Wednesday, June 11, 2014

ফরিদপুরের চরাঞ্চলে বাদাম চাষ বেড়েছে

ফরিদপুর: ফরিদপুরের চরাঞ্চলে বাদামের ব্যাপক চাষ হয়েছে। জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে সাতটিতেই আবাদ হয়েছে বাদাম। বিশেষ করে পদ্মা নদীর বির্স্তীণ চরে বাদামের চাষাবাদ হয়েছে বেশি। মধুমতি ও কুমার নদীর চরেও এর চাষ হয়েছে। এই তিন নদীর ৫০টিরও বেশি চরে পাঁচ সহস্রাধিক হেক্টর জমিতে এবার বাদামের চাষ করেছেন কৃষকেরা।

জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ফরিদপুর সদর, চরভদ্রাসন, আলফাডাঙ্গী, মধুখালী, সদরপুর, ভাঙ্গী ও বোয়ালখালী উপজেলার চরাঞ্চলে বাদামের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সদরপুর উপজেলার পদ্মার চরে চাষ হয়েছে বেশি। কৃষকেরা এখন ভালো ফলন আর দামের আশায় বুক বেঁধে আছেন।

যেদিকেই চোখ যায়, সেদিকেই দেখা যায় বাদামের ক্ষেত। হলুদ ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে ওইসব ক্ষেত। আর কিছু দিনের মধ্যেই গাছের গোছা ধরে টান দিলেই উঠে আসবে থোকা থোকা চীনা বাদাম। এসব ক্ষেতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষাণ-কৃষাণীরা। 

একদা নদীভাঙ্গনে সর্বস্ব হারানো মানুষেরা চরাঞ্চলে বসবাস করে চরে বিভিন্ন ফসলের আবাদ করেন। কিছু কিছু চর বছরের অনেটা সময় পানিতে নিমজ্জিত থাকে। ওইসব চর যখন শুকিয়ে যায় তখন সেখানে একমাত্র বাদামই চাষ করা যায়। অন্য ফসল তেমন ভালো হয় না। সেখানে বাদামের ফলনই ভালো হয়। তাই দিনে দিনে চরাঞ্চলে বাদামের চাষাবাদ বাড়ছে। নিজের জমি না থাকলেও অনেকে অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষ করছেন। এভাবেই বাদাম চাষ বা শ্রমিকের কাজ করে অনেকের কর্মসংস্থান হচ্ছে।

সদরপুর উপজেলার দেয়ারা গ্রামের বাদাম চাষী আনোয়ার হোসেন জানান, তিনি প্রায় ৭ বছর যাবৎ চরে বাদাম চাষ করছেন। চরের বালু মাটিতে অন্য ফসল ভালো না হওয়ায় তিনি বাদামে আগ্রহী হন। পরে দেখতে পান বাদাম চাষে খরচ ও পরিশ্রম কম কিন্তু লাভ বেশি। তাই তিনি বাদাম চাষের প্রতি ঝুঁকে পড়েন।

ঢেউখালীর কৃষক সোহরাব মোল্লা এবার গতবারের তুলনায় বেশি জমিতে বাদাম চাষ করেছেন। গত কয়েক বছর ধরে বাদাম চাষ করে তিনি ভালো লাভবান হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বাদাম হইল মাটির নিচের গুপ্তধন। বাদাম চাষ কইরা আমাদের ভাগ্য বদলাইছে।’

চর নাছিরপুর গ্রামের বাচ্চু খালাসি জানান, এ বছর আবহাওয়া বাদাম চাষের উপযুক্ত থাকায় ফলন অনেক ভালো হবে। এবার ফলন বাম্পার হবে বলেও তিনি আশা করছেন।

এদিকে ফরিদপুরের কিছু কিছ অঞ্চলে ইতোমধ্যে জমি থেকে বাদাম উঠানো শুরু হয়েছে। পরিমাণে কম হলেও বাজারে কাঁচা বাদাম আসছে। বর্তমানে প্রতিমণ কাঁচা বাদাম আড়াই হাজার থেকে দুই হাজার সাতশ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে।

চরমানাইর এলাকার কৃষক ফারুক মিয়া জানান, এবার এখন পর্যন্ত যেসব জমি থেকে বাদাম উঠানো হয়েছে, তাতে একর প্রতি ৪০ থেকে ৫০ মণ বাদামের ফলন হয়েছে। তিনি জানান, এতে উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে প্রতি একরে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভের সম্ভাবনা রয়েছে।

ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শংকর চন্দ্র ভৌমিক জানান, চলতি মৌসুমে এ জেলায় ৫ হাজার ২০২ হেক্টর জমিতে চীনাবাদামের চাষ করা হয়েছে। এতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৮৩৭ টন। তিনি বলেন, চরে অন্য ফসলের তুলনায় বাদামের উৎপাদন ভালো হয়। তাই আমরা চরাঞ্চলে বাদাম চাষ করার জন্য কৃষকদের উৎসাহ ও পরামর্শ দিয়ে থাকি। ফলে দিন দিন এখানে বাদামের চাষ বাড়ছে। তিনি জানান, বর্তমানে ফরিদপুর জেলার অন্যতম অর্থকরী ফসল হয়ে উঠেছে বাদাম। বাদাম চাষে অনেকের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে বলেও তিনি মনে করেন।

No comments:

Post a Comment