
উচ্চ ফলনশীল জাতের তিল নিয়ে মাগুরায় দু’টি মাঠ দিবসে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের বিজ্ঞানী ও বিনা-২ তিলের উদ্ভাবক ড. এম এ মালেক জানান, মাথা পিছু দৈনিক ৩৫ গ্রাম হিসেবে দেশে ভোজ্য তেলের মোট চাহিদা ২০ লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু উৎপন্ন হয় মাত্র ২ লাখ মেট্রিক টন। বাকি যে ১৮ মেট্রিক টন ভোজ্য তেল বাইরে থেকে আমদানি করা হয় তার মধ্যে সাড়ে ১২ লাখ টনই পামওয়েল। যেটা ভেজাল হিসেবে সয়াবিনসহ বিভিন্ন তেলে মিশ্রত হয়ে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে দেশে তিল জাতীয় ফসলের আবাদ বাড়াতে হবে। এটি ভোগ্যপণ্য হিসেবে একদিকে আর্থিকভাবে যেমন সাশ্রয়ী। তেমনি ফ্যাটসহ অন্যান্য উপাদান যে গুলোর অতিমাত্রা শরীরের জন্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিকর তার পরিমাণ একবারই কম থাকায় এটি জনস্বাস্থ্যের জন উপাদেয়। এ ছাড়া এটি খেতে সুস্বাদু ও দেখতে সয়াবিনের মতোই স্বচ্ছ। এতে সাধারণ তিলের মতো তীব্র গন্ধ নেই। যে কারণে এটির বাণিজ্যিক গুরুত্ব ব্যাপক ।
বিনার মহাপরিচালক ড. এ এইচ এম আব্দুর রাজ্জাক জানান, সাময়িক জলাবদ্ধতা প্রতিরোধ সক্ষম ও খরাসহিষ্ণু বিনা-২ তিলের জাতটি ২০১১ সালে অবমুক্ত করা হয়। যা এখন কৃষক পর্যায়ে ব্যাপক চাষের জন্য কৃষি বিভাগ ও বিনা একসাথে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। সাধারণত ফেব্র“য়ারী থেকে মার্চ মাসের মধ্যে চাষাবাদ করা যায়। দো’আশ হতে এটেল দো’আশ মাটিতে এটি চাষের উপযোগী। এর জীবনকাল ৯০ থেকে ৯৮ দিন। হেক্টর প্রতি ফলন উৎপাদন হয় ১.৮ টন। সাধারণ জাতে উৎপাদন হয় ০.৫ থেকে ০.৬ টন। বিনা-২ তিল ব্যাপকভাবে আবাদ করা গেলে দেশে প্রতি বছর যে ১৮ লাখ মেট্রিক টন ভোজ্য তেলের ঘাটতি রয়েছে তা সহজেই পূরণ করা সম্ভব।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশে বেকারী ও ফাস্টফুডসহ বিভিন্ন খাবারের সাথে সাদা তিল ব্যবহার হয়ে থাকে। রপ্তানী পণ্য হিসাবে বিশ্বের বিভিন্ন বাজারে বাংলাদেশের বিনা জাতের সাদা তিলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ফলে এ তিলের বাজার মূল্য বেশী হওয়ায় কৃষকরাও লাভবান হতে পারেন।
সদর উপজেলার পশ্চিম রামনগর গ্রামের কৃষক ফিরোজ মোল্যা বিনা ও কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় প্রায় দেড় একর জমিতে বিনা-২ জাতের প্রর্দশনী ক্ষেত করেছেন। যা থেকে তিনি ২১ মণ তিল পাবেন বলে আশা করছেন। শালিখা আড়–য়াকান্দি গ্রামের কৃষক অলেক মোল্যা ১ একর জমিতে বিনা তিল চাষ করেছেন। যা থেকে ভালো ফলন পাওয়ার আশা করছেন তিনি।
জেলা কৃষি কর্মকর্তা মোখলেসুর রহমান জানান, জেলায় এ বছর ৩ হাজার ৫০৫ হেক্টর জমিতে তিল চাষ হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে বিনাসহ বিভিন্ন ধরনের উচ্চ ফলনশীল জাতের তিল চাষ হয়েছে। যা থেকে ৪ হাজার ৭৫০ টন তিল উৎপাদিত হবে।
No comments:
Post a Comment