Sunday, September 15, 2019

ঢাকায় এরোপ্লেন মসজিদ

এলিফ্যান্ট রোডের সবাই একনামে চেনে—এরোপ্লেন মসজিদ। শুধু এলিফ্যান্ট রোডের লোকজন কেন, ঢাকার পুরোনো বাসিন্দারাও চেনে এই মসজিদ। মসজিদটির নাম সবার মুখে মুখে থাকার কারণ এর ব্যতিক্রর্মী স্থাপত্যশৈলী। পাঁচতলাবিশিষ্ট মসজিদ ভবনের ছাদে রয়েছে একটি উড়োজাহাজের মডেল। এটি ষাটের দশকের মসজিদ। সে সময় ঢাকায় এমন ভবন একেবারেই নতুন।

মসজিদটির প্রতিষ্ঠাতা মো. ইসমাইল। ১৯৮১ সালে তিনি মারা যান। আজ রোববার কথা হলো মো. ইসমাইলের ছোট ছেলে এস এম আনিসুর রহমানের সঙ্গে। তিনি জানালেন, তাঁর দাদা মো. ইব্রাহিম ছিলেন ঢাকার নবাবদের স্টেটের মুনশি। সে সুবাদে নীলক্ষেত ও লালমাটিয়া এলাকায় তিনি আনুমানিক দুই হাজার বিঘা জমির মালিকানা পান। বাবার মৃত্যুর পর ইসমাইল নিজেদের প্রায় ৯ কাঠা জমির ওপর ১৯৬০ সালে মসজিদটির নির্মাণকাজ শুরু করেন। আনিসুর রহমান বললেন, ‘শুরুর দু–তিন বছরের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হয়। তখন মসজিদটি ছিল একতলা। একতলার ছাদের ওপর স্থাপন করা হয় উড়োজাহাজের আদলের একটি মডেল।’

স্বাধীনতার পর ভবনটি দোতলা করা হয়। যতবার ভবনের উচ্চতা বেড়েছে, ততবার উড়োজাহাজের মডেলটিকেও ওপরে তোলা হয়েছে। বর্তমানে এটি পাঁচতলা ভবন। ভবনের মিনারের চূড়ায় ৬০ বছরের পুরোনো সেই উড়োজাহাজটি স্থাপন করা হয়েছে। ১৯৭৯ সালে মসজিদটি ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ২০০২ সালে চালু হয় আবাসিক মাদ্রাসা।

সময় বদলেছে, মসজিদ বড় হয়েছে, বদলেছে সড়কের নামও। সড়কটির বর্তমান নাম শহীদজননী জাহানারা ইমাম সরণি। কিন্তু মসজিদটির ছাদে এখনো আছে সেই ‘এরোপ্লেন’টি। মসজিদেই কথা হলো মসজিদের সহকারী ইমাম সৈয়দ মো. বাকি বিল্লাহর সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘এটি একটি ঐতিহ্যবাহী মসজিদ। ঢাকায় এমন মসজিদ আর পাবেন না। মানুষ মসজিদটি দেখতে আসেন, নামাজ পড়েন—ভালো লাগে।’ তিনি জানালেন, মসজিদে বর্তমানে একজন খতিব, তিনজন ইমাম, একজন মোয়াজ্জিন, দুজন শিক্ষক, তিনজন খাদেম, দুজন প্রহরী এবং ৩০ জন আবাসিক শিক্ষার্থী রয়েছে। মসজিদ পরিচালনার দায়িত্বে আছেন প্রয়াত মো. ইসমাইলের পরিবারের সদস্যরা। মসজিদের অধীনে কিছু দোকান রয়েছে। দোকানভাড়া ও দানবাক্সে পাওয়া অর্থ দিয়েই প্রধানত মসজিদটি পরিচালিত হয়।

মসজিদের নাম এরোপ্লেন রাখার কারণ কী—এমন প্রশ্নের উত্তরে এস এম আনিসুর রহমান বললেন, ‘আব্বা মসজিদটিকে একটি ল্যান্ডমার্ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। তখন ছাতা মসজিদ, জাহাজ মসজিদ ইত্যাদি নামে মসজিদ ছিল। তিনি সম্ভবত চেয়েছিলেন এরোপ্লেন প্রতীকের কারণে মসজিদকে একনামে সবাই চিনুক।’ সূত্র: প্রথম আলো

Thursday, September 12, 2019

টাকার খোঁজে সরকার

খরচ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। ব্যয়ের খাত কেবল বড়ই হচ্ছে, অথচ আয়ে আছে বড় ঘাটতি। ব্যয়ের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ নেই সরকারের কাছে। বরং টাকার সংকটে আছে সরকার। 

সরকার পরিচালনার খরচ বেড়েছে। বাড়ানো হয়েছে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা। বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নেওয়ায় সুদ পরিশোধ ব্যয়সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আকার বাড়ছে উন্নয়ন ব্যয়ের। আরও আছে বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের বিপুল আগ্রহ। 

সব মিলিয়ে সরকারের ব্যয়ের তালিকা দীর্ঘ। কিন্তু রাজস্ব আয়ের বাইরে সরকারের জন্য অর্থের উৎস হচ্ছে ঋণ নেওয়া। আর এই ঋণ এখন অত্যন্ত ব্যয়বহুল। ফলে সরকার অর্থ সংস্থানের নানা উপায় খুঁজছে। যেমন স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার অলস অর্থ নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন, মহাসড়ক থেকে টোল আদায়, টেলিকম কোম্পানির কাছ থেকে চাপ দিয়ে অর্থ আদায় ইত্যাদি। সরকার এখন যেকোনোভাবে অর্থ পেতে যে মরিয়া, এটি তারই প্রমাণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আবার সরকারের ব্যয় বাড়লেও এর স্বচ্ছতা নিয়েও আছে নানা প্রশ্ন। প্রকল্প বাস্তবায়নে দুর্নীতি, একতরফাভাবে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি, জবাবদিহির অভাব, জনগণের করের টাকায় সরকারি বিভিন্ন অদক্ষ প্রতিষ্ঠান পরিচালনা, করের বোঝা বৃদ্ধি—এসব নিয়েও আছে নানা সমালোচনা। 

বড় ব্যয়, কম আয়

২০১৮-১৯ অর্থবছরে সরকারের রাজস্ব আয়ে মোট ঘাটতি ছিল ৭২ হাজার কোটি টাকা। তবে পরবর্তী সময়ে বাজেট সংশোধন করলেও রাজস্ব আয়ে মোট ঘাটতি দাঁড়ায় ৫৬ হাজার কোটি টাকা। আয়ে বড় ঘাটতি নিয়েই শুরু হয়েছে নতুন ২০১৯-২০ অর্থবছর। 

কর-জিডিপির অনুপাতের দিক থেকে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে সর্বনিম্ন অবস্থানে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় নিজেই বলেছেন, ‘দেশে ৪ কোটি নাগরিক মধ্যম আয়ের অন্তর্ভুক্ত থাকলেও আয়কর দেয় মাত্র ২১-২২ লাখ।’ আয় বাড়াতে গত ১ জুলাই নতুন ভ্যাট আইন চালু করা হলেও ব্যবসায়ীদের চাপে তা অনেকটা প্রায় আগের আইনের মতোই রয়ে গেছে। এ থেকে রাজস্ব আদায়ে বড় কোনো পরিবর্তন আসবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন না। আবার উৎসে কেটে নেওয়া হয় বলে চাকরিজীবীদের কাছ থেকেই আয়কর বেশি পায় সরকার। যাঁরা ফাঁকি দেন, তাঁরা বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাইরে আছেন। সব মিলিয়ে সরকারের আয় বাড়ানোর পথ এখনো অনেকটাই সীমিত হয়ে আছে। 

তারপরও চলতি অর্থবছরের জন্য সরকারের ব্যয় পরিকল্পনা বিশাল, প্রায় সোয়া ৫ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে উন্নয়ন ব্যয় ২ লাখ ১১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা, বাকিটা সরকারের পরিচালন ব্যয়। আয় ও ব্যয়ের মধ্যে পার্থক্য প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা। 

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের বিপুল অর্থ খরচের চাহিদা আছে। কিন্তু সরকার এখন আয় করার কঠিন পথে না গিয়ে সহজ পথে হাঁটার চেষ্টা করছে। রাজস্ব আদায়ের পরিধি বাড়ানোর দিকেই সরকারের এখন নজর দেওয়া উচিত। তা না করে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে টাকা নিতে চায়। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হতে চাই। কিন্তু এত কম রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত দিয়ে তা সম্ভব নয়। তাই অর্থ সংগ্রহের সহজ পথে না গিয়ে রাজস্ব খাত সংস্কারের কঠিন পথেই যেতে হবে।’ 

ঋণের ফাঁদে সরকার

এদিকে, আয়ের তুলনায় ব্যয় যত বাড়ছে, সরকারও তত বেশি ঋণের ফাঁদে পড়ছে। যেমন গত অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকারের অর্থায়নের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১১ হাজার ৯০ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরেও তা ছিল সাড়ে ৮৭ হাজার কোটি টাকা। সরকারের নেওয়া মোট অভ্যন্তরীণ ঋণ এখন জিডিপির প্রায় ১৭ শতাংশ।

গত ১০ বছরে সরকার সবচেয়ে বেশি বাড়িয়েছে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা। এতে দুর্নীতি না কমলেও ব্যয় বেড়েছে বিপুল। মোট বাজেটের ২৮ শতাংশই খরচ হয় বেতন, ভাতা ও পেনশন খাতে। আরেকটি বড় খাত হচ্ছে সুদ পরিশোধ, প্রায় সাড়ে ১৮ শতাংশ। সরকার প্রতিবছর ঋণ করে ঘাটতি মেটাচ্ছে। আর এ ঋণের বড় অংশই আসছে ব্যাংকিং ব্যবস্থা ও সঞ্চয়পত্রের মতো অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে। সঞ্চয়ের নিরাপদ বিকল্পের অভাব ও জনপ্রিয়তা হারানোর ভয়ে সরকার সঞ্চয়পত্রের সুদের হারও কমাতে পারছে না। এতে সুদ পরিশোধ ব্যয়সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। বিশাল বাজেট-বড় ঘাটতি-ব্যয়বহুল ঋণ-সুদ পরিশোধ-আবার বড় বাজেট-আবার ঘাটতি-আরও সুদ পরিশোধ—এভাবেই ঋণের এই ফাঁদে পড়ে আছে বাংলাদেশ। 

অর্থের সন্ধানে সরকার

স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ—এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে এখন প্রায় সোয়া ২ লাখ কোটি টাকা আছে। সরকারের নজর এখন এখানে। এই অর্থের ৭৫ শতাংশ নিয়ে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় করতে একটি নতুন আইনের খসড়া অনুমোদন করেছে মন্ত্রিপরিষদ। 

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিডিপি) সদস্য শামসুল আলম এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার সিদ্ধান্তটি অর্থনীতির জন্য খুব ইতিবাচক। এসব প্রতিষ্ঠান তো সরকারেরই। এই উদ্যোগ কার্যকর হলে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা পাওয়া যাবে, যা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) সমান। সরকার এখন বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, টাকার দরকার আছে। 

তবে সরকারের এই পরিকল্পনায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এতে তারল্যসংকটে থাকা ব্যাংকিং খাতে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাংকগুলো থেকে টাকা তুলে নিলে বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হবে। সরকার কীভাবে বিষয়টি ব্যবস্থাপনা করবে, এটা বড় বিষয়। কারণ, বেসরকারি, বিশেষত নতুন ব্যাংকগুলো এসব টাকার ওপর নির্ভর করেই চলছে। 

এদিকে, টেলিযোগাযোগ খাতের বড় দুই কোম্পানি গ্রামীণফোন ও রবির কাছে ১৩ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা পাওনা আদায়ে নানাভাবে চাপ দিচ্ছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এর কোনো সুরাহা হচ্ছে না। বরং চাপ দিয়ে অর্থ আদায় করা সম্ভব বলে সরকারের একটি পক্ষের ধারণা। 

পাশাপাশি ৩ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে দেশের জাতীয় মহাসড়ক ব্যবহারের ওপর টোল আদায়ের নির্দেশ দেন। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল বুধবার এ নিয়ে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘দেশের মহাসড়কে টোল আদায়ে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের পর এখান থেকে সরে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। প্রধানমন্ত্রী নিজেই যেহেতু ঘোষণা দিয়েছেন এরপর তো নড়ন-চড়নের কোনো বিষয় নেই।’ চারটি মহাসড়কে টোল আরোপের বিষয়ে প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান তিনি। 

মহাসড়কে টোল আদায় করা হলে সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের ব্যয় বেড়ে যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান এ বিষয়ে বলেন, অনেক দেশেই সাধারণ সড়কের বিকল্প হিসেবে টোল রোড থাকে। সেখানে নিরবচ্ছিন্ন গতি ও রাস্তা ভালো থাকে বলে বাড়তি খরচ দিলেও চাপ তৈরি হয় না। বাংলাদেশে রাস্তাঘাট যদি একই থাকে, চলাচল নিরবচ্ছিন্ন না হয়, তাহলে টোলের কারণে মানুষের ব্যয় বাড়বে। 

খরচ বেশি, জবাবদিহি কম

সরকার এখন ১১টি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এই ১১ প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা আছে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা। বেশির ভাগ বড় প্রকল্পেই খরচ ও বাস্তবায়নের সময় বেড়েছে। এতে এর অর্থনৈতিক উপযোগিতাও কমছে। আবার সরকার এখন প্রকল্প বাস্তবায়নে বিদেশি সহায়তার তুলনায় স্থানীয় উৎস থেকে বেশি অর্থ ব্যয় করছে। এই অর্থ ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিয়েও আছে নানা প্রশ্ন। ফলে প্রকল্পে একেকটি বালিশের দাম পড়ছে ৬ হাজার টাকা, চিকিৎসাবিজ্ঞানের একটি বই কেনা হচ্ছে ৮৫ হাজার টাকায়, আর পর্দার দাম হয়ে যাচ্ছে ৩৭ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে এখন তহবিল ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের ঘাটতি একদিকে দুর্নীতি বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের ওপর করের বোঝাও চাপছে। 

সামগ্রিক বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, সরকার অনেক অপ্রয়োজনীয় ব্যয় করছে। ১ টাকার কাজ ৫ টাকায় হচ্ছে। জনগণের সম্পদের স্বচ্ছ ব্যবহার করা গেলে এমনটি হতো না। এটা রাজস্ব ব্যবস্থাপনার একটা বড় দুর্বলতা। 

সালেহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, দেশীয় উৎস থেকে ঋণ করলে খরচের জবাবদিহি কম। বিদেশি ঋণে অনেক শর্ত থাকে। এ জন্য সরকার দেশীয় উৎসের দিকেই ঝুঁকছে। এতে দেশের ব্যবসায়ীদের ঋণ নেওয়ার সুযোগ যেমন কমে আসছে, তেমনি করের বোঝা কিন্তু শেষ পর্যন্ত জনগণের ওপর পড়ছে। এটা ভালো লক্ষণ নয়। লেখক: শওকত হোসেন, সাংবাদিক

Wednesday, September 11, 2019

রংপুরের স্বপ্নবাজ শিল্পপতি সফিকুল আলম সেলিম

গমগাছের খড় দিয়ে দেড় হাজার ছবি বানিয়ে ১৯৮৬ সালে ঢাকার শিল্পমেলায় একটি স্টল দিয়েছিলেন। মনে করছিলেন অনেক বিক্রি হবে, কিন্তু কোনো ছবি বিক্রি হলো না। ছবিগুলো ছিল দেশ–বিদেশের বরেণ্য গুণী ব্যক্তিসহ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের। ছবি বিক্রি না হওয়ায় হতাশই হলেন। 

এরপর তিনি স্টলে টাঙিয়ে দিলেন ‘আপনি কি আপনার ছবি গমের শিষ দিয়ে বানাতে চান?’ এরপরই অর্ডার আসতে থাকে। প্রতিদিন গড়ে ১০টি করে ছবি বানাতে থাকেন। বিক্রিও বেশ হয়। এতে উৎসাহিত হয়ে ফিরে আসেন রংপুরে। ভাবতে থাকেন, হস্তশিল্পের কাজ করবেন। ১৯৮৭ সালে ছাত্ররাজনীতি করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়ে রংপুর কারাগারে যান। কারাগারে তাঁতচালী ছিল, সেখানে কয়েদিরা হস্তশিল্পে বুননের কাজ করেন। সেই কাজ তিনি তিন মাস দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছেন। জেল থেকে বেরিয়ে সেই বুননের কাজে ঝুঁকে পড়েন। গল্পে গল্পে এসব কথা জানালেন সফিকুল আলম সেলিম। 

১৯৯১ সালে ‘কারুপণ্য’ নামে রংপুরের ঐতিহ্যবাহী শতরঞ্জি বুননের ছোট্ট একটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে সফিকুল সেলিমের যাত্রা শুরু হয়। এরপর প্রায় ২৮ বছর পেরিয়ে গেছে। কারুপণ্য এখন রংপুরের ‘হারিয়ে যাওয়া’ শতরঞ্জি ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার ৩৬টি দেশে রপ্তানি করে। গেল বছর রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৩৬ কোটি টাকা। 

স্কুলে অকৃতকার্য হওয়ায় ঘর থেকে বিতাড়ন, আবার বিদ্যালয়ে সেরা ছাত্র হয়ে বিনা খরচে পরবর্তী শ্রেণিতে ভর্তি, ছাত্ররাজনীতি, জেলখাটা ইত্যাদি নানা কিছু মিলিয়ে সফিকুল সেলিমের বর্ণময় জীবন। 

সফিকুল সেলিম বললেন, তাঁর বাবা মরহুম এম এ সোবহান ছিলেন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ। বাবার কারণে তিনিও ছোটবেলা থেকে জড়িয়ে পড়েন ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে। ১৯৮০ সালে রংপুর ক্যাডেট কলেজে অষ্টম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হতে না পারায় তাঁকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর নিজের চেষ্টায় ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে প্রথম হয়ে বিনা টাকায় স্কুলের নবম শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ পান। কিন্তু স্কুল ফাঁকি দেওয়ার কারণে সেখানেও আর পড়তে পারলেন না। এরপর অন্য একটি স্কুল থেকে ১৯৮২ সালে এসএসসি ও ১৯৯১ সালে রংপুর সরকারি কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স পাস করেন। 

১৯৮৭ সালে এরশাদ সরকারের আমলে জেলে যাওয়ার গল্প আগেই বলা হয়েছে। জেল থেকে বেরিয়ে পরিকল্পনা করেন হস্তশিল্প কারখানা গড়ে তোলার। রংপুর প্রেসক্লাবে (সাবেক) বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থার (বিসিক) বন্ধ থাকা হস্তশিল্পের একটি দোকান ভাড়া নিয়ে শতরঞ্জির বিপণনকেন্দ্র চালু করেন। হারিয়ে যাওয়া শতরঞ্জি শিল্পের সঙ্গে জড়িত থাকা ২০ জন কারিগরকে তিনি খুঁজে বের করেন। সেই পুরোনো কারিগরদের দিয়ে নতুনদের প্রশিক্ষিত করিয়ে শতরঞ্জি বুননের কাজ শুরু হয়। 

১৯৯১ সালে গড়ে তোলেন কারুপণ্য নামের দোকানটি। লোকজনের অর্ডার পেয়ে কারিগরদের দিয়ে শতরঞ্জি সরবরাহ করতে থাকেন। এতে সামান্য আয় হয়। ভাবলেন, এখানেই থেমে থাকলে হবে না। শতরঞ্জি বিক্রির জন্য ব্যাপক প্রচারণায় নামলেন। সাড়াও পেলেন। শতরঞ্জি বানিয়ে দেশের বিভিন্ন শিল্প ও বাণিজ্য মেলায় স্টল দেন। একপর্যায়ে শতরঞ্জির চাহিদা বাড়তে থাকে। পরবর্তী সময়ে ঢাকায় ‘শতরঞ্জি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান দেন। 

এখানেই শেষ নয়। শতরঞ্জির বাজার তৈরি করতে বিদেশি ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে হন্যে হয়ে ঘুরতে থাকেন বিদেশি ক্রেতাদের কাছে। ২০০২ সালে প্রথম জাপানে শতরঞ্জি রপ্তানির সুযোগ পান। শুধু জাপান নয়। এই পণ্য পৃথিবীর আরও অনেক দেশে রপ্তানি হতে পারে। ভাবলেন, হস্তশিল্প ‘শতরঞ্জি’ তৈরির কারখানা গড়ে তুলবেন। রংপুর শহর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার পশ্চিমে নিসবেতগঞ্জ গ্রামে বিসিকের বন্ধ থাকা একটি দোচালা ছোট্ট কারখানা ভাড়া নেন। সেখানে ওই গ্রামের ৫০ জন নারী-পুরুষকে নিয়ে কারখানাটি চালু করেন। শুরু করেন বুনন শতরঞ্জি। 

ব্যবসা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ‘কারুপণ্য রংপুর লিমিটেড’ নামে প্রতিষ্ঠানের নাম দিলেন। গড়ে তুললেন একে একে পাঁচটি কারখানা। এগুলো হলো রংপুরের লাহিড়ীর হাট, পদাগঞ্জ, পীরগাছা, রবার্টসনগঞ্জ ও কুড়িগ্রামের উলিপুরে। বর্তমানে এসব কারখানায় ছয় হাজার শ্রমিক কাজ করেন। 

রংপুর শহরের রবার্টসনগঞ্জে শতরঞ্জির একটি সবুজ কারখানা রয়েছে। এ কারখানা যেন সবুজের সমারোহ। সবুজ বাগান। নানা প্রজাতির গাছগাছালিতে ছেয়ে আছে ইটপাথরের দালান। ঝুলছে লতাপাতা। সব মিলিয়ে নান্দনিক পরিবেশ। কারখানার বুক চিরে যেন সবুজ হৃদয়। ভবনের ছাদেও সবুজের বাগান। নাম দেওয়া হয়েছে ‘নন্দিনী পার্ক’। ছাদের মধ্যে গাছের ফাঁকে ফাঁকে বসার জন্য ছোট ছোট বেঞ্চ। বেঞ্চগুলোতেও শিল্পীর রং–তুলিতে কারুকার্যময় নান্দনিকতার ছোঁয়া আছে। আছে পানির ফোয়ারা, সেখানে আছে পদ্মফুল। দুপুরের খাবার বিরতিতে প্রাকৃতিক পরিবেশে শ্রমিকদের আহার করতে দেখা যায় সেখানে। 

শতরঞ্জিশিল্পে নারীর প্রতীক হয়ে কারখানার সামনে সবুজ বাগানের মধ্যে দাঁড়িয়ে রয়েছে ৩০ ফুট উঁচু একটি ভাস্কর্য। নাম দেওয়া হয়েছে ‘বনলতা’। এটি একটি উন্মুক্ত মঞ্চও। এই মঞ্চের সামনেই কারখানার প্রশস্ত সিঁড়ি। সিঁড়িগুলোকে ব্যবহার করা হয় দর্শকদের বসার জায়গা হিসেবে, যা উন্মুক্ত গ্যালারি। দুটি সিঁড়িতে একসঙ্গে হাজারখানেক দর্শক বসে অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারেন। বিশেষ বিশেষ দিনে শ্রমিকদের মনোরঞ্জনের জন্য আয়োজন করা হয় বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠানে শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা অংশ নিয়ে থাকেন। 

প্রতিদিন দিন-রাতে দুই শিফটে এখানে শতরঞ্জি বোনেন প্রায় ছয় হাজার নারী-পুরুষ, যার ৯০ শতাংশই নারী। শ্রমিকদের সেবার জন্য সেখানে রয়েছে সেবা বিভাগ। একজন চিকিৎসকের নেতৃত্বে বিনা মূল্যে তাঁদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান ও প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হয়। মাসিক বেতন ও লেনদেনে শ্রমিকেরা যাতে খুব সহজে ব্যাংকিং সুবিধা পান, সে জন্য তাঁদের হাতের কাছেই রয়েছে এটিএম বুথ। সুন্দর পরিবেশে খাবারের ক্যানটিন রয়েছে। কারখানায় কর্মরত নারী শ্রমিকেরা কারখানায় তাঁদের সন্তানদের নিয়ে যেতে পারেন। সে জন্য রয়েছে চাইল্ড কেয়ার। শিশুদের দুধ ও খাবার দেওয়া হয় বিনা মূল্যে। 

‘কারুপণ্য’ দেশের রপ্তানিতে অন্যান্য অবদানের জন্য হস্তজাতশিল্প পণ্য রপ্তানি খাতে আটবার সেরা রপ্তানিকারক হিসেবে ট্রফি অর্জন করেছে।সফিকুল আলম সেলিমের বাড়ি রংপুরের গুপ্তপাড়ায়। তিন ভাই, তিন বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। তাঁর স্ত্রী সুরাফা হোসেন। সন্তান দুটি। 

সফিকুল সেলিম বললেন, শতরঞ্জি এখন শুধু রংপুরের ঐতিহ্য নয়, এটি বাংলাদেশের ঐতিহ্য। রংপুরের অজপাড়াগাঁ থেকে শুধু যে হস্তশিল্প রপ্তানি হচ্ছে তা নয়, এখানকার হতদরিদ্র মানুষও কাজের সুযোগ পাচ্ছেন। অভাব দূর হচ্ছে। সুযোগ পাচ্ছেন। অভাব দূর হচ্ছে। সূত্র : প্রথম আলো

Tuesday, September 10, 2019

একজন আনিস উদ দৌলা'র বেড়ে ওঠা

বাবা বলেছিলেন, তুমি যা হতে চাও, তা–ই হও। নিজে হতে চেয়েছিলেন প্রকৌশলী। যদিও তা আর হওয়া হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন পদার্থবিদ্যায়। গণিতের যন্ত্রণায় মাঝপথে ছেড়ে দিয়ে ভর্তি হলেন করাচিতে একটি ইনস্টিটিউটের লোকপ্রশাসন বিভাগে। বিদেশি এক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার সুবাদে নাম লেখালেন উদ্যোক্তার তালিকায়। এরপর রচিত হলো এসিআইয়ের রূপকথা; যেটি এখন বাংলাদেশের শিল্প খাতের একটি অনন্য ব্র্যান্ড, মানুষের আস্থার নাম, কর্মীদের ভালোবাসার নাম।

গল্পটি এম আনিস উদ দৌলার, এসিআইয়ের চেয়ারম্যান। এ দেশের কয়েকজন সফল উদ্যোক্তার তালিকা করলে আনিস উদ দৌলার নামটি রাখতেই হবে। অনেক ক্ষেত্রে তিনি আবার অনন্য। দেশের যে কয়েকজন উদ্যোক্তা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে ব্যক্তিনির্ভর না রেখে করপোরেটে রূপ দিয়েছেন, দেশীয় প্রতিষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মানের ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করেছেন, সুপরিচিত দেশীয় ব্র্যান্ড তৈরি করেছেন, তাঁদের মধ্যে একজন আনিস উদ দৌলা।

আনিস উদ দৌলার এসিআই এখন বছরে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা লেনদেন বা টার্নওভারের ব্যবসায়ী গোষ্ঠী। এর অধীনে কোম্পানি আছে প্রায় ২৫টি। ওষুধ, কৃষি, অটোমোবাইল, ভোগ্যপণ্য, সুপারস্টোর মিলিয়ে বহু খাতে তাদের ব্যবসা। অনেক পণ্যের বাজারেই তারা শীর্ষস্থানীয়।

আনিস উদ দৌলার গল্প শুনতে গত বুধবার গিয়েছিলাম রাজধানীর তেজগাঁওয়ে তাঁর কার্যালয়ে। ভাড়া ভবনে সাদামাটা অফিস। আনিস উদ দৌলার কক্ষটিও সাধারণ, সব জায়গায় মিতব্যয়িতার ছাপ। আনিস উদ দৌলা বললেন, এসিআইয়ের অনেক কোম্পানিরই অভিজাত কার্যালয় রয়েছে। তবে তাঁর নিজের জীবন পুরোটাই পরিমিতিবোধের। তাই কার্যালয়েও পরিমিতির ছাপ।

আমরা জন্ম, বড় হওয়া, উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প শুনলাম প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে। তিনি স্বল্পভাষী। কথা বলেন নিচুস্বরে, ধীরে। সবকিছুতেই গাম্ভীর্য ও ব্যক্তিত্বের ছাপ। পুরো সময়ে আনিস উদ দৌলা একবারই শুধু হেসেছেন। সেটা পরে বলছি।

আনিস উদ দৌলার জন্ম ১৯৩৪ সালে, ফরিদপুরে। সাত ভাইবোনের মধ্যে ছয় নম্বর তিনি। তাঁর মা রত্নগর্ভা। পিতাও সন্তানদের আজকের শৃঙ্খলাবদ্ধ সুপ্রতিষ্ঠিত জীবন দেখে নিশ্চয়ই গর্বিত হতেন। কারণ, তিনি (আনিস উদ দৌলার বাবা) চেয়েছিলেন, সন্তানেরা সব সময় শৃঙ্খলার মধ্যে থাকুক। প্রতিষ্ঠিত হোক।

তিন বেতের কৈশোর
আনিস উদ দৌলা গল্প শুরু করলেন কৈশোর থেকে। তাঁর বাবা ছিলেন সরকারি কৌঁসুলি। সন্তানদের ইংরেজি শেখার ওপর ব্যাপক জোর ছিল তাঁর। রাতে ইংরেজি গ্রামার আর নামতা না পড়িয়ে তিনি সন্তানদের ঘুমাতে দিতেন না। নিয়মকানুন ছিল কঠোর।

আনিস উদ দৌলা বলেন, ‘বাবা আমাদের তিন ভাইয়ের জন্য তিন আকারের তিনটি বেত রাখতেন। বড় ভাইয়ের জন্য বড়, আমার জন্য মাঝারি, আর ছোট ভাইয়ের জন্য ছোটটি। সেটা ছিল আমাদের নিয়মের মধ্যে রাখার হাতিয়ার। অবশ্য আমাদের মধ্যে নিয়মের বিচ্যুতি একেবারেই হতো না।’

বাবার কাছ থেকে শৃঙ্খলার পাশাপাশি সততাও শিখেছেন আনিস উদ দৌলা। তিনি জানান, সেই সময় সরকারি কৌঁসুলিদের অবৈধ অর্থ আয়ের অনেক সুযোগ ছিল। কিন্তু তাঁর বাবা কখনো সেই পথে যাননি। পরিবারে আর্থিক অনটন ছিল না, কিন্তু বিলাসিতাও ছিল না।

গণিতের যন্ত্রণা
ফরিদপুরের জিলা স্কুল ও রাজেন্দ্র কলেজ থেকে পড়ে ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যায় ভর্তি হন আনিস উদ দৌলা। পড়াশোনার চেয়ে খেলাধুলায় মনোযোগ ছিল বেশি। তিনবার খেলার সেরা বা স্পোর্টস চ্যাম্পিয়ন (লাফ ও দৌড়) হয়েছিলেন। ক্রিকেটে ওপেনিং বোলার ছিলেন তিনি। গণিত তাঁর বিশেষ পছন্দ ছিল না। কিন্তু পদার্থবিজ্ঞানের প্রায় পুরোটাই গণিত।

এরই মধ্যে আনিস উদ দৌলা একদিন বিভাগে এশিয়া ফাউন্ডেশনের একটি বৃত্তির বিজ্ঞপ্তি দেখলেন, যেখানে করাচির একটি ইনস্টিটিউটে পড়ার সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হয়। সেটি আবার চালাত আমেরিকানরা। ‘আই কিউ’ পরীক্ষাপ্রার্থী ছিলেন ৩০০ জন। আনিস উদ দৌলা বৃত্তিটি পেলেন, করাচিতে লোকপ্রশাসনে ভর্তি হলেন। তাঁর মতে, এটাই তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল।

আনিস উদ দৌলা বলেন, ‘পশ্চিম পাকিস্তানে গিয়ে নিজের মধ্যে পিছিয়ে থাকার হীনম্মন্যতা বোধ হয়নি। বাঙালিদের বড় দুর্বলতা ছিল ইংরেজি না জানা। আমি খুব ভালো ইংরেজি জানতাম।’

১৯৫৯ সালে স্নাতকোত্তর শেষ হয়। ইচ্ছা ছিল সিএসপি পরীক্ষা দিয়ে সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়ার। সিএসপি দিলেন। পরীক্ষা ভালো হলো। মৌখিক পরীক্ষা দিতে হবে, এর মধ্যে কয়েকটি বেসরকারি চাকরির আবেদন করলেন। চাকরি হলো পাকিস্তান অক্সিজেনে, আঞ্চলিক শাখা ব্যবস্থাপক পদে। এরই মধ্যে সিএসপির মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকল। তিনি পাকিস্তান অক্সিজেনের মহাব্যবস্থাপকদের একজন ছিলেন ব্রিটিশ নাগরিক। তাঁর কাছে আনিস উদ দৌলা জানতে চাইলেন, পরীক্ষা দিতে যাবেন কি না। উত্তর পেলেন, আড়াই হাজার টাকা মাইনা ছেড়ে ৭৫০ টাকার চাকরিতে যাওয়ার দরকার কী। এই ব্যবধান তো সারা জীবনই থাকবে।
আর সরকারি চাকরিতে যাওয়া হলো না আনিস উদ দৌলার।

চারটি প্রশ্ন

ব্যবসায়ের মূলনীতি কী
‘মানুষের জীবনমানের উন্নতি’—এটাই এসিআইয়ের মূলনীতি। এসিআইও জীবনমানের উন্নতিতে ভূমিকা রাখে, এমন পণ্যের ব্যবসা করে। ভবিষ্যতে সম্প্রসারণেও সেটা মাথায় রাখে।

সফলতার কারণ
এসিআইয়ের সফলতার কারণ তিনটি। যেমন এক. পণ্যের মান রক্ষা। দুই. কর্মীদের ভালো রাখা। কারণ, কর্মীরা ভালো থাকলে নিজের সবটুকু প্রতিষ্ঠানকে দেয়। তিন. ক্রেতার আস্থা ও নীতিনির্ধারকদের বিশ্বস্ততা অর্জন।

নতুনদের প্রতি পরামর্শ
এক. নিজেকে তৈরি করতে হবে। কিছু একটা ক্ষেত্রে পারদর্শিতা অর্জন করতে হবে। যা তাঁকে আলাদা করবে। দুই. যে কাজটি পছন্দ, সেটিই করতে হবে। তিন. চটজলদি সফলতা পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।

সরকারের উদ্দেশে
স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশের অর্জন অসামান্য। তবে সমাজে দুর্নীতি কম থাকলে অর্জন আরও বেশি হতো। তাই সরকারের উচিত দুর্নীতি দমনে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া।

পাকিস্তানিদের অক্সিজেন বন্ধ
পশ্চিম পাকিস্তানে বিভিন্ন জায়গায় চাকরির পর ১৯৭০ সালে ঢাকায় বদলি হন আনিস উদ দৌলা। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে মুক্তির আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিমে টাকা পাঠাতে নিষেধ করে দিয়েছেন। তখন পাকিস্তান অক্সিজেনের পণ্য বিক্রির টাকা পশ্চিম পাকিস্তানে যেত, পরে খরচের টাকা আসত। আনিস উদ দৌলা পাকিস্তান অক্সিজেনকে চিঠি লিখলেন, আর টাকা পাঠানো যাবে না। এর বদলে ব্যাংকে হিসাব খুলে সেই টাকা রাখা শুরু হলো।

আনিস উদ দৌলা জানান, মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর বিমানবাহিনীতে যাতে অক্সিজেন সরবরাহ করতে না হয়, এ জন্য তাঁরা ইচ্ছে করে কারখানা বন্ধ করে দিলেন। বললেন, সংস্কার করতে হবে। নথিপত্র এমনভাবে তৈরি করলেন, যাতে সেটা ধরা না যায়। এতে পাকিস্তানি বিমানবাহিনীর অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হলো, যা উড়োজাহাজ চালাতে লাগে।

আইসিআই থেকে এসিআই
১৯৮৭ সালে আনিস উদ দৌলা ইম্পিরিয়াল কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের (আইসিআই) বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। লোকসানে থাকা প্রতিষ্ঠানটিকে দুই বছরের মধ্যে লাভে আনেন তিনি। পাঁচ বছরের মাথায় আইসিআই জানায়, তারা বিশ্বব্যাপী তাদের ছোট ব্যবসা বন্ধ করে দেবে। আনিস উদ দৌলাকে তারা বাংলাদেশের ব্যবসা কেনার প্রস্তাব দেয়।

আনিস উদ দৌলা বলেন, ‘আমি তাদের বললাম, আমার কাছে টাকা নেই। তারা বলল, টাকা আপনি ধীরে ধীরে দেন। কিন্তু কর্মীদের ভালো রাখতে হবে। এটাই শর্ত। এরপর পাঁচ বছরে আমি অর্থ শোধ করেছি। কর্মীদের একজনও আইসিআইকে অভিযোগ জানায়নি।’

আইসিআইয়ের সঙ্গে মিলিয়ে নাম রাখা হলো এসিআই। লোগোও কাছাকাছি। এসিআই পণ্যের মান ঠিক রাখা, কর্মীদের সুরক্ষা ও জীবনমানের উন্নতি, ব্যবস্থাপনায় মান রক্ষার ওপর জোর দিল। সুফল পেল দ্রুতই।

আনিস উদ দৌলা বলেন, ‘ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশি প্রথম আইএসও (ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড অর্গানাইজেশন) সনদ পাওয়া কোম্পানি এসিআই। আমরা আরেকটি মূলনীতি ঠিক করেছিলাম, লাভ-লোকসান যা-ই হোক, পণ্যের মানে কোনো ছাড় দেব না।’ এরপর কেটে গেছে ২৭ বছর। এসিআই বড় হয়েছে, আরও বড় হচ্ছে।

কাজই শখ
এসিআইয়ে এখন নেতৃত্ব দেন আনিস উদ দৌলার একমাত্র পুত্র আরিফ দৌলা। তিনি পড়েছেন গণিতে, দেশের বাইরে। নিজে গণিত এড়াতে লোকপ্রশাসনে গেলেন, আর ছেলে গণিতে কেন? আনিস উদ দৌলা হাসলেন। বললেন, ছেলে গণিত পছন্দ করে।

ছেলেকে কোম্পানিতে আনতে শর্ত মানতে হয়েছে আনিস উদ দৌলাকে। শর্তটি হলো, তাঁকে সব সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দিতে হবে। আনিস উদ দৌলাও ছেলেকে কয়েকটি শর্ত দিয়েছেন। সেগুলোর মধ্যে ছিল, মানুষের জীবনমানের উন্নতি কোম্পানির মূলনীতি। সেটা মাথায় রেখে কোম্পানিকে এগিয়ে নিতে হবে।

এখন আনিস উদ দৌলা সকালে কার্যালয়ে যান। সারা দিন কাজ করেন। সন্ধ্যায় বাসায় ফেরেন। কোম্পানির সব বিষয়ে নজর রাখেন তিনি। তবে হস্তক্ষেপ করেন না। মাঝেমধ্যে পরামর্শ দেন। ব্যত্যয় হলে জানান।

বাসায় ফিরে স্ত্রীর সঙ্গে সময় কাটানো, দাবা খেলা, পিয়ানো বাজানো তাঁর কাজ। পিয়ানোটা জাপানের ইয়ামাহা কোম্পানি দিয়েছে। তাদের সঙ্গে এসিআইয়ের ব্যবসা আছে।

আনিস উদ দৌলা বলেন, ‘আমি খুব একটা আমুদে লোক নই। কাজই আমার শখ।’

শান্তি এসেছে, প্রশান্তি নয়
আনিস উদ দৌলার সন্তান মোট তিনজন। এক ছেলে (আশরাফ উদ দৌলা) ১৯৮৯ সালে ১৪ বছর বয়সে দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। এটাই তাঁর জীবনের সবচেয়ে কষ্টকর ঘটনা। মেয়ে সুস্মিতা আনিস এসিআই ফরমুলেশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

জানতে চাইলে আনিস উদ দৌলা তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর ঘনিষ্ঠ চারজন উদ্যোক্তার নাম বলেন। স্কয়ারের স্যামসন এইচ চৌধুরী, রেনাটার সৈয়দ হুমায়ুন কবির, ট্রান্সকমের লতিফুর রহমান ও অ্যাপেক্সের সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী। তাঁদের মধ্যে স্যামসন এইচ চৌধুরী ও সৈয়দ হুমায়ুন কবির প্রয়াত। লতিফুর রহমান ও মঞ্জুর এলাহীর সঙ্গেও এখন আর তেমন একটা দেখা হয় না।

জীবনের ৮৫ বছর কেটে গেছে। আনিস উদ দৌলার কাছে জানতে চাইলাম, তৃপ্তি কতটুকু? তিনি বললেন, ‘শান্তি (পিস) এসেছে, প্রশান্তি (ট্রাঙ্ককুইলিটি) আসেনি।’ কেন, আনিস দৌলার জবাব, ‘শান্তি আসলে উপলব্ধির বিষয়। এসিআইকে আমি ওপরে ওঠাতে পেরেছি। ব্যর্থ হওয়া খুব সহজ, সফল হওয়া কঠিন। এসিআই ব্যর্থ হয়নি। এটাই আমার জীবনের শান্তি।’

প্রশান্তি কেন আসেনি? আনিস উদ দৌলা শেষ করলেন এই বলে, ‘প্রশান্তি একটি দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়। আমরা অনেক কিছু করতে পারতাম। সেটা পারিনি। এই যে সমাজে ডেঙ্গুর মতো কত বিপর্যয়, প্রশান্তি কী করে আসে?’

একনজরে

জন্ম
১৯৩৪ সালে। ফরিদপুরের গোপালগঞ্জ মহকুমার (বর্তমানে জেলা) রাতইল ঘোনাপাড়া গ্রামে। পিতার নাম খান বাহাদুর মোহাম্মদ ইসমাইল। মায়ের নাম কাকাবুন নেসা বেগম।

ভাইবোন
আনিস উদ দৌলা মা–বাবার সাত সন্তানের মধ্যে ৬ নম্বর। তাঁর ভাইবোনেরা সবাই সুপরিচিত। এর মধ্যে বড় বোন ফিরোজা বেগম (প্রয়াত) উপমহাদেশের প্রখ্যাত নজরুলসংগীতশিল্পী। ভাইদের মধ্যে বড় মসিহ উদ দৌলা সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদ থেকে অবসর নেন। ছোট ভাই আসাফ উদ দৌলা শিল্পী ও সাবেক সচিব।

পরিবার
আনিস উদ দৌলার স্ত্রী নাজমা দৌলা। সন্তান তিনজন। ছেলে আরিফ দৌলা এসিআইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। মেয়ে সুস্মিতা আনিস এসিআই ফরমুলেশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। আরেক ছেলে আশরাফ দৌলা ১৪ বছর বয়সে দুর্ঘটনায় মারা যান।

এসিআই প্রতিষ্ঠা
১৯৯২ সালে। ব্রিটিশ বহুজাতিক ইম্পিরিয়াল কেমিক্যাল কোম্পানি (আইসিআই) বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা হস্তান্তর করে চলে যায়। আনিস উদ দৌলার হাতে শুরু হয় অ্যাডভান্সড কেমিক্যাল কোম্পানির (এসিআই)।

কোম্পানি সংখ্যা
এসিআই গ্রুপের অধীনে এখন কোম্পানির সংখ্যা প্রায় ২৫টি। ওষুধ, কৃষি, ভোগ্যপণ্য, খাদ্যপণ্য, নিত্যব্যবহার্য পণ্য, বাণিজ্যিক যান, মোটরসাইকেল ইত্যাদি খাতে ব্যবসা রয়েছে তাদের।

পণ্য বিক্রি
গ্রুপের মোট বার্ষিক টার্নওভার বা পণ্য বিক্রি দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা। ২০১৭–১৮ অর্থবছরে পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত এসিআইয়ের দুই প্রতিষ্ঠানের বিক্রি ছিল ৬ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা।

কর্মসংস্থান
এসিআইতে কাজ করেন ১০ হাজারের মতো কর্মী।

Monday, September 9, 2019

নতুন ধারার রেস্তোরাঁ ব্যবসায় মনজুরুল হক

দুবাইতে জন্ম নেওয়া চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান মনজুরুল চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের পর সিঙ্গাপুরে যান পড়তে। সেখানকার থেমস বিজনেস স্কুলে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে পড়ার পাশাপাশি কাজ করেছেন বিভিন্ন রেস্তোরাঁয়। লক্ষ করেছেন রেস্তোরাঁ–সংস্কৃতি। চট্টগ্রামে ফিরে তাই তাঁর সহজে নজর কাড়ে বিদ্যমান রেস্তোরাঁর পরিবেশ। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের হ্যাংআউটের রেস্তোরাঁ কই? বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অফিসফেরত বন্ধুদের আড্ডার জায়গা কই? উঠতি উদ্যোক্তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিজনেস প্ল্যান করার জায়গা কই? এসব বিবেচনায় মনজুরুল হক ২০১২ সালের শেষ দিকে নগরীর বাদশা মিঞা পেট্রলপাম্পের পাশে একটি পরিত্যক্ত দোকানের ছোট্ট পরিসরে শুরু করলেন বারকোড ক্যাফে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেখানে কফির কাপে ঝড় তোলা যায়। কেউ কিছু বলে না। আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে চাইলে স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু খাবারও জোটে। ‘শুরুতে আমার টার্গেট ছিল, দিনে পাঁচ হাজার টাকার বিক্রি’, জানালেন মনজুরুল হক। কিন্তু দিন কয়েক যেতে না–যেতেই খবর রটে গেল শহরজুড়ে। কাজেই পাশের অংশটাও বাড়াতে হলো, সুযোগ দিতে হলো পার্টি করার। আর সেই ছোট্ট ‘পাঁচ হাজারী’ বারকোড ক্যাফে থেকে এখন মনজুরুলের বারকোড গ্রুপে কর্মীর সংখ্যা তিন শতাধিক। কেবল বেকারদেরই কাজ দেন তিনি। শিক্ষার্থীদের জন্য খণ্ডকালীন কাজের সুযোগও তৈরি করেছেন। 

তবে মনজুরুলের মতো উদ্যমী তরুণ একটিমাত্র ক্যাফে করে থেমে যাবেন, এটি তো হয় না। দেশের অন্য অনেক শহরের মতো একসময় চট্টগ্রামের স্ট্রিট ফুড কালচারও ছিল সমৃদ্ধ। কিন্তু নজর না থাকায় সেগুলোর মান ক্রমাগত নিম্নমুখী হয়ে যায়। মনজুরুল ভাবলেন, স্ট্রিট ফুডই করবেন, কিন্তু স্বাস্থ্যকরভাবে, পরিচ্ছন্নভাবে। চীন থেকে কারিগর নিয়ে এসে বানালেন ফুচকা বানানোর যন্ত্র। ব্যস, হাতের ছোঁয়া থেকে মুক্তি। ২০১৫ সালে শুরু করেন বারগুইচ ফিউশন ক্যাফে। চটপটি, ফুচকাসহ নানান স্বাস্থ্যকর এবং সাশ্রয়ী নানান ধরনের স্ট্রিট ফুডের সমাহার ঘটান খোলামেলা পরিবেশের ক্যাফেতে। খুব দ্রুতই ছুটির দিনগুলোতে চট্টগ্রামের অনেকেরই সন্ধ্যাকালীন গন্তব্য হয়ে ওঠে এই ক্যাফে; যা চট্টগ্রামের তরুণ প্রজন্মের প্রিয় আড্ডাস্থলও হয়ে উঠতে সময় নেয়নি। 


 তবে দুটি বিশেষ উদ্ভাবনের জন্য মনজুরুলকে মনে রাখতে হবে আমাদের। চট্টগ্রামের ঐতিহ্য মেজবানির খাবার নিয়ে সারা দেশে প্রচুর আগ্রহ। চট্টগ্রামের অনেক মেহমান মেজবানি খেতে আগ্রহ প্রকাশ করলেই বিপদে পড়েন। কারণ, বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠান ছাড়া মেজবানি কোথায় পাবেন? মেজবানি অনুষ্ঠানে তো রবাহূত নিয়ে যাওয়া যায় না। কাজেই ২০১৬ সালে চালু হয়ে গেল ‘মেজ্জান হাইলে আইয়্যুন (মেজবান খেতে আসুন) ’। দুপুরে-রাতে যেকোনো সময় চাইলেই মেজবান খেতে পারবেন।

মনজুরুলের এরপরের কাজটি আরও চমকপ্রদ। অনেকেরই মাঝেমধ্যে বিয়েবাড়ির মজার খাবার খেতে ইচ্ছে করে, কিন্তু বিয়ের কোনো দাওয়াত না থাকলে সেটা সম্ভব হয় না। চট্টগ্রাম অঞ্চলের গতানুগতিক ধাঁচের গ্রামের বাড়ির আদলে মনজুরুল হক বিয়েবাড়ির খাবার মেনু নিয়ে ২০১৭ সালে চালু করলেন ‘বীর চট্টলা’। এ পর্যন্ত ঢাকার বনানীসহ বারকোড নামে রয়েছে ১২টি রেস্তোরাঁ। মাসখানেকের মধ্যে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে বারকোড গ্রুপের নতুন আরও একটি রেস্তোরাঁ হবে বলে জানালেন মনজুরুল হক। তাঁর সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে চট্টগ্রামের তরুণেরা কয়েক বছরে সাত শতাধিক আধুনিক রেস্তোরাঁ গড়ে তুলেছেন। তরুণ উদ্যোক্তাদের প্ল্যাটফর্ম ‘চাকরি খুঁজব না, চাকরি দেব’ তাঁকে সম্মানিত করেছে ইউসুফ চৌধুরী সম্মাননা ২০১৭-এ। সূত্র: প্রথম আলো

চীনের ঋণের ফাঁদ থেকে সতর্ক থাকতে বললেন ফাহমিদা খাতুন।।

Sunday, September 8, 2019

নবীন পরিবেশবিদদের পদকজয়

দক্ষিণ কোরিয়ার ডিগু শহরে বসেছিল আন্তর্জাতিক আর্থ সায়েন্স অলিম্পিয়াডের (আইইএসও) ১৩তম আসর। এই আয়োজনে অংশ নেয় বিশ্বের ৪৩টি দেশের ১৭২ জন প্রতিযোগী। এর মধ্যে ছিল বাংলাদেশের চার শিক্ষার্থী। তাদের মধ্য থেকে এককভাবে ব্রোঞ্জ ও বহুজাতিক দলের হয়ে স্বর্ণ জিতেছে তিনজন।
#রাত প্রায় শেষ, ভোর হতে চলেছে। দলের ১০ জনের চোখই ঘুমে ঢুলু ঢুলু। তারপরও খুব কষ্ট করে চোখ খুলে কাজ করে যাচ্ছে ৩–৪ জন। বাকিদের রুমে ফিরতে বলার পরও নড়ানো যাচ্ছে না। এক টুকরো কাগজ কেটে দিতে বললে ঘুমচোখেই লাফিয়ে ওঠে, একসঙ্গে হাত বাড়িয়ে দেয়। পোস্টার প্রেজেন্টেশনের এই প্রস্তুতি শেষেই হোটেল থেকে ভেন্যুতে যাওয়ার বাসে একটু ঘুমাতে পারল পুরো দল। 

রাতাজাগা এমন প্রস্তুতি কিসের জন্য? ১৩তম আন্তর্জাতিক আর্থ সায়েন্স অলিম্পিয়াডের (আইইএসও) এবারের আসর বসেছিল দক্ষিণ কোরিয়ার ডিগু শহরে। গত ২৬ আগস্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর সারা বিশ্বের ৪৩টি দেশের ১৭২ জন প্রতিযোগী অংশ নেয় এতে। এ বছর বাংলাদেশের হয়ে আইইএসও–তে অংশ নেয় ঢাকার অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের একাদশ শ্রেণির রুদাইবা আদনীনা, প্যারামাউন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির মো. সাদাদ ফারহান হোসেন, নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করা এ কে এম সাদমান মাহমুদ ও নারায়ণগঞ্জের চেঞ্জেস স্কুলের এ লেভেল শ্রেণির জান্নাতুল ফেরদৌস। ওদের রাতজাগা পরিশ্রম বিফলে যায়নি। শুরুতে বলে নেওয়া ভালো, এই অলিম্পিয়াডে অংশ নিতে হয় একক ও দলগতভাবে। দলগুলো আবার হয় বহুজাতিক। মানে ৪৩টি দেশের প্রতিযোগীরা ৪ জন করে ১৭টি দলে ভাগ হয়। এবার একক আয়োজনে ব্রোঞ্জপদক পায় এ কে এম সাদমান মাহমুদ ও রুদাইবা আদনীনা। স্বর্ণপদকজয়ী দলেও ছিল রুদাইবা। জান্নাতুল ফেরদৌস ছিল ব্রোঞ্চজয়ী দলে। এর আগে পাঁচবার অংশ নিয়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের অর্জন ৩টি রৌপ্যপদক ও ১০টি ব্রোঞ্জপদক।

এবারের আয়োজনের স্লোগান ছিল ‘প্যাশন ফর আর্থ সায়েন্স…কন্টিনিউড’। ইন্টারন্যাশনাল জিওসায়েন্স এডুকেশন অর্গানাইজেশন (আইজিইও)-এর বিশেষ কার্যক্রম হিসেবে ২০০৭ সাল থেকে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। ১৮ বছরের কম বয়সী স্কুল–কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণের সুযোগ পায় এতে। 

একটি দল তৈরি করা হয় প্রতিটি দেশ থেকে ৪ জন অংশগ্রহণকারী আর দুজন পরামর্শকের সমন্বয়ে। ৯ দিনের এই আয়োজনে দুই ধাপের লিখিত পরীক্ষায় এককভাবে অংশ নেয় প্রতিযোগীরা। ভূতত্ত্ব, জিওফিজিকস, আবহাওয়াবিজ্ঞান, সমুদ্রবিদ্যা, ভূকেন্দ্রীয় জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং পরিবেশবিজ্ঞান বিষয়গুলো থেকে প্রশ্ন করা হয় এই অলিম্পিয়াডে। 

আগেই জেনেছেন, এই প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন দেশের অংশগ্রহণকারী নিয়ে গঠন করা হয় আলাদা আলাদা দল। তাই প্রতি দলেই বিভিন্ন দেশ থেকে আসা শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ পায়। প্রতিযোগিতার অংশ হিসেবে দলগতভাবে ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশ নেয় সবাই। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে গিয়ে সেখানকার ভৌগোলিক রহস্যের সমাধান করতে হয় বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে। আর সব শেষে থাকে দলগত উপস্থাপনা। নির্ধারিত কোনো বিষয়ে দলের সবাইকে একসঙ্গে পোস্টার বানিয়ে বিচারকদের সামনে উপস্থাপন করতে হয়। 

আন্তর্জাতিক আর্থ সায়েন্স অলিম্পিয়াডে ২০১২ সাল থেকে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ দল। জাতীয় পর্যায়ে এই অলিম্পিয়াডের আয়োজন করে বাংলাদেশ ইয়ুথ এনভায়রনমেন্টাল ইনিশিয়েটিভ (বিওয়াইইআই)। দল গঠন করা হয় দেশে জাতীয় পর্যায়ের অলিম্পিয়াডের মাধ্যমে, এর নাম ন্যাশনাল আর্থ অলিম্পিয়াড (এনইও) । এ বছর ‘বিশুদ্ধ বায়ু, সুপেয় পানির অঙ্গীকার, আগামী প্রজন্মের অধিকার’ স্লোগানে এই অলিম্পিয়াডের আয়োজন করা হয়েছিল জুন মাসে। অনলাইন ও দেশের আটটি বিভাগে আঞ্চলিক পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায়ের জন্য প্রতিযোগী বাছাই করা হয়। বাছাইকৃত শিক্ষার্থীদের নিয়ে আয়োজন করা হয় দিনব্যাপী গ্রিন ডে ট্রেনিং। এরপর জাতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা শেষে বাছাই করা হয় সেরা শিক্ষার্থীদের। তাদের নিয়ে তৈরি হয় বাংলাদেশ দল।

এ বছর বাংলাদেশ দলের পরামর্শক হিসেবে ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ইউনুস আহমদ খান ও বিওয়াইইআইএর প্রোগ্রাম ম্যানেজার সুদীপ্ত কুমার। জাতীয় দলের বাছাই শেষে কয়েক সপ্তাহের প্রস্তুতি নিয়ে আন্তর্জাতিক এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দেয় নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা। 

এবারের বাংলাদেশে দলের সাদমান ছিল বাকিদের চেয়ে অভিজ্ঞ। আন্তর্জাতিক জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা আছে ওর। প্রথম দিনের লিখিত পরীক্ষা খানিকটা খারাপ হয়েছিল। কিন্তু পুরোনো অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে মোটেও ভুল করেনি সাদমান। 

তবে বেশ কবছরের প্রস্তুতির ফলেই স্বর্ণপদক পেয়েছে রুদাইবা। ওর কথা, ‘স্কুলের সিলেবাসে এক–আধটু থাকলেও ভূতত্ত্ব নিয়ে খুব বেশি জানতাম না আমি। অলিম্পিয়াডের প্রস্তুতি নিতে গিয়ে নতুন করে জানার সুযোগ হয়েছিল। এখন আমি আমার চারপাশের দুনিয়াকে এক নতুন চোখে দেখতে পারি। স্বর্ণপদকজয়ী দলে থাকতে পেরেছি বলে আমি খুব খুশি। এতে দলের বাকিদের অবদানও ছিল অনেক বেশি।’ 

আইইএসও–র এবারের আয়োজনে প্রতিটি দলকে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় এক জাদুঘরে। নানা রকম পাথর ও মাটির নমুনা পরীক্ষা করে সেখানকার ভৌগোলিক ইতিহাস পর্যালোচনা করতে হয় প্রতিযোগীদের। এসব নমুনা পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে পৃথিবীর গঠন বোঝা সম্ভব। এ ধরনের হাতে–কলমে করা কাজে বেশ পটু ছিল সাদাদ ফারহানের দল। ওর দলের বাকিরা ছিল এশিয়ার। তাই নিজের দল নিয়ে একটু বাড়তি গর্ব ওর। দলগত পর্যায়ে কোনো পদক না এলেও নিজের সেরাটা দিয়ে এককভাবে ব্রোঞ্জপদক পায় ও। 

পুরো দলকে মাতিয়ে রাখার দায়িত্ব ছিল অবশ্য জান্নাতুল ফেরদৌসের হাতে। আইইএসও–তে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে ও বলল, ‘শুরুতে দলের কেউই ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না কী করব। তবে প্রতি রাউন্ড পার হতেই একে একে সবাই কাজ শুরু করে। আমাদের সবাইকে শেষ দিনে “টাইফুন” নিয়ে পোস্টার প্রেজেন্টেশন বানাতে বলা হয়। ওই কাজের সময়ই দলের বাকিদের বন্ধু বানিয়ে ফেলি আমি।’

বাংলাদেশ দলের এই অর্জন নিয়ে ন্যাশনাল আর্থ অলিম্পিয়াডের সহ–আহ্বায়ক ইউনুস আহমেদ বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতির সময় বাড়াতে হবে। ভবিষ্যতে যেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষার্থীদের আমরা সুযোগ করে দিতে পারি সে চেষ্টাও থাকবে।’ 

শুধু প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার আনন্দ নয়, বাংলাদেশ দলের সদস্যরা সারা বিশ্বের নানা সংস্কৃতির কিশোর–তরুণদের সঙ্গে বন্ধু পাতাতে পেরে খুব খুশি। বড় হয়ে দেশের পরিবেশ নিয়ে কাজ করতে চায় ওরা। সমাপনী দিনে প্রত্যেককে দেশের হয়ে সাংস্কৃতিক আয়োজনে অংশ নিতে হয়। বাংলাদেশের হয়ে নাচে–গানে মঞ্চ মাতিয়েছে নবীন পরিবেশবিদেরা। তবে ওরা যখন বাংলাদেশের পরিবেশ নিয়ে কাজ করবে তখন নিশ্চয়ই আরও ভালো থাকব আমরা। সূত্র: প্রথম আলো 

সিপিডির সেমিনার, চীনের বিআরআইএ লাভবান হবে বাংলাদেশ, তবে...

নিজস্ব রিপোর্টার: সঠিক পদক্ষেপ নিলে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড কার্যক্রমের সুফল পেতে পারে বাংলাদেশ। তবে, প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বাংলাদেশ যেন চীনা ঋণের ফাঁদে না পড়ে, সে বিষয়েও খেয়াল রাখতে হবে। প্রকল্প বাছাই ও বাস্তবায়ন, বিনিয়োগ, ঋণের শর্ত- এসব বিষয় পরিষ্কার হওয়া দরকার। পাশাপাশি প্রতিবেশি দেশের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকা প্রয়োজন রয়েছে। 
রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড: তুলনামূলক অবস্থান থেকে বাংলাদেশের অবস্থান’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। 
সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহানের সভাপত্বিতে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক, সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, চীনে নবনিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহবুব উজ জামান, চীনের ইউনান অ্যাকাডেমি অব সোশ্যাল সায়েন্সের ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের অধ্যাপক চেং মিন, ভারতের রির্সাচ অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম ফর ডেভেলপিং কান্ট্রিসের মহাপরিচালক ড. শচীন চতুর্বেদী, সিপিডির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সৈয়দ মঞ্জুর ইলাহী। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। সেমিনারে বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও নেপালের বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন।
সেমিনারে বহুল আলোচিত চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে’ বাংলাদেশের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে বক্তারা জানান, ২০১৩ সালে এই উদ্যোগের সূচনা করে চীন। এটি ৭২টি দেশকে সংযুক্ত করবে। এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে চীনের এক্সিম ও ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ইতিমধ্যেই বিভিন্ন দেশের অবকাঠামো প্রকল্পে ১৯০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এই প্রকল্পে চীন-বাংলাদেশ এক হয়ে কাজ করলে লাভবান হবে দুই দেশই। তবে রয়েছে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ। ভুল পদক্ষেপে ফল হতে পারে নেতিবাচক। তাই বাংলাদেশকে সতর্ক পদক্ষেপের পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের।
শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন বলেন, বিআরআই উচ্চপর্যায়ের সহযোগিতার একটি প্লাটফর্ম। এটি বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ প্লাটফর্ম ব্যবহারের মাধ্যমে লাভবান হবে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, কোনো দেশ একা উন্নয়ন করতে পারে না। যেহেতু আমাদের দেশের অর্থনীতিতে নানা ধরনের সমস্যা বিদ্যমান তাই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বাংলাদেশ-চীন দুই দেশ যৌথভাবে পথচলার মধ্যদিয়ে ব্যাপক লাভবান হতে পারে। বিআরআই নিয়ে যখন চীনসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে আলোচনা হবে, তখন উইন-উইন পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, চীন দেশের অবকাঠামো, জ্বালানি খাতে আঞ্চলিক সহযোগিতা লাগবে। বিআরআই এই সুযোগ নেয়ার ফোরাম হতে পারে। 
সিপিডি চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, চীন বর্তমানে বিশ্ববাণিজ্যের নেতৃত্বে আছে। এর সঙ্গে অন্য দেশের সমন্বয় করে চলতে হবে। এটি এখন বিশ্ব অর্থনীতির নতুন ব্যবস্থা। এটা যেন উপনিবেশবাদের মতো না হয়, এটা যেন অংশীদারত্বের ভিত্তিতে হয়। এতে দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার সুযোগ আরো বাড়বে। তিনি বলেন, চীনের সঙ্গে বিআরআই প্রকল্পে যুক্ত হতে হলে চীনের অর্থনীতিটা বুঝে দর কষাকষি করতে হবে। কেননা যখন আমরা দর কষাকষি করব, তখন জাতীয় স্বার্থ সবার আগে বিবেচনা করতে হবে। আর সে জন্য গবেষণা প্রয়োজন। চীনের অর্থনীতিতে ভবিষ্যতে কী হচ্ছে, তাদের থিং ট্যাঙ্ক কী ভাবছে, সেজন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এরসঙ্গে পার্টনারশিপে যুক্ত করতে হবে। কেননা বিআরআই নিয়ে চীনে প্রচুর গবেষণা হয়েছে। বেল্ট অ্যান্ড রোডের অবকাঠামো নির্মাণে কোন দেশ কি পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করবে তা পরিষ্কার হওয়া জরুরি বলে মনে করেন সিপিডি’র চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, বিআরআই বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চীন আমাদের দেশে বিনিয়োগ করছে এবং ভবিষ্যতে বিনিয়োগ আরো বাড়বে। বিআরআইয়ের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ব্যাপক আলাপ-আলোচনা দরকার। তিনি বলেন, বিআরআইয়ের প্রকল্প বাস্তবায়নে অন্যদেশের সঙ্গে যেন দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক নষ্ট না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। প্রকল্পে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ যেন সমানভাবে উপকৃত হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, বিচার বিবেচনা ছাড়া প্রকল্প নিলে তা হিতে বিপরীত হতে পারে। একইসঙ্গে প্রকল্প হতে হবে বাংলাদেশের সক্ষমতা বিবেচনায়।
পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক বলেন, বর্তমানে বিশ্ববাণিজ্যে ইন্দো-প্যাসিফিক, ইউরো-এশিয়া ও বিআরআই উদ্যোগ আছে। আমরা সব উদ্যোগের সঙ্গে যাব। কোনো ক্ষতিকর কিছুর সঙ্গে থাকব না। যখন আমরা এসব নিয়ে দর কষাকষি করব, তখন জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেব।
সংলাপে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মঞ্জুর এলাহী বলেন, আমরা বাজার চাই, এটা সত্য। কিন্তু সবকিছু যাচাই বাছাই করে নেয়া উচিত।
মূল প্রবন্ধে ড. ফাহিমদা বলেন, বিআরআই-এর মাধ্যমে আমাদের যে প্রস্তাবগুলো দেয়া আছে আমরা তা নেব। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে এই অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বিনিয়োগের শর্তগুলোর দিকে। দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে টেন্ডার থেকে শুরু করে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে, বিআরআই যে ঋণ দিচ্ছে সেই ঋণে সুদের হার যাতে কম হয়। আমরা কেন ৩ শতাংশ দেব? ঋণ যেন এক শতাংশের নিচে হয়। আমরা যাতে ঋণের ফাঁদে না পড়ি। আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য হতে হবে রাজনীতির বাইরে গিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা। 

Friday, September 6, 2019

দেশেই চাষ হচ্ছে বেগুনি ধান

চারপাশে সবুজ ধানখেত। মাঝখানে একচিলতে জমিতে বেগুনি রঙের ধানের আবাদ। যেন সবুজের বুকে বেগুনি বিছানা। ভিন্ন রঙের এই ধান চাষ স্থানীয় পর্যায়ে কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে। 

বেগুনি রঙা এই ধানের চাষ হচ্ছে খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার শান্তিপুর এলাকায়। স্থানীয় কৃষক মনতোষ চাকমা জেলায় প্রথমবারের মতো এই ধানের চাষ শুরু করেছেন বলে জানান কৃষি কর্মকর্তারা। চলতি বছরের ২১ মে এর চারা রোপণ করেন তিনি।

মনতোষ চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থা নামের এনজিওর কাছ থেকে বেগুনি রঙের ধানের বীজ সংগ্রহ করেছেন। ওই এনজিও থেকে ‘সুভাষ’, ‘বাঁশফুল’ ও ‘জুনটি’—এই তিন জাতের চারা নিয়েছেন। এখন পরীক্ষামূলকভাবে ২০ শতক জমিতে চার জাতের ধান রোপণ করেছেন। এসব ধানের ফলন কী রকম হবে, তা দেখার পর ভবিষ্যতে আবাদ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

কৃষি কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্যমতে, দেশে প্রথম বেগুনি রঙা ধানের আবাদ শুরু হয় গাইবান্ধায়। সৌন্দর্য ও পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ধান। এই ধানগাছের পাতা ও কাণ্ডের রং বেগুনি। এর চালের রংও বেগুনি। তাই কৃষকদের কাছে এখন পর্যন্ত এ ধানের পরিচিতি বেগুনি রঙের ধান বা রঙিন ধান।

জানতে চাইলে খাগড়াছড়ি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মর্ত্তুজা আলী বলেন, বেগুনি রঙের ধানের চাষ খাগড়াছড়িতে এই প্রথম। কেউ এর নাম দিয়েছেন বেগুনি সুন্দরী, কেউ দুলালি সুন্দরী। ফলন ভালো হলে ভবিষ্যতে ধানের আবাদ বৃদ্ধির চিন্তা করা হবে।

পানছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলাউদ্দিন শেখ বলেন, মনতোষ চাকমাকে সব ধরনের পরামর্শসহ কৃষি বিভাগ থেকে নিয়মিত ধানখেতটি তদারক করা হচ্ছে।

গত বুধবার দুপুরে পানছড়ির উল্টাছড়ি ইউনিয়নের শান্তিপুরে গিয়ে দেখা যায়, চারপাশে সবুজ ধানখেতের মাঝখানে বেগুনি রঙের ধানের আবাদ। মনতোষ চাকমার রোপণ করা অন্য তিন জাতের ধানের গাছের রং আলাদা। এক জাত বাঁশফুল রঙের, এক জাত গাঢ় সবুজ রঙের এবং অন্য জাত হালকা সবুজ রঙের।

তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থার প্রকল্প সমন্বয়কারী সকীরণ চাকমা জানান, মিজারিও-জার্মানির অর্থায়নে ঢাকা বারসিক এনজিও থেকে তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থা সাত প্রকারের ধানের বীজ সংগ্রহ করেছে। এর মধ্যে চার প্রকারের বীজ তাঁরা মনতোষ চাকমাকে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করতে দিয়েছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক আলতাফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিচ্ছিন্নভাবে এই ধানের চাষ শুরু হয়েছে। খাগড়াছড়িতেও চাষ হওয়ার খবর শুনেছেন তাঁরা। এই ধানের পুষ্টিমান বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, এই ধানের পুষ্টিমান, চাষাবাদ পদ্ধতি, ফলনের পরিমাণ, জীবনচক্র, দেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর বিষয়, কোন মৌসুমে চাষ করলে ভালো হবে—এসব বিষয়ে বিস্তারিত গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। সূত্র: প্রথম আলো

উদ্যোক্তা তৈরির নতুন ঠিকানা ‘মোড়’

সূত্র প্রথম আলো: মফস্বলের পাড়া–মহল্লার মোড়ে মোড়ে তরুণেরা আড্ডা দেন। সেই আড্ডা থেকেই অনেক সময় বেরিয়ে আসে দারুণ কিছু। সেই ধারণা থেকেই ‘মোড়’। কোওয়ার্কিং স্পেস। যেখানে আধুনিক সুযোগ-সুবিধার অফিস ভাগাভাগি করে ব্যবহারের সুযোগ পান উদ্যোক্তারা। ব্যবসায়িক কিংবা দাপ্তরিক বৈঠক করার মতো সুবিধা তো আছেই। 

বনানী ১১ নম্বর সড়কে ‘মোড়ের’ কার্যালয়ে ঢুকলেই চোখে পড়বে একটি ল্যাম্পপোস্ট। কালো রঙের ল্যাম্পপোস্টটি মনে করিয়ে দেবে সেই মফস্বলের কথা। মোড়ের চত্বরজুড়ে আধুনিকতার ছাপ। ছিমছাম পরিবেশে বিভিন্ন টেবিলে বসে কম্পিউটারে কাজ করছেন জনা বিশেক তরুণ-তরুণী। পথের পাঁচালি, ঘরে, বাইরে, ঘরে-বাইরে নামের চারটি বৈঠকস্থলও সমান ব্যস্ত। 

মোড়ের গল্প শুনতে গত জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহের এক দুপুরে দুই উদ্যোক্তা—নাবিলা নওরিন ও নাহিদ শারমিনের সঙ্গে আড্ডা হয়। তাঁরা জানান, বনানী ১১ নম্বরে সড়কে ২০১৫ সালে ৫ মে মোড়ের যাত্রা শুরু হয়। এক দফা স্থান পরিবর্তনের পর বর্তমানে ২ হাজার বর্গফুট আয়তন জায়গা নিয়ে মোড় চলছে। গত মার্চ মাসে ধানমন্ডিতে মোড়ের নতুন আরেকটি শাখা চালু হয়েছে। 

শুরুর গল্পটা বললেন নাবিলা নওরিন। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্যবিদ্যায় পড়াশোনা শেষ করে ২০১২ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোয় যান তিনি। সেখান থেকে আবার ইন্টার্নি করতে যান ব্রাজিলের সাও পাওলো শহরে। সেখানকার তরুণ উদ্যোক্তারা কোওয়ার্কিং স্পেসে ভাগাভাগি করে নিজেদের কাজ করেন। বিষয়টি মনে গেঁথে যায় নাবিলার। ২০১৪ সালে দেশে ফেরার আগেই বান্ধবী নাহিদ শারমিনের সঙ্গে সে রকম কিছু একটা করার জন্য চিন্তাভাবনা শুরু করেন। 

বাংলাদেশে অনেক তরুণ উদ্যোক্তা ফ্রিল্যান্স, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ওয়েব ডেভেলপমেন্টসহ নানা ধরনের কাজ করেন। তাঁদের পক্ষে কাজের জন্য কিংবা ব্যবসায়িক অংশীদারদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য নিজস্ব অফিস স্থাপন করাটা বেশ ব্যয়বহুল। তা ছাড়া অফিসের পেছনে প্রতি মাসেই মোটা অঙ্কের অর্থ খরচের বিষয় তো আছেই। সেই বাড়তি ব৵য় বোঝা থেকে মুক্তি দিতেই ‘মোড়’ শুরু। 

এমন তথ্য দিয়ে নাবিলা নওরিন বলেন, ‘শুরুতে ধারণাটি তরুণদের কাছে জনপ্রিয় করাটা ছিল বেশ চ্যালেঞ্জিং। মোড়ের প্রথম দিকে অনেকেই উঁকি দিতেন। জানতে চাইতেন—এটি কি রেস্তোরাঁ, নাকি বাতির (লাইট) দোকান? আমরা সবাইকে খুব আগ্রহ নিয়ে মোড় ঘুরিয়ে দেখাতাম। আমাদের ধারণাটি তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করতাম।’ 

ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মোড়। বনানীতে এখন বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মোড়ের সদস্যসংখ্যা ১২০। তাঁদের মধ্যে আছেন বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি ও তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে কাজ করেন এমন উদ্যোক্তারা। গুলশানের এফ আর টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ডের পর একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা তিন মাস মোড়ে তাঁদের দাপ্তরিক কাজ করেন। অন্যদিকে সুইস একটি সফটওয়্যার কোম্পানি ধানমন্ডি মোড় আগামী পাঁচ বছর ব্যবহারের জন্য চুক্তি করেছে। সেই প্রতিষ্ঠানের ৩৪ জন কর্মী কাজ করছেন। তারা মোড়ের অর্ধেক অংশ ব্যবহার করে, বাকিটা ব্যবহার করছে অন্য উদ্যোক্তারা।

সদস্য না হলেও প্রতি ঘণ্টা ১৫০ টাকায় মোড়ের সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করা যাবে। মাসে ২ হাজার টাকা দিয়ে হওয়া যাবে ‘স্টার্টার’ সদস্য। তখন মোড়ের দুই শাখার একটিতে ৪০ ঘণ্টা ব্যবহার করতে পারবেন উদ্যোক্তারা। আবার ৮ হাজার টাকা দিয়ে ‘ইনফিনিটি’ সদস্য হলে ইচ্ছামাফিক যত ঘণ্টা খুশি মোড়ে অফিস করা যাবে। সদস্যদের জন্য আছে খাবারের কক্ষ ও কফির সুবিধা। 

মোড়ের সদস্য ইসমাইল সাঈদ নিজে একটি মেডিকেল সফটওয়্যার বানাচ্ছেন। তিনি বললেন, ‘২ লাখ টাকা খরচ করে হাতিরপুলে অফিস নিয়েছিলাম। তারপর খরচ জোগাতে না পেরে ছেড়ে দিয়েছি। বর্তমানে বেশ স্বচ্ছন্দে মোড়ে অফিস করছি।’ তিনি বলেন, মোড়ে আসার পর কাজ না করে উপায় নেই। কারণ প্রতি মিনিটের জন্য আপনি পয়সা গুনছেন। আবার আপনি যখন দেখবেন আপনার আশপাশে সবাই কাজ করছেন তখন আপনিও উদ্বুদ্ধ হবেন। তা ছাড়া এখানে কাজ করতে গিয়ে সবার মধ্যে একটা নেটওয়ার্ক তৈরি হয়। তখন কাজ পেতেও সুবিধা হয়। 

মোড় পরিচালনা করতে করতে আড়াই বছর আগে ‘বহু’ নামে আসবাবের একটি ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছেন নাবিলা নওরিন ও নাহিদ শারমিন। বনানীতে ‘বহু’র একটি বিক্রয়কেন্দ্র আছে। তার বাইরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য স্থাপত্যচর্চা, অন্দরসজ্জা ও আসবাবের নকশা করেন তাঁরা। 

গত মাসে রাইজিং স্টার অব দ্য ইয়ার ক্যাটাগরিতে নারীদের জন্য সিটি ব্যাংকের বিশেষায়িত সেবা সিটি আলোর সহায়তায় কালারস প্লাটিনাম বিজনেস উইমেন অ্যাওয়ার্ড-২০১৯ পেয়েছেন নাবিলা নওরিন ও নাহিদ শারমিন।