Sunday, October 6, 2019

অস্থির ডলারের বাজার, দাম বেড়ে হয়েছে ৮৭ টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার: অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার বিক্রি হচ্ছে ৮৪ টাকা ৫০ পয়সা। কিন্তু বাস্তবে আরো ১ থেকে ২ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এর বাইরে হঠাৎ করে খোলাবাজারেও চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় প্রতি ডলার কিনতে সাধারণ গ্রাহকের ব্যয় করতে হচ্ছে সাড়ে ৮৬ থেকে ৮৭ টাকা পর্যন্ত। অর্থাৎ সাধারণ মানুষ, যারা ভ্রমণ করতে বিদেশে যাচ্ছেন, তাদের ডলার কিনতে হচ্ছে ৮৭ টাকা দরের উপরে। এক মাস আগেও খোলাবাজারে প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ছিল ৮৫ টাকা ৫০ পয়সা। এক মাসের ব্যবধানে তা বেড়েছে প্রায় দেড় টাকা।

ব্যাংক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বেসরকারি অনেক বড় আমদানির দায় পরিশোধ হচ্ছে। এ কারণে অনেককে খোলাবাজার থেকে ডলার কিনতে হচ্ছে। তবে খোলাবাজারে সরবরাহ তেমন নেই। এতে দাম বেড়ে গেছে। এছাড়া, আমদানি-রপ্তানির ভারসাম্য না থাকা, বিদেশে অর্থ পাচারসহ নানা কারণে ডলারের বাজারে এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে রপ্তানি বাণিজ্য ও প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স পাঠানোর বিষয়ে কিছুটা উৎসাহিত হলেও বেড়ে যাচ্ছে পণ্য আমদানির ব্যয়। কারণ আমদানির জন্য বেশি মূল্যে ডলার কিনতে হচ্ছে। ফলে খাদ্যশস্য, ভোগ্যপণ্য, জ্বালানি তেল, শিল্পের কাঁচামালসহ সব আমদানি পণ্যের ব্যয় বাড়ছে। সর্বপরি মূল্যস্ফীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও জোগানের মধ্যে পার্থক্য বেড়ে যাওয়ায় সঙ্কট বেড়ে যাচ্ছে। এদিকে রপ্তানিকারক ও প্রবাসীদের সুবিধা দিতে সামনে ব্যাংকিং চ্যানেলেও ডলারের দাম বাড়ানোর দাবি উঠেছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, বাজার স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলার লেনদেনের ওপর সীমা বেঁধে দিলেও সেটা প্রকৃতপক্ষে কার্যকর হচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ব্যাংকগুলো আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের যে মূল্যের তথ্য দিচ্ছে বাস্তবে তার চেয়ে বেশি মূল্যে কেনাবেচা হচ্ছে। অনেক ব্যাংক বাধ্য হয়ে নীতিমালার ফাঁকফোকর দিয়ে বেশি দরে লেনদেন করছে।

এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন ব্যাংক, খোলাবাজার ও মানি চেঞ্জারের লেনদেন পর্যবেক্ষণেও ডলারের দর বাড়ার তথ্য পাওয়া গেছে। পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, পুরো জুলাই মাসে প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ৩০ পয়সা দরে বিক্রি হয়। আগস্টে তা বেড়ে ৮৬ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত হয়। গত সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে কোনো কোনো দিনে প্রতি ডলার ৮৭ টাকায়ও বিক্রি করে মানি চেঞ্জারগুলো। আমদানি চাপ থাকায় হঠাৎ করে ডলারের দাম বেড়ে গেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। 

জানা গেছে, প্রতি মাসেই এলএনজি আমদানির জন্য পরিশোধ করতে হচ্ছে ১১ কোটি ডলার। আর বিপিসির দায় বাবদ প্রতি মাসেই পরিশোধ করতে হচ্ছে ২৫ কোটি ডলার। আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা বেড়ে গেছে। সামনে এ চাহিদা আরো বাড়বে। বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা ও জোগানের মধ্যে পার্থক্য বেড়ে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্কট সামনে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। অন্যদিকে বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেয়া ডলারের দর কার্যকর করছে না ব্যাংকগুলো। 

কারণ হিসেবে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও আর আগের মতো ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করছে না। ফলে পণ্য আমদানির দায় পরিশোধ করতে বাজার থেকে হয় তাদের ডলার কিনতে হচ্ছে। অথবা একটি নির্ধারিত কমিশনের বিপরীতে ধার নিতে হচ্ছে। আর এ সুযোগটি কাজে লাগাচ্ছে কিছু কিছু ব্যাংক। তারা ইচ্ছামাফিক ডলার মূল্য আদায় করছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেয়া মূল্য ধরেই ফরওয়ার্ড ডিলিং করছে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো। ফরওয়ার্ড ডিলিং হলো- একটি ব্যাংকের পণ্যের আমদানি দায় মেটাতে ১০ কোটি ডলারের প্রয়োজন। চাহিদার দিনের ৪ থেকে ৫ দিন আগেই বাংলাদেশ ব্যাংক বেঁধে দেয়া মূল্য ধরে ডলার কেনা হলো। এর সঙ্গে বিনিময় ঝুঁকি বা অতিরিক্ত প্রিমিয়াম যুক্ত হচ্ছে। যেমন- ৪ দিন আগে ৮৪ টাকা ৫০ পয়সা দরে ডলার কেনা হলো। লেনদেনের দিন ২ শতাংশ অতিরিক্ত ধরে অর্থাৎ ৮৬ টাকায় ডলার লেনদেন করছে। এভাবেই বাজারে বাংলাদেশ ব্যাংক বেঁধে দেয়া দর কার্যকর করা হচ্ছে না। 

এদিকে খোলাবাজারেও ডলারের মূল্য অস্থির হয়ে পড়েছে। এর কারণ হিসেবে একজন মানিচেঞ্জার ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, ক্যাসিনো, টেন্ডারবাজিসহ চলমান অসামাজিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানের কারণেই অনেকেই আর নগদ টাকা রাখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন না। এতে অনেকেই বাজার থেকে ডলার কিনছেন। আবার অনেকেই বিদেশে যাচ্ছেন। এতে খোলাবাজারে হঠাৎ করে ডলারের চাহিদা বেড়ে গেছে। নগদ ডলারের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় খোলাবাজারে দাম মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ২ টাকা বেড়ে গেছে। গত দুই সপ্তাহ আগেও প্রতি ডলার বিক্রি হয়েছে ৮৫ টাকা। বর্তমানে তা ৮৭ টাকার উপরে বিক্রি করেছেন কোনো কোনো মানিচেঞ্জার। এভাবেই খোলাবাজারে ডলারের চাহিদা বেড়ে গেছে। 

ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ব্যাংকের বাইরে বড় অঙ্কের টাকা মজুত রয়েছে। সাম্প্রতিক দুর্নীতিবিরোধী অভিযানকে ঘিরে যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, তাতে একটি গোষ্ঠীর মধ্যে বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে গেছে। আবার অনেকে দেশে থাকলেও টাকা পরিবর্তন করে ডলার করে রাখছেন। এ ক্ষেত্রে বেশির ভাগ লোকই খোলাবাজার থেকে ডলার কিনছেন। কারণ ব্যাংক থেকে ডলার কিনতে গেলে তার জন্য নানা কাগজপত্র লাগে। কিন্তু খোলাবাজার থেকে সহজে টাকা দিয়ে ডলার কেনা যায়। এ পরিস্থিতিতে খোলাবাজারে ডলারের চাহিদা বাড়লেও সে অনুযায়ী সরবরাহ নেই। এ কারণেই চাপ বেড়ে গেছে।

ব্যাংকগুলোর তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২ অক্টোবর আমদানি দায় মেটাতে ব্যবসায়ীদের থেকে দেশি ও বিদেশি খাতের বেশিরভাগ ব্যাংক ৮৪ টাকা ৫০ পয়সা নিয়েছে। তবে একটি ব্যাংক আমদানি দায় মেটাতে ডলারের মূল্য নিয়েছে ৮৪ টাকা ৭৫ পয়সা। অন্যদিকে ব্যাংকগুলোর ঘোষিত মুদ্রা বিনিময় হার অনুযায়ী, ২ অক্টোবর রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক ও সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক নগদ ডলার বিক্রি করেছে ৮৭ টাকা। একই দিন ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা দরে নগদ ডলার বিক্রি করেছে বিদেশি ব্যাংক আল ফালাহ। ৮৬ টাকা ৬০ পয়সা দরে নগদ ডলার বিক্রি করেছে জনতা, বিডিবিএল, অগ্রণী ও এনসিসি ব্যাংক।

পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হওয়ার আগেই বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার কারসাজিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নিলে অনাকাঙিক্ষত ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের মূল্য দিয়েছে ৮৪ টাকা ৫০ পয়সা। এখন ব্যাংকগুলো যদি ৮৭ টাকায় নগদ ডলার বিক্রি করে তাহলে এটা অনেক বেশি। যেসব ব্যাংক ডলারের দাম বেশি নিচ্ছে এটা কেন নিচ্ছে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেখা উচিত। কারণ এর প্রভাবে যেন ডলারের বাজার অস্থির না হয় এজন্য আগেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি আরো বলেন, ডলারের দাম বাড়লে দ্বিমুখী প্রভাব পড়ে। যেমন- ডলারের দাম বাড়লে রপ্তানিকারকরা লাভবান হয়। তবে সমস্যায় পড়ে আমদানিকারকরা। কারণ আমদানি ব্যয় বাড়লে স্থানীয় বাজারের পণ্যের দাম বেড়ে যায়। চাপ পড়ে মূল্যষ্ফীতির উপর। এতে করে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যায়। ফলে সবচেয়ে কষ্ট হয় গরীরের। 

বিদেশগামী তামিম সরকার বলেন, এত দামে আগে কখনো তিনি ডলার কেনেননি। আগে সর্বোচ্চ প্রতি ডলারের জন্য ৮৬ টাকা দিয়েছেন। আর এখন মতিঝিলের আশা মানি চেঞ্জার থেকে ৮৭ টাকা দরে ডলার কিনেছেন। 

ILO Global Business Forum Highlights the Importance of a Sustainability Vision for Bangladesh’s RMG Sector

Representatives from the world’s largest retails brands met with leading figures from the country’s ready-made garment (RMG) sector at the Annual Bangladesh Business Forum in Dhaka last Wednesday, 2 October 2019.
Over 350 garment-sector representatives from the government, employers’ and workers’ organisations, development partners, global brands and retailers, manufacturers, civil society and academia came together at a high-level event in Dhaka.
Staff reporter: Under the theme ‘Driving Sustainable Change’, the forum was organised by the Better Work Bangladesh (BWB) programme, a joint collaboration between the International Labour Organization (ILO) and the International Finance Corporation (IFC).

Today, Bangladesh’s $34 billion a year garment export industry is the second largest in the world (behind China) with more than 4,500 factories, employing over four million workers.

Discussions centred on the need for a globally competitive garment industry supported by improved labour market governance, effective social dialogue and responsible sourcing practices to ensure decent work and generate long-term prosperity for the industry. A number of speakers also highlighted ongoing issues facing the industry, including how BWB and its brand partners can continue to address gender and OSH non-compliances.
Over 350 RMG stakeholders, including representatives from the government, employers’ and workers’ organisations, development partners, global brands and retailers, manufacturers, civil society and academia attended the high-level event.



Saturday, October 5, 2019

The secret to Bangladesh’s economic success? The SheikhHasina factor

[This article, written by Salman Fazlur Rahman, the prime minister's adviser for private industry and investment, was first published by the World Economic Forum as part of the India Economic Summit.]

 

Nobody disputes the economic credentials of Sheikh Hasina's government - the Asian Development Bank (ADB) is the latest member of a growing list of international institutions attesting to Bangladesh's economic success. The ADB ranked Bangladesh as the fastest-growing economy in the Asia-Pacific region, eclipsing China, Vietnam and India. At the same time, our improvements in many socio-economic indicators are another object of envy to our neighbours.

 

Propelled by a robust manufacturing sector and an enormous boom in infrastructure, Bangladesh has set a target of becoming a developed nation by 2041 to coincide with the platinum jubilee of its independence. Many commentators have called the goal ambitious, but even the government's staunchest critics would think twice before questioning its plausibility. There has been a sea change in attitude from 2006 when our surpassing of Pakistan's growth rate was dismissed as a fluke.

 

Ten years ago, if somebody had told me that Bangladesh would progress this far, I wouldn't have believed it. Now, however, I am in a position to explain the phenomenon. While trying to decipher Bangladesh's economic success, pundits cite several crucial factors, including fulfilling electricity demands, infrastructural development, political stability and food self-sufficiency. But none of these achievements has been easy. When Sheikh Hasina's government tried to introduce and implement its policies, it often faced enormous political risks and implications.

 

Take the electricity crisis for example. When the Awami League re-assumed power a decade ago, the country was grappling with suffocating power outages. These days, however, we produce more electricity than we need at night and are close to eradicating any forms of power shortages once and for all.

 

When she returned to power in 2009, Sheikh Hasina knew that the energy shortage first needed to be mitigated to a tolerable extent, before embarking on long-term plans. As a temporary measure, she decided to allow private companies to build small-range power plants, known as quick-rental power plants. The decision received a barrage of criticism from many quarters — from opposition parties and economists to the press and think tanks — intimidating many in the bureaucracy.

 

But Sheikh Hasina refused to back down from what she thought was the right step forward. She defended her decision forcefully, making necessary amendments to clear any legal ambiguity, and focused on its implementation. Nearly 10 years on, no one doubts that the decision was instrumental in solving the persistent energy crisis.

 

Data from World BankData from World BankIn a way, this chapter also illustrates how much faith Sheikh Hasina puts in the private sector. She is aware of the country's socialist legacy, which is extremely wary of private sector inroads in critical areas, but she also knows the virtues of the free market.

When she first came to power in 1996, she broke the monopoly in the telecommunications industry, paving the way for intense competition between companies. As an obvious consequence, we now enjoy one of the cheapest mobile data and lowest mobile phone usage costs in the world, which, among others, has helped our globally celebrated mobile financial services to flourish.

 

While in power, Sheikh Hasina has opened up many sectors traditionally reserved for the public sector to the private sector, including health, banking, higher education, TV and even export processing and economic zones. At the same time, her government has substantially widened and expanded welfare programmes to lift the poorest and most neglected section of the population and increased subsidies for other crucial elements of the economy such as agriculture. Her development philosophy is a blend of capitalistic and socialistic virtues.

 

For the greater part of our history, the world knew Bangladesh only for natural calamities, wrenching poverty, famine and political violence. While these events and aspects merited attention, they were certainly not a reflection of the aspiration of our nation. The bigger story should have been the resilience with which our people withstood countless natural disasters and crises.

 

Regretfully, downplaying this resilience was the approach adopted by successive governments to ensure the undisrupted flow of foreign aid. A former finance minister once infamously argued that self-sufficiency in food could take a back seat to incoming foreign support. As a person deeply familiar with Bangladesh's state machinery, I know that such a mindset held back our economic progress for so long.

 

Indeed, the single most decisive factor behind Bangladesh's startling success is that Sheikh Hasina has infused a sense of confidence in our national psyche. Oftentimes, she has done so while defying great odds. The Padma Bridge, which the government decided to self-fund after the World Bank's withdrawal is, perhaps, a perfect example of this.

 

Observers may have overlooked the Prime Minister's tenacious, bold, fearless and pragmatic approach, but no explanation of Bangladesh's success would be complete or comprehensive without taking into account the Sheikh Hasina factor.

সবচেয়ে জনপ্রিয় পরিবার সঞ্চয়পত্র

সঞ্চয়-বিনিয়োগে দেশের মানুষ এখন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ে ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেটকেই (এনএসসি) গুরুত্ব দিচ্ছেন। আবার এসব বিনিয়োগকারীর কাছে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হলো পরিবার সঞ্চয়পত্র। সর্বোচ্চ ৬৪ শতাংশ বিনিয়োগকারী এটি পছন্দ করেন। তাঁদের এই পছন্দের প্রধান কারণ হলো পরিবার সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে অন্যগুলোর তুলনায় বেশি লাভ হয় বা মুনাফা পাওয়া যায়।

সঞ্চয়-বিনিয়োগকারীদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পছন্দ হচ্ছে তিন মাস মেয়াদি সঞ্চয়পত্র। ২১ শতাংশ সঞ্চয়কারী এই শ্রেণির সঞ্চয়পত্র কিনতে পছন্দ করেন। এই সঞ্চয়পত্রের ক্রেতাদের মধ্যে ৭৬ শতাংশই পুরুষ। সবাই এটি কিনতে পারবেন—এই নিয়ম চালুর পর থেকে পুরুষেরা অধিক হারে এই সঞ্চয়পত্র কেনার প্রতি ঝুঁকতে শুরু করেন।

গত জুলাইয়ে প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের এক জরিপে বলা হয়, বিনিয়োগকারীদের প্রায় ৭৯ শতাংশই সঞ্চয়পত্র কিনতে বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। কারণ, এটাকেই তাঁরা দেশে সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ উপকরণ মনে করেন। ১৭ শতাংশ উত্তরদাতা বলেন, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে যে লাভ বা মুনাফা পাওয়া যায়, তা দেশের অন্য সব বিনিয়োগের চেয়ে বেশি। তবে মাত্র ১ শতাংশ লোক কর রেয়াত সুবিধা পাওয়ার জন্য সঞ্চয়পত্র কেনেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, পরিবার সঞ্চয়পত্র চালু করা হয়েছে মূলত সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষ, বিশেষ করে নারী এবং বৃদ্ধদের (যাঁদের বয়স ৬৫ বছরের বেশি) জন্য। পরিবার সঞ্চয়পত্রের ক্রেতাদের মধ্যে ৭৯ শতাংশই নারী। আবার এই নারীদের ৬৬ শতাংশই হলেন গৃহবধূ। ৫৭ শতাংশ নারী জানান, তাঁরা প্রধানত স্বামী কিংবা মা-বাবার কাছ থেকেই টাকাপয়সা পেয়ে থাকেন।

জরিপমতে, মাত্র ৬ শতাংশ সঞ্চয়কারী পাঁচ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্র কিনতে পছন্দ করেন। প্রায় ৯ শতাংশ মানুষ পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশনার সেভিংস সার্টিফিকেট কেনেন। তাঁদের মধ্যে ১৫ শতাংশ হলেন অবসরপ্রাপ্ত। এ প্রসঙ্গে জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার যদিও ভালো, তবু অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের অধিকাংশই এটির পরিবর্তে পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনে থাকেন। এর একটি বড় কারণ হলো পেনশনার সঞ্চয়পত্র কিনতে গেলে অতিরিক্ত কিছু কাগজপত্রের দরকার, যেগুলো বিশেষ করে বেসরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়া ব্যক্তিদের অনেকের পক্ষেই জোগাড় করা কঠিন। এ ছাড়া পেনশনার সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়ে ফেললে অনেকে তখন অন্যান্য সঞ্চয়পত্রের প্রতি ঝোঁকেন, প্রধানত পরিবার সঞ্চয়পত্রে।

কেন সঞ্চয়পত্র কেনার দিকে ঝুঁকছেন—এমন প্রশ্ন করা হয়েছিল জরিপে। এর জবাবে ৬৪ শতাংশ উত্তরদাতা জানান, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় রাখা আমানতের বিপরীতে যে সুদ দেওয়া হয় তা দিন দিন কমছে বলেই তাঁরা সঞ্চয়পত্রে বেশি বিনিয়োগ করছেন। উত্তরদাতাদের ৭১ শতাংশই জানান, তাঁরা আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও সহকর্মীদের কাছ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হওয়ার কথা শুনেছেন। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে শুনে থাকেন অল্প কিছু বিনিয়োগকারী।

জরিপ অনুযায়ী ৫২ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর, ডাকঘর ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ ব্যাংকে সঞ্চয়পত্র বেশি সহজলভ্য হওয়ায় তাঁরা সেখানেই যান। তাঁরা ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) সুবিধার মাধ্যমে সঞ্চয়পত্রের সুদ বা মুনাফা গ্রহণ করেন। উত্তরদাতাদের অনেকেই বলেছেন, অনেক সময় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সঞ্চয়পত্র বিক্রি করতে চায় না বা করলেও ক্রেতাদের কিছু বাড়তি টাকা ব্যয় করতে হয়।

১০ বছরে নতুন কোটিপতি ৫৬ হাজার

ডেস্ক রিপোর্ট:  দেশে কোটিপতির তালিকায় প্রতি বছরই গড়ে সাড়ে পাঁচ হাজার ব্যক্তি নতুন করে যুক্ত হচ্ছেন। চলতি বছরের মার্চ মাস শেষে ব্যাংক খাতে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৬ হাজার ২৮৬ জন। ১০ বছর আগে অর্থাৎ ২০০৯ সালের মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে কোটিপতি আমানতকারী ছিলেন ১৯ হাজার ৬৩৬ জন। এই হিসাবে গত ১০ বছরে ৫৬ হাজার ৬৫০ ব্যক্তি নতুন করে কোটিপতির তালিকায় নাম লিখিয়েছেন। তারা প্রত্যেকে এক কোটি টাকারও বেশি পরিমাণ অর্থ দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে জমা রেখেছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বাংলা ট্রিবিউন।

১০ বছরে ৫৬ হাজারেরও বেশি মানুষ কোটিপতির তালিকায় নাম লেখানোকে বৈষম্যের উন্নয়ন বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। তিনি বলেন, 'দেশে কিছু মানুষ লুটপাট করার মধ্য দিয়ে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। সংবিধানপরিপন্থী ও কল্যাণকর অর্থনীতির নীতি থেকে সরে যাওয়ার কারণে এমনটি হয়েছে। বর্তমান অর্থনীতি জোর-জুলুমের নীতিতে চলছে। এর ফলে টাকাওয়ালাদের কাছে ব্যাংকিং খাত জিম্মি হয়ে পড়েছে।'

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ২০১৮ সালের মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ৭০ হাজার ৪৬৩ জন। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর শেষে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৬৭ হাজার ৮৭২ জন। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শেষে ব্যাংকে কোটিপতি আমানতকারী ছিল ৬২ হাজার ৩৮ জন। এভাবে প্রতি বছর গড়ে সাড়ে পাঁচ হাজার ব্যক্তি নতুন করে কোটিপতির তালিকায় নাম লেখিয়েছেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ১০ বছরে এক কোটি টাকার ওপরে কিন্তু পাঁচ কোটি টাকার নিচে এমন ব্যক্তি নতুন করে তালিকায় নাম লেখিয়েছেন ৪৩ হাজার ৫৯৫ জন। ২০০৯ সালে এক কোটি টাকা আমানত রাখা ব্যক্তি ছিলেন ১৬ হাজার ৩৮৫। আর ২০১৯ সালে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৯ হাজার ৯৮০ জনে।

প্রতি বছর সাড়ে পাঁচ হাজার ব্যক্তি কোটিপতির তালিকায় যুক্ত হওয়াকে সমাজে বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করছে বলে মনে করছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, 'ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রতি বছর সাড়ে পাঁচ হাজার ব্যক্তি কোটিপতির তালিকায় যুক্ত হলেও বাস্তবে হয়তো এর তিন গুণ মানুষ কোটিপতি হচ্ছেন। কোটিপতিদের বড় একটি অংশ কালো টাকার মালিক। এই কালো টাকার সুবাধে সমাজে একটি বিশেষ শ্রেণী ধনী হয়ে যাচ্ছে। আরেক শ্রেণী পেছনে পড়ে যাচ্ছে, তারা গরিব থেকেই যাচ্ছে।'

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকে কোটিপতি আমানতকারী ছিলেন ৬২ হাজার ৩৮ জন। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকে কোটিপতি আমানতকারী ছিলেন ৬৭ হাজার ৮৭২ জন। ২০১৮ সালের মার্চ শেষে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ছিলেন ৭০ হাজার ৪৬৩ জন। আর ২০১৯ সালের মার্চ শেষে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৬ হাজার ২৮৬ জন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ১০ বছর আগে ৫০ কোটি টাকারও বেশি পরিমাণ আমানত রাখা ব্যক্তি ছিলেন ১০৭ জন। এখন ৫০ কোটি টাকার ওপরে আমানত রাখা ব্যক্তি রয়েছেন এক হাজার ১৪৯ জন অর্থাৎ ১০ বছরে এই তালিকায় নতুন করে আরো এক হাজার ৪২ ব্যক্তি যুক্ত হয়েছেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৯ সালের মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতের পরিমাণ ছিল দুই লাখ ৫৯ হাজার কোটি টাকা আর ২০১৯ সালের মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা।

প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ১০ বছরে ৪০ কোটি টাকারও বেশি আমানত রাখা ব্যক্তি যুক্ত হয়েছেন ৩১৪ জন। ২০০৯ সালে ৪০ কোটি টাকার ওপরে আমানত রাখা ব্যক্তি ছিলেন ৫০ জন। এখন রয়েছেন ৩৬৪ জন।
গত ১০ বছরে ১৭৫ ব্যক্তি ৩৫ কোটি টাকার ওপরে আমানত রাখার তালিকায় যুক্ত হয়েছেন। বর্তমানে ৩৫ কোটি টাকার ওপরে আমানত রাখা ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১৯ জন। ২০০৯ সালে এই তালিকায় ছিলেন ৪৪ জন। ১০ বছরে ৩০ কোটি টাকার ওপরে আমানত রাখার তালিকায় যুক্ত হয়েছেন ২৫৬ জন। বর্তমানে ৩০ কোটি টাকার ওপরে আমানত রাখা ব্যক্তির সংখ্যা ৩০৭ জন। ২০০৯ সালে এই তালিকায় ছিলেন ৫১ জন।
গত ১০ বছরে ৪৩৯ ব্যক্তি ২৫ কোটি টাকার ওপরে আমানত রাখার তালিকায় যুক্ত হয়েছেন। বর্তমানে ২৫ কোটি টাকার ওপরে আমানত রাখা ব্যক্তির সংখ্যা ৫২২ জন। ২০০৯ সালে এই তালিকায় ছিলেন ৮৩ জন।
১০ বছরে ৭৮৬ ব্যক্তি ২০ কোটি টাকার ওপরে আমানত রাখার তালিকায় যুক্ত হয়েছেন। বর্তমানে ২০ কোটি টাকার ওপরে আমানত রাখা ব্যক্তির সংখ্যা ৯০৯ জন। ২০০৯ সালে এই তালিকায় ছিলেন ১২৩ জন।
গত ১০ বছরে এক হাজার ১১৯ ব্যক্তি ১৫ কোটি টাকার ওপরে আমানত রাখার তালিকায় যুক্ত হয়েছেন।

বর্তমানে ১৫ কোটি টাকার ওপরে আমানত রাখা ব্যক্তির সংখ্যা এক হাজার ৩৭৬ জন। ২০০৯ সালে এই তালিকায় ছিল ২৫৭ জন। ১০ বছরে দুই হাজার ৩৪৭ ব্যক্তি ১০ কোটি টাকার ওপরে আমানত রাখার তালিকায় যুক্ত হয়েছেন। বর্তমানে ১০ কোটি টাকার ওপরে আমানত রাখা ব্যক্তির সংখ্যা দুই হাজার ৯৩০ জন। ২০০৯ সালে এই তালিকায় ছিল ৫৮৩ জন। গত ১০ বছরে ছয় হাজার ৫৭৭ ব্যক্তি পাঁচ কোটি টাকার ওপরে আমানত রাখার তালিকায় যুক্ত হয়েছেন। বর্তমানে পাঁচ কোটি টাকার ওপরে আমানত রাখা ব্যক্তির সংখ্যা আট হাজার ৫৩০। ২০০৯ সালে এই তালিকায় ছিলেন এক হাজার ৯৫৩ জন।

এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি ছিলেন মাত্র পাঁচজন। ১৯৭৫ সালের ডিসেম্বরে এই সংখ্যা বেড়ে ৪৭ জনে দাঁড়ায়। ১৯৮০ সালে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৮ জনে। এরশাদ সরকারের পতনের সময় ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে কোটিপতির সংখ্যা ছিল ৯৪৩ জন। ১৯৯৬ সালের জুনে কোটিপতি ছিলেন দুই হাজার ৫৯৪ জন। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর শেষে এ সংখ্যা দাঁড়ায় পাঁচ হাজার ১৬২ জনে। ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে কোটিপতির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় আট হাজার ৮৮৭ জনে। ২০০৮ সালে ব্যাংক খাতে কোটিপতি আমানতকারী ছিলেন ১৯ হাজার ১৬৩ জন।

৩ মাসে প্রবাসী আয় ৩৮ হাজার কোটি টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার: চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রবাসীরা দেশে ৪৫৪ কোটি ৮৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩৮ হাজার ৬৬৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে গত জুলাইয়ে দেশে রেমিট্যান্স আসে ১৫৯ কোটি ৭৭ লাখ ডলার, আগস্টে ১৪৮ কোটি ২৮ লাখ ডলার এবং সেপ্টেম্বরে আসে ১৪৬ কোটি ৮৪ লাখ ডলার। এছাড়া চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ আগের অর্থবছরের (২০১৮-১৯) একই সময়ের তুলনায় ১৫.২৪ শতাংশ বা ৬৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র এ তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, গত সেপ্টম্বরে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৪৬ কোটি ৮৪ লাখ ২০ হাজার ডলার। রেমিট্যান্সের এই প্রবাহ গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিবাচক নানা পদক্ষেপের কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। 

সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের জুলাইয়ে দেশে রেমিট্যান্স আসে ১৩১ কোটি ৭০ লাখ ডলার। ওই বছরের আগস্টে ১৪১ কোটি ১০ লাখ ডলার এবং সেপ্টেম্বরে আসে ১১২ কোটি ৭৩ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) দেশে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ৩৮৫ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। যা চলতি অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৬৯ কোটি ৩৬ লাখ ডলার কম।

সূত্র আরও জানায়, গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রবাসীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ১ হাজার ৬৪১ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বছরে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রবাসীরা ১ হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিল।

২০১৯ সালের প্রথম থেকেই বাড়ছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে প্রবাসীরা রেকর্ড ১৫৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠায়। এরপর ফেব্রুয়ারিতে আসে ১৩১ কোটি ৭৭ লাখ ডলার, মার্চে ১৪৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার, এপ্রিলে ১৪৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার, মে মাসে ১৭৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার এবং জুনে আসে ১৩৮ কোটি ডলার। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, পঞ্জিকা বছর হিসেবে ২০১৮ সালে রেমিট্যান্স আসে ১ হাজার ৫৫৩ কোটি ৭৮ লাখ ডলার। ২০১৭ সালে ১ হাজার ৩৫৩ কোটি ডলার, ২০১৬ সালে ১ হাজার ৩৬১ কোটি ডলার এবং ২০১৫ সালে ১ হাজার ৫৩১ কোটি ডলার। অন্যদিকে অর্থবছর হিসাবে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স আসে ১ হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১ হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার। সর্বশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরের রেমিট্যান্স আসে ১ হাজার ৬৩১ কোটি ডলার।

উল্লেখ্য, বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১ কোটির বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স জিডিপিতে অবদান রেখেছে ১২ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর শীর্ষ ১০টি দেশ হলো- যথাক্রমে সৌদি আরব, আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, কুয়েত, ওমান, যুক্তরাজ্য, কাতার, ইতালি ও বাহরাইন। 

Wednesday, October 2, 2019

হোটেল ‘স্টার’–এর উত্থানের গল্প

উনিশ শ আশির দশক। দেশে বেসরকারি ব্যাংকব্যবস্থা সবে বেড়ে উঠছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগ থেকে আটাশিতে মাস্টার্স পাস করে মীর আখতার উদ্দীনও চেয়েছিলেন, বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করবেন। করপোরেট জগতের গ্ল্যামার আর ঝাঁ–চকচকে অফিস খুব টানত তাঁকে। কিন্তু বাদ সাধলেন বাবা; বসিয়ে দিলেন পারিবারিক বেকারি ও রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়। ২০১৯ সালে এসে ঢাকায় তাঁর আটটি রেস্টুরেন্ট; প্রতিটিতেই পরিপাটি অফিস। একজন মীর আখতার উদ্দীনকে কেউ নামে না চিনলেও তাঁর স্টার কাবাব, বেকারি বা রেস্টুরেন্ট চেনে না এমন মানুষ ঢাকায় কমই মিলবে।

এলিফ্যান্ট রোডের স্টার কাবাব ও রেস্টুরেন্টের ১১ তলায়, গোছানো অফিসে বসেই কথা হচ্ছিল মীর আখতার উদ্দীনের সঙ্গে। অফিস যতই চকচকে হোক, তিনি মানুষটা সাদামাটা; তাই প্রথমেই অনুরোধ, তিনি আসতে চান না ব্র্যান্ডিংয়ের বলয়ে, প্রচারে আর আলোয়; বরং কাজকে এগিয়ে নিয়ে তিনি নিজেকে রাখতে চান নেপথ্যের নিভৃত যতনে।

আখতার উদ্দীন শুরু করেন তাঁর গল্প, ‘আমরা জন্মেছি, বড় হয়েছি একটি বেকারির মধ্যে। ফোল্ডার স্ট্রিটে আমাদের বাসার নিচেই ছিল বেকারি, ঠাটারীবাজারে দাদার একটা ছোট খাবারের দোকান ছিল। সেটার উল্টো পাশে বাবা মীর মমতাজ উদ্দীন শুরু করেন তাজ বেকারি। ১৯৬৫ সালের কিছু আগে বাবা করাচি থেকে চা বানানোর এক নতুন কৌশল শিখে আসেন। সেই কৌশল এত জনপ্রিয় হলো যে সোসাইটি নামে একটি হোটেলই দাঁড়িয়ে গেল রাতারাতি।’

তবে সেই হোটেল খুব দ্রুত হাতছাড়া হয়ে যায় পারিবারিক সম্পত্তি ভাগাভাগিতে। ১৯৬৫ সালে ঠিক উল্টো পাশের বাড়িটি ভাড়া করে মমতাজ উদ্দীন শুরু করলেন স্টার হোটেল। ইংরেজি নামের দোকানের চল তখন নতুন, স্টার নামটা খুব মন ধরল মমতাজ উদ্দীনের। তখনো ১৯৬৪ হিন্দু–মুসলমান দাঙ্গার ক্ষত দগদগে। মমতাজ সিদ্ধান্ত নিলেন, তাঁর হোটেল হবে সব ধর্মের মানুষদের জন্য, ‘সেই থেকে আজও স্টার চলছে গরুর মাংসের কোনো পদ ছাড়া’। এভাবে ইতিহাসের পথে হাঁটলেন আখতার।

স্বাধীনতার আগেই জয়কালী মন্দিরের কাছাকাছি জায়গা কিনে তৈরি হলো হোটেল সুপার। আখতার জানালেন, ‘বাবা ক্রমান্বয়ে এগোচ্ছিলেন। আটাশিতে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিন্যান্স থেকে পাস করার পর বাবা তাই আমাকে চাকরি করতে দিতে চাননি। বলেছিলেন চাকরির চেষ্টা বাদ দিয়ে ব্যবসায় মন দিতে। দেওয়া হয় ফোল্ডার স্ট্রিটের তাজ বেকারির দায়িত্ব। পরে প্রীতম ভবনের নিচের ফ্লোরের বেকারির দায়িত্বও বর্তায়। তাই সকালে তাজ আর বিকেলে প্রীতম ভবন—এভাবেই চলছি। মাস দুয়েক বেগার খাটার পর বাবাই বেতন দিতে মনস্থ করলেন। ধার্য হলো মাসিক দুই হাজার টাকা। প্রথমটায় ঠিক মন ওঠেনি, পরে অবশ্য বেতন বাড়িয়েছেন বাবা, হাসতে হাসতে যোগ করেন আখতার।

শুরুতে খুব একটা ভালো না লাগলেও বেকারির সৌরভ মৌতাত বোনে। বিশেষ করে জন্মদিনের ক্রিম দেওয়া কেকটা বেশ মনে ধরে যায় তাঁর। ক্রমেই নিজেকে অভিযোজিত করে নেন বেকারি আর রেস্তোরাঁ ব্যবসা আর ব্যবস্থাপনায়। পঁচানব্বই সালে এসে বাবা–ছেলে মিলে কারওয়ান বাজারে তৈরি করলেন হোটেল সুপার স্টার। খাওয়ার সঙ্গে থাকার ব্যবস্থাও। ঠিক সুপারের মতোই। এরপর একে একে ধানমন্ডি, সাতমসজিদ রোড, বনানী, এলিফ্যান্ট রোড, সবশেষে জনসন রোডে...ডালপালা ছড়িয়েই চলছে স্টারের বেকারি, কাবাব ও রেস্টুরেন্ট।

সময়ের হিসাব করলে স্টার বেকারি, কাবাব ও রেস্টুরেন্টের বয়স ৫৪ বছর; এত দিনেও কেন পা রাখেননি ঢাকার বাইরে? প্রশ্ন শুনেই সুখী মানুষের হাসি হাসেন আখতার। বলেন, ‘আমরা আসলে নিজেদের জমির ওপর ছাড়া নতুন শাখা খুলতে চাই না, আমাদের আগুন-পানি নিয়ে কাজ, বাণিজ্যিক ভবনের সুযোগ-সুবিধা ছাড়া শুরু করতে চাই না। সম্পূরক প্রশ্ন আসে, দেশের বাইরে? সেই জবাব অবিকল। তবে পরবর্তী প্রজন্ম যদি চায়, চাইলে সেটা হতে পারে। কিন্তু আমার কোনো ইচ্ছে নেই দেশের বাইরে যাওয়ার।’

এলিফ্যান্ট রোডে স্টারের সবচেয়ে ওপরের তলাটাজুড়ে স্টারের রান্নাঘর। আখতার উদ্দীনের সঙ্গী হই আমরা। ঘুরিয়ে দেখান সবকিছু। সঙ্গে চলে ধারাবর্ণনা। জানান, শুধু কাবাব অংশ নিচে, বাকি পুরো রান্নাই এই রান্নাঘরে হয়। প্রতিটা শাখারই নিজের একটি করে রান্নাঘর আছে। বিশাল সেই রান্নাঘরে ঢুকতেই ঘ্রাণেন্দ্রিয় ঠিকই চিনে নেয় স্টারের চিরচেনা কাচ্চি, লেগ রোস্টের সুবাস; বিশাল ডেকচিতে ঠন ঠন শব্দ তুলে একদল মাংসে মসলা মাখাচ্ছে; অন্যদিকে কেউবা পেঁয়াজ কাটছে; সারি ধরে ১৭টি উনুন। কোনোটায় দুধ জ্বাল দেওয়া হচ্ছে, কোনোটায় বসেছে কাচ্চি। রাঁধুনিদের বিশাল বাহিনী থাকলেও মূল বাবুর্চি মাত্র চারজন; রন্ধনের আধুনিক অভিধানে যাঁরা মাস্টারশেফ। বাকিরা সহযোগী। শুধু এই রান্নাঘরেই প্রতিদিন আদা-রসুন বাটা হয় ৮০ কেজির মতো; এ থেকেই বোঝা যায় প্রতিদিনের রান্নার পরিমাণ!

বাজারের প্রসঙ্গে আবার ফিরে যান পুরোনো কথায়। মুক্তিযুদ্ধের পরপর যখন দেশে চরম খাদ্যাভাব, বেকারি ব্যবসার কাঁচামাল জোগাড় করতে হিমশিম খেতেন আখতারের বাবা মমতাজ উদ্দীন। ‘তখন নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি ময়দা, চিনি, তেলের সরবরাহ পাওয়া যেত না; বাবা সকাল সকাল উঠে চলে যেতেন, কখনো কখনো সারা দিন লেগে যেত লম্বা লাইন পার হয়ে কাঁচামাল সংগ্রহে। তাই দিয়েই টিকে থাকতে হতো বাজারে।’

অনেক পথ পাড়ি দিয়ে অনেকগুলো বছর কাচ্চির বাজারে প্রায় একচেটিয়া বাণিজ্যের পর এসেছে অনেক প্রতিযোগী; এ নিয়ে কিছু চিন্তিত হলেও আখতার উদ্দীন খুব বদল চান না ব্যবসাকৌশলে। বরং বললেন, ‘আমি আসলে খুব বেশি কিছু চাই না। আমরা মূলত মধ্যবিত্তদের কাছে পৌঁছাতে চাই। তাদের সাধ্য অতিক্রান্ত হোক, এটা কখনো চাই না আমরা।’

শুধু মধ্যবিত্ত না, নিম্নবিত্তদের জন্যও খোলা স্টারের আটটি শাখার দুয়ার। মাত্র ৩৫ টাকার বিনিময়ে সেখানে পেটচুক্তিতে ভাত, ডালের সঙ্গে একটি আমিষ তরকারি পরিবেশন করা হয়। সেখানে প্রতিদিন মাছ, ডিম বা গিলা-কলিজার কোনো এক পদ পরিবেশন করা হয়। বনানীতে আলাদা এক হাজার স্কয়ার ফুটের জায়গা রাখা হয়েছে এই খাবার পরিবেশনের জন্য। আখতার বলেন, ‘এই ব্যবস্থাটা বাবাই শুরু করেছিলেন। খাবারের দোকানে ক্ষুধার্ত মানুষের জায়গা হবে না, তা কি হয়? বনানীর মতো খরচের জায়গায় সাধারণ মানুষের সামর্থ্যে খাবার জোগাড় করা অনেক কঠিন, সেখানে অনেক সময় শিক্ষার্থীদেরও দেখা যায় এসে খেতে।’

পারিবারিক ব্যবসা খাবারের হলেও লেখাপড়ার বিষয়েও খুব সজাগ ছিল আখতার উদ্দীনদের পুরো পরিবার। চার বোন, এক ভাই প্রত্যেকেই লেখাপড়া করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এক বোন শুধু সরকারি চাকুরে, বাকি সবাই আছেন রেস্টুরেন্ট নয়তো বেকারি ব্যবসায়। সবটাই চলে অভিন্ন ব্যবস্থাপনায়।

 বাবার অভিজ্ঞতার সঙ্গে নিজের অর্জিত জ্ঞান। তা দিয়েই এই সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটিয়েছেন। তবে ভবিষ্যৎ হয়তো অন্য পথে চলবে। যার পুরোটার নিয়ন্ত্রণও তাঁর নিজের হাতে নেই। কারণ, উত্তর প্রজন্ম হাল ধরবে। তা নিয়েই তিনি মানসিকভাবে প্রস্তুত। বললেন, ‘বড় ছেলে অস্ট্রেলিয়া থেকে মাত্র বিবিএ পাস করল; ইচ্ছে আছে ছোট ছেলেকে হোটেল ম্যানেজমেন্টে পড়ানোর; বোনদের সন্তানেরাও বড় হচ্ছে। তারা যখন হাল ধরবে সময় আরও বদলাবে। সময়ই বলবে স্টার কোথায় যাবে। আপাতত আমি বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের বাজার নিয়ে আশাবাদী আর তৃপ্ত। সবাই মিলে কাজ করলে আমরাও এগোব; আর দেশও।’ সূত্র: প্রথম আলো

Tuesday, October 1, 2019

মোটরসাইকেল উৎপাদনে কার কত অবদান

বাজাজ
দেশের মোটরসাইকেলের বাজারে সবচেয়ে বেশি হিস্যা ভারতের বাজাজ ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলের। বাংলাদেশে এই ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল বাজারজাত করে উত্তরা মোটরস লিমিটেড, যার চেয়ারম্যান মতিউর রহমান।

উত্তরা মোটরস যাত্রা শুরু করে ১৯৭২ সালে। প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন মতিউর রহমানের বড় ভাই প্রয়াত মোখলেসুর রহমান। ১৯৮৫ সালের দিকে উত্তরা মোটরস বাজাজের মোটরসাইকেল বাংলাদেশে আনা শুরু করে।

এখন দেশেই বাজাজের মোটরসাইকেল উৎপাদিত হচ্ছে। ২০১৮ সালের মাঝামাঝিতে উত্তরা মোটরস সাভারের জিরানিতে তাদের নতুন কারখানায় মোটরসাইকেল উৎপাদন শুরু করে। সেখানে এখন তিনটি জনপ্রিয় মডেল বাজাজ পালসার, ডিসকভার ও প্লাটিনা উৎপাদিত হচ্ছে। শিগগিরই শুরু হবে সিটি ১০০ ও ডিসকভার ১১০ মডেলের মোটরসাইকেলের উৎপাদন।

জিরানিতে বাজাজের কারখানাটির নাম ট্রান্স এশিয়া ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। এতে কাজ পেয়েছেন প্রায় ৪৮০ জন। উত্তরা মোটরস বাজাজের মোটরসাইকেল ও অটোরিকশা ছাড়াও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বাণিজ্যিক যানবাহন, গাড়ি ও টায়ার বাজারজাত করে। এ ছাড়া তাদের নানা ব্যবসা রয়েছে।

ভারতে বাজাজের প্রতিষ্ঠা ১৯২৬ সালে। বাজাজের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানিটি ভারতের সেরা ১০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের একটি। বিশ্বে তিন চাকা ও দুই চাকার যানবাহন উৎপাদনে তারা চতুর্থ।

জনপ্রিয়তায় কম যায় না টিভিএস
বাংলাদেশের মোটরসাইকেল বাজারের হিস্যায় দ্বিতীয় অবস্থানে ভারতীয় ব্র্যান্ড টিভিএস। দেশে টিভিএস ব্র্যান্ডের বাজারজাত করে সনি-র‌্যাংগস গ্রুপ।

এখন দেশেই মোটরসাইকেল উৎপাদন করছে টিভিএস। সনি-র‌্যাংগসের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান রিয়ান মোটরস ও ভারতের টিভিএস অ্যান্ড সন্সের যৌথ উদ্যোগের কোম্পানির নাম টিভিএস অটো বাংলাদেশ লিমিটেড। তাদের কারখানা গাজীপুরের টঙ্গীতে।

ভারতীয় এই ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল ২০০৭ সাল থেকে বাংলাদেশে বাজারজাত করছে দেশীয় সনি-র‍্যাংগস গ্রুপ। টিভিএস অটো বাংলাদেশ জানায়, টিভিএসের মূল প্রতিষ্ঠান টিভিএস অ্যান্ড সন্স ১৯১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, টিভিএস ভারতের তৃতীয় শীর্ষ দুই চাকার যান উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তারা ১৫ হাজার কোটি রুপির পণ্য বিক্রি করেছে।

একসময় জাপানের সুজুকির সঙ্গে ভারতে যৌথ উদ্যোগের কারখানা ছিল টিভিএসের। পরে সুজুকি আলাদা হয়ে যায়।

টিভিএস অটো বাংলাদেশের বিপণন বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক আশরাফুল হাসান বলেন, বিগত কয়েক বছরে সরকার করছাড় ও অন্যান্য সহায়তা দিয়ে মোটরসাইকেল শিল্প গড়ে উঠতে সহায়তা করেছে। এর সুফল পেয়েছে দেশের মানুষ। তবে চলতি বাজেটে মূল্য সংযোজন করের (মূসক/ভ্যাট) কারণে চাপ তৈরি হয়েছে।

উৎপাদনে সবার আগে হিরো
ভারতের মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিরো মোটোকর্পের হিরো ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলও বাংলাদেশে জনপ্রিয়। এ দেশে হিরো ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল বাজারজাত করে নিলয় মোটরস, যেটি নিটল-নিলয় গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান।

বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে হিরোই বাংলাদেশে সবার আগে উৎপাদন শুরু করে। নিটল-নিলয় গ্রুপের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশে কারখানা করেছে হিরো মোটোকর্প। কারখানাটি যশোরে, যেটি বছরে দেড় লাখ মোটরসাইকেল উৎপাদন করতে সক্ষম। কোম্পানির নাম এইচএমসিএল নিলয় বাংলাদেশ লিমিটেড।

ভারতে হিরো আগে সাইকেল উৎপাদন করত। ১৯৮৪ সালে জাপানের হোন্ডা মোটর করপোরেশন হিরোর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে মোটরসাইকেল উৎপাদনের কারখানা করে। তাদের ব্র্যান্ড নাম ছিল হিরো-হোন্ডা। ২০১০ সালে হোন্ডা অংশীদারত্ব বিক্রি করে দেয়, যা কিনে নেয় হিরো। এরপর তারা নিজেরাই হিরো ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল বাজারজাত শুরু করে। হিরোর ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভারতের মোটরসাইকেল বাজারে তাদের হিস্যা সবচেয়ে বেশি।

এইচএমসিএল নিলয় বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা বিজয় কুমার মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের কারখানা ২০১৭ সালের জুনে যাত্রা শুরু করে। বিদেশি ব্র্যান্ডের মধ্যে তাঁরাই এ দেশে কারখানা করেছেন। এ কোম্পানিতে মোট বিনিয়োগ ৩২৫ কোটি টাকা। আর কারখানায় হিরোর অংশীদারত্ব ৫৫ শতাংশ, বাকিটা নিলয়ের।

কারখানা করে হোন্ডা দৌড়াচ্ছে
জাপানের হোন্ডা মোটর করপোরেশন বাংলাদেশে মোটরসাইকেল উৎপাদন শুরুর পর এ দেশে তাদের ব্যবসা দ্রুত বাড়ছে। মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় বেসরকারি আবদুল মোনেম ইকোনমিক জোনে ২৫ একর জমিতে হোন্ডা বাংলাদেশ লিমিটেডের (বিএইচএল) কারখানা যাত্রা শুরু করে গত বছরের নভেম্বর মাসে।

এ কারখানায় আপাতত বছরে এক লাখ মোটরসাইকেল উৎপাদনের সক্ষমতা তৈরি করেছে হোন্ডা, যা ২০২১ সালে দুই লাখে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।

বিশ্বের ১৬০টি দেশে ব্যবসা করে হোন্ডা মোটর করপোরেশন। এশিয়া ও ওশেনিয়া অঞ্চলের ১০টি দেশে তাদের কারখানা রয়েছে। প্রতিবেশীদের মধ্যে ভারত, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের পর বাংলাদেশে কারখানা করেছে হোন্ডা।

হোন্ডা কারখানাটি করেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল শিল্প সংস্থার (বিএসইসি) সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে। নতুন কারখানায় হোন্ডার বিনিয়োগ ১৯০ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। আর বিএসইসির বিনিয়োগ ১০৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। ভবিষ্যতে মোট বিনিয়োগ বেড়ে ৬৮০ কোটিতে উন্নীত হবে। কর্মসংস্থান হবে দুই হাজার মানুষের।

বিএইচএলের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা শাহ মোহাম্মদ আশিকুর রহমান বলেন, কারখানা ও প্রধান কার্যালয় মিলিয়ে হোন্ডায় কাজ পেয়েছেন প্রায় ৪৫০ জন। দেশে উৎপাদনের ফলে হোন্ডা ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলের দাম কমেছে। ক্রেতাদের কাছে সহজলভ্য হয়েছে।

ইয়ামাহাও এখন বাংলাদেশে
বাংলাদেশেই জাপানের সুপরিচিত ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল সংযোজনের কারখানা করেছে এসিআই মোটরস। শুধু সংযোজন নয়, একই কারখানায় ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল উৎপাদনের প্রস্তুতিও চলছে।

এসিআই কারখানাটি করেছে গাজীপুরের শ্রীপুরে। কারখানার জমির মোট পরিমাণ ৬ একর। এসিআই বাংলাদেশে ইয়ামাহা মোটরসাইকেলের একমাত্র পরিবেশক। কারখানাটি করতে এসিআইকে কারিগরি সহায়তাও দিচ্ছে ইয়ামাহা। জানতে চাইলে এসিআই মোটরসের নির্বাহী পরিচালক সুব্রত রঞ্জন দাস বলেন, ইয়ামাহা এই প্রথম কোনো প্রতিষ্ঠানকে তাদের মোটরসাইকেল উৎপাদনের কারখানা করতে দিয়েছে। ২০১৬ সালে এসিআই যখন ইয়ামাহার পরিবেশক হিসেবে দায়িত্ব পায়, তার আগে দেশে বছরে ছয় হাজারের মতো ইয়ামাহা মোটরসাইকেল বিক্রি হতো। এ বছর সেটা ২৫ হাজার ছাড়াবে বলে আশা করছে এসিআই।

ইয়ামাহা মোটর করপোরেশন ১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠিত। কোম্পানিটির বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ সালে তাদের মোট বিক্রির পরিমাণ ১ লাখ ৬৭ হাজার কোটি জাপানি ইয়েন, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটির মোট আয়ের ৬১ শতাংশ আসে মোটরসাইকেল ও এর যন্ত্রাংশ বিক্রি করে।

সুব্রত রঞ্জন দাস আরও বলেন, সম্প্রতি তাঁরা একটি জরিপ করে দেখেছেন, সিংহভাগ মানুষের পছন্দ ইয়ামাহা মোটরসাইকেল। দাম নাগালে এলে তারা ইয়ামাহাই কিনবে।

সুজুকির বাজারও দ্রুত বাড়ছে
মোটরসাইকেলের আরেকটি জনপ্রিয় জাপানি ব্র্যান্ড সুজুকিও উৎপাদিত হয় বাংলাদেশেই। এ দেশে সুজুকির পরিবেশ কর‌্যানকন মোটর বাইক লিমিটেড (আরএমবিএল)। সুজুকি ও র‌্যানকন মিলে গাজীপুরে কারখানা করেছে।

নিজেদের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, র‌্যানকন মোটর বাইক ২০১৩ সালে যাত্রা শুরু করে। তখন তাদের কর্মী ছিল মাত্র তিনজন। সুজুকির মোটরসাইকেলের প্রথম চালানটি দেশে আসার আগেই অগ্রিম বিক্রি হয়ে যায়। ২০১৮ সালে আরএমবিএলের কর্মী সংখ্যা দাঁড়ায় ২৯০ জনে, বাজারে জনপ্রিয় ব্র্যান্ডে পরিণত হয় সুজুকি।

সুজুকি মোটর করপোরেশন জাপানের বহুজাতিক ব্র্যান্ড। তারা মোটরসাইকেল ছাড়াও গাড়ি ও নানা ধরনের ইঞ্জিন তৈরি করে। এটি ১৯০৯ সালে জাপানে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫২ সালে সুজুকি প্রথম মোটরযুক্ত বাইসাইকেল তৈরি করে।

সুজুকি বাংলাদেশ ও র‌্যানকন মোটরবাইক জানিয়েছে, বাংলাদেশে তাদের কারখানায় জমির পরিমাণ ৩৭ একর। এটি দেশের সবচেয়ে বড় মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী কারখানা। এতে এখন পর্যন্ত বিনিয়োগ করা হয়েছে ৪৫০ কোটি টাকা।

সুজুকি বাংলাদেশ ও র‌্যানকন মোটরবাইক আরও জানায়, তাদের কোম্পানিতে এখন দেড় হাজারের মতো মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এটা প্রত্যক্ষ ও পরো হিসাব। ভবিষ্যতে তা আরও বাড়বে। কোম্পানিটি ভবিষ্যতে ৭৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগের লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে।

একমাত্র দেশীয় ব্র্যান্ড রানার
দেশীয় ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলের মধ্যে একমাত্র নাম রানার। ২০১২ সালে রানার অটোমোবাইলস রানার ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল বাজারজাত শুরু করে। ময়মনসিংহের ভালুকায় নিজস্ব কারখানায় এ কোম্পানি মোটরসাইকেল উৎপাদন করছে।

রানার বিভিন্ন ইঞ্জিন ক্ষমতার মোটরসাইকেল তৈরি করে। দেশের বাজারে বিক্রির পাশাপাশি বর্তমানে নেপাল ও ভুটানে রপ্তানি হচ্ছে রানারের মোটরসাইকেল। এ ছাড়া তারা শ্রীলঙ্কা ও আফ্রিকার কয়েকটি দেশে রপ্তানির সম্ভাবনা যাচাই করছে।

দেশে প্রথমবারের মতো ১৬৫ থেকে ৫০০ সিসির (ইঞ্জিন ক্ষমতা) মোটরসাইকেল উৎপাদনের অনুমোদন পায় রানার। গত বছর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তাদের এ অনুমোদন দেয়।

মোটরসাইকেল বাজারে রানারের যাত্রা ২০০০ সালে। ওই বছর তারা আমদানি করা মোটরসাইকেল দেশে বাজারজাত করতে শুরু করে। কয়েক বছর পর প্রতিষ্ঠানটি মোটরসাইকেলের যন্ত্রাংশ সংযোজন শুরু করে। ২০০৭ সালে ময়মনসিংহের ভালুকায় দেশে প্রথম মোটরসাইকেলের বিভিন্ন অংশ বা কম্পোনেন্ট তৈরির মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে মোটরসাইকেল উৎপাদন শুরু করে। পূর্ণাঙ্গ মোটরসাইকেল তৈরির কারখানা হিসেবে রানারের যাত্রা শুরু হয় ২০১২ সালে। এখন তারা ১৪টি মডেলের মোটরসাইকেল তৈরি করছে।

রানার জানায়, তাদের মোটরসাইকেল কারখানায় মোট বিনিয়োগ ৪০০ কোটি টাকার মতো। রানার অটোমোবাইলে কর্মীর সংখ্যা ১ হাজার ২০০–এর মতো। সূত্র: প্রথম আলো