Sunday, February 2, 2014

লবণাক্ত জমিতে পাটের বিকল্প কেনাফ চাষ

খুলনা: খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লি¬নের অধীনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে কেনাফ চাষের উপযোগিতা শীর্ষক একটি গবেষণা প্রকল্প শুরু হয়েছিল ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে। তিন বছরব্যাপী প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয় বিগত ২০১৩ সালে। গবেষণা প্রকল্পের স্থান নির্ধারিত হয় খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলার দেবীতলা, ফুলতলা ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। 

গবেষণায় দেখা যায়, কেনাফ, পাটের বিকল্প শস্য হিসেবে দক্ষিণাঞ্চলে চাষ উপযোগী। পাটের আঁশের চেয়ে কেনাফ আঁশের গুণগত মান কিছুটা কম হলেও ফলন বেশি, চাষাবাদের খরচ কম, অত্যন্ত লবণ ও খরা সহিষ্ণু। যেখানে লবণাক্ততার জন্য পাট চাষ সম্ভব নয়, সেখানে অনায়াসেই কেনাফ চাষ সম্ভব।

গবেষণায় আরো দেখা যায়, বীজের অঙ্কুরোদগম ও গাছবৃদ্ধির সময় কেনাফ ১৮ থেকে ২০ ফংস-১ লবণ সহ্য করতে পারে। তবে অনাকাঙ্খিত বৃষ্টি হলে ২/৩ সপ্তাহ পর্যন্ত পানি জমে থাকে এমন মাটিতে কেনাফ চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। গবেষণাগারে সফলভাবে কেনাফ খড়ি এবং আঁশ থেকে কাগজের মন্ড ও কাগজ তৈরি করা হয়। কাগজের গুণগতমান পরীক্ষা করা হয় ঢাকার সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে। 

পরীক্ষায় কেনাফ থেকে তৈরি কাগজ উঁচু মানের প্রতীয়মান হয়। কেনাফ বীজ থেকে তেল আহরিত হয়। বীজে তেলের পরিমাণ ৭ শতাংশ পাওয়া যায়, তবে উন্নতমানের তেল আহরণ যন্ত্র ব্যবহার করলে ১৩ শতাংশ পর্যন্ত তেল পাওয়া সম্ভব। কেনাফ তেলে ক্যান্সার প্রতিরোধক রাসায়নিক দ্রব্যাদি পাওয়া গেছে বলে বিভিন্ন গবেষক দাবি করা হয়েছে।

গবেষণা প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হলেও মূখ্য গবেষক অধ্যাপক ড. মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, এ গবেষণা এখনো চলছে এবং ভবিষ্যতে আরো নিবিড়ভাবে এর গবেষণা করা হবে। বর্তমানে বিনা চাষে কেনাফ চাষের উপযোগীতা দেখা হচ্ছে এবং কেনাফ তেলের ক্যান্সার প্রতিরোধের গুণাবলী দেখার প্রয়াস চলছে।

মনিরুল বলেন, খুলনা ও বরিশাল উপকূলীয় এলাকায় আমন ধানই প্রধান ফসল। মধ্যবর্তী সময়ে হাজার হাজার একর জমি ফসল চাষ ছাড়াই পতিত থাকে। খুলনায় কিছু কিছু এলাকায় তিল চাষ হলেও বৃষ্টি, জলাবদ্ধতা বা খরার ঝুঁকি রয়েছে। সেক্ষেত্রে পাটের প্রায় সমমান ও পাটের চেয়ে আরও বহুমুখী কাজে ব্যবহারযোগ্য কেনাফ চাষ এ অঞ্চলে বিপুল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। 

তিনি জানান, কেনাফ দিয়ে নিউজপ্রিন্ট তৈরির প্রধান কাঁচামালের চাহিদা পূরণ করে খুলনা নিউজ প্রিন্ট মিলটি চালু করা সম্ভব। সুন্দরবনের গেওয়া গাছের ওপর নির্ভর হতে হবে না। কৃষি মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, পাট গবেষণা ইন্সটিটিউট ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এ ব্যাপারে যৌথভাবে উদ্যোগ নিতে পারে। বিদেশে কেনাফের আঁশের বিপুল চাহিদা রয়েছে। 
প্রাইভেট কার তৈরিসহ বিভিন্ন কাজে ইনটেরিয়র ইনসুলেটর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। জুটেক্স তৈরিও সম্ভব। তেলে রয়েছে মেডিসিন্যাল ভ্যালু। ইতোমধ্যে বিদেশে ইঁদুরের উপর এই তেল নিয়ে গবেষণা করে দেখা গেছে এটি ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক। ভারত, চীন থাইল্যান্ড, নাইজেরিয়া এবং রাশিয়ায় এর বিস্তৃতি ঘটছে।

কেনাফ চাষের এই গবেষণা প্রকল্পের সহযোগী গবেষক হচ্ছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লি¬নের প্রফেসর ড. মো. সারোয়ার জাহান এবং উপদেষ্টা সিনিয়র প্রফেসর ড. সঞ্জয় কুমার অধিকারী। 

খুলনা-বরিশাল উপকূলীয় অঞ্চলের লবণাক্ত ও খরা প্রবণ এলাকায় বাড়তি ফসল হিসেবে কৃষকরা কেনাফ চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। কেননা এর মাধ্যমে নিউজ প্রিন্ট মিলের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল পাওয়া যাবে। 

পাশাপাশি হার্ডবোর্ড মিলের কাঁচামাল, পশুখাদ্যের কাঁচামাল, তেল উৎপাদনসহ বিভিন্ন ইন্টেরিয়র কাজের ইনস্যুলেটর হিসেবে কেনাফ ব্যবহার করা যাবে। আর অফ সিজনে পতিত জমিতে কেনাফ চাষ করতে পারলে কৃষকের আয় বৃদ্ধি, শ্রমশক্তি ব্যবহার এবং সর্বোপরি পরিবেশের জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে নিয়ে আসবে। 

No comments:

Post a Comment