Saturday, April 2, 2016

প্রাণ আজ বিশ্ববাসীর কাছে ‘বাংলাদেশের প্রাণ’

আহসান খান চৌধুরী |  

ছবি: খালেদ সরকার
আয়তনে পৃথিবীর ক্ষুদ্র একটি দেশ হলেও ভৌগোলিক অবস্থান, উর্বর মাটি ও বিশাল জনগোষ্ঠীর কারণে সম্ভাবনাময় ‘নেক্সট ইলেভেন’-এর দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে বাংলাদেশ। এ দেশের সন্তানেরা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখছে। দেশের সম্ভাবনাময় শিল্পগুলোর মধ্যে কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প সম্প্রতি বিশ্ব দরবারে পরিচিতি লাভ করেছে। এ শিল্পে বাংলাদেশের ‘প্রাণ’ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বের ১১৮টি দেশে পৌঁছে গেছে। রপ্তানিতে অবদান রাখায় পরপর ১০ বছর জাতীয় রপ্তানি ট্রফি অর্জন করেছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশি বহুজাতিক শিল্প হিসেবে ‘প্রাণ-আরএফএল’ বহুদূর এগিয়েছে।
তিন দশকেরও বেশি সময়ের পথচলায় প্রাণ-আরএফএল শিল্প পরিবার আজ বেশ সমৃদ্ধ। খাদ্যপণ্য, প্লাস্টিক ও কাস্ট আয়রন পণ্য মিলিয়ে প্রায় ৪ হাজার ৫০০ পণ্য আমরা বাজারজাত করছি। সম্প্রতি আমরা পোশাকশিল্প, ফার্নিচার, ইলেকট্রনিকস, ইলেকট্রিক, বাইসাইকেল, হিমায়িত খাদ্য উৎপাদন ও বিপণন শুরু করেছি। বিশ্ব বিখ্যাত সব ব্র্যান্ডের তৈরি পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে আমাদের পণ্য। গর্বে বুক ভরে যায় এই ভেবে যে যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, যুক্তরাজ্য, দুবাই, মালয়েশিয়ার বিখ্যাত সুপার শপের তাকগুলোয় প্রাণের পণ্য শোভা পায়। অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত সস কোম্পানি বায়রন বে চিলির সস বানাচ্ছে প্রাণ। ভারতের ডিমার্ট, যুক্তরাজ্যের উইলকিনসন, যুক্তরাষ্ট্রের ডলারামা, ডেনমার্কের নভোনর্ডিক, ফ্রান্সের ক্যারিফোর, অস্ট্রেলিয়ার উলওয়ার্থ, স্পেনের ইসিআই, মধ্যপ্রাচ্যের রামিজসহ বিশ্বের বিভিন্ন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের পণ্য তৈরি করছে ‘প্রাণ-আরএফএল’ গ্রুপ।
আমাদের পথচলা শুরু হয় ১৯৮১ সালে রংপুর ফাউন্ড্রি লিমিটেড (আরএফএল) প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। তখন ঢালাই লোহা দিয়ে বিভিন্ন কৃষি ও সেচ উপকরণ তৈরি করা হতো। এরপর কৃষিপণ্য উৎপাদনে আগ্রহী হই আমরা। ১৯৮৫ সালে নরসিংদীতে স্বল্প পরিসরে কলা, পেঁপে, আনারস, রজনীগন্ধা ইত্যাদি চাষ করা শুরু করি। শুরু হলো এগ্রিকালচারাল মার্কেটিং কোম্পানি লিমিটেড, তথা প্রাণ-এর যাত্রা। কৃষিপণ্য উৎপাদন করতে গিয়ে আমরা লক্ষ করি, দেশে অনেক পণ্য উৎপন্ন হলেও মৌসুমের সময় পণ্যের দাম কমে যায় এবং ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন কৃষক। এ ছাড়া সংরক্ষণের অভাবে প্রচুর ফসল নষ্ট হয়ে যায়। তাই কৃষিপণ্য উৎপাদনের চেয়ে আমরা তা সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণে উদ্যোগী হই। ক্রমান্বয়ে একটু একটু করে এগোতে থাকি আমরা। ১৯৯৩ সালে নরসিংদীতে কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত করার জন্য একটি কারখানা স্থাপন করি। সেখানে বিভিন্ন ফলমূলের জুস, শাকসবজি প্রক্রিয়াজাত করা শুরু করি। এভাবে কয়েক বছরের মধ্যে ক্রমান্বয়ে আমরা বিভিন্ন ড্রিংকস, সস, জেলি, চানাচুর, চিপস, চকলেট, বেকারি, দুগ্ধজাত পণ্য বাজারজাত করতে থাকি।
কৃষকদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় পণ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে লক্ষ করলাম কৃষি বিষয়ে আমাদের দেশের কৃষকদের দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে এবং প্রয়োজনীয় কৃষি উপকরণও তাঁদের হাতে যথাযথভাবে পৌঁছায় না। চিন্তা করলাম, এসব বিষয়ে যদি কৃষকদের সহায়তা দেওয়া যায়, তাহলে জমিতে কয়েক গুণ বেশি ফলন সম্ভব। তাই আমরা কৃষকদের সঙ্গে চুক্তি করে কৃষিবিষয়ক প্রশিক্ষণ, উন্নত বীজ সরবরাহ, কৃষি উপকরণ সরবরাহ এবং কৃষি বিষয়ে বিভিন্ন প্রণোদনা দিতে থাকি। আশ্চর্য হয়ে দেখলাম, চুক্তিবদ্ধ কৃষকেরা বেশ ভালো করছেন। একই জমিতে আগের চেয়ে ফলন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এভাবে পণ্য সংগ্রহে ক্রমান্বয়ে আমরা কৃষকদের সঙ্গে সম্পৃক্তি বাড়াতে থাকি। বর্তমানে আমাদের সঙ্গে কাজ করছেন প্রায় ৮০ হাজার চুক্তিভিত্তিক কৃষক। তাঁদের চাষ করা পণ্য ক্রয়ে আমরা কৃষক প্রতিনিধিদের নিয়ে পণ্যের বাজারদর যাচাই করি। এরপর যথাযথ মূল্য পরিশোধ করে তাঁদের কাছ থেকে পণ্য ক্রয় করি। কৃষকদের কাছ থেকে আম, টমেটো, বাদাম, ডাল, আনারস, পেয়ারা, চাল, মসলা প্রভৃতি সংগ্রহ করা হয়। এতে কৃষকেরাও লাভবান হচ্ছেন, আমরাও মানসম্পন্ন পণ্য পাচ্ছি।

ছোট ছোট পণ্যের পসরা সাজিয়ে প্রাণ-আরএফএল আজ সারা বিশ্বের ডাইনিং টেবিলগুলোয় ও আড্ডাগুলোয় পৌঁছে গেছে। একটু একটু করে মিশে যাচ্ছে বিশ্ববাসীর আবেগ অনুভুতির সঙ্গে। আক্ষরিক অর্থেই প্রাণ আজ বিশ্ববাসীর কাছে ‘বাংলাদেশের প্রাণ’
সম্ভাবনাময় শিল্প হিসেবে আমরা বেশ কয়েক বছর যাবৎ দুগ্ধশিল্পে গুরুত্ব দিচ্ছি। কিন্তু ব্যাপক সম্ভাবনাময় এই খাত নানা রকম প্রতিকূলতার মধ্যে রয়েছে। আমরা সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলাম। এ শিল্পের উন্নয়নে আমরা খামারিদের পশুপালন-বিষয়ক প্রশিক্ষণ, চিকিৎসা ও ওষুধ, রোগ প্রতিষেধক টিকা, কৃত্রিম প্রজনন, গবাদিপশুর খাবার ইত্যাদি সরবরাহ করছি। এ ছাড়া প্রয়োজনে বিভিন্ন বিষয়ে কৃষকদের আমরা আর্থিক প্রণোদনা দিচ্ছি। নাটোর, পাবনা ও রংপুরে অবস্থিত আমাদের তিনটি ডেইরি হাব-এর মাধ্যমে কৃষকদের কাছ থেকে প্রতিদিন গড়ে দেড় লাখ লিটার দুধ সংগ্রহ করি।
আমাদের করপোরেটব্রত, ‘দারিদ্র্য ও ক্ষুধা জীবনের অভিশাপ। আমাদের লক্ষ্য লাভজনক ব্যবসায়িক কার্যক্রমের মাধ্যমে মানুষের মর্যাদা ও আত্মসম্মান বৃদ্ধি করা।’ জাতিসংঘ কর্তৃক ২০৩০ সালের মধ্যে অর্জনের জন্য যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ (এসডিজি) গৃহীত হয়েছে, তা অর্জনে বাংলাদেশের কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প ব্যাপক অবদান রাখবে বলে আমার বিশ্বাস। এসডিজির ১৭টি লক্ষ্যের মধ্যে ৭টি লক্ষ্য অর্জনে প্রাণ-আরএফএল সরাসরি অবদান রাখবে। সব ধরনের দারিদ্র্য এবং ক্ষুধা দূর করা এসডিজির প্রথম এবং দ্বিতীয় লক্ষ্য। প্রাণ-আরএফএল এ লক্ষ্য অর্জনে কাজ করছে। ইতিমধ্যে প্রাণ-আরএফএল দেশের প্রায় ৭৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে। প্রায় সাড়ে সাত লাখ লোক তাঁদের জীবিকার জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রাণ-আরএফএলের ওপর নির্ভরশীল।
নারীর সম-অধিকার এবং ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা এসডিজির পঞ্চম লক্ষ্য। এ লক্ষ্য অর্জনে প্রাণ-আরএফএল উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে। আমাদের কারখানাগুলোয় শতকরা ৮০ ভাগের বেশি নারী শ্রমিক কাজ করছেন। নারীর সম-অধিকার অর্জন এবং ক্ষমতায়নে এটি বিরাট ভূমিকা রাখছে। প্রাণ-আরএফএল তার করপোরেট মিশন অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজে ক্রমান্বয়ে অবদান রেখে চলেছে। আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আমরা সহযোগিতা করছি। এসডিজির নবম লক্ষ্য টেকসই শিল্পায়ন ও উদ্ভাবন। এ ক্ষেত্রেও আমরা অবদান রাখছি। আমাদের কারখানাগুলোয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ইটিপি (ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট) ব্যবহার করছি। ফলে, পরিবেশবান্ধব বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দূষণ রোধ হচ্ছে। আমরা পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানির জন্য নিয়মিত গবেষণা করছি এবং সময়ে সময়ে পণ্যে অভিনবত্ব নিয়ে আসছি।
কৃষিক্ষেত্রে এ দেশের বিপুল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে কৃষিনির্ভর শিল্প উদ্যোক্তাদের স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান এবং খাদ্যের গুণাগুণ পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশে বিশ্বমানের ল্যাব স্থাপন করা প্রয়োজন। এ ছাড়া স্থল ও সমুদ্রবন্দরে অবকাঠামো উন্নয়ন করতে হবে। রপ্তানি বৃদ্ধি করতে বিভিন্ন দেশে শুল্ক এবং অশুল্ক বাধা দূর করার জন্য তৎপরতা চালাতে হবে।
তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে বিশ্ব আজ বিশ্বগ্রামে পরিণত হয়েছে। মুহূর্তেই ক্রেতারা বিভিন্ন দেশের পণ্যের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন। বাজারে এখন প্রতিযোগীর অভাব নেই। তাই ব্যবসায় ভালো করার সবচেয়ে বড় নীতি হচ্ছে মানসম্পন্ন পণ্য তৈরি করা। এ নীতি অনুসরণ করলে দেশীয় পণ্য বিশ্ব বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে।
ছোট ছোট পণ্যের পসরা সাজিয়ে প্রাণ-আরএফএল আজ সারা বিশ্বের ডাইনিং টেবিলগুলোয় ও আড্ডাগুলোয় পৌঁছে গেছে। একটু একটু করে মিশে যাচ্ছে বিশ্ববাসীর আবেগ অনুভূতির সঙ্গে। আক্ষরিক অর্থেই প্রাণ আজ বিশ্ববাসীর কাছে ‘বাংলাদেশের প্রাণ’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করছে। এভাবেই আমরা বিশ্বে বাংলাদেশের উপস্থিতি জানান দিতে চাই।
আহসান খান চৌধুরী, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ

আমজাদ খান: সাফল্যের এক নিপুণ কারিগর

বিশেষ 
শুধু মুনাফা তার লক্ষ্য ছিল না। উদ্দেশ্য ছিল, দেশের বিশেষত গ্রামের মানুষের জন্য কিছু করা। শিল্প প্রতিষ্ঠানের নামটাই এর বড় উদাহরণ। প্রতিষ্ঠানের নাম 'প্রাণ', যার বিস্তৃতরূপ 'প্রোগ্রাম ফর রুরাল অ্যাডভান্সমেন্ট ন্যাশনালি'। বাংলায় প্রাণ বলতে বুঝিয়েছেন 'প্রগতি রূপায়ণে অগ্রণী নবোদ্যম'। নামকরণের মতো সব উদ্যোগেই সৃজনশীলতার জন্য অনুপম উদাহরণ হয়ে থাকবেন মেজর জেনারেল (অব.) আমজাদ খান চৌধুরী। এ দেশে কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্পের অগ্রদূত হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন 'প্রাণ'-এর এই 'প্রাণপুরুষ'।
আমজাদ খান চৌধুরীর মৃত্যুতে তার পরিবার ও স্বজনরা হারিয়েছেন তাদের প্রাণের মানুষকে। দেশ হারাল একজন সৃষ্টিশীল উদ্যোক্তাকে। ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা হারিয়েছেন তাদের 'আইডল' ব্যক্তিত্বকে। প্রাণ-আরএফএলের ৬৮ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী হারিয়েছেন তাদের অভিভাবককে। তার মৃত্যুসংবাদ শোনার পর গতকাল ব্যবসায়ী নেতারা 'প্রাণ' কার্যালয়ে গেছেন তার স্বজনদের সমবেদনা জানাতে। প্রাণ-আরএফএলের ওয়েবসাইটে এক শোকবার্তায় বলা হয়েছে, তিনি সবার জন্য চিরন্তন অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন। তিনি এমন একটি 'শিল্প গ্রুপ' প্রতিষ্ঠা করে গেছেন, যা শুধু তার পক্ষেই সম্ভব ছিল।
আমজাদ খান চৌধুরীর সহধর্মিণী সাবিহা আমজাদ। এই দম্পতির ৪ সন্তান। তারা হলেন- আজার খান চৌধুরী, আহসান খান চৌধুরী, ডা. সেরা হক এবং উজমা চৌধুরী। তাদের মধ্যে আহসান খান চৌধুরী গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং উজমা চৌধুরী গ্রুপের পরিচালক। আমজাদ খান চৌধুরীর ছোট ছেলে ও প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আহসান খান চৌধুরী গতকাল সমকালকে বলেন, তার বাবা একজন সফল মানুষ ছিলেন। নিরলসভাবে কাজ করতেন। বাবার ছায়া মাথার ওপর থেকে সরে গেল। আহসান খান বলেন, তার বাবার দুটি স্বপ্ন ছিল। তার একটি আগামী ১৮ মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন হবে। নাটোরে তিন বিঘা জমিতে একটি হাসপাতাল করা হচ্ছে। আরেকটি স্বপ্ন ছিল- বাংলাদেশের ডেইরি শিল্পের উন্নয়ন। এ স্বপ্ন সফল হয়েছে। তা তিনি গর্বভরে প্রত্যক্ষ করেছেন।
আমজাদ খান চৌধুরীর মেধা, মনোবল, দূরদর্শিতা ও সদিচ্ছার কারণে প্রাণ এখন দেশের সর্ববৃহৎ খাদ্য ও পুষ্টি কোম্পানি। প্রাণের পণ্য দেশে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। পাশাপাশি এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকাসহ ১১৪টি দেশে রফতানি হচ্ছে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৭টি রাজ্যে প্রাণের জুস, কোমলপানীয়, স্ন্যাকস, বিস্কুট, কনফেকশনারিসহ নানা খাদ্যপণ্য বিপুল জনপ্রিয়। ১০টি ক্যাটাগরিতে ২ শতাধিক খাদ্যপণ্য রফতানি করছে প্রাণ ফুডস। দেশে-বিদেশে প্রাণের ভোক্তা প্রায় ৩০ কোটি মানুষ। 'প্রাণ'-এর পর সাফল্য এনেছে তাদের আরএফএলের প্লাস্টিক সামগ্রী।
আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার কারণে ইতিমধ্যে নানা স্বীকৃতি পেয়েছে প্রাণ গ্রুপ। নিরাপদ খাদ্যপণ্য তৈরির জন্য আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হ্যাজার্ড অ্যানালাইসিস অ্যান্ড ক্রিটিক্যাল কেয়ারফুল পয়েন্ট বা 'হ্যাচাপ' স্বীকৃতি রয়েছে প্রাণের। ১৯৯১ সালে রফতানি বাজারে প্রবেশ করে প্রাণ। প্রথমে ফ্রান্সে রফতানি হয়। শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯১-২০০০ থেকে টানা ১০ বছর 'জাতীয় রফতানি ট্রফি' অর্জন করে 'প্রাণ'। বাংলাদেশের প্রথম খাদ্য প্রক্রিয়াজাত কোম্পানি হিসেবে 'আইএমএস' সনদ তার প্রমাণ। আইএমএস হচ্ছে, পরিবেশ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা মূল্যায়নে ব্রিটিশ স্ট্যান্ডার্ড। ২০১১ সালে 'প্রাণ' এশিয়ার শ্রেষ্ঠ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ব্র্যান্ড মালয়েশিয়ায় 'ইউডিসি বিজনেস অ্যাওয়ার্ড' পায়। একই বছরে তারা এইচএসবিসি 'এক্সপোর্ট এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড' অর্জন করে।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ দেশের সফলতম ব্র্যান্ড। আরএফএলের প্লাস্টিক পণ্য এখন ঘরে ঘরে। আরএফএল পণ্যের মধ্যে রয়েছে টিউবওয়েল, পানির পাম্প, পিভিসি পাইপ, ফিল্টার, ভবন নির্মাণসামগ্রী, প্রকৌশল, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক, কিচেন সামগ্রীসহ অনেক কিছু।
যেভাবে শুরু: সেনাবাহিনীতে ২৫ বছর চাকরি করার পর আমজাদ খান চৌধুরী অবসর নেন ১৯৮১ সালে। তিনি প্রচণ্ডভাবে অনুভব করতেন, আমাদের দেশে রয়েছে উর্বরা জমি, প্রচুর নদীনালা এবং প্রচণ্ড পরিশ্রমী এক বিশাল জনগোষ্ঠী। এ সবকিছুই কৃষিকাজে ব্যবহার করা যায়। তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশের সুবিধা হচ্ছে মূল্য সংযোজিত কৃষিজাত পণ্যের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান সৃষ্টি করা। এ জন্যই 'প্রাণ-আরএফএল'-এর যাত্রা শুরু। আমজাদ খান চৌধুরী রংপুরে ১৯৮১ সালে রংপুর ফাউন্ড্রি লিমিটেড (আরএফএল)-এর মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের কৃষি উপকরণ নির্মাণ শুরু করেন। এর জন্য পুঁজি ছিল তার পেনশনের টাকা আর স্ত্রীর পৈতৃক সম্পত্তি ও ব্যাংকে গচ্ছিত কিছু টাকা। এ দিয়ে প্রথমে অকশনের কিছু মেশিনপত্র কেনেন, যা দিয়ে হালকা কৃষি উপকরণ তৈরি করা হয়। যদিও সেই মেশিনগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা কম ছিল; কিন্তু সেগুলো দিয়েই প্রথমে যাত্রা শুরু হয় পরীক্ষামূলকভাবে। সাড়াও পেয়েছিলেন মোটামুটি রকমের। সেই সময়ে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে পারেননি। পুঁজি ছিল কম। এরপর চিন্তা করলেন, কৃষি উপকরণের পাশাপাশি কৃষিপণ্য উৎপাদন করা যায় কি-না। প্রথমে তিনি কলা চাষ করলেন। এরপর পেঁপে এবং রজনীগন্ধা ফুল চাষ করলেন। দেখলেন, উৎপাদন হয়, কিন্তু মৌসুম শেষ হবার পর সংরক্ষণের অভাবে সেগুলো নষ্ট হয়ে যায়। মৌসুমের সময় দাম পড়ে যায়, কৃষক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন। তখন বুঝতে পারলেন, উৎপাদন করার চেয়ে সেগুলো সংরক্ষণের জন্য প্রক্রিয়াজাত করাটাই হলো মুখ্য। তখন তিনি প্রক্রিয়াজাতকরণের দিকে মনোনিবেশ করলেন। এরপর ধীরে ধীরে কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত করে বাজারজাতকরণের কার্যক্রম শুরু করলেন। তিনি বিভিন্ন দেশ থেকে অভিজ্ঞ লোক আনলেন যারা ফ্যাক্টরিতে অবস্থান করলেন এবং তাদের কাছে শিখতে থাকলেন। এরপর তিনিও বিভিন্ন দেশে গেলেন হাতেকলমে শেখার জন্য। পরে সেসব অভিজ্ঞতা প্রয়োগ করতে থাকলেন। ধীরে ধীরে উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে থাকল।
একনজরে প্রাণ-আরএফএল :দেশের বৃহত্তম খাদ্যপণ্য প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান প্রাণ-এর প্রোডাক্ট লাইনে রয়েছে প্রায় ৫০০ খাদ্যপণ্য। হালকা প্রকৌশল, প্লাস্টিক ও ইলেকট্রনিক্স খাতে আরএফএলের রয়েছে প্রায় ৩০০০ পণ্য। দেশজুড়ে বিস্তৃত ১৩টি অত্যাধুনিক কারখানায় এসব উৎপাদিত হয়। এসব কারখানায় সরাসরি কর্মসংস্থান হয়েছে ৬৮ হাজারের বেশি নারী-পুরুষের। পরোক্ষভাবে লক্ষাধিক লোকেরও কর্মসংস্থান হয়েছে। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ওপর নির্ভর করে আরও ১০ লাখের অধিক মানুষের জীবন ও জীবিকা।
চুক্তিভিত্তিক কৃষিকাজ: উৎপাদিত পণ্যের বাজারজাত করতে এবং ন্যায্যমূল্য পেতে বাংলাদেশের কৃষকরা সব সময়ই শঙ্কিত থাকতেন। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য থেকে প্রান্তিক পর্যায়ে ক্ষুদ্রচাষিদের রক্ষা করতে এবং তাদের ন্যায্যমূল্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেন আমজাদ খান চৌধুরী। 'কন্ট্রাক্ট ফার্মিং' তথা চুক্তিবদ্ধ চাষাবাদের মাধ্যমে চাষিদের উন্নতমানের বীজ, সার-কীটনাশক প্রভৃতির ব্যবস্থা করেন। সেই সঙ্গে কোন ফসলের জন্য বছরের কোন সময়ে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে সে বিষয়ে হাতেকলমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। কৃষকরা জমিতে উৎপাদন শুরু করলে প্রাণ সেগুলো উৎপাদনে তদারকি করে। যাতে ভালো ফসল ফলে। ফসল ওঠার পরে তাদের কাছ থেকে প্রাণ সেই ফসল কিনে থাকে। এ ক্ষেত্রে কৃষক প্রতিনিধি সঙ্গে নিয়ে বাজারদর যাচাই করে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে প্রাণের সিংহভাগ কাঁচামাল সংগৃহীত হয় 'কন্ট্রাক্ট ফার্মিং' তথা চুক্তিবদ্ধ কৃষকদের মাধ্যমে। পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে- আম, তরল দুধ, চাল, মসলা, ডাল, বাদাম, টমেটো ও অন্যান্য কৃষিজাত পণ্য। স্থানীয় বাজার থেকে প্রাণ এসব কৃষিপণ্য কেনার ফলে ৭৮ হাজারের অধিক কৃষক এবং ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক পর্যায়ের খামারি সরাসরি উপকৃত হচ্ছেন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: প্রাণের কর্মকর্তারা জানান, তাদের প্রধান লক্ষ্য হলো প্রাণ-আরএফএল গ্রুপকে বাংলাদেশের প্রথম বহুজাতিক কোম্পানি (মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি) হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। বিগত কয়েক দশকে দেশের সামগ্রিক কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হলেও দুগ্ধশিল্প আশানুরূপ বিকাশলাভ করতে পারেনি। দুগ্ধশিল্পে ব্যাপক উন্নয়নের সুযোগ থাকলেও হাতে গোনা দু'একটি ছাড়া তেমন কোনো বৃহৎ উদ্যোগ নজরে পড়ে না। দুগ্ধশিল্প এমন একটি খাত যেখানে সকল বয়সের নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। ডেইরি শিল্পের বিকাশের মাধ্যমে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব। দুগ্ধশিল্পের উন্নয়নের জন্য সম্প্রতি 'প্রাণ' ব্যাপক বিস্তৃত পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

চ্যালেঞ্জ নেয়া এক কারিগর

বিশেষ প্রতিবেদন
এম এম মাসুদ | ২ এপ্রিল ২০১৬, শনিবার | 
BRB cable chairman mojibar rahman 
: চ্যালেঞ্জ নিতে তিনি পছন্দ করেন। সততা, ব্যবহার আর শ্রমের বিনিময়ে এ চ্যালেঞ্জকে তিনি জয়ও করেছেন। সফলতাকে এনেছেন হাতের মুঠোয়। আর তাই আজ দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও এক আলোকিত নাম বিআরবি ক্যাবল। এর কর্ণধার মো. মজিবর রহমান। কুষ্টিয়ার এক সম্ভ্রান্ত ব্যবসায়ী পরিবারে বেড়ে ওঠা। ফলে ছোট থেকে হিসাবের হাত একেবারে পাক্কা। চল্লিশ বছর ধরে এ পাক্কা হিসাবি মজিবর রহমান ব্যবসাকেও নিয়ে গেছেন পাক্কা খুঁটিতে। অন্যতম বিশ্বে বাংলাদেশের শীর্ষে- এ স্লোগান নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন তর তর করে। বেশিদিন আগের কথা নয়, ১৯৭৮ সালে কুষ্টিয়ায় প্রতিষ্ঠা করেন বিআরবি (বজলার রহমান অ্যান্ড ব্রাদার্স) ক্যাবল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। আস্তে আস্তে দেশের বাজারে অবস্থান করে নেয় প্রতিষ্ঠানের পণ্য। তারপর দেশের বাইরে নজর দেন তিনি। এখন বিশ্বের নানা প্রান্তে বাংলাদেশের সুনাম ও মর্যাদাকে শীর্ষে তুলে ধরছেন বিআরবি গ্রুপ তাদের উৎপাদিত পণ্যের মাধ্যমে। আর দেশের বেকারত্ব মোচন, অর্থনীতির গতি সঞ্চার ও দেশের রপ্তানি খাতকে এগিয়ে নিচ্ছেন সমান তালে। মজিবর রহমান প্রতিষ্ঠানটির চেয়াম্যান। তার মতে, দেশে কোনো কিছু করা না গেলে, বাইরে গিয়েও কিছু করা যায় না। ভবিষ্যৎ নিয়ে বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের অর্জন আরও সূদুরপ্রসারী করতে চাই।

প্রতিষ্ঠানের শুরু সম্পর্কে মজিবর রহমান বলেন, নিজেদের মূলধন ও ব্যাংকের অর্থায়নে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু হয় ১৯৮০ সালে। ১৯৯৪ সালে গোটা দেশে বিদ্যুতায়নের প্রসার ঘটলে ক্যাবল উৎপাদন বাড়নো হয়। ১৯৯৬ ও ২০০০ সালে উন্নত বিশ্বের উন্নত যন্ত্রপাতি স্থাপন করে কারখানার সমপ্রসারণ করা হয়। বর্তমানে উন্নত ও গুণগতমান সম্পন্ন পণ্য উৎপাদন করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের ক্যাবল বাজারের স্থান করে নিয়েছে বিআরবি গ্রুপ। এখন এ শিল্পের উৎপাদিত পণ্য ইউরোপ, আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বের অনেক দেশে রপ্তানি হচ্ছে।
১৯৭৮ সালে শুরু হওয়া এ গ্রুপে বর্তমানে ১২টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ৬ হাজারের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত রয়েছে এখানে। এর মধ্যে বিআরবি ক্যাবল ইন্ডাস্ট্রিজ, কিয়াম মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ, এমআরএস ইন্ডাস্ট্রিজ, বিআরবি পলিমার, বিআরবি সিকিউরিটিজ, টিপিটি ক্যাবলস, লাভলী হাউজিং, কিয়াম সিরাতুন্নেসা মেমোরিয়াল ট্রাস্ট, বিআরবি এনার্জি, বিআরবি এয়ার, বিআরবি ট্রাভেলস, গ্যাস্ট্র লিভার হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট লিমিটেড।

জাতীয় অর্থনীতিতে অবদানের পাশাপাশি দেশে শিল্পায়নে পিছিয়ে থাকা জনপদ কুষ্টিয়াকে সমৃদ্ধ জেলায় রূপান্তরেরও অন্যতম কারিগর এই বিআরবি গ্রুপ। স্থানীয় বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি এ প্রতিষ্ঠানের হাত ধরেই কুষ্টিয়া অঞ্চলে নতুন করে শিল্পায়নের সূচনা হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কুষ্টিয়ার খ্যাতনামা শিল্পপ্রতিষ্ঠান মোহিনী মিল বন্ধ হয়ে যায়। নাজুক হয়ে পড়ে কুষ্টিয়া টেক্সটাইল মিলের অবস্থাও। জেলার বৃহৎ কর্মস্থানের এ ক্ষেত্র দুটি ভঙ্গুর হয়ে পড়লে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে এ জেলা। এমন অবস্থায় নানা রকমের ঝুঁকি সত্ত্বেও নতুন করে শিল্পকারখানা দাঁড় করানোর চেষ্টা শুরু করেন মজিবর রহমান। এ প্রচেষ্টা বাস্তবরূপ লাভ করে ১৯৭৮ সালের ২৩শে অক্টোবর কুষ্টিয়া শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দক্ষিণ বিসিক শিল্প নগরীতে বৈদ্যুতিক ওয়্যারস ক্যাবল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বিআরবি ক্যাবল ইন্ডাস্ট্রিজ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। দেশে ও বিশ্ব বাজারের বৈদ্যুতিক ক্যাবলের ক্রমবর্ধমান চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৫ সালে কোম্পানির প্রসার ঘটিয়ে বিআরবি ক্যাবলস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ইউনিট-২ স্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটি।

মজিবর রহমান বলেন, বিআরবি উৎপাদনের ধারাবাহিকতায় শুধু বৈদ্যুতিক ক্যাবলই তৈরি করছে না তাদের উৎপাদনের সঙ্গে আরও সংযোজিত হয়েছে টেলিকম টিউব লাইন ব্যালস্টসহ ৯৯ হাইভোল্টেজ ক্যাবল, যা এদেশের মধ্যে শুধু বিআরবিই তৈরি করছে। অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে বাজারজাতকরণের মাধ্যমে বিআরবি ক্যাবল তার সাফল্যের আরও এক ধাপ এগিয়ে আইএসও ৯০০২ঃ ২০০০ সনদপ্রাপ্ত হয়ে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখেছে। শিল্প উৎপাদনে-রপ্তানি খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় তিনি সিআইপি নির্বাচিত হয়েছেন বেশ কয়েক বার।

যেভাবে সম্প্র্রসারণ হয় গ্রুপটির: উৎপাদনের ধারাবাহিকতা রক্ষায় গ্রাহক চাহিদা মেটানোসহ কর্মসংস্থানের জন্য ২০০৯ সালে নতুন প্লান্ট স্থাপন করে উৎপাদন করছেন বৈদ্যুতিক ফ্যান। যার নাম লাভলী ফ্যান, যা বাজারে বেশ সুনাম অর্জন করেছে। টেকসই ও মজবুত হওয়ায় লাভলী ফ্যান অল্প সময়ে মানুষ গ্রহণ করেছে। বর্তমানে এ ফ্যান বাংলাদেশের এক নম্বর ব্র্যান্ড হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে বলে জানান চেয়াম্যান।
২০১১ সালে বিআরবি গ্রুপে যুক্ত হয় আর একটি নতুন অধ্যায়। বিআরবি ক্যাবল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড মেরিন ক্যাবল উৎপাদন করে ব্যবসায় নজির স্থাপন করায় কোম্পানি ব্যাপক সুনাম অর্জন করে।

আন্তর্জাতিক মানের অত্যাধুনিক ও আকর্ষণীয় মেটালিক পণ্যসামগ্রী রান্নাঘরে পৌঁছে দেয়ার জন্য মজিবর রহমান ১৯৯০ সালে কিয়াম মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামে কুষ্টিয়া বিসিক শিল্প নগরীতে আরও একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।
কুষ্টিয়ায় ১৯৯২ সালে বিআরবি গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত এমআরএস ইন্ডাস্ট্রিজ নামে আরও একটি প্রকৌশল, ঢালাই, প্লাইউড ও মেলামাইন বোর্ড কারখানা প্রতিষ্ঠিত করেন গ্রুপটি।  

কৃষিপ্রধান দেশর কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে উন্নত সেচ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বিআরবির স্বপ্নদ্রষ্টা আরেকটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে ১৯৯৭ সালে বিসিক শিল্প নগরী কুষ্টিয়ায় প্রতিষ্ঠা করেন বিআরবি পলিমার লিমিটেড।

২০১১ সালে বিসিক শিল্প নগরীর মূল হাইওয়েতে এমআরএস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ফিলিং স্টেশন স্থাপন করেন।
নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চয়তায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে বিসিক শিল্প নগরীর বিআরবি চত্বরে ২০০৯ সালে স্থাপন করেন বিআরবি এনার্জি লিমিটেড। এই বিদ্যুৎ সরবরাহের ফলে বিআরবি গ্রুপের সব প্রতিষ্ঠানের পণ্য উৎপাদনে গতিশীলতা ফিরে এসেছে।
অন্যদিকে ভোক্তাদের চাহিদা মেটানোর জন্য কুষ্টিয়া শহরের প্রাণকেন্দ্রে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সড়কে ২০০০ সালে ১০তলা বহুতল ভবন বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স ‘লাভলী টাওয়ার’ স্থাপন করেন।

আকাশপথের মাধ্যমে সারা দেশে দ্রুত যোগাযোগ নিশ্চিত করতে বিআরবি গ্রুপে যুক্ত হয় বিআরবি এয়ার লিমিটেড। বর্তমানে বেল ৪০৭ জিএক্স নামের একটি হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হচ্ছে। শাহজালাল বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকভাবে বিআরবি এয়ারের যাত্রা শুরু হয়।
গ্রুপের কর্ণধার মো. মজিবুর রহমান কুষ্টিয়ায় কিয়াম সিরাতুননেছা মেমোরিয়াল ট্রাস্ট গঠন করে দরিদ্র ছাত্রদের বিনামূল্যে ধর্মীয় ও আধুনিক শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। পবিত্র হজব্রত পালনের জন্য তিনি বেশ কয়েকবার হজ ও ওমরাহ পালন করেছেন। নিজ খরচে কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকায় একাধিক মসজিদ, মাদরাসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছেন।

মজিবর রহমান বলেন, স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়তে ও স্বনির্ভর কুষ্টিয়া প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে বিআরবি গ্রুপ। দেশের সমৃদ্ধি ও বেকারত্ব মোচনে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, আর এটা সম্ভব হয়েছে কুষ্টিয়াবাসীসহ দেশের সবার সার্বিক সহযোগিতায়। বিআরবির পণ্যের মান উন্নত হওয়ার কারণে বিশ্ব দরবারে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ক্যাবল তৈরি প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিনে। গোবি ইন্টারন্যাশনালের জরিপে সারা বিশ্বের তালিকাভুক্ত ৩ হাজার ক্যাবল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিআরবি ৩৩তম। মানের কারণে বিআরবি ৩ বার জাতীয় রপ্তানি ট্রফি অর্জন করেছে।
===========================================================
: কুষ্টিয়ার এক সমভ্রান্ত ব্যবসায়ী পরিবারে বেড়ে ওঠা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. মজিবর রহমান। দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রথম সারির একজন তিনি। ১৯৪৭ সালে জন্ম নেয়া বিশিষ্ট এই উদ্যোক্তা প্রায় ৪০ বছর ধরে ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত। পারিবারিক সূত্রে পাওয়া ব্যবসায় একের পর এক চ্যালেঞ্জ নিয়ে হয়েছেন সফল। ১৯৭৮ সালে কুষ্টিয়ায় প্রতিষ্ঠা করেন বিআরবি (বজলার রহমান অ্যান্ড ব্রাদার্স) কেবল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। বিশ্বের নানা প্রান্তে যেসব প্রতিষ্ঠানের পণ্য বাংলাদেশের সুনাম ও মর্যাদাকে শীর্ষে তুলে ধরেছে বিআরবি গ্রুপ তাদের মধ্যে অন্যতম। বর্তমানে তিনি প্রতিষ্ঠানটির চেয়াম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সেøাগান দেয়া হয়েছে ‘অন্যতম বিশ্বে বাংলাদেশের শীর্ষে’। দেশের বেকারত্ব মোচনে, অর্থনীতির গতি সঞ্চারে ও দেশের রপ্তানি খাতকে এগিয়ে নেয়াই ছিল তার প্রদান লক্ষ্য। মজিবর রহমানের মতে, দেশেই কোনো কিছু করা না গেলে, বাইরে গিয়েও কিছু করা যায় না। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক, সুষ্ঠু ও নিয়মতান্ত্রিক কর্ম সম্প্রদানের পাশাপাশি অর্জিত গৌরব ও উন্নয়নের ধারাকে আরো শাণিত করে জাতীয় ও আন্তজার্তিক পর্যায়ে আমাদের অর্জন আরো সূদুর প্রসারী করতে চাই। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ে মানবজমিনের সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে প্রতিষ্ঠান ও জীবনের নানা দিক নিয়ে আলোচনাকালে তিনি এসব কথা বলেন। প্রতিষ্ঠানের শুরু সম্পর্কে মজিবর রহমান বলেন, ১৯৮০ সালে নিজেদের মূলধন ও ব্যাংকের অর্থায়নে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করা হয়। ১৯৯৪ সালে গোটা দেশে বিদ্যুতায়নের প্রসার ঘটলে ক্যাবল উৎপাদন বাড়নো হয়। ১৯৯৬ ও ২০০০ সালে উন্নতবিশ্বের উন্নত যন্ত্রপাতি স্থাপন করে কারখানার সম্প্রসারণ করা হয়। বর্তমানে উন্নত ও গুণগত মান সম্পন্ন পণ্য উৎপাদন করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের ক্যাবল বাজারের স্থান করে নিয়েছে বিআরবি গ্রুপ। এখন এই শিল্পের উৎপাদিত পণ্য ইউরোপ, আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বের অনেক দেশে রপ্তানি হচ্ছে। ১৯৭৮ সালে শুরু হওয়া এই গ্রুপের বর্তমানে ১২টি প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৬ হাজারের বেশি কর্মকর্তাÑকর্মচারি কর্মরত আছেন। এর মধ্যে বিআরবি ক্যাবল ইন্ডাস্ট্রিজ, কিয়াম মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ, এমআরএস ইন্ডাস্ট্রিজ, বিআরবি পলিমার, বিআরবি সিকিউরিটিজ, টিপিটি ক্যাবলস, লাভলী হাউজিং, কিয়াম সিরাতুন্নেসা মেমোরিয়াল ট্রাস্ট, বিআরবি এনার্জি, বিআরবি এয়ার, বিআরবি ট্রাভেলস, গ্যাস্ট্র লিভার হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, জাতীয় অর্থনীতিতে অবদানের পাশাপাশি দেশে শিল্পায়নে পিছিয়ে থাকা জনপদ কুষ্টিয়াকে সমৃদ্ধ জেলায় রূপান্তরেরও অন্যতম কারিগর এই বিআরবি গ্রুপ। স্থানীয় বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি এই প্রতিষ্ঠানের হাত ধরেই কুষ্টিয়া অঞ্চলে নতুন করে শিল্পায়নের সূচনা হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কুষ্টিয়ার খ্যাতনামা শিল্প প্রতিষ্ঠান মোহিনী মিল বন্ধ হয়ে যায়। নাজুক হয়ে পড়ে কুষ্টিয়া টেক্সটাইল মিলের অবস্থাও। জেলার বৃহৎ কর্মস্থানের এই ক্ষেত্র দুটি ভঙগুর হয়ে পড়লে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে এই জেলা। এমন অবস্থায় নানা রকমের ঝুঁকি সত্ত্বেও নতুন করে শিল্প কারখানা দাঁড় করানোর প্রচেষ্টা শুরু করেন মজিবর রহমান। এই প্রচেষ্টা বাস্তবরূপ লাভ করে ১৯৭৮ সালের ২৩শে অক্টোবর কুষ্টিয়া শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দক্ষিণ বিসিক শিল্প নগরীতে বৈদ্যুতিক ওয়্যারস ক্যাবল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বিআরবি কেবল ইন্ডাষ্ট্রিজ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। দেশে ও বিশ্ব বাজারের বৈদ্যুতিক কেবলের ক্রমবর্ধমান চাহিদার প্রেক্ষিতে ১৯৯৫ সালে কোম্পানির প্রসার ঘটিয়ে বিআরবি কেবলস ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড ইউনিট-২ স্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটি। মজিবর রহমান বলেন, বিআরবি উৎপাদনের ধারাবাহিকতায় শুধু বৈদ্যুতিক ক্যাবল-ই তৈরি করছে না তাদের উৎপাদনের সঙ্গে আরও সংযোজিত হয়েছে টেলিকম টিউব লাইন ব্যালেষ্টসহ ৯৯ হাইভোল্টেজ ক্যাবল, যা এদেশের মধ্যে শুধু বিআরবি-ই তৈরি করছে। অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে বাজারজাতকরণের মাধ্যমে বিআরবি কেবল তার সাফল্যের আরও এক ধাপ এগিয়ে আইএসও ৯০০২ঃ ২০০০ সনদপ্রাপ্ত হয়ে উন্নয়নের ধারা অব্যহত রেখেছে। শিল্প উৎপাদনে-রপ্তানি খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় তিনি সিআইপি নির্বাচিত হয়েছেন বেশ কয়েক বার। যেভাবে সম্প্র্রসারণ হয় গ্রুপটির: উৎপাদনের ধারাবাহিকতা রক্ষায় গ্রাহক চাহিদা মেটানোসহ কর্মসংস্থানের জন্য ২০০৯ সালে নতুন প্লান্ট স্থাপন করে উৎপাদন করছেন বৈদ্যুতিক ফ্যান। যার নাম লাভলী ফ্যান, যা বাজারে বেশ সুনাম অর্জন করেছে। টেকসই ও মজবুত হওয়ায় লাভলী ফ্যান অল্প সময়ে মানুষ গ্রহণ করেছে। বর্তমানে এ ফ্যান বাংলাদেশের এক নম্বর ব্র্যান্ড হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে বলে জানান চেয়াম্যান। ২০১১ সালে বিআরবি গ্রুপে যুক্ত হয় আর একটি নতুন অধ্যায়। বিআরবি কেবল ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড মেরিন কেবল উৎপাদন করে ব্যবসায় নজির স্থাপন করায় কোম্পানি ব্যাপক সুনাম অর্জন করে। আন্তর্জাতিক মানের অত্যাধুনিক ও আকর্ষণীয় মেটালিক পণ্য সামগ্রী রান্না ঘরে পৌঁছে দেয়ার জন্য মজিবর রহমান ১৯৯০ সালে কিয়াম মেটাল ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড নামে কুষ্টিয়া বিসিক শিল্প নগরীতে আরও একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। কুষ্টিয়ায় ১৯৯২ সালে বিআরবি গ্রুপের অন্তর্ভূক্ত এমআরএস ইন্ডাষ্ট্রিজ নামে আরও একটি প্রকৌশল, ঢালাই, প্লাইউড ও মেলামাইন বোর্ড কারখানা প্রতিষ্ঠিত করেন গ্রুপটি। কৃষি প্রধান দেশর কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে উন্নত সেচ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বিআরবির স্বপ্নদ্রষ্টা আরেকটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে ১৯৯৭ সালে বিসিক শিল্প নগরী কুষ্টিয়াতে প্রতিষ্ঠা করেন বিআরবি পলিমার লিমিটেড। ২০১১ সালে বিসিক শিল্প নগরীর মূল হাইওয়েতে এমআরএস ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড ফিলিং স্টেশন স্থাপন করেন। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চয়তায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে বিসিক শিল্প নগরীর বিআরবি চত্বরে ২০০৯ সালে স্থাপন করেন বিআরবি এনার্জি লিমিটেড। এই বিদ্যুৎ সরবরাহের ফলে বিআরবি গ্রুপের সব প্রতিষ্ঠানের পণ্য উৎপাদনে গতিশীলতা ফিরে এসেছে। অন্যদিকে ভোক্তাদের চাহিদা মেটানোর জন্য কুষ্টিয়া শহরের প্রাণকেন্দ্রে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সড়কে ২০০০ সালে ১০ তলা বহুতল ভবন বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স ‘লাভলী টাওয়ার’ স্থাপন করেন। আকাশ পথের মাধ্যমে সারাদেশে দ্রুত যোগাযোগ নিশ্চিত করতে বিআরবি গ্রুপে যুক্ত হয় বিআরবি এয়ার লিমিটেড। বর্তমানে বেল ৪০৭ জিএক্স নামের একটি হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হচ্ছে। শাহজালাল বিমান বন্দরে আনুষ্ঠানিকভাবে বিআরবি এয়ারের যাত্রা শুরু হয়। গ্রুপের কর্ণধার মো. মজিবুর রহমান কুষ্টিয়ায় কিয়াম সিরাতুননেছা মেমোরিয়াল ট্রাস্ট গঠন করে দরিদ্র ছাত্রদের বিনামূল্যে ধর্মীয় ও আধুনিক শিা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। পবিত্র হজ্বব্রত পালনের জন্য তিনি বেশ কয়েকবার হজ্জ ও ওমরাহ হজ্জ পালন করেছেন। নিজ খরচে কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকাতে একাধিক মসজিদ, মাদ্রসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে দিয়েছেন। মজিবর রহমান বলেন, স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়তে ও স্বনির্ভর কুষ্টিয়া প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে বিআরবি গ্রুপ। দেশের সমৃদ্ধি ও বেকারত্ব মোচনে আমাদেও প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, আর এটা সম্ভব হয়েছে কুষ্টিয়াবাসীসহ দেশের সবার সার্বিক সহযোগিতায়। বিআরবি’র পণ্যের মান উন্নত হওয়ার কারণে বিশ্ব দরবারে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ক্যাবল তৈরি প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিনে। গোবি ইন্টারন্যাশনালের জরিপে সারাবিশ্বের তালিকাভুক্ত ৩ হাজার ক্যাবল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিআরবি ৩৩তম। মানের কারণে বিআরবি ৩ বার জাতীয় রপ্তানি ট্রফি অর্জন করেছে। এক নজরে কুষ্টিয়া জেলা: গ্যাস ছাড়া শিল্পায়ন সম্ভব নয়, উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে প্রায়ই শোনা যায় অভিযোগটি। কিন্তু দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা কুষ্টিয়া এক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত। গ্যাস সংযোগ ছাড়াই সেখানে গড়ে উঠছে বড় শিল্প-কারখানা। বিকল্প জ্বালানির ওপর ভর করে এক দশকের মধ্যেই শিল্পনির্ভর জেলা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে কুষ্টিয়া। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে জেলার অর্থনীতিতে। বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত দারিদ্র্য ম্যাপেও দেশের সবচেয়ে কম দারিদ্র্য প্রবণ জেলার স্বীকৃতি পেয়েছে কুষ্টিয়া। কুষ্টিয়ার বিসিক শিল্প নগরীতে ৮১টি শিল্প প্লটের মধ্যে সবই চালু আছে। এ শিল্প নগরীতে বিনিয়োগ হয়েছে ৮৯৫ কোটি ২২ লাখ টাকা। এসব শিল্প প্লটে স্থাপিত কারখানায় বার্ষিক টার্নওভার ১ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। এখান থেকে বার্ষিক রপ্তানি ৬৮ কোটি টাকা। এতে কর্মসংস্থান হয়েছে ৭ হাজার ১৭৮ জন।
: কুষ্টিয়ার এক সমভ্রান্ত ব্যবসায়ী পরিবারে বেড়ে ওঠা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. মজিবর রহমান। দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রথম সারির একজন তিনি। ১৯৪৭ সালে জন্ম নেয়া বিশিষ্ট এই উদ্যোক্তা প্রায় ৪০ বছর ধরে ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত। পারিবারিক সূত্রে পাওয়া ব্যবসায় একের পর এক চ্যালেঞ্জ নিয়ে হয়েছেন সফল। ১৯৭৮ সালে কুষ্টিয়ায় প্রতিষ্ঠা করেন বিআরবি (বজলার রহমান অ্যান্ড ব্রাদার্স) কেবল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। বিশ্বের নানা প্রান্তে যেসব প্রতিষ্ঠানের পণ্য বাংলাদেশের সুনাম ও মর্যাদাকে শীর্ষে তুলে ধরেছে বিআরবি গ্রুপ তাদের মধ্যে অন্যতম। বর্তমানে তিনি প্রতিষ্ঠানটির চেয়াম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সেøাগান দেয়া হয়েছে ‘অন্যতম বিশ্বে বাংলাদেশের শীর্ষে’। দেশের বেকারত্ব মোচনে, অর্থনীতির গতি সঞ্চারে ও দেশের রপ্তানি খাতকে এগিয়ে নেয়াই ছিল তার প্রদান লক্ষ্য। মজিবর রহমানের মতে, দেশেই কোনো কিছু করা না গেলে, বাইরে গিয়েও কিছু করা যায় না। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক, সুষ্ঠু ও নিয়মতান্ত্রিক কর্ম সম্প্রদানের পাশাপাশি অর্জিত গৌরব ও উন্নয়নের ধারাকে আরো শাণিত করে জাতীয় ও আন্তজার্তিক পর্যায়ে আমাদের অর্জন আরো সূদুর প্রসারী করতে চাই। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ে মানবজমিনের সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে প্রতিষ্ঠান ও জীবনের নানা দিক নিয়ে আলোচনাকালে তিনি এসব কথা বলেন। 
প্রতিষ্ঠানের শুরু সম্পর্কে মজিবর রহমান বলেন, ১৯৮০ সালে নিজেদের মূলধন ও ব্যাংকের অর্থায়নে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করা হয়। ১৯৯৪ সালে গোটা দেশে বিদ্যুতায়নের প্রসার ঘটলে ক্যাবল উৎপাদন বাড়নো হয়। ১৯৯৬ ও ২০০০ সালে উন্নতবিশ্বের উন্নত যন্ত্রপাতি স্থাপন করে কারখানার সম্প্রসারণ করা হয়। বর্তমানে উন্নত ও গুণগত মান সম্পন্ন পণ্য উৎপাদন করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের ক্যাবল বাজারের স্থান করে নিয়েছে বিআরবি গ্রুপ। এখন এই শিল্পের উৎপাদিত পণ্য ইউরোপ, আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বের অনেক দেশে রপ্তানি হচ্ছে। 
১৯৭৮ সালে শুরু হওয়া এই গ্রুপের বর্তমানে ১২টি প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৬ হাজারের বেশি কর্মকর্তাÑকর্মচারি কর্মরত আছেন। এর মধ্যে বিআরবি ক্যাবল ইন্ডাস্ট্রিজ, কিয়াম মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ, এমআরএস ইন্ডাস্ট্রিজ, বিআরবি পলিমার, বিআরবি সিকিউরিটিজ, টিপিটি ক্যাবলস, লাভলী হাউজিং, কিয়াম সিরাতুন্নেসা মেমোরিয়াল ট্রাস্ট, বিআরবি এনার্জি, বিআরবি এয়ার, বিআরবি ট্রাভেলস, গ্যাস্ট্র লিভার হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট লিমিটেড। 
প্রতিষ্ঠানটি জানায়, জাতীয় অর্থনীতিতে অবদানের পাশাপাশি দেশে শিল্পায়নে পিছিয়ে থাকা জনপদ কুষ্টিয়াকে সমৃদ্ধ জেলায় রূপান্তরেরও অন্যতম কারিগর এই বিআরবি গ্রুপ। স্থানীয় বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি এই প্রতিষ্ঠানের হাত ধরেই কুষ্টিয়া অঞ্চলে নতুন করে শিল্পায়নের সূচনা হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কুষ্টিয়ার খ্যাতনামা শিল্প প্রতিষ্ঠান মোহিনী মিল বন্ধ হয়ে যায়। নাজুক হয়ে পড়ে কুষ্টিয়া টেক্সটাইল মিলের অবস্থাও। জেলার বৃহৎ কর্মস্থানের এই ক্ষেত্র দুটি ভঙগুর হয়ে পড়লে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে এই জেলা। এমন অবস্থায় নানা রকমের ঝুঁকি সত্ত্বেও নতুন করে শিল্প কারখানা দাঁড় করানোর প্রচেষ্টা শুরু করেন মজিবর রহমান। এই প্রচেষ্টা বাস্তবরূপ লাভ করে ১৯৭৮ সালের ২৩শে অক্টোবর কুষ্টিয়া শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দক্ষিণ বিসিক শিল্প নগরীতে বৈদ্যুতিক ওয়্যারস ক্যাবল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বিআরবি কেবল ইন্ডাষ্ট্রিজ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। দেশে ও বিশ্ব বাজারের বৈদ্যুতিক কেবলের ক্রমবর্ধমান চাহিদার প্রেক্ষিতে ১৯৯৫ সালে কোম্পানির প্রসার ঘটিয়ে বিআরবি কেবলস ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড ইউনিট-২ স্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটি। 
মজিবর রহমান বলেন, বিআরবি উৎপাদনের ধারাবাহিকতায় শুধু বৈদ্যুতিক ক্যাবল-ই তৈরি করছে না তাদের উৎপাদনের সঙ্গে আরও সংযোজিত হয়েছে টেলিকম টিউব লাইন ব্যালেষ্টসহ ৯৯ হাইভোল্টেজ ক্যাবল, যা এদেশের মধ্যে শুধু বিআরবি-ই তৈরি করছে। অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে বাজারজাতকরণের মাধ্যমে বিআরবি কেবল তার সাফল্যের আরও এক ধাপ এগিয়ে আইএসও ৯০০২ঃ ২০০০ সনদপ্রাপ্ত হয়ে উন্নয়নের ধারা অব্যহত রেখেছে। শিল্প উৎপাদনে-রপ্তানি খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় তিনি সিআইপি নির্বাচিত হয়েছেন বেশ কয়েক বার। 
যেভাবে সম্প্র্রসারণ হয় গ্রুপটির: উৎপাদনের ধারাবাহিকতা রক্ষায় গ্রাহক চাহিদা মেটানোসহ কর্মসংস্থানের জন্য ২০০৯ সালে নতুন প্লান্ট স্থাপন করে উৎপাদন করছেন বৈদ্যুতিক ফ্যান। যার নাম লাভলী ফ্যান, যা বাজারে বেশ সুনাম অর্জন করেছে। টেকসই ও মজবুত হওয়ায় লাভলী ফ্যান অল্প সময়ে মানুষ গ্রহণ করেছে। বর্তমানে এ ফ্যান বাংলাদেশের এক নম্বর ব্র্যান্ড হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে বলে জানান চেয়াম্যান।
২০১১ সালে বিআরবি গ্রুপে যুক্ত হয় আর একটি নতুন অধ্যায়। বিআরবি কেবল ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড মেরিন কেবল উৎপাদন করে ব্যবসায় নজির স্থাপন করায় কোম্পানি ব্যাপক সুনাম অর্জন করে। 
আন্তর্জাতিক মানের অত্যাধুনিক ও আকর্ষণীয় মেটালিক পণ্য সামগ্রী রান্না ঘরে পৌঁছে দেয়ার জন্য মজিবর রহমান ১৯৯০ সালে কিয়াম মেটাল ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড নামে কুষ্টিয়া বিসিক শিল্প নগরীতে আরও একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। 
কুষ্টিয়ায় ১৯৯২ সালে বিআরবি গ্রুপের অন্তর্ভূক্ত এমআরএস ইন্ডাষ্ট্রিজ নামে আরও একটি প্রকৌশল, ঢালাই, প্লাইউড ও মেলামাইন বোর্ড কারখানা প্রতিষ্ঠিত করেন গ্রুপটি।  
কৃষি প্রধান দেশর কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে উন্নত সেচ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বিআরবির স্বপ্নদ্রষ্টা আরেকটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে ১৯৯৭ সালে বিসিক শিল্প নগরী কুষ্টিয়াতে প্রতিষ্ঠা করেন বিআরবি পলিমার লিমিটেড। 
২০১১ সালে বিসিক শিল্প নগরীর মূল হাইওয়েতে এমআরএস ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড ফিলিং স্টেশন স্থাপন করেন। 
নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চয়তায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে বিসিক শিল্প নগরীর বিআরবি চত্বরে ২০০৯ সালে স্থাপন করেন বিআরবি এনার্জি লিমিটেড। এই বিদ্যুৎ সরবরাহের ফলে বিআরবি গ্রুপের সব প্রতিষ্ঠানের পণ্য উৎপাদনে গতিশীলতা ফিরে এসেছে। 
অন্যদিকে ভোক্তাদের চাহিদা মেটানোর জন্য কুষ্টিয়া শহরের প্রাণকেন্দ্রে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সড়কে ২০০০ সালে ১০ তলা বহুতল ভবন বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স ‘লাভলী টাওয়ার’ স্থাপন করেন। 
আকাশ পথের মাধ্যমে সারাদেশে দ্রুত যোগাযোগ নিশ্চিত করতে বিআরবি গ্রুপে যুক্ত হয় বিআরবি এয়ার লিমিটেড। বর্তমানে বেল ৪০৭ জিএক্স নামের একটি হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হচ্ছে। শাহজালাল বিমান বন্দরে আনুষ্ঠানিকভাবে বিআরবি এয়ারের যাত্রা শুরু হয়। 
গ্রুপের কর্ণধার মো. মজিবুর রহমান কুষ্টিয়ায় কিয়াম সিরাতুননেছা মেমোরিয়াল ট্রাস্ট গঠন করে দরিদ্র ছাত্রদের বিনামূল্যে ধর্মীয় ও আধুনিক শিা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। পবিত্র হজ্বব্রত পালনের জন্য তিনি বেশ কয়েকবার হজ্জ ও ওমরাহ হজ্জ পালন করেছেন। নিজ খরচে কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকাতে একাধিক মসজিদ, মাদ্রসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে দিয়েছেন। 
মজিবর রহমান বলেন, স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়তে ও স্বনির্ভর কুষ্টিয়া প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে বিআরবি গ্রুপ। দেশের সমৃদ্ধি ও বেকারত্ব মোচনে আমাদেও প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, আর এটা সম্ভব হয়েছে কুষ্টিয়াবাসীসহ দেশের সবার সার্বিক সহযোগিতায়। বিআরবি’র পণ্যের মান উন্নত হওয়ার কারণে বিশ্ব দরবারে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ক্যাবল তৈরি প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিনে। গোবি ইন্টারন্যাশনালের জরিপে সারাবিশ্বের তালিকাভুক্ত ৩ হাজার ক্যাবল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিআরবি ৩৩তম। মানের কারণে বিআরবি ৩ বার জাতীয় রপ্তানি ট্রফি অর্জন করেছে।
এক নজরে কুষ্টিয়া জেলা: গ্যাস ছাড়া শিল্পায়ন সম্ভব নয়, উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে প্রায়ই শোনা যায় অভিযোগটি। কিন্তু দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা কুষ্টিয়া এক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত। গ্যাস সংযোগ ছাড়াই সেখানে গড়ে উঠছে বড় শিল্প-কারখানা। বিকল্প জ্বালানির ওপর ভর করে এক দশকের মধ্যেই শিল্পনির্ভর জেলা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে কুষ্টিয়া। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে জেলার অর্থনীতিতে। বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত দারিদ্র্য ম্যাপেও দেশের সবচেয়ে কম দারিদ্র্য প্রবণ জেলার স্বীকৃতি পেয়েছে কুষ্টিয়া। কুষ্টিয়ার বিসিক শিল্প নগরীতে ৮১টি শিল্প প্লটের মধ্যে সবই চালু আছে। এ শিল্প নগরীতে বিনিয়োগ হয়েছে ৮৯৫ কোটি ২২ লাখ টাকা। এসব শিল্প প্লটে স্থাপিত কারখানায় বার্ষিক টার্নওভার ১ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। এখান থেকে বার্ষিক রপ্তানি ৬৮ কোটি টাকা। এতে কর্মসংস্থান হয়েছে ৭ হাজার ১৭৮ জন। 
ইজই ৩০.০৩.১৬ ......: কুষ্টিয়ার এক সমভ্রান্ত ব্যবসায়ী পরিবারে বেড়ে ওঠা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. মজিবর রহমান। দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রথম সারির একজন তিনি। ১৯৪৭ সালে জন্ম নেয়া বিশিষ্ট এই উদ্যোক্তা প্রায় ৪০ বছর ধরে ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত। পারিবারিক সূত্রে পাওয়া ব্যবসায় একের পর এক চ্যালেঞ্জ নিয়ে হয়েছেন সফল। ১৯৭৮ সালে কুষ্টিয়ায় প্রতিষ্ঠা করেন বিআরবি (বজলার রহমান অ্যান্ড ব্রাদার্স) কেবল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। বিশ্বের নানা প্রান্তে যেসব প্রতিষ্ঠানের পণ্য বাংলাদেশের সুনাম ও মর্যাদাকে শীর্ষে তুলে ধরেছে বিআরবি গ্রুপ তাদের মধ্যে অন্যতম। বর্তমানে তিনি প্রতিষ্ঠানটির চেয়াম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সেøাগান দেয়া হয়েছে ‘অন্যতম বিশ্বে বাংলাদেশের শীর্ষে’। দেশের বেকারত্ব মোচনে, অর্থনীতির গতি সঞ্চারে ও দেশের রপ্তানি খাতকে এগিয়ে নেয়াই ছিল তার প্রদান লক্ষ্য। মজিবর রহমানের মতে, দেশেই কোনো কিছু করা না গেলে, বাইরে গিয়েও কিছু করা যায় না। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক, সুষ্ঠু ও নিয়মতান্ত্রিক কর্ম সম্প্রদানের পাশাপাশি অর্জিত গৌরব ও উন্নয়নের ধারাকে আরো শাণিত করে জাতীয় ও আন্তজার্তিক পর্যায়ে আমাদের অর্জন আরো সূদুর প্রসারী করতে চাই। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ে মানবজমিনের সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে প্রতিষ্ঠান ও জীবনের নানা দিক নিয়ে আলোচনাকালে তিনি এসব কথা বলেন। প্রতিষ্ঠানের শুরু সম্পর্কে মজিবর রহমান বলেন, ১৯৮০ সালে নিজেদের মূলধন ও ব্যাংকের অর্থায়নে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করা হয়। ১৯৯৪ সালে গোটা দেশে বিদ্যুতায়নের প্রসার ঘটলে ক্যাবল উৎপাদন বাড়নো হয়। ১৯৯৬ ও ২০০০ সালে উন্নতবিশ্বের উন্নত যন্ত্রপাতি স্থাপন করে কারখানার সম্প্রসারণ করা হয়। বর্তমানে উন্নত ও গুণগত মান সম্পন্ন পণ্য উৎপাদন করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের ক্যাবল বাজারের স্থান করে নিয়েছে বিআরবি গ্রুপ। এখন এই শিল্পের উৎপাদিত পণ্য ইউরোপ, আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বের অনেক দেশে রপ্তানি হচ্ছে। ১৯৭৮ সালে শুরু হওয়া এই গ্রুপের বর্তমানে ১২টি প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৬ হাজারের বেশি কর্মকর্তাÑকর্মচারি কর্মরত আছেন। এর মধ্যে বিআরবি ক্যাবল ইন্ডাস্ট্রিজ, কিয়াম মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ, এমআরএস ইন্ডাস্ট্রিজ, বিআরবি পলিমার, বিআরবি সিকিউরিটিজ, টিপিটি ক্যাবলস, লাভলী হাউজিং, কিয়াম সিরাতুন্নেসা মেমোরিয়াল ট্রাস্ট, বিআরবি এনার্জি, বিআরবি এয়ার, বিআরবি ট্রাভেলস, গ্যাস্ট্র লিভার হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, জাতীয় অর্থনীতিতে অবদানের পাশাপাশি দেশে শিল্পায়নে পিছিয়ে থাকা জনপদ কুষ্টিয়াকে সমৃদ্ধ জেলায় রূপান্তরেরও অন্যতম কারিগর এই বিআরবি গ্রুপ। স্থানীয় বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি এই প্রতিষ্ঠানের হাত ধরেই কুষ্টিয়া অঞ্চলে নতুন করে শিল্পায়নের সূচনা হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কুষ্টিয়ার খ্যাতনামা শিল্প প্রতিষ্ঠান মোহিনী মিল বন্ধ হয়ে যায়। নাজুক হয়ে পড়ে কুষ্টিয়া টেক্সটাইল মিলের অবস্থাও। জেলার বৃহৎ কর্মস্থানের এই ক্ষেত্র দুটি ভঙগুর হয়ে পড়লে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে এই জেলা। এমন অবস্থায় নানা রকমের ঝুঁকি সত্ত্বেও নতুন করে শিল্প কারখানা দাঁড় করানোর প্রচেষ্টা শুরু করেন মজিবর রহমান। এই প্রচেষ্টা বাস্তবরূপ লাভ করে ১৯৭৮ সালের ২৩শে অক্টোবর কুষ্টিয়া শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দক্ষিণ বিসিক শিল্প নগরীতে বৈদ্যুতিক ওয়্যারস ক্যাবল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বিআরবি কেবল ইন্ডাষ্ট্রিজ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। দেশে ও বিশ্ব বাজারের বৈদ্যুতিক কেবলের ক্রমবর্ধমান চাহিদার প্রেক্ষিতে ১৯৯৫ সালে কোম্পানির প্রসার ঘটিয়ে বিআরবি কেবলস ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড ইউনিট-২ স্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটি। মজিবর রহমান বলেন, বিআরবি উৎপাদনের ধারাবাহিকতায় শুধু বৈদ্যুতিক ক্যাবল-ই তৈরি করছে না তাদের উৎপাদনের সঙ্গে আরও সংযোজিত হয়েছে টেলিকম টিউব লাইন ব্যালেষ্টসহ ৯৯ হাইভোল্টেজ ক্যাবল, যা এদেশের মধ্যে শুধু বিআরবি-ই তৈরি করছে। অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে বাজারজাতকরণের মাধ্যমে বিআরবি কেবল তার সাফল্যের আরও এক ধাপ এগিয়ে আইএসও ৯০০২ঃ ২০০০ সনদপ্রাপ্ত হয়ে উন্নয়নের ধারা অব্যহত রেখেছে। শিল্প উৎপাদনে-রপ্তানি খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় তিনি সিআইপি নির্বাচিত হয়েছেন বেশ কয়েক বার। যেভাবে সম্প্র্রসারণ হয় গ্রুপটির: উৎপাদনের ধারাবাহিকতা রক্ষায় গ্রাহক চাহিদা মেটানোসহ কর্মসংস্থানের জন্য ২০০৯ সালে নতুন প্লান্ট স্থাপন করে উৎপাদন করছেন বৈদ্যুতিক ফ্যান। যার নাম লাভলী ফ্যান, যা বাজারে বেশ সুনাম অর্জন করেছে। টেকসই ও মজবুত হওয়ায় লাভলী ফ্যান অল্প সময়ে মানুষ গ্রহণ করেছে। বর্তমানে এ ফ্যান বাংলাদেশের এক নম্বর ব্র্যান্ড হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে বলে জানান চেয়াম্যান। ২০১১ সালে বিআরবি গ্রুপে যুক্ত হয় আর একটি নতুন অধ্যায়। বিআরবি কেবল ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড মেরিন কেবল উৎপাদন করে ব্যবসায় নজির স্থাপন করায় কোম্পানি ব্যাপক সুনাম অর্জন করে। আন্তর্জাতিক মানের অত্যাধুনিক ও আকর্ষণীয় মেটালিক পণ্য সামগ্রী রান্না ঘরে পৌঁছে দেয়ার জন্য মজিবর রহমান ১৯৯০ সালে কিয়াম মেটাল ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড নামে কুষ্টিয়া বিসিক শিল্প নগরীতে আরও একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। কুষ্টিয়ায় ১৯৯২ সালে বিআরবি গ্রুপের অন্তর্ভূক্ত এমআরএস ইন্ডাষ্ট্রিজ নামে আরও একটি প্রকৌশল, ঢালাই, প্লাইউড ও মেলামাইন বোর্ড কারখানা প্রতিষ্ঠিত করেন গ্রুপটি। কৃষি প্রধান দেশর কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে উন্নত সেচ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বিআরবির স্বপ্নদ্রষ্টা আরেকটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে ১৯৯৭ সালে বিসিক শিল্প নগরী কুষ্টিয়াতে প্রতিষ্ঠা করেন বিআরবি পলিমার লিমিটেড। ২০১১ সালে বিসিক শিল্প নগরীর মূল হাইওয়েতে এমআরএস ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড ফিলিং স্টেশন স্থাপন করেন। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চয়তায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে বিসিক শিল্প নগরীর বিআরবি চত্বরে ২০০৯ সালে স্থাপন করেন বিআরবি এনার্জি লিমিটেড। এই বিদ্যুৎ সরবরাহের ফলে বিআরবি গ্রুপের সব প্রতিষ্ঠানের পণ্য উৎপাদনে গতিশীলতা ফিরে এসেছে। অন্যদিকে ভোক্তাদের চাহিদা মেটানোর জন্য কুষ্টিয়া শহরের প্রাণকেন্দ্রে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সড়কে ২০০০ সালে ১০ তলা বহুতল ভবন বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স ‘লাভলী টাওয়ার’ স্থাপন করেন। আকাশ পথের মাধ্যমে সারাদেশে দ্রুত যোগাযোগ নিশ্চিত করতে বিআরবি গ্রুপে যুক্ত হয় বিআরবি এয়ার লিমিটেড। বর্তমানে বেল ৪০৭ জিএক্স নামের একটি হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হচ্ছে। শাহজালাল বিমান বন্দরে আনুষ্ঠানিকভাবে বিআরবি এয়ারের যাত্রা শুরু হয়। গ্রুপের কর্ণধার মো. মজিবুর রহমান কুষ্টিয়ায় কিয়াম সিরাতুননেছা মেমোরিয়াল ট্রাস্ট গঠন করে দরিদ্র ছাত্রদের বিনামূল্যে ধর্মীয় ও আধুনিক শিা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। পবিত্র হজ্বব্রত পালনের জন্য তিনি বেশ কয়েকবার হজ্জ ও ওমরাহ হজ্জ পালন করেছেন। নিজ খরচে কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকাতে একাধিক মসজিদ, মাদ্রসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে দিয়েছেন। মজিবর রহমান বলেন, স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়তে ও স্বনির্ভর কুষ্টিয়া প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে বিআরবি গ্রুপ। দেশের সমৃদ্ধি ও বেকারত্ব মোচনে আমাদেও প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, আর এটা সম্ভব হয়েছে কুষ্টিয়াবাসীসহ দেশের সবার সার্বিক সহযোগিতায়। বিআরবি’র পণ্যের মান উন্নত হওয়ার কারণে বিশ্ব দরবারে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ক্যাবল তৈরি প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিনে। গোবি ইন্টারন্যাশনালের জরিপে সারাবিশ্বের তালিকাভুক্ত ৩ হাজার ক্যাবল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিআরবি ৩৩তম। মানের কারণে বিআরবি ৩ বার জাতীয় রপ্তানি ট্রফি অর্জন করেছে। এক নজরে কুষ্টিয়া জেলা: গ্যাস ছাড়া শিল্পায়ন সম্ভব নয়, উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে প্রায়ই শোনা যায় অভিযোগটি। কিন্তু দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা কুষ্টিয়া এক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত। গ্যাস সংযোগ ছাড়াই সেখানে গড়ে উঠছে বড় শিল্প-কারখানা। বিকল্প জ্বালানির ওপর ভর করে এক দশকের মধ্যেই শিল্পনির্ভর জেলা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে কুষ্টিয়া। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে জেলার অর্থনীতিতে। বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত দারিদ্র্য ম্যাপেও দেশের সবচেয়ে কম দারিদ্র্য প্রবণ জেলার স্বীকৃতি পেয়েছে কুষ্টিয়া। কুষ্টিয়ার বিসিক শিল্প নগরীতে ৮১টি শিল্প প্লটের মধ্যে সবই চালু আছে। এ শিল্প নগরীতে বিনিয়োগ হয়েছে ৮৯৫ কোটি ২২ লাখ টাকা। এসব শিল্প প্লটে স্থাপিত কারখানায় বার্ষিক টার্নওভার ১ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। এখান থেকে বার্ষিক রপ্তানি ৬৮ কোটি টাকা। এতে কর্মসংস্থান হয়েছে ৭ হাজার ১৭৮ জন।