শেরপুর: জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া অনেক নদ-নদী নাব্যতা হারিয়ে ফেলছে। এসব কারণে দেশী জাতের মাছ বিলুপ্ত হতে চলেছে। তাই কীভাবে দেশী জাতের মাছের চাষ বাড়ানো যায় তা নিয়ে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানা গবেষণা এবং কার্যক্রম চলছে। এরই অংশ হিসেবে শেরপুর যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মৎস্য হ্যাচারিতে দেশী শিং মাছের সফল কৃত্রিম প্রজনন করা হয়েছে। এতে এ অঞ্চলে বিলুপ্তপ্রায় দেশী জাতের মাছ চাষে এক নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে।
শেরপুর যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে জেলার বেকার যুবদের তিন মাস মেয়াদী কৃষিবিষয়ক নানা প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এর মধ্যে মৎস্য চাষ অন্যতম। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যুবরা জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করে স্বাবলম্বী হয়ে থাকে।
শেরপুর যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের হ্যাচারিটি একটি ক্ষুদ্রাকার ছোট মাছের হাচারী। নির্মাণ ও কারিগরি ত্র“টি এবং ব্র“ড ফিস তৈরীর জন্য বড় বড় পুকুর না থাকার পরও চলতি প্রজনন মৌসুমে এখানে দেশী শিং মাছের হ্যাচিং করতে সক্ষম হন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। ময়মনসিংহ থেকে ব্র“ড ফিস সংগ্রহ করে প্রশিক্ষণার্থীদের দেশী বিলুপ্তপ্রায় মাছের হ্যাচিং শেখানো হয়। গত দু’টি ব্যাচে এখানে দেশী শিং মাছের সফল কৃত্রিম প্রজনন সম্ভব হয়। হ্যাচারিতে কাজ করে প্রশিক্ষণার্থীরা প্রযুক্তিটি হাতে-কলমে শিখতে পেরেছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এসব হ্যাচারীতে স্থির পানির দেশী ছোট মাছ যেমনÑ মলা, গোলসা, পাবদা, কই, শিং, মাগুর ইত্যাদি মাছের প্রজনন করা সম্ভব। অল্প খরচেই ব্র“ড আকারের এমন হ্যাচারি স্থাপন ও পরিচালনা করা যায়। বেকার যুবক-যুবতী, ছেলে-মেয়ে এমনকি গ্রামীণ মহিলারাও পারিবারিক কাজের পাশাপাশি হ্যাচারিটি সহজেই চালাতে পারেন। মাত্র ৭০ হাজার টাকায় এ ধরনের একটি ব্র“ড হ্যাচারি স্থাপন করে প্রতি বছর ১৪/১৫ হাজার টাকা বিনিয়োগে বছরে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় করা সম্ভব।
যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রশিক্ষণার্থী ওসমান আলী, রহিমা খাতুন ও আব্দুর রহিম জানান, বাড়ীতেই এমন ক্ষুদ্র হ্যাচারি স্থাপন করে দেশীয় জাতের মাছ চাষ করা সম্ভব সে বিষয়টি আগে আমাদের জানা ছিলো না। এখানে হাতে-কলমে বিষয়টি শিখতে পেরেছি। এতে আমরা দারুণ উৎসাহিত হয়েছি। সংসারের অন্যান্য কাজ করেও এটি পরিচালনা করা সম্ভব। বাড়ি ফিরে আমরা এ ধরনের ক্ষুদ্র আকারের হ্যাচারি স্থাপন করে নিজেদের ভাগ্য বদলের চেষ্টা করবো।
শেরপুর যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ডেপুটি কো-অর্ডিনেটর সালাহ উদ্দিন আহম্মেদ জানান, সারাদেশে ৫৪টি জেলায় ৫৪টি যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু আছে। প্রতিটি কেন্দ্রে একটি করে মাছের হ্যাচারি রয়েছে। কিন্তু নির্মাণ ও কারিগরি ত্র“টির কারণে এবং ব্র“ড ফিস তৈরীর জন্য বড় বড় পুকুর না থাকায় দক্ষ ও অভিজ্ঞ মৎস্য বিশেষজ্ঞ থাকার পরও বেশীর ভাগ হ্যাচারি চালু করা যাচ্ছে না। কিন্তু এত কিছুর পরও শেরপুরে ক্ষুদ্রাকার মাছের হ্যাচারিটি নিজেদের প্রচেষ্টা ও আন্তরিকতায় আমরা চালু করেছি। এতে প্রজনন মৌসুমে ময়মনসিংহের তারাকান্দা থেকে ব্র“ড ফিস সংগ্রহ করে শিং মাছের সফল কৃত্রিম প্রজনন সম্ভব হয়েছে।
তিনি জানান, এ এলাকায় এ ধরনের ক্ষুদ্র হ্যাচারির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। গ্রামীণ মেয়েরাও পারিবারিক কাজের পাশাপাশি হ্যাচারিটি সহজেই পরিচালনা করতে পারবেন। এ জন্য আঞ্চলিক ব্র“ড ফিস ব্যাংক তৈরী করা হলে মাছ চাষে অনেক সাফল্য আসবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ভেবে দেখা উচিত বলেও তিনি মনে করেন।
বসত বাড়ির আঙিনায় ছোট মাছের হ্যাচারি স্থাপন করে রেণু পোনা উৎপাদন ও পালনের ব্যাপক সম্ভাবনার কথা বলেছেন মৎস্য কর্মকর্তারা। এ ব্যাপারে শেরপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফজলুর রহমান বলেন, এ প্রযুক্তি গ্রাম পর্যায়ে সম্প্রসারণ করা গেলে একদিকে যেমন আমিষের চাহিদা পূরণ সম্ভব হবে। অন্যদিকে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়াও সম্ভব হবে।
No comments:
Post a Comment