Sunday, February 16, 2014

মানিকগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী হাজারী গুড়ের এখনো অনেক চাহিদা

মানিকগঞ্জ: যে গুড় দিয়ে একসময় অফিসের বস, রাজনৈতিক নেতৃবর্গ এবং নিকট আত্মীয়দের খুশি করা হতো সেই ঐতিহ্যবাহী ঝিটকার হাজারী গুড় দীর্ঘ সময়কাল পেরিয়ে আজো তার অবস্থান ধরে রেখেছে। 

যদিও ভোজন রসিকরা এর মান নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলছেন তবুও স্বাদে গন্ধে ঝিটকার হাজারী গুড় এখনও সারা বাংলায় তুলনাবিহীন এবং এর চাহিদা অনেক। 

প্রায় ১৫০ বছর আগের হাজারী গুড়ের সুনাম আজো টিকিয়ে রেখেছে এদেশের একমাত্র উৎপাদনকারী মানিকগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী হাজারী পরিবারসহ শতাধিক গাছী পরিবার। মানিকগঞ্জের দুটি দ্রব্যের সুনাম এক সময় এশিয়া থেকে ইউরোপ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। সে দুটি দ্রব্য হচ্ছে তিল্লির দই ও অপরটি ঝিটকার ঐতিহ্যবাহী হাজারী গুড়। এই গুড়ের সুনাম এক সময় এদেশ থেকে এশিয়া, ইউরোপ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। এমনকি ইংল্যান্ডের রানীকেও এই গুড় উপহার হিসেবে পাঠানো হয়েছিল। 

বৃহত্তর ঢাকার পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা গুলোতে শুধু খেজুরের চাষ হয়ে থাকে। এসব খেজুর গাছের দ্ইু-তৃতীয়াংশই রয়েছে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায়। সেখানে প্রতি একরে ১৫ টি খেজুর গাছ দেখা যায়। হরিরামপুরের ঝিটকায় খেজুর গুড় শিল্পের প্রধান কেন্দ্র। গুণে মানে, স্বাদে গন্ধে এই গুড়ের বিস্তর সুনাম রয়েছে। 

মানিকগঞ্জে শীত মৌসুমে খেজুর গাছের অনেকটা গুরুত্ব বেড়ে যায়। খেজুরের রস-গুড় উৎপাদনে পেশাদার গাছি, কুমার, কামার, জ্বালানী ব্যবসায়ী, পরিবহনের জন্য ট্র্াক মালিক, চালক, ভ্যান চালক, শ্রমিক আরতদারসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ সংয্ক্তু হয়। এই গুড় প্রথম আবিস্কার করেন মিনহাজউদ্দিন হাজারী। তার নামেই এই গুড়ের নামকরণ করা হয়েছে ‘হাজারী গুড়’। এ গুড়ের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, দু’হাতে গুড়ো করে ফুঁ দিলে তা ছাতুর মত উড়ে যায়। 

দাদার আমল থেকে গুড় উৎপাদন করে আসা গাছী আজমত আলি হাজারী (৬৫) জানান, বেশি শীত অর্থাৎ ১৫ থেকে ২০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এই গুড় উৎপাদনের নির্ভরযোগ্য সময়। আগের দিন বিকেলে গাছ কেটে হাড়ি বেঁধে দেয়া হয়। পরদিন ভোরে (সূর্য উঠার আগে) রস সংগ্রহ করে পরিষ্কার করে ছেঁকে মাটির তৈরী (জালা) পাত্রে চুলায় (বাইনে) জ্বালিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরী করা হয় হাজারী গুড়। এই পদ্ধতি এখন আর হাজারী পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। অনেক গাছির মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। এই গুড় দেখতে যেমনি সুন্দর খেতেও তেমনি সুস্বাদু। মিষ্টি ও টল টলে রস ছাড়া হাজারী গুড় হয় না। প্রতিকেজি গুড় ৬শ’ টাকা থেকে হাজার টাকা পর্যন্তও বিক্রি হয় বলে তিনি জানান।

তিনি আরো জানান, বাজারে এক ধরনের হাজারী সদৃশ্য গুড় পাওয়া গেলেও মৌলিক ভাবে তার ব্যবধান রয়েছে। এক শ্রেণীর অসাধু গুড় তৈরীকারক সাদা রং-এর গুড়ের উপর নাম খোদাই করে বাজারজাত করে সাধারণ ক্রেতাদের ধোঁকা দিয়ে থাকে। হাজারী পরিবার এ ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নকল গুড় প্রস্তুতকারদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। সেই সাথে ট্রেড মার্ক ভঙ্গকারীদের আইনের আওতায় নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।

মানিকগঞ্জের স্বনামধন্য ঐতিহ্যবাহী খেজুরের রস গুড় প্রায় বিলীন হতে চলেছে। প্রতি বছর হাজার হাজার গাছ কেটে ইট ভাটায় লাকরি হিসেবে পুড়িয়ে এই গুড় শিল্পকে ধ্বংস করা হচ্ছে। সরকারিভাবে উদ্যোগ নিয়ে এই শিল্পকে রক্ষা করা দরকার। 

No comments:

Post a Comment