Saturday, January 18, 2014

পতিত জমিতে গাছ লাগিয়ে কোটিপতি হচ্ছেন মোস্তফা

পতিত জমিতে গাছ লাগিয়ে কোটিপতি হচ্ছেন মোস্তফা
নওগাঁ: নওগাঁয় ভুমিহীন মোস্তফা মন্ডল বুলা’র অন্যের জমি বর্গা নিয়ে গাছ রোপন করে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে। আগামী ২০১৬ সালের মধ্যে তিনি প্রায় ১৫ কোটি টাকার মালিক হতে চলেছেন। মোস্তফা মন্ডল নওগাঁ পত্নীতলা উপজেলার কাশিপুর হাট গ্রামের মৃত অফিজ উদ্দিনের পুত্র। বাড়ির আশপাশে পতিত জমিতে গাছ লাগিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় গাছ লাগানোর প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায় তার। কিন্তু তার নিজের কোন জমি নেই। তাই তিনি জমি বর্গা নেয়ার কথা ভাবতে থাকেন। আত্রাই নদী তীরবর্তী যেসব জমিতে ভাল ফসল উৎপাদনের সম্ভাবনা কম সেসব জমির মালিকদের উৎসাহিত করেন।

এভাবে তিনি পত্নীতলা পজেলার সামবাটি, কাশিপুর, গোপালপুর, পরানপুর, মহাদেবপুর উপজেলার মহিষবাথান এবং ধামইরহাট উপজেলার রসুলবিল মৌজায় প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন কৃষকদের কাছ থেকে ২২০ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে ২০০৬ সালে থেকে বনায়ন কর্মসূচি হাতে নেন। এসব জমিতে তিনি হাট এবং বিভিন্ন নার্সারী থেকে আকাশমনি, ইউক্যালিপটাস এবং আম গাছের চারা ক্রয় করে লাগান। গাছ বিক্রি করে যা দাম পাওয়া যাবে তা জমির মালিকদের সাথে আধাআধি ভাগ করে নেবেন এমন চুক্তি করেছেন তিনি।

এসব গাছের তিনি নিজেই যতœ করেন। এ ছাড়াও এলাকাভিত্তিক লোক নিয়োগ করেছেন গাছের দেখাশুনা করতে। ইতিমধ্যে গাছগুলো বড় হয়েছে। আগামী ১০/১২ বছর পর ২০১৬ সালে গাছগুলো বিক্রির উপযোগী হবে। তখন প্রতিটি গাছ গড়ে ৪ হাজার টাকা করে বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদী।

প্রতি বিঘায় ৪০০টি করে গাছ লাগিয়েছেন তিনি। সে হিসেবে ২২০ বিঘা জমিতে গাছের মোট সংখ্যা ৮৮ হাজার। প্রতিটি গাছ ৪ হাজার টাকায় বিক্রি করলে সেসব গাছের মোট মূল্য দাঁড়াবে ৩৫ কোটি টাকারও বেশি। গাছের চারা কেনা এবং পরিচর্যার জন্য নিয়োগকৃত লোকের মজুরি ইত্যাদি বাবদ খরচের পরিমাণ প্রায় ১ কোটি টাকা।

মোট খরচ বাদ দিয়ে গাছ বিক্রির মোট টাকার অর্ধেক জমির মালিকদের পরিশোধ করে তা নিজস্ব অর্থের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ১৭ কোটি টাকা। এই অবস্থায় আর্থিকভাবে এতটাই স্বাচ্ছন্দ আসবে যে তাকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হবে না।

যে মোস্তফা এক সময় অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাতেন। এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে সংসারের ঘানি টানতে হিমশিম খেতেন। সেই মোস্তফার সংসারে স্বচ্ছলতার পদধ্বনি। তার এক ছেলে এক মেয়ে এবং স্ত্রীকে নিয়ে তার ছোট্ট সংসার। সন্তানরা পড়াশুনা করছে। এই সাফল্যের কারণে ছেলে-মেয়েদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে আর কোন বাধা থাকবে না বলে তিনি প্রত্যাশা করছেন।।

এদিকে গাছ লাগিয়ে তার এই অভাবনীয় সাফল্য দেখে এলাকার আরও অনেকেই এগিয়ে এসেছেন। কাশিপুর হাটের হামিদুল ইসলাম, পাটিচরা গ্রামের রফিকুল ইসলাম, ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের চন্দন এবং গাহন গ্রামের শেফাতুল ইসলাম একই হিসেবে গাছ লাগানো শুরু করেছেন। মোস্তফা মন্ডলের অভাবনীয় এই সাফল্যের পথ ধরে তারাও কাঙ্খিত সফলতা অর্জনের পথে এগিয়ে যেতে শুরু করেছেন।

বনবিভাগ ধামইরহাট অঞ্চলের বনবিট কর্মকর্তা লক্ষন চন্দ্র ভৌমিক জানিয়েছেন, গাছ লাগানো খুবই লাভজনক। তিনি মোস্তফা মন্ডলের গাছ লাগানোর সাফল্যের কথা স্বীকার করে বলেছেন, এলাকার আরও অনেকেই মোস্তফা মন্ডলের মত গাছ লাগাতে শুরু করেছেন। 

No comments:

Post a Comment