স্টাফ রিপোর্টার: অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে লোকাল প্যাকেজিং ও মুদ্রণ শিল্পের কাঁচামালের ওপর আমদানি শুল্ক প্লাস্টিক প্যাকেজিংয়ের ন্যায় ৫ শতাংশ করাসহ ৪ দফা দাবি জানিয়েছে স্থানীয় কার্টন উৎপাদনকারী উদ্যোক্তারা। সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয়, এনবিআর ও এফবিসিসিআই সভাপতির কাছে দেয়া এক চিঠিতে এ দাবি জানান বাংলাদেশ লোকাল কার্টন ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশনের (বিএলসিএমএ) সভাপতি এম এ বাসার পাটওয়ারী। একই দাবি জানিয়েছে আরো ৫ সংগঠন সেগুলো হলো- বাংলাদেশ মূদ্রণ শিলপ সমিতি, দি বাংলাদেশ পেপার মার্চেন্ট এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ পেপার ইমপোটার্স এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ পাঠ্যপুস্তক মূদ্রক ও বিপণন সমিতি এবং চটগাম কাগজ ও সেলোফিন ব্যবসায়ী গ্ৰুপ।
সংগঠনটি জানায়, দেশের স্থানীয় কার্টন উৎপাদন শিল্পের আওতাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং শ্রমঘন প্রতিষ্ঠান। এই শিল্পে প্রায় ২০ লাখ মানুষ ওতোপ্রতভাবে জরিত। এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পে বরাবরই সরকার কর্তৃক প্রণীত আইনগুলো এ খাতের জন্য বৈরী অবস্থা সৃষ্টি করে আসছে। অবশ্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রতি সরকারের যথেষ্ট গুরুত্ব আছে। তাই এ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাঁচানোর জন্য আসন্ন বাজেটে ৪টি মৌলিক দাবি বিবেচনায় নেবে বলে আশা করছে বিএলসিএমএ।
এইচএস কোডগুলো হলো- ডুপ্লেক্স বোর্ড, আর্ট কার্ড ও পেপারের কোড যথাক্রমে ৪৮১০.৯২.০০; ৪৮১০.৯৯.০০ ও ৪৮১০২৯.০০। এছাড়া ক্রাফট লাইনার পেপার কোড- ৪৮০৪.১১.০০।
চিঠিতে উল্লেখ করা ৪ দফা দাবিগুলো হলো-
১। দেশে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত প্যাকেজিং কাঁচামাল আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন না হওয়ায় আমাদের পেপার অ্যান্ড পেপার বোর্ড, লাইনার ও মিডিয়াম পেপার আমদানি করতে হয় এবং (সিডি) আমদানি শুল্ক পরিশোধ করতে হয়, যা আমাদের বাজারে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে পণ্য উৎপাদন করতে বাধাগ্রস্ত করছে। পক্ষান্তরে আমাদের বন্ডেড সুবিধা না থাকলেও প্রতিযোগিতামূলক বাজারে আন্তর্জাতিক মানের কাগজ ব্যবহার করে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত রপ্তানি পণ্যের কার্টন/মোড়ক উৎপাদন করতে হয়। তাই প্যাকেজিং কাঁচামালের ওপরে আমদানি শুল্ক প্লাস্টিক প্যাকেজিংয়ের ন্যায় ৫% করার জন্য অনুরোধ জানায় সংগঠনটি। এছাড়া দেশীয় পেপার মিলে উৎপাদিত প্যাকেজিংয়ের কাঁচামাল অর্থাৎ প্যাকেজিং পেপারে ভ্যাট ১৫% করার সুপারিশ করেছে বিএলসিএমএ। এর ফলে বাণিজ্যিক আমদানি কয়েকগুন বাড়ার পাশিপাশি সরকারের হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া প্যাকেজিংয়ের শুল্ক ৫% আরোপিত হলে বন্ড সুবিধার অপ ব্যবহার অনেকাংশে হ্রাস পাবে।
২। যেহেতু আমরা ১৫% বা আদর্শ হারে ভ্যাট প্রদান করি, তাই আমাদের উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামালের ওপর ভ্যাট ১৫% হওয়াই বাঞ্চনীয়। কাচামাল ক্রয়ে যেহেতু আমরা নিট মূল্যের ওপর ভ্যাট প্রদান করি। কাগজ শিল্পের কাঁচামাল আমদানিকৃত ও বাজার হতে সংগৃহীত ওয়েস্ট পেপারের ওপর ভ্যাট আরোপ করে রেয়াতি সুবিধা দিয়ে ৫-৭.৫% এর পরিবর্তে প্যাকেজিং পেপারে ভ্যাট ১৫% করার অনুরোধ জানায় সংগঠনটি। আদর্শ হার ব্যতীত ভ্যাটের ক্ষেত্রে ভিডিএস কর্তন এর বিধান রাখা হয়েছে বর্তমান আইনে। ভ্যাট প্রদানকারী এবং আদায়কারী উভয়ই যদি ভিডিএস কর্তনকারী সত্তা হয়। তবে এই আইন উভয় কর্তনকারীর ক্ষেত্রে রহিত করার প্রস্তাব করা হয়। ক্ষুদ্র মাঝারি প্রতিষ্ঠানের জন্য এই আইন প্রতিপালন খুবই সমস্যাজনক। এক্ষেত্রে প্রিটিং ও প্যাকেজিং শিল্পে উৎসে আয়কর কর্তন না করার সুপারিশ সংগঠনটির।
৩। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর ধারা ৫২ সংশোধন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে রহিত করা হয়, যার ফলে আমাদের প্রতিষ্ঠানে সমুদেয় নিট আয় হতে অনেক বেশি পরিমাণ টাকা উৎসে আয়কর হিসাবে কর্তিত হয়ে যায়। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে আমাদের নিট আয় ৪-৫% এর বেশি নয়। এক্ষেত্রে (২-৫)% উৎসে কর্তন আমাদের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়। যে সব প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিক আমদানি করে তারা ৫% অগ্রীম আয়কর প্রদান করে। তাই উৎসে আয়কর কর্তন তাদের জন্য ডাবল ট্যাক্সেশন হয়ে যায়। এই আদেশটি প্রিন্টিং ও প্যাকেজিং প্রতিষ্ঠানের জন্য বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে একটি নির্দেশনা প্রয়োজন। আমাদের প্রতিষ্ঠান সমুহের জন্য উৎসে আয়কর কর্তন বাতিল করার বিশেষ অনুরোধ করছি।
৪। কমবেশি ৭০টি কাগজকল লোকাল প্যাকেজিং শিল্পের প্যাকেজিং পেপার উৎপাদন ও সরবরাহ করছে। বসুন্ধরা পেপার মিল, ইউনুস পেপার মিল, বাংলাদেশ পেপার মিল, তানভীর পেপার মিলসহ ৭/৮টি পেপার মিল ভ্যাট দিয়ে কাগজ বিক্রি করে আসছে। বাকি প্রায় ৮০% কাগজকল ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে কাগজ বিক্রি করে আসছে। যাহা গত অর্থবছরের কাগজ কল ও লোকাল প্যাকেজিং হইতে অর্জিত রাজস্বের সঙ্গে তুলনা করলেই ভ্যাট ট্যাক্স ফাঁকির বিশাল অঙ্ক বেরিয়ে আসবে। কাগজকলের ১৫% ভ্যাটের পরিবর্তে ৫% ভ্যাট, আমদানি সুবিধা বঞ্চিত হওয়া এবং ভ্যাট ফাঁকির কারণে লোকাল প্যাকেজিং শিল্পের রেয়াত সুবিধা মাইনাসের কোঠায়। রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে লোকাল প্যাকেজিং শিল্পের ন্যায্য রেয়াত সুবিধা পুনর্বহালের লক্ষ্যে প্যাকেজিং পেপারের ওপর ভ্যাট ফাঁকি বন্ধের জোর সুপারিশ জানায় সংগঠনটি।
No comments:
Post a Comment