Tuesday, June 24, 2014

জয়পুরহাটে নার্সারী ব্যবসায় দৃষ্টান্ত রেখেছেন জহুরুল

জয়পুরহাট: বৃক্ষ মেলায় যাওয়ার বায়না ধরে পিতার কাছ থেকে জুটেছিল ২ টাকা। ১ টাকায় যাতায়াত ও ১ টাকায় বাদাম খাওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও পুরো টাকায় বাদাম খাওয়ার ইচ্ছায় পায়ে হেঁটে পাঁচ কিলোমিটার দূরত্বে জয়পুরহাটে বৃক্ষ মেলায় এসেছিলেন জহুরুল ইসলাম। মেলায় বিভিন্ন প্রকারের গাছের চারা দেখে স্কুল পড়–য়া কিশোরের জহুরুলের মনের মধ্যে আগ্রহ জন্মে। কিন্তু কি করা পকেটে টাকা নাই। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে, মেলার মধ্যে ঘুরে বেড়াতে দেখে এক স্টল মালিক ডেকে চারা নিতে বললে জহুরুল জানায়, তার কাছে টাকা নাই। প্রতি উত্তরে স্টল মালিক বলেন, ৪/৫ টাকাও নাই। জহুরুল ২ টাকা আছে জানালে এর বিনিময়ে স্টল মালিক তাকে একটি লিচুর চারা দেন। খুশিতে আত্মহারা জহুরুল বাড়িতে ফিরে এসে চারা রোপণ করেন। এটা ১৯৭৪ সালের কথা। 

ছোট বেলা থেকেই গাছের প্রতি ভালবাসা। স্কুলের টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে চারা কিনে বাড়ির পাশ দিয়ে তা রোপন করে। এভাবেই নার্সারীর প্রতি ঝোঁক তৈরি হয় জহুরুলের। স্কুল জীবনে ভাল কাবাডি খেলোয়াড় হওয়ার সুবাদে জয়পুরহাট চিনিকলে মৌসুমী যান চালকের চাকরি হয়। এরপর ২০০৬ সালে পিতার কাছ থেকে পাওয়া ১০ কাঠা জমিতে নার্সারীর কাজ শুরু করেন। নাম দেয়া হয় বন্ধন নার্সারী। জেলা শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরত্বে উত্তর-জয়পুর গ্রামে বন্ধন নার্সারীতে বর্তমানে ২শ’ প্রজাতির গাছের চারা রয়েছে। ১০ কাঠা থেকে শুরু বন্ধন নার্সারীর এখন জমির পরিমাণ ৩ বিঘা। এখানে  একেকটি চারার মূল্য ১০ টাকা থেকে ৮শ’ টাকা পর্যন্ত। 

এ পর্যন্ত ৩০ লাখ টাকার চারা বিক্রি করার কথা জানান জহুরুল। এখানে ফলের মধ্যে আমের চারা আছে ৩৪ প্রজাতির উল্লেখযোগ্য হচ্ছে নাগ ফজলী, হাঁড়ি ভাঙ্গা, মহারাজ, রাজভোগ, ছাতাপুরি ল্যাংরা, লকনা, অনান্য ফলের মধ্যে রয়েছে জামরুল, মিষ্টি তেঁতুল, গোলাপজাম, চালতা, কদবেল, সফেদা, জলপাই ইত্যাদি। লিচুর চারা রয়েছে ৮ প্রজাতির চায়না-৩, মাদ্রাজী, এলাচী, বোম্বাই, শিতলপাটি, কাঁঠালী ইত্যাদি। ২৮ প্রকারের ঔষধি চারার মধ্যে রয়েছে তেজপাতা, দারুচিনি, হরতকি, পান পোক্ত, অপরাজিতা, নীল কন্ঠ, চিরতা, মৃত কুমারি, আমলকি, ওলট কম্বল, পুদিনা, হস্তিকরণ ইত্যাদি। ফুলের চারা রয়েছে ২১ প্রজাতির, উল্লেখযোগ্য হচ্ছে হাসনাহেনা, বকুল, মাধবীলতা, এরিকা পাম্প, গোলাপ, নাইট কুইন জবা, গন্ধরাজ ইত্যাদি। এছাড়াও ১৫ জাতের কাঠের গাছের চারা রয়েছে। 

কৃষি বিভাগের লাইসেন্স প্রাপ্ত একজন নার্সারী মালিক হিসেবে সরকারি কোন সহযোগিতা না পেলেও প্রতি বছর বৃক্ষ মেলায় শ্রেষ্ঠ নার্সারীর মালিক হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন জহুরুল। প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন স্থান হতে অনেক লোকজন আসে গাছ কিনতে ও পরামর্শ নিতে। নিজের লেখা পড়া কম হলেও একমাত্র ছেলে আরাফাত হোসেনকে কৃষি ডিপ্লোমা পাশ করিয়েছেন। সেই বর্তমানে নার্সারীর দায়িত্বে রয়েছে। জহুরুল ইসলাম বলেন, নার্সারী থেকে প্রতিমাসে ২৫/৩০ হাজার টাকা আয় থাকে। লেখাপড়া শেষে বেকার যুবকদের ঘুষের টাকা দিয়ে চাকরির নামে সোনার হরিণের পেছনে না দৌঁড়ে আত্মনির্ভরশীল মূলক কাজে যোগ দেয়ার আহবান জানান জহুরুল ইসলাম।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আব্দুল হান্নান বলেন, জহুরুল ইসলাম নার্সারী ব্যবসায় অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত রেখেছেন। খুব ছোট পরিসর থেকে বড় আকারের নার্সারী বাগান করতে পেরেছেন। যা অন্য বেকার যুবকদের আশান্বিত করে তুলছে।

No comments:

Post a Comment