Sunday, June 14, 2020

বাজেট উৎসাহব্যঞ্জক হলেও বাস্তবায়ন অনেকটা কঠিন হবে: আইসিএবি

স্টাফ রিপোর্টার: জাতীয় সংসদে গত বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন। প্রস্তাবিত বাজেট আমাদের জিডিপির ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ। বাজেটে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে আট দশমিক দুই শতাংশ। উচ্চ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে প্রস্তাবিত বাজেট উৎসাহব্যঞ্জক হলেও বাস্তবায়ন অনেকটা কঠিন হবে প্রতীয়মান হচ্ছে; বিশেষত কভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারির এ সংকটময় সময়ে। গতকাল বাজেট উত্তর এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে আইসিএবির সভাপতি মো. ফারুক।

ভিডিও কনফারেন্সে ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, বৈশ্বিক মহামারির মধ্যে আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি মোকাবিলায় অভ্যন্তরীণ উৎসের ওপর নির্ভরতা বাড়ানোর কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী। ঘাটতি মোকাবিলায় অর্থমন্ত্রী ব্যাংক থেকে প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। বিগত অর্থবছরে ঘাটতি মোকাবিলায় ব্যাংক থেকে লক্ষ্যমাত্রার প্রায় দ্বিগুণ ঋণ নিতে হয়েছে সরকারকে। ফলে, অর্থবছর গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এ বৎসরের ঋণও লক্ষমাত্রা ছাড়াবে প্রতীয়মাণ হয়।

সরকারের ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীলতার কারণে প্রাইভেট সেক্টর বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে, সরকার এ অর্থ সঠিকভাবে উন্নয়ন খাতে ব্যয় করলে অর্থের সার্কুলেশনের মাধ্যমে প্রাইভেট সেক্টরে এ অর্থ ফিরে আসবে বলে আমরা মনে করি।

অর্থনীতিতে কভিড-১৯ এর প্রভাব প্রশমিত করা এবং বেকার জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে ব্যাপক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা প্রয়োজন। বাস্তবায়ন সক্ষমতা সাপেক্ষে ব্যাংকঋণে নির্ভরতাকে আমরা নেতিবাচক মনে করছি না।

ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা বৃদ্ধিসহ পাঁচ শতাংশ করের একটি নতুন স্লাব প্রবর্তন করার প্রস্তাব আমরা করে আসছি যা ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে গৃহীত হয়েছে যার ফলে প্রান্তিক করদাতাদের করভার কিছুটা হলেও লাঘব হবে বলে আশা করা যায়।

বর্তমানে পেশাজীবীদের আয় হতে উৎসে কর কর্তনের হার (১০%-১২%)। এটি হ্রাস না করে ধারা ৫২অঅ (১) এর আওতায় পেশাজীবীদের আয় হতে উৎসে কর্তিত করের পরিমাণকে ধারা ৮২ঈ-এর আওতায় চূড়ান্ত কর কর্তন হিসাবে বিবেচনা করার প্রস্তাব করা হয়েছে, যার অর্থ পেশাজীবীদের আয়ের মার্জিন মোট প্রাপ্তির ৩৭ শতাংশ; যা অবাস্তব প্রতীয়মান হয়। পেশাজীবীদের আয়ের মার্জিন কখনোই এত উচ্চ হারে হয় না। সুতরাং আমরা বিদ্যমান ১০-১২ শতাংশের পরিবর্তে আট শতাংশে হ্রাস করার প্রস্তাব করছি।

এছাড়াও স্থানীয় উৎপাদনমুখী শিল্পের সহায়তার জন্য আমদানি পর্যায়ে কাঁচামালের ওপর আগাম কর পাঁচ শতাংশ হতে চার শতাংশ হ্রাস করাসহ মূসক রেয়াত গ্রহণের সময়সীমা দুই কর মেয়াদ হতে চার কর মেয়াদ পর্যন্ত বৃদ্ধি করার প্রস্তাব ব্যবসাবান্ধব হয়েছে বলে মনে করি। তবে ক্রয়কৃত বা আমদানিকৃত মালামাল চার মেয়াদের মধ্যে ব্যবহারের শর্ত জটিলতা তৈরি করার সম্ভাবনা রয়েছে বিধায় এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান বিধান বলবত রাখা উচিত।

চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের ভূমিকা: চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টরা সরকারের রাজস্ব আহরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টরা কর পরিকল্পনা করার ক্ষেত্রে, কর পরামর্শক হিসেবে, কর আইনের সঠিক প্রতিপালন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে করদাতা ও সরকারকে সহায়তা করে থাকে। সর্বোপরি রাজস্ব আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

আয়কর আইন এবং মূসক ও এসডি আইন ২০১২-এর প্রয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণের জন্য আইসিএবি কতিপয় প্রস্তাবনা পুনর্বিবেচনা করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে।

সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি জন্য আয়কর আইন এবং মূসক ও এসডি আইন ২০১২ প্রয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণের বিষয়ে আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর ১৭৪(২)(ই) ধারার অধীনে অনুমোদিত প্রতিনিধি এবং মূসক ও এসডি আইন ২০১২-এর ১৩০(১) ধারায় মূসক পরামর্শক হিসেবে অনুশীলনকারী পেশাজীবীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার প্রস্তাব করছি। আয়কর এবং মূসক সংক্রান্ত সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে অনুমোদিত প্রতিনিধি হিসেবে অনুশীলনকারী পেশাজীবীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে মনে করছি।

No comments:

Post a Comment