Monday, September 16, 2019

৬৭ টাকা দিয়ে শুরু, এখন ৩২টি প্র্রতিষ্ঠানে মালিক তিনি

পারিবারিক আর্থিক অনটন দেখা দিলে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসিছেলেন মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম। বিক্রয়কর্মী হিসেবে রাজধানীর ইসলামপুরে কাপড় বিক্রি শুরু করেন। ১৯৭৬ সালে শুরু করেন নিজের ব্যবসা। ১৯৮৭ সালে এসে বড় ছেলের নামে গড়ে তোলেন নোমান গ্রুপ। বর্তমানে এ গ্রুপের অধীনে রয়েছে ৩২ টি প্রতিষ্ঠান ও কারখানা।

ইসলামপুরে দোকানে দোকানে গিয়ে একসময় পণ্য বিক্রি করতেন তিনি। পরিবারের আর্থিক অনটন তাঁকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসতে বাধ্য করে। ভাগ্য বদলের আশায় মাত্র ৬৭ টাকা পকেটে নিয়ে ১৯৬৮ সালে ঢাকার পথে পা বাড়ান মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম। ওঠেন রাজধানীর খিলগাঁওয়ের একটি মেসে, মাসিক ভাড়া ১৫ টাকা। ঢাকায় এসে শুরু করেন কমিশনের বিনিময়ে পণ্য বিক্রি। সারা দিন বিক্রির পর সন্ধ্যায় টাকা তুলে তারপর গভীর রাতে ফিরতেন মেসে। কয়েক ঘণ্টা ঘুমিয়ে সকাল থেকে আবারও ছুটতেন দোকানে দোকানে পণ্য নিয়ে। পণ্য বিক্রি করে মাসে কমিশন পেতেন ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা।

সেই নুরুল ইসলাম সময়ের ব্যবধানে হয়ে উঠলেন সফল উদ্যোক্তা। দেশের শীর্ষস্থানীয় রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান নোমান গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। কিছুদিন আগেও ছিলেন এই গ্রুপের চেয়ারম্যান। মেসের জীবন থেকে এখন তিনি রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানের বাসিন্দা। বর্তমানে বড় ছেলের হাতে প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বের ভার তুলে দিয়েছেন। ছেলের হাতে ব্যবসার ভার তুলে দিলেও নিজে একেবারে উপদেষ্টা হিসেবে পেছন থেকে কোম্পানির নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন।

সম্প্রতি এক দুপুরে নোমান গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ও বর্তমান চেয়ারম্যান এ এস এম রফিকুল ইসলামের সঙ্গে প্রথম আলোর দীর্ঘ আলাপচারিতায় জানা যায় কোম্পানির অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের নানা গল্প। 

বিক্রয়কর্মী থেকে সফল উদ্যোক্তা
গল্পে গল্পে নুরুল ইসলাম শোনালেন একজন বিক্রয়কর্মী থেকে দেশসেরা উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনের কথা। বললেন, ২০১৮ সালে গ্রুপের বার্ষিক বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০০ কোটি ডলার। প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য সাড়ে ৮৪ টাকার হিসাবে বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা। রপ্তানির পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় বাজারেও পণ্য বিক্রি করে থাকে। মূলত স্থানীয় বাজারে পণ্য বিক্রি দিয়েই যাত্রা শুরু হয়েছিল। তাই কোম্পানি বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রপ্তানি বাজার বিস্তৃত হলেও স্থানীয় বাজার থেকে এখনো নিজেদের গুটিয়ে নেননি এই উদ্যোক্তা।

নুরুল ইসলাম জানান, ১৯৬৮ সালে ঢাকায় এসে তৈয়ব আশরাফ টেক্সটাইল মিলস নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। এ প্রতিষ্ঠানের অধীনে আবার একাধিক প্রতিষ্ঠান ছিল। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম মরিয়ম টেক্সটাইল, আরটেক্স ফ্যাব্রিকস, নাজনীন ফ্যাব্রিকস। এসব প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত ক্যারোলিন গেঞ্জি, মশারি, ওড়না এবং পলিয়েস্টার কাপড় ইত্যাদি পণ্য বিক্রি করতেন নুরুল ইসলাম। প্রতিষ্ঠানগুলোর পণ্য বিক্রির পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠান থেকে নিজের পছন্দে পণ্য তৈরি করে তা–ও বিক্রি করতেন তিনি। কমিশন আয়ের পাশাপাশি নিজের উদ্যোগে পণ্য তৈরি করে তা বিক্রির মাধ্যমে একটু একটু করে মূলধন বাড়াতে থাকেন নুরুল ইসলাম।

এর মধ্যে স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হলে ফিরে যান চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় নিজ গ্রামে। ওই বছর বিয়েও করেন। যুদ্ধ শেষে আবার ফিরে আসেন কর্মস্থলে। নতুন করে শুরু করেন সবকিছু। এর মধ্যে ব্যাংকঋণের কারণে মরিয়ম টেক্সটাইল, আরটেক্স ও নাজনীন ফ্যাব্রিকসের আর্থিক অবস্থা ক্রমেই দুর্বল হতে থাকে। তখন এসব প্রতিষ্ঠান ভাড়ায় নেন নুরুল ইসলাম। শুরুতে মশারি ও গেঞ্জির কাপড় তৈরি করতেন। ১৯৭৬ সালে পাওনা ঋণ আদায়ে এসব কারখানা একে একে নিলামে তোলে ব্যাংক। নিলামে অংশ নিয়ে যন্ত্রপাতিসহ কারখানাগুলো কিনে নেন নুরুল ইসলাম।

১৯৭৬ সালে প্রথম আরটেক্স ফ্যাব্রিকসের চারটি মেশিন কিনে নেন তিনি। এ জন্য বিনিয়োগ করেন ৮ লাখ টাকা। সেখানে তখন ২২ শ্রমিক কর্মরত ছিলেন। এরপর একে একে কেনেন মরিয়ম টেক্সটাইল, নাজরীন ফ্যাব্রিকসের যন্ত্রপাতি। এ তিন প্রতিষ্ঠানের মোট ১২টি যন্ত্র (মেশিন) নিয়ে শুরু হয় উদ্যোক্তা হিসেবে নুরুল ইসলামের যাত্রা। মাত্র ২২ জন শ্রমিক নিয়ে ১৯৭৬ সালে শিল্পোদ্যোক্তা হিসেবে নুরুল ইসলামের পথচলা শুরু। বর্তমানে তাঁর গড়ে তোলা নোমান গ্রুপের কর্মীর সংখ্যা ৬৫ হাজারের বেশি।

নোমান গ্রুপের যাত্রা
শুরুটা হয়েছিল আরটেক্স ফ্যাব্রিকস, মরিয়ম টেক্সটাইল দিয়ে। ওই নামেই প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো টিকে আছে নোমান গ্রুপের অধীনে। ১৯৮৭ সালে এসে বড় ছেলে এ এস এম রফিকুল ইসলাম নোমানের নামে প্রতিষ্ঠা করেন নোমান গ্রুপ। বর্তমানে এ গ্রুপের অধীনে রয়েছে ৩২টি কারখানা ভিন্ন ভিন্ন নামে। এগুলোর মধ্যে স্ত্রী, কন্যা, পুত্র, নাতি-নাতনিদের নামেও রয়েছে একাধিক প্রতিষ্ঠান।

গল্পে গল্পে নুরুল ইসলাম জানান, ১৯৭৬ সালে বড় ছেলে নোমানের জন্ম। ওই বছরই উদ্যোক্তা হিসেবে তাঁর পথচলা শুরু। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। তবে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান গড়তে ব্যাংকমুখী হননি তিনি। পণ্য উৎপাদনের কাঁচামাল কেনা থেকে শুরু করে নকশা, রঙের ব্যবহার, বিক্রি—সবকিছুই শুরুতে নিজে করেছেন। এখনো বৃদ্ধ বয়সে নকশা, কাঁচামাল কেনা, উৎপাদনের প্রতিটি ধাপের কাজের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। 

নুরুল ইসলাম বলেন, এখনো দিনরাত মিলিয়ে ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টা কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকেন তিনি। 

রপ্তানিতে সাফল্য, অর্ধশতকের অপেক্ষা 
১৯৭৬ সাল থেকে ব্যবসা শুরু হলেও নোমান গ্রুপের যাত্রা শুরু হয় ১৯৮৭ সালে। প্রতিষ্ঠার ১৩ বছর পর ২০০০ সালে এসে আন্তর্জাতিক বাজারে নোমান গ্রুপের রপ্তানি শুরু হয়। এ জন্য প্রতিষ্ঠা করেন জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফ্যাব্রিকস নামে রপ্তানিমুখী হোম টেক্সটাইল প্রতিষ্ঠান। ২০০০ সালে রপ্তানি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত নোমান গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সেরা রপ্তানিকারক িহসেবে ৪৬টি জাতীয় রপ্তানি পদক পেয়েছে। এরমধ্যে ১১টি ছিল শীর্ষ রপ্তানিকারকের স্বীকৃতি। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সহায়তায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ স্বীকৃতি দিয়েছে। 

নোমান গ্রুপের বর্তমান চেয়ারম্যান এ এস এম রফিকুল ইসলাম বলেন, সর্বশেষ ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য শীর্ষ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হিসেবে জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেবিক্স দুটি স্বর্ণপদক পেয়েছে। এ ছাড়া নোমান গ্রুপের আরও দুটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান স্বর্ণপদক ও ব্রোঞ্চপদকসহ মোট চারটি পদক পেয়েছে। 

গ্রুপটির উদ্যোক্তা ও কর্মীদের আশা, সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী দুই বছরের মধ্যে সেরা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরকারের কাছ থেকে অর্ধশতক পদক জিতবে প্রতিষ্ঠানটি। এখন প্রতিষ্ঠানটির অপেক্ষা সেরা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অর্ধশতক পদকপ্রাপ্তি ও ধারাবািহক অবস্থান ধরে রাখা। 

নোমান গ্রুপের সেরা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শীর্ষে জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফ্যাব্রিকস। এ প্রতিষ্ঠানটি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা নুরুল ইসলামের দ্বিতীয় ও তৃতীয় ছেলের নামে নামকরণ করা হয়েছে।

এ এস এম রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘১৯৯৪ সালে যাত্রা শুরু হয় জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফ্যাব্রিকসের। শুরু থেকেই আমাদের লক্ষ্য, রপ্তানিতে দেশের সেরা হওয়া। প্রথম রপ্তানি শুরু হয় ২০০০ সালে। সেই বছর ৬৫ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করে ইউরোপের বাজারে। প্রথম রপ্তানি পণ্য ছিল বিছানার চাদর বা বেডশিট। দেড় যুগের ব্যবধানে প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৩৮ গুণ। সর্বশেষ ২০১৮ সালে জাবের অ্যান্ড জোবায়ের বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি ডলার বা এক হাজার ৪০০ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করেছে।’

জাবের অ্যান্ড জোবায়েরের বর্তমানে ১৮ থেকে ২০ ধরনের পণ্য যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। প্রতিষ্ঠানটির পণ্যের বড় ক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে আইকিয়া, এইচঅ্যান্ডএম, ওয়ালমার্ট, টার্গেট, কেমার্ট, ক্যারিফোর ইত্যাদি।

নোমান গ্রুপের ৬৫ হাজার কর্মীর মধ্যে ১২ হাজার জাবের অ্যান্ড জোবায়েরের। প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে গ্রুপের চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘শুরু থেকে পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করার প্রতি ছিল আমাদের সর্বোচ্চ মনোযোগ। এ কারণে এখন পর্যন্ত আমাদের পণ্য নিয়ে গ্রাহকের কোনো অভিযোগ নেই।’

জাবের অ্যান্ড জোবায়েরের ধারাবাহিক সাফল্যের জন্য প্রতিষ্ঠানটির বিশাল কর্মী বাহিনীর পাশাপাশি বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের কর্মীদের অবদানের কথা জানালেন এ এস এম রফিকুল ইসলাম। 

বিপুল ক্ষতি, তবু হাল ছাড়েনি
২০০৯ সালে টেরিটাওয়েল, ডেনিম, উইভিংসহ সাতটি কারখানা গড়ে তোলে নোমান গ্রুপ। ব্যাংকঋণ ও নিজেদের অর্থে গাজীপুরে এসব কারখানা গড়ে তোলা হয়। কিন্তু গ্যাস সরবরাহ না পাওয়ায় সাত বছর উৎপাদন শুরু করা যায়নি এসব কারখানায়। শিল্পের চাকা না ঘুরলেও ব্যাংকঋণের সুদের চাকা ঠিকই সচল ছিল। তাতে বিপুল লোকসান গুনতে হয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে। 

নোমান গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও বর্তমান চেয়ারম্যান উভয়ে জানান, সাত কারখানা গড়ে তোলার পর সাত বছর ধরে এসব কারখানায় উৎপাদন শুরু করতে না পারায় শুধু বসে বসে ২ হাজার কোটি টাকার ব্যাংক সুদ গুনতে হয়েছে। যন্ত্রপাতিও কিছু কিছু পুরোনো হয়ে গেছে। তখন অনেকে বলেছিলেন কারখানাগুলো বিক্রি করে দিতে। কিন্তু সংকটে দমে যাওয়ার পাত্র নন কেউই। কারণ, তাঁরা জানতেন, ব্যবসায় ভালো সময়, খারাপ সময় থাকবেই। ধৈর্য নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। নোমান গ্রুপ তাই করেছে। সেই ধৈর্যের সুফল মিলেছে ২০১৫ সালে এসে। সাত বছর পর মিলেছে গ্যাস–সংযোগ, তাতে চালু হয় কারখানাগুলো। 

এ ছাড়া ২০১১ সালে বিশ্ববাজারে হঠাৎ করে তুলার দামে অস্থিরতা দেখা দেওয়ায় সে বছর ৮০০ কোটি টাকার বেশি লোকসান হয় নোমান গ্রুপের। কিন্তু কোম্পানিটি ব্যাংকঋণের চেয়ে নিজেদের অর্থে বিনিয়োগের নীতিকে বেশি গুরুত্ব দেয়। এ কারণে বড় ধরনের লোকসানের পরও ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন গ্রুপটির কর্ণধারেরা।

যে ব্যবসা বুঝি না, তা নয়
নোমান গ্রুপের ৩২টি প্রতিষ্ঠানের সব কটি পোশাক ও বস্ত্র খাতের। সব কটিই ব্যবসাসফল। তারপরও অন্য খাতের কোনো ব্যবসায় নিজেদের যুক্ত করলেন না কেন? জানতে চাই গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা নুরুল ইসলামের কাছে। জবাবে তিনি বলেন, জীবনের বড় অংশই আমি কাটিয়েছি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ব্যবসার সঙ্গে। কীভাবে তুলা থেকে সুতা হয়, সুতা থেকে কাপড়। কতটুকু তুলায় কত সুতা আর কত সুতায় কতটুকু কাপড় হয়—সব খুঁটিনাটি আমি জানি। এমনকি কোন মেশিনে কেমন উৎপাদন, খরচ কত কম হয়, তা–ও জানা রয়েছে আমার। তাই এ খাতের ব্যবসায় সবচেয়ে বেশি মনোযোগী হয়েছি। যে ব্যবসা আমি বুঝি না বা কম বুঝি, সেই ব্যবসা করার পক্ষপাতী আমি নই। সন্তানদেরও বলেছি, যে ব্যবসা বুঝবে না, সেই ব্যবসায় না জড়াতে। কারণ, তাতে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে।

নুরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো এমনভাবে পরিচালিত হয়, যেখানে প্রয়োজনের বেশি পণ্য তৈরি হয় না। এ কারণে আমাদের কারখানাগুলোতে পণ্যের অপচয় কম হয়। চাহিদা বুঝে আমরা পণ্য উৎপাদন করে থাকি।’

ভবিষ্যৎ ভাবনা
এ এস এম রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ভবিষ্যতে আমাদের সিনথেটিক কাপড়, পলিয়েস্টার ও সিনথেটিকস নির্ভর ফ্যাব্রিকস তৈরিতে বড় বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। নিজেদের ব্যবসাকে পোশাক ও বস্ত্র খাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে নতুন নতুন পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করার পরিকল্পনা আমাদের। পাশাপাশি রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধির মাধ্যমে শীর্ষ রপ্তানিকারকের স্বীকৃতি ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর।’

নুরুল ইসলামের ছেলে-মেয়ে পাঁচজন। তাঁদের মধ্যে সবার বড় একমাত্র মেয়ে নুর–ই–ইয়াসমিন ফাতেমা, তিনি বর্তমানে নোমান গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক। এরপর চার ছেলে। ছেলেদের মধ্যে সবার বড় নোমান গ্রুপের বর্তমান চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস এম রফিকুল ইসলাম। দ্বিতীয় ছেলে আবদুল্লাহ জাবের, তৃতীয় ছেলে আবদুল্লাহ মো. জোবায়ের ও সবার ছোট আবদুল্লাহ মো. তালহা। বড় ছেলে বাদে অন্যরা গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন। সূত্র: প্রথম আলাে 

রেকর্ড গড়া কনক

ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পাওয়ার টেকনোলজি বিষয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র কনক কর্মকার। পৈতৃক বাড়ি কুমিল্লার লাকসামে হলেও নোয়াখালীতে স্থায়ীভাবে থাকছে তাঁর পরিবার। কনক এরই মধ্যে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে চারবার নাম লিখিয়েছেন! গিটার, বাস্কেটবল, ফুটবল দিয়ে নানা রকম কসরত দেখিয়ে স্বীকৃতি পেয়েছেন কনক। ক্যাম্পাসে বন্ধুদের কাছে তাই তাঁর একটা আলাদা পরিচিতি আছে।

২০১৯ সালের ২৭ জানুয়ারি কপালের মাঝখানে ১ হাজার ১৫০টি কাগজের কাপ রেখে প্রথম রেকর্ড গড়েছিলেন। এরপর ২৫ মিনিট গিটার কপালে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের একজনের রেকর্ড ভেঙে ফেলেন তিনি। কনকের তৃতীয় রেকর্ড ছিল ১ মিনিটে ৩৬ বার বাস্কেটবল ঘাড় থেকে হাতে আর হাত থেকে ঘাড়ে নেওয়া। থুতনিতে গিটার রেখে যখন পার করে ফেললেন ১৫ মিনিট ৩৯ সেকেন্ড, সেই থেকে চারটি রেকর্ড তাঁর দখলে!

ইউটিউব দেখে দেখেই এসব শিখেছেন কনক কর্মকার। বলছিলেন, ‘শুরুতে আমি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষের কাছে ই-মেইল করি। আড়াই মাস পর তারা মেইলের জবাব দেয়। কীভাবে ভিডিও করে তাদের পাঠাতে হবে, সেসবের নির্দেশনা দেওয়া ছিল সেই মেইলে। পরে আমি ভিডিও পাঠালে মাসখানেক পরে তারা জানায়, আমি আগের রেকর্ডটি ভাঙতে পেরেছি।’

শুরুতে পরিবারের সদস্যদের সহায়তা পাননি। সবাই বলত, কী হবে এসব করে! কনক বলছিলেন, ‘এখন সবাই মোটামুটি আমার রেকর্ডের মর্ম বোঝে। গ্রামের বাড়ির লোকজনও খুশি। কলেজের টিচার, বন্ধুরা আমার কথা বিশ্বাস করত না। এখন করে। আমাকে সাহায্যও করে সবাই।’ ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের এই শিক্ষার্থী পড়ালেখার পাশাপাশি ১০টি রেকর্ড করতে চান। 

Sunday, September 15, 2019

পেঁয়াজের দামে রেকর্ড

নিজেদের বাজার সামাল দিতে পেঁয়াজ রপ্তানির ন্যূনতম মূল্য টনপ্রতি ৮৫০ ডলার বেঁধে দিল ভারত। আর এ খবরে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশের বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রায় ১৫ টাকা।

ঢাকার বড় বড় বাজারে এখন ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ ৭০ টাকা, দেশি কিং নামের একধরনের পেঁয়াজ ৬৫ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবারও দেশি পেঁয়াজ ৫০-৫৫ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৪৫-৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল।

দামটা বেড়েছে মূলত পাইকারি বাজারে। আর পাইকারি বাজারসংলগ্ন খুচরা বাজারে তাৎক্ষণিকভাবে প্রভাব পড়েছে। অন্যদিকে যেসব খুচরা ব্যবসায়ী গতকাল শনিবার পাইকারি বাজার থেকে পেঁয়াজ কিনেছেন, তাঁরাও বাড়তি দামে বিক্রি করছেন।

জানতে চাইলে পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের ব্যবসায়ী মো. আবদুল মাজেদ প্রথম আলোকে বলেন, এ বছর দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কম। এর মধ্যে ভারত ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য নির্ধারণ করে দিল। এতে দেশের বাজারে ইতিমধ্যে প্রভাব পড়েছে। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার শ্যামবাজারে দেশি পেঁয়াজের কেজি ৪৩-৪৫ টাকা ছিল, যা গতকাল ৬০ টাকায় ওঠে। একইভাবে ৪২-৪৩ টাকা কেজির ভারতীয় পেঁয়াজ উঠেছে ৫৭-৫৮ টাকায়।

দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ও জোগানের কোনো সঠিক হিসাব নেই। ব্যবসায়ীদের ধারণা, প্রতিবছর চাহিদার ৬০-৭০ শতাংশ পেঁয়াজ দেশে উৎপাদিত হয়। বাকিটা আমদানি হয়। আমদানির প্রায় পুরোটাই আসে ভারত থেকে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) হিসাবে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে ২৩ লাখ ৩০ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে আমদানি হয়েছে প্রায় ১০ লাখ ৯২ হাজার টন।

ভারতের দ্য হিন্দুর এক খবরে বলা হয়, দেশটির রাজধানী দিল্লিতে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৪০-৫০ রুপিতে উঠেছে। এ কারণে ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। দেশটির ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি) গত শুক্রবার এ-সংক্রান্ত নির্দেশনাটি জারি করে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই রপ্তানি মূল্য বহাল থাকবে।

রপ্তানি মূল্যের মানে হলো, ভারতীয় ব্যবসায়ীরা এখন থেকে টনপ্রতি ৮৫০ ডলারের কমে আর পেঁয়াজ রপ্তানি করতে পারবেন না। এই দরে আমদানি করলে বাংলাদেশে এফওবি (ফ্রেইট অন বোর্ড বা ভাড়া ছাড়া মূল্য) দাঁড়ায় কেজিপ্রতি প্রায় ৭২ টাকা। এর সঙ্গে কেজিতে ৫-৬ টাকা ভাড়া যুক্ত হবে।

ঢাকার কারওয়ান বাজারের পাইকারি পেঁয়াজ বিক্রেতা মো. আলমগীর হোসেন বলেন, শুক্রবার দুপুরেই তিনি প্রতি পাঁচ কেজি দেশি পেঁয়াজ ২৪০ টাকায় (৪৮ টাকা কেজি) বিক্রি করেছেন। গতকাল দুপুরে তা ৩৩০ টাকায় (কেজিপ্রতি ৬৬ টাকা) ওঠে। তিনি বলেন, এ বছর মৌসুমের শেষ সময়ে বৃষ্টিতে পেঁয়াজ পচে গেছে। এ কারণে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কম।

সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের তালিকায় পেঁয়াজ অতি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য।একটি মাঝারি পরিবারে মাসে গড়পড়তা পাঁচ কেজি পেঁয়াজ লাগে।

কারওয়ান বাজারের পাইকারি দোকান থেকে গতকাল পেঁয়াজ কিনছিলেন জিয়াউর রহমান। জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাঁচ কেজি পেঁয়াজ কেনার ইচ্ছা ছিল তাঁর, কিন্তু দাম আরও বাড়ার আশঙ্কায় ১০ কেজি কিনে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ঈদুল আজহার আগে আগস্টের শুরুতে তিনি ১০ কেজি পেঁয়াজ কিনেছিলেন ৩৫০ টাকায়। এখন দাম পড়েছে দ্বিগুণের মতো।

ভারত নিজের বাজার অস্থির হলেই পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য ঠিক করে দেয়। ২০১৫ ও ২০১৭ সালেও তারা রপ্তানি মূল্য বেঁধে দিয়েছিল। অবশ্য বাংলাদেশে মৌসুমের সময় প্রচুর ভারতীয় পেঁয়াজ আসে। এতে কৃষকেরা দাম পান না বলে অভিযোগ। এ জন্য মৌসুমের সময় ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানিতে কিছু শুল্ক আরোপের দাবি উঠেছিল। যদিও তা সাড়া পায়নি।

দেশে নতুন মৌসুম শুরু হবে আগামী ডিসেম্বরে। তখন আগাম পেঁয়াজ বাজারে আসবে। এর আগ পর্যন্ত আমদানির ওপরই নির্ভর করতে হবে।

এখন ভারতীয় পেঁয়াজ ছাড়া ভিন্ন উৎস আছে কি না—জানতে চাইলে আমদানিকারক আবদুল মাজেদ বলেন, সমস্যা হলো পাকিস্তানি পেঁয়াজ দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। চীনা পেঁয়াজ বাংলাদেশের মানুষ পছন্দ করে না। মিসরের পেঁয়াজ অনেক বড় বড়, চারটিতে এক কেজি হয়ে যায়। তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে কিছু পেঁয়াজ আসতে পারে। আমদানি হলে দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

দেশে ২০১৭ সালে এক কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ১৪০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। এযাবৎকালে সেটাই ছিল সর্বোচ্চ মূল্য। তখনো ভারত ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ায় প্রভাব পড়েছিল বাজারে।

বাংলাদেশে ১ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে আমিরাতের ব্যবসায়ীরা

বাংলাদেশে বড় ধরনের বিনিয়োগের কথা জানিয়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের ব্যবসায়ীরা। তাঁরা এ দেশে প্রায় ১ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৮৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ইকোনমিক ফোরাম আয়োজিত সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিনিয়োগের ঘোষণা দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। দুবাইয়ের কনরাড হোটেলে আজ রোববার এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনের মূল বক্তা প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। তাঁর পক্ষে নিযুক্ত জনসংযোগ প্রতিষ্ঠান ইমপ্যাক্ট পিআরের এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাংলাদেশের মধ্যে বিনিয়োগের ধারাকে আরও শক্তিশালী করতে দুই দেশের তিন শর বেশি সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী নেতা, বিনিয়োগকারী এবং উদ্যোক্তা দিনব্যাপী এ সম্মেলনে অংশ নেবেন। সম্মেলনে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এবং বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের (বিএইচটিপিএ) কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত ২০ সদস্যের সরকারি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে রয়েছেন সালমান এফ রহমান।


বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সংযুক্ত আরব আমিরাতের অধিকাংশ বিনিয়োগকারী বাংলাদেশি। সেখানে ৫০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি ব্যবসায়ী সফলভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতে দেড় লাখের বেশি বাংলাদেশি কর্মরত রয়েছেন।

দুবাই থেকে বিনিয়োগ আসা প্রসঙ্গে বিজ্ঞপ্তিতে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘আমরা সব সময় চীন, জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বড় ধরনের বিনিয়োগ দেখে আসছি। এখন আমরা বিশ্বাস করি, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে এগিয়ে আসবেন।’

সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরান বলেন, ‘গত বছর বাংলাদেশের অর্থনীতি ৭ দশমিক ৯ শতাংশ হারে উন্নীত হয়েছে এবং আমরা আশা করছি এই বছর নাগাদ তা ৮ দশমিক ৩ শতাংশে পৌঁছাবে।

ঢাকায় এরোপ্লেন মসজিদ

এলিফ্যান্ট রোডের সবাই একনামে চেনে—এরোপ্লেন মসজিদ। শুধু এলিফ্যান্ট রোডের লোকজন কেন, ঢাকার পুরোনো বাসিন্দারাও চেনে এই মসজিদ। মসজিদটির নাম সবার মুখে মুখে থাকার কারণ এর ব্যতিক্রর্মী স্থাপত্যশৈলী। পাঁচতলাবিশিষ্ট মসজিদ ভবনের ছাদে রয়েছে একটি উড়োজাহাজের মডেল। এটি ষাটের দশকের মসজিদ। সে সময় ঢাকায় এমন ভবন একেবারেই নতুন।

মসজিদটির প্রতিষ্ঠাতা মো. ইসমাইল। ১৯৮১ সালে তিনি মারা যান। আজ রোববার কথা হলো মো. ইসমাইলের ছোট ছেলে এস এম আনিসুর রহমানের সঙ্গে। তিনি জানালেন, তাঁর দাদা মো. ইব্রাহিম ছিলেন ঢাকার নবাবদের স্টেটের মুনশি। সে সুবাদে নীলক্ষেত ও লালমাটিয়া এলাকায় তিনি আনুমানিক দুই হাজার বিঘা জমির মালিকানা পান। বাবার মৃত্যুর পর ইসমাইল নিজেদের প্রায় ৯ কাঠা জমির ওপর ১৯৬০ সালে মসজিদটির নির্মাণকাজ শুরু করেন। আনিসুর রহমান বললেন, ‘শুরুর দু–তিন বছরের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হয়। তখন মসজিদটি ছিল একতলা। একতলার ছাদের ওপর স্থাপন করা হয় উড়োজাহাজের আদলের একটি মডেল।’

স্বাধীনতার পর ভবনটি দোতলা করা হয়। যতবার ভবনের উচ্চতা বেড়েছে, ততবার উড়োজাহাজের মডেলটিকেও ওপরে তোলা হয়েছে। বর্তমানে এটি পাঁচতলা ভবন। ভবনের মিনারের চূড়ায় ৬০ বছরের পুরোনো সেই উড়োজাহাজটি স্থাপন করা হয়েছে। ১৯৭৯ সালে মসজিদটি ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ২০০২ সালে চালু হয় আবাসিক মাদ্রাসা।

সময় বদলেছে, মসজিদ বড় হয়েছে, বদলেছে সড়কের নামও। সড়কটির বর্তমান নাম শহীদজননী জাহানারা ইমাম সরণি। কিন্তু মসজিদটির ছাদে এখনো আছে সেই ‘এরোপ্লেন’টি। মসজিদেই কথা হলো মসজিদের সহকারী ইমাম সৈয়দ মো. বাকি বিল্লাহর সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘এটি একটি ঐতিহ্যবাহী মসজিদ। ঢাকায় এমন মসজিদ আর পাবেন না। মানুষ মসজিদটি দেখতে আসেন, নামাজ পড়েন—ভালো লাগে।’ তিনি জানালেন, মসজিদে বর্তমানে একজন খতিব, তিনজন ইমাম, একজন মোয়াজ্জিন, দুজন শিক্ষক, তিনজন খাদেম, দুজন প্রহরী এবং ৩০ জন আবাসিক শিক্ষার্থী রয়েছে। মসজিদ পরিচালনার দায়িত্বে আছেন প্রয়াত মো. ইসমাইলের পরিবারের সদস্যরা। মসজিদের অধীনে কিছু দোকান রয়েছে। দোকানভাড়া ও দানবাক্সে পাওয়া অর্থ দিয়েই প্রধানত মসজিদটি পরিচালিত হয়।

মসজিদের নাম এরোপ্লেন রাখার কারণ কী—এমন প্রশ্নের উত্তরে এস এম আনিসুর রহমান বললেন, ‘আব্বা মসজিদটিকে একটি ল্যান্ডমার্ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। তখন ছাতা মসজিদ, জাহাজ মসজিদ ইত্যাদি নামে মসজিদ ছিল। তিনি সম্ভবত চেয়েছিলেন এরোপ্লেন প্রতীকের কারণে মসজিদকে একনামে সবাই চিনুক।’ সূত্র: প্রথম আলো

Thursday, September 12, 2019

টাকার খোঁজে সরকার

খরচ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। ব্যয়ের খাত কেবল বড়ই হচ্ছে, অথচ আয়ে আছে বড় ঘাটতি। ব্যয়ের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ নেই সরকারের কাছে। বরং টাকার সংকটে আছে সরকার। 

সরকার পরিচালনার খরচ বেড়েছে। বাড়ানো হয়েছে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা। বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নেওয়ায় সুদ পরিশোধ ব্যয়সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আকার বাড়ছে উন্নয়ন ব্যয়ের। আরও আছে বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের বিপুল আগ্রহ। 

সব মিলিয়ে সরকারের ব্যয়ের তালিকা দীর্ঘ। কিন্তু রাজস্ব আয়ের বাইরে সরকারের জন্য অর্থের উৎস হচ্ছে ঋণ নেওয়া। আর এই ঋণ এখন অত্যন্ত ব্যয়বহুল। ফলে সরকার অর্থ সংস্থানের নানা উপায় খুঁজছে। যেমন স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার অলস অর্থ নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন, মহাসড়ক থেকে টোল আদায়, টেলিকম কোম্পানির কাছ থেকে চাপ দিয়ে অর্থ আদায় ইত্যাদি। সরকার এখন যেকোনোভাবে অর্থ পেতে যে মরিয়া, এটি তারই প্রমাণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আবার সরকারের ব্যয় বাড়লেও এর স্বচ্ছতা নিয়েও আছে নানা প্রশ্ন। প্রকল্প বাস্তবায়নে দুর্নীতি, একতরফাভাবে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি, জবাবদিহির অভাব, জনগণের করের টাকায় সরকারি বিভিন্ন অদক্ষ প্রতিষ্ঠান পরিচালনা, করের বোঝা বৃদ্ধি—এসব নিয়েও আছে নানা সমালোচনা। 

বড় ব্যয়, কম আয়

২০১৮-১৯ অর্থবছরে সরকারের রাজস্ব আয়ে মোট ঘাটতি ছিল ৭২ হাজার কোটি টাকা। তবে পরবর্তী সময়ে বাজেট সংশোধন করলেও রাজস্ব আয়ে মোট ঘাটতি দাঁড়ায় ৫৬ হাজার কোটি টাকা। আয়ে বড় ঘাটতি নিয়েই শুরু হয়েছে নতুন ২০১৯-২০ অর্থবছর। 

কর-জিডিপির অনুপাতের দিক থেকে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে সর্বনিম্ন অবস্থানে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় নিজেই বলেছেন, ‘দেশে ৪ কোটি নাগরিক মধ্যম আয়ের অন্তর্ভুক্ত থাকলেও আয়কর দেয় মাত্র ২১-২২ লাখ।’ আয় বাড়াতে গত ১ জুলাই নতুন ভ্যাট আইন চালু করা হলেও ব্যবসায়ীদের চাপে তা অনেকটা প্রায় আগের আইনের মতোই রয়ে গেছে। এ থেকে রাজস্ব আদায়ে বড় কোনো পরিবর্তন আসবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন না। আবার উৎসে কেটে নেওয়া হয় বলে চাকরিজীবীদের কাছ থেকেই আয়কর বেশি পায় সরকার। যাঁরা ফাঁকি দেন, তাঁরা বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাইরে আছেন। সব মিলিয়ে সরকারের আয় বাড়ানোর পথ এখনো অনেকটাই সীমিত হয়ে আছে। 

তারপরও চলতি অর্থবছরের জন্য সরকারের ব্যয় পরিকল্পনা বিশাল, প্রায় সোয়া ৫ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে উন্নয়ন ব্যয় ২ লাখ ১১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা, বাকিটা সরকারের পরিচালন ব্যয়। আয় ও ব্যয়ের মধ্যে পার্থক্য প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা। 

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের বিপুল অর্থ খরচের চাহিদা আছে। কিন্তু সরকার এখন আয় করার কঠিন পথে না গিয়ে সহজ পথে হাঁটার চেষ্টা করছে। রাজস্ব আদায়ের পরিধি বাড়ানোর দিকেই সরকারের এখন নজর দেওয়া উচিত। তা না করে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে টাকা নিতে চায়। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হতে চাই। কিন্তু এত কম রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত দিয়ে তা সম্ভব নয়। তাই অর্থ সংগ্রহের সহজ পথে না গিয়ে রাজস্ব খাত সংস্কারের কঠিন পথেই যেতে হবে।’ 

ঋণের ফাঁদে সরকার

এদিকে, আয়ের তুলনায় ব্যয় যত বাড়ছে, সরকারও তত বেশি ঋণের ফাঁদে পড়ছে। যেমন গত অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকারের অর্থায়নের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১১ হাজার ৯০ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরেও তা ছিল সাড়ে ৮৭ হাজার কোটি টাকা। সরকারের নেওয়া মোট অভ্যন্তরীণ ঋণ এখন জিডিপির প্রায় ১৭ শতাংশ।

গত ১০ বছরে সরকার সবচেয়ে বেশি বাড়িয়েছে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা। এতে দুর্নীতি না কমলেও ব্যয় বেড়েছে বিপুল। মোট বাজেটের ২৮ শতাংশই খরচ হয় বেতন, ভাতা ও পেনশন খাতে। আরেকটি বড় খাত হচ্ছে সুদ পরিশোধ, প্রায় সাড়ে ১৮ শতাংশ। সরকার প্রতিবছর ঋণ করে ঘাটতি মেটাচ্ছে। আর এ ঋণের বড় অংশই আসছে ব্যাংকিং ব্যবস্থা ও সঞ্চয়পত্রের মতো অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে। সঞ্চয়ের নিরাপদ বিকল্পের অভাব ও জনপ্রিয়তা হারানোর ভয়ে সরকার সঞ্চয়পত্রের সুদের হারও কমাতে পারছে না। এতে সুদ পরিশোধ ব্যয়সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। বিশাল বাজেট-বড় ঘাটতি-ব্যয়বহুল ঋণ-সুদ পরিশোধ-আবার বড় বাজেট-আবার ঘাটতি-আরও সুদ পরিশোধ—এভাবেই ঋণের এই ফাঁদে পড়ে আছে বাংলাদেশ। 

অর্থের সন্ধানে সরকার

স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ—এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে এখন প্রায় সোয়া ২ লাখ কোটি টাকা আছে। সরকারের নজর এখন এখানে। এই অর্থের ৭৫ শতাংশ নিয়ে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় করতে একটি নতুন আইনের খসড়া অনুমোদন করেছে মন্ত্রিপরিষদ। 

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিডিপি) সদস্য শামসুল আলম এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার সিদ্ধান্তটি অর্থনীতির জন্য খুব ইতিবাচক। এসব প্রতিষ্ঠান তো সরকারেরই। এই উদ্যোগ কার্যকর হলে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা পাওয়া যাবে, যা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) সমান। সরকার এখন বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, টাকার দরকার আছে। 

তবে সরকারের এই পরিকল্পনায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এতে তারল্যসংকটে থাকা ব্যাংকিং খাতে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাংকগুলো থেকে টাকা তুলে নিলে বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হবে। সরকার কীভাবে বিষয়টি ব্যবস্থাপনা করবে, এটা বড় বিষয়। কারণ, বেসরকারি, বিশেষত নতুন ব্যাংকগুলো এসব টাকার ওপর নির্ভর করেই চলছে। 

এদিকে, টেলিযোগাযোগ খাতের বড় দুই কোম্পানি গ্রামীণফোন ও রবির কাছে ১৩ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা পাওনা আদায়ে নানাভাবে চাপ দিচ্ছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এর কোনো সুরাহা হচ্ছে না। বরং চাপ দিয়ে অর্থ আদায় করা সম্ভব বলে সরকারের একটি পক্ষের ধারণা। 

পাশাপাশি ৩ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে দেশের জাতীয় মহাসড়ক ব্যবহারের ওপর টোল আদায়ের নির্দেশ দেন। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল বুধবার এ নিয়ে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘দেশের মহাসড়কে টোল আদায়ে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের পর এখান থেকে সরে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। প্রধানমন্ত্রী নিজেই যেহেতু ঘোষণা দিয়েছেন এরপর তো নড়ন-চড়নের কোনো বিষয় নেই।’ চারটি মহাসড়কে টোল আরোপের বিষয়ে প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান তিনি। 

মহাসড়কে টোল আদায় করা হলে সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের ব্যয় বেড়ে যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান এ বিষয়ে বলেন, অনেক দেশেই সাধারণ সড়কের বিকল্প হিসেবে টোল রোড থাকে। সেখানে নিরবচ্ছিন্ন গতি ও রাস্তা ভালো থাকে বলে বাড়তি খরচ দিলেও চাপ তৈরি হয় না। বাংলাদেশে রাস্তাঘাট যদি একই থাকে, চলাচল নিরবচ্ছিন্ন না হয়, তাহলে টোলের কারণে মানুষের ব্যয় বাড়বে। 

খরচ বেশি, জবাবদিহি কম

সরকার এখন ১১টি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এই ১১ প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা আছে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা। বেশির ভাগ বড় প্রকল্পেই খরচ ও বাস্তবায়নের সময় বেড়েছে। এতে এর অর্থনৈতিক উপযোগিতাও কমছে। আবার সরকার এখন প্রকল্প বাস্তবায়নে বিদেশি সহায়তার তুলনায় স্থানীয় উৎস থেকে বেশি অর্থ ব্যয় করছে। এই অর্থ ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিয়েও আছে নানা প্রশ্ন। ফলে প্রকল্পে একেকটি বালিশের দাম পড়ছে ৬ হাজার টাকা, চিকিৎসাবিজ্ঞানের একটি বই কেনা হচ্ছে ৮৫ হাজার টাকায়, আর পর্দার দাম হয়ে যাচ্ছে ৩৭ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে এখন তহবিল ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের ঘাটতি একদিকে দুর্নীতি বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের ওপর করের বোঝাও চাপছে। 

সামগ্রিক বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, সরকার অনেক অপ্রয়োজনীয় ব্যয় করছে। ১ টাকার কাজ ৫ টাকায় হচ্ছে। জনগণের সম্পদের স্বচ্ছ ব্যবহার করা গেলে এমনটি হতো না। এটা রাজস্ব ব্যবস্থাপনার একটা বড় দুর্বলতা। 

সালেহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, দেশীয় উৎস থেকে ঋণ করলে খরচের জবাবদিহি কম। বিদেশি ঋণে অনেক শর্ত থাকে। এ জন্য সরকার দেশীয় উৎসের দিকেই ঝুঁকছে। এতে দেশের ব্যবসায়ীদের ঋণ নেওয়ার সুযোগ যেমন কমে আসছে, তেমনি করের বোঝা কিন্তু শেষ পর্যন্ত জনগণের ওপর পড়ছে। এটা ভালো লক্ষণ নয়। লেখক: শওকত হোসেন, সাংবাদিক

Wednesday, September 11, 2019

রংপুরের স্বপ্নবাজ শিল্পপতি সফিকুল আলম সেলিম

গমগাছের খড় দিয়ে দেড় হাজার ছবি বানিয়ে ১৯৮৬ সালে ঢাকার শিল্পমেলায় একটি স্টল দিয়েছিলেন। মনে করছিলেন অনেক বিক্রি হবে, কিন্তু কোনো ছবি বিক্রি হলো না। ছবিগুলো ছিল দেশ–বিদেশের বরেণ্য গুণী ব্যক্তিসহ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের। ছবি বিক্রি না হওয়ায় হতাশই হলেন। 

এরপর তিনি স্টলে টাঙিয়ে দিলেন ‘আপনি কি আপনার ছবি গমের শিষ দিয়ে বানাতে চান?’ এরপরই অর্ডার আসতে থাকে। প্রতিদিন গড়ে ১০টি করে ছবি বানাতে থাকেন। বিক্রিও বেশ হয়। এতে উৎসাহিত হয়ে ফিরে আসেন রংপুরে। ভাবতে থাকেন, হস্তশিল্পের কাজ করবেন। ১৯৮৭ সালে ছাত্ররাজনীতি করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়ে রংপুর কারাগারে যান। কারাগারে তাঁতচালী ছিল, সেখানে কয়েদিরা হস্তশিল্পে বুননের কাজ করেন। সেই কাজ তিনি তিন মাস দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছেন। জেল থেকে বেরিয়ে সেই বুননের কাজে ঝুঁকে পড়েন। গল্পে গল্পে এসব কথা জানালেন সফিকুল আলম সেলিম। 

১৯৯১ সালে ‘কারুপণ্য’ নামে রংপুরের ঐতিহ্যবাহী শতরঞ্জি বুননের ছোট্ট একটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে সফিকুল সেলিমের যাত্রা শুরু হয়। এরপর প্রায় ২৮ বছর পেরিয়ে গেছে। কারুপণ্য এখন রংপুরের ‘হারিয়ে যাওয়া’ শতরঞ্জি ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার ৩৬টি দেশে রপ্তানি করে। গেল বছর রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৩৬ কোটি টাকা। 

স্কুলে অকৃতকার্য হওয়ায় ঘর থেকে বিতাড়ন, আবার বিদ্যালয়ে সেরা ছাত্র হয়ে বিনা খরচে পরবর্তী শ্রেণিতে ভর্তি, ছাত্ররাজনীতি, জেলখাটা ইত্যাদি নানা কিছু মিলিয়ে সফিকুল সেলিমের বর্ণময় জীবন। 

সফিকুল সেলিম বললেন, তাঁর বাবা মরহুম এম এ সোবহান ছিলেন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ। বাবার কারণে তিনিও ছোটবেলা থেকে জড়িয়ে পড়েন ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে। ১৯৮০ সালে রংপুর ক্যাডেট কলেজে অষ্টম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হতে না পারায় তাঁকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর নিজের চেষ্টায় ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে প্রথম হয়ে বিনা টাকায় স্কুলের নবম শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ পান। কিন্তু স্কুল ফাঁকি দেওয়ার কারণে সেখানেও আর পড়তে পারলেন না। এরপর অন্য একটি স্কুল থেকে ১৯৮২ সালে এসএসসি ও ১৯৯১ সালে রংপুর সরকারি কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স পাস করেন। 

১৯৮৭ সালে এরশাদ সরকারের আমলে জেলে যাওয়ার গল্প আগেই বলা হয়েছে। জেল থেকে বেরিয়ে পরিকল্পনা করেন হস্তশিল্প কারখানা গড়ে তোলার। রংপুর প্রেসক্লাবে (সাবেক) বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থার (বিসিক) বন্ধ থাকা হস্তশিল্পের একটি দোকান ভাড়া নিয়ে শতরঞ্জির বিপণনকেন্দ্র চালু করেন। হারিয়ে যাওয়া শতরঞ্জি শিল্পের সঙ্গে জড়িত থাকা ২০ জন কারিগরকে তিনি খুঁজে বের করেন। সেই পুরোনো কারিগরদের দিয়ে নতুনদের প্রশিক্ষিত করিয়ে শতরঞ্জি বুননের কাজ শুরু হয়। 

১৯৯১ সালে গড়ে তোলেন কারুপণ্য নামের দোকানটি। লোকজনের অর্ডার পেয়ে কারিগরদের দিয়ে শতরঞ্জি সরবরাহ করতে থাকেন। এতে সামান্য আয় হয়। ভাবলেন, এখানেই থেমে থাকলে হবে না। শতরঞ্জি বিক্রির জন্য ব্যাপক প্রচারণায় নামলেন। সাড়াও পেলেন। শতরঞ্জি বানিয়ে দেশের বিভিন্ন শিল্প ও বাণিজ্য মেলায় স্টল দেন। একপর্যায়ে শতরঞ্জির চাহিদা বাড়তে থাকে। পরবর্তী সময়ে ঢাকায় ‘শতরঞ্জি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান দেন। 

এখানেই শেষ নয়। শতরঞ্জির বাজার তৈরি করতে বিদেশি ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে হন্যে হয়ে ঘুরতে থাকেন বিদেশি ক্রেতাদের কাছে। ২০০২ সালে প্রথম জাপানে শতরঞ্জি রপ্তানির সুযোগ পান। শুধু জাপান নয়। এই পণ্য পৃথিবীর আরও অনেক দেশে রপ্তানি হতে পারে। ভাবলেন, হস্তশিল্প ‘শতরঞ্জি’ তৈরির কারখানা গড়ে তুলবেন। রংপুর শহর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার পশ্চিমে নিসবেতগঞ্জ গ্রামে বিসিকের বন্ধ থাকা একটি দোচালা ছোট্ট কারখানা ভাড়া নেন। সেখানে ওই গ্রামের ৫০ জন নারী-পুরুষকে নিয়ে কারখানাটি চালু করেন। শুরু করেন বুনন শতরঞ্জি। 

ব্যবসা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ‘কারুপণ্য রংপুর লিমিটেড’ নামে প্রতিষ্ঠানের নাম দিলেন। গড়ে তুললেন একে একে পাঁচটি কারখানা। এগুলো হলো রংপুরের লাহিড়ীর হাট, পদাগঞ্জ, পীরগাছা, রবার্টসনগঞ্জ ও কুড়িগ্রামের উলিপুরে। বর্তমানে এসব কারখানায় ছয় হাজার শ্রমিক কাজ করেন। 

রংপুর শহরের রবার্টসনগঞ্জে শতরঞ্জির একটি সবুজ কারখানা রয়েছে। এ কারখানা যেন সবুজের সমারোহ। সবুজ বাগান। নানা প্রজাতির গাছগাছালিতে ছেয়ে আছে ইটপাথরের দালান। ঝুলছে লতাপাতা। সব মিলিয়ে নান্দনিক পরিবেশ। কারখানার বুক চিরে যেন সবুজ হৃদয়। ভবনের ছাদেও সবুজের বাগান। নাম দেওয়া হয়েছে ‘নন্দিনী পার্ক’। ছাদের মধ্যে গাছের ফাঁকে ফাঁকে বসার জন্য ছোট ছোট বেঞ্চ। বেঞ্চগুলোতেও শিল্পীর রং–তুলিতে কারুকার্যময় নান্দনিকতার ছোঁয়া আছে। আছে পানির ফোয়ারা, সেখানে আছে পদ্মফুল। দুপুরের খাবার বিরতিতে প্রাকৃতিক পরিবেশে শ্রমিকদের আহার করতে দেখা যায় সেখানে। 

শতরঞ্জিশিল্পে নারীর প্রতীক হয়ে কারখানার সামনে সবুজ বাগানের মধ্যে দাঁড়িয়ে রয়েছে ৩০ ফুট উঁচু একটি ভাস্কর্য। নাম দেওয়া হয়েছে ‘বনলতা’। এটি একটি উন্মুক্ত মঞ্চও। এই মঞ্চের সামনেই কারখানার প্রশস্ত সিঁড়ি। সিঁড়িগুলোকে ব্যবহার করা হয় দর্শকদের বসার জায়গা হিসেবে, যা উন্মুক্ত গ্যালারি। দুটি সিঁড়িতে একসঙ্গে হাজারখানেক দর্শক বসে অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারেন। বিশেষ বিশেষ দিনে শ্রমিকদের মনোরঞ্জনের জন্য আয়োজন করা হয় বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠানে শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা অংশ নিয়ে থাকেন। 

প্রতিদিন দিন-রাতে দুই শিফটে এখানে শতরঞ্জি বোনেন প্রায় ছয় হাজার নারী-পুরুষ, যার ৯০ শতাংশই নারী। শ্রমিকদের সেবার জন্য সেখানে রয়েছে সেবা বিভাগ। একজন চিকিৎসকের নেতৃত্বে বিনা মূল্যে তাঁদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান ও প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হয়। মাসিক বেতন ও লেনদেনে শ্রমিকেরা যাতে খুব সহজে ব্যাংকিং সুবিধা পান, সে জন্য তাঁদের হাতের কাছেই রয়েছে এটিএম বুথ। সুন্দর পরিবেশে খাবারের ক্যানটিন রয়েছে। কারখানায় কর্মরত নারী শ্রমিকেরা কারখানায় তাঁদের সন্তানদের নিয়ে যেতে পারেন। সে জন্য রয়েছে চাইল্ড কেয়ার। শিশুদের দুধ ও খাবার দেওয়া হয় বিনা মূল্যে। 

‘কারুপণ্য’ দেশের রপ্তানিতে অন্যান্য অবদানের জন্য হস্তজাতশিল্প পণ্য রপ্তানি খাতে আটবার সেরা রপ্তানিকারক হিসেবে ট্রফি অর্জন করেছে।সফিকুল আলম সেলিমের বাড়ি রংপুরের গুপ্তপাড়ায়। তিন ভাই, তিন বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। তাঁর স্ত্রী সুরাফা হোসেন। সন্তান দুটি। 

সফিকুল সেলিম বললেন, শতরঞ্জি এখন শুধু রংপুরের ঐতিহ্য নয়, এটি বাংলাদেশের ঐতিহ্য। রংপুরের অজপাড়াগাঁ থেকে শুধু যে হস্তশিল্প রপ্তানি হচ্ছে তা নয়, এখানকার হতদরিদ্র মানুষও কাজের সুযোগ পাচ্ছেন। অভাব দূর হচ্ছে। সুযোগ পাচ্ছেন। অভাব দূর হচ্ছে। সূত্র : প্রথম আলো

Tuesday, September 10, 2019

একজন আনিস উদ দৌলা'র বেড়ে ওঠা

বাবা বলেছিলেন, তুমি যা হতে চাও, তা–ই হও। নিজে হতে চেয়েছিলেন প্রকৌশলী। যদিও তা আর হওয়া হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন পদার্থবিদ্যায়। গণিতের যন্ত্রণায় মাঝপথে ছেড়ে দিয়ে ভর্তি হলেন করাচিতে একটি ইনস্টিটিউটের লোকপ্রশাসন বিভাগে। বিদেশি এক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার সুবাদে নাম লেখালেন উদ্যোক্তার তালিকায়। এরপর রচিত হলো এসিআইয়ের রূপকথা; যেটি এখন বাংলাদেশের শিল্প খাতের একটি অনন্য ব্র্যান্ড, মানুষের আস্থার নাম, কর্মীদের ভালোবাসার নাম।

গল্পটি এম আনিস উদ দৌলার, এসিআইয়ের চেয়ারম্যান। এ দেশের কয়েকজন সফল উদ্যোক্তার তালিকা করলে আনিস উদ দৌলার নামটি রাখতেই হবে। অনেক ক্ষেত্রে তিনি আবার অনন্য। দেশের যে কয়েকজন উদ্যোক্তা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে ব্যক্তিনির্ভর না রেখে করপোরেটে রূপ দিয়েছেন, দেশীয় প্রতিষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মানের ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করেছেন, সুপরিচিত দেশীয় ব্র্যান্ড তৈরি করেছেন, তাঁদের মধ্যে একজন আনিস উদ দৌলা।

আনিস উদ দৌলার এসিআই এখন বছরে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা লেনদেন বা টার্নওভারের ব্যবসায়ী গোষ্ঠী। এর অধীনে কোম্পানি আছে প্রায় ২৫টি। ওষুধ, কৃষি, অটোমোবাইল, ভোগ্যপণ্য, সুপারস্টোর মিলিয়ে বহু খাতে তাদের ব্যবসা। অনেক পণ্যের বাজারেই তারা শীর্ষস্থানীয়।

আনিস উদ দৌলার গল্প শুনতে গত বুধবার গিয়েছিলাম রাজধানীর তেজগাঁওয়ে তাঁর কার্যালয়ে। ভাড়া ভবনে সাদামাটা অফিস। আনিস উদ দৌলার কক্ষটিও সাধারণ, সব জায়গায় মিতব্যয়িতার ছাপ। আনিস উদ দৌলা বললেন, এসিআইয়ের অনেক কোম্পানিরই অভিজাত কার্যালয় রয়েছে। তবে তাঁর নিজের জীবন পুরোটাই পরিমিতিবোধের। তাই কার্যালয়েও পরিমিতির ছাপ।

আমরা জন্ম, বড় হওয়া, উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প শুনলাম প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে। তিনি স্বল্পভাষী। কথা বলেন নিচুস্বরে, ধীরে। সবকিছুতেই গাম্ভীর্য ও ব্যক্তিত্বের ছাপ। পুরো সময়ে আনিস উদ দৌলা একবারই শুধু হেসেছেন। সেটা পরে বলছি।

আনিস উদ দৌলার জন্ম ১৯৩৪ সালে, ফরিদপুরে। সাত ভাইবোনের মধ্যে ছয় নম্বর তিনি। তাঁর মা রত্নগর্ভা। পিতাও সন্তানদের আজকের শৃঙ্খলাবদ্ধ সুপ্রতিষ্ঠিত জীবন দেখে নিশ্চয়ই গর্বিত হতেন। কারণ, তিনি (আনিস উদ দৌলার বাবা) চেয়েছিলেন, সন্তানেরা সব সময় শৃঙ্খলার মধ্যে থাকুক। প্রতিষ্ঠিত হোক।

তিন বেতের কৈশোর
আনিস উদ দৌলা গল্প শুরু করলেন কৈশোর থেকে। তাঁর বাবা ছিলেন সরকারি কৌঁসুলি। সন্তানদের ইংরেজি শেখার ওপর ব্যাপক জোর ছিল তাঁর। রাতে ইংরেজি গ্রামার আর নামতা না পড়িয়ে তিনি সন্তানদের ঘুমাতে দিতেন না। নিয়মকানুন ছিল কঠোর।

আনিস উদ দৌলা বলেন, ‘বাবা আমাদের তিন ভাইয়ের জন্য তিন আকারের তিনটি বেত রাখতেন। বড় ভাইয়ের জন্য বড়, আমার জন্য মাঝারি, আর ছোট ভাইয়ের জন্য ছোটটি। সেটা ছিল আমাদের নিয়মের মধ্যে রাখার হাতিয়ার। অবশ্য আমাদের মধ্যে নিয়মের বিচ্যুতি একেবারেই হতো না।’

বাবার কাছ থেকে শৃঙ্খলার পাশাপাশি সততাও শিখেছেন আনিস উদ দৌলা। তিনি জানান, সেই সময় সরকারি কৌঁসুলিদের অবৈধ অর্থ আয়ের অনেক সুযোগ ছিল। কিন্তু তাঁর বাবা কখনো সেই পথে যাননি। পরিবারে আর্থিক অনটন ছিল না, কিন্তু বিলাসিতাও ছিল না।

গণিতের যন্ত্রণা
ফরিদপুরের জিলা স্কুল ও রাজেন্দ্র কলেজ থেকে পড়ে ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যায় ভর্তি হন আনিস উদ দৌলা। পড়াশোনার চেয়ে খেলাধুলায় মনোযোগ ছিল বেশি। তিনবার খেলার সেরা বা স্পোর্টস চ্যাম্পিয়ন (লাফ ও দৌড়) হয়েছিলেন। ক্রিকেটে ওপেনিং বোলার ছিলেন তিনি। গণিত তাঁর বিশেষ পছন্দ ছিল না। কিন্তু পদার্থবিজ্ঞানের প্রায় পুরোটাই গণিত।

এরই মধ্যে আনিস উদ দৌলা একদিন বিভাগে এশিয়া ফাউন্ডেশনের একটি বৃত্তির বিজ্ঞপ্তি দেখলেন, যেখানে করাচির একটি ইনস্টিটিউটে পড়ার সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হয়। সেটি আবার চালাত আমেরিকানরা। ‘আই কিউ’ পরীক্ষাপ্রার্থী ছিলেন ৩০০ জন। আনিস উদ দৌলা বৃত্তিটি পেলেন, করাচিতে লোকপ্রশাসনে ভর্তি হলেন। তাঁর মতে, এটাই তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল।

আনিস উদ দৌলা বলেন, ‘পশ্চিম পাকিস্তানে গিয়ে নিজের মধ্যে পিছিয়ে থাকার হীনম্মন্যতা বোধ হয়নি। বাঙালিদের বড় দুর্বলতা ছিল ইংরেজি না জানা। আমি খুব ভালো ইংরেজি জানতাম।’

১৯৫৯ সালে স্নাতকোত্তর শেষ হয়। ইচ্ছা ছিল সিএসপি পরীক্ষা দিয়ে সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়ার। সিএসপি দিলেন। পরীক্ষা ভালো হলো। মৌখিক পরীক্ষা দিতে হবে, এর মধ্যে কয়েকটি বেসরকারি চাকরির আবেদন করলেন। চাকরি হলো পাকিস্তান অক্সিজেনে, আঞ্চলিক শাখা ব্যবস্থাপক পদে। এরই মধ্যে সিএসপির মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকল। তিনি পাকিস্তান অক্সিজেনের মহাব্যবস্থাপকদের একজন ছিলেন ব্রিটিশ নাগরিক। তাঁর কাছে আনিস উদ দৌলা জানতে চাইলেন, পরীক্ষা দিতে যাবেন কি না। উত্তর পেলেন, আড়াই হাজার টাকা মাইনা ছেড়ে ৭৫০ টাকার চাকরিতে যাওয়ার দরকার কী। এই ব্যবধান তো সারা জীবনই থাকবে।
আর সরকারি চাকরিতে যাওয়া হলো না আনিস উদ দৌলার।

চারটি প্রশ্ন

ব্যবসায়ের মূলনীতি কী
‘মানুষের জীবনমানের উন্নতি’—এটাই এসিআইয়ের মূলনীতি। এসিআইও জীবনমানের উন্নতিতে ভূমিকা রাখে, এমন পণ্যের ব্যবসা করে। ভবিষ্যতে সম্প্রসারণেও সেটা মাথায় রাখে।

সফলতার কারণ
এসিআইয়ের সফলতার কারণ তিনটি। যেমন এক. পণ্যের মান রক্ষা। দুই. কর্মীদের ভালো রাখা। কারণ, কর্মীরা ভালো থাকলে নিজের সবটুকু প্রতিষ্ঠানকে দেয়। তিন. ক্রেতার আস্থা ও নীতিনির্ধারকদের বিশ্বস্ততা অর্জন।

নতুনদের প্রতি পরামর্শ
এক. নিজেকে তৈরি করতে হবে। কিছু একটা ক্ষেত্রে পারদর্শিতা অর্জন করতে হবে। যা তাঁকে আলাদা করবে। দুই. যে কাজটি পছন্দ, সেটিই করতে হবে। তিন. চটজলদি সফলতা পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।

সরকারের উদ্দেশে
স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশের অর্জন অসামান্য। তবে সমাজে দুর্নীতি কম থাকলে অর্জন আরও বেশি হতো। তাই সরকারের উচিত দুর্নীতি দমনে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া।

পাকিস্তানিদের অক্সিজেন বন্ধ
পশ্চিম পাকিস্তানে বিভিন্ন জায়গায় চাকরির পর ১৯৭০ সালে ঢাকায় বদলি হন আনিস উদ দৌলা। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে মুক্তির আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিমে টাকা পাঠাতে নিষেধ করে দিয়েছেন। তখন পাকিস্তান অক্সিজেনের পণ্য বিক্রির টাকা পশ্চিম পাকিস্তানে যেত, পরে খরচের টাকা আসত। আনিস উদ দৌলা পাকিস্তান অক্সিজেনকে চিঠি লিখলেন, আর টাকা পাঠানো যাবে না। এর বদলে ব্যাংকে হিসাব খুলে সেই টাকা রাখা শুরু হলো।

আনিস উদ দৌলা জানান, মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর বিমানবাহিনীতে যাতে অক্সিজেন সরবরাহ করতে না হয়, এ জন্য তাঁরা ইচ্ছে করে কারখানা বন্ধ করে দিলেন। বললেন, সংস্কার করতে হবে। নথিপত্র এমনভাবে তৈরি করলেন, যাতে সেটা ধরা না যায়। এতে পাকিস্তানি বিমানবাহিনীর অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হলো, যা উড়োজাহাজ চালাতে লাগে।

আইসিআই থেকে এসিআই
১৯৮৭ সালে আনিস উদ দৌলা ইম্পিরিয়াল কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের (আইসিআই) বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। লোকসানে থাকা প্রতিষ্ঠানটিকে দুই বছরের মধ্যে লাভে আনেন তিনি। পাঁচ বছরের মাথায় আইসিআই জানায়, তারা বিশ্বব্যাপী তাদের ছোট ব্যবসা বন্ধ করে দেবে। আনিস উদ দৌলাকে তারা বাংলাদেশের ব্যবসা কেনার প্রস্তাব দেয়।

আনিস উদ দৌলা বলেন, ‘আমি তাদের বললাম, আমার কাছে টাকা নেই। তারা বলল, টাকা আপনি ধীরে ধীরে দেন। কিন্তু কর্মীদের ভালো রাখতে হবে। এটাই শর্ত। এরপর পাঁচ বছরে আমি অর্থ শোধ করেছি। কর্মীদের একজনও আইসিআইকে অভিযোগ জানায়নি।’

আইসিআইয়ের সঙ্গে মিলিয়ে নাম রাখা হলো এসিআই। লোগোও কাছাকাছি। এসিআই পণ্যের মান ঠিক রাখা, কর্মীদের সুরক্ষা ও জীবনমানের উন্নতি, ব্যবস্থাপনায় মান রক্ষার ওপর জোর দিল। সুফল পেল দ্রুতই।

আনিস উদ দৌলা বলেন, ‘ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশি প্রথম আইএসও (ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড অর্গানাইজেশন) সনদ পাওয়া কোম্পানি এসিআই। আমরা আরেকটি মূলনীতি ঠিক করেছিলাম, লাভ-লোকসান যা-ই হোক, পণ্যের মানে কোনো ছাড় দেব না।’ এরপর কেটে গেছে ২৭ বছর। এসিআই বড় হয়েছে, আরও বড় হচ্ছে।

কাজই শখ
এসিআইয়ে এখন নেতৃত্ব দেন আনিস উদ দৌলার একমাত্র পুত্র আরিফ দৌলা। তিনি পড়েছেন গণিতে, দেশের বাইরে। নিজে গণিত এড়াতে লোকপ্রশাসনে গেলেন, আর ছেলে গণিতে কেন? আনিস উদ দৌলা হাসলেন। বললেন, ছেলে গণিত পছন্দ করে।

ছেলেকে কোম্পানিতে আনতে শর্ত মানতে হয়েছে আনিস উদ দৌলাকে। শর্তটি হলো, তাঁকে সব সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দিতে হবে। আনিস উদ দৌলাও ছেলেকে কয়েকটি শর্ত দিয়েছেন। সেগুলোর মধ্যে ছিল, মানুষের জীবনমানের উন্নতি কোম্পানির মূলনীতি। সেটা মাথায় রেখে কোম্পানিকে এগিয়ে নিতে হবে।

এখন আনিস উদ দৌলা সকালে কার্যালয়ে যান। সারা দিন কাজ করেন। সন্ধ্যায় বাসায় ফেরেন। কোম্পানির সব বিষয়ে নজর রাখেন তিনি। তবে হস্তক্ষেপ করেন না। মাঝেমধ্যে পরামর্শ দেন। ব্যত্যয় হলে জানান।

বাসায় ফিরে স্ত্রীর সঙ্গে সময় কাটানো, দাবা খেলা, পিয়ানো বাজানো তাঁর কাজ। পিয়ানোটা জাপানের ইয়ামাহা কোম্পানি দিয়েছে। তাদের সঙ্গে এসিআইয়ের ব্যবসা আছে।

আনিস উদ দৌলা বলেন, ‘আমি খুব একটা আমুদে লোক নই। কাজই আমার শখ।’

শান্তি এসেছে, প্রশান্তি নয়
আনিস উদ দৌলার সন্তান মোট তিনজন। এক ছেলে (আশরাফ উদ দৌলা) ১৯৮৯ সালে ১৪ বছর বয়সে দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। এটাই তাঁর জীবনের সবচেয়ে কষ্টকর ঘটনা। মেয়ে সুস্মিতা আনিস এসিআই ফরমুলেশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

জানতে চাইলে আনিস উদ দৌলা তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর ঘনিষ্ঠ চারজন উদ্যোক্তার নাম বলেন। স্কয়ারের স্যামসন এইচ চৌধুরী, রেনাটার সৈয়দ হুমায়ুন কবির, ট্রান্সকমের লতিফুর রহমান ও অ্যাপেক্সের সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী। তাঁদের মধ্যে স্যামসন এইচ চৌধুরী ও সৈয়দ হুমায়ুন কবির প্রয়াত। লতিফুর রহমান ও মঞ্জুর এলাহীর সঙ্গেও এখন আর তেমন একটা দেখা হয় না।

জীবনের ৮৫ বছর কেটে গেছে। আনিস উদ দৌলার কাছে জানতে চাইলাম, তৃপ্তি কতটুকু? তিনি বললেন, ‘শান্তি (পিস) এসেছে, প্রশান্তি (ট্রাঙ্ককুইলিটি) আসেনি।’ কেন, আনিস দৌলার জবাব, ‘শান্তি আসলে উপলব্ধির বিষয়। এসিআইকে আমি ওপরে ওঠাতে পেরেছি। ব্যর্থ হওয়া খুব সহজ, সফল হওয়া কঠিন। এসিআই ব্যর্থ হয়নি। এটাই আমার জীবনের শান্তি।’

প্রশান্তি কেন আসেনি? আনিস উদ দৌলা শেষ করলেন এই বলে, ‘প্রশান্তি একটি দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়। আমরা অনেক কিছু করতে পারতাম। সেটা পারিনি। এই যে সমাজে ডেঙ্গুর মতো কত বিপর্যয়, প্রশান্তি কী করে আসে?’

একনজরে

জন্ম
১৯৩৪ সালে। ফরিদপুরের গোপালগঞ্জ মহকুমার (বর্তমানে জেলা) রাতইল ঘোনাপাড়া গ্রামে। পিতার নাম খান বাহাদুর মোহাম্মদ ইসমাইল। মায়ের নাম কাকাবুন নেসা বেগম।

ভাইবোন
আনিস উদ দৌলা মা–বাবার সাত সন্তানের মধ্যে ৬ নম্বর। তাঁর ভাইবোনেরা সবাই সুপরিচিত। এর মধ্যে বড় বোন ফিরোজা বেগম (প্রয়াত) উপমহাদেশের প্রখ্যাত নজরুলসংগীতশিল্পী। ভাইদের মধ্যে বড় মসিহ উদ দৌলা সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদ থেকে অবসর নেন। ছোট ভাই আসাফ উদ দৌলা শিল্পী ও সাবেক সচিব।

পরিবার
আনিস উদ দৌলার স্ত্রী নাজমা দৌলা। সন্তান তিনজন। ছেলে আরিফ দৌলা এসিআইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। মেয়ে সুস্মিতা আনিস এসিআই ফরমুলেশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। আরেক ছেলে আশরাফ দৌলা ১৪ বছর বয়সে দুর্ঘটনায় মারা যান।

এসিআই প্রতিষ্ঠা
১৯৯২ সালে। ব্রিটিশ বহুজাতিক ইম্পিরিয়াল কেমিক্যাল কোম্পানি (আইসিআই) বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা হস্তান্তর করে চলে যায়। আনিস উদ দৌলার হাতে শুরু হয় অ্যাডভান্সড কেমিক্যাল কোম্পানির (এসিআই)।

কোম্পানি সংখ্যা
এসিআই গ্রুপের অধীনে এখন কোম্পানির সংখ্যা প্রায় ২৫টি। ওষুধ, কৃষি, ভোগ্যপণ্য, খাদ্যপণ্য, নিত্যব্যবহার্য পণ্য, বাণিজ্যিক যান, মোটরসাইকেল ইত্যাদি খাতে ব্যবসা রয়েছে তাদের।

পণ্য বিক্রি
গ্রুপের মোট বার্ষিক টার্নওভার বা পণ্য বিক্রি দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা। ২০১৭–১৮ অর্থবছরে পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত এসিআইয়ের দুই প্রতিষ্ঠানের বিক্রি ছিল ৬ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা।

কর্মসংস্থান
এসিআইতে কাজ করেন ১০ হাজারের মতো কর্মী।

Monday, September 9, 2019

নতুন ধারার রেস্তোরাঁ ব্যবসায় মনজুরুল হক

দুবাইতে জন্ম নেওয়া চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান মনজুরুল চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের পর সিঙ্গাপুরে যান পড়তে। সেখানকার থেমস বিজনেস স্কুলে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে পড়ার পাশাপাশি কাজ করেছেন বিভিন্ন রেস্তোরাঁয়। লক্ষ করেছেন রেস্তোরাঁ–সংস্কৃতি। চট্টগ্রামে ফিরে তাই তাঁর সহজে নজর কাড়ে বিদ্যমান রেস্তোরাঁর পরিবেশ। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের হ্যাংআউটের রেস্তোরাঁ কই? বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অফিসফেরত বন্ধুদের আড্ডার জায়গা কই? উঠতি উদ্যোক্তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিজনেস প্ল্যান করার জায়গা কই? এসব বিবেচনায় মনজুরুল হক ২০১২ সালের শেষ দিকে নগরীর বাদশা মিঞা পেট্রলপাম্পের পাশে একটি পরিত্যক্ত দোকানের ছোট্ট পরিসরে শুরু করলেন বারকোড ক্যাফে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেখানে কফির কাপে ঝড় তোলা যায়। কেউ কিছু বলে না। আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে চাইলে স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু খাবারও জোটে। ‘শুরুতে আমার টার্গেট ছিল, দিনে পাঁচ হাজার টাকার বিক্রি’, জানালেন মনজুরুল হক। কিন্তু দিন কয়েক যেতে না–যেতেই খবর রটে গেল শহরজুড়ে। কাজেই পাশের অংশটাও বাড়াতে হলো, সুযোগ দিতে হলো পার্টি করার। আর সেই ছোট্ট ‘পাঁচ হাজারী’ বারকোড ক্যাফে থেকে এখন মনজুরুলের বারকোড গ্রুপে কর্মীর সংখ্যা তিন শতাধিক। কেবল বেকারদেরই কাজ দেন তিনি। শিক্ষার্থীদের জন্য খণ্ডকালীন কাজের সুযোগও তৈরি করেছেন। 

তবে মনজুরুলের মতো উদ্যমী তরুণ একটিমাত্র ক্যাফে করে থেমে যাবেন, এটি তো হয় না। দেশের অন্য অনেক শহরের মতো একসময় চট্টগ্রামের স্ট্রিট ফুড কালচারও ছিল সমৃদ্ধ। কিন্তু নজর না থাকায় সেগুলোর মান ক্রমাগত নিম্নমুখী হয়ে যায়। মনজুরুল ভাবলেন, স্ট্রিট ফুডই করবেন, কিন্তু স্বাস্থ্যকরভাবে, পরিচ্ছন্নভাবে। চীন থেকে কারিগর নিয়ে এসে বানালেন ফুচকা বানানোর যন্ত্র। ব্যস, হাতের ছোঁয়া থেকে মুক্তি। ২০১৫ সালে শুরু করেন বারগুইচ ফিউশন ক্যাফে। চটপটি, ফুচকাসহ নানান স্বাস্থ্যকর এবং সাশ্রয়ী নানান ধরনের স্ট্রিট ফুডের সমাহার ঘটান খোলামেলা পরিবেশের ক্যাফেতে। খুব দ্রুতই ছুটির দিনগুলোতে চট্টগ্রামের অনেকেরই সন্ধ্যাকালীন গন্তব্য হয়ে ওঠে এই ক্যাফে; যা চট্টগ্রামের তরুণ প্রজন্মের প্রিয় আড্ডাস্থলও হয়ে উঠতে সময় নেয়নি। 


 তবে দুটি বিশেষ উদ্ভাবনের জন্য মনজুরুলকে মনে রাখতে হবে আমাদের। চট্টগ্রামের ঐতিহ্য মেজবানির খাবার নিয়ে সারা দেশে প্রচুর আগ্রহ। চট্টগ্রামের অনেক মেহমান মেজবানি খেতে আগ্রহ প্রকাশ করলেই বিপদে পড়েন। কারণ, বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠান ছাড়া মেজবানি কোথায় পাবেন? মেজবানি অনুষ্ঠানে তো রবাহূত নিয়ে যাওয়া যায় না। কাজেই ২০১৬ সালে চালু হয়ে গেল ‘মেজ্জান হাইলে আইয়্যুন (মেজবান খেতে আসুন) ’। দুপুরে-রাতে যেকোনো সময় চাইলেই মেজবান খেতে পারবেন।

মনজুরুলের এরপরের কাজটি আরও চমকপ্রদ। অনেকেরই মাঝেমধ্যে বিয়েবাড়ির মজার খাবার খেতে ইচ্ছে করে, কিন্তু বিয়ের কোনো দাওয়াত না থাকলে সেটা সম্ভব হয় না। চট্টগ্রাম অঞ্চলের গতানুগতিক ধাঁচের গ্রামের বাড়ির আদলে মনজুরুল হক বিয়েবাড়ির খাবার মেনু নিয়ে ২০১৭ সালে চালু করলেন ‘বীর চট্টলা’। এ পর্যন্ত ঢাকার বনানীসহ বারকোড নামে রয়েছে ১২টি রেস্তোরাঁ। মাসখানেকের মধ্যে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে বারকোড গ্রুপের নতুন আরও একটি রেস্তোরাঁ হবে বলে জানালেন মনজুরুল হক। তাঁর সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে চট্টগ্রামের তরুণেরা কয়েক বছরে সাত শতাধিক আধুনিক রেস্তোরাঁ গড়ে তুলেছেন। তরুণ উদ্যোক্তাদের প্ল্যাটফর্ম ‘চাকরি খুঁজব না, চাকরি দেব’ তাঁকে সম্মানিত করেছে ইউসুফ চৌধুরী সম্মাননা ২০১৭-এ। সূত্র: প্রথম আলো

চীনের ঋণের ফাঁদ থেকে সতর্ক থাকতে বললেন ফাহমিদা খাতুন।।