newsbdd.blogspot.com। দেশের উন্নয়ন মূলক কার্যক্রম। কোটিপতি হওয়ার গল্প, সাফল্য, নিউজ, খবর, সংবাদ, হিরো, শীর্ষ।
Thursday, October 3, 2019
Wednesday, October 2, 2019
হোটেল ‘স্টার’–এর উত্থানের গল্প
উনিশ শ আশির দশক। দেশে বেসরকারি ব্যাংকব্যবস্থা সবে বেড়ে উঠছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগ থেকে আটাশিতে মাস্টার্স পাস করে মীর আখতার উদ্দীনও চেয়েছিলেন, বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করবেন। করপোরেট জগতের গ্ল্যামার আর ঝাঁ–চকচকে অফিস খুব টানত তাঁকে। কিন্তু বাদ সাধলেন বাবা; বসিয়ে দিলেন পারিবারিক বেকারি ও রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়। ২০১৯ সালে এসে ঢাকায় তাঁর আটটি রেস্টুরেন্ট; প্রতিটিতেই পরিপাটি অফিস। একজন মীর আখতার উদ্দীনকে কেউ নামে না চিনলেও তাঁর স্টার কাবাব, বেকারি বা রেস্টুরেন্ট চেনে না এমন মানুষ ঢাকায় কমই মিলবে।
এলিফ্যান্ট রোডের স্টার কাবাব ও রেস্টুরেন্টের ১১ তলায়, গোছানো অফিসে বসেই কথা হচ্ছিল মীর আখতার উদ্দীনের সঙ্গে। অফিস যতই চকচকে হোক, তিনি মানুষটা সাদামাটা; তাই প্রথমেই অনুরোধ, তিনি আসতে চান না ব্র্যান্ডিংয়ের বলয়ে, প্রচারে আর আলোয়; বরং কাজকে এগিয়ে নিয়ে তিনি নিজেকে রাখতে চান নেপথ্যের নিভৃত যতনে।
আখতার উদ্দীন শুরু করেন তাঁর গল্প, ‘আমরা জন্মেছি, বড় হয়েছি একটি বেকারির মধ্যে। ফোল্ডার স্ট্রিটে আমাদের বাসার নিচেই ছিল বেকারি, ঠাটারীবাজারে দাদার একটা ছোট খাবারের দোকান ছিল। সেটার উল্টো পাশে বাবা মীর মমতাজ উদ্দীন শুরু করেন তাজ বেকারি। ১৯৬৫ সালের কিছু আগে বাবা করাচি থেকে চা বানানোর এক নতুন কৌশল শিখে আসেন। সেই কৌশল এত জনপ্রিয় হলো যে সোসাইটি নামে একটি হোটেলই দাঁড়িয়ে গেল রাতারাতি।’
তবে সেই হোটেল খুব দ্রুত হাতছাড়া হয়ে যায় পারিবারিক সম্পত্তি ভাগাভাগিতে। ১৯৬৫ সালে ঠিক উল্টো পাশের বাড়িটি ভাড়া করে মমতাজ উদ্দীন শুরু করলেন স্টার হোটেল। ইংরেজি নামের দোকানের চল তখন নতুন, স্টার নামটা খুব মন ধরল মমতাজ উদ্দীনের। তখনো ১৯৬৪ হিন্দু–মুসলমান দাঙ্গার ক্ষত দগদগে। মমতাজ সিদ্ধান্ত নিলেন, তাঁর হোটেল হবে সব ধর্মের মানুষদের জন্য, ‘সেই থেকে আজও স্টার চলছে গরুর মাংসের কোনো পদ ছাড়া’। এভাবে ইতিহাসের পথে হাঁটলেন আখতার।
স্বাধীনতার আগেই জয়কালী মন্দিরের কাছাকাছি জায়গা কিনে তৈরি হলো হোটেল সুপার। আখতার জানালেন, ‘বাবা ক্রমান্বয়ে এগোচ্ছিলেন। আটাশিতে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিন্যান্স থেকে পাস করার পর বাবা তাই আমাকে চাকরি করতে দিতে চাননি। বলেছিলেন চাকরির চেষ্টা বাদ দিয়ে ব্যবসায় মন দিতে। দেওয়া হয় ফোল্ডার স্ট্রিটের তাজ বেকারির দায়িত্ব। পরে প্রীতম ভবনের নিচের ফ্লোরের বেকারির দায়িত্বও বর্তায়। তাই সকালে তাজ আর বিকেলে প্রীতম ভবন—এভাবেই চলছি। মাস দুয়েক বেগার খাটার পর বাবাই বেতন দিতে মনস্থ করলেন। ধার্য হলো মাসিক দুই হাজার টাকা। প্রথমটায় ঠিক মন ওঠেনি, পরে অবশ্য বেতন বাড়িয়েছেন বাবা, হাসতে হাসতে যোগ করেন আখতার।
শুরুতে খুব একটা ভালো না লাগলেও বেকারির সৌরভ মৌতাত বোনে। বিশেষ করে জন্মদিনের ক্রিম দেওয়া কেকটা বেশ মনে ধরে যায় তাঁর। ক্রমেই নিজেকে অভিযোজিত করে নেন বেকারি আর রেস্তোরাঁ ব্যবসা আর ব্যবস্থাপনায়। পঁচানব্বই সালে এসে বাবা–ছেলে মিলে কারওয়ান বাজারে তৈরি করলেন হোটেল সুপার স্টার। খাওয়ার সঙ্গে থাকার ব্যবস্থাও। ঠিক সুপারের মতোই। এরপর একে একে ধানমন্ডি, সাতমসজিদ রোড, বনানী, এলিফ্যান্ট রোড, সবশেষে জনসন রোডে...ডালপালা ছড়িয়েই চলছে স্টারের বেকারি, কাবাব ও রেস্টুরেন্ট।
সময়ের হিসাব করলে স্টার বেকারি, কাবাব ও রেস্টুরেন্টের বয়স ৫৪ বছর; এত দিনেও কেন পা রাখেননি ঢাকার বাইরে? প্রশ্ন শুনেই সুখী মানুষের হাসি হাসেন আখতার। বলেন, ‘আমরা আসলে নিজেদের জমির ওপর ছাড়া নতুন শাখা খুলতে চাই না, আমাদের আগুন-পানি নিয়ে কাজ, বাণিজ্যিক ভবনের সুযোগ-সুবিধা ছাড়া শুরু করতে চাই না। সম্পূরক প্রশ্ন আসে, দেশের বাইরে? সেই জবাব অবিকল। তবে পরবর্তী প্রজন্ম যদি চায়, চাইলে সেটা হতে পারে। কিন্তু আমার কোনো ইচ্ছে নেই দেশের বাইরে যাওয়ার।’
এলিফ্যান্ট রোডে স্টারের সবচেয়ে ওপরের তলাটাজুড়ে স্টারের রান্নাঘর। আখতার উদ্দীনের সঙ্গী হই আমরা। ঘুরিয়ে দেখান সবকিছু। সঙ্গে চলে ধারাবর্ণনা। জানান, শুধু কাবাব অংশ নিচে, বাকি পুরো রান্নাই এই রান্নাঘরে হয়। প্রতিটা শাখারই নিজের একটি করে রান্নাঘর আছে। বিশাল সেই রান্নাঘরে ঢুকতেই ঘ্রাণেন্দ্রিয় ঠিকই চিনে নেয় স্টারের চিরচেনা কাচ্চি, লেগ রোস্টের সুবাস; বিশাল ডেকচিতে ঠন ঠন শব্দ তুলে একদল মাংসে মসলা মাখাচ্ছে; অন্যদিকে কেউবা পেঁয়াজ কাটছে; সারি ধরে ১৭টি উনুন। কোনোটায় দুধ জ্বাল দেওয়া হচ্ছে, কোনোটায় বসেছে কাচ্চি। রাঁধুনিদের বিশাল বাহিনী থাকলেও মূল বাবুর্চি মাত্র চারজন; রন্ধনের আধুনিক অভিধানে যাঁরা মাস্টারশেফ। বাকিরা সহযোগী। শুধু এই রান্নাঘরেই প্রতিদিন আদা-রসুন বাটা হয় ৮০ কেজির মতো; এ থেকেই বোঝা যায় প্রতিদিনের রান্নার পরিমাণ!
বাজারের প্রসঙ্গে আবার ফিরে যান পুরোনো কথায়। মুক্তিযুদ্ধের পরপর যখন দেশে চরম খাদ্যাভাব, বেকারি ব্যবসার কাঁচামাল জোগাড় করতে হিমশিম খেতেন আখতারের বাবা মমতাজ উদ্দীন। ‘তখন নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি ময়দা, চিনি, তেলের সরবরাহ পাওয়া যেত না; বাবা সকাল সকাল উঠে চলে যেতেন, কখনো কখনো সারা দিন লেগে যেত লম্বা লাইন পার হয়ে কাঁচামাল সংগ্রহে। তাই দিয়েই টিকে থাকতে হতো বাজারে।’
অনেক পথ পাড়ি দিয়ে অনেকগুলো বছর কাচ্চির বাজারে প্রায় একচেটিয়া বাণিজ্যের পর এসেছে অনেক প্রতিযোগী; এ নিয়ে কিছু চিন্তিত হলেও আখতার উদ্দীন খুব বদল চান না ব্যবসাকৌশলে। বরং বললেন, ‘আমি আসলে খুব বেশি কিছু চাই না। আমরা মূলত মধ্যবিত্তদের কাছে পৌঁছাতে চাই। তাদের সাধ্য অতিক্রান্ত হোক, এটা কখনো চাই না আমরা।’
শুধু মধ্যবিত্ত না, নিম্নবিত্তদের জন্যও খোলা স্টারের আটটি শাখার দুয়ার। মাত্র ৩৫ টাকার বিনিময়ে সেখানে পেটচুক্তিতে ভাত, ডালের সঙ্গে একটি আমিষ তরকারি পরিবেশন করা হয়। সেখানে প্রতিদিন মাছ, ডিম বা গিলা-কলিজার কোনো এক পদ পরিবেশন করা হয়। বনানীতে আলাদা এক হাজার স্কয়ার ফুটের জায়গা রাখা হয়েছে এই খাবার পরিবেশনের জন্য। আখতার বলেন, ‘এই ব্যবস্থাটা বাবাই শুরু করেছিলেন। খাবারের দোকানে ক্ষুধার্ত মানুষের জায়গা হবে না, তা কি হয়? বনানীর মতো খরচের জায়গায় সাধারণ মানুষের সামর্থ্যে খাবার জোগাড় করা অনেক কঠিন, সেখানে অনেক সময় শিক্ষার্থীদেরও দেখা যায় এসে খেতে।’
পারিবারিক ব্যবসা খাবারের হলেও লেখাপড়ার বিষয়েও খুব সজাগ ছিল আখতার উদ্দীনদের পুরো পরিবার। চার বোন, এক ভাই প্রত্যেকেই লেখাপড়া করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এক বোন শুধু সরকারি চাকুরে, বাকি সবাই আছেন রেস্টুরেন্ট নয়তো বেকারি ব্যবসায়। সবটাই চলে অভিন্ন ব্যবস্থাপনায়।
বাবার অভিজ্ঞতার সঙ্গে নিজের অর্জিত জ্ঞান। তা দিয়েই এই সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটিয়েছেন। তবে ভবিষ্যৎ হয়তো অন্য পথে চলবে। যার পুরোটার নিয়ন্ত্রণও তাঁর নিজের হাতে নেই। কারণ, উত্তর প্রজন্ম হাল ধরবে। তা নিয়েই তিনি মানসিকভাবে প্রস্তুত। বললেন, ‘বড় ছেলে অস্ট্রেলিয়া থেকে মাত্র বিবিএ পাস করল; ইচ্ছে আছে ছোট ছেলেকে হোটেল ম্যানেজমেন্টে পড়ানোর; বোনদের সন্তানেরাও বড় হচ্ছে। তারা যখন হাল ধরবে সময় আরও বদলাবে। সময়ই বলবে স্টার কোথায় যাবে। আপাতত আমি বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের বাজার নিয়ে আশাবাদী আর তৃপ্ত। সবাই মিলে কাজ করলে আমরাও এগোব; আর দেশও।’ সূত্র: প্রথম আলো
Tuesday, October 1, 2019
মোটরসাইকেল উৎপাদনে কার কত অবদান
বাজাজ
দেশের মোটরসাইকেলের বাজারে সবচেয়ে বেশি হিস্যা ভারতের বাজাজ ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলের। বাংলাদেশে এই ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল বাজারজাত করে উত্তরা মোটরস লিমিটেড, যার চেয়ারম্যান মতিউর রহমান।
উত্তরা মোটরস যাত্রা শুরু করে ১৯৭২ সালে। প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন মতিউর রহমানের বড় ভাই প্রয়াত মোখলেসুর রহমান। ১৯৮৫ সালের দিকে উত্তরা মোটরস বাজাজের মোটরসাইকেল বাংলাদেশে আনা শুরু করে।
এখন দেশেই বাজাজের মোটরসাইকেল উৎপাদিত হচ্ছে। ২০১৮ সালের মাঝামাঝিতে উত্তরা মোটরস সাভারের জিরানিতে তাদের নতুন কারখানায় মোটরসাইকেল উৎপাদন শুরু করে। সেখানে এখন তিনটি জনপ্রিয় মডেল বাজাজ পালসার, ডিসকভার ও প্লাটিনা উৎপাদিত হচ্ছে। শিগগিরই শুরু হবে সিটি ১০০ ও ডিসকভার ১১০ মডেলের মোটরসাইকেলের উৎপাদন।
জিরানিতে বাজাজের কারখানাটির নাম ট্রান্স এশিয়া ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। এতে কাজ পেয়েছেন প্রায় ৪৮০ জন। উত্তরা মোটরস বাজাজের মোটরসাইকেল ও অটোরিকশা ছাড়াও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বাণিজ্যিক যানবাহন, গাড়ি ও টায়ার বাজারজাত করে। এ ছাড়া তাদের নানা ব্যবসা রয়েছে।
ভারতে বাজাজের প্রতিষ্ঠা ১৯২৬ সালে। বাজাজের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানিটি ভারতের সেরা ১০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের একটি। বিশ্বে তিন চাকা ও দুই চাকার যানবাহন উৎপাদনে তারা চতুর্থ।
জনপ্রিয়তায় কম যায় না টিভিএস
বাংলাদেশের মোটরসাইকেল বাজারের হিস্যায় দ্বিতীয় অবস্থানে ভারতীয় ব্র্যান্ড টিভিএস। দেশে টিভিএস ব্র্যান্ডের বাজারজাত করে সনি-র্যাংগস গ্রুপ।
এখন দেশেই মোটরসাইকেল উৎপাদন করছে টিভিএস। সনি-র্যাংগসের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান রিয়ান মোটরস ও ভারতের টিভিএস অ্যান্ড সন্সের যৌথ উদ্যোগের কোম্পানির নাম টিভিএস অটো বাংলাদেশ লিমিটেড। তাদের কারখানা গাজীপুরের টঙ্গীতে।
ভারতীয় এই ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল ২০০৭ সাল থেকে বাংলাদেশে বাজারজাত করছে দেশীয় সনি-র্যাংগস গ্রুপ। টিভিএস অটো বাংলাদেশ জানায়, টিভিএসের মূল প্রতিষ্ঠান টিভিএস অ্যান্ড সন্স ১৯১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, টিভিএস ভারতের তৃতীয় শীর্ষ দুই চাকার যান উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তারা ১৫ হাজার কোটি রুপির পণ্য বিক্রি করেছে।
একসময় জাপানের সুজুকির সঙ্গে ভারতে যৌথ উদ্যোগের কারখানা ছিল টিভিএসের। পরে সুজুকি আলাদা হয়ে যায়।
টিভিএস অটো বাংলাদেশের বিপণন বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক আশরাফুল হাসান বলেন, বিগত কয়েক বছরে সরকার করছাড় ও অন্যান্য সহায়তা দিয়ে মোটরসাইকেল শিল্প গড়ে উঠতে সহায়তা করেছে। এর সুফল পেয়েছে দেশের মানুষ। তবে চলতি বাজেটে মূল্য সংযোজন করের (মূসক/ভ্যাট) কারণে চাপ তৈরি হয়েছে।
উৎপাদনে সবার আগে হিরো
ভারতের মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিরো মোটোকর্পের হিরো ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলও বাংলাদেশে জনপ্রিয়। এ দেশে হিরো ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল বাজারজাত করে নিলয় মোটরস, যেটি নিটল-নিলয় গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান।
বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে হিরোই বাংলাদেশে সবার আগে উৎপাদন শুরু করে। নিটল-নিলয় গ্রুপের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশে কারখানা করেছে হিরো মোটোকর্প। কারখানাটি যশোরে, যেটি বছরে দেড় লাখ মোটরসাইকেল উৎপাদন করতে সক্ষম। কোম্পানির নাম এইচএমসিএল নিলয় বাংলাদেশ লিমিটেড।
ভারতে হিরো আগে সাইকেল উৎপাদন করত। ১৯৮৪ সালে জাপানের হোন্ডা মোটর করপোরেশন হিরোর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে মোটরসাইকেল উৎপাদনের কারখানা করে। তাদের ব্র্যান্ড নাম ছিল হিরো-হোন্ডা। ২০১০ সালে হোন্ডা অংশীদারত্ব বিক্রি করে দেয়, যা কিনে নেয় হিরো। এরপর তারা নিজেরাই হিরো ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল বাজারজাত শুরু করে। হিরোর ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভারতের মোটরসাইকেল বাজারে তাদের হিস্যা সবচেয়ে বেশি।
এইচএমসিএল নিলয় বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা বিজয় কুমার মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের কারখানা ২০১৭ সালের জুনে যাত্রা শুরু করে। বিদেশি ব্র্যান্ডের মধ্যে তাঁরাই এ দেশে কারখানা করেছেন। এ কোম্পানিতে মোট বিনিয়োগ ৩২৫ কোটি টাকা। আর কারখানায় হিরোর অংশীদারত্ব ৫৫ শতাংশ, বাকিটা নিলয়ের।
কারখানা করে হোন্ডা দৌড়াচ্ছে
জাপানের হোন্ডা মোটর করপোরেশন বাংলাদেশে মোটরসাইকেল উৎপাদন শুরুর পর এ দেশে তাদের ব্যবসা দ্রুত বাড়ছে। মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় বেসরকারি আবদুল মোনেম ইকোনমিক জোনে ২৫ একর জমিতে হোন্ডা বাংলাদেশ লিমিটেডের (বিএইচএল) কারখানা যাত্রা শুরু করে গত বছরের নভেম্বর মাসে।
এ কারখানায় আপাতত বছরে এক লাখ মোটরসাইকেল উৎপাদনের সক্ষমতা তৈরি করেছে হোন্ডা, যা ২০২১ সালে দুই লাখে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
বিশ্বের ১৬০টি দেশে ব্যবসা করে হোন্ডা মোটর করপোরেশন। এশিয়া ও ওশেনিয়া অঞ্চলের ১০টি দেশে তাদের কারখানা রয়েছে। প্রতিবেশীদের মধ্যে ভারত, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের পর বাংলাদেশে কারখানা করেছে হোন্ডা।
হোন্ডা কারখানাটি করেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল শিল্প সংস্থার (বিএসইসি) সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে। নতুন কারখানায় হোন্ডার বিনিয়োগ ১৯০ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। আর বিএসইসির বিনিয়োগ ১০৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। ভবিষ্যতে মোট বিনিয়োগ বেড়ে ৬৮০ কোটিতে উন্নীত হবে। কর্মসংস্থান হবে দুই হাজার মানুষের।
বিএইচএলের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা শাহ মোহাম্মদ আশিকুর রহমান বলেন, কারখানা ও প্রধান কার্যালয় মিলিয়ে হোন্ডায় কাজ পেয়েছেন প্রায় ৪৫০ জন। দেশে উৎপাদনের ফলে হোন্ডা ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলের দাম কমেছে। ক্রেতাদের কাছে সহজলভ্য হয়েছে।
ইয়ামাহাও এখন বাংলাদেশে
বাংলাদেশেই জাপানের সুপরিচিত ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল সংযোজনের কারখানা করেছে এসিআই মোটরস। শুধু সংযোজন নয়, একই কারখানায় ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল উৎপাদনের প্রস্তুতিও চলছে।
এসিআই কারখানাটি করেছে গাজীপুরের শ্রীপুরে। কারখানার জমির মোট পরিমাণ ৬ একর। এসিআই বাংলাদেশে ইয়ামাহা মোটরসাইকেলের একমাত্র পরিবেশক। কারখানাটি করতে এসিআইকে কারিগরি সহায়তাও দিচ্ছে ইয়ামাহা। জানতে চাইলে এসিআই মোটরসের নির্বাহী পরিচালক সুব্রত রঞ্জন দাস বলেন, ইয়ামাহা এই প্রথম কোনো প্রতিষ্ঠানকে তাদের মোটরসাইকেল উৎপাদনের কারখানা করতে দিয়েছে। ২০১৬ সালে এসিআই যখন ইয়ামাহার পরিবেশক হিসেবে দায়িত্ব পায়, তার আগে দেশে বছরে ছয় হাজারের মতো ইয়ামাহা মোটরসাইকেল বিক্রি হতো। এ বছর সেটা ২৫ হাজার ছাড়াবে বলে আশা করছে এসিআই।
ইয়ামাহা মোটর করপোরেশন ১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠিত। কোম্পানিটির বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ সালে তাদের মোট বিক্রির পরিমাণ ১ লাখ ৬৭ হাজার কোটি জাপানি ইয়েন, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটির মোট আয়ের ৬১ শতাংশ আসে মোটরসাইকেল ও এর যন্ত্রাংশ বিক্রি করে।
সুব্রত রঞ্জন দাস আরও বলেন, সম্প্রতি তাঁরা একটি জরিপ করে দেখেছেন, সিংহভাগ মানুষের পছন্দ ইয়ামাহা মোটরসাইকেল। দাম নাগালে এলে তারা ইয়ামাহাই কিনবে।
সুজুকির বাজারও দ্রুত বাড়ছে
মোটরসাইকেলের আরেকটি জনপ্রিয় জাপানি ব্র্যান্ড সুজুকিও উৎপাদিত হয় বাংলাদেশেই। এ দেশে সুজুকির পরিবেশ কর্যানকন মোটর বাইক লিমিটেড (আরএমবিএল)। সুজুকি ও র্যানকন মিলে গাজীপুরে কারখানা করেছে।
নিজেদের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, র্যানকন মোটর বাইক ২০১৩ সালে যাত্রা শুরু করে। তখন তাদের কর্মী ছিল মাত্র তিনজন। সুজুকির মোটরসাইকেলের প্রথম চালানটি দেশে আসার আগেই অগ্রিম বিক্রি হয়ে যায়। ২০১৮ সালে আরএমবিএলের কর্মী সংখ্যা দাঁড়ায় ২৯০ জনে, বাজারে জনপ্রিয় ব্র্যান্ডে পরিণত হয় সুজুকি।
সুজুকি মোটর করপোরেশন জাপানের বহুজাতিক ব্র্যান্ড। তারা মোটরসাইকেল ছাড়াও গাড়ি ও নানা ধরনের ইঞ্জিন তৈরি করে। এটি ১৯০৯ সালে জাপানে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫২ সালে সুজুকি প্রথম মোটরযুক্ত বাইসাইকেল তৈরি করে।
সুজুকি বাংলাদেশ ও র্যানকন মোটরবাইক জানিয়েছে, বাংলাদেশে তাদের কারখানায় জমির পরিমাণ ৩৭ একর। এটি দেশের সবচেয়ে বড় মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী কারখানা। এতে এখন পর্যন্ত বিনিয়োগ করা হয়েছে ৪৫০ কোটি টাকা।
সুজুকি বাংলাদেশ ও র্যানকন মোটরবাইক আরও জানায়, তাদের কোম্পানিতে এখন দেড় হাজারের মতো মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এটা প্রত্যক্ষ ও পরো হিসাব। ভবিষ্যতে তা আরও বাড়বে। কোম্পানিটি ভবিষ্যতে ৭৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগের লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে।
একমাত্র দেশীয় ব্র্যান্ড রানার
দেশীয় ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলের মধ্যে একমাত্র নাম রানার। ২০১২ সালে রানার অটোমোবাইলস রানার ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল বাজারজাত শুরু করে। ময়মনসিংহের ভালুকায় নিজস্ব কারখানায় এ কোম্পানি মোটরসাইকেল উৎপাদন করছে।
রানার বিভিন্ন ইঞ্জিন ক্ষমতার মোটরসাইকেল তৈরি করে। দেশের বাজারে বিক্রির পাশাপাশি বর্তমানে নেপাল ও ভুটানে রপ্তানি হচ্ছে রানারের মোটরসাইকেল। এ ছাড়া তারা শ্রীলঙ্কা ও আফ্রিকার কয়েকটি দেশে রপ্তানির সম্ভাবনা যাচাই করছে।
দেশে প্রথমবারের মতো ১৬৫ থেকে ৫০০ সিসির (ইঞ্জিন ক্ষমতা) মোটরসাইকেল উৎপাদনের অনুমোদন পায় রানার। গত বছর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তাদের এ অনুমোদন দেয়।
মোটরসাইকেল বাজারে রানারের যাত্রা ২০০০ সালে। ওই বছর তারা আমদানি করা মোটরসাইকেল দেশে বাজারজাত করতে শুরু করে। কয়েক বছর পর প্রতিষ্ঠানটি মোটরসাইকেলের যন্ত্রাংশ সংযোজন শুরু করে। ২০০৭ সালে ময়মনসিংহের ভালুকায় দেশে প্রথম মোটরসাইকেলের বিভিন্ন অংশ বা কম্পোনেন্ট তৈরির মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে মোটরসাইকেল উৎপাদন শুরু করে। পূর্ণাঙ্গ মোটরসাইকেল তৈরির কারখানা হিসেবে রানারের যাত্রা শুরু হয় ২০১২ সালে। এখন তারা ১৪টি মডেলের মোটরসাইকেল তৈরি করছে।
রানার জানায়, তাদের মোটরসাইকেল কারখানায় মোট বিনিয়োগ ৪০০ কোটি টাকার মতো। রানার অটোমোবাইলে কর্মীর সংখ্যা ১ হাজার ২০০–এর মতো। সূত্র: প্রথম আলো
Monday, September 30, 2019
২০২৩ সালে মোটরসাইকেলের বিক্রি দাঁড়াবে ১০ লাখ: মতিউর রহমান
মোটরসাইকেল বিপণনকারী কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশের মোটরসাইকেল অ্যাসেম্বলার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার অ্যাসোসিয়েশনের (বিমামা) সভাপতি মতিউর রহমান। তিনি উত্তরা মোটরসের চেয়ারম্যান। বাংলাদেশের মোটরসাইকেল শিল্পের যাত্রা নিয়ে কথা বলেছেন এবং বাণিজ্যের সঙ্গে।
বাংলাদেশে ভারতীয় ও জাপানি মোটরসাইকেল ব্র্যান্ডগুলো যৌথ উদ্যোগ অথবা কারিগরি সহায়তা দিয়ে কারখানা করছে। সার্বিকভাবে খাতের পরিস্থিতি কী?
মতিউর রহমান: মোটরসাইকেলের বাজার বড় হচ্ছে। এখন বছরে পাঁচ লাখের কাছাকাছি মোটরসাইকেল বিক্রি হয়। এটা ২০২৩ সাল নাগাদ ১০ লাখে উন্নীত হবে বলে আমরা আশা করি। এখন কোম্পানিগুলো নিজেদের বিক্রির পরিমাণ বাড়াতে মূল্যে অনেক ছাড় দিচ্ছে। ফলে মানুষ সাশ্রয়ী মূল্যে মোটরসাইকেল কিনতে পারছে। আমরা যেটুকু শুল্কছাড় পেয়েছি, দাম কিন্তু তার চেয়ে বেশি কমেছে। বাজারে এ প্রতিযোগিতার কারণ, পরিমাণে না বাড়লে কেউ বিনিয়োগের বিপরীতে মুনাফা অর্জন করতে পারবে না।
মোটরসাইকেল–শিল্পের উন্নয়নে এখন জরুরি কী?
মতিউর রহমান: এখন দরকার সহযোগী শিল্প বা ভেন্ডার উন্নয়ন। ভারতে বড় ব্র্যান্ডগুলো এখন মূলত মোটরসাইকেল সংযোজন করে। তাদের জন্য মোটরসাইকেলের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরি করে সহযোগী শিল্প। বাংলাদেশে আমরা ভেন্ডারদের আনার চেষ্টা করছি। তাদের বলছি, এখন সরকার মোটরসাইকেলশিল্পের উন্নয়নে নানা সহায়তা দিচ্ছে। পাঁচ বছর পরে কিন্তু এই মনোভাব না–ও থাকতে পারে। তাই এখন এলে যেসব সুবিধা পাওয়া যাবে, সেটা পরে মিলবে না। সমস্যা হলো বাংলাদেশের বাজার ছোট। বড় না হলে ভেন্ডারদের আকর্ষণ করা যাবে না। অবশ্য মোটরসাইকেল বাড়লে খুচরা যন্ত্রাংশেরও একটি বড় বাজার তৈরি হবে। সেদিকেও তারা নজর দিতে পারে।
মোটরসাইকেলের বাজার যে বাড়ছে, এটা কারণ কী কী?
মতিউর রহমান: প্রথমত, দাম কমেছে বলে মানুষের নাগালের মধ্যে এসেছে। আগে একটি পালসার মোটরসাইকেল ২ লাখ ১০ হাজার টাকা ছিল। এখন সেটা ৪০ হাজার টাকা কম। দ্বিতীয় কারণ, দেশে গ্রামগঞ্জে রাস্তাঘাটের উন্নতি হয়েছে। মানুষের আয় বেড়েছে। কিন্তু সে অনুযায়ী গণপরিবহনব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। মোটরসাইকেল একটি সাশ্রয়ী ও সহজে ব্যবহারযোগ্য বাহন। এ কারণে মানুষ কিনছে। এরপরও ভারত, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামের মতো দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে মোটরসাইকেলের ব্যবহার কম। দেশে এখন মোটরসাইকেলের বাজারে যে প্রবৃদ্ধি, সেটা আরও কয়েক বছর অব্যাহত থাকবে।
বাংলাদেশ থেকে কি মোটরসাইকেল রপ্তানি সম্ভব?
মতিউর রহমান: অবশ্যই। ভারত, থাইল্যান্ড পারলে আমরা কেন পারব না। তবে এ জন্য একটু সময় লাগবে। সহযোগী শিল্প গড়ে উঠলে মোটরসাইকেলের উৎপাদন খরচ কমবে। তখন রপ্তানিতে আমরা প্রতিযোগিতা–সক্ষম হতে পারব।
আপনারা এখন কী কী তৈরি করেন?
মতিউর রহমান: এখন মোটরসাইকেলের কাঠামো বা চেসিস এবং আরও কয়েকটি যন্ত্রাংশ তৈরি করলে উৎপাদন হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া যায়। এ নিয়মটি পরিবর্তন দরকার। কেউ যদি চেসিস তৈরি না করে অন্য কিছু তৈরি করতে চায়, সে ক্ষেত্রেও সুযোগ দেওয়া দরকার। হিসাবটি করা উচিত মূল্য সংযোজনের ভিত্তিতে।
মোটরসাইকেল বিক্রিতে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
মতিউর রহমান: আমরা চাই মোটরসাইকেল নিবন্ধনের পর বিক্রি হোক। কিন্তু নিবন্ধন সহজ করতে হবে। গ্রামগঞ্জে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কার্যালয় নেই। সেখানে একটি দোকানে দিনে ১০ জন ক্রেতা এলে আমরা কি ১০ বার বিআরটিএতে যাব? আসলে অনলাইনে নিবন্ধনের ব্যবস্থা থাকা উচিত। আমরা সেটা বলেছি।
অনেকে মোটরসাইকেলের বেপরোয়া চালানো নিয়ে বিরক্ত। এটা কি মোটরসাইকেলের দোষ?
মতিউর রহমান: কখনোই না। এটা আসলে ট্রাফিক আইনের প্রয়োগের সমস্যা। বাংলাদেশে শুধু মোটরসাইকেল নয়, অন্যান্য যানবাহন নিয়েও একই অভিযোগ আছে। এটা অন্যান্য দেশেও তো মোটরসাইকেল চলে। অবশ্য আমরা এ নিয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম হাতে নিচ্ছি। একটা কথা মনে রাখতে হবে, মোটরসাইকেল দেশজুড়ে অনেক তরুণের আয়ের উৎস। সুত্র: প্রথম আলো
মোটরসাইকেল উৎপাদনে জয় জয়কার
মোটরসাইকেল শিল্পের যাত্রা শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। চাহিদা বাড়ছে, দামও কমছে। কারণ, দেশেই এখন মোটরসাইকেল শিল্প গড়ে উঠেছে। সাত কোম্পানি এগিয়ে নিচ্ছে এই শিল্প। সামনের কোনো একদিন হয়তো পুরো মোটরসাইকেলই তৈরি হবে দেশের মধ্যে।
২০১৬ সালের জুনে দেশে একটি ব্র্যান্ডের একটি মডেলের মোটরসাইকেলের দাম ছিল ১ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। সেই মোটরসাইকেলটি এখন বিক্রি হচ্ছে ৯৭ হাজার টাকায়। এই সাশ্রয়ী দামের কারণে দেশজুড়ে মোটরসাইকেলের বাজার রমরমা।
সাশ্রয়ী দামটা আবার এসেছে দুই কারণে। প্রথমত, দেশে উৎপাদন, সেই কারণে সরকারের শুল্ক ছাড়। দ্বিতীয়ত, বাজার ধরতে আগ্রাসী বিপণন। আমাদের আজকের লেখা দেশে উৎপাদন নিয়ে।
দেশে এখন কমপক্ষে সাতটি সুপরিচিত ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলের কারখানা হয়েছে; ভারতের বাজাজ, টিভিএস ও হিরো, জাপানের হোন্ডা, সুজুকি ও ইয়ামাহা এবং একমাত্র দেশীয় ব্র্যান্ড রানার। বিদেশি ব্র্যান্ডগুলো দেশে কারখানা করেছে কোনো ক্ষেত্রে যৌথ উদ্যোগে। কোনো ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করেছে বাংলাদেশি কোম্পানি, কারিগরি সহায়তা দিয়েছে মূল প্রতিষ্ঠান।
অবশ্য কারখানাগুলো উৎপাদনের এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে। চেসিস বা কাঠামো, কয়েকটি যন্ত্রাংশ তৈরি করলেই উৎপাদক হিসেবে স্বীকৃতি মিলছে। কিন্তু উৎপাদকেরা দেশে সহযোগী শিল্প গড়ে তুলে আরও বেশি মূল্য সংযোজনে মরিয়া।
কয়েক দশক আগে ভারতেও এভাবেই মোটরসাইকেল শিল্পের যাত্রা শুরু হয়েছিল। ১৯৫৫ সালে ব্রিটিশ কোম্পানি রয়েল এনফিল্ড মাদ্রাজ মোটরসের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে চেন্নাইতে একটি সংযোজন কারখানা করে। সেই থেকে শুরু। ভারতীয় ব্র্যান্ড বাজাজ ১৯৪৪ সালে মোটরসাইকেল আমদানির ব্যবসা শুরু করে। পরবর্তীতে তারা দুই চাকা চাকার যানবাহন উৎপাদনকারী বড় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। তাদের হাত ধরেছিল জাপানের কাওয়াসাকি।
টিভিএসের যৌথ উদ্যোগের কারখানা ছিল জাপানের সুজুকি মোটর করপোরেশনের সঙ্গে। তাদের যৌথ উদ্যোগ শুরু হয় ১৯৮২ সালে। ভারতের হিরো মোটোকর্প আগে সাইকেল উৎপাদন করত। ১৯৮৪ সালে জাপানের হোন্ডা মোটর করপোরেশনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে তারা মোটরসাইকেল উৎপাদন শুরু করে।
এখন হিরো, বাজাজ ও টিভিএস ভারতীয় মোটরসাইকেলের সুপরিচিত নাম। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে তারা বহু দেশের রাস্তায় চলছে। বাংলাদেশে কি ভারতের মতো মোটরসাইকেল শিল্পের যাত্রাটি শুরু হলো?
শুরুর কথা
বাংলাদেশে শুরুর দিকে জাপানের হোন্ডা ব্র্যান্ডের সামান্য কিছু মোটরসাইকেল আমদানি হতো। এ দেশের মানুষ মোটরসাইকেলকে চিনত হোন্ডা নামেই। এরপর আশির দশকে ভারতীয় ও জাপানের যৌথ উদ্যোগের কারখানায় তৈরি ভারতীয় মোটরসাইকেল বাংলাদেশের বাজারে আসতে শুরু করে।
এরপর শুরু হয় মোটরসাইকেল খোলা অবস্থায় এনে সংযোজন করা, যা দেড় দশকের মতো হলো। এর মাধ্যমে সামান্য কিছু মূল্য সংযোজন হচ্ছিল। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সরকার মোটরসাইকেল আমদানিতে শুল্ক ছাড় পেতে উৎপাদনের শর্ত দেয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, উৎপাদনকারী হিসেবে স্বীকৃতি পেতে হলে মোটরসাইকেলের মূল কাঠামোসহ (চেসিস) পাঁচটি প্রধান যন্ত্রাংশের কমপক্ষে একটি দেশে উৎপাদন করতে হবে। এরপর শিল্প মন্ত্রণালয় মোটরসাইকেল শিল্পের উন্নয়নে একটি নীতিমালাও করেছে।
এখন দেশে মোটরসাইকেলে তিন ধরনের কর ব্যবস্থা আছে। যে সব প্রতিষ্ঠান কাঁচামাল থেকে নির্দিষ্ট কিছু যন্ত্রাংশ তৈরি করে তাদের ২৮-৩০ শতাংশ কর দিতে হয়। কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের চেয়ে কিছু কম মূল্য সংযোজন করে, সে ক্ষেত্রে মোট কর ভার ৫৯ শতাংশের মতো। আর যারা পুরো তৈরি মোটরসাইকেল আমদানি করে, তাদের সব মিলিয়ে ১৫১ শতাংশ কর দিতে হয়। অবশ্য সব কোম্পানিই দু-চারটি করে মডেল তৈরি করে। বাকিটা সংযোজন করে।
সম্ভাবনা বড়
জাপানের বহুজাতিক মোটরসাইকেল ব্র্যান্ড ইয়ামাহার এক বাজার জরিপ বলছে, দেশে প্রতি ১৬১ জনে একজন মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন। প্রতিবেশী দেশ ভারতে এ হার প্রতি ২০ জনে ১ জন এবং ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় প্রতি ৪ জনে ১ জন ব্যক্তি মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন। এ হিসেবে বাংলাদেশের বাজারে মোটরসাইকেল বিক্রি বাড়ানোর সম্ভাবনা অনেক বেশি বলে মনে করছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা।
কোম্পানিগুলোর হিসাবে, দেশে ২০১৫ সালে ১ লাখ ৮০ হাজার মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছিল। ২০১৭ সালে তা বেড়ে ৩ লাখ ৮৭ হাজারে উন্নীত হয়। ২০১৮ সালে বিক্রি দাঁড়ায় প্রায় পাঁচ লাখে। উদ্যোক্তারা আশা করছেন, ২০২৩ সালের মধ্যে এ দেশে বাজারের মোটরসাইকেলের বাজার বছরে ১০ লাখে উন্নীত হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে মোটরসাইকেল রপ্তানি হবে, যার শুরু করেছে রানার।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ হোন্ডা লিমিটেডের অর্থ ও বাণিজ্য বিভাগের প্রধান শাহ মো. আশিকুর রহমান বলেন, সরকার মোটরসাইকেল শিল্পনীতিতে বাজার ২০২৭ সালের মধ্যে ১০ লাখে উন্নীত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছে। বাস্তবে সেটা অনেক আগেই অর্জিত হবে। তিনি বলেন, এটা খুবই সম্ভাবনাময় শিল্প। সরকারের সহযোগিতা পেলে এ খাত আরও এগিয়ে যাবে।
চার চাহিদা
উদ্যোক্তাদের মত অনুযায়ী, মোটরসাইকেল শিল্পের এখন চারটি চাহিদা। এক. সহযোগী শিল্পের উন্নয়ন, যারা কারখানার জন্য বিভিন্ন খুচরা যন্ত্রাংশ তৈরি করবে। দুই. মোটরসাইকেলের নিবন্ধন ব্যয় কমানো ও সহজ করা। তিন. মোটরসাইকেল কিনতে ঋণ দেওয়া। চার. চালনার প্রশিক্ষণের জন্য সহায়তা।
বাংলাদেশে ইয়ামাহার কারখানা করা এসিআই মোটরসের নির্বাহী পরিচালক সুব্রত রঞ্জন দাস বলেন, ভিয়েতনামের ভিন ব্যাংক মোটরসাইকেল কিনতে বাজারে আড়াই শ কোটি ডলার ঋণ বিতরণ করেছে। বাংলাদেশেও ঋণ দেওয়া শুরু হয়েছে। তবে এমন সব শর্ত দেওয়া হয়, যা মেনে শিক্ষার্থী ও বেকারেরা মোটরসাইকেল কিনতে পারে না। তিনি বলেন, ইয়ামাহা অনেক দেশে প্রশিক্ষণ দিয়ে চালকদের লাইসেন্স দেয়। এ ক্ষমতা তাদের সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার দিয়েছে। বাংলাদেশে যদি সরকারি কোনো খালি জায়গায় প্রশিক্ষণের সুযোগ দেওয়া হতো, তাহলে ভালো হতো।
খরচ কম
ঢাকার রাস্তায় মোটরসাইকেল প্রতিনিয়ত বাড়ছে। মাঝারি ইঞ্জিন ক্ষমতার একটি মোটরসাইকেল এক লিটার জ্বালানি তেলে ৪০ কিলোমিটারের বেশি চালানো যায়। নগরে গণপরিবহনের দুর্দশায় অনেকেই মোটরসাইকেল বেছে নিচ্ছে। নারীরাও শুধু করেছে স্কুটি চালনা।
অনেকেই মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ার করে বেকারত্ব ঘুচিয়েছে। অনেকে মোটরসাইকেলে খাবার সরবরাহ করে। তাদেরই একজন সাব্বির হোসেন। তিনি বলেন, দিনে ৬-৭ ঘণ্টা ঠিকমতো চালালে ৮০০ টাকার মতো আয় করা যায়। সেটা দিয়েই তাঁর সংসার চলে। আগে পুরান ঢাকায় একটি দোকানে কাজ করতেন। সেখানে পেতেন ১০ হাজার টাকা।
অনেকেই ট্রাফিক আইন না মানার মোটরসাইকেল চালকদের অভিযুক্ত করেন। জবাব কি, জানতে চাইলে সাব্বির হোসেন বলেন, দেশে বাস, মিনিবাস, ট্রাক, অটোরিকশা—কেউ-ই ঠিকমতো আইন মানে না। এটা গাড়ির দোষ নয়, দোষ ট্রাফিক ব্যবস্থার। সুত্র: প্রথম আলো
Wednesday, September 25, 2019
ADB sticks to 8% GDP growth projection for Bangladesh
![]() |
Press conference of ADB |
The financial institution made the forecast in its latest publication titled ‘Asian Development Outlook 2019’, after analysing the state of the Bangladeshi economy.
The figure is similar to the lender’s previous projections made in April this year and slightly lower than the government’s projection of 8.2 percent for the fiscal year 2019-20.
Bangladesh’s GDP growth was 7.86 percent in the past fiscal year while the per capita income was $1,751.
Bangladesh’s economic growth crossed 7 percent in fiscal 2015-2016 after almost a decade in the region of 6 percent.
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ৫ চ্যালেঞ্জ দেখছে এডিবি
অর্থনৈতিক রিপোর্টার: চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়বে না বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এ প্রবৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখবে শিল্প খাত। জাতীয় বাজেটে সরকারের পক্ষ থেকে ৮.২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হলেও বেশকিছু চ্যালেঞ্জের কারণে এ লক্ষ্য পূরণ হবে না বলে ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক-২০১৯’-এর হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ছিল ৮.১৩ শতাংশ। এর পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ৫ চ্যালেঞ্জ দেখছে এডিবি। এগুলো হচ্ছে- রপ্তানি বহুমুখীকরণ, শহর ও গ্রামের মধ্যে বৈষম্য, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করা, মানব সম্পদ ও ভ্যাট আইনের কার্যকর প্রয়োগ।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এডিবির ঢাকা আবাসিক মিশন কার্যালয়ে হালনাগাদ এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংস্থাটি। এ সময় এডিবি ঢাকা মিশনের প্রধান মনমোহন প্রকাশ স্বাগত বক্তব্য দেন। আর মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংস্থার অর্থনীতিবিদ সন চ্যাং হং।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শুল্ক ও বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়বে। এর পাশাপাশি উচ্চতর প্রবাসী আয়ের কারণে বাড়বে ভোগব্যয়। একইসঙ্গে সহজ মুদ্রানীতির কারণে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহও বাড়বে। ব্যবসায় পরিবেশ উন্নত করতে চলমান সংস্কার এবং অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের সুবাদেও বাড়বে প্রবৃদ্ধি। একই সময়ে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, টাকার অবমূল্যায়ন ও ভ্যাটের আওতা বাড়ার কারণে পণ্য ও সেবার দাম বাড়বে বলে মনে করে এডিবি। ফলে ২০১৯-২০ অর্থবছরের মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়ে ৫.৮ শতাংশ হতে পারে।

দুর্নীতি বিরোধী চলমান অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর বলেন, সুশাসনের জন্য এটা খুবই ফলপ্রসূ হবে। এর ফলে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়বে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসবে। তবে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। থেমে গেলে হবে না। এতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পাবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২০২৪ সালের মধ্যে প্রবৃদ্ধি ডাবল ডিজিটে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। তবে এজন্য অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ ব্যাপকভাবে বাড়াতে হবে। সেক্ষেত্রে রাস্তা, বন্দর এবং পদ্মাসেতুসহ বড় প্রকল্পগুলো এবং ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সেগুলো যথাসময়ে শেষ করতে হবে। সেই সঙ্গে দক্ষ জনশক্তি তৈরি, আর্থিক খাতের উন্নয়ন ও ব্যবসার পরিবেশ সহজ করতে হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিবেশী ও অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। চলতি অর্থবছরে ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৭.২ শতাংশ, যা গত এপ্রিল মাসে প্রকাশিত মূল এশিয়ান ডেভলপমেন্ট আউট লুকে বলা হয়েছিল ৭.৩ শতাংশ। এছাড়া পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি হবে ২.৪ শতাংশ, যা মূল প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল ৩.৬ শতাংশ। আর বাংলাদেশের মূল প্রতিবেদনের পূর্বাভাসেও বলা হয়েছিল এবছর প্রবৃদ্ধি হবে ৮ শতাংশ, যা হালনাগাদ প্রতিবেদনে একই রয়েছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, চীনের প্রবৃদ্ধি হবে ৫.৪ শতাংশ, যা মূল প্রতিবেদনের পূর্বাভাসে ছিল ৫.৫ শতাংশ। কোরিয়ার প্রবৃদ্ধি হবে ২.৪ শতাংশ, যা আগে ছিল ২.৫ শতাংশ। সিঙ্গাপুরের প্রবৃদ্ধি হবে ১.৪ শতাংশ, যা মূল পূর্বাভাসে ছিল ২.৬ শতাংশ। তবে সব মিলিয়ে এশিয়ার প্রবৃদ্ধি হবে ৫.৫ শতাংশ, যা মূল প্রতিবেদনের পূর্বাভাসে ছিল ৫.৬ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে কৃষিখাতের অংশ থাকবে ৩.৮ শতাংশ। এছাড়া শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হবে ১২.৫ শতাংশ। সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি হবে ৬.৪ শতাংশ। এদিকে মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছর মূল্যস্ফীতি হবে ৫.৮ শতাংশ। এক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণভাবে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, পণ্য ও সেবার মূল্য বৃদ্ধি এবং ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের কারণে মূল্যস্ফীতি কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী থাকবে।
আউটলুক প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি অর্থবছরে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হবে ১০ শতাংশ। এক্ষেত্রে আমেরিকা ও চীনের মধ্যে যে বাণিজ্য যুদ্ধ চলছে সেখান থেকে সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। আমদানির ক্ষেত্রে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হবে ৯ শতাংশ। কারণ সরকারের মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে প্রচুর মূলধনী যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি করতে হচ্ছে। তবে এ বছর খাদ্য আমদানি কমতে পারে। শস্য উৎপাদন বৃদ্ধি এবং আমদানি শুল্ক বাড়ায় এটা হতে পারে। এছাড়া চলতি অর্থবছরে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমবে। সেক্ষেত্রে এ খাতে প্রবৃদ্ধি দাড়াবে ১১.৩ শতাংশ।
এডিবির আউটলুক প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে এডিবির জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ সুন চ্যান হং বলেন, বাংলাদেশের শিল্প, কৃষি ও প্রবাসী আয়ে চাঙা থাকলেও জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের বেশি হবে না। তারপরও এ প্রবৃদ্ধি অর্জনে কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে জনমিতির সুবিধা ভোগ করার জন্য মানব সম্পদের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটাতে হবে। দক্ষ মানব সম্পদ তৈরি করতে পারলে বিশেষ করে প্রবাসী আয় ব্যাপকভাবে বাড়ানো সম্ভব। যেমন এখন বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটি ১০ লাখের বেশি মানুষ বিদেশ থাকে। কিন্তু গত অর্থবছরে রেমিট্যান্সে এসেছে ১৬ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। কিন্তু দক্ষ মানব সম্পদ যেমন- ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা এরকম দক্ষ মানব সম্পদ বিদেশি পাঠাতে পারলে ১০০ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স আহরণ করা সম্ভব।
রূপালীময় জীবন তার
![]() |
অফিসে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি |
এরপর কেটেছে ৩৫ বছর। আজ রূপালী চৌধুরী একটি সুপরিচিত নাম। সাধারণ কর্মী থেকে নিজ দক্ষতায় প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনার শীর্ষ পদে ওঠার নজির গড়েছেন। তিনি কোনো বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বরত একমাত্র বাংলাদেশি নারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক। বিদেশি ব্যবসায়ীদের সংগঠন ফরেন চেম্বারের সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করা একমাত্র নারীও তিনি।
সব সময় শাড়ি পরেন। কপালে মাঝেমধ্যে টিপও দেখা যায়। ভাত-মাছ-ডাল বিশেষ পছন্দের খাবার। সব মিলিয়ে আবার তিনি নিরেট বাঙালি নারী।
দেশে কেন বিদেশি বিনিয়োগ তেমন একটা আসছে না, ব্যবসায় পরিবেশের সমস্যা কী কী, কীভাবে বিনিয়োগ বাড়ানো যাবে—এসব নিয়ে রূপালী চৌধুরীর সঙ্গে অনেকবার কথা হয়েছে। এবার গিয়েছিলাম তাঁর জীবনের কথা শুনতে। তাঁর শৈশব, কৈশোর, তারুণ্য, পেশাজীবন, পরিবারের কথা জানতে। রূপালী চৌধুরী সবকিছুই জানালেন। কখনো স্মৃতিকাতর হয়ে, কখনো লাজুক ভঙ্গিতে, কখনো স্নেহময়ী মায়ের মতো, কখনো সিরিয়াস আলোচকের মতো।
শুরুটা কৈশোরের গল্পে
রূপালী চৌধুরীর জন্ম চট্টগ্রামের পটিয়ায়। তাঁর বাবা প্রিয় দর্শন চৌধুরী ছিলেন একজন চিকিৎসক। কলকাতায় পড়াশোনা শেষ করে তিনি (বাবা) সেখানেই চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত হন। কিন্তু রূপালী চৌধুরীর ঠাকুরমা (দাদি) তাঁর ছেলেকে বললেন, ‘এখানে মানুষ রোগে মারা যায়, আর তুমি বিদেশে রোগ সারাও!’
রূপালী চৌধুরীর বাবাকে ফিরে আসতেই হলো। ১৯৫৭ সালে ফিরে এসে তিনি চট্টগ্রামের পটিয়ায় চিকিৎসা পেশা শুরু করেন। মা (রূপালী চৌধুরীর ঠাকুরমা) ওই সময় ছেলের ভিজিট (সম্মানী) রোগীপ্রতি দুই টাকায় সীমিত করে দেন, যাতে মানুষের কষ্ট না হয়।
এ গল্পটি বলার সময় রূপালী চৌধুরীকে খুব গর্বিত মনে হলো। তিনি বললেন, ‘বাবা আমার চোখে আনসাং হিরো (অবিসংবাদিত নায়ক)। ওই সময় কলকাতার পসার ছেড়ে পটিয়ায় ফেরা সহজ ছিল না।’
মা–বাবার পাঁচ সন্তানের মধ্যে রূপালী চৌধুরী চতুর্থ। বড় বোন শ্যামলী চৌধুরী গৃহিণী। এরপর ভাই শ্যামল বিকাশ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত। মেজ বোন অঞ্জলি চৌধুরী মারা গেছেন। ছোট ভাই কমল জ্যোতি চৌধুরী ব্যবসায়ী। রূপালী চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের পরিবার ছিল অসম্ভব সংস্কৃতিমনা। পটিয়ায় আমাদের শৈশব, কৈশোর খুব আনন্দে কেটেছে। সাম্প্রদায়িক অসম্প্রীতি কখনো টের পাইনি। আমাদের প্রচুর মুসলমান ও হিন্দু বন্ধু ছিল। বিদ্যালয়ে চারটি ধর্মের শিক্ষার্থীদের জন্যই আলাদা আলাদা প্রার্থনা হতো। এখন তো সেটা আর হয় না।’
স্থানীয় বিদ্যালয় ও কলেজে শিক্ষা শেষ করে রূপালী চৌধুরী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে স্নাতকে ভর্তি হন। স্নাতকোত্তর করেন আইবিএতে। পড়াশোনা শেষ করে সিবা গেইগিতে যোগ দেন ১৯৮৪ সালে। শুরুর কাজ ছিল ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিভাগীয় প্রধানকে ব্যবস্থাপনা ও বিক্রয়সংক্রান্ত হিসাব দিয়ে সহায়তা করা।
’৭৭-এ কথা শুরু
রূপালী চৌধুরী ভালো গান গাইতেন। আবদুল হক (ছদ্মনাম সিদ্ধার্থ হক) কবিতা লিখতেন, গল্প লিখতেন, ভালো ছাত্র ছিলেন। দুজনের পরিবার কাছাকাছি বসবাস করে। আগে থেকে চেনাজানা হলেও কথাবার্তা বলা শুরু হয় ১৯৭৭ সালে। আর বিয়ে হয় ১৯৮৯ সালে, ১২ বছরের মাথায়।
পরিবার কি মেনে নিয়েছিল? জানালেন, দুই পরিবারের মধ্যে জানাশোনা ছিল। দুই পক্ষই একে অপরকে ভালোভাবে জানত। কিন্তু বিয়েটা মানতে চাইছিল না। তাই বেশ অপেক্ষাও করতে হয়। বিয়ে যখন হয়ে গেল, তখন ধীরে ধীরে সবকিছুই স্বাভাবিক হলো।
জানতে চাইলাম, ভাইয়ের (আবদুল হক) প্রতি আকর্ষণের মূলে কি কবিতা ছিল? রূপালী চৌধুরী হেসে বললেন, ‘এত কিছু জানতে চেয়ো না।’
আবদুল হক ও রূপালী চৌধুরীর দুই সন্তান। ছেলে রাহুল হক কানাডায় পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরে এসে রেস্তোরাঁ ব্যবসা শুরু করেছে। রূপালী চৌধুরী বলেন, ছেলেটা বিদেশে থাকতে চায় না। বাবার মতো তারও কবিতা লেখার ঝোঁক। তার প্রথম বই ইংরেজিতে প্রকাশিত ফাইন্ডিং চি (নিজেকে খোঁজো)। মেয়ে পূর্ণা হক কানাডায় পরিবেশবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়ছে।
আবদুল হক সোশ্যাল মার্কেটিং কোম্পানির (এসএমসি এন্টারপ্রাইজ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক। প্রতিষ্ঠানটিকে আপনারা চেনেন ওরস্যালাইনের মাধ্যমে।
বার্জারে রঙের জীবন
বার্জারের প্রতিষ্ঠাতা জার্মানির নাগরিক লুইস বার্জার। তিনি ১৭৬০ সালে যুক্তরাজ্যে রাসায়নিক ব্যবসা শুরু করেন। বার্জার এ অঞ্চলে ব্যবসা করতে আসে ১৯৫০ সালে। বাংলাদেশে, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের চট্টগ্রামে তারা কারখানা করে ১৯৭০ সালে।
১৯৯০ সালের অক্টোবরে বার্জারে যোগ দিলেন রূপালী চৌধুরী। এ দেশে বার্জারের ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে প্রথম নারী কর্মী তিনি। সিবা গেইগি ছেড়ে বার্জারে কেন? উত্তরে রূপালী চৌধুরী বলেন, ‘আবদুল হক তখন চট্টগ্রামে। আমি চট্টগ্রামে থাকার জন্য একটি চাকরি খুঁজছিলাম। পত্রিকায় বার্জারের একটি পদে লোক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেখলাম। তাঁরা বেশ কয়েক দফা সাক্ষাৎকার নিলেন। পরিকল্পনা ব্যবস্থাপক পদে একটি মেয়ে কাজ করতে পারবে কি না, এটা নিয়ে তাঁরা দ্বিধায় ছিলেন।’
রূপালী চৌধুরী বলেন, ‘অনেক কষ্টে আমার চাকরিটা হয়। ওই পদে সিঅ্যান্ডএফ প্রতিনিধিদের সঙ্গে কাজ করতে হবে, কাস্টমসের সঙ্গে কাজ করতে হবে, বন্দরে যেতে হবে। ওই সময় একটি মেয়ে এসব কাজ করতে পারবে, সেটা তাঁরা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না।’
রূপালী চৌধুরী কাজটি ভালোভাবেই করেছিলেন। সে কারণেই বিভিন্ন বিভাগে কাজ করার পর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি নারী, এই ভেবে নিজে থেকে কখনো গুটিয়ে যাইনি।’
২০০৪ সালে রূপালী চৌধুরী বার্জারের পরিচালক হন। এরপর ২০০৮ সালে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যোগ দেন।
কী চেয়েছিলেন, কী হলেন
‘হতে পারতাম তো অনেক কিছুই। আমার বড় ভাই শান্তিনিকেতনে ভর্তির ফরম নিয়ে এসেছিলেন। বাবা বললেন, অনেক গান শেখা হয়েছে, এবার পড়ালেখা করো,’ বলেন রূপালী চৌধুরী। তিনি আরও যোগ করেন, ‘এখনকার তরুণদের লক্ষ্য খুব পরিষ্কার। কিন্তু আমাদের সময়ে আমরা জানতাম না কী হতে চাই। তবে আমি আর্থিকভাবে আত্মনির্ভরশীল হতে চেয়েছিলাম।’
বার্জারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদটি কি লক্ষ্যে ছিল? রূপালী চৌধুরীর জবাব, ‘আমি ভাবিনি। একটার পর একটা পদে গিয়ে মনে হয়েছে, কাজটা আমি করতে পারি, আরও ভালোভাবে। এভাবেই হয়েছে।’
শুধু বার্জার নয়, রূপালী চৌধুরী বাণিজ্য সংগঠনেও নেতৃত্ব দিয়েছেন। ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বারের দুবারের সভাপতি ও পেইন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পদে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি এখন বাটা বাংলাদেশ, লিনডে বাংলাদেশ ও সূর্যের হাসির পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন।
পছন্দ ইলিশ-পাবদা
রূপালী চৌধুরীকে প্রায়ই বিদেশে যেতে হয়। তখন দেশের কোন জিনিসটির অভাব বোধ করেন তিনি? উত্তর, ভাত, মাছ আর ডাল। প্রায় সব মাছই ভালো লাগে। তবে বিশেষ পছন্দ ইলিশ আর পাবদা।
খেতে কি খুব পছন্দ করেন? রূপালী চৌধুরী বলেন, ‘আমাকে দেখে বোঝো না?’ তবে ইদানীং স্বাস্থ্যসচেতন হয়েছেন। ভাত খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন। দিন শুরু হয় ব্যায়াম করে।
বার্জারের কার্যালয় উত্তরায়। নয়টার কাছাকাছি সময়ে রূপালী চৌধুরী অফিসে পৌঁছে যান। ফেরেন সন্ধ্যায়। প্রায়ই পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হয়। বাকিটা সময় কাটে বই পড়ে, গান শুনে। অনেক সময় টেলিভিশনও দেখা হয়।
বইয়ের মধ্যে ফিকশন বিশেষ পছন্দ। সফলদের জীবনী পড়তে ভালোবাসেন। সম্প্রতি পড়েছেন ইসরায়েলের ইতিহাসবিদ ইউভাল নোয়া হারারির স্যাপিয়েন্স: এ ব্রিফ হিস্ট্রি অব ম্যানকাইন্ড বইটি। গান শোনেন অনেক ভাষার।
শাড়ির মধ্যে সিল্ক ও সুতি পছন্দের তালিকায় আগে থাকে।
‘দুঃখ করে মরার মানে নেই’
রূপালী চৌধুরী মনে করেন, সব সময় নিচের দিকে তাকাতে হয়। অমুকে ওই হয়েছে, তমুকে সেই হয়েছে, এসব নিয়ে দুঃখ করে মরার কোনো মানে নেই। নিজের জীবন নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট তো অবশ্যই, তার চেয়েও বেশি কিছু।
বলেন, ‘আমি যা আশা করেছিলাম, তার অনেক বেশি পেয়েছি। আমি কখনো ভাবিনি, একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হব। কখনো ভাবিনি, বিভিন্ন ফোরামে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করব।’
২০১৮-১৯ হিসাব বছরে বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশের মোট পণ্য বিক্রির পরিমাণ ১ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকা। রূপালী চৌধুরী যখন বার্জারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেন, তখন প্রতিষ্ঠানটি ৩৫০ কোটি টাকার মতো পণ্য বিক্রি করত। ১১ বছরে বিক্রি পাঁচ গুণের বেশি হয়েছে।
বার্জারের মূল ব্যবসা রং। তারা সংশ্লিষ্ট নানা খাতে ব্যবসা বাড়াচ্ছে। তাতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন রূপালী চৌধুরী। তিনিই আসলে বার্জারের আসল রং। অবশ্য তিনি তা মানতে নারাজ। বলেন, এ সাফল্য এসেছে তাঁর সব সহকর্মীর ঐকান্তিক পরিশ্রমের মাধ্যমে।
চারটি প্রশ্ন- নেতা হিসেবে গুণ কী কী
মানুষের সঙ্গে সহজে মিশতে পারা। মানুষের প্রতি সহজাত ভালোবাসা রয়েছে। এ ছাড়া সততা ও শৃঙ্খলা আজ তাঁকে এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। সঙ্গে কাজটাও ভালো করে জানতে হয়েছে।
বার্জারে কী যোগ করেছেন
বার্জারে আগ্রাসী বিপণন কৌশল নিয়েছেন। ফলে ব্যবসা বেড়েছে। রং–সংশ্লিষ্ট আরও কয়েকটি খাতে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছেন। দুটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জয়েন্ট ভেঞ্চার প্রতিষ্ঠা করেছেন। প্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো ঠিক করেছেন। ১০ বছরে ব্যবসা বেড়েছে পাঁচ গুণের বেশি।
তরুণদের প্রতি পরামর্শ
তরুণেরা পরামর্শ শুনতে তেমন পছন্দ করে না। তবে কেউ জানতে চাইলে বলবেন, কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। ধৈর্য থাকতে হবে। চটজলদি সবকিছু পাওয়া সম্ভব নয়।
বিনিয়োগ বাড়বে কীভাবে
ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। অনেক কাজ হচ্ছে। তবে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করে দেখাতে হবে, বাংলাদেশে বিনিয়োগ সহজ। আর্থিক নীতিমালা ঘন ঘন পরিবর্তন করা উচিত নয়। বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় আরও প্রতিযোগিতামূলক আকর্ষণীয় প্রণোদনা দেওয়া উচিত। এখানে মনে রাখতে হবে, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিটি দেশই বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত।
একনজরে বার্জার প্রতিষ্ঠাতা
জার্মান নাগরিক লুইস বার্জার ১৭৬০ সালে যুক্তরাজ্যে গিয়ে রাসায়নিকের ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৫০ সালে বার্জার উপমহাদেশে আসে। বাংলাদেশে কারখানা করে ১৯৭০ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে। পৃথিবীর অনেক দেশে বার্জারের ব্যবসা রয়েছে।
পুঁজিবাজারে নিবন্ধন
বার্জার পেইন্টস লিমিডেট ২০০৫ সালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) নিবন্ধিত হয়। গত বৃহস্পতিবার ডিএসইতে বার্জারের ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ারের দাম ছিল ১ হাজার ৫৩০ টাকা।
পণ্য
বার্জারের মূল্য ব্যবসা রং। বাড়ি, কাঠ, শিল্পকারখানা, নৌযান ইত্যাদি ব্যবহৃত নানা ধরনের রং উৎপাদন করে তারা। এ ছাড়া রয়েছে আঠা, নির্মাণ খাতে ব্যবহৃত রাসায়নিক ইত্যাদির ব্যবসা।
বছরে বিক্রি
২০১৬-১৭ ১৪৬২ কোটি ২০১৭-১৮ ১৬৪৮ কোটি ২০১৮-১৯ ১৭৭৩ কোটি (এপ্রিল-মার্চ হিসাব)
বাজার হিস্যা
রঙের বাজারে একচ্ছত্র আধিপত্য বার্জারের। বাজার জরিপ অনুযায়ী বার্জারের হিস্যা ৫০ শতাংশের মতো। এ খাতে দ্বিতীয় শীর্ষ কোম্পানির হিস্যা ২০ শতাংশের কম। সূত্র: প্রথম আলো
Subscribe to:
Posts (Atom)