Friday, February 11, 2022

পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয় অবস্থান ফেরত পেলো বাংলাদেশ

পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয় অবস্থান ফেরত পেলো বাংলাদেশ

garment-পোশাক garment পোশাক কারখানা

ভিয়েতনামকে পেছনে ফেলে ফের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারকের অবস্থান পুনরুদ্ধার করেছে বাংলাদেশ। করোনাকালে ক্রমবর্ধমান কার্যাদেশ সম্পন্ন করতে দেশীয় কারখানাগুলো পুরোদমে উৎপাদন করায় এ অবস্থান নিশ্চিত করতে পেরেছে দেশটি।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য বলছে, ২০২১ সালে ৩৫.৮১ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। আর একই সময়ে ভিয়েতনামের আয় ৩২.৭৫ বিলিয়ন ডলার।

২০২০ সালে ভিয়েতনামের কাছে নিজের অবস্থান হারায় বাংলাদেশ, যখন ভিয়েতনামের আয় করা ২৯.৮ বিলিয়ন ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশের আয় ছিল ২৭.৪৭ বিলিয়ন ডলার। গত বছর ভিয়েতনামের রপ্তানি ৯.৮৯ শতাংশ বেড়েছে, কিন্তু বাংলাদেশে আগের বছরের তুলনায় রেকর্ড বৃদ্ধি করেছে ৩০.৩৬ শতাংশ।

স্নোটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম খালেদ বলেন, “২০২০ সালে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের পোশাক প্রস্তুতকারকদের কারখানা বন্ধ রাখতে হয়েছিল। কিন্তু এর বিপরীতে সংক্রমণের হার কম হওয়ায় ভিয়েতনাম কারখানা বন্ধ করেনি।”

সাময়িক বন্ধের ফলে উৎপাদন ব্যাহত হয় এবং রপ্তানি আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তিনি বলেন, “ভিয়েতনাম পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থান দখল করে নেয়।”

ভিয়েতনামে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় গত বছর বাংলাদেশ ভালো করেছে। কারণ, নির্মাতারা পর্যাপ্ত কাজের অর্ডার নিয়ে পুরোদমে কারখানা চালিয়েছেন। পোশাক প্রস্তুতকারকরা বলছেন, রপ্তানির ক্ষেত্রে এটি ভাল পারফরম্যান্স করেছে।

খালেদ বলেন, “নিটওয়্যার পণ্যগুলোর বৃদ্ধি ঘটায়; অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে কাঁচামাল সরবরাহের কারণে সেক্টরটি ভালো করেছে।”

বাংলাদেশ নিটওয়্যার খাতের জন্য ৯০ শতাংশের বেশি কাঁচামাল সরবরাহ করতে পারে।

নিটওয়্যার রপ্তানি ২০২১ সালে ৩৭.৭২ শতাংশ বেড়ে ১৯.৫৯ বিলিয়নে দাঁড়িয়েছে, যা আগের বছর ছিল ১৪.২২ বিলিয়ন ডলার। বোনা পণ্যগুলো ২২.৪৬ শতাংশ বেড়ে ১৬.২১ বিলিয়ন আয় করেছে। যা এক বছর আগে একই সময়ে ছিল ১৩.২৪ বিলিয়ন ডলার।

গত বছর মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ৩৬.৭৯ শতাংশ বেড়ে ৭.১৪ বিলিয়ন ডলারে এবং ভিয়েতনামের ১৪.৩৩ শতাংশ বেড়ে ১৪.৩৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

২০২২ সালে কী ঘটবে?

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, “চলমান মহামারির মধ্যে ২০২২ সালে ভবিষ্যত রপ্তানির দিকনির্দেশনা করা কঠিন ছিল, তবে আমি আশাবাদী যে, দেশীয় পোশাক শিল্প আগামী পাঁচ বছরে একটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের জন্য বিশাল প্রবৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে, বর্তমান কার্যাদেশের প্রবাহ এবং ক্রেতাদের আস্থায় দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রাখা কঠিন হবে না।”

২০২১ সালে রপ্তানি আদেশে ২০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি রেকর্ড করেছেন পোশাক প্রস্তুতকারীরা, যা বিজিএমইএ’র জারি করা ইউটিলাইজেশন ডিক্লেয়ারেশনের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা দ্বারা নির্দেশিত।

শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, “আমাদের অবস্থান ধরে রাখতে আমাদেরকে চীনা বিনিয়োগের পাশাপাশি ক্রেতাদেরও আকৃষ্ট করতে হবে, যারা তাদের ক্রয়ের গন্তব্য পরিবর্তন করছে। সাধারণত, চীনা বিনিয়োগকারীরা ভিয়েতনাম এবং মিয়ানমারকেই পছন্দ করে। কারণ, তাদের সংস্কৃতিতে মিল রয়েছে।

কীভাবে অবস্থান ধরে রাখা যায়?

চীনের সাথে বাংলাদেশের ব্যবধান অনেক বড়, কিন্তু তৃতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক ভিয়েতনামের সাথে সেই ব্যবধান খুব একটা বেশি নয়।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, “বাংলাদেশকে চীনের সাথে ব্যবধান কমাতে হবে এবং দ্বিতীয় অবস্থানটি ধরে রাখতে ভিয়েতনামের সাথে সেই ব্যবধান বাড়াতে হবে এবং এটিকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের উন্নতির আরও সুযোগ রয়েছে। আর এটি করতে হলে দক্ষতা উন্নয়ন এবং উৎপাদনে প্রযুক্তি গ্রহণের সাথে বৈচিত্র্যও আনতে হবে।”

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, “ভিয়েতনামের পোশাক রপ্তানি গত কয়েক বছর যাবত ভাল পারফরম্যান্স করছিল এবং এর বৃদ্ধি একটি স্থির প্রবণতা দেখাচ্ছে। তাই রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল। ২০২০ সালে এমনটা ঘটেছে এবং এটি আবারও ঘটতে পারে।”

এ অর্থনীতিবিদ বলেছেন, অবস্থানের ক্ষেত্রে উপর ও নিচ অস্থায়ী বিষয়, যা হালকাভাবে নেয়া উচিত নয়। ভিয়েতনাম কাঠামোগত উন্নয়ন এবং পণ্য বৈচিত্র্যে ভাল করেছে।

মোয়াজ্জেম বলেন, “বাংলাদেশের এলডিসি পরবর্তী সময়ের কথা ভাবা উচিত, যখন রপ্তানির ওপর শুল্ক থাকবে কিন্তু ভিয়েতনাম শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করবে।”

No comments:

Post a Comment