Sunday, September 8, 2019

সিপিডির সেমিনার, চীনের বিআরআইএ লাভবান হবে বাংলাদেশ, তবে...

নিজস্ব রিপোর্টার: সঠিক পদক্ষেপ নিলে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড কার্যক্রমের সুফল পেতে পারে বাংলাদেশ। তবে, প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বাংলাদেশ যেন চীনা ঋণের ফাঁদে না পড়ে, সে বিষয়েও খেয়াল রাখতে হবে। প্রকল্প বাছাই ও বাস্তবায়ন, বিনিয়োগ, ঋণের শর্ত- এসব বিষয় পরিষ্কার হওয়া দরকার। পাশাপাশি প্রতিবেশি দেশের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকা প্রয়োজন রয়েছে। 
রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড: তুলনামূলক অবস্থান থেকে বাংলাদেশের অবস্থান’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। 
সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহানের সভাপত্বিতে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক, সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, চীনে নবনিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহবুব উজ জামান, চীনের ইউনান অ্যাকাডেমি অব সোশ্যাল সায়েন্সের ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের অধ্যাপক চেং মিন, ভারতের রির্সাচ অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম ফর ডেভেলপিং কান্ট্রিসের মহাপরিচালক ড. শচীন চতুর্বেদী, সিপিডির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সৈয়দ মঞ্জুর ইলাহী। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। সেমিনারে বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও নেপালের বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন।
সেমিনারে বহুল আলোচিত চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে’ বাংলাদেশের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে বক্তারা জানান, ২০১৩ সালে এই উদ্যোগের সূচনা করে চীন। এটি ৭২টি দেশকে সংযুক্ত করবে। এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে চীনের এক্সিম ও ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ইতিমধ্যেই বিভিন্ন দেশের অবকাঠামো প্রকল্পে ১৯০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এই প্রকল্পে চীন-বাংলাদেশ এক হয়ে কাজ করলে লাভবান হবে দুই দেশই। তবে রয়েছে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ। ভুল পদক্ষেপে ফল হতে পারে নেতিবাচক। তাই বাংলাদেশকে সতর্ক পদক্ষেপের পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের।
শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন বলেন, বিআরআই উচ্চপর্যায়ের সহযোগিতার একটি প্লাটফর্ম। এটি বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ প্লাটফর্ম ব্যবহারের মাধ্যমে লাভবান হবে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, কোনো দেশ একা উন্নয়ন করতে পারে না। যেহেতু আমাদের দেশের অর্থনীতিতে নানা ধরনের সমস্যা বিদ্যমান তাই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বাংলাদেশ-চীন দুই দেশ যৌথভাবে পথচলার মধ্যদিয়ে ব্যাপক লাভবান হতে পারে। বিআরআই নিয়ে যখন চীনসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে আলোচনা হবে, তখন উইন-উইন পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, চীন দেশের অবকাঠামো, জ্বালানি খাতে আঞ্চলিক সহযোগিতা লাগবে। বিআরআই এই সুযোগ নেয়ার ফোরাম হতে পারে। 
সিপিডি চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, চীন বর্তমানে বিশ্ববাণিজ্যের নেতৃত্বে আছে। এর সঙ্গে অন্য দেশের সমন্বয় করে চলতে হবে। এটি এখন বিশ্ব অর্থনীতির নতুন ব্যবস্থা। এটা যেন উপনিবেশবাদের মতো না হয়, এটা যেন অংশীদারত্বের ভিত্তিতে হয়। এতে দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার সুযোগ আরো বাড়বে। তিনি বলেন, চীনের সঙ্গে বিআরআই প্রকল্পে যুক্ত হতে হলে চীনের অর্থনীতিটা বুঝে দর কষাকষি করতে হবে। কেননা যখন আমরা দর কষাকষি করব, তখন জাতীয় স্বার্থ সবার আগে বিবেচনা করতে হবে। আর সে জন্য গবেষণা প্রয়োজন। চীনের অর্থনীতিতে ভবিষ্যতে কী হচ্ছে, তাদের থিং ট্যাঙ্ক কী ভাবছে, সেজন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এরসঙ্গে পার্টনারশিপে যুক্ত করতে হবে। কেননা বিআরআই নিয়ে চীনে প্রচুর গবেষণা হয়েছে। বেল্ট অ্যান্ড রোডের অবকাঠামো নির্মাণে কোন দেশ কি পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করবে তা পরিষ্কার হওয়া জরুরি বলে মনে করেন সিপিডি’র চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, বিআরআই বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চীন আমাদের দেশে বিনিয়োগ করছে এবং ভবিষ্যতে বিনিয়োগ আরো বাড়বে। বিআরআইয়ের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ব্যাপক আলাপ-আলোচনা দরকার। তিনি বলেন, বিআরআইয়ের প্রকল্প বাস্তবায়নে অন্যদেশের সঙ্গে যেন দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক নষ্ট না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। প্রকল্পে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ যেন সমানভাবে উপকৃত হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, বিচার বিবেচনা ছাড়া প্রকল্প নিলে তা হিতে বিপরীত হতে পারে। একইসঙ্গে প্রকল্প হতে হবে বাংলাদেশের সক্ষমতা বিবেচনায়।
পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক বলেন, বর্তমানে বিশ্ববাণিজ্যে ইন্দো-প্যাসিফিক, ইউরো-এশিয়া ও বিআরআই উদ্যোগ আছে। আমরা সব উদ্যোগের সঙ্গে যাব। কোনো ক্ষতিকর কিছুর সঙ্গে থাকব না। যখন আমরা এসব নিয়ে দর কষাকষি করব, তখন জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেব।
সংলাপে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মঞ্জুর এলাহী বলেন, আমরা বাজার চাই, এটা সত্য। কিন্তু সবকিছু যাচাই বাছাই করে নেয়া উচিত।
মূল প্রবন্ধে ড. ফাহিমদা বলেন, বিআরআই-এর মাধ্যমে আমাদের যে প্রস্তাবগুলো দেয়া আছে আমরা তা নেব। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে এই অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বিনিয়োগের শর্তগুলোর দিকে। দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে টেন্ডার থেকে শুরু করে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে, বিআরআই যে ঋণ দিচ্ছে সেই ঋণে সুদের হার যাতে কম হয়। আমরা কেন ৩ শতাংশ দেব? ঋণ যেন এক শতাংশের নিচে হয়। আমরা যাতে ঋণের ফাঁদে না পড়ি। আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য হতে হবে রাজনীতির বাইরে গিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা। 

Friday, September 6, 2019

দেশেই চাষ হচ্ছে বেগুনি ধান

চারপাশে সবুজ ধানখেত। মাঝখানে একচিলতে জমিতে বেগুনি রঙের ধানের আবাদ। যেন সবুজের বুকে বেগুনি বিছানা। ভিন্ন রঙের এই ধান চাষ স্থানীয় পর্যায়ে কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে। 

বেগুনি রঙা এই ধানের চাষ হচ্ছে খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার শান্তিপুর এলাকায়। স্থানীয় কৃষক মনতোষ চাকমা জেলায় প্রথমবারের মতো এই ধানের চাষ শুরু করেছেন বলে জানান কৃষি কর্মকর্তারা। চলতি বছরের ২১ মে এর চারা রোপণ করেন তিনি।

মনতোষ চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থা নামের এনজিওর কাছ থেকে বেগুনি রঙের ধানের বীজ সংগ্রহ করেছেন। ওই এনজিও থেকে ‘সুভাষ’, ‘বাঁশফুল’ ও ‘জুনটি’—এই তিন জাতের চারা নিয়েছেন। এখন পরীক্ষামূলকভাবে ২০ শতক জমিতে চার জাতের ধান রোপণ করেছেন। এসব ধানের ফলন কী রকম হবে, তা দেখার পর ভবিষ্যতে আবাদ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

কৃষি কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্যমতে, দেশে প্রথম বেগুনি রঙা ধানের আবাদ শুরু হয় গাইবান্ধায়। সৌন্দর্য ও পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ধান। এই ধানগাছের পাতা ও কাণ্ডের রং বেগুনি। এর চালের রংও বেগুনি। তাই কৃষকদের কাছে এখন পর্যন্ত এ ধানের পরিচিতি বেগুনি রঙের ধান বা রঙিন ধান।

জানতে চাইলে খাগড়াছড়ি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মর্ত্তুজা আলী বলেন, বেগুনি রঙের ধানের চাষ খাগড়াছড়িতে এই প্রথম। কেউ এর নাম দিয়েছেন বেগুনি সুন্দরী, কেউ দুলালি সুন্দরী। ফলন ভালো হলে ভবিষ্যতে ধানের আবাদ বৃদ্ধির চিন্তা করা হবে।

পানছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলাউদ্দিন শেখ বলেন, মনতোষ চাকমাকে সব ধরনের পরামর্শসহ কৃষি বিভাগ থেকে নিয়মিত ধানখেতটি তদারক করা হচ্ছে।

গত বুধবার দুপুরে পানছড়ির উল্টাছড়ি ইউনিয়নের শান্তিপুরে গিয়ে দেখা যায়, চারপাশে সবুজ ধানখেতের মাঝখানে বেগুনি রঙের ধানের আবাদ। মনতোষ চাকমার রোপণ করা অন্য তিন জাতের ধানের গাছের রং আলাদা। এক জাত বাঁশফুল রঙের, এক জাত গাঢ় সবুজ রঙের এবং অন্য জাত হালকা সবুজ রঙের।

তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থার প্রকল্প সমন্বয়কারী সকীরণ চাকমা জানান, মিজারিও-জার্মানির অর্থায়নে ঢাকা বারসিক এনজিও থেকে তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থা সাত প্রকারের ধানের বীজ সংগ্রহ করেছে। এর মধ্যে চার প্রকারের বীজ তাঁরা মনতোষ চাকমাকে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করতে দিয়েছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক আলতাফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিচ্ছিন্নভাবে এই ধানের চাষ শুরু হয়েছে। খাগড়াছড়িতেও চাষ হওয়ার খবর শুনেছেন তাঁরা। এই ধানের পুষ্টিমান বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, এই ধানের পুষ্টিমান, চাষাবাদ পদ্ধতি, ফলনের পরিমাণ, জীবনচক্র, দেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর বিষয়, কোন মৌসুমে চাষ করলে ভালো হবে—এসব বিষয়ে বিস্তারিত গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। সূত্র: প্রথম আলো

উদ্যোক্তা তৈরির নতুন ঠিকানা ‘মোড়’

সূত্র প্রথম আলো: মফস্বলের পাড়া–মহল্লার মোড়ে মোড়ে তরুণেরা আড্ডা দেন। সেই আড্ডা থেকেই অনেক সময় বেরিয়ে আসে দারুণ কিছু। সেই ধারণা থেকেই ‘মোড়’। কোওয়ার্কিং স্পেস। যেখানে আধুনিক সুযোগ-সুবিধার অফিস ভাগাভাগি করে ব্যবহারের সুযোগ পান উদ্যোক্তারা। ব্যবসায়িক কিংবা দাপ্তরিক বৈঠক করার মতো সুবিধা তো আছেই। 

বনানী ১১ নম্বর সড়কে ‘মোড়ের’ কার্যালয়ে ঢুকলেই চোখে পড়বে একটি ল্যাম্পপোস্ট। কালো রঙের ল্যাম্পপোস্টটি মনে করিয়ে দেবে সেই মফস্বলের কথা। মোড়ের চত্বরজুড়ে আধুনিকতার ছাপ। ছিমছাম পরিবেশে বিভিন্ন টেবিলে বসে কম্পিউটারে কাজ করছেন জনা বিশেক তরুণ-তরুণী। পথের পাঁচালি, ঘরে, বাইরে, ঘরে-বাইরে নামের চারটি বৈঠকস্থলও সমান ব্যস্ত। 

মোড়ের গল্প শুনতে গত জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহের এক দুপুরে দুই উদ্যোক্তা—নাবিলা নওরিন ও নাহিদ শারমিনের সঙ্গে আড্ডা হয়। তাঁরা জানান, বনানী ১১ নম্বরে সড়কে ২০১৫ সালে ৫ মে মোড়ের যাত্রা শুরু হয়। এক দফা স্থান পরিবর্তনের পর বর্তমানে ২ হাজার বর্গফুট আয়তন জায়গা নিয়ে মোড় চলছে। গত মার্চ মাসে ধানমন্ডিতে মোড়ের নতুন আরেকটি শাখা চালু হয়েছে। 

শুরুর গল্পটা বললেন নাবিলা নওরিন। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্যবিদ্যায় পড়াশোনা শেষ করে ২০১২ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোয় যান তিনি। সেখান থেকে আবার ইন্টার্নি করতে যান ব্রাজিলের সাও পাওলো শহরে। সেখানকার তরুণ উদ্যোক্তারা কোওয়ার্কিং স্পেসে ভাগাভাগি করে নিজেদের কাজ করেন। বিষয়টি মনে গেঁথে যায় নাবিলার। ২০১৪ সালে দেশে ফেরার আগেই বান্ধবী নাহিদ শারমিনের সঙ্গে সে রকম কিছু একটা করার জন্য চিন্তাভাবনা শুরু করেন। 

বাংলাদেশে অনেক তরুণ উদ্যোক্তা ফ্রিল্যান্স, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ওয়েব ডেভেলপমেন্টসহ নানা ধরনের কাজ করেন। তাঁদের পক্ষে কাজের জন্য কিংবা ব্যবসায়িক অংশীদারদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য নিজস্ব অফিস স্থাপন করাটা বেশ ব্যয়বহুল। তা ছাড়া অফিসের পেছনে প্রতি মাসেই মোটা অঙ্কের অর্থ খরচের বিষয় তো আছেই। সেই বাড়তি ব৵য় বোঝা থেকে মুক্তি দিতেই ‘মোড়’ শুরু। 

এমন তথ্য দিয়ে নাবিলা নওরিন বলেন, ‘শুরুতে ধারণাটি তরুণদের কাছে জনপ্রিয় করাটা ছিল বেশ চ্যালেঞ্জিং। মোড়ের প্রথম দিকে অনেকেই উঁকি দিতেন। জানতে চাইতেন—এটি কি রেস্তোরাঁ, নাকি বাতির (লাইট) দোকান? আমরা সবাইকে খুব আগ্রহ নিয়ে মোড় ঘুরিয়ে দেখাতাম। আমাদের ধারণাটি তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করতাম।’ 

ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মোড়। বনানীতে এখন বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মোড়ের সদস্যসংখ্যা ১২০। তাঁদের মধ্যে আছেন বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি ও তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে কাজ করেন এমন উদ্যোক্তারা। গুলশানের এফ আর টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ডের পর একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা তিন মাস মোড়ে তাঁদের দাপ্তরিক কাজ করেন। অন্যদিকে সুইস একটি সফটওয়্যার কোম্পানি ধানমন্ডি মোড় আগামী পাঁচ বছর ব্যবহারের জন্য চুক্তি করেছে। সেই প্রতিষ্ঠানের ৩৪ জন কর্মী কাজ করছেন। তারা মোড়ের অর্ধেক অংশ ব্যবহার করে, বাকিটা ব্যবহার করছে অন্য উদ্যোক্তারা।

সদস্য না হলেও প্রতি ঘণ্টা ১৫০ টাকায় মোড়ের সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করা যাবে। মাসে ২ হাজার টাকা দিয়ে হওয়া যাবে ‘স্টার্টার’ সদস্য। তখন মোড়ের দুই শাখার একটিতে ৪০ ঘণ্টা ব্যবহার করতে পারবেন উদ্যোক্তারা। আবার ৮ হাজার টাকা দিয়ে ‘ইনফিনিটি’ সদস্য হলে ইচ্ছামাফিক যত ঘণ্টা খুশি মোড়ে অফিস করা যাবে। সদস্যদের জন্য আছে খাবারের কক্ষ ও কফির সুবিধা। 

মোড়ের সদস্য ইসমাইল সাঈদ নিজে একটি মেডিকেল সফটওয়্যার বানাচ্ছেন। তিনি বললেন, ‘২ লাখ টাকা খরচ করে হাতিরপুলে অফিস নিয়েছিলাম। তারপর খরচ জোগাতে না পেরে ছেড়ে দিয়েছি। বর্তমানে বেশ স্বচ্ছন্দে মোড়ে অফিস করছি।’ তিনি বলেন, মোড়ে আসার পর কাজ না করে উপায় নেই। কারণ প্রতি মিনিটের জন্য আপনি পয়সা গুনছেন। আবার আপনি যখন দেখবেন আপনার আশপাশে সবাই কাজ করছেন তখন আপনিও উদ্বুদ্ধ হবেন। তা ছাড়া এখানে কাজ করতে গিয়ে সবার মধ্যে একটা নেটওয়ার্ক তৈরি হয়। তখন কাজ পেতেও সুবিধা হয়। 

মোড় পরিচালনা করতে করতে আড়াই বছর আগে ‘বহু’ নামে আসবাবের একটি ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছেন নাবিলা নওরিন ও নাহিদ শারমিন। বনানীতে ‘বহু’র একটি বিক্রয়কেন্দ্র আছে। তার বাইরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য স্থাপত্যচর্চা, অন্দরসজ্জা ও আসবাবের নকশা করেন তাঁরা। 

গত মাসে রাইজিং স্টার অব দ্য ইয়ার ক্যাটাগরিতে নারীদের জন্য সিটি ব্যাংকের বিশেষায়িত সেবা সিটি আলোর সহায়তায় কালারস প্লাটিনাম বিজনেস উইমেন অ্যাওয়ার্ড-২০১৯ পেয়েছেন নাবিলা নওরিন ও নাহিদ শারমিন।

Tuesday, September 3, 2019

ব্যবসা এখন সোনাতেই

সূত্র প্রথম আলো: বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে সোনাই সবচেয়ে খাঁটি। শেয়ারবাজার যেখানে টালমাটাল, বন্ডের বাজারে যখন অস্থিরতা, তখন সোনার দাম তর তর করে বাড়ছে। যদিও প্রথাগত বিনিয়োগমাধ্যম আকর্ষণ হারিয়ে ফেলার কারণেই সোনার এমন বাড়বাড়ন্ত হচ্ছে। কিন্তু সোনা সাধারণত মানুষকে হতাশ করে না, অন্যান্য বিনিয়োগ মাধ্যম যা করে থাকে। তাই দেখা যাচ্ছে, বিশ্ববাজারে সোনার দাম (স্পট মার্কেট) আউন্সপ্রতি ১ হাজার ৫০০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। 

গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববাজারে সোনার দাম ছিল ১ হাজার ৫৩৯ ডলার। এমনকি তা ১ হাজার ৬০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আশঙ্কা করছেন। রয়টার্স ও ব্লুমবার্গ সূত্রে এই খবর পাওয়া গেছে। 

স্পট মার্কেটে সোনার দাম এর আগে ২০১৩ সালের মে মাসে ১ হাজার ৪৬৯ ডলারে উঠেছিল। মাঝের কয়েক বছর সোনার দাম ওঠানামা করলেও চলতি বছরের ১ জুন থেকে সোনার দাম বাড়তে শুরু করে। ব্যাপারটা হলো, মার্কিন-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ ছেড়ে দিয়ে নিরাপদ সম্পদ হিসেবে সোনার দিকে ঝুঁকছেন। পাশাপাশি ডলারের মান পড়ে যাওয়াও বিনিয়োগকারীদের এই সিদ্ধান্ত নিতে উদ্বুদ্ধ করছে। উল্লেখ্য, সোনাও ডলারের মতো একধরনের মুদ্রা। তাই ডলার দুর্বল হলে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সোনায় রিজার্ভ রাখে। 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি নতুন করে ৩০০ বিলিয়ন ডলারের চীনা পণ্যে শুল্ক আরোপ করায় চীন বলেছে, তারাও এর জবাব দেবে। ইউএস গ্লোবাল ইনভেস্টরসের প্রধান বাণিজ্য কর্মকর্তা মাইকেল মাতৌসেক রয়টার্সকে বলেছেন, এই শুল্ক ও চীনের প্রতিশোধ নেওয়ার খবরেই সোনার বাজারদর বাড়ছে। বৈশ্বিক অর্থনীতি নিয়ে নানা ধরনের অনিশ্চয়তা, বন্ডের সুদহার ঋণাত্মক হয়ে যাওয়া, চলমান মুদ্রাযুদ্ধ—এসব কারণে সোনার চাহিদা বাড়ছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, সোনার বাজার এখন ঊর্ধ্বমুখী। এর দাম আরও বাড়ার সম্ভাবনা আছে। এটি সম্ভবত নতুন আরেকটি ধারার শুরু। তাঁরা এ-ও বলছেন, সোনার দাম আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বর নাগাদ আউন্সপ্রতি ১ হাজার ৬০০ ডলারে ওঠার সম্ভাবনা আছে। এরপর দাম সেখানে স্থিতিশীল হবে।

আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ফিলিপ ফিউচারের বিশ্লেষক বেঞ্জামিন লু রয়টার্সকে বলেন, সোনার নিকট-ভবিষ্যৎ বেশ উজ্জ্বল বলেই মনে হচ্ছে। এসব অস্থিরতা, প্রবৃদ্ধি নিয়ে শঙ্কা, অর্থনৈতিক তথ্য-উপাত্তের দুর্বলতা—এসব কারণে ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্র হবে সোনা।

অন্যদিকে ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শেয়ার সূচকের পতন হচ্ছে। এতেও সোনার প্রতি মানুষের আকর্ষণ বেড়েছে। নিরাপদ বিনিয়োগ ক্ষেত্র হিসেবে সোনার কদর বেড়েছে।

বিশ্ববাজারে সোনার দাম বাড়ায় বাংলাদেশের বাজারেও ইতিমধ্যে তিন দফা বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে বাজারে ২২ ক্যারেট সোনা ভরিপ্রতি ৫৬ হাজার ৮৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

আগামী ২০২০ সালে মার্কিন নির্বাচন পর্যন্ত বাণিজ্যযুদ্ধ চলবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। সে কারণে শেয়ারবাজার ও মুদ্রাবাজার একরকম অস্থিরই থাকবে। সেই সুযোগে সোনার দাম আউন্সপ্রতি ১ হাজার ৬০০ ডলারে উঠে যেতে পারে বলেই বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।

Monday, September 2, 2019

ভিনদেশের বন্দরে বাংলাদেশি জাহাজ

সূত্র প্রথম আলো: এ মুহূর্তে জাপান, ইন্দোনেশিয়া, দুবাই, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর বা ভারতের বন্দরের জলসীমায় উড়ছে বাংলাদেশি পতাকা। এই পতাকা বহন করছে বাংলাদেশি জাহাজ। বিদেশের বন্দরে দেশীয় পতাকা ওড়ানোতে এগিয়ে কবির গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিং। কারণ, বাংলাদেশের বহরে থাকা জাহাজের সিংহভাগই তাদের হাতে।

বাংলাদেশে নিবন্ধিত সমুদ্রগামী জাহাজ এখন ৫২টি। এর মধ্যে এককভাবে ১৮টি জাহাজই কবির গ্রুপের। এই গ্রুপের বহরে আগামী মাসে যুক্ত হচ্ছে আরও দুটি। এক দশক ধরে সরকারি-বেসরকারি দুই খাতের মধ্যে জাহাজ পরিচালনা ব্যবসায় নেতৃত্ব দিচ্ছে এ গ্রুপটি। 

আগ্রাবাদের বারিক বিল্ডিং মোড়ে কবির মনজিল থেকে নিয়ন্ত্রণ হয় প্রতিষ্ঠানটির জাহাজের ব্যবসা। বুধবার ভবনের চতুর্থ তলায় গিয়ে দেখা যায়, বড় মনিটরে পর্দায় ভেসে উঠছে সাগর, মহাসাগর ও বন্দরে থাকা প্রতিষ্ঠানটির জাহাজের সাংকেতিক চিহ্ন। পর্দায় চোখ রেখে দেখা যায়, এ মুহূর্তে জাপানের বন্দরে পতাকা উড়িয়ে পণ্য বোঝাই করছে এমভি জোয়াহের জাহাজটি। দুবাই থেকে আরব সাগর হয়ে ভারতের একটি বন্দরে ফিরছে ‘এমভি জাহান মনি’। দক্ষিণ চীন সাগর পেরিয়ে ভিয়েতনামের বন্দরে ভিড়েছে আয়শা সারওয়ার। 

বন্দর থেকে বন্দরে পণ্য নিয়ে জাহাজের ছুটে চলার এই বৈশ্বিক ব্যবসার সব সুফল প্রতিষ্ঠানটি একাই ঘরে তুলছে না। দেশের অর্থনীতিতেও ছোট্ট অবদান রেখে চলেছে তারা। বিদেশের বন্দরে পতাকা ওড়ানোর গৌরব তো আছেই। দেশের আমদানি পণ্য পরিবহন করে বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় হচ্ছে। আবার বিদেশের এক বন্দর থেকে আরেক বন্দরে পণ্য পরিবহন করে বৈদেশিক মুদ্রাও আয় করছে এই প্রতিষ্ঠানটি। শতভাগ দেশীয় নাবিক নিয়োগ করে কর্মসংস্থানের বিষয়টিও নিশ্চিত করছে তারা।

কবির গ্রুপের জাহাজ পরিচালনার ব্যবসার নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক সারওয়ার জাহান। নিজ অফিসে বসে প্রথম আলোকে জানালেন, রপ্তানি আয়, বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়, কর্মসংস্থান এবং বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি বাড়ানো—চারটি অর্জনই এক খাত থেকে হচ্ছে। দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজের সংখ্যা যত বাড়বে, ততই এই চারটি খাতে দেশের অর্জনও বাড়তে থাকবে। সেই চেষ্টাই আমরা করে যাচ্ছি।

জাহাজ পরিচালনার মতো কঠিন ব্যবসায় নেতৃত্ব দেওয়া খুব সহজ নয়। এখানে পণ্য পরিবহনের ভাড়া ঠিক করতে হয় বিশ্বের সব জাহাজ কোম্পানির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে। আন্তর্জাতিক বাজারে জাহাজ ভাড়া প্রতিনিয়ত ওঠানামা করে। এ বাজারে লোকসান দিয়ে হলেও ভাড়া নিতে হয়। কারণ, বসে থাকলে প্রতিদিন খরচ গুনতে হয় জাহাজভেদে আট-দশ লাখ টাকা। এই লোকসানের কথা মাথায় রেখে হাতে অগ্রিম পুঁজি রাখতে হয়। এরপরও থাকে শঙ্কা।

এই যেমন এক দশক আগে বৈশ্বিক মন্দার পর জাহাজের ভাড়া অস্বাভাবিক কমে যায়। সংকট দীর্ঘস্থায়ী হলে বিশ্বের বাঘা বাঘা জাহাজ কোম্পানিও খাদে পড়ে যায়। বিশাল অঙ্কের লোকসানে পড়ে একজন আরেকজনকে অধিগ্রহণ করতে থাকে। কেউ দেউলিয়া হয়ে যায়। এ ঢেউ লেগেছে দেশেও। দেশে অনেকে ধাক্কা সামলাতে না পারলেও কবির গ্রুপ ঠিকই সংকট থেকে নিজেদের বের করে নিয়েছে। 

কীভাবে? কবির গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিম জানালেন, শুধু নিজের কোম্পানির পণ্য পরিবহনের চিন্তা থেকে জাহাজ পরিচালনা ব্যবসা চালানো কঠিন। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেই ব্যবসা করতে হবে। বিশ্বমানের ব্যবস্থাপনা থাকতে হবে। নাহলে সংকটের সময় টিকে থাকা কঠিন।

বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে জাহাজ ব্যবসা শুরু হয়েছে ৪১ বছর আগে। শুরুর দিকে এটলাস শিপিং, সমুদ্রযাত্রা শিপিংয়ের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো পথ দেখিয়ে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে। কিউসি বা এইচআরসির যুগও শেষ হয়েছে। সেখান থেকেই শুরু করেছিল কবির গ্রুপ। ২০০৫ সালে এমভি ফাতেমা জাহান জাহাজ দিয়ে শুরু হয় তাদের বৈশ্বিক ব্যবসার। তাতে কয়েক বছরের মাথায় দেশের শীর্ষস্থানে উঠে আসে তাদের নাম। বিদেশের বন্দর সবচেয়ে জাতীয় পতাকাও উড়ছে তাদের হাত ধরে। যেন বিদেশের বন্দরে এক টুকরো ভাসমান বাংলাদেশ। 

সব মিলিয়ে গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ খাত থেকে রপ্তানি আয় এসেছে ৩০ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আয় হয়েছিল ২৮ কোটি ৩৭ লাখ ডলার।

স্টার্টআপ বা উদ্যোক্তা : শুরুর আগে শুরু

সূত্র প্রথম আলো: এখন অনেকেই উদ্যোক্তা হতে চান। বিজনেস কার্ডে নিজের নামের নিচে ম্যানেজিং ডিরেক্টর বা সিইও লেখা যায়! কিন্তু ব্যাপারটা কি আসলে এতটাই সোজা? অনেক উদ্যোগই শেষ পর্যন্ত স্থায়ী হয়নি। ব্যবসা শুরুর আগে কিছু সঠিক কাজ করলে হয়তো এই অকালমৃত্যু ঠেকানো যেতে পারে।

১. কী করবেন
ব্যবসার ধারণাটি কী আপনার? যেকোনোভাবে একটা নতুন আইডিয়া আপনার মনে আসতে পারে। হতে পারে সেটা কাউকে দেখে, কারও কাছ থেকে শুনে অথবা কোথাও পড়ে। অনলাইন বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও জানতে পারেন বা নিজে উপলব্ধিও করতে পারেন। তবে আইডিয়া পেলেই ঝাঁপিয়ে পড়বেন না। প্রথমে এর বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে, পড়াশোনা করে, আলাপ-আলোচনা করে সেটি যাচাই করে নিন। অনেকেই চুরির আশঙ্কায় আইডিয়া নিয়ে আলাপ করতে চান না। কিন্তু একটা পূর্ণাঙ্গ ব্যবসায় আইডিয়ার অবদান মাত্র ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। বাকিটুকু বাস্তবায়ন। এ ছাড়া পৃথিবীর সবাই আলাদা। কেউ আপনার আইডিয়া শুনলেও সেটা আপনার মতো করে বাস্তবায়ন করতে পারবেন না। মায়ের কাছে সন্তানের মতো উদ্যোক্তার কাছে আইডিয়া। অন্যের সঙ্গে শেয়ার করলে বরং এর দুর্বলতাগুলো ধরা পড়বে। সে ক্ষেত্রে বিরাট ক্ষতি থেকে বাঁচবেন। 

২. কেন করবেন
কিছু সম্ভাব্য ক্রেতা বা গ্রাহকের সঙ্গে বাতচিত করা উচিত। ক্রেতা বা গ্রাহক পণ্য বা সেবা কেনেন না। কেনেন তার উপযোগিতা। যেমন সিনেমা হলে ইদানীং দর্শক কমে যাচ্ছে। সিনেমা হলগুলো আরামপ্রদ করে, গেটআপ বদলিয়ে বা ভালো সিনেমা এনে কি দর্শকে ভরপুর করে ৩০ বছর আগের মতো রমরমা ব্যবসা করা যাবে? সম্ভবত না। কারণ, দর্শক সিনেমা হলে যেতেন বিনোদনের জন্য। সেই বিনোদন এখন পাচ্ছেন টিভি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ইউটিউব থেকে। আপনার পণ্য গ্রাহকের কোন চাহিদাটা মেটাচ্ছে, ভেবে দেখুন। যদি প্রতিযোগী থাকেন, তাহলে বাড়তি কী দিচ্ছেন, সেটাও ভাবুন। বাজারে পণ্যের চাহিদা এবং সরবরাহ কেমন, জেনে নিন। দরকার হলে কোনো পেশাদার প্রতিষ্ঠানের সাহায্য নিন। 

৩. কাদের জন্য
আপনার গ্রাহক কারা, চিনুন। তাঁদের আপনার লক্ষ্য অনুসারে ভাগ করুন। অনেকে বলেন, বাংলাদেশে ১৬ কোটি লোক আছে, তার ১ শতাংশ পেলেই আমার অনেক। ১৬ কোটি লোককে গ্রাহক ভাবার মানে হলো আপনি আপনার গ্রাহককে চেনেননি, পর্যাপ্ত গবেষণা করেননি। গ্রাহককে চিনুন। তাঁরা কোথায় থাকেন, কী করেন, কী চান, কী পছন্দ করেন না—সবকিছু জানুন। 

৪. কীভাবে করবেন
আপনাকে অন্যের থেকে আলাদা হতে হবে। যেটাকে বলে ইউনিক সেলিং প্রপজিশন বা ইউএসপি। পণ্যটি যদি নতুন হয়, তাহলে সেটিই হতে পারে ইউএসপি। অথবা আপনি কস্ট লিডার হতে পারেন। একই পণ্য অন্যরাও দিচ্ছেন, কিন্তু আপনার কাছে অনেক সস্তায় পাওয়া যায়। তবে দেখে নিন আপনার গ্রাহকেরা মূল্য সংবেদনশীল কি না। 

৫. আপনি কেন?
ওপরের সব উপাদান যদি পজিটিভ হয়, তবু এ ব্যবসায় আপনি কেন? আপনার কী গুণ আছে? এ ব্যবসা আপনি কেন করতে পারবেন? আপনার শক্তির জায়গাগুলো কী কী? এই ব্যবসা করার জন্য যে যে গুণ দরকার, তা আপনার বা আপনার অংশীদারের আছে কি? যদি কোনো গুণে ঘাটতি থাকে, তা কীভাবে মেটাবেন? 

৬. সহায়ক শক্তি
ব্যবসা করার জন্য অনেক উপাদান প্রয়োজন হয়, যেমন: কাঁচামাল, জনবল, ভৌত উপাদান, যানবাহনব্যবস্থা ইত্যাদি। আপনার সবকিছু ঠিক থাকলেও সহায়ক শক্তিগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে ও সময়মতো না থাকলে কিন্তু আপনার উদ্যোগ ভেস্তে যাবে। 
এসব ভেবেই আপনার উদ্যোগে নামবেন কিন্তু! 

শওকত হোসেন: ভেঞ্চার বিনিয়োগ বিষয়ক পরামর্শক

বাংলাদেশের সুপারস্টার ৫ ভাইয়ের গল্প

সূত্র প্রথম আলো: গল্পটা তখনকার, যখন ঘরে ঘরে ৬০ ওয়াটের টিমটিমে বাল্ব জ্বলত। ঘণ্টায় ঘণ্টায় বিদ্যুৎ যেত আর সেই গতিতেই কেটে যেত বাল্ব, বাল্বের ব্যবসাও ছিল রমরমা। নারায়ণগঞ্জের মোহাম্মদ ইব্রাহীম তখন একজন পাইকারি ব্যবসায়ী ছিলেন। এর ২৫ বছর পর তাঁর গল্পটা হয়ে উঠল অন্য রকম। 

৬০ ওয়াটের বাতিকে হটিয়ে বাজার এখন এলইডি বাতির। ৩০ শতাংশ এলইডি বাতি তৈরি করে একটি প্রতিষ্ঠান, নাম সুপারস্টার গ্রুপ, সে গ্রুপেরই ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহীম। শুধু বাতি তৈরি নয়, ইব্রাহীম সত্যিকার অর্থেই বিস্তার করেছেন তাঁর সাম্রাজ্য। সুইচ, সকেট থেকে শুরু করে এমন সব পণ্যই সুপারস্টার গ্রুপ তৈরি করে, যা একটি বাতি জ্বালাতে লাগে। 

১৯৯৪ সালে বাতির দুনিয়া শাসনের স্বপ্ন নিয়েই যাত্রা শুরু করেছিলেন মোহাম্মদ ইব্রাহীম। তাই একজন শুভাকাঙ্ক্ষী যখন প্রস্তাব দেন সুপারস্টার নামটি, সেটাকেই লুফে নেন। বাংলাদেশে শুধু তারা পণ্যটি সংযোজন করত। তখন ভাবলেন, পুরো কাজটাই করলে কেমন হয়। নারায়ণগঞ্জে এক আবাসিক ভবনের নিচতলায় শুরু হলো এক প্রোডাক্ট লাইনের বাল্বের কারখানা। দক্ষতা কম, জ্ঞানেও ঘাটতি, কারখানাতেই নষ্ট হয়ে যেত ২০ শতাংশ বাল্ব, পরিবহনে আরও কিছুটা। তারপরও সবকিছু অতিক্রম করে মোহাম্মদ ইব্রাহীম টিকে গেলেন বাল্বের দুনিয়ায়। 

ইব্রাহীমরা পাঁচ ভাই, তিনি তৃতীয়। বড় ভাই মোহাম্মদ জয়নাল আর ইব্রাহীম লাগলেন বাল্বের পেছনে, চতুর্থ ভাই জালাল উদ্দীন বসলেন পুরোনো বাল্বের পাইকারি ব্যবসায়, মেজ ভাই মহিউদ্দীন গেলেন বিদেশে আর সবচেয়ে ছোট হারুন-অর-রশিদকে সুযোগ দেওয়া হলো পড়াশোনা শেষ করে ব্যবসায় যোগ দেওয়ার। 

পাইকারি ব্যবসা করায় ইব্রাহীমরা আগেই জানতেন ক্রেতারা কী চান। পরিচয় ছিল সাপ্লাই চেইনের সঙ্গেও, সেই সম্পর্কই দারুণ কাজে এল। শুধু কাজ করতে হলো উৎপাদন ব্যবস্থায়। এভাবে পাঁচ ভাই মিলে দাঁড়িয়ে ফেললেন সুপারস্টার। ধীরে ধীরে বদলে গেছে বাতির দুনিয়াও। ট্যাংস্টেনট বাল্ব বদলে এল টিউবলাইট, এরপর এনার্জি সেভিং বাল্ব। ইব্রাহীমরাও দক্ষ ব্যবসায়ীর মতো তাঁদের ডিম রাখতে শুরু করলেন আলাদা আলাদা ঝুড়িতে, শুরু হলো সুপারস্টার সুইচের। 

দেশে তখন সুইচ ব্যবসা পুরোটাই ভারতীয়দের দখলে। চীন থেকে ছোট ছোট যন্ত্রাংশ এনে জুড়ে শুরু করা হয় সুপারস্টার সুইচ। এভাবেই ভাইদের নিয়ে ইব্রাহীম এগিয়ে আসেন দেশের অন্যতম বাতি নির্মাতার কাতারে। 

কথা হয় সুপারস্টার ভাইদের সবচেয়ে ছোটজন হারুন-অর-রশিদের সঙ্গে। বললেন, ‘আমি কোম্পানিতে যোগ দিই ১৯৯৯ সালে, জুনিয়র অফিসার হিসেবে। অফিসের সব ধরনের কাজ করতে হতো নিজ হাতে। কাজ করে করে পদোন্নতি পেয়ে এখন উপব্যবস্থাপনা পরিচালক।’ হারুন লেখাপড়া করেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর প্রায় পাঁচ বছর পর আবার পড়াশোনা করেছেন আন্তর্জাতিক ব্যবসায়। কারণ, সুপারস্টারের চোখটাও এখন আন্তর্জাতিক বাজারের দিকেই। 

হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘আমাদের প্রথম লক্ষ্য সুইচ নিয়ে ভারতের বাজারে ঢোকা। সেই মতো আমরা তাদের চাহিদা অনুযায়ী সুইচ তৈরি করছি। এর বাইরে তার বা কেবলের রাজ্যটা জয় বাকি আছে। আমরা কেব্​ল তৈরিতেও কাজ করছি। এ ছাড়া মালয়েশিয়াতে কিছু কাজ করার ইচ্ছা আছে। 

কীভাবে এল সাফল্য? হারুন-অর-রশিদ বললেন, ‘প্রথমত আমাদের ভাইদের একতা, দ্বিতীয়ত, আমাদের করপোরেট গভর্নেন্স খুব শক্তিশালী, সঠিক কর্মী নিয়োগ, তাঁদের ক্ষমতায়ন, লক্ষ্যের সঙ্গে তাঁদের একাত্ম করা—এসবই সাফল্যের একটি কারণ। আমরা কর্মীদের বিশ্বাস করি, তাঁদের স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দিই। সেই বিশ্বাসই সাফল্যের কারণ সুপারস্টারের।

বিশ্বের শীর্ষ ৫ ধনী ব্যক্তির পাঁচ রকম তথ্য

ফুলডট কম থেকে নেওয়া: বিশ্বের শীর্ষ ১ শতাংশ ধনী মানুষ সম্পদ বানাতে পারে—এটি বোঝানোর জন্য বিশেষ পরিশ্রমের দরকার নেই, শুধু একটি তথ্য দিয়েই তা পরিষ্কার করা সম্ভব। তা হলো, আমরা বাকি ৯৯ শতাংশ মানুষ যা আহরণ করি, এই ১ শতাংশই তা করে থাকে। তাদের নিয়েই দারুণ কিছু তথ্য। 

১. যুক্তরাষ্ট্রে এই ১ শতাংশের কাতারে যেতে বার্ষিক উপার্জন দরকার ৪ লাখ ২১ হাজার ৯২৬ ডলার। অর্থাৎ মাসে ৩৫ হাজার ১৬১ ডলার এবং দিনে ১ হাজার ১৫৬ ডলার।

২. শীর্ষ ১% মানুষ নিচের ৯৯% মানুষের চেয়ে ২৬.৩ গুণ বেশি আয় করে। এই ১ শতাংশের কাতারে থাকা মানুষেরা বছরে ১৩ লাখ ১৭ হাজার ডলার পর্যন্ত আয় করতে পারে। এর বিপরীতে ৯৯ শতাংশ মানুষ বছরে ৫০ হাজার ১০৭ ডলার পর্যন্ত আয় করে থাকে। অর্থাৎ পার্থক্য দাঁড়ায় ২৬ দশমিক ৩ গুণ। 

৩. যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ১ শতাংশ ধনী মানুষের সংখ্যা ৩২ লাখ ৯০ হাজার। এদের হাতে দেশটির মোট জাতীয় সম্পদের ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ। আর বাকি ৩২ কোটি ৫৭ লাখ মানুষের হাতে আছে ৫৭ দশমিক ৫ শতাংশ সম্পদ। বিশ্বের অন্য কোনো দেশে এত অল্পসংখ্যক মানুষের হাতে এত বেশি সম্পদ পুঞ্জীভূত নেই। আয়বৈষম্যের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে থাকা নেদারল্যান্ডসে ১ শতাংশ মানুষের হাতে আছে মাত্র ২৮ শতাংশ সম্পদ।

৪. যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ১ শতাংশ ধনীর হাতে দেশটির ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ সম্পদ থাকলেও সেখানকার বার্ষিক মোট আয়ের মাত্র ১৯ দশমিক ৭ শতাংশ এদের ঘরে যায়। তবে দেশটির মোট আহরিত করের ৩৭ দশমিক ২ শতাংশ দেন এঁরা। অনেকেই বলেন যে এঁদের আরও বেশি কর দেওয়া উচিত। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই বোঝে না, এখনই তাঁরা ঠিক কত দিচ্ছেন।

৫. যুক্তরাষ্ট্রের অনেক মানুষের পক্ষেই হয়তো দেশটির শীর্ষ ধনীর কাতারে যাওয়া সম্ভব হবে না, তবে অনেকেই কিন্তু অজান্তে বিশ্বের শীর্ষ ১ শতাংশ ধনীর কাতারে বসে আছেন। গ্লোবাল রিচ লিস্টের তথ্যানুসারে বার্ষিক ৩২ হাজার ৪০০ ডলার উপার্জন থাকলেই কারও পক্ষে বিশ্বের শীর্ষ ধনীর কাতারে চলে যাওয়া সম্ভব। 

তবে নিজেকে ধনী ভাবতে বা আয়-উপার্জন বাড়াতে আপনাকে বিশ্বের শীর্ষ ১ শতাংশ ধনীর কাতারে যেতেই হবে এমন কথা নেই, মাসে ১০০ থেকে ২০০ ডলার আয় বাড়াতে পারলেই জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আসবে। এতে বছর শেষ দেখা যাবে, আপনার বার্ষিক আয় কয়েক শ ডলার বেড়ে যাবে। অর্থাৎ ধৈর্যের সঙ্গে পরিকল্পনামাফিক পরিশ্রম করে গেলে জীবনযাত্রার মান উন্নত করা যায়। 

বিদ্যুতের আলো ছাড়াই কাজ করা যায় যে ভবনে

সূত্র প্রথম আলো: গুলশানের মতো এলাকায় বাঁশগাছ। তাও আবার বহুতল ভবনের প্রতিটি তলায়। নান্দনিক বিষয়টি সিটিস্কেপ টাওয়ারের সামনে গেলেই চোখে পড়বে। ১৬ তলা ভবনের অধিকাংশ তলাতেই দিনের বেলায় বিদ্যুতের আলো ছাড়াই কাজ করা যায়। ভবনটিতে এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়। 

সিটিস্কেপ টাওয়ার নির্মাণ করেছে সিটিস্কেপ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) লিড প্লাটিনাম নামের পরিবেশবান্ধব সনদ পায়। লিড প্লাটিনাম ক্যাটাগরিতে এটিই দেশের প্রথম বাণিজ্যিক ভবন। এটি ১১০ নম্বরের মধ্যে পেয়েছে ৮১। ভবনের স্থপতি মুজতবা আহসান ও শাহরিয়ার ইকবাল রাজ।

সিটিস্কেপ ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক মোস্তফা মঈন সারোয়ার গত বৃহস্পতিবার ঘুরিয়ে দেখান। তিনি জানান, ভবনের দেয়ালে দ্বিস্তরের কাচ ব্যবহার করা হয়েছে। তাতে আর্গন গ্যাস থাকায় সূর্যের তাপে খুব বেশি গরম হয় না। আবার ভবনের ভেতরে ও বাইরে স্পেন থেকে আনা তাপ শোষণক্ষমতার বিশেষ কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। এই কাচ ও কাঠের কারণে কক্ষ তুলনামূলক শীতল থাকে তাই শীতাতপনিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের পেছনে খরচ কিছুটা কম। আবার ভবনটিতে ব্যবহার করা হয়েছে উন্নত মানের লিফট। এটি সাধারণ লিফটের চেয়ে ৭৫ শতাংশ কম বিদ্যুতেই চলে। 

এখানেই শেষ নয়, ভবনের প্রক্ষালনকক্ষে ব্যবহৃত পানি পরিশোধন করে আবার ব্যবহার করা হয়। বেসিনের ব্যবহৃত পানিও পরিশোধন হচ্ছে। তাতে ৮০ শতাংশ পানিই পুনরায় ব্যবহার হয় ভবনটিতে। ভবনের ছাদে আছে সৌরবিদ্যুৎ। 


সাড়ে ১৬ কাঠা জমির ওপর পরিবেশবান্ধব ভবনটি নির্মাণে চারপাশের অর্ধেক জায়গা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পার্কিংয়ের জন্য বেসমেন্ট আছে তিনটি তলা। তবে সেখানে বিশেষ ব্যবস্থায় দ্বিগুণ গাড়ি রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৫টি তলা বেসরকারি ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া ও বিক্রয় করেছে সিটিস্কেপ ইন্টারন্যাশনাল।

পড়ুন ৭ প্রকার অর্থনীতি

সূত্র প্রথম আলো: অর্থনীতিরও রং আছে। কম নয়, মোট সাতটি রং। এই সাতরঙা অর্থনীতির চেহারাও আলাদা। এর মধ্যে ভালো আছে, মন্দ আছে। আমাদের জীবনযাপনের সঙ্গেও জড়িয়ে আছে অর্থনীতির এ সাতটি রং। সাত রঙের এই অর্থনীতি থেকে দূরে নেই বাংলাদেশও।

কালো অর্থনীতি
এই যেমন কালো রঙের অর্থনীতি। ‘কালো অর্থনীতি’ সম্পর্কে কমবেশি সবারই ধারণা আছে। এটি অপ্রকাশ্য অর্থনীতি বা ছায়া অর্থনীতি। এই অর্থনীতিতে চোরাগোপ্তা বাজার বা লেনদেন থাকে, যা আইন লঙ্ঘনকারী। অস্ট্রিয়ার অর্থনীতিবিদ ফ্রেডারিক স্নেইডার ৩০ বছর ধরে কালো অর্থনীতি নিয়ে কাজ করেন। তাঁর গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশের কালোটাকার পরিমাণ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩০ থেকে ৩৩ শতাংশের সমান।

সাদা অর্থনীতি
অপরদিকে সাদা অর্থনীতি একটি নতুন শব্দ। ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ডগলাস ম্যাকউইলিয়ামস এটি প্রথম প্রচলন করেন। ২০১৫ সালে প্রকাশিত হয় ম্যাকউইলিয়ামসের ‘দ্য ফ্ল্যাট হোয়াইট ইকোনমি: হাউ দ্য ডিজিটাল ইকোনমি ট্রান্সফরমিং লন্ডন অ্যান্ড আদার সিটিজ’ গ্রন্থটি। এতে বলা হয়, ২০০৭ ও ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দায় যে ব্যবসায়িক ক্ষতি হয় তা পূরণ করতে কীভাবে সক্ষম হয় লন্ডন। একই ভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদের পর (বিচ্ছেদ) ডিজিটাল সার্ভিসের মাধ্যমে তা কীভাবে সামাল দেওয়া হবে-এই পরিস্থিতিগুলোকেও ‘হোয়াইট ইকোনমি’ বলে।

সবুজ অর্থনীতি
‘গ্রিন ইকোনমি’ এমন একটি শব্দ, যা ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত ‘ধরিত্রী সম্মেলনে’ আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল। জাতিসংঘ সঠিক প্রবৃদ্ধি নির্ণয়ের জন্য জাতীয় আয় থেকে বার্ষিক পরিবেশগত ব্যয় বাদ দেওয়ার কথা বলে। ধারণাটির নাম দেওয়া যেতে পারে ‘সবুজ জাতীয় আয়’। বিংশ শতাব্দীজুড়ে পরিবেশগত নানা আন্দোলন ও সম্মেলন আমাদের সামনে নিয়ে এসেছে একের পর এক পরিবেশবান্ধব মডেল। এসব মডেলের মধ্যে গ্রিন ইকোনমি বা সবুজ অর্থনীতি মডেল ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সবুজ অর্থনীতি, সবুজ প্রবৃদ্ধি আর সবুজ উন্নয়ন নিয়ে বাংলাদেশেও আলোচনা হচ্ছে। কম কার্বন খরচ করে যে বিকাশ; পরিবেশ-প্রকৃতি-জীববৈচিত্র্যের হাত ধরাধরি করে যে অগ্রগতি, তাকেই সরলভাবে সবুজ প্রবৃদ্ধি বলা হয়ে থাকে।

বাদামি অর্থনীতি
‘ব্রাউন ইকোনমি’ মূলত এমন শিল্পগুলোকে বোঝায়, যা উচ্চ মাত্রায় দূষণ এবং গ্যাস নির্গমন ঘটায়। এই ধরনের শিল্পের মধ্যে রয়েছে সিমেন্ট, লোহা খনির কাজ এবং কয়লা খনন। এসব শিল্পের বর্জ্য পরিশোধনে, ধোঁয়া নির্গমনপ্রক্রিয়া তৈরি করতে গত ৫০ বছরে প্রচুর বিনিয়োগ হয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কারখানার পরিত্যক্ত জিনিস পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করে তোলা। যেমন চামড়াশিল্পগুলোতে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) নির্মাণ করা হয়। বাংলাদেশে সাভারে চামড়াশিল্প স্থানান্তরের পর সিইটিপি নির্মাণের কাজ চলছে।

নীল অর্থনীতি
‘ব্লু ইকোনমি’ হচ্ছে সমুদ্রভিত্তিক অর্থনীতি। সমুদ্র থেকে যা–ই আহরণ করা হোক না কেন, যদি সেটা দেশের অর্থনীতিতে যুক্ত হয়, তবে সেটা ব্লু ইকোনমির পর্যায়ে পড়বে। আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে ২০১২ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে আর ২০১৪ সালে ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ায় মোট ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের বেশি টেরিটরিয়াল সমুদ্র এলাকা এখন বাংলাদেশের। সঙ্গে আছে ২০০ নটিক্যাল মাইল একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল ও চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশে সব ধরনের প্রাণিজ-অপ্রাণিজ সম্পদের ওপর সার্বভৌম অধিকার।

ধূসর অর্থনীতি
‘গ্রে ইকোনমি’ হলো একটি দেশের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের এমন অংশ, যা সরকারি পরিসংখ্যানে গণ্য হয় না। আরও বিস্তারিতভাবে বললে, অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতি বা ধূসর অর্থনীতি এমন একটি অর্থনীতির অংশ, যা কোনোভাবেই সরকারকে কোনো কর দেয় না বা সরকারের পক্ষ থেকে তদারকি করা হয় না। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতি শ্রমশক্তির ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ। ২০১০-এর শ্রমশক্তি জরিপ অনুসারে বাংলাদেশে ৮৭ শতাংশ শ্রমশক্তি অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতিতে নিযুক্ত রয়েছে।

লাল অর্থনীতি
অনেক লেখকের মতে, ‘রেড ইকোনমি’ সমাজতান্ত্রিক ধারার অর্থনীতিগুলোকে বোঝায়, যেখানে রাষ্ট্র উৎপাদন এবং বণ্টন ধরে রাখে।