অর্চনা রাণী (৩৫) একজন গৃহবধু। জেলার মহাদেবপুর উপজেলার উত্তরগ্রাম ইউনিয়নের শিবগঞ্জ গ্রামের গোপাল চন্দ্র সাহার স্ত্রী তিনি। স্বামীর বাড়ির কাছেই একটি চায়ের দোকান করেন। সেখান থেকে যে আয় হয় তা দিয়েই কোন রকমে খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করে থাকেন। অর্থের অভাবে তাদের কন্যার পড়াশুনা ৫ম শ্রেণী পেরোতে পারেনি। দ্বিতীয়টি পুত্র সন্তান, সে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছে। কিন্তু এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে সংসারের স্বচ্ছলতা কিভাবে আনা যায় সেই চেষ্টা ছিল অর্চনা রাণীর।
অবলম্বন খুঁজতে খুঁজতে স্থানীয় একটি বেসরকারি সংগঠনের সাথে তিনি যুক্ত হন। সংগঠনের দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি হিসেবে প্রকল্পের অধীনে গঠিত ইউনিয়ন উন্নয়ন কমিটিতে (ইউডিসি) অর্চণা রাণী কার্যকরী সদস্যভুক্ত হন। সদস্য হওয়ার পর থেকেই ইউনিয়ন পরিষদে অনুষ্ঠিত ইউডিসি’র মাসিক সমন্বয় সভায় যোগদানের পাশাপাশি বিভিন্ন সভা-সেমিনারে যোগদান করেন। ইউনিয়ন পর্যায়ে আয়োজিত সেবা প্রদর্শনী ও আলোচনা সভায় প্রদত্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মামুনুর রশীদের বক্তব্য অর্চনা রাণীকে আকৃষ্ট করে। বাড়িতে ফিরে গিয়ে সে নিজ হাতে কোদাল দিয়ে কুপিয়ে বাড়ির পাশের জঙ্গল পরিস্কার করে চার শতক জমি তৈরি করেন অর্চনা রানী। সেখানে উক্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ অনুযায়ী লাউ, মিষ্টি কুমড়া, শসা, বেগুন, মরিচ, পেঁপে ও হলুদের চাষ শুরু করেন।
ইতোমধ্যে প্রতি বছর মোটামুটি বিভিন্ন মওসুমে বিভিন্ন শাক-সবজি চাষ করেন। সেখান থেকে প্রতি বছর নিজের পরিবারে খাওয়ার পরও কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা লাভ করে থাকেন। উক্ত টাকা দিয়ে পারিবারিক খরচ মেটানো ছাড়াও স্বামীর চায়ের দোকানে বিনিয়োগ করেছেন। সেদিক দিয়ে তিনি স্বামীর ব্যবসা উত্তরণে সহায়তা করছেন। এক কথায় সবজি চাষ করে ঘুরিয়ে দিয়েছেন তার ভাগ্যের চাকা। সংসারে এনেছেন স্বচ্ছলতা।
অর্চনা রাণী বলেন, ইউডিসি সদস্য হওয়ার পর শুরুতে তার স্বামী তাকে সভা-সমাবেশে যোগ দিতে রাজি ছিলেন না। এ নিয়ে বিভিন্ন কটু কথাও বলতেন। বর্তমানে তার সাফল্যে স্বামী গোপাল চন্দ্র দাস এখন তাকে সার্বিকভাবে সহায়তা করছেন। এর আগে তার স্বামী নেশা করতেন এবং তার কোন কথা শুনতে চাইতেন না। এখন তার কথার গুরুত্ব দেন।
বর্তমানে পরিবারিক যে কোন বিষয় নিয়ে তার (অর্চনা) সাথে আলোচনা করেন। অনেক মতামতের মুল্য দিতে শুরু করেছেন তার স্বামী। ছেলেটিকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করা এখন তার স্বপ্ন।
উত্তরগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শেখ শাহ আলম ফায়সাল এ ব্যাপারে বলেছেন, অর্চনা রাণী এ অল্প সময়ে সবজি চাষ করে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছেন। কারও সদিচ্ছা এবং আগ্রহ থাকলে যে কেউ অর্চনা রাণীর মতো স্বচ্ছলতা অর্জন করতে পারবেন। শিবগঞ্জ গ্রামের অর্চনা রাণী এখন এলাকার আদর্শ হয়ে ওঠেছেন।
No comments:
Post a Comment