Tuesday, September 10, 2019

একজন আনিস উদ দৌলা'র বেড়ে ওঠা

বাবা বলেছিলেন, তুমি যা হতে চাও, তা–ই হও। নিজে হতে চেয়েছিলেন প্রকৌশলী। যদিও তা আর হওয়া হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন পদার্থবিদ্যায়। গণিতের যন্ত্রণায় মাঝপথে ছেড়ে দিয়ে ভর্তি হলেন করাচিতে একটি ইনস্টিটিউটের লোকপ্রশাসন বিভাগে। বিদেশি এক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার সুবাদে নাম লেখালেন উদ্যোক্তার তালিকায়। এরপর রচিত হলো এসিআইয়ের রূপকথা; যেটি এখন বাংলাদেশের শিল্প খাতের একটি অনন্য ব্র্যান্ড, মানুষের আস্থার নাম, কর্মীদের ভালোবাসার নাম।

গল্পটি এম আনিস উদ দৌলার, এসিআইয়ের চেয়ারম্যান। এ দেশের কয়েকজন সফল উদ্যোক্তার তালিকা করলে আনিস উদ দৌলার নামটি রাখতেই হবে। অনেক ক্ষেত্রে তিনি আবার অনন্য। দেশের যে কয়েকজন উদ্যোক্তা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে ব্যক্তিনির্ভর না রেখে করপোরেটে রূপ দিয়েছেন, দেশীয় প্রতিষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মানের ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করেছেন, সুপরিচিত দেশীয় ব্র্যান্ড তৈরি করেছেন, তাঁদের মধ্যে একজন আনিস উদ দৌলা।

আনিস উদ দৌলার এসিআই এখন বছরে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা লেনদেন বা টার্নওভারের ব্যবসায়ী গোষ্ঠী। এর অধীনে কোম্পানি আছে প্রায় ২৫টি। ওষুধ, কৃষি, অটোমোবাইল, ভোগ্যপণ্য, সুপারস্টোর মিলিয়ে বহু খাতে তাদের ব্যবসা। অনেক পণ্যের বাজারেই তারা শীর্ষস্থানীয়।

আনিস উদ দৌলার গল্প শুনতে গত বুধবার গিয়েছিলাম রাজধানীর তেজগাঁওয়ে তাঁর কার্যালয়ে। ভাড়া ভবনে সাদামাটা অফিস। আনিস উদ দৌলার কক্ষটিও সাধারণ, সব জায়গায় মিতব্যয়িতার ছাপ। আনিস উদ দৌলা বললেন, এসিআইয়ের অনেক কোম্পানিরই অভিজাত কার্যালয় রয়েছে। তবে তাঁর নিজের জীবন পুরোটাই পরিমিতিবোধের। তাই কার্যালয়েও পরিমিতির ছাপ।

আমরা জন্ম, বড় হওয়া, উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প শুনলাম প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে। তিনি স্বল্পভাষী। কথা বলেন নিচুস্বরে, ধীরে। সবকিছুতেই গাম্ভীর্য ও ব্যক্তিত্বের ছাপ। পুরো সময়ে আনিস উদ দৌলা একবারই শুধু হেসেছেন। সেটা পরে বলছি।

আনিস উদ দৌলার জন্ম ১৯৩৪ সালে, ফরিদপুরে। সাত ভাইবোনের মধ্যে ছয় নম্বর তিনি। তাঁর মা রত্নগর্ভা। পিতাও সন্তানদের আজকের শৃঙ্খলাবদ্ধ সুপ্রতিষ্ঠিত জীবন দেখে নিশ্চয়ই গর্বিত হতেন। কারণ, তিনি (আনিস উদ দৌলার বাবা) চেয়েছিলেন, সন্তানেরা সব সময় শৃঙ্খলার মধ্যে থাকুক। প্রতিষ্ঠিত হোক।

তিন বেতের কৈশোর
আনিস উদ দৌলা গল্প শুরু করলেন কৈশোর থেকে। তাঁর বাবা ছিলেন সরকারি কৌঁসুলি। সন্তানদের ইংরেজি শেখার ওপর ব্যাপক জোর ছিল তাঁর। রাতে ইংরেজি গ্রামার আর নামতা না পড়িয়ে তিনি সন্তানদের ঘুমাতে দিতেন না। নিয়মকানুন ছিল কঠোর।

আনিস উদ দৌলা বলেন, ‘বাবা আমাদের তিন ভাইয়ের জন্য তিন আকারের তিনটি বেত রাখতেন। বড় ভাইয়ের জন্য বড়, আমার জন্য মাঝারি, আর ছোট ভাইয়ের জন্য ছোটটি। সেটা ছিল আমাদের নিয়মের মধ্যে রাখার হাতিয়ার। অবশ্য আমাদের মধ্যে নিয়মের বিচ্যুতি একেবারেই হতো না।’

বাবার কাছ থেকে শৃঙ্খলার পাশাপাশি সততাও শিখেছেন আনিস উদ দৌলা। তিনি জানান, সেই সময় সরকারি কৌঁসুলিদের অবৈধ অর্থ আয়ের অনেক সুযোগ ছিল। কিন্তু তাঁর বাবা কখনো সেই পথে যাননি। পরিবারে আর্থিক অনটন ছিল না, কিন্তু বিলাসিতাও ছিল না।

গণিতের যন্ত্রণা
ফরিদপুরের জিলা স্কুল ও রাজেন্দ্র কলেজ থেকে পড়ে ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যায় ভর্তি হন আনিস উদ দৌলা। পড়াশোনার চেয়ে খেলাধুলায় মনোযোগ ছিল বেশি। তিনবার খেলার সেরা বা স্পোর্টস চ্যাম্পিয়ন (লাফ ও দৌড়) হয়েছিলেন। ক্রিকেটে ওপেনিং বোলার ছিলেন তিনি। গণিত তাঁর বিশেষ পছন্দ ছিল না। কিন্তু পদার্থবিজ্ঞানের প্রায় পুরোটাই গণিত।

এরই মধ্যে আনিস উদ দৌলা একদিন বিভাগে এশিয়া ফাউন্ডেশনের একটি বৃত্তির বিজ্ঞপ্তি দেখলেন, যেখানে করাচির একটি ইনস্টিটিউটে পড়ার সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হয়। সেটি আবার চালাত আমেরিকানরা। ‘আই কিউ’ পরীক্ষাপ্রার্থী ছিলেন ৩০০ জন। আনিস উদ দৌলা বৃত্তিটি পেলেন, করাচিতে লোকপ্রশাসনে ভর্তি হলেন। তাঁর মতে, এটাই তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল।

আনিস উদ দৌলা বলেন, ‘পশ্চিম পাকিস্তানে গিয়ে নিজের মধ্যে পিছিয়ে থাকার হীনম্মন্যতা বোধ হয়নি। বাঙালিদের বড় দুর্বলতা ছিল ইংরেজি না জানা। আমি খুব ভালো ইংরেজি জানতাম।’

১৯৫৯ সালে স্নাতকোত্তর শেষ হয়। ইচ্ছা ছিল সিএসপি পরীক্ষা দিয়ে সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়ার। সিএসপি দিলেন। পরীক্ষা ভালো হলো। মৌখিক পরীক্ষা দিতে হবে, এর মধ্যে কয়েকটি বেসরকারি চাকরির আবেদন করলেন। চাকরি হলো পাকিস্তান অক্সিজেনে, আঞ্চলিক শাখা ব্যবস্থাপক পদে। এরই মধ্যে সিএসপির মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকল। তিনি পাকিস্তান অক্সিজেনের মহাব্যবস্থাপকদের একজন ছিলেন ব্রিটিশ নাগরিক। তাঁর কাছে আনিস উদ দৌলা জানতে চাইলেন, পরীক্ষা দিতে যাবেন কি না। উত্তর পেলেন, আড়াই হাজার টাকা মাইনা ছেড়ে ৭৫০ টাকার চাকরিতে যাওয়ার দরকার কী। এই ব্যবধান তো সারা জীবনই থাকবে।
আর সরকারি চাকরিতে যাওয়া হলো না আনিস উদ দৌলার।

চারটি প্রশ্ন

ব্যবসায়ের মূলনীতি কী
‘মানুষের জীবনমানের উন্নতি’—এটাই এসিআইয়ের মূলনীতি। এসিআইও জীবনমানের উন্নতিতে ভূমিকা রাখে, এমন পণ্যের ব্যবসা করে। ভবিষ্যতে সম্প্রসারণেও সেটা মাথায় রাখে।

সফলতার কারণ
এসিআইয়ের সফলতার কারণ তিনটি। যেমন এক. পণ্যের মান রক্ষা। দুই. কর্মীদের ভালো রাখা। কারণ, কর্মীরা ভালো থাকলে নিজের সবটুকু প্রতিষ্ঠানকে দেয়। তিন. ক্রেতার আস্থা ও নীতিনির্ধারকদের বিশ্বস্ততা অর্জন।

নতুনদের প্রতি পরামর্শ
এক. নিজেকে তৈরি করতে হবে। কিছু একটা ক্ষেত্রে পারদর্শিতা অর্জন করতে হবে। যা তাঁকে আলাদা করবে। দুই. যে কাজটি পছন্দ, সেটিই করতে হবে। তিন. চটজলদি সফলতা পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।

সরকারের উদ্দেশে
স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশের অর্জন অসামান্য। তবে সমাজে দুর্নীতি কম থাকলে অর্জন আরও বেশি হতো। তাই সরকারের উচিত দুর্নীতি দমনে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া।

পাকিস্তানিদের অক্সিজেন বন্ধ
পশ্চিম পাকিস্তানে বিভিন্ন জায়গায় চাকরির পর ১৯৭০ সালে ঢাকায় বদলি হন আনিস উদ দৌলা। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে মুক্তির আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিমে টাকা পাঠাতে নিষেধ করে দিয়েছেন। তখন পাকিস্তান অক্সিজেনের পণ্য বিক্রির টাকা পশ্চিম পাকিস্তানে যেত, পরে খরচের টাকা আসত। আনিস উদ দৌলা পাকিস্তান অক্সিজেনকে চিঠি লিখলেন, আর টাকা পাঠানো যাবে না। এর বদলে ব্যাংকে হিসাব খুলে সেই টাকা রাখা শুরু হলো।

আনিস উদ দৌলা জানান, মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর বিমানবাহিনীতে যাতে অক্সিজেন সরবরাহ করতে না হয়, এ জন্য তাঁরা ইচ্ছে করে কারখানা বন্ধ করে দিলেন। বললেন, সংস্কার করতে হবে। নথিপত্র এমনভাবে তৈরি করলেন, যাতে সেটা ধরা না যায়। এতে পাকিস্তানি বিমানবাহিনীর অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হলো, যা উড়োজাহাজ চালাতে লাগে।

আইসিআই থেকে এসিআই
১৯৮৭ সালে আনিস উদ দৌলা ইম্পিরিয়াল কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের (আইসিআই) বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। লোকসানে থাকা প্রতিষ্ঠানটিকে দুই বছরের মধ্যে লাভে আনেন তিনি। পাঁচ বছরের মাথায় আইসিআই জানায়, তারা বিশ্বব্যাপী তাদের ছোট ব্যবসা বন্ধ করে দেবে। আনিস উদ দৌলাকে তারা বাংলাদেশের ব্যবসা কেনার প্রস্তাব দেয়।

আনিস উদ দৌলা বলেন, ‘আমি তাদের বললাম, আমার কাছে টাকা নেই। তারা বলল, টাকা আপনি ধীরে ধীরে দেন। কিন্তু কর্মীদের ভালো রাখতে হবে। এটাই শর্ত। এরপর পাঁচ বছরে আমি অর্থ শোধ করেছি। কর্মীদের একজনও আইসিআইকে অভিযোগ জানায়নি।’

আইসিআইয়ের সঙ্গে মিলিয়ে নাম রাখা হলো এসিআই। লোগোও কাছাকাছি। এসিআই পণ্যের মান ঠিক রাখা, কর্মীদের সুরক্ষা ও জীবনমানের উন্নতি, ব্যবস্থাপনায় মান রক্ষার ওপর জোর দিল। সুফল পেল দ্রুতই।

আনিস উদ দৌলা বলেন, ‘ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশি প্রথম আইএসও (ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড অর্গানাইজেশন) সনদ পাওয়া কোম্পানি এসিআই। আমরা আরেকটি মূলনীতি ঠিক করেছিলাম, লাভ-লোকসান যা-ই হোক, পণ্যের মানে কোনো ছাড় দেব না।’ এরপর কেটে গেছে ২৭ বছর। এসিআই বড় হয়েছে, আরও বড় হচ্ছে।

কাজই শখ
এসিআইয়ে এখন নেতৃত্ব দেন আনিস উদ দৌলার একমাত্র পুত্র আরিফ দৌলা। তিনি পড়েছেন গণিতে, দেশের বাইরে। নিজে গণিত এড়াতে লোকপ্রশাসনে গেলেন, আর ছেলে গণিতে কেন? আনিস উদ দৌলা হাসলেন। বললেন, ছেলে গণিত পছন্দ করে।

ছেলেকে কোম্পানিতে আনতে শর্ত মানতে হয়েছে আনিস উদ দৌলাকে। শর্তটি হলো, তাঁকে সব সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দিতে হবে। আনিস উদ দৌলাও ছেলেকে কয়েকটি শর্ত দিয়েছেন। সেগুলোর মধ্যে ছিল, মানুষের জীবনমানের উন্নতি কোম্পানির মূলনীতি। সেটা মাথায় রেখে কোম্পানিকে এগিয়ে নিতে হবে।

এখন আনিস উদ দৌলা সকালে কার্যালয়ে যান। সারা দিন কাজ করেন। সন্ধ্যায় বাসায় ফেরেন। কোম্পানির সব বিষয়ে নজর রাখেন তিনি। তবে হস্তক্ষেপ করেন না। মাঝেমধ্যে পরামর্শ দেন। ব্যত্যয় হলে জানান।

বাসায় ফিরে স্ত্রীর সঙ্গে সময় কাটানো, দাবা খেলা, পিয়ানো বাজানো তাঁর কাজ। পিয়ানোটা জাপানের ইয়ামাহা কোম্পানি দিয়েছে। তাদের সঙ্গে এসিআইয়ের ব্যবসা আছে।

আনিস উদ দৌলা বলেন, ‘আমি খুব একটা আমুদে লোক নই। কাজই আমার শখ।’

শান্তি এসেছে, প্রশান্তি নয়
আনিস উদ দৌলার সন্তান মোট তিনজন। এক ছেলে (আশরাফ উদ দৌলা) ১৯৮৯ সালে ১৪ বছর বয়সে দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। এটাই তাঁর জীবনের সবচেয়ে কষ্টকর ঘটনা। মেয়ে সুস্মিতা আনিস এসিআই ফরমুলেশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

জানতে চাইলে আনিস উদ দৌলা তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর ঘনিষ্ঠ চারজন উদ্যোক্তার নাম বলেন। স্কয়ারের স্যামসন এইচ চৌধুরী, রেনাটার সৈয়দ হুমায়ুন কবির, ট্রান্সকমের লতিফুর রহমান ও অ্যাপেক্সের সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী। তাঁদের মধ্যে স্যামসন এইচ চৌধুরী ও সৈয়দ হুমায়ুন কবির প্রয়াত। লতিফুর রহমান ও মঞ্জুর এলাহীর সঙ্গেও এখন আর তেমন একটা দেখা হয় না।

জীবনের ৮৫ বছর কেটে গেছে। আনিস উদ দৌলার কাছে জানতে চাইলাম, তৃপ্তি কতটুকু? তিনি বললেন, ‘শান্তি (পিস) এসেছে, প্রশান্তি (ট্রাঙ্ককুইলিটি) আসেনি।’ কেন, আনিস দৌলার জবাব, ‘শান্তি আসলে উপলব্ধির বিষয়। এসিআইকে আমি ওপরে ওঠাতে পেরেছি। ব্যর্থ হওয়া খুব সহজ, সফল হওয়া কঠিন। এসিআই ব্যর্থ হয়নি। এটাই আমার জীবনের শান্তি।’

প্রশান্তি কেন আসেনি? আনিস উদ দৌলা শেষ করলেন এই বলে, ‘প্রশান্তি একটি দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়। আমরা অনেক কিছু করতে পারতাম। সেটা পারিনি। এই যে সমাজে ডেঙ্গুর মতো কত বিপর্যয়, প্রশান্তি কী করে আসে?’

একনজরে

জন্ম
১৯৩৪ সালে। ফরিদপুরের গোপালগঞ্জ মহকুমার (বর্তমানে জেলা) রাতইল ঘোনাপাড়া গ্রামে। পিতার নাম খান বাহাদুর মোহাম্মদ ইসমাইল। মায়ের নাম কাকাবুন নেসা বেগম।

ভাইবোন
আনিস উদ দৌলা মা–বাবার সাত সন্তানের মধ্যে ৬ নম্বর। তাঁর ভাইবোনেরা সবাই সুপরিচিত। এর মধ্যে বড় বোন ফিরোজা বেগম (প্রয়াত) উপমহাদেশের প্রখ্যাত নজরুলসংগীতশিল্পী। ভাইদের মধ্যে বড় মসিহ উদ দৌলা সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদ থেকে অবসর নেন। ছোট ভাই আসাফ উদ দৌলা শিল্পী ও সাবেক সচিব।

পরিবার
আনিস উদ দৌলার স্ত্রী নাজমা দৌলা। সন্তান তিনজন। ছেলে আরিফ দৌলা এসিআইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। মেয়ে সুস্মিতা আনিস এসিআই ফরমুলেশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। আরেক ছেলে আশরাফ দৌলা ১৪ বছর বয়সে দুর্ঘটনায় মারা যান।

এসিআই প্রতিষ্ঠা
১৯৯২ সালে। ব্রিটিশ বহুজাতিক ইম্পিরিয়াল কেমিক্যাল কোম্পানি (আইসিআই) বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা হস্তান্তর করে চলে যায়। আনিস উদ দৌলার হাতে শুরু হয় অ্যাডভান্সড কেমিক্যাল কোম্পানির (এসিআই)।

কোম্পানি সংখ্যা
এসিআই গ্রুপের অধীনে এখন কোম্পানির সংখ্যা প্রায় ২৫টি। ওষুধ, কৃষি, ভোগ্যপণ্য, খাদ্যপণ্য, নিত্যব্যবহার্য পণ্য, বাণিজ্যিক যান, মোটরসাইকেল ইত্যাদি খাতে ব্যবসা রয়েছে তাদের।

পণ্য বিক্রি
গ্রুপের মোট বার্ষিক টার্নওভার বা পণ্য বিক্রি দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা। ২০১৭–১৮ অর্থবছরে পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত এসিআইয়ের দুই প্রতিষ্ঠানের বিক্রি ছিল ৬ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা।

কর্মসংস্থান
এসিআইতে কাজ করেন ১০ হাজারের মতো কর্মী।

Monday, September 9, 2019

নতুন ধারার রেস্তোরাঁ ব্যবসায় মনজুরুল হক

দুবাইতে জন্ম নেওয়া চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান মনজুরুল চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের পর সিঙ্গাপুরে যান পড়তে। সেখানকার থেমস বিজনেস স্কুলে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে পড়ার পাশাপাশি কাজ করেছেন বিভিন্ন রেস্তোরাঁয়। লক্ষ করেছেন রেস্তোরাঁ–সংস্কৃতি। চট্টগ্রামে ফিরে তাই তাঁর সহজে নজর কাড়ে বিদ্যমান রেস্তোরাঁর পরিবেশ। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের হ্যাংআউটের রেস্তোরাঁ কই? বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অফিসফেরত বন্ধুদের আড্ডার জায়গা কই? উঠতি উদ্যোক্তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিজনেস প্ল্যান করার জায়গা কই? এসব বিবেচনায় মনজুরুল হক ২০১২ সালের শেষ দিকে নগরীর বাদশা মিঞা পেট্রলপাম্পের পাশে একটি পরিত্যক্ত দোকানের ছোট্ট পরিসরে শুরু করলেন বারকোড ক্যাফে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেখানে কফির কাপে ঝড় তোলা যায়। কেউ কিছু বলে না। আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে চাইলে স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু খাবারও জোটে। ‘শুরুতে আমার টার্গেট ছিল, দিনে পাঁচ হাজার টাকার বিক্রি’, জানালেন মনজুরুল হক। কিন্তু দিন কয়েক যেতে না–যেতেই খবর রটে গেল শহরজুড়ে। কাজেই পাশের অংশটাও বাড়াতে হলো, সুযোগ দিতে হলো পার্টি করার। আর সেই ছোট্ট ‘পাঁচ হাজারী’ বারকোড ক্যাফে থেকে এখন মনজুরুলের বারকোড গ্রুপে কর্মীর সংখ্যা তিন শতাধিক। কেবল বেকারদেরই কাজ দেন তিনি। শিক্ষার্থীদের জন্য খণ্ডকালীন কাজের সুযোগও তৈরি করেছেন। 

তবে মনজুরুলের মতো উদ্যমী তরুণ একটিমাত্র ক্যাফে করে থেমে যাবেন, এটি তো হয় না। দেশের অন্য অনেক শহরের মতো একসময় চট্টগ্রামের স্ট্রিট ফুড কালচারও ছিল সমৃদ্ধ। কিন্তু নজর না থাকায় সেগুলোর মান ক্রমাগত নিম্নমুখী হয়ে যায়। মনজুরুল ভাবলেন, স্ট্রিট ফুডই করবেন, কিন্তু স্বাস্থ্যকরভাবে, পরিচ্ছন্নভাবে। চীন থেকে কারিগর নিয়ে এসে বানালেন ফুচকা বানানোর যন্ত্র। ব্যস, হাতের ছোঁয়া থেকে মুক্তি। ২০১৫ সালে শুরু করেন বারগুইচ ফিউশন ক্যাফে। চটপটি, ফুচকাসহ নানান স্বাস্থ্যকর এবং সাশ্রয়ী নানান ধরনের স্ট্রিট ফুডের সমাহার ঘটান খোলামেলা পরিবেশের ক্যাফেতে। খুব দ্রুতই ছুটির দিনগুলোতে চট্টগ্রামের অনেকেরই সন্ধ্যাকালীন গন্তব্য হয়ে ওঠে এই ক্যাফে; যা চট্টগ্রামের তরুণ প্রজন্মের প্রিয় আড্ডাস্থলও হয়ে উঠতে সময় নেয়নি। 


 তবে দুটি বিশেষ উদ্ভাবনের জন্য মনজুরুলকে মনে রাখতে হবে আমাদের। চট্টগ্রামের ঐতিহ্য মেজবানির খাবার নিয়ে সারা দেশে প্রচুর আগ্রহ। চট্টগ্রামের অনেক মেহমান মেজবানি খেতে আগ্রহ প্রকাশ করলেই বিপদে পড়েন। কারণ, বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠান ছাড়া মেজবানি কোথায় পাবেন? মেজবানি অনুষ্ঠানে তো রবাহূত নিয়ে যাওয়া যায় না। কাজেই ২০১৬ সালে চালু হয়ে গেল ‘মেজ্জান হাইলে আইয়্যুন (মেজবান খেতে আসুন) ’। দুপুরে-রাতে যেকোনো সময় চাইলেই মেজবান খেতে পারবেন।

মনজুরুলের এরপরের কাজটি আরও চমকপ্রদ। অনেকেরই মাঝেমধ্যে বিয়েবাড়ির মজার খাবার খেতে ইচ্ছে করে, কিন্তু বিয়ের কোনো দাওয়াত না থাকলে সেটা সম্ভব হয় না। চট্টগ্রাম অঞ্চলের গতানুগতিক ধাঁচের গ্রামের বাড়ির আদলে মনজুরুল হক বিয়েবাড়ির খাবার মেনু নিয়ে ২০১৭ সালে চালু করলেন ‘বীর চট্টলা’। এ পর্যন্ত ঢাকার বনানীসহ বারকোড নামে রয়েছে ১২টি রেস্তোরাঁ। মাসখানেকের মধ্যে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে বারকোড গ্রুপের নতুন আরও একটি রেস্তোরাঁ হবে বলে জানালেন মনজুরুল হক। তাঁর সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে চট্টগ্রামের তরুণেরা কয়েক বছরে সাত শতাধিক আধুনিক রেস্তোরাঁ গড়ে তুলেছেন। তরুণ উদ্যোক্তাদের প্ল্যাটফর্ম ‘চাকরি খুঁজব না, চাকরি দেব’ তাঁকে সম্মানিত করেছে ইউসুফ চৌধুরী সম্মাননা ২০১৭-এ। সূত্র: প্রথম আলো

চীনের ঋণের ফাঁদ থেকে সতর্ক থাকতে বললেন ফাহমিদা খাতুন।।

Sunday, September 8, 2019

নবীন পরিবেশবিদদের পদকজয়

দক্ষিণ কোরিয়ার ডিগু শহরে বসেছিল আন্তর্জাতিক আর্থ সায়েন্স অলিম্পিয়াডের (আইইএসও) ১৩তম আসর। এই আয়োজনে অংশ নেয় বিশ্বের ৪৩টি দেশের ১৭২ জন প্রতিযোগী। এর মধ্যে ছিল বাংলাদেশের চার শিক্ষার্থী। তাদের মধ্য থেকে এককভাবে ব্রোঞ্জ ও বহুজাতিক দলের হয়ে স্বর্ণ জিতেছে তিনজন।
#রাত প্রায় শেষ, ভোর হতে চলেছে। দলের ১০ জনের চোখই ঘুমে ঢুলু ঢুলু। তারপরও খুব কষ্ট করে চোখ খুলে কাজ করে যাচ্ছে ৩–৪ জন। বাকিদের রুমে ফিরতে বলার পরও নড়ানো যাচ্ছে না। এক টুকরো কাগজ কেটে দিতে বললে ঘুমচোখেই লাফিয়ে ওঠে, একসঙ্গে হাত বাড়িয়ে দেয়। পোস্টার প্রেজেন্টেশনের এই প্রস্তুতি শেষেই হোটেল থেকে ভেন্যুতে যাওয়ার বাসে একটু ঘুমাতে পারল পুরো দল। 

রাতাজাগা এমন প্রস্তুতি কিসের জন্য? ১৩তম আন্তর্জাতিক আর্থ সায়েন্স অলিম্পিয়াডের (আইইএসও) এবারের আসর বসেছিল দক্ষিণ কোরিয়ার ডিগু শহরে। গত ২৬ আগস্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর সারা বিশ্বের ৪৩টি দেশের ১৭২ জন প্রতিযোগী অংশ নেয় এতে। এ বছর বাংলাদেশের হয়ে আইইএসও–তে অংশ নেয় ঢাকার অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের একাদশ শ্রেণির রুদাইবা আদনীনা, প্যারামাউন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির মো. সাদাদ ফারহান হোসেন, নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করা এ কে এম সাদমান মাহমুদ ও নারায়ণগঞ্জের চেঞ্জেস স্কুলের এ লেভেল শ্রেণির জান্নাতুল ফেরদৌস। ওদের রাতজাগা পরিশ্রম বিফলে যায়নি। শুরুতে বলে নেওয়া ভালো, এই অলিম্পিয়াডে অংশ নিতে হয় একক ও দলগতভাবে। দলগুলো আবার হয় বহুজাতিক। মানে ৪৩টি দেশের প্রতিযোগীরা ৪ জন করে ১৭টি দলে ভাগ হয়। এবার একক আয়োজনে ব্রোঞ্জপদক পায় এ কে এম সাদমান মাহমুদ ও রুদাইবা আদনীনা। স্বর্ণপদকজয়ী দলেও ছিল রুদাইবা। জান্নাতুল ফেরদৌস ছিল ব্রোঞ্চজয়ী দলে। এর আগে পাঁচবার অংশ নিয়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের অর্জন ৩টি রৌপ্যপদক ও ১০টি ব্রোঞ্জপদক।

এবারের আয়োজনের স্লোগান ছিল ‘প্যাশন ফর আর্থ সায়েন্স…কন্টিনিউড’। ইন্টারন্যাশনাল জিওসায়েন্স এডুকেশন অর্গানাইজেশন (আইজিইও)-এর বিশেষ কার্যক্রম হিসেবে ২০০৭ সাল থেকে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। ১৮ বছরের কম বয়সী স্কুল–কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণের সুযোগ পায় এতে। 

একটি দল তৈরি করা হয় প্রতিটি দেশ থেকে ৪ জন অংশগ্রহণকারী আর দুজন পরামর্শকের সমন্বয়ে। ৯ দিনের এই আয়োজনে দুই ধাপের লিখিত পরীক্ষায় এককভাবে অংশ নেয় প্রতিযোগীরা। ভূতত্ত্ব, জিওফিজিকস, আবহাওয়াবিজ্ঞান, সমুদ্রবিদ্যা, ভূকেন্দ্রীয় জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং পরিবেশবিজ্ঞান বিষয়গুলো থেকে প্রশ্ন করা হয় এই অলিম্পিয়াডে। 

আগেই জেনেছেন, এই প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন দেশের অংশগ্রহণকারী নিয়ে গঠন করা হয় আলাদা আলাদা দল। তাই প্রতি দলেই বিভিন্ন দেশ থেকে আসা শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ পায়। প্রতিযোগিতার অংশ হিসেবে দলগতভাবে ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশ নেয় সবাই। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে গিয়ে সেখানকার ভৌগোলিক রহস্যের সমাধান করতে হয় বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে। আর সব শেষে থাকে দলগত উপস্থাপনা। নির্ধারিত কোনো বিষয়ে দলের সবাইকে একসঙ্গে পোস্টার বানিয়ে বিচারকদের সামনে উপস্থাপন করতে হয়। 

আন্তর্জাতিক আর্থ সায়েন্স অলিম্পিয়াডে ২০১২ সাল থেকে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ দল। জাতীয় পর্যায়ে এই অলিম্পিয়াডের আয়োজন করে বাংলাদেশ ইয়ুথ এনভায়রনমেন্টাল ইনিশিয়েটিভ (বিওয়াইইআই)। দল গঠন করা হয় দেশে জাতীয় পর্যায়ের অলিম্পিয়াডের মাধ্যমে, এর নাম ন্যাশনাল আর্থ অলিম্পিয়াড (এনইও) । এ বছর ‘বিশুদ্ধ বায়ু, সুপেয় পানির অঙ্গীকার, আগামী প্রজন্মের অধিকার’ স্লোগানে এই অলিম্পিয়াডের আয়োজন করা হয়েছিল জুন মাসে। অনলাইন ও দেশের আটটি বিভাগে আঞ্চলিক পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায়ের জন্য প্রতিযোগী বাছাই করা হয়। বাছাইকৃত শিক্ষার্থীদের নিয়ে আয়োজন করা হয় দিনব্যাপী গ্রিন ডে ট্রেনিং। এরপর জাতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা শেষে বাছাই করা হয় সেরা শিক্ষার্থীদের। তাদের নিয়ে তৈরি হয় বাংলাদেশ দল।

এ বছর বাংলাদেশ দলের পরামর্শক হিসেবে ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ইউনুস আহমদ খান ও বিওয়াইইআইএর প্রোগ্রাম ম্যানেজার সুদীপ্ত কুমার। জাতীয় দলের বাছাই শেষে কয়েক সপ্তাহের প্রস্তুতি নিয়ে আন্তর্জাতিক এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দেয় নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা। 

এবারের বাংলাদেশে দলের সাদমান ছিল বাকিদের চেয়ে অভিজ্ঞ। আন্তর্জাতিক জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা আছে ওর। প্রথম দিনের লিখিত পরীক্ষা খানিকটা খারাপ হয়েছিল। কিন্তু পুরোনো অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে মোটেও ভুল করেনি সাদমান। 

তবে বেশ কবছরের প্রস্তুতির ফলেই স্বর্ণপদক পেয়েছে রুদাইবা। ওর কথা, ‘স্কুলের সিলেবাসে এক–আধটু থাকলেও ভূতত্ত্ব নিয়ে খুব বেশি জানতাম না আমি। অলিম্পিয়াডের প্রস্তুতি নিতে গিয়ে নতুন করে জানার সুযোগ হয়েছিল। এখন আমি আমার চারপাশের দুনিয়াকে এক নতুন চোখে দেখতে পারি। স্বর্ণপদকজয়ী দলে থাকতে পেরেছি বলে আমি খুব খুশি। এতে দলের বাকিদের অবদানও ছিল অনেক বেশি।’ 

আইইএসও–র এবারের আয়োজনে প্রতিটি দলকে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় এক জাদুঘরে। নানা রকম পাথর ও মাটির নমুনা পরীক্ষা করে সেখানকার ভৌগোলিক ইতিহাস পর্যালোচনা করতে হয় প্রতিযোগীদের। এসব নমুনা পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে পৃথিবীর গঠন বোঝা সম্ভব। এ ধরনের হাতে–কলমে করা কাজে বেশ পটু ছিল সাদাদ ফারহানের দল। ওর দলের বাকিরা ছিল এশিয়ার। তাই নিজের দল নিয়ে একটু বাড়তি গর্ব ওর। দলগত পর্যায়ে কোনো পদক না এলেও নিজের সেরাটা দিয়ে এককভাবে ব্রোঞ্জপদক পায় ও। 

পুরো দলকে মাতিয়ে রাখার দায়িত্ব ছিল অবশ্য জান্নাতুল ফেরদৌসের হাতে। আইইএসও–তে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে ও বলল, ‘শুরুতে দলের কেউই ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না কী করব। তবে প্রতি রাউন্ড পার হতেই একে একে সবাই কাজ শুরু করে। আমাদের সবাইকে শেষ দিনে “টাইফুন” নিয়ে পোস্টার প্রেজেন্টেশন বানাতে বলা হয়। ওই কাজের সময়ই দলের বাকিদের বন্ধু বানিয়ে ফেলি আমি।’

বাংলাদেশ দলের এই অর্জন নিয়ে ন্যাশনাল আর্থ অলিম্পিয়াডের সহ–আহ্বায়ক ইউনুস আহমেদ বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতির সময় বাড়াতে হবে। ভবিষ্যতে যেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষার্থীদের আমরা সুযোগ করে দিতে পারি সে চেষ্টাও থাকবে।’ 

শুধু প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার আনন্দ নয়, বাংলাদেশ দলের সদস্যরা সারা বিশ্বের নানা সংস্কৃতির কিশোর–তরুণদের সঙ্গে বন্ধু পাতাতে পেরে খুব খুশি। বড় হয়ে দেশের পরিবেশ নিয়ে কাজ করতে চায় ওরা। সমাপনী দিনে প্রত্যেককে দেশের হয়ে সাংস্কৃতিক আয়োজনে অংশ নিতে হয়। বাংলাদেশের হয়ে নাচে–গানে মঞ্চ মাতিয়েছে নবীন পরিবেশবিদেরা। তবে ওরা যখন বাংলাদেশের পরিবেশ নিয়ে কাজ করবে তখন নিশ্চয়ই আরও ভালো থাকব আমরা। সূত্র: প্রথম আলো 

সিপিডির সেমিনার, চীনের বিআরআইএ লাভবান হবে বাংলাদেশ, তবে...

নিজস্ব রিপোর্টার: সঠিক পদক্ষেপ নিলে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড কার্যক্রমের সুফল পেতে পারে বাংলাদেশ। তবে, প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বাংলাদেশ যেন চীনা ঋণের ফাঁদে না পড়ে, সে বিষয়েও খেয়াল রাখতে হবে। প্রকল্প বাছাই ও বাস্তবায়ন, বিনিয়োগ, ঋণের শর্ত- এসব বিষয় পরিষ্কার হওয়া দরকার। পাশাপাশি প্রতিবেশি দেশের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকা প্রয়োজন রয়েছে। 
রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড: তুলনামূলক অবস্থান থেকে বাংলাদেশের অবস্থান’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। 
সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহানের সভাপত্বিতে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক, সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, চীনে নবনিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহবুব উজ জামান, চীনের ইউনান অ্যাকাডেমি অব সোশ্যাল সায়েন্সের ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের অধ্যাপক চেং মিন, ভারতের রির্সাচ অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম ফর ডেভেলপিং কান্ট্রিসের মহাপরিচালক ড. শচীন চতুর্বেদী, সিপিডির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সৈয়দ মঞ্জুর ইলাহী। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। সেমিনারে বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও নেপালের বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন।
সেমিনারে বহুল আলোচিত চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে’ বাংলাদেশের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে বক্তারা জানান, ২০১৩ সালে এই উদ্যোগের সূচনা করে চীন। এটি ৭২টি দেশকে সংযুক্ত করবে। এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে চীনের এক্সিম ও ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ইতিমধ্যেই বিভিন্ন দেশের অবকাঠামো প্রকল্পে ১৯০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এই প্রকল্পে চীন-বাংলাদেশ এক হয়ে কাজ করলে লাভবান হবে দুই দেশই। তবে রয়েছে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ। ভুল পদক্ষেপে ফল হতে পারে নেতিবাচক। তাই বাংলাদেশকে সতর্ক পদক্ষেপের পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের।
শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন বলেন, বিআরআই উচ্চপর্যায়ের সহযোগিতার একটি প্লাটফর্ম। এটি বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ প্লাটফর্ম ব্যবহারের মাধ্যমে লাভবান হবে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, কোনো দেশ একা উন্নয়ন করতে পারে না। যেহেতু আমাদের দেশের অর্থনীতিতে নানা ধরনের সমস্যা বিদ্যমান তাই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বাংলাদেশ-চীন দুই দেশ যৌথভাবে পথচলার মধ্যদিয়ে ব্যাপক লাভবান হতে পারে। বিআরআই নিয়ে যখন চীনসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে আলোচনা হবে, তখন উইন-উইন পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, চীন দেশের অবকাঠামো, জ্বালানি খাতে আঞ্চলিক সহযোগিতা লাগবে। বিআরআই এই সুযোগ নেয়ার ফোরাম হতে পারে। 
সিপিডি চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, চীন বর্তমানে বিশ্ববাণিজ্যের নেতৃত্বে আছে। এর সঙ্গে অন্য দেশের সমন্বয় করে চলতে হবে। এটি এখন বিশ্ব অর্থনীতির নতুন ব্যবস্থা। এটা যেন উপনিবেশবাদের মতো না হয়, এটা যেন অংশীদারত্বের ভিত্তিতে হয়। এতে দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার সুযোগ আরো বাড়বে। তিনি বলেন, চীনের সঙ্গে বিআরআই প্রকল্পে যুক্ত হতে হলে চীনের অর্থনীতিটা বুঝে দর কষাকষি করতে হবে। কেননা যখন আমরা দর কষাকষি করব, তখন জাতীয় স্বার্থ সবার আগে বিবেচনা করতে হবে। আর সে জন্য গবেষণা প্রয়োজন। চীনের অর্থনীতিতে ভবিষ্যতে কী হচ্ছে, তাদের থিং ট্যাঙ্ক কী ভাবছে, সেজন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এরসঙ্গে পার্টনারশিপে যুক্ত করতে হবে। কেননা বিআরআই নিয়ে চীনে প্রচুর গবেষণা হয়েছে। বেল্ট অ্যান্ড রোডের অবকাঠামো নির্মাণে কোন দেশ কি পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করবে তা পরিষ্কার হওয়া জরুরি বলে মনে করেন সিপিডি’র চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, বিআরআই বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চীন আমাদের দেশে বিনিয়োগ করছে এবং ভবিষ্যতে বিনিয়োগ আরো বাড়বে। বিআরআইয়ের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ব্যাপক আলাপ-আলোচনা দরকার। তিনি বলেন, বিআরআইয়ের প্রকল্প বাস্তবায়নে অন্যদেশের সঙ্গে যেন দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক নষ্ট না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। প্রকল্পে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ যেন সমানভাবে উপকৃত হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, বিচার বিবেচনা ছাড়া প্রকল্প নিলে তা হিতে বিপরীত হতে পারে। একইসঙ্গে প্রকল্প হতে হবে বাংলাদেশের সক্ষমতা বিবেচনায়।
পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক বলেন, বর্তমানে বিশ্ববাণিজ্যে ইন্দো-প্যাসিফিক, ইউরো-এশিয়া ও বিআরআই উদ্যোগ আছে। আমরা সব উদ্যোগের সঙ্গে যাব। কোনো ক্ষতিকর কিছুর সঙ্গে থাকব না। যখন আমরা এসব নিয়ে দর কষাকষি করব, তখন জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেব।
সংলাপে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মঞ্জুর এলাহী বলেন, আমরা বাজার চাই, এটা সত্য। কিন্তু সবকিছু যাচাই বাছাই করে নেয়া উচিত।
মূল প্রবন্ধে ড. ফাহিমদা বলেন, বিআরআই-এর মাধ্যমে আমাদের যে প্রস্তাবগুলো দেয়া আছে আমরা তা নেব। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে এই অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বিনিয়োগের শর্তগুলোর দিকে। দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে টেন্ডার থেকে শুরু করে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে, বিআরআই যে ঋণ দিচ্ছে সেই ঋণে সুদের হার যাতে কম হয়। আমরা কেন ৩ শতাংশ দেব? ঋণ যেন এক শতাংশের নিচে হয়। আমরা যাতে ঋণের ফাঁদে না পড়ি। আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য হতে হবে রাজনীতির বাইরে গিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা। 

Friday, September 6, 2019

দেশেই চাষ হচ্ছে বেগুনি ধান

চারপাশে সবুজ ধানখেত। মাঝখানে একচিলতে জমিতে বেগুনি রঙের ধানের আবাদ। যেন সবুজের বুকে বেগুনি বিছানা। ভিন্ন রঙের এই ধান চাষ স্থানীয় পর্যায়ে কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে। 

বেগুনি রঙা এই ধানের চাষ হচ্ছে খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার শান্তিপুর এলাকায়। স্থানীয় কৃষক মনতোষ চাকমা জেলায় প্রথমবারের মতো এই ধানের চাষ শুরু করেছেন বলে জানান কৃষি কর্মকর্তারা। চলতি বছরের ২১ মে এর চারা রোপণ করেন তিনি।

মনতোষ চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থা নামের এনজিওর কাছ থেকে বেগুনি রঙের ধানের বীজ সংগ্রহ করেছেন। ওই এনজিও থেকে ‘সুভাষ’, ‘বাঁশফুল’ ও ‘জুনটি’—এই তিন জাতের চারা নিয়েছেন। এখন পরীক্ষামূলকভাবে ২০ শতক জমিতে চার জাতের ধান রোপণ করেছেন। এসব ধানের ফলন কী রকম হবে, তা দেখার পর ভবিষ্যতে আবাদ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

কৃষি কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্যমতে, দেশে প্রথম বেগুনি রঙা ধানের আবাদ শুরু হয় গাইবান্ধায়। সৌন্দর্য ও পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ধান। এই ধানগাছের পাতা ও কাণ্ডের রং বেগুনি। এর চালের রংও বেগুনি। তাই কৃষকদের কাছে এখন পর্যন্ত এ ধানের পরিচিতি বেগুনি রঙের ধান বা রঙিন ধান।

জানতে চাইলে খাগড়াছড়ি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মর্ত্তুজা আলী বলেন, বেগুনি রঙের ধানের চাষ খাগড়াছড়িতে এই প্রথম। কেউ এর নাম দিয়েছেন বেগুনি সুন্দরী, কেউ দুলালি সুন্দরী। ফলন ভালো হলে ভবিষ্যতে ধানের আবাদ বৃদ্ধির চিন্তা করা হবে।

পানছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলাউদ্দিন শেখ বলেন, মনতোষ চাকমাকে সব ধরনের পরামর্শসহ কৃষি বিভাগ থেকে নিয়মিত ধানখেতটি তদারক করা হচ্ছে।

গত বুধবার দুপুরে পানছড়ির উল্টাছড়ি ইউনিয়নের শান্তিপুরে গিয়ে দেখা যায়, চারপাশে সবুজ ধানখেতের মাঝখানে বেগুনি রঙের ধানের আবাদ। মনতোষ চাকমার রোপণ করা অন্য তিন জাতের ধানের গাছের রং আলাদা। এক জাত বাঁশফুল রঙের, এক জাত গাঢ় সবুজ রঙের এবং অন্য জাত হালকা সবুজ রঙের।

তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থার প্রকল্প সমন্বয়কারী সকীরণ চাকমা জানান, মিজারিও-জার্মানির অর্থায়নে ঢাকা বারসিক এনজিও থেকে তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থা সাত প্রকারের ধানের বীজ সংগ্রহ করেছে। এর মধ্যে চার প্রকারের বীজ তাঁরা মনতোষ চাকমাকে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করতে দিয়েছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক আলতাফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিচ্ছিন্নভাবে এই ধানের চাষ শুরু হয়েছে। খাগড়াছড়িতেও চাষ হওয়ার খবর শুনেছেন তাঁরা। এই ধানের পুষ্টিমান বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, এই ধানের পুষ্টিমান, চাষাবাদ পদ্ধতি, ফলনের পরিমাণ, জীবনচক্র, দেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর বিষয়, কোন মৌসুমে চাষ করলে ভালো হবে—এসব বিষয়ে বিস্তারিত গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। সূত্র: প্রথম আলো

উদ্যোক্তা তৈরির নতুন ঠিকানা ‘মোড়’

সূত্র প্রথম আলো: মফস্বলের পাড়া–মহল্লার মোড়ে মোড়ে তরুণেরা আড্ডা দেন। সেই আড্ডা থেকেই অনেক সময় বেরিয়ে আসে দারুণ কিছু। সেই ধারণা থেকেই ‘মোড়’। কোওয়ার্কিং স্পেস। যেখানে আধুনিক সুযোগ-সুবিধার অফিস ভাগাভাগি করে ব্যবহারের সুযোগ পান উদ্যোক্তারা। ব্যবসায়িক কিংবা দাপ্তরিক বৈঠক করার মতো সুবিধা তো আছেই। 

বনানী ১১ নম্বর সড়কে ‘মোড়ের’ কার্যালয়ে ঢুকলেই চোখে পড়বে একটি ল্যাম্পপোস্ট। কালো রঙের ল্যাম্পপোস্টটি মনে করিয়ে দেবে সেই মফস্বলের কথা। মোড়ের চত্বরজুড়ে আধুনিকতার ছাপ। ছিমছাম পরিবেশে বিভিন্ন টেবিলে বসে কম্পিউটারে কাজ করছেন জনা বিশেক তরুণ-তরুণী। পথের পাঁচালি, ঘরে, বাইরে, ঘরে-বাইরে নামের চারটি বৈঠকস্থলও সমান ব্যস্ত। 

মোড়ের গল্প শুনতে গত জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহের এক দুপুরে দুই উদ্যোক্তা—নাবিলা নওরিন ও নাহিদ শারমিনের সঙ্গে আড্ডা হয়। তাঁরা জানান, বনানী ১১ নম্বরে সড়কে ২০১৫ সালে ৫ মে মোড়ের যাত্রা শুরু হয়। এক দফা স্থান পরিবর্তনের পর বর্তমানে ২ হাজার বর্গফুট আয়তন জায়গা নিয়ে মোড় চলছে। গত মার্চ মাসে ধানমন্ডিতে মোড়ের নতুন আরেকটি শাখা চালু হয়েছে। 

শুরুর গল্পটা বললেন নাবিলা নওরিন। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্যবিদ্যায় পড়াশোনা শেষ করে ২০১২ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোয় যান তিনি। সেখান থেকে আবার ইন্টার্নি করতে যান ব্রাজিলের সাও পাওলো শহরে। সেখানকার তরুণ উদ্যোক্তারা কোওয়ার্কিং স্পেসে ভাগাভাগি করে নিজেদের কাজ করেন। বিষয়টি মনে গেঁথে যায় নাবিলার। ২০১৪ সালে দেশে ফেরার আগেই বান্ধবী নাহিদ শারমিনের সঙ্গে সে রকম কিছু একটা করার জন্য চিন্তাভাবনা শুরু করেন। 

বাংলাদেশে অনেক তরুণ উদ্যোক্তা ফ্রিল্যান্স, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ওয়েব ডেভেলপমেন্টসহ নানা ধরনের কাজ করেন। তাঁদের পক্ষে কাজের জন্য কিংবা ব্যবসায়িক অংশীদারদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য নিজস্ব অফিস স্থাপন করাটা বেশ ব্যয়বহুল। তা ছাড়া অফিসের পেছনে প্রতি মাসেই মোটা অঙ্কের অর্থ খরচের বিষয় তো আছেই। সেই বাড়তি ব৵য় বোঝা থেকে মুক্তি দিতেই ‘মোড়’ শুরু। 

এমন তথ্য দিয়ে নাবিলা নওরিন বলেন, ‘শুরুতে ধারণাটি তরুণদের কাছে জনপ্রিয় করাটা ছিল বেশ চ্যালেঞ্জিং। মোড়ের প্রথম দিকে অনেকেই উঁকি দিতেন। জানতে চাইতেন—এটি কি রেস্তোরাঁ, নাকি বাতির (লাইট) দোকান? আমরা সবাইকে খুব আগ্রহ নিয়ে মোড় ঘুরিয়ে দেখাতাম। আমাদের ধারণাটি তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করতাম।’ 

ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মোড়। বনানীতে এখন বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মোড়ের সদস্যসংখ্যা ১২০। তাঁদের মধ্যে আছেন বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি ও তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে কাজ করেন এমন উদ্যোক্তারা। গুলশানের এফ আর টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ডের পর একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা তিন মাস মোড়ে তাঁদের দাপ্তরিক কাজ করেন। অন্যদিকে সুইস একটি সফটওয়্যার কোম্পানি ধানমন্ডি মোড় আগামী পাঁচ বছর ব্যবহারের জন্য চুক্তি করেছে। সেই প্রতিষ্ঠানের ৩৪ জন কর্মী কাজ করছেন। তারা মোড়ের অর্ধেক অংশ ব্যবহার করে, বাকিটা ব্যবহার করছে অন্য উদ্যোক্তারা।

সদস্য না হলেও প্রতি ঘণ্টা ১৫০ টাকায় মোড়ের সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করা যাবে। মাসে ২ হাজার টাকা দিয়ে হওয়া যাবে ‘স্টার্টার’ সদস্য। তখন মোড়ের দুই শাখার একটিতে ৪০ ঘণ্টা ব্যবহার করতে পারবেন উদ্যোক্তারা। আবার ৮ হাজার টাকা দিয়ে ‘ইনফিনিটি’ সদস্য হলে ইচ্ছামাফিক যত ঘণ্টা খুশি মোড়ে অফিস করা যাবে। সদস্যদের জন্য আছে খাবারের কক্ষ ও কফির সুবিধা। 

মোড়ের সদস্য ইসমাইল সাঈদ নিজে একটি মেডিকেল সফটওয়্যার বানাচ্ছেন। তিনি বললেন, ‘২ লাখ টাকা খরচ করে হাতিরপুলে অফিস নিয়েছিলাম। তারপর খরচ জোগাতে না পেরে ছেড়ে দিয়েছি। বর্তমানে বেশ স্বচ্ছন্দে মোড়ে অফিস করছি।’ তিনি বলেন, মোড়ে আসার পর কাজ না করে উপায় নেই। কারণ প্রতি মিনিটের জন্য আপনি পয়সা গুনছেন। আবার আপনি যখন দেখবেন আপনার আশপাশে সবাই কাজ করছেন তখন আপনিও উদ্বুদ্ধ হবেন। তা ছাড়া এখানে কাজ করতে গিয়ে সবার মধ্যে একটা নেটওয়ার্ক তৈরি হয়। তখন কাজ পেতেও সুবিধা হয়। 

মোড় পরিচালনা করতে করতে আড়াই বছর আগে ‘বহু’ নামে আসবাবের একটি ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছেন নাবিলা নওরিন ও নাহিদ শারমিন। বনানীতে ‘বহু’র একটি বিক্রয়কেন্দ্র আছে। তার বাইরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য স্থাপত্যচর্চা, অন্দরসজ্জা ও আসবাবের নকশা করেন তাঁরা। 

গত মাসে রাইজিং স্টার অব দ্য ইয়ার ক্যাটাগরিতে নারীদের জন্য সিটি ব্যাংকের বিশেষায়িত সেবা সিটি আলোর সহায়তায় কালারস প্লাটিনাম বিজনেস উইমেন অ্যাওয়ার্ড-২০১৯ পেয়েছেন নাবিলা নওরিন ও নাহিদ শারমিন।

Tuesday, September 3, 2019

ব্যবসা এখন সোনাতেই

সূত্র প্রথম আলো: বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে সোনাই সবচেয়ে খাঁটি। শেয়ারবাজার যেখানে টালমাটাল, বন্ডের বাজারে যখন অস্থিরতা, তখন সোনার দাম তর তর করে বাড়ছে। যদিও প্রথাগত বিনিয়োগমাধ্যম আকর্ষণ হারিয়ে ফেলার কারণেই সোনার এমন বাড়বাড়ন্ত হচ্ছে। কিন্তু সোনা সাধারণত মানুষকে হতাশ করে না, অন্যান্য বিনিয়োগ মাধ্যম যা করে থাকে। তাই দেখা যাচ্ছে, বিশ্ববাজারে সোনার দাম (স্পট মার্কেট) আউন্সপ্রতি ১ হাজার ৫০০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। 

গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববাজারে সোনার দাম ছিল ১ হাজার ৫৩৯ ডলার। এমনকি তা ১ হাজার ৬০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আশঙ্কা করছেন। রয়টার্স ও ব্লুমবার্গ সূত্রে এই খবর পাওয়া গেছে। 

স্পট মার্কেটে সোনার দাম এর আগে ২০১৩ সালের মে মাসে ১ হাজার ৪৬৯ ডলারে উঠেছিল। মাঝের কয়েক বছর সোনার দাম ওঠানামা করলেও চলতি বছরের ১ জুন থেকে সোনার দাম বাড়তে শুরু করে। ব্যাপারটা হলো, মার্কিন-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ ছেড়ে দিয়ে নিরাপদ সম্পদ হিসেবে সোনার দিকে ঝুঁকছেন। পাশাপাশি ডলারের মান পড়ে যাওয়াও বিনিয়োগকারীদের এই সিদ্ধান্ত নিতে উদ্বুদ্ধ করছে। উল্লেখ্য, সোনাও ডলারের মতো একধরনের মুদ্রা। তাই ডলার দুর্বল হলে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সোনায় রিজার্ভ রাখে। 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি নতুন করে ৩০০ বিলিয়ন ডলারের চীনা পণ্যে শুল্ক আরোপ করায় চীন বলেছে, তারাও এর জবাব দেবে। ইউএস গ্লোবাল ইনভেস্টরসের প্রধান বাণিজ্য কর্মকর্তা মাইকেল মাতৌসেক রয়টার্সকে বলেছেন, এই শুল্ক ও চীনের প্রতিশোধ নেওয়ার খবরেই সোনার বাজারদর বাড়ছে। বৈশ্বিক অর্থনীতি নিয়ে নানা ধরনের অনিশ্চয়তা, বন্ডের সুদহার ঋণাত্মক হয়ে যাওয়া, চলমান মুদ্রাযুদ্ধ—এসব কারণে সোনার চাহিদা বাড়ছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, সোনার বাজার এখন ঊর্ধ্বমুখী। এর দাম আরও বাড়ার সম্ভাবনা আছে। এটি সম্ভবত নতুন আরেকটি ধারার শুরু। তাঁরা এ-ও বলছেন, সোনার দাম আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বর নাগাদ আউন্সপ্রতি ১ হাজার ৬০০ ডলারে ওঠার সম্ভাবনা আছে। এরপর দাম সেখানে স্থিতিশীল হবে।

আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ফিলিপ ফিউচারের বিশ্লেষক বেঞ্জামিন লু রয়টার্সকে বলেন, সোনার নিকট-ভবিষ্যৎ বেশ উজ্জ্বল বলেই মনে হচ্ছে। এসব অস্থিরতা, প্রবৃদ্ধি নিয়ে শঙ্কা, অর্থনৈতিক তথ্য-উপাত্তের দুর্বলতা—এসব কারণে ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্র হবে সোনা।

অন্যদিকে ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শেয়ার সূচকের পতন হচ্ছে। এতেও সোনার প্রতি মানুষের আকর্ষণ বেড়েছে। নিরাপদ বিনিয়োগ ক্ষেত্র হিসেবে সোনার কদর বেড়েছে।

বিশ্ববাজারে সোনার দাম বাড়ায় বাংলাদেশের বাজারেও ইতিমধ্যে তিন দফা বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে বাজারে ২২ ক্যারেট সোনা ভরিপ্রতি ৫৬ হাজার ৮৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

আগামী ২০২০ সালে মার্কিন নির্বাচন পর্যন্ত বাণিজ্যযুদ্ধ চলবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। সে কারণে শেয়ারবাজার ও মুদ্রাবাজার একরকম অস্থিরই থাকবে। সেই সুযোগে সোনার দাম আউন্সপ্রতি ১ হাজার ৬০০ ডলারে উঠে যেতে পারে বলেই বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।

Monday, September 2, 2019

ভিনদেশের বন্দরে বাংলাদেশি জাহাজ

সূত্র প্রথম আলো: এ মুহূর্তে জাপান, ইন্দোনেশিয়া, দুবাই, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর বা ভারতের বন্দরের জলসীমায় উড়ছে বাংলাদেশি পতাকা। এই পতাকা বহন করছে বাংলাদেশি জাহাজ। বিদেশের বন্দরে দেশীয় পতাকা ওড়ানোতে এগিয়ে কবির গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিং। কারণ, বাংলাদেশের বহরে থাকা জাহাজের সিংহভাগই তাদের হাতে।

বাংলাদেশে নিবন্ধিত সমুদ্রগামী জাহাজ এখন ৫২টি। এর মধ্যে এককভাবে ১৮টি জাহাজই কবির গ্রুপের। এই গ্রুপের বহরে আগামী মাসে যুক্ত হচ্ছে আরও দুটি। এক দশক ধরে সরকারি-বেসরকারি দুই খাতের মধ্যে জাহাজ পরিচালনা ব্যবসায় নেতৃত্ব দিচ্ছে এ গ্রুপটি। 

আগ্রাবাদের বারিক বিল্ডিং মোড়ে কবির মনজিল থেকে নিয়ন্ত্রণ হয় প্রতিষ্ঠানটির জাহাজের ব্যবসা। বুধবার ভবনের চতুর্থ তলায় গিয়ে দেখা যায়, বড় মনিটরে পর্দায় ভেসে উঠছে সাগর, মহাসাগর ও বন্দরে থাকা প্রতিষ্ঠানটির জাহাজের সাংকেতিক চিহ্ন। পর্দায় চোখ রেখে দেখা যায়, এ মুহূর্তে জাপানের বন্দরে পতাকা উড়িয়ে পণ্য বোঝাই করছে এমভি জোয়াহের জাহাজটি। দুবাই থেকে আরব সাগর হয়ে ভারতের একটি বন্দরে ফিরছে ‘এমভি জাহান মনি’। দক্ষিণ চীন সাগর পেরিয়ে ভিয়েতনামের বন্দরে ভিড়েছে আয়শা সারওয়ার। 

বন্দর থেকে বন্দরে পণ্য নিয়ে জাহাজের ছুটে চলার এই বৈশ্বিক ব্যবসার সব সুফল প্রতিষ্ঠানটি একাই ঘরে তুলছে না। দেশের অর্থনীতিতেও ছোট্ট অবদান রেখে চলেছে তারা। বিদেশের বন্দরে পতাকা ওড়ানোর গৌরব তো আছেই। দেশের আমদানি পণ্য পরিবহন করে বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় হচ্ছে। আবার বিদেশের এক বন্দর থেকে আরেক বন্দরে পণ্য পরিবহন করে বৈদেশিক মুদ্রাও আয় করছে এই প্রতিষ্ঠানটি। শতভাগ দেশীয় নাবিক নিয়োগ করে কর্মসংস্থানের বিষয়টিও নিশ্চিত করছে তারা।

কবির গ্রুপের জাহাজ পরিচালনার ব্যবসার নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক সারওয়ার জাহান। নিজ অফিসে বসে প্রথম আলোকে জানালেন, রপ্তানি আয়, বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়, কর্মসংস্থান এবং বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি বাড়ানো—চারটি অর্জনই এক খাত থেকে হচ্ছে। দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজের সংখ্যা যত বাড়বে, ততই এই চারটি খাতে দেশের অর্জনও বাড়তে থাকবে। সেই চেষ্টাই আমরা করে যাচ্ছি।

জাহাজ পরিচালনার মতো কঠিন ব্যবসায় নেতৃত্ব দেওয়া খুব সহজ নয়। এখানে পণ্য পরিবহনের ভাড়া ঠিক করতে হয় বিশ্বের সব জাহাজ কোম্পানির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে। আন্তর্জাতিক বাজারে জাহাজ ভাড়া প্রতিনিয়ত ওঠানামা করে। এ বাজারে লোকসান দিয়ে হলেও ভাড়া নিতে হয়। কারণ, বসে থাকলে প্রতিদিন খরচ গুনতে হয় জাহাজভেদে আট-দশ লাখ টাকা। এই লোকসানের কথা মাথায় রেখে হাতে অগ্রিম পুঁজি রাখতে হয়। এরপরও থাকে শঙ্কা।

এই যেমন এক দশক আগে বৈশ্বিক মন্দার পর জাহাজের ভাড়া অস্বাভাবিক কমে যায়। সংকট দীর্ঘস্থায়ী হলে বিশ্বের বাঘা বাঘা জাহাজ কোম্পানিও খাদে পড়ে যায়। বিশাল অঙ্কের লোকসানে পড়ে একজন আরেকজনকে অধিগ্রহণ করতে থাকে। কেউ দেউলিয়া হয়ে যায়। এ ঢেউ লেগেছে দেশেও। দেশে অনেকে ধাক্কা সামলাতে না পারলেও কবির গ্রুপ ঠিকই সংকট থেকে নিজেদের বের করে নিয়েছে। 

কীভাবে? কবির গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিম জানালেন, শুধু নিজের কোম্পানির পণ্য পরিবহনের চিন্তা থেকে জাহাজ পরিচালনা ব্যবসা চালানো কঠিন। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেই ব্যবসা করতে হবে। বিশ্বমানের ব্যবস্থাপনা থাকতে হবে। নাহলে সংকটের সময় টিকে থাকা কঠিন।

বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে জাহাজ ব্যবসা শুরু হয়েছে ৪১ বছর আগে। শুরুর দিকে এটলাস শিপিং, সমুদ্রযাত্রা শিপিংয়ের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো পথ দেখিয়ে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে। কিউসি বা এইচআরসির যুগও শেষ হয়েছে। সেখান থেকেই শুরু করেছিল কবির গ্রুপ। ২০০৫ সালে এমভি ফাতেমা জাহান জাহাজ দিয়ে শুরু হয় তাদের বৈশ্বিক ব্যবসার। তাতে কয়েক বছরের মাথায় দেশের শীর্ষস্থানে উঠে আসে তাদের নাম। বিদেশের বন্দর সবচেয়ে জাতীয় পতাকাও উড়ছে তাদের হাত ধরে। যেন বিদেশের বন্দরে এক টুকরো ভাসমান বাংলাদেশ। 

সব মিলিয়ে গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ খাত থেকে রপ্তানি আয় এসেছে ৩০ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আয় হয়েছিল ২৮ কোটি ৩৭ লাখ ডলার।

স্টার্টআপ বা উদ্যোক্তা : শুরুর আগে শুরু

সূত্র প্রথম আলো: এখন অনেকেই উদ্যোক্তা হতে চান। বিজনেস কার্ডে নিজের নামের নিচে ম্যানেজিং ডিরেক্টর বা সিইও লেখা যায়! কিন্তু ব্যাপারটা কি আসলে এতটাই সোজা? অনেক উদ্যোগই শেষ পর্যন্ত স্থায়ী হয়নি। ব্যবসা শুরুর আগে কিছু সঠিক কাজ করলে হয়তো এই অকালমৃত্যু ঠেকানো যেতে পারে।

১. কী করবেন
ব্যবসার ধারণাটি কী আপনার? যেকোনোভাবে একটা নতুন আইডিয়া আপনার মনে আসতে পারে। হতে পারে সেটা কাউকে দেখে, কারও কাছ থেকে শুনে অথবা কোথাও পড়ে। অনলাইন বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও জানতে পারেন বা নিজে উপলব্ধিও করতে পারেন। তবে আইডিয়া পেলেই ঝাঁপিয়ে পড়বেন না। প্রথমে এর বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে, পড়াশোনা করে, আলাপ-আলোচনা করে সেটি যাচাই করে নিন। অনেকেই চুরির আশঙ্কায় আইডিয়া নিয়ে আলাপ করতে চান না। কিন্তু একটা পূর্ণাঙ্গ ব্যবসায় আইডিয়ার অবদান মাত্র ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। বাকিটুকু বাস্তবায়ন। এ ছাড়া পৃথিবীর সবাই আলাদা। কেউ আপনার আইডিয়া শুনলেও সেটা আপনার মতো করে বাস্তবায়ন করতে পারবেন না। মায়ের কাছে সন্তানের মতো উদ্যোক্তার কাছে আইডিয়া। অন্যের সঙ্গে শেয়ার করলে বরং এর দুর্বলতাগুলো ধরা পড়বে। সে ক্ষেত্রে বিরাট ক্ষতি থেকে বাঁচবেন। 

২. কেন করবেন
কিছু সম্ভাব্য ক্রেতা বা গ্রাহকের সঙ্গে বাতচিত করা উচিত। ক্রেতা বা গ্রাহক পণ্য বা সেবা কেনেন না। কেনেন তার উপযোগিতা। যেমন সিনেমা হলে ইদানীং দর্শক কমে যাচ্ছে। সিনেমা হলগুলো আরামপ্রদ করে, গেটআপ বদলিয়ে বা ভালো সিনেমা এনে কি দর্শকে ভরপুর করে ৩০ বছর আগের মতো রমরমা ব্যবসা করা যাবে? সম্ভবত না। কারণ, দর্শক সিনেমা হলে যেতেন বিনোদনের জন্য। সেই বিনোদন এখন পাচ্ছেন টিভি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ইউটিউব থেকে। আপনার পণ্য গ্রাহকের কোন চাহিদাটা মেটাচ্ছে, ভেবে দেখুন। যদি প্রতিযোগী থাকেন, তাহলে বাড়তি কী দিচ্ছেন, সেটাও ভাবুন। বাজারে পণ্যের চাহিদা এবং সরবরাহ কেমন, জেনে নিন। দরকার হলে কোনো পেশাদার প্রতিষ্ঠানের সাহায্য নিন। 

৩. কাদের জন্য
আপনার গ্রাহক কারা, চিনুন। তাঁদের আপনার লক্ষ্য অনুসারে ভাগ করুন। অনেকে বলেন, বাংলাদেশে ১৬ কোটি লোক আছে, তার ১ শতাংশ পেলেই আমার অনেক। ১৬ কোটি লোককে গ্রাহক ভাবার মানে হলো আপনি আপনার গ্রাহককে চেনেননি, পর্যাপ্ত গবেষণা করেননি। গ্রাহককে চিনুন। তাঁরা কোথায় থাকেন, কী করেন, কী চান, কী পছন্দ করেন না—সবকিছু জানুন। 

৪. কীভাবে করবেন
আপনাকে অন্যের থেকে আলাদা হতে হবে। যেটাকে বলে ইউনিক সেলিং প্রপজিশন বা ইউএসপি। পণ্যটি যদি নতুন হয়, তাহলে সেটিই হতে পারে ইউএসপি। অথবা আপনি কস্ট লিডার হতে পারেন। একই পণ্য অন্যরাও দিচ্ছেন, কিন্তু আপনার কাছে অনেক সস্তায় পাওয়া যায়। তবে দেখে নিন আপনার গ্রাহকেরা মূল্য সংবেদনশীল কি না। 

৫. আপনি কেন?
ওপরের সব উপাদান যদি পজিটিভ হয়, তবু এ ব্যবসায় আপনি কেন? আপনার কী গুণ আছে? এ ব্যবসা আপনি কেন করতে পারবেন? আপনার শক্তির জায়গাগুলো কী কী? এই ব্যবসা করার জন্য যে যে গুণ দরকার, তা আপনার বা আপনার অংশীদারের আছে কি? যদি কোনো গুণে ঘাটতি থাকে, তা কীভাবে মেটাবেন? 

৬. সহায়ক শক্তি
ব্যবসা করার জন্য অনেক উপাদান প্রয়োজন হয়, যেমন: কাঁচামাল, জনবল, ভৌত উপাদান, যানবাহনব্যবস্থা ইত্যাদি। আপনার সবকিছু ঠিক থাকলেও সহায়ক শক্তিগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে ও সময়মতো না থাকলে কিন্তু আপনার উদ্যোগ ভেস্তে যাবে। 
এসব ভেবেই আপনার উদ্যোগে নামবেন কিন্তু! 

শওকত হোসেন: ভেঞ্চার বিনিয়োগ বিষয়ক পরামর্শক