Thursday, October 24, 2019

ডুয়িং বিজনেস: ৯৯ দেশের মধ্যে প্রবেশের লক্ষ্য সালমান এফ রহমানের

অর্থনৈতিক রিপোর্টার: বিশ্বব্যাংকের 'ডুইং বিজনেস-২০২০' সূচকে সবচেয়ে ভালো করা ২০টি দেশের তালিকায় এসেছে বাংলাদেশের নাম। ৮ ধাপ এগিয়ে এবার বাংলাদেশ উঠে এসেছে ১৯০ দেশের মধ্যে ১৬৮ নম্বরে। গত বছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৭৬ নম্বরে। তবে 'ডুয়িং বিজনেস' সূচকে আগামী বছর বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম ৯৯ দেশের মধ্যে বা ডাবল ডিজিটে প্রবেশের লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। 

গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে 'ডুইং বিজনেস ২০২০' প্রতিবেদন প্রকাশকালে তিনি এ কথ বলেন। এ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মো. নজিবুর রহমান, প্রধান সমন্বয়ক (এসডিজি) আবুল কালাম আজাদ, বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হক ও অর্থ সচিব মো. আবদুর রউফ তালুকদার।

সালমান এফ রহমান বলেন, অতীতে এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান খুব সামান্যই পরিবর্তিত হয়েছে। এবার অবশ্য ৮ ধাপ এগিয়েছে। আগে কখনো এত পয়েন্ট জাম্প আমরা করতে পারিনি। এছাড়া সবচেয়ে ভালো করা ২০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে। এটিও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান উন্নতির প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে বেশি দিন হয়নি। বিশেষ করে, এ বছর আওয়ামী লীগ সরকার পুনরায় ক্ষমতায় আসার পরই এই প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তবে সূচকের অগ্রগতি বা অবনতি সংক্রান্ত তথ্য নথিবদ্ধ করার শেষ সময় ছিল এপ্রিল মাস। সুতরাং আমাদের হাতে বেশি সময় ছিল না।

সালমান এফ রহমান বলেন, গত ৩/৪ বছর ধরেই এ নিয়ে কাজ হচ্ছিল। কিন্তু আমাদের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হচ্ছিল না। নিয়মটা হল, এপ্রিল মাসের মধ্যে প্রতি বছরের যা রিফর্মস হয়, সেই রিফর্মসের উপর ভিত্তি করে তারা অক্টোবরে ফলাফল দেয়। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, বিশ্ব ব্যাংক যখন র‌্যাংকিং শুরু করে, বাংলাদেশ খারাপ অবস্থানে ছিল।

সালমান এফ রহমান বলেন, তারপরও আমাদের প্রত্যাশা আরো বেশি ছিল। কারণ আমরা নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে অনেক পরিবর্তন এনেছি। তবে এই পরিবর্তনের সুফল মাঠপর্যায়ে পুরোপুরি যায়নি, কারণ মধ্যম ও নিচু সারির সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিরা এই পরিবর্তন স¤পর্কে অবহিত হননি অথবা মানিয়ে নিতে পারেননি। আমরা এখন এই পরিবর্তনের প্রায়োগিক বাস্তবায়নের ওপর জোর দিচ্ছি। যাতে সকল উপকারভোগী বাস্তবিক অর্থেই এই পরিবর্তনের সুফল পান। পামাপাশি আমরাও যেন সূচকে পূর্ণ নম্বর পাই। এছাড়া আমরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছি। যেগুলো বাস্তবায়িত হলে আমাদের অবস্থানে ব্যাপক উন্নতি হবে। কিন্তু আইন সংশোধনের কাজ সময়সাপেক্ষ কেননা এক্ষেত্রে সরকারকে সকল আংশীজনের সঙ্গে শলাপরামর্শ করতে হয় ও তাদের উদ্বেগ ও পরামর্শ আমলে নিতে হয়।

অগ্রগতির জন্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ৮ ধাপ এগিয়ে এলেও আমরা মনে করব না এটা আমাদের অনেক বড় অর্জন। আমাদের লক্ষ্য আগামী বছর আমরা উল্লেখযোগ্য একটা অগ্রগতি চাই। আমরা টার্গেট করব যেন ডাবল ডিজিটে আসতে পারি।

এক প্রশ্নের জবাবে এসসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, আপনি যদি প্রতিবেদনটা দেখেন, ১০টা মানদ-ের মধ্যে অন্তত ৬০টি ইস্যুতে রিপোর্ট করতে হয়। প্রতিটাকেই কিন্তু গুরুত্ব দিতে হবে। সবগুলো ক্ষেত্রেই আমাদের উন্নতি করার সুযোগ রয়েছে। সবাই মিলে আন্তরিকভাবে কাজ করে গেলে আরো ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি।

একটি দেশের অর্থ-বাণিজ্যের পরিবেশ ১০টি মাপকাঠিতে তুলনা করে এই সূচক তৈরি করা হয়। বাংলাদেশের পরিস্থিতি বুঝতে ব্যবহার করা হয়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রামের তথ্য। এই ১০টি মাপকাঠি হল- নতুন ব্যবসা শুরু করা, অবকাঠামো নির্মাণের অনুমতি পাওয়া, বিদ্যুৎ সুবিধা, সম্পত্তির নিবন্ধন, ঋণ পাওয়ার সুযোগ, সংখ্যালঘু বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা, কর পরিশোধ, বৈদেশিক বাণিজ্য, চুক্তি বাস্তবায়ন ও দেউলিয়া হওয়া ব্যবসার উন্নয়ন। সব মিলিয়ে ১০০ ভিত্তিক এই সূচকে বাংলাদেশের মোট স্কোর হয়েছে এবার ৪৫, যা গতবারের চেয়ে ৩.০৩ পয়েন্ট বেশি। গতবছর ৪১.৯৭ ছিল।

বিশ্ব ব্যাংক বলছে, ১০টি মাপকাঠির মধ্যে ৬টিতেই বাংলাদেশের স্কোর গতবারের চেয়ে বেড়েছে। এর মধ্যে ঋণ পাওয়ার সুযোগে স্কোর বেড়েছে ২০ শতাংশ পয়েন্ট। ৪টি মাপকাঠিতে এবারের স্কোর গতবারের সমান। শুধু অবনতি হয়েছে দেউলিয়া হওয়া ব্যবসার উন্নয়ন ঘটানোর ক্ষেত্রে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে ব্যবসা করা সহজ হয়েছে। বাংলাদেশের এতটা এগিয়ে আসার কারণ হিসেবে বিশ্বব্যাংক বলছে, ব্যবসা শুরু করতে আগের চেয়ে খরচ কমেছে বাংলাদেশে। রাজধানী ঢাকাসহ শহর এলাকায় বিদ্যুৎ প্রাপ্তি সহজ হয়েছে। এছাড়া ঋণপ্রাপ্তির যাবতীয় তথ্য এখন সহজে, আরো বিস্তারিত আকারে পান উদ্যোক্তারা। তারপরও ব্যবসার পরিবেশে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ শুধু আফগানিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে। আফগানিন্তানের অবস্থান ১৭৩ তম। স্কোর ৪৪.১। এবারের সূচকে দেশটির অবনতি হয়েছে ৬ ধাপ।

ভারত দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষস্থানে আছে। ভারত সারা বিশ্বে ৬৩তম স্থানে আছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার করায় ভারতের অবস্থানের ১৪ ধাপ অগ্রগতি হয়েছে। এছাড়া ভুটান এ সূচকের ৮৯তম (স্কোর ৬৬), নেপাল ৯৪তম (৬৩.২), শ্রীলঙ্কা ৯৯তম (৬১.৮), পাকিস্তান ১০৮তম (৬১), মালদ্বীপ ১৪৭তম (৫৩.৩), মিয়ানমার ১৬৫তম (৪৬.৮) অবস্থানে রয়েছে।

এবারের প্রতিবেদনে অর্থ-বাণিজ্যের পরিবেশ তৈরির ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে নিউজিল্যান্ড; সূচকে তাদের স্কোর ৮৬.৮। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে যথাক্রমে সিঙ্গাপুর ও হংকং। শীর্ষ দশে থাকা অন্য দেশগুলো হল- ডেনমার্ক, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, জর্জিয়া, যুক্তরাজ্য, নরওয়ে ও সুইডেন। গতবারের মত এবারও সূচকে সোমালিয়ার পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। আফ্রিকার এই দেশটির স্কোর ২০।

প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ডাবল-ডিজিটে উন্নীত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন আইন সংস্কার ও বাস্তবায়ন করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে কো¤পানিজ অ্যাক্ট, ব্যাংক্রাপ্টসি অ্যাক্ট, আরবিট্রেশন অ্যাক্ট ও ইমারত নির্মান বিধিমালা, ইত্যাদি। এছাড়া সিকিউর্ড ট্রানজেকশন বিল প্রণয়ন, কমার্শিয়াল ডিসপিউট রিজ্যুলিউশন কোর্ট প্রতিষ্ঠা ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের রিস্ক প্রোফাইল তৈরির মাধ্যমে বর্ডার কমপ্ল্যয়েন্স-এ কার্যকরি পরিদর্শন ব্যবস্থা প্রনয়ণ করতে হবে।

Sunday, October 20, 2019

বীমা খাতেও দুরবস্থা, মেয়াদ শেষেও টাকা ফেরত পান না গ্রাহকরা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার: জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর আয়ের গতি শ্লথ হয়ে পড়েছে। প্রতি বছর এ খাতের গ্রস প্রিমিয়াম আয়ের প্রবৃদ্ধি কমছে। দেশি-বিদেশি ৩২ জীবন বীমা কোম্পানির গ্রস প্রিমিয়াম আয় বর্তমানে ১০ হাজার কোটি টাকার নিচে অবস্থান করছে। অন্যদিকে বীমা কোম্পানিগুলোতে পলিসি করে বিপাকে পড়েছে গ্রাহকরা। মেয়াদ শেষ হলেও পাচ্ছে না তাদের পাওনা টাকা। এ নিয়ে বীমা কোম্পানি আর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তারা। জানা গেছে, ৫৬০৯ গ্রাহকের কয়েক কোটি টাকার বীমা দাবি পরিশোধ করছে না নামিদামি ৫টি বীমা কোম্পানি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বীমা খাতে দুরবস্থার জন্য বেশিরভাগ কোম্পানির ব্যবস্থাপনাই দায়ী। কারণ কোম্পানিগুলো সময়োপযোগী পণ্য-সেবা দিতে পারছে না। বীমা দাবি নিয়ে কালক্ষেপণের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া বীমা সম্পর্কে গণমানুষের আস্থার সংকট রয়েছে। 

জানা গেছে, বীমা খাতে গতি আনতে ২০১০ সালে আইন প্রণয়ন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা পুনর্গঠনসহ বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু তারপরও জীবন এ খাতে গতি ফেরেনি। বরং নিয়ন্ত্রক সংস্থার কড়াকড়ি আরোপ, নতুন কোম্পানির কারণে অসুস্থ প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি ও দাবি পরিশোধ নিয়ে জটিলতাসহ আরো কিছু কারণে এ খাতের এগিয়ে চলার গতি শ্লথ হয়ে পড়েছে। সময়ের সঙ্গে কোম্পানিগুলোর গ্রস প্রিমিয়াম আয়ের প্রবৃদ্ধিও কমছে।

সূত্র জানায়, ২০১০ সালে জীবন বীমা খাতে ১৮ কোম্পানি ছিল। ওই বছর কোম্পানিগুলো প্রায় ৫ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা গ্রস প্রিমিয়াম আয় করেছিল। আর প্রিমিয়াম আয়ের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৮.৪০ শতাংশ। নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাড়াকড়ির ফলে পরের বছর থেকে আয় কমতে থাকে। ২০১৫ সালে এসে ওই প্রবৃদ্ধি সর্বনি¯œ ৩.৩৯ শতাংশে নেমে যায়। এর আগের দুবছরের ইতিবাচক ধারায় কোম্পানিগুলো কিছুটা এগোলেও ২০১৭ সাল শেষেও গ্রস প্রিমিয়াম আয়ের প্রবৃদ্ধি এখনও ৮.০৩ শতাংশে আটকে আছে। ওই বছরে প্রায় ৮ হাজার ১৯৮ কোটি টাকা গ্রস প্রিমিয়াম আয় করেছে কোম্পানিগুলো। ৮ বছরে জীবন বীমা কোম্পানির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২টি হলেও গ্রস প্রিমিয়াম আয়ের প্রবৃদ্ধি এখনও ২০১০ সালের অর্ধেকের কম রয়ে গেছে। এসব কোম্পানির গ্রস প্রিমিয়াম আয় এখন ১০ হাজার কোটি টাকার নিচে অবস্থান করছে। 

বাজারে নতুন কোম্পানি আসলে বীমা ব্যবসার পরিধি বাড়বে বলে উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও বাস্তব চিত্র এখনও উল্টো। নতুন ১৪ কোম্পানি অনুমোদনের পর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুরোনো ব্যবসা ভাগাভাগি হচ্ছে। কোম্পানির তুলনায় ব্যবসার পরিধি বাড়েনি। বরং এ খাতে অসুস্থ প্রতিযোগিতা আরো প্রকট হয়েছে। 

এ বিষয়ে একটি বীমা কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, সময়ের সঙ্গে দেশের জীবন বীমা খাতের পরিধি বাড়ছে। কিন্তু মান বাড়ছে না। তার মতে, সময়োপযোগী বীমা পণ্য, গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণ, স্বল্প সময়ে দাবি পরিশোধ ও গ্রাহকবান্ধব করে কোম্পানিকে গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। যার ফলে এ খাত ধুকছে। গ্রাহকরা সন্তুষ্ট হলে কোম্পানি এগিয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি। 

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোম্পানিগুলোকে সময়োপযোগী পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। অন্যথায় অস্তিত্ব সংকটে পড়বে এ খাত। 
বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরামের সভাপতি ও পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিএম ইউসুফ আলী বলেন, গত কয়েক বছরে জীবন বীমা কোম্পানিগুলোকে খুব খারাপ সময় পার করতে হয়েছে। তবে এখন কোম্পানিগুলো অতীতের দুর্নাম কাটিয়ে উঠছে। 

এদিকে জমানো টাকা ফিরে পেতে প্রতিদিনই গ্রাহকরা আইডিআরের অফিসে ভিড় করছেন। সরজমিন দেখা গেছে, পলিসির টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য প্রতিদিনই আইডিআরের কর্মকর্তাদের রুমের সামনে গ্রাহকের লাইন। দীর্ঘদিন কোম্পানির কাছে ধরনা দিয়ে শেষ পর্যন্ত আসছে আইডিআরের কাছে। কর্মকর্তাদের সামনে গ্রাহকরা কান্নায় ভেঙে পড়ছে। পলিসির মেয়াদ শেষ হলেও বছরের পর বছর কোম্পানিগুলো গ্রাহকের টাকা পরিশোধ করছে না। এসব পলিসির বিপরীতে সুদ ছাড়া টাকার পরিমাণ ৩ কোটি। কিন্তু সুদসহ হিসাব করলে তা কয়েক কোটি ছাড়িয়ে যাবে। 

আইডিআরের তথ্য অনুসারে, ৫ কোম্পানির বিরুদ্ধে ৫৬০৯ গ্রাহককে পলিসির টাকা পরিশোধ না করার অভিযোগ জমা পড়েছে। এ ছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে যেসব নিয়ন্ত্রণ সংস্থার কাছে পৌঁছাতে পারেনি, সে সংখ্যা হিসাব করলে তা ২০-২৫ হাজার ছাড়িয়ে যাবে। আইডিআরের কাছেই ২ হাজার ৩৪৪টি অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া আইডিআরের বাইরে থাকা অভিযোগ তদন্ত করলে বিশাল আকারে পৌঁছাবে। 

আইডিআরের নির্বাহী পরিচালক ড. রেজাউল ইসলাম বলেন, কয়েকটি কোম্পানি গ্রাহককে পলিসির টাকা দিচ্ছে না। সম্প্রতি এ ব্যাপারে আইডিআরের কাছে বেশ কিছু অভিযোগ জমা পড়েছে। কোম্পানিগুলো টাকা না দিয়ে বিভিন্ন ভাবে গ্রাহককে হয়রানি করছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। কারণ গ্রামের গরিব মানুষ খুব কষ্ট করে টাকা জমা দিয়েছে। মেয়াদ শেষ হলেও কোম্পানিগুলো তাদের টাকা দিচ্ছে না। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে আমরা প্রতিটি কোম্পানির সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করে কঠোর বার্তা দিয়েছি। আর টাকা পরিশোধের সময়ও বেঁধে দেয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টাকা না দিলে বাধ্য হয়েই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

নিয়ম অনুসারে একজন গ্রাহক জীবন বীমায় কিস্তিতে টাকা জমা রাখে। এই কিস্তি মাসিক, তিন মাস অথবা ছয় মাসের হতে পারে। এসব পলিসির মেয়াদ ৫ থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত। জীবনের আর্থিক নিরাপত্তার জন্য এই দীর্ঘ সময় তারা স্বল্প আয় থেকে একটু একটু করে টাকা জমা রাখে। বীমা আইন অনুসারে, পলিসির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সর্বোচ্চ ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিশ্রুত টাকা দিতে হয়। আর ৯০ দিনের বেশি হলে বাকি দিনগুলোর সুদসহ টাকা পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু কোম্পানিগুলো টাকা পরিশোধ না করে গ্রাহককে বছরের পর বছর হয়রানি করছে। এরা পলিসির টাকা আত্মসাৎ করেছে। 

বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেন, গ্রাহকের টাকা পরিশোধ করছে না, এ ধরনের কোম্পানির সংখ্যা বেশি নয়। তবে কয়েকটি কোম্পানি এ খাতের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। তিনি বলেন, এ খাতের আস্থা অর্জনের জন্য সবার আগে গ্রাহকের টাকা পরিশোধ করতে হবে। 

Thursday, October 17, 2019

শেয়ারবাজার টালমাটাল, বিনিয়োগকারীদের কান্না

অর্থনৈতিক রিপোর্টার: দেশের শেয়ারবাজারে অব্যাহত দরপতনে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা দিন দিন ভারী হচ্ছে। পতন আরো গভীর থেকে গভীর হচ্ছে। প্রায় সব কোম্পানি ক্রমাগত দর হারাচ্ছে। ফলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই)  প্রধান সূচক প্রায় তিন বছর আগের অবস্থানে ফিরে গেছে। একই সঙ্গে বাজার মূলধন, লেনদেনও তলানিতে নেমে যাচ্ছে। এদিকে টানা দরপতনে পুঁজি হারাচ্ছেন লাখ লাখ বিনিয়োগকারী। বাজারের স্থিতিশীলতা ফেরাতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিএসইসির চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেনের আশ্বাস এবং তারল্য সংকট কাটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগেও কোন কাজ হচ্ছে না। বাজারে পতন চলছেই। গতকাল সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসেও মূল্য সূচকের পতনেই লেনদেন শেষ হয়েছে পুঁজিবাজারে। এদিন ডিএসইতে লেনদেন কমেছে। অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচক কমলেও লেনদেন বেড়েছে।

বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, বাজারের বর্তমান অবস্থা ১৯৯৬ এবং ২০১০ সালের ধসকেও হার মানিয়েছে। ওই দুই সময়ের ধসে বড় ধরনের সংস্কার এবং প্রণোদনা দেয়া হয়। কিন্তু বর্তমানে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের দেখার কেউ নেই। এ অবস্থায় পুঁজি হারানো বিনিয়োগকারীরা কাউকে কিছু বলতে পারছেন না। ফলে নীরব কান্না চলছে শেয়ারবাজারে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক। কোনো বিনিয়োগকারীই পুঁজি নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারছেন না। নতুন করে বিনিয়োগ তো আসছেই না, উল্টো অনেকে বড় লোকসান দিয়ে সমুদয় শেয়ার বিক্রি করছেন। যাদের লোকসান মাত্রাতিরিক্ত, তারাই লোকসান কমানোর আশায় এক শেয়ার বিক্রি করে অন্য শেয়ার কিনছেন। কিন্তু লোকসান তো কমছেই না, বরং লোকসানের পাল্লা বাড়ছে।

ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, ডিএসই প্রধান সূচক প্রায় ৯ মাসে কমেছে ১ হাজার ২০০ পয়েন্ট। একই সময়ের ব্যবধানে বাজার মূলধন বা শেয়ারের বাজারমূল্য কমেছে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। কারণ বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা নেই। সূচক যেমন তলানিতে, আস্থাও তলানিতে।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, অতিমূল্যায়িত আইপিও পুঁজিবাজারকে অস্থির করে তুলেছে। অন্যদিকে নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। পাশাপাশি স্টক এক্সচেঞ্জ, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে বাজার প্রাণহীন হয়ে পড়েছে।

জানা গেছে, ডিএসইর প্রধান সূচকটি চলতি বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে ছিল গত ২৪শে জানুয়ারি। ওই দিন সূচক ছিল ৫ হাজার ৯৫০ পয়েন্টে ও বাজার মূলধন ছিল প্রায় ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। গতকাল সেই সূচক নেমে এসেছে ৪ হাজার ৭৭০ পয়েন্টে আর বাজার মূলধন কমে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৫৯ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ ৯ মাসে সূচক কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ আর বাজার মূলধন কমেছে ১৪ শতাংশের বেশি। এছাড়া শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩১৯ কোম্পানির মধ্যে ৪৬টি বা প্রায় সাড়ে ১৪ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম এখন ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের নিচে নেমে এসেছে। এসব কোম্পানির বেশির ভাগই বর্তমান নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন নিয়ে বাজারে এসেছে। অনুমোদন দেয়া নিয়েও আছে নানা প্রশ্ন।

ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল রিজভী বলেছেন, তারল্য সংকট, আর্থিক খাতের খারাপ অবস্থা এবং গ্রামীণফোনের সমস্যার সমাধান না হওয়ার কারণে পুঁজিবাজারে অব্যাহত দরপতন হচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে যে তারল্য সংকট আছে সেটা রয়ে গেছে। ব্যাংকের সুদের হার এখনও বেশি। এটার নেতিবাচক প্রভাব পুঁজিবাজারে আছে। গ্রামীণফোন পুঁজিবাজারের প্রায় ১০ শতাংশর মত। এটার সঙ্গে কর নিয়ে যে একটি সমস্যা সেটার সমাধান হয়নি। এসটার বড় প্রভাব ফেলছে বাজারে। শাকিল রিজভী মনে করেন, বাজারে এখন আস্থার সংকটই সবচেয়ে বড় সমস্যা। আর এই তিন সমস্যা দূর না হলে বাজারে আস্থা ফিরবে না। বিনিয়োগকারীলা বাজারমুখি হবেন না। বাজার স্বাভাবিক হবে না।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলামও শাকিল রিজভীর সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, ব্যাংকিং খাত ঠিক না হলে শেয়ার বাজার ঠিক হবে না। দেশের অর্থনীতির স্বার্থে ব্যাংকিং খাতের সুশাসন ফিরিয়ে আনতে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গতকাল ডিএসই প্রধান বা ডিএসইএক্স সূচক ১০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৪ হাজার ৭৭০ পয়েন্টে। গত সোমবার ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) বিনিয়োগের ঘোষণার পর মঙ্গলবার বড় উত্থান হলেও বুধবার আবার পতনে ফিরেছে শেয়ারবাজার। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসইএস বা শরিয়াহ সূচক ৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৯৪ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৭৯ পয়েন্টে। ডিএসইতে গতকাল টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৩১৩ কোটি লাখ টাকার। যা গত কার্যদিবস থেকে ১১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা কম। এর আগের দিন লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৩২৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। গতকাল ডিএসইতে ৩৫০টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৪৫টির, কমেছে ১৬২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৩টির।

অপরদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৪৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৪ হাজার ৫১১ পয়েন্টে। সিএসইতে টাকার অংকে ১৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এ সময়ে সিএসইতে লেনদেনে অংশ নিয়েছে ২৫৫টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১০২টির, কমেছে ১২৪টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৯টির।

বাজারের এমন আচরণে হতাশ সাধারণ বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরাও। সংশ্লিষ্টরা জানান, মঙ্গলবার গুঞ্জন ছিল শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির শীর্ষ পদে বড় রদবদল হচ্ছে। ওই দিন বিকালেই অবশ্য জানা যায়, এটি গুজব। বাজারের বিপরীতমুখী অবস্থার ক্ষেত্রে এ খবরের যোগসূত্র রয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন। এদিকে শেয়ারবাজার থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যে পরিমাণ টাকার শেয়ার কিনছেন বিক্রি করে দিচ্ছেন তার থেকে বেশি।

সূত্র জানায়, শেয়ারবাজার পরিস্থিতি নিয়ে গত ১৬ই সেপ্টেম্বর বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এখানে আশ্বস্ত করব সবাইকে যে, আমরা পুঁজিবাজারকে সুশাসন দেব এবং আমরা গর্ভন্যান্সে ভালো করব। এভাবে আমাদের পুঁজিবাজারকে আমরা একটি শক্তিশালী বাজারে রূপান্তরিত করব। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ বাড়াতে নগদ অর্থ জোগান দেয়ার উদ্যোগ নেয়। এর বাইরে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক ২০০ কোটি টাকা দিয়েছে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ বা আইসিবিকে। আইসিবি ওই টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ শুরু করেছে বলে জানা গেছে।

এর পর সর্বশেষ 'বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ' অনুষ্ঠানে বিএসইসির চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেন বলেছিলেন, সরকারি লাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলো খুব শিগগিরই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হবে। কিছু ভালো লাভজনক প্রতিষ্ঠান দু-এক মাসের মধ্যেই বাজারে আসবে। এরপরও বাজারে পতন চলছেই। অর্থাৎ আস্থার সংকটে কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না।

বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা সৃষ্টি করাই এখন নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান কাজ।


অন্যদিকে শেয়ারবাজারে লেনদেন কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন খোদ স্টক ব্রোকার মালিকরা। তাদের ব্যবসা সংকোচনের নামে কর্মী ছাঁটাই শুরু করেছেন।

একজন ব্রোকার মালিক জানান, ২০১০ সালের পর দীর্ঘ সময়ে লোকসান দিয়ে হাউস পরিচালনা করেছেন। এর পর কোম্পানির রিজার্ভ থেকে কর্মকর্তাদের বেতন পরিশোধ করেছেন। এখন রিজার্ভের খাতা শূন্যের কোঠায় নামছে। ফলে বাধ্য হয়েই কর্মী ছাঁটাইয়ে যেতে হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

শাকিল রিজভী বলেন, পরিস্থিতি ভালো না। প্রতিদিনই লোকসান দিতে দিতে বিনিয়োগকারীদের পোর্টফোলিও এতটাই কমেছে যে, তারা এর দিকে ফিরে তাকাতেও বিরক্ত বোধ করছেন। অনেক ব্রোকারেজ হাউস বন্ধ হওয়ার উপক্রম। কারণ শেয়ার কেনাবেচা থেকে যে কমিশন আয় হচ্ছে, তা নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দেয়া তো দূরের কথা, দৈনন্দিন অফিস খরচই মেটাতে পারছে না। এভাবে কতদিন চলবে, তা কেউ বলতে পারছেন না।

এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারী সোহেল হাসান বলেন, কয়েক মাস আগে একটি কোম্পানির শেয়ার ৬ টাকা ৭০ পয়সায় কিনেছিলেন। এখন সেই শেয়ারের মূল্য কমে ৪ টাকা ৫০ পয়সায় নেমেছে। আলোচ্য সময়ে তিনি পুঁজি খুইয়েছেন ৩৩ শতাংশ। তিনি বলেন, কোম্পানিটির শেয়ারের মূল্য কমেছে যৌক্তিক কোনো কারণ ছাড়াই।

হাসিবুল হাসিব নামের আরেক বিনিয়োগকারী একটি ভালো কোম্পানির শেয়ার কিনেছিলেন ৭৭ টাকা করে। সর্বশেষ সেই শেয়ারের মূল্য কমে দাঁড়িয়েছে ৪৭ টাকায়। আলোচ্য সময়ে তিনি পুঁজি হারিয়েছেন ৩৯ শতাংশ। আরেক বিনিয়োগকারী আতিকুল ইসলাম জাহিন স্পিনিংয়ের প্রতিটি শেয়ার কিনেছিলেন ৯ টাকা ৬০ পয়সায়। এখন সেই শেয়ারের মূল্য দাঁড়িয়েছে ৫ টাকা ৫ পয়সা। আলোচ্য সময়ে তার পুঁজি হারিয়েছে ৪৩ শতাংশ। তিন মাসের ব্যবধানে তাদের বিনিয়োগ করা পুঁজি খুইয়েছেন। তবে শেয়ারের এই মূল্য কমে যাওয়ার কোনো কারণ কোম্পানি বা স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি।

বাজার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অব্যাহত দরপতনে বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীই এখন লোকসানে। লোকসান আরো বাড়বে এমন শঙ্কায় অনেক বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে বিক্রির চাপ বেড়ে দরপতন ত্বরান্বিত হচ্ছে। বিক্রির চাপ বাড়লেও তা সামাল দেয়ার জন্য যে সহায়তা দরকার, তা বাজারে নেই। 

Tuesday, October 15, 2019

একনেকে নতুন দুই মেট্রোরেলসহ ১০ প্রকল্প অনুমোদন

সরকারি আবাসিক ভবনে আর গ্যাস সংযোগ নয়: প্রধানমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার: সরকারি আবাসিক ভবনে আর গ্যাস সংযোগ না দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহারে অভ্যস্ত হওয়ার কথা জানান পধানমন্ত্রী। এছাড়া বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে করণীয় নির্ধারণে বেশকিছু নির্দেশনাও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এদিকে রাজধানীর যানজট নিরসনে নতুন দুটি মেট্রোরেল নির্মাণসহ ১০ প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এতে খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ৯৪ হাজার কোটি টাকা। 
গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) বৈঠক শেষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর এসব নির্দেশনার বিষয়ে জানান পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান।
পরিকল্পনা মন্ত্রী জানান, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকারি সব বাসভবনে নেট লাগানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এখন থেকে যেসব সরকারি বাড়ি তৈরি করা হবে তার সবগুলোতে মসকিউটো নেটিং থাকতে হবে। সেই সঙ্গে আর্বজনা ডিসপোজালের ব্যবস্থা থাকতে হবে। তাছাড়া বাড়ির নিচতলায় গাড়ি চালকদের জন্য টয়লেট, নামাজ পড়ার জায়গা ও বিশ্রামের জায়গা থাকতে হবে। সরকারি বাসভবনে গ্যাস সংযোগের বিষয়েও নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। 
পরিকল্পনা মন্ত্রী জানান, এখন সরকারি আবাসিক ভবনে গ্যাস সংযোগ না দেয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ধীরে ধীরে সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহারে মানুষকে অভ্যস্ত হওয়ার আহবান জানান।
তিনি বলেন, এখন সরকারি অর্থে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও আগামীতে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডকে শেয়ার বাজারে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া আগামীতে ধানম-িকে ধরে আশপাশের এলাকার জন্য মেট্রোরেল তৈরির পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। মেট্রোরেলের ব্যয়ের প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, এখন বেশি জমি অধিগ্রহণ করায় নতুন মেট্রোরেলের ব্যয় বেশি হচ্ছে। এছাড়া মাটির নিচে ও এলিভেটেড দুই ধরনের হওয়ায় কারিগরি অনেক বিষয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, যেকোনো প্রকল্প সময়ের মধ্যেই সংশোধন করতে হবে। কিন্তু সময় শেষে নিয়ে আসা যাবে না।
এদিকে একনেক সভায় বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর রেলস্টেশন এবং নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল ডিপো পর্যন্ত ৩১.২৪১ কিলোমিটার এমআরটি লাইন-১ নির্মাণ ও হেমায়েতপুর-আমিনবাজার-গাবতলী-মিরপুর ১-মিরপুর ১০-কচুক্ষেত-বনানী-গুলশান ২-নতুনবাজার-ভাটারা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার এমআরটি লাইন-৫: নর্দার্ন রুট প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
এমআরটি (লাইন-১) নির্মাণের জন্য চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ ধরা হয়েছে। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ৫২,৫৬১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকার বহন করবে ১৩,১১১ কোটি ১১ লাখ টাকা সরকার ও ৩৯,৪৫০ কোটি ৩২ লাখ টাকা বৈদেশিক ঋণ।
এমআরটি (লাইন-৫) নির্মাণ সম্পন্নের জন্য মেয়াদ রাখা হয়েছে চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রকল্পটিতে মোট ব্যয় হবে ৪১,২৩৮ কোটি ৫৪ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। এতে সরকারি অর্থায়ন ১২,১২১ কোটি ৪৯ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। বৈদেশিক ঋণ ২৯,১১৭ কোটি ৫ লাখ ১০ হাজার টাকা। 
অনুমোদিত ১০ প্রকল্প: সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ‘ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-১)’; ‘ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-৫): নর্দান রুট; ‘ডোমার-চিলাহাটি-ভাউলাগঞ্জ (জেড-৫৭০৬), ডোমার (বোড়াগাড়ী)-জলঢাকা-(ভাদুরদরগাহ) (জেড-৫৭০৪) এবং জলঢাকা-ভাদুরদরগাহ-ডিমলা (জেড-৫৭০৩) জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ’ ও ‘কিশোরগঞ্জ-করিমগঞ্জ-চামড়াঘাট জেলা মহাসড়ক যথাযথ মানে উন্নীতকরণসহ ছয়না-যশোদল-চৌদ্দশত বাজার সংযোগ সড়ক নির্মাণ’ প্রকল্প; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ‘গৃহায়ন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন (দ্বিতীয় সংশোধন) প্রকল্প’; গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ‘ঢাকাস্থ মিরপুর পাইকপাড়ায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বহুতল আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ’ ও ‘ঢাকার আজিমপুরে বিচারকদের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণ (প্রথম সংশোধন) প্রকল্প; পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘ইরিগেশন ম্যানেজমেন্ট ইনম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্ট ফর মুহরী ইরিগেশন প্রজেক্ট (দ্বিতীয় সংশোধন) প্রকল্প এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ‘জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব নিরসনে সিলেট বন বিভাগে পুনঃবনায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প।
এদিকে চলতি অর্থবছর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন হয়েছে ৮.০৬ শতাংশ। যা গত বছর একই সময়ে হয়েছে ৮.২৫ শতাংশ। একনেক ব্রিফিং শেষে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের এ তথ্য প্রকাশ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী। তিনি জানান, চলতি অর্থবছরে ৩ মাসে (জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর) ১৭ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। যা গতবছর একই সময়ে ব্যয় হয়েছিল ২ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা।

Monday, October 14, 2019

বিশ্ব মান দিবসের আলোচনায় শিল্পমন্ত্রীর হুশিয়ারী


অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হলে দায়ি ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা
অর্থনেতিক রিপোর্টার: জাতীয় পর্যায়ে পণ্য ও সেবার গুণগত মান সুরক্ষা ও উন্নয়নে বিএসটিআইর সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব, সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও দেশ প্রেমের সাথে অর্পিত দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে কোনো ধরনের শৈথিল্য কিংবা দায়িত্বহীনতা সরকার মেনে নেবে না। দায়িত্ব অবহেলা কিংবা অনৈতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত হলে, শিল্প মন্ত্রণালয় দায়ি ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেবে।

সোমবার বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (বিএসটিআই) আয়োজিত 'ভিডিও মান বৈশ্বিক সম্প্রীতির বন্ধনʼ শীর্ষক আলোচনা সভায় শিল্পমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন। বিশ্ব মান দিবস-২০১৯ উপলক্ষে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত বিএসটিআই'র প্রধান কার্যালয়ে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। শিল্প মন্ত্রণালয়ের রুটিন দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব সালাহউদ্দিন মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিএসটিআই'র মহাপরিচালক মো. মুয়াজ্জেম হোসাইন এবং বিএসটিআই'র পরিচালক (মান) মো. সাজ্জাদুল বারী বক্তব্য রাখেন।

শিল্পমন্ত্রী বলেন, বিএসটিআই জাতীয় পর্যায়ে একমাত্র মান নির্ধারণী প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের কর্মকা-ের ওপর গুণগত শিল্পায়ন এবং জনগণের জীবনের সুরক্ষার বিষয়টি নির্ভর করে। এ বিবেচনায় বর্তমান সরকার বিএসটিআই'র আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আইন, নীতি ও বিধি প্রণয়ন করেছে। এর পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির কর্মক্ষেত্র সম্প্রসারণে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। জনগণের দোরগোড়ায় বিএসটিআই'র সেবা পৌঁছে দিতে সরকার উপজেলা পর্যায়ে এর কার্যক্রম সম্প্রসারণ করবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, শিল্প-কারখানায় কোনো নির্দিষ্ট এলাকার জনগোষ্ঠির ব্যবহারের জন্য পণ্য উৎপাদিত হয় না। এটি নিজ দেশের গ-ি পেরিয়ে বিদেশে রপ্তানির জন্য উৎপাদিত হয়ে থাকে। কোনো পণ্য অন্য দেশের ক্রেতা ভোক্তাদের কমপ্লায়েন্স অনুসরণ করে তৈরি না করলে, তা বিশ্ববাজারের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে না। এর ফলে সংশ্লিষ্ট শিল্প উদ্যোক্তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং এক সময় তার প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে। এ বাস্তবতা মাথায় রেখে বাংলাদেশে বিশ্বমানের পণ্য উৎপাদনের প্রয়াস জোরদার করতে তিনি শিল্প উদ্যোক্তাদের প্রতি আহবান জানান।

বিএসটিআই মহাপরিচালক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ অনুযায়ী দেশে গুণগত শিল্পায়নের ধারা বেগবান করতে বিএসটিআই কাজ করছে। এর অংশ হিসেবে গত ৯ মাসে তৃণমূল পর্যায়ে পণ্য ও সেবার গুণগত মান সুরক্ষায় বিএসটিআইর কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১,৮২৯টি সিএম লাইসেন্স প্রদান, ২০১১টি লাইসেন্স নবায়ন, ১,৫০৫টি সার্ভিল্যান্স টিম এবং ১৪৭টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। এ সময় ৩ কোটি ৯৬ লাখ ১৬ হাজার টাকা জরিমানা আদায়ের পাশাপাশি ৮৯৩টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এছাড়া ৪৬৫টি ফলের নমুনা পরীক্ষা করা হলেও এর কোনটিতে ফরমালিনের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি বলে তিনি উল্লেখ করেন। এর আগে বিশ্ব মান দিবস ২০১৯ উপলক্ষে বিএসটিআইর উদ্যোগ এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা আয়োজন করা হয়। এটি প্রধান কার্যালয় থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার প্রধান কার্যালয়ে এসে শেষ হয়। বিএসটিআই মহাপরিচালক এতে নেতৃত্ব দেন।

অর্থনীতিকে এগিয়ে নিবে উদ্ভাবনী প্রযুক্তি

ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপো ২০১৯

অর্থনৈতিক রিপোর্টার: দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে নিজস্ব প্রযুক্তি উদ্ভাবনে তরুণদের নিয়োজিত হবার আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল মোমেন। সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তথ্যপ্রযুক্তি প্রদর্শনী 'ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপো ২০১৯' উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাতের অগ্রগতির প্রশংসা করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী। 'মেড ইন বাংলাদেশ' স্লোগানে শুরু হলো তিনদিন ব্যাপী দেশের সর্ববৃহৎ প্রযুক্তি প্রদর্শনী। ১৪ই অক্টোবর থেকে ১৬ই অক্টোবর পর্যন্ত চলবে প্রদর্শনীটি। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে চলবে রাত ৮টা পর্যন্ত।

তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ, বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ, আইডিয়া প্রজেক্ট, এটুআই এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস) এর যৌথ উদ্যোগে ডিজিটাল পণ্য এবং তরুণ প্রজন্মের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি প্রদর্শন করা হবে এখানে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংকের গবেষণা অনুযায়ী বাংলাদেশ এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দ্রুততম অর্থনীতির একটি। জাতিসংঘ বলছে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে গত দশ বছরে ৪০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রণীত 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' পরিকল্পনা বাংলাদেশকে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির দিকে এগিয়ে নিচ্ছে বলে মন্তব্য করেন মোমেন।

সাবেক কূটনৈতিক মোমেন বলেন, তথ্য প্রযুক্তিভিত্তিক বাজার সম্প্রসারনের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্ব দরবারে নতুন পরিচয় পেয়েছে। যার পেছনে রয়েছে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা এবং সময়ভিত্তিক বাস্তবায়ন।

দেশীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রশংসা করে বক্তব্য শুরু করেন তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, এমপি।

জুনায়েদ আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ বছরে চার কোটি মোবাইল ফোন আমদানি করে। সরকারের ব্যবসায় বান্ধব নীতির কারণে গত এক বছরে ওয়ালটন, সিম্ফোনিসহ কোরিয়ান স্যামসাং আমাদের হাইটেক পার্কে সেট উৎপাদন করছে।

বাংলাদেশ হাইটেক পার্কের মাধ্যমে নতুন প্রযুক্তি ব্যবসায় উদ্যোক্তাদের সরকার সহযোগিতা করে আসছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ। তিনি আরো বলেন, ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপোর মাধ্যমে বাংলাদেশ নিজস্ব সক্ষমতা প্রদর্শন করা হবে যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, উদ্ভাবক এবং ব্যবসায়ীদের একই জায়গায় নিয়ে আসা হয়েছে।

টেলিযোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের সংসদীয় কমিটির প্রধান একেএম রহমতুল্লাহ বলেন, প্রযুক্তিখাতে বাংলাদেশ বিশ্ব অর্থনীতিতে নিজস্ব জায়গা করে নিয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদের নেতৃত্বে দেশের প্রযুক্তি খাতে অসামান্য অগ্রগতি হয়েছে।

আইসিটি বিভাগের জেষ্ঠ্য সচিব জিয়াউল আলাম জানান, প্রযুক্তিখাতের সম্প্রসারনের সঙ্গে সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে আইসিটি আইন-২০০৯ কে গত দশ বছরে দুইবার হালনাগাদ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ হাইটেক পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম, এনডিসি বলেন, তরুণ উদ্ভাবকেরাই ডিজিটাল বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ায় মূখ্য ভূমিকা পালন করছে।

হোসনে আরা বেগম জানান, আইসিটি বিভাগের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে তরুণদের উদ্ভাবনী,  ব্যবসায়ীক এবং সেবাভিত্তিক প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।

উইটসার মহাসচিব জেমস (জিম) পয়জান্ট বাংলাদেশি তরুণদের স্থানীয় সমস্যা সমাধানে প্রযুক্তি উন্নয়নে মনযোগী হবার আহবান জানান।

প্রদর্শনীটি সকাল থেকেই সবার জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। তবে প্রদর্শনীতে প্রবেশের জন্য প্রদর্শনীর ওয়েবসাইট (যঃঃঢ়ং://ফফরবীঢ়ড়.পড়স/ৎবমরংঃৎধঃরড়হ) অথবা স্মার্টফোনে আইওএস (যঃঃঢ়ং://ধঢ়ঢ়ষব.পড়/২ড়যঝঅ১া) ও অ্যান্ড্রয়েড (যঃঃঢ়ং://নরঃ.ষু/৩৫ল২চউম) থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করে নিবন্ধন করতে হচ্ছে। উল্লেখিত সাইট বা অ্যাপে প্রদর্শনী সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। পুরো প্রদর্শনী অনলাইনে লাইভ স্ট্রিমিং করা হচ্ছে।

প্রযুক্তি খাতে দেশের সক্ষমতা, দক্ষতা, হার্ডওয়্যার পণ্য উৎপাদনে সম্ভাবনা এবং কর্মপ্রচেষ্টার বাস্তবচিত্র এই প্রদর্শনীতে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এ ছাড়াও হাই-টেক পার্ক এবং তথ্যপ্রযুক্তিতে উন্নয়ন কাঠামোর অগ্রগতিতে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া সম্পর্কেও দর্শনার্থীরা সম্যক ধারণা অর্জন করতে পারছেন। দেশীয় প্রযুক্তির সমাহার দিয়ে এবারের প্রদর্শনীকে ভিন্ন আঙ্গিকে সাজানো হয়েছে। রাখা হয়েছে ৮টি জোন। 'মেড ইন বাংলাদেশ' জোনে দেশীয় প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানদের এক ছাদের নিচে পাওয়া যাবে। থাকছে ইনোভেশন জোন। এই জোনে নিত্য নতুন উদ্ভাবন সম্পর্কে জানা যাচ্ছে।

আইডিয়া প্রজেক্টের ৩০টি প্রজেক্ট, এটুআই এর ৩০টি প্রজেক্ট এবং ২১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি দিয়ে সাজানো হয়েছে ইনোভেশন জোন। অ্যাক্টিভেশন প্রোগ্রামগুলো থেকে নির্বাচিত সেরা ৩০টি উদ্ভাবন এক্সপোতে প্রদর্শিত হবে এবং প্রদর্শনীটি শেষ হওয়ার পরে শীর্ষ ১০ তরুণ উদ্ভাবককে বঙ্গবন্ধু উদ্ভাবনী অনুদান (বিআইজি) দিয়ে ভূষিত করা হবে। স্টার্টআপ জোনে নতুন উদ্যোক্তাদের এগিয়ে যাওয়ার প্রজেক্ট সম্পর্কে ধারণা পাবেন দর্শনার্থীরা। মেলার অন্যতম আকর্ষণ রোবোটিক জোন। এই জোনে শিক্ষার্থীদের তৈরি রোবটের পদচারণা রয়েছে।

সকাল ১০ টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এই প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।  ৫ লাখ দর্শনার্থী সরাসরি এবং ১০ লাখ ভিউয়ারস এই প্রদর্শনী অনলাইনে উপভোগ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। প্রদর্শনীর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর শাহজালাল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তৈরি রোবট 'লি'। ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপো ২০১৯ এর প্লাটিনাম স্পন্সর ওয়ালটন। গোল্ড স্পন্সর ফেয়ার ইলেকট্রনিক্স। যৌথভাবে সিলভার স্পন্সর সিম্ফনি এবং ডিবিবিএল। প্রদর্শনীর ফোরজি এলটিই পার্টনার বাংলালায়ন। এডিএন টেলিকম, বাংলাদেশ টেকনো সিটি লিমিটেড, ডাহুয়া, ডেল, এইচপি, হিকভিশন, ইউসিসি এক্সপোর পার্টনার। গেমিং পার্টনার গিগাবাইট। ই-কর্মাস পার্টনার প্রিয়শপ ডটকম।

দেশের ২১টি বিশ্ববিদ্যালয় ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপো ২০১৯ এর নলেজ পার্টনার। এক্সপোকে সফল করার জন্য বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্য), সিটিও ফোরাম, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব), বাংলাদেশ ওম্যান ইন টেকনোলজি (বিডব্লিউআইটি), ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) এবং বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরাম (বিআইজেএফ) সহযোগী সংগঠন হিসেবে কাজ করছে। 

শতভাগ পরিবেশ রক্ষা করেই সুন্দরবন এলাকায় উন্নয়ন হচ্ছে: সালমান এফ রহমান

অর্থনৈতিক রিপোর্টার: সুন্দরবন এলাকায় যত উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে শতভাগ পরিবেশ রক্ষা করেই করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। গতকাল সোনারগাঁও হোটেলে 'পাওয়ার প্যাক ইকোনমিক জোন প্রাইভেট লিমিটেড' এর বিনিয়োগ উন্নয়ন শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন তিনি। বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, বেজার নির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ আইয়ুব বক্তব্য রাখেন। পাওয়ারপ্যাক ইকনোমিক জোনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রনো হক শিকদার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
সুন্দরবনের কাছে এই অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে বিভিন্ন মহলের উদ্বেগ প্রসঙ্গে সালমান এফ রহমান বলেন, আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু ও পরিবেশ নিয়ে অত্যন্ত সচেতন এবং সতর্ক। সুন্দরবনের পাশে পরিবেশের ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে এই ধরনের প্রকল্প হাতে নেয়া হত না। সুন্দরবনের ক্ষতি করে কিছু করা হবে না। আপনারা নিশ্চিত থাকতে পারেন। তিনি বলেন, বিশ্বে ইকোনমিক জোনের অনেক মডেল রয়েছে। আমাদের এখানে করা হয়েছে কান্ট্রি স্পেসিফিক ইকোনমিক জোন। অভিনব আইডিয়া। চীনা ইকোনমিক জোন, জাপানিজ ইকোনমিক জোন, ভারতীয় ইকোনমিক জোন দেখে কোরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ অনেক দেশ বিনিয়োগ করতে আসছে। সালমান এফ রহমান বলেন, প্রথমে যখন ১০০ ইকোনমিক জোনের কথা বলা হয়েছিল তখন অনেকে বিশ্বাস করতে চায়নি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ১০০ যথেষ্ট নয়। আরো জোনের প্রয়োজন পড়বে। 
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কিন্তু বিসিক দিয়ে কাজটি শুরু করেছিলেন। সেইটার একটি বৃহৎ ভার্সন ইকোনমিক জোন। বিসিকে ছোট ছোট শিল্প থাকে এখানে বড় বড়গুলো থাকবে। সরকারের মধ্যম ও উন্নত রাষ্ট্রের লক্ষ্যমাত্রা এবং ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা রাখছে এসব শিল্প জোন। তিনি বলেন, এতদিন কী হতো? কোথাও রাস্তা নির্মাণ হলে তার পাশে গিয়ে আমরা জমি কিনতাম। এরপর ভরাট করে শিল্প স্থাপন করে গ্যাস বিদ্যুতের জন্য কান্নাকাটি শুরু করে দিতাম। ইকোনমিক জোনগুলো সেই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেবে বলে মন্তব্য করেন সালমান এফ রহমান। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যখন ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসে তখন ইকোনমিক জোন নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। এবার ক্ষমতায় এসে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, মোংলার ইকোনমিক জোনটি সুন্দরবনের কাছে। আমরা যেমন শিল্প চাই, তেমনি সুন্দরবন ও সুন্দরবনের জীব-বৈচিত্র্য রক্ষা করতে চাই। যারা এখানে বিনিয়োগ করতে চান তাদের অনুরোধ করব হলুদ কিংবা লাল ক্যাটাগরির কোনো শিল্প স্থাপনের প্রস্তাব দেবেন না।

বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, অন্যান্য দেশ অনেক আগে শুরু করেছে। আমরা বেসিক্যালি ২০১৫ সালে কাজ শুরু করেছি, লক্ষ্য ১০০ ইকোনমিক জোন। প্রথমে মিরসরাইতে ৫৫০ একর জমি দিয়ে যাত্রা শুরু করি। এখন সেখানে ৩০ হাজার একর জমি কনফার্ম হয়েছে। মহেশখালীতে ২৫ হাজার একর জমি নিশ্চিত করা হয়েছে। বেজা ইতিমধ্যে ৬০ হাজার একর জমির ব্যাংক তৈরি করেছে। এখন শুধুই এগিয়ে চলার সময়। এক সময় এটাকে অনেকে বিশ্বাস করতে চায়নি। এখন এটা বাস্তবতা বলে মন্তব্য করেন বেজা চেয়ারম্যান।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বেজার সঙ্গে পিপিপির আওতায় সিকদার গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান পাওয়ার প্যাক ইকোনমিক জোন প্রাইভেট লিমিটেড অঞ্চলটির উন্নয়ন করছে। মোংলা বন্দরের অদূরে ২০৫ একর জমি নিয়ে গঠিত এই জোনে সড়ক যোগাযোগ, পানি সরবরাহ, বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্র প্রশাসনিক ভবনের কাজ শেষ হয়েছে। ৪৪ শতাংশ প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অবশিষ্ট প্লট পুরোপুরি প্রস্তত রয়েছে। এখানে ২৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন পাওয়ার প্যাক ইকোনমিক জোনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রন হক সিকদার। অনুষ্ঠনে ৫টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ভূমি বরাদ্দ চুক্তি হয়, যার ৪টিই এনার্জিপ্যাকের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। এর বাইরে রয়েছে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড ইউনিলিভারের অন্যতম পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নাগা লিমিটেড। এছাড়া ন্যাশনাল ব্যাংক ও শিকদার ইন্স্যুরেন্সকে শাখা খোলার জন্য ছোট আকারের প্লট বরাদ্দ দেয়া হয় এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে।

যৌথ অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ ও রক্ষাণাবেক্ষণের জন্য দেশীয় প্রতিষ্ঠান শিকদার গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান পাওয়ারপ্যাক ইকনোমিক জোনকে নিয়োগ করে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ বেজা। প্রথম ধাপে ৫ কোম্পানির কাছে ভূমি বরাদ্দ উপলক্ষে বিনিয়োগ উন্নয়ন বা ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন শীর্ষক কর্মসূচি পালন করে বেজা ও পাওয়ারপ্যাক। 

Sunday, October 13, 2019

আইএফআইসি-সমকাল শিল্প পুরস্কার পেল তরুণ উদ্যোক্তা কাজী সাজেদুর রহমান

অর্থনৈতিক রিপোর্টার: দেশের অগ্রগতির প্রবহমান ধারাকে প্রণোদনা যোগাতে ৫ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করেছে আইএফআইসি ব্যাংক ও সমকাল। এর মধ্যে উদীয়মান তরুণ উদ্যোক্তা ও সেরা এসএমই উদ্যোগ পুরস্কার পেয়েছে কেপিসি ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী সাজেদুর রহমান। শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের কার্নিভাল হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কারের চেক, সনদ ও ক্রেস্ট তুলে দেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। 


এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ এ সারওয়ার। সভাপতিত্ব করেন সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি। পুরস্কার ঘোষণা করেন জুরি বোর্ডের সদস্য বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো নাজনীন আহমেদ।

প্রথমবারের মত ৫টি ক্যাটাগরিতে আইএফআইসি ব্যাংক-সমকাল শিল্প ও বাণিজ্য পুরস্কার-২০১৮ প্রদান করা হয়েছে। ৫ খাতে দেয়া পুরস্কারগুলো হচ্ছে- আজীবন সম্মাননা, বর্ষসেরা বৃহৎ শিল্প উদ্যোগ, বর্ষসেরা নারী উদ্যোক্তা, উদীয়মান তরুণ উদ্যোক্তা ও সেরা এসএমই উদ্যোগ। বৃহৎ শিল্প উদ্যোগ পুরস্কার পেয়েছে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ। কোম্পানির পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করেন ওয়ালটন গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক (বিপণন) হুমায়ুন কবির। নারী উদ্যোক্তা পুরস্কার পেয়েছেন সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার রামধানা গ্রামের মেসার্স আফিয়া খানম ফিশারিজের স্বত্বাধিকারী রুবা খানম। তরুণ উদ্যোক্তার পুরস্কার পেয়েছেন ফরচুন সুজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান। সেরা এসএমই উদ্যোগ পুরস্কার পেয়েছে কেপিসি ইন্ডাস্ট্রিজ। কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী সাজেদুর রহমান পুরস্কার গ্রহণ করেন।


অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সমকালের এ উদ্যোগ খুবই ইতিবাচক। এ পুরস্কার ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করবে। 

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, আইএফআইসি ব্যাংক সমকাল সময়োপযোগী উদ্যোগ নিয়েছে। ব্যবসায়ীদের অবদানে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তাদের সম্মাননা দেয়ায় আয়োজকদের ধন্যবাদ দেন তিনি। এ সময় চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য ব্যবসায়ীদের প্রস্তুতি নেয়ার আহবান জানান তিনি। 

আইএফআইসি ব্যাংকের এমডি শাহ এ সারওয়ার বলেন, আইএফআইসি ব্যাংক এখন ৭ লাখ গ্রাহককে সেবা দিচ্ছে। আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে এককোটি গ্রাহকের কাছে সেবা পৌঁছে দিতে টাই।                          

ওয়ালটন গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক হুমায়ুন কবির বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের সেরা ৫টি ব্র্যান্ডের অন্যতম হতে চায় ওয়ালটন। এ পুরস্কার তাদের উৎসাহিত করবে। 

কেপিসি ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী সাজেদুর রহমান বলেন, দেশের এসএমই উদ্যোক্তারা অনেক পরিশ্রম করে। এসএমই উদ্যোক্তাদের বিকশিত হওয়ার পথে নানা বাধা দূর করার আহ্বান জানান তিনি।