বরিশাল: বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলায় হস্তজাত শিল্পে দরিদ্রদের ভাগ্যের পরিবর্তন হচ্ছে। সমাজের ভূমিহীন অবহেলিত দুঃস্থ ও অসহায় নারীদের স্বাবলম্বী করছে বেসরকারী এনজিও এমসিসি।
অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারী সমাজকে শক্ত হাতে হাল ধরাতে পেরেছে তারা। অপরের উপর নির্ভর না করে নিজের সামর্থ্যরে মাধ্যমে জীবন পরিচালনাসহ কঠোর পরিশ্রম ও আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে নারীকে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে উপজেলাটি এমসিসির ৫টি প্রকল্পের মাধ্যমে সহাস্র্র্রাধিক দুঃস্থ, অসহায়, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা নারীদের পরিবারকে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে কাজ করে আসছে।
প্রকল্পগুলো হলো, বিবর্তন, কেয়াপাম হ্যান্ডিক্রাফট্স, বাগধা এন্টারপ্রাইজ, চ্যারিটি ফাউন্ডেশন, জোবারপার এন্টারপ্রাইজ। মেনোনাইট সেন্ট্রাল কমিটি (এমসিসি) ১৯৮১ সালে উপজেলা সদরে এর কার্যক্রম শুরু করে।
এ প্রকল্পের আর্থিক সহযোগিতায় ১৯৮৪ সালে ৩ লক্ষাধিক টাকার মূলধন নিয়ে ৫৫ শতাংশ জমির উপর গড়ে উঠে জোবারপাড় এন্টারপ্রাইজ। এ প্রকল্পে উপকরণ ডোবা, মজাপুকুর থেকে কচুরিপানা সংগ্রহ করে কাগজ তৈরি করে সেই কাগজ দিয়ে পুতুলবক্স খেলনা সামগ্রীসহ প্রয়োজনীয় সৌখিন সামগ্রী তৈরি করা হয়। এসব সামগ্রী বিদেশে রফতানি করা হয়। কেয়াপাম হ্যান্ডিক্রাফট ১৯৮৭ সালে এমসিসি থেকে ২ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে গড়ে তোলা হয় প্রকল্পটি।
এ শিল্পের প্রধান কাঁচামাল হচ্ছে তালপাতা, মুলিবাঁশ, কেয়াপাতা ইত্যাদি। এ প্রতিষ্ঠানে ১৫০টির বেশি শিল্প সামগ্রী তৈরি হয়। ১৯৯৩ সালে যাত্রা শুরু হয় বিবর্তনের। শুরু থেকেই কচুরিপানা প্রধান কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ১৯৮৪ সালে বাগধা এন্টারপ্রাইজ ২৫ শতাংশ জমির উপর স্থায়ীভাবে প্রকল্পের কাজ চালু হয়। প্রতিষ্ঠানের তৈরি সামগ্রীর মধ্যে শন, সুতা, পাট দিয়ে সুতলির ব্যাগ, পার্টস, সাইড ব্যাগসহ ২৭১টি সৌখিন দ্রব্য সামগ্রী তৈরি হয়।
২০০৪ সাল থেকে এমসিসি’র সাথে অংশীদারিত্বমূলক কর্মকাণ্ডের চুক্তি মোতাবেক স্থানীয় কাঁচামাল ঘাস, বাঁশ, বেত, নারিকেল পাতার শলা, শনপাট, কলাগাছের বাকল, ইত্যাদি দ্বারা বিভিন্ন হস্তজাত মালামাল তৈরি করে আসছে। উৎপাদিত মালামাল বাজারজাতকরণ দেশী-বৈদেশিক বাজার বৃদ্ধি, নতুন নতুন স্থানীয় কাঁচামাল ব্যবহার করে নতুন হস্তজাত পণ্য তৈরী সহ প্রকল্পের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে এমসিসি চ্যারিটি ফাউন্ডেশন (সিএফ)-র সাথে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে।
এসব প্রকল্পের বাইরে কোন উপকরণ বিক্রি করা হয় না। কোনো প্রকল্পের উপকরণ দরকার হলে ৫টি প্রকল্প থেকে সংগ্রহ করা হয়। প্রকল্পগুলো একটি অপরটির পরিপূরক। এসব হস্তজাত শিল্পের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে বিদেশে। রফতানিকারক দেশগুলোর মধ্যে আমেরিকা, জাপান, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডসহ ১০টি দেশে রফতানি হয়।
এসব প্রকল্প থেকে বছরে প্রায় ১৫ কোটি টাকার পণ্য বিদেশে রফতানি হচ্ছে। এ প্রকল্পে ১ জন মহিলা ৮ ঘন্টা পরিশ্রম করে মাসে ২-৩ হাজার টাকা আয় করছেন। এছাড়াও প্রতি বছর তাদের প্রকল্পর অনুকূলে কাজের লভ্যাংশ প্রদান করা হয়। এতে একদিকে যেমন তারা স্বাবলম্বী হচ্ছেন তেমনি অন্যদিকে দেশের জন্য প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছেন।
No comments:
Post a Comment