নওগাঁ: নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলায় কালিগ্রাম ‘শাহ কৃষি তথ্য পাঠাগার’ কৃষকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কৃষি ও কৃষকদের উন্নয়নে পরামর্শ, তথ্য এবং হাতে কলমে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে কৃষি সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখে চলেছে এই পাঠাগার।
২০০৮ সালে স্থানীয় উদ্যমী ব্যক্তিত্ব মো. জাহাঙ্গীর আলম শাহ এই পাঠাগারটি প্রতিষ্ঠা করেন। কৃষকের সন্তান হিসেবে বাল্যকাল থেকেই কৃষির প্রতি ছিল তার প্রচন্ড আগ্রহ। পড়াশোনা শেষে শিক্ষকতা করলেও এই আগ্রহ তিনি হারাননি। তিনি ভেবেচিন্তে দেখলেন কৃষকদের উন্নয়নে কৃষক পর্যায়ে কোন লাইব্রেরী নেই।
তাই তিনি পরিবেশ রক্ষার মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন এবং এক্ষেত্রে কৃষকদের জ্ঞানার্জন করে আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে শাহ কৃষি তথ্য পাঠাগারটি গড়ে তুলেছেন। এই পাঠাগার প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিনি দেশী-বিদেশী কৃষি সম্পর্কিত বই পুস্তক, পত্র-পত্রিকা, জার্নাল ইত্যাদি সংগ্রহ করতে শুরু করেন। বর্তমানে তার এই লাইব্রেরীতে বইপুস্তক, পত্রপত্রিকা, জার্নাল ইত্যাদির সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার।
কৃষকরা সরাসরি এই লাইব্রেরীতে এসে বিভিন্ন ফসল উৎপাদনের কলাকৌশল, উৎপাদনের সঠিক সময়, সার কীটনাশকের ব্যবহার, জমি তৈরীর প্রক্রিয়া ইত্যাদি সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্যাদি সংগ্রহ করে থাকেন। এছাড়াও কৃষকদের বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদানের আয়োজন করা হয়ে থাকে এখানে। কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের ওইসব প্রশিক্ষণে রিসোর্স পার্সন হিসেবে সম্পৃক্ত করা হয়। এ কারণে ইতিমধ্যে কৃষি বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে জাহাঙ্গীর আলম শাহ’র একটি সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে লাইব্রেরী, এলাকার কৃষকদের মান উন্নয়ন এবং আধুনিক কৃষি উৎপাদনে সর্বাত্মক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন।
জানা গেছে, তিনি নিজ অর্থে ক্রয় করে বিভিন্ন গাছের চারা এবং উন্নতজাতের বীজ এলাকার কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করে থাকেন। এটিও ওই লাইব্রেরীর নিয়মিত কার্যক্রমের একটি ধারাবাহিক কর্মসূচি। কৃষক এবং কৃষকদের সন্তানদের জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত বিভিন্ন জনকল্যাণমুলক কার্যক্রম সম্পৃক্ত রয়েছে এই কর্মসূচীর আওতায়। এলাকার তুলনামূলকভাবে দরিদ্র কৃষকদের প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পড়–য়া সন্তানদের মধ্যে ৭৫ জন ছাত্র-ছাত্রীর পড়াশুনার জন্য তার ওই লাইব্রেরী চত্বর ব্যবহার করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও সেখানে স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রশিক্ষণ এবং বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ব্যবস্থাও রয়েছে। এ লক্ষে এলাকার ১৩৫ জন কৃষাণ কৃষাণীর মধ্যে স্বাস্থ্যকার্ড বিতরণ করা হয়েছে। তারা এই কার্ড দেখিয়ে সেবা গ্রহণ করে থাকেন।
এখানে কৃষকদের সরাসরি কৃষি সম্পর্কিত তথ্যাদি ও পরামর্শ প্রদানের জন্য সেমিনারের উপযোগী মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, ক্যামেরা, সাউন্ডসিষ্টেম ইত্যাদি সম্বলিত একটি সেমিনার কক্ষ রয়েছে।
এই লাইব্রেরীর প্রতিষ্ঠাতা জাহাঙ্গীর আলম শাহ কৃষি ক্ষেত্রে অনবদ্য ভূমিকা রাখার জন্য বেশ কয়েকটি পুরস্কার লাভ করেছেন। ১৯৯২ সালে বৃক্ষরোপণে নওগাঁ জেলায় দ্বিতীয় পুরস্কার, ২০১১ সালে রোটারী ইন্টারন্যাশনাল থেকে কৃষিতে স্বর্ণপদক এবং ২০১৪ সালে চ্যানেল আই কৃষিবিষয়ক নিবন্ধ প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার লাভ করেন। তার সফল কার্যক্রমের জন্য লাইব্রেরীটি ইতিমধ্যে জাতীয়পর্যায়ে একটি পরিচিতি লাভ করেছে। কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান কৃষিবিদ ওয়াইজ কবির, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ এই লাইব্রেরীটি পরিদর্শন করেছেন এবং এ সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন।
মান্দা উপজেলার কালিগ্রামের কৃষক মফিজউদ্দিন ও মাহবুবুর রহমান এবং ছোট মুল্লুক গ্রামের কৃষক ফহিমুদ্দিন সরাসরি এই লাইব্রেরীর সাথে যুক্ত থেকে কৃষিক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছেন বলে তারা জানিয়েছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এস এম নুরুজ্জামান মন্ডল পাঠাগারটি কয়েকবার পরিদর্শন করেছেন বলে তিনি জানান। তিনি মনে করেন এই পাঠাগারটি এলাকার কৃষি ও কৃষকদের মান উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।
No comments:
Post a Comment