স্টাফ রিপোর্টার: দেশব্যাপী মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে গত ২৬শে মার্চ থেকে দেশব্যাপী শুরু হয় অঘোষিত লকডাউন। এই লকডাউনের প্রথম ৬৬ দিনে (২৬ মার্চ - ৩ শে মে) ৩ কোটি ৬০ লাখ মানুষ কর্মসংস্থান হারিয়েছেন। এ সময় দেশে মোট ৬ কোটি ১ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান ছিল। এতে দেশের জিডিপির ২ লাখ ৯৮ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ড. আবুল বারকাত। এছাড়া করোনা পরিস্থিতি উত্তরণে আগামী বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে ৪০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমিতি। পাশাপাশি প্রায় ১৪ লাখ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব করে সংগঠনটি।
সোমবার ‘করোনার মহাবিপর্যয় থেকে মুক্তি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ বিনির্মাণে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা’ শীর্ষক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান তিনি। সমিতির সহ-সভাপতি জেড এম সালেহর সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক জামালউদ্দিন আহমেদ।
পরিসংখ্যান তুলে ধরে ড. বারকাত বলেন, লকডাউনে সেবা খাতে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৬ কোটি, শিল্প খাতের ১ লাখ ২ হাজার ৪১ কোটি এবং কৃষি খাতে ২৬ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ সময় প্রত্যাশিত জিডিপির পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৫৮ হাজার ২৬ কোটি টাকা। যার অর্জিত হয়েছে ৩৫ শতাংশ। আর লস হয়েছে ৬৫ শতাংশ।
করোনার কারণে সেবা খাতে চাকরি হারিয়েছেন ১ কোটি ৫৩ লাখ, শিল্প খাতের ৯৩ লাখ এবং কৃষি খাতের ১ কোটি ১৪ লাখ মানুষ কাজ হারিয়েছেন। অন্যদিকে উচ্চ মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের মধ্যে থেকে ৫ কোটি ৯৫ লাখ মানুষের আয় কমে দরিদ্র হয়ে গেছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে নিন্মআয়ের ৪৭ শতাংশ মানুষের জন্য এককালীন ২০ হাজার টাকা করে অনুদান দিতে হবে।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, দারিদ্র্য বিমোচন নিয়ে অতীতে যেসব কথাবর্তা হয়েছে, সেসব ভুলে যান। বাংলাদেশে ২৬শে মার্চের আগের অবস্থা নেই। লকডাউনের ৬৬ দিনে ঘটনা ঘটেছে মারাত্মক। সামনে এটা আরো বাড়তে থাকবে।
তিনি বলেন, গিনি সহগ (অর্থনীতিশাস্ত্রে আয়ের বৈষম্য পরিমাপের বহুল ব্যবহৃত পরিমাপক) যদি ০.৫-এর বেশি হয় সেটা মারাত্মক। আর একটা সহগ আছে পালমা। পালমা সহগ দেখা হয়- সর্বোচ্চ আয় যে ১০ শতাংশ আছে এবং সর্বনিম্ন আয় যে ৪০ শতাংশের আছে, এই দুইয়ের মধ্যে যে পার্থক্য। এই পার্থক্য যদি ৩ গুণ হয় তাহলে বিপজ্জনক।
লকডাউনের আগে আমাদের গিনি সহগ ছিল ০.৪৮, এটি মে মাসের শেষে ০.৬৩৫ হয়েছে। বিপদ মাপার রেশিও পালমা আমাদের ছিল ২.৯২, এখন ৭.৫৩। অতএব মহাবিপজ্জনক। বাংলাদেশ এখন উচ্চ আয় বৈষ্যমের দেশ এবং বিপজ্জনক আয় বৈষ্যমের দেশে পরিণত হয়েছে বলে জানান আবুল বারকাত।
তিনি বলেন, আয় বৈষ্যম ও সম্পদ বৈষ্যম নিরসনের যত পথ পদ্ধতি আছে তার সবগুলো ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।
২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট হবে করোনা মোকাবিলার উল্লেখ করে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি সভাপতি বলেন, গ্রাম পর্যায়সহ দেশের ৮২ ভাগ মানুষের কাছে করোনার সেবা পৌঁছায়নি। দায়সারা কাজ হয়েছে। এই মুহূর্তের জন্য প্রয়োজন ছিল শক্তিশালী স্বাস্থ্য সেবা। কিন্তু আমাদের স্বাস্থ্য সেবা অত্যন্ত নাজুক। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে স্বাস্থ্য খাতের জন্য আগামী বাজেটে ৪০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দরকার বলে মনে করেন তিনি।
ড. বারকাত বলেন, করোনায় বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশের মানুষের জীবন ও জীবিকাকে ব্যাহত করেছে। কর্মহীনতা ও দারিদ্রতা বেড়েছে। তাই আগামী বছরের বাজেট হবে করোনা থেকে মুক্তির বছর। দেশের আয় ও সম্পদ বৈষম্য দূর করতে হবে।
আইএমএফের মতে করোনায় পৃথিবীর ৫০ ভাগ মানুষ জীবিকা হারানোর ঝুঁকিতে পড়বে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরের সংকোচনমূলক বাজেট চাই না, চাই সম্প্রসারণমূলক বাজেট। আগামী ৫ বছরের বাজেটেও সমাজ থেকে আয়, সমাজ, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা বৈষম্য দূর করতে হবে বলেওে মনে করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে বিকল্প বাজেট প্রস্তাবে ড. আবুল বারকাত ১৩ লাখ ৯৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকার সম্প্রসারণমূলক বিকল্প বাজেট ঘোষণা দেন। যা অর্থমন্ত্রণালয়ের বর্তমান বাজেটের ৫ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা বেশি। শতাংশের হিসেবে যা ২.৪৭ শতাংশ বেশি। বিশাল আকারের এ বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা।
বাজেটে আয়ের খাত হিসেবে আবুল বারকাত বলেন, রাজস্ব খাত থেকে ১২ লাখ ৬১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আহরণ। যা মূল বাজেটের প্রায় ৯১ শতাংশ। বাকি ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকার যে ঘাটতি থাকবে তা বাস্তবায়নে বন্ড বাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে ৪০ হাজার টাকা, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপ এর মাধ্যমে ২৫ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করাসহ মোট ২১টি নতুন খাতের প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। বাজেটের ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক ঋণ এবং ব্যাংক থেকে কোন ধরনের ঋণ না নেয়ার জন্য বলেন তিনি
No comments:
Post a Comment