আমাদের দেশের বেশিরভাগ তরুণের কাছে বাইক বা মোটরসাইকেল একটা স্বপ্নের নাম। একটা বয়সের তরুণেরা যেমন স্বপ্ন দেখে একজন সুন্দরী সঙ্গীর, তেমনি স্বপ্ন দেখে বাইকের। স্বপ্নের বাইক হাতে আসলে তখন নতুন বাইকের রুলস মেনে চলার ব্যাপারটা বাইক পাওয়ার আনন্দে মাথা থেকে বের হয়ে যায়। যেমন ব্রেক-ইন-পিরিয়ড না মেনে ইচ্ছে মতো চালাতে থাকলে প্রিয়জনের মুখে হাসি ফুটবে ঠিকই, কিন্তু এই প্রিয় বাইকটা আর বাইক থাকবে না, বারোটা বেজে যাবে ইঞ্জিনের। আচ্ছা নিয়ম জানার আগে তবে জেনে নেয়া যাক ব্রেক-ইন-পিরিয়ডটা আসলে কি?
ব্রেক-ইন-পিরিয়ড কি?
এটা হচ্ছে সেই সময় যখন ইঞ্জিন একেবারে নতুন থাকে, বিশেষত প্রথম কয়েকশো বা হাজার (০-১০০০) কিমি। এ সময়টাতে ইঞ্জিনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ যেমন পিস্টন রিং, ভাল্ব ও সিলিন্ডার বোর খসখসে থাকে, যেটা যথাযথ প্রক্রিয়ায় দূর করতে হয়। সেজন্য বাইকারকে এ সময়ে বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়, যাতে ইঞ্জিনের ওই যন্ত্রাংশগুলো মসৃণ হয় এবং বাইক যথাযথ মাইলেজ ও সার্ভিস দিতে পারে।
ধৈর্যশীল হতে হবে
সাধারণত নতুন বাইক কিনেই আমরা খুব উত্তেজিত হয়ে পড়ি। কিন্তু যেহেতু প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় আমাদের দেশে বাইকের দাম বেশি এবং বাইকটি থেকে আমরা ভালো মাইলেজ ও দীর্ঘ স্থায়িত্ব প্রত্যাশা করি, সেজন্য ব্রেক-ইন-পিরিয়ড পার না হওয়া পর্যন্ত ধৈর্যশীল হতে হবে। আবেগের বশে বাইক চালালে হবে না। বরং নিয়ম মেনে চালতে হবে। তা না হলে অতি ভালোবাসার বাইকটির ইঞ্জিন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আসুন এবার জেনে নেয়া যাক কিভাবে ব্রেক-ইন-পিরিয়ড মানবেন!!
১. কেউ চাইলে দুই ভাগে ব্রেক-ইন-পিরিয়ড পার করতে পারেন। প্রথমে ০ থেকে ৫০০ কিমি ও পরে ৫০১ থেকে ১০০০ কিমি।
২. ব্রেক-ইন-পিরিয়ডের সময় উচ্চ আরপিএম-এ ইঞ্জিন চালু করবেন না।
৩. ইঞ্জিন চালু করে কমপক্ষে ১ মিনিট অপেক্ষা করুন।
৪. যত দ্রুত সম্ভব (৩০০-৪০০ কিমি) প্রথমবার ইঞ্জিন ওয়েল (মবিল) পরিবর্তন করুন। ওয়েল ফিল্টারও পাল্টিয়ে ফেলুন। এটা পাল্টানো তেমন কঠিন কিছু না। দ্বিতীয়বার ১০০০ কিমি চালিয়ে ইঞ্জিন ওয়েল ও ওয়েল ফিল্টার পাল্টিয়ে ফেলুন। তবে সার্ভিস সেন্টারের ইঞ্জিনিয়ার প্রথমবার এত দ্রুত ইঞ্জিন ওয়েল ও ফিল্টার পাল্টানোর ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করতে পারে। একটা সার্ভিস সেন্টারে এটা দেখা গেছে। কিন্তু বিশ্বাস করুন, ভারতের সার্ভিস সেন্টারগুলোতে এটাই করা হয়।
৫. ব্রেক-ইন-পিরিয়ডের প্রথম ৫০০ কিমি চালানোর সময় কোনো গিয়ারেই ৪৫০০ আরপিএম অতিক্রম করা ঠিক হবে না। তাছাড়া উচ্চ গিয়ারে কম আরপিএম-এও চালাবেন না। যেমন; ৫ম গিয়ারে ২০০০ আরপিএম। এতে ইঞ্জিনের উপর বেশি চাপ পড়ে।
৬. ব্রেক-ইন-পিরিয়ডের সময় হাইওয়েতে দূর পাল্লার ভ্রমণে বের হবেন না।
৭. অধিক ওজন (পিলিয়ন) নিয়ে বাইক চালাবেন না, চেষ্টা করুন একাই চড়ার।
৮. ব্রেক-ইন-পিরিয়ডের দ্বিতীয়ার্ধে অর্থাৎ ৫০০-১০০০ কিমি-এ অনেক বাইক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান (ইয়ামাহা) বলতে পারে ৬০০০ আরপিএমে চালালেও সমস্যা নেই। কিন্তু তার পরও ৪৫০০ আরপিএম অতিক্রম না করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। তাছাড়া বেশিক্ষণ একই আরপিএমেও বাইক চালানো ঠিক হবে না।
৯. একটানা ৩০ মিনিট বা ৩০ কিমি চালানোর পর কিছুক্ষণ থামা উচিৎ। এতে বাইকের ইঞ্জিন ঠাণ্ডা হওয়ার সময় পাবে।
১০. ব্রেক-ইন-পিরিয়ডে খুব বেশি অ্যাক্সিলারেশন তোলা ঠিক নয়।
১১. ব্রেক-ইন-পিরিয়ডে ইঞ্জিন ওয়েল পরিবর্তন করতে শুধু খনিজ ইঞ্জিন ওয়েল ব্যবহার করুন। সিনথেটিক ইঞ্জিন ওয়েল এ সময়ে পরিহার করে চলুন।
১২. ব্রেক-ইন-পিরিয়ড শেষে বাইকের সর্বোচ্চ আরপিএম তোলা উচিৎ।
ব্রেক-ইন-পিরিয়ড না মানলে কি হবে?
১. পারফরম্যান্স কমে যাবে।
২. ইঞ্জিনের দীর্ঘস্থায়ীত্ব কমে যাবে।
৩. মাইলেজ কমে যাবে।
৪. টপ ইস্পিড ভালো পাবেন না।
পরিশেষে বলা যায়; একটি মোটরবাইক কিনে নেওয়াই সব না। কিনে সঠিকভাবে পরিচালনা করাটাই আসল। না হলে মোটরবাইক থেকে ভালো সার্ভিস আশা করাটা বোকামী। আজকাল আমাদের সমাজে দেখা যায় ব্রেক-ইন-পিরিয়ড মেনে চলানোটা অসম্ভব। অসম্ভব এ জন্যই হয়েছে কারণ অনেকে আলসামো করে এসব মানতে চায় না। আবার অনেকে স্বপ্নের বাইক নিয়েই গতির খেলা শুরু করে দেয়। স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হলেই সব শেষ না। স্বপ্নটা বাস্তবে পরিণত হওয়ার পরেও লালন পালনের ব্যবস্থা করতে হয়। মোটরবাইকের ব্রেক-ইন-পিরিয়ড প্রক্রিয়াটাও ঠিক তেমন। সহযাত্রী নিয়ে শুরুর দিক থেকেই চলা আর গতির মেলায় মেতে উঠলে বাইকের দীর্ঘস্থায়ীত্ব কমে যাবে এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।
তাই আমরা চেষ্টা করবো যথাযথ ব্রেক-ইন-পিরিয়ড মেনে বাইক চালাতে। ধন্যবাদ।
No comments:
Post a Comment