Friday, March 25, 2016

কোনাবাড়ি থেকে ইউরোপ-আমেরিকায় কেয়া কসমেটিকস

।।এম এম মাসুদ।।
ভিশন এবং মিশন থাকলে যে কেউ সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছাতে পারে। যার বাস্তব উদাহরণ আবদুল খালেক পাঠান। বাল্যকাল থেকেই উদ্যোক্তা হওয়ার ভিশন ছিল তার। এখন তিনি কেয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান। দেশের জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’ দিয়েই যে প্রতিষ্ঠানটি বেশি পরিচিত। ঢাকার গাজীপুরের কোনবাড়িতে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। এই কোনাবাড়ি থেকেই উদ্যম, নিষ্ঠা, মেধা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে ব্যবসাকে নিয়ে গেছেন ইউরোপ-আমেরিকার মতো দেশে। এখন দেশের অন্যতম শীর্ষ করপোরেট প্রতিষ্ঠান কেয়া গ্রুপ। কেয়া গ্রুপ গত কয়েক বছরে এর প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ডজনের বেশি। একই সঙ্গে বেড়েছে বার্ষিক টার্নওভার ও প্রতিষ্ঠানে জনবলের সংখ্যা। কেয়া গ্রুপের দাবি, দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে গ্রুপটি। এ গ্রুপে কয়েক হাজার শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তা কাজ করছেন। এ গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয় কোষাগারে রাজস্ব জমা দিচ্ছে শত কোটি টাকা। প্রসাধনী, পোশাক, এগ্রো ও পরিবহন খাতের নেতৃত্বে রয়েছে গ্রুপটি। এসবের পাশাপাশি গ্রুপের কেয়া কসমেটিকস এখন দেশের অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান।


কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার মুন্সি গোলাম মোস্তফাসহ বেশ কয়েক জন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কেয়া কসমেটিকস সব সময় পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে সচেষ্ট থাকে। কসমেটিক সামগ্রী উৎপাদনে ব্যবহার করা হয় সর্বশ্রেষ্ঠ কাঁচামাল। বিশ্বমানের পণ্য উৎপাদন করায় কেয়ার কসমেটিকস সামগ্রী দেশের বাইরেও রপ্তানি হচ্ছে। ভারত, ভুটান, নেপাল, সৌদিআরব, কাতার, দুবাইসহ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশে কেয়ার কসমেটিক সামগ্রী রপ্তানি হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত কয়েকটি দেশ ও যুক্তরাষ্ট্রে কেয়া কসমেটিকস সামগ্রী যাচ্ছে। এসব দেশের প্রতিনিধিরা কেয়ার কারখানা পরিদর্শন করে এর অবকাঠামো সর্বাধুনিক বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। এ ছাড়া নতুন বাজারে প্রবেশ করছে কেয়ার কসমেটিক সামগ্রী। 

জানা গেছে, কোম্পানির চেয়াম্যান আবদুল খালেক পাঠান ইট ভাটায় চাকরি নিয়ে জীবন সংগ্রাম শুরু করেন। পরে তিনি নিজেই একটি ইট ভাটা স্থাপন করে মালিক হয়ে যান। এই সময়ে ব্যাপক পরিশ্রম করতে হয়েছে তাকে। অনেকেই জানান, স্কুল ছুটির পর বন্ধুরা যখন খেলা-ধুলায় মগ্ন থাকতো তখন তিনি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যবসা নিয়ে চিন্তা-ভাব না করতেন। মাজার বিষয় হলো- পরে এই টাকা দিয়ে অর্থ বৃদ্ধির করার জন্য কম দামের এক বাজার থেকে মুরগী-হাস ও ছাগল কিনে বেশি দামে অন্য একটি বাজারে বিক্রি করতেন। এভাবেই তার ব্যবসায়িক জীবনে মোড় পরিবর্তন হতে থাকে। এখানেই থেমে থাকতে হয়নি তাকে। এসেছে শুধুই একের পর এক সাফল্য। গড়েছেন ইন্ডাস্ট্রি। তার গড়া অন্যতম গ্রুপ হলো- কেয়া নিট কম্পোজিট লিমিটেড, কেয়া স্পিনিং মিলস লিমিটেড, কেয়া কটন মিলস লিমিটেড, কেয়া ইয়ার্ন মিলস লিমিটেড, কেয়া ইউরোপ ও কেয়া ইউএসএ। কেয়া কসমেটিকস লিমিটেড, কেয়া এগ্রো প্রসেস, কেয়া পরিবহন, পলি অ্যাডভারটাইজিং ও কেয়া ডেভেলোপারস লিমিটেড। এর মধ্যে কেয়া কসমেটিকস দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ২০০১ সালে তালিকাভুক্ত হয়। 

খালেক পাঠানের উদ্যম, নিষ্ঠা, মেধা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে গড়ে তোলা এসব শিল্প গ্রুপ দেশে-বিদেশে পেয়েছে প্রচুর খ্যাতি। কেয়া কসমেটিকস হিসেবেই বেশি পরিচিত এই গ্রুপটি। কঠিন বাস্তবতার মাঝেও তার জীবন এখন আলোকিত। তিনি অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে একটু একটু করে উন্নয়নের শীর্ষে চলে আসেন। স্পষ্টভাষী সৎ এবং উদার মনোভাবাপন্ন এই ব্যক্তির উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখা থেমে যাইনি বরং স্বয়ংসম্পূর্ণ এই উদ্যোক্তা দেশীয় বাজারে শীর্ষস্থা স্থান ধরে রাখতে নিলস কাজ করে যাচ্ছেন। 

প্রতিষ্ঠানটি জানায়, প্রায় সব দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে বাংলাদেশের। প্রসাধনী খাত থেকে বিপুল অর্থ বিদেশে যাচ্ছে। এই অর্থ যাওয়া বন্ধ করতে খালেক পাঠান সিদ্ধান্ত নেন দেশেই কসমেটিক খাত উন্নয়ন করতে হবে। এই উপলব্ধি থেকে কেয়া কসমেটিক প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্ত। খুব অল্প সময়ে কেয়া কসমেটিকস দেশের মানুষের পছন্দের তালিকায় চলে আসে। খালেক পাঠান বেশ কয়েকবার পুস্কার পেয়েছেন। এর মধ্যে প্রসাধনী ও শিল্প খাতের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে পুরস্কার অর্জন করেছেন। 

বাল্য জীবন: আবদুল খালেক পাঠান ১৯৫৯ সালের ১৪ই মে গাজীপুরের কোনাবাড়ি উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আবদুল পাঠান ও মা বেগম আলেক জান। খালেক পড়াশুনা শুরু করেন হাতিমারা হাই স্কুলে। ১৯৭৯ সালে তিনি এসএসসি পাশ করেন। 

প্রথম ব্যবসায় প্রবেশ: আবদুল খালেক পাঠান গাজীপুরের কোনাবাড়িতে খালেক গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রি নামে ব্যবসা শুরু করেন। আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি ১৯৮৩ সালে ইট ভাটার মাধ্যমে ব্যবসায়ী কর্মজীবন শুরু করেন। কোম্পানির নাম ছিল খালেক অ্যান্ড কোং বা কে অ্যান্ড কোং। অনন্য এই ইটের কোয়ালিটি ও মানের কারণে বাজারে তার খ্যাতি এনে দেয় এবং বাজারের চাহিদা পূরণে সক্ষম হন। সাফল্যের কারণে পরে তিনি বন্ধু ইট নামে আরেকটি ইটের ব্যবসা শুরু করেন। পরে তিনি আরও ব্যবসা সম্প্রসারণ করেন।

ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, কেয়া কসমেটিকস লিমিটেডের বর্তমানে অনুমোদিত মূলধন ৭৫০ কোটি টাকা। গেল বছর স্পন্সর ও সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ২০ শতাংশ বোনাস ঘোষণা করে। যার প্রতিটি শেয়ারের অভিহিত মূল্য ছিল ১০ টাকা। সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্মিলিত মুনাফা (ইপিএস) দাঁড়িয়েছে ০.২৯ টাকা, শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) ১৬.৬৭ টাকা। গত বৃহস্পতিবার ডিএসইতে কেয়া কসমেটিকস শেয়ারের সর্বশেষ দর ১০ থেকে ১১ টাকা ২০ পয়সায় ওঠানামা করতে দেখা গেছে। 

গত এক বছরে ডিএসইতে শেয়ারটির দর ১১ থেকে ২৪ টাকার মধ্যে ওঠানামা করে। ২০০১ সালে বাজারে আসা এ কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৫৮৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। রিজার্ভের পরিমাণ ১২৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। কোম্পানিটির মোট শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা-পরিচালক ৬৯.৫৪ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ৬.২১ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে বাকি ২৪.২৫ শতাংশ শেয়ার। সর্বশেষ অনুমোদিত নিরীক্ষিত মুনাফা ও বাজারদরের ভিত্তিতে এ শেয়ারের মূল্য আয় (পিই) অনুপাত ৩৮.২৮, হালনাগাদ প্রান্তিক মুনাফার ভিত্তিতে যা ৪২.০৭ এ ঠেকেছে। উল্লেখ্য, গত বছর গ্রুপের আরও তিন কোম্পানি কেয়া কসমেটিকসের সঙ্গে একীভূত হয়েছে। কোম্পানির চেয়ারম্যান আবদুল খালেক পাঠান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক খালেদা পারভীন।

প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসন: বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান যখন বেছে বেছে শারীরিকভাবে পরিপূর্ণ কর্মক্ষমদের চাকরি দিচ্ছে, ঠিক তখন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রতিবন্ধীদের চাকরি দিচ্ছে কেয়া গ্রুপ। একটি ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত। এ গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন হাজার খানেক প্রতিবন্ধী কর্মী। উৎপাদনসহ নানা ক্ষেত্রে কাজ করছেন তারা। সামনের দিনগুলোতে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীদেরই অগ্রাধিকার দেয়া হবে বলে জানা গেছে। পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সব গার্মেন্ট মালিকদের দেয়া এক চিঠিতে কারখানায় প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়ার জন্য সবিনয় অনুরোধ জানিয়েছিল। ওই চিঠিতে কেয়া গ্রুপের কারখানায় প্রতিবন্ধীদের চাকরি দেয়ার ঘটনাকে সব গার্মেন্ট মালিকের সামনে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

মুন্সি গোলাম মোস্তফা বলেন, শুরু থেকেই কোম্পানির প্রবৃদ্ধি উত্তর উত্তর বৃদ্ধি হয়েই চলছে। বাৎসরিক টার্নওভারও বেড়েছে কয়েক গুণ। কোম্পানির পণ্যের গুণগত মান সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কোম্পানির চেয়ারম্যানসহ পরিচালনা পরিষদ ও কর্মীরা তাদের সামর্থের সবটুকু ঢেলে দিয়ে ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তারা।  তিনি বলেন, দেশের বাজারে কেয়ার পণ্যের চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি অন্য প্রতিযোগী যে কোনো কোম্পানির চেয়ে কেয়ার মার্কেট শেয়ার বাড়ছে দ্রুত গতিতে। বাংলাদেশের বাজারে বাৎসরিক হিসাবে কসমেটিক সামগ্রীর চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রবৃদ্ধিও বেড়েই চলছে বলে জানান তিনি। 

4 comments:

  1. হাই আপনাদের কোম্পানিতে কি লোক নেওয়া হবে

    ReplyDelete
  2. কোনাবাড়ি কেয়া গার্মেন্টস এর জিএম ছার এর মোবাইল নম্বর টা দরকার ছিল পিলিজ নামবার টা দেন।

    ReplyDelete
  3. সরি ভাই, আমাদের দেয়া নিষেধ

    ReplyDelete
  4. আপনাদের কি স্টোর কিপার লাগবে----

    ReplyDelete