Monday, September 2, 2019

বাংলাদেশের সুপারস্টার ৫ ভাইয়ের গল্প

সূত্র প্রথম আলো: গল্পটা তখনকার, যখন ঘরে ঘরে ৬০ ওয়াটের টিমটিমে বাল্ব জ্বলত। ঘণ্টায় ঘণ্টায় বিদ্যুৎ যেত আর সেই গতিতেই কেটে যেত বাল্ব, বাল্বের ব্যবসাও ছিল রমরমা। নারায়ণগঞ্জের মোহাম্মদ ইব্রাহীম তখন একজন পাইকারি ব্যবসায়ী ছিলেন। এর ২৫ বছর পর তাঁর গল্পটা হয়ে উঠল অন্য রকম। 

৬০ ওয়াটের বাতিকে হটিয়ে বাজার এখন এলইডি বাতির। ৩০ শতাংশ এলইডি বাতি তৈরি করে একটি প্রতিষ্ঠান, নাম সুপারস্টার গ্রুপ, সে গ্রুপেরই ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহীম। শুধু বাতি তৈরি নয়, ইব্রাহীম সত্যিকার অর্থেই বিস্তার করেছেন তাঁর সাম্রাজ্য। সুইচ, সকেট থেকে শুরু করে এমন সব পণ্যই সুপারস্টার গ্রুপ তৈরি করে, যা একটি বাতি জ্বালাতে লাগে। 

১৯৯৪ সালে বাতির দুনিয়া শাসনের স্বপ্ন নিয়েই যাত্রা শুরু করেছিলেন মোহাম্মদ ইব্রাহীম। তাই একজন শুভাকাঙ্ক্ষী যখন প্রস্তাব দেন সুপারস্টার নামটি, সেটাকেই লুফে নেন। বাংলাদেশে শুধু তারা পণ্যটি সংযোজন করত। তখন ভাবলেন, পুরো কাজটাই করলে কেমন হয়। নারায়ণগঞ্জে এক আবাসিক ভবনের নিচতলায় শুরু হলো এক প্রোডাক্ট লাইনের বাল্বের কারখানা। দক্ষতা কম, জ্ঞানেও ঘাটতি, কারখানাতেই নষ্ট হয়ে যেত ২০ শতাংশ বাল্ব, পরিবহনে আরও কিছুটা। তারপরও সবকিছু অতিক্রম করে মোহাম্মদ ইব্রাহীম টিকে গেলেন বাল্বের দুনিয়ায়। 

ইব্রাহীমরা পাঁচ ভাই, তিনি তৃতীয়। বড় ভাই মোহাম্মদ জয়নাল আর ইব্রাহীম লাগলেন বাল্বের পেছনে, চতুর্থ ভাই জালাল উদ্দীন বসলেন পুরোনো বাল্বের পাইকারি ব্যবসায়, মেজ ভাই মহিউদ্দীন গেলেন বিদেশে আর সবচেয়ে ছোট হারুন-অর-রশিদকে সুযোগ দেওয়া হলো পড়াশোনা শেষ করে ব্যবসায় যোগ দেওয়ার। 

পাইকারি ব্যবসা করায় ইব্রাহীমরা আগেই জানতেন ক্রেতারা কী চান। পরিচয় ছিল সাপ্লাই চেইনের সঙ্গেও, সেই সম্পর্কই দারুণ কাজে এল। শুধু কাজ করতে হলো উৎপাদন ব্যবস্থায়। এভাবে পাঁচ ভাই মিলে দাঁড়িয়ে ফেললেন সুপারস্টার। ধীরে ধীরে বদলে গেছে বাতির দুনিয়াও। ট্যাংস্টেনট বাল্ব বদলে এল টিউবলাইট, এরপর এনার্জি সেভিং বাল্ব। ইব্রাহীমরাও দক্ষ ব্যবসায়ীর মতো তাঁদের ডিম রাখতে শুরু করলেন আলাদা আলাদা ঝুড়িতে, শুরু হলো সুপারস্টার সুইচের। 

দেশে তখন সুইচ ব্যবসা পুরোটাই ভারতীয়দের দখলে। চীন থেকে ছোট ছোট যন্ত্রাংশ এনে জুড়ে শুরু করা হয় সুপারস্টার সুইচ। এভাবেই ভাইদের নিয়ে ইব্রাহীম এগিয়ে আসেন দেশের অন্যতম বাতি নির্মাতার কাতারে। 

কথা হয় সুপারস্টার ভাইদের সবচেয়ে ছোটজন হারুন-অর-রশিদের সঙ্গে। বললেন, ‘আমি কোম্পানিতে যোগ দিই ১৯৯৯ সালে, জুনিয়র অফিসার হিসেবে। অফিসের সব ধরনের কাজ করতে হতো নিজ হাতে। কাজ করে করে পদোন্নতি পেয়ে এখন উপব্যবস্থাপনা পরিচালক।’ হারুন লেখাপড়া করেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর প্রায় পাঁচ বছর পর আবার পড়াশোনা করেছেন আন্তর্জাতিক ব্যবসায়। কারণ, সুপারস্টারের চোখটাও এখন আন্তর্জাতিক বাজারের দিকেই। 

হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘আমাদের প্রথম লক্ষ্য সুইচ নিয়ে ভারতের বাজারে ঢোকা। সেই মতো আমরা তাদের চাহিদা অনুযায়ী সুইচ তৈরি করছি। এর বাইরে তার বা কেবলের রাজ্যটা জয় বাকি আছে। আমরা কেব্​ল তৈরিতেও কাজ করছি। এ ছাড়া মালয়েশিয়াতে কিছু কাজ করার ইচ্ছা আছে। 

কীভাবে এল সাফল্য? হারুন-অর-রশিদ বললেন, ‘প্রথমত আমাদের ভাইদের একতা, দ্বিতীয়ত, আমাদের করপোরেট গভর্নেন্স খুব শক্তিশালী, সঠিক কর্মী নিয়োগ, তাঁদের ক্ষমতায়ন, লক্ষ্যের সঙ্গে তাঁদের একাত্ম করা—এসবই সাফল্যের একটি কারণ। আমরা কর্মীদের বিশ্বাস করি, তাঁদের স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দিই। সেই বিশ্বাসই সাফল্যের কারণ সুপারস্টারের।

বিশ্বের শীর্ষ ৫ ধনী ব্যক্তির পাঁচ রকম তথ্য

ফুলডট কম থেকে নেওয়া: বিশ্বের শীর্ষ ১ শতাংশ ধনী মানুষ সম্পদ বানাতে পারে—এটি বোঝানোর জন্য বিশেষ পরিশ্রমের দরকার নেই, শুধু একটি তথ্য দিয়েই তা পরিষ্কার করা সম্ভব। তা হলো, আমরা বাকি ৯৯ শতাংশ মানুষ যা আহরণ করি, এই ১ শতাংশই তা করে থাকে। তাদের নিয়েই দারুণ কিছু তথ্য। 

১. যুক্তরাষ্ট্রে এই ১ শতাংশের কাতারে যেতে বার্ষিক উপার্জন দরকার ৪ লাখ ২১ হাজার ৯২৬ ডলার। অর্থাৎ মাসে ৩৫ হাজার ১৬১ ডলার এবং দিনে ১ হাজার ১৫৬ ডলার।

২. শীর্ষ ১% মানুষ নিচের ৯৯% মানুষের চেয়ে ২৬.৩ গুণ বেশি আয় করে। এই ১ শতাংশের কাতারে থাকা মানুষেরা বছরে ১৩ লাখ ১৭ হাজার ডলার পর্যন্ত আয় করতে পারে। এর বিপরীতে ৯৯ শতাংশ মানুষ বছরে ৫০ হাজার ১০৭ ডলার পর্যন্ত আয় করে থাকে। অর্থাৎ পার্থক্য দাঁড়ায় ২৬ দশমিক ৩ গুণ। 

৩. যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ১ শতাংশ ধনী মানুষের সংখ্যা ৩২ লাখ ৯০ হাজার। এদের হাতে দেশটির মোট জাতীয় সম্পদের ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ। আর বাকি ৩২ কোটি ৫৭ লাখ মানুষের হাতে আছে ৫৭ দশমিক ৫ শতাংশ সম্পদ। বিশ্বের অন্য কোনো দেশে এত অল্পসংখ্যক মানুষের হাতে এত বেশি সম্পদ পুঞ্জীভূত নেই। আয়বৈষম্যের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে থাকা নেদারল্যান্ডসে ১ শতাংশ মানুষের হাতে আছে মাত্র ২৮ শতাংশ সম্পদ।

৪. যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ১ শতাংশ ধনীর হাতে দেশটির ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ সম্পদ থাকলেও সেখানকার বার্ষিক মোট আয়ের মাত্র ১৯ দশমিক ৭ শতাংশ এদের ঘরে যায়। তবে দেশটির মোট আহরিত করের ৩৭ দশমিক ২ শতাংশ দেন এঁরা। অনেকেই বলেন যে এঁদের আরও বেশি কর দেওয়া উচিত। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই বোঝে না, এখনই তাঁরা ঠিক কত দিচ্ছেন।

৫. যুক্তরাষ্ট্রের অনেক মানুষের পক্ষেই হয়তো দেশটির শীর্ষ ধনীর কাতারে যাওয়া সম্ভব হবে না, তবে অনেকেই কিন্তু অজান্তে বিশ্বের শীর্ষ ১ শতাংশ ধনীর কাতারে বসে আছেন। গ্লোবাল রিচ লিস্টের তথ্যানুসারে বার্ষিক ৩২ হাজার ৪০০ ডলার উপার্জন থাকলেই কারও পক্ষে বিশ্বের শীর্ষ ধনীর কাতারে চলে যাওয়া সম্ভব। 

তবে নিজেকে ধনী ভাবতে বা আয়-উপার্জন বাড়াতে আপনাকে বিশ্বের শীর্ষ ১ শতাংশ ধনীর কাতারে যেতেই হবে এমন কথা নেই, মাসে ১০০ থেকে ২০০ ডলার আয় বাড়াতে পারলেই জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আসবে। এতে বছর শেষ দেখা যাবে, আপনার বার্ষিক আয় কয়েক শ ডলার বেড়ে যাবে। অর্থাৎ ধৈর্যের সঙ্গে পরিকল্পনামাফিক পরিশ্রম করে গেলে জীবনযাত্রার মান উন্নত করা যায়। 

বিদ্যুতের আলো ছাড়াই কাজ করা যায় যে ভবনে

সূত্র প্রথম আলো: গুলশানের মতো এলাকায় বাঁশগাছ। তাও আবার বহুতল ভবনের প্রতিটি তলায়। নান্দনিক বিষয়টি সিটিস্কেপ টাওয়ারের সামনে গেলেই চোখে পড়বে। ১৬ তলা ভবনের অধিকাংশ তলাতেই দিনের বেলায় বিদ্যুতের আলো ছাড়াই কাজ করা যায়। ভবনটিতে এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়। 

সিটিস্কেপ টাওয়ার নির্মাণ করেছে সিটিস্কেপ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) লিড প্লাটিনাম নামের পরিবেশবান্ধব সনদ পায়। লিড প্লাটিনাম ক্যাটাগরিতে এটিই দেশের প্রথম বাণিজ্যিক ভবন। এটি ১১০ নম্বরের মধ্যে পেয়েছে ৮১। ভবনের স্থপতি মুজতবা আহসান ও শাহরিয়ার ইকবাল রাজ।

সিটিস্কেপ ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক মোস্তফা মঈন সারোয়ার গত বৃহস্পতিবার ঘুরিয়ে দেখান। তিনি জানান, ভবনের দেয়ালে দ্বিস্তরের কাচ ব্যবহার করা হয়েছে। তাতে আর্গন গ্যাস থাকায় সূর্যের তাপে খুব বেশি গরম হয় না। আবার ভবনের ভেতরে ও বাইরে স্পেন থেকে আনা তাপ শোষণক্ষমতার বিশেষ কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। এই কাচ ও কাঠের কারণে কক্ষ তুলনামূলক শীতল থাকে তাই শীতাতপনিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের পেছনে খরচ কিছুটা কম। আবার ভবনটিতে ব্যবহার করা হয়েছে উন্নত মানের লিফট। এটি সাধারণ লিফটের চেয়ে ৭৫ শতাংশ কম বিদ্যুতেই চলে। 

এখানেই শেষ নয়, ভবনের প্রক্ষালনকক্ষে ব্যবহৃত পানি পরিশোধন করে আবার ব্যবহার করা হয়। বেসিনের ব্যবহৃত পানিও পরিশোধন হচ্ছে। তাতে ৮০ শতাংশ পানিই পুনরায় ব্যবহার হয় ভবনটিতে। ভবনের ছাদে আছে সৌরবিদ্যুৎ। 


সাড়ে ১৬ কাঠা জমির ওপর পরিবেশবান্ধব ভবনটি নির্মাণে চারপাশের অর্ধেক জায়গা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পার্কিংয়ের জন্য বেসমেন্ট আছে তিনটি তলা। তবে সেখানে বিশেষ ব্যবস্থায় দ্বিগুণ গাড়ি রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৫টি তলা বেসরকারি ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া ও বিক্রয় করেছে সিটিস্কেপ ইন্টারন্যাশনাল।

পড়ুন ৭ প্রকার অর্থনীতি

সূত্র প্রথম আলো: অর্থনীতিরও রং আছে। কম নয়, মোট সাতটি রং। এই সাতরঙা অর্থনীতির চেহারাও আলাদা। এর মধ্যে ভালো আছে, মন্দ আছে। আমাদের জীবনযাপনের সঙ্গেও জড়িয়ে আছে অর্থনীতির এ সাতটি রং। সাত রঙের এই অর্থনীতি থেকে দূরে নেই বাংলাদেশও।

কালো অর্থনীতি
এই যেমন কালো রঙের অর্থনীতি। ‘কালো অর্থনীতি’ সম্পর্কে কমবেশি সবারই ধারণা আছে। এটি অপ্রকাশ্য অর্থনীতি বা ছায়া অর্থনীতি। এই অর্থনীতিতে চোরাগোপ্তা বাজার বা লেনদেন থাকে, যা আইন লঙ্ঘনকারী। অস্ট্রিয়ার অর্থনীতিবিদ ফ্রেডারিক স্নেইডার ৩০ বছর ধরে কালো অর্থনীতি নিয়ে কাজ করেন। তাঁর গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশের কালোটাকার পরিমাণ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩০ থেকে ৩৩ শতাংশের সমান।

সাদা অর্থনীতি
অপরদিকে সাদা অর্থনীতি একটি নতুন শব্দ। ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ডগলাস ম্যাকউইলিয়ামস এটি প্রথম প্রচলন করেন। ২০১৫ সালে প্রকাশিত হয় ম্যাকউইলিয়ামসের ‘দ্য ফ্ল্যাট হোয়াইট ইকোনমি: হাউ দ্য ডিজিটাল ইকোনমি ট্রান্সফরমিং লন্ডন অ্যান্ড আদার সিটিজ’ গ্রন্থটি। এতে বলা হয়, ২০০৭ ও ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দায় যে ব্যবসায়িক ক্ষতি হয় তা পূরণ করতে কীভাবে সক্ষম হয় লন্ডন। একই ভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদের পর (বিচ্ছেদ) ডিজিটাল সার্ভিসের মাধ্যমে তা কীভাবে সামাল দেওয়া হবে-এই পরিস্থিতিগুলোকেও ‘হোয়াইট ইকোনমি’ বলে।

সবুজ অর্থনীতি
‘গ্রিন ইকোনমি’ এমন একটি শব্দ, যা ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত ‘ধরিত্রী সম্মেলনে’ আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল। জাতিসংঘ সঠিক প্রবৃদ্ধি নির্ণয়ের জন্য জাতীয় আয় থেকে বার্ষিক পরিবেশগত ব্যয় বাদ দেওয়ার কথা বলে। ধারণাটির নাম দেওয়া যেতে পারে ‘সবুজ জাতীয় আয়’। বিংশ শতাব্দীজুড়ে পরিবেশগত নানা আন্দোলন ও সম্মেলন আমাদের সামনে নিয়ে এসেছে একের পর এক পরিবেশবান্ধব মডেল। এসব মডেলের মধ্যে গ্রিন ইকোনমি বা সবুজ অর্থনীতি মডেল ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সবুজ অর্থনীতি, সবুজ প্রবৃদ্ধি আর সবুজ উন্নয়ন নিয়ে বাংলাদেশেও আলোচনা হচ্ছে। কম কার্বন খরচ করে যে বিকাশ; পরিবেশ-প্রকৃতি-জীববৈচিত্র্যের হাত ধরাধরি করে যে অগ্রগতি, তাকেই সরলভাবে সবুজ প্রবৃদ্ধি বলা হয়ে থাকে।

বাদামি অর্থনীতি
‘ব্রাউন ইকোনমি’ মূলত এমন শিল্পগুলোকে বোঝায়, যা উচ্চ মাত্রায় দূষণ এবং গ্যাস নির্গমন ঘটায়। এই ধরনের শিল্পের মধ্যে রয়েছে সিমেন্ট, লোহা খনির কাজ এবং কয়লা খনন। এসব শিল্পের বর্জ্য পরিশোধনে, ধোঁয়া নির্গমনপ্রক্রিয়া তৈরি করতে গত ৫০ বছরে প্রচুর বিনিয়োগ হয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কারখানার পরিত্যক্ত জিনিস পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করে তোলা। যেমন চামড়াশিল্পগুলোতে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) নির্মাণ করা হয়। বাংলাদেশে সাভারে চামড়াশিল্প স্থানান্তরের পর সিইটিপি নির্মাণের কাজ চলছে।

নীল অর্থনীতি
‘ব্লু ইকোনমি’ হচ্ছে সমুদ্রভিত্তিক অর্থনীতি। সমুদ্র থেকে যা–ই আহরণ করা হোক না কেন, যদি সেটা দেশের অর্থনীতিতে যুক্ত হয়, তবে সেটা ব্লু ইকোনমির পর্যায়ে পড়বে। আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে ২০১২ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে আর ২০১৪ সালে ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ায় মোট ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের বেশি টেরিটরিয়াল সমুদ্র এলাকা এখন বাংলাদেশের। সঙ্গে আছে ২০০ নটিক্যাল মাইল একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল ও চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশে সব ধরনের প্রাণিজ-অপ্রাণিজ সম্পদের ওপর সার্বভৌম অধিকার।

ধূসর অর্থনীতি
‘গ্রে ইকোনমি’ হলো একটি দেশের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের এমন অংশ, যা সরকারি পরিসংখ্যানে গণ্য হয় না। আরও বিস্তারিতভাবে বললে, অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতি বা ধূসর অর্থনীতি এমন একটি অর্থনীতির অংশ, যা কোনোভাবেই সরকারকে কোনো কর দেয় না বা সরকারের পক্ষ থেকে তদারকি করা হয় না। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতি শ্রমশক্তির ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ। ২০১০-এর শ্রমশক্তি জরিপ অনুসারে বাংলাদেশে ৮৭ শতাংশ শ্রমশক্তি অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতিতে নিযুক্ত রয়েছে।

লাল অর্থনীতি
অনেক লেখকের মতে, ‘রেড ইকোনমি’ সমাজতান্ত্রিক ধারার অর্থনীতিগুলোকে বোঝায়, যেখানে রাষ্ট্র উৎপাদন এবং বণ্টন ধরে রাখে।

গ্রিন কারখানায় সেঞ্চুরি বাংলাদেশের


সূত্র প্রথম আলো: দেশে পরিবেশবান্ধব কারখানা ও ভবনের সংখ্যা এখন ১০৮। তার মধ্যে পোশাক ও বস্ত্র খাতেই ৯৫টি, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ। তার মধ্যে সেরা ১০–এর ৬টিই বাংলাদেশের। ক্রিকেটার সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহরা এখন অহরহই সেঞ্চুরি করেন। অভিনন্দন পান। তাঁদের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত হয় দেশের মানুষ। এবার দেশের উদ্যোক্তারাও অন্য রকম এক সেঞ্চুরি করে ফেললেন। বিভিন্ন এলাকায় এক শর বেশি পরিবেশবান্ধব কারখানা ও বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করেছেন তাঁরা। এটির সুফল পাবে দেশের অর্থনীতি ও দেশের সাধারণ মানুষ। 

পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তা সাজ্জাদুর রহমান মৃধার হাত ধরে ২০১২ সালে প্রথম পরিবেশবান্ধব কারখানার যাত্রা শুরু হয় বাংলাদেশে। পাবনার ঈশ্বরদী ইপিজেডে তিনি স্থাপন করেন ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও। তাঁর দেখানো পথ ধরে ৯৪টি পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানা ও বস্ত্রকল হয়েছে। পিছিয়ে নেই অন্যরাও। শিপইয়ার্ড, জুতা, ও ইলেকট্রনিক পণ্য নির্মাণেও আছে পরিবেশবান্ধব কারখানা। বাণিজ্যিক ভবনও হচ্ছে। তবে অন্য যে কোনো দেশের চেয়ে বর্তমানে বাংলাদেশেই সবচেয়ে বেশি পরিবেশবান্ধব পোশাক ও বস্ত্রকল রয়েছে। 

দেশে এক শর বেশি পরিবেশবান্ধব কারখানা হলেও সেগুলো কিন্তু যেনতেন মানের না। উদাহরণ দিলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। বিশ্বে জিনস বা ডেনিম কাপড় উৎপাদন করার প্রথম পরিবেশবান্ধব কারখানা বাংলাদেশের ময়মনসিংহের ভালুকায় এনভয় টেক্সটাইল। নারায়ণগঞ্জের আদমজী ইপিজেডে রেমি হোল্ডিংস, সারা বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানা। আবার নারায়ণগঞ্জের উত্তর নরসিংহপুরের প্লামি ফ্যাশনস, নিট পোশাক তৈরি করা বিশ্বের প্রথম ও শীর্ষ নম্বর পাওয়া পরিবেশবান্ধব কারখানা।

সারা বিশ্বের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সনদ দিয়ে থাকে। তাদের মধ্যে একটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি)। তারা ‘লিড’ নামে পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সনদ দিয়ে থাকে। লিডের পূর্ণাঙ্গ রূপ লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন। সনদটি পেতে একটি প্রকল্পকে ইউএসজিবিসির তত্ত্বাবধানে নির্মাণ থেকে উৎপাদন পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে সর্বোচ্চ মান রক্ষা করতে হয়। ভবন নির্মাণ শেষ হলে কিংবা পুরোনো ভবন সংস্কার করেও আবেদন করা যায়। 

১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইউএসজিবিসি। সংস্থাটির অধীনে কলকারখানার পাশাপাশি বাণিজ্যিক ভবন, স্কুল, হাসপাতাল, বাড়ি, বিক্রয়কেন্দ্র, প্রার্থনাকেন্দ্র ইত্যাদি পরিবেশবান্ধব স্থাপনা হিসেবে গড়ে তোলা যায়। বর্তমানে বিশ্বের ১৬৭ দেশে লিড সনদ পাওয়া স্থাপনার সংখ্যা ৯২ হাজারের বেশি। লিড সনদের জন্য ৯টি শর্ত পরিপালনে মোট ১১০ পয়েন্ট আছে। এর মধ্যে ৮০ পয়েন্টের ওপরে হলে ‘লিড প্লাটিনাম’, ৬০-৭৯ হলে ‘লিড গোল্ড’, ৫০-৫৯ হলে ‘লিড সিলভার’ এবং ৪০-৪৯ হলে ‘লিড সার্টিফায়েড’ সনদ মেলে।

বাংলাদেশের পরিবেশবান্ধব স্থাপনাগুলোর একটি ছাড়া সবগুলো ইউএসজিবিসির অধীনে সনদ পেয়েছে। সংস্থাটির ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা গেছে, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বাংলাদেশের ১০৭টি স্থাপনা লিড সনদ পেয়েছে। তার মধ্যে লিড প্লাটিনাম ২৮টি, গোল্ড ৬৬টি, সিলভার ১১টি এবং ২টি সার্টিফায়েড সনদ পেয়েছে। ১০৭টি পরিবেশবান্ধব স্থাপনার মধ্যে ৯৫টিই পোশাক ও বস্ত্র খাতের কারখানা। বর্তমানে ৫০০-এর বেশি প্রকল্প পরিবেশবান্ধব হতে ইউএসজিবিসির অধীনে কাজ চলছে। তা ছাড়া দেশের একমাত্র পরিবেশবান্ধব জাহাজভাঙার ইয়ার্ড পিএইচপি শিপ ব্রেকিং অ্যান্ড রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিজ। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে পিএইচপি গ্রুপের এই ইয়ার্ড ২০১৭ সালে হংকং ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন অনুযায়ী পরিবেশবান্ধব শিপ ইয়ার্ডের মর্যাদা পায়।

সাধারণত অন্যান্য স্থাপনার চেয়ে পরিবেশবান্ধব স্থাপনায় ৫-২০ শতাংশ খরচ বেশি হয়। তবে বাড়তি খরচ করলেও দীর্ঘমেয়াদি সুফল পাওয়া যায়। ইউএসজিবিসি লিড সনদ পেতে স্থাপনা নির্মাণে ৯টি শর্ত পরিপালন করতে হয়। তার মধ্যে আছে এমন নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করতে হয়, যাতে কার্বন নিঃসরণ কম হয়। এ জন্য পুনরুৎপাদনের মাধ্যমে তৈরি ইট, সিমেন্ট ও ইস্পাত লাগে। বিদ্যুৎ খরচ কমাতে সূর্যের আলো, বিদ্যুৎসাশ্রয়ী বাতি ও সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হয়। ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমাতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের পাশাপাশি পানি সাশ্রয়ী কল ও ব্যবহৃত পানি প্রক্রিয়াজাত করে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করতে হয়। এ ছাড়া স্থাপনায় পর্যাপ্ত খোলা জায়গা রাখার বাধ্যবাধকতা আছে। সব মিলিয়ে পরিবেশবান্ধব স্থাপনায় ২৪-৫০ শতাংশ বিদ্যুৎ, ৩৩-৩৯ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ এবং ৪০ শতাংশ পানি ব্যবহার কমানো সম্ভব। তার মানে দেশে পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সংখ্যা যত বেশি হবে, ততই তা পরিবেশের ওপর চাপ কমাবে। 

পরিবেশবান্ধব স্থাপনায় অর্থনীতি, পরিবেশ ও মানুষ উপকৃত হয়, এমনটাই বললেন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ৩৬০ ডিগ্রি টোটাল সলিউশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনন্ত আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পরিবেশবান্ধব কারখানার মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও পানির খরচ কমপক্ষে ২৫ শতাংশ কমানো যায়। তাতে বিপুল পরিমাণ ব্যয় সাশ্রয় হয়। তা ছাড়া পরিবেশবান্ধব কারখানায় উন্নত কর্মপরিবেশের কারণে কর্মীদের উৎপাদনশীলতাও বাড়ে। 

শুরুর গল্প 

আগেই বলা হয়েছে, ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও দিয়ে দেশে পরিবেশবান্ধব কারখানার যাত্রা শুরু হয়। তবে গত সাত বছরে শতাধিক পরিবেশবান্ধব স্থাপনা হওয়ার পেছনে ভূমিকা রেখেছে সাভারের রানা প্লাজা ধস। সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ নিয়ে বড় রকমের প্রশ্ন ওঠে। তখন বিদেশি ক্রেতাদের চাপে কর্মপরিবেশ উন্নয়নে লেগে পড়েন উদ্যোক্তারা। তাঁরা কারখানার বিভিন্ন ত্রুটি সংশোধন করার পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব নতুন কারখানা নির্মাণ শুরু করেন। কেউ কেউ আবার পুরোনো কারখানাকেই পরিবেশবান্ধব করার উদ্যোগ নেন। 

চট্টগ্রামের প্যাসিফিক জিনসের কারখানা লিড গোল্ড সনদ পেয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, ‘রানা প্লাজা ধসের পর কারখানার মান উন্নয়নের তাগিদ ও পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই আমরা পুরোনো কারখানাকে পরিবেশবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলেছি। অনেক উদ্যোক্তাই সেই কাজটি করেছেন। সে জন্যই বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে আমাদের দেশের কারখানা এখন অনেক বেশি নিরাপদ।’ 

প্লামি ও শুনিভার্সের গল্প 

ফটক দিয়ে ঢুকতেই সারি সারি গাছ। বেশ খানিকটা এগোনোর পর ছিমছাম কারখানা ভবন। চট করে কেউ দেখলে বুঝতেই পারবেন না যে ভেতরে দেড় হাজার নারী-পুরুষ বিদেশি নামীদামি ব্র্যান্ডের জন্য পোশাক তৈরি করছেন। খোলামেলা পরিবেশ। চারপাশে প্রচুর গাছপালা। আলাদা ভবনে রয়েছে শিশু দিবাযত্ন ও চিকিৎসাকেন্দ্র এবং বিশাল খাবার কক্ষ।

নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের উত্তর নরসিংহপুরে প্লামি ফ্যাশনসের চিত্র এটি। ২০১৫ সালে যাত্রা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। গত বুধবার কারখানাটিতে গিয়ে দেখা গেল, গত চার বছরেও প্লামি এতটুকু রং হারায়নি। 

২১ বিঘা জমির ৬২ শতাংশ জায়গা উন্মুক্ত রেখে প্লামির মূল কারখানাটি করা হয়েছে। দুই তলাবিশিষ্ট কারখানার চারপাশে স্বচ্ছ কাচের কারণে পর্যাপ্ত পরিমাণে সূর্যের আলো ভেতরে আসে। সে জন্য বৈদ্যুতিক বাতির প্রয়োজন কম হয়। বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য ভূগর্ভে নির্মাণ করা হয়েছে একাধিক জলাধার। সেই পানি ব্যবহারের পাশাপাশি বাথরুমে পানিসাশ্রয়ী কল লাগানো হয়েছে। এসব কারণে কারখানাটিতে বিদ্যুৎ ও পানি ব্যবহার ৪০ শতাংশ কম হয়।

প্লামি ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল হক বলেন, ‘মুনাফার জন্য আমরা ব্যবসা করি। তবে আত্মতৃপ্তি ও দায়িত্ববোধের একটি বিষয় তো আছেই। দেশ ও শিল্পের প্রতি দায়বদ্ধতার জায়গা থেকেই পরিবেশবান্ধব কারখানা করেছি। সে জন্য আমরা বেশ খুশি।’ অন্যদিকে দেশের একমাত্র পরিবেশবান্ধব জুতার কারখানা ময়মনসিংহের ভালুকার শুনিভার্স ফুটওয়্যার। কারখানাটিতে দিনে গড়ে সাড়ে চার হাজার জোড়া জুতা উৎপাদন হয়, যার পুরোটাই ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। 

ভালুকা প্রতিনিধি জানান, মূল ফটকের দিয়ে কয়েক কদম প্রশাসনিক ভবন। তার বাঁ দিকে কারখানা ভবন। ভেতরের পরিবেশটা সাজানো–গোছানো। ভবনের নকশাটি এমনভাবে করা হয়েছে, যাতে করে সূর্যের আলোতে কাজ করতে পারেন শ্রমিকেরা। বৃষ্টির পানি ধরে তা পরিশোধন করে ব্যবহার করা হয়। শ্রমিকদের খাবারের জন্য আছে আলাদা জায়গা। প্রতিটি ভবনের আশপাশে লাগানো হয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফলের গাছ। 

শুনিভার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিয়াদ মাহমুদ বলেন, পোশাকের পরই সম্ভাবনাময় খাত চামড়া। তা ছাড়া পোশাকশিল্পের কমপ্লায়েন্সের বিষয়গুলো অবধারিতভাবেই চামড়া খাতে চলে আসবে। সেটি উপলব্ধি করতে পেরেই আমরা পরিবেশবান্ধব কারখানা করেছি।

সর্বোচ্চ সনদ যাদের

পোশাক ও বস্ত্র খাতের লিড প্লাটিনাম সনদ পাওয়া কারখানার সংখ্যা ২৪। সেগুলো হচ্ছে ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও, জেনেসিস ওয়াশিং ও জেনেসিস ফ্যাশনস, কলাম্বিয়া ওয়াশিং প্ল্যান্ট, ইউএইচএম লিমিটেড, প্লামি ফ্যাশনস, বিটপী গ্রুপের রেমি হোল্ডিংস ও তারাসিমা অ্যাপারেল, ডিজাইনার ফ্যাশনস, মিথিলা টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ, কানিজ ফ্যাশনস, এসকিউ কোলব্লেনস, এসকিউ সেলসিয়াস ২, এসকিউ বিরিকিনা, এসকিউ সেন্ট্রাল, ইকোটেক্স, এআর জিনস, গ্রিন টেক্সটাইল লিমিটেডের ইউনিট ৩, পাইওনিয়ার ডেনিম, কেনপার্ক ২ এবং দ্য সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড ওভেন অ্যান্ড ইউনিট ২। পোশাক ও বস্ত্র খাতের বাইরে ৪টি লিড প্লাটিনাম সনদ পেয়েছে এএসজি ফ্যান ফ্যাক্টরি, বিআইএফএফএল, সিটিস্কেপ ও সায়হাম টাওয়ার। 

 পোশাকের গ্রিন ব্র্যান্ডিং 

পোশাক ও বস্ত্র খাতে ৯৫টি পরিবেশবান্ধব কারখানা হয়েছে। অর্জনটিকে বহির্বিশ্বে তুলে ধরতে পারলে পোশাকের বাড়তি দাম পাওয়া সম্ভব। তবে সেই কাজটি সঠিকভাবে শুরু করা যায়নি বলে পরিবেশবান্ধব কারখানার উদ্যোক্তারা আক্ষেপ করলেন। 

তৈরি পোশাকশিল্পমালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক বলেন, ‘পরিবেশবান্ধব কারখানা পোশাকশিল্পের জন্য বড় শক্তি। আমাদের শিল্পকে নিরাপদ ও টেকসই করতে সহায়তা করছে কারখানাগুলো। এটিকে কাজ লাগাতে আমরা কাজ শুরু করেছি। ইউএসজিবিসির সঙ্গে আমরা শিগগিরই একটি সমঝোতা স্মারক সই করব। তারা আমাদের পরিবেশবান্ধব কারখানার প্রচার-প্রচারণা চালাবে। তা ছাড়া আমরা নিজেরাও ব্র্যান্ডিংয়ে নামব।’ 

ব্যাটারি আর বিস্কুটে সফল অলিম্পিক



সূত্র প্রথম আলো: আলো আলো, বেশি আলো, শব্দে শব্দে, মন মাতাল, অলিম্পিক অলিম্পিক ব্যাটারি—সাড়াজাগানো এ বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেলটি এখনো নিশ্চয় অনেকের মনে গেঁথে আছে। বিজ্ঞাপনটির মডেল ছিলেন অভিনেত্রী মিতা নূর। তিনি এখন আর বেঁচে নেই, অলিম্পিক ব্যাটারির ব্যবসার ‘বেশি আলোও’ আর নেই। ব্যাটারির ব্যবসার রাজা থেকে অলিম্পিক এখন বিস্কুট, কনফেকশনারি ব্যবসায় বাজারের সেরা কোম্পানি। ব্যবসার ধরন বদলানোর পাশাপাশি নামেরও বদল ঘটেছে কোম্পানিটির।

১৯৭৯ সালে যাত্রার শুরুতে কোম্পানিটির নাম ছিল বেঙ্গল কার্বাইড লিমিটেড। ১৯৯৬ সালে নাম বদল করে হয় অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। ওই বছর থেকে বিস্কুট ও কনফেকশনারি ব্যবসায় নাম লেখায় প্রতিষ্ঠানটি। তাতে সাফল্যও আসে কয়েক বছরে। এরপর ব্যবসার পরিধি বেড়েছে। যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন পণ্য ও উৎপাদন লাইন। এর আগে ১৯৮৭ সালে কোম্পানিটি তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল ফুডসের নামে সয়াবিন তেল ও ভেজিটেবল ঘি বাজারে আনে।

কোম্পানিটির সর্বশেষ ২০১৭-১৮ অর্থবছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী বর্তমানে অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের নয়টি বিস্কুট, তিনটি কনফেকশনারি, একটি বেকারি, একটি স্ন্যাকস ও একটি নুডলস উৎপাদনের আলাদা আলাদা লাইন রয়েছে। কোম্পানির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৯টি বিস্কুটের লাইনে অলিম্পিক এনার্জি প্লাস, নাটি, টিপ, হাইলাক্স, ফাস্ট চয়েজসহ ৩২ ধরনের মজাদার বিস্কুট উৎপাদিত হয়।

আয়ের ৯৭% খাদ্যপণ্যের দখলে

অলিম্পিকের কর্মকর্তারা বলেন, বর্তমানে বছরে কোম্পানিটির যে আয় হয়, তার প্রায় ৯৭ শতাংশই আসে বিস্কুট, কনফেকশনারি, স্ন্যাকসসহ খাদ্যপণ্যের ব্যবসা থেকে। বাকি ৩ শতাংশের মতো আয় আসে ব্যাটারির ব্যবসা থেকে। অর্থাৎ ব্যাটারির আলো যেন এসে পড়েছে কোম্পানিটির বিস্কুটসহ খাদ্যপণ্যের ব্যবসায়। অলিম্পিক ও অলিম্পিক গোল্ড—এ দুই নামে ব্যাটারি বাজারে রয়েছে কোম্পানিটির। ব্যাটারির জন্য রয়েছে কোম্পানিটির আলাদা তিনটি উৎপাদন লাইন। নারায়ণগঞ্জে রয়েছে কোম্পানিটির চারটি কারখানা। এসব কারখানায় প্রায় সাত হাজার লোক কাজ করেন।

কোম্পানির একাধিক কর্মকর্তার দাবি, দেশের প্যাকেটজাত ব্র্যান্ডের বিস্কুট ও কনফেকশনারির বাজারের ৫০ শতাংশই অলিম্পিকের দখলে। বাজারে নিজেদের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করতে দশম বিস্কুট উৎপাদন লাইন চালুর পরিকল্পনা রয়েছে কোম্পানিটির।

কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৮৬ হাজার ৯৩৫ মেট্রিক টন বিস্কুট, কনফেকশনারি, বেকারি পণ্যসহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্য বিক্রি করা হয়। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল ৮০ হাজার ২৮৯ মেট্রিক টন।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে কোম্পানিটি মোট আয় করে ১ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ২৫৫ কোটি টাকা এসেছে বিস্কুট, কনফেকশনারি, বেকারি পণ্যসহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্যের ব্যবসা থেকে।

পাঁচ বছরে মুনাফা দ্বিগুণ

কোম্পানির সর্বশেষ নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কোম্পানিটির আয়ে সাড়ে ১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কর-পরবর্তী মুনাফা বেড়েছে ৯ শতাংশ। গত পাঁচ বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির আয় বেড়েছে েদড়গুণ আর মুনাফা বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।

শেয়ারবাজারে অলিম্পিক

১৯৮৯ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এ কোম্পানি বর্তমানে ভালো মৌলভিত্তির ‘এ’ শ্রেণিভুক্ত একটি কোম্পানি। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্য থেকে ৩০টি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচকে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে কোম্পানিটি। প্রায় ২০০ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধনের এ কোম্পানির ২০ কোটি শেয়ার রয়েছে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার মানুষের হাতে, যার মধ্যে কোম্পানির উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে বিদেশি-প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীও রয়েছেন। কোম্পানিটির উদ্যোক্তা ও নেতৃত্বে রয়েছেন দুই ভাই। তাঁরা হলেন মোহাম্মদ ভাই ও মোবারক আলী। এর মধ্যে এক ভাই চেয়ারম্যান ও অন্য ভাই ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার ডিএসইতে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের কোম্পানিটির শেয়ারের সর্বশেষ বাজারমূল্য ছিল প্রায় ২৭০ টাকা। শেয়ারধারীদের নিয়মিত লভ্যাংশ বিতরণ অব্যাহত রেখেছে কোম্পানিটি। গত জুনে এটির আরেকটি আর্থিক বছর শেষ হয়েছে। 

সিঁড়ির পর সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে হয়: এসিআই এমডি সৈয়দ আলমগীর

সূত্র প্রথম আলো: নতুন একটি সাবান বাজারের সুপরিচিত সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে এক নম্বরে উঠে গেল শুধু একটি স্লোগানের জোরে। স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’, যা এসেছিল সৈয়দ আলমগীরের মাথা থেকে। এবং বাণিজ্যকে নিজের জীবনের কথা জানিয়েছেন এসিআই কনজ্যুমার ব্র্যান্ডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আলমগীর, উঠে এসেছে তরুণদের প্রতি তাঁর পরামর্শও। 

জীবনের মোড় ঘুরিয়েছে যে সিদ্ধান্ত 

আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএতে ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্তটি। সেখানে পড়েছি বলেই আমি এই পথে এসেছি। আইবিএ থেকে এমবিএ করার পরই আমার অনেকগুলো চাকরির প্রস্তাব আসে। আমরা ৩৩ জন বের হয়েছিলাম। আমি যোগ দিলাম এমন একটি জায়গায়, যেখানে শুধু একজন নেবে। বন্ধুর সঙ্গে প্রতিযোগিতা আমি চাইনি। আমাদের বড় একটা ফার্মেসি ছিল। বড় ভাই চিকিৎসক। এ কারণে ওষুধের প্রতি আমার বিশেষ আগ্রহ ছিল। এ কারণে মে অ্যান্ড বেকারে (এখনকার সানোফি) যোগ দিই। 

সেখানে ১৬ বছর ছিলাম। এ সময় আমি অনেক কিছু শিখেছি। একটা উদাহরণ দিই, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি শিখিয়েছে মে অ্যান্ড বেকার। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও কোম্পানি শিখিয়ে দিত। মে অ্যান্ড বেকারে আমি ব্যাপক শৃঙ্খলা শিখেছি।

জীবনের সেরা তিন সিদ্ধান্ত

এক. সরকারি চাকরিতে যোগ না দিয়ে বেসরকারি খাতে আসা। দুই. যমুনায় যোগ দেওয়া। তিন. এসিআইতে আসা। যমুনায় যোগ দিয়ে আমি বৃহত্তর পরিসর পেয়েছি। আগেরটি ছিল শুধু ওষুধ। যমুনায় শুরুতেই আমি ১১টি কোম্পানি আমার অধীনে পাই। আমি সেগুলোকে বড় করেছি। আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব পালন করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও এক শ ভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইতে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এটির কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি।

ব্র্যান্ড তৈরির পেছনের গল্প

জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে আমি দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এল, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। সেই চিন্তাটি দেশে এসে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, ‘মেধা বিকাশে সহায়তা করে’। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি। 

সারা দিনের রুটিন

কাজ দিয়েই আমার দিন শুরু হয়। কাজ দিয়েই শেষ। কাজের বাইরে তেমন কিছু করতে পারি না। সকালে অফিসে আসি ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে। ফিরি রাতে। কখনো ৯টার আগে নয়। ফেরার সময় একটি হোটেলে কিছুক্ষণ সাঁতার কাটি অথবা ব্যায়াম করি। পরিবারের সঙ্গে বাকি সময় কাটাই। তবে অফিসের আলাপ কখনোই বাসায় করি না। আমার স্ত্রীকে যদি আমার অফিস সম্পর্কে প্রশ্ন করেন, তিনি এটুকুই বলতে পারবেন যে সম্প্রতি আমি মনে হয় ব্যবস্থাপনা পরিচালক হয়েছি।

কাজের বাইরে

দেশ ঘুরতে আমার ভালো লাগে। এ জন্য প্রচুর ভ্রমণ করি। টেলিভিশন দেখতে ভালো লাগে। রাতে দেশি–বিদেশি সংবাদ চ্যানেল দেখে নিজেকে আপডেট রাখার চেষ্টা করি। বিনোদনের জন্য সিরিয়াল, সিনেমা দেখি। একবার ভারতে গিয়ে সিনেমা দেখতে যাব। মেয়েরা দেখবে গুরুগম্ভীর সিনেমা। আমি বললাম, গোবিন্দর সিনেমা দেখব। পয়সা খরচ করে কান্নাকাটি করতে যাওয়ার ইচ্ছা আমার নেই। আর সিনেমা দেখা হলো না। আমার তিন মেয়ে—একজন চিকিৎসক, একজন আইন পড়ছে এবং আরেকজন অর্থনীতিবিদ। তারা বিদেশে আছে।

কী হতে চেয়েছিলেন

লক্ষ্যের চেয়ে বেশি পেয়েছি। লক্ষ্য ছিল, আমি যেখানে কাজ করব, সেখানকার নেতা হব। সেটা হতে পেরেছি। কর্তৃত্বমূলক ব্যবস্থাপনায় বিশ্বাসী নই। সারা দিন হয়তো আমি নানা কথা বলি। আমার কর্মীরা তাতে মোটেও কষ্ট পায় না। কারণ, তারা জানে, আমি তাদের কতটা ভালোবাসি। 

ব্যবস্থাপকদের দক্ষতা 

আমাদের দেশের ব্যবস্থাপকেরা কিন্তু অনেকের চেয়ে ভালো। এ দেশের কোম্পানি এ দেশের ছেলে–মেয়েরাই চালাচ্ছে। হয়তো দু–একজন বিদেশি থাকে। তবে বিদেশি কোম্পানির প্রবণতা হলো, তারা একজন বিদেশিকে পাঠিয়ে দিতে পছন্দ করে। 

তরুণদের জন্য তিন পরামর্শ 

মূল পরামর্শ একটাই—তরুণেরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, চাকরিজীবনে একটি সিঁড়ির পর আরেকটি সিঁড়িতে পা দিয়ে তবে ওপরে উঠতে হয়। এখানে এমন কোনো সিঁড়ি নেই, এলিভেটর নেই, যা আপনাকে সরাসরি ওপরে নিয়ে যাবে।

আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাঙ্ক্ষাটাও একটু কম রাখতে হবে। আমরা দেখি, এখন শুরু থেকেই অনেকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হতে চায়। বড় বেতন চায়, গাড়ি চায়। শুধু চাকরি পাল্টায়। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে এসব কিন্তু আসবেই। 

ভবিষ্যৎ এমডিদের উদ্দেশে

আমি যখন আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক ছিলাম, তখন বিক্রয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে চিকিৎসকের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছি। এমন ঘটনাও আছে, পণ্য নিয়ে ট্রাকে করে বেরিয়ে গেছি, বিক্রি শেষ করে ফিরেছি। এখন ভালো পদে থাকলে কেউ মাঠে-ঘাটে ঘোরার কষ্ট করতে চায় না। 

আমি একটি প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিয়োগের জন্য সাক্ষাৎকার নেওয়ার একটা ঘটনা বলি। প্রার্থীর কাছে জানতে চাইলাম, বিপণন সম্পর্কে কতটুকু জানেন। তিনি বললেন, বিপণন তাঁর কাজ নয়। একই ভাবে উৎপাদন ও বিক্রির বিষয়ে তিনি একই কথা বললেন। আমি জানতে চাইলাম, তাহলে আপনার কাজ কী? তিনি বললেন, সমন্বয়। আমার মনে হয়, নেতৃত্ব দিতে হলে সব বিষয়ে সম্যক ধারণা থাকতে হবে। আপনি যদি শিল্পপতির সন্তান হন, তাহলে আপনি উদ্যোক্তাদের কাতারে পড়বেন। আপনি যদি পেশাদার ব্যবস্থাপক হতে চান, আপনাকে কষ্ট করতে হবে।

একনজরে সৈয়দ আলমগীর পড়াশোনা

নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শুরু। সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (আইবিএ) থেকে স্নাতকোত্তর (এমবিএ)। 

প্রথম চাকরি

১৯৭৬ সালে বিদেশি কোম্পানি মে অ্যান্ড বেকারে (এখনকার সানোফি) আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক হিসেবে যোগদান।  

অভিজ্ঞতা

১৯৭৬ থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত সানোফিতে। এরপর যমুনা গ্রুপে বিপণন পরিচালক পদে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত। এরপর থেকে এসিআইতে। 

বর্তমান অবস্থান

এসিআই কনজ্যুমার ব্র্যান্ডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এর আগে ছিলেন নির্বাহী পরিচালক। 

কটলারের বইতে স্থান

মার্কিন বিপণনগুরু ফিলিপ কটলারের প্রিন্সিপালস অব মার্কেটিং শিরোনামের বইয়ের একটি সংস্করণে সৈয়দ আলমগীরের ‘১০০% হালাল সাবান’ স্লোগানে বিপণনকৌশলটি স্থান পেয়েছে। 

Sunday, August 18, 2019

গাইবান্ধায় মাটির নিচে মিশে থাকা অনন্য একটি ভবন

একাধিক ব্লকে বিভক্ত একটি ভবন। তাতে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, লাইব্রেরি, অভ্যন্তরীণ খেলাধুলা ও থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা। একটির সঙ্গে আরেকটি সংযুক্ত বারান্দা ও খোলা প্যাভিলিয়ন দিয়ে। বিশাল ভবন। কিন্তু পুরো ভবনটিই দৃষ্টির আড়ালে। পাশ দিয়ে চলে গেছে গ্রাম্য সড়ক। অথচ সেখানে দাঁড়িয়ে ভবনটি চোখেই পড়বে না। কারণ, পুরো ভবনটি মাটির তলায়। 

ভবনের বিভিন্ন কক্ষের ছাদ মাটির সমতলে। তাতে লাগানো সবুজ ঘাস মিশে গেছে আশপাশের মাঠের সঙ্গে। গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের মদনেরপাড়া গ্রামে ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার নামক এই ভবনের দিকে সবাই অবাক হয়ে তাকায়। প্রকৃতির মধ্যে মিশে যেন অদৃশ্য হয়ে আছে কমপ্লেক্সটি।

গাইবান্ধা-বালাসী সড়ক ঘেঁষে গড়ে ওঠা এই ভবনের আয়তন ৩২ হাজার বর্গফুট। স্থানীয়ভাবে তৈরি ইটের গাঁথুনি দিয়ে নির্মিত ভবনটি দেখতে প্রতিদিনই কৌতূহলী মানুষের ভিড় জমে। মদনেরপাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান বলেন, বাইরে থেকে অনেক লোক ভবন দেখতে আসার কারণে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত জিনিসপত্রের বিক্রি বেড়েছে। কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের সমিতির বাজার গ্রামের কলেজশিক্ষক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নদীভাঙনকবলিত এই প্রত্যন্ত এলাকায় এমন একটি ব্যতিক্রমী স্থাপনা এলাকার সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে অনেক গুণ। 

আধুনিক ও চৌকস স্থাপত্যশৈলীর এই ভবন এবার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজের উপস্থিতি জানান দিল। সারা বিশ্বের সম্মানজনক আগা খান স্থাপত্য পুরস্কারের জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকায় এবার বাংলাদেশের যে দুটি স্থাপনা মনোনয়ন পেয়েছে, এটি তার একটি। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের (একেডিএন) পুরস্কারের জন্য বিশ্বের ৩৮৪টি স্থাপনাকে পেছনে ফেলে সেরা ১৯ স্থাপনার তালিকায় রয়েছে ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার। এটির স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরী। 

তরুণ স্থপতিদের উদ্ভাবনী ধারণাকে স্বীকৃতি দিতে আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক প্রতি তিন বছর পরপর এই পুরস্কার দেয়। অনেক বিষয় এ ক্ষেত্রে বিবেচনা করা হয়। উদ্ভাবনী আইডিয়ার পাশাপাশি স্থাপনাটি কতটা পরিবেশবান্ধব, সেটি দেখা হয়। সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে এটির যোগসূত্রও বিবেচনা করা হয়। 

ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার সম্পর্কে বলতে গিয়ে স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্বল্প বাজেটে প্রকল্পটি নির্মাণের চিন্তা ছিল। কম খরচের চিন্তা আর চাপের কারণে চমৎকার এই সৃষ্টি সম্ভব হয়েছে।’ এই ভবনের 
অনুপ্রেরণা বৌদ্ধবিহারের ধারণা থেকে এসেছে বলে জানালেন তিনি। ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারের ভবনটি ওপর দিক থেকে দেখলে মহাস্থানগড়ের প্রাচীন বৌদ্ধবিহারের ছবি ফুটে ওঠে অনেকটা। 

ভবনের বিশেষত্ব জানতে চাইলে তরুণ এই স্থপতি বলেন, ‘ভবনের জমি খুবই নিচু ছিল। পানি আটকাতে চারদিকে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। ভবনের ছাদের লেভেল রাস্তার প্রায় সমতলে। আমার লক্ষ্য ছিল অল্প খরচে সবার জন্য ভিন্নধর্মী কিছু একটা করা। এটি একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কার্যালয়। সংস্থাটি চরের মানুষের জন্য কাজ করে। সেখানে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পাশাপাশি চরের মানুষজনের জন্য সেবা দেওয়ার বিষয়টি রয়েছে। তাই সেখানে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিদেশি দাতা সংস্থার লোকজন আসবেন, থাকবেন—সেটাও একটি বিষয়। সবাই যাতে ভবনে স্বাচ্ছন্দ্যে বিচরণ করতে পারেন, সেটাও মাথায় রাখতে হয়েছে।’ কাশেফ মাহবুব চৌধুরী জানালেন, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে এটা ব্যবহৃত হবে জেনে নিরিবিলি ও শান্ত একটি পরিবেশ তৈরির বিষয়টি ভাবা হয়েছে। পর্যাপ্ত আলো আর বাতাসের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে দেশি উপকরণ। 

ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, এই ভবন নির্মাণে খরচ হয়েছে আনুমানিক আট কোটি টাকা। নির্মাণকাজ শেষ করতে সময় লেগেছে প্রায় দুই বছর। প্রতিষ্ঠানটি মনে করছে, মাটি ভরাট করে ভবন নির্মাণ করতে গেলে বাজেটের ৬০ শতাংশই শেষ হয়ে যেত। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান গ্রামে হওয়ার কারণে সেখানে দোতলা ভবন করলে গ্রামের পরিবেশের সঙ্গে মিলত না। তাই সমতল ভূমির সঙ্গে মিল রেখে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এতে গ্রামের প্রকৃতির অংশ হয়ে উঠেছে ভবনটি। 

ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারের সহকারী ব্যবস্থাপক লোকমান হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মাটির নিচে ভবনের কক্ষ অনেকটা ঠান্ডা থাকে। বাইরের আলো-বাতাসও পাওয়া যায়। এটি পরিবেশবান্ধব কার্যালয়। 

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক স্থপতি শামসুল ওয়ারেস প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্থাপত্যশৈলীর দিক থেকে ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার স্থাপনাটি একটি মৌলিক কাজ। আলোছায়ার খেলা রয়েছে সেখানে। আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতিতে বাড়ির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ উঠান। এই ভবনে উঠানের অংশ রাখা হয়েছে।’ 

কাশেফ মাহবুব চৌধুরী ১৯৯৫ সালে বুয়েট থেকে স্নাতক শেষ করে স্থাপত্য পেশায় যোগ দেন। আরেক স্থপতি মেরিনা তাবাসসুমের সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করেন আরবানা। দুজনে যৌথভাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতাস্তম্ভ ও স্বাধীনতা জাদুঘরের নকশা করেছেন। এখন কাশেফ মাহবুবই আরবানার একক প্রধান। এর আগেও আগা খান পুরস্কারের জন্য দুবার মনোনীত হয়েছিলেন কাশেফ। ২০০৪ সালে মেরিনা তাবাসসুমের সঙ্গে যৌথভাবে একটি প্রকল্পের জন্য মনোনয়ন পেয়েছিলেন। চট্টগ্রামের চান্দগাঁওয়ে নির্মিত একটি মসজিদের জন্য ২০১০ সালে এককভাবে মনোনয়ন পান আগা খান পুরস্কারের জন্য। মেরিনা তাবাসসুমের করা অনন্য স্থাপত্যশৈলীর বায়তুর রউফ মসজিদটিও এবার আগা খান স্থাপত্য পুরস্কারের সংক্ষিপ্ত তালিকায় মনোনয়ন পেয়েছে। রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় এই মসজিদটি অবস্থিত। সুত্র: প্রথম আলো 

স্থাপত্যে এশিয়ার সেরা মসজদি এখন ঢাকায় (ভিডিও)

ঢাকার বায়তুর রউফ মসজিদের স্থাপত্যের জন্য মেরিনা তাবাসসুম এবং গাইবান্ধায় ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার স্থাপত্যের জন্য কাশেফ মাহবুব চৌধুরী এ পুরস্কারের জন্য চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন
আগা খান স্থাপত্য পুরস্কার। স্থাপত্যের দুনিয়ায় অত্যন্ত সম্মানজনক এ পুরস্কার। এর আগে বাংলাদেশের তিনটি স্থাপত্য এ পুরস্কার জিতলেও সেগুলোর স্থপতি ছিলেন বিদেশি। বেশ কয়েকবার বাংলাদেশি স্থপতিরা এ পুরস্কারের জন্য চূড়ান্ত মনোনয়ন পেলেও পাওয়া আর হয়ে ওঠেনি।

এবারও বাংলাদেশের দুটি স্থাপনা আগা খান স্থাপত্য পুরস্কারের জন্য চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছে। ঢাকার বায়তুর রউফ মসজিদের স্থাপত্যের জন্য মেরিনা তাবাসসুম এবং গাইবান্ধায় ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার স্থাপত্যের জন্য কাশেফ মাহবুব  চৌধুরী এবারের মনোনয়ন পেয়েছেন।
এর আগেও বাংলাদেশের এ দুই স্থপতি পুরস্কারের জন্য চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছিলেন। ২০০৪ সালে যৌথভাবে একটি প্রকল্পের জন্য মনোনয়ন পেয়েছিলেন মেরিনা ও কাশেফ। ২০১০ সালে আরেকটি প্রকল্পের জন্য মনোনয়ন পান কাশেফ মাহবুব চৌধুরী। তিনবার পুরস্কার জিতেছে বাংলাদেশের তিনটি স্থাপনা জাতীয় সংসদ ভবন, গ্রামীণ ব্যাংক হাউজিং প্রকল্প ও রুদ্রপুর স্কুল। তরুণ স্থপতিদের উদ্ভাবনী ধারণাকে স্বীকৃতি দিতে আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক (একেডিএন) প্রতি তিন বছর পরপর এ পুরস্কার দেয়। এই পুরস্কারের জন্য স্থাপত্য ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব, পরিকল্পনা, ঐতিহাসিক সংরক্ষণকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।

পাশাপাশি স্থাপত্যকলার মাধ্যমে সামাজিক প্রত্যাশা পূরণের বিষয়টিও বিচারকদের বিবেচনায় থাকে। এ পুরস্কারের জন্য নির্বাচনও হয় অত্যন্ত কঠোর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। প্রাথমিকভাবে পাওয়া এন্ট্রি থেকে স্টিয়ারিং কমিটি ও গ্র্যান্ড জুরিবোর্ড বিজয়ী নির্বাচন করে। জুরিবোর্ডের পক্ষ থেকে একজন রিভিউয়ার বা মূল্যায়নকারী প্রতিটি প্রকল্প এলাকায় গিয়ে কমিটির কাছে প্রতিবেদন জমা দেন। পুরস্কারের অর্থমূল্য ১০ লাখ মার্কিন ডলার।
চলতি বছর এ পুরস্কারের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ৩৪৮টি প্রকল্প জমা পড়ে। সেখান থেকে ১৯টি প্রকল্প চূড়ান্ত মনোনয়নের জন্য বাছাই করা হয়। বাংলাদেশের দুটি স্থাপনা ছাড়া চীন, ডেনমার্ক, ইরানসহ বিভিন্ন দেশের ১৭টি স্থাপনা আছে। জানা গেছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করবে আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক শামসুল ওয়ারেস প্রথম আলোকে বলেন, আগা খান স্থাপত্য পুরস্কারের বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতা অনেক। বিশ্বের অনেক পুরস্কারই আছে যেগুলোতে শুধু ড্রয়িং আর ডিজাইন পাঠিয়ে দিলেই হয়। কিন্তু আগা খান পুরস্কারের বিচার পদ্ধতি অত্যন্ত দীর্ঘ ও বাস্তবসম্মত। এতে পুরস্কার দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকগুলো বিষয় বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশের দুজন স্থাপত্যবিদ এবার মনোনয়ন পাওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘দুটি স্থাপত্যই চমৎকার। আমি আশা করব দুজনই এবারের পুরস্কার জিতে আমাদের স্থাপত্যবিদদের পুরস্কার না পাওয়ার বন্ধ্যাত্ব ঘোচাবেন।’
আরেক স্থপতি রবিউল হুসাইন বলেন, বাংলাদেশ থেকে অতীতে কোনো স্থাপত্যবিদ এ পুরস্কার পাননি। তবে স্থপতি মাজহারুল ইসলাম সার্বিক অবদানের জন্য পুরস্কৃত হন। দেশের দুজন স্থপতির মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের পুরস্কারে মনোনয়ন পাওয়াও গর্বের বিষয়।

বাংলাদেশের তরুণ স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম যে স্থাপনাটির জন্য মনোনয়ন পেয়েছেন, সেটির অবস্থান রাজধানীর দক্ষিণখান থানার ফায়েদাবাদে। নাম বায়তুর রউফ মসজিদ। আবদুল্লাহপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে পূর্ব দিকে গিয়ে রেললাইন পেরিয়ে মসজিদটির অবস্থান। এর স্থাপত্যের বিশেষ দিক হলো, এর বায়ু চলাচলব্যবস্থা ও আলোর চমৎকার বিচ্ছুরণ মসজিদের পরিবেশকে দেয় ভিন্ন মাত্রা। ৭৫৪ বর্গমিটারের মসজিদটির বিশেষত্ব হলো, এখানকার মসজিদের পরিচিত চিত্র ডোম বা মিনার নেই। চতুর্দিকে আটটি পিলারের ওপর এটি তৈরি। এর নকশার বিশেষত্ব হলো, কিবলার দিকে ১৩ ডিগ্রি কোনাকুনি করা একটি থাম। আলো প্রবেশের জন্য চারদিকে রাখা হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। সুলতানি আমলের মসজিদের অনুপ্রেরণায় তৈরি হয়েছে এর স্থাপত্য।

সেখানকার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘সরকারি চাকরির সুবাদে দেশের অনেক এলাকায় মসজিদ দেখেছি। অনেক ঐতিহাসিক মসজিদও দেখেছি। কিন্তু বায়তুর রউফ মসজিদ অনেক আলাদা। প্রাকৃতিক পরিবেশের বিষয়গুলো অনেক চমৎকারভাবে কাজে লাগানো হয়েছে। অনেক আলো-বাতাস রয়েছে। শীত বা গরমে আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাব বোঝা যায় না মসজিদের ভেতর।’
মসজিদের স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম মসজিদটির বিশেষত্ব সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মসজিদটি তৈরি হয়েছে একটু ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। প্রচলিত মসজিদগুলোর ধরন থেকে আলাদা। আর মসজিদটি নির্মিত হয়েছে স্থানীয় ব্যক্তিদের অংশগ্রহণে, অংশগ্রহণমূলক ধারণা থেকে। খরচও এসেছে সবার কাছ থেকে। পরিবেশবান্ধব এবং আলো-বাতাসের বিষয়টি মাথায় রেখে এর ডিজাইন করেছি। ইতিহাস, সংস্কৃতি, আবহাওয়াসহ নানা বিষয় মাথায় রেখে এর নির্মাণ করা হয়েছে। আর ব্যবহৃত সব উপকরণই স্থানীয়।’

তরুণ এ স্থপতি মনে করেন, আগা খান স্থাপত্য পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পাওয়া একজন স্থপতির জন্য নিঃসন্দেহে গর্বের বিষয়। এর আগেও ২০০৪ সালে এ পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছিলেন তিনি। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে ১৯৯৫ সালে স্নাতক এ স্থপতি অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্যকাজে অবদান রেখেছেন। আরেক স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরীর সঙ্গে যুগ্মভাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতাস্তম্ভ ও স্বাধীনতা জাদুঘরের নকশা করেছেন মেরিনা। ২০১৫ সাল থেকে নিজস্ব স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান মেরিনা তাবাসসুম আর্কিটেক্টস (এমটিএ) পরিচালনা করছেন তিনি।
মেরিনা মনে করেন, ‘আমাদের পরিবেশ ও বসবাসের ক্ষেত্রগুলো নিয়ে স্থপতিদের দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হতে হয়। আমাদের শহর ও বসতিগুলোর উন্নয়নে যুক্ত করতে হবে সবাইকে। সে কারণে নতুন স্থপতিদের সঠিক পথে পরিচালনা ও পথনির্দেশনা দেওয়া জরুরি।’

বায়তুর রউফ মসজিদ স্থাপত্যের বিশেষত্ব
 পরিচিত চিত্র গম্বুজ বা মিনার নেই। চতুর্দিকে আটটি পিলারের ওপর এটি তৈরি।
 কিবলার দিকে ১৩ ডিগ্রি কোনাকুনি করা একটি থাম। আলো প্রবেশের জন্য চারদিকে রাখা হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। সুলতানি আমলের মসজিদের অনুপ্রেরণায় তৈরি হয়েছে এর স্থাপত্য।
 মসজিদের ভেতর শীত বা গরমে আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাব বোঝা যায় না। সুত্র: প্রথম আলো 

লন্ডনে পড়ালেখা: দেশে গরুর খামার করে সফল ওয়াসিফ

সুত্র প্রথম আলাে: লন্ডনের সিটি ইউনিভার্সিটিতে প্রথম বর্ষে পড়ছেন চট্টগ্রামের ছেলে ওয়াসিফ আহমেদ। পড়ালেখার পাশাপাশি নিজ এলাকায় একটি গরুর খামার করেছেন তিনি। এবারের ঈদুল আজহায় তাঁর খামার থেকে বিক্রি হয়েছে ১০০টি গরু। এত অল্প বয়সে কীভাবে উদ্যোক্তা হলেন এই তরুণ? ওয়াসিফ আহমেদ পড়াশোনা করছেন লন্ডনের সিটি ইউনিভার্সিটিতে, বিবিএ প্রথম বর্ষে। ছাত্রের এই পরিচয় ছাপিয়ে তিনি এখন উদ্যোক্তা। বেছে নেওয়া পথটাও অন্যদের চেয়ে একটু আলাদা—পড়ালেখার পাশাপাশি গরুর খামার করেছেন তিনি। ১৯ বছরের এই তরুণ চট্টগ্রাম শহরের কাছেই হাটহাজারী উপজেলার নন্দীর হাটে গড়ে তুলেছেন এশিয়ান অ্যাগ্রো নামে তাঁর নিজস্ব খামার।

এত কিছু থাকতে গরুর খামার কেন, তা–ও আবার লন্ডনে পড়াশোনার পাশাপাশি? ওয়াসিফের সোজাসাপ্টা জবাব, ‘আমার ইচ্ছাটাই প্রাধান্য দিয়েছি। অবশ্য শুরুতে এত বড় করার ইচ্ছা ছিল না। নিজের জন্য ছোট পরিসরে খামার করব ভেবেছি। একপর্যায়ে তা বড় হয়েছে।’

ব্যবসায়ী পরিবারে বেড়ে ওঠা ওয়াসিফের। বাবা এম এ ছালাম তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি। তাঁদের পারিবারিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এশিয়ান গ্রুপের রয়েছে তৈরি পোশাক, টেক্সটাইল, পেপার, অ্যালুমিনিয়াম, হোটেল, রেস্তোরাঁ প্রভৃতি। এরপরও পরিবারের সাহায্য বলতে জমিটুকুই নিয়েছেন ওয়াসিফ। বাকিটা নিজের পুঁজি—কয়েক বছরের জমানো ঈদের টাকা।

ওয়াসিফ শোনান শুরুর গল্প। শখের বশে ২০১৬ সালের নভেম্বরে দুই লাখ টাকা পুঁজিতে খামার শুরু করেন মাত্র চারটি গরু দিয়ে। তখন তিনি চট্টগ্রাম গ্রামার স্কুলের ও লেভেলের ছাত্র ছিলেন। নন্দীর হাটের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান এশিয়ান পেপার মিলের একপাশে পুকুরপাড়ে বেড়া আর টিনের শেড নির্মাণ করে গরু পালন শুরু করেন। মাত্র একজন শ্রমিক রেখেছিলেন দেখাশোনার জন্য। নিজে সপ্তাহের তিন থেকে চার দিন শহরের জিইসি মোড়ের ওআর নিজাম রোডের বাড়ি থেকে খামারে গিয়ে দেখাশোনা করেছেন। ইউটিউবে আধুনিক উপায়ে পশু লালনপালন দেখে নিজেও অনেক কিছু রপ্ত করেন। এক বছরেই সাফল্য আসে। চারটি গরুই ভালো লাভে বিক্রি করেন। পরের বছর গরুর সংখ্যা হয় ১০টি। এবার দুধের জন্য গাভিও যুক্ত করেন। এভাবেই বেড়েছে খামারের পরিসর। এখন গরু রয়েছে ১২০টি। এর মধ্যে ১৫টি গাভি। এসব গাভি থেকে প্রতিদিন ৫০ লিটার দুধ পান, যা বিক্রি হয় স্থানীয় বাজারে।

গুগল ম্যাপের বাতলে দেওয়া পথে চট্টগ্রাম শহরের জিইসি মোড় থেকে অক্সিজেন হয়ে হাটহাজারীর নন্দীর হাটের দূরত্ব ১২ কিলোমিটার। যেতে হয় চট্টগ্রাম-হাটহাজারী সড়ক হয়ে। ঈদুল আজহার তিন দিন আগে ৯ আগস্ট দুপুর ১২টার দিকে পৌঁছাই খামারে। সড়ক ঘেঁষেই সাত কানি জায়গার ওপর খামারটি। পুকুরপাড়ে মোট পাঁচটি শেডে রাখা হয়েছে গরু। তখনো কোরবানির জন্য বিক্রি সব পশু ক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করা হয়নি। মাঝারি ও বড় গরু বেশি। গরু রাখার শেডগুলোও বেশ আধুনিক মানে। ওপরে ফ্যান, পরিচ্ছন্ন মেঝে। গরুর গোবর প্রতি ঘণ্টায় পরিষ্কার করা হয়। পশুর যত্ন-আত্তিতে যেন কোনো অবহেলা না হয়, সেদিকে নজর রাখা হয়। খামারে এখন একজন ব্যবস্থাপকের তত্ত্বাবধানে ছয়জন শ্রমিক কাজ করেন। পুরো খামার সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

ওয়াসিফ জানান, এবারের ঈদুল আজহায় ৫০ হাজার থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকার মধ্যে তাঁর খামারের ১০০টি গরু বিক্রি হয়েছে। মোট লেনদেন প্রায় এক কোটি টাকা। গরুর ওজন ২০০ থেকে ৯০০ কেজি পর্যন্ত। প্রতি বছর ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে গরু তোলা হয়। এসব গরু সংগ্রহ করা হয় কুষ্টিয়া, রাজশাহী, বগুড়া ও চুয়াডাঙ্গা থেকে। খামারে এসব গরু ১০ থেকে ১২ মাস লালনপালনের পর বিক্রির উপযোগী হয়ে ওঠে। 
ওয়াসিফের কাছে প্রশ্ন রাখি, পড়ছেন লন্ডনে, খামার চট্টগ্রামে, তদারকি কীভাবে হয়? বললেন, ‘খামারে সিসি ক্যামেরা থাকায় যেকোনো জায়গা থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। খামারের অন্যান্য সবকিছু সফটওয়্যারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এতে গরুর ওজন, সংখ্যা সবকিছু হালনাগাদ থাকে। তা ছাড়া আমি লন্ডনে পড়াশোনা করছি ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে। লম্বা ছুটি পেলেই দেশে চলে আসি।’

লক্ষ্যে অবিচল
ছোটবেলা থেকে পশু-পাখির প্রতি আলাদা টান ছিল ওয়াসিফের। তা ছাড়া দাদা ও বাবার হাত ধরে প্রতি কোরবানির ঈদে হাটে যেতেন। এসব একত্র হয়ে খামার গড়ার চিন্তা মাথায় আসে। যখন গরুর খামার করতে চাইলেন, বাড়ির অনেকেই অবাক হয়েছেন। কেউ কেউ ‘গরুর ব্যাপারী’ বলে বিদ্রূপও করেছেন। কিন্তু মা–বাবা দুজনেই গুরুত্ব দিয়েছেন ওয়াসিফের ইচ্ছাকে। সায় দিয়েছেন তাঁর কথায়।
ওয়াসিফ বলেন, ‘মা–বাবার সম্মতি ছিল আমার বড় পাওয়া। এরপর সাহস বেড়েছে। এ ছাড়া বেশি গুরুত্ব দিয়েছি চ্যালেঞ্জ নেওয়াকে। আর কোনো কিছু শুরু করতে গেলে এ রকম বাধা আসতেই পারে। আমার কাছে নিজের সাফল্যটাই গুরুত্বপূর্ণ। কিছু লোক থাকে, তারা সবকিছুতে নেতিবাচক দিক খোঁজে। ওসব কথায় কান দিলে এগোনো সম্ভব হবে না। সাহস করে শুরু করতে হবে। সমস্যা থাকলে সমাধানও আছে।’

আছে অনলাইন শপও
খামারের পাশাপাশি ওয়াসিফের রয়েছে ফেসবুকভিত্তিক পাঞ্জাবির অনলাইন শপ। ২০১৭ সালে এই পেজ চালু করেন। মূলত রোজার ঈদে পাঞ্জাবি বিক্রি করেন তাঁর পেজে। গত ঈদে প্রায় ২ হাজার পাঞ্জাবি বিক্রি করেছেন। লেনদেন হয়েছে ১৫ লাখ টাকা। ওয়াসিফ বলেন, ‘আমি সময় নষ্ট না করে কাজে লাগাতে চেষ্টা করি। হোক তা ছোটখাটো কোনো ব্যবসা। নিজে আয় করার আনন্দ অন্য রকম।’