যশোর: দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দিগন্তজোড়া সরিষা ক্ষেতের দৃশ্য মন কেড়েছে সবার। মাঠের পর মাঠ সরিষার হলদে আভায় মুগ্ধ সবাই। শুধু গন্ধ আর দৃষ্টি নন্দনতাই নয়, এর অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে। তাই এ অঞ্চলে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সরিষা চাষ। সরিষার উপর নির্ভর করে মধু খামারিরা ক্ষেতের পাশে মৌমাছি পালন করে মধু সংগ্রহ করছেন। মধু খামারিরা জানান, সরিষার মধুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। অন্য সময়ের থেকে এ সময় মধুর দাম বেশি পাওয়া যায়। প্রতি কেজি মধু বর্তমানে ২শ’ টাকা থেকে আড়াইশ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মওসুমে খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দশ জেলা-যশোর, নড়াইল, ঝিনাইদহ, মাগুরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাটে এ মওসুমে ৬৭ হাজার ৪৪০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮০ হাজার ৯২৮ মেট্রিক টন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তাররা।
ভোজ্য হিসেবে সরিষা তেলের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকরা প্রতি বছর সরিষার চাষ বেশি বেশি জমিতে করছেন। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সরিষা চাষ লাভজনক হওয়ায় গত কয়েক বছর ধরে এ অঞ্চলের কৃষকরা সরিষা চাষে ঝুঁকছেন।
কৃষকরা জানান, এক সময় সরিষার তেল ভোজ্য হিসেবে ব্যবহার হতো। পরে এর ব্যবহার হ্রাস পায়। বর্তমানে সরিষা তেলের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। সরিষার উৎপাদনও বেড়েছে। এতে একদিকে দেশের তেল ঘাটতি পূরণ হবে, অন্যদিকে দেশ তেল রফতানি ব্যয় কমে যাবে। খুলনা বিভাগের ১০ জেলার বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে সরিষার হলদে ফুল দৃষ্টি কাড়ছে সবার। মৌমাছি মধু সংগ্রহ করছে সরিষা ফুল থেকে। বাজারে সরিষা মধুর চাহিদা ও দাম বেশি। চলতি মাসের শেষের দিকে সরিষা কর্তন শুরু হবে বলে কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা জানালেন।
বাঘারপাড়া উপজেলার চাড়াভিটা এলাকার সরিষাচাষি আবুল হোসেন জানান, রবি মৌসুমে এ ফসল চাষ লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছর আমি সরিষার চাষ করি। বিনা-৭ ও ৮,বারি-৯ ও ১৪ এবং ১৫ জাতের সরিষার আবাদ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তিনি এবছর প্রায় ৫বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছেন। উৎপাদিত জমিতে সরিষার আবাদ ভালো হয়েছে বলে তিনি জানান।
নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ছবি হরিদাস জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সময়মতো উন্নতমানের বীজ, পর্যাপ্ত সার ও কীটনাশক চাষীদের মাঝে সরবরাহ করায় সরিষার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।
যশোর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দশ জেলায় ৬৭ হাজার ৪৪০ হেক্টর জমিতে ৮০ হাজার ৯২৮ মেট্রিক টন সরিষা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
জেলাওয়ারী সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে- যশোর জেলায় ১৬ হাজার ৫৫৬ হেক্টরে ১৯ হাজার ৮৬৭ মেট্রিক টন, নড়াইল জেলায় ৫ হাজার ৬৬৪ হেক্টরে ৬ হাজার ৭৯৭ মেট্রিক টন, মাগুরা জেলায় ১২ হাজার ৯২ হেক্টরে ১৪ হাজার ৫১০ মেট্রিক টন, ঝিনাইদহ জেলায় হাজার ১০ হাজার ১৩ হেক্টরে ১২ হাজার ১৬ মেট্রিক টন, কুষ্টিয়া জেলায় ৫ হাজার ৪০৮ হেক্টরে ৬ হাজার ৪৯০ মেট্রিক টন, মেহেরপুর জেলায় ৬ হাজার ২১৭ হেক্টরে ৭ হাজার ৪৬০ মেট্রিক টন, চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৩ হাজার ১৮৪ হেক্টরে ৩ হাজার ৮২১ মেট্রিক টন, সাতক্ষীরা জেলায় ৭ হাজার ১৯৬ হেক্টরে ৮ হাজার ৬৩৫ মেট্রিক টন, খুলনা জেলায় ৪১২ হেক্টরে ৪৯৪ মেট্রিক এবং বাগেরহাট জেলায় সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৯৮ হক্টর জমিতে ৮৩৮ মেট্রিক টন।
No comments:
Post a Comment