Saturday, June 13, 2020

বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট দিয়েছি: অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার: নতুন ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বলেন, আশা করি এ বাজেট আমরা যেভাবে সাজিয়েছি, সেভাবে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবো। আমাদের প্রত্যাশা হলো করোনা ভাইনাস বেশিদিন প্রলম্বিত হবে না। আমরা বিশ্বাস করি, ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট আমরা বাস্তবায়ন করতে পারব। এজন্য বাজেটটি আমরা দিয়েছি। 

শুক্রবার বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এই প্রথম অর্থমন্ত্রী অনলাইনে বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন করেন। গুলশানের বাসা থেকে মন্ত্রী ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত হন। গণমাধ্যমকর্মীরা অনলাইনে তাকে প্রশ্ন করেন। প্রথা অনুযায়ী বাজেট পেশের পরের দিন অর্থমন্ত্রী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। তবে এবার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন করলেন। 

সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী বলেন, এটি স্বাভাবিক সময়ের বাজেট নয়। তবে তা গতানুগতির ধারার বাজেট নয়। ডাটা ছিল না, তথ্য-উপাত্ত ছিল না। নির্ভর করতে হয়েছে অতীতের ওপর। মানুষ কী স্বপ্ন দেখে, তাদের প্রত্যয়, সেগুলো মূল্যায়ন করেছি। দাতাগোষ্ঠী, ইকোনমিক থিংক ট্যাকং, দেশীয় ও বিদেশি থিংক ট্যাংক, সবার মতামত নিয়ে বাজেট করেছি। স্বাভাবিক পথ ছিল রুদ্ধ, ভিন্ন পথে করতে হয়েছে। সে কারণে দেখবেন অসঙ্গতি মনে হতে পারে অনেকের কাছে। কিন্তু এছাড়া উপায় ছিল না। 

মন্ত্রী বলেন, এবারের বাজেট আমরা স্বাভাবিক নিয়মে করতে পারিনি। অতীত অর্জন ছিল ভিত্তি। ১০ বছরে সারাবিশ্বে সবার ওপর জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৮.২ শতাংশ। গত ৫ বছরে মাথাপিছু আয় সারাবিশ্বে সেরা। ভারত ও চীন সমান ছিল। এসব অর্জন বিবেচনায় নিয়েছি। তিনি বলেন, সারাবিশ্ব আমাদের নিয়ে কী ভাবছে, তা বিবেচনায় নিয়েছি। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, আইএমএফ- সবার মতামত নিয়ে বাজেট সাজিয়েছি। যেভাবে সাজিয়েছি, মনে করছি, বান্তবায়ন করতে সক্ষম হবো।

বিশাল বাজেট করার ব্যাখ্যা দিয়ে মুস্তফা কামাল বলেন, বাজেট না থাকলে কোনো অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে নেয়া যায় না। এখন আমাদের দেশের মানুষ মারা যাচ্ছে, অনেকে না খেয়ে কষ্ট পাবে, যারা চাকরি হারিয়েছেন তারা কষ্ট পাবে, যারা রিকশা শ্রমিক তারা কষ্ট পাবেন, এসব মানুষের কষ্ট দূর করার জন্য প্রধানমন্ত্রী কোনো সময় নষ্ট না করে দ্রুত ছুটে আসলেন। আমাদের নির্দেশনা দিলেন। সেই নির্দেশনা মেনে আমরা যেন সবাইকে সহযোগিতা করি। সেই কাজটি আমরা করে যাচ্ছি।

প্রস্তাবিত বাজেটে দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ৮.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী। এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭.৮ শতাংশ। অর্জন হয়েছে তার চেয়ে বেশি। আশা করি এবারও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। মহামারি করোনার সংকটময় পরিস্থিতি এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে মানুষের জীবন-জীবিকার কথা চিন্তায় রেখে এবারের বাজেটের শিরোনাম রাখা হয়েছে ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ: ভবিষ্যৎ পথ পরিক্রমা’। 

মুস্তফা কামাল বলেন, স্বাস্থ্যখাতের পরই আমরা কৃষিতে আগামী অর্থবছরে সবোর্চ্চ নজর দেবো। তিনি বলেন, রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে সেটি কষ্টসাধ্য হলেও আদায় সম্ভব।

এবারের বাজেটকে মানুষ রক্ষার বাজেট হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বলেন, টাকা কোথা থেকে আসবে সেটা ভাবিনি। আগে মানুষ বাঁচাতে হবে, খাবার দিতে হবে, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। এবার আগে খরচ করবো, তারপর আয়ের চিন্তা করা হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষকে বাঁচাতে হবে। এটি করতে প্রয়োজনে মানুষের ঘরে ঘরে যাবো। তাদের কাছে সহযোগিতা চাইবো। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, দেশের এই ক্লান্তিকালে ব্যবসায়ীদের দায়-দ্বায়িত্ব আছে। ব্যবসায়ীদের কাছে অনুরোধ মানুষকে বাঁচাতে আপনারা এগিয়ে আসেন।

এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকের কাছে অনেক টাকা থাকতে হবে, তা নট নেসেসারি (প্রয়োজনীয় নয়) বলে মন্তব্য করেছেন মুস্তফা কামাল। আমি দায়িত্ব নেয়ার আগে ব্যাংকিং খাত দেখেছি। আমার আগে ব্যাংকের নন-পারফরমিং লোনের পরিমাণ বেশি ছিল। সে কারণে ব্যাংকগুলো মাঝে মধ্যে লক্ষ্য করতাম, তাদের লিকুইডিটির অবস্থা একটু খারাপ হয়ে যেত। ইদানিং কোনো ব্যাংকের লিকুইডিটি খারাপ, এ কথা শুনিনি। এখন কেউ বলতে পারবে না, ব্যাংকে গিয়ে টাকা পাইনি, ফিরে আসছে। 

অর্থমন্ত্রী বলেন, এ যাত্রায় দেশের সব মানুষের সহযোগিতা চাই। সাংবাদিক, অর্থনীতিবিদ, সবাইকে বলতে চাই, সবার দায়িত্ব আছে। আল্লাহ বলেছেন, আমি একজন নারী ও একজন পুরুষ থেকে মানুষ তৈরি করেছি। ছোট গোত্রে বিভক্ত করেছি যাতে একে অন্যকে চিনতে পারো। দেশের মানুষের দায়িত্ব অন্যদের রক্ষা করা। যে যার জায়গা থেকে সাহায্যের হাত সম্প্রসারণ করবেন এটি চাই। সবার পাশে দাঁড়িয়ে করোনা মোকাবিলা করতে হবে। অন্ধকার মোকাবিলা করে আসুন আলোর পথের যাত্রী হয়।

অর্থমন্ত্রী বলেন, মানুষকে খাবার দিতে হবে। গ্রামীণ অবকাঠামো ঠিক করতে হবে। অর্থ যা-ই লাগবে, ব্যবস্থা করতে হবে। আয়ের জন্য অপেক্ষা না করেই খরচ করেছি।

মুস্তফা কামাল বলেন, রাজস্ব আহরণের বিষয়ে সবাই প্রশ্ন করছেন। এ বিষয়ে আমার বক্তব্য হলো- জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অটোমেশনের যন্ত্রপাতি আনতে শুরু করেছিলাম। অটোমেশন করতে পারলে আমাদের কর আদায়ের টাকা রাখার জায়গা পেতাম না। 

সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেছেন, বর্তমানে কলরেট অনেক কম তাই অপ্রয়োজনীয় কথা বলার প্রবণতা বেড়ে গেছে। তবে কথা বলার প্রবণতা কমানোর জন্য কলরেটে আরো ৫ শতংশ শুল্ক বসানো হয়নি। বরং কলরেট কম তাই মাত্র ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। যা ব্যয়ের সক্ষমতা মানুষের আছে। তিনি বলেন, আমাদের একটা সমস্যা হচ্ছে কত শতাংশ বাড়ানো হলে সেটা বিবেচনা না করেই এর বিরোধিতা করা হয়। এক্ষেত্রে মাত্র ৫ শতাংশ শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। এটাতে মানুষের তেমন ক্ষতি হবে না। তিনি বলেন, বর্তমানে মোবাইল কলরেটের হার এত কম যে অপ্রয়োজনীয় কথা বলার পরিমাণ বেড়ে গেছে। এতে করে কথা বলতে বলতে ট্রেনের সঙ্গে অ্যাকসিডেন্ট করার ঘটনাও আছে। তবে আমরা কথা বেশি বলাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এ শুল্ক বাড়াইনি। বরং কলরেট খুব কম। তাই এক্ষেত্রে মাত্র ৫ শতাংশ শুল্ক বাড়ানো হয়েছে।

বাজেট উত্তর সংবাদ সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বিনা সুদে কৃষকদের বীজ সহায়তা দেয়া হবে। সারসহ অনান্য কৃষি পণ্য দিয়ে সহযোগিতা করবো। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অর্থের যোগান দেয়া আছে। অর্থের যথেষ্ট প্রণোদনা দেয়া আছে। 

এর আগে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে দেশের ৫০তম বাজেট ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজটের সম্ভাব্য আকার ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা।

No comments:

Post a Comment