Tuesday, September 3, 2019

ব্যবসা এখন সোনাতেই

সূত্র প্রথম আলো: বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে সোনাই সবচেয়ে খাঁটি। শেয়ারবাজার যেখানে টালমাটাল, বন্ডের বাজারে যখন অস্থিরতা, তখন সোনার দাম তর তর করে বাড়ছে। যদিও প্রথাগত বিনিয়োগমাধ্যম আকর্ষণ হারিয়ে ফেলার কারণেই সোনার এমন বাড়বাড়ন্ত হচ্ছে। কিন্তু সোনা সাধারণত মানুষকে হতাশ করে না, অন্যান্য বিনিয়োগ মাধ্যম যা করে থাকে। তাই দেখা যাচ্ছে, বিশ্ববাজারে সোনার দাম (স্পট মার্কেট) আউন্সপ্রতি ১ হাজার ৫০০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। 

গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববাজারে সোনার দাম ছিল ১ হাজার ৫৩৯ ডলার। এমনকি তা ১ হাজার ৬০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আশঙ্কা করছেন। রয়টার্স ও ব্লুমবার্গ সূত্রে এই খবর পাওয়া গেছে। 

স্পট মার্কেটে সোনার দাম এর আগে ২০১৩ সালের মে মাসে ১ হাজার ৪৬৯ ডলারে উঠেছিল। মাঝের কয়েক বছর সোনার দাম ওঠানামা করলেও চলতি বছরের ১ জুন থেকে সোনার দাম বাড়তে শুরু করে। ব্যাপারটা হলো, মার্কিন-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ ছেড়ে দিয়ে নিরাপদ সম্পদ হিসেবে সোনার দিকে ঝুঁকছেন। পাশাপাশি ডলারের মান পড়ে যাওয়াও বিনিয়োগকারীদের এই সিদ্ধান্ত নিতে উদ্বুদ্ধ করছে। উল্লেখ্য, সোনাও ডলারের মতো একধরনের মুদ্রা। তাই ডলার দুর্বল হলে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সোনায় রিজার্ভ রাখে। 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি নতুন করে ৩০০ বিলিয়ন ডলারের চীনা পণ্যে শুল্ক আরোপ করায় চীন বলেছে, তারাও এর জবাব দেবে। ইউএস গ্লোবাল ইনভেস্টরসের প্রধান বাণিজ্য কর্মকর্তা মাইকেল মাতৌসেক রয়টার্সকে বলেছেন, এই শুল্ক ও চীনের প্রতিশোধ নেওয়ার খবরেই সোনার বাজারদর বাড়ছে। বৈশ্বিক অর্থনীতি নিয়ে নানা ধরনের অনিশ্চয়তা, বন্ডের সুদহার ঋণাত্মক হয়ে যাওয়া, চলমান মুদ্রাযুদ্ধ—এসব কারণে সোনার চাহিদা বাড়ছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, সোনার বাজার এখন ঊর্ধ্বমুখী। এর দাম আরও বাড়ার সম্ভাবনা আছে। এটি সম্ভবত নতুন আরেকটি ধারার শুরু। তাঁরা এ-ও বলছেন, সোনার দাম আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বর নাগাদ আউন্সপ্রতি ১ হাজার ৬০০ ডলারে ওঠার সম্ভাবনা আছে। এরপর দাম সেখানে স্থিতিশীল হবে।

আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ফিলিপ ফিউচারের বিশ্লেষক বেঞ্জামিন লু রয়টার্সকে বলেন, সোনার নিকট-ভবিষ্যৎ বেশ উজ্জ্বল বলেই মনে হচ্ছে। এসব অস্থিরতা, প্রবৃদ্ধি নিয়ে শঙ্কা, অর্থনৈতিক তথ্য-উপাত্তের দুর্বলতা—এসব কারণে ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্র হবে সোনা।

অন্যদিকে ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শেয়ার সূচকের পতন হচ্ছে। এতেও সোনার প্রতি মানুষের আকর্ষণ বেড়েছে। নিরাপদ বিনিয়োগ ক্ষেত্র হিসেবে সোনার কদর বেড়েছে।

বিশ্ববাজারে সোনার দাম বাড়ায় বাংলাদেশের বাজারেও ইতিমধ্যে তিন দফা বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে বাজারে ২২ ক্যারেট সোনা ভরিপ্রতি ৫৬ হাজার ৮৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

আগামী ২০২০ সালে মার্কিন নির্বাচন পর্যন্ত বাণিজ্যযুদ্ধ চলবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। সে কারণে শেয়ারবাজার ও মুদ্রাবাজার একরকম অস্থিরই থাকবে। সেই সুযোগে সোনার দাম আউন্সপ্রতি ১ হাজার ৬০০ ডলারে উঠে যেতে পারে বলেই বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।

Monday, September 2, 2019

ভিনদেশের বন্দরে বাংলাদেশি জাহাজ

সূত্র প্রথম আলো: এ মুহূর্তে জাপান, ইন্দোনেশিয়া, দুবাই, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর বা ভারতের বন্দরের জলসীমায় উড়ছে বাংলাদেশি পতাকা। এই পতাকা বহন করছে বাংলাদেশি জাহাজ। বিদেশের বন্দরে দেশীয় পতাকা ওড়ানোতে এগিয়ে কবির গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিং। কারণ, বাংলাদেশের বহরে থাকা জাহাজের সিংহভাগই তাদের হাতে।

বাংলাদেশে নিবন্ধিত সমুদ্রগামী জাহাজ এখন ৫২টি। এর মধ্যে এককভাবে ১৮টি জাহাজই কবির গ্রুপের। এই গ্রুপের বহরে আগামী মাসে যুক্ত হচ্ছে আরও দুটি। এক দশক ধরে সরকারি-বেসরকারি দুই খাতের মধ্যে জাহাজ পরিচালনা ব্যবসায় নেতৃত্ব দিচ্ছে এ গ্রুপটি। 

আগ্রাবাদের বারিক বিল্ডিং মোড়ে কবির মনজিল থেকে নিয়ন্ত্রণ হয় প্রতিষ্ঠানটির জাহাজের ব্যবসা। বুধবার ভবনের চতুর্থ তলায় গিয়ে দেখা যায়, বড় মনিটরে পর্দায় ভেসে উঠছে সাগর, মহাসাগর ও বন্দরে থাকা প্রতিষ্ঠানটির জাহাজের সাংকেতিক চিহ্ন। পর্দায় চোখ রেখে দেখা যায়, এ মুহূর্তে জাপানের বন্দরে পতাকা উড়িয়ে পণ্য বোঝাই করছে এমভি জোয়াহের জাহাজটি। দুবাই থেকে আরব সাগর হয়ে ভারতের একটি বন্দরে ফিরছে ‘এমভি জাহান মনি’। দক্ষিণ চীন সাগর পেরিয়ে ভিয়েতনামের বন্দরে ভিড়েছে আয়শা সারওয়ার। 

বন্দর থেকে বন্দরে পণ্য নিয়ে জাহাজের ছুটে চলার এই বৈশ্বিক ব্যবসার সব সুফল প্রতিষ্ঠানটি একাই ঘরে তুলছে না। দেশের অর্থনীতিতেও ছোট্ট অবদান রেখে চলেছে তারা। বিদেশের বন্দরে পতাকা ওড়ানোর গৌরব তো আছেই। দেশের আমদানি পণ্য পরিবহন করে বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় হচ্ছে। আবার বিদেশের এক বন্দর থেকে আরেক বন্দরে পণ্য পরিবহন করে বৈদেশিক মুদ্রাও আয় করছে এই প্রতিষ্ঠানটি। শতভাগ দেশীয় নাবিক নিয়োগ করে কর্মসংস্থানের বিষয়টিও নিশ্চিত করছে তারা।

কবির গ্রুপের জাহাজ পরিচালনার ব্যবসার নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক সারওয়ার জাহান। নিজ অফিসে বসে প্রথম আলোকে জানালেন, রপ্তানি আয়, বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়, কর্মসংস্থান এবং বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি বাড়ানো—চারটি অর্জনই এক খাত থেকে হচ্ছে। দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজের সংখ্যা যত বাড়বে, ততই এই চারটি খাতে দেশের অর্জনও বাড়তে থাকবে। সেই চেষ্টাই আমরা করে যাচ্ছি।

জাহাজ পরিচালনার মতো কঠিন ব্যবসায় নেতৃত্ব দেওয়া খুব সহজ নয়। এখানে পণ্য পরিবহনের ভাড়া ঠিক করতে হয় বিশ্বের সব জাহাজ কোম্পানির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে। আন্তর্জাতিক বাজারে জাহাজ ভাড়া প্রতিনিয়ত ওঠানামা করে। এ বাজারে লোকসান দিয়ে হলেও ভাড়া নিতে হয়। কারণ, বসে থাকলে প্রতিদিন খরচ গুনতে হয় জাহাজভেদে আট-দশ লাখ টাকা। এই লোকসানের কথা মাথায় রেখে হাতে অগ্রিম পুঁজি রাখতে হয়। এরপরও থাকে শঙ্কা।

এই যেমন এক দশক আগে বৈশ্বিক মন্দার পর জাহাজের ভাড়া অস্বাভাবিক কমে যায়। সংকট দীর্ঘস্থায়ী হলে বিশ্বের বাঘা বাঘা জাহাজ কোম্পানিও খাদে পড়ে যায়। বিশাল অঙ্কের লোকসানে পড়ে একজন আরেকজনকে অধিগ্রহণ করতে থাকে। কেউ দেউলিয়া হয়ে যায়। এ ঢেউ লেগেছে দেশেও। দেশে অনেকে ধাক্কা সামলাতে না পারলেও কবির গ্রুপ ঠিকই সংকট থেকে নিজেদের বের করে নিয়েছে। 

কীভাবে? কবির গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিম জানালেন, শুধু নিজের কোম্পানির পণ্য পরিবহনের চিন্তা থেকে জাহাজ পরিচালনা ব্যবসা চালানো কঠিন। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেই ব্যবসা করতে হবে। বিশ্বমানের ব্যবস্থাপনা থাকতে হবে। নাহলে সংকটের সময় টিকে থাকা কঠিন।

বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে জাহাজ ব্যবসা শুরু হয়েছে ৪১ বছর আগে। শুরুর দিকে এটলাস শিপিং, সমুদ্রযাত্রা শিপিংয়ের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো পথ দেখিয়ে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে। কিউসি বা এইচআরসির যুগও শেষ হয়েছে। সেখান থেকেই শুরু করেছিল কবির গ্রুপ। ২০০৫ সালে এমভি ফাতেমা জাহান জাহাজ দিয়ে শুরু হয় তাদের বৈশ্বিক ব্যবসার। তাতে কয়েক বছরের মাথায় দেশের শীর্ষস্থানে উঠে আসে তাদের নাম। বিদেশের বন্দর সবচেয়ে জাতীয় পতাকাও উড়ছে তাদের হাত ধরে। যেন বিদেশের বন্দরে এক টুকরো ভাসমান বাংলাদেশ। 

সব মিলিয়ে গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ খাত থেকে রপ্তানি আয় এসেছে ৩০ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আয় হয়েছিল ২৮ কোটি ৩৭ লাখ ডলার।

স্টার্টআপ বা উদ্যোক্তা : শুরুর আগে শুরু

সূত্র প্রথম আলো: এখন অনেকেই উদ্যোক্তা হতে চান। বিজনেস কার্ডে নিজের নামের নিচে ম্যানেজিং ডিরেক্টর বা সিইও লেখা যায়! কিন্তু ব্যাপারটা কি আসলে এতটাই সোজা? অনেক উদ্যোগই শেষ পর্যন্ত স্থায়ী হয়নি। ব্যবসা শুরুর আগে কিছু সঠিক কাজ করলে হয়তো এই অকালমৃত্যু ঠেকানো যেতে পারে।

১. কী করবেন
ব্যবসার ধারণাটি কী আপনার? যেকোনোভাবে একটা নতুন আইডিয়া আপনার মনে আসতে পারে। হতে পারে সেটা কাউকে দেখে, কারও কাছ থেকে শুনে অথবা কোথাও পড়ে। অনলাইন বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও জানতে পারেন বা নিজে উপলব্ধিও করতে পারেন। তবে আইডিয়া পেলেই ঝাঁপিয়ে পড়বেন না। প্রথমে এর বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে, পড়াশোনা করে, আলাপ-আলোচনা করে সেটি যাচাই করে নিন। অনেকেই চুরির আশঙ্কায় আইডিয়া নিয়ে আলাপ করতে চান না। কিন্তু একটা পূর্ণাঙ্গ ব্যবসায় আইডিয়ার অবদান মাত্র ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। বাকিটুকু বাস্তবায়ন। এ ছাড়া পৃথিবীর সবাই আলাদা। কেউ আপনার আইডিয়া শুনলেও সেটা আপনার মতো করে বাস্তবায়ন করতে পারবেন না। মায়ের কাছে সন্তানের মতো উদ্যোক্তার কাছে আইডিয়া। অন্যের সঙ্গে শেয়ার করলে বরং এর দুর্বলতাগুলো ধরা পড়বে। সে ক্ষেত্রে বিরাট ক্ষতি থেকে বাঁচবেন। 

২. কেন করবেন
কিছু সম্ভাব্য ক্রেতা বা গ্রাহকের সঙ্গে বাতচিত করা উচিত। ক্রেতা বা গ্রাহক পণ্য বা সেবা কেনেন না। কেনেন তার উপযোগিতা। যেমন সিনেমা হলে ইদানীং দর্শক কমে যাচ্ছে। সিনেমা হলগুলো আরামপ্রদ করে, গেটআপ বদলিয়ে বা ভালো সিনেমা এনে কি দর্শকে ভরপুর করে ৩০ বছর আগের মতো রমরমা ব্যবসা করা যাবে? সম্ভবত না। কারণ, দর্শক সিনেমা হলে যেতেন বিনোদনের জন্য। সেই বিনোদন এখন পাচ্ছেন টিভি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ইউটিউব থেকে। আপনার পণ্য গ্রাহকের কোন চাহিদাটা মেটাচ্ছে, ভেবে দেখুন। যদি প্রতিযোগী থাকেন, তাহলে বাড়তি কী দিচ্ছেন, সেটাও ভাবুন। বাজারে পণ্যের চাহিদা এবং সরবরাহ কেমন, জেনে নিন। দরকার হলে কোনো পেশাদার প্রতিষ্ঠানের সাহায্য নিন। 

৩. কাদের জন্য
আপনার গ্রাহক কারা, চিনুন। তাঁদের আপনার লক্ষ্য অনুসারে ভাগ করুন। অনেকে বলেন, বাংলাদেশে ১৬ কোটি লোক আছে, তার ১ শতাংশ পেলেই আমার অনেক। ১৬ কোটি লোককে গ্রাহক ভাবার মানে হলো আপনি আপনার গ্রাহককে চেনেননি, পর্যাপ্ত গবেষণা করেননি। গ্রাহককে চিনুন। তাঁরা কোথায় থাকেন, কী করেন, কী চান, কী পছন্দ করেন না—সবকিছু জানুন। 

৪. কীভাবে করবেন
আপনাকে অন্যের থেকে আলাদা হতে হবে। যেটাকে বলে ইউনিক সেলিং প্রপজিশন বা ইউএসপি। পণ্যটি যদি নতুন হয়, তাহলে সেটিই হতে পারে ইউএসপি। অথবা আপনি কস্ট লিডার হতে পারেন। একই পণ্য অন্যরাও দিচ্ছেন, কিন্তু আপনার কাছে অনেক সস্তায় পাওয়া যায়। তবে দেখে নিন আপনার গ্রাহকেরা মূল্য সংবেদনশীল কি না। 

৫. আপনি কেন?
ওপরের সব উপাদান যদি পজিটিভ হয়, তবু এ ব্যবসায় আপনি কেন? আপনার কী গুণ আছে? এ ব্যবসা আপনি কেন করতে পারবেন? আপনার শক্তির জায়গাগুলো কী কী? এই ব্যবসা করার জন্য যে যে গুণ দরকার, তা আপনার বা আপনার অংশীদারের আছে কি? যদি কোনো গুণে ঘাটতি থাকে, তা কীভাবে মেটাবেন? 

৬. সহায়ক শক্তি
ব্যবসা করার জন্য অনেক উপাদান প্রয়োজন হয়, যেমন: কাঁচামাল, জনবল, ভৌত উপাদান, যানবাহনব্যবস্থা ইত্যাদি। আপনার সবকিছু ঠিক থাকলেও সহায়ক শক্তিগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে ও সময়মতো না থাকলে কিন্তু আপনার উদ্যোগ ভেস্তে যাবে। 
এসব ভেবেই আপনার উদ্যোগে নামবেন কিন্তু! 

শওকত হোসেন: ভেঞ্চার বিনিয়োগ বিষয়ক পরামর্শক

বাংলাদেশের সুপারস্টার ৫ ভাইয়ের গল্প

সূত্র প্রথম আলো: গল্পটা তখনকার, যখন ঘরে ঘরে ৬০ ওয়াটের টিমটিমে বাল্ব জ্বলত। ঘণ্টায় ঘণ্টায় বিদ্যুৎ যেত আর সেই গতিতেই কেটে যেত বাল্ব, বাল্বের ব্যবসাও ছিল রমরমা। নারায়ণগঞ্জের মোহাম্মদ ইব্রাহীম তখন একজন পাইকারি ব্যবসায়ী ছিলেন। এর ২৫ বছর পর তাঁর গল্পটা হয়ে উঠল অন্য রকম। 

৬০ ওয়াটের বাতিকে হটিয়ে বাজার এখন এলইডি বাতির। ৩০ শতাংশ এলইডি বাতি তৈরি করে একটি প্রতিষ্ঠান, নাম সুপারস্টার গ্রুপ, সে গ্রুপেরই ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহীম। শুধু বাতি তৈরি নয়, ইব্রাহীম সত্যিকার অর্থেই বিস্তার করেছেন তাঁর সাম্রাজ্য। সুইচ, সকেট থেকে শুরু করে এমন সব পণ্যই সুপারস্টার গ্রুপ তৈরি করে, যা একটি বাতি জ্বালাতে লাগে। 

১৯৯৪ সালে বাতির দুনিয়া শাসনের স্বপ্ন নিয়েই যাত্রা শুরু করেছিলেন মোহাম্মদ ইব্রাহীম। তাই একজন শুভাকাঙ্ক্ষী যখন প্রস্তাব দেন সুপারস্টার নামটি, সেটাকেই লুফে নেন। বাংলাদেশে শুধু তারা পণ্যটি সংযোজন করত। তখন ভাবলেন, পুরো কাজটাই করলে কেমন হয়। নারায়ণগঞ্জে এক আবাসিক ভবনের নিচতলায় শুরু হলো এক প্রোডাক্ট লাইনের বাল্বের কারখানা। দক্ষতা কম, জ্ঞানেও ঘাটতি, কারখানাতেই নষ্ট হয়ে যেত ২০ শতাংশ বাল্ব, পরিবহনে আরও কিছুটা। তারপরও সবকিছু অতিক্রম করে মোহাম্মদ ইব্রাহীম টিকে গেলেন বাল্বের দুনিয়ায়। 

ইব্রাহীমরা পাঁচ ভাই, তিনি তৃতীয়। বড় ভাই মোহাম্মদ জয়নাল আর ইব্রাহীম লাগলেন বাল্বের পেছনে, চতুর্থ ভাই জালাল উদ্দীন বসলেন পুরোনো বাল্বের পাইকারি ব্যবসায়, মেজ ভাই মহিউদ্দীন গেলেন বিদেশে আর সবচেয়ে ছোট হারুন-অর-রশিদকে সুযোগ দেওয়া হলো পড়াশোনা শেষ করে ব্যবসায় যোগ দেওয়ার। 

পাইকারি ব্যবসা করায় ইব্রাহীমরা আগেই জানতেন ক্রেতারা কী চান। পরিচয় ছিল সাপ্লাই চেইনের সঙ্গেও, সেই সম্পর্কই দারুণ কাজে এল। শুধু কাজ করতে হলো উৎপাদন ব্যবস্থায়। এভাবে পাঁচ ভাই মিলে দাঁড়িয়ে ফেললেন সুপারস্টার। ধীরে ধীরে বদলে গেছে বাতির দুনিয়াও। ট্যাংস্টেনট বাল্ব বদলে এল টিউবলাইট, এরপর এনার্জি সেভিং বাল্ব। ইব্রাহীমরাও দক্ষ ব্যবসায়ীর মতো তাঁদের ডিম রাখতে শুরু করলেন আলাদা আলাদা ঝুড়িতে, শুরু হলো সুপারস্টার সুইচের। 

দেশে তখন সুইচ ব্যবসা পুরোটাই ভারতীয়দের দখলে। চীন থেকে ছোট ছোট যন্ত্রাংশ এনে জুড়ে শুরু করা হয় সুপারস্টার সুইচ। এভাবেই ভাইদের নিয়ে ইব্রাহীম এগিয়ে আসেন দেশের অন্যতম বাতি নির্মাতার কাতারে। 

কথা হয় সুপারস্টার ভাইদের সবচেয়ে ছোটজন হারুন-অর-রশিদের সঙ্গে। বললেন, ‘আমি কোম্পানিতে যোগ দিই ১৯৯৯ সালে, জুনিয়র অফিসার হিসেবে। অফিসের সব ধরনের কাজ করতে হতো নিজ হাতে। কাজ করে করে পদোন্নতি পেয়ে এখন উপব্যবস্থাপনা পরিচালক।’ হারুন লেখাপড়া করেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর প্রায় পাঁচ বছর পর আবার পড়াশোনা করেছেন আন্তর্জাতিক ব্যবসায়। কারণ, সুপারস্টারের চোখটাও এখন আন্তর্জাতিক বাজারের দিকেই। 

হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘আমাদের প্রথম লক্ষ্য সুইচ নিয়ে ভারতের বাজারে ঢোকা। সেই মতো আমরা তাদের চাহিদা অনুযায়ী সুইচ তৈরি করছি। এর বাইরে তার বা কেবলের রাজ্যটা জয় বাকি আছে। আমরা কেব্​ল তৈরিতেও কাজ করছি। এ ছাড়া মালয়েশিয়াতে কিছু কাজ করার ইচ্ছা আছে। 

কীভাবে এল সাফল্য? হারুন-অর-রশিদ বললেন, ‘প্রথমত আমাদের ভাইদের একতা, দ্বিতীয়ত, আমাদের করপোরেট গভর্নেন্স খুব শক্তিশালী, সঠিক কর্মী নিয়োগ, তাঁদের ক্ষমতায়ন, লক্ষ্যের সঙ্গে তাঁদের একাত্ম করা—এসবই সাফল্যের একটি কারণ। আমরা কর্মীদের বিশ্বাস করি, তাঁদের স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দিই। সেই বিশ্বাসই সাফল্যের কারণ সুপারস্টারের।

বিশ্বের শীর্ষ ৫ ধনী ব্যক্তির পাঁচ রকম তথ্য

ফুলডট কম থেকে নেওয়া: বিশ্বের শীর্ষ ১ শতাংশ ধনী মানুষ সম্পদ বানাতে পারে—এটি বোঝানোর জন্য বিশেষ পরিশ্রমের দরকার নেই, শুধু একটি তথ্য দিয়েই তা পরিষ্কার করা সম্ভব। তা হলো, আমরা বাকি ৯৯ শতাংশ মানুষ যা আহরণ করি, এই ১ শতাংশই তা করে থাকে। তাদের নিয়েই দারুণ কিছু তথ্য। 

১. যুক্তরাষ্ট্রে এই ১ শতাংশের কাতারে যেতে বার্ষিক উপার্জন দরকার ৪ লাখ ২১ হাজার ৯২৬ ডলার। অর্থাৎ মাসে ৩৫ হাজার ১৬১ ডলার এবং দিনে ১ হাজার ১৫৬ ডলার।

২. শীর্ষ ১% মানুষ নিচের ৯৯% মানুষের চেয়ে ২৬.৩ গুণ বেশি আয় করে। এই ১ শতাংশের কাতারে থাকা মানুষেরা বছরে ১৩ লাখ ১৭ হাজার ডলার পর্যন্ত আয় করতে পারে। এর বিপরীতে ৯৯ শতাংশ মানুষ বছরে ৫০ হাজার ১০৭ ডলার পর্যন্ত আয় করে থাকে। অর্থাৎ পার্থক্য দাঁড়ায় ২৬ দশমিক ৩ গুণ। 

৩. যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ১ শতাংশ ধনী মানুষের সংখ্যা ৩২ লাখ ৯০ হাজার। এদের হাতে দেশটির মোট জাতীয় সম্পদের ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ। আর বাকি ৩২ কোটি ৫৭ লাখ মানুষের হাতে আছে ৫৭ দশমিক ৫ শতাংশ সম্পদ। বিশ্বের অন্য কোনো দেশে এত অল্পসংখ্যক মানুষের হাতে এত বেশি সম্পদ পুঞ্জীভূত নেই। আয়বৈষম্যের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে থাকা নেদারল্যান্ডসে ১ শতাংশ মানুষের হাতে আছে মাত্র ২৮ শতাংশ সম্পদ।

৪. যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ১ শতাংশ ধনীর হাতে দেশটির ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ সম্পদ থাকলেও সেখানকার বার্ষিক মোট আয়ের মাত্র ১৯ দশমিক ৭ শতাংশ এদের ঘরে যায়। তবে দেশটির মোট আহরিত করের ৩৭ দশমিক ২ শতাংশ দেন এঁরা। অনেকেই বলেন যে এঁদের আরও বেশি কর দেওয়া উচিত। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই বোঝে না, এখনই তাঁরা ঠিক কত দিচ্ছেন।

৫. যুক্তরাষ্ট্রের অনেক মানুষের পক্ষেই হয়তো দেশটির শীর্ষ ধনীর কাতারে যাওয়া সম্ভব হবে না, তবে অনেকেই কিন্তু অজান্তে বিশ্বের শীর্ষ ১ শতাংশ ধনীর কাতারে বসে আছেন। গ্লোবাল রিচ লিস্টের তথ্যানুসারে বার্ষিক ৩২ হাজার ৪০০ ডলার উপার্জন থাকলেই কারও পক্ষে বিশ্বের শীর্ষ ধনীর কাতারে চলে যাওয়া সম্ভব। 

তবে নিজেকে ধনী ভাবতে বা আয়-উপার্জন বাড়াতে আপনাকে বিশ্বের শীর্ষ ১ শতাংশ ধনীর কাতারে যেতেই হবে এমন কথা নেই, মাসে ১০০ থেকে ২০০ ডলার আয় বাড়াতে পারলেই জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আসবে। এতে বছর শেষ দেখা যাবে, আপনার বার্ষিক আয় কয়েক শ ডলার বেড়ে যাবে। অর্থাৎ ধৈর্যের সঙ্গে পরিকল্পনামাফিক পরিশ্রম করে গেলে জীবনযাত্রার মান উন্নত করা যায়। 

বিদ্যুতের আলো ছাড়াই কাজ করা যায় যে ভবনে

সূত্র প্রথম আলো: গুলশানের মতো এলাকায় বাঁশগাছ। তাও আবার বহুতল ভবনের প্রতিটি তলায়। নান্দনিক বিষয়টি সিটিস্কেপ টাওয়ারের সামনে গেলেই চোখে পড়বে। ১৬ তলা ভবনের অধিকাংশ তলাতেই দিনের বেলায় বিদ্যুতের আলো ছাড়াই কাজ করা যায়। ভবনটিতে এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়। 

সিটিস্কেপ টাওয়ার নির্মাণ করেছে সিটিস্কেপ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) লিড প্লাটিনাম নামের পরিবেশবান্ধব সনদ পায়। লিড প্লাটিনাম ক্যাটাগরিতে এটিই দেশের প্রথম বাণিজ্যিক ভবন। এটি ১১০ নম্বরের মধ্যে পেয়েছে ৮১। ভবনের স্থপতি মুজতবা আহসান ও শাহরিয়ার ইকবাল রাজ।

সিটিস্কেপ ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক মোস্তফা মঈন সারোয়ার গত বৃহস্পতিবার ঘুরিয়ে দেখান। তিনি জানান, ভবনের দেয়ালে দ্বিস্তরের কাচ ব্যবহার করা হয়েছে। তাতে আর্গন গ্যাস থাকায় সূর্যের তাপে খুব বেশি গরম হয় না। আবার ভবনের ভেতরে ও বাইরে স্পেন থেকে আনা তাপ শোষণক্ষমতার বিশেষ কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। এই কাচ ও কাঠের কারণে কক্ষ তুলনামূলক শীতল থাকে তাই শীতাতপনিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের পেছনে খরচ কিছুটা কম। আবার ভবনটিতে ব্যবহার করা হয়েছে উন্নত মানের লিফট। এটি সাধারণ লিফটের চেয়ে ৭৫ শতাংশ কম বিদ্যুতেই চলে। 

এখানেই শেষ নয়, ভবনের প্রক্ষালনকক্ষে ব্যবহৃত পানি পরিশোধন করে আবার ব্যবহার করা হয়। বেসিনের ব্যবহৃত পানিও পরিশোধন হচ্ছে। তাতে ৮০ শতাংশ পানিই পুনরায় ব্যবহার হয় ভবনটিতে। ভবনের ছাদে আছে সৌরবিদ্যুৎ। 


সাড়ে ১৬ কাঠা জমির ওপর পরিবেশবান্ধব ভবনটি নির্মাণে চারপাশের অর্ধেক জায়গা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পার্কিংয়ের জন্য বেসমেন্ট আছে তিনটি তলা। তবে সেখানে বিশেষ ব্যবস্থায় দ্বিগুণ গাড়ি রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৫টি তলা বেসরকারি ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া ও বিক্রয় করেছে সিটিস্কেপ ইন্টারন্যাশনাল।

পড়ুন ৭ প্রকার অর্থনীতি

সূত্র প্রথম আলো: অর্থনীতিরও রং আছে। কম নয়, মোট সাতটি রং। এই সাতরঙা অর্থনীতির চেহারাও আলাদা। এর মধ্যে ভালো আছে, মন্দ আছে। আমাদের জীবনযাপনের সঙ্গেও জড়িয়ে আছে অর্থনীতির এ সাতটি রং। সাত রঙের এই অর্থনীতি থেকে দূরে নেই বাংলাদেশও।

কালো অর্থনীতি
এই যেমন কালো রঙের অর্থনীতি। ‘কালো অর্থনীতি’ সম্পর্কে কমবেশি সবারই ধারণা আছে। এটি অপ্রকাশ্য অর্থনীতি বা ছায়া অর্থনীতি। এই অর্থনীতিতে চোরাগোপ্তা বাজার বা লেনদেন থাকে, যা আইন লঙ্ঘনকারী। অস্ট্রিয়ার অর্থনীতিবিদ ফ্রেডারিক স্নেইডার ৩০ বছর ধরে কালো অর্থনীতি নিয়ে কাজ করেন। তাঁর গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশের কালোটাকার পরিমাণ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩০ থেকে ৩৩ শতাংশের সমান।

সাদা অর্থনীতি
অপরদিকে সাদা অর্থনীতি একটি নতুন শব্দ। ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ডগলাস ম্যাকউইলিয়ামস এটি প্রথম প্রচলন করেন। ২০১৫ সালে প্রকাশিত হয় ম্যাকউইলিয়ামসের ‘দ্য ফ্ল্যাট হোয়াইট ইকোনমি: হাউ দ্য ডিজিটাল ইকোনমি ট্রান্সফরমিং লন্ডন অ্যান্ড আদার সিটিজ’ গ্রন্থটি। এতে বলা হয়, ২০০৭ ও ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দায় যে ব্যবসায়িক ক্ষতি হয় তা পূরণ করতে কীভাবে সক্ষম হয় লন্ডন। একই ভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদের পর (বিচ্ছেদ) ডিজিটাল সার্ভিসের মাধ্যমে তা কীভাবে সামাল দেওয়া হবে-এই পরিস্থিতিগুলোকেও ‘হোয়াইট ইকোনমি’ বলে।

সবুজ অর্থনীতি
‘গ্রিন ইকোনমি’ এমন একটি শব্দ, যা ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত ‘ধরিত্রী সম্মেলনে’ আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল। জাতিসংঘ সঠিক প্রবৃদ্ধি নির্ণয়ের জন্য জাতীয় আয় থেকে বার্ষিক পরিবেশগত ব্যয় বাদ দেওয়ার কথা বলে। ধারণাটির নাম দেওয়া যেতে পারে ‘সবুজ জাতীয় আয়’। বিংশ শতাব্দীজুড়ে পরিবেশগত নানা আন্দোলন ও সম্মেলন আমাদের সামনে নিয়ে এসেছে একের পর এক পরিবেশবান্ধব মডেল। এসব মডেলের মধ্যে গ্রিন ইকোনমি বা সবুজ অর্থনীতি মডেল ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সবুজ অর্থনীতি, সবুজ প্রবৃদ্ধি আর সবুজ উন্নয়ন নিয়ে বাংলাদেশেও আলোচনা হচ্ছে। কম কার্বন খরচ করে যে বিকাশ; পরিবেশ-প্রকৃতি-জীববৈচিত্র্যের হাত ধরাধরি করে যে অগ্রগতি, তাকেই সরলভাবে সবুজ প্রবৃদ্ধি বলা হয়ে থাকে।

বাদামি অর্থনীতি
‘ব্রাউন ইকোনমি’ মূলত এমন শিল্পগুলোকে বোঝায়, যা উচ্চ মাত্রায় দূষণ এবং গ্যাস নির্গমন ঘটায়। এই ধরনের শিল্পের মধ্যে রয়েছে সিমেন্ট, লোহা খনির কাজ এবং কয়লা খনন। এসব শিল্পের বর্জ্য পরিশোধনে, ধোঁয়া নির্গমনপ্রক্রিয়া তৈরি করতে গত ৫০ বছরে প্রচুর বিনিয়োগ হয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কারখানার পরিত্যক্ত জিনিস পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করে তোলা। যেমন চামড়াশিল্পগুলোতে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) নির্মাণ করা হয়। বাংলাদেশে সাভারে চামড়াশিল্প স্থানান্তরের পর সিইটিপি নির্মাণের কাজ চলছে।

নীল অর্থনীতি
‘ব্লু ইকোনমি’ হচ্ছে সমুদ্রভিত্তিক অর্থনীতি। সমুদ্র থেকে যা–ই আহরণ করা হোক না কেন, যদি সেটা দেশের অর্থনীতিতে যুক্ত হয়, তবে সেটা ব্লু ইকোনমির পর্যায়ে পড়বে। আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে ২০১২ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে আর ২০১৪ সালে ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ায় মোট ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের বেশি টেরিটরিয়াল সমুদ্র এলাকা এখন বাংলাদেশের। সঙ্গে আছে ২০০ নটিক্যাল মাইল একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল ও চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশে সব ধরনের প্রাণিজ-অপ্রাণিজ সম্পদের ওপর সার্বভৌম অধিকার।

ধূসর অর্থনীতি
‘গ্রে ইকোনমি’ হলো একটি দেশের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের এমন অংশ, যা সরকারি পরিসংখ্যানে গণ্য হয় না। আরও বিস্তারিতভাবে বললে, অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতি বা ধূসর অর্থনীতি এমন একটি অর্থনীতির অংশ, যা কোনোভাবেই সরকারকে কোনো কর দেয় না বা সরকারের পক্ষ থেকে তদারকি করা হয় না। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতি শ্রমশক্তির ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ। ২০১০-এর শ্রমশক্তি জরিপ অনুসারে বাংলাদেশে ৮৭ শতাংশ শ্রমশক্তি অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতিতে নিযুক্ত রয়েছে।

লাল অর্থনীতি
অনেক লেখকের মতে, ‘রেড ইকোনমি’ সমাজতান্ত্রিক ধারার অর্থনীতিগুলোকে বোঝায়, যেখানে রাষ্ট্র উৎপাদন এবং বণ্টন ধরে রাখে।

গ্রিন কারখানায় সেঞ্চুরি বাংলাদেশের


সূত্র প্রথম আলো: দেশে পরিবেশবান্ধব কারখানা ও ভবনের সংখ্যা এখন ১০৮। তার মধ্যে পোশাক ও বস্ত্র খাতেই ৯৫টি, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ। তার মধ্যে সেরা ১০–এর ৬টিই বাংলাদেশের। ক্রিকেটার সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহরা এখন অহরহই সেঞ্চুরি করেন। অভিনন্দন পান। তাঁদের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত হয় দেশের মানুষ। এবার দেশের উদ্যোক্তারাও অন্য রকম এক সেঞ্চুরি করে ফেললেন। বিভিন্ন এলাকায় এক শর বেশি পরিবেশবান্ধব কারখানা ও বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করেছেন তাঁরা। এটির সুফল পাবে দেশের অর্থনীতি ও দেশের সাধারণ মানুষ। 

পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তা সাজ্জাদুর রহমান মৃধার হাত ধরে ২০১২ সালে প্রথম পরিবেশবান্ধব কারখানার যাত্রা শুরু হয় বাংলাদেশে। পাবনার ঈশ্বরদী ইপিজেডে তিনি স্থাপন করেন ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও। তাঁর দেখানো পথ ধরে ৯৪টি পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানা ও বস্ত্রকল হয়েছে। পিছিয়ে নেই অন্যরাও। শিপইয়ার্ড, জুতা, ও ইলেকট্রনিক পণ্য নির্মাণেও আছে পরিবেশবান্ধব কারখানা। বাণিজ্যিক ভবনও হচ্ছে। তবে অন্য যে কোনো দেশের চেয়ে বর্তমানে বাংলাদেশেই সবচেয়ে বেশি পরিবেশবান্ধব পোশাক ও বস্ত্রকল রয়েছে। 

দেশে এক শর বেশি পরিবেশবান্ধব কারখানা হলেও সেগুলো কিন্তু যেনতেন মানের না। উদাহরণ দিলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। বিশ্বে জিনস বা ডেনিম কাপড় উৎপাদন করার প্রথম পরিবেশবান্ধব কারখানা বাংলাদেশের ময়মনসিংহের ভালুকায় এনভয় টেক্সটাইল। নারায়ণগঞ্জের আদমজী ইপিজেডে রেমি হোল্ডিংস, সারা বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানা। আবার নারায়ণগঞ্জের উত্তর নরসিংহপুরের প্লামি ফ্যাশনস, নিট পোশাক তৈরি করা বিশ্বের প্রথম ও শীর্ষ নম্বর পাওয়া পরিবেশবান্ধব কারখানা।

সারা বিশ্বের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সনদ দিয়ে থাকে। তাদের মধ্যে একটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি)। তারা ‘লিড’ নামে পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সনদ দিয়ে থাকে। লিডের পূর্ণাঙ্গ রূপ লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন। সনদটি পেতে একটি প্রকল্পকে ইউএসজিবিসির তত্ত্বাবধানে নির্মাণ থেকে উৎপাদন পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে সর্বোচ্চ মান রক্ষা করতে হয়। ভবন নির্মাণ শেষ হলে কিংবা পুরোনো ভবন সংস্কার করেও আবেদন করা যায়। 

১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইউএসজিবিসি। সংস্থাটির অধীনে কলকারখানার পাশাপাশি বাণিজ্যিক ভবন, স্কুল, হাসপাতাল, বাড়ি, বিক্রয়কেন্দ্র, প্রার্থনাকেন্দ্র ইত্যাদি পরিবেশবান্ধব স্থাপনা হিসেবে গড়ে তোলা যায়। বর্তমানে বিশ্বের ১৬৭ দেশে লিড সনদ পাওয়া স্থাপনার সংখ্যা ৯২ হাজারের বেশি। লিড সনদের জন্য ৯টি শর্ত পরিপালনে মোট ১১০ পয়েন্ট আছে। এর মধ্যে ৮০ পয়েন্টের ওপরে হলে ‘লিড প্লাটিনাম’, ৬০-৭৯ হলে ‘লিড গোল্ড’, ৫০-৫৯ হলে ‘লিড সিলভার’ এবং ৪০-৪৯ হলে ‘লিড সার্টিফায়েড’ সনদ মেলে।

বাংলাদেশের পরিবেশবান্ধব স্থাপনাগুলোর একটি ছাড়া সবগুলো ইউএসজিবিসির অধীনে সনদ পেয়েছে। সংস্থাটির ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা গেছে, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বাংলাদেশের ১০৭টি স্থাপনা লিড সনদ পেয়েছে। তার মধ্যে লিড প্লাটিনাম ২৮টি, গোল্ড ৬৬টি, সিলভার ১১টি এবং ২টি সার্টিফায়েড সনদ পেয়েছে। ১০৭টি পরিবেশবান্ধব স্থাপনার মধ্যে ৯৫টিই পোশাক ও বস্ত্র খাতের কারখানা। বর্তমানে ৫০০-এর বেশি প্রকল্প পরিবেশবান্ধব হতে ইউএসজিবিসির অধীনে কাজ চলছে। তা ছাড়া দেশের একমাত্র পরিবেশবান্ধব জাহাজভাঙার ইয়ার্ড পিএইচপি শিপ ব্রেকিং অ্যান্ড রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিজ। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে পিএইচপি গ্রুপের এই ইয়ার্ড ২০১৭ সালে হংকং ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন অনুযায়ী পরিবেশবান্ধব শিপ ইয়ার্ডের মর্যাদা পায়।

সাধারণত অন্যান্য স্থাপনার চেয়ে পরিবেশবান্ধব স্থাপনায় ৫-২০ শতাংশ খরচ বেশি হয়। তবে বাড়তি খরচ করলেও দীর্ঘমেয়াদি সুফল পাওয়া যায়। ইউএসজিবিসি লিড সনদ পেতে স্থাপনা নির্মাণে ৯টি শর্ত পরিপালন করতে হয়। তার মধ্যে আছে এমন নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করতে হয়, যাতে কার্বন নিঃসরণ কম হয়। এ জন্য পুনরুৎপাদনের মাধ্যমে তৈরি ইট, সিমেন্ট ও ইস্পাত লাগে। বিদ্যুৎ খরচ কমাতে সূর্যের আলো, বিদ্যুৎসাশ্রয়ী বাতি ও সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হয়। ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমাতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের পাশাপাশি পানি সাশ্রয়ী কল ও ব্যবহৃত পানি প্রক্রিয়াজাত করে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করতে হয়। এ ছাড়া স্থাপনায় পর্যাপ্ত খোলা জায়গা রাখার বাধ্যবাধকতা আছে। সব মিলিয়ে পরিবেশবান্ধব স্থাপনায় ২৪-৫০ শতাংশ বিদ্যুৎ, ৩৩-৩৯ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ এবং ৪০ শতাংশ পানি ব্যবহার কমানো সম্ভব। তার মানে দেশে পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সংখ্যা যত বেশি হবে, ততই তা পরিবেশের ওপর চাপ কমাবে। 

পরিবেশবান্ধব স্থাপনায় অর্থনীতি, পরিবেশ ও মানুষ উপকৃত হয়, এমনটাই বললেন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ৩৬০ ডিগ্রি টোটাল সলিউশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনন্ত আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পরিবেশবান্ধব কারখানার মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও পানির খরচ কমপক্ষে ২৫ শতাংশ কমানো যায়। তাতে বিপুল পরিমাণ ব্যয় সাশ্রয় হয়। তা ছাড়া পরিবেশবান্ধব কারখানায় উন্নত কর্মপরিবেশের কারণে কর্মীদের উৎপাদনশীলতাও বাড়ে। 

শুরুর গল্প 

আগেই বলা হয়েছে, ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও দিয়ে দেশে পরিবেশবান্ধব কারখানার যাত্রা শুরু হয়। তবে গত সাত বছরে শতাধিক পরিবেশবান্ধব স্থাপনা হওয়ার পেছনে ভূমিকা রেখেছে সাভারের রানা প্লাজা ধস। সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ নিয়ে বড় রকমের প্রশ্ন ওঠে। তখন বিদেশি ক্রেতাদের চাপে কর্মপরিবেশ উন্নয়নে লেগে পড়েন উদ্যোক্তারা। তাঁরা কারখানার বিভিন্ন ত্রুটি সংশোধন করার পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব নতুন কারখানা নির্মাণ শুরু করেন। কেউ কেউ আবার পুরোনো কারখানাকেই পরিবেশবান্ধব করার উদ্যোগ নেন। 

চট্টগ্রামের প্যাসিফিক জিনসের কারখানা লিড গোল্ড সনদ পেয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, ‘রানা প্লাজা ধসের পর কারখানার মান উন্নয়নের তাগিদ ও পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই আমরা পুরোনো কারখানাকে পরিবেশবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলেছি। অনেক উদ্যোক্তাই সেই কাজটি করেছেন। সে জন্যই বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে আমাদের দেশের কারখানা এখন অনেক বেশি নিরাপদ।’ 

প্লামি ও শুনিভার্সের গল্প 

ফটক দিয়ে ঢুকতেই সারি সারি গাছ। বেশ খানিকটা এগোনোর পর ছিমছাম কারখানা ভবন। চট করে কেউ দেখলে বুঝতেই পারবেন না যে ভেতরে দেড় হাজার নারী-পুরুষ বিদেশি নামীদামি ব্র্যান্ডের জন্য পোশাক তৈরি করছেন। খোলামেলা পরিবেশ। চারপাশে প্রচুর গাছপালা। আলাদা ভবনে রয়েছে শিশু দিবাযত্ন ও চিকিৎসাকেন্দ্র এবং বিশাল খাবার কক্ষ।

নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের উত্তর নরসিংহপুরে প্লামি ফ্যাশনসের চিত্র এটি। ২০১৫ সালে যাত্রা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। গত বুধবার কারখানাটিতে গিয়ে দেখা গেল, গত চার বছরেও প্লামি এতটুকু রং হারায়নি। 

২১ বিঘা জমির ৬২ শতাংশ জায়গা উন্মুক্ত রেখে প্লামির মূল কারখানাটি করা হয়েছে। দুই তলাবিশিষ্ট কারখানার চারপাশে স্বচ্ছ কাচের কারণে পর্যাপ্ত পরিমাণে সূর্যের আলো ভেতরে আসে। সে জন্য বৈদ্যুতিক বাতির প্রয়োজন কম হয়। বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য ভূগর্ভে নির্মাণ করা হয়েছে একাধিক জলাধার। সেই পানি ব্যবহারের পাশাপাশি বাথরুমে পানিসাশ্রয়ী কল লাগানো হয়েছে। এসব কারণে কারখানাটিতে বিদ্যুৎ ও পানি ব্যবহার ৪০ শতাংশ কম হয়।

প্লামি ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল হক বলেন, ‘মুনাফার জন্য আমরা ব্যবসা করি। তবে আত্মতৃপ্তি ও দায়িত্ববোধের একটি বিষয় তো আছেই। দেশ ও শিল্পের প্রতি দায়বদ্ধতার জায়গা থেকেই পরিবেশবান্ধব কারখানা করেছি। সে জন্য আমরা বেশ খুশি।’ অন্যদিকে দেশের একমাত্র পরিবেশবান্ধব জুতার কারখানা ময়মনসিংহের ভালুকার শুনিভার্স ফুটওয়্যার। কারখানাটিতে দিনে গড়ে সাড়ে চার হাজার জোড়া জুতা উৎপাদন হয়, যার পুরোটাই ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। 

ভালুকা প্রতিনিধি জানান, মূল ফটকের দিয়ে কয়েক কদম প্রশাসনিক ভবন। তার বাঁ দিকে কারখানা ভবন। ভেতরের পরিবেশটা সাজানো–গোছানো। ভবনের নকশাটি এমনভাবে করা হয়েছে, যাতে করে সূর্যের আলোতে কাজ করতে পারেন শ্রমিকেরা। বৃষ্টির পানি ধরে তা পরিশোধন করে ব্যবহার করা হয়। শ্রমিকদের খাবারের জন্য আছে আলাদা জায়গা। প্রতিটি ভবনের আশপাশে লাগানো হয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফলের গাছ। 

শুনিভার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিয়াদ মাহমুদ বলেন, পোশাকের পরই সম্ভাবনাময় খাত চামড়া। তা ছাড়া পোশাকশিল্পের কমপ্লায়েন্সের বিষয়গুলো অবধারিতভাবেই চামড়া খাতে চলে আসবে। সেটি উপলব্ধি করতে পেরেই আমরা পরিবেশবান্ধব কারখানা করেছি।

সর্বোচ্চ সনদ যাদের

পোশাক ও বস্ত্র খাতের লিড প্লাটিনাম সনদ পাওয়া কারখানার সংখ্যা ২৪। সেগুলো হচ্ছে ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও, জেনেসিস ওয়াশিং ও জেনেসিস ফ্যাশনস, কলাম্বিয়া ওয়াশিং প্ল্যান্ট, ইউএইচএম লিমিটেড, প্লামি ফ্যাশনস, বিটপী গ্রুপের রেমি হোল্ডিংস ও তারাসিমা অ্যাপারেল, ডিজাইনার ফ্যাশনস, মিথিলা টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ, কানিজ ফ্যাশনস, এসকিউ কোলব্লেনস, এসকিউ সেলসিয়াস ২, এসকিউ বিরিকিনা, এসকিউ সেন্ট্রাল, ইকোটেক্স, এআর জিনস, গ্রিন টেক্সটাইল লিমিটেডের ইউনিট ৩, পাইওনিয়ার ডেনিম, কেনপার্ক ২ এবং দ্য সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড ওভেন অ্যান্ড ইউনিট ২। পোশাক ও বস্ত্র খাতের বাইরে ৪টি লিড প্লাটিনাম সনদ পেয়েছে এএসজি ফ্যান ফ্যাক্টরি, বিআইএফএফএল, সিটিস্কেপ ও সায়হাম টাওয়ার। 

 পোশাকের গ্রিন ব্র্যান্ডিং 

পোশাক ও বস্ত্র খাতে ৯৫টি পরিবেশবান্ধব কারখানা হয়েছে। অর্জনটিকে বহির্বিশ্বে তুলে ধরতে পারলে পোশাকের বাড়তি দাম পাওয়া সম্ভব। তবে সেই কাজটি সঠিকভাবে শুরু করা যায়নি বলে পরিবেশবান্ধব কারখানার উদ্যোক্তারা আক্ষেপ করলেন। 

তৈরি পোশাকশিল্পমালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক বলেন, ‘পরিবেশবান্ধব কারখানা পোশাকশিল্পের জন্য বড় শক্তি। আমাদের শিল্পকে নিরাপদ ও টেকসই করতে সহায়তা করছে কারখানাগুলো। এটিকে কাজ লাগাতে আমরা কাজ শুরু করেছি। ইউএসজিবিসির সঙ্গে আমরা শিগগিরই একটি সমঝোতা স্মারক সই করব। তারা আমাদের পরিবেশবান্ধব কারখানার প্রচার-প্রচারণা চালাবে। তা ছাড়া আমরা নিজেরাও ব্র্যান্ডিংয়ে নামব।’ 

ব্যাটারি আর বিস্কুটে সফল অলিম্পিক



সূত্র প্রথম আলো: আলো আলো, বেশি আলো, শব্দে শব্দে, মন মাতাল, অলিম্পিক অলিম্পিক ব্যাটারি—সাড়াজাগানো এ বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেলটি এখনো নিশ্চয় অনেকের মনে গেঁথে আছে। বিজ্ঞাপনটির মডেল ছিলেন অভিনেত্রী মিতা নূর। তিনি এখন আর বেঁচে নেই, অলিম্পিক ব্যাটারির ব্যবসার ‘বেশি আলোও’ আর নেই। ব্যাটারির ব্যবসার রাজা থেকে অলিম্পিক এখন বিস্কুট, কনফেকশনারি ব্যবসায় বাজারের সেরা কোম্পানি। ব্যবসার ধরন বদলানোর পাশাপাশি নামেরও বদল ঘটেছে কোম্পানিটির।

১৯৭৯ সালে যাত্রার শুরুতে কোম্পানিটির নাম ছিল বেঙ্গল কার্বাইড লিমিটেড। ১৯৯৬ সালে নাম বদল করে হয় অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। ওই বছর থেকে বিস্কুট ও কনফেকশনারি ব্যবসায় নাম লেখায় প্রতিষ্ঠানটি। তাতে সাফল্যও আসে কয়েক বছরে। এরপর ব্যবসার পরিধি বেড়েছে। যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন পণ্য ও উৎপাদন লাইন। এর আগে ১৯৮৭ সালে কোম্পানিটি তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল ফুডসের নামে সয়াবিন তেল ও ভেজিটেবল ঘি বাজারে আনে।

কোম্পানিটির সর্বশেষ ২০১৭-১৮ অর্থবছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী বর্তমানে অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের নয়টি বিস্কুট, তিনটি কনফেকশনারি, একটি বেকারি, একটি স্ন্যাকস ও একটি নুডলস উৎপাদনের আলাদা আলাদা লাইন রয়েছে। কোম্পানির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৯টি বিস্কুটের লাইনে অলিম্পিক এনার্জি প্লাস, নাটি, টিপ, হাইলাক্স, ফাস্ট চয়েজসহ ৩২ ধরনের মজাদার বিস্কুট উৎপাদিত হয়।

আয়ের ৯৭% খাদ্যপণ্যের দখলে

অলিম্পিকের কর্মকর্তারা বলেন, বর্তমানে বছরে কোম্পানিটির যে আয় হয়, তার প্রায় ৯৭ শতাংশই আসে বিস্কুট, কনফেকশনারি, স্ন্যাকসসহ খাদ্যপণ্যের ব্যবসা থেকে। বাকি ৩ শতাংশের মতো আয় আসে ব্যাটারির ব্যবসা থেকে। অর্থাৎ ব্যাটারির আলো যেন এসে পড়েছে কোম্পানিটির বিস্কুটসহ খাদ্যপণ্যের ব্যবসায়। অলিম্পিক ও অলিম্পিক গোল্ড—এ দুই নামে ব্যাটারি বাজারে রয়েছে কোম্পানিটির। ব্যাটারির জন্য রয়েছে কোম্পানিটির আলাদা তিনটি উৎপাদন লাইন। নারায়ণগঞ্জে রয়েছে কোম্পানিটির চারটি কারখানা। এসব কারখানায় প্রায় সাত হাজার লোক কাজ করেন।

কোম্পানির একাধিক কর্মকর্তার দাবি, দেশের প্যাকেটজাত ব্র্যান্ডের বিস্কুট ও কনফেকশনারির বাজারের ৫০ শতাংশই অলিম্পিকের দখলে। বাজারে নিজেদের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করতে দশম বিস্কুট উৎপাদন লাইন চালুর পরিকল্পনা রয়েছে কোম্পানিটির।

কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৮৬ হাজার ৯৩৫ মেট্রিক টন বিস্কুট, কনফেকশনারি, বেকারি পণ্যসহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্য বিক্রি করা হয়। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল ৮০ হাজার ২৮৯ মেট্রিক টন।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে কোম্পানিটি মোট আয় করে ১ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ২৫৫ কোটি টাকা এসেছে বিস্কুট, কনফেকশনারি, বেকারি পণ্যসহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্যের ব্যবসা থেকে।

পাঁচ বছরে মুনাফা দ্বিগুণ

কোম্পানির সর্বশেষ নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কোম্পানিটির আয়ে সাড়ে ১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কর-পরবর্তী মুনাফা বেড়েছে ৯ শতাংশ। গত পাঁচ বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির আয় বেড়েছে েদড়গুণ আর মুনাফা বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।

শেয়ারবাজারে অলিম্পিক

১৯৮৯ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এ কোম্পানি বর্তমানে ভালো মৌলভিত্তির ‘এ’ শ্রেণিভুক্ত একটি কোম্পানি। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্য থেকে ৩০টি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচকে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে কোম্পানিটি। প্রায় ২০০ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধনের এ কোম্পানির ২০ কোটি শেয়ার রয়েছে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার মানুষের হাতে, যার মধ্যে কোম্পানির উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে বিদেশি-প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীও রয়েছেন। কোম্পানিটির উদ্যোক্তা ও নেতৃত্বে রয়েছেন দুই ভাই। তাঁরা হলেন মোহাম্মদ ভাই ও মোবারক আলী। এর মধ্যে এক ভাই চেয়ারম্যান ও অন্য ভাই ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার ডিএসইতে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের কোম্পানিটির শেয়ারের সর্বশেষ বাজারমূল্য ছিল প্রায় ২৭০ টাকা। শেয়ারধারীদের নিয়মিত লভ্যাংশ বিতরণ অব্যাহত রেখেছে কোম্পানিটি। গত জুনে এটির আরেকটি আর্থিক বছর শেষ হয়েছে। 

সিঁড়ির পর সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে হয়: এসিআই এমডি সৈয়দ আলমগীর

সূত্র প্রথম আলো: নতুন একটি সাবান বাজারের সুপরিচিত সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে এক নম্বরে উঠে গেল শুধু একটি স্লোগানের জোরে। স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’, যা এসেছিল সৈয়দ আলমগীরের মাথা থেকে। এবং বাণিজ্যকে নিজের জীবনের কথা জানিয়েছেন এসিআই কনজ্যুমার ব্র্যান্ডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আলমগীর, উঠে এসেছে তরুণদের প্রতি তাঁর পরামর্শও। 

জীবনের মোড় ঘুরিয়েছে যে সিদ্ধান্ত 

আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএতে ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্তটি। সেখানে পড়েছি বলেই আমি এই পথে এসেছি। আইবিএ থেকে এমবিএ করার পরই আমার অনেকগুলো চাকরির প্রস্তাব আসে। আমরা ৩৩ জন বের হয়েছিলাম। আমি যোগ দিলাম এমন একটি জায়গায়, যেখানে শুধু একজন নেবে। বন্ধুর সঙ্গে প্রতিযোগিতা আমি চাইনি। আমাদের বড় একটা ফার্মেসি ছিল। বড় ভাই চিকিৎসক। এ কারণে ওষুধের প্রতি আমার বিশেষ আগ্রহ ছিল। এ কারণে মে অ্যান্ড বেকারে (এখনকার সানোফি) যোগ দিই। 

সেখানে ১৬ বছর ছিলাম। এ সময় আমি অনেক কিছু শিখেছি। একটা উদাহরণ দিই, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি শিখিয়েছে মে অ্যান্ড বেকার। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও কোম্পানি শিখিয়ে দিত। মে অ্যান্ড বেকারে আমি ব্যাপক শৃঙ্খলা শিখেছি।

জীবনের সেরা তিন সিদ্ধান্ত

এক. সরকারি চাকরিতে যোগ না দিয়ে বেসরকারি খাতে আসা। দুই. যমুনায় যোগ দেওয়া। তিন. এসিআইতে আসা। যমুনায় যোগ দিয়ে আমি বৃহত্তর পরিসর পেয়েছি। আগেরটি ছিল শুধু ওষুধ। যমুনায় শুরুতেই আমি ১১টি কোম্পানি আমার অধীনে পাই। আমি সেগুলোকে বড় করেছি। আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব পালন করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও এক শ ভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইতে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এটির কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি।

ব্র্যান্ড তৈরির পেছনের গল্প

জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে আমি দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এল, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। সেই চিন্তাটি দেশে এসে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, ‘মেধা বিকাশে সহায়তা করে’। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি। 

সারা দিনের রুটিন

কাজ দিয়েই আমার দিন শুরু হয়। কাজ দিয়েই শেষ। কাজের বাইরে তেমন কিছু করতে পারি না। সকালে অফিসে আসি ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে। ফিরি রাতে। কখনো ৯টার আগে নয়। ফেরার সময় একটি হোটেলে কিছুক্ষণ সাঁতার কাটি অথবা ব্যায়াম করি। পরিবারের সঙ্গে বাকি সময় কাটাই। তবে অফিসের আলাপ কখনোই বাসায় করি না। আমার স্ত্রীকে যদি আমার অফিস সম্পর্কে প্রশ্ন করেন, তিনি এটুকুই বলতে পারবেন যে সম্প্রতি আমি মনে হয় ব্যবস্থাপনা পরিচালক হয়েছি।

কাজের বাইরে

দেশ ঘুরতে আমার ভালো লাগে। এ জন্য প্রচুর ভ্রমণ করি। টেলিভিশন দেখতে ভালো লাগে। রাতে দেশি–বিদেশি সংবাদ চ্যানেল দেখে নিজেকে আপডেট রাখার চেষ্টা করি। বিনোদনের জন্য সিরিয়াল, সিনেমা দেখি। একবার ভারতে গিয়ে সিনেমা দেখতে যাব। মেয়েরা দেখবে গুরুগম্ভীর সিনেমা। আমি বললাম, গোবিন্দর সিনেমা দেখব। পয়সা খরচ করে কান্নাকাটি করতে যাওয়ার ইচ্ছা আমার নেই। আর সিনেমা দেখা হলো না। আমার তিন মেয়ে—একজন চিকিৎসক, একজন আইন পড়ছে এবং আরেকজন অর্থনীতিবিদ। তারা বিদেশে আছে।

কী হতে চেয়েছিলেন

লক্ষ্যের চেয়ে বেশি পেয়েছি। লক্ষ্য ছিল, আমি যেখানে কাজ করব, সেখানকার নেতা হব। সেটা হতে পেরেছি। কর্তৃত্বমূলক ব্যবস্থাপনায় বিশ্বাসী নই। সারা দিন হয়তো আমি নানা কথা বলি। আমার কর্মীরা তাতে মোটেও কষ্ট পায় না। কারণ, তারা জানে, আমি তাদের কতটা ভালোবাসি। 

ব্যবস্থাপকদের দক্ষতা 

আমাদের দেশের ব্যবস্থাপকেরা কিন্তু অনেকের চেয়ে ভালো। এ দেশের কোম্পানি এ দেশের ছেলে–মেয়েরাই চালাচ্ছে। হয়তো দু–একজন বিদেশি থাকে। তবে বিদেশি কোম্পানির প্রবণতা হলো, তারা একজন বিদেশিকে পাঠিয়ে দিতে পছন্দ করে। 

তরুণদের জন্য তিন পরামর্শ 

মূল পরামর্শ একটাই—তরুণেরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, চাকরিজীবনে একটি সিঁড়ির পর আরেকটি সিঁড়িতে পা দিয়ে তবে ওপরে উঠতে হয়। এখানে এমন কোনো সিঁড়ি নেই, এলিভেটর নেই, যা আপনাকে সরাসরি ওপরে নিয়ে যাবে।

আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাঙ্ক্ষাটাও একটু কম রাখতে হবে। আমরা দেখি, এখন শুরু থেকেই অনেকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হতে চায়। বড় বেতন চায়, গাড়ি চায়। শুধু চাকরি পাল্টায়। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে এসব কিন্তু আসবেই। 

ভবিষ্যৎ এমডিদের উদ্দেশে

আমি যখন আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক ছিলাম, তখন বিক্রয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে চিকিৎসকের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছি। এমন ঘটনাও আছে, পণ্য নিয়ে ট্রাকে করে বেরিয়ে গেছি, বিক্রি শেষ করে ফিরেছি। এখন ভালো পদে থাকলে কেউ মাঠে-ঘাটে ঘোরার কষ্ট করতে চায় না। 

আমি একটি প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিয়োগের জন্য সাক্ষাৎকার নেওয়ার একটা ঘটনা বলি। প্রার্থীর কাছে জানতে চাইলাম, বিপণন সম্পর্কে কতটুকু জানেন। তিনি বললেন, বিপণন তাঁর কাজ নয়। একই ভাবে উৎপাদন ও বিক্রির বিষয়ে তিনি একই কথা বললেন। আমি জানতে চাইলাম, তাহলে আপনার কাজ কী? তিনি বললেন, সমন্বয়। আমার মনে হয়, নেতৃত্ব দিতে হলে সব বিষয়ে সম্যক ধারণা থাকতে হবে। আপনি যদি শিল্পপতির সন্তান হন, তাহলে আপনি উদ্যোক্তাদের কাতারে পড়বেন। আপনি যদি পেশাদার ব্যবস্থাপক হতে চান, আপনাকে কষ্ট করতে হবে।

একনজরে সৈয়দ আলমগীর পড়াশোনা

নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শুরু। সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (আইবিএ) থেকে স্নাতকোত্তর (এমবিএ)। 

প্রথম চাকরি

১৯৭৬ সালে বিদেশি কোম্পানি মে অ্যান্ড বেকারে (এখনকার সানোফি) আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক হিসেবে যোগদান।  

অভিজ্ঞতা

১৯৭৬ থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত সানোফিতে। এরপর যমুনা গ্রুপে বিপণন পরিচালক পদে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত। এরপর থেকে এসিআইতে। 

বর্তমান অবস্থান

এসিআই কনজ্যুমার ব্র্যান্ডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এর আগে ছিলেন নির্বাহী পরিচালক। 

কটলারের বইতে স্থান

মার্কিন বিপণনগুরু ফিলিপ কটলারের প্রিন্সিপালস অব মার্কেটিং শিরোনামের বইয়ের একটি সংস্করণে সৈয়দ আলমগীরের ‘১০০% হালাল সাবান’ স্লোগানে বিপণনকৌশলটি স্থান পেয়েছে।