Saturday, January 11, 2014

পিরোজপুরে অচাষকৃত উপকারী লতাপাতা উদ্ভিদের ব্যতিক্রমী প্রদর্শনী

পিরোজপুর: গ্রামীণ এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নিয়ে বেড়ে উঠে নানা রকম লতাপাতা উদ্ভিদ। এসব লতাপাতা থাকে অনাদরে-অবহেলায়। বাড়ির বাগানে, ঝোপ-জঙ্গলে, বসতবাড়ীর আশেপাশে, মেঠো পথের পাশে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয় এসব লতাপাতা উদ্ভিদ। 
এমনকি পুকুর পাড়ে, খাল-বিলে ও নদীর কূলেও দেখা যায় বিভিন্ন লতাপাতা। এসব অচাষকৃত লতাপাতা উদ্ভিদের অনেক গুণাগুণ থাকলেও অধিকাংশ মানুষই তা জানে না। কেউ কেউ জানলেও আমলে নেয় না। 

তাই গুণাগুণসমৃদ্ধ এসব অচাষকৃত লতাপাতা কাজে লাগানোর জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে। 
ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগটি গ্রহণ করেছে মঠবাড়িয়া টিকিকাটা ইউনিয়নের ছোট শিঙ্গী গ্রামের গ্রাম সংগঠন ও বেসরকারি কৃষি গবেষণাধর্মী উন্নয়ন সংগঠন বারসিক (বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজ)। 

মানুষের জন্য উপকারী অথচ কেউ ব্যবহার করছে না এমনসব লতাপাতা উদ্ভিদের গুণাগুণ সম্পর্কে ধারণা দেয়া এবং তা ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার জন্য এই দুটি সংগঠন কয়েকটি গ্রামে আয়োজন করে ভিন্নধর্মী মেলার। সম্প্রতি মঠবাড়িয়ার ছ্টো শিঙ্গী গ্রামে আয়োজিত এমনই এক মেলা উপভোগ করেছেন অনেক দর্শনার্থী।

ওই মেলার আয়োজন করা হয়েছিলো ছোট শিঙ্গী গ্রামের কৃষক গৌরাঙ্গ অধিকারীর বাড়ীর উঠোনে। এই প্রদর্শনীতে অর্ধ শতাধিক কৃষাণ-কৃষাণী দেড়শ’ জাতের অচাষকৃত দরকারি লতাপাতা উদ্ভিদ নিয়ে ৫০টি স্টল দেন। এই ব্যতিক্রমী মেলা দেখার জন্য সেখানে যান স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। বিপুলসংখ্যক কৃষকও মেলায় গিয়েছিলেন। তারা সবাই ঘুরে ঘুরে স্টলগুলো দেখেন। এর মাধ্যমে তারা দরকারী লতাপাতা ও উদ্ভিদের সঙ্গে পরিচিতি লাভ করেন এবং গুণাগুণ জেনে নেন। 

টিকিকাটা কৃষি ব্লকের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা নূরুন্নাহার বেগম এই মেলার উদ্বোধন করেন। এরপর তিনি প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া অচাষকৃত অথচ ওষুধি গুণসম্পন্ন লতাপাতা উদ্ভিদের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সঙ্গে দরকারী ভেষজ যাতে বিলুপ্ত না হয় সে বিষয়ে সকলকে দৃষ্টি দেয়ার জন্য আহবান জানান।

থানকুনি পাতার গুণাগুণ সম্পর্কে তিনি বলেন, এ পাতা বেটে ভাতের সঙ্গে তিনদিন খেলে আমাশয় রোগ থেকে মুক্তি মেলে। তিনি আরো জানান, নিমপাতা কৃষি বিনাশের মহৌষধ। আর বাবু তুলসি পাতার রস কাশি থেকে মুক্তি দেয়। 

গ্রাম সংগঠন ও বারসিকের কর্মকর্তারা জানান, ছোট শিঙ্গী গ্রামের এই মেলা ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করায় পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন গ্রামে আরো এ জাতীয় মেলা প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। এতে অচাষকৃত অথচ দরকারী লতাপাতা উদ্ভিদ, যা সহজেই হাতের নাগালে পাওয়া যায়, সেসবের ব্যবহার বাড়বে এবং এতে গ্রামাঞ্চলের মানুষ উপকৃত হবে। 

আয়োজনকারীরা জানান, এই মেলার দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ও আগ্রহ দেখে তারা উজ্জীবিত। তারা ক্রমশ বিভিন্ন গ্রামে এ জাতীয় মেলার আয়োজন করবেন। এ ব্যাপারে তারা কৃষি বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতাও প্রত্যাশা করেন। 

উদ্ভিদ মেলায় ভোলকুমড়া, আগুন সার, পাথরকুঁচি, কানাই লতা, দধি লতা, কচু শাক, মানকচু, কালা কচু, দুধমান কচু, বিষ কচু, কলমী লতা, তেলা কচু, হেলেনচা, বাশক, হডি/সডি, সোনাপাতা, মাইড্ডা ওড়হা, পাকিস্তানি লতা/জার্মানি লতা, কালোমেঘ, বন তুলসী, বাবু তুলসী, কৃষ্ণ তুলসি, মেহেদী, হেউজ, পালডী মাদার, দুর্বা ঘাস, আকন্দ, বুখই, গজ বুখই, লাল সোনকাইজ, অন্তরমূল, বকুল, আডালি, পদ্মগুরুজ, লজ্জাবতী, বিষ করলা, হেচি শাক, তিত বেগুন, বন বড়ালী, আপাং পাতা, কালো মানিক, বাদলা পাতা, বুনজুন পাতা, বৌঠোরানী, ¯¦র্ণলোতা, ¯¦র্ণলোয়া, চাটা শাক, আইমুল, ঘন্টা জবা, ঢেঁকি শাক, ব্রনী শাক, দন্তরাজ, বাইত পাতা, সুলমদন, ঘোড়াচবর, এরোন পাতা, কেচকী মোতা, মেহ লতা, ভাটি শাক, হোনাইল, ছল্লা পাতা, কাটা ডাটা, কুচিকুচি পাতা, বুন্না মুলা, চিনিদানা, বন মরিচ, শাপলা, ধুতরা (কালো), সাদা ধুতরা, পোলাও পাতা, অশোক, গিমা শাক, ডুমুর, দন্তমুল, নোনা শাক, নোনা ঝাউ, কাটা বুহুই, চিনি বাদাম, হাত কাটা ফল, আগ্রা শাক, তেল করমচা, অদ্দুয়া, দুধরাজ, চৈ ঝাল, খিড়পুই, বিলাতি ধনেপাতা, আমরুলি, ঠেনঠেনিয়া শাক, গোলহাচি, মুরমুরা, উরনোই, নুচনুচে, কিল করণী, বন ধুনে, কেলি কদম, বামন হডি, বাদ ঢেকির শাক, ঘোসকা পাতা, নিরপুষি, চোচড়া পাতা, মেহরাজ, রক্ত চিতা, চাচ কাটা, বেত, উড়ি গাব, জবা, শতমূল, গাব, বট, বাবলা, আমলকি, হরিতকি, শেফালী, অর্জুন, নিম, শিমুল, কাঠবাদাম, থানকুনি পাতা, তেঁতুলসহ দেড় শতাধিক উদ্ভিদ প্রদর্শন করা হয়। 

No comments:

Post a Comment