জয়পুরহাট: জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার ফকিরপাড়া গ্রামের অসহায় লাভলি বেগম বিআরডিবি’র ঋণ সহায়তায় গবাদি পশু পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। সংসারে খরচের জন্য তাকে আর কারো কাছে হাত পাততে হয় না।
লাভলি বেগম জানান, স্বামী পানু মিয়ার দর্জির কাজের সামান্য রোজগারে দু’ছেলেমেয়ে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন চলতো। টাকার অভাবে ছেলে লেমন হোসেনকে বেশি লেখাপড়া করাতে না পারলেও বর্তমানে ছোট মেয়ে রাজিয়া সুলতানা ৮ম শ্রেণীতে জিপিএ-৫ পেয়েছে। বিআরডিবি’র পল্লী প্রগতি প্রকল্পের আওতায় ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে গবাদি পশু পালনের পাশাপাশি বসত বাড়ির পাশে শাক-সবজি চাষ ও হাঁস-মুরগি পালন করেন তিনি। গরুর দুধ বিক্রির টাকায় মেয়ের পড়া ও সংসারের খরচের পাশাপাশি কিস্তি দিতে সমস্যা হয় না লাভলি বেগমের। এক বছর আগে ২০ হাজার টাকা নিয়ে শুরু হওয়া ঋণের পরিমাণ এখন ৪০ হাজার টাকা।
এতে আয় বর্ধনমূলক নানা কাজ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন লাভলি বেগম। তাকে দেখে ওই এলাকার অসহায়, দুঃস্থ ও বেকার মহিলারা তাদের সংসার এখন আয় বর্ধনমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। লাভলি বর্তমানে অন্যান্য অসহায় নারীদের কাছে অনুকরণীয়। বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি)-এর আওতায় উপজেলার বিভিন্ন গ্রামগঞ্জের অসহায় দুঃস্থ মহিলারা পল্লী প্রগতি প্রকল্পের সদস্য হয়ে সেখান থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে গবাদি পশু পালন, বসত বাড়ির আশপাশে শাক-সবজি চাষ আবার কেউবা হাঁস-মুরগি পালন করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
উপজেলার কৃষ্ণনগর বৈরাগীপাড়া ও ফকিরপাড়া গ্রামে গিয়ে দুঃস্থ মহিলাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিআরডিবি থেকে ঋণ নিয়ে গবাদি পশু ও হাঁস মুরগি পালন করে বদলে গেছে তাদের সংসারের ভাগ্যের চাকা। বর্তমানে তারা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। অথচ কয়েক বছর আগেও তাদের চোখে মুখে ছিল বিষাদের ছাপ। সংসারের অস্বচ্ছলতার কারণে অনেকেই ছেলেমেয়েদের প্রথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত লেখা পড়া করাতে পারেননি। নেমে পড়তে হয়েছে জীবিকার সন্ধানে। স্বল্প বয়সেই জীবন সংগ্রামের কঠিন তাগিদে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করতে হয়েছে।
সমাজে সব মহিলারাই স্বপ্ন দেখে সৎ উপার্জনে তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে বড় হওয়ার। আর এই বড় হওয়ার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে খোঁজ মেলে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড-এর আওতায় পল্লী প্রগতি প্রকল্পের ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচির। এই কর্মসূচির মাধ্যমে ক্ষেতলাল উপজেলার ফকিরপাড়া কৃষ্ণনগর ও বৈরাগীপাড়া গ্রামের অসহায়-দুঃস্থ মহিলা ফাহিমা, শাহানাজ, রোফেজা, হাফিজা, মেহেরননেছা, কুলছুম, বেবী, আঞ্জুয়ারা সহ আরো অনেকেই এ কর্মসূচির সদস্য হয়ে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি পালন করে পুরুষের পাশাপাশি নিজেরাও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড, ক্ষেতলাল উপজেলা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, পল্লী প্রগতি প্রকল্পের আওতায় ক্ষেতলাল উপজেলায় প্রায় ৪শ’ পরিবারের মাঝে ৭০ লাখ টাকা ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান করা হয়েছে।
ক্ষেতলাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল মনজুর জানান, দারিদ্র বিমোচন লক্ষ্যে অসহায় ও দুঃস্থ পরিবারসমূহকে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য সরকার বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড-এর আওতায় পল্লী প্রগতি প্রকল্পের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচি চালু করে। এ প্রকল্প যথাযথভাবে বাস্তবায়নের ফলে ইতোমধ্যেই সমাজের দুঃস্থ মহিলারা ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে আয় বর্ধনমূলক কাজ করে স্বাবলম্বী হতে শুরু করেছে।
No comments:
Post a Comment