Friday, March 7, 2014

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে ফুল চাষ করে অভাবনীয় সাফল্য ৫ কৃষকের

রাজশাহী: রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে প্রথমবারের মত গ্লাডিওলাস ফুল চাষ করে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছেন ৫ কৃষক। জানা যায়, চলতি বছর দ্বিতীয় শস্য বহুমুখীকরণ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার কদমশহর, বিজয়নগর, কাদিপুর ও আমানতপুর এলাকার ৫ জন কৃষক ১৫ শতক জমিতে প্রথমবারের মত বারি-৩ ও ৫ জাতের গ্লাডিওলাস ফুল চাষ করেছে। 

কদমশহরের কৃষক আখলাকুর রহমান বাবু উপজেলা কৃষি অধিদফতর থেকে ফুল চাষের উপরে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তাকে বারি-৩ ও ৫ জাতের গ্লাডিওলাস ফুলের করম সরবরাহ করা হয়। এতে করে কৃষক আখলাকুর রহমান বাবুর ৪ শতক জমিতে ফুল চাষ করতে গিয়ে খরচ হয় ৫ হাজার টাকা। ২২ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করলে তার লাভ হয় ১৫ হাজার টাকা। 

তিনি বলেন, আগামী বছর গ্লাডিওলাস ফুল ছাড়াও অন্য জাতের ফুল চাষ করবে বেশি জমিতে। তাকে ফুল চাষে কারিগরিভাবে সহায়তা করেছেন উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অতনু সরকার। 
উপজেলার বিজয়নগরের কৃষক শফিকুল ইসলাম (কালু) ৫ শতক জমিতে গ্লাডিওলাস ফুলের চাষ করে তার ২০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। এই কৃষক বলেন, ফুল চাষের উপর তার ধরণা থাকলেও বরেন্দ্র অঞ্চলের মাটিতে ভাল ফলন পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ থাকায় গত বছর মাত্র ১ শতক জমিতে রজনীগন্ধা ফুলের চাষ করেন। কিন্তু তেমন লাভবান হয়নি। 

এই কৃষকের ফুল চাষের আগ্রহ দেখে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ তাকে ফুল চাষের উপর প্রশিক্ষণ দিয়ে গ্লডিওলাস ফুলের করম সরবরাহ করে। ৫ শতক জমিতে ফুল চাষ করতে তার খরচ হয় ৩ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত এই কৃষক ২৫ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করেছে। আরও ৩ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করবে বলে তিনি জানান। 

উপজেলার আমানতপুরের কৃষক রবিউল ইসলাম ৩ শতক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে প্রদর্শনী আকারে গ্লাডিওলাস ফুল চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে ১৭ হাজার টাকার। প্রথম পর্যায়ে তেমন ফুল বিক্রি না হলেও ভালবাসা দিবস উপলক্ষে জমির ৯০ ভাগ ফুল বিক্রি হয়ে যায় জমি থেকেই। এখনও আরও ২ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করবে বলে তিনি জানান। আগামী বছর ১ বিঘা জমিতে গ্লাডিওলাসসহ বিভিন্ন ফুলের চাষ করার ইচ্ছা রয়েছে এই কৃষকের। 

উপজেলার কাদিপুরের কৃষক কাইউম আলী রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কের পাশে ধানী জমিতে গ্লাডিওলাস ফুলের চাষ করেন। জমিতে সাদা ও গোলাপী রঙ মিশ্রিত গ্লাডিওলাস ফুলের চাহিদা বেশি থাকায় প্রত্যেক ফুলের স্টিক অন্যদের চেয়ে ৩ টাকা বেশি দামে বিক্রি করেছে। তিনি জানান, সাদা রঙের গ্লাডিওলাস ফুলের ১টি স্টিক পাইকারি দরে ৮ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হলেও সাদা ও গোলাপী রঙ মিশিয়ে পাইকারী দরে বিক্রি করেছে ১১ টাকা থেকে ১৪ টাকা। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কাছ থেকে গ্লাডিওলাস ফুলের করম সংগ্রহ করে ৪ শতক জমিতে চাষ করে। তার খরচ হয় ২ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত ফুল বিক্রি করেছে ১৭ হাজার টাকার। তার লাভ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। তাই এই কৃষক আগামী বছর বেশি পরিমাণ জমিতে গ্লাডিওলাস ফুল চাষ করবে বলে জানান। 

উপজেলার কদমশহরের কৃষক আসাদুল হক ধান চাষ করে তেমন লাভবান হতে পারেননি। বিকল্প ফসল চাষ করার জন্য উপজেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদফতরে এলে তাকে গ্লাডিওলাস ফুল চাষ করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়। প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার পর ৩ শতক জমিতে প্রদর্শনী আকারে চাষ করে প্রথম বছর ১৬ হাজার টাকা লাভ করে খুবই খুশি এই ফুল চাষী। 
গোদাগাড়ী কৃষি কর্মকর্তা ড. সাইফুল আলম বলেন, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলের ফুলের বড় বাজার রয়েছে। 

ফুল ব্যবসায়ীরা যশোর ও বিদেশ থেকে ফুল আমদানি করে থাকেন। কিন্তু অল্প পরিমাণে হলেও চলতি বছরে গোদাগাড়ীর ফুল চাষিরা এসব বাজারে ফুল সরবরাহ করেছে। এ অঞ্চলের আগ্রহী কৃষকদের ফুল চাষের উপর বাস্তব ধারণা নেয়ার জন্য যশোরের ঝিকরগাছা এলাকায় ফুল চাষ প্রদর্শন করানো হয়েছে কয়েকজন কৃষক ও মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের। প্রশিক্ষণ দিয়ে ফুল চাষীদের আরও দক্ষ করে গড়ে তোলা হলে আগামী বছর ব্যাপকভাবে গোদাগাড়ীতে ফুল চাষের সম্ভাবনা রয়েছে।

No comments:

Post a Comment