newsbdd.blogspot.com। দেশের উন্নয়ন মূলক কার্যক্রম। কোটিপতি হওয়ার গল্প, সাফল্য, নিউজ, খবর, সংবাদ, হিরো, শীর্ষ।
Wednesday, November 20, 2019
Tuesday, November 19, 2019
Sunday, October 27, 2019
নিয়ন্ত্রণহীন পিয়াজের বাজার দেখবে কে
অর্থনৈতিক রিপোর্টার: নিয়ন্ত্রণহীন দেশের পিয়াজের বাজার। এই মহুর্তে আন্তর্জাতিক বাজারেও পিয়াজের দাম বেশ কম। আবার যেসব পিয়াজ দেশে আমদানি হচ্ছে সেগুলোর আমদানিমূল্যও কম। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে শিগগিরই রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কিন্তু দেশের বাজারে পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামেই। প্রায় এক মাস ধরে পিয়াজের দাম ১০০ টাকায় ঘোরাফেরা করছে। আর মাঝখানে সরবরাহের ঘাটতিকে অজুহাত হিসেবে অপব্যবহার করছেন সুযোগসন্ধানী কিছু ব্যবসায়ী। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে বাজারে কার্যকর নজরদারি নেই। খোলাবাজারে পিয়াজ বিক্রি করেও দাম কমাতে পারছে না সরকারি সংস্থা টিসিবি। অবশ্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি, পিয়াজের বাড়তি দাম ঠেকাতে বেশ কিছু অভিযান পরিচালনা করেছে। অন্তত দুই হাজার বিক্রেতাকে শাস্তি দিয়েছে তারা। কিন্তু এর পরও মিলছে না সুফল। অতিরিক্ত দামে পিয়াজ কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে ভোক্তাসাধারণ।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ভারত রপ্তানি বন্ধ করার পর পিয়াজের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। এরপর সরকারের তৎপরতায় মিয়ানমার থেকে পিয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। এতে বাজারে সরবরাহ বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে নতুন করে দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। তা হলে বোঝা যাচ্ছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীই ইচ্ছা করে দাম বাড়াচ্ছেন। সরকারকে সেই জায়গায় নজরদারি করতে হবে। তারা মনে করেন, আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে বাজারে এমন অযৌক্তিক মূল্য অব্যাহত রয়েছে।
বাজারে দেখা গেছে, ভারত রপ্তানি বন্ধ করলেও মিয়ানমার ও মিসর থেকে আসছে পিয়াজ। এরপরও দাম কমছে না। উল্টো দফায় দফায় বাড়ছে। বৃষ্টির অজুহাতে শুক্র ও শনিবার দুই দফায় পিয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ৩০ টাকা পর্যন্ত। গতকাল পাইকারি বাজারে দেশী পিয়াজের প্রতিকেজি ১১০ থেকে ১২০ টাকা বিক্রি হতে দেখা গেছে। খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ, শ্যামবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে পিয়াজের দাম বাড়ছে।
এদিকে গতকাল চট্টগ্রামে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, আমি আশাবাদী এক সপ্তাহের মধ্যে মিশরের পিয়াজ চলে আসবে। যদি আসে তা হলে হয়তো আমরা ৮০ টাকার মধ্যে পিয়াজ সরবরাহ করতে পারবো। তবে কষ্টটা বোধ হয় আমাদের আরো একটা মাস করতে হবে। কারণ আমাদের নিজেদের (পর্যাপ্ত পিয়াজ মজুদ) নেই।
রাজধানীর কাওরান বাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কেজিপ্রতি পিয়াজের জন্য গুনতে হচ্ছে ১২০ টাকা পর্যন্ত, যা এক দিন আগেও ছিল ১১০ টাকা। অর্থাৎ এক দিনের ব্যবধানে কেজিতে পিয়াজের দাম বেড়েছে ১০ টাকা। দেশী বা আমদানি সব ধরনের পিয়াজের দামেই ঊর্ধ্বগতি। গত এক মাসের মধ্যে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার ১২০ টাকায় উঠল পিয়াজের দাম।
ঢাকার বড় পাইকারি বাজার শ্যামবাজারে মিসর থেকে আসা পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০-৯৫ টাকা, যা শুক্রবার ছিল ৮০-৯০ টাকার মধ্যে। শুক্রবারের আগে ছিল ৬০-৭০ টাকা কেজি। মিসরের পিয়াজের পাশাপাশি বেড়েছে দেশি ও ভারতীয় পিয়াজের দাম। দেশি পিয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১৫-১২০ টাকা, যা শুক্রবার ছিল ১০০-১১০ টাকা। শুক্রবারের আগে ছিল ৭৫-৮০ টাকা। শুক্রবারের আগে ৬০-৬৫ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া ভারতীয় পিয়াজের দাম বেড়ে হয়েছে ৮০-৮৫ টাকা।
পিয়াজের আমদানিকারক ও শ্যামবাজার পিয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজি মো. মাজেদ বলেন, আমরা যত কথাই বলি, ভারতের পিয়াজ আমদানি শুরু না হলে দাম কমবে না। কারণ আমরা অন্যান্য দেশ থেকে পর্যাপ্ত পিয়াজ পাচ্ছি না। আবার আমদানিও করতে হচ্ছে চড়া দামে।
তবে আরেক আমদানিকারক বলেন, বাজারে কিছু সমস্যা হচ্ছে। যেমন, মিসরের পিয়াজ আমদানিকারকরা ৮০-৮২ টাকার মধ্যে বিক্রি করছেন। সেটা খুচরা বাজারে ৯০ টাকা থাকার কথা। তবে এ পিয়াজও ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিয়ানমারের পিয়াজ ৯০-৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে আড়তে। সেটা খুচরায় ১০০-১০৫ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু এটিও ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অস্থিরতার বাজারে এ সুবিধা বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা নিচ্ছেন বলে মনে করেন তিনি। তার মতে, আগে দিনে ভারত থেকে সাড়ে ছয় হাজার টন পিয়াজ আসত। এখন সেখানে মিয়ানমার থেকে দিনে ২৫০-৩০০ টন পিয়াজ আসছে। অন্যান্য দেশ থেকে আরো কিছু পিয়াজ আসছে। তবে সেটা পর্যাপ্ত নয়।
রাজধানীর কাওরান বাজারের পাইকারি আড়ত ঘুরে দেখা গেছে, দেশি, ভারতীয়, মিসর ও মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে। মেসার্স মাতৃভা-ার ৫৬ নম্বর আড়তের মূল্যতালিকায় দেখা গেল, দেশি পিয়াজ ১১৫ থেকে ১২০ টাকা, ভারতীয় পিয়াজ ১১৫ টাকা, মিসরের পিয়াজ ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পিয়াজের দাম কেন কমছে না জানতে চাইলে আড়তের বিক্রেতা লোকমান হোসেন বলেন, পিয়াজ আমদানি কমে গেছে। দেশি পিয়াজের মজুদও কম। সব মিলিয়ে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। যে কারণে দাম বাড়তি। আরেক আড়তদার বলেন, বাজারে যারা প্রভাব বিস্তার করছেন, তারা অনেক বড় ব্যবসায়ী। তাদের ধরা উচিত।
এদিকে খুচরা বাজারে দেখা গেছে, প্রতি কেজি দেশি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১৫-১২৫ টাকায়। শুক্রবারও এই দামেই বিক্রি হয় দেশি পিয়াজ। তবে একদিনের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে আমদানি করা পিয়াজ। ভালো মানের আমদানি করা পিয়াজ কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকা, যা শুক্রবার ছিল ৮০-৯০ টাকা।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত কয়েক দিনে মিয়ানমার থেকে যে পিয়াজ আমদানি হচ্ছে, সেগুলোর দাম পড়ছে প্রতি কেজি ৪২ টাকা। একই পিয়াজ খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকায়। এর আগে ভারতীয় পিয়াজ আমদানি হয়েছে ৭২ টাকা কেজি দরে। বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। মিসরের পিয়াজ আমদানি হয়েছে ২৫ টাকা কেজি দরে, বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়।
আমদানি তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ২৯শে সেপ্টেম্বর ভারত সরকার কর্তৃক পিয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করা হলেও ৩০শে সেপ্টেম্বর থেকে ১৯শে অক্টোবর পর্যন্ত ২০ দিনে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ৮ হাজার ৫৬৮ টন পিয়াজ। এ সময়ে মিয়ানমার থেকে ১২ হাজার ৮৪৯ টন, মিসর থেকে ৫৬২ টন এবং চীন থেকে ৫২ টন পিয়াজ আমদানি করা হয়। সব মিলিয়ে ২০ দিনে পিয়াজ আমদানি হয়েছে ২২ হাজার টন।
মগবাজার মধুবাগ কাঁচাবাজারে দেখা গেছে, ওই বাজারে ৮ থেকে ১০ জন বিক্রেতা। তাদের মধ্যে ৫ জনের কাছে পিয়াজ আছে। আর বাকিদের কাছে পিয়াজ নাই। তাদের একজন জানালেন, 'দাম বেশি, গ্রাহকরা ঝামেলঅ করে, তাই বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছি। পিয়াজ বিক্রেতা সুমন মিয়া বলেন, পাইকারি বাজারে পিয়াজের অভাব নাই। দামটা বেশি, এটাই সমস্যা।
বিক্রেতাদের দাবি, পাইকারি বাজার থেকে চাহিদা অনুযায়ী পিয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে অনেকেই পিয়াজ বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। তারা বলেন, বৃষ্টির কারণে পিয়াজের দাম বেড়ে গেছে। বৃহস্পতিবার শ্যামবাজার থেকে যে পিয়াজ ৮০ টাকা কেজি কিনেছি, এখন তা ১২০ টাকা। সামনে হয়তো আরো বাড়তে পারে। কিন্তু কিছুদিন পরই বাজারে নতুন পিয়াজ আসবে, এ পরিস্থিতিতে পিয়াজের দাম বাড়ার যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ নেই। মূলত শ্যামবাজারের ব্যবসায়ীদের কারণেই দাম বাড়ছে। শ্যামবাজারে অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নিলেই দেখবেন দাম কমে গেছে।
টেকনাফ স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, গেল ২৬ দিনে মিয়ানমার থেকে প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার টন পিয়াজ আমদানি হয়েছে। আমদানির এ হার আগের চেয়ে বাড়ছে।
গ্রাহকরা জানান, ব্যবাসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে। দাম যখন বেড়ে যায় তখনই সব দোকানদার একসঙ্গে বাড়ায়। এটা সম্ভব তখনই, যখন বিক্রেতারা একজোট থাকে।
কাওরানবাজারে আসা মতিন বলেন, বাজারে সরকারের নজরদারি নেই বললেই চলে। নজরদারি হলে অন্তত দিনে দিনে দাম বাড়তে পারে না।
এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) খোলাবাজারে ৪৫ টাকা কেজি দরে পিয়াজ বিক্রি করছে। কিন্তু তাতেও বাজারে কোনো প্রভাব পড়ছে না। প্রতিষ্ঠানটি এখন ঢাকার ৩৫টি স্থানে ট্রাকে করে পিয়াজ বিক্রি করছে। প্রতিটি ট্রাকে প্রতিদিন ১ হাজার কেজি করে পিয়াজ বিক্রির জন্য দেয়া হচ্ছে বলে জানান টিসিবির তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির।
গতকাল চট্টগ্রামের আউটার স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড এক্সপোর্ট ফেয়ারের (বিআইটিএফ) উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী বলেছেন, এবার আমাদের শিক্ষা হয়েছে। কৃষিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। উনি বলেছেন খুব চেষ্টা করবেন পিয়াজ উৎপাদন বাড়াতে। আমাদের যেন আর বাইরের ওপর নির্ভর করতে না হয়। এবার হয়তো কষ্ট হবে। আশাকরি, আগামী বছর অবস্থার উন্নতি হবে। পিয়াজে ভারতনির্ভরতা প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, আমরা ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে চাই তা না, আমরা নিজেরাই স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চাই। আমাদের সব চেষ্টা হলো আগামীতে যেন নিজেরাই এসব জিনিস উৎপাদন করতে পারি।
বাজার মনিটরিং প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, মজুদকারীদের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নিচ্ছি। সমস্যাটা হচ্ছে হঠাৎ করে চাপ দিলে তারা বিগড়ে গেলে মানুষের কষ্ট আরো বাড়বে। এদিকে চাপের কারণে কিছু পিয়াজ পচেও গেছে। আমরা বাজার মনিটরিং করতে যাই। কিন্তু কাউকে জেলখানায় নিয়ে ভরবো সেই রকম মানসিকতা নেই। আমরা তাদের প্রোঅ্যাকটিভ করতে চাই, বোঝাতে চাই। তাতে কিছু কাজ হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, সমস্যাটা আরো এক মাস থাকবে। মিশরের পিয়াজ ঢুকলে দাম কমে আসবে।
উল্লেখ্য, পিয়াজের বাজারের এ অস্থিরতার শুরু হয়েছিল ২৯শে সেপ্টেম্বর ভারতের পিয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণার মধ্য দিয়ে। সে সময় পিয়াজের দাম কেজি ১৩০ টাকায় উঠেছিল। কিন্তু এটি আবার কমে ৭০-৯০ টাকার মধ্যে আসে। কিন্তু তা খুব বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। দ্রুতই আবার ১০০ টাকা, পরের ধাপে ১১০ টাকা এবং সব শেষে গতকাল ১২০ টাকায় উঠে আসে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি দেশ থেকে আমদানি করা হলেও দাম বাড়ার নেরাজ্য আর ঠেকানো যাচ্ছে না।
এদিকে বাজারে কার্যকর নজরদারি নেই। খোলাবাজারে পিয়াজ বিক্রি করেও দাম কমাতে পারছে না সরকারি সংস্থা টিসিবি। অবশ্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি, পিয়াজের বাড়তি দাম ঠেকাতে বেশ কিছু অভিযান পরিচালনা করেছে। অন্তত দুই হাজার বিক্রেতাকে শাস্তি দিয়েছে তারা। কিন্তু এর পরও মিলছে না সুফল। অতিরিক্ত দামে পিয়াজ কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে ভোক্তাসাধারণ।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ভারত রপ্তানি বন্ধ করার পর পিয়াজের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। এরপর সরকারের তৎপরতায় মিয়ানমার থেকে পিয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। এতে বাজারে সরবরাহ বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে নতুন করে দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। তা হলে বোঝা যাচ্ছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীই ইচ্ছা করে দাম বাড়াচ্ছেন। সরকারকে সেই জায়গায় নজরদারি করতে হবে। তারা মনে করেন, আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে বাজারে এমন অযৌক্তিক মূল্য অব্যাহত রয়েছে।
বাজারে দেখা গেছে, ভারত রপ্তানি বন্ধ করলেও মিয়ানমার ও মিসর থেকে আসছে পিয়াজ। এরপরও দাম কমছে না। উল্টো দফায় দফায় বাড়ছে। বৃষ্টির অজুহাতে শুক্র ও শনিবার দুই দফায় পিয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ৩০ টাকা পর্যন্ত। গতকাল পাইকারি বাজারে দেশী পিয়াজের প্রতিকেজি ১১০ থেকে ১২০ টাকা বিক্রি হতে দেখা গেছে। খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ, শ্যামবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে পিয়াজের দাম বাড়ছে।
এদিকে গতকাল চট্টগ্রামে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, আমি আশাবাদী এক সপ্তাহের মধ্যে মিশরের পিয়াজ চলে আসবে। যদি আসে তা হলে হয়তো আমরা ৮০ টাকার মধ্যে পিয়াজ সরবরাহ করতে পারবো। তবে কষ্টটা বোধ হয় আমাদের আরো একটা মাস করতে হবে। কারণ আমাদের নিজেদের (পর্যাপ্ত পিয়াজ মজুদ) নেই।
রাজধানীর কাওরান বাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কেজিপ্রতি পিয়াজের জন্য গুনতে হচ্ছে ১২০ টাকা পর্যন্ত, যা এক দিন আগেও ছিল ১১০ টাকা। অর্থাৎ এক দিনের ব্যবধানে কেজিতে পিয়াজের দাম বেড়েছে ১০ টাকা। দেশী বা আমদানি সব ধরনের পিয়াজের দামেই ঊর্ধ্বগতি। গত এক মাসের মধ্যে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার ১২০ টাকায় উঠল পিয়াজের দাম।
ঢাকার বড় পাইকারি বাজার শ্যামবাজারে মিসর থেকে আসা পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০-৯৫ টাকা, যা শুক্রবার ছিল ৮০-৯০ টাকার মধ্যে। শুক্রবারের আগে ছিল ৬০-৭০ টাকা কেজি। মিসরের পিয়াজের পাশাপাশি বেড়েছে দেশি ও ভারতীয় পিয়াজের দাম। দেশি পিয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১৫-১২০ টাকা, যা শুক্রবার ছিল ১০০-১১০ টাকা। শুক্রবারের আগে ছিল ৭৫-৮০ টাকা। শুক্রবারের আগে ৬০-৬৫ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া ভারতীয় পিয়াজের দাম বেড়ে হয়েছে ৮০-৮৫ টাকা।
পিয়াজের আমদানিকারক ও শ্যামবাজার পিয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজি মো. মাজেদ বলেন, আমরা যত কথাই বলি, ভারতের পিয়াজ আমদানি শুরু না হলে দাম কমবে না। কারণ আমরা অন্যান্য দেশ থেকে পর্যাপ্ত পিয়াজ পাচ্ছি না। আবার আমদানিও করতে হচ্ছে চড়া দামে।
তবে আরেক আমদানিকারক বলেন, বাজারে কিছু সমস্যা হচ্ছে। যেমন, মিসরের পিয়াজ আমদানিকারকরা ৮০-৮২ টাকার মধ্যে বিক্রি করছেন। সেটা খুচরা বাজারে ৯০ টাকা থাকার কথা। তবে এ পিয়াজও ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিয়ানমারের পিয়াজ ৯০-৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে আড়তে। সেটা খুচরায় ১০০-১০৫ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু এটিও ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অস্থিরতার বাজারে এ সুবিধা বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা নিচ্ছেন বলে মনে করেন তিনি। তার মতে, আগে দিনে ভারত থেকে সাড়ে ছয় হাজার টন পিয়াজ আসত। এখন সেখানে মিয়ানমার থেকে দিনে ২৫০-৩০০ টন পিয়াজ আসছে। অন্যান্য দেশ থেকে আরো কিছু পিয়াজ আসছে। তবে সেটা পর্যাপ্ত নয়।
রাজধানীর কাওরান বাজারের পাইকারি আড়ত ঘুরে দেখা গেছে, দেশি, ভারতীয়, মিসর ও মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে। মেসার্স মাতৃভা-ার ৫৬ নম্বর আড়তের মূল্যতালিকায় দেখা গেল, দেশি পিয়াজ ১১৫ থেকে ১২০ টাকা, ভারতীয় পিয়াজ ১১৫ টাকা, মিসরের পিয়াজ ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পিয়াজের দাম কেন কমছে না জানতে চাইলে আড়তের বিক্রেতা লোকমান হোসেন বলেন, পিয়াজ আমদানি কমে গেছে। দেশি পিয়াজের মজুদও কম। সব মিলিয়ে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। যে কারণে দাম বাড়তি। আরেক আড়তদার বলেন, বাজারে যারা প্রভাব বিস্তার করছেন, তারা অনেক বড় ব্যবসায়ী। তাদের ধরা উচিত।
এদিকে খুচরা বাজারে দেখা গেছে, প্রতি কেজি দেশি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১৫-১২৫ টাকায়। শুক্রবারও এই দামেই বিক্রি হয় দেশি পিয়াজ। তবে একদিনের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে আমদানি করা পিয়াজ। ভালো মানের আমদানি করা পিয়াজ কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকা, যা শুক্রবার ছিল ৮০-৯০ টাকা।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত কয়েক দিনে মিয়ানমার থেকে যে পিয়াজ আমদানি হচ্ছে, সেগুলোর দাম পড়ছে প্রতি কেজি ৪২ টাকা। একই পিয়াজ খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকায়। এর আগে ভারতীয় পিয়াজ আমদানি হয়েছে ৭২ টাকা কেজি দরে। বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। মিসরের পিয়াজ আমদানি হয়েছে ২৫ টাকা কেজি দরে, বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়।
আমদানি তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ২৯শে সেপ্টেম্বর ভারত সরকার কর্তৃক পিয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করা হলেও ৩০শে সেপ্টেম্বর থেকে ১৯শে অক্টোবর পর্যন্ত ২০ দিনে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ৮ হাজার ৫৬৮ টন পিয়াজ। এ সময়ে মিয়ানমার থেকে ১২ হাজার ৮৪৯ টন, মিসর থেকে ৫৬২ টন এবং চীন থেকে ৫২ টন পিয়াজ আমদানি করা হয়। সব মিলিয়ে ২০ দিনে পিয়াজ আমদানি হয়েছে ২২ হাজার টন।
মগবাজার মধুবাগ কাঁচাবাজারে দেখা গেছে, ওই বাজারে ৮ থেকে ১০ জন বিক্রেতা। তাদের মধ্যে ৫ জনের কাছে পিয়াজ আছে। আর বাকিদের কাছে পিয়াজ নাই। তাদের একজন জানালেন, 'দাম বেশি, গ্রাহকরা ঝামেলঅ করে, তাই বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছি। পিয়াজ বিক্রেতা সুমন মিয়া বলেন, পাইকারি বাজারে পিয়াজের অভাব নাই। দামটা বেশি, এটাই সমস্যা।
বিক্রেতাদের দাবি, পাইকারি বাজার থেকে চাহিদা অনুযায়ী পিয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে অনেকেই পিয়াজ বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। তারা বলেন, বৃষ্টির কারণে পিয়াজের দাম বেড়ে গেছে। বৃহস্পতিবার শ্যামবাজার থেকে যে পিয়াজ ৮০ টাকা কেজি কিনেছি, এখন তা ১২০ টাকা। সামনে হয়তো আরো বাড়তে পারে। কিন্তু কিছুদিন পরই বাজারে নতুন পিয়াজ আসবে, এ পরিস্থিতিতে পিয়াজের দাম বাড়ার যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ নেই। মূলত শ্যামবাজারের ব্যবসায়ীদের কারণেই দাম বাড়ছে। শ্যামবাজারে অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নিলেই দেখবেন দাম কমে গেছে।
টেকনাফ স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, গেল ২৬ দিনে মিয়ানমার থেকে প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার টন পিয়াজ আমদানি হয়েছে। আমদানির এ হার আগের চেয়ে বাড়ছে।
গ্রাহকরা জানান, ব্যবাসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে। দাম যখন বেড়ে যায় তখনই সব দোকানদার একসঙ্গে বাড়ায়। এটা সম্ভব তখনই, যখন বিক্রেতারা একজোট থাকে।
কাওরানবাজারে আসা মতিন বলেন, বাজারে সরকারের নজরদারি নেই বললেই চলে। নজরদারি হলে অন্তত দিনে দিনে দাম বাড়তে পারে না।
এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) খোলাবাজারে ৪৫ টাকা কেজি দরে পিয়াজ বিক্রি করছে। কিন্তু তাতেও বাজারে কোনো প্রভাব পড়ছে না। প্রতিষ্ঠানটি এখন ঢাকার ৩৫টি স্থানে ট্রাকে করে পিয়াজ বিক্রি করছে। প্রতিটি ট্রাকে প্রতিদিন ১ হাজার কেজি করে পিয়াজ বিক্রির জন্য দেয়া হচ্ছে বলে জানান টিসিবির তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির।
গতকাল চট্টগ্রামের আউটার স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড এক্সপোর্ট ফেয়ারের (বিআইটিএফ) উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী বলেছেন, এবার আমাদের শিক্ষা হয়েছে। কৃষিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। উনি বলেছেন খুব চেষ্টা করবেন পিয়াজ উৎপাদন বাড়াতে। আমাদের যেন আর বাইরের ওপর নির্ভর করতে না হয়। এবার হয়তো কষ্ট হবে। আশাকরি, আগামী বছর অবস্থার উন্নতি হবে। পিয়াজে ভারতনির্ভরতা প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, আমরা ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে চাই তা না, আমরা নিজেরাই স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চাই। আমাদের সব চেষ্টা হলো আগামীতে যেন নিজেরাই এসব জিনিস উৎপাদন করতে পারি।
বাজার মনিটরিং প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, মজুদকারীদের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নিচ্ছি। সমস্যাটা হচ্ছে হঠাৎ করে চাপ দিলে তারা বিগড়ে গেলে মানুষের কষ্ট আরো বাড়বে। এদিকে চাপের কারণে কিছু পিয়াজ পচেও গেছে। আমরা বাজার মনিটরিং করতে যাই। কিন্তু কাউকে জেলখানায় নিয়ে ভরবো সেই রকম মানসিকতা নেই। আমরা তাদের প্রোঅ্যাকটিভ করতে চাই, বোঝাতে চাই। তাতে কিছু কাজ হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, সমস্যাটা আরো এক মাস থাকবে। মিশরের পিয়াজ ঢুকলে দাম কমে আসবে।
উল্লেখ্য, পিয়াজের বাজারের এ অস্থিরতার শুরু হয়েছিল ২৯শে সেপ্টেম্বর ভারতের পিয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণার মধ্য দিয়ে। সে সময় পিয়াজের দাম কেজি ১৩০ টাকায় উঠেছিল। কিন্তু এটি আবার কমে ৭০-৯০ টাকার মধ্যে আসে। কিন্তু তা খুব বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। দ্রুতই আবার ১০০ টাকা, পরের ধাপে ১১০ টাকা এবং সব শেষে গতকাল ১২০ টাকায় উঠে আসে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি দেশ থেকে আমদানি করা হলেও দাম বাড়ার নেরাজ্য আর ঠেকানো যাচ্ছে না।
দেশে ছাগল কমেছে, বেড়েছে গরু
অর্থনৈতিক রিপোর্টার: দেশে এখন ছাগলের সংখ্যা ১ কোটি ৯২ লাখ ৮৭ হাজার ৪১৩। আর গরু আছে ২ কোটি ৮৪ লাখ ৮৭ হাজার ৪১৫টি। এসব গরু ছাগলসহ গবাদিপশু ব্যক্তি ও খামারি পর্যায়ে লালনপালন করা হয়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) কৃষি শুমারি ২০১৯ এর প্রাথমিক ফলাফলে এই চিত্র উঠে এসেছে। ওই শুমারিতে অবশ্য ভেড়া, মহিষ, হাঁস, মুরগি, টার্কির সংখ্যাও পাওয়া গেছে। রোববার এক অনুষ্ঠানে শুমারির প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ করেছে বিবিএস।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) কৃষি শুমারি ২০১৯ এর প্রাথমিক ফলাফলে এই চিত্র উঠে এসেছে। ওই শুমারিতে অবশ্য ভেড়া, মহিষ, হাঁস, মুরগি, টার্কির সংখ্যাও পাওয়া গেছে। রোববার এক অনুষ্ঠানে শুমারির প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ করেছে বিবিএস।
অবশ্য ২০১৮ সালে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর প্রকাশিত হিসেব অনুযায়ী দেশে ছাগল ২ কোটি ৫৯ লাখ। আর গরুর সংখ্যা ২ কোটি ৩৯ লাখ। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসেব ও বিবিএসের শুমারির তথ্য অনুযায়ী দেশে ছাগলের সংখ্যা কমেছে ৬৬ লাখ। অন্যদিকে গরুর সংখ্যা বেড়েছে ৪৬ লাখ। এবারের কৃষি শুমারিতে অন্য গবাদিপশুর হিসাবও এসেছে। সারা দেশে এখন মহিষ আছে ৭ লাখ ১৮ হাজার ৪১১টি। ভেড়ার সংখ্যা ৮ লাখ ৯২ হাজার ৬২৮। এ বছরের কৃষি শুমারির তথ্য অনুসারে ২০১৯ সালে এসে দেশে মুরগি ১৮ কোটি ৯২ লাখ ৬২ হাজার ৯০১টি মুরগি, ৬ কোটি ৭৫ লাখ ২৯ হাজার ২১০টি হাস ও ১৪ লাখ ৪৫ হাজার ৪২০টি টার্কি আছে।
শুমারির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে মোট পরিবারের (খানা) সংখ্যা ৩ কোটি ৫৫ লাখ ৩৩ হাজার ১৮০টি। দেশে গরুর সংখ্যা ২ কোটি ৮৪ লাখ ৮৭ হাজার ৪১৫টি। হাঁসের সংখ্যা ৬ কোটি ৭৫ লাখ ২৯ হাজার ২১০টি এবং মুরগী রয়েছে ১৮ কোটি ৯২ লাখ ৬২ হাজার ৯১০টি।
শুমারির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে মোট পরিবারের (খানা) সংখ্যা ৩ কোটি ৫৫ লাখ ৩৩ হাজার ১৮০টি। দেশে গরুর সংখ্যা ২ কোটি ৮৪ লাখ ৮৭ হাজার ৪১৫টি। হাঁসের সংখ্যা ৬ কোটি ৭৫ লাখ ২৯ হাজার ২১০টি এবং মুরগী রয়েছে ১৮ কোটি ৯২ লাখ ৬২ হাজার ৯১০টি।
শুমারিতে মাছ চাষ করে নির্ভরশীল হয়েছেন, ৯ লাখ ৯৫ হাজার ১৩৫টি, কৃষি মজুরি করে এমন পরিবারের সংখ্যা ৯০ লাখ ৯৫ হাজার ৯৭৭টি, নিজস্ব জমি নেই এমন পরিবার রয়েছে ৪০ লাখ ২৪ হাজার ১৮৯টি এবং অন্যের কাছ থেকে জমি নিয়েছে এমন পরিবার ৬৭ লাখ ৬৩ হাজার ৪৮৭টি। দেশে টার্কি রয়েছে ১৪ লাখ ৪৫ হাজার ৪২০টি, মহিষ ৭ লাখ ১৮ হাজার ৪১১টি, ছাগল ১ কোটি ৯২ লাখ ৮৭ হাজার ৪১৩টি এবং ভেড়া রয়েছে ৮ লাখ ৯২ হাজার ৬২৮টি।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, নিজের জমি নেই এমন পরিবার সবেচেয়ে বেশি রয়েছে ঢাকা বিভাগে। এ বিভাগে প্রতি হাজারে ৬৪৮টি পরিবারের নিজস্ব জমি নেই। রাজশাহী বিভাগে প্রতি হাজারে ২৪১টি পরিবারের নিজস্ব জমি নেই। এছাড়া রংপুর বিভাগে প্রতি হাজারে ৩১৭টি, চট্টগ্রাম বিভাগের ২৭৫টি, খুলনা বিভাগে ২৬৯টি, মংমনসিংহ বিভাগে ১৬৯টি, সিলেটে বিভাগে ২২১টি এবং বরিশাল বিভাগে প্রতি হাজারে ৯২টি পরিবারের নিজস্ব জমি নেই। তবে প্রকল্প পরিচালক জাফর আহমেদ জানান, নিজস্ব জমি নেই মানে ভূমিহীন নয়। অনেক সময় নিজের নামে জমি না থাকলেও তার বাবা বা দাদার নামে থাকতে পারে।
অনুষ্ঠানে শুমারির তথ্যের সঙ্গে দ্বিমত জানিয়ে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ সচিব রইছুল আলম মন্ডল বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে বিশুদ্ধ ডাটা দরকার। বেইজ লাইন না থাকলে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম সঠিক হয়না। শুমারিতে ডিম, দুধ, ইলিশ এবং মিঠা পানির মাছের তথ্য থাকা উচিত ছিল।
এ বিষয়ে কৃষি সচিব নাসিরুজ্জামান বলেন,বিবিএসের তথ্যের সাথে কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্যের কোনো মিল নেই। বিভাজনে হাইব্রীড ধানের কোনো হিসাব নেই। কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, ছাদ বাগান এখন অনেক জনপ্রিয় একে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। ভাসমান কৃষিকে যুক্ত করা হয়নি। মাসকলাই ও ছোলার ডালের তথ্য বাদ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে পরিসংখ্যানের সাথে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বয় করা উচিত। তাহলে এত বেশি ব্যবধান আর থাকবেনা।
পরে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, এতবড় মহাযজ্ঞ বোধহয় নিখুঁত হওয়ার বিষয় নয়। সংশোধন করার বিষয় রয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে আরও নিবিড়ভাবে সবাই কাজ করবে বলে আমি কথা দিচ্ছি। বিবিএসকে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা হবে। দেশের সকল পরিকল্পনায় ভিত্তি হবে পরিসংখ্যান। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ আগে নাক সিটকালেও এখন আমাদের তথ্য ব্যবহার করছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, মাঠ পর্যায়ে মূল শুমারির তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম ২০১৯ সালের ৯ জুন থেকে ২০ সালের জুন পর্যন্ত সংগ্রহ করা হবে।
অনুষ্ঠানে আরো ছিলেন, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ সম্পদ সচিব রইছউল আলম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো; নাসিরুজ্জামান, বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, ও প্রকল্প পরিচালক জাফর আহমেদ খান।
Saturday, October 26, 2019
প্রিমিয়ার ব্যাংকের ২০ বছর উদযাপন
অর্থনৈতিক রিপোর্টার: জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সমৃদ্ধি এবং সাফল্যের ২০ বছর উদযাপন করেছে দি প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেড।
গতকাল রাজধানীর বনানীতে ইকবাল সেন্টারে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. এইচ বি এম ইকবাল। এ সময় ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান মঈন ইকবাল, পরিচালনা পর্ষদের সদস্য আব্দুস সংসদ সদস্য সালাম মুর্শেদী, মোহাম্মদ ইমরান ইকবাল, জামাল জি আহমেদ, উপদেষ্টা মুহাম্মদ আলী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম রিয়াজুল করিমসহ ব্যাংকের অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সমৃদ্ধিময় ২০ বছরের এই পথচলায় প্রিমিয়ার ব্যাংক বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন তরান্বিত করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার পাশাপাশি মানুষের আস্থাও অর্জন করেছে। অনুষ্ঠানের শুরুতেই বড় একটি কেক কাটা হয়।
এরপর ব্যাংকের চেয়ারম্যান এইচ বি এম ইকবাল বলেন, শুরুটা হয়েছিলো সেই ১৯৯৯ সালে। তারপর থেকে আমরা মানুষের বিশ্বাস, আস্থা ও ভালোবাসায় আজকের অবস্থানে এসেছি। আমাদের ব্যাংক দেশের বিভিন্ন খাতে উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এই সমৃদ্ধিময় উন্নয়নে সবার সাহায্য ও ভালোবাসা ছাড়া আমরা আজকের অবস্থানে পৌঁছাতে পারতাম না।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম রিয়াজুল করিম বলেন, সমৃদ্ধির এই পথচলা অব্যাহত থাকবে। বর্তমানে আমাদের ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ নেমে এসেছে ৫ শতাংশের নিচে। এ ছাড়া অন্যান্য সূচকেও গত কয়েক বছরে ব্যাংকটি বেশ উন্নতি করেছে। গত এক বছরের ব্যবধানে আমাদের ব্যাংকের আমানতে ২২ শতাংশ, মুনাফায় ১৫ শতাংশের বেশি, রেমিট্যান্স আহরণে ৫৪ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আশা করছি, আগামী ৫ বছরের মধ্যে এই ব্যাংকটি সব ধরনের সূচকে দেশের শীর্ষ পর্যায়ের একটি ব্যাংক হয়ে উঠবে।
ব্যাংকটির উপদেষ্টা মুহাম্মদ আলী বলেন, বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের এই অগ্রযাত্রায় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ডা. ইকবালের নেতৃত্বে গত বিশ বছরে সাহসী এবং অগ্রগতিশীল উন্নয়ন কৌশল গ্রহণের ফলে প্রিমিয়ার ব্যাংক উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে।
গতকাল রাজধানীর বনানীতে ইকবাল সেন্টারে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. এইচ বি এম ইকবাল। এ সময় ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান মঈন ইকবাল, পরিচালনা পর্ষদের সদস্য আব্দুস সংসদ সদস্য সালাম মুর্শেদী, মোহাম্মদ ইমরান ইকবাল, জামাল জি আহমেদ, উপদেষ্টা মুহাম্মদ আলী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম রিয়াজুল করিমসহ ব্যাংকের অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সমৃদ্ধিময় ২০ বছরের এই পথচলায় প্রিমিয়ার ব্যাংক বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন তরান্বিত করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার পাশাপাশি মানুষের আস্থাও অর্জন করেছে। অনুষ্ঠানের শুরুতেই বড় একটি কেক কাটা হয়।
এরপর ব্যাংকের চেয়ারম্যান এইচ বি এম ইকবাল বলেন, শুরুটা হয়েছিলো সেই ১৯৯৯ সালে। তারপর থেকে আমরা মানুষের বিশ্বাস, আস্থা ও ভালোবাসায় আজকের অবস্থানে এসেছি। আমাদের ব্যাংক দেশের বিভিন্ন খাতে উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এই সমৃদ্ধিময় উন্নয়নে সবার সাহায্য ও ভালোবাসা ছাড়া আমরা আজকের অবস্থানে পৌঁছাতে পারতাম না।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম রিয়াজুল করিম বলেন, সমৃদ্ধির এই পথচলা অব্যাহত থাকবে। বর্তমানে আমাদের ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ নেমে এসেছে ৫ শতাংশের নিচে। এ ছাড়া অন্যান্য সূচকেও গত কয়েক বছরে ব্যাংকটি বেশ উন্নতি করেছে। গত এক বছরের ব্যবধানে আমাদের ব্যাংকের আমানতে ২২ শতাংশ, মুনাফায় ১৫ শতাংশের বেশি, রেমিট্যান্স আহরণে ৫৪ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আশা করছি, আগামী ৫ বছরের মধ্যে এই ব্যাংকটি সব ধরনের সূচকে দেশের শীর্ষ পর্যায়ের একটি ব্যাংক হয়ে উঠবে।
ব্যাংকটির উপদেষ্টা মুহাম্মদ আলী বলেন, বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের এই অগ্রযাত্রায় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ডা. ইকবালের নেতৃত্বে গত বিশ বছরে সাহসী এবং অগ্রগতিশীল উন্নয়ন কৌশল গ্রহণের ফলে প্রিমিয়ার ব্যাংক উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে।
Thursday, October 24, 2019
ডুয়িং বিজনেস: ৯৯ দেশের মধ্যে প্রবেশের লক্ষ্য সালমান এফ রহমানের
অর্থনৈতিক রিপোর্টার: বিশ্বব্যাংকের 'ডুইং বিজনেস-২০২০' সূচকে সবচেয়ে ভালো করা ২০টি দেশের তালিকায় এসেছে বাংলাদেশের নাম। ৮ ধাপ এগিয়ে এবার বাংলাদেশ উঠে এসেছে ১৯০ দেশের মধ্যে ১৬৮ নম্বরে। গত বছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৭৬ নম্বরে। তবে 'ডুয়িং বিজনেস' সূচকে আগামী বছর বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম ৯৯ দেশের মধ্যে বা ডাবল ডিজিটে প্রবেশের লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে 'ডুইং বিজনেস ২০২০' প্রতিবেদন প্রকাশকালে তিনি এ কথ বলেন। এ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মো. নজিবুর রহমান, প্রধান সমন্বয়ক (এসডিজি) আবুল কালাম আজাদ, বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হক ও অর্থ সচিব মো. আবদুর রউফ তালুকদার।
সালমান এফ রহমান বলেন, অতীতে এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান খুব সামান্যই পরিবর্তিত হয়েছে। এবার অবশ্য ৮ ধাপ এগিয়েছে। আগে কখনো এত পয়েন্ট জাম্প আমরা করতে পারিনি। এছাড়া সবচেয়ে ভালো করা ২০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে। এটিও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান উন্নতির প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে বেশি দিন হয়নি। বিশেষ করে, এ বছর আওয়ামী লীগ সরকার পুনরায় ক্ষমতায় আসার পরই এই প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তবে সূচকের অগ্রগতি বা অবনতি সংক্রান্ত তথ্য নথিবদ্ধ করার শেষ সময় ছিল এপ্রিল মাস। সুতরাং আমাদের হাতে বেশি সময় ছিল না।
সালমান এফ রহমান বলেন, গত ৩/৪ বছর ধরেই এ নিয়ে কাজ হচ্ছিল। কিন্তু আমাদের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হচ্ছিল না। নিয়মটা হল, এপ্রিল মাসের মধ্যে প্রতি বছরের যা রিফর্মস হয়, সেই রিফর্মসের উপর ভিত্তি করে তারা অক্টোবরে ফলাফল দেয়। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, বিশ্ব ব্যাংক যখন র্যাংকিং শুরু করে, বাংলাদেশ খারাপ অবস্থানে ছিল।
সালমান এফ রহমান বলেন, তারপরও আমাদের প্রত্যাশা আরো বেশি ছিল। কারণ আমরা নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে অনেক পরিবর্তন এনেছি। তবে এই পরিবর্তনের সুফল মাঠপর্যায়ে পুরোপুরি যায়নি, কারণ মধ্যম ও নিচু সারির সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিরা এই পরিবর্তন স¤পর্কে অবহিত হননি অথবা মানিয়ে নিতে পারেননি। আমরা এখন এই পরিবর্তনের প্রায়োগিক বাস্তবায়নের ওপর জোর দিচ্ছি। যাতে সকল উপকারভোগী বাস্তবিক অর্থেই এই পরিবর্তনের সুফল পান। পামাপাশি আমরাও যেন সূচকে পূর্ণ নম্বর পাই। এছাড়া আমরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছি। যেগুলো বাস্তবায়িত হলে আমাদের অবস্থানে ব্যাপক উন্নতি হবে। কিন্তু আইন সংশোধনের কাজ সময়সাপেক্ষ কেননা এক্ষেত্রে সরকারকে সকল আংশীজনের সঙ্গে শলাপরামর্শ করতে হয় ও তাদের উদ্বেগ ও পরামর্শ আমলে নিতে হয়।
অগ্রগতির জন্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ৮ ধাপ এগিয়ে এলেও আমরা মনে করব না এটা আমাদের অনেক বড় অর্জন। আমাদের লক্ষ্য আগামী বছর আমরা উল্লেখযোগ্য একটা অগ্রগতি চাই। আমরা টার্গেট করব যেন ডাবল ডিজিটে আসতে পারি।
এক প্রশ্নের জবাবে এসসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, আপনি যদি প্রতিবেদনটা দেখেন, ১০টা মানদ-ের মধ্যে অন্তত ৬০টি ইস্যুতে রিপোর্ট করতে হয়। প্রতিটাকেই কিন্তু গুরুত্ব দিতে হবে। সবগুলো ক্ষেত্রেই আমাদের উন্নতি করার সুযোগ রয়েছে। সবাই মিলে আন্তরিকভাবে কাজ করে গেলে আরো ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি।
একটি দেশের অর্থ-বাণিজ্যের পরিবেশ ১০টি মাপকাঠিতে তুলনা করে এই সূচক তৈরি করা হয়। বাংলাদেশের পরিস্থিতি বুঝতে ব্যবহার করা হয়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রামের তথ্য। এই ১০টি মাপকাঠি হল- নতুন ব্যবসা শুরু করা, অবকাঠামো নির্মাণের অনুমতি পাওয়া, বিদ্যুৎ সুবিধা, সম্পত্তির নিবন্ধন, ঋণ পাওয়ার সুযোগ, সংখ্যালঘু বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা, কর পরিশোধ, বৈদেশিক বাণিজ্য, চুক্তি বাস্তবায়ন ও দেউলিয়া হওয়া ব্যবসার উন্নয়ন। সব মিলিয়ে ১০০ ভিত্তিক এই সূচকে বাংলাদেশের মোট স্কোর হয়েছে এবার ৪৫, যা গতবারের চেয়ে ৩.০৩ পয়েন্ট বেশি। গতবছর ৪১.৯৭ ছিল।
বিশ্ব ব্যাংক বলছে, ১০টি মাপকাঠির মধ্যে ৬টিতেই বাংলাদেশের স্কোর গতবারের চেয়ে বেড়েছে। এর মধ্যে ঋণ পাওয়ার সুযোগে স্কোর বেড়েছে ২০ শতাংশ পয়েন্ট। ৪টি মাপকাঠিতে এবারের স্কোর গতবারের সমান। শুধু অবনতি হয়েছে দেউলিয়া হওয়া ব্যবসার উন্নয়ন ঘটানোর ক্ষেত্রে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে ব্যবসা করা সহজ হয়েছে। বাংলাদেশের এতটা এগিয়ে আসার কারণ হিসেবে বিশ্বব্যাংক বলছে, ব্যবসা শুরু করতে আগের চেয়ে খরচ কমেছে বাংলাদেশে। রাজধানী ঢাকাসহ শহর এলাকায় বিদ্যুৎ প্রাপ্তি সহজ হয়েছে। এছাড়া ঋণপ্রাপ্তির যাবতীয় তথ্য এখন সহজে, আরো বিস্তারিত আকারে পান উদ্যোক্তারা। তারপরও ব্যবসার পরিবেশে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ শুধু আফগানিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে। আফগানিন্তানের অবস্থান ১৭৩ তম। স্কোর ৪৪.১। এবারের সূচকে দেশটির অবনতি হয়েছে ৬ ধাপ।
ভারত দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষস্থানে আছে। ভারত সারা বিশ্বে ৬৩তম স্থানে আছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার করায় ভারতের অবস্থানের ১৪ ধাপ অগ্রগতি হয়েছে। এছাড়া ভুটান এ সূচকের ৮৯তম (স্কোর ৬৬), নেপাল ৯৪তম (৬৩.২), শ্রীলঙ্কা ৯৯তম (৬১.৮), পাকিস্তান ১০৮তম (৬১), মালদ্বীপ ১৪৭তম (৫৩.৩), মিয়ানমার ১৬৫তম (৪৬.৮) অবস্থানে রয়েছে।
এবারের প্রতিবেদনে অর্থ-বাণিজ্যের পরিবেশ তৈরির ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে নিউজিল্যান্ড; সূচকে তাদের স্কোর ৮৬.৮। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে যথাক্রমে সিঙ্গাপুর ও হংকং। শীর্ষ দশে থাকা অন্য দেশগুলো হল- ডেনমার্ক, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, জর্জিয়া, যুক্তরাজ্য, নরওয়ে ও সুইডেন। গতবারের মত এবারও সূচকে সোমালিয়ার পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। আফ্রিকার এই দেশটির স্কোর ২০।
প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ডাবল-ডিজিটে উন্নীত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন আইন সংস্কার ও বাস্তবায়ন করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে কো¤পানিজ অ্যাক্ট, ব্যাংক্রাপ্টসি অ্যাক্ট, আরবিট্রেশন অ্যাক্ট ও ইমারত নির্মান বিধিমালা, ইত্যাদি। এছাড়া সিকিউর্ড ট্রানজেকশন বিল প্রণয়ন, কমার্শিয়াল ডিসপিউট রিজ্যুলিউশন কোর্ট প্রতিষ্ঠা ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের রিস্ক প্রোফাইল তৈরির মাধ্যমে বর্ডার কমপ্ল্যয়েন্স-এ কার্যকরি পরিদর্শন ব্যবস্থা প্রনয়ণ করতে হবে।
Sunday, October 20, 2019
বীমা খাতেও দুরবস্থা, মেয়াদ শেষেও টাকা ফেরত পান না গ্রাহকরা
অর্থনৈতিক রিপোর্টার: জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর আয়ের গতি শ্লথ হয়ে পড়েছে। প্রতি বছর এ খাতের গ্রস প্রিমিয়াম আয়ের প্রবৃদ্ধি কমছে। দেশি-বিদেশি ৩২ জীবন বীমা কোম্পানির গ্রস প্রিমিয়াম আয় বর্তমানে ১০ হাজার কোটি টাকার নিচে অবস্থান করছে। অন্যদিকে বীমা কোম্পানিগুলোতে পলিসি করে বিপাকে পড়েছে গ্রাহকরা। মেয়াদ শেষ হলেও পাচ্ছে না তাদের পাওনা টাকা। এ নিয়ে বীমা কোম্পানি আর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তারা। জানা গেছে, ৫৬০৯ গ্রাহকের কয়েক কোটি টাকার বীমা দাবি পরিশোধ করছে না নামিদামি ৫টি বীমা কোম্পানি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বীমা খাতে দুরবস্থার জন্য বেশিরভাগ কোম্পানির ব্যবস্থাপনাই দায়ী। কারণ কোম্পানিগুলো সময়োপযোগী পণ্য-সেবা দিতে পারছে না। বীমা দাবি নিয়ে কালক্ষেপণের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া বীমা সম্পর্কে গণমানুষের আস্থার সংকট রয়েছে।
জানা গেছে, বীমা খাতে গতি আনতে ২০১০ সালে আইন প্রণয়ন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা পুনর্গঠনসহ বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু তারপরও জীবন এ খাতে গতি ফেরেনি। বরং নিয়ন্ত্রক সংস্থার কড়াকড়ি আরোপ, নতুন কোম্পানির কারণে অসুস্থ প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি ও দাবি পরিশোধ নিয়ে জটিলতাসহ আরো কিছু কারণে এ খাতের এগিয়ে চলার গতি শ্লথ হয়ে পড়েছে। সময়ের সঙ্গে কোম্পানিগুলোর গ্রস প্রিমিয়াম আয়ের প্রবৃদ্ধিও কমছে।
সূত্র জানায়, ২০১০ সালে জীবন বীমা খাতে ১৮ কোম্পানি ছিল। ওই বছর কোম্পানিগুলো প্রায় ৫ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা গ্রস প্রিমিয়াম আয় করেছিল। আর প্রিমিয়াম আয়ের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৮.৪০ শতাংশ। নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাড়াকড়ির ফলে পরের বছর থেকে আয় কমতে থাকে। ২০১৫ সালে এসে ওই প্রবৃদ্ধি সর্বনি¯œ ৩.৩৯ শতাংশে নেমে যায়। এর আগের দুবছরের ইতিবাচক ধারায় কোম্পানিগুলো কিছুটা এগোলেও ২০১৭ সাল শেষেও গ্রস প্রিমিয়াম আয়ের প্রবৃদ্ধি এখনও ৮.০৩ শতাংশে আটকে আছে। ওই বছরে প্রায় ৮ হাজার ১৯৮ কোটি টাকা গ্রস প্রিমিয়াম আয় করেছে কোম্পানিগুলো। ৮ বছরে জীবন বীমা কোম্পানির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২টি হলেও গ্রস প্রিমিয়াম আয়ের প্রবৃদ্ধি এখনও ২০১০ সালের অর্ধেকের কম রয়ে গেছে। এসব কোম্পানির গ্রস প্রিমিয়াম আয় এখন ১০ হাজার কোটি টাকার নিচে অবস্থান করছে।
বাজারে নতুন কোম্পানি আসলে বীমা ব্যবসার পরিধি বাড়বে বলে উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও বাস্তব চিত্র এখনও উল্টো। নতুন ১৪ কোম্পানি অনুমোদনের পর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুরোনো ব্যবসা ভাগাভাগি হচ্ছে। কোম্পানির তুলনায় ব্যবসার পরিধি বাড়েনি। বরং এ খাতে অসুস্থ প্রতিযোগিতা আরো প্রকট হয়েছে।
এ বিষয়ে একটি বীমা কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, সময়ের সঙ্গে দেশের জীবন বীমা খাতের পরিধি বাড়ছে। কিন্তু মান বাড়ছে না। তার মতে, সময়োপযোগী বীমা পণ্য, গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণ, স্বল্প সময়ে দাবি পরিশোধ ও গ্রাহকবান্ধব করে কোম্পানিকে গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। যার ফলে এ খাত ধুকছে। গ্রাহকরা সন্তুষ্ট হলে কোম্পানি এগিয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোম্পানিগুলোকে সময়োপযোগী পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। অন্যথায় অস্তিত্ব সংকটে পড়বে এ খাত।
বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরামের সভাপতি ও পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিএম ইউসুফ আলী বলেন, গত কয়েক বছরে জীবন বীমা কোম্পানিগুলোকে খুব খারাপ সময় পার করতে হয়েছে। তবে এখন কোম্পানিগুলো অতীতের দুর্নাম কাটিয়ে উঠছে।
এদিকে জমানো টাকা ফিরে পেতে প্রতিদিনই গ্রাহকরা আইডিআরের অফিসে ভিড় করছেন। সরজমিন দেখা গেছে, পলিসির টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য প্রতিদিনই আইডিআরের কর্মকর্তাদের রুমের সামনে গ্রাহকের লাইন। দীর্ঘদিন কোম্পানির কাছে ধরনা দিয়ে শেষ পর্যন্ত আসছে আইডিআরের কাছে। কর্মকর্তাদের সামনে গ্রাহকরা কান্নায় ভেঙে পড়ছে। পলিসির মেয়াদ শেষ হলেও বছরের পর বছর কোম্পানিগুলো গ্রাহকের টাকা পরিশোধ করছে না। এসব পলিসির বিপরীতে সুদ ছাড়া টাকার পরিমাণ ৩ কোটি। কিন্তু সুদসহ হিসাব করলে তা কয়েক কোটি ছাড়িয়ে যাবে।
আইডিআরের তথ্য অনুসারে, ৫ কোম্পানির বিরুদ্ধে ৫৬০৯ গ্রাহককে পলিসির টাকা পরিশোধ না করার অভিযোগ জমা পড়েছে। এ ছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে যেসব নিয়ন্ত্রণ সংস্থার কাছে পৌঁছাতে পারেনি, সে সংখ্যা হিসাব করলে তা ২০-২৫ হাজার ছাড়িয়ে যাবে। আইডিআরের কাছেই ২ হাজার ৩৪৪টি অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া আইডিআরের বাইরে থাকা অভিযোগ তদন্ত করলে বিশাল আকারে পৌঁছাবে।
আইডিআরের নির্বাহী পরিচালক ড. রেজাউল ইসলাম বলেন, কয়েকটি কোম্পানি গ্রাহককে পলিসির টাকা দিচ্ছে না। সম্প্রতি এ ব্যাপারে আইডিআরের কাছে বেশ কিছু অভিযোগ জমা পড়েছে। কোম্পানিগুলো টাকা না দিয়ে বিভিন্ন ভাবে গ্রাহককে হয়রানি করছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। কারণ গ্রামের গরিব মানুষ খুব কষ্ট করে টাকা জমা দিয়েছে। মেয়াদ শেষ হলেও কোম্পানিগুলো তাদের টাকা দিচ্ছে না। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে আমরা প্রতিটি কোম্পানির সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করে কঠোর বার্তা দিয়েছি। আর টাকা পরিশোধের সময়ও বেঁধে দেয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টাকা না দিলে বাধ্য হয়েই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
নিয়ম অনুসারে একজন গ্রাহক জীবন বীমায় কিস্তিতে টাকা জমা রাখে। এই কিস্তি মাসিক, তিন মাস অথবা ছয় মাসের হতে পারে। এসব পলিসির মেয়াদ ৫ থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত। জীবনের আর্থিক নিরাপত্তার জন্য এই দীর্ঘ সময় তারা স্বল্প আয় থেকে একটু একটু করে টাকা জমা রাখে। বীমা আইন অনুসারে, পলিসির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সর্বোচ্চ ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিশ্রুত টাকা দিতে হয়। আর ৯০ দিনের বেশি হলে বাকি দিনগুলোর সুদসহ টাকা পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু কোম্পানিগুলো টাকা পরিশোধ না করে গ্রাহককে বছরের পর বছর হয়রানি করছে। এরা পলিসির টাকা আত্মসাৎ করেছে।
বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেন, গ্রাহকের টাকা পরিশোধ করছে না, এ ধরনের কোম্পানির সংখ্যা বেশি নয়। তবে কয়েকটি কোম্পানি এ খাতের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। তিনি বলেন, এ খাতের আস্থা অর্জনের জন্য সবার আগে গ্রাহকের টাকা পরিশোধ করতে হবে।
Thursday, October 17, 2019
শেয়ারবাজার টালমাটাল, বিনিয়োগকারীদের কান্না
অর্থনৈতিক রিপোর্টার: দেশের শেয়ারবাজারে অব্যাহত দরপতনে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা দিন দিন ভারী হচ্ছে। পতন আরো গভীর থেকে গভীর হচ্ছে। প্রায় সব কোম্পানি ক্রমাগত দর হারাচ্ছে। ফলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক প্রায় তিন বছর আগের অবস্থানে ফিরে গেছে। একই সঙ্গে বাজার মূলধন, লেনদেনও তলানিতে নেমে যাচ্ছে। এদিকে টানা দরপতনে পুঁজি হারাচ্ছেন লাখ লাখ বিনিয়োগকারী। বাজারের স্থিতিশীলতা ফেরাতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিএসইসির চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেনের আশ্বাস এবং তারল্য সংকট কাটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগেও কোন কাজ হচ্ছে না। বাজারে পতন চলছেই। গতকাল সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসেও মূল্য সূচকের পতনেই লেনদেন শেষ হয়েছে পুঁজিবাজারে। এদিন ডিএসইতে লেনদেন কমেছে। অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচক কমলেও লেনদেন বেড়েছে।
বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, বাজারের বর্তমান অবস্থা ১৯৯৬ এবং ২০১০ সালের ধসকেও হার মানিয়েছে। ওই দুই সময়ের ধসে বড় ধরনের সংস্কার এবং প্রণোদনা দেয়া হয়। কিন্তু বর্তমানে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের দেখার কেউ নেই। এ অবস্থায় পুঁজি হারানো বিনিয়োগকারীরা কাউকে কিছু বলতে পারছেন না। ফলে নীরব কান্না চলছে শেয়ারবাজারে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক। কোনো বিনিয়োগকারীই পুঁজি নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারছেন না। নতুন করে বিনিয়োগ তো আসছেই না, উল্টো অনেকে বড় লোকসান দিয়ে সমুদয় শেয়ার বিক্রি করছেন। যাদের লোকসান মাত্রাতিরিক্ত, তারাই লোকসান কমানোর আশায় এক শেয়ার বিক্রি করে অন্য শেয়ার কিনছেন। কিন্তু লোকসান তো কমছেই না, বরং লোকসানের পাল্লা বাড়ছে।
ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, ডিএসই প্রধান সূচক প্রায় ৯ মাসে কমেছে ১ হাজার ২০০ পয়েন্ট। একই সময়ের ব্যবধানে বাজার মূলধন বা শেয়ারের বাজারমূল্য কমেছে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। কারণ বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা নেই। সূচক যেমন তলানিতে, আস্থাও তলানিতে।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, অতিমূল্যায়িত আইপিও পুঁজিবাজারকে অস্থির করে তুলেছে। অন্যদিকে নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। পাশাপাশি স্টক এক্সচেঞ্জ, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে বাজার প্রাণহীন হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, ডিএসইর প্রধান সূচকটি চলতি বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে ছিল গত ২৪শে জানুয়ারি। ওই দিন সূচক ছিল ৫ হাজার ৯৫০ পয়েন্টে ও বাজার মূলধন ছিল প্রায় ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। গতকাল সেই সূচক নেমে এসেছে ৪ হাজার ৭৭০ পয়েন্টে আর বাজার মূলধন কমে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৫৯ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ ৯ মাসে সূচক কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ আর বাজার মূলধন কমেছে ১৪ শতাংশের বেশি। এছাড়া শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩১৯ কোম্পানির মধ্যে ৪৬টি বা প্রায় সাড়ে ১৪ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম এখন ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের নিচে নেমে এসেছে। এসব কোম্পানির বেশির ভাগই বর্তমান নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন নিয়ে বাজারে এসেছে। অনুমোদন দেয়া নিয়েও আছে নানা প্রশ্ন।
ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল রিজভী বলেছেন, তারল্য সংকট, আর্থিক খাতের খারাপ অবস্থা এবং গ্রামীণফোনের সমস্যার সমাধান না হওয়ার কারণে পুঁজিবাজারে অব্যাহত দরপতন হচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে যে তারল্য সংকট আছে সেটা রয়ে গেছে। ব্যাংকের সুদের হার এখনও বেশি। এটার নেতিবাচক প্রভাব পুঁজিবাজারে আছে। গ্রামীণফোন পুঁজিবাজারের প্রায় ১০ শতাংশর মত। এটার সঙ্গে কর নিয়ে যে একটি সমস্যা সেটার সমাধান হয়নি। এসটার বড় প্রভাব ফেলছে বাজারে। শাকিল রিজভী মনে করেন, বাজারে এখন আস্থার সংকটই সবচেয়ে বড় সমস্যা। আর এই তিন সমস্যা দূর না হলে বাজারে আস্থা ফিরবে না। বিনিয়োগকারীলা বাজারমুখি হবেন না। বাজার স্বাভাবিক হবে না।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলামও শাকিল রিজভীর সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, ব্যাংকিং খাত ঠিক না হলে শেয়ার বাজার ঠিক হবে না। দেশের অর্থনীতির স্বার্থে ব্যাংকিং খাতের সুশাসন ফিরিয়ে আনতে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গতকাল ডিএসই প্রধান বা ডিএসইএক্স সূচক ১০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৪ হাজার ৭৭০ পয়েন্টে। গত সোমবার ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) বিনিয়োগের ঘোষণার পর মঙ্গলবার বড় উত্থান হলেও বুধবার আবার পতনে ফিরেছে শেয়ারবাজার। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসইএস বা শরিয়াহ সূচক ৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৯৪ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৭৯ পয়েন্টে। ডিএসইতে গতকাল টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৩১৩ কোটি লাখ টাকার। যা গত কার্যদিবস থেকে ১১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা কম। এর আগের দিন লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৩২৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। গতকাল ডিএসইতে ৩৫০টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৪৫টির, কমেছে ১৬২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৩টির।
অপরদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৪৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৪ হাজার ৫১১ পয়েন্টে। সিএসইতে টাকার অংকে ১৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এ সময়ে সিএসইতে লেনদেনে অংশ নিয়েছে ২৫৫টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১০২টির, কমেছে ১২৪টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৯টির।
বাজারের এমন আচরণে হতাশ সাধারণ বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরাও। সংশ্লিষ্টরা জানান, মঙ্গলবার গুঞ্জন ছিল শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির শীর্ষ পদে বড় রদবদল হচ্ছে। ওই দিন বিকালেই অবশ্য জানা যায়, এটি গুজব। বাজারের বিপরীতমুখী অবস্থার ক্ষেত্রে এ খবরের যোগসূত্র রয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন। এদিকে শেয়ারবাজার থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যে পরিমাণ টাকার শেয়ার কিনছেন বিক্রি করে দিচ্ছেন তার থেকে বেশি।
সূত্র জানায়, শেয়ারবাজার পরিস্থিতি নিয়ে গত ১৬ই সেপ্টেম্বর বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এখানে আশ্বস্ত করব সবাইকে যে, আমরা পুঁজিবাজারকে সুশাসন দেব এবং আমরা গর্ভন্যান্সে ভালো করব। এভাবে আমাদের পুঁজিবাজারকে আমরা একটি শক্তিশালী বাজারে রূপান্তরিত করব। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ বাড়াতে নগদ অর্থ জোগান দেয়ার উদ্যোগ নেয়। এর বাইরে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক ২০০ কোটি টাকা দিয়েছে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ বা আইসিবিকে। আইসিবি ওই টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ শুরু করেছে বলে জানা গেছে।
এর পর সর্বশেষ 'বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ' অনুষ্ঠানে বিএসইসির চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেন বলেছিলেন, সরকারি লাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলো খুব শিগগিরই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হবে। কিছু ভালো লাভজনক প্রতিষ্ঠান দু-এক মাসের মধ্যেই বাজারে আসবে। এরপরও বাজারে পতন চলছেই। অর্থাৎ আস্থার সংকটে কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না।
বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা সৃষ্টি করাই এখন নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান কাজ।
অন্যদিকে শেয়ারবাজারে লেনদেন কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন খোদ স্টক ব্রোকার মালিকরা। তাদের ব্যবসা সংকোচনের নামে কর্মী ছাঁটাই শুরু করেছেন।
একজন ব্রোকার মালিক জানান, ২০১০ সালের পর দীর্ঘ সময়ে লোকসান দিয়ে হাউস পরিচালনা করেছেন। এর পর কোম্পানির রিজার্ভ থেকে কর্মকর্তাদের বেতন পরিশোধ করেছেন। এখন রিজার্ভের খাতা শূন্যের কোঠায় নামছে। ফলে বাধ্য হয়েই কর্মী ছাঁটাইয়ে যেতে হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
শাকিল রিজভী বলেন, পরিস্থিতি ভালো না। প্রতিদিনই লোকসান দিতে দিতে বিনিয়োগকারীদের পোর্টফোলিও এতটাই কমেছে যে, তারা এর দিকে ফিরে তাকাতেও বিরক্ত বোধ করছেন। অনেক ব্রোকারেজ হাউস বন্ধ হওয়ার উপক্রম। কারণ শেয়ার কেনাবেচা থেকে যে কমিশন আয় হচ্ছে, তা নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দেয়া তো দূরের কথা, দৈনন্দিন অফিস খরচই মেটাতে পারছে না। এভাবে কতদিন চলবে, তা কেউ বলতে পারছেন না।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারী সোহেল হাসান বলেন, কয়েক মাস আগে একটি কোম্পানির শেয়ার ৬ টাকা ৭০ পয়সায় কিনেছিলেন। এখন সেই শেয়ারের মূল্য কমে ৪ টাকা ৫০ পয়সায় নেমেছে। আলোচ্য সময়ে তিনি পুঁজি খুইয়েছেন ৩৩ শতাংশ। তিনি বলেন, কোম্পানিটির শেয়ারের মূল্য কমেছে যৌক্তিক কোনো কারণ ছাড়াই।
হাসিবুল হাসিব নামের আরেক বিনিয়োগকারী একটি ভালো কোম্পানির শেয়ার কিনেছিলেন ৭৭ টাকা করে। সর্বশেষ সেই শেয়ারের মূল্য কমে দাঁড়িয়েছে ৪৭ টাকায়। আলোচ্য সময়ে তিনি পুঁজি হারিয়েছেন ৩৯ শতাংশ। আরেক বিনিয়োগকারী আতিকুল ইসলাম জাহিন স্পিনিংয়ের প্রতিটি শেয়ার কিনেছিলেন ৯ টাকা ৬০ পয়সায়। এখন সেই শেয়ারের মূল্য দাঁড়িয়েছে ৫ টাকা ৫ পয়সা। আলোচ্য সময়ে তার পুঁজি হারিয়েছে ৪৩ শতাংশ। তিন মাসের ব্যবধানে তাদের বিনিয়োগ করা পুঁজি খুইয়েছেন। তবে শেয়ারের এই মূল্য কমে যাওয়ার কোনো কারণ কোম্পানি বা স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি।
বাজার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অব্যাহত দরপতনে বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীই এখন লোকসানে। লোকসান আরো বাড়বে এমন শঙ্কায় অনেক বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে বিক্রির চাপ বেড়ে দরপতন ত্বরান্বিত হচ্ছে। বিক্রির চাপ বাড়লেও তা সামাল দেয়ার জন্য যে সহায়তা দরকার, তা বাজারে নেই।
বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, বাজারের বর্তমান অবস্থা ১৯৯৬ এবং ২০১০ সালের ধসকেও হার মানিয়েছে। ওই দুই সময়ের ধসে বড় ধরনের সংস্কার এবং প্রণোদনা দেয়া হয়। কিন্তু বর্তমানে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের দেখার কেউ নেই। এ অবস্থায় পুঁজি হারানো বিনিয়োগকারীরা কাউকে কিছু বলতে পারছেন না। ফলে নীরব কান্না চলছে শেয়ারবাজারে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক। কোনো বিনিয়োগকারীই পুঁজি নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারছেন না। নতুন করে বিনিয়োগ তো আসছেই না, উল্টো অনেকে বড় লোকসান দিয়ে সমুদয় শেয়ার বিক্রি করছেন। যাদের লোকসান মাত্রাতিরিক্ত, তারাই লোকসান কমানোর আশায় এক শেয়ার বিক্রি করে অন্য শেয়ার কিনছেন। কিন্তু লোকসান তো কমছেই না, বরং লোকসানের পাল্লা বাড়ছে।
ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, ডিএসই প্রধান সূচক প্রায় ৯ মাসে কমেছে ১ হাজার ২০০ পয়েন্ট। একই সময়ের ব্যবধানে বাজার মূলধন বা শেয়ারের বাজারমূল্য কমেছে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। কারণ বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা নেই। সূচক যেমন তলানিতে, আস্থাও তলানিতে।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, অতিমূল্যায়িত আইপিও পুঁজিবাজারকে অস্থির করে তুলেছে। অন্যদিকে নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। পাশাপাশি স্টক এক্সচেঞ্জ, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে বাজার প্রাণহীন হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, ডিএসইর প্রধান সূচকটি চলতি বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে ছিল গত ২৪শে জানুয়ারি। ওই দিন সূচক ছিল ৫ হাজার ৯৫০ পয়েন্টে ও বাজার মূলধন ছিল প্রায় ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। গতকাল সেই সূচক নেমে এসেছে ৪ হাজার ৭৭০ পয়েন্টে আর বাজার মূলধন কমে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৫৯ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ ৯ মাসে সূচক কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ আর বাজার মূলধন কমেছে ১৪ শতাংশের বেশি। এছাড়া শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩১৯ কোম্পানির মধ্যে ৪৬টি বা প্রায় সাড়ে ১৪ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম এখন ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের নিচে নেমে এসেছে। এসব কোম্পানির বেশির ভাগই বর্তমান নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন নিয়ে বাজারে এসেছে। অনুমোদন দেয়া নিয়েও আছে নানা প্রশ্ন।
ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল রিজভী বলেছেন, তারল্য সংকট, আর্থিক খাতের খারাপ অবস্থা এবং গ্রামীণফোনের সমস্যার সমাধান না হওয়ার কারণে পুঁজিবাজারে অব্যাহত দরপতন হচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে যে তারল্য সংকট আছে সেটা রয়ে গেছে। ব্যাংকের সুদের হার এখনও বেশি। এটার নেতিবাচক প্রভাব পুঁজিবাজারে আছে। গ্রামীণফোন পুঁজিবাজারের প্রায় ১০ শতাংশর মত। এটার সঙ্গে কর নিয়ে যে একটি সমস্যা সেটার সমাধান হয়নি। এসটার বড় প্রভাব ফেলছে বাজারে। শাকিল রিজভী মনে করেন, বাজারে এখন আস্থার সংকটই সবচেয়ে বড় সমস্যা। আর এই তিন সমস্যা দূর না হলে বাজারে আস্থা ফিরবে না। বিনিয়োগকারীলা বাজারমুখি হবেন না। বাজার স্বাভাবিক হবে না।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলামও শাকিল রিজভীর সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, ব্যাংকিং খাত ঠিক না হলে শেয়ার বাজার ঠিক হবে না। দেশের অর্থনীতির স্বার্থে ব্যাংকিং খাতের সুশাসন ফিরিয়ে আনতে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গতকাল ডিএসই প্রধান বা ডিএসইএক্স সূচক ১০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৪ হাজার ৭৭০ পয়েন্টে। গত সোমবার ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) বিনিয়োগের ঘোষণার পর মঙ্গলবার বড় উত্থান হলেও বুধবার আবার পতনে ফিরেছে শেয়ারবাজার। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসইএস বা শরিয়াহ সূচক ৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৯৪ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৭৯ পয়েন্টে। ডিএসইতে গতকাল টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৩১৩ কোটি লাখ টাকার। যা গত কার্যদিবস থেকে ১১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা কম। এর আগের দিন লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৩২৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। গতকাল ডিএসইতে ৩৫০টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৪৫টির, কমেছে ১৬২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৩টির।
অপরদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৪৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৪ হাজার ৫১১ পয়েন্টে। সিএসইতে টাকার অংকে ১৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এ সময়ে সিএসইতে লেনদেনে অংশ নিয়েছে ২৫৫টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১০২টির, কমেছে ১২৪টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৯টির।
বাজারের এমন আচরণে হতাশ সাধারণ বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরাও। সংশ্লিষ্টরা জানান, মঙ্গলবার গুঞ্জন ছিল শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির শীর্ষ পদে বড় রদবদল হচ্ছে। ওই দিন বিকালেই অবশ্য জানা যায়, এটি গুজব। বাজারের বিপরীতমুখী অবস্থার ক্ষেত্রে এ খবরের যোগসূত্র রয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন। এদিকে শেয়ারবাজার থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যে পরিমাণ টাকার শেয়ার কিনছেন বিক্রি করে দিচ্ছেন তার থেকে বেশি।
সূত্র জানায়, শেয়ারবাজার পরিস্থিতি নিয়ে গত ১৬ই সেপ্টেম্বর বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এখানে আশ্বস্ত করব সবাইকে যে, আমরা পুঁজিবাজারকে সুশাসন দেব এবং আমরা গর্ভন্যান্সে ভালো করব। এভাবে আমাদের পুঁজিবাজারকে আমরা একটি শক্তিশালী বাজারে রূপান্তরিত করব। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ বাড়াতে নগদ অর্থ জোগান দেয়ার উদ্যোগ নেয়। এর বাইরে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক ২০০ কোটি টাকা দিয়েছে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ বা আইসিবিকে। আইসিবি ওই টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ শুরু করেছে বলে জানা গেছে।
এর পর সর্বশেষ 'বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ' অনুষ্ঠানে বিএসইসির চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেন বলেছিলেন, সরকারি লাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলো খুব শিগগিরই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হবে। কিছু ভালো লাভজনক প্রতিষ্ঠান দু-এক মাসের মধ্যেই বাজারে আসবে। এরপরও বাজারে পতন চলছেই। অর্থাৎ আস্থার সংকটে কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না।
বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা সৃষ্টি করাই এখন নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান কাজ।
অন্যদিকে শেয়ারবাজারে লেনদেন কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন খোদ স্টক ব্রোকার মালিকরা। তাদের ব্যবসা সংকোচনের নামে কর্মী ছাঁটাই শুরু করেছেন।
একজন ব্রোকার মালিক জানান, ২০১০ সালের পর দীর্ঘ সময়ে লোকসান দিয়ে হাউস পরিচালনা করেছেন। এর পর কোম্পানির রিজার্ভ থেকে কর্মকর্তাদের বেতন পরিশোধ করেছেন। এখন রিজার্ভের খাতা শূন্যের কোঠায় নামছে। ফলে বাধ্য হয়েই কর্মী ছাঁটাইয়ে যেতে হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
শাকিল রিজভী বলেন, পরিস্থিতি ভালো না। প্রতিদিনই লোকসান দিতে দিতে বিনিয়োগকারীদের পোর্টফোলিও এতটাই কমেছে যে, তারা এর দিকে ফিরে তাকাতেও বিরক্ত বোধ করছেন। অনেক ব্রোকারেজ হাউস বন্ধ হওয়ার উপক্রম। কারণ শেয়ার কেনাবেচা থেকে যে কমিশন আয় হচ্ছে, তা নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দেয়া তো দূরের কথা, দৈনন্দিন অফিস খরচই মেটাতে পারছে না। এভাবে কতদিন চলবে, তা কেউ বলতে পারছেন না।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারী সোহেল হাসান বলেন, কয়েক মাস আগে একটি কোম্পানির শেয়ার ৬ টাকা ৭০ পয়সায় কিনেছিলেন। এখন সেই শেয়ারের মূল্য কমে ৪ টাকা ৫০ পয়সায় নেমেছে। আলোচ্য সময়ে তিনি পুঁজি খুইয়েছেন ৩৩ শতাংশ। তিনি বলেন, কোম্পানিটির শেয়ারের মূল্য কমেছে যৌক্তিক কোনো কারণ ছাড়াই।
হাসিবুল হাসিব নামের আরেক বিনিয়োগকারী একটি ভালো কোম্পানির শেয়ার কিনেছিলেন ৭৭ টাকা করে। সর্বশেষ সেই শেয়ারের মূল্য কমে দাঁড়িয়েছে ৪৭ টাকায়। আলোচ্য সময়ে তিনি পুঁজি হারিয়েছেন ৩৯ শতাংশ। আরেক বিনিয়োগকারী আতিকুল ইসলাম জাহিন স্পিনিংয়ের প্রতিটি শেয়ার কিনেছিলেন ৯ টাকা ৬০ পয়সায়। এখন সেই শেয়ারের মূল্য দাঁড়িয়েছে ৫ টাকা ৫ পয়সা। আলোচ্য সময়ে তার পুঁজি হারিয়েছে ৪৩ শতাংশ। তিন মাসের ব্যবধানে তাদের বিনিয়োগ করা পুঁজি খুইয়েছেন। তবে শেয়ারের এই মূল্য কমে যাওয়ার কোনো কারণ কোম্পানি বা স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি।
বাজার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অব্যাহত দরপতনে বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীই এখন লোকসানে। লোকসান আরো বাড়বে এমন শঙ্কায় অনেক বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে বিক্রির চাপ বেড়ে দরপতন ত্বরান্বিত হচ্ছে। বিক্রির চাপ বাড়লেও তা সামাল দেয়ার জন্য যে সহায়তা দরকার, তা বাজারে নেই।
Wednesday, October 16, 2019
Tuesday, October 15, 2019
একনেকে নতুন দুই মেট্রোরেলসহ ১০ প্রকল্প অনুমোদন
সরকারি আবাসিক ভবনে আর গ্যাস সংযোগ নয়: প্রধানমন্ত্রী
অর্থনৈতিক রিপোর্টার: সরকারি আবাসিক ভবনে আর গ্যাস সংযোগ না দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহারে অভ্যস্ত হওয়ার কথা জানান পধানমন্ত্রী। এছাড়া বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে করণীয় নির্ধারণে বেশকিছু নির্দেশনাও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এদিকে রাজধানীর যানজট নিরসনে নতুন দুটি মেট্রোরেল নির্মাণসহ ১০ প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এতে খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ৯৪ হাজার কোটি টাকা।
গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) বৈঠক শেষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর এসব নির্দেশনার বিষয়ে জানান পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান।
পরিকল্পনা মন্ত্রী জানান, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকারি সব বাসভবনে নেট লাগানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এখন থেকে যেসব সরকারি বাড়ি তৈরি করা হবে তার সবগুলোতে মসকিউটো নেটিং থাকতে হবে। সেই সঙ্গে আর্বজনা ডিসপোজালের ব্যবস্থা থাকতে হবে। তাছাড়া বাড়ির নিচতলায় গাড়ি চালকদের জন্য টয়লেট, নামাজ পড়ার জায়গা ও বিশ্রামের জায়গা থাকতে হবে। সরকারি বাসভবনে গ্যাস সংযোগের বিষয়েও নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
পরিকল্পনা মন্ত্রী জানান, এখন সরকারি আবাসিক ভবনে গ্যাস সংযোগ না দেয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ধীরে ধীরে সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহারে মানুষকে অভ্যস্ত হওয়ার আহবান জানান।
তিনি বলেন, এখন সরকারি অর্থে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও আগামীতে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডকে শেয়ার বাজারে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া আগামীতে ধানম-িকে ধরে আশপাশের এলাকার জন্য মেট্রোরেল তৈরির পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। মেট্রোরেলের ব্যয়ের প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, এখন বেশি জমি অধিগ্রহণ করায় নতুন মেট্রোরেলের ব্যয় বেশি হচ্ছে। এছাড়া মাটির নিচে ও এলিভেটেড দুই ধরনের হওয়ায় কারিগরি অনেক বিষয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, যেকোনো প্রকল্প সময়ের মধ্যেই সংশোধন করতে হবে। কিন্তু সময় শেষে নিয়ে আসা যাবে না।
এদিকে একনেক সভায় বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর রেলস্টেশন এবং নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল ডিপো পর্যন্ত ৩১.২৪১ কিলোমিটার এমআরটি লাইন-১ নির্মাণ ও হেমায়েতপুর-আমিনবাজার-গাবতলী-মিরপুর ১-মিরপুর ১০-কচুক্ষেত-বনানী-গুলশান ২-নতুনবাজার-ভাটারা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার এমআরটি লাইন-৫: নর্দার্ন রুট প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
এমআরটি (লাইন-১) নির্মাণের জন্য চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ ধরা হয়েছে। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ৫২,৫৬১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকার বহন করবে ১৩,১১১ কোটি ১১ লাখ টাকা সরকার ও ৩৯,৪৫০ কোটি ৩২ লাখ টাকা বৈদেশিক ঋণ।
এমআরটি (লাইন-৫) নির্মাণ সম্পন্নের জন্য মেয়াদ রাখা হয়েছে চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রকল্পটিতে মোট ব্যয় হবে ৪১,২৩৮ কোটি ৫৪ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। এতে সরকারি অর্থায়ন ১২,১২১ কোটি ৪৯ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। বৈদেশিক ঋণ ২৯,১১৭ কোটি ৫ লাখ ১০ হাজার টাকা।
অনুমোদিত ১০ প্রকল্প: সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ‘ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-১)’; ‘ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-৫): নর্দান রুট; ‘ডোমার-চিলাহাটি-ভাউলাগঞ্জ (জেড-৫৭০৬), ডোমার (বোড়াগাড়ী)-জলঢাকা-(ভাদুরদরগাহ) (জেড-৫৭০৪) এবং জলঢাকা-ভাদুরদরগাহ-ডিমলা (জেড-৫৭০৩) জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ’ ও ‘কিশোরগঞ্জ-করিমগঞ্জ-চামড়াঘাট জেলা মহাসড়ক যথাযথ মানে উন্নীতকরণসহ ছয়না-যশোদল-চৌদ্দশত বাজার সংযোগ সড়ক নির্মাণ’ প্রকল্প; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ‘গৃহায়ন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন (দ্বিতীয় সংশোধন) প্রকল্প’; গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ‘ঢাকাস্থ মিরপুর পাইকপাড়ায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বহুতল আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ’ ও ‘ঢাকার আজিমপুরে বিচারকদের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণ (প্রথম সংশোধন) প্রকল্প; পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘ইরিগেশন ম্যানেজমেন্ট ইনম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্ট ফর মুহরী ইরিগেশন প্রজেক্ট (দ্বিতীয় সংশোধন) প্রকল্প এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ‘জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব নিরসনে সিলেট বন বিভাগে পুনঃবনায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প।
এদিকে চলতি অর্থবছর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন হয়েছে ৮.০৬ শতাংশ। যা গত বছর একই সময়ে হয়েছে ৮.২৫ শতাংশ। একনেক ব্রিফিং শেষে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের এ তথ্য প্রকাশ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী। তিনি জানান, চলতি অর্থবছরে ৩ মাসে (জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর) ১৭ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। যা গতবছর একই সময়ে ব্যয় হয়েছিল ২ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা।
Subscribe to:
Posts (Atom)