Monday, September 30, 2019

২০২৩ সালে মোটরসাইকেলের বিক্রি দাঁড়াবে ১০ লাখ: মতিউর রহমান

মোটরসাইকেল বিপণনকারী কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশের মোটরসাইকেল অ্যাসেম্বলার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার অ্যাসোসিয়েশনের (বিমামা) সভাপতি মতিউর রহমান। তিনি উত্তরা মোটরসের চেয়ারম্যান। বাংলাদেশের মোটরসাইকেল শিল্পের যাত্রা নিয়ে কথা বলেছেন এবং বাণিজ্যের সঙ্গে। 

বাংলাদেশে ভারতীয় ও জাপানি মোটরসাইকেল ব্র্যান্ডগুলো যৌথ উদ্যোগ অথবা কারিগরি সহায়তা দিয়ে কারখানা করছে। সার্বিকভাবে খাতের পরিস্থিতি কী?

মতিউর রহমান: মোটরসাইকেলের বাজার বড় হচ্ছে। এখন বছরে পাঁচ লাখের কাছাকাছি মোটরসাইকেল বিক্রি হয়। এটা ২০২৩ সাল নাগাদ ১০ লাখে উন্নীত হবে বলে আমরা আশা করি। এখন কোম্পানিগুলো নিজেদের বিক্রির পরিমাণ বাড়াতে মূল্যে অনেক ছাড় দিচ্ছে। ফলে মানুষ সাশ্রয়ী মূল্যে মোটরসাইকেল কিনতে পারছে। আমরা যেটুকু শুল্কছাড় পেয়েছি, দাম কিন্তু তার চেয়ে বেশি কমেছে। বাজারে এ প্রতিযোগিতার কারণ, পরিমাণে না বাড়লে কেউ বিনিয়োগের বিপরীতে মুনাফা অর্জন করতে পারবে না।

মোটরসাইকেল–শিল্পের উন্নয়নে এখন জরুরি কী?

মতিউর রহমান: এখন দরকার সহযোগী শিল্প বা ভেন্ডার উন্নয়ন। ভারতে বড় ব্র্যান্ডগুলো এখন মূলত মোটরসাইকেল সংযোজন করে। তাদের জন্য মোটরসাইকেলের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরি করে সহযোগী শিল্প। বাংলাদেশে আমরা ভেন্ডারদের আনার চেষ্টা করছি। তাদের বলছি, এখন সরকার মোটরসাইকেলশিল্পের উন্নয়নে নানা সহায়তা দিচ্ছে। পাঁচ বছর পরে কিন্তু এই মনোভাব না–ও থাকতে পারে। তাই এখন এলে যেসব সুবিধা পাওয়া যাবে, সেটা পরে মিলবে না। সমস্যা হলো বাংলাদেশের বাজার ছোট। বড় না হলে ভেন্ডারদের আকর্ষণ করা যাবে না। অবশ্য মোটরসাইকেল বাড়লে খুচরা যন্ত্রাংশেরও একটি বড় বাজার তৈরি হবে। সেদিকেও তারা নজর দিতে পারে।

মোটরসাইকেলের বাজার যে বাড়ছে, এটা কারণ কী কী?

মতিউর রহমান: প্রথমত, দাম কমেছে বলে মানুষের নাগালের মধ্যে এসেছে। আগে একটি পালসার মোটরসাইকেল ২ লাখ ১০ হাজার টাকা ছিল। এখন সেটা ৪০ হাজার টাকা কম। দ্বিতীয় কারণ, দেশে গ্রামগঞ্জে রাস্তাঘাটের উন্নতি হয়েছে। মানুষের আয় বেড়েছে। কিন্তু সে অনুযায়ী গণপরিবহনব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। মোটরসাইকেল একটি সাশ্রয়ী ও সহজে ব্যবহারযোগ্য বাহন। এ কারণে মানুষ কিনছে। এরপরও ভারত, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামের মতো দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে মোটরসাইকেলের ব্যবহার কম। দেশে এখন মোটরসাইকেলের বাজারে যে প্রবৃদ্ধি, সেটা আরও কয়েক বছর অব্যাহত থাকবে।

বাংলাদেশ থেকে কি মোটরসাইকেল রপ্তানি সম্ভব?

মতিউর রহমান: অবশ্যই। ভারত, থাইল্যান্ড পারলে আমরা কেন পারব না। তবে এ জন্য একটু সময় লাগবে। সহযোগী শিল্প গড়ে উঠলে মোটরসাইকেলের উৎপাদন খরচ কমবে। তখন রপ্তানিতে আমরা প্রতিযোগিতা–সক্ষম হতে পারব।

আপনারা এখন কী কী তৈরি করেন?

মতিউর রহমান: এখন মোটরসাইকেলের কাঠামো বা চেসিস এবং আরও কয়েকটি যন্ত্রাংশ তৈরি করলে উৎপাদন হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া যায়। এ নিয়মটি পরিবর্তন দরকার। কেউ যদি চেসিস তৈরি না করে অন্য কিছু তৈরি করতে চায়, সে ক্ষেত্রেও সুযোগ দেওয়া দরকার। হিসাবটি করা উচিত মূল্য সংযোজনের ভিত্তিতে।

মোটরসাইকেল বিক্রিতে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

মতিউর রহমান: আমরা চাই মোটরসাইকেল নিবন্ধনের পর বিক্রি হোক। কিন্তু নিবন্ধন সহজ করতে হবে। গ্রামগঞ্জে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কার্যালয় নেই। সেখানে একটি দোকানে দিনে ১০ জন ক্রেতা এলে আমরা কি ১০ বার বিআরটিএতে যাব? আসলে অনলাইনে নিবন্ধনের ব্যবস্থা থাকা উচিত। আমরা সেটা বলেছি।

অনেকে মোটরসাইকেলের বেপরোয়া চালানো নিয়ে বিরক্ত। এটা কি মোটরসাইকেলের দোষ?

মতিউর রহমান: কখনোই না। এটা আসলে ট্রাফিক আইনের প্রয়োগের সমস্যা। বাংলাদেশে শুধু মোটরসাইকেল নয়, অন্যান্য যানবাহন নিয়েও একই অভিযোগ আছে। এটা অন্যান্য দেশেও তো মোটরসাইকেল চলে। অবশ্য আমরা এ নিয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম হাতে নিচ্ছি। একটা কথা মনে রাখতে হবে, মোটরসাইকেল দেশজুড়ে অনেক তরুণের আয়ের উৎস। সুত্র: প্রথম আলো

মোটরসাইকেল উৎপাদনে জয় জয়কার

মোটরসাইকেল শিল্পের যাত্রা শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। চাহিদা বাড়ছে, দামও কমছে। কারণ, দেশেই এখন মোটরসাইকেল শিল্প গড়ে উঠেছে। সাত কোম্পানি এগিয়ে নিচ্ছে এই শিল্প। সামনের কোনো একদিন হয়তো পুরো মোটরসাইকেলই তৈরি হবে দেশের মধ্যে।

২০১৬ সালের জুনে দেশে একটি ব্র্যান্ডের একটি মডেলের মোটরসাইকেলের দাম ছিল ১ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। সেই মোটরসাইকেলটি এখন বিক্রি হচ্ছে ৯৭ হাজার টাকায়। এই সাশ্রয়ী দামের কারণে দেশজুড়ে মোটরসাইকেলের বাজার রমরমা।

সাশ্রয়ী দামটা আবার এসেছে দুই কারণে। প্রথমত, দেশে উৎপাদন, সেই কারণে সরকারের শুল্ক ছাড়। দ্বিতীয়ত, বাজার ধরতে আগ্রাসী বিপণন। আমাদের আজকের লেখা দেশে উৎপাদন নিয়ে।

দেশে এখন কমপক্ষে সাতটি সুপরিচিত ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলের কারখানা হয়েছে; ভারতের বাজাজ, টিভিএস ও হিরো, জাপানের হোন্ডা, সুজুকি ও ইয়ামাহা এবং একমাত্র দেশীয় ব্র্যান্ড রানার। বিদেশি ব্র্যান্ডগুলো দেশে কারখানা করেছে কোনো ক্ষেত্রে যৌথ উদ্যোগে। কোনো ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করেছে বাংলাদেশি কোম্পানি, কারিগরি সহায়তা দিয়েছে মূল প্রতিষ্ঠান।

অবশ্য কারখানাগুলো উৎপাদনের এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে। চেসিস বা কাঠামো, কয়েকটি যন্ত্রাংশ তৈরি করলেই উৎপাদক হিসেবে স্বীকৃতি মিলছে। কিন্তু উৎপাদকেরা দেশে সহযোগী শিল্প গড়ে তুলে আরও বেশি মূল্য সংযোজনে মরিয়া।

কয়েক দশক আগে ভারতেও এভাবেই মোটরসাইকেল শিল্পের যাত্রা শুরু হয়েছিল। ১৯৫৫ সালে ব্রিটিশ কোম্পানি রয়েল এনফিল্ড মাদ্রাজ মোটরসের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে চেন্নাইতে একটি সংযোজন কারখানা করে। সেই থেকে শুরু। ভারতীয় ব্র্যান্ড বাজাজ ১৯৪৪ সালে মোটরসাইকেল আমদানির ব্যবসা শুরু করে। পরবর্তীতে তারা দুই চাকা চাকার যানবাহন উৎপাদনকারী বড় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। তাদের হাত ধরেছিল জাপানের কাওয়াসাকি।

টিভিএসের যৌথ উদ্যোগের কারখানা ছিল জাপানের সুজুকি মোটর করপোরেশনের সঙ্গে। তাদের যৌথ উদ্যোগ শুরু হয় ১৯৮২ সালে। ভারতের হিরো মোটোকর্প আগে সাইকেল উৎপাদন করত। ১৯৮৪ সালে জাপানের হোন্ডা মোটর করপোরেশনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে তারা মোটরসাইকেল উৎপাদন শুরু করে।

এখন হিরো, বাজাজ ও টিভিএস ভারতীয় মোটরসাইকেলের সুপরিচিত নাম। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে তারা বহু দেশের রাস্তায় চলছে। বাংলাদেশে কি ভারতের মতো মোটরসাইকেল শিল্পের যাত্রাটি শুরু হলো?

শুরুর কথা

বাংলাদেশে শুরুর দিকে জাপানের হোন্ডা ব্র্যান্ডের সামান্য কিছু মোটরসাইকেল আমদানি হতো। এ দেশের মানুষ মোটরসাইকেলকে চিনত হোন্ডা নামেই। এরপর আশির দশকে ভারতীয় ও জাপানের যৌথ উদ্যোগের কারখানায় তৈরি ভারতীয় মোটরসাইকেল বাংলাদেশের বাজারে আসতে শুরু করে।

এরপর শুরু হয় মোটরসাইকেল খোলা অবস্থায় এনে সংযোজন করা, যা দেড় দশকের মতো হলো। এর মাধ্যমে সামান্য কিছু মূল্য সংযোজন হচ্ছিল। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সরকার মোটরসাইকেল আমদানিতে শুল্ক ছাড় পেতে উৎপাদনের শর্ত দেয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, উৎপাদনকারী হিসেবে স্বীকৃতি পেতে হলে মোটরসাইকেলের মূল কাঠামোসহ (চেসিস) পাঁচটি প্রধান যন্ত্রাংশের কমপক্ষে একটি দেশে উৎপাদন করতে হবে। এরপর শিল্প মন্ত্রণালয় মোটরসাইকেল শিল্পের উন্নয়নে একটি নীতিমালাও করেছে।

এখন দেশে মোটরসাইকেলে তিন ধরনের কর ব্যবস্থা আছে। যে সব প্রতিষ্ঠান কাঁচামাল থেকে নির্দিষ্ট কিছু যন্ত্রাংশ তৈরি করে তাদের ২৮-৩০ শতাংশ কর দিতে হয়। কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের চেয়ে কিছু কম মূল্য সংযোজন করে, সে ক্ষেত্রে মোট কর ভার ৫৯ শতাংশের মতো। আর যারা পুরো তৈরি মোটরসাইকেল আমদানি করে, তাদের সব মিলিয়ে ১৫১ শতাংশ কর দিতে হয়। অবশ্য সব কোম্পানিই দু-চারটি করে মডেল তৈরি করে। বাকিটা সংযোজন করে।

সম্ভাবনা বড়

জাপানের বহুজাতিক মোটরসাইকেল ব্র্যান্ড ইয়ামাহার এক বাজার জরিপ বলছে, দেশে প্রতি ১৬১ জনে একজন মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন। প্রতিবেশী দেশ ভারতে এ হার প্রতি ২০ জনে ১ জন এবং ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় প্রতি ৪ জনে ১ জন ব্যক্তি মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন। এ হিসেবে বাংলাদেশের বাজারে মোটরসাইকেল বিক্রি বাড়ানোর সম্ভাবনা অনেক বেশি বলে মনে করছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা।

কোম্পানিগুলোর হিসাবে, দেশে ২০১৫ সালে ১ লাখ ৮০ হাজার মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছিল। ২০১৭ সালে তা বেড়ে ৩ লাখ ৮৭ হাজারে উন্নীত হয়। ২০১৮ সালে বিক্রি দাঁড়ায় প্রায় পাঁচ লাখে। উদ্যোক্তারা আশা করছেন, ২০২৩ সালের মধ্যে এ দেশে বাজারের মোটরসাইকেলের বাজার বছরে ১০ লাখে উন্নীত হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে মোটরসাইকেল রপ্তানি হবে, যার শুরু করেছে রানার।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ হোন্ডা লিমিটেডের অর্থ ও বাণিজ্য বিভাগের প্রধান শাহ মো. আশিকুর রহমান বলেন, সরকার মোটরসাইকেল শিল্পনীতিতে বাজার ২০২৭ সালের মধ্যে ১০ লাখে উন্নীত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছে। বাস্তবে সেটা অনেক আগেই অর্জিত হবে। তিনি বলেন, এটা খুবই সম্ভাবনাময় শিল্প। সরকারের সহযোগিতা পেলে এ খাত আরও এগিয়ে যাবে।

চার চাহিদা

উদ্যোক্তাদের মত অনুযায়ী, মোটরসাইকেল শিল্পের এখন চারটি চাহিদা। এক. সহযোগী শিল্পের উন্নয়ন, যারা কারখানার জন্য বিভিন্ন খুচরা যন্ত্রাংশ তৈরি করবে। দুই. মোটরসাইকেলের নিবন্ধন ব্যয় কমানো ও সহজ করা। তিন. মোটরসাইকেল কিনতে ঋণ দেওয়া। চার. চালনার প্রশিক্ষণের জন্য সহায়তা।

বাংলাদেশে ইয়ামাহার কারখানা করা এসিআই মোটরসের নির্বাহী পরিচালক সুব্রত রঞ্জন দাস বলেন, ভিয়েতনামের ভিন ব্যাংক মোটরসাইকেল কিনতে বাজারে আড়াই শ কোটি ডলার ঋণ বিতরণ করেছে। বাংলাদেশেও ঋণ দেওয়া শুরু হয়েছে। তবে এমন সব শর্ত দেওয়া হয়, যা মেনে শিক্ষার্থী ও বেকারেরা মোটরসাইকেল কিনতে পারে না। তিনি বলেন, ইয়ামাহা অনেক দেশে প্রশিক্ষণ দিয়ে চালকদের লাইসেন্স দেয়। এ ক্ষমতা তাদের সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার দিয়েছে। বাংলাদেশে যদি সরকারি কোনো খালি জায়গায় প্রশিক্ষণের সুযোগ দেওয়া হতো, তাহলে ভালো হতো।

খরচ কম

ঢাকার রাস্তায় মোটরসাইকেল প্রতিনিয়ত বাড়ছে। মাঝারি ইঞ্জিন ক্ষমতার একটি মোটরসাইকেল এক লিটার জ্বালানি তেলে ৪০ কিলোমিটারের বেশি চালানো যায়। নগরে গণপরিবহনের দুর্দশায় অনেকেই মোটরসাইকেল বেছে নিচ্ছে। নারীরাও শুধু করেছে স্কুটি চালনা।

অনেকেই মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ার করে বেকারত্ব ঘুচিয়েছে। অনেকে মোটরসাইকেলে খাবার সরবরাহ করে। তাদেরই একজন সাব্বির হোসেন। তিনি বলেন, দিনে ৬-৭ ঘণ্টা ঠিকমতো চালালে ৮০০ টাকার মতো আয় করা যায়। সেটা দিয়েই তাঁর সংসার চলে। আগে পুরান ঢাকায় একটি দোকানে কাজ করতেন। সেখানে পেতেন ১০ হাজার টাকা।

অনেকেই ট্রাফিক আইন না মানার মোটরসাইকেল চালকদের অভিযুক্ত করেন। জবাব কি, জানতে চাইলে সাব্বির হোসেন বলেন, দেশে বাস, মিনিবাস, ট্রাক, অটোরিকশা—কেউ-ই ঠিকমতো আইন মানে না। এটা গাড়ির দোষ নয়, দোষ ট্রাফিক ব্যবস্থার। সুত্র: প্রথম আলো  

পেঁয়াজের দাম বাড়ছে ঘন্টায় ঘন্টায়...

Wednesday, September 25, 2019

ADB sticks to 8% GDP growth projection for Bangladesh

Press conference of ADB 
Senior Correspondent: The Asian Development Bank has reiterated its projection of an 8 percent GDP growth for Bangladesh in the current fiscal year.

The financial institution made the forecast in its latest publication titled ‘Asian Development Outlook 2019’,  after analysing the state of the Bangladeshi economy.

The figure is similar to the lender’s previous projections made in April this year and slightly lower than the government’s projection of 8.2 percent for the fiscal year 2019-20.
Bangladesh’s GDP growth was 7.86 percent in the past fiscal year while the per capita income was $1,751.

Bangladesh’s economic growth crossed 7 percent in fiscal 2015-2016 after almost a decade in the region of 6 percent.

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ৫ চ্যালেঞ্জ দেখছে এডিবি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার: চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়বে না বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এ প্রবৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখবে শিল্প খাত। জাতীয় বাজেটে সরকারের পক্ষ থেকে ৮.২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হলেও বেশকিছু চ্যালেঞ্জের কারণে এ লক্ষ্য পূরণ হবে না বলে ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক-২০১৯’-এর হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ছিল ৮.১৩ শতাংশ। এর পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ৫ চ্যালেঞ্জ দেখছে এডিবি। এগুলো হচ্ছে- রপ্তানি বহুমুখীকরণ, শহর ও গ্রামের মধ্যে বৈষম্য, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করা, মানব সম্পদ ও ভ্যাট আইনের কার্যকর প্রয়োগ। 

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এডিবির ঢাকা আবাসিক মিশন কার্যালয়ে হালনাগাদ এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংস্থাটি। এ সময় এডিবি ঢাকা মিশনের প্রধান মনমোহন প্রকাশ স্বাগত বক্তব্য দেন। আর মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংস্থার অর্থনীতিবিদ সন চ্যাং হং।

প্রতিবেদনে বলা হয়, চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শুল্ক ও বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়বে। এর পাশাপাশি উচ্চতর প্রবাসী আয়ের কারণে বাড়বে ভোগব্যয়। একইসঙ্গে সহজ মুদ্রানীতির কারণে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহও বাড়বে। ব্যবসায় পরিবেশ উন্নত করতে চলমান সংস্কার এবং অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের সুবাদেও বাড়বে প্রবৃদ্ধি। একই সময়ে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, টাকার অবমূল্যায়ন ও ভ্যাটের আওতা বাড়ার কারণে পণ্য ও সেবার দাম বাড়বে বলে মনে করে এডিবি। ফলে ২০১৯-২০ অর্থবছরের মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়ে ৫.৮ শতাংশ হতে পারে। 

এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি অগ্রগামী। রেমিট্যান্স প্রবাহ, সহজ মুদ্রানীতি, বেসরকারি বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করতে সংস্কার কার্যক্রম, অবকাঠামো খাতে সরকারি বিনিয়োগ বাড়ার কারণে প্রবৃদ্ধি বাড়বে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- রপ্তানি বহুমুখীকরণ, শহর ও গ্রামের মধ্যে বৈষম্য, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করা, মানব সম্পদ ও ভ্যাট আইনের কার্যকর প্রয়োগ ইত্যাদি।

দুর্নীতি বিরোধী চলমান অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর বলেন, সুশাসনের জন্য এটা খুবই ফলপ্রসূ হবে। এর ফলে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়বে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসবে। তবে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। থেমে গেলে হবে না। এতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পাবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২০২৪ সালের মধ্যে প্রবৃদ্ধি ডাবল ডিজিটে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। তবে এজন্য অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ ব্যাপকভাবে বাড়াতে হবে। সেক্ষেত্রে রাস্তা, বন্দর এবং পদ্মাসেতুসহ বড় প্রকল্পগুলো এবং ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সেগুলো যথাসময়ে শেষ করতে হবে। সেই সঙ্গে দক্ষ জনশক্তি তৈরি, আর্থিক খাতের উন্নয়ন ও ব্যবসার পরিবেশ সহজ করতে হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিবেশী ও অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। চলতি অর্থবছরে ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৭.২ শতাংশ, যা গত এপ্রিল মাসে প্রকাশিত মূল এশিয়ান ডেভলপমেন্ট আউট লুকে বলা হয়েছিল ৭.৩ শতাংশ। এছাড়া পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি হবে ২.৪ শতাংশ, যা মূল প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল ৩.৬ শতাংশ। আর বাংলাদেশের মূল প্রতিবেদনের পূর্বাভাসেও বলা হয়েছিল এবছর প্রবৃদ্ধি হবে ৮ শতাংশ, যা হালনাগাদ প্রতিবেদনে একই রয়েছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, চীনের প্রবৃদ্ধি হবে ৫.৪ শতাংশ, যা মূল প্রতিবেদনের পূর্বাভাসে ছিল ৫.৫ শতাংশ। কোরিয়ার প্রবৃদ্ধি হবে ২.৪ শতাংশ, যা আগে ছিল ২.৫ শতাংশ। সিঙ্গাপুরের প্রবৃদ্ধি হবে ১.৪ শতাংশ, যা মূল পূর্বাভাসে ছিল ২.৬ শতাংশ। তবে সব মিলিয়ে এশিয়ার প্রবৃদ্ধি হবে ৫.৫ শতাংশ, যা মূল প্রতিবেদনের পূর্বাভাসে ছিল ৫.৬ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে কৃষিখাতের অংশ থাকবে ৩.৮ শতাংশ। এছাড়া শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হবে ১২.৫ শতাংশ। সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি হবে ৬.৪ শতাংশ। এদিকে মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছর মূল্যস্ফীতি হবে ৫.৮ শতাংশ। এক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণভাবে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, পণ্য ও সেবার মূল্য বৃদ্ধি এবং ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের কারণে মূল্যস্ফীতি কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী থাকবে।

আউটলুক প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি অর্থবছরে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হবে ১০ শতাংশ। এক্ষেত্রে আমেরিকা ও চীনের মধ্যে যে বাণিজ্য যুদ্ধ চলছে সেখান থেকে সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। আমদানির ক্ষেত্রে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হবে ৯ শতাংশ। কারণ সরকারের মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে প্রচুর মূলধনী যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি করতে হচ্ছে। তবে এ বছর খাদ্য আমদানি কমতে পারে। শস্য উৎপাদন বৃদ্ধি এবং আমদানি শুল্ক বাড়ায় এটা হতে পারে। এছাড়া চলতি অর্থবছরে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমবে। সেক্ষেত্রে এ খাতে প্রবৃদ্ধি দাড়াবে ১১.৩ শতাংশ।

এডিবির আউটলুক প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে এডিবির জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ সুন চ্যান হং বলেন, বাংলাদেশের শিল্প, কৃষি ও প্রবাসী আয়ে চাঙা থাকলেও জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের বেশি হবে না। তারপরও এ প্রবৃদ্ধি অর্জনে কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে জনমিতির সুবিধা ভোগ করার জন্য মানব সম্পদের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটাতে হবে। দক্ষ মানব সম্পদ তৈরি করতে পারলে বিশেষ করে প্রবাসী আয় ব্যাপকভাবে বাড়ানো সম্ভব। যেমন এখন বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটি ১০ লাখের বেশি মানুষ বিদেশ থাকে। কিন্তু গত অর্থবছরে রেমিট্যান্সে এসেছে ১৬ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। কিন্তু দক্ষ মানব সম্পদ যেমন- ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা এরকম দক্ষ মানব সম্পদ বিদেশি পাঠাতে পারলে ১০০ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স আহরণ করা সম্ভব। 

রূপালীময় জীবন তার

অফিসে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি
তাঁর সময়ে, গত শতাব্দীর আশির দশকের শুরুর দিকে যখন ছাত্রীদের মধ্যে ব্যবসায় প্রশাসনে পড়ার ঝোঁক বলতে কিছু ছিল না, সেই সময়ে রূপালী চৌধুরী ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএতে (ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট)। পড়াশোনা শেষ করে সবাই যখন সরকারি চাকরিতে ঢোকার চেষ্টায় রত, সেই সময়েও রূপালী চৌধুরীর যাত্রা ছিল স্রোতের বিপরীতে। যোগ দেন ‘সিবা গেইগি’ নামের এক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে।

এরপর কেটেছে ৩৫ বছর। আজ রূপালী চৌধুরী একটি সুপরিচিত নাম। সাধারণ কর্মী থেকে নিজ দক্ষতায় প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনার শীর্ষ পদে ওঠার নজির গড়েছেন। তিনি কোনো বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বরত একমাত্র বাংলাদেশি নারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক। বিদেশি ব্যবসায়ীদের সংগঠন ফরেন চেম্বারের সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করা একমাত্র নারীও তিনি।

সব সময় শাড়ি পরেন। কপালে মাঝেমধ্যে টিপও দেখা যায়। ভাত-মাছ-ডাল বিশেষ পছন্দের খাবার। সব মিলিয়ে আবার তিনি নিরেট বাঙালি নারী।

দেশে কেন বিদেশি বিনিয়োগ তেমন একটা আসছে না, ব্যবসায় পরিবেশের সমস্যা কী কী, কীভাবে বিনিয়োগ বাড়ানো যাবে—এসব নিয়ে রূপালী চৌধুরীর সঙ্গে অনেকবার কথা হয়েছে। এবার গিয়েছিলাম তাঁর জীবনের কথা শুনতে। তাঁর শৈশব, কৈশোর, তারুণ্য, পেশাজীবন, পরিবারের কথা জানতে। রূপালী চৌধুরী সবকিছুই জানালেন। কখনো স্মৃতিকাতর হয়ে, কখনো লাজুক ভঙ্গিতে, কখনো স্নেহময়ী মায়ের মতো, কখনো সিরিয়াস আলোচকের মতো।

শুরুটা কৈশোরের গল্পে
রূপালী চৌধুরীর জন্ম চট্টগ্রামের পটিয়ায়। তাঁর বাবা প্রিয় দর্শন চৌধুরী ছিলেন একজন চিকিৎসক। কলকাতায় পড়াশোনা শেষ করে তিনি (বাবা) সেখানেই চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত হন। কিন্তু রূপালী চৌধুরীর ঠাকুরমা (দাদি) তাঁর ছেলেকে বললেন, ‘এখানে মানুষ রোগে মারা যায়, আর তুমি বিদেশে রোগ সারাও!’

রূপালী চৌধুরীর বাবাকে ফিরে আসতেই হলো। ১৯৫৭ সালে ফিরে এসে তিনি চট্টগ্রামের পটিয়ায় চিকিৎসা পেশা শুরু করেন। মা (রূপালী চৌধুরীর ঠাকুরমা) ওই সময় ছেলের ভিজিট (সম্মানী) রোগীপ্রতি দুই টাকায় সীমিত করে দেন, যাতে মানুষের কষ্ট না হয়।

এ গল্পটি বলার সময় রূপালী চৌধুরীকে খুব গর্বিত মনে হলো। তিনি বললেন, ‘বাবা আমার চোখে আনসাং হিরো (অবিসংবাদিত নায়ক)। ওই সময় কলকাতার পসার ছেড়ে পটিয়ায় ফেরা সহজ ছিল না।’

মা–বাবার পাঁচ সন্তানের মধ্যে রূপালী চৌধুরী চতুর্থ। বড় বোন শ্যামলী চৌধুরী গৃহিণী। এরপর ভাই শ্যামল বিকাশ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত। মেজ বোন অঞ্জলি চৌধুরী মারা গেছেন। ছোট ভাই কমল জ্যোতি চৌধুরী ব্যবসায়ী। রূপালী চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের পরিবার ছিল অসম্ভব সংস্কৃতিমনা। পটিয়ায় আমাদের শৈশব, কৈশোর খুব আনন্দে কেটেছে। সাম্প্রদায়িক অসম্প্রীতি কখনো টের পাইনি। আমাদের প্রচুর মুসলমান ও হিন্দু বন্ধু ছিল। বিদ্যালয়ে চারটি ধর্মের শিক্ষার্থীদের জন্যই আলাদা আলাদা প্রার্থনা হতো। এখন তো সেটা আর হয় না।’

স্থানীয় বিদ্যালয় ও কলেজে শিক্ষা শেষ করে রূপালী চৌধুরী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে স্নাতকে ভর্তি হন। স্নাতকোত্তর করেন আইবিএতে। পড়াশোনা শেষ করে সিবা গেইগিতে যোগ দেন ১৯৮৪ সালে। শুরুর কাজ ছিল ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিভাগীয় প্রধানকে ব্যবস্থাপনা ও বিক্রয়সংক্রান্ত হিসাব দিয়ে সহায়তা করা।

 ’৭৭-এ কথা শুরু

রূপালী চৌধুরী ভালো গান গাইতেন। আবদুল হক (ছদ্মনাম সিদ্ধার্থ হক) কবিতা লিখতেন, গল্প লিখতেন, ভালো ছাত্র ছিলেন। দুজনের পরিবার কাছাকাছি বসবাস করে। আগে থেকে চেনাজানা হলেও কথাবার্তা বলা শুরু হয় ১৯৭৭ সালে। আর বিয়ে হয় ১৯৮৯ সালে, ১২ বছরের মাথায়।

পরিবার কি মেনে নিয়েছিল? জানালেন, দুই পরিবারের মধ্যে জানাশোনা ছিল। দুই পক্ষই একে অপরকে ভালোভাবে জানত। কিন্তু বিয়েটা মানতে চাইছিল না। তাই বেশ অপেক্ষাও করতে হয়। বিয়ে যখন হয়ে গেল, তখন ধীরে ধীরে সবকিছুই স্বাভাবিক হলো।

জানতে চাইলাম, ভাইয়ের (আবদুল হক) প্রতি আকর্ষণের মূলে কি কবিতা ছিল? রূপালী চৌধুরী হেসে বললেন, ‘এত কিছু জানতে চেয়ো না।’

আবদুল হক ও রূপালী চৌধুরীর দুই সন্তান। ছেলে রাহুল হক কানাডায় পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরে এসে রেস্তোরাঁ ব্যবসা শুরু করেছে। রূপালী চৌধুরী বলেন, ছেলেটা বিদেশে থাকতে চায় না। বাবার মতো তারও কবিতা লেখার ঝোঁক। তার প্রথম বই ইংরেজিতে প্রকাশিত ফাইন্ডিং চি (নিজেকে খোঁজো)। মেয়ে পূর্ণা হক কানাডায় পরিবেশবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়ছে।

আবদুল হক সোশ্যাল মার্কেটিং কোম্পানির (এসএমসি এন্টারপ্রাইজ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক। প্রতিষ্ঠানটিকে আপনারা চেনেন ওরস্যালাইনের মাধ্যমে।

বার্জারে রঙের জীবন
বার্জারের প্রতিষ্ঠাতা জার্মানির নাগরিক লুইস বার্জার। তিনি ১৭৬০ সালে যুক্তরাজ্যে রাসায়নিক ব্যবসা শুরু করেন। বার্জার এ অঞ্চলে ব্যবসা করতে আসে ১৯৫০ সালে। বাংলাদেশে, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের চট্টগ্রামে তারা কারখানা করে ১৯৭০ সালে।

১৯৯০ সালের অক্টোবরে বার্জারে যোগ দিলেন রূপালী চৌধুরী। এ দেশে বার্জারের ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে প্রথম নারী কর্মী তিনি। সিবা গেইগি ছেড়ে বার্জারে কেন? উত্তরে রূপালী চৌধুরী বলেন, ‘আবদুল হক তখন চট্টগ্রামে। আমি চট্টগ্রামে থাকার জন্য একটি চাকরি খুঁজছিলাম। পত্রিকায় বার্জারের একটি পদে লোক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেখলাম। তাঁরা বেশ কয়েক দফা সাক্ষাৎকার নিলেন। পরিকল্পনা ব্যবস্থাপক পদে একটি মেয়ে কাজ করতে পারবে কি না, এটা নিয়ে তাঁরা দ্বিধায় ছিলেন।’

রূপালী চৌধুরী বলেন, ‘অনেক কষ্টে আমার চাকরিটা হয়। ওই পদে সিঅ্যান্ডএফ প্রতিনিধিদের সঙ্গে কাজ করতে হবে, কাস্টমসের সঙ্গে কাজ করতে হবে, বন্দরে যেতে হবে। ওই সময় একটি মেয়ে এসব কাজ করতে পারবে, সেটা তাঁরা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না।’

রূপালী চৌধুরী কাজটি ভালোভাবেই করেছিলেন। সে কারণেই বিভিন্ন বিভাগে কাজ করার পর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি নারী, এই ভেবে নিজে থেকে কখনো গুটিয়ে যাইনি।’

২০০৪ সালে রূপালী চৌধুরী বার্জারের পরিচালক হন। এরপর ২০০৮ সালে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যোগ দেন।

কী চেয়েছিলেন, কী হলেন
‘হতে পারতাম তো অনেক কিছুই। আমার বড় ভাই শান্তিনিকেতনে ভর্তির ফরম নিয়ে এসেছিলেন। বাবা বললেন, অনেক গান শেখা হয়েছে, এবার পড়ালেখা করো,’ বলেন রূপালী চৌধুরী। তিনি আরও যোগ করেন, ‘এখনকার তরুণদের লক্ষ্য খুব পরিষ্কার। কিন্তু আমাদের সময়ে আমরা জানতাম না কী হতে চাই। তবে আমি আর্থিকভাবে আত্মনির্ভরশীল হতে চেয়েছিলাম।’

বার্জারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদটি কি লক্ষ্যে ছিল? রূপালী চৌধুরীর জবাব, ‘আমি ভাবিনি। একটার পর একটা পদে গিয়ে মনে হয়েছে, কাজটা আমি করতে পারি, আরও ভালোভাবে। এভাবেই হয়েছে।’

শুধু বার্জার নয়, রূপালী চৌধুরী বাণিজ্য সংগঠনেও নেতৃত্ব দিয়েছেন। ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বারের দুবারের সভাপতি ও পেইন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পদে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি এখন বাটা বাংলাদেশ, লিনডে বাংলাদেশ ও সূর্যের হাসির পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন।

পছন্দ ইলিশ-পাবদা

রূপালী চৌধুরীকে প্রায়ই বিদেশে যেতে হয়। তখন দেশের কোন জিনিসটির অভাব বোধ করেন তিনি? উত্তর, ভাত, মাছ আর ডাল। প্রায় সব মাছই ভালো লাগে। তবে বিশেষ পছন্দ ইলিশ আর পাবদা।

খেতে কি খুব পছন্দ করেন? রূপালী চৌধুরী বলেন, ‘আমাকে দেখে বোঝো না?’ তবে ইদানীং স্বাস্থ্যসচেতন হয়েছেন। ভাত খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন। দিন শুরু হয় ব্যায়াম করে।

বার্জারের কার্যালয় উত্তরায়। নয়টার কাছাকাছি সময়ে রূপালী চৌধুরী অফিসে পৌঁছে যান। ফেরেন সন্ধ্যায়। প্রায়ই পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হয়। বাকিটা সময় কাটে বই পড়ে, গান শুনে। অনেক সময় টেলিভিশনও দেখা হয়।

বইয়ের মধ্যে ফিকশন বিশেষ পছন্দ। সফলদের জীবনী পড়তে ভালোবাসেন। সম্প্রতি পড়েছেন ইসরায়েলের ইতিহাসবিদ ইউভাল নোয়া হারারির স্যাপিয়েন্স: এ ব্রিফ হিস্ট্রি অব ম্যানকাইন্ড বইটি। গান শোনেন অনেক ভাষার।

শাড়ির মধ্যে সিল্ক ও সুতি পছন্দের তালিকায় আগে থাকে।

‘দুঃখ করে মরার মানে নেই’

রূপালী চৌধুরী মনে করেন, সব সময় নিচের দিকে তাকাতে হয়। অমুকে ওই হয়েছে, তমুকে সেই হয়েছে, এসব নিয়ে দুঃখ করে মরার কোনো মানে নেই। নিজের জীবন নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট তো অবশ্যই, তার চেয়েও বেশি কিছু।

বলেন, ‘আমি যা আশা করেছিলাম, তার অনেক বেশি পেয়েছি। আমি কখনো ভাবিনি, একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হব। কখনো ভাবিনি, বিভিন্ন ফোরামে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করব।’

২০১৮-১৯ হিসাব বছরে বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশের মোট পণ্য বিক্রির পরিমাণ ১ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকা। রূপালী চৌধুরী যখন বার্জারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেন, তখন প্রতিষ্ঠানটি ৩৫০ কোটি টাকার মতো পণ্য বিক্রি করত। ১১ বছরে বিক্রি পাঁচ গুণের বেশি হয়েছে।

বার্জারের মূল ব্যবসা রং। তারা সংশ্লিষ্ট নানা খাতে ব্যবসা বাড়াচ্ছে। তাতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন রূপালী চৌধুরী। তিনিই আসলে বার্জারের আসল রং। অবশ্য তিনি তা মানতে নারাজ। বলেন, এ সাফল্য এসেছে তাঁর সব সহকর্মীর ঐকান্তিক পরিশ্রমের মাধ্যমে।

চারটি প্রশ্ন- নেতা হিসেবে গুণ কী কী
মানুষের সঙ্গে সহজে মিশতে পারা। মানুষের প্রতি সহজাত ভালোবাসা রয়েছে। এ ছাড়া সততা ও শৃঙ্খলা আজ তাঁকে এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। সঙ্গে কাজটাও ভালো করে জানতে হয়েছে।

বার্জারে কী যোগ করেছেন
বার্জারে আগ্রাসী বিপণন কৌশল নিয়েছেন। ফলে ব্যবসা বেড়েছে। রং–সংশ্লিষ্ট আরও কয়েকটি খাতে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছেন। দুটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জয়েন্ট ভেঞ্চার প্রতিষ্ঠা করেছেন। প্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো ঠিক করেছেন। ১০ বছরে ব্যবসা বেড়েছে পাঁচ গুণের বেশি।

তরুণদের প্রতি পরামর্শ
তরুণেরা পরামর্শ শুনতে তেমন পছন্দ করে না। তবে কেউ জানতে চাইলে বলবেন, কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। ধৈর্য থাকতে হবে। চটজলদি সবকিছু পাওয়া সম্ভব নয়।

বিনিয়োগ বাড়বে কীভাবে
ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। অনেক কাজ হচ্ছে। তবে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করে দেখাতে হবে, বাংলাদেশে বিনিয়োগ সহজ। আর্থিক নীতিমালা ঘন ঘন পরিবর্তন করা উচিত নয়। বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় আরও প্রতিযোগিতামূলক আকর্ষণীয় প্রণোদনা দেওয়া উচিত। এখানে মনে রাখতে হবে, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিটি দেশই বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত।

একনজরে বার্জার প্রতিষ্ঠাতা

জার্মান নাগরিক লুইস বার্জার ১৭৬০ সালে যুক্তরাজ্যে গিয়ে রাসায়নিকের ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৫০ সালে বার্জার উপমহাদেশে আসে। বাংলাদেশে কারখানা করে ১৯৭০ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে। পৃথিবীর অনেক দেশে বার্জারের ব্যবসা রয়েছে।

পুঁজিবাজারে নিবন্ধন

বার্জার পেইন্টস লিমিডেট ২০০৫ সালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) নিবন্ধিত হয়। গত বৃহস্পতিবার ডিএসইতে বার্জারের ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ারের দাম ছিল ১ হাজার ৫৩০ টাকা।

পণ্য

বার্জারের মূল্য ব্যবসা রং। বাড়ি, কাঠ, শিল্পকারখানা, নৌযান ইত্যাদি ব্যবহৃত নানা ধরনের রং উৎপাদন করে তারা। এ ছাড়া রয়েছে আঠা, নির্মাণ খাতে ব্যবহৃত রাসায়নিক ইত্যাদির ব্যবসা।

বছরে বিক্রি

২০১৬-১৭ ১৪৬২ কোটি ২০১৭-১৮ ১৬৪৮ কোটি ২০১৮-১৯ ১৭৭৩ কোটি (এপ্রিল-মার্চ হিসাব)

বাজার হিস্যা

রঙের বাজারে একচ্ছত্র আধিপত্য বার্জারের। বাজার জরিপ অনুযায়ী বার্জারের হিস্যা ৫০ শতাংশের মতো। এ খাতে দ্বিতীয় শীর্ষ কোম্পানির হিস্যা ২০ শতাংশের কম। সূত্র: প্রথম আলো

Tuesday, September 24, 2019

রং-এর ডিব্বা তৈরি করে শতকোটি টাকার মালিক নাসির

পড়াশোনা শেষে সৈয়দ নাসির যখন চাকরি খুঁজছিলেন, তখন আসে ব্যবসার সুযোগ। বার্জার পেইন্টসের এক কর্মকর্তার পরামর্শে চালু করেন রঙের ডিব্বা বা ক্যান তৈরির কারখানা। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সৈয়দ নাসিরের প্রতিষ্ঠান এখন বছরে শতকোটি টাকার বেশি পণ্য বিক্রি করে। তার এই উঠে আসার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে কয়েকটি ব্যাংক। ব্যাংকের ভালো গ্রাহক হিসেবে পরিচিত তিনি। এর মাধ্যমে সৈয়দ নাসির নিজে যেমন বড় হচ্ছেন, ব্যাংকের ব্যবসাও ঠিক তেমন বেড়েছে। 

যাঁরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে নিয়মিত শোধ করছেন, নতুন কিছু উৎপাদন করছেন, এমন ভালো গ্রাহকদের কয়েক মাস ধরেই খুঁজছিলাম। সেই খোঁজার অংশ হিসেবে যোগাযোগ করেছিলাম শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম শহীদুল ইসলাম ১৮ মিনিটের মধ্যেই খোঁজ দিলেন সৈয়দ নাসিরের। আর বললেন, ‘এমন গ্রাহককে অর্থায়ন করে আমাদের ব্যাংক গর্বিত। তাঁর কারখানার কর্মীদের বেতন তোলার জন্য আমরা এটিএম বুথও বসিয়েছি।’ 

সৈয়দ নাসিরের গল্প শুনতে গত বুধবার গিয়েছিলাম টঙ্গীতে তাঁর কারখানায়। প্রতিষ্ঠানের নাম কিউ পেইল লিমিটেড, যেটি টঙ্গী বিসিক শিল্পনগরে অবস্থিত। চট্টগ্রামে এক্সক্লুসিভ ক্যান নামে আরেকটি কারখানা রয়েছে। কারখানার ফটকেই সৈয়দ নাসিরের সঙ্গে প্রথম পরিচয়। পুরো কারখানা ঘুরে ঘুরে দেখালেন। আমদানি করা পলিথিলিন থেকে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছোট-বড় ক্যান। ৫৪ হাজার বর্গফুট এলাকার পুরো কারখানায় হাতের কোনো ছোঁয়া নেই, উৎপাদনের পুরো প্রক্রিয়াই হচ্ছে রোবটে। উৎপাদিত ক্যান চলে যাচ্ছে পেইন্টিং বিভাগে। ১৫ হাজার বর্গফুট এলাকায় তৈরি ক্যানে বসছে চাহিদামতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের রং ও স্টিকার। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের রঙের ছোট-বড় ক্যান, আইসক্রিমের বক্স, মবিলের ক্যান, ওষুধের বোতল—সবই তৈরি হচ্ছে তার কারখানায়। আগে এসব পণ্য আসত বিদেশ থেকে। এখন দেশেই তৈরি হচ্ছে। সৈয়দ নাসির বললেন, ‘কারখানায় ৬০০ কর্মী কাজ করেন। সবাই আমার পরিবারের সদস্য। কর্মীদের বিপদে আমি নিজেই এগিয়ে যাই। তাঁরা ভালো থাকলেই আমি ভালো থাকি।’ 

চাকরি খুঁজতে খুঁজতে উদ্যোক্তা

চাকরি খোঁজার উদ্দেশে ১৯৯১ সালে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসছিলেন সৈয়দ নাসির। ট্রেনেই পরিচয় হয় বার্জারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রেজাউল করিমের সঙ্গে। তিনি চাকরির পরিবর্তে ব্যবসার পরামর্শ দিলেন সৈয়দ নাসিরকে। রঙের ক্যান তৈরি করতে বললেন। চট্টগ্রামে ফিরে বার্জার অফিসে দেখা করতে গেলে রেজাউল করিম তাঁকে নিয়ে গেলেন সরকারের মালিকানাধীন বাংলাদেশ ক্যান কোম্পানিতে। যাঁরা ওই সময়ে টিনের ক্যান তৈরি করে বার্জারকে সরবরাহ করত। কারখানাটি ছিল আধুনিক ও ব্যয়বহুল। এরপর গেলেন এলিট পেইন্টে। এলিট থেকে এক কর্মীকে নিয়ে এলেন। তারপর বাবার দেওয়া ১ লাখ ২৫ হাজার টাকায় ছোট আকারে কারখানা করলেন চট্টগ্রামের মুরাদপুরে। ১৯৯২ সালে টিনের ক্যান তৈরি করে বার্জারকে দেওয়া শুরু করেন। এ নিয়ে সৈয়দ নাসির বলেন, ‘বাবার অবসরের টাকাই ছিল আমার ব্যবসার প্রথম মূলধন।’ 

 ব্যবসায় মোড় ঘুরিয়ে দেয় ব্যাংক 

কারখানা দেওয়ার পর ঋণের জন্য সৈয়দ নাসির যোগাযোগ করেন সোনালী ব্যাংকের পাঁচলাইশ শাখায়। ব্যাংকটির তৎকালীন এমডি লুৎফর রহমান সরকার তখন সার্টিফিকেট বন্ধক রেখে ঋণ দেওয়ার পদ্ধতি চালু করেছিলেন। এ কারণে সহজেই সোনালী ব্যাংক থেকে ৫ লাখ টাকা পেয়ে যান। আরও ১৫ লাখ টাকা পান প্লেজ (গুদামজাত পণ্যের বিপরীতে দেওয়া ঋণ) ঋণ হিসেবে। সৈয়দ নাসির বলেন, ‘সার্টিফিকেট বন্ধক রেখে ঋণপ্রথা চালু ছিল যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। এমন শতাধিক শিল্পপতি পাওয়া যাবে, যাঁরা ওই ঋণসুবিধা নিয়ে বড় হয়েছেন।’ 

১৯৯৬ সালে ভারতে যান টিনের ক্যান তৈরির আধুনিক প্রযুক্তি দেখতে। ১৯৯৯ সালে ৫৫ লাখ টাকা ঋণ পান সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক থেকে। ওই টাকায় কারখানার পাশে ৪ তলা ভবন কিনে নেন। সৈয়দ নাসির বলেন, ‘এ ঋণই আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। কারখানা বড় হয়ে যায়।’ ক্যানের নির্দিষ্ট ক্রেতা বার্জার, ফলে কোনো চিন্তাই ছিল না।’ 

তবে ওই সময়ে বার্জার পেইন্ট নিজেরাই ক্যান বানানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এতে বড় হোঁচট খান সৈয়দ নাসির, কারণ বার্জারই ছিল তাঁর পণ্যের একমাত্র ক্রেতা। পরে অন্য রং কোম্পানিতে ক্যান দেওয়া শুরু করেন। তখন সব কোম্পানির প্রধান কার্যালয় ছিল চট্টগ্রামে। 

ঢাকায় কারখানা স্থাপন

২০০০ সালের দিকে রোমানা রং ঢাকা থেকে কার্যক্রম শুরু করে। রোমানার বাহার নামে বিজ্ঞাপন এনে তারা ঢাকার বাজারও পায়। তার আগে সব রং কারখানার প্রধান কার্যালয় ছিল চট্টগ্রামে। ঢাকার বাজার ধরতে বার্জারও সাভারে কারখানা করে। এবার বার্জারের পরামর্শে সৈয়দ নাসির ঢাকার সাভারে কারখানা করেন। 

সৈয়দ নাসির বলেন, ‘আড়াই বছর চুক্তি শেষে বার্জার আর টিনের ক্যান নিতে চাইল না। তারা প্লাস্টিকের ক্যান তৈরি করতে বলল। বড় বিনিয়োগ, আমি পারলাম না। কারখানা বন্ধ করে ফিরে গেলাম চট্টগ্রামে। কিছুদিনের মধ্যে বুঝলাম, আমি হেরে গেলাম।’ 

বছরখানেকের মধ্যে আবারও ঢাকায় ফিরলেন। পুরান ঢাকার আল রাজ্জাক হোটেলে উঠলেন। শিখলেন প্লাস্টিকের ক্যান বানানো। এবার চট্টগ্রামে ফিরে প্লাস্টিকের ক্যান বানানো শুরু করলেন, সরবরাহ করলেন মুনস্টার রং কোম্পানিতে। এবার বার্জারও তার থেকে প্লাস্টিকের ক্যান নিতে শুরু করল, তা শুধু চট্টগ্রামের জন্য। 

২০০৩ সালে ঢাকায় এশিয়ান পেইন্ট চালু হলো। ওই সময়ে অনেক কোম্পানি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় চলে আসে। ২০০৭ সালে দ্বিতীয়বারের মতো ঢাকায় আসেন। এশিয়ান পেইন্টকে ক্যান দিতে টঙ্গী ব্রিজের কাছে কারখানা চালু করেন। ২০১০ সালে কারখানা স্থানান্তর করেন টঙ্গীর বিসিকে। এরপর সব রং কোম্পানি তার গ্রাহক হয়ে যায়। ওই সময়ে বৈশ্বিক রং উৎপাদক প্রতিষ্ঠান জটুন, নিপ্পন ও একজোনোবেল দেশে আসে। সৈয়দ নাসিরের মতে, ‘এতে আমার পণ্যের বাজার আরও বড় হয়। ওই সময় ওষুধ কোম্পানিগুলো আমাদের পণ্য নেওয়া শুরু করে।’ 

এখন টঙ্গী বিসিকের পাশেই নতুন কারখানা করছে প্রতিষ্ঠানটি। পাঁচতলায় ১ লাখ ২৫ হাজার বর্গফুট জায়গা। নির্মাণ শেষ পর্যায়ে, অক্টোবরেই চালু হবে। এটি নির্মাণ হচ্ছে সবুজ কারখানার সব শর্ত মেনে। 

ব্যবসা ও গ্রাহক

সৈয়দ নাসিরের ব্যবসা অন্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। তার প্রতিষ্ঠানে তৈরি হয় প্লাস্টিক ও টিনের ক্যান। এসব ক্যানে পেইন্ট ও স্টিকারও বসানো হয়। ঢাকার টঙ্গী ও চট্টগ্রামের মুরাদপুরে তাঁর কারখানা। রং উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলোই তার বড় ত্রেতা। এর মধ্যে অন্যতম হলো বার্জার, এশিয়ান পেইন্ট, নিপ্পন পেইন্ট, আর এ কে পেইন্ট, উজালা পেইন্ট, রেইনবো, একজোনোবেল, জটুন, ফেবিকল, এলিট পেইন্ট, মুনস্টার পেইন্ট। খাদ্য প্রস্তুত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোয়ালিটি আইসক্রিম, মিল্ক ভিটা, ওয়েল ফুড, আড়ং দুধ, এসিআই, ব্লুপ ও পোলার আইসক্রিমকে কনটেইনার সরবরাহ করেন তিনি। এর বাইরে ওষুধ খাতের রেডিয়েন্ট ফার্মা ও পপুলার ফার্মাকেও কিছু ওষুধের কনটেইনার দেন সৈয়দ নাসির। 

শাহজালাল ইসলামী, ব্র্যাক ও ইউনাইটেড ফাইন্যান্সের ঋণে চলে তাঁর ব্যবসা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৯৫ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিক্রি বেড়ে হয় ১১৪ কোটি টাকা। 

ঢাকায় কারখানায় শ্রমিক রয়েছেন ৬০০, চট্টগ্রামে ২০০। টঙ্গীর কারখানায় কর্মীদের বেতন হয় ব্যাংকের মাধ্যমে। তাঁদের জন্য কারখানার ভেতরেই রয়েছে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের এটিএম বুথ। সৈয়দ নাসির বলেন, ‘বেসরকারি ব্যাংক ব্যবসায়ীদের আশীর্বাদ। এসব ব্যাংক না হলে এত ব্যবসায়ী কখনোই তৈরি হতো না। আমার ক্ষেত্রেও তা–ই।’ 

তবে শেষ করেন এই বলে, ‘প্লাস্টিকের পণ্য তৈরি করছি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কী রেখে যাচ্ছি, এটা সব সময় আমাকে ভাবায়। কারণ এসব প্লাস্টিক তো কখনোই পচবে না।’

কুচিয়া রপ্তানিতে বছরে আয় ২০০ কোটি টাকা

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার সব্দলপুর গ্রামটির নাম পাল্টে গেছে। উপজেলা সদর থেকে আট কিলোমিটার পূর্বের গ্রামটির নাম এখন ‘কুঁচিয়ার গ্রাম’ হয়ে গেছে। এমন নাম হওয়াটা অমূলক না মোটেও। গ্রামের ১২৫ পরিবারকুঁচিয়া মাছের চাষের সঙ্গে যুক্ত। পিচ্ছিল, তেলতেলে ও আঁশবিহীন এ মাছ চাষে পরিবারগুলোর হাল ফিরেছে। ‘কুৎসিত’দর্শন প্রায় অপ্রচলিত মাছের চাষে সবল হয়েছে স্থানীয় অর্থনীতি।

২০১৫ সালে এসব গ্রামে কুঁচিয়ার চাষ শুরু। স্থানীয় একটি বেসরকারি সংগঠন ‘উন্নয়ন ’ তাদের উপকারভোগীদের মাধ্যমে চাষ শুরু করে। পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) ‘উদ্ভাবনীমূলক কৃষিজ উদ্যোগ’ প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় মানুষকে ঋণ দেয় উন্নয়ন। সংগঠনটির কর্মকর্তা তারিকুর রহমান বলছিলেন, পরিবারপ্রতি ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছিল। কাউকে কাউকে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হয়। সমস্ত পরিবার প্রথম বছরেই তাদের ঋণের টাকা ফেরত দিয়েছে।

সব্দলপুর গ্রামের পাশেই উজিরপুর গ্রাম। আশাশুনি ও কালীগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী এ গ্রামে এখন এক বিরাট বাজার বসে। কুঁচিয়ারই বাজার। এ দুই উপজেলা ছাড়াও জেলার অন্য উপজেলার কুঁচিয়া এখানে জড়ো হয়।

তালা উপজেলার প্রভাস মণ্ডল। পাঁচ বছর ধরে মাছ সংগ্রহ করে উজিরপুর বাজারে বিক্রি করেন। তিনি বলছিলেন, এখন প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা আয় হয়।

কুঁচিয়া চাষের সাফল্য কিন্তু দক্ষিণের এই প্রত্যন্ত এলাকাতেই আটকে নেই; শুধু পিকেএসএফই এখন দেশের ২১ জেলার ৩৩টি উপজেলায় কুঁচিয়া চাষে ঋণ দেয়।

পিকেএসএফের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জসিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘দরিদ্র মানুষের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্যই কুচিয়া চাষে উৎসাহ দিচ্ছি আমরা। এর লক্ষ্য স্থানীয় অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার।’

এক দশক ধরে বাণিজ্যিকভাবে কুঁচিয়া চাষের শুরু। তবে গত পাঁচ বছরে এ চাষের পরিমাণ বাড়ছে। দেশের অন্তত ৩০টি জেলায় এখন বাণিজ্যিকভাবে কুঁচিয়ার চাষ হচ্ছে। দেশে উৎপাদিত কুঁচিয়ার বেশির ভাগটাই রপ্তানি হচ্ছে। যাচ্ছে ইউরোপ ও এশিয়ার ২৩টি দেশে। জ্যান্ত ও শুকনো—দুই ধরনের কুঁচিয়া যাচ্ছে দেশ থেকে।

মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মুক্ত জলাশয়ে কুঁচিয়া উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ৩৬ মেট্রিক টন। ২০১৬-১৭ সালে এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৯৩ মেট্রিক টনের বেশি। আর সব মিলিয়ে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশে ১২ হাজার ৩৫৩ মেট্রিক টনের বেশি কুঁচিয়া উৎপাদিত হয়। ওই বছর বৈদেশিক মুদ্রা আসে ১৮৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা। পরের অর্থবছরে আরও ২০০ মেট্রিক টন বেশি উৎপাদিত হয়। আয় হয় ২০৪ কোটি ১ লাখ টাকা।

ইউরোপ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নানা দেশে কুঁচিয়ার চাহিদা প্রচুর। এ মাছের ঔষধিগুণও প্রচুর। রক্তশূন্যতা, অ্যাজমা ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে এ মাছের উপযোগিতা আছে। মৎস্য অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কুঁচিয়ার রক্ত খেলে শারীরিক দুর্বলতা ও রক্তশূন্যতা কমে।

প্রাকৃতিক পুকুর বা জলাশয় এবং বাড়িতে কংক্রিটের স্থাপনা বা ডিচ তৈরির মাধ্যমে দুভাবে কুঁচিয়ার চাষ হয়।

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে বেসরকারি সংগঠন হিড-বাংলাদেশের তত্ত্বাবধানে কুঁচিয়া চাষ হচ্ছে। সংগঠনটির কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, মাত্র ছয় মাসে ২০ কেজি কুঁচিয়া থেকে ২০ হাজার পোনা এবং ৫০ কেজি কুঁচিয়া উৎপাদিত হয়। এক কেজি কুঁচিয়ার বাজারমূল্য ৩০০ টাকার বেশি। চাষিরা মৌসুমে ২০ থেকে ৩০ হাজার এবং বাচ্চা কুঁচিয়া ১৫ টাকা দরে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা বিক্রি করছেন।

মিঠা ও লোনাপানি—এই দুই পানির কুঁচিয়া উৎপাদিত হয় দেশে। এর মধ্যে মিষ্টি কুঁচিয়ার দাম বেশি। কমলগঞ্জের এই কুঁচিয়া মিঠাপানির। তাই এর দাম বেশি। তবে লোনাপানির কুঁচিয়ার দাম কেজিপ্রতি ১২০ থেকে ১৩০ টাকা বলে ব্যবসায়ীদের কাছে থেকে জানা গেছে।

রাজধানীর উত্তরায় ১২ নম্বর সেক্টরের কাছে নলভোগ এলাকায় কুঁচিয়া ও কাঁকড়ার বড় বাজার। প্রতিদিন সকাল সাতটায় এ বাজার বসে। বাজার থেকে এখন প্রতি সপ্তাহে ৩০০ টন কুঁচিয়া বিক্রি হয় বলে জানান বাংলাদেশ লাইভ অ্যান্ড চিলড ফুড এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএলসিএফইএ) সভাপতি গাজী আবুল কাশেম।

বাংলাদেশের কৃষি বৈচিত্র্যময় হচ্ছে দিন দিন। কুঁচিয়ার এই সম্প্রসারণ এরই একটি নমুনা—এমনটাই মনে করেন পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, স্থানীয় অর্থনীতির বিকাশে এসব অপ্রচলিত চাষ ভূমিকা রাখছে। জমি ও পানির সদ্ব্যবহারেও এর ভূমিকা আছে। তবে এসব চাষের বিকাশে নীতি–সহায়তা দরকার। সূত্র প্রথম আলো

Monday, September 23, 2019

বিটকয়েন কি বাংলাদেশে বৈধ

সম্প্রতি বিটকয়েন আলোচনায় আসার কারণ মূল্যস্ফীতি। বিটকয়েনে যাঁরা বিনিয়োগ করেছিলেন, হঠাৎ করে তাঁদের সম্পদ বেড়েছে কয়েক শ গুণ। নিজের পরিচয় প্রকাশ না করেই এতে লেনদেন করা যায়। লেনদেন ব্যয়ও খুব কম। তবে সবচেয়ে বড় কারণটা হলো, বিটকয়েনে বিনিয়োগ করলে কয়েক গুণ লাভ হবে, এমন একটা ধারণা অনেকের মধ্যে আছে। এখনো অনেক দেশে মুদ্রা হিসেবে স্বীকৃতি না পেলেও জনপ্রিয়তা পাচ্ছে বিটকয়েন। ফলে অনেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিটকয়েনের জন্য নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। 

২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে বিশ্ব মুদ্রাবাজারে বিটকয়েনের আবির্ভাব ঘটে ডিজিটাল মুদ্রা হিসেবে। লেনদেন পুরোটাই ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে বা অনলাইনে; যদিও এটা কোনো দেশের বৈধ বা আনুষ্ঠানিক মুদ্রা নয়। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দেখলে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে আবারও বাড়তে শুরু করেছে বিটকয়েনের মূল্য। 

ব্লকচেইন স্টার্টআপে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ‘কেনেটিক ক্যাপিটাল’–এর সহপ্রতিষ্ঠাতা জিহান চু বলেন, দুটি বড় কারণে মূল্য বেড়েছে। এক. বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এমন ধারণা তৈরি হয়েছে যে বিটকয়েন হলো ডিজিটাল যুগের মানসম্পন্ন বৈধ সঞ্চয় মাধ্যম। দুই. ফেসবুকের লিব্রা ক্রিপটোকারেন্সি আনার ঘোষণা দেওয়ায় অনেকেই এখন ক্রিপটোকারেন্সিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। অবশ্য, তার আগে থেকেই ক্রিপটোকারেন্সি বা ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা বিটকয়েনের দাম ওঠানামা করছিল। তবে সেপ্টেম্বরে এসে বিটকয়েনের মূল্যমানে কিছুটা স্থিতি দেখা যাচ্ছে। এখন এ মুদ্রা ১০ হাজার মার্কিন ডলার থেকে ১১ হাজার মার্কিন ডলারে ওঠা–নামা করছে। দামের ওঠা–নামা নিয়ে অস্থিরতা থাকলেও বিটকয়েনের ভিত্তি কিন্তু যথেষ্ট শক্তিশালী। তবে ভয়ের ব্যাপার হচ্ছে, এই ক্রিপটোকারেন্সি বা টোকেনে বিনিয়োগের বিষয়টি অতিমাত্রায় অনুমাননির্ভর এবং বাজার অনিয়ন্ত্রিত। 

ব্লকচেইন ডটকমের তথ্য অনুযায়ী, বিটকয়েনের আনুমানিক লেনদেনের পরিমাণ জুলাই মাসের পর থেকে সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছেছে। ফেসবুক, জে.পি. মর্গ্যান ও ওয়ালমার্টের মতো প্রতিষ্ঠান ব্লকচেইন প্রযুক্তি ও ডিজিটাল মুদ্রার পথে হাঁটা শুরু করেছে। 

এখন দেখা যাক বাংলাদেশ পরিস্থিতি। দেশে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ইন্টারক্লাউডের প্রধান কারিগরি কর্মকর্তা (সিটিও) তানভীর এহসানুর রহমান বলেন, ক্রিপটোকারেন্সি চালু করার আগে যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কথা ভাবছে বিভিন্ন দেশ। আমাদের দেশে এখনো এটি বৈধ নয়। তবে নির্দিষ্ট নিয়মনীতির ভেতরে এনে এটি চালু করা যেতে পারে। 

বিটকয়েনের মূল প্রযুক্তি ব্লকচেইন। দেশে ব্লকচেইন নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ই–জেনারেশনের চেয়ারম্যান শামীম আহসান বলেন, ‘আমাদের জন্য কিছুটা ভালো খবর হচ্ছে, সরকার আধুনিক প্রযুক্তির বিষয়গুলো অনুধাবন করতে পারছে। এ কারণে ব্লকচেইনের মতো বিষয়গুলো নিয়ে সীমিত আকারে কাজ শুরু হচ্ছে। আমাদের রিটেইল, ভূমি ব্যবস্থাপনা, গ্রাহক, জন্মনিবন্ধন থেকে নানা কাজে ব্লকচেইন প্রযুক্তি কাজে আসবে। ব্লকচেইন প্রযুক্তির হাত ধরেই আসবে ক্রিপটোকারেন্সির কথা। তবে আধুনিক প্রযুক্তির সবকিছু সচেতনভাবে গ্রহণ করতে হবে। দেশের জন্য এটা বড় সুযোগ হয়ে আসতে পারে। বিনিয়োগ আনার একটি সুযোগ হিসেবে দেখতে পারলে স্টার্টআপ ও উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সুফল বয়ে আনতে পারে। তবে এর বিপরীত চিত্র হচ্ছে, অনেকেই জুয়ার মতো এটাকে কাজে লাগাতে পারে। এ ছাড়া প্রতারণার বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হবে।’ 

বিটকয়েনের লেনদেন সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না বলে মাদক চোরাচালান ও অর্থপাচার কাজেও এর ব্যবহারে আশঙ্কা রয়েছে। ডিজিটাল মুদ্রা হিসেবে জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মুদ্রার বিপরীতে এর দরের মারাত্মক ওঠা–নামা, দুষ্প্রাপ্যতা এবং ব্যবসায়ে এর সীমিত ব্যবহারের কারণে অনেকেই এর সমালোচনা করেন। সূত্র: প্রথম আলো

মাছে বিশ্বে অষ্টম বাংলাদেশ

স্টাফ রিপোর্টার: মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) মৎস্য সম্পদের অবদান এখন ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। দেশের জিডিপিতে খাতটি অবদান তো রাখছেই, পাশাপাশি বিশ্বেও একটি ভালো অবস্থানে নিজেকে নিয়ে গেছে বাংলাদেশ। 

মৎস্য সম্পদ (মাছ, আবরণযুক্ত জলজ প্রাণী ও শামুক) উৎপাদনের দিক থেকে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের অষ্টম স্থানে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) সূত্রে এই তথ্য পাওয়া গেছে। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্ট ইউনিট (ইইইউ) ওয়ার্ল্ড ইন ফিগার নামের একটি নিয়মিত প্রকাশনায় এই তথ্য দেওয়া হয়েছে। সব তথ্য ২০১৭ সালের।

অনেক মানুষ, বড় দেশ। অর্থাৎ মৎস্য সম্পদ উৎপাদনে চীনের অবস্থান সবার ওপরে। চীনের উৎপাদন ৬২.২ মিলিয়ন বা ৬ কোটি ২২ লাখ টন। এরপরই রয়েছে ইন্দোনেশিয়া, তাদের উৎপাদন ১ কোটি ২৮ লাখ টন। এরপর আছে যথাক্রমে ভারত, ভিয়েতনাম, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও পেরু। আর অষ্টম স্থানে থাকা বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদ উৎপাদনের পরিমাণ ৪১ লাখ টন। ৯ম থেকে ২০তম স্থানে থাকা দেশগুলো হলো জাপান, নরওয়ে, মিয়ানমার, চিলি, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, মেক্সিকো, দক্ষিণ কোরিয়া, মিসর, মালয়েশিয়া, মরক্কো ও ব্রাজিল।