রাজশাহী: রাজশাহীর বাগমারায় গড়ে উঠেছে অনেক পানের বরজ। এখানকার পান উত্তরাঞ্চলে বেশ জনপ্রিয়। শুধু তাই নয়, বাগমারার পান দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও যাচ্ছে। এখানে পান চাষে আজকের যে সাফল্য তার মূলে রয়েছেন মোহাম্মদ আলী নামের একজন পান চাষী। বর্তমানে তার গোটা পরিবারই পান চাষের সঙ্গে জড়িত। তাদের দেখাদেখি এলাকায় আরো পানের বরজ গড়ে উঠেছে। আর এর মাধ্যমে তারা স্বচ্ছল জীবনযাপন করছেন।
বাগমারা উপজেলার গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের চন্দ্রপুর গ্রামে পান চাষী মোহাম্মদ আলীর বাড়ি। এলাকার মানুষজন জানান, মোহাম্মদ আলী একজন সফল পান চাষী। তিনিই এ এলাকায় প্রথম পানের বরজ করেন। বরজ তৈরিতে তিনি অনেক শ্রম দিয়েছেন, কষ্ট করেছেন। দিনের প্রায় সবটুকু সময়ই কাটিয়ে দিতেন পানের বরজে। পান চাষী হিসেবে এলাকায় মোহাম্মদ আলীর বেশ সুনাম রয়েছে।
জানা গেছে, মোহাম্মদ আলী যখন বরজে কাজ করতেন, তখন তার তিন ছেলে আমিনুল ইসলাম আমিন, আবদুল হামিদ ও আলী হোসেন তাকে সহযোগিতা করতেন। পরে পিতার পেশাকে টিকিয়ে রাখতে তারাও নিবিড়ভাবে পান চাষে ঝুঁকে পড়েন। তাদের তিন ভাইয়ের মধ্যে দুই ভাই আমিন ও হামিদ পান চাষে বেশ সফল হয়েছেন। একটি মাত্র পানের বরজ থেকে তারা আজ ৪/৫টি করে পানের বরজ ও কয়েক বিঘা জমির মালিক হয়েছেন। আলী হোসেনও পান চাষে বেশ মনোযোগী। শুধু পান বিক্রি করেই তারা স্বচ্ছলভাবে জীবনযাপন করছেন। পানের টাকা থেকেই মোহাম্মদ আলী ওই এলাকায় প্রথম ইটের তৈরি বাড়ি করেন।
আমিনুল ইসলাম জানান, পান বিক্রি করে সংসার চালানো, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ যোগানো ছাড়াও তারা প্রায় প্রতিবছরই কিছু জমি কিনেন। তিনি জানান, নিজেরা অল্প শিক্ষিত হলেও তাদের ছেলে-মেয়েদের শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে চান তারা।
আবদুল হামিদ বলেন, তুলনামূলক কম খরচে গড়ে তোলা পান বরজে যথেষ্ট যতœ নিতে হয়। তিনি জানান, প্রথম দিকে শাড়ক, লগর, বাতা, খড়, পাটখড়িসহ অন্যান্য জিনিসপত্র দিয়ে আবৃত করে পানের বরজ তৈরির জন্য প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়। অন্যান্য মাসের তুলনায় আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে বেশি পরিমাণে পান পাওয়া যায়।
বাগমারায় পান চাষে সফল এই দুই ভাই আমিন ও হামিদ তাদের সাফল্যের পেছনের কথা বলতে গিয়ে জানান, মূলত তার বাবার হাত ধরেই তাদের এবং এই এলাকার আরো অনেকের সাফল্য এসেছে। পান বরজের পরিচর্যায় সার্বক্ষণিক নিজেদের ব্যস্ত রাখাই হচ্ছে সাফল্যের মূল কারণ। এতে যত বেশি পরিশ্রম করা যাবে ততই ফল পাওয়া যাবে বলেও তারা মন্তব্য করেন।
জানা গেছে, বাগমারার পান এখন বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। বিশেষ করে সৌদি আরবে এই এলাকার পান বেশ জনপ্রিয় বলে জানান আবদুল হামিদ। এছাড়া বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলে এখানকার পানের বেশ কদর রয়েছে। পূর্বে এলাকার পান চাষীরা আত্রাই, তাহেরপুর, মোহনগঞ্জ, মোল্লাপাড়া, আলোকনগর হাটে পান বিক্রি করলেও এখন তারা আলোকনগরেই পান বিক্রি করেন। স্থানীয় আলোকনগরে পানের বড় হাট বসায় এখানেই দূরদূরান্ত থেকে ব্যাপারীরা আসেন পান কিনতে।
No comments:
Post a Comment