new addition, mobile operators’ contribution was 19.59 lakh and another 1,000 were in the fixed broadband segment.

With this, the total number of active internet connections now stands at 9.81 crore, an all-time high, according to the BTRC statistics.

Mobile phone-based connections contributed the highest with 9.24 crore users followed by WiMAX with 40,000 users.

The internet service provider and public switched telephone network connections accounted for 57.35 lakh users.

The BTRC data also shows that the total active mobile connections stand at 16.26 crore, of which Grameenphone is leading with 7.56 crore followed by Robi (4.78 crore), Banglalink (3.48 crore) and Teletalk (43.87 lakh).

গৃহস্থালি বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম রপ্তানিতেও ভর্তুকি

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক: গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি রপ্তানিতে ১০ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা (ভর্তুকি) দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এছাড়া তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ১ শতাংশ হারে ভর্তুকি দেওয়া হবে। গত অর্থবছরের ৩৫টি খাতের সঙ্গে এই নতুন দুটি খাত যোগ করে পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা দেবে সরকার। গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক রপ্তানির চারটি খাতে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ হারে ভর্তৃকি দেয়া হচ্ছে। এবার রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে অবশিষ্ট সব খাতে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ১ শতাংশ হারে রপ্তানি প্রণোদনা বা ভর্তুকি দেয়া হবে।

২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটেই এই ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। এজন্য বাজেটে অতিরিক্ত ২ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

সে বিবেচনায় বলা যায়, এবার নগদ সহায়তা পাওয়া নতুন খাতের মধ্যে আসলে গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি (কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স, ইলেকট্রিক্যাল হোম ও কিচেন অ্যাপ্লায়েন্স পণ্য) যোগ হয়েছে।
দু-একটি ছাড়া সহায়তার হারের ক্ষেত্রেও খুব একটা হেরফের হয়নি।

রোববার এক সার্কুলার জারি করে সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে সরকারের এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

রপ্তানি বাণিজ্যকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে চলতি অর্থবছরে এই ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত জাহাজীকৃত পণ্য রপ্তানির বিপরীতে এই ভর্তুকি দেওয়া হবে।

চলতিহাতে তৈরি পণ্য (হোগলা, খড়, আখের/নারিকেলের ছোবড়া, গাছের পাতা,/খোল, গার্মেন্টসের ঝুট কাপড় ইত্যাদি) রপ্তানিতে নগদ সহায়তা ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।
গতবার সিনথেটিক ও ফেব্রিকসের মিশ্রণে তৈরি পাদুকা রপ্তানিতে ১৫ শতাংশ ভর্তুকি দেওয়া হয়েছিল। এবার ভর্তুকির হার অপরিবর্তিত রেখে পণ্য তালিকায় ব্যাগ যোগ করা হয়েছে।

গতবার পেট বোতল-ফ্লেক্স রপ্তানির বিপরীতে ৫ শতাংশ ভর্তুকি দেয়া হয়েছিল। আবোর তা বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে।

গতবারের মতো এবারও ১০ শতাংশ হারে যে সব খাতে ভর্তুকি দেওয়া হবে, সেগুলো হচ্ছে, ফার্মাসিউটিক্যালস পণ্য, ফটোভোলটাইক মডিউল, মোটরসাইকেল, কেমিক্যাল পণ্য (ক্লোরিন, হাইড্রোক্লোরিক এসিড, কস্টিক সোডা ও হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড), রেজার ও রেজার ব্লেডস, সিরামিক দ্রব্য, টুপি, কাঁকড়া ও কুঁচে (হিমায়িত ও সফটসেল, পরিবেশ ও বন বিভাগের ছাড়পত্র গ্রহণ সাপেক্ষে) এবং গ্যালভানাইজড শিট/কোয়েলস।

অর্থাৎ কোনো রপ্তানিকারক এই নয়টির ১০০ টাকার পণ্য রপ্তানি করলে সরকারের কাছ থেকে ১০ টাকা নগদ সহায়তা পাবেন।

গতবারের মতো এবারও দেশীয় বস্ত্র খাতে শুল্ক বন্ড ও ডিউটি ড্র-ব্যাকের পরিবর্তে বিকল্প নগদ সহায়তা ৪ শতাংশ, বস্ত্র খাতের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের অতিরিক্ত সুবিধা ৪ শতাংশ, নতুন পণ্য বা বাজার সম্প্রসারণ সহায়তা (আমেরিকা, কানাডা ও ইইউ ছাড়া) ৪ শতাংশ, ইউরো অঞ্চলে বস্ত্র খাতে রপ্তানিকারকদের জন্য বিদ্যমান ৪ শতাংশের অতিরিক্ত বিশেষ সহায়তা ২ শতাংশ, কৃষিপণ্য ও প্রক্রিয়াজাত কৃষি পণ্যে ২০ শতাংশ, গরু-মহিষের নাড়ি-ভুঁড়ি, শিং ও রগ (হাড় ছাড়া) রপ্তানিতে ১০ শতাংশ, হালকা প্রকৌশল পণ্য রপ্তানিতে ১৫ শতাংশ, শতভাগ হালাল মাংস রপ্তানিতে ২০ শতাংশ, বরফ আচ্ছাদনের হারভেদে হিমায়িত চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ রপ্তানিতে ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা দেওয়া হবে।

চামড়াজাত পণ্য ও আসবাব রপ্তানিতে ১৫ শতাংশ, জাহাজ, প্লাস্টিক পণ্য ও পেট বোতল-ফ্লেক্স রপ্তানিতে ১০ শতাংশ, শস্য ও শাকসবজির বীজ এবং পাটকাঠি থেকে উৎপাদিত কার্বন রপ্তানিতে ২০ শতাংশ, পাটজাত দ্রব্যাদি রপ্তানিতে ২০ শতাংশ পর্যন্ত নগদ সহায়তা পাওয়া যাবে।
আলু রপ্তানিতে ২০ শতাংশ, সাভারে চামড়া শিল্প নগরীতে স্থানান্তরিত শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে ক্রাস্ট ও ফিনিশড লেদার রপ্তানিতে ১০ শতাংশ এবং পাটজাত চূড়ান্ত দ্রব্য রপ্তানিতে ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা দেওয়া হবে। একইসঙ্গে দেশে উৎপাদিত কাগজ ও কাগজ জাতীয় দ্রব্য রপ্তানিতে ১০ শতাংশ এবং আগর ও আতর রপ্তানিতে ২০ শতাংশ ভর্তুকির বিষয়টি অপরিবর্তিত আছে।

এছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি, সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার, অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যালসে ইনগ্রিডিয়েন্টস (এপিআই), অ্যাকুমুলেটের ব্যাটারি রপ্তানিতে ভর্তুকি পাবেন রপ্তানিকারকরা।।

লক্ষ্য ভেদ করেছে রোমানের নিশানা

তিরন্দাজ রোমান সানা। দেশের হয়ে আটটি আন্তর্জাতিক সোনা জয় করেছেন। সর্বশেষ ১৫ সেপ্টেম্বর, ফিলিপাইনে এশিয়ান র‌্যাঙ্কিং আর্চারিতে রিকার্ভ ইভেন্টের ফাইনালে সোনা জিতেছেন রোমান। যাঁর জয় নিয়ে ক্রীড়াঙ্গনে এত আলোচনা, সেই রোমান সানার মা–বাবা কী ভাবছেন। মা বিউটি পারভীন আর বাবা আবদুল গফুর সানা শোনালেন রোমানের বেড়ে ওঠার কথা, দুঃসময়ের দিনগুলোর কাহিনি। 

বাড়ির বসার ঘরটায় টেবিলের ওপর সারি সারি পত্রিকার কাটিং। আগের দুদিন এই পরিবারের ছোট ছেলেকে নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন বেরিয়েছে সব জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায়। প্রাণখুলে সেসব দেখে আনন্দে আত্মহারা আবদুল গফুর সানা ও বিউটি পারভীন। জীবনের দুর্গম পথ পেরিয়ে তাঁদের সব কষ্ট আজ অনেকটা সফল। মনের দুঃখ উড়ে গেছে বাষ্প হয়ে।

রোমান সানার মতো সন্তান থাকলে এমনই তো হওয়ার কথা। মা-বাবার জীবনে সুখের ফুল ফুটবেই। খুলনা শহরের তালতলায় ভাড়া করা ছোট্ট বাসায় গিয়ে ১৭ সেপ্টেম্বর সেই ফুলের সুবাসই যেন মিলল। মনে হলো, আজ আর তাঁরা জীবনের নানা জটিল অঙ্কের জালে বন্দী নন। জীবনকে দেখছেন নতুন আয়নায়। 

সুযোগটা করে দিয়েছেন তাঁদেরই কৃতী ছেলে রোমান সানা। যাঁকে তাঁরা ডাকেন সুজন নামে। দেশের সেরা আর্চারের এ পর্যন্ত আটটি আন্তর্জাতিক সোনাজয় পরিবারের দুঃখ ঘুচিয়েছে অনেকটা। শুরুটা গত ১৩ জুন হল্যান্ডে বিশ্ব আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে রিকার্ভ ইভেন্টে ব্যক্তিগত ব্রোঞ্জজয়ের মধ্য দিয়ে। গলফার সিদ্দিকুর রহমানের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে অলিম্পিক গেমসে খেলার যোগ্যতা মান অর্জন করেছেন। খেলবেন ২০২০ টোকিও অলিম্পিকে। সর্বশেষ ১৫ সেপ্টেম্বর ফিলিপাইনে এশিয়ান র​্যাঙ্কিং আর্চারিতে রিকার্ভ ইভেন্টের ফাইনালে চীনের লি শি ঝেনঝিকে ৭-৩ ব্যবধানে হারিয়ে তাঁর সোনাজয় দেশের ক্রীড়াঙ্গনে এখন তুমুল আলোচিত। দেশের রুগ্​ণ ক্রীড়াঙ্গনে এটিকে ব্যক্তিগত সেরা সাফল্য বলছেন অনেকে। 

খেলার জগতে নিজের শরীর আর মনকে সুশাসনে রেখে রোমান এগিয়েছেন নিজের যোগ্যতায়। পরিবার ছিল পাশে। তবে পরিবারের কর্তা গফুর সানার জীবনের গল্পটা সংগ্রামমুখর।

২০০৭ সালে খুলনা অঞ্চলে ছোবল হানা ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে অজানা ঠিকানার উদ্দেশে বাড়ি ছাড়ে সানা পরিবার। গফুর সানা বলতে থাকেন, ‘সেই ঝড়ে আমি সব হারায়ে ফেলি। আমার মাটির ঘরসহ সব ভেঙে গেলে বাড়ির সামনে চাচাদের ঘরে আশ্রয় নিলাম। সাত কি আট মাস পর তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে আমরা শূন্য হাতে শহরে চলে আসি। গ্রামে তখন রোজগার ছিল না। আমি বাস্তুহারা। ১৫০ টাকায় গোলপাতার ছোট্ট একটা বাসা নিই। ২৫ টাকা দিয়ে একটা চাটাই কিনি। ১৫০ টাকায় একটা চৌকি।’

স্বামীর পাশে বসে বিউটি পারভীন তখন ছেলের সব পদক নাড়াচাড়া করছিলেন সযত্নে। ছোট ভাইয়ের সাফল্যে উদ্বেলিত বড় ভাই বিপ্লব সানাও পাশে বসেন। বিপ্লবের ছোট্ট ছেলে জিয়া সানা ‘আমিও কাকুর মতো তির–ধনুক নিয়ে খেলব’ বলে ওঠে হঠাৎ। হেসে ওঠেন সবাই। বিপ্লব বলেন, ‘রোমানের চোখের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ। ছোটবেলায় ও প্রচুর মার্বেল খেলত।’ ওদিকে বাবার চোখের রাডারে ছোটবেলাতেই ধরা পড়ে গেলেন রোমান, ‘ছোটবেলায় চঞ্চল ছিল রোমান। গুলতি দিয়ে আম পাড়ত। তখনই কেন যেন মনে হতো, একদিন ও বড় কিছু করবে।’

২৪ বছর বয়সেই সেটি করেছেন রোমান। তাই আজ গফুর সানার আকাশে সুখপাখির আনাগোনা। কষ্ট আর অনটনের স্মৃতিটা তাঁকে এখন বরং আনন্দ দেয়। ‘অফিসে গেলে লোকজন বলে, মিষ্টি কই?’ গফুর সানার মুখে কথায় বেশ শোনায়। অনেক বছর ধরে মাছ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান খুলনা রাজু ফিশ ট্রেডার্সে চাকুরে গফুর সানা আজ তৃপ্ত। মাছ ভালো কি না, এসব তদারকির কাজটা তাঁকে করতে হয় বেলা তিনটা থেকে ভোর পর্যন্ত।

তিন হাজার টাকায় শুরু। এখন বেতন সাকল্যে ছয় হাজার। এক–দেড় হাজার টাকা যাতায়াত খরচ পান। ‘তবে দুই হাজার টাকা তো আমার পান খাতিই চলি যায়। আর কোনো কিছু খাই না।’ গফুর সানা হেসে বলেন। বড় ছেলের চাকরিও খুলনায় একটা মাছ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানে। ভাতাসহ তিনি প্রায় ৯ হাজার টাকা পান। বাংলাদেশ আনসারে চাকরির সুবাদে রোমান কিছু টাকা দেন সংসারে। তাতে ঘরভাড়া (ছয় হাজার), মায়ের চিকিৎসা খরচ চলে। বাবার টাকায় সংসারের বাজার হয়। কিন্তু এমন টানাটানি আর শিকলে বাঁধা ৫৪ বছরের এই জীবনে আজ অনেক আনন্দ।

দুই বছর আগে বাড়িতে একটা ঘর তৈরি করেছেন মাটির, কিন্তু টাকার অভাবে বেড়া দিতে পারেননি। ছাউনি দিয়েছেন গোলপাতা দিয়ে। বাড়িটা খুলনা জেলার কয়রা থানার বাদালী ইউনিয়নে বাদালী গ্রামে। ঘুঘরাকাতী বাজার থেকে পাঁচ–ছয় কিলোমিটার দূরে। যেখানে বর্ষায় রোমান যেতে পারেন না রাস্তা কাদায় থিকথিকে থাকায়। সাইক্লোন শেল্টারের পাশে বাদালী প্রাথমিক স্কুলে পড়ার সময় বড় মাঠটায় খেলাধুলা করত ছোট্ট রোমান সানা। সানা নামটা বংশপরম্পরায় পাওয়া। রোমানের দাদা মৃত সদর উদ্দিন সানা, দাদার বাবা মৃত আনসার উদ্দিন সানা। 

সেসব স্মৃতিচারণার ফাঁকে গর্বিত মা বলেন, ‘রোমান এশিয়ার শ্রেষ্ঠ হয়েছে। খবরটা শুনে আমি কাদতি কাদতি অসুস্থ হয়ে গেছি। আমি সব সময় অসুখে পড়ে থাকি। ১৩ বছর ধরে চিকিৎসা চলছে। ইনসুলিন নিতে হয়, েস খরচ লাগে। বিভিন্ন ওষুধ খেতে হয়। আমার সামর্থ্য নেই। কিন্তু তিন ছেলেমেয়েকে সুপথে রেখেছি। এটাই আজ আমার বড় সুখ।’ ১৭ সেপ্টম্বের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে রোমান সানাকে মিষ্টিমুখ করান। তখন রোমানের মায়ের চিকিৎসার দায়িত্ব নেন তিনি। 

দুরন্ত কোনো নদীর মতো বয়ে চলা এই জীবনে সানা পরিবার সুখী। কিন্তু পেছনে অনেক কষ্টের গল্প। নিঃশব্দে গফুর সানা বলেন, ‘খুলনা শহরে এসে তিনটা বাসা বদল করি আগে। রোমান চাকরি করার পর চার মাস আগে একটু ভালো বাসায় উঠেছি।’ বাসা নিয়ে একটা স্মৃতি ভোলেন না, ‘খুলনা শহরে প্রথমে দেড় শ টাকায় ছোট্ট একটা বাসায় উঠি। দেড় শ টাকা করে একটা চৌকি আর একটা হিটার কিনি। জ্বলন্ত হিটারে একবার হাত ঢুকিয়ে দেয় ছোট্ট রোমান। পাশে তালতলা হাসপাতালে নিতে হয় ওকে। ওর বুড়া আঙুলে এখনো পোড়া দাগটা আছে।’

৬০০/৭০০ বর্গফুটের এ বাসার দুটি ঘরের একটিতে মা–বাবা, অন্যটিতে ভাই-ভাবি থাকেন। রোমান এলে থাকার জায়গা নিয়ে ভাবতে হয়। আর রোমানের সব পুরস্কার, ৪০-৪৫টি পদক, সনদ—সব টিভি ট্রলির ভেতর। 

খেলাটা রোমানের খুব পছন্দ। কতটা? বিউটি পারভীন বললেন,  ‘এসএসসি পরীক্ষার প্রথম দিন আজানের সময় দেখি, ও বাসায় নেই। পরে শুনি সার্কিট হাউস মাঠে গেছে ক্রিকেট খেলতে।’ আজও মুগ্ধতা মায়ের কণ্ঠে। সেই ক্রিকেট ছেড়ে রোমান আর্চার হলেন বাংলাদেশ আর্চারি ফেডারেশনের উদ্যোগে স্থানীয় স্কুলে আর্চারির এক বাছাইয়ে টিকে। সবাই আজ তাঁকে নিয়ে গর্বিত। 

জমি বন্ধক

২০১২ সালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হন রোমান। খুলনা পঙ্গু হাসপাতালে ১ মাস ১৩ দিন কাটে। ভাইকে তখন বলেছিলেন, ‘আমার তো লাইফ শেষ।’ কিন্তু উঠে দাঁড়িয়ে ২০১৩ সালে বাংলাদেশ গেমসে পেলেন জীবনে প্রথম সোনার পদক। সেই সময় ছেলের চিকিৎসার টাকার চিন্তায় গফুর সানার জীবন হয়ে ওঠে তপ্ত মরুভূমির মতো। পৈতৃকসূত্রে একটা তালগাছ আর ১০ কাঠা জমি পান। গাছটা বিক্রি করেন। জমি বন্ধক দিয়ে নেওয়া ১২ হাজার টাকা এখনো শোধ দিতে পারেননি। গফুর সানা বলেন, ‘ছেলে বাড়ি এলে বলেছি, তোমার পা ভাঙার সময় জমি বন্ধক দিয়ে নেওয়া টাকাটা এখনো ফেরত দিতে পারিনি। ও বলেছে, আব্বা, চিন্তা করবেন না, আমি খেলে আসি।’ 

রোমান সানার আন্তর্জাতিক পদক

সোনা একক

২০১৯ এশিয়া কাপ বিশ্ব র​্যাঙ্কিং টুর্নামেন্ট, ফিলিপাইন

ব্রোঞ্জ একক

২০১৯ বিশ্ব আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপ, নেদারল্যান্ডস

রুপা একক

২০১৯ আইএসএসএফ আন্তর্জাতিক

সলিডারিটি বিশ্ব র​্যাঙ্কিং আর্চারি, ঢাকা

সোনা দলগত ও মিশ্র দলগত

২০১৮ আইএসএসএফ আন্তর্জাতিক

সলিডারিটি আর্চারি, ঢাকা

২টি সোনা দলগত ও রুপা একক

২০১৮ দক্ষিণ এশিয়ান আর্চারি, ঢাকা

সোনা একক

২০১৭ বিসকেক আন্তর্জাতিক আর্চারি, তুর্কিস্তান 

সোনা দলগত ও মিশ্র দলগত

২০১৭ প্রথম আইএসএসএফ আন্তর্জাতিক

সলিডারিটি আর্চারি, ঢাকা

সোনা একক

২০১৪ প্রথম এশিয়ান আর্চারি গ্রাঁ প্রি, থাইল্যান্ড

রুপা দলগত

২০১১ প্রথম এশিয়ান যুব আর্চারি, ঢাকা। সূত্র: প্রথম আলো

মুনলাই পাড়ায় একদিন

শুরুতে পুরোপুরি বিষয়টা বোঝা যায়নি। ভাতঘুম থেকে সন্ধ্যায় উঠে কাঠের বারান্দায় একটা চেয়ারে বসে পাখির কিচিরমিচির, তক্ষকের টক টক শুনে আনমনা লাগছে, তখন এলেন লাল নুন বম। ‘আপনারা ঢাকা থেকে এসেছেন? এটা আমার বাড়ি।’ তাঁর এ কথায় ‘কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজম’ বিষয়টা অনেকখানি খোলাসা হলো। 

পাহাড়ি সেই বাড়ি আমাদের তিনজনের সে রাতের ঠিকানা। রুমা বাজার থেকে তিন কিলোমিটার চড়াই-উতরাই পথ পেরিয়ে ২ সেপ্টেম্বর বিকেলে পৌঁছেছিলাম মুনলাই পাড়ায়। বগা লেক আর কেওক্রাডং যাওয়ার পথে এটি একটি বম পাড়া। বম সম্প্রদায়ের ৫৪টি পরিবারের বসবাস এখানে। 

বান্দরবানের পাহাড়ে পাহাড়ে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর যে বসতি বা পাড়া চোখে পড়ে, মুনলাই পাড়া সেগুলো থেকে ব্যতিক্রম। পাহাড়ি রাস্তার দুই ধারে নানা রকম রঙিন ফুলের গাছ, ঝকঝকে ছোট ছোট বাড়ি, যেগুলো স্বাভাবিকভাবেই মাচার ওপর। কয়েকটি ঘর রঙিন টিনে ছাওয়া। মেঝেগুলো কাঠের।

লাল নুন বমের কথায় আবার ফিরে যাই। সৌরবিদ্যুতের বাতি জ্বলছে কি না, ছোট ছোট টেবিল ফ্যান ঘুরছে কি না জিজ্ঞেস করলেন। ‘জানালাগুলো আটকে দেবেন, মশা আসতে পারবে না। কোনো সমস্যা হলে আমাকে বলবেন।’ লাল নুন বমের কথায় মনে হলো যেন কুটুমবাড়ি বেড়াতে এসেছি। আমাদের জন্য লম্বাটে যে ঘর, তার সামনের ছোট ঘরেই থাকেন লাল নুন আর তাঁর স্ত্রী। তাঁদের তিন ছেলে অন্যত্র থাকেন কাজ আর পড়াশোনার সূত্রে। 

কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজমের ধারণাটাই এমন। ঢাকাতে তা জানিয়েছিলেন গাজীপুরের রিসোর্ট বেসক্যাম্প বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তামজিদ সিদ্দিক। বেসক্যাম্পের একটি উদ্যোগ ‘মুনলাই কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজম’। বলেছিলেন, ‘বমদের এই পাড়াতে আপনি তাঁদের বাড়িতে থাকবেন। তাঁদের জীবনযাপন বুঝতে পারবেন। তবে থাকার ব্যাপারটা হবে আরামদায়ক।’ অভিজ্ঞতাও তা বলল। কাঠের মেঝের ওপর পাঁচটি বিছানা পাতা। পাশেই স্নানঘর, সেটায় আধুনিক ব্যবস্থা, কিন্তু আমেজটা পাহাড়ি। থাকার জন্য পর্যটক যে ভাড়াটা দেবেন দিনের হিসাবে, তার ভাগ পাবেন বাড়ির বাড়ির মালিক। অন্যান্য আয়ের অংশও পান স্থানীয়রা। এ উদ্যোগে প্রশাসনিক সহায়তা করছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। 

মুনলাই কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজম শুরু হয়েছে বছর দুয়েক আগে। এখন পর্যন্ত দুটি বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা। ২০-২৫ জন পর্যটক থাকতে পারেন এখন। আবার তাঁবু টানিয়ে ৪০ জনের থাকার ব্যবস্থাও রয়েছে। এর পাশাপাশি ট্রেকিং, ৫৫০ ফুট দীর্ঘ জিপলাইন,  নদী ও খালে কায়াকিং, এ গাছ থেকে ও গাছে চড়ার খেলাও (ট্রি টপ অ্যাকটিভিটি) খেলা যাবে। 

গাড়িতে করে বিকেল চারটার দিকে মুনলাই পাড়া পৌঁছেছিলাম আমরা। সেদিন ছিল টিপটিপে বৃষ্টি। রুমা বাজার থেকে আমাদের নিয়ে যান সৌভিক বড়ুয়া। লাল নুন বমের বাড়িতে বাক্সপেটরা রাখতেই খিদের কথা মনে পড়ল। রাস্তার ওপারে একটু হেঁটে কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজমের অফিস কাম খাবার ঘরে গেলাম। বারান্দায় কাঠের বেঞ্চ পাতা, তার সামনেই দিগন্তজোড়া পাহাড় আর মেঘ। নিচে যেন অতল সবুজ। 

খাবার পাতে সে বেলা পড়ল ভাত, মাছ, সবজি, সালাদ, বাঁশে রান্না মুরগির পদ। সঙ্গে আচার। রান্না দেশি, তবে পরিবেশনে আধুনিক কায়দা। এখানকার শেফ শাহীন হোসেনের রান্নার প্রশংসা করতেই হলো। শাহীন জানালেন, অতিথি চাইলে এখানকার স্থানীয়দের রান্না করা পাহাড়ি খাবারও পরিবেশন করা হয়। 

বান্দরবানের আকাশ সবচেয়ে স্বচ্ছ মনে হয় সব সময়। এবারও তা বুঝতে পারলাম। মেঘের আনাগোনার মধ্যেও মনে হলো অনেক স্বচ্ছ আকাশ। রাতে অসংখ্য তারা সেখানে! যান্ত্রিকতা নেই কোনো দিকে, দিনের সবুজ রাতে আরও গাঢ়, রাতজাগা পাখি, পোকামাকড়ের আওয়াজ, তক্ষকের ডাক আর মাথার ওপর তারাভরা আকাশ। এই জীবনে এর থেকে আর বেশি যেন পাওয়ার নেই। 

ওদিকে বারবিকিউ আর ক্যাম্পফায়ারের আয়োজন করেছেন শাহীন আর সৌভিক। আগুনের পাশে বম যুবক থমাস এডিসন বম গিটার ধরেছেন। একটা পরিচিত গানের পর তাঁকে বলা হলো বম ভাষার গান গাইতে। গাইলেন তিনি। ক্যাম্পফায়ারের আগুন নিভে আসছে, বারবিকিউ শেষ পর্যায়ে। তার একটু পরই রাতের খাবার।

আবারও পাহাড়ে মৃদুমন্দ বাতাসে হাঁটাহাঁটি, তারা চেনার চেষ্টা, সহজ জীবনের স্বাদ। একেবারে ভোের আমাদের বাকি দুজন, সজীব মিয়া ও মনন মাহমুদ গেলেন বগা লেক আর কেওক্রাডংয়ের সড়ক ধরে আরও উঁচুতে। সূর্যোদয় দেখতে। ফিরে এসে দিলেন সেই দৃশ্যের বর্ণনা। মেঘ ছিল যদিও, সোনালি সূর্যের আভায় মুগ্ধতা তাঁদের ফিরিয়ে দেয়নি। ফেরার পথে সেই দূর পাহাড় থেকে তাঁরা দেখলেন মুনলাই পাড়ার অন্যরূপ।

সাতসকালেই দেখলাম, হাফ প্যান্ট আর শার্ট পরে মাথার বেল্টে টুকরি ঝুলিয়ে লাল নুন বম রওনা হলেন তাঁর ফলবাগানে। পাহাড়ের গায়ে তাঁর ফলবাগান। আগের সন্ধ্যায় অসময়ের আপেল কুল খাইয়েছেন। বললেন, ‘এক দিন আগে মন্ত্রী সাহেব (পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈ সিং) এসেছিলেন রুমা বাজারে, তাঁকে আমার বাগানের অসময়ের তরমুজ খেতে দিয়েছিলাম, তিনি খুবই খুশি হয়েছিলেন।’ লাল নুন বেতের ঝুড়িও তৈরি করেন, গিলা নিয়ে যান ঢাকায় বিভিন্ন সময়। তাঁর স্ত্রীকে দেখলাম দিনের বেলায় কোমরতাঁতে কাপড় বুনতে। উলের শালও তৈরি করেন। এই পাড়ায় তৈরি এসব কাপড় বিক্রি করে মুনলাই কমিউনিটি ট্যুরিজম। সে অর্থ দিয়ে সেখানে শিশুদের একটা স্কুল চালায় তারা। 

সময় শেষ হয় দ্রুতই। আবার নেমে চলা নিচে—নগরে, কাজে। সহজ থেকে জটিল জীবনযাপনের দিকে। তবু মাঝেমধ্যে মনের লাগি মুনলাই পাড়ার মতো জায়গা এক, দুই বা তিন দিনের জন্য টানে বৈকি।

যেভাবে যাবেন

নিজের গাড়ি, ভাড়া গাড়ি বা বাসে ঢাকা থেকে বান্দরবান। বান্দরবান থেকে বাস যায় রুমা বাজার পর্যন্ত, ভাড়া ১১০ টাকা। এ ছাড়া চান্দের গাড়ি (ফোর–হুইল ড্রাইভ) ভাড়া (১২ জনের জন্য ৩,৫০০ টাকা) করেও যাওয়া যাবে। দূরত্ব ৫০ কিলোমিটার, সময় লাগবে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা। রুমা বাজারের আগে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গ্যারিসনে প্রথম দফা নাম লিখিয়ে নিতে হবে। রুমা বাজারের আর্মি ক্যাম্পে আরেক দফা নাম লিখিয়ে অনুমতি নিতে হবে (কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজমের মাধ্যমে গেলে আগে থেকেই তারা অনুমতির প্রক্রিয়া শুরু করে দেয়)। সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসাপোর্ট বা জন্মনিবন্ধন সনদ রাখতে হবে। রুমা বাজার থেকে বগা লেক ও কেওক্রাডং সড়কে তিন কিলোমিটার পর মুনলাই পাড়া। এটুকু পথে পাহাড়ে বেশ চড়াই–উতরাই রয়েছে। রুমা বাজার থেকে চান্দের গাড়ি ভাড়া করে ১৭ কিলোমিটার দূরের বগা লেক যেতে পারবেন, ভাড়া ২৭০০ টাকা। কেওক্রাডং গাড়ি যাবে না। তবে বাইক যায় রুমা বাজার থেকে, ভাড়া ২৫০০ টাকা। সূত্র: প্রথম আলো

Sunday, September 22, 2019

৯ বছরের ছেলের ৩০ গেম বানানোর গল্প

নাইজেরিয়ার ৯ বছর বয়সী বাসিল ওকপারা। তার বয়স যখন সাত, ঘটনাটি ঘটেছিল তখন। মোবাইলে গেম খেলে অনেক সময় নষ্ট করছে বলে তার বাবা বাসিল ওকপারা সিনিয়র বেশ কিছুদিন ধরে বকাঝকা করছিলেন। কিন্তু বাবার কথা কানে নেয়নি ছেলে বাসিল। একদিন তো রেগেমেগে বাবা বলেই বসলেন, ‘সারা দিন গেম খেলতে পারো, গেম বানাতে তো পারো না!’

কে জানত বাসিল সেদিন তার বাবার কথাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেবে। পরের দুই বছরে বানিয়ে ফেলবে ৩০টির বেশি মোবাইল গেম। আর তাতেই সরব হবে গণমাধ্যম, খুদে বাসিলের কীর্তি নিয়ে আলোচনা হবে বিশ্বজুড়ে।

বাসিলের গল্পটা রূপকথার মতো শোনালেও, এখন তা সত্য কাহিনি। চার বছর বয়স থেকেই মোবাইল গেমের প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহ বাসিলের। বিশেষ করে ক্যান্ডি ক্রাশ ও টেম্পল রান খেলার সময় চোখই সরাত না পর্দা থেকে। শুরুতে ছেলের কীর্তিকলাপে খুশি হয়ে বাবা কিনে দিয়েছিলেন একটি ট্যাবলেট কম্পিউটার।

সেই ট্যাবলেট কম্পিউটারেই গেমের বিশাল জগতের সঙ্গে পরিচয় ঘটে বাসিলের। বাবার বকা শুনে সে সিদ্ধান্ত নেয়, অনেক গেম তো খেলা হলো, এবার গেম বানানোর চেষ্টা করে দেখা যাক। এরপরের গল্পটা সংকল্প ও অধ্যবসায়ের।

মূলত ছেলের পীড়াপীড়িতেই বাবা নিয়ে যান ৫ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের একটি পাঁচ দিনের প্রোগ্রামিং বুটক্যাম্পে। সেখান থেকে প্রোগ্রামিং শিখে এসে ল্যাপটপ কিনে দিতে বাবাকে রীতিমতো বাধ্য করে বাসিল।

তবে ছেলের ভবিষ্যতের ওপর সেই বিনিয়োগ একদম বৃথা যায়নি বাসিলের বাবার। যার প্রমাণ মাত্র ৯ বছর বয়সেই দিয়েছে তার ছেলে। এখনো কিছুটা প্রাথমিক পর্যায়ে আছে বাসিলের তৈরি গেমগুলো, তবে আগস্ট থেকে তার তৈরি ফ্রগ অ্যাটাক পাওয়া যাচ্ছে গুগল প্লে স্টোরে। 
সূত্র: সিএনএন

Saturday, September 21, 2019

এক নজরে রুবানা হক

স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি রুবানা হক। তিনি মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। 

ব্যবসার জগতে আসার আগে রুবানা হক ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। চট্টগ্রামের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের ট্রাস্টি বোর্ডের একজন সদস্য তিনি। তাঁর লেখা কবিতার বই টাইম অব মাই লাইফ। কবিতার জন্য ২০০৬ সালে তিনি ‘সার্ক সাহিত্য পুরস্কার’ অর্জন করেছেন। এর বাইরেও সমাজের নারীদের জন্য ‘শি ফর শি’ নামে একটি উদ্যোগ নিয়েছেন, যার মাধ্যমে তিনি মেয়েদের নানান সমস্যার কথা মন দিয়ে শোনেন এবং সাহায্য করার চেষ্টা করেন। 

রুবানা হকের আরও একটি পরিচয় হলো, তিনি প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের স্ত্রী। আনিসুল হক ফাউন্ডেশন এবং শারাফ মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কাজও চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। 

অনুপ্রেরণাদায়ী একজন সফল মানুষের মুখোমুখি বসে তাঁর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ করে দিতে তরুণদের জন্য প্রথম আলো ও বিএসআরএম আয়োজন করেছে মিট দ্য এক্সপার্ট।
এত ব্যস্ততার মধ্যেও মিট দ্য এক্সপার্টে তিনি সময় দেবেন তরুণদের। নিজের কথা বলবেন, তরুণদের কথা শুনবেন, দেবেন পরামর্শ। যে তরুণেরা রুবানা হকের সঙ্গে নাশতার টেবিলে বসে আলাপ করার এই দারুণ সুযোগ কাজে লাগাতে চান, নিবন্ধন করে ফেলুন আজই। আজ ১৫ সেপ্টেম্বর, নিবন্ধনের শেষ দিন। 

বাস্তবেই শূন্য থেকে ‘স্বপ্নচূড়া’য় তিনি

দেড় দশক আগেও চাঁদমুহা হরিপুর ছিল দারিদ্র্যপীড়িত এক অজপাড়াগাঁ। ফেরি করে মুড়ি-মুড়কি বেচত লোকে। কেউ দিনমজুরি করত। সংসারে অভাব ছিল নিত্যসঙ্গী। অর্ধাহারে দিন কাটত তাদের। সময় এখন বদলেছে। পাল্টেছে গ্রামের চিত্র। কুঁড়েঘরের বদলে উঠেছে পাকা বাড়ি। মাটির চুলার বদলে রান্না হয় গ্যাসের চুলায়। ছোট গ্রামের বড় এই বদলের পেছনে আছে একটি কারখানা, যেখানে কাজ করে মানুষজন আজ সচ্ছল, স্বাবলম্বী। এই কারখানার পেছনে আছে উদ্যমী এক মানুষের গল্প, যিনি একক চেষ্টা ও পরিশ্রমে তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন কারখানাটি। ঘুরিয়ে দিয়েছেন হরিপুরের অর্থনীতির চাকা।

সংগ্রামী এ মানুষটির নাম রনজিৎ কুমার পালিত। রাহুল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান তিনি। শূন্য থেকে সফল উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা ৫৪ বছর বয়সী রনজিতের শৈশবের গল্পটা ছিল কষ্ট আর সংগ্রামের।

সততাই বল

অভাবের সংসারে প্রাথমিকের গণ্ডি পার হতে পারেননি রনজিৎ। কিশোর বয়সেই ফেরি করে বেড়াতেন। বাকিতে পণ্য কিনে গ্রামগঞ্জ, হাটবাজার ঘুরে মুড়ি, মুড়কি, মোয়া, নিমকি, জিলাপি, কদমা-বাতাসা, সন্দেশ বেচতেন। মেলায় দোকান দিতে গিয়ে বৃষ্টিতে মিঠাই ভিজে নষ্ট হয়েছিল একবার। পুঁজি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন। ঋণ শোধ করতে গ্রাম ছেড়ে শহরে আসেন। ৩০ টাকা বেতনে কাজ নেন বগুড়া শহরের একটি মুদিদোকানে। সেটা বছর চল্লিশেক আগের কথা।

দোকানে কাজ করার সুবাদেই শহরের এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয়। রনজিতের আচার-ব্যবহার ও সততায় মুগ্ধ হন সেই ব্যবসায়ী। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য রনজিৎকে দেড় লাখ টাকা ধার দেন। নিজের কাছে জমানো ছিল ৫৬ হাজার টাকা। সেই টাকা যোগ করে ১৯৯৬ সালে একটি মুদিদোকান দেন।

মনিহারি পণ্য বিক্রির পাশাপাশি সিরাজগঞ্জ থেকে উৎকৃষ্ট মানের সরিষার তেল এনে পলিব্যাগে ভরে বাজারজাত করা শুরু করেন রনজিৎ। সারা দিন দোকানে বেচা–বিক্রি শেষে বাসায় ফিরে রাতভর স্ত্রীকে নিয়ে সরিষার তেল প্যাকেটজাত করতেন। ঘণ্টাকয় ঘুমিয়ে সকালে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন। আর দোকানে দোকানে ঘুরে প্যাকেটজাত তেল বেচতেন। অল্প সময়ে জনপ্রিয় হয়ে যায় রনজিতের প্যাকেটজাত তেল। দিন দিন চাহিদা বাড়ে। স্বপ্ন বুনতে থাকেন রনজিৎ, একদিন বড় কারখানা হবে।

হয়েও যায় সেই কারখানা। ২০০৬ সালের কথা। অল্প টাকায় নিজ গ্রামে কিছু জমি কিনে সরিষা ভাঙার কল দেন। রনজিতের দিনবদলের গল্পটা এখান থেকেই শুরু। ছোট্ট একটি সরিষার কল এখন বড় কারখানা। নাম রাহুল ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেড।

দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে রাহুল কুমার পালিতের নামেই রেখেছেন কোম্পানির নাম। নিজে পড়াশোনা করতে পারেননি। কিন্তু ছেলে দুটিকে উচ্চশিক্ষিত করতে কোনো কার্পণ্য নেই তাঁর। দুজনই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। শহরের ঘিঞ্জি এলাকায় ১৫০ টাকার ভাড়া বাসায় একসময় থেকেছেন। এখন থাকেন শহরের অভিজাত এলাকায় নিজস্ব বহুতল ভবনে। আছে আবাসন ব্যবসা। রাহুল গ্রুপে সব মিলিয়ে বিনিয়োগ এখন অর্ধশত কোটি টাকা।

এত টাকাপয়সার পরও মোহে জড়াননি রনজিৎ। ভুলে যাননি তাঁর ফেলে আসা অতীত। অসহায়, গরিব–দুঃখীদের তিনি সাধ্যমতো সহায়তা করেন। নানা সামাজিক কাজের পাশাপাশি কারখানাটিকে তিনি শ্রমিকবান্ধব কারখানা হিসেবে গড়ে তুলেছেন।

রাহুল গ্রুপের চেয়ারম্যান রনজিৎ কুমার পালিত। গত মঙ্গলবার বগুড়া সদরের চাঁদমুহা হরিপুর গ্রামে।  ছবি: সোয়েল রানা
রাহুল গ্রুপের চেয়ারম্যান রনজিৎ কুমার পালিত। গত মঙ্গলবার বগুড়া সদরের চাঁদমুহা হরিপুর গ্রামে। ছবি: সোয়েল রানা
মালিক–শ্রমিক অনন্য সম্প্রীতি

বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরে বাংলার বিলুপ্ত রাজধানী পুণ্ড্রনগরের পাশেই হরিপুর গ্রাম। সম্প্রতি কথা হয় অর্ধশত শ্রমিকের সঙ্গে। তাঁরা জানান, এখানে মালিক-শ্রমিকের মধ্যে সম্পর্কটাই অন্য রকম। নারী শ্রমিকদের রয়েছে তিন মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি। রয়েছে অসুস্থাজনিত ছুটি। দুর্ঘটনার জন্য রয়েছে ঝুঁকিভাতা, চিকিৎসা ও ওষুধ খরচ সহায়তা। কারখানার দোতলায় মুসলিমদের জন্য রয়েছে নামাজঘর। অন্য পাশে হিন্দুদের জন্য আছে মন্দির।

কারখানার শ্রমিক রেশমা বেগম বলেন, ‘এখানে কাজ করার আগে বাড়িতে উপোস থাকতে হতো। এখন দিনে ২৫০ টাকা রোজগার করি। কারখানায় কাজ করার আয়ে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। ছেলেও কারখানায় কাজ করছে। এখানে কাজ করতে এসে কখনো কারখানা মনে হয় না। মনে হয় পরিবারের সঙ্গেই আছি।’ রেশমা জানান, উৎসব–পরবে বেতনের বাইরে বাড়তি সহায়তা দেওয়া হয়। কারখানাতেই বনভোজনের আয়োজন করা হয়। দুই মাস পরপর উন্নত খাবার দেওয়া হয়।

জোবেদা বেগম নামের আরেক শ্রমিক বললেন, এখানে কেউ অসুস্থ হলে মালিকপক্ষ সবেতনে ছুটি দেন। নারীরা মাতৃত্বকালীন ছুটি নিতে পারেন।

রাহুল ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেডে প্রায় ৫০০ শ্রমিক কাজ করেন। এর অর্ধেকই নারী। এ ছাড়া বিপণন বিভাগে কর্মী রয়েছেন প্রায় ২০০। কাঁচামাল সংগ্রহ, পরিবহন, মালামাল ওঠানো–নামানো থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধাপে কর্মসংস্থান হয়েছে আরও ৩০০ কর্মীর। সব মিলিয়ে এক হাজার কর্মী কাজ করছেন রাহুল গ্রুপে। বর্তমানে রাহুল ব্র্যান্ডের পাঁচ ধরনের বোতলজাত সরিষার তেল, প্যাকেট আটা, ময়দা, লাল আটা, সুজি, চিকন সেমাই, ইউ সেমাই, চুটকি সেমাই, চিনিগুঁড়া চাল, মসুর ডাল, মুড়ি, কয়েক ধরনের পাঁপড় তৈরি হচ্ছে। রাহুলের পণ্য উত্তরের ১৬ জেলা, দক্ষিণাঞ্চলসহ জামালপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, সাভার, উত্তরা, আশুলিয়া, ঢাকা ও কক্সবাজারে যাচ্ছে। সরিষার তেল, মুড়ি ও সুজি মধ্যপ্রাচ্যেও রপ্তানি হচ্ছে।

সামাজিক কর্মকাণ্ড

ব্যবসার পাশাপাশি নানা সামাজিক কাজ করে প্রশংসা কুড়াচ্ছেন রনজিত। হরিপুরের অর্ধশত পরিবারকে কার্ড করে দিয়েছেন। কার্ডধারী পরিবারগুলো প্রতি মাসে চাল, আটা, তেল, চিকিৎসা ভাতা পায়। নিজে পড়াশোনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলেও এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়াতে হতদরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের প্রতিবছর শিক্ষাবৃত্তি দেন। নিজ এলাকায় অত্যাধুনিক একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ারও উদ্যোগ নিয়েছে রাহুল গ্রুপ।

স্বপ্নচূড়া রিয়াল এস্টেট

ভোগ্যপণ্য উৎপাদন ও বিপণন ব্যবসার পাশাপাশি আবাসন ব্যবসায়ও বিনিয়োগ করেছেন রনজিৎ। নাম দিয়েছেন স্বপ্নচূড়া রিয়েল এস্টেট কোম্পানি। তিনি এর চেয়ারম্যান। কথায় কথায় রনজিৎ বললেন, ‘২০০১ সাল থেকে কয়েকজন বন্ধু মিলে ৬০০ টাকা করে সঞ্চয় জমা করতাম। কিছুদিন পর মাসে দুই হাজার টাকা করে রাখতাম। ১২ বছর ধরে জমানো টাকার সঙ্গে আরও লগ্নি দিয়ে রিয়েল এস্টেট ব্যবসা শুরু করেছি।’

বিশিষ্টজনেরা যা বলেন

হরিপুর গ্রামের বদলে যাওয়ার বর্ণনা দিতে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও গোকুল ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আলী রেজা বলেন, কারখানা বদলে দিয়েছে এলাকার আর্থসামাজিক চিত্র। অভাবের কারণে গ্রামের অধিকাংশ মানুষের আগে তিন বেলা ভাত জুটত না। কারখানায় কাজ করে এখন সচ্ছল ও স্বাবলম্বী।

বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী শ্যামলী হোটেল অ্যান্ড কনফেকশনারির মালিক হাবিবুল হক বলেন, রনজিৎ অত্যন্ত সৎ, পরিশ্রমী, বিনয়ী ও ভদ্র স্বভাবের মানুষ। সততা ও পরিশ্রম দিয়ে ব্যবসা করে আশাতীত সাফল্য অর্জন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। শূন্য থেকে কোটিপতি হলেও এখনো অতীত ভুলে যাননি। 

রাহুল গ্রুপের প্রশংসা করে বগুড়া শিল্প ও বণিক সমিতির সহসভাপতি মাহফুজুল ইসলাম বললেন, সততা ও কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে ব্যবসা করেও সাফল্যের শিখরে ওঠা যায়, শূন্য থেকে সফল উদ্যোক্তা হওয়া যায়, সেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন রনজিৎ কুমার পালিত। সূত্র: প্রথম আলো 

Friday, September 20, 2019

৩ লাখ টন তেল ধারণকারী জাহাজ ১৬১ কোটি টাকায় বিক্রি

পুরো জাহাজ ঘুরে দেখতে হলে তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লেগে যেতে পারে। জাহাজটি লম্বায় ৩৪০ মিটার। আয়তনে তা ১৯ হাজার বর্গমিটার। ২৩ বছর জ্বালানি তেল পরিবহনের পর জাহাজটির শেষ গন্তব্য এখন সীতাকুণ্ডের উপকূল। এমন লম্বা জাহাজ গত এক দশকে ভেড়েনি এই উপকূলে। জ্বালানি তেল পরিবহনের এ জাহাজটির নাম ‘এমটি অ্যাটবান’।

২৩ বছরের পুরোনো হলেও জাহাজটির কদর একটুও কমেনি। ১ কোটি ৯১ লাখ ডলার বা প্রায় ১৬১ কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছে জাহাজটি। এ জাহাজটি থেকে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ১৯ কোটি টাকা। এ হিসাবে জাহাজটির দাম পড়েছে ১৮০ কোটি টাকা। এ ধরনের নতুন জাহাজ কিনতে গুনতে হবে ১ হাজার কোটি টাকা।

চট্টগ্রামের উঁচু ভবন আজিজ কোর্টের (৩২ তলা) তিন গুণ সমান লম্বা জাহাজটি। বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু ভবন সিটি সেন্টারের দ্বিগুণ। আয়তন হিসাব করলে জাহাজটিতে তিনটি ফুটবল মাঠের সমান। জাহাজটি লম্বায় ফ্রান্সের আইফেল টাওয়ারের চেয়ে বড়। জাপানের মিতসুবিশি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে তৈরি হয় জাহাজটি।

কাস্টমস–এর আনুষ্ঠাকিতা শেষে চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমা থেকে চালিয়ে শেষ ঠিকানায় নিয়েছেন ক্যাপ্টেন মোবারক হোসেন। তিনি জানান, জাহাজটি ভাঙার সুবিধার জন্য জোয়ারের সময় সর্বোচ্চ গতিতে উপকূলে উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

জাহাজটি ছিল সৌদি আরবের জ্বালানি তেল পরিবহন কোম্পানি ‘বাহরি’র হাতে। ‘ভেরি লার্জ ক্রুড ক্যারিয়ার’ বা অতিকায় বড় জ্বালানি তেল পরিবহনকারী বাহন হিসেবে সাগর–মহাসাগরে চলত এটি। ৩ লাখ টন জ্বালানি তেল ভরার পর পানির নিচের অংশে থাকত জাহাজটির সাড়ে ২২ মিটার। গত জুনে দুবাইভিত্তিক পুরোনো জাহাজের ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ফাইভ স্টার শিপিং–এর কাছে বিক্রি করে তারা। সেখান থেকে কিনে নেয় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার শীতলপুরে অবস্থিত জাহাজভাঙা প্রতিষ্ঠান গোল্ডেন আয়রন ওয়ার্কস লিমিটেড।

চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র মনজুর আলমের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান গোল্ডেন আয়রন ওয়ার্কস লিমিটেড। শিপইয়ার্ডটিতে নিয়োজিত ৪০০ শ্রমিক জাহাজটি কেটে টুকরো করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। একযোগে ৪০০ জন শ্রমিক কাজ করলেও এটি কাটতে লাগবে এক বছর। অবশ্য শিপইয়ার্ডটির লক্ষ্য, দশ মাসের মধ্যেই কাটাকুটি শেষ করা।

জাহাজটি থেকে পাওয়া যাবে ৪৮ হাজার ১০০ টন লোহা ও লোহার প্লেট। সবচেয়ে দামি হলো পিতলের তৈরি প্রপেলর। এ জাহাজে থাকা প্রপেলর বা পাখার ওজন ৭০ টন। এটি বিক্রি করে পাওয়া যাবে অন্তত ৩ কোটি টাকা। এর বাইরে অন্তত শতাধিক ধরনের পণ্য আছে জাহাজটিতে। আসবাব থেকে শুরু করে তৈজসপত্র, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, মরিচারোধী ইস্পাতের পাইপ, প্লাস্টিকের পাইপ, জেনারেটর, তার, টেলিভিশন, ফ্রিজ কত কিছুই না আছে এটিতে। এই জাহাজ থেকে লোহার প্লেট পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করে ব্যবহার হবে দেশীয় জাহাজ নির্মাণ কারখানায়।

গোল্ডেন আয়রন ওয়ার্কস লিমিটেডের পরিচালক সারোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, ৩৭ বছর ধরে তাদের জাহাজভাঙা কারখানায় সাড়ে ৩০০ জাহাজ ভাঙা হয়েছে। লম্বায় এটিই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড়। জাহাজটি থেকে যেসব পুরোনো লোহা পাওয়া যাবে তা তাঁদের গোল্ডেন ইস্পাত কারখানার কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হবে।

বিশ্বে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে লম্বা জাহাজ হলো ‘নক নেভিস’। ২০১০ সালে ভারতের জাহাজভাঙা ইয়ার্ডে ভাঙা হয় এটি। ৪৫৮ মিটার লম্বা জাহাজটি ভাঙতে সময় লেগেছিল এক বছর। সুত্র: প্রথম আলো 

Tuesday, September 17, 2019

জানেন কি সবচেয়ে বেশি মুনাফা কোন সঞ্চয়পত্রে?

পেনশনার সঞ্চয়পত্রটি শুধু অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের জন্যই। দেশে যত সঞ্চয়পত্র চালু আছে, তার মধ্যে এর গ্রাহকদেরই সবচেয়ে বেশি মুনাফা বা সুদ দেয় সরকার। মুনাফার হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এ সঞ্চয়পত্রের মুনাফায় কোনো উৎসে কর নেবে না সরকার। তবে পাঁচ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের মুনাফায় উৎসে কর ১০ শতাংশ।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর ২০০৪ সালে চালু এ সঞ্চয়পত্র চালু করে। প্রাপ্ত আনুতোষিক ও ভবিষ্য তহবিলের অর্থ মিলিয়ে একক নামে ৫০ (পঞ্চাশ) লাখ টাকা পর্যন্ত এ সঞ্চয়পত্র কেনা যায়। 

এ সঞ্চয়পত্র শুধু একটি অফিস থেকেই কেনা যায়। একাধিক অফিস থেকে কেনা হলে অথবা ক্রয়সীমা অতিরিক্ত সঞ্চয়পত্র কেনা হলে গ্রাহক কোনো মুনাফা পাবেন না। 

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের ২০১৯ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে যত সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়, তার ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ হচ্ছে পেনশনার সঞ্চয়পত্র। 

কারা কিনতে পারবেন
অবসরভোগী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারী, সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য এবং মৃত চাকরিজীবীর পারিবারিক পেনশন সুবিধাভোগী স্বামী, স্ত্রী ও সন্তানেরা এ সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন। 

কেনার সময় দুই কপি ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন সনদ অথবা পাসপোর্টের ফটোকপি থাকতে হয়। আর দুই কপি করে পাসপোর্ট আকারের ছবি দিতে হয় নমিনি বা নমিনিদের। 

কোথা থেকে কেনা যাবে
৫০ হাজার টাকা, ১ লাখ টাকা, ২ লাখ টাকা, ৫ লাখ টাকা এবং ১০ লাখ টাকা মূল্যমানের পেনশনার সঞ্চয়পত্র রয়েছে। এগুলো কেনা যাবে জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরো, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সব তফসিলি ব্যাংক ও ডাকঘর থেকে। একই জায়গা থেকে ভাঙানোও যাবে এগুলো। তবে যেসব জায়গায় পুরোপুরি অনলাইন পদ্ধতি চালু হয়নি, সেসব জায়গা থেকে সঞ্চয়পত্র আর কেনা যাচ্ছে না। 

মুনাফার হার 
পেনশনার সঞ্চয়পত্র পাঁচ বছর মেয়াদি। মেয়াদান্তে মুনাফা ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। তবে বছরভিত্তিক মুনাফার হার ভিন্ন। মুনাফার হার ১ম বছর শেষে ৯ দশমিক ৭০ শতাংশ, ২য় বছর শেষে ১০ দশমিক ১৫ শতাংশ, ৩য় বছর শেষে ১০ দশমিক ৬৫ শতাংশ, ৪র্থ বছর শেষে ১১ দশমিক ২০ শতাংশ এবং ৫ম বছর শেষে ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। 

পূর্ণ মেয়াদের জন্য এক লাখ টাকায় প্রতি তিন মাস অন্তর মুনাফার কিস্তি সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ হারে দুই হাজার ৯৪০ টাকা। 

ত্রৈমাসিক ভিত্তি
ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে ৫০ হাজার টাকা মূল্যমানের মুনাফা ১ হাজার ৪৭০ টাকা। একইভাবে ১ লাখ টাকায় ২ হাজার ৯৪০ টাকা, ২ লাখ টাকায় ৫ হাজার ৮৮০ টাকা, ৫ লাখ টাকায় ১৪ হাজার ৭০০ টাকা এবং ১০ লাখ টাকায় ২৯ হাজার ৪০০ টাকা। 

ত্রৈমাসিক মুনাফা উত্তোলনের পর ৫ বছর মেয়াদ শেষে মূল বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত পাওয়া যাবে। মেয়াদপূর্তির আগে সঞ্চয়পত্র নগদায়ন করলে ত্রৈমাসিক মুনাফা কর্তনের পর বাকি অর্থ ফেরত দেওয়া হবে। 

বৈশিষ্ট্য 
ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে মুনাফা দেওয়া হয়। নমিনি নিয়োগ করা যায়। হারিয়ে গেলে, পুড়ে গেলে বা নষ্ট হলে অবিকল (ডুপ্লিকেট) সঞ্চয়পত্র ইস্যু করা হয়। এ সঞ্চয়পত্র এক স্থান হতে অন্য স্থানে স্থানান্তর করা যায়। যেখান থেকে সঞ্চয়পত্র কেনা হবে, সেখানে ভবিষ্য তহবিলের মঞ্জুরিপত্র এবং প্রাপ্ত আনুতোষিকের মঞ্জুরিপত্র অথবা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের একটি সনদ দাখিল করতে হবে। 

পেনশনার সঞ্চয়পত্র ব্যাংকঋণের জন্য জামানত বা আমানত হিসেবে ব্যবহার করা যায় না। ব্যবসা-বাণিজ্যেও এ সঞ্চয়পত্র জামানত হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। সূত্র: প্রথম আলো

Monday, September 16, 2019

৬৭ টাকা দিয়ে শুরু, এখন ৩২টি প্র্রতিষ্ঠানে মালিক তিনি

পারিবারিক আর্থিক অনটন দেখা দিলে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসিছেলেন মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম। বিক্রয়কর্মী হিসেবে রাজধানীর ইসলামপুরে কাপড় বিক্রি শুরু করেন। ১৯৭৬ সালে শুরু করেন নিজের ব্যবসা। ১৯৮৭ সালে এসে বড় ছেলের নামে গড়ে তোলেন নোমান গ্রুপ। বর্তমানে এ গ্রুপের অধীনে রয়েছে ৩২ টি প্রতিষ্ঠান ও কারখানা।

ইসলামপুরে দোকানে দোকানে গিয়ে একসময় পণ্য বিক্রি করতেন তিনি। পরিবারের আর্থিক অনটন তাঁকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসতে বাধ্য করে। ভাগ্য বদলের আশায় মাত্র ৬৭ টাকা পকেটে নিয়ে ১৯৬৮ সালে ঢাকার পথে পা বাড়ান মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম। ওঠেন রাজধানীর খিলগাঁওয়ের একটি মেসে, মাসিক ভাড়া ১৫ টাকা। ঢাকায় এসে শুরু করেন কমিশনের বিনিময়ে পণ্য বিক্রি। সারা দিন বিক্রির পর সন্ধ্যায় টাকা তুলে তারপর গভীর রাতে ফিরতেন মেসে। কয়েক ঘণ্টা ঘুমিয়ে সকাল থেকে আবারও ছুটতেন দোকানে দোকানে পণ্য নিয়ে। পণ্য বিক্রি করে মাসে কমিশন পেতেন ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা।

সেই নুরুল ইসলাম সময়ের ব্যবধানে হয়ে উঠলেন সফল উদ্যোক্তা। দেশের শীর্ষস্থানীয় রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান নোমান গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। কিছুদিন আগেও ছিলেন এই গ্রুপের চেয়ারম্যান। মেসের জীবন থেকে এখন তিনি রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানের বাসিন্দা। বর্তমানে বড় ছেলের হাতে প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বের ভার তুলে দিয়েছেন। ছেলের হাতে ব্যবসার ভার তুলে দিলেও নিজে একেবারে উপদেষ্টা হিসেবে পেছন থেকে কোম্পানির নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন।

সম্প্রতি এক দুপুরে নোমান গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ও বর্তমান চেয়ারম্যান এ এস এম রফিকুল ইসলামের সঙ্গে প্রথম আলোর দীর্ঘ আলাপচারিতায় জানা যায় কোম্পানির অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের নানা গল্প। 

বিক্রয়কর্মী থেকে সফল উদ্যোক্তা
গল্পে গল্পে নুরুল ইসলাম শোনালেন একজন বিক্রয়কর্মী থেকে দেশসেরা উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনের কথা। বললেন, ২০১৮ সালে গ্রুপের বার্ষিক বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০০ কোটি ডলার। প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য সাড়ে ৮৪ টাকার হিসাবে বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা। রপ্তানির পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় বাজারেও পণ্য বিক্রি করে থাকে। মূলত স্থানীয় বাজারে পণ্য বিক্রি দিয়েই যাত্রা শুরু হয়েছিল। তাই কোম্পানি বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রপ্তানি বাজার বিস্তৃত হলেও স্থানীয় বাজার থেকে এখনো নিজেদের গুটিয়ে নেননি এই উদ্যোক্তা।

নুরুল ইসলাম জানান, ১৯৬৮ সালে ঢাকায় এসে তৈয়ব আশরাফ টেক্সটাইল মিলস নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। এ প্রতিষ্ঠানের অধীনে আবার একাধিক প্রতিষ্ঠান ছিল। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম মরিয়ম টেক্সটাইল, আরটেক্স ফ্যাব্রিকস, নাজনীন ফ্যাব্রিকস। এসব প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত ক্যারোলিন গেঞ্জি, মশারি, ওড়না এবং পলিয়েস্টার কাপড় ইত্যাদি পণ্য বিক্রি করতেন নুরুল ইসলাম। প্রতিষ্ঠানগুলোর পণ্য বিক্রির পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠান থেকে নিজের পছন্দে পণ্য তৈরি করে তা–ও বিক্রি করতেন তিনি। কমিশন আয়ের পাশাপাশি নিজের উদ্যোগে পণ্য তৈরি করে তা বিক্রির মাধ্যমে একটু একটু করে মূলধন বাড়াতে থাকেন নুরুল ইসলাম।

এর মধ্যে স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হলে ফিরে যান চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় নিজ গ্রামে। ওই বছর বিয়েও করেন। যুদ্ধ শেষে আবার ফিরে আসেন কর্মস্থলে। নতুন করে শুরু করেন সবকিছু। এর মধ্যে ব্যাংকঋণের কারণে মরিয়ম টেক্সটাইল, আরটেক্স ও নাজনীন ফ্যাব্রিকসের আর্থিক অবস্থা ক্রমেই দুর্বল হতে থাকে। তখন এসব প্রতিষ্ঠান ভাড়ায় নেন নুরুল ইসলাম। শুরুতে মশারি ও গেঞ্জির কাপড় তৈরি করতেন। ১৯৭৬ সালে পাওনা ঋণ আদায়ে এসব কারখানা একে একে নিলামে তোলে ব্যাংক। নিলামে অংশ নিয়ে যন্ত্রপাতিসহ কারখানাগুলো কিনে নেন নুরুল ইসলাম।

১৯৭৬ সালে প্রথম আরটেক্স ফ্যাব্রিকসের চারটি মেশিন কিনে নেন তিনি। এ জন্য বিনিয়োগ করেন ৮ লাখ টাকা। সেখানে তখন ২২ শ্রমিক কর্মরত ছিলেন। এরপর একে একে কেনেন মরিয়ম টেক্সটাইল, নাজরীন ফ্যাব্রিকসের যন্ত্রপাতি। এ তিন প্রতিষ্ঠানের মোট ১২টি যন্ত্র (মেশিন) নিয়ে শুরু হয় উদ্যোক্তা হিসেবে নুরুল ইসলামের যাত্রা। মাত্র ২২ জন শ্রমিক নিয়ে ১৯৭৬ সালে শিল্পোদ্যোক্তা হিসেবে নুরুল ইসলামের পথচলা শুরু। বর্তমানে তাঁর গড়ে তোলা নোমান গ্রুপের কর্মীর সংখ্যা ৬৫ হাজারের বেশি।

নোমান গ্রুপের যাত্রা
শুরুটা হয়েছিল আরটেক্স ফ্যাব্রিকস, মরিয়ম টেক্সটাইল দিয়ে। ওই নামেই প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো টিকে আছে নোমান গ্রুপের অধীনে। ১৯৮৭ সালে এসে বড় ছেলে এ এস এম রফিকুল ইসলাম নোমানের নামে প্রতিষ্ঠা করেন নোমান গ্রুপ। বর্তমানে এ গ্রুপের অধীনে রয়েছে ৩২টি কারখানা ভিন্ন ভিন্ন নামে। এগুলোর মধ্যে স্ত্রী, কন্যা, পুত্র, নাতি-নাতনিদের নামেও রয়েছে একাধিক প্রতিষ্ঠান।

গল্পে গল্পে নুরুল ইসলাম জানান, ১৯৭৬ সালে বড় ছেলে নোমানের জন্ম। ওই বছরই উদ্যোক্তা হিসেবে তাঁর পথচলা শুরু। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। তবে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান গড়তে ব্যাংকমুখী হননি তিনি। পণ্য উৎপাদনের কাঁচামাল কেনা থেকে শুরু করে নকশা, রঙের ব্যবহার, বিক্রি—সবকিছুই শুরুতে নিজে করেছেন। এখনো বৃদ্ধ বয়সে নকশা, কাঁচামাল কেনা, উৎপাদনের প্রতিটি ধাপের কাজের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। 

নুরুল ইসলাম বলেন, এখনো দিনরাত মিলিয়ে ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টা কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকেন তিনি। 

রপ্তানিতে সাফল্য, অর্ধশতকের অপেক্ষা 
১৯৭৬ সাল থেকে ব্যবসা শুরু হলেও নোমান গ্রুপের যাত্রা শুরু হয় ১৯৮৭ সালে। প্রতিষ্ঠার ১৩ বছর পর ২০০০ সালে এসে আন্তর্জাতিক বাজারে নোমান গ্রুপের রপ্তানি শুরু হয়। এ জন্য প্রতিষ্ঠা করেন জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফ্যাব্রিকস নামে রপ্তানিমুখী হোম টেক্সটাইল প্রতিষ্ঠান। ২০০০ সালে রপ্তানি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত নোমান গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সেরা রপ্তানিকারক িহসেবে ৪৬টি জাতীয় রপ্তানি পদক পেয়েছে। এরমধ্যে ১১টি ছিল শীর্ষ রপ্তানিকারকের স্বীকৃতি। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সহায়তায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ স্বীকৃতি দিয়েছে। 

নোমান গ্রুপের বর্তমান চেয়ারম্যান এ এস এম রফিকুল ইসলাম বলেন, সর্বশেষ ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য শীর্ষ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হিসেবে জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেবিক্স দুটি স্বর্ণপদক পেয়েছে। এ ছাড়া নোমান গ্রুপের আরও দুটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান স্বর্ণপদক ও ব্রোঞ্চপদকসহ মোট চারটি পদক পেয়েছে। 

গ্রুপটির উদ্যোক্তা ও কর্মীদের আশা, সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী দুই বছরের মধ্যে সেরা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরকারের কাছ থেকে অর্ধশতক পদক জিতবে প্রতিষ্ঠানটি। এখন প্রতিষ্ঠানটির অপেক্ষা সেরা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অর্ধশতক পদকপ্রাপ্তি ও ধারাবািহক অবস্থান ধরে রাখা। 

নোমান গ্রুপের সেরা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শীর্ষে জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফ্যাব্রিকস। এ প্রতিষ্ঠানটি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা নুরুল ইসলামের দ্বিতীয় ও তৃতীয় ছেলের নামে নামকরণ করা হয়েছে।

এ এস এম রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘১৯৯৪ সালে যাত্রা শুরু হয় জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফ্যাব্রিকসের। শুরু থেকেই আমাদের লক্ষ্য, রপ্তানিতে দেশের সেরা হওয়া। প্রথম রপ্তানি শুরু হয় ২০০০ সালে। সেই বছর ৬৫ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করে ইউরোপের বাজারে। প্রথম রপ্তানি পণ্য ছিল বিছানার চাদর বা বেডশিট। দেড় যুগের ব্যবধানে প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৩৮ গুণ। সর্বশেষ ২০১৮ সালে জাবের অ্যান্ড জোবায়ের বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি ডলার বা এক হাজার ৪০০ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করেছে।’

জাবের অ্যান্ড জোবায়েরের বর্তমানে ১৮ থেকে ২০ ধরনের পণ্য যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। প্রতিষ্ঠানটির পণ্যের বড় ক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে আইকিয়া, এইচঅ্যান্ডএম, ওয়ালমার্ট, টার্গেট, কেমার্ট, ক্যারিফোর ইত্যাদি।

নোমান গ্রুপের ৬৫ হাজার কর্মীর মধ্যে ১২ হাজার জাবের অ্যান্ড জোবায়েরের। প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে গ্রুপের চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘শুরু থেকে পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করার প্রতি ছিল আমাদের সর্বোচ্চ মনোযোগ। এ কারণে এখন পর্যন্ত আমাদের পণ্য নিয়ে গ্রাহকের কোনো অভিযোগ নেই।’

জাবের অ্যান্ড জোবায়েরের ধারাবাহিক সাফল্যের জন্য প্রতিষ্ঠানটির বিশাল কর্মী বাহিনীর পাশাপাশি বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের কর্মীদের অবদানের কথা জানালেন এ এস এম রফিকুল ইসলাম। 

বিপুল ক্ষতি, তবু হাল ছাড়েনি
২০০৯ সালে টেরিটাওয়েল, ডেনিম, উইভিংসহ সাতটি কারখানা গড়ে তোলে নোমান গ্রুপ। ব্যাংকঋণ ও নিজেদের অর্থে গাজীপুরে এসব কারখানা গড়ে তোলা হয়। কিন্তু গ্যাস সরবরাহ না পাওয়ায় সাত বছর উৎপাদন শুরু করা যায়নি এসব কারখানায়। শিল্পের চাকা না ঘুরলেও ব্যাংকঋণের সুদের চাকা ঠিকই সচল ছিল। তাতে বিপুল লোকসান গুনতে হয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে। 

নোমান গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও বর্তমান চেয়ারম্যান উভয়ে জানান, সাত কারখানা গড়ে তোলার পর সাত বছর ধরে এসব কারখানায় উৎপাদন শুরু করতে না পারায় শুধু বসে বসে ২ হাজার কোটি টাকার ব্যাংক সুদ গুনতে হয়েছে। যন্ত্রপাতিও কিছু কিছু পুরোনো হয়ে গেছে। তখন অনেকে বলেছিলেন কারখানাগুলো বিক্রি করে দিতে। কিন্তু সংকটে দমে যাওয়ার পাত্র নন কেউই। কারণ, তাঁরা জানতেন, ব্যবসায় ভালো সময়, খারাপ সময় থাকবেই। ধৈর্য নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। নোমান গ্রুপ তাই করেছে। সেই ধৈর্যের সুফল মিলেছে ২০১৫ সালে এসে। সাত বছর পর মিলেছে গ্যাস–সংযোগ, তাতে চালু হয় কারখানাগুলো। 

এ ছাড়া ২০১১ সালে বিশ্ববাজারে হঠাৎ করে তুলার দামে অস্থিরতা দেখা দেওয়ায় সে বছর ৮০০ কোটি টাকার বেশি লোকসান হয় নোমান গ্রুপের। কিন্তু কোম্পানিটি ব্যাংকঋণের চেয়ে নিজেদের অর্থে বিনিয়োগের নীতিকে বেশি গুরুত্ব দেয়। এ কারণে বড় ধরনের লোকসানের পরও ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন গ্রুপটির কর্ণধারেরা।

যে ব্যবসা বুঝি না, তা নয়
নোমান গ্রুপের ৩২টি প্রতিষ্ঠানের সব কটি পোশাক ও বস্ত্র খাতের। সব কটিই ব্যবসাসফল। তারপরও অন্য খাতের কোনো ব্যবসায় নিজেদের যুক্ত করলেন না কেন? জানতে চাই গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা নুরুল ইসলামের কাছে। জবাবে তিনি বলেন, জীবনের বড় অংশই আমি কাটিয়েছি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ব্যবসার সঙ্গে। কীভাবে তুলা থেকে সুতা হয়, সুতা থেকে কাপড়। কতটুকু তুলায় কত সুতা আর কত সুতায় কতটুকু কাপড় হয়—সব খুঁটিনাটি আমি জানি। এমনকি কোন মেশিনে কেমন উৎপাদন, খরচ কত কম হয়, তা–ও জানা রয়েছে আমার। তাই এ খাতের ব্যবসায় সবচেয়ে বেশি মনোযোগী হয়েছি। যে ব্যবসা আমি বুঝি না বা কম বুঝি, সেই ব্যবসা করার পক্ষপাতী আমি নই। সন্তানদেরও বলেছি, যে ব্যবসা বুঝবে না, সেই ব্যবসায় না জড়াতে। কারণ, তাতে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে।

নুরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো এমনভাবে পরিচালিত হয়, যেখানে প্রয়োজনের বেশি পণ্য তৈরি হয় না। এ কারণে আমাদের কারখানাগুলোতে পণ্যের অপচয় কম হয়। চাহিদা বুঝে আমরা পণ্য উৎপাদন করে থাকি।’

ভবিষ্যৎ ভাবনা
এ এস এম রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ভবিষ্যতে আমাদের সিনথেটিক কাপড়, পলিয়েস্টার ও সিনথেটিকস নির্ভর ফ্যাব্রিকস তৈরিতে বড় বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। নিজেদের ব্যবসাকে পোশাক ও বস্ত্র খাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে নতুন নতুন পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করার পরিকল্পনা আমাদের। পাশাপাশি রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধির মাধ্যমে শীর্ষ রপ্তানিকারকের স্বীকৃতি ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর।’

নুরুল ইসলামের ছেলে-মেয়ে পাঁচজন। তাঁদের মধ্যে সবার বড় একমাত্র মেয়ে নুর–ই–ইয়াসমিন ফাতেমা, তিনি বর্তমানে নোমান গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক। এরপর চার ছেলে। ছেলেদের মধ্যে সবার বড় নোমান গ্রুপের বর্তমান চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস এম রফিকুল ইসলাম। দ্বিতীয় ছেলে আবদুল্লাহ জাবের, তৃতীয় ছেলে আবদুল্লাহ মো. জোবায়ের ও সবার ছোট আবদুল্লাহ মো. তালহা। বড় ছেলে বাদে অন্যরা গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন। সূত্র: প্রথম আলাে