বান্দরবান: মাশরুম চাষ সম্প্রসারণ কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বান্দরবান শহরের বালাঘাটার ছেনোয়ারা বেগম আর রোয়াংছড়ি উপজেলার আলেক্ষ্যং ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান চাইনিং মারমাসহ অনেকে।
সরকারি বা বেসরকারি কোনো সংস্থার সহযোগিতা ছাড়াই বান্দরবান শহরের বালাঘাটায় ২০০৯ সাল থেকে লাভজনক মাশরুম চাষ করে আসছেন ছেনোয়ারা। ২ সন্তানের জননী ছেনোয়ারা বেগম স্বামী ছাড়াই কেবল তার ঘরের একটি অংশে আবাদ করা মাশরুম চাষ থেকে উৎপাদিত মাশরুম বিক্রি করে প্রতিমাসে গড়ে আয় করছেন ১৫ হাজার থেকে ২০ টাকা করে।
তিনি মাশরুম চাষের জন্যে বালাঘাটা উদ্যান উন্নয়ন বাগান থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ২০০৯ সাল থেকে নিজস্ব উদ্যোগে শুরু করেন মাশরুম চাষ। প্রতিদিন গড়ে ৩ কেজি মাশরুম উৎপাদন করে বিক্রি করতে পারেন। প্রতি কেজি মাশরুম ২০০ টাকায় বিক্রি করা যায়।
পরিচর্যা ও যথাযথ উপকরণ ব্যবহারের মাধ্যমে মাশরুমের প্রতিটি স্পন্স বা পোটলা থেকে তিন মাস পর্যন্ত মাশরুম উৎপাদন করা সম্ভব। শুকনা খড় ও ফুল গামারি গাছের ভূষি বা গুঁড়া দিয়েই তিনি নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় তৈরি করে থাকেন মাশরুমের স্পন্স।
তবে তিনি ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় উন্নত প্রশিক্ষণ পেলে নিজের উদ্যোগে মাশরুম চাষ সম্প্রসারণে আরো এগুতে পারবেন এবং সেই সাথে আগ্রহী চাষীদেরও তিনি প্রশিক্ষণ প্রদান করে বান্দরবান অঞ্চলে মাশরুম চাষ দ্রুত সম্প্রসারণে সক্ষম হবেন বলে জানিয়েছেন।
জেলার রোয়াংছড়ি উপজেলার একমাত্র মাশরুম চাষী মারমা আদিবাসী নেতা চাইনিং মারমা। তিনি প্রতিদিন ১০ কেজি হারে মাশরুম উৎপাদন ও বাজারে বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছেন নতুনভাবে। অবশ্য বর্তমানে তার মাশরুমের চাষ ক্ষেত থেকে প্রতিদিন গড়ে আড়াই কেজি পরিমাণ মাশরুম উৎপাদন হচ্ছে এবং তা প্রতি কেজি ২০০ টাকা দরে স্থানীয়ভাবে বিক্রি করছেন ।
পাহাড়ের মানুষ পাহাড়ি জীবনে অভ্যস্ত,তারা জঙ্গলের নানা প্রজাতির কৃষিপণ্য সবজি হিসেবে ব্যবহারের পাশাপাশি কৃত্রিমভাবে উৎপাদিত মাশরুম খেতেও হাল অবস্থায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। বাঙ্গালিরাও মাশরুম খেতে খুবই আনন্দ পায়। মাশরুমের চাহিদাও বাড়ছে সর্বত্রই, জানিয়েছেন মাশরুম চাষী চাইনিং চেয়ারম্যান।
বান্দরবান জেলা সদর থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে রোয়াংছড়ি উপজেলার দুর্গম আলেক্ষ্যং ইউনিয়নের কচ্ছপতলী গ্রামের বাসিন্দা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান চাইনিং মারমা। তার মেজো পুত্র ক্যম্যাথোয়াই মারমা বাবার এ মাশরুম চাষে সার্বক্ষণিক সময় দেন। জানা গেছে, পুরো রোয়াংছড়ি উপজেলায় একমাত্র চাইনিং চেয়ারম্যানই মাশরুম চাষে এগিয়ে এসেছেন। স্থানীয় পর্যায় ছাড়াও সাভার থেকে তিনি মাশরুম চাষের ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। তবে সরকারি বা বেসরকারি কোনো সংস্থার কোনো প্রকার উপকরণ ও অর্থসহায়তা ছাড়াই তিনি মাশরুম চাষে ঝুঁকে পড়েছেন।
সফল মাশরুম চাষী চাইনিং মারমা জানান, অর্থকরী ও পুষ্টিকর মাশরুমের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। সঠিক সময়ে পরিচর্যা ও যথাযথ উপকরণ ব্যবহারের মধ্যে মাশরুমের প্রতিটি স্পন্স বা পোটলা থেকে তিনমাস পর্যন্ত মাশরুম উৎপাদন করা সম্ভব। শুকনো খড় ও ফুল গামারি গাছের ভূষি বা গুঁড়া দিয়েই তিনি নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় তৈরি করে থাকেন মাশরুমের স্পন্স। বাড়ির নিচতলায় ও আঙ্গিনায় হালকা আলো ও হালকা বাতাস লাগে এমন জায়গায় মাশরুমের স্পন্সগুলো সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রেখেছেন তিনি। প্রতিদিন সকাল বিকেল হালকা পানি ছিটিয়ে দেয়া হয় মাশরুমের স্পন্সগুলোতে। সকল সম্প্রদায়ের জন্য হালাল ও অতি পুষ্টিকরসহ ২২টি রোগ বালাই প্রতিরোধে সহায়ক খাদ্যদ্রব্য হিসেবে ব্যাপকহারে ব্যবহার হচ্ছে এ মাশরুম।
মাশরুম চাষী চাইনিং মারমা আরো জানান, কৃষি বিভাগ ও উদ্যান উন্নয়ন অফিস থেকে কেবল মাশরুম চাষের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েই আগ্রহীদের মাঠে ছেড়ে দেয়া হয়। প্রশিক্ষিত চাষীদের পরবর্তীতে সরকারি বা বিভাগীয় পর্যায়ে সহযোগিতা করা হলে বহু চাষীই এগিয়ে আসবেন লাভজনক এ মাশরুম চাষের দিকে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের শস্য উৎপাদন বিশেষজ্ঞ মো. আলতাফ হোসেন বলেন, এখানকার পাহাড়ি মাটি মাশরুম চাষের জন্য খুবই উপযোগী, ব্যক্তিগত পর্যায়ে বহু কৃষকই অন্য ফসলের পাশাপাশি বাড়ির আঙ্গিনায় মাশরুম চাষে এগিয়ে যাচ্ছেন। কৃষি বিভাগও মাঠ পর্যায়ে মাশরুম চাষ সম্প্রসারণে বিশেষ পরামর্শ দিচ্ছেন চাষীদের।
No comments:
Post a Comment