Wednesday, January 8, 2014

মানবকল্যাণে নিবেদিত বীর মুক্তিযোদ্ধার ফল, ফুল ও ঔষধী বাগান

শরীয়তপুর: মানুষের জন্য বিষ মুক্ত ফল উৎপাদন ও ঔষধী বৃক্ষের চাহিদা মিটাতে এবং জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে পরিবেশকে রক্ষা করতে মুক্তিযোদ্ধা আলী আজ্জম ফরিদী নিজ বাড়ির চারপাশে গড়ে তুলেছেন ফল, ফুল ও ঔষধী বৃক্ষের বাগান। শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার সাজনপুর গ্রামের জন্ম নেয়া মানবদরদী এ মানুষটি ১৯৮৫ সাল বাসক পাতা সংগ্রহ করতে গিয়ে দীর্ঘ ভোগান্তির শিকার হন। এর প্রেক্ষিতে তিনি পরবর্তীতে নিজ উদ্যোগে গড়ে তোলেন ফল, ফুল ও ঔষধী বৃক্ষের এ বিশাল বাগান।

নিজ বাড়ির চারদিকে ১৪ একর জমির উপর গড়ে উঠা আলী আজ্জম ফরিদীর বাগানে রয়েছে বিদেশী ফল আপেল, আঙ্গুর, নাসপাতি, বেদেনা, মাল্টা, বেলামবো, স্ট্রবেরী, আরবের খেজুর, চকলেট, চেরীসহ ১৩ প্রকারের বিদেশী ফল, দেশী ফলের মধ্যে রয়েছে আম, আমরা, আতা, সরিফা, জাম, জামরুল, চালতা, জাম্বুরা, কাঁঠাল, কদবেল, কাঠবাদাম, কামরাঙ্গা, তাল, তেঁতুল, জলপাই, কমলা, করমজা, আরমুজ, লটকন, গাব, সফেদা, বেল, কদবেল, বরই, আনারসসহ ৪৫ প্রকারের ফল। আরো আছে আমলকি, হরতকি, বহেরা, পানবিলাস, রামধনি, নিম, নিশিন্দা, ধুতরা, গন্ধভাদালি, অরহর, বাসক, লোচি, লবঙ্গ, লজ্জাবতি, দুধকুমারি, ঘৃতকুমারি, খরাপাতা, তুরুপচন্দন, সাদাচন্দন, উলট কম্বল, শতমূলি, গুলমরিচ, ধানমরিচসহ ২৫ প্রকারের ঔষধী বৃক্ষ, এছাড়াও আছে মানবকল্যাণে ফুল জবা, টগর, গাদা, গোলাপ, হাসনাহেনা, জলপদ্ম, লালপদ্ম, কামিনী, গন্ধরাজ, বিলাসী, শেফালী, রক্তশাপলাসহ ২৩ প্রকারের ঔষধী ও লতা গুল্ম।
শরীয়তপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রতিদিন শত শত মানুষ বিষমুক্ত ফল আর রোগ নিরাময়ের দাওয়াই পেতে ছুটে যান আলী আজ্জমের বাড়িতে। প্রথম প্রথম আলী আজ্জম চাহিদার স্বল্পতার কারণে বিনামূল্যে ফল ও ঔষধী গাছ-গাছরা দিয়ে দিতেন। বর্তমানে ফলের ন্যায্যমূল্য ও অন্যান্য ঔষধী গাছের নামমাত্র মূল্য রাখেন।


নিষিন্ধা নামক একটি ঔষধী গাছের পাতা নিতে আসা ডামুড্যা উপজেলার আবুল হোসেন বলেন, মহিষার ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আজ্জম ফরিদীর বাগানে র্দুলভ এ ঔষধী গাছটি পাওয়া যায় শুনে ছুটে এসেছি। এ গাছের কার্যকারিতা সম্পর্কে তিনি বলেন, গলা, নাক, কানসহ যেকোন ব্যথার জন্য পাতা গরম ছেক দিলে সাথে ভালো হয়ে যায়।

এলাকার মসজিদের ইমাম ইয়াকুব হোসেন বলেন, দেশের টানে ১৯৭১ সালে ছাত্র অবস্থাতে আজ্জম ভাই মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। তিনি যুদ্ধকালীন সময়ে গোসাইরহাট থানা মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতা পরবর্তী তিনি দেশের প্রথম ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে মহিষার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এর পরবর্তীতে তিনি আরো কয়েকবার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব লাভ করেন। সেই থেকে দেশ ও মানুষের সেবায় নিয়োজিত আছেন। যার ধারাবাহিকতায় তিনি পরিবেশ ও মানুষের কথা চিন্তা করে এ বাগানটি করেছেন।

সাবেক চেয়ারম্যান ও মুক্তিযোদ্ধা আলী আজ্জম ফরিদী বলেন, মানুষের সেবা করার জন্য অনেক কাজ করেছি। প্রতিটি ক্ষেত্রে কোন ভাবে একজনকে খুশি করলে অপর জনকে অখুশি দেখতে হয়। তাই সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ কমিয়ে দিয়ে গাছ ফুল ফলের মাধ্যমে মানুষের সেবার চেষ্টা করেছি। এতে করে কারো উপকার করতে না পারলেও কেউ অখুশি হয় না। তিনি আরো বলেন, ১৯৮৫ সালে আমার ছেলের কাশির জন্য বাসক পাতা সারা জেলায় খুজে না পেয়ে ভোগান্তির শিকার হয়েছি। সেই থেকে শপথ নিয়েছিলাম মানুষকে যেন আমার মত কষ্ট করতে না হয়। আমি যেন মানুষের প্রয়োজনীয় ঔষধী বৃক্ষ লতা গুল্মের চাহিদা পূরণ করতে পারি। প্রথম প্রথম মানুষকে বিনামূল্যে গাছ ফল মুল দিলেও এখন এর পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য লোক নিয়োগ দিয়েছি। তাদের ভরণ পোষনের জন্য সামান্য কিছু বিনিময় রাখি। প্রতিদিনই একাধিক ব্যক্তি ফুল ফল ও ঔষধী গাছ নিতে আসে। যত দিন বেঁচে থাকবো আল্লাহর সন্তুষ্টি ও মানুষের কল্যাণে এ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবো।

ভেদরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহ মোহাম্মদ শাখওয়াত হোসেন বলেন, আলী আজ্জম ফরিদীর ফুল ফল ও ঔষধী বাগানটি একটি ব্যতিক্রমী বাগান। এখানে দেশী বিদেশী ফল ছাড়াও নানা প্রকারের ঔষধী গাছ রয়েছে। তার এ প্রচেষ্টার সুখ্যাতি জেলাব্যাপী ছড়িয়ে আছে। তিনি উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে কৃষিতে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার লাভ করলেও জাতীয় পর্যায়ে এখন পর্যন্ত পুরস্কার পায়ননি। তবে আশা করা যাচ্ছে তার এই প্রচেষ্টায় আগামীতে জাতীয় পুরস্কার ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হবেন। তিনি আরো বলেন, আলী আজ্জমের বাগানে এক সাথে যতগুলো দুর্লভ প্রজাতির গাছ আছে বাংলাদেশের খুব কম সংখ্যক বাগানই এতটা পাওয়া যাবে। তিনি সরকারী-বেসরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে জেলার গণ্ডি পেরিয়ে বৃক্ষ ভাণ্ডারের অধিকারী হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে স্থান করে নেবেন।

No comments:

Post a Comment