Saturday, February 22, 2014

মাগুরায় উচ্চ ফলনশীল জাতের মসুর ডালের চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে কৃষকরা

মাগুরা: মাগুরায় উচ্চ ফলনশীল জাতের মসুর ডাল চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। চলতি রবি মৌসুমে মোট চাষকৃত জমির মধ্যে ৮৫ শতাংশ জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের মসুর ডালের চাষ হয়েছে। মাত্র ১৫ শতাংশ জমিতে চাষ হয়েছে স্থানীয় জাতের মসুর ডাল। এ বছর জেলার চার উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অধিক জমিতে মসুর ডালের চাষ হয়েছে। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর মসুর ডালের চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১২ হাজার ৯৩ হেক্টর জমিতে। চাষ হয়েছে ১৫ হাজার ২৯০ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৩ হাজার ১৩৭ হেক্টর বেশি। এর মধ্যে প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের মসুর ডাল চাষ হয়েছে। চাষকৃত জমিতে থেকে ১৫ হাজার ৪৮০  মেট্টিক টন মসুর ডাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্য মতে, উচ্চ ফলনশীল জাতের মধ্যে জেলার কৃষকরা বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বারি- ৪, ৫ ও ৬ এবং বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বিনা-৩, ৪ জাতের উচ্চ ফলনশীল মসুর ডালের চাষ করেছে। উচ্চ ফলনশীল এসব জাত থেকে স্থানীয় জাতের তুলনায় দেড় থেকে দুই গুণের 

বেশি মসুর ডাল উৎপাদন হয়ে থাকে। স্থানীয় জাতে যেখানে মুসর ডাল উৎপাদন হয় একর প্রতি ৫ থেকে ৬ মণ। সেখানে বারি ও বিনা উচ্চ ফলনশীল জাতে মসুর ডাল একর প্রতি উৎপাদন হয় ১২ থেকে ১৫ মণ। এ ছাড়া বারি ও বিনা মসুর পরিবর্তিত আবহাওয়ায় চাষ করা যায়। কুয়াশা ও রোদের তাপমাত্রা বেড়ে গেলেও এর ফুল নষ্ট না হয়ে ফলন ঠিক থাকে।  

কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্য মতে, দেশে প্রতিবছর ৩০ লাখ মেট্টিকটন মসুর ডালের চাহিদা রয়েছে। এর বিপরীতে উৎপাদন হয় ৫ থেকে ৬ মেট্রিক টন মসুর ডাল। মসুর ডালের এ ঘাটতি  মেটাতে প্রতি বছর বিদেশ থেকে ডাল আমদানী করতে হয়। ব্যাপকভাবে উচ্চ ফলনশীল জাতের এ ডালের চাষ ছড়িয়ে দিতে এবং আমদানী নির্ভরতা কমাতে উচ্চ ফলনশীল মসুর ডালের চাষে কৃষকদের ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের বিভিন্ন সহায়তা দেয়ার পাশাপাশি ডাল, তৈলসহ বিভিন্ন ধানের উন্নত মানের ফসলের বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্পের আওতায় মাঠ দিবস কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। জেলায় এ বছর মসুর ডালের বাম্পার ফলনের পাশাপাশি আগমীতে ডাল উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে সেই সাথে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা সম্ভব হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ। চলতি মৌসুমে কৃষি বিভাগের সহায়তায় অধিক জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের মসুর ডাল চাষ হওয়ার ডালের ভালো ফলন পাবেন বলে আশা করছেন কৃষকরাও।

সদর উপজেলার সাচানী গ্রামের কৃষক মতিয়ার রহমান  বলেন, ‘আমি অন্যান্য বছর স্থানীয় জাতের মসুর ডাল চাষ করে একরে ৪ থেকে ৫ মণ ফলন পেতাম। এ বছর স্থানীয় কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় ১ একর জমিতে বারি-৫ ও ৬ জাতের মসুর ডাল প্রর্দশনী ক্ষেত  করেছেন। যা থেকে আমি কমপক্ষে ১৫ মণ ডাল পাব বলে আশা করছি। যা সাধারণ জাতের তুলনায় প্রায় ৩ গুণ।’

পথরা গ্রামের কৃষক জিল্লুর রহমান বলেন- ‘ফলন কম হওয়ায় আগে আমরা শুধু পরিবারের প্রয়োজন মেটাতে ডাল চাষ করতাম। বর্তমানে উন্নত জাতের ডাল চাষ বেশ লাভজনক হওয়ায় আমরা অধিক জমিতে মসুর ডাল চাষ করছি। দেড় একর জমিতে যেভাবে ফলন এসেছে তাতে তিনি প্রায় ২৩ মন মসুর ডাল পাবেন বলে ধারণা করছেন।’ 

মাগুরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোখলেছুর রহমান জানান- সাধারণ জাতের মসুর ডাল যেখানে একরে উৎপাদন হয় ৫ থেকে ৬ মণ। সেখানে বারি ও বীনা- জাতের উচ্চ ফলনশীল ডালের উৎপাদন হয় ১২ থেকে ১৫ মণ। এর পাশাপাশি উন্নত প্রযুক্তিতে ধানের মত লাইন সুইং পদ্ধতিতে মসুর আবাদ করলে এ উৎপাদন বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় একরে ২০ মণের উপরে। 

দেশে ডালের চাহিদার কথা মাথায় রেখে কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে জেলার অধিকাংশ জমিতে উন্নত জাতের মসুর ডাল চাষ হয়েছে। এ জন্যে কৃষকদের মাঝে কৃষি বিভাগ কর্তৃক উন্নতজাতের বীজ সরবরাহের পাশাপশি প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়া হয়েছে। উন্নত জাতের এ মসুর ডাল চাষ বাড়াতে বর্তমানে কৃষক মাঠ দিবসের মাধ্যমে কৃষকদের বীজ সংরক্ষণের জন্য পাত্রসহ প্রযুক্তিগত জ্ঞান দেয়া হচ্ছে। এতে করে কৃষকরা উন্নত জাতের এ মসুর ডাল চাষে আরও উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।

No comments:

Post a Comment